সৌভাগ্যরহিত এক সূর্যপুত্রের সকরুণ সমাপ্তিগাথা
দিনকয়েক আগে ক্যাথেরীনার লেখা তর্পণ প্রবন্ধে মন্তব্য করেছিলেন স্নিগ্ধা। সেই মন্তব্যকে অনুসরণ করে অনেকদিন পরে ক্যাথেরীনার আবেগঘন লেখাটি আরেকবার পড়া হয়ে গেল। তাঁর লেখাটাতে একটা তথ্য ছিল। ওটা চোখে পড়তেই অনেকটা হুট করেই এই লেখাটির ভাবনাটা জন্ম হয়ে গিয়েছিল আমার মাথার ভিতরে।
পৌরাণিক কাহিনি নিয়ে আমার আগ্রহ অদম্য এবং সেটা অনেকদিনের পুরোনো। বইপত্রের অভাবে অবশ্য সেই অদম্য আগ্রহে আশার ফুল ফোটে নি কখনো। তারপরেও ছিটেফোঁটা এখানে সেখানে যেটুকু পাই মনের ভালবাসা দিয়ে তুলে নেই তাকে।
অনেকদিন ধরেই মনের মধ্যে বাসনা, বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনি নিয়ে মুক্তমনায় কেউ না কেউ লিখবেন। গ্রিক মিথোলজি নিয়ে লেখার জন্যে একজনকে তৃতীয় এক পক্ষের মাধ্যমে অনুরোধ পাঠিয়েছিলাম। সেই অনুরোধের অবস্থান কি অনাদর এবং অবহেলায় আস্তাকুঁড়েই হলো কি না জানি না। আশা আছে, এই ভূমিকাটুকু যদি তাঁর চোখে পড়ে কোনভাবে, তবে হয়তো তিনি আমার সেই ছোট্ট অনুরোধটাকে অরুণচ্ছটায় ভরিয়ে দেবেন একদিন।
আমার কাছে মহাভারতের কোন বাংলা কপি নেই। এই লেখাটি লেখার জন্য রাজাগোপালচারীর লেখা একটা ইংরেজি বইয়ের উপর অনেকখানি নির্ভর করেছি। ফলে, দেবতা বা মানুষের নাম থেকে শুরু করে জায়গা বা আরো অনেককিছুর ক্ষেত্রেই ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকাটাই স্বাভাবিক। আশা করি সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতেই দেখবেন অনিচ্ছাকৃত সেইসব ভুলকে। ভুল চিহ্নিত করে দিলে অশেষ কৃতজ্ঞ থাকবো এবং শুধরে দেবো সাথে সাথে।
____________________________
সূর্যের সন্তান সে। দেবতা তনয়।
তার মাতাও ছিল এক দেশের রাজকন্যা। তারপরও নিরায়েসী জীবন কাটাতে হয়েছে তাকে। সব সামর্থ থাকার পরেও ভাগ্যের বিড়ম্বনাতেই বেদনাবিধুর জীবন কেটেছে তার। পিতার স্নেহ পায়নি সে। ক্ষণিকের তরে মাতৃগর্ভে তাকে বুনে দিয়েই উধাও হয়েছেন তিনি। মায়ের ভালবাসাও জোটে নি কপালে তার। কলংকের আশংকায় জন্মমুহুর্তেই নদীর জলে তাকে ভাসিয়ে দিয়েছে তার গর্ভধারিণী মা।
সেই যে দুর্ভাগ্যকে সঙ্গী করে জন্মের পরপরই অজানার পথে তার অগম্য যাত্রা, সেই যাত্রার শেষ পরিণতি ঘটেছে দুর্ভাগ্যজনক করুণ মৃত্যুতে।
দেবতার ঔরসে জন্ম আর ধমনীতে স্রোতস্বিনীর মত রাজ রক্ত প্রবাহিত হবার পরেও রিক্তের জীবন হয়েছে তার, পায় নি কখনো রাজানুকল্য। তার বদলে অনাদর, অবহেলা আর অপমানকে সইতে হয়েছে। সারাজীবন যা কিছু অর্জন করেছে সে, তার সবই ছিল পরিশ্রমসাধ্য, কষ্টসাপেক্ষ, নিজের সামর্থকে উজাড় করে দিয়ে ভাগ্যের হাত থেকে নিংড়ে নিংড়ে বের করে আনা।
যাদব বংশের রাজা সূরা। পৃথা তার কন্যা। রূপে গুণে অনন্যা। সূরার ভাই কুন্তীভূজা নিঃসন্তান। ভাইকে দত্তক দিয়ে দেন নিজ কন্যা সূরাকে। সেই থেকেই দত্তক পিতার নামে পৃথার নাম হয়ে যায় কুন্তী।
কুন্তীর কিশোরী বয়সে কুন্তীভূজার আতিথ্য গ্রহণ করেন মহামুনি দুর্বাসা। পরম ধৈর্য্য, মমতা এবং ভক্তি দিয়ে দীর্ঘ এক বছর দুর্বাসা মুনির সেবা করেন কুন্তী। কুন্তীর সেবায় প্রীত মুনি দুর্বাসা স্বর্গীয় এক মন্ত্র প্রদান করেন কুন্তীকে। বলেন যে, এই মন্ত্র পড়ে যে কোন দেবতাকে ডাকলেই সেই দেবতা এসে কুন্তীকে সন্তান দিয়ে যাবেন। সেই সন্তান হবে সেই দেবতার মতই যশময়, কীর্তিমান এবং খ্যাতিবান।
কৈশোরের চাপল্যে আর অদম্য কৌতুহলে মন্ত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার ইচ্ছা জাগে কুন্তীর। মন্ত্র পড়ে স্বর্গে জাজ্বল্যমান সূর্য দেবতাকে কামনা করে সে। তার সেই ডাক শুনে সারা আকাশ জুড়ে নেমে আসে কালো মেঘের দল। ঢেকে দেয় অন্ধকারে সমস্ত দিক। আর সেই অন্ধকারের আড়াল থেকে অপূর্ব এক রূপবান রাজকুমারের বেশে সূর্য দেবতা নেমে আসেন কুন্তীর কাছে। হতবিহ্বল কুন্তী আড়ষ্ঠ কণ্ঠে জানতে চায় কে সে, কী প্রয়োজনে সে এসেছে তার কাছে। রাজকুমার জানায়, সূর্য দেবতা সে, মন্ত্রের আকর্ষণে নেমে এসেছে মর্তধামে, তার সন্তানকে রোপণ করতে কুন্তীর গর্ভে। আতংকিত কিশোরী কুমারী্ত্ব ভঙ্গ করে মাতা হতে অস্বীকৃতি জানায়। কাতর মিনতিতে বলে, চলে যাও হে দেবতা। সন্তান চাই না আমি। সে যে বড় কলংক হবে। কুমারী আমি, কুমারীত্ব হারাতে চাই না বিয়ের আগে কিছুতেই। ক্ষমা কর কিশোরীর এই মূঢ়তা দেবতা। দেবতা জানায়, মন্ত্রের কাছে আমিও অসহায় কন্যা। তোমাকে সন্তান না দিয়ে যে মুক্তি নেই আমার। ফিরে যেতে পারবো না কিছুতেই। তবে, এই কাজটুকু করে যাবো আমি। আমার সন্তান ধারণ এবং তাকে জন্মের পরে আবারও কুমারীতে রূপান্তরিত হবে তুমি। কোন গ্লানি, কোন কলংকের ভারই সইতে হবে না তোমাকে।
সূর্যের অবদানে গর্ভবতী হয় কুন্তি। নয়মাসের কষ্টকর গর্ভকালীন সময়কে এড়িয়ে যায় কুন্তী দেবতার কল্যানে। গর্ভাবস্থা এবং সন্তানের জন্ম হয় সাথে সাথেই। তাঁর কুমারীত্ব অক্ষুণ্ণ রাখার উদ্দেশ্যে যোণীপথের পরিবর্তে কর্ণকুহর দিয়ে সন্তান জন্ম দেয় কুন্তী। কানে সোনার দুল আর বুকে অভেদ্য বর্ম নিয়ে সূর্যের মতই ঔজ্বল্যময় এক সন্তান জন্ম নেয়। কানে দুল থাকার কারণে কিংবা কর্ণ দিয়ে প্রসবিত হবার কারণেই তার নাম হয় কর্ণ। সন্তান জন্মের পরপরই আবার কুমারী কিশোরীতে রূপান্তরিত হয়ে যায় কুন্তী।
সদ্যপ্রসূত সন্তানকে নিয়ে হতচকিত হয়ে পড়ে কুন্তী। পরিচয়হীন এই সন্তানকে নিয়ে কী করবে সে, সেটা ভেবেই আতংকে শিউরে উঠে। ভীত কিশোরী নিজেকে শুদ্ধ রাখতে অবশেষে তার অনাহুত এবং অবাঞ্চিত সন্তানকে একটা বাক্সে ভরে নদীর জলে ভাসিয়ে দেয়।
নিঃসন্তান এক রথচালক অধিরথ নদীতে ভেসে যেতে থাকা বাক্স থেকে অনিন্দ্যসুন্দর শিশুকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় বাড়িতে। তুলে দেয় তার মাতৃত্বের স্বাদবঞ্চিত স্ত্রী রাধার হাতে। নিজ সন্তানের মত তারা লালন পালন করতে থাকে এই শিশুর। রাধার সন্তান হিসাবে রাধেয় নামে বেড়ে উঠতে থাকে সূর্যপুত্র রথচালকের ছায়াচ্ছন্ন ঘরে।
বিয়ের উপযুক্ত হয়ে উঠতেই কুন্তীর জন্য স্বয়ংবরা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন কুন্তীভূজা। আশেপাশের সমস্ত এলাকার বিবাহযোগ্য সব রাজকুমারকে আমন্ত্রণ জানানো হয় সেই অনুষ্ঠানে। কুন্তীর রূপ এবং গুণের খ্যাতি এর মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছিল আশেপাশের সমস্ত জায়গায়। ফলে, অসংখ্য রুপমোহিনী এবং গুণমুগ্ধ আগ্রহী রাজপুত্র এসে জড়ো হয় স্বয়ংবরা সভায়। ব্যক্তিত্বে সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়া রাজা পাণ্ডুর গলায় বরমাল্য পরিয়ে দেয় কুন্তী। পাণ্ডুর সাথে তাঁর রাজধানী হস্তিনাপুরে চলে আসে সে। কুন্তি ছাড়াও পরে মাদ্রিকেও বিয়ে করে পাণ্ডু।
দুই স্ত্রীসহ একদিন পাশের বনে শিকারে গিয়েছেন পাণ্ডু। এক সাধু এবং তাঁর স্ত্রী হরিণের বেশে ঘুরছিল সেই বনে। না বুঝেই পাণ্ডু তীর দিয়ে আঘাত করে ফেলে পুরুষ হরিণবেশি সাধুকে। মৃত্যুর আগ মুহুর্তে সাধু অভিশাপ দিয়ে যান পাণ্ডুকে এই বলে যে, যৌনকর্মে লিপ্ত হলেই মৃত্যুর মুখে পতিত হবে সে। অভিশাপের ফলে এতই মন ভেঙে যায় পাণ্ডুর যে, সে তাঁর ভাই ধৃতরাষ্ট্রের হাতে হস্তিনাপুরের সমস্ত দায়িত্ব দিয়ে দুই স্ত্রীকে নিয়ে বনবাসী হয়ে যান।
পাণ্ডুর কাছ থেকে কোন সন্তান পাবার আর কোন আশা নেই দেখে মুনি দুর্বাসার স্বর্গীয় মন্ত্রের কথা কুন্তী জানায় পাণ্ডু এবং মাদ্রিকে। পাণ্ডুর সম্মতিতে সন্তান আকাঙ্ক্ষায় একে একে বিভিন্ন দেবতাদের আহ্বান জানায় কুন্তি এবং মাদ্রি। ধর্ম দেবতার ঔরসে যুধিষ্ঠির, বায়ু দেবতার ঔরসে ভীম এবং ইন্দ্রের ঔরসে অর্জুনের জন্ম হয় কুন্তীর গর্ভে। অন্যদিকে অশ্বিণী যমজ দেবতার ঔরসে মাদ্রির গর্ভে জন্ম নেয় নকুল এবং সহদেব। এক অসতর্ক মুহুর্তে মাদ্রির আগ্রহে তার সাথে যৌনকর্মে মিলিত হতে গিয়ে ঋষির অভিশাপে মারা যান পাণ্ডু। সেই অনুতাপে এবং অনুশোচনায় পাণ্ডুর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছামৃত্যুকে বেছে নেয় মাদ্রি। ফলে পাঁচ সন্তানকেই মানুষ করার পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে কুন্তীর ঘাড়ে। কুন্তীর এই পাঁচ সন্তানই মহাভারতে পঞ্চপাণ্ডব নামে পরিচিত।
পাণ্ডব এবং কৌরব দুইপক্ষই তাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ শিখেছিল প্রথমে কৃপাচার্য এবং পরে দ্রোণাচার্যের কাছে। তাদের সেই শিক্ষা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় হস্তিনাপুরে। রাজপরিবারের সদস্যদের সাথে সাথে জনসাধারণের জন্যও উন্মুক্ত ছিল সেই অনুষ্ঠান। অর্জুন অমানুষিক দক্ষতা প্রদর্শন করে তাক লাগিয়ে দেয় উন্মত্ত জনসাধারণকে। অর্জুনের এই সাফল্যে মুখ কালো হয়ে যায় দুর্যোধনের। দিনের প্রায় শেষ লগ্নে বিপুল শব্দ নিনাদে প্রদর্শনীক্ষেত্রে হাজির হয় এক অনিন্দ্যকান্তি তরুণ। কানে সোনার দুল, বুকে অভেদ্য বর্ম তার। উদ্ধত মস্তকে আকাশসম গর্বে চারিদিকে গৃবা উঁচিয়ে তাকায় সে। কৃপ এবং দ্রোণের দিকে অবহেলার প্রণাম দিয়ে অর্জুনের মুখোমুখি হয় সে। হেলাফেলা করে অর্জুন যা যা করেছিল সব করে দেখায় সে। সেখানেই থেমে থাকে না সে। অর্জুনকে মল্লযুদ্ধেও আহ্বান জানায় সে।
তাঁদের সন্তানদের মুখোমুখি হতে দেখে স্বর্গের দেবতারাও নড়েচড়ে বসেন। ইন্দ্র এবং সূর্যদেবতা দুজনেই উৎকণ্ঠিত চিত্তে তাকিয়ে থাকেন তাঁদের সন্তানদের আসন্ন মল্লযুদ্ধের দিকে। রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে কুন্তীও উপস্থিত ছিল সেখানে। কানের দুল এবং বুকের অভেদ্য বর্ম দেখে কর্ণকে চিনতে তাঁর ভুল হয় না কোন। অনাদরে ছুড়ে ফেলে দেয়া তার প্রথম সন্তানকে লড়াকু মেজাজে অন্য সন্তানের মুখোমুখি দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। দাসীদের শুশ্রুষায় জ্ঞান ফিরে পান তিনি। স্থানুর মত নিজ গর্ভের সন্তানদের একে অপরের বিরুদ্ধে আসন্ন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ দেখা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না তাঁর।
মল্লযুদ্ধ শুরুর ঠিক আগ মুহুর্তে হস্তক্ষেপ করেন কৃপ। কর্ণকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে বীর তরুণ, আপনার মুখোমুখি যে যোদ্ধা তিনি উচ্চবংশজাত। পৃথা এবং পাণ্ডুর সন্তান। রাজরক্ত প্রবাহিত তার ধমনীতে। আপনার বংশপরিচয় জানার পরেই শুধুমাত্র তিনি লড়াই করবেন আপনার সাথে। রাজবংশের একজন আপনার মত অজানা কারো সাথে লড়াইয়ে নামবে না এটা বলাই বাহুল্য। বংশ পরিচয়ের কথাতে কর্ণের উদ্ধত মস্তক অবনত হয়ে যায় নিমেষেই। বৃষ্টির জলের ভারে গুটিয়ে যাওয়া পদ্মের মতই সংকুচিত হয়ে যায় সে।
সেই মুহুর্তে কর্ণের পক্ষাবলম্বন করতে এগিয়ে আসে দুর্যোধন। অঙ্গ রাজ্যের রাজা হিসাবে ঘোষণা দেয় এবং অভিষিক্ত করে তাকে। বলে যে, এর ফলে অর্জুনের সাথে লড়াইয়ে আর কোন বাধাই থাকলো না তার। তখনই সেখানে হাজির হয় রথচালক অধিরথ। কর্ণকে জড়িয়ে ধরে সে আমার সন্তান বলে। কর্ণও সসম্ভ্রমে অধিরথের পায়ের কাছে উপুড় হয়ে পড়ে প্রণাম জানায়। এই দৃশ্যে হাসির রোল পড়ে যায় চারিদিকে। বিব্রত, অপমানিত কর্ণ গোধূলির অস্তমিত সূর্যের পানে তাকিয়ে মাথা নত করে বেরিয়ে যায় সেখান থেকে।
কুলবংশ নিয়ে অপমানের এখানেই শেষ হয় না কর্ণের। দ্রৌপদীর স্বয়ংবরা সভায় পঞ্চপাণ্ডবের মত সেও গিয়েছিল। আশা ছিল তীর ছুঁড়ে মাছের চক্ষুভেদ করে জিতে নেবে দ্রৌপদীকে। কিন্তু তীর ছোড়ার ঠিক আগ মুহুর্তে কৃষ্ণের পরামর্শে সূতপুত্র বলে তাকে ডেকে বসে দ্রৌপদী। আর তাতেই চুল পরিমাণ কেঁপে যায় কর্ণের ধনুকের ছিলা। সামান্যের জন্য মাছের চোখকে ফাঁকি দিয়ে যায় তার তীর। জেতা হয় না দ্রৌপদীকে তার।
