তানভীরের অবিশ্বাসের হাবিজাবি লেখার মন্তব্য বিভাগে ফারুকের কিছু মন্তব্য ও প্রতিমন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ঐ মন্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে একটা পূর্ণাংগ লেখা সমীচিন হবে মনে করে আমার এই লেখা। প্রায়ই ধর্মানুরাগীরা বিশেষ করে ইসলামিস্টরা তোতাপাখীর মত এই বুলি আওড়ান বা যুক্তি দেন যে মানুষের কর্মকাণ্ডের জন্য মানুষই দায়ী। আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন চিন্তা দিয়েছেন। স্বাধীন চিন্তার দ্বারা মানুষই সিদ্ধান্ত নেয় সে ভাল না মন্দ কাজ করবে। আল্লাহর কোন হাত নেই এতে। কাজেই পাপ পুণ্যের দায় দায়িত্ব মানুষের, যার জন্য আল্লাহ পাপের জন্য শাস্তি আর পুণ্যের জন্য পুরস্কারের বিধান রেখেছেন। আবার তারা এই দাবীও করে যে আল্লাহ পরম দয়ালু আর ক্ষমাশীল (এই দুটি কথা কুরাণের অনেক আয়াতেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে )। এখন দেখা যাক কুরাণের আয়াতেরই আলোকে এই বুলি বা যুক্তির সারবত্তা কতখানি। উল্লেখ করি যে একটা মন্তব্যে আদিল কুরাণের একটা আয়াতে ইংরেজীতে “Leaves straying” উদ্ধৃত করে বলেন আল্লাহই যদি মানুষকে পথভ্রষ্ট করেন তাহলে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা আছে বলার কোন মানে হয় না । প্রত্যুত্তোরে ফারুক ডুবন্ত মানুষের মত খড় ধরে ভেসে থাকার মত “Leaves straying” (stray মানে পথভ্রষ্ট হওয়া) এর এই মানে করেন যে আল্লাহ তো মানুষকে পথভ্রষ্ট করছেন না, যারা পথভ্রষ্ট তাদেরকে পথভ্রষ্ট অবস্থায় রেখে দিচ্ছেন (Leaves) বা পথভ্রষ্ট হওয়া থেকে নিবৃত্ত করছেন না। মজার ব্যাপার হল এই ইসলামিস্টরাই আবার অন্য প্রসঙ্গে বলবে কুরাণের সঠিক মানে বুঝতে হলে আরবীতে কুরাণ পড়। আবার সুবিধা হলে ইংরেজী অনুবাদই উদ্ধৃত করবে। আসল ব্যাপার হল কুরাণের বেশিরভাগ ইংরেজী অনুবাদই পশ্চিমাদের মন আকৃষ্ট করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল অনুবাদ করে অপ্রিয় অংশকে গ্রহণীয় করার চেষ্টা করা হয়েছে। শব্দার্থে কুরাণ (বাংলায়, মওলানা মতিউর রহমান প্রণীত) এবং আল কুরাণের বাংলা অভিধানে আসল মানে বেরিয়ে যায়। দু জায়গাতেই “পথভ্রষ্ট করা”ই বলা হয়েছে আয়াতটির সংশ্লিষ্ট অংশে। এই অংশে আরবীতে বলা আছে “ইউদলিলু” যার অনুবাদ এই দুই বইতে “পথভ্রষ্ট করা” করা হয়েছে। যেহেতু এই দুই বই হল কুরানের শব্দের অর্থ অনুবাদের জন্য তাই তারা শব্দের এই ভুল অনুবাদ করার হঠকারিতা দেখাতে পারেন না, যা ইংরেজী অনুবাদকেরা সম্পূর্ণ আয়াতের অনুবাদের বেলায় করতে পারেন। কুরাণের অন্তত দুটো ইংরেজী অনুবাদ আছে যাতে মূল আরবীর অর্থ সঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। একটি অনুবাদ খোদ মক্কা থেকে প্রকাশিত আর আরবীর পন্ডিতের দ্বারা লিখিত ও অনুমোদিত। সেটা হল “The Noble Quran by Khan and Hilali”। আরেকটা হল The Meaning And Explanation Of The Glorious Qur’an by Muhammad Saed Abdul Rahman এই দু ইংরেজী অনুবাদে “ইউদলিলু” র অনুবাদ করা হয়েছে “sends astray” অর্থাৎ পথভ্রষ্ট করা, পথভ্রষ্ট অবস্থায় রেখে দেয়া বা পথভ্রষ্ট হতে নিবৃত্ত না করা এর কোনটাই নয়। যাহোক পথভ্রষ্ট অবস্থায় রেখে দেয়া ধরে নিয়েই নীচে কুরাণের কিছু আয়াতের বিশ্লেষণ করা যাক। পথভ্রষ্ট ধরে নিলে (যেটা সঠিক) আরো খারাপ দেখায় কুরাণের আয়াতগুলি ও ইসলামিস্টদের যুক্তিসমূহ।

