রায়হান সাহেব বিভিন্ন ব্লগে লেখালেখি করেন। তিনি একসময় মুক্ত-মনায়ও লেখালেখি করতেন। মুক্ত-মনায় তাঁর লেখাগুলো পাবেন – এখানে। সেদিন তাঁর একটা লেখা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। লেখাটির শিরোনাম, “সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের স্বপক্ষে তিনটি স্বতন্ত্র প্রমাণ”। লিংক ১ ২ ৩। তার লেখাটি পড়ে এতই মজা পেলাম যে ভাবলাম এ নিয়ে কিছু লেখলে মন্দ হয় না।
তিনি স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য তিনটি যুক্তি দিয়েছেন। আমরা একে একে দেখব তা স্রষ্টার অস্তিত্ব কতটুকু প্রমাণ করেছে। প্রথমেই লেখাটির ভূমিকায় চোখ রাখা যাক। তিনি লিখেছেন-
“প্রফেসর রিচার্ড ডকিন্স সম্ভবত সমসাময়িক সময়ের সবচেয়ে যুক্তিবাদী ও জ্ঞানী নাস্তিক। নিদেনপক্ষে তাঁর অনুসারীরা তেমনটাই বিশ্বাস করেন। সাদা চামড়ার বৃটিশ ও অক্সফোর্ড প্রফেসর হওয়ার সুবাদে অনেকেই তাঁর বাণীকে কোনরকম সংশয়-সন্দেহ ছাড়া গডের বাণীর মতই বিশ্বাস করে! তাঁর সবগুলো লেকচার, ডিবেট, ও ইন্টারভিউ শুনেছি। এমনকি একাধিকবারও শুনেছি। এখন পর্যন্তও কোরআন থেকে সরাসরি দু-একটি আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে তাঁর কোন সমালোচনা নজরে পড়েনি, যদিও কোরআন হচ্ছে ইসলামের ভিত্তি। ইসলাম বলতে উনি মূলতঃ ৯-১১, ৭/১১, টেররিজম, সুইসাইড বোম্বিং, মুরতাদ হত্যা, ও নারীদের বোরখা ছাড়া অন্য কিছু বোঝেন বলে মনে হয়নি! এটি কি কোন যৌক্তিক বা বৈজ্ঞানিক পন্থা হতে পারে! মিডিয়া যে কীভাবে মানুষকে ব্রেনওয়াশ করতে পারে তার জ্বলন্ত প্রমাণ হচ্ছে প্রফেসর ডকিন্স, স্যাম হারিস, ও ক্রিস্টোফার হিচেন্সের মতো বড় বড় কিছু ‘যুক্তিবাদী’ নাস্তিক। আর এই যদি হয় অক্সফোর্ড প্রফেসর ডকিন্স, স্যাম হারিস, ও ক্রিস্টোফার হিচেন্সের মতো জ্ঞানী-গুণী লোকজনের অবস্থা তাহলে টম-ডিক-হ্যারি-দের অবস্থা যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে ভাবা যায়! যাহোক, প্রফেসর ডকিন্স কিন্তু সুন্দর করে সাজিয়ে-গুছিয়ে কথা বলতে পারেন। তাঁর প্রত্যেকটি কথা ও যুক্তি মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করেছি। তাঁর যুক্তিকে ইসলামের থিয়লজি ও কোরআনের সাথে তুলনা করে এবং সেই সাথে নিজের বিচার-বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে লোকটার প্রতি বেশ করুণাই হয়েছে। তাঁর মতো একজন জ্ঞানী-গুণী-স্মার্ট মানুষও যে কীভাবে লর্ড জিসাস ও বাইবেলের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছেন, সেটা যাদের ইসলামের থিয়লজি ও কোরআন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান আছে তারা ছাড়া অন্য কেউ বুঝবেন না”।
দাঁড়ান একটু হেসে নেই। এবার এ অংশটি নিয়ে একটু সিরিয়াস কথা বলি-
১। তিনি রিচার্ড ডকিন্সকে ‘সম্ভবত সমসাময়িক সময়ের সবচেয়ে যুক্তিবাদী ও জ্ঞানী নাস্তিক’ বলেছেন। প্রশ্ন হল, সবচেয়ে জ্ঞানী ও যুক্তিবাদী নাস্তিক বলতে কি বুঝায়? আর কিভাবে তা হওয়া যায়? আর রিচার্ড ডকিন্সের অনুসারীরা (!?) তেমনটি বিশ্বাস করেন? ‘তাঁর অনুসারী’ কথাটি এমনভাবে বলা হয়েছে যেন ডকিন্স একটি নতুন ধর্ম প্রচার করছেন যে তারঁ একপাল শিষ্য রয়েছে যারা শুধুই তাঁর অনুসরণ করে বেড়ায়।
২। ‘সাদা চামড়ার ব্রিটিশ’ বিষয়টি ঠিক বুঝলাম না। সাদা চামড়ার ব্রিটিশরা যা বলে তা কি সবাই খেয়ে বসে? সাদা চামড়ার ব্রিটিশ আর অক্সফোর্ড প্রফেসর হলেই তাঁর কথা কেউ কোনো রকম সংশয়-সন্দেহ ছাড়া গডের মত বিশ্বাস করে ফেলে – এমন কথা সত্যিই প্রথম শুনলাম। এ ধরণের আজগুবী কথা প্রবন্ধের শুরুতেই না বললে কি এমন বিশেষ কোনো সমস্যা ছিল?
৩। একটি বিষয় আমার মাথায় আসছে না। সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে রায়হান সাহেব এখানে রিচার্ড ডকিন্সকে নিয়ে আসলেন কেন? সম্ভবত উনি রিচার্ড ডকিন্সকে নিয়ে এসে তা-ই বোঝাতে চাইলেন যে তিনি যার তার বিরুদ্ধে এ মহা-মূল্যবান প্রবন্ধ লেখছেন না, স্বয়ং অক্সফোর্ড প্রফেসর ও সাদা চামড়ার ব্রিটিশ রিচা্র্ড ডকিন্সের বিরুদ্ধে লিখছেন!!
