বিপ্লব’দা এই ব্লগে লিখেছেন :

মুক্তমনাতে একটি ঈশ্বর, ধর্ম, ইসলাম, মহম্মদহীন সপ্তাহ পালন করা হৌক!
আমি হতাশ হচ্ছি এখানে সাহিত্য, রাজনীতি,অর্থনীতি নিয়ে কোন ব্লগ আসছে না-বিজ্ঞান নিয়ে কিছু ভাল ব্লগ আসছে। তাই ওই এক সপ্তাহে লোকজনকে সাহিত্য বা রাজনীতি বা নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখতে বলা হোক। ঈশ্বরকে নিয়ে বিতর্ক আর কুকুরের লেজ সোজা করা একই ব্যাপার-অনর্থক সময় নষ্ট।

বিপ্লব’দার হতাশা বুঝতে পারছি। তবে এভাবে বলে কয়ে, মাস পালন করে বিশেষ লাভ হবে না যদি না লেখকেরা নিজে থেকে বুঝতে পারি কোনটা আসলে প্রয়োজনীয়। আবিষ্কৃত জিনিস বারবার আবিষ্কারে বিশেষ লাভ আছে, নাকি সেটাকে ব্যবহার করে নুতন কিছু করার চেষ্টা করা উচিৎ সেটা আমাদের চিন্তা করা দরকার।

তবে এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব কিছু মুক্তমনা কর্তৃপক্ষের আছে বলে মনে করি। আমার নিজস্ব কিছু অবজারবেশন তুলে ধরছি। এই বিষয়ে আপনাদের নিজেদের চিন্তাগুলোও এখানে তুলে ধরে পারেন।

১। প্রথমতঃ নীড়পাতার বৈচিত্র্য ধরে রাখার জন্য কি কি পন্থা নেওয়া যায় সেটা নিয়ে কর্তৃপক্ষ চিন্তা করতে পারে। তবে তার আগে নীতিগত ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে বৈচিত্র্যের প্রয়োজন কি আদৌ আছে নাকি যেভাবে চলছে সেভাবেই ভাল। এটা ট্রায়াল এন্ড এরর এর মধ্য দিয়ে চেষ্টা করতে পারি আমরা। কিছুদিন প্রতিটি বিভাগের সর্বোচ্চ দু’টি লেখা নীড়পাতায় থাকবে এভাবে কোটা করে দিয়ে দেখা যেতে পারে। মুক্তমনায় শুধু ধর্ম বা বিজ্ঞান নিয়েই লেখা আসলে হবে না সাহিত্য, আত্মজীবনি, ভ্রমন, রাজনীতি সব বিষয়ে লেখা আসুক।

তবে লেখক যদি এখানে সব হই একই রকমের সেক্ষেত্রে ধর্ম বা বিজ্ঞান নিয়ে লেখা বেশি আসবে সেটাও স্বাভাবিক। তাই সাহিত্যিক ঘরানার লেখকদের এখানে আসার জন্যেও উদ্ধুদ্ধ করতে হবে, আমন্ত্রন জানাতে পারি। ধর্ম বা বিজ্ঞান নিয়ে যে আন্দোলন বা প্রচার যাই বলিনা কেন সেটাকে শুধু আমাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ না রেখে সেটাকে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আমাদের অন্যদেরকেও আকৃষ্ট করতে হবে এই ব্লগে এসে পড়ার এবং লেখার। শুধু মাত্র একই বিষয় নিয়ে সব সময় আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকলে পাঠক হারানোর ভয় রয়ে যায়।

২। দ্বিতীয়্তঃ মুক্তমনার সদস্য পদ নিয়ে আমার চিন্তা হল সদস্য পদে কিছুটা পরিবর্তন আনা উচিত ব্লগের যথাযত নিয়ন্ত্রণের জন্য। এ রকম মন্তব্য আগেও করেছিলাম, তবে বিস্তারিত বলিনি। সদস্য পদ করা যেতে পারে –

ক) পাঠকঃ যারা নিজ নামে শুধু মন্তব্য করতে পারবেন (মডারেশন ছাড়া), কিন্তু কোন প্রকার লেখা পোষ্ট করতে পারবে না। এখন যেমন কোন একজন নুতন ব্যক্তি মন্তব্য করলে তাঁকে একটি একাউন্ট দেওয়া হয় সেটি হতে পারে এই একাউন্ট। কিন্তু উনি যদি মুক্তমনায় লেখা প্রকাশ করতে আগ্রহী হোন তবে এডমিনকে মেইল করলে উনাকে লেখক হিসেবে আপগ্রেড করা হবে।