১। আয়াত ৩-১৭৮ > আল্লাহ পাপীদের ছাড় দেন (অর্থাৎ শাস্তি দেয়া স্থগিত করেন) যাতে তারা আরো বেশী পাপে নিমজ্জিত হতে পারে এবং তাদের জন্য ভয়াবহ শাস্তির বিধান করা আছে।

ব্যাপারটা কেমন দাঁড়াল? পাপীকে আরো পাপী করে আরো বেশি শাস্তি দেয়ার লক্ষ্যে আল্লাহ পাপীদের এখনই শাস্তি না দিয়ে অপেক্ষা করেন যাতে তাদের পাপের ঝোলা আরো ভারী হয়। দয়ালু আর ক্ষমাশীলের কি হল? আর পাপীদের ছাড় দেয়া বা শাস্তি স্থগিত রাখা কেন? তাদের যদি সত্যি স্বাধীন চিন্তা থাকে তাহলে তো পরে তারা সুপথে যেতেও পারে। স্বাধীন চিন্তা মানেই তো তাই। তার মানে আল্লাহ ধরে নিয়েছেন (বা জানেন) যে পাপী সব সময়েই পাপী। অর্থাৎ স্বাধীন চিন্তার দ্বারা এখন যে পাপী সে ভবিষ্যতে কখনই সুপথে আসবে না। তাহলে হয় পাপীদের স্বাধীন চিন্তা নেই অথবা তাদের স্বাধীন চিন্তা আল্লাহই পুর্বনির্ধারিত করে দিয়েছেন (যেহেতু তিন জানেন যে তারা পাপ থেকে সরে আসবে না) । তাহলে পাপ পুণ্য মানুষ স্বাধীন চিন্তার দ্বারা নিজের সিদ্ধান্তেই করে, এটা বলা একটা অসার বাক্যই বটে।

২। আয়াত ৬-২৫ -> তাদের মধ্যে অনেকে তোমার কথা শোনে। কিন্তু আমি তাদের মন চাদর দিয়ে ঢেকে দিয়েছি যাতে তারা তোমার কথা বুঝতে না পারে। আর তাদের কানে তালা লাগিয়ে দিয়েছি । তারা আয়াতগুলো দেখার পরেও তা বিশ্বাস করবে না।

কেমন হল ব্যাপারটা। আল্লাহই কাফেরদের মন ঢেকে দিয়েছেন যাতে তারা আল্লাহর বাণী বুঝতে না পারে। মন ঢেকে দেয়া মানে স্বাধীন চিন্তাও কেড়ে নেয়া। এ কি ধরনের দয়ালু বা ক্ষমাপরায়ণ আল্লাহ, যিনি পাপীদেরকে তাঁর বাণী বুঝে সৎপথে আসার সুযোগই দিতে চান না।

৩। আয়াত ৬-১১০ -> এবং আমরা (আল্লাহ নিজেকে আমরা বলার মানে কি?, সে আরেক প্রসংগ) তাদের মন ও কান কে সুপথ থেকে সরিয়ে রেখেছি, কারণ তারা প্রথমেই বিশ্বাস আনে নি। আর কুপথেই অন্ধভাবে বিচরণ করার জন্য তাদেরকে আমরা রেখে দেব,

এবার কেমন হল ব্যাপারটা। প্রথমে বিশ্বাস আনলনা বলে আর চান্স দেব না। মানুষরাও তো এত ক্ষমাহীন হয় না। আর আল্লাহ, যিনি নাকি অসীম দয়ালু আর ক্ষমাশীল?