বিজ্ঞানীরা সচরাচর সাধারণ মানুষের কুসংস্কার, ধর্মবিশ্বাস এগুলো নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামান না। রিচার্ড ডকিন্স এখানে ব্যতিক্রম। তিনি ঈশ্বরের ও ধর্মের অসারতা অতি সহজ ভাষায় জনসাধারণের কাছে তোলে ধরেছেন। তাই ধর্ম ব্যবসায়ীদের কাছে হয়েছেন বিরাগ-ভাজন। বস্তুত তাঁর মত স্বচ্ছ চিন্তার যুক্তিবাদী ও সংগ্রামী মানুষ পাওয়া ভার। এজন্য আবার তিনি জনপ্রিয়। তাই বলে কোনো যুক্তিবাদী তাঁকে ‘গুরু’ বানিয়ে বসে রয়েছেন এমনটি শুনিনি। প্রশ্নহীন আনুগত্য আশা করে ধর্ম প্রচারক ষণ্ডারা, একজন যুক্তিবাদী নন। সমালোচনা, সংশয় ও প্রশ্নকে উৎসাহিত করেন একজন যুক্তিবাদী।
৪। রায়হান সাহেব বলেছেন, “তাঁর সবগুলো লেকচার, ডিবেট, ও ইন্টারভিউ শুনেছি”। ভালো কথা যদিও খুবই সন্দেহজনক। তিনি ডকিন্সের সবগুলো লেকচার, ডিবেট, ও ইন্টারভিউ শুনেছেন তবে তাঁর কোনো বই পড়েছেন কিনা বলেননি। আবার বলেছেন, “তাঁর প্রত্যেকটি কথা ও যুক্তি মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করেছি”। অর্থাৎ শুনেছেন, পড়েন নি!! (তিনি নাকি হুমায়ুন আজাদের একটাও বই পড়েননি আর তা আবার প্রচারের জন্য ব্লগে পোস্ট দিচ্ছেন। কী হাস্যকর! )
৫। রায়হান সাহেব বলেছেন, “এখন পর্যন্তও কোরআন থেকে সরাসরি দু-একটি আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে তাঁর কোন সমালোচনা নজরে পড়েনি, যদিও কোরআন হচ্ছে ইসলামের ভিত্তি। ইসলাম বলতে উনি মূলতঃ ৯-১১, ৭/১১, টেররিজম, সুইসাইড বোম্বিং, মুরতাদ হত্যা, ও নারীদের বোরখা ছাড়া অন্য কিছু বোঝেন বলে মনে হয়নি! এটি কি কোন যৌক্তিক বা বৈজ্ঞানিক পন্থা হতে পারে”।
কথা হল ডকিন্স কেনো কোরান থেকে দু-একটি আয়াত উদ্ধৃতি দিয়ে সমালোচনা করবেন? নাকি তিনি তা করতে বাধ্য? স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে শুরুতেই রায়হান গোঁজামিল পাকিয়ে দিচ্ছেন। স্রষ্টার অস্তিতে প্রমাণের শুরুতেই ডকিন্স কেনো কোরান থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে সমালোচনা করলেন না এসব বলা কি সুস্থ মস্তিষ্কের কাজ?
ইসলাম বলতে কেউ যদি ৯-১১, ৭/১১, টেররিজম, সুইসাইড বোম্বিং, মুরতাদ হত্যা, ও নারীদের বোরখা ইত্যাদি বোঝেন তবে খুব কি ভুল বোঝবেন? আস্ত কোরানই তো হুমকি-ধামকি, জ্বালিয়ে ফেলব, পুড়িয়ে ফেলব, অনন্ত কাল জ্বালাব, ধ্বংস করব, হত্যা কর, নারীরা শস্যক্ষেত্র ইত্যাদিতে ভরপুর। এখন কেউ এসে কোরানের কয়েকটি আয়াত ধরে টেনে লম্বা করে দিলেই বা নিজের মত ব্যাখ্যা করে দিলেই দায় সারা হয়ে যায় না।( ইসলামের প্রকৃত স্বরুপ বোঝতে হলে উইকি ইসলাম, ইসলাম ওয়াচ, আনসারিং ইসলাম, ফেইথ ফ্রিডম ইত্যাদি সাইটে যেতে পারেন।)
৬। বলেছেন, “মিডিয়া যে কীভাবে মানুষকে ব্রেনওয়াশ করতে পারে তার জ্বলন্ত প্রমাণ হচ্ছে প্রফেসর ডকিন্স, স্যাম হারিস, ও ক্রিস্টোফার হিচেন্সের মতো বড় বড় কিছু ‘যুক্তিবাদী’ নাস্তিক”। আচ্ছা পৃথীবীর কতভাগ মিডিয়া নাস্তিকদের দখলে? যেখানে ধর্মবাদী-ধর্মজীবীদের মিডিয়ার অভাব নেই। তদের রয়েছে অগুণিত পত্রিকা, টিভি চ্যানেল ইত্যাদি যেগুলোর কাজই হল শুধু ধর্ম প্রচার।
৭। ডকিন্স কবে থেকে লর্ড জিসাস ও বাইবেলের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছেন ঠিক জানি না। আবার কিভাবে ঘুরপাক খাচ্ছেন তা যাদের ইসলামের থিয়লজি ও কোরআন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান আছে তারা ছাড়া অন্য কেউ নাকি বুঝবেন না। হাহ, হা। ব্যাপক বিনোদন!
এবার দেখব রায়হান সাহেবের প্রথম যুক্তি-
“১) মহাশূন্য, ছায়াপথ, গ্রহ-নক্ষত্র, ও বিলিয়ন বিলিয়ন প্রজাতি তথা প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগত সহ এই ন্যাচারাল মহাবিশ্ব এমনি এমনি সৃষ্টি হতে পারে না। একদমই অসম্ভব। শূন্য থেকে তো দূরে থাক এমনকি সবকিছু ব্যবহার করেও এই মহাবিশ্ব তো দূরে থাক তার মতো ছোট-খাটো একটি মডেলও কেউ তৈরী করে দেখাতে পারবে না। নাস্তিকরা নিদেনপক্ষে এই মহাবিশ্বের ছোট-খাটো একটি মডেল তৈরী করে দেখাতে পারলেও শুরু করার মতো তাদের একটা পয়েন্ট থাকতে পারতো, যদিও তাতে প্রমাণ হবে না যে এই মহাবিশ্বের কোন সৃষ্টিকর্তা নেই! কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সেটাও তারা পারবে না। ফলে যারা বিশ্বাস করেন যে, তারা নিজেরা সহ এই ন্যাচারাল মহাবিশ্ব এমনি এমনি সৃষ্টি হয়েছে, তারাই হচ্ছে প্রকৃত অন্ধ-বিশ্বাসী ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। এই ধরণের অন্ধ-বিশ্বাস ও কুসংস্কারের আসলে কোন তুলনাই হয় না। এর চেয়ে বরং পেগান ও গ্রীক পৌরাণিক কাহিনীতে বিশ্বাস অনেক বেশী যৌক্তিক! যাহোক, প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগত সহ এই ন্যাচারাল মহাবিশ্ব যেহেতু আছে সেহেতু তার একজন সৃষ্টিকর্তা থাকতেই হবে। এটি একটি অবজেক্টিভ ও অখণ্ডনীয় যুক্তি।”