কুলবংশ নিয়ে কর্ণের সমস্যার শুরু আরো আগে থেকেই। যুদ্ধ কৌশল শেখার জন্য দ্রোণের কাছে গিয়েছিল সে। কিন্তু শুধুমাত্র ক্ষত্রিয়দেরকেই তিনি শিক্ষা দেন এই অজুহাতে কর্ণকে ছাত্র হিসাবে নিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। দ্রোণের কাছ থেকে প্রত্যাখাত হয়ে নিজে নিজেই যুদ্ধ কৌশল শেখার সিদ্ধান্ত নেয় কর্ণ। কিন্তু সেই সময়কার রীতি অনুযায়ী যে কোন শিক্ষার জনই গুরু থাকা প্রয়োজন ছিল। ফলে সূর্য দেবতাকে তার গুরু বানিয়ে নেয় কর্ণ। দিনের বেলায় সমস্ত অস্ত্রসস্ত্রের খোঁজখবর নিত সে, আর রাতের আঁধারে চলতো তার প্রশিক্ষণ। কিন্তু এগুলো পর্যাপ্ত ছিল না। তীরচালনার উন্নততর প্রশিক্ষণ এবং স্বর্গীয় অস্ত্র চালনা জানার জন্য একজন গুরু আবশ্যক হয়ে পড়ে তার। ফলে, ব্রাক্ষ্মণ সেজে সে হাজির হয় দ্রোণের গুরু পরশুরামের কাছে। পরশুরামের প্রশিক্ষণে কর্ণের এতই উন্নতি হয় যে, পরশুরাম পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হন যে, তীর চালনায় কর্ণ তাঁর সমান দক্ষতা অর্জন করে ফেলেছে। পরশুরামের কাছ থেকে ব্রক্ষ্মাস্ত্রও জেনে নেয় কর্ণ।
তবে এখানেও সেই ভাগ্যই আবার প্রতারণা করে কর্ণের সাথে। প্রশিক্ষণের প্রায় শেষ পর্যায়ে একদিন পরশুরাম গাছের ছায়ায় ঘুমোনোর জন্য কর্ণকে বালিশ নিয়ে আসতে বলে। বালিশের পরিবর্তে নিজের উরু পেতে দেয় কর্ণ তার গুরুর জন্য। এই সুযোগটাই গ্রহণ করে কৃষ্ণ। বিশাল এক মৌমাছি সেজে কাপড়ের নীচ দিয়ে কর্ণের উরুতে গিয়ে কামড়াতে থাকে সে। গুরুর ঘুম ভেঙে যাবে বলে অসহ্য যন্ত্রণাকে মুখ বুজে সহ্য করতে থাকে কর্ণ। কামড় আরো গভীর হতে হতে রক্তারক্তি পর্যায়ে চলে যায়। কর্ণের উরু থেকে নিঃসরিত রক্ত মাথায় লাগতেই ঘুম ভেঙে যায় পরশুরামের। পুরো দৃশ্য দেখে তাঁর বুঝতে সময় লাগে না যে কর্ণ একজন ক্ষত্রিয়। এরকম অসহ্য বেদনা সহ্য করার ক্ষমতা ক্ষত্রিয় ছাড়া আর কারো নেই। ক্ষত্রিয়দের প্রতি প্রতিশোধের শপথ নেয়া পরশুরামের মাথায় আগুন চেপে যায়। অভিশাপ দেন তিনি কর্ণকে। যে বিদ্যা সে শিখেছে তাঁর কাছ থেকে, প্রয়োজনের মুহুর্তে তা কোনই কাজে আসবে না তাঁর। তখনও কর্ণ তাঁর ক্ষত্রিয় বংশ পরিচয়ের কিছুই জানে না। বার বার শুধু বলতে থাকে যে সে রথচালক আধিরথের সন্তান। শান্ত হয় পরশুরাম, কিন্তু শাপ ফিরিয়ে নেবার ক্ষমতা তাঁর আর ছিল না। গুরুর এই অভিশাপই একদিন কর্ণের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
অভিশাপ শুধু পরশুরামই দেয় নি কর্ণকে। ভূমিদেবীরও অভিশাপ ছিল তার উপর। ছোট এক বাচ্চা ঘি ফেলে দিয়েছিল মাটিতে। সৎ মায়ের ভয়ে ঘরে ফিরতে পারছিল না। তার অনুরোধে ঘি মেশানো মাটি তুলে নিয়ে মুঠিতে চাপ দিয়ে ঘিকে আলাদা করছিল কর্ণ। হঠাৎ করে নারীর আর্তনাদ শুনে মুঠি আলগা করে দেখে যে সেখানে ভুমদেবী। যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে কর্ণকে অভিশাপ দিচ্ছে এই বলে যে, সে যেরকম করে মাটিকে চেপে ধরে আছে, গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে মাটিও সেভাবেই তার রথের চাকাকে চেপে ধরবে। এছাড়া দুর্ঘটনাক্রমে নিরীহ এক গাভীকে হত্যা করার জন্য গাভীর মালিকও অভিশাপে জর্জরিত করেছিল কর্ণকে। ওই অসহায় গাভীর মতই অসহায়ভাবে একদিন সে মারা যাবে বলে শাপশাপান্ত করেছিল তাকে।
শুধু অভিশাপই নয়, প্রতারণা এবং মায়ামমতার মায়াজালের কারণেও কর্ণ প্রয়োগ করতে পারে নি তার পুরো শৌর্যবীর্য। হস্তিনাপুরের যুদ্ধকৌশল প্রতিযোগিতার মাঠে অর্জুনকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান জানানোতে ভীত হয়ে পড়েছিল অর্জুনের জনক দেবতা ইন্দ্র। কর্ণকে অক্ষম করার বাসনায় ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে কর্ণের কাছে এসে উপস্থিত হন তিনি। তাঁর জানা ছিল যে, ঠিক দুপুরবেলায় কর্ণের কাছে কেউ কিছু চাইলে সে খালি হাতে ফেরে না। দ্বিপ্রহরে ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে কর্ণের কানের দুল এবং অভেদ্য বর্মকে চেয়ে বসেন তিনি। ভিক্ষুক যে ইন্দ্র সেটা বুঝে ফেলেও নিজের প্রতিজ্ঞা থেকে টলে নি কর্ণ। কানের দুল আর অভেদ্য বর্ম খুলে ইন্দ্রের হাতে দিয়ে দেয় সে। কর্ণের মহানুভবতায় অবাক হয়ে যান ইন্দ্র। অনুশোচনায় ভোগেন তিনি তাঁর প্রতারণায়। ফলে, কর্ণকে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ অস্ত্র ‘বাসবী শক্তি’ দান করেন তিনি। তবে শর্ত দেন যে কর্ণ এই অস্ত্র মাত্র একবারই ব্যবহার করতে পারবে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের আগেই ঘটোৎকচের উপর এই অস্ত্র প্রয়োগ করে ফেলেছিল কর্ণ।
তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করেছিল তার জন্মদাত্রী মা-ই। জেনে অথবা না জেনে, বুঝে অথবা না বুঝে। কুরুক্ষেত্রের ময়দানে যখন কৌরব এবং পাণ্ডবেরা চুড়ান্ত যুদ্ধের জন্য মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে, তখনই তার নিজ সন্তানেরা একে অন্যকে না জেনে হত্যা করবে এই ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে কুন্তী। রাতের আঁধারে হাজির হয় কৌরব শিবিরে। দেখা করে কর্ণের সাথে। তাকে খুলে বলে তার জন্ম পরিচয়। একদিন লোকলজ্জার ভয়ে যে শিশুকে ভাসিয়ে দিয়েছিল নদীর জলে তার কাছে নতজানু হয়ে ক্ষমা চায় মাতা। ফিরে আসতে বলে পাণ্ডব শিবিরে বড় পাণ্ডবের মর্যাদা নিয়ে। রাধার সন্তান হিসাবে রাধেয় নামে নয়, বরং কুন্তীর সন্তান হিসাবে কুন্তেয় নাম নিয়ে। হতভম্ব কর্ণ জানায় তা আর সম্ভব নয়। কৌরব শিবিরের দায়িত্ব তার কাছে পাণ্ডবের মর্যাদার চেয়েও বেশি বড়। দুর্যোধনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। রাধেয়-র বদলে কুন্তেয় নাম নিতেও অস্বীকৃতি জানায় সে। বলে, বড় দেরি হয়ে গেছে মাগো। অর্জুনের সাথে মোকাবেলার প্রথম দিনেই যদি স্বীকৃতি দিতে আমাকে তবে হয়তো ভিন্ন হতো সবকিছু। এখন আর সে সময় নেই। কুন্তীর কোলে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানলেও দুটো কথা দেয় সে তার জননীকে। অর্জুন ছাড়া বাকি চার পাণ্ডবের কাউকেই সে হত্যা করবে না। কুন্তীকে অর্জুন অথবা তাকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। আর তার নাগাস্ত্র সে মাত্র একবারই ব্যবহার করবে অর্জুনের বিপক্ষে। সেই সাথে কুন্তীকে অনুরোধ জানায় তার সত্যি পরিচয় যেন জীবিত থাকা অবস্থায় কাউকে না জানায়। সন্তানকে নিজ বক্ষে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ কুন্তী ফিরে যায় অশ্রুসজল চোখে।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে বার বার অর্জুনকে নাজেহাল করে ফেলে কর্ণ। একবার অর্জুনকে অসহায় অবস্থায় পেয়ে তার নাগাস্ত্রও প্রয়োগ করে সে, কিন্তু কৃষ্ণ অর্জুনের রথের চাকাকে মাটিতে পাঁচ ইঞ্চি দাবিয়ে দিয়ে বাঁচিয়ে দেয় অর্জুনের মাথাকে। ঠিক এসময়ই ভাগ্যদেবী তার নিষ্ঠুর খেলা শুরু করেন কর্ণকে নিয়ে। তার রথের বাদিকের চাকা দেবে যায় নরম মাটিতে। লাফ দিয়ে রথ থেকে নেমে চাকা উঠানোর চেষ্টা করে সে। কর্ণের এরকম অস্ত্রহীন অবস্থায় রথ নিয়ে কাছে চলে আসে কৃষ্ণ এবং অর্জুন। কর্ণ অর্জুনের কাছে আবেদন জানায় ধর্মের। এরকম কাপুরুষিত আক্রমণ না করার জন্য অনুরোধ জানায় তাকে। বলে যে, আমার রথের চাকা তুলে নেই, তারপর পুরুষের মত লড়াই করার সুযোগ পাওয়া যাবে অনেক। কর্ণের কথায় দ্বিধান্বিত হয় অর্জুন, নিরস্ত্র শত্রকে হত্যা করতে ইতঃস্তত করে সে। কিন্তু কৃষ্ণ প্ররোচিত করতে থাকে অর্জুনকে। শেষ চেষ্টা হিসাবে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে চাকা উঠানোর প্রয়াস নেয় কর্ণ। সামান্যতম নড়াতে পারে না চাকাকে সে, বরং আরো শক্তভাবে কাদায় গেঁথে যেতে থাকে তা। ভূমিদেবীর অভিশাপের কথা মনে পড়ে যায় কর্ণের। বাঁচার আর কোন উপায় না দেখে ব্রক্ষ্মাস্ত্র প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় সে। কিন্তু গুরু পরশুরামের অভিশাপে তাও মনে করতে পারে না সে। জন্মমুহুর্ত থেকে ভাগ্যবঞ্চিত বীর জীবনের শেষ মুহুর্তে, সবচেয়ে বড় প্রয়োজনের সময় এসেও তার দেখা পায় না। দুর্ভাগ্যই যেন নিয়তি তার। অভেদ্য বর্ম দিয়ে একদিন সুরক্ষিত ছিল যেই বুক, এখন তা অরক্ষিত। সেই অরক্ষিত বুকে এসে বেধে যুদ্ধের প্রচলিত নিয়ম ভঙ্গকারী অর্জুনের কাপুরুষিত তীর।
পুত্রের এই করুণ মৃত্যু সইতে না পেরেই যেন কুরুক্ষেত্রের দিগন্ত থেকে মুখ নামিয়ে নেন সূর্যদেবতা। আর তাঁর অস্তমনের সাথে সাথে সূর্যপুত্রও চিরবিদায় নেয় বসুন্ধরা থেকে। পিছনে ফেলে রেখে যায় শুধু একরাশ অভিমানী দীর্ঘশ্বাস আর হতাশ্বাস।
মহাভারতের পাতায় যার নায়ক হবার কথা, খলনায়ক হয়ে থেকে যায় সে চিরতরে। যার বীরত্বে কেঁপে কেঁপে উঠতো বসুন্ধরা, সেই বসুন্ধরার বিশ্বাসঘাতকতায় অসহায়ের মত একদিন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে সে। মহাভারত তাই শুধু আর্যপুত্র অর্জুনের অর্জনের কাহিনিই নয়, সূর্যপুত্র কর্ণের করুণ কান্নায় সিক্ত এক বিষাদগাথাও বটে।
______________
রবীন্দ্রনাথের ‘কাহিনী’ কাব্যগ্রন্থে কর্ণ এবং কুন্তীকে নিয়ে কর্ণ-কুন্তী-সংবাদ নামে বিশালাকৃতির একটি দুর্দান্ত কবিতা আছে। কবিতাটির আবৃত্তি ইস্নিপ্স থেকে তুলে দিলাম। আবৃত্তি করেছেন পার্থ ঘোষ এবং গৌরী ঘোষ।
|
মহাভারতের কাহিনি নিয়ে সব্যসাচী দেবের একটা অনন্য কবিতা ‘কৃষ্ণা’। এই কবিতাটি্র অসাধারণ আবৃত্তি করেছেন ক্যাথেরীনা। আমার অসম্ভব পছন্দের আবৃত্তি এটি। কবিতাটি হয়তো পুরোপুরি প্রাসঙ্গিক নয় আমার এই লেখার সাথে, আবার একেবারে অপ্রাসঙ্গিকও নয় সেটাও বলা যায়। অনেকেই হয়তো আগেও শুনেছেন এই আবৃত্তিটি। আবার শুনুন, নিশ্চয়তা দিচ্ছি ভাল লাগবেই।
|
কর্ণ-কুন্তী-সংবাদ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কর্ণ । পুণ্য জাহ্নবীর তীরে সন্ধ্যাসবিতার
বন্দনায় আছি রত । কর্ণ নাম যার
অধিরথসূতপুত্র , রাধাগর্ভজাত
সেই আমি — কহো মোরে তুমি কে গো মাতঃ!
কুন্তী । বৎস , তোর জীবনের প্রথম প্রভাতে
পরিচয় করায়েছি তোরে বিশ্ব-সাথে
সেই আমি , আসিয়াছি ছাড়ি সর্ব লাজ
তোরে দিতে আপনার পরিচয় আজ ।
কর্ণ । দেবী , তব নতনেত্রকিরণসম্পাতে
চিত্ত বিগলিত মোর , সূর্যকরঘাতে
শৈলতুষারের মতো । তব কণ্ঠস্বর
যেন পূর্বজন্ম হতে পশি কর্ণ-’পর
জাগাইছে অপূর্ব বেদনা । কহো মোরে
জন্ম মোর বাঁধা আছে কী রহস্য-ডোরে
তোমা সাথে হে অপরিচিতা!
কুন্তী । ধৈর্য ধর্ ,
ওরে বৎস , ক্ষণকাল । দেব দিবাকর
আগে যাক অস্তাচলে । সন্ধ্যার তিমির
আসুক নিবিড় হয়ে । — কহি তোরে বীর ,
কুন্তী আমি ।
কর্ণ । তুমি কুন্তী! অর্জুনজননী!
কুন্তী । অর্জুনজননী বটে! তাই মনে গণি
দ্বেষ করিয়ো না বৎস । আজো মনে পড়ে
অস্ত্রপরীক্ষার দিন হস্তিনানগরে
তুমি ধীরে প্রবেশিলে তরুণ কুমার
রঙ্গস্থলে , নক্ষত্রখচিত পূর্বাশার
প্রান্তদেশে নবোদিত অরুণের মতো ।
যবনিকা-অন্তরালে নারী ছিল যত
তার মধ্যে বাক্যহীনা কে সে অভাগিনী
অতৃপ্ত স্নেহক্ষুধার সহস্র নাগিনী
জাগায়ে জর্জর বক্ষে — কাহার নয়ন
তোমার সর্বাঙ্গে দিল আশিস্-চুম্বন ।
অর্জুনজননী সে যে । যবে কৃপ আসি
তোমারে পিতার নাম শুধালেন হাসি ,
কহিলেন ‘ রাজকুলে জন্ম নহে যার
অর্জুনের সাথে যুদ্ধে নাহি অধিকার —
আরক্ত আনত মুখে না রহিল বাণী ,
দাঁড়ায়ে রহিলে , সেই লজ্জা-আভাখানি
দহিল যাহার বক্ষ অগ্নিসম তেজে
কে সে অভাগিনী । অর্জুনজননী সে যে ।
পুত্র দুর্যোধন ধন্য , তখনি তোমারে
অঙ্গরাজ্যে কৈল অভিষেক । ধন্য তারে ।
মোর দুই নেত্র হতে অশ্রুবারিরাশি
উদ্দেশে তোমারি শিরে উচ্ছ্বসিল আসি
অভিষেক-সাথে । হেনকালে করি পথ
রঙ্গমাঝে পশিলেন সূত অধিরথ
আনন্দবিহ্বল । তখনি সে রাজসাজে
চারি দিকে কুতূহলী জনতার মাঝে
অভিষেকসিক্ত শির লুটায়ে চরণে
সূতবৃদ্ধে প্রণমিলে পিতৃসম্ভাষণে ।
ক্রূর হাস্যে পাণ্ডবের বন্ধুগণ সবে
ধিক্কারিল ; সেইক্ষণে পরম গরবে
বীর বলি যে তোমারে ওগো বীরমণি
আশিসিল , আমি সেই অর্জুনজননী ।
কর্ণ । প্রণমি তোমারে আর্যে । রাজমাতা তুমি ,
কেন হেথা একাকিনী । এ যে রণভূমি ,
আমি কুরুসেনাপতি ।
কুন্তী । পুত্র , ভিক্ষা আছে —
বিফল না ফিরি যেন ।
কর্ণ । ভিক্ষা , মোর কাছে!