৪। আয়াত ১৭-৪৬> আমরা তাদের মন ঢেকে দিয়েছি যাতে ও তারা আয়াতসমূহ বুঝতে না পারে, আর তাদের কান ঠসা করে দিয়েছি ।

এ কেমন আল্লাহ। একবার বলেও (আয়াত ৬-২৫) ক্ষান্ত হলেন না। আল্লাহর ক্ষমাহীনতা বড়ই কড়া, একটুও নরম হলেন না। আবারো এই আয়াতে স্মরণ করিয়ে দিলেন তাঁর হিংসাপরায়ণ বাণী।

৫। আয়াত ১৮-৫৭-> … আমরা তাদের মন আচ্ছাদিত করে দিয়েছি পাছে তারা কুরাণের আয়াত বুঝে ফেলে। আর তাদের কাণ ঠস করে দিয়েছি। আর তুমি যখন ওদেরকে সৎপথে ডাকবে, তারা সেই আহবান উপেক্ষা করবে।

দুবার বলেও যথেষ্ঠ হল না। আবারো আল্লাহ এই কথার পুনরুক্তি করলেন। মানুষ এরকম পুনরুক্তি করলে আমরা বলি লেবু বেশি কচলালে তিতা হয়ে যায়। আল্লাহ পুনরুক্তি করলে আমারও পুনরুক্তি করতে দোষ কোথায় । “আহবান উপেক্ষা করবে?” মোহাম্মদ অবিশ্বাসীদের ইসলামে আহবান জানালে তারা কিভাবে সাড়া দেবে তা আল্লাহ আগে ভাগেই জানেন। সবই সাজান পাতান ব্যাপার তা হলে। হুমম…

৬। আয়াত ৪-১১৯ -> সত্যই আমি তাদের পথভ্রষ্ট করব। আমি সত্যই তাদের মনে খারাপ চিন্তার উদ্রেক করাব…

মন্তব্য কি প্রয়োজন পাঠক?

৭। আয়াত ৬-১৩৭-> আল্লাহ যদি চাইতেন, তাহলে মুশরেকরা শিশুহত্যা করত না।

কি জঘন্য। আল্লাহ জেনে শুনে মুশরেকদের শিশুহত্যা থেকে বিরত করলেন না, যদিও বলে বেড়াচ্ছেন যে তিনি চাইলে তা ঠেকাতে পারতেন, চাইলে ওরা তা করত না। কোথায় গেল স্বাধীন চিন্তা। আল্লাহ কি তাদের মগজে সেই স্বাধীন চিন্তা দিতে পারলেন না, যার দ্বারা তারা এটা যে খারাপ তা বুঝে তা থেকে নিবৃত্ত হত? (অর্থাৎ তিনি যে বললেন তিনি চাইলে তারা তা করত না, তার বাস্তবায়ন?)। না আল্লাহ ত পরম দয়ালু। তা করবেন কেন।

৮। আয়াত ১৯-৮৩-> তোমরা কি দেখতে পাওনা যে আমরা শয়তানকে পাঠিয়েছি অবিশ্বাসীদের পাপাচারের দিকে ঠেলে দিতে?।

এই আয়াতের জুড়ি নেই। কোথায় অবিশ্বাসীদের বিশ্বাসের দিকে আনার চেষ্টা করেবেন তা না তদেরকে আরো খারাপ পথের ঠেলে দেয়ার জন্য শয়তান পাঠান পরম দয়ালু আল্লাহ। এর জন্যই নিশ্চয় ই তিনি শয়তান সৃষ্ট করেছেন।

৯। আয়াত ৬-১১২-১১৩> আমি মানুষ আর জ্বীনের মাঝ থেকে প্রত্যেক পগম্বরের বিরুদ্ধে শত্রু বাছাই করেছি, যারা একে অপরকে অণুপ্রাণিত করবে। আমি চাইলে তারা এটা করত না। তাই তাদেরকে তাদের এই কুপথেই ছেড়ে দাও। যাতে তারা তাদের কুকর্ম চালিয়ে যেতে পারে।

শেষই হয় না দেখি। মানুষকে বিপথগামী করতে আল্লাহ বদ্ধ পরিকর। রসুলদের বাধা দেয়ার জন্য মানুষ ও জ্বীন বাছাইও করেন। আবার বলছেন চাইলে তা নাও করতে পারতেন।

১০। আয়াত ২৫-৩১-> এই ভাবে প্রত্যেক নবীর জন্য আমি মুজরেমুনদের (অবিশ্বাসী,কাফের,নাস্তিক,পৌত্তলিক ইত্যাদি) মাঝ থেকে শত্রু সৃষ্টি করে রেখেছি। কিন্তু তোমাকে সুপথে চালিত করার ব্যাপারে আল্লাহই যথেষ্ট।

সত্যই অদ্ভূত। শত্রু সৃষ্টি করে আবার সেই শত্রুদের থেকেই সরিয়ে সুপথে চালান আল্লাহ। এ যেন ভাইরাস সৃষ্টি করে এন্টি ভাইরাস তৈরী করার মত ব্যাপার।

১১। আয়াত ২৬-৪-> আমরা যদি চাইতাম, তাহলে বেহেশত থেকে এমন সঙ্কেত বা চিহ্ন পাঠাতে পারতাম যাতে সবাই নত শিরে বিশ্বাসী হয়ে যেত।

যদি চাইতাম। না তা চাইবেন কেন আল্লাহ। চাইলে তো সব ইস্যু শেষ। ইস্যুকে জিইয়ে রাখতে হবে তো! কিন্তু স্বাধীন চিন্তার কি হল। সবই যদি আল্লাহর ইচ্ছা, তাহলে স্বাধীন চিন্তা দিয়ে বিশ্বাসী বিশ্বাসী হবে কেমন করে তারা? সে সুযোগ থেকে তো তারা বঞ্চিত। এর জন্য কে দায়ী?