প্রথম দুটি বাক্য লক্ষ্য করি। এখানে তিনি বলেছেন, “মহাশূন্য, ছায়াপথ, গ্রহ-নক্ষত্র, ও বিলিয়ন বিলিয়ন প্রজাতি তথা প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগত সহ এই ন্যাচারাল মহাবিশ্ব এমনি এমনি সৃষ্টি হতে পারে না। একদমই অসম্ভব”।
নাস্তিকরা কি বলে মহাশূন্য, ছায়াপথ, গ্রহ-নক্ষত্র, ও বিলিয়ন বিলিয়ন প্রজাতি তথা প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগত সহ এই ন্যাচারাল মহাবিশ্ব এমনি এমনি সৃষ্টি হয়েছে? মহাবিশ্বের উৎপত্তিসহ প্রাণীজগত ও উদ্ভিতজগতের উদ্ভব প্রক্রিয়া সম্পর্কে গবেষণা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিজ্ঞানীদের কাজ, এটি অন্য কারো অহেতুক কলহের বিষয় নয়। বলা বাহুল্য বিজ্ঞানীরা আজ পর্যন্ত ‘ঈশ্বর’ বা এরকম কোনো অলৌকিক সত্ত্বার অস্তিত্বের কোনো সন্ধান পান নাই। এক সময় আমরা মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। বিগ ব্যাং সহ বাদবাকী বিষয় বিজ্ঞানীদের গোচরে এসেছে এই সেদিন। আর মহাবিশ্বের উৎপত্তি সংক্রান্ত গবেষণায় প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। আমাদের উচিত মহাবিশ্বের উৎপত্তি সংক্রান্ত যেসব বিষয় অজানা রয়ে গেছে তা জানার জন্য বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যৎ গবেষণার অপেক্ষায় থাকা। তা না করে কেউ যদি ‘ঈশ্বর’ কে নিয়ে এসে মহাবিশ্ব, উদ্ভিদ ও প্রাণীজততের উৎপত্তির ব্যাখ্যা দিতে চান তবে অবশ্যই তাকেই ‘ঈশ্বর’ এর অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হবে যা এখনো কেউ করতে পারেন নাই। আসলে ঈশ্বর দিয়ে কোনো ঘটনা ব্যাখ্যা করার কোনো মানেই নেই। যেমন ভূমিকম্পের কারণ হিসেবে কেউ যদি বলেন তা ঈশ্বরের অভিশাপ বা পানিচক্র ঈশ্বরের আদেশে ঘটে তবে এ কথার কোনো গুরুত্ব আছে কি? আর যে কথা বারবার বলতে হয়- সবকিছুর পেছনে যদি কোনো কারণ থাকতে হয় তবে ঈশ্বরের পেছনেও তো কোনো কারণ থাকতে হবে যা এভাবে অনন্তকাল পর্যন্ত চলতে থাকবে। (ঈশ্বরবাদিরা ঈশ্বরের পেছনে আর কোনো কারণ বা ঈশ্বরের কোনো স্রষ্টা নেই বলে বিশ্বাস করেন তাই অনেকে মজা করে বলেন- ইশ্বরই সবচেয়ে বড় নাস্তিক কেননা তিনি স্বীকার করেন না যে তার কোনো স্রষ্টা বা ঈশ্বর আছে।)
পরের কথায় আসি, “শূন্য থেকে তো দূরে থাক এমনকি সবকিছু ব্যবহার করেও এই মহাবিশ্ব তো দূরে থাক তার মতো ছোট-খাটো একটি মডেলও কেউ তৈরী করে দেখাতে পারবে না।” মহাবিশ্বের মডেল বানাতে পারলে তাতে কী হবে বা কী প্রমাণিত হবে আমার জানা নেই। মানুষের অজ্ঞতা ও অক্ষমতাকে ঈশ্বরবাদীরা ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ হিসেবে দেখাতে চান যা নিতান্তই হাস্যকর। যেমন কেউ কেউ বলেন, আপনি কি পারবেন চাঁদ, সূর্য, পাহাড় এগুলো তৈরী করতে? আচ্ছা আমি যদি চাঁদ-সূর্য-পাহাড় এগুলো তৈরী করতে পারি না তবে তাতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব কিভাবে প্রমাণিত হল? নাস্তিকরা কি বলেন, আমরা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বশ্বাস করি না তাই আমরাই ঈশ্বর? বরং নাস্তিকরা বলেন, ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ না থাকায় আমরা তাতে বিশ্বাস করি না। এ প্রসঙ্গে একটি গল্প স্মরণ হল।
এক আস্তিক আর নাস্তিকের মধ্যে বিতর্ক হচ্ছে-
আস্তিকঃ দেখ ঈশ্বর কী সুন্দর ঝর্ণা তৈরী করেছেন পাহাড়ের গায়।
নাস্তিকঃ এটা তো প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই তৈরী হয়েছে, এখানে ঈশ্বর আসল কোথা থেকে?
আস্তিকঃ তাহলে আপনি এরকম একটি ঝর্ণা তৈরী করে দেখান তবে মেনে নেব আপনার কথা।
নাস্তিক বেচারা বহু কষ্টে পাহাড়ের অপর দিকে একটা কৃত্রিম ঝর্ণা তৈরী করে দেখালেন। এবার আস্তিক বললেন, ওহ, আপনি অনেক পরিশ্রম করে তা বানিয়েছেন যা আমার ঈশ্বর আদেশ করা মাত্রই এক নিমিষেই সৃষ্টি হয়ে গেল!! আর ঈশ্বর যদি সে ক্ষমতা আপনাকে না দিতেন তবে তা কি তৈরী করতে পারতেন?
আসলে মানুষের অক্ষমতা, সক্ষমতা, জ্ঞান, অজ্ঞান এক ব্যাপার আর ঈশ্বরের অস্তিত্ব ভিন্ন ব্যাপার। যেমন একজন মুসলিম ধর্মবাদী বলতে পারেন, পানি আল্লাহর নিয়ামত, আল্লাহ আমাদের জন্য পানি সৃষ্টি করেছেন। এবার কেউ যদি হাইড্রজেন আর অক্সিজেন এর সংমিশ্রণে কৃত্রিম উপায়ে পানি তৈরী করে দেখান তবে ঐ ধর্মবাদী তার অবস্থান থেকে কি এতটুকু টলবেন?
‘মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা’ কথাটির মধ্যেই সমস্যা রয়েছে। এতে আগেবাগেই ধরে নেয়া হয় মহাবিশ্ব কেউ না কেউ সৃষ্টি করেছে বা সৃষ্টি নামক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মহাবিশ্ব উৎপত্তি লাভ করেছে। আর ধর্মবাদীদের সমস্যা হল তারা আগেই ধরে নেন মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা বলতে কেউ রয়েছে আর পরে এটি প্রমাণের জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা চালান। এ বিষয়ের উপর অপার্থিবের একটি অসাধারণ প্রবন্ধ রয়েছে – WHO CREATED YOU?