আপন পৌরুষ ছাড়া , ধর্ম ছাড়া আর
যাহা আজ্ঞা কর দিব চরণে তোমার ।
কুন্তী । এসেছি তোমারে নিতে ।
কর্ণ । কোথা লবে মোরে!
কুন্তী । তৃষিত বক্ষের মাঝে — লব মাতৃক্রোড়ে ।
কর্ণ । পঞ্চপুত্রে ধন্য তুমি , তুমি ভাগ্যবতী ,
আমি কুলশীলহীন ক্ষুদ্র নরপতি —
মোরে কোথা দিবে স্থান ।
কুন্তী । সর্ব-উচ্চভাগে
তোমারে বসাব মোর সর্বপুত্র-আগে
জ্যেষ্ঠ পুত্র তুমি ।
কর্ণ । কোন্ অধিকার-মদে
প্রবেশ করিব সেথা । সাম্রাজ্যসম্পদে
বঞ্চিত হয়েছে যারা মাতৃস্নেহধনে
তাহাদের পূর্ণ অংশ খণ্ডিব কেমনে
কহো মোরে । দ্যূতপণে না হয় বিক্রয় ,
বাহুবলে নাহি হারে মাতার হৃদয় —
সে যে বিধাতার দান ।
কুন্তী । পুত্র মোর , ওরে ,
বিধাতার অধিকার লয়ে এই ক্রোড়ে
এসেছিলি একদিন — সেই অধিকারে
আয় ফিরে সগৌরবে , আয় নির্বিচারে—
সকল ভ্রাতার মাঝে মাতৃ-অঙ্কে মম
লহো আপনার স্থান ।
কর্ণ । শুনি স্বপ্নসম ,
হে দেবী , তোমার বাণী । হেরো , অন্ধকার
ব্যাপিয়াছে দিগ্বিদিকে , লুপ্ত চারি ধার —
শব্দহীনা ভাগীরথী । গেছ মোরে লয়ে
কোন্ মায়াচ্ছন্ন লোকে , বিস্মৃত আলয়ে ,
চেতনাপ্রত্যুষে । পুরাতন সত্যসম
তব বাণী স্পর্শিতেছে মুগ্ধচিত্ত মম ।
অস্ফুট শৈশবকাল যেন রে আমার ,
যেন মোর জননীর গর্ভের আঁধার
আমারে ঘেরিছে আজি । রাজমাতঃ অয়ি ,
সত্য হোক , স্বপ্ন হোক , এসো স্নেহময়ী
তোমার দক্ষিণ হস্ত ললাটে চিবুকে
রাখো ক্ষণকাল । শুনিয়াছি লোকমুখে
জননীর পরিত্যক্ত আমি । কতবার
হেরেছি নিশীথস্বপ্নে জননী আমার
এসেছেন ধীরে ধীরে দেখিতে আমায় ,
কাঁদিয়া কহেছি তাঁরে কাতর ব্যথায়
‘ জননী , গুণ্ঠন খোলো , দেখি তব মুখ ‘ —
অমনি মিলায় মূর্তি তৃষার্ত উৎসুক
স্বপনেরে ছিন্ন করি । সেই স্বপ্ন আজি
এসেছে কি পাণ্ডবজননীরূপে সাজি
সন্ধ্যাকালে , রণক্ষেত্রে , ভাগীরথীতীরে ।
হেরো দেবী , পরপারে পাণ্ডবশিবিরে
জ্বলিয়াছে দীপালোক , এ পারে অদূরে
কৌরবের মন্দুরায় লক্ষ অশ্বখুরে
খর শব্দ উঠিছে বাজিয়া । কালি প্রাতে
আরম্ভ হইবে মহারণ । আজ রাতে
অর্জুনজননীকণ্ঠে কেন শুনিলাম
আমার মাতার স্নেহস্বর । মোর নাম
তাঁর মুখে কেন হেন মধুর সংগীতে
উঠিল বাজিয়া — চিত্ত মোর আচম্বিতে
পঞ্চপাণ্ডবের পানে ‘ ভাই ‘ ব’লে ধায় ।
কুন্তী । তবে চলে আয় বৎস , তবে চলে আয় ।
কর্ণ । যাব মাতঃ , চলে যাব , কিছু শুধাব না —
না করি সংশয় কিছু না করি ভাবনা ।
দেবী , তুমি মোর মাতা! তোমার আহ্বানে
অন্তরাত্মা জাগিয়াছে — নাহি বাজে কানে
যুদ্ধভেরী , জয়শঙ্খ — মিথ্যা মনে হয়
রণহিংসা , বীরখ্যাতি , জয়পরাজয় ।
কোথা যাব , লয়ে চলো ।
কুন্তী । ওই পরপারে
যেথা জ্বলিতেছে দীপ স্তব্ধ স্কন্ধাবারে
পাণ্ডুর বালুকাতটে ।
কর্ণ । হোথা মাতৃহারা
মা পাইবে চিরদিন! হোথা ধ্রুবতারা
চিররাত্রি রবে জাগি সুন্দর উদার
তোমার নয়নে! দেবী , কহো আরবার
আমি পুত্র তব ।
কুন্তী । পুত্র মোর!
কর্ণ । কেন তবে
আমারে ফেলিয়া দিলে দূরে অগৌরবে
কুলশীলমানহীন মাতৃনেত্রহীন
অন্ধ এ অজ্ঞাত বিশ্বে । কেন চিরদিন
ভাসাইয়া দিলে মোরে অবজ্ঞার স্রোতে —
কেন দিলে নির্বাসন ভ্রাতৃকুল হতে ।
রাখিলে বিচ্ছিন্ন করি অর্জুনে আমারে —
তাই শিশুকাল হতে টানিছে দোঁহারে
নিগূঢ় অদৃশ্য পাশ হিংসার আকারে
দুর্নিবার আকর্ষণে । মাতঃ , নিরুত্তর ?
লজ্জা তব ভেদ করি অন্ধকার স্তর
পরশ করিছে মোরে সর্বাঙ্গে নীরবে —
মুদিয়া দিতেছে চক্ষু । থাক্ , থাক্ তবে —
কহিয়ো না কেন তুমি ত্যজিলে আমারে ।
বিধির প্রথম দান এ বিশ্বসংসারে
মাতৃস্নেহ , কেন সেই দেবতার ধন
আপন সন্তান হতে করিলে হরণ
সে কথার দিয়ো না উত্তর । কহো মোরে
আজি কেন ফিরাইতে আসিয়াছ ক্রোড়ে ।
কুন্তী । হে বৎস , ভর্ৎসনা তোর শতবজ্রসম
বিদীর্ণ করিয়া দিক এ হৃদয় মম
শত খণ্ড করি । ত্যাগ করেছিনু তোরে
সেই অভিশাপে পঞ্চপুত্র বক্ষে ক’রে
তবু মোর চিত্ত পুত্রহীন — তবু হায় ,
তোরি লাগি বিশ্বমাঝে বাহু মোর ধায় ,
খুঁজিয়া বেড়ায় তোরে । বঞ্চিত যে ছেলে
তারি তরে চিত্ত মোর দীপ্ত দীপ জ্বেলে
আপনারে দগ্ধ করি করিছে আরতি
বিশ্বদেবতার । আমি আজি ভাগ্যবতী ,
পেয়েছি তোমার দেখা । যবে মুখে তোর
একটি ফুটে নি বাণী তখন কঠোর
অপরাধ করিয়াছি — বৎস , সেই মুখে
ক্ষমা কর্ কুমাতায় । সেই ক্ষমা বুকে
ভর্ৎসনার চেয়ে তেজে জ্বালুক অনল ,
পাপ দগ্ধ ক’রে মোরে করুক নির্মল ।
কর্ণ । মাতঃ , দেহো পদধূলি , দেহো পদধূলি —
লহো অশ্রু মোর ।
কুন্তী । তোরে লব বক্ষে তুলি
সে সুখ-আশায় পুত্র আসি নাই দ্বারে ।
ফিরাতে এসেছি তোরে নিজ অধিকারে ।
সূতপুত্র নহ তুমি , রাজার সন্তান —
দূর করি দিয়া বৎস , সর্ব অপমান
এসো চলি যেথা আছে তব পঞ্চ ভ্রাতা ।
কর্ণ । মাতঃ , সূতপুত্র আমি , রাধা মোর মাতা ,
তার চেয়ে নাহি মোর অধিক গৌরব ।
পাণ্ডব পাণ্ডব থাক্ , কৌরব কৌরব —
ঈর্ষা নাহি করি কারে ।
কুন্তী । রাজ্য আপনার
বাহুবলে করি লহো , হে বৎস , উদ্ধার ।
দুলাবেন ধবল ব্যজন যুধিষ্ঠির ,
ভীম ধরিবেন ছত্র , ধনঞ্জয় বীর
সারথি হবেন রথে , ধৌম্য পুরোহিত
গাহিবেন বেদমন্ত্র — তুমি শত্রুজিৎ
অখণ্ড প্রতাপে রবে বান্ধবের সনে
নিঃসপত্ন রাজ্যমাঝে রত্নসিংহাসনে ।
কর্ণ । সিংহাসন! যে ফিরালো মাতৃস্নেহ পাশ —
তাহারে দিতেছ , মাতঃ , রাজ্যের আশ্বাস ।
একদিন যে সম্পদে করেছ বঞ্চিত
সে আর ফিরায়ে দেওয়া তব সাধ্যাতীত ।
মাতা মোর , ভ্রাতা মোর , মোর রাজকুল
এক মুহূর্তেই মাতঃ , করেছ নির্মূল
মোর জন্মক্ষণে । সূতজননীরে ছলি
আজ যদি রাজজননীরে মাতা বলি ,
কুরুপতি কাছে বদ্ধ আছি যে বন্ধনে
ছিন্ন ক’রে ধাই যদি রাজসিংহাসনে ,
তবে ধিক্ মোরে ।
কুন্তী । বীর তুমি , পুত্র মোর ,
ধন্য তুমি । হায় ধর্ম , এ কী সুকঠোর
দণ্ড তব । সেইদিন কে জানিত হায় ,
ত্যজিলাম যে শিশুরে ক্ষুদ্র অসহায়
সে কখন বলবীর্য লভি কোথা হতে
ফিরে আসে একদিন অন্ধকার পথে ,
আপনার জননীর কোলের সন্তানে
আপন নির্মম হস্তে অস্ত্র আসি হানে ।
এ কী অভিশাপ!
কর্ণ । মাতঃ , করিয়ো না ভয় ।
কহিলাম , পাণ্ডবের হইবে বিজয় ।
আজি এই রজনীর তিমিরফলকে
প্রত্যক্ষ করিনু পাঠ নক্ষত্র-আলোকে
ঘোর যুদ্ধ-ফল । এই শান্ত স্তব্ধ ক্ষণে
অনন্ত আকাশ হতে পশিতেছে মনে
জয়হীন চেষ্টার সংগীত , আশাহীন
কর্মের উদ্যম — হেরিতেছি শান্তিময়
শূন্য পরিণাম । যে পক্ষের পরাজয়
সে পক্ষ ত্যজিতে মোরে কোরো না আহ্বান ।
জয়ী হোক , রাজা হোক পাণ্ডবসন্তান —
আমি রব নিষ্ফলের , হতাশের দলে ।
জন্মরাত্রে ফেলে গেছ মোরে ধরাতলে
নামহীন , গৃহহীন — আজিও তেমনি
আমারে নির্মমচিত্তে তেয়াগো জননী
দীপ্তিহীন কীর্তিহীন পরাভব- ‘ পরে ।
শুধু এই আশীর্বাদ দিয়ে যাও মোরে
জয়লোভে যশোলোভে রাজ্যলোভে , অয়ি ,
বীরের সদ্গতি হতে ভ্রষ্ট নাহি হই ।
ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যে আমার প্রিয় দুই চরিত্র ছিলো মহাভারতের কর্ণ আর ইলিয়াডের হেক্টর। এই দুই জনের চরিত্রের মধ্যেও রয়েছে অনেক মিল।
সুনীল গংগোপাধ্যায় কর্ণ কে নিয়ে কর্ন নামের একটি বইই লিখেছিলেন। তার প্রিয় চরিত্রও কর্ণ। তিনি ঐ বইটিতে দেখিয়েছেন অর্জুন, ভীষ্ম এমনকি কৃষ্ণের চাইতেও কর্ণ কেমন করে আরও বেশী মহানুভবতা দেখিয়েছেন। স্বয়ং ভীষ্ম তার শরশষ্যায় শুয়ে কর্নের কাছে তাকে বার বার অপমান করার জন্যে ক্ষমা চেয়ে তাকে বলেছেন যে কর্ণ কৃষ্ণসম বীর। কর্ণকে পছন্দ করেন তাদের জন্যে বইটি অবশ্যপাঠ্য।
Radioactive Skeletons
The ruins of the ancient cities of Mohenjo-Daro and Harappa are extremely radioactive.
Practically nothing is known of their histories, except that both were destroyed suddenly. In Mohenjo-Daro, in an epicentre 150 feet wide, everything was crystallised, fused or melted; 180 feet from the center the bricks are melted on one side, indicating a blast.
Excavations down to the street level revealed 44 scattered skeletons, as if doom had come so suddenly they could not get to their houses. All the skeletons were flattened to the ground. A father, mother and child were found flattened in the street, face down and still holding hands.
It has been claimed that the skeletons, after thousands of years, are still among the most radioactive that have ever been found, on a par with those of Hiroshima and Nagasaki.
But here’s something else to shock you…
http://www.beforeus.com/indusa.htm
@ফারুক,
:guru:
এরা তো বলছে রাজমহলেও আণবিক যুদ্ধ হয়েছিল। অর্থাৎ প্রায় বাংলাদেশেই :-)। ধন্য হলাম শুনে।
@ফারুক,
এই ধরনের ছদ্মবৈজ্ঞানিক দাবিদার অসংখ্য ওয়েবসাইট ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আন্তর্জালে। এগুলোতে গেলে মানুষ যে চাঁদে যায়নি সেটা জানবেন, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে গেলে সেটা হা করে জাহাজ, বিমান সবকিছুকে গিলে ফেলে সেটা জানবেন, কোরান, বাইবেল আর বেদের মধ্যে দুনিয়ার সব বিজ্ঞান ভরা আছে সেটা জানবেন, অন্যগ্রহ থেকে এসে এলিয়েনরা দুইদিন পরপর মানুষজনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে জানবেন, কারো কারো ক্যামেরায় ভুতের ছবি তোলা আছে এগুলো সব জানবেন। কাজেই হরপ্পা-মহেঞ্জোদারোতে বিপুল পরিমাণে তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া গেছে ওয়েবসাইট ঘেটে এটা জানতে পারাটা কোন ব্যাপারই না।
বিশ্বস্ত যে সমস্ত ওয়েবসাইট আছে, যেমন উইকি বা এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায়, এগুলোর কোনটাতেই এই তেজস্ক্রিয়তার কথা জানতেও পারবেন না। আর পারবেনই বা কী করে। সিন্ধু সভ্যুতার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সময়ের লেট হরপ্পা সভ্যতাও ব্রোঞ্জ যুগেই সময় কাটাচ্ছিল। তাও সেই ব্রোঞ্জের ব্যবহার তারা শিখেছিল সুমেরিয়ানদের কাছ থেকে। পারমানবিক বোমার বিস্ফোরণতো অনেক দূরের কথা, সামান্য এক টুকরো লোহাই তারা চোখে দেখে নি তখনো। আমার কথা বিশ্বাস না হলে হরপ্পা থেকে মাটি খুঁড়ে প্রাপ্ত সেই সভ্যতার যন্ত্রপাতিগুলোতে চোখ বুলিয়ে দেখতে পারেন। সামান্য কটা মাটির পাত্র আর সিলমোহর ছাড়া আর কিছুই নেই সেখানে। ওই সময়কার বাকি তিনটা সভ্যতার তুলনায় সিন্ধু সভ্যতা আকারের দিক থেকে সবচেয়ে বড় ছিল সত্যি, কিন্তু বাকিদের চেয়ে উন্নততর ছিল এমন কোন প্রমাণই পাওয়া যায় না।
ব্রোঞ্জ যুগের কৃষিজীবী মানুষেরা মান্ধাতার আমলের অতি সরল যন্ত্রপাতি দিয়ে মাটি ঠুকে ঠুকে মাঠে ফসল ফলানো বাদ দিয়ে পারমাণবিক বোমা নিয়ে লড়াই করছে একে অন্যের বিরুদ্ধে, এর চেয়ে হাস্যকর দৃশ্য বোধহয় আর নেই।
শুনেছি , হরপ্পা বা মহেন্জোদারোর ধ্বংশস্তুপে আনবিক তেজষ্ক্রিয়ার পরিমান স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। কেউ কি সঠিক তথ্য দিতে পারেন?