১২। আয়াত ৭-১৭৯-> অবশ্যই আমরা জ্বীন ও মানুষদের মাঝ থেকে এমন অনেককে সৃষ্টি করেছি যারা হৃদয় থাকতেও বোঝে না, চোখ থাকতেও অন্ধ, কান থাকতেও বধির।

সেই সৌভাগ্যবানেরা কারা। আমরা আপনারা, মুক্তমনারা? তাহলে এই মুক্তমনারা আল্লাহর প্ল্যান অনুযায়ী সৃষ্ট। আর সাজা পেতে হবে তার জন্য আমাদেরই? কি আজব বিচার!

১৩। আয়াত ১১-১১৯-> নিশ্চয়ই আমি পাপিষ্ঠ মানুষ আর জ্বীন দ্বারা দোজখ ভরতি করে ফেলব।

ও তাই বুঝি। তার মানে কজন বা কারা দোজখে যাবে (অর্থাৎ পাপিষ্ঠ হবে) সবই পূর্বনির্ধারিত। তা নাহলে আল্লাহ জানেন কেমন করে যে দোজখ ভরে যাবে। দোজখের ক্যপাসিটির বেশি পাপিষ্ঠ তৈরী করবেন না আল্লাহ, যাতে ঠিক ভরে যায় সে পরিমাণ। সবই তো দেখছি আল্লাহর আগে ভাগেই হিসাব নিকেশ করা। হা স্বাধীন চিন্তা!।

১৪। আয়াত ৩২-১৩-> আমরা যদি চাইতাম তাহলে নিশ্চয়ই সবাইকে সৎপথে চালিত করতে পারতাম, কিন্তু আমার একথাটাই ফলবে যে আমি দোজখ মানুষ ও জ্বীন দ্বারা ভরে দেব।

পাঠক, আর কোন মন্তব্য করার প্রয়োজন আছে কি?

১৫। আয়াত ১৭-৯৭-> আল্লাহ যাদের পথনির্দেশ করেন তারাই সুপথে চালিত হয়, আর যারা কুপথে যায়, আলাহ তাদের সেখানই রেখে দেন, কারো সাধ্য নেই তাকে রক্ষা করার।

কি দাঁড়াল ব্যাপারটা। যারা সুপথে চালিত হয়, তারা আল্লাহর দ্বারা পথ নির্দেশিত হয় বলেই সুপথগামী হয়। যারা বিপথগামী হয়েছে নিশ্চয় তারা আল্লাহর দ্বারা পথ নির্দেশিত হয় নি। তাহলে আল্লাহ আগেই কিছু পক্ষপাতমূলক পছন্দ করে রেখেছেন কাকে পথনির্দেশ করবেন আর কাকে করবেন না। তাহলে আর স্বাধীন চিন্তার প্রয়োজন কি। পাপ পুণ্য তো আল্লাহর পথ নির্দেশনা দেয়ার বা না দেয়ারই কারণেই ।

১৬। আয়াত ৬-১২৫-> যাকে আল্লাহ পথ নির্দেশনা দিতে ইচ্ছে করেন তারা ইসলামের প্রতি বুক খুলে দেয়। আরা যাদেরকে আল্লাহ বিপথে রেখে দিতে ইচ্ছা করেন তারা বুক বন্ধ করে দেয়।

অর্থাৎ পথভ্রষ্ট হওয়া বা না হওয়াটা আল্লাহর ইচ্ছা। তাহলে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার কি মূল্য, যদি তা থাকেও?