রায়হান এবার বলছেন, “নাস্তিকরা নিদেনপক্ষে এই মহাবিশ্বের ছোট-খাটো একটি মডেল তৈরী করে দেখাতে পারলেও শুরু করার মতো তাদের একটা পয়েন্ট থাকতে পারতো, যদিও তাতে প্রমাণ হবে না যে এই মহাবিশ্বের কোন সৃষ্টিকর্তা নেই! কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সেটাও তারা পারবে না”।
শুরু করার মত একটা পয়েন্ট থাকলে তাতে স্রষ্টার বা ঈশ্বরের অস্তিত্ব কিভাবে প্রমাণিত হয় তা বোঝা মুশকিল বটে। আস্তিকরা সবসময় একটা বিভ্রান্তির মধ্যে থাকে। কোনো কিছু যদি অজানা হয় তবে তার কারণ তাদের কাছে নিঃসন্দেহে ঈশ্বর। মহাবিশ্বের শুরু আছে? ও তাহলে শুরুটা হবে নিঃসন্দেহে ঈশ্বর থেকে। আর ঈশ্বরের শুরু? উত্তর হল, এজন্যই নাস্তিকরা বিভ্রান্ত!!
আমরা রায়হান সাহেবের স্বঘোষিত অখণ্ডণীয়(!!) যুক্তিটি দেখলাম। এবার যাওয়া যাক দ্বিতীয় যুক্তিতে –
“২) আব্রাহাম, মোজেস, জিসাস, ও মুহাম্মদ (সাঃ) সহ অনেক গ্রেট হিউম্যান নিজেদেরকে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার মেসেঞ্জার বলে দাবি করেছেন। সৃষ্টিকর্তার কোন অস্তিত্বই না থাকলে কেউ নিজেকে যেমন সৃষ্টিকর্তার মেসেঞ্জার বলে দাবি করতে পারেন না তেমনি আবার সৃষ্টিকর্তা থেকে মেসেজ পাওয়ারও দাবি করতে পারেন না। এটি স্রেফ কোন উটকো দাবিও নয়। যেমন মুহাম্মদ (সাঃ) দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁর দাবিকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর পূর্বের মেসেঞ্জাররাও তা-ই করেছেন। যাহোক, তাঁদের দাবি থেকে মাত্র দুটি উপসংহারে পৌঁছা যেতে পারে: (ক) তাঁরা সবাই মিথ্যাবাদী ও প্রতারক ছিলেন, যেটা বিশ্বাস করা প্রায় অসম্ভব। বরঞ্চ তাঁদের সবায়কে মিথ্যাবাদী ও প্রতারক হিসেবে বিশ্বাস করাটাই হচ্ছে একটি অন্ধ-বিশ্বাস ও আত্মপ্রতারণা। (খ) তাঁদের মধ্যে একজনও যদি সত্যবাদী হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে এই মহাবিশ্বের যে একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন, তাতে সংশয়-সন্দেহের কোনই অবকাশ নেই। ইসলামে বিশ্বাসীরা যেহেতু তাঁদের কাউকেই মিথ্যাবাদী বা প্রতারক হিসেবে বিশ্বাস করে না, কোরআনের আলোকে এমন বিশ্বাসের পেছনে কোন যৌক্তিকতাও নেই, সেহেতু তাদের কাছে এটি একটি অকাট্য প্রমাণ বা ধ্রুব সত্য। এমনকি ইহুদী-ক্রিস্টিয়ানদের কাছেও এটি একটি অকাট্য প্রমাণ বা ধ্রুব সত্য।”
যুক্তিটি ভাল করে খেয়াল করেন। কথা হল, আব্রাহাম, মোজেস, জিসাস, মুহাম্মদ এরা যে গ্রেট হিউম্যান ছিলেন সে সিদ্ধান্তে তিনি আসলেন কিভাবে? আব্রাহাম, মোজেস, জিসাস -বাস্তবে এরা কেউ ছিলেন কিনা তা নিয়েই প্রশ্ন তোলা সম্ভব। আমরা জানি, ‘জিসাস’ বলতে কেউ কোথাও আদৌ ছিলেন কিনা তা নিয়ে অনেকেরই দ্বিধা রয়েছে। এছাড়া আব্রাহাম, মোজেস, জিসাস – তাদের সবাই কি আসলেই নবুয়তের দাবি করেছিলেন এবং করে থাকলে তাদের কাছে নবুয়তের ব্যাখ্যা কী ছিল তা নির্ধারণ করাও জঠিল ব্যাপার বটে।
মুহাম্মদ যদি নবুয়তের ঢং না করতেন তবে একটা জাতির ‘নেতা’ হতেন কিভাবে? এছাড়া আর কি করলে তিনি এতগুলো বিয়ে করতে পারতেন, এত সম্মান পেতেন, এত ক্ষমতাশালী হতে পারতেন? আর সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত হাজার-হাজার মানুষ তাঁর নামে মরতে পর্যন্ত প্রস্তুত – এ বিষয়টা সম্ভব হত কিভাবে?
আজ থেকে ৩০ থেকে ৪০ বছর আগে মারা যাওয়া ব্যক্তির মূল্যায়ন নিয়ে অনেক বিতর্ক আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে। সেখানে দেড় হাজার বছর আগে মুহাম্মদ কী করেছিলেন, কেন করেছিলেন তা নির্ধারণ করা আসলেই কষ্টকর। এছাড়া তথাকথিত নবি-রসুলদের নিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল তাদের জীবনী রচনা করেছেন ও সংরক্ষণ করেছেন তাদের অন্ধ অনুসারীরা। তাই কালক্রমে তাদের দোষগুলো ঢাকা পড়েছে এবং ধীরে ধীরে তারা মহামানবের আকার ধারণ করেছেন।তাই এযুগে এসে তাদের দোষ খুঁজে পাওয়া অতি দুরহ ব্যাপার বটে, তা সত্ত্বেও যা পাওয়া গেছে তা-ই চমকে উঠার মত। উদাহরণস্বরুপ, আজ থেকে সামান্য কয়েক যুগ আগেও বহু বিবাহ ও শিশুবিবাহকে খারাপ মনে করা হত না- আর এজন্যই মুহাম্মদের এ ধরণের গর্হিত কার্যকলাপগুলোর খবর আজ আমরা জানতে পারছি। যদি বহু বিবাহ ও শিশুবিবাহের মত ঘটনা মুহাম্মদের বা তাঁর কাছাকাছি পরবর্তী যুগেই মন্দ বলে চিহ্নিত হত তবে সে খবর এখন বসে না পাওয়াই স্বাভাবিক ছিল।
মোটকথা, যেকোনো যুক্তিবাদি-ই আব্রাহাম, মোজেস, জিসাস, মুহাম্মদ এদের সম্পর্কে বিভিন্ন সন্দেহ পোষণ করবেন এটাই স্বাভাবিক। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এদের নবুয়তি প্রমাণের দায়িত্ব কিন্তু যারা তা দাবি করে তাদেরই এবং তারা তা করতে পারে নি।
রায়হান বলেছেন, “(ক) তাঁরা সবাই মিথ্যাবাদী ও প্রতারক ছিলেন, যেটা বিশ্বাস করা প্রায় অসম্ভব”। বলেছেন, প্রায় অসম্ভব। ঠিক তার পরেই আবার বলেছেন, “বরঞ্চ তাঁদের সবায়কে মিথ্যাবাদী ও প্রতারক হিসেবে বিশ্বাস করাটাই হচ্ছে একটি অন্ধ-বিশ্বাস ও আত্মপ্রতারণা।” রায়হান কি ‘অন্ধ-বিশ্বাস ও আত্মপ্রতারণা’ এর মানে আসলেই জানেন না?