@ফারুক,
এরকম শুনিনি কখনই। আপনি কোথায় শুনলেন?
আদিল মাহমুদ-আতিক রাঢ়ী, ধন্যবাদ আপনাদের সুচিন্তিত মতামতের জন্য।
এখানে মহাভারত নিয়ে ফরিদ আহমদ একটা আলোচনার সূত্রপাত করেছেন। আমি সে আলোচনায় অংশ নিতে চেষ্টা করেছিলাম।
আমি মহাভারতের আলোচনাটা উত্থাপন গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি। ইউরোপীয় পুরানাদি বিষয়ে অনেকের প্রণয় আছে—কিন্তু আমাদের ভারতীয় পুরানাদি বিষয় সম্পর্কে এক ধরণের অজ্ঞানতা-অন্ধতা আছে। সে ক্ষেত্রে ফরিদ আহমদের এই লেখাটা ব্যতিক্রম।
মহাভারতের মূল কাহিনী বলে কিছু নেই। নানাজনে এর পরিবর্তন-পরিবর্ধন করেছেন। এটা অনেকটা রূপকথার বয়ানের মত যাকে বলা হচ্ছে ম্যাজিক রিয়ালিজম ধারায় লিখিত। মহাভারত পড়লে ইতিহাস পড়ি না। সাহিত্যই পড়ি। তবে এখানে ইতিহাসের উপাদান আছে। এজন্য আমি অনেক আগে বলেছিলাম–ইতিহাসের সত্য আর শিল্পের সত্য এক নয়। আমি শিল্পের সত্য নিয়ে কাজ করি।
কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসের মহাভারত, কালিপ্রসন্ন সিংহের গদ্য মহাভারত, রাজশেখর বসুর মহাভারতে–এই পরিবর্তনগুলো ধরা পড়বে। এদের মধ্যে রাজশেখর বসুর মহাভারত অনেক সহজ সরল এবং অপ্রয়োজনীয় অংশ বর্জিত।
আমি ভেবেছিলাম, এই নোটে মহাভারতের বিষয়াদি নিয়ে একটি জ্ঞানভিত্তিক আলোচনা হবে। আমি কিন্তু সেটারই সূত্রপাত করেছিলাম। আমি আমার বিশ্বাস অবিশ্বাসের জায়গাগুলি নিয়ে কথা বলি নি। আমি নানা জনের মতামতটা তুলে ধরেছিলাম। আমি মনে করি না যে আমাকে ঘোষণা দিয়ে বলতে হবে–আমি নাস্তিক। বয়স বাড়লে অনেক নাস্তিক আস্তিক হয়ে পড়েন। তখন কুপ মণ্ডকতার কারণে সেই রূপান্তরিত নাস্তিক বেশী বিপজ্জনক হয়ে পড়ে।
আলোচনাটা রীতি অনুযায়ী চললে এগুলো বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলা যেত। কিন্তু আলোচনার সূত্রপাতের পরেই আমাকে কজন ধরেই নিয়েছেন–আমি হিন্দু নামের অধিকারী বলেই আমি হিন্দু মৌলবাদি তত্ত্ব বা তথ্য গেলাতে চেষ্টা করছি। এটা ভুল। আমি নিজে কোন গাজাখুরি বিশ্বাস আস্থা রাখি না। সকল প্রকার মৌলবাদের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান সুস্পষ্ট। এটা আমার বন্ধু বিপ্লব রহমান জানেন।
আমার ব্যক্তিগত ধারণা মৌলবাদ সকল ধর্মেই আছে। মুসলমান মৌলবাদের পাশাপাশি হিন্দু মৌলবাদের সংখ্যাটাও কম নয়। আসলে যে কোন বাদকে কঠোরভাবে ধরে বসলেই মৌলবাদের জন্ম হতে পারে।
ব্যক্তি আক্রমণ না করে আলোচনায় আসুন। আলোচনায় ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ঝাটা মেরে তাড়ানোতে গৌরব নেই।
মহাভারত সাহিত্য, কিন্তু সেটা ইতিহাস নির্ভর সাহিত্য কিনা ? এটা নিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু যদি সেটা ইতিহাস নির্ভর সাহিত্য হয়ে থাকে তবে সেই ইতিহাস জানার একটা চেষ্টা হিসাবে কুলদা রায় ‘ ক্রিয়ার্থভিত্তিক ভাষা’ সম্পর্কে যা বলেছেন তাকে দেখা যেতে পারে।
আমারতো মনে হয় রামায়নের দেবতা-রাক্ষস লড়াই আসলে আর্যদের সথে দক্ষিণ ভারতিয়দের লড়াই এর ইংগিত বহন করে। পরে বিজয়ীরা নিজেদের মত ইতিহাস/সাহিত্য লিখেছেন। পুরো সত্য তাতে পাওয়া না গেলেও তখনকার জীবনাচার, মূল্যবোধের কিছু খোঁজ পাওয়া যায়। এগুলোর সাহিত্য মূল্যের পাশাপাশি কিছু ঐতিহাসিক মূল্য আছে বলেই আমার মনে হয়।
@কুলদা রায়, ভাই আপনি এত কড়া রিএ্যাক্ট করেন কেন ? ভিন্ন সুরের উপস্থিতী থাকবেই। বা ভিন্ন অর্থ কেউ করতেই পারে যা আপনি বোঝাতে চাননি, কিন্তু একটু ধৈর্য্যধরে আবার সেটা বলা যেতে পারে। দেখুন না প্রতি মন্তব্যগুলো আরেকটু অন্য ভাবে করা যায় কিনা ? মনে হচ্ছে, অযথাই কিছু ভুল বোঝা বুঝি হচ্ছে।
ওই একই সমস্যা । মুসলমানরা কোরান হাদিস কতটা বিজ্ঞান ভিত্তিক আর সার্বজনীন জিনিস তা প্রমান করার জন্যে ব্যস্ত, খৃষ্টানরা ব্যস্ত তাদের বাইবেলকে সেরকম প্রমান করতে। হিন্দুরা তাহলে পিছিয়ে থাকবে কেন? আর সে প্রচেষ্টা থেকেই মহাভারতের আধুনিক বিশ্লেষন। তাই অনেক হিন্দু বের করেছে মহাভারতে বর্নিত রথ হলো- মহাকাশযান বা বিমান, ব্রহ্মাস্ত্র হলো একধরনের ক্ষেপনাস্ত্র ইত্যাদি। হর হামেশা ইন্দ্র, বরুন, সূর্য প্রমুখ দেবতারা এসে বিশেষ করে মেয়েদেরকে বরস্বরূপ পূত্র উপহার দিত(ভুলেও মেয়ে দিত না, দিলেও তার সংখ্যা খুব কম) যাকে বলা হয় ভিন গ্রহের উন্নত সভ্যতার মানুষ এসে বর্ন সংকরের মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষকে উন্নত করে দিয়ে গেছে ইত্যাদি। মহাভারত বা রামায়ন যে স্রেফ বহু কবির কল্পনার বাস্তবায়ন সেটা হিন্দুরা মাঝে মাঝেই ভুলে যায়। কট্টর পন্থি হিন্দুরা বিশ্বাস করে এসব মহাকাব্যের প্রতিটি ঘটনা বাস্তব ও ঐতি্হাসিক যদিও আজ পর্যন্ত তার ছিটে ফোটাও প্রমান করা যায়নি। তার পরেও মনে হয়- রচনাকারীদের সমসাময়িক রাজা বাদশাদের কথা প্রসংগ ক্রমে চলে এসেছে মুলত তাদেরকে তোষামোদ করে কিছু প্রাপ্তির আশায় যে প্রবনতা সব সময় ছিল প্রতিটি সভ্যতায়। মহা লম্পট এরশাদকে তোয়াজ করে কবিতা লিখতেও তো আমরা কত কবিকে দেখেছি। এটা মহাকাব্যের যুগ হলে মহালম্পট এরশাদ নিশ্চিত ভাবে প্রেমের দেবতা বা প্রেমের দেবতার বরপ্রাপ্ত বলে বর্নিত হতো । এ ধরনের ঘটনা আমরা গ্রীক পুরানেও বহু পাই।
@ভবঘুরে,
এ ক ম ত। :yes:
@ভবঘুরে,
আজকালকার হিন্দুরা এসব কেচ্ছা কাহিনী ভক্তিভরে এখনো পড়লেও কজনায় বিশ্বাস করেন তাতে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এখন অনেকটা অভ্যাস আর নিজেদের একটা স্বতন্ত্র আইডেন্টিটি বজায় রাখার খাতিরেই এগুলোর পূজা করেন বলে আমার ধারনা। পূর্বপুরুষ যা করে গেছে তার জের পুরোপুরি কাটতে আরো বেশ কিছু সময় লাগবে।
২০০৬ সালে একবার আমার এক দক্ষিন ভারতীয় সহকর্মী (যে নিজেকে নাস্তিক দাবী করত) আমাকে সেই নাসা থেকে তোলা হনুমানের সেতুবন্ধনের ছবি দেখিয়ে চমকে দিয়েছিল। এখানে দেখতে পারেন।
যথারীতি আরো অজস্র হিন্দতুবাদী সাইটে এর বিশদ বর্ণনা আছে।
@কুলদা রায়, শুধু আমি যেই মন্তব্য করতে যাচ্ছি সেটাই নয়, উপরে আরও আকাশ মালিক, পথিক, ফরিদ আহমেদ, আদিল মাহমুদ, রৌরব, নৃপেন্দ্র সরকার উনাদেরও প্রতিক্রিয়া দেখে, এটা কিন্তু অস্বিকার করার কোন উপায়ই নেই যে- মানুষ আনন্দ পেয়ে গিয়েছে। এই আনন্দের উৎসস্থল হিসেবে আপনাকে দেখে কিন্তু আমি কিছুটা শোকাঘাতপ্রাপ্তও বটে। আমি বজ্রাঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলাম আপনাকে হানিমুন, রাক্ষস- খোক্কস ইত্যাদি হাবিজাবি, সুশ্রবনীয় হ-য-ব-র–ল ব্যাখ্যা দিয়ে হালাল করে ফেলার চেষ্টা করতে দেখে। অতপর গ্রহানুঘাতপ্রাপ্ত হই আপনার সুডোস্কলারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য আকাশ মালিকের সাথে আপনার আচরণ দেখে। মহাভারতের আপনিপ্রদত্ত ‘হলদে-সবুজ ওরাঙ-ওটাং’ ব্যাখ্যা যে সংবেদনশীল পাঠকদের কাছ থেকে এক বিশাল ঝাঁটা খেয়ে যাবে,সেটা আগে থেকেই অনুমান করে, চাতুরতার সঙ্গে আপনার ভঙ্গুর ভাবনাবলীর জন্য শিল্ড হিসেবে ব্যাবহার করলেন আপনি রবীন্দ্রনাথকে। শুধুমাত্র এই কান্ডের জন্য আপনার যতোটুকু অ্যাবিউস প্রাপ্য রয়েছে, আমি একা মানুষ একা একা একটা মন্তব্য লিখে সেই প্রাপ্তিনিশ্চিত করতে গেলে ওই মন্তব্যের আকার হবে আরেকটা মহাভারতের সমান। কুলদা রায়ের কোয়্যাকারির বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার ক্ষেত্রে প্রথম হবার জন্য আকাশ মালিককে স্যালুট, এবং অন্যান্যদেরও স্যালুট যারা এর বিরুদ্ধে বলেছেন। বস্তুত সবাইকেই স্যালুট যে অন্তত কেউ আমরা এর পক্ষে বলিনি।
@ফরিদ আহমেদ, লেখা খুব ভালো লেগেছে। এরকম আরও মহাভারতের ছোট ছোট ইন্টারেস্টিং গল্পগুলো মাঝে মাঝে লিখে আমাদের উপহার দিয়েন। আমি মহাভারতের অশ্ব্মেধ পর্ব থেকে একটা ঘটনা শুনেছিলাম। ঘটনাটি দাড়ালো এরকম যে- পার্শ্ববর্তী এক রাজ্যের রাজা নীলধ্বজের রাজপুত্র প্রবীর অশ্ব্মেধ-যজ্ঞাশ্ব ধরিলে পার্থ তাহাকে রণে পরাজিত ও নিহত করেন। তো ওই রাজার বউ জনা এই ঘটনা শুনে নীলধ্বজকে বলছে- “তো তুমি যে নিজেকে পুরুষ দাবী করো, কই দেখি তোমার টেস্টোস্টেরন কোথায়। তোমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে, পুত্রহত্যার প্রতিশোধস্বরূপ কোথায় তুমি ঐ যজ্ঞের ঘোড়া অর্জুনের অবরোহী কোলনে ভরে দিবা, অবশ্যই মুখোগহ্বর দিয়ে, তা না তুমি ওর সাথে বসে ফস্টিনস্টি করছো। ওঠো, উঠে তরোয়াল-ফরোয়াল ধার দিয়ে রেডি হও এইবেলা, যুদ্ধ করবে ওর সঙ্গে। আর না যদি করো খুব ভদ্রভাবে বলে দিচ্ছি- আমি আত্নহত্যা করবো। And I seriously mean it!” জনার প্রতিক্রিয়া আমি কুলদা রায় পদ্ধতিতে নিজে নিজে যেমন চাই তেমন করে লিখলাম। এর একটা স্কলারি নামও রয়েছে, একে বলে “অপদার্থভিত্তিক ভাষা”।
@আল্লাচালাইনা, আপনাকেও সেল্যুট। ভাল লাগল আপনাদের ঝাটাগিরি দেখে। তাহলে ঝাটাগিরি করারটাই আপনাদের কাজ।
আমি একটি ভাষাতত্ত্বের বিষয় তুলে ধরেছিলাম। এবং এ বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের অবস্থান কি ছিল–সেটা তুলে ধরেছি। করেআমি কি কখনো দাবী করেছি–মহাভারত বা পুরানাদির অলৌকিক ঘটনাগুলো আমি বিশ্বাস করেছি? এগুলোর কি রকম লৌকিক ব্যাখ্যা কলিম খান ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধি অনুসারে করছেন–তার উল্লেখ করেছি।
আশা করি আপনাদের আরও মজার খোরাক জোগাবে আমার এই মন্তব্য। এ বিষয়ে আমার বন্ধু বিপ্লব রহমান কি বলেন? কি বলেন আমার শিক্ষক নৃপেন্দ্র সরকার?
এবং অভিজিৎ রায়, আপনি আমাকে নীতিমালা দেখিয়েছিলেন–এখানে ব্যক্তিগত অসুয়া প্রকাশের সুযোগ নেই। আপনি এই লোকটির মন্তব্য দেখে কী বলবেন?
আর ফরিদ আহমদের বিষয়টা আমি বেশ বুঝতে পেরেছি। ধন্যবাদ।
@কুলদা রায়, আপনি দাবী করে বলছেন আপনারা বক্তব্য গ্রহনযোগ্য স্কলারিক। বলাই বাহুল্য আপনার স্কলারি বক্তব্যটি যদি হয় এই যে- “মহাভারত বর্ণে বর্ণে সত্য, সেই সময়কার ইতিহাস” ভ্রু মানুষ তুলবেই। এবং ভ্রু তারা তুললে পরে বলছেন-
আর এখন এসে নীতিমালা দেখিয়ে বলছেন- “এখানে ব্যক্তিগত অসুয়া প্রকাশের সুযোগ নেই।”- আপনি নিশ্চিত তো কৌতুক করছেন না আপনি আমাদের সাথে? হয়তোবা দেখা যাবে পরিশেষে “I was joking” বলে সকলকে হাসিয়ে দিয়েছেন?
আপনি জানেন এই ফোরামের সদস্যদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই নাস্তিক। শুধুমাত্র আপনার কূ্যোর ব্যাঙ মন্তব্যটির জন্যই সকল নাস্তিক বোধহয় এর পরবর্তী আপনার প্রত্যেকটি কথার মোটিফ খোঁজা শুরু করা উচিত। এবং এর পরবর্তী আপনার প্রথম মন্তব্যই-
বস্তুত এইবক্তব্যটি করে ফেলার পর আমার মনে হয় আপনার প্রস্তুত হয়ে পড়া উচিত যে এর এর জবাব আসবে একটা। এবং সেই জবাবটাও যে মধুর হবে না এটা সম্পর্কে আপনার অবগত হওয়া উচিত এই মন্তব্যটি করার পর-
ঠিক যাচ্ছেনটা কোথায়? আপনি বলছেন –
পুরানাদির অলৌকিক ঘটনাগুলো আমি বিশ্বাস করিনি।
আপনি কি বিশ্বাস করেন না করেন সেটা নিয়ে তো কারই মনে হয়না কোন সমস্যা থাকা উচিত। আপনি বলতেই পারেন যে- “হ্যা আমি মনে করি মহাভারত ইতিহাস, সো ওয়াট?” কোনই সমস্যা থাকতো না। সমস্যা শুরু হবে যখন আপনি বলবেন যে- আমার এই বক্তব্য স্কলারি। লোকজন মজা পেয়ে হাসাহাসি করবে আর তারপরও আপনি বিন্দুমাত্র সাবমিসিভ না হয়ে বলে বসবেন-
এ বিষয়ে আমার বন্ধু বিপ্লব রহমান কি বলেন? কি বলেন আমার শিক্ষক নৃপেন্দ্র সরকার?…………এবং অভিজিৎ রায়, আপনি আমাকে…………।
শুধুমাত্র এই কারণেই আপনাকে প্রচন্ড প্রচন্ড সন্দেহজনক একটা বস্তু হিসেবে দেখা উচিত যে- আপনার নিজের বক্তব্য ও কর্মকান্ডের ডিফেন্সের জন্য অন্যান্য মানুষজনের সহায়তার দরকার হয় আপনার। এবং যেই অন্যান্য মানুষজনগুলোর বক্তব্যের গ্রহনযোগ্যতা আপনি জানেন যে আপনার চেয়ে বেশী। বেড়াল সাজার দরকারটা কি আপনার? আপনার দাবী যে- “মহাভারত অক্ষরে অক্ষরে সত্যি ইতিহাস” সম্পর্কে আপনি যদি এতোটাই আত্নবিশ্বাসী হন তবে লিঙ্ক পোস্ট করে দিন আপনার দাবীর যৌক্তিকতার, ফাঁকা ঘোষণা দিয়ে লাভটা কি?