খ) লেখকঃ একজন লেখক মডারেশন ছাড়া মন্তব্য করতে পারবেন কিন্তু উনার লেখা মডারেশন হয়ে আসবে। আশা করি এই সদস্যের সংখ্যা খুব বেশি হবে না যেন মডারেশনের উপর বেশি চাপ পরে যায়। এক জন লেখক আনুমানিক পাঁচটি লেখা প্রকাশের পর অথবা তিন মাস পর (যেটি পরে আসে) মডারেশন ছাড়া লেখা প্রকাশ করতে পারবেন। এই বাফারটুকু রাখার কারণ হচ্ছে যেন এই সময়ের মধ্য দিয়ে একজন নুতন লেখক মুক্তমনার পরিবেশ এং সহলেখকদের সম্পর্কে একটি ধারণা করে নিতে পারেন। এতে করে অনেক অনাকাঙ্ঘিত ঘটনা রোধ করা যাবে। এই সম্পর্কে কিছুদিন আগেই ঘটে যাওয়া ঘটনাটি উদাহরণ হতে পারে। এটি লেখককে যাচাই করা বা এ রকম কিছু নয়। শুধুমাত্র মুক্তমনার মান ধরে রাখার জন্য কিছুটা বাড়তি সতর্কতা। এই সময়ের মধ্য আশা করি একজন লেখক বুঝতে পারবেন মুক্তমনার উদ্দেশ্য বা প্রত্যাশা কী।

গ) মুক্তমনাঃ ট্রাঞ্জিশন পিরিয়ড পার হয়ে গেলে হবে এই সদস্য পদ, যারা সরাসরি লেখা এবং মন্তব্য করতে পারবেন। মুক্তমনার বৈচিত্র্য, মান সব কিছু ধরে রাখা এবং একটি সুন্দর সমাজ গঠনের লক্ষ্যে মুক্তমনা ব্লগকে সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য করে তোলার গুরু দায়িত্ব এদের হাতে। এরাই হবে মুক্তমনা ব্লগের মূল প্রাণ।

৩। তৃতীয় কাজটি হতে পারে বিবর্তন নিয়ে করা আর্কাইভের মত ধর্ম নিয়ে নানান প্রশ্নগুলো নিয়ে একটি আর্কাইভ করে রাখা। এতে কোন সন্দেহ নেই, শুধুমাত্র মুক্তমনায় যে পরিমান তথ্য আছে সেগুলোই যথেষ্ট একজন মানুষকে আলোর পথ দেখাতে যদি না তার চোঁখ বন্ধ থাকে। আমি নিজে অভিজিত’দা, বিপ্লব’দা, অপার্থিব’দা, আকাশ মালিক ভাই, উনাদের লেখা পড়ে অনেক প্রশ্নের জবাব পেয়েছি। কিন্তু এর জন্য আমাকে লেখাগুলো সব খুঁজে খুঁজে বের করতে হয়েছে। সকলের সেই আগ্রহ নাও থাকতে পারে। তাই সকল লেখাগুলো একটি পৃষ্ঠায় নিয়ে আসলে এবং সাধারণ প্রশ্নগুলো জড়ো করে তার উত্তর গুলো সংগ্রহ করে রাখলে অনেকেরই কাজে লাগবে বলে বিশ্বাস।

এর মাধ্যমে এটিও নিশ্চিত হবে যে একই বিষয় নিয়ে কেউ লেখা লেখার আগে কয়েকবার ভাববে। নুতন কিছু না হলে তিনি লেখা দিবেন না, বা দিলেও সেই লেখা প্রকাশের বাধ্যবাধকতা মুক্তমনার থাকবে না। সেই সাথে মুক্তমনার নীতিমালায় যোগ করে দেওয়া যেতে পারে যে ধর্ম নিয়ে বা বিবর্তন নিয়ে লেখা দেওয়ার আগে যেন এই আর্কাইভ দু’টো আগে ভালভাবে পড়ে নেয়। আর্কাইভের বাহিরে যদি কিছু লেখার থাকে তবেই যেন এই দুটি বিষয়ে লিখে, যা আর্কাইভেকে আরো সমৃদ্ধ করবে। আমাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত আর্কাইভগুলোকে সমৃদ্ধ করার দিকে, একই বিষয়ে চর্বিত চর্বন নয়।

আপাতত এই আমার দু’পয়সা। বিপ্লব’দার মন্তব্যের প্রতিমন্তব্য লিখতে গিয়ে দেখি বেশ বড় হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া এই বিষয়ে সকলের আলোচনার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে এটিকে আলাদা একটি পোষ্ট হিসেবেই দিয়ে দিলাম। আপনারা আপনাদের চিন্তাগুলো এখানে জানান। আশা করি সকলের সক্রিয় আলোচনার মাধ্যমে মুক্তমনা ব্লগ আরো এগিয়ে যাবে তার কাঙ্ঘিত লক্ষ্যে।