তিনি আবার বলেছেন, (খ) তাঁদের মধ্যে একজনও যদি সত্যবাদী হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে এই মহাবিশ্বের যে একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন, তাতে সংশয়-সন্দেহের কোনই অবকাশ নেই। ইসলামে বিশ্বাসীরা যেহেতু তাঁদের কাউকেই মিথ্যাবাদী বা প্রতারক হিসেবে বিশ্বাস করে না, কোরআনের আলোকে এমন বিশ্বাসের পেছনে কোন যৌক্তিকতাও নেই, সেহেতু তাদের কাছে এটি একটি অকাট্য প্রমাণ বা ধ্রুব সত্য। এমনকি ইহুদী-ক্রিস্টিয়ানদের কাছেও এটি একটি অকাট্য প্রমাণ বা ধ্রুব সত্য”।
আব্রাহাম, মোজেস, জিসাস, মুহাম্মদ এদের কেউ যদি বাস্তবে থেকে থাকেন আর কোনো ‘সত্য কথা’ বলে থাকেন তবে তা এখন উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব। একেকটি ধর্মে রয়েছে অসংখ্য গ্রুপ যাদের মধ্যে মতভেদ প্রবল। সবগুলো ধর্মের ক্ষেত্রেই আবার প্রতিটি ধর্মীয় গ্রুপই নিজ নিজ গ্রুপকে তাদের ধর্মের একমাত্র সঠিক অনুসারী বলে দাবি করে। যেমনঃ ইসলাম ধর্মে রয়েছে শিয়া, সুন্নি, কাদিয়ানী, আহলে হাদীস ইত্যাদি গ্রুপ যারা কেউ কেউ অপর গ্রুপের মুসলমানদের মুসলমান ভাবতেই নারাজ।
আব্রাহাম, মোজেস ও জিসাসকে নিয়ে কোরান ও বাইবেলের বর্ণনায় অনেক গরমিল রয়েছে। তাদের প্রচারিত ধর্মগুলোতে ঈশ্বরের ধারণাতে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান। স্রষ্টার নাম যদি ‘আল্লাহ’ ছিল তবে সেই নামটি অন্য ধর্মে নেই কেন? আব্রাহাম, মোজেস ও জিসাসের নামও কোরানে বিকৃ্তরুপে আসার হেতু কী?
আব্রাহাম, মোজেস, জিসাস, ও মুহাম্মদ ইত্যাদি গ্রেট হিউম্যানরা বলেছেন, ‘ঈশ্বর আছে’ তাই সত্যি সত্যি ঈশ্বর রয়েছে এ ধরনের যুক্তি মস্তিষ্ক কতটা সুস্থ থাকলে বের হয় ঠিক জানি না। এই আজগুবী যুক্তিটি পুরোই দাড়িয়ে আছে যার উপর তাকে বলা হয়- আপিল টু অথরিটি এবং এ ধরণের যুক্তি একদম ফেলনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে তিনি আরেক অপ্রমাণিত বিষয়কে সামনে নিয়ে আসলেন –‘আব্রাহাম, মোজেস, জিসাস, ও মুহাম্মদ ইত্যাদি লোকের নবুয়তি’। একটি অপ্রমাণিত বিষয় দিয়ে আরেকটি অপ্রমাণিত বিষয়কে প্রমাণ করার এহেন চেষ্টা সত্যিই হাস্যকর।
এবার দেখব তৃতীয় যুক্তি যা আমাকে সর্বাধিক বিনোদন দিয়েছে- আগেরবার নবীদের দিয়ে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছে, এবার হবে কোরান দিয়ে ঈশ্বরের প্রমাণ।
“৩) কোরআন যে কোন মানুষের নিজস্ব বাণী হতে পারে না – তার স্বপক্ষে বেশ কিছু যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। যে কেউ নিরপেক্ষ মন-মানসিকতা ও ঠান্ডা মাথায় কোরআন নিয়ে স্টাডি করলে এই সিদ্ধান্তে উপণীত হবেন যে, কোরআনের মতো একটি গ্রন্থ লিখা মানুষের পক্ষে সত্যি সত্যি অসম্ভব। কারণ: (ক) কোরআনের মতো করে একটি গ্রন্থ লিখতে হলে সর্বপ্রথমে একজনকে একই সাথে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মিথ্যাবাদী, প্রতারক, জ্ঞানী, বুদ্ধিমান, ও স্মার্ট হতে হবে। তার পেছনে অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে কোরআন লিখা হয়েছে প্রত্যক্ষ উক্তিতে, পরোক্ষ উক্তিতে নয়। অর্থাৎ কোরআনের বক্তা হচ্ছেন স্বয়ং এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা (সৃষ্টিকর্তা দাবিদার), কোন মানুষ নয়। এমনকি কোরআনের ভাষা ও বাচনভঙ্গিও অন্য যে কোন গ্রন্থ থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। (খ) কোনভাবেই স্বঘোষিত নাস্তিক হওয়া যাবে না। কারণ স্বঘোষিত নাস্তিক হয়ে সৃষ্টিকর্তার নামে কিছু লিখলে মিথ্যাবাদী ও জোচ্চোর হিসেবে জনগণের কাছে হাতে-নাতে ধরা খেয়ে যাবে! ফলে স্বঘোষিত নাস্তিকরা কিন্তু ইচ্ছে করলেও কোরআন বা অন্য কোন ধর্মগ্রন্থের মতো একটি গ্রন্থ লিখতে পারবে না! (গ) কোরআনের মধ্যে যে তথ্য আছে তার সঠিক ব্যাখ্যা এখন পর্যন্তও কেউ দিতে পারেনি। কেউ বলে কোরআন হচ্ছে মুহাম্মদের বাণী। কেউ বলে ইহুদী রাবাইদের বাণী! কেউ বলে ক্রিস্টিয়ান পাদ্রীদের বাণী! কেউ বলে স্যাটানের বাণী! কেউ বলে ডেভিলের বাণী! কেউ বলে মৃগীরুগীর বাণী! কেউ বা আবার বলে মুহাম্মদের কোন এক সেক্রেটারির বাণী! তার মানে কোরআন বিরোধীরাই এখন পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে ঐক্যমতে পৌঁছতে পারেনি!