অন্য সকলকে আমার একটা কথাই বলার আছে। কুলদা রায় এই পর্যন্ত যা যা বলেছেন তার একটিও তিনি ডিফেন্ড করার চেষ্টা করেননি, সম্ভবত পারবেন না বলেই। আমি যা যা বলেছি তার সব কিছু আমি ডিফেন্ড করতে পারি এবং করেছি। কুলদা নিজেই প্রথমে আগ্রাসী হয়ে, তারপর ইটের বদলে পাটকেলটি স্বভাবতই খানিকটা জোরে লাগার পর নাঁকিকান্না কেঁদে য়াপনার কাছে সহানুভুতি চাইলে পরে আপনার সতর্ক হওয়া উচিত এ আপনার কাছে কোন মলম বেচারচেষ্টা করছে।
@আল্লাচালাইনা,
কুলদা রায় হলেন আমাদের রাসেল বা ফারুক সাহেবের গোত্রীয় মানুষ। যার যার ধর্ম সত্য প্রমান করার জন্য ব্যস্ত। যতক্ষন আমরা ইসলাম নিয়ে কথা বলেছি উনি তাল দিয়ে গেছেন এবং সমর্থন দিয়ে গেছেন আমরা যা বলছি সব ঠিক বা কম পক্ষে যুক্তি সঙ্গত। এখন সুযোগ বুঝে নিজের ঝাপি খুলে সাপ বের করে খেলা দেখানোর পায়তারা করছেন। আমরা এদেরকে খুব ভাল করে চিনি। আমরা তো এই সমাজেই বাস করি। ভিন গ্রহ থেকে তো আসি নি। বাই দা ওয়ে, কথা যখন উঠলই- কোন একটি ভিন গ্রহে যদি সভ্য জীব থেকে থাকে তারাও কি ধর্ম নিয়ে এমন বাড়াবাড়ি করে? বা ক্যচাল করে ? কেউ জানেন নাকি এ গোপন খবর ?
@ভবঘুরে,
কুলদাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন এর উত্তর। ও ওর বোগাস সুডোসায়েন্স খাটিয়ে, চলক-ধ্রুবক কিছু উল্টাপাল্টা করে বের করে দিবে এর উত্তর। কথা কি বলে শুনেছেন?
শুনলে ইচ্ছে করে না মনের কষ্টে বৃন্দাবন চলে যাই? গিয়ে কি করবো; ঘুরবো, ফিরবো খাবো হয়তোবা? ওর হান্টার-গ্যাদারার ফোরফাদারদের তাদের ২২ বছরের গড় আয়ু নিয়ে বিমান-টিমান চালিয়ে যুদ্ধ করার পাশাপাশি কিছু কাব্য চর্চাও করেছিলেন দেখা যাচ্ছে। তো কুলোদা বলছে- এইটা হচ্ছে- প্রথমত, সভ্যতা; দ্বিতীয়ত জ্ঞানের। ধার করা সভ্যতা বলতে কুলোদা কি বোঝাতে চায় এটা সম্পর্কে তার ব্যাখ্যা আশা করছি।
@কুলদা রায়,
আর আমার বিষয়টা আপনি কী বেশ বুঝতে পারলেন সে বিষয়টা বোঝার জন্য একটা বেশ ভাল ব্যাখ্যার আশায় রইলাম। ধন্যবাদ।
@আল্লাচালাইনা,
আপনি কি ধারনা করেছেন কুলদা মহাভারতের কেচ্ছা কাহিনী সত্য বলে প্রচারের চেষ্টা চালিয়েছিলেন?
ওনার সম্পর্কে যে অভিযোগ করলেন তা অন্তত আমার কাছে সঠিক মনে হচ্ছে না। যদিও পথিকও একই ধরনের আপত্তি করেছিলেন। আমার কাছে মনে হয়েছিল যে কুলদা মহাভারত সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন মাত্র। কাউকে রবীন্দ্রনাথের প্রভাবে এসব গালগল্প বিশ্বাস করাতে চাইছিলেন মনে হয়নি।
@আদিল মাহমুদ, কুলদা রায় এমন কিছু কথা বলেছেন যা প্রতিটা মানুষেরই অ্যাড্রেনাল রেসপন্স সুট করে। মানুষ সতর্ক হয়ে ওঠে। “তুমি কি আমার কাছে কিছু বেচতে চাও নাকি হে বাপু” ধরণের প্রশ্ন জাগে মাথার ভেতর। কুলদা রবীন্দ্রনাথকে তার প্লজিবল সাউন্ডিং হোকাস পোকাসের ভেতর টেনেছিলো শুধুমাত্র এই ভরসাতেই যে- একজন সেইন মানুষ হিসেবে রবীন্দ্রনাথের গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে। তবে কুলদা দাবীকৃত কোয়্যাকারিপূর্ণ কিছু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন বলে আমি শুনিনি। আর রবীন্দ্রনাথের যেই বক্তব্য উনি উদ্ধৃতি দিয়েছেন তা হয় উনি বুঝতে ভুল করেছেন নয় ইচ্ছা করে ভুল বোঝাচ্ছেন। রবীন্দ্রনাথ ঐ বক্তব্য দিয়ে কান দিয়ে জন্মগ্রহন, রাক্ষসে ধরা= হানিমুন ইত্যাদি হালাল করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন- এটা কোনভাবেই দাবী করা যায় না। আর কান দিয়ে জন্মগ্রহন= নিত্যই ঘটে, রাক্ষসে ধরা= হানিমুন ইত্যাদি সত্য না হয়েও মহাভরত ইতিহাস হয়ে উঠতে পারে।
@আদিল মাহমুদ,
আমারও তাই মনে হচ্ছে। অনেকেই মহাভারতীয় রথ, যুদ্ধাস্ত্র বর্তমান কালের যুদ্ধাস্ত্রের সাথে একটা সামঞ্জস্য করার চেষ্টা করে। কুলদা তাদের কথাগুলোই বলতে চেষ্টা করেছে। নিজের কথা নয়। আমি যেমন মহাভারতকে ইতিহাস মনে করি না, কুলদাও মনে করে না আমার ধারণা। আমি আশা করব কুলদা তার নিজের অবস্থান নিজেই পরিস্কার করবে।
আমার মনে হয় কুলদা সাহিত্যঘেষা একটু বেশী। মহাভারত থেকে সাহিত্যটাই নিয়ে আসতে চায়, যেমনটা ফরিদ করছেন, রবিঠাকুররা করেছেন। মহাভারত যাঁরা লিখেছেন তাঁদের পান্ডিত্যের প্রসংসা আমিও করি। এত সুন্দর কাহিনী বিন্যাস, এত কিছু কল্পনা করল কী করে! এত কিছু চিন্তা করতে করতে অনেকের প্রতি এই মহারথীরা অন্যায় করে ফেলেছেন এটা ভেবেও দেখেন নি। এঁরা যুথিষ্ঠিরকে মহামানব বানাতে যেয়ে দ্রৌপদীর উপর যে অন্যায় করা হয়েছে ভেবেও দেখেন নি। এখনকার সাহিত্যিকরা এটা ধরে ফেলছেন। মজার ব্যাপার নয় কি?
এরকম অনেক কাহিনী আছে এর মধ্যে। আমি তো অপেক্ষা করছি, কুলদা এবং ফরিদ দ্রৌপদী-কর্ণ ছাড়া নতুন কিছু নিয়ে আসবেন।
পৌরাণিক কাহিনী আমারও খুব পছন্দ! মহাভারত বহুবছর আগে পড়ার চেষ্টা করেছিলাম, এবং অন্যান্য অনেকের মতোই আমিও এত্তো এত্তো চরিত্র আর নামের খেই রাখতে না পেরে ওই প্রজেক্ট বাদ দেই। আপনার সেই তৃতীয়-পক্ষ-মারফত-অনুরুদ্ধ ব্যক্তিকে আবার একটা তাড়া লাগান না, গ্রীক মিথোলজি নিয়ে লিখতে?
কেয়ার আবৃত্তি আগে শুনিনি, দারুণ!
আর পোস্ট নিয়ে লোকজন যা বলার বলে দিয়েছে, আমি আর তাই কিছুই বললাম না 🙂
@স্নিগ্ধা,
সেবা প্রকাশনীর কিশোর রামায়ণ মহাভারত পড়ে ফেলেন, অতটা জটিল না ফলো করা; যদি না কিশোর শব্দটায় রিজার্ভেশন না থাকে 🙂 ।
@আদিল মাহমুদ,
এই বয়সে কিশোরোপযোগী মানে হলো বালখিল্য, এখন ঐগুলা ক্যামনে পড়ি 🙁
@স্নিগ্ধা,
চোখ কান বন্ধ কইরা পইড়া ফালান (চোখ মাঝে মাঝে খুলতে হবে অবশ্য)। মজা কম পাইবেন না, গ্যারান্টিড। কে কি কইল কানে নিবেন না।
কিশোর ভার্ষনেই যেই জিনিস 🙂 ।
@আদিল মাহমুদ,
আরে না না – ঠিক সেটা মীন করি নাই, এই বয়সে এসে ‘কিশোর’ভার্সন যে কোন বইই পড়তে গেলে মনে হবে – “হায় হায়, বুড়া হয়ে গেলাম কিন্তু বড় হলাম না, এখনও ছোটদের জন্য লেখা ভার্সন পড়তে হয় 🙁 “
@স্নিগ্ধা,
এইই সুযোগ নিজেকে চির কিশোর ভেবে নেবার। “বুড়া” স্নিগ্ধার মত নিন্দুকদের দুষ্ট কথায় কান দেবেন না।
@স্নিগ্ধা আপু,
আপনি উপেন্দ্রকিশোরের রচনাসমগ্রটা আজিজ থেকে কিনে নিতে পারেন। পুরাণ-মহাভারত-রামায়ণের দারুণ সংগ্রহ তবে কিশোর এডিশন তো- সেন্সরড! 🙂 কর্ণের কাহিনীর প্রথমদিকটা ওখানে পাবেন না। 🙁
আমি ছোটবেলায় উপেন্দ্রকিশোরের রামায়ণ-মহাভারত প্রায় মুখস্থ করে ফেলেছিলাম, পুরাণের গল্প বলে হিন্দু বন্ধুদের অবাক করে দিতাম।
অফটপিকঃ (লেখক) মূল পোস্টে দুর্বাশা মুনি বলে উল্লেখ করা আছে। বানানটা মনে হয় দুর্বাসা হবে। শকুন্তলাতেও দুর্বাসা বানান ব্যবহার করা হয়েছে। একটু দেখে নিয়েন প্লিজ।
@পথিক, রাজশেখর বসুর মহাভারতটা সবচেয়ে ভাল হবে। ছোট। কিন্তু প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো আছে। সব বয়সীরাই পড়তে পারবেন। সুখপাঠ্য।
@কুলদা রায়, অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম কোনটা পড়লে ভাল হবে? আপনি সাহায্য করলেন দেখে খুব ভাল লাগল। রাজশেখর বসুর মহাভারতটা এইবার পড়ে ফেলব আশা করি। কয়েকমাস লাগলেও এইবার পড়ব।
@পথিক,
মহাভারত বাংলায় পড়ার সৌভাগ্য আমার হয় নি। কাজেই এই রকম ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। ভূমিকাতেও উল্লেখ করেছি বিষয়টা।
দুর্বাসা মুনির নামের বানানটা ধরিয়ে দেবার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ। ঠিক করে দিলাম বানানগুলো মূল পোস্টে।
ধন্যবাদ স্নিগ্ধা, আমি আবৃত্তি করার চেষ্টা করি, কিছু হয় , কিছু হয় না। আপনার জন্যে দুটো আবৃত্তি পাঠিয়ে দিচ্ছি আপনার খেঁড়োখাতায়। শুনবেন?
@স্নিগ্ধা,
ক্যাথেরীনার আবৃত্তির সিডি “একজন অনিমেষে আজো জেগে আছে”-র সবগুলো কবিতার আবৃত্তি এখানে রাখা আছে।
যাক কোরানে রূপকের তেলেসমাতি শুনতে শুনতে যখন বোরড্ হচ্ছিলাম তখন নুতন এক অধ্যায়, মহাভারতে প্রতীক বা রূপক ব্যবহারের কাহিনী জানতে খারাপ লাগবেনা আশা করি।
@ব্রাইট স্মাইল্, হা হা হা। বেশ লাগল শুনতে।
মহাভারত ইউটিউবে পাওয়া যায়। লিগ্যালি। ১১০ টা পার্ট আছে। আমার মাঝে মাঝে দেখতে মজা লাগে-একবার দেখতে শুরু করলে গল্পের টানে শেষটা না দেখে ওঠা মুশকিল। আমি তখন ১১-১২ ক্লাসে পড়তাম-যখন এই সিরিয়ালটা ভারতে সব থেকে বেশী জনপ্রিয় হয়েছে। হিন্দুত্ববাদের উত্থানের পেছনে এই মহাভারত সিরিয়ালের একটা ভূমিকা আছে। কারন এত ব্যাপক ভাবে আদিভারত নিয়ে এর আগে কেও জানায় নি-কেও জানতেও চাই নি।
httpv://www.youtube.com/watch?v=EwnDC3_fVgM
মহাভারত একটি সাহিত্য-মহা সাহিত্যই বলা চলে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এটিই বৃহত্তম সাহিত্য।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কোন ঐতিহাসিক প্রমান নেই। মোটামুটি ভাবে মহাভারতের সংস্কৃত থেকে এর রচনাকাল আন্দাজ করা যেতে পারে-যা হবে প্রায় গৌতম বুদ্ধের জন্মের কয়েকশো বছর আগে। এবং ভাষা থেকে এটাও প্রমানিত হয় প্রায় ৫০০ বছর ধরে গ্রথিত হয়েছে এ কাহিনী।
সাহিত্যের প্রধান স্তম্ভ লেখকের চিন্তার ব্যাপ্তি-সেটাই মহাভারতে আমরা দেখি। আমাদের জীবনে যেসব উপলদ্ধি-তার প্রায় সবটাই মহাভারতে
আছে।
এগুলোর মধ্যে বাস্তব, বিজ্ঞান এসব নিয়ে আলোচনা করার মানে হয় না। সাহত্যের ভিত্তি কল্পনা-সেই কল্পনার জগতেই মহাভারত চিরজাগরুক।
মুক্তমনাতে কমেন্ট পোস্টের ব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছে। এখন কমেন্ট করলে পুরো পেজ নতুন করে লোড হবেনা, এতে সময় অনেক কম লাগবে। নতুন ব্যবস্থায় কমেন্ট করতে কারো সমস্যা হলে আমাকে মেইল করে জানান।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
উন্নতি দেখা যাচ্ছে।
কমেন্ট করলে দেখি নিমেষেই আপ্লোড হয়ে যাচ্ছে।
@রামগড়ুড়ের ছানা, ধন্যবাদ। সুফল দেখতে পাচ্ছি। :yes:
নতুন সিস্টেম ভালোই কাজ করছে মনে হচ্ছে 🙂
@রামগড়ুড়ের ছানা,
ডেভু ভায়া, টেকি ব্যাপারস্যাপার একেবারেই বুঝি না, তাই আমার প্রশ্নটা নাদান-টাইপ মনে হলে কিছু মনে নিয়েন না, প্লিজ।
মুক্তমনার নীড়পাতা, মনে হয়, দু’মিনিট পর পর অটো রিফ্রেশ হয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এতো ঘন ঘন রিফ্রেশ হওয়ানোর প্রয়োজন আছে কি? খেলার লাইভ কমেন্ট্রি প্রচার হলে সেটার যৌক্তিকতা থাকতে পারতো।
ভুল বললাম কি?