১৭। আয়াত ৭-১৭৮-> যাকে আল্লাহ পথ নির্দেশনা দিবেন সেইই সুপথে চালিত হবে। আরা যাদেরকে তাঁর পথ নির্দেশনা দিতে অস্বীকার করবেন তারা ধংসের মুখে পতিত হবে।

আবারো এটা পরিস্কার করে দিচ্ছেন আল্লাহ যে পথ নির্দেশনা পেয়ে সুপথে চালিত হওয়া বা না পেয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়া সবটাই আল্লাহর ইচ্ছা।

১৮। আয়াত ৭-১৮৬-> যাদেরকে আল্লাহ পথ নির্দেশনা দিতে অস্বীকার করবেন তাদেরকে কেউই পথ নির্দেশনা দিতে পারবে না, তারা তাদের কুকর্মের জগতেই ঘুরতে থাকবে।

পাছে আমরা এখনও এটা বুঝতে পারিনি আল্লাহ পুনরুক্তির দ্বারা তা আবার বুঝিয়ে দিলেন।

১৯। আয়াত ১৮-১৭ -> আল্লাহ যাদের পথনির্দেশ করেন তারাই সুপথে চালিত হয়, আর যাদের আল্লাহ কুপথে ছেড়ে যান তাকে সুপথে চালিত করার সাধ্য কারোরই নেই।

আরও পুনরুক্তির প্রয়োজন আল্লাহর !

২০। আয়াত ৩৫-৮-> আল্লাহ যাদেরকে খুশি কুপথেই রেখে দেন, আর যাদেরকে খুশি পথ নির্দেশনা দেন।

যদি এখনও বুঝে না থাকেন, আল্লাহ পরিস্কার করছেন যে সুপথে বা কুপথে যাওয়া/থাকা সেটা হল আল্লাহর খুশি।

আমি আর পুনরুক্তি না করেই বলি যে আয়াত ৩৯-২৩ ও ১৪-৪ এর পুনরুক্তি করেছেন আল্লাহ।

২১। আয়াত ৭৬-২৮,২৯-> যারাই চায়, তারাই আল্লাহর সোজা পথে আসুক। কিন্তু তারা চাইবে না যদি না আল্লহ চান

আর কি বলার আছে। আপনি আল্লাহর পথে আসতে চাইলেই যথেষ্ঠ না, আল্লাহকেও তা চাইতে হবে। অর্থাৎ আপনার স্বাধীন চিন্তা বলে কিছু থাকেও, তা যথেষ্ঠ নয়, আল্লাহর স্বাধীন চিন্তা ও আপনার স্বাধীন চিন্তার মাহেন্দ্র যোগ ঘটলেই আপনার আখেরের পথ প্রশস্ত হবে, নচেৎ নয়!

২২। আয়াত ৭৪-৫৫,৫৬-> যারা আল্লাহর সতর্কবাণী আমল দিতে চায় তারা তা দিক। কিন্তু তারা আমল দিবে না, যদি না আল্লাহ তা চান।

উপরের ২১ এর কথাই আল্লাহ ঘুরিয়ে বললেন, যাতে এটা পুনরুক্তি বলে মনে না হয়।

২২। আয়াত ১০-১০০-> আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কারও পক্ষে বিশ্বাসী হওয়া সম্ভব নয়।

আর কি কোন সন্দেহ আছে পাঠক যে বিশ্বাসী হওয়া কেবল আপনার স্বাধীন চিন্তার ব্যাপার নয়।

২৩। আয়াত ২-১১৮-> অবিশ্বাসীরা বলে “আমাদের কাছে আল্লাহ তাঁর অস্তিত্বের প্রমাণস্বরূপ কোন আলামত পাঠান না কেন?” আমরা যাদের অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস আছে তাদের কাছে স্পষ্ট আলামত ঠিকই পাঠাই

অপাত্রে দান আর কাকে বলে। অবিশ্বাসীকেই তো আলামত পাঠানোর কথা, বিশ্বাস আনার জন্য। যারা ইতিমধ্যেই বিশ্বাসী, তাদের আর আলামত পাঠিয়ে কি লাভ?

এর সবেরই একটা গৎবাঁধা উত্তর বিশ্বাসীরা তোতা পাখীর মত আওড়ায়। সেটা হল, আল্লাহর কাজকর্ম রহস্যময়, আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন কেন তিনি যা করেন তা কেন করেন। আমরা মরণশীল মানুষ তা কি করে বুঝতে পারি? না বুঝার অযুহাত জায়গামত দেয় এরা। আবার এরাই অন্য এক প্রসঙ্গে বলবে, কুরাণ ভাল মত পড়? পড়লে ঠিকই বুঝতে। না বুঝলে কুরাণের হাফেজকে জিজ্ঞেস কর, তাঁরা ঠিকই বুঝিয়ে দেবে। আবার এই হাফেজরাই সুবিধা না করতে পারলে আল্লাহর সব কারবারই রহস্যময়, যা কেবল আল্লাহই বোঝেন এই যুক্তির আশ্রয় নেয়।