সকালবেলা কোরআনকে মুহাম্মদের বাণী বলে দাবি করা হয়। ভাল কথা। কিন্তু দুপুর হতে না হতে মত পাল্টে যায়! তখন কোরআন হয়ে যায় ইহুদী রাবাইদের বাণী! বিকালবেলা হয় ক্রিস্টিয়ান পাদ্রীদের বাণী! সন্ধ্যায় আবার হয়ে যায় ডেভিলের বাণী! ডিনারের সময় হয় স্যাটানের বাণী! মাঝরাতে আবার হয়ে যায় মৃগীরুগীর বাণী! এ নিয়ে সারারাত ধরে গাঞ্জা টেনে কোন কুল-কিনারা না পেয়ে ভোরবেলা হতাস হয়ে হয়তো বলা হয়, কোরআন আসলে উপরোল্লেখিত সবারই বাণী! প্রকৃত মৃগীরুগী ও ডেলিউডেড যে কে বা কারা, সেটা বোঝার জন্য তসলিমা নাসরিন হওয়ার দরকার নাই নিশ্চয়! দশজন কোরআন বিরোধীকে যদি আলাদাভাবে মন্তব্য করতে বলা হয় সেক্ষেত্রে তারা হয়তো নিদেনপক্ষে পাঁচ রকম উপসংহারে পৌঁছবে। মানব জাতির ইতিহাসে দ্বিতীয় কোন গ্রন্থ সম্পর্কে এরকম বিজেয়ার (Bizarre) ও র্যা ন্ডম (Random) মতামত নেই। কোরআন বিরোধীরাই আসলে প্রমাণ করে দিয়েছে যে, কোরআন কোন মানুষের বাণী নয়। কিন্তু একই কথা কোরআনে বিশ্বাসীরা বলতে গেলেই যত্তসব দোষ! তবে কোরআন বিরোধীরা যেমন কোন যুক্তি-প্রমাণ ছাড়াই কোরআনকে ডেভিল বা স্যাটানের বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে, কোরআনে বিশ্বাসীরা তেমনি অনেক যুক্তি-প্রমাণের আলোকে কোরআনকে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে”।
মুহাম্মদকে অনেকে মানসিক রুগি বলে মনে করেন। এমন হওয়া ওতো সম্ভব যে মুহাম্মদের মাথায় কোনো ভাবের উদয় হল আর তিনি তা মনে করলেন আল্লার বাণী এবং তাঁর আদেশে অহি লেখকরা একে কাব্যে রুপদান করলেন ( এবং পরবর্তীতে লোকেরা মনে করতে লাগল যে কোরান যেভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে সেভাবেই তা নাযিল হয়েছিল)। তবে মুহাম্মদ সত্যিই মানসিক রুগি ছিলেন কি না তা নিয়ে সহজেই আপত্তি তোলা যায়। এক্ষেত্রে অভিযোগ তোলা সম্ভব যে মুহাম্মদ স্বজ্ঞানে কোরানকে অলৌকিক বলে চালিয়ে দিয়ে ভাঁওতাবাজি করেছিলেন যদিও সেজন্য তাঁকে রায়হান সাহেবের কথামত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মিথ্যাবাদি, প্রতারক, জ্ঞানী, বুদ্ধিমান বা স্মার্ট বলা যায় কি না তা অনেকটাই বিতর্কের বিষয় হতে পারে তবে মুহাম্মদ যে একজন ‘জিনিয়াস’ ছিলেন সে বিষয়ে কারো সন্দেহ থাকা উচিত নয়।
(কোরানের অলোকিকতা সম্পর্কে একটা আকর্ষণীয় আলোচনা পাবেন ‘নাস্তিকের ধর্মকথা’ এর এই লেখায় আল্লাহ, মুহম্মদ সা এবং আল-কোরআন বিষয়ক কিছু আলোচনার জবাবে)
প্রশ্ন উঠতে পারে, কোরানকে অলৌকিক বলে ঘোষণা দিয়ে মুহাম্মদের তবে কি লাভ হয়েছে?
আগেই বলেছি, মুহাম্মদ “মুহাম্মদ” হতে পেরেছিলেন কোরানকে আল্লার বাণী বলে প্রচারের মাধ্যমে। আজ থেকে ১৪০০ বছরের অধিক সময় আগে এরকম প্রচার ও তাতে বিশ্বাস করার মত লোকের অভাব ছিল না যেখানে আজকের যুগেও এমন উদ্ভট বিষয়ে বিশ্বাসের মত মানুষের সংখ্যা কম নয়। এখনো অনেক ভণ্ড পীরের হাজার হাজার মুরিদের খোঁজ পাবেন একটু খবর নিলেই।
মুহাম্মদ একজন নারীর(খাদিজা) ব্যবসা দেখাশুনাকারী থেকে একটা জাতির নেতা পেরেছিলেন কোরানকে অলৌকিক বলে প্রচারের মাধ্যমে। মুহাম্মদের যা কিছু অর্জন সব এর মাধ্যমেই। নিচের কয়েকটি আয়াত লক্ষ্য করি-
“হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে”। (৩৩:৪৫-৪৬)
“হে নবী! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেন। আর দাসীদেরকে হালাল করেছি, যাদেরকে আল্লাহ্ আপনার করায়ত্ব করে দেন এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচাতো ভগ্নি, ফুফাতো ভগ্নি, মামাতো ভগ্নি, খালাতো ভগ্নিকে যারা আপনার সাথে হিজরত করেছে। কোন মুমিন নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে সমর্পন করে, নবী তাকে বিবাহ করতে চাইলে সেও হালাল। এটা বিশেষ করে আপনারই জন্য-অন্য মুমিনদের জন্য নয়। আপনার অসুবিধা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে। মুমিনগণের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে যা নির্ধারিত করেছি আমার জানা আছে। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়ালু”।।(৩৩:৫০ )
“আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর”।(৩৩:৫৬ )
স্বীয় পোষ্যপুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করলে তা জায়েজ করার জন্য নিম্নোক্ত আয়াত নাজিল করানো হল-
“অতঃপর জায়েদ যখন জয়নবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল, তখন আমি তাকে আপনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করলাম যাতে মুমিনদের পুষ্যপুত্ররা তাদের স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সেসব স্ত্রীকে বিবাহ করার ব্যাপারে মুমিনদের কোন অসুবিধা না থাকে। আল্লাহর নির্দেশ কার্যে পরিণত হয়েই থাকে”। (সূরা আহযাব, ৩৩:৩৭)
কী অবস্থা দেখেন। এভাবে নিজেকে মহিমান্বিত করতে, সুবিধা আদায় করতে এমনকি ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সমস্যায় পড়লেও তা সমাধানের জন্য মুহাম্মদ নিজের ইচ্ছেমত আয়াত নাযিল করে নিয়েছেন।