@একজন নির্ধর্মী,
পেজ রিফ্রেশ টাইম বাড়িয়ে দিলাম। রিফ্রেশ করা হয় যাতে নতুন পোস্ট এলে পাঠক দেখতে পারেন কিন্তু এত ঘন ঘন রিফ্রেশ হবার দরকার আসলেই নেই।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
এটা খুব ভাল একটা হয়েছে। :yes:
নাথবতী অনাথবতী– প্রথম পর্ব
Get this widget | Track details | eSnips Social DNA
দ্বিতীয় পর্ব–
Get this widget | Track details | eSnips Social DNA
তৃতীয় পর্ব–
Get this widget | Track details | eSnips Social DNA
শের্ষ (চতুর্থ) পর্ব–
Get this widget | Track details | eSnips Social DNA
@কুলদা রায়,
লিঙ্কগুলো দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
Caption তো, তাই টাইপোটা ঠিক করে দিচ্ছি।
নাথবতী অনাথবৎ
মহাভারত সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন–ইহা কোনও ব্যক্তি বিশেষের রচিত ইতিহাস নহে, ইহা একটি জাতির স্বরচিত স্বাভাবিক ইতিহাস। রামায়ণ-মহাভারত আমাদেরই ইতিহাস।
রাজমেখর বসু বলেছেন–প্রচুর কাব্যরস থাকলেও মহাভারতকে মহাকাব্য বলা হয় না, ইতিহাস নামেই এই গন্থের প্রসিদ্ধি।
কুরুক্ষেত্রযুদ্ধের কাল খ্রী-পূ ৩০০০ অব্দের কাছাকাছি এবং এর কিছুদিন পরে মহাভারত রচিত। রচনাকারীর নাম কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস। এই ব্যাস আসলে একটি পদবী। প্রাচীন রচনাকারগণকে ব্যাস নামে অভিহিত করা হত।
মহাভারতকথা স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক ব্যাপারের বিচিত্র সংমিশ্রণ, পড়তে পড়তে মনে হয় আমরা এক অদ্ভুত স্বপ্নদৃষ্ট লোকে উপস্থিত হয়েছি। সেখানে মানুষ ও দেবতার মধ্যে অবাধে মেলামেশা চলে। ঋষিরা হাজার হাজার বছর ধরে তপস্যা করেন। হিড়িম্বা রাক্ষুসী। তিনি ভীমকে নিয়ে আকাশে উড়ে চলে গেলেন। ইত্যাদি। এগুলি মজার এবং গাঁজাখুরি বলে মনে হতে পারে।
সেকালে গৌরবে বহুবচন বলে একটি শব্দ ছিল। সে কারণ যদি বলা হয়–কৃষ্ণ সত্তুর হাজার বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচেছিলেন, তখন হাজারটি ছেটে ফেললেই কৃষ্ণের আসল বয়সটি পাওয়া যাবে।
দেবতা, মানুষ, রাক্ষস, নাগ–এরা সবাই মানুষ। তবে এরা ভিন্ন ভিন্ন গোত্র, জাতি। যেমন ভীমকে যখন দুর্যোধন জলে ফেলে দিল বিষ খাইয়ে–তখন ভীম জলের নিচে পাতালে নাগলোকে চলে গেলেন। সেই নাগকে সাপ বললে তো বিপদ। আসলে নাগরা সমুদ্রতীরবর্তী কোন গোষ্ঠি। ভীম সম্পর্কে তাদের নাতি হয়।
কাম্যক বনে ভীমকে দেখে হিড়িম্বা নামে এক রাক্ষুসী মোহিত হয়ে গেল। মায়া করে সুন্দর এক যুবতী হয়ে ভীমের কাছে এল। আসলে এই রাক্ষসরা বনবাসী গোষ্ঠি। এরা সেজে টেজে থাকত না। কিন্তু ভীমকে প্রেমে ফেলার জন্য যখন সে সুন্দর করে সাজল তখনতো তাকে সত্যি সত্যি মানুষের মতই সুন্দরী ছাড়া অন্য কিছু মনে হয় নি ভীমের। এই সেজে আসাটাকেই ব্যাসগণ একটু কায়দা করে বলেছেন–মায়া করেছেন। আর আকাশে উড়ে যাওয়া বিষয়টি আরও সোজা। ভীমকে বিয়ে করার পরে তাকে নিয়ে নির্জন হানিমুনের জায়গার দিকে নিয়ে গেল যেখানে কোন মনূষ্যবাস নেই। এই পথটি হিড়িম্বাই জানত–ভীম জানত না। রচনাকারী এই নির্জন হানিমুন প্লেসের দিকে যাওয়াটাকেই আকাশে উড়ে যাওয়া বলছেন।
এই রকমভাবে মহাভারত পড়ার কৌশলটি জানলে তখন আর একে গাঁজাখুরি মনে হয় না। এই রহস্যের পেছনের কারণটি হল–মহাভরতের ভাষাটা হল ক্রিয়ার্থবিধিতে লেখা। ফলে আমরা যারা বর্তমানে লোগোসেন্ট্রিক বা প্রতীকবাদি ভাষা ব্যবহারে অভ্যস্ত তারা কিন্তু এই কৌশলটি অর্জনে অক্ষম। এক সময় লোগোসেন্ট্রিক ভাষা ছিল না–ছিল ক্রিয়ার্থভিত্তিক ভাষা। শব্দ ছিল বহুরৈখিক।
এই বিষয়টি রবীন্দ্রনাথ বুঝেছিলেন। তার অনুপ্রেরণায় হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৩০ বছরের গবেষণায় বঙ্গীয় শব্দকোষ রচনা করেন। অধুনা কলিম খান তার সারা জীবনের গবেষণার ফল হিসাবে এই ক্রিয়ার্থভিত্তিক ভাষাটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক রবি চক্রবর্তীর সহযোগে। এই ক্রিয়ার্থবিধি অনুসরণ করে আমাদের প্রাচীন গ্রন্থগুলোকে পাঠ করলে সেকালের ইতিহাসটি পাওয়া যাবে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত পড়ার জন্য–
[img]http://sphotos.ak.fbcdn.net/hphotos-ak-snc3/hs005.snc3/11240_173986197107_173954532107_3458439_3321252_n.jpg[/img]
@কুলদা রায়,
ওরে বাপরে! দেবতা, রাক্ষস, নাগ–এরা সবাই মানুষ। নাগ সাপ নয়, শুন্যে উড়া অর্থ হানিমুনে যাওয়া। এতো দেখি মহাভারতের ভেতর আরেক মহাভারত। জলের উপর দিয়ে হেটে যাওয়াটা যেন কী হয়? মহাভারত পড়ার আগে আমার মত আপাদমস্তক যারা ঘোর নাস্তিক হয়ে গেছেন তারা ক্রিয়ার্থবিধিতে লেখার ফজিলত বুঝার কৌশল অর্জনে সচেষ্ট হবেন কি না সন্দেহ আছে। রবীন্দ্রনাথ পেরেছেন কারণ তিনি আস্তিক ছিলেন।
@আকাশ মালিক, কুয়োর ব্যাঙ হয়ে লাভ কি? সীমাবদ্ধ জ্ঞান নিয়ে মুক্তি কিভাবে সম্ভব?
@কুলদা রায়,
রাগ করলেন দাদা?
সীমাহীন জ্ঞানের ঋষি হওয়ার ইচ্ছে যে নেই।
@আকাশ মালিক, না, রাগ করি নি। আমি একটু অবাক হয়েছি–এই ব্লগটিতে যুক্তবাদিতার কথা বলা হচ্ছে–কিন্তু অবলীলায় যুক্তির সীমানার বাইরে চলে যেতে দেখছি ভাবপ্রবণতার স্রোতে গা ভাসিয়ে।
টাইপড হয়ে লাভ কি?
নাস্তিকতাও যখন অহংবোধের মধ্যে দিয়ে যায়–অহংবোধের ধর্মঅনুসারে তা প্রভুত্বপরায়ণতায় পর্যবসিত হয়। সেটাও কিন্তু এক ধরনের মৌলবাদ। কলিম খান একে বলেছেন–মৌলবিবাদ।
রাগ করব কেন আকাশ মালিক। বিস্ময়ে ভ্রমি।
ঋষি কি মন্দ? কেন?
@কুলদা রায়, মহাভারতের মহা-বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পড়ে বিরাট মজা পেলাম। আর এটার প্রতিবাদ করাতে আকাশ মালিককে কূপমন্ডূক বলাটাও ভাল ঠেকল না একদম। এসব গাঁজাখুরি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার প্রতিবাদ যে কোন মুক্তমনা সদস্য-ই করবেন। আর এই উক্তিটি মুক্তমনার সবার প্রতি-ই অপমানসূচক।
অফুরান বিনোদন দিল নিচের সমীকরণ টা।
:hahahee: :hahahee: :hahahee:
এইসব রূপকথার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে জাকির নায়েক কেও হার মানায় কেউ কেউ। এদের সমর্থনেই রাম-রাবণের বিচরণের বাস্তবতার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মেলে, অযোধ্যা মন্দির-বাবরি মসজিদ ঘটনা ঘটানোর উৎসাহ দেওয়া হয়।
পুষ্পক রথ মানে স্যাবর জেট, ব্রহ্মাস্ত্র মানে নিউক্লিয়ার বম্ব এইরকম অদ্ভূতুড়ে ব্যাখ্যা বেশ হাস্যরসের সঞ্চার করে। ভাববাদী ঋষি হওয়ার চেয়ে বস্তুবাদী বিজ্ঞানের জ্ঞানলাভেই আমার আগ্রহ বেশি।
আকাশ মালিক ভাইকে সমর্থন দিয়ে গেলাম। এইসব উদ্ভট রূপকার্থের বিরুদ্ধে সবসময়-ই প্রতিবাদ চলবে-সেটা ভীমের ক্ষেত্রেই হোক অথবা যূলকারনাইনের । আর কথায় কথায় রবীন্দ্রনাথকে টানা কোন ভাল কাজ নয়, উনি প্লানচেট করে গেছেন বলেই আমাদেরও তা করতে হবে এমন কোন কথা নেই।
@কুলদা রায়, :yes:
@আকাশ মালিক,
এই জন্যেই নাস্তিকদের দিয়ে কিছু হবে না, গণ্ডগোল পাকানো ছাড়া। শুধু বিশ্বাসটুকু আনলে দেখতে পেতেন জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর অনন্ত আধার আমাদের এই মহাভারত।
কী নেই এতে? পারমানবিক বোমার থেকে শুরু করে দূরপাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র সবই আছে এতে। নাগাসাকি-হিরোশিমাতেই পারমানবিক বোমার প্রথম বিস্ফোরণ ঘটেনি, ঘটেছে প্রাচীন ভারতে। আর তা ঘটিয়েছে আমাদেরই পূর্ব পুরুষেরা। পুরো একটা শহরকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে তাঁরা। দূরপাল্লার পারমানবিক ক্ষেপনাস্ত্র ছুড়ে তেজস্ক্রিয়তা ঘটিয়ে মাতৃগর্ভের শিশুকেও হত্যা করেছে তাঁরা মাকে জীবিত রেখেই।
আজকে যে যুদ্ধবিমান দিয়ে যুদ্ধ হচ্ছে দেশে দেশে তা কবেই করে গিয়েছেন দেবতাপুত্র অর্জুন-কর্ণেরা।
মহাকাশে ভ্রমণ, সময় সংকোচন করে আলোর চেয়ে বেশি গতিতে চলা এগুলোও সব লেখা আছে পুরাণের পুরোনো হয়ে যাওয়া পাতায় পাতায়। শুধু খুঁজে নিতে হবে বিশ্বাসের আলোটুকু জ্বালিয়ে।
ঋষি হওয়াতে দোষের কিছু নেই, কুয়োর ব্যাঙ হওয়ার হাত থেকে অন্তত বাঁচা যায় তাতে। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
আমারো তাই মনে হয়েছে।
আসলেই লক্ষনের শক্তিশেল আমার মনে হয়েছে স্কাড মিসাইল। বরুন বান?
রথে করে দেবতাদের স্বর্গ থেকে নেমে আসলে ইউএফও তে চেপে ভিনগ্রহের উন্নত মানুষদের কথাই বলা হয়েছে। এরিক ফন দানিকেন অনেক বছর আগেই এসব বলে গেছেন। একই রকম কাহিনী না হলে কি করে প্রাচীন মায়ান সভ্যতায়ও পাওয়া যায়?
হনুমান দেবের মাধ্যমে যে বিবর্তনবাদের ইংগিতই নয়, এক্কেবারে পরিষ্কার করে বলা আছে তা মানতে মালিক ভাইদের এত কষ্ট কেন?
আশা করি মালিক ভাই তার ভুল বুঝতে পারবেন।
@আদিল মাহমুদ এবং ফরিদ আহমেদ,
:hahahee:
@কুলদা রায়,
ব্যাখ্যা যাই হোক আমার কাছে মহাভারত একটি মহাকাব্যগ্রন্থ – শক্তিশালী লেখকদের গ্রন্থনায় একটি অতুলনীয় রূপকথার কাহিনী। খন্ড খন্ড কাহিনী নিয়ে প্রচুর যাত্রা পালা হয়েছে। রবিঠাকুর কর্ণ-কুন্তী সংবাদ আর চিত্রাংগদা লিখেছেন। কেয়া, পার্থ ও গৌরী ঘোষ দারূণ আবৃত্তি করেছেন। ফরিদ ভাল লিখেছেন। মহাভারতে বিনোদনের জন্য প্রচুর কাহিনী বিদ্যমান। কবি-লেখকরা কয়েক শত নতুন কর্ণ-কুন্তী সংবাদ লিখতে পারবেন।
কর্ণের জন্মের পরেও কুন্তির কুমারীত্ব বজায় থাকল! কুমারীত্ব বজায় রাখার জন্য কাণ দিয়ে কর্ণকে প্রসবিত করানো হল। এসব বিবর্তন দিয়ে তো ব্যাখ্যা করা যাবেই না, বরং ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনও মার খাবে।
মহাভারতের সত্যতায় বিশ্বাস করলে আমাকে বারাকে চড়ে মুহম্মদের আল্লার সাথে দেখা করতে যাওয়ার কাহিনীও বিশ্বাস করতে হয়। যুধিষ্ঠিরের শশরীরে স্বর্গে যাওয়ার কথা বিশ্বাস করলে আমাকে কুরানে বর্নিত বেহেস্তের কিচ্ছা-কাহিনীও বিশ্বাস করতে হয়।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
কথাগুলো বলার ইচ্ছে ছিল, অনেক কিছু আগ-পাছ চিন্তে করে বলি নাই। আমি এভাবে বললে কুলদা রায় গ্রহন করতেন কি না সন্দেহ ছিল। এই কুন্তির কুমারীত্ব, কাণ (কান) দিয়ে কর্ণকে প্রসবিত করানো, ক্রিয়ার্থবিধি ভাষা বুঝার কৌশল না জানা নতুন প্রজন্ম মেনে নিবে কেন?
রামায়ণ মহাভারতকে সাহিত্য বলতে আমার কোন আপত্তি নেই, কিন্তু ইতিহাস বলতে গেলে বাস্তবতার নিরীখে প্রামাণিক সত্যতার দাবি অবশ্যই করবো। আমাদের নতুন প্রজন্মও প্রশ্নাতীতভাবে মেনে নিবেনা।
রামকৃষ্ণ-জালালুদ্দীন রুমী ভাল মানুষ ছিলেন, তা’ই বলে আগামী দিনের শিশু তাদের পথে ভুলেও পা বাড়াবেনা।
@আকাশ মালিক,
আপনি ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন না রে ভাই। কর্ণ যদি কর্ণ-পথেই প্রসবিত না হবেন, তাহলে তাঁর নাম কর্ণ হল কিভাবে?! এর পরেও আরো প্রমাণ চান!
@রৌরব,
ঠিকই বলেছেন, তবে ষ্টোরি তো শুধু শুনলেই হবেনা, শুনাতেও হবে, সমস্যাটা সেখানেই। ‘হ্যারি পটার’, ‘আবাতার’ যুগের শিশুকে বুঝাবো কীভাবে কর্ণ কর্ণ-পথেই প্রসবিত হয়েছিলেন? সাহিত্য হলে মেনে নিতে তাদের নিশ্চয়ই কোন সমস্যা হবেনা। কিন্তু——–
@আকাশ মালিক,
তাদেরকে বলবেন যে আগে বিশ্বাস আনতে হবে, না হলে হাজার পড়া সত্ত্বেও বোঝা যাবে না। এসব পবিত্র বিষয় অবিশ্বাসীদের জন্য নয়।
@আদিল মাহমুদ,
আমি মাঝে মাঝে সত্যি ভেবে অবাক হই, আমার দাদা, তারপর বাবা, এরপর আমি আর এখন আমার সন্তানদেরকে চোখের সামনেই দেখলাম, পর্যায়ক্রমে আমাদের মন-মানসিকতায, চিন্তা-চেতনায়, ধ্যান-ধারণায়, বিশ্বাসে-কল্পনায়, আচার-আচরণে কী অদ্ভুত অকল্পনীয় পরিবর্তন। কাল যা বাস্তব ছিল আজ তা চরম হাস্যকর। যাক এ নিয়ে আর না।
এবার অফ টপিক-
প্লীজ এখানে কোন মন্তব্য নয়, কিছু বলতে হলে ই-মেইল করবেন Just
Look at this
@আকাশ মালিক,
জেনারেশন গ্যাপ বলে তো একটা জিনিস আছে।
আপনার সন্তানেরা তো নাহয় বিদেশে থাকে, বড় ধরনের ব্যাতিক্রম না হলে তারা এসবে আগ্রহী হবে না এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু দেশের ছেলেমেয়েরাও এই যুগে মনে হয় না আমাদের মত পূরনো লোক গাঁথাগুলি তেমন পড়ে। আমরা যেমন দেওয়ান ও মদিনা, আলাল ও দুলাল এ জাতীয় কাহিনী গুলি আগ্রহ করে পড়তাম এদের মনে হয় না সে আগ্রহ আছে বলে।
@আকাশ মালিক, কুন্তীর কান দিয়ে প্রসব করানোর লৌকিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব। বোররাকে চড়ে সাত আসমানে যাওয়ার লৌকিক ব্যাখ্যা দেওয়ার সাহস কারও নেই। ব্যবস্থা সেরকম থাকলে কেউ হয়তো দিতে পারতেন। সে পথে আমি যেতে চাই না।
আমি বলেছি–ক্রিয়ার্থবিধি অনুসারে আমাদের পুরনাদির যথার্থ অর্থ অনুধাবন করা যাবে।
একমাত্র সংস্কৃত ও কন্যাস্বরূপা ভাষাগুলির ক্ষেত্রে, বিশেষত বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ নিয়ম থাকায়, তা পৃথিবীর অন্য সকল ভাষা থেকে বাংলাকে পৃথক বিশেষত্ব দিয়েছে। এই বিশেষ নিয়ম হল, এই ভাষায় শব্দেরা বর্ণের মাধ্যমে অর্থ বহন করে এবং তার মূলে রয়েছে এক বা একাধিক ক্রিয়া। তার মানে একটি শব্দের সাধারণত বহু মানে থাকে। এই ক্সেত্রে জগৎকে দেখা হয় ক্রিয়ার দিক থেকে। কতকগুলো অ্যাকশন নানা অ্যাকটরের মারফৎ ঘটছে।
শব্দের ভেতরে উকি দিলেই এই অর্থ দেখা যায়। কৌশলটি হল–শব্দের বুৎপত্তি নির্ণয়।
যেমন ‘অজ’ শব্দের ক্ষেত্রে একটি ক্রিয়া রয়েছে–জনন। ১. ন+জ (জনন)। ২. নেই জনন যাহাতে। ৩. যিনি কাহারও গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন নাই। যেমন-ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব। ৪. ছাগল। প্রতিকী মতে এখন অজ শব্দটি ছাগল অর্থে ব্যবহৃত হয়। এরকম অনেক রকম অর্থ রয়েছে।
এটা একটা ভাষা বিজ্ঞান। এভাবে দেখলে তখন আর তেলেসমাতি মনে হবে। কর্ণ দিয়ে প্রসব করানোরও অর্থ মেলে–গাঁজাখুরি মনে হবে না।
কলিম খান ক্রিয়ার্থবিধির সাহায্যে পুরানাদির লৌকিক ব্যাখ্যার বের করার পদ্ধতি আবিষ্কর করেছেন।
যুক্তিবাদকে ধার করা কলহসূচক সভ্যতার আয়ুধ দিয়ে বিবেচনা করলে হবে না। আমাদের সভ্যতা তো জ্ঞানসূচক।
একটু দেখি আমার বন্ধু নিসর্গ ব্যানার্জীর একটি নোট–
……………………………………………………………………….
এক বন্ধুর কাছ থেকে মজায় টইটম্বুর একটা ফাইল পেলাম। অনুবাদ যে এত সৃজনশীল হতে পারে, এই ফাইলটা হাতে না পেলে আমার মতো ক্ষুদ্র পরিধিতে বিচরণকারী বাঙাল নারীর পক্ষে তা জানাই হতো না! খানিকক্ষণ বাদে অবশ্য মজা ছাপিয়ে উঠল প্রজ্ঞার সংবাদ। ভারতবর্ষে এই যে নামগুলো আছে হাজার হাজার বছর ধরে, কলিম খানের ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধিতে দেখলে আক্ষরিকভাবেই এরা জ্ঞানকাণ্ডের ওই ওই বিশেষ প্রান্তকে মূর্ত করে তুলে। তার মানে ইংরেজি ভাষাভাষীরা এসব শব্দ বা শব্দবন্ধ দিয়ে যা বোঝায়, ভারতবর্ষ তা অনেক আগেই বুঝেছে।
আজ আমরা অর্থে (টাকায়) ও অনর্থে (যুদ্ধবিগ্রহ) দরিদ্র হতে পারি, কিন্তু জ্ঞানের শৌর্যে তাদের (পশ্চিমাদের) থেকে পিছিয়ে ছিলাম না কখনোই। আজও নেই। যে জ্ঞান আমাদের পূর্বপুরুষের ছিল, সে জ্ঞান জিনবাহিত হয়ে আমাদের মধ্যেও বহমান। আজ আমরা তাদের দাপটের কাছে খানিকটা নিষ্প্রভ বটি, তবে প্রকৃত প্রভা আমাদের ভিতরেই আছে। আমাদের কেবল দরকার হীনম্মন্যতাকে ঝেড়ে উঠে দাঁড়ানো ও সগর্বে এটা জানান দিয়ে কাজে লিপ্ত হওয়া যে, আমাদের সভ্যতা জ্ঞানসূচক, তোমাদেরটা কলহসূচক।
এবার আসুন অনুবাদগুলো দেখি—
Solar System : সৌরীন মণ্ডল
Mountaineer : দুর্জয় পাহাড়ি
Dark Cave : ঘনশ্যাম গুহ
Faithful Husband : সুশীল নাথ
Pure Reader : নির্মল পাঠক
Sales Tax : বেচারাম কর
Moving Wheels : চক্রধর গার্গরি
Bottomless Abyss : অসীম তলাপাত্র
Lord Servant : মহাপ্রভু দাস
Luminous Moon : জ্যোতির্ময় চন্দ্র
Group of Deer : হিরন্ময় পাল
Mighty Lion : মহাবীর সিংহ
Universal Opinion : জগৎ রায়
Console : সান্ত্বনা দে
Bamboo Craftsman : বংশী কর্মকার
Human Faith : মানব বিশ্বাস
Sitting for Exam : পরীক্ষিত বসাক
Flooded Rivers : সজল গাঙ্গুলী
Clean Container : সুনির্মল পাত্র
Clay Statue of God : মৃন্ময় দেবনাথ
Sea Sailor : সাগর মাঝি
Finding Lost Wealth : হারাধন পাকরাশি
Air Force : আকাশ সামন্ত
State of Life : জীবন হালদার
Interim Order : অনন্ত রায়
Unsteady Government : চঞ্চল সরকার
কর্ণ-কুন্তী-সংবাদ আবৃত্তিটি মন ছুঁয়ে গেল!
মহাভারতের অল্প কিছু জানা ছিল।
গভীরভাবে কবিগুরু অনুভব করালেন যেন!
@লাইজু নাহার,
কর্ণ-কুন্তি সংবাদের আরো হৃদয়গ্রাহী আবৃত্তি এক অসময় আমার কাছেই ছিল। হারিয়ে ফেলেছি। ব্যক্তিগতভাবে পার্থঘোষ এবং গৌরী ঘোষের এই আবৃত্তিটা আমার মোটেও পছন্দের না। অন্য কারো করা আবৃত্তির কোন লিংক পেলাম না বলেই বাধ্য হয়ে এটাকে এখানে দিয়েছি।
ক্যাথেরীনাকে দিয়ে এই আবৃত্তিটা করাতে পারলে অসাধারণ হতো বলেই মনে হয় আমার।
কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্রাস রচিত মূল মহাভারতে কিন্তু কর্ণকে এভাবে দেখানো হয় নি। বিভিন্ন রচয়িতা মহাভারতের কাহিনীকে বিভিন্নভাবে লিখেছেন।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের জন্য দুর্যোধন দায়ী। কিন্তু তার পেছনের প্রধান লোকটি কর্ণ–আর শকুনি। এ বিষয়ে কাল আলোচনা করার ইচ্ছে আছে।
@কুলদা রায়,
আপনার বক্তব্য মনে হয় সত্য ।
কোথায় যেন পড়েছিলাম কর্নের সাথে অর্জুনের ইগো সমস্যা থেকেই যাবতীয় সমস্যার উদ্ভব। তাই তো দেখি , কর্ন কুন্তির কাছে অর্জুন ছাড়া বাকী সবাইকে ছেড়ে দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হচ্ছেন। ইগো বা ব্যাক্তিত্বের লড়াই যে বিশাল আকার ধারন করে সর্বব্যাপী ধ্বংসাত্মক একটা লড়াইয়ের রূপ নিতে পারে তার সার্থক কাহিনী এই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ কাহিনী। আমার মনে হয় এ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। কারন আমরা এখনও এধরনের ইগো সমস্যা থেকে অনেক ধরনের বড় বড় সমস্যা তৈরী করে মানুষের ভোগান্তির কারন হই। যেমন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ, আমেরিকার নানা দেশে আগ্রাসন ইত্যাদি।
কাহিনীটা বেশ হৃদয়বিদারক।
@ভবঘুরে,
তাতো বটেই। ভাগ্যিস ঘটনাটা সত্যি না।
লেখাটি দীর্ঘ। কাহিনীটিও অজানা নয়। ফরিদের রচনাভংগীর টানেই জানা কাহিনী তৃপ্তি নিয়ে পড়লাম। আবৃত্তি দুটো বাড়তি পাওনা। অসাধারণ।
মনে হয় কোথাও পড়েছিলাম – এক কামুক মুনি তার যৌন তৃষ্ণা মিটাতে হরিণ সেজে হরিণীদের সাথে নিয়মিত রত হতেন। পান্ডু সেই হরিণকেই বধ করেন এবং অভিশপ্ত হন। কোনটাই ঘটনা নয়। কাহিনী। কাজেই ভিন্নতায় কিছুই যায় আসে না। পরিবেশনাই মূল বিষয়। ধন্যবাদ ফরিদ, এমন হৃদয়গ্রাহী পরিবেশনের জন্য।
জব্বর কাহিনী তো।
কিছুদিন আগে দেশের একটা নাটক দেখেছিলাম এই কাহিনী দিয়ে, যদিও পুরো দেখিনি।
ছেলেবেলায় আমাদের বাড়িতে “চিত্রংগদা” ছিল। কিছুই বুঝতান না, কিন্তু কথা ও গানগুলি এখনো কানে বাজে। সেটা নিয়েও এরকম কিছু লিখে ফেলেন না?
@আদিল মাহমুদ,
মহাভারতে কাহিনীর শেষ নেই। পড়ার সময় মুশকিল কে কার ছেলেমেয়ে, কোন ডালাপালা ইত্যাদি মনে রাখা। এখন অবশ্য Excel Spreadsheet ব্যবহার করলে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
@নৃপেন্দ্র সরকার, :laugh:
এটা ভাল বলেছেন। ছেলেবেলায় মেমোরি ভাল থাকে তাই মনে হয় পড়তাম। স্কুল ছাড়ার পর আর রামায়ন মহাভারত পড়িনি।
বেশ কিছু কাহিনী নোংরা হলেও অনেক কাহিনী সত্যই চমকপ্রদ। হিড়িম্বা অশ্বঃথামা হত ইতি গজ এসব গল্প বাবাও করতেন।
@আদিল মাহমুদ,
আমাদের পূর্বপুরুষদের মাথায় যে কী ছিল আল্লাহই জানে। মহাভারতের ঘটনাবলি যদি সত্যিই হয়, তারা এসব করলেন কী ভাবে, আর যদি সত্য না হয়, তাহলে এইসব আজগুবি কেচ্ছা রচনা করার বুদ্ধিটা মাথায় এলো কেন? মহাভারত আমিও পড়েছি মোটেই বিশ্বাস হয় নাই ভালও লাগে নাই।
@আকাশ ভাই,
মহাভারতের ঘটনাবলীকে সত্য ভাবার কিছু নেই। ঐতিহাসিকভাবে এর কোন প্রমাণ নেই। কিন্তু এই সমস্ত আজগুবি গল্পের গুরুত্ব অন্য জায়গায়। এর সাহিত্যমূল্য অসাধারণ। মহাভারতের মধ্য দিয়ে আপনি প্রাচীন ভারতের সামজিক এবং রাজনৈতিক জীবনকে দেখার একটা সুযোগও পেয়ে যাচ্ছেন।
@ফরিদ আহমেদ,
খ্রীস্টপূর্ব ৬ম-৭ম শতাব্দীর দিকে কুরুরাজ্য থেকে থাকতে পারে, এবং সে রাজ্যে অন্তত কোন একটা গণ্ডগোল কিছু হয়েছিল যেটা তৎকালীন ভারতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এমন একটা বিশ্বাস বৈধ গবেষকদের মধ্যেও আছে। অর্থাৎ, কতকটা ইলিয়াড-ওডেসীর মতই।
তবে হ্যাঁ, ইন্দ্র-পবন সবাই নেমে এসে একে একে কুন্তীর সাথে ..উমম.. ইয়ে..মানে এগুলো অবশ্যই বিশুদ্ধ গঞ্জিকা। তবে গাঁজা মন্দ নয়।
@রৌরব,
মন্দ নয় কী বলছেন! দারূণ উপভোগ্য।
@ফরিদ আহমেদ,
সত্যি কথা বলি, আমার মনে হয়, সাহিত্যমানের দিক দিয়ে কোরানের চেয়ে মহাভারত অনেক উচুস্থানে। তবে-
ঐতিহাসিকভাবে এর কোন প্রমাণ নেই।
এখানে বোধ হয় কোরান অন্যান্য পৌরাণিক গ্রন্থ থেকে ব্যতিক্রম। কোরানে বর্ণিত মুহাম্মদের সময়কালিন বহু ঘটনা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে। অবশ্যই বই দুটির ‘রচনাকাল’ এর মধ্যে বিস্তর তফাতও আছে।
@আকাশ মালিক,
কোরানের সাথে মনে হয় না এসব কাহিনীর তূলনা হয়। কোরানে সাহিত্যের মানে বিচার করার মত অলৌকিক যেসব কাহিনী আছে সেগুলি বেশীরভাগই এসেছে উদাহরন হিসেবে। বেশীরভাগই অসম্পূর্ন। আপনি সেসব কাহিনী বাইরের সূত্র না না জানলে শুধু পুরো কোরান পড়ে বুঝবেন না। কোরানে জোর দেওয়া হয়েছে বেশী আল্লাহর গুনাবলী, আদেশ নির্দেশে।
রামায়ান মহাভারত সেক্ষেত্রে পুরোটাই সাহিত্য।
@আকাশ মালিক,
বিশ্বাস হওয়ার কিছু নাই। কিন্তু কাহিনী বিন্যাস সুন্দর। আপনি পড়েছেন। কিন্তু আমি সবটা পড়তে পারিনি। আদি পর্ব পড়েছি মাত্র। এত নাম, একই ব্যক্তির নানা কারণে নানা নাম। নামের ভেজালে পরে আর পড়া হয়নি।
@আকাশ মালিক,
এইগুলি বড়দের রূপকথা হিসেবেই নিন না? সত্য হতে যাবে কেন? সাহিত্যের সাথে ইতিহাস মেলাতে যাব কোন দূঃখে? হয়ত কিছু চরিত্র ও কাহিনী সত্য, যাকে ডালপাতা মেলে পৌরানিক সাহিত্য বানানো হয়েছে। কে বলতে পারে? সাহিত্যিক মূল্য আছে অসীম।
আমি রামায়ন প্রথম পড়ি ক্লাস ফাইভে, দশরথ রাজার ১০ স্ত্রীর নাম মুখস্ত ছিল আগে। সীতাহরন পর্ব, লংকাকান্ড সেসময় দারুন লেগেছিল। আমার মা ছিলেন বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী, বাবারও খুব উতসাহ ছিল এসবে। তারাও উতসাহের সাথে বোঝাতেন। হেলেন অফ ট্রয় এর কাহিনীও বাবাই শোনান। এরপর মহাভারত পড়ি মেট্রিকের পর। এত অজস্র চরিত্র মনে থাকার কোন কারন নেই। সময়ের সাথে সব গুলিয়ে গেছে।
এখন মনে হয় না হাতে হুমায়ুন আহমেদ বা সেবা প্রকাশনীর বই থাকলে এগুলো আবার শখ করে ধরব।
@আদিল মাহমুদ,
“অশথথামা হত ইতি গজা” (বাক্যটি ঠিক মত লিখতে পারিনি) একটি classic বাক্য। স্কুলে সত্য কথা বলা নিয়ে রচনা লিখতে যেয়ে বাক্যটি ব্যবহৃত হত। Richard Dawkins উক্তি টি নিয়ে দিন দুই আগে আলোচনা হচ্ছিল। তখন ইতি গজা কথাটি মনে পড়েছিল।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
এই বাক্যের গুরুত্ব অপরিসীম।
এই মিথ্যা কথা বলতে গিয়েই মনে হয় ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির এর রথ মাটিতে নেমে যায়, যা তার সত্যবাদীতার সম্মানে সবসময় মাটির কয়হাত উপর দিয়ে চলত।
আমাদের দেশে একসময় হীরামন ও মণিহার (আলাউদ্দিন আল আজাদ উপস্থান করতেন) নামের দুটি অনুষ্ঠানে প্রাচীন ক্লাসিক গল্পগুলি দেখানো হত। দূর্বল হাস্যকর পরিবেশনার কারনে এগুলি বড়দের রূপকথা হিসেবে নাম করেছিল, তবে উদ্যোগ ভাল ছিল। আজকালকার ছেলেমেয়েরা মনে হয় না এসব কাহিনী তেমন জানবার সুযোগ পায়।
@আদিল মাহমুদ,
রথ না, ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির আসলে এরকম একটা হোভারক্রাফট চালাতেন।
@ফরিদ আহমেদ,
আসলেই তো!
মহাভারত হয়ত বুক অফ সায়েন্স নয়, তবে নিঃসন্দেহে বুক অফ সাইন্স (কৃতজ্ঞতা ডাঃ জাকির নায়েক)।
@আদিল মাহমুদ,
আর এইটা ছিল মুহাম্মদ মিয়ার বাহন। মুসলমানরা খালি এই যুগে না, সেই যুগেও যে পশ্চাৎপদ ছিল এটাই তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
[img]http://www.eaudrey.com/myth/images/burak.jpg[/img]
@ফরিদ আহমেদ, :laugh:
এই চিজ জোগাড় করলেন কোত্থেকে?
যদিও বোরাক নাকি নারীমুখো পশু এমন কথাবার্তা মোল্লা মাওলানাদের মুখে শুনেছি।
@আদিল মাহমুদ,
কিশোর বয়সে আমাদের বাসায় আরো সুন্দরী এক বোরাকের রঙিন ছবি ছিল। তাকে নিয়ে অনেক রঙিন স্বপ্নও দেখেছি তখন (আল্লাহ আমার এই কুকর্ম মাফ করুক)। তবে সেই সুন্দরী বোরাকের পিঠে এরকম পর্দানশিন কোন মুহাম্মদ আসীন ছিল না। 😛
@ফরিদ আহমেদ,
আপনি তো নিজেকে নায়ক বানায়ই জটিল রগরগে পৌরানিক কাহিনী লিখতে পারবেন!