“কোরআন লিখা হয়েছে প্রত্যক্ষ উক্তিতে, পরোক্ষ উক্তিতে নয়।” ভাল কথা, কোরানকে পরোক্ষ উক্তিতে রচনা করলে একে আল্লার বাণী বলে প্রচার করা যেত কিভাবে? আমরা দেখতে পাই মুহাম্মদের যুগেও কিছু আলোকিত মানুষ ছিলেন যারা কোরানের অলৌকিকতার দাবিকে বিনাপ্রশ্নে মেনে নেন নি।
“(খ) কোনভাবেই স্বঘোষিত নাস্তিক হওয়া যাবে না। কারণ স্বঘোষিত নাস্তিক হয়ে সৃষ্টিকর্তার নামে কিছু লিখলে মিথ্যাবাদী ও জোচ্চোর হিসেবে জনগণের কাছে হাতে-নাতে ধরা খেয়ে যাবে! ফলে স্বঘোষিত নাস্তিকরা কিন্তু ইচ্ছে করলেও কোরআন বা অন্য কোন ধর্মগ্রন্থের মতো একটি গ্রন্থ লিখতে পারবে না।”
>এগুলো অপ্রয়োজনীয় কথা যদিও পড়তে বেশ ভালই লাগে। 🙂
“(গ) কোরআনের মধ্যে যে তথ্য আছে তার সঠিক ব্যাখ্যা এখন পর্যন্তও কেউ দিতে পারেনি। কেউ বলে কোরআন হচ্ছে মুহাম্মদের বাণী। কেউ বলে ইহুদী রাবাইদের বাণী! কেউ বলে ক্রিস্টিয়ান পাদ্রীদের বাণী! কেউ বলে স্যাটানের বাণী! কেউ বলে ডেভিলের বাণী! কেউ বলে মৃগীরুগীর বাণী! কেউ বা আবার বলে মুহাম্মদের কোন এক সেক্রেটারির বাণী! তার মানে কোরআন বিরোধীরাই এখন পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে ঐক্যমতে পৌঁছতে পারেনি।”
কোরান আজ থেকে ১৪০০ বছর আগের একটি গ্রন্থ। এখন একে নিয়ে যদি বিতর্ক হয় বা এর কিছু বিতর্কিত দিক থাকে তবে তা কিভাবে একে অলৌকিক গ্রন্থ বলে প্রমাণ করে? কোরানের মধ্যে যে তথ্য আছে তার সঠিক ব্যাখ্যা কেউ দিতে না পারলেই কোরান কিভাবে অলৌকিক গ্রন্থ হয় ? আল্লা নামক কেউ মানুষের জন্য কোনো মেসেজ পাঠাবেন আবার সেই মানুষ তা ঠিকমত বুঝতে পারবে না- এটি তো বরং কোরানের অলৌকিকতার দাবির বিপক্ষে যায়।
মজার ব্যাপার হল, রায়হান সাহেব স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণের নামে একেতো বলছেন অবান্তর সব কথাবার্তা আবার কোরানকে যারা অলৌকিক নয় বলে মনে করেন তাদের প্রতি বিষোদগার করে বলছেন, “এ নিয়ে সারারাত ধরে গাঞ্জা টেনে কোন কুল-কিনারা না পেয়ে ভোরবেলা হতাস হয়ে হয়তো বলা হয়, কোরআন আসলে উপরোল্লেখিত সবারই বাণী।” হাঃ হা। তিনি নিজেই গাঞ্জার মত কিছু টেনে টেনে এ লেখাটি লিখেছেন কি না তার বিচার বরং পাঠকরাই করুক। তারপর আবার বলছেন, “প্রকৃত মৃগীরুগী ও ডেলিউডেড যে কে বা কারা, সেটা বোঝার জন্য তসলিমা নাসরিন হওয়ার দরকার নাই নিশ্চয়! দশজন কোরআন বিরোধীকে যদি আলাদাভাবে মন্তব্য করতে বলা হয় সেক্ষেত্রে তারা হয়তো নিদেনপক্ষে পাঁচ রকম উপসংহারে পৌঁছবে।” কোরান নিয়ে দশজন যদি পাঁচরকম উপসংহারে পৌছেন তবে তা কোরানকে কিভাবে অলৌকিক বলে প্রমাণ করে? উহ, হাসতেও ভুলে গেছি। ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রত্যাদেশ পাওয়ার মত উদ্ভট ও হাস্যকর দাবি করা হয়েছে, এটা নিয়ে দশজন দশধরণের কথা তো বলবেই। এটা যদি প্রমাণ করা যেত তা অলৌকিক বলে তবে তো আর একে নিয়ে এরকম বিতর্ক হওয়ার কথা না। আরেকটু হাসার জন্য নিচের অংশটুকু পড়েন-
“তবে কোরআন বিরোধীরা যেমন কোন যুক্তি-প্রমাণ ছাড়াই কোরআনকে ডেভিল বা স্যাটানের বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে, কোরআনে বিশ্বাসীরা তেমনি অনেক যুক্তি-প্রমাণের আলোকে কোরআনকে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে”।
“এবার মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন হচ্ছে, এই মহাবিশ্বের যে সৃষ্টিকর্তা নাই, তার স্বপক্ষে নাস্তিকদের কাছে স্বতন্ত্র কোন যুক্তি-প্রমাণ আছে কি-না। ওয়েল, বিশাল একখান অশ্বডিম্ব! আর থাকবেই বা কী করে। থাকার প্রশ্নই ওঠে না। এ কারণেই তারা (অপ)বিজ্ঞানের মধ্যে মাথা গোঁজা শুরু করেছে। (অপ)বিজ্ঞান-ই হচ্ছে তাদের গড! অথচ মুসলিম কিডদের কাছে বিজ্ঞান ও অপবিজ্ঞান হচ্ছে মনুষ্য তৈরী দুটি টুল মাত্র! মুসলিম কিডদের কাছে যেটি নিছকই একটি টুল, অক্সফোর্ড প্রফেসর ডকিন্সের মতো নাস্তিকদের কাছেও সেটিই হচ্ছে গড!”
পুরোকথাই গোঁজামিল ছাড়া আর কিছুই নয়। ঈশ্বরের অস্তিত্বের একটাও প্রমাণ দিলেন না তারপর এখন আবার বলছেন ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই তা প্রমাণ করার কথা। ঈশ্বরবাদিরা যেহেতু ঈশ্বরের অস্তিত্ব দাবি করেন তাই তা প্রমাণের দায়িত্ব যে তাদেরই তা তারা কবে বুঝবে? আমি আমার মনের মাধুরী মিশিয়ে এক ধরণের ঈশ্বরের ধারণা দিলাম তারপর এর আর কোনো প্রমাণ দিলাম না আর পরে কেউ তাতে সংশয় করলে বললাম, তাহলে আপনার কাছে এই ধরণের ঈশ্বর নেই বলে কোনো প্রমাণ আছে কি না? এভাবে নিজের প্রমাণের দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়াকে বলে ‘শিফটিং দা বারডেন অফ প্রুফ’।
কোনো কিছুর অস্তিত্ব যিনি দাবি করেছেন তাকেই তার প্রমাণ দিতে হয়। আমি দাবি করলাম, পৃথিবীতে অংবং নামক এক ধরণের অদৃশ্য প্রাণী বসবাস করে (অথবা আমার অদৃশ্য হবার ক্ষমতা আছে) কিন্তু এর কোনো প্রমাণ দিলাম না। এতে কি আমার দাবি গ্রহণযোগ্য হবে অথবা কাউকে এ ধরণের প্রাণী নেই বলে প্রমাণ করার চ্যলেঞ্জ দিতে পারব? ঈশ্বরের বেলায়ও একই কথা। যারা দাবি করেন ঈশ্বর নামক কেউ আছে তাদেরকেই এর অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হবে। তারা যদি তা প্রমাণ করতে না পারেন তবে তো এখানেই খেল খতম, একে আর আলাদাভাবে অপ্রমাণ করার কোনো প্রয়োজন আছে কি?