এখন মনে হল, প্রায় এই জাতীয় ছবি আমি রিক্সার পেছনে নীল ব্যাকগ্রাউন্ডে দেখেছি। তবে সেই মহিলা আরো সুন্দরী ছিলেন। আগেকার দিনে রিক্সা/বেবির পেছনে দারুন দারুন ছবি দেখা যেত।
একটা ছবির কথা আজীবন মনে থাকবে। একটা নদীর পাড়ে যুদ্ধ হচ্ছে, সৈন্য সামন্ত সবই বাঘ,সিংহ,শেয়াল,হাতি এরা। সবাইর পায়ে উঁচু বুট জুতো; হাতে মেশিন গান।
@ফরিদ আহমেদ, [img]http://farm5.static.flickr.com/4138/4823161372_7c3fd3b299.jpg[/img]
@আল্লাচালাইনা,
আল্লাচালাইনার তাৎক্ষনিক ফাসিঁ দাবি করিতেছি। নবিকুল শিরোমনি প্রখ্যাত জাঁহাবাজ সন্ত্রাসী, যুদ্ধপ্রিয় হযরতে মাওলানা মুহাম্মাদ মাক্কী (সঃ) বোগদাদী (রঃ)এর এমনতর অশ্লীল(ঘোড়ী-মানবীর সহিত সঙ্গমরত অবস্থায়) ছবি ছাপানোর জন্যে তাহার দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবি করছি।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
:lotpot:
@নৃপেন্দ্র সরকার,
কুরু রাজবংশের এই বংশতালিকাও সাথে নিয়ে বসতে পারেন।
@ফরিদ আহমেদ,
ধন্যবাদ family treeটা দেওয়ার জন্য। নাহ! এই বয়সে মহাভারত পড়া সম্ভব না। তোমার মত করে লিখতে পারলে অবশ্য পড়া যেত।
family treeটা অন্যের উপকারে লাগতে পারে।
বেশ লাগলো।
@এন্টাইভন্ড,
ধন্যবাদ আপনাকে।
এরকম অদ্ভুত নাম নেবার কারণটা কি জানতে পারি?
@ফরিদ আহমেদ,
এরকম নাম নেবার দুটি কারণ থাকতে পারে বলে মনে হয়। প্রথমত, এটা প্রকাশ করে যে উনি সাধারণত অ্যামেরিকান অ্যাক্সেন্টে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। আর দ্বিতীয়ত, এটা বলে যে ভন্ড-টন্ড উনি একেবারেই পছন্দ করেন না। এই দিকে উনার সাথে আমার বেশ মিল আছে। আমারও বোধহয় নাম নেওয়া উচিত ছিলো এন্টিপাগছাগল। পাগল-ছাগল আমি একেবারেই পছন্দ করি না।
না। কর্নকে তীর ছুঁড়তে দেওয়া হয় নি।
মহাদেবের ওই ধনুক সেদিন কেওই তুলতে পারে নি অর্জুন এবং কর্ন ছারা। কিন্ত ব্যাচারা কর্ণ ধনুক তোলা মাত্র দ্রোপদী বিচলিত হয়ে ওঠেন। কৃষ্ণ দ্রোপদীকে আগেই আশ্বস্ত করেছিলেন অর্জুনই কেবল মাত্র ধনুকটি তুলতে পারবে। কর্ন তুলতে পারবে মানে, জিতেও যেতে পারে। তাই কৃষ্ণ দ্রোপদীর কানে কানে এই কথা তুলে দেন যে সূত পূত্রে তিনি বিবাহ করবেন না। কর্ণ আপমানিত হয়ে ধনুক নামিয়ে রাখে।
ঠিক এই কারনেই যেদিন দ্রোপদীর বস্ত্রাহরণ হচ্ছিল, কর্ন দ্রোপদীকে বেশ্যা বলে গালাগাল দেন [ যে মহিলার পাঁচ স্বামী আছে তাকে বেশ্যা ছারা আর কিই বা বলা যায়-আর তার মান সন্মান নিয়ে এত ভাবারই বা কি আছে ]- -টিট ফর ট্যাট আর কি।
আরো বেশ কিছু তথ্যে ভুল আছে। কিন্ত মোটামুটি বেশ হয়েছে।
@বিপ্লব পাল,
ভুল থাকলেও কিছু করার নেই। সাহিত্য রচনা করেছি আমি, ইতিহাস রচি নাই।
তোমারতো মনে হচ্ছে ভাল জ্ঞান আছে মহাভারত সম্পর্কে। এর পটভূমিকা নিয়ে একটা লেখা লিখে ফেলবা নাকি?
মহাভারতের সাথে ইলিয়াড-ওডিসির কাহিনিরও অনেক মিল আছে। একটু চেষ্টা করলে সংযোগ খুঁজে পাওয়া কঠিন কাজ না। এটা নিয়েও লিখতে পারো ইচ্ছে করলে।
ইংরেজী থেকে নেবার কারণে বানানে একই ধরণের কয়েকটি ভুল আছে।
আধিরথ — অধিরথ
রাধেয়া – রাধেয়
কুন্তেয়া – কৌন্তেয়
বাসাবী — বাসবী
দুর্দান্ত লেখা, “রথচালকের ছায়াচ্ছন্ন ঘরে” — অসাধারণ, লেখার ট্রাজিক সুরের সার ধরা আছে যেন এই তিনটি শব্দে।
@রৌরব,
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভুলগুলো সংশোধন করে দিলাম।
ছোট্ট একটা প্রশ্ন ছিল। এটা শুধু আপনার জন্যেই নয়, সবার জন্যেই উন্মুক্ত। যে কেউ-ই উত্তর দিতে পারেন।
মহাভারতের চরিত্র এবং জায়গাগুলোর নাম সংস্কৃতিতে কীভাবে উচ্চারিত হয়? বাংলায় আমরা যেভাবে লিখি সেখাবে নিশ্চয়ই নয়। অধিরথ, অর্জুন, কর্ণ, ইন্দ্রপ্রস্থ, কুরুক্ষেত্র এগুলোর উচ্চারণ সংস্কৃতিতে এরকমই কি? দ্রুপদীকে বাংলায় আমরা দ্রৌপদী বানিয়ে ছেড়েছি, বাকি নামগুলোরও যে উচ্চারণ বিকৃতি ঘটাই নি তার নিশ্চয়তা কী? উচ্চারণের বাঙালিকরণকেই বাংলায় শুদ্ধ বলে মেনে নিতে হবে, নাকি সংস্কৃততে যেভাবে আছে সেভাবে লেখা উচিত?
@ফরিদ আহমেদ,
রীতি হল লেখার সময় সংস্কৃত বানান ব্যবহার করা, উচ্চারণের ব্যাপারটা ভিন্ন (আসছি সে কথায়)। সাধারণত সংস্কৃত লেখার সময় দেব নাগরী ব্যবহার হয়, কিন্ত সংস্কৃতের নিজস্ব কোন বর্ণমালা নেই, যেকোন ভারতীয় বর্ণমালাই তার জন্য সমান বৈধ, বাংলা সহ। দ্রৌপদী বানান ঠিক আছে বলেই তো জানি। উইকিপিডিয়ায় দেব নাগরী বানানও একই দেখাচ্ছে।
উচ্চারণে তো পার্থক্য আছেই, এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বাংলায় অ উচ্চারিত হয় o এর মত, আর সংস্কৃতে a এর মত। আর দ্বিতীয় হল বাংলায় আমরা implcit হস বসিয়ে দিই শেষে। একারণে অধিরথ বাংলায় শোনায় odhoroth আর সংস্কৃতে adhiratha। কিন্তু লেখার সময় তো সেটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এখন যদি আসলেই বলার সময় কি করা উচিত সেটা জানতে চান, তাহলে আমি রীতি যা দেখেছি তা হল সংস্কৃত শ্লোক-টোক পাঠের সময় সংস্কৃত উচ্চারণ (আর্জুনা), বাংলায় বললে (ধরুন কালীপ্রসন্ন বা কাশীদাস পাঠ করছেন) বাংলা উচ্চারণ (অর্জুন্)।
@রৌরব,
এটা আমারই ভুল। দ্রুপদ এর কন্যা বলে আমি ভেবে নিয়েছিলাম যে তাঁর নাম দ্রুপদী হবার কথা, দ্রৌপদী নয়।
উচ্চারণ নিয়ে বাকি সব চমৎকার আলোচনার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। খেয়াল করেছি জ্ঞানী লোক আপনি। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
খেয়াল করেছি, আপনি যা বলেন ঠিকই বলেন 😀
@রৌরব,
শুধু দ্রুপদী ছাড়া। 🙁
@ফরিদ আহমেদ, দ্রৌপদী চিরকাল দ্রৌপদীই ছিলেন। আপনি তার নাম দ্রুপদী কোথায় পেলেন? দ্রুপদ রাজার মেয়ের নাম দ্রৌপদী। কৃষ্ণ বর্ণের বলেই তিনি কৃষ্ণা। পাঞ্ঝাল দেশের মেয়ে বলে তিনি পাঞ্চালী। যজ্ঞের আগুন থেকে উত্থিত বলে তিনি যাজ্ঞসেনী।
দেখুন ব্যাসদেব লিখছেন–পাণ্ডবরা দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভায় তাকে দেখে কামমোহিত হয়ে পড়েছিলেন–
তাং দ্রৌপদীং প্রেক্ষ্য তদা স্ম সর্বে কন্দর্পবাণাভিহতা বুভূবুঃ।
@কুলদা রায়,
কোথাও পাই নি। ওটা আমার ভুল ধারণা ছিল। উপরে রৌরবকে সেকথা বলেছিও।
@কুলদা রায়, দ্রৌপদী বিষয়ক একটি নাটক শুনুন– নাথবতী অনাথবৎ—
@কুলদা রায়, http://www.esnips.com/doc/149da633-e2be-46ed-bb98-e71eff956dee/Naathhabati-Anaathhabat—%28Shaoli-Mitra%29-Part-1
@কুলদা রায়,
আপনার প্রথম লিংকটা কাজ করছে না। দ্বিতীয় লিংকটা দিয়ে ইস্নিপ্স এ যেতে গিয়ে বার কয়েক হ্যাং হলো কম্প্যুটার। জানি না কেন। যাইহোক, নাটকটির প্লেয়ার এখানে এমবেড করে দিলাম। প্লে বাটনে টিপে এখান থেকেই নাটকটি শুনতে পাবেন মুক্তমনার পাঠকেরা।
নাটকের লিংকটা দেবার জন্যে ধন্যবাদ আপনাকে। পুরোটা শোনা হয়নি এখনও। আংশিক শুনেছি, তাতেই মুগ্ধ আমি। বহু বছর বাদে নাটক শুনলাম। বাল্যকালে ফিরে গেলাম বাংলাদেশ বেতার আর আকাশবাণী কোলকাতার স্মৃতিতে।
@কুলদা রায়,
Part 1 শুনলাম। দারূণ ভাল লাগল। কিন্তু অন্য অংশ গুলো কিভাবে আসবে। নেক্সট বাটনে টিপলে তো অন্য কিছুতে যাচ্ছে।
অসম্ভব সুন্দর কবিতা, শরীরটা ঠান্ডা হয়ে গেছে। সত্যিই অসাধারণ আবৃত্তি করেছেন ক্যাথেরীনা। আচ্ছা কবিতাটি লিখে দেয়া যায় না?
@আকাশ মালিক,
আমার কাছে কবিতাটা নেই। ক্যাথেরীনাকে জিজ্ঞেস করে দেখবো। ওর কাছে থাকলে না হয় লিখেই দেবো।
@আকাশ মালিক,
ধন্যবাদ, আবৃত্তি শুনে মতামত দিলেন, আপনার মহানুভবতা। আসলে কবিতার শব্দের গাথুঁনীতেই কিছু একটা আছে, আমি শুধু ওতে কন্ঠ বসিয়েছি।
ছোটবেলায় বহুবার দাদুর মুখে শোনা কর্ণের কাহিনী ফরিদ আবার নতুন করে শুনাল। শুনানোর ক্ষমতা যে ফরিদের অনন্য তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মায়ের খেয়ালে জন্ম নেওয়া আজন্ম অভিশপ্ত সূর্যপুত্রের কাহিনী নিয়ে ছোটবেলার ভাবনার সাথে এখনকার ভাবনার যে কত অমিল তা ভেবে নিজেই আপ্লুত হচ্ছি।
ধন্যবাদ ফরিদকে লেখাটির জন্যে ও বোনাস হিসেবে দুটো আবৃতির লিংক দেওয়ার জন্যে।
বাসায় কালিপ্রসন্ন সিংহের অনুবাদ মহাভারতের দুটো খন্ড আছে। গতবার আজিজ মার্কেট থেকে কিনেছি। পড়া হয় না। ফরিদকে দিতে পারলে পাঠক লাভবান হত।অথবা নিজে পড়ে ভিন্ন দৃষ্টিভংঙ্গিতে ব্যতিক্রম ধর্মী চরিত্র নিয়ে লিখলে।
@গীতা দাস,
পাঠিয়ে দিতে পারেন দিদি মহাভারতের খণ্ড দুটো আমাকে। পাঠকের লাভ হবে কি না জানি না, তবে নিজের লাভ যে হবে ষোল আনা সেটা খুব ভাল করেই জানি। কত কষ্ট করে করে দাঁত ভেঙে ভেঙে ইংরেজির থেকে পড়ি, বাংলা হলে কত আরামেই না পড়া যেত। 🙂
এই একটা জায়গায় দেশে থাকা মানুষদেরকে প্রবলভাবে ঈর্ষা করি আমি। ইচ্ছে করলেই হাতের নাগালে পেতে পারে তারা সমস্ত বাংলা বই। কোন বই পড়তে ইচ্ছে করছে। ঘরে নেই সেটা। তাতে কী? একটা রিকশা নিয়ে একটু কষ্ট করে আজিজ মার্কেট না হয় নীলক্ষেতে গেলেই হলো। বইমেলার সময় হলেতো কথাই নেই। হাজারে হাজারে বইয়ের মেলা থেকে মনমত শুধু বেছে নেওয়া। অথচ একটা বাংলা বইয়ের জন্যে প্রবাসে কী হাহাকারটাই না করি আমরা।
@ফরিদ আহমেদ,
চিন্তা নেই। আমরা চেষ্টা করছি আগামী ৫ বছরের মধ্যে সব বাংলা বই এর ডিজিডাল কপি দিয়ে ই-লাইব্রেরী তৈরী করা। আস্তে আস্তে হবে। কিন্ত এই আক্ষেপ আর থাকবে না।
@বিপ্লব পাল,
সবচেয়ে আগে পারলে দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ বইটা ডিজিটালাইজড করো তো। আমার বহুদিনের শখ আবার ওইটা পড়ার। ফাজলেমি না, সিরিয়াসলি বলছি।
@ফরিদ আহমেদ,
বাচ্চাদের বাংলা বই এর একটা সেকশন চালু করার ইচ্ছা আছে। শিশু সাহিত্যের প্রকাশকদের সাথে কথা হচ্ছে। আশা করি আস্তে আস্তে সব হয়ে যাবে।
@বিপ্লব পাল,
আর আমার জন্য দেব সাহিত্যকুটীরের ৪০ ও ৫০ দশকের ও মাঝ ষাট দশক পর্যন্ত সব পূজাবার্ষিকীগুলি, মাসিক রোমাঞ্চ এর সব সংখ্যাগুলি। এগুলি পড়েই বড় হয়েছি। এখনো সংগ্রহে কিছু আছে।
@ফরিদ আহমেদ,
আহারে! বছর দুই আগে ফেলে দিলাম একটা মহাভারত।
আমার শ্বাশুড়ী bore হচ্ছিলেন। আমার স্ত্রী একজনের কাছ থেকে মহাভারত এনে তাঁকে বসিয়ে রাখত। শ্বাশুড়ী দেশে ফিরে গেছেন। মহাভারতের মালিকটিও এই শহরে নেই। আর আমি একদিন ওটাকে ট্র্যাশ করে দিলাম। ট্র্যাশ করার ব্যাপারে আমি ওস্তাদ। বৌ ছেলে-মেয়েরা সব সময়ই এজন্য আমাকে বকা-ঝকা করে! এখন নিজেই নিজেকে বকা-ঝকা করছি। ফেলে না দিলে ফরিদকে দিতে পারতাম। আর একটি নতুন অধ্যায় লিখে নীচে আমার নামটি বসিয়ে দিতেন। সত্যি খারাপ লাগছে।
@ফরিদ আহমেদ,
এটি আর দশটা ক্ষমতার লড়াইয়েরই গল্পের মতই। অর্থনৈতিক কারও কম ছিল না। বারীন্দ্রনাথ দাশের বই শ্রীকৃষ্ণ বাসুদেব এ বলছেন ধারনা ছিলো জরাসন্ধ আর দুর্যোধন একত্র হলে আর্যাবর্ত তাদের করায়ত্ত হবে, কুরু পাঞ্চালের বিশাল অঞ্চলে উৎপাদন হতো প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্যশস্য। এটিও ছিলো আরেকটি কারণ । মগধ রাজ্যের সাথে সামুদ্রিক বাণিজ্যের সম্পর্ক ছিল পশ্চিমের যবন রাজ্যের। তাই মগধের সাথে মিত্রতা ছিলো ধৃতরাষ্টের কাম্য।
ভালো লেগেছে ফরিদ আহমেদের উপস্থাপনা । আমার আবৃত্তিটা আপনার সুখপাঠ্য লেখার সাথে জুড়ে দিয়ে আবারও কৃতজ্ঞতায় বাধঁলেন।