ঈশ্বর বিষয়টি নিয়ে ভাবার সুবিধার্তে ইসলামের আল্লার ধারণাকে বিবেচনায় আনি। আল্লাহ নিরাকার, আবার তিনি সর্বত্র বিরাজমান, অসীম ক্ষমতার অধিকারী, অসীম দয়ালু, সর্ব জ্ঞানী, তার একপাল ফেরেশতা নামক পাইক-পেয়াদা রয়েছে, রয়েছে সিংহাসন(আরশ) যা বহন করছেন আটজন ফেরেশতা। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, অসীম ক্ষমতার অধিকারী, অসীম দয়ালু, সর্ব জ্ঞানী এগুলো মানবীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে ঐশ্বরিক সত্ত্বায় আপতন ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লার বৈশিষ্ট্যগুলো মানুষের মধ্যে সীমিত পরিসরে বিদ্যমান তাই মানুষের পক্ষে এগুলোর কল্পনা খুবই সম্ভব। আল্লা এতই হিংসুক যে কেউ তার সাথে কাউকে শরিক করলে বা কাউকে তার সমান মনে করলে সে অপরাধ কখনো ক্ষমা করবেন না। কোরানে আছে-
“নিশ্চয় আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন।”( সুরা নিছা, ৪:১১৬)
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ্ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।”(সুরা মায়িদাহ, ৫:৭২)
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন।” ( সুরা নিছা,৪:৪৮)
আবার দেখুন-
যদি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য থাকত তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। (সূরা আম্বিয়া, ২১:22)
আল্লাহ প্রতিশোধগ্রহণ কারী!! দেখুন-
“নিঃসন্দেহে যারা আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করে, তাদের জন্যে রয়েছে কঠিন আযাব। আর আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশীল, প্রতিশোধ গ্রহণকারী”। ( সূরা আলে ইমরান, ৩ : ৪)
“নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী”। (সূরা ইব্রাহীম, ১৪ : ৪৭)
“ আল্লাহ কি পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী নন?” (সূরা আল-যুমার, ৩৯ : ৩৭)
ঈশ্বরের নিরাকারত্ব, ফটকা দয়ালুতা, করুণাময়তা, জ্ঞানময়তাসহ সকল বৈশিষ্ট্যকে সামনে আনলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে ঈশ্বরই মানুষের কল্পনাসাধ্য সবচেয়ে বড় অশ্বডিম্ব বৈ কিছু নয়।
রায়হান সাহেব এবার ক্ষেপেছেন বিজ্ঞানের উপর। বলেছেন,
“এ কারণেই তারা (অপ)বিজ্ঞানের মধ্যে মাথা গোঁজা শুরু করেছে। (অপ)বিজ্ঞান-ই হচ্ছে তাদের গড! অথচ মুসলিম কিডদের কাছে বিজ্ঞান ও অপবিজ্ঞান হচ্ছে মনুষ্য তৈরী দুটি টুল মাত্র! মুসলিম কিডদের কাছে যেটি নিছকই একটি টুল, অক্সফোর্ড প্রফেসর ডকিন্সের মতো নাস্তিকদের কাছেও সেটিই হচ্ছে গড! অধিকন্তু, বিজ্ঞান যেহেতু একটি পরিবর্তনশীল বিষয়, বিশেষ করে প্রোবাবিলিস্টিক ক্ষেত্রে, সেহেতু বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে দর্শনভিত্তিক কোন বিষয়ে স্বতন্ত্র কোন যুক্তি বা তত্ত্ব দাঁড় করাতে যাওয়াটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় অপবিজ্ঞান!”
রায়হান সাহেবের হাবভাবে মনে হচ্ছে, কেউ বিজ্ঞানকে ফেলে রেখে শুধু তাঁর মহান আজগুবী ও অপ্রমাণিত আল্লাহ ও ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে ফেললেই যথার্থ সত্যেকে পাওয়া যাবে অন্যথায় নয়। যতই বিজ্ঞানের অগ্রগতি ঘটছে মানুষ ততই সত্যের কাছাকাছি পৌছে চলছে। হ্যা, সত্যের কাছাকাছি পৌছার একমাত্র অবলম্বন বিজ্ঞান। কিন্তু ধর্মের প্রধান অবলম্বন হল ‘বিশ্বাস’; কেউ ধর্মের বিষয়গুলো নিয়ে ঠিকমত ভাবতে পেরেছে কি না, এটা বিজ্ঞানসম্মত কিনা –এগুলো ধর্মের বিবেচনার বিষয় নয়- কোনো মতে ধর্মে ভাল রকম একটা বিশ্বাস স্থাপন করানো গেলেই ধর্মের পোয়াবারো। যা সত্য, যা প্রমাণ করা যায় তা অহেতুক কাউকে বিশ্বাস করানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠে না। বিজ্ঞান প্রমাণ নির্ভর, তাই বিজ্ঞানের কোনো বিষয়ে কাউকে বিশ্বাস করানোর জন্য ধর্মের মত উঠেপড়ে লাগতে হয় না।
বিজ্ঞান দিন দিন সূক্ষ থেকে সূক্ষতর, গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে, তা ক্রমাগত সত্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে আর এজন্যই তাকে মাঝে মাঝে পরিবর্তিত হতে হয়। আর প্রমাণহীন ও অপরিবর্তনীয় ধর্ম বিশ্বাস অন্ধ আবেগের অচলায়তন তৈরী করে দেয় মানুষের মন ও মেজাজে ফলে সত্যের কাছাকাছি পৌছার দ্বার উন্মুক্ত করা তার জন্য একেবারেই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।
আমরা রায়হান সাহেবের ঈশ্বর প্রমাণ দেখলাম। এখন প্রশ্ন হল, তিনি কেন এসব হাস্যকর অবান্তর যুক্তি দিয়ে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন? এটা কি তাঁর চিন্তার ক্ষেত্রে ধর্ম-বিশ্বাসের প্রতিবন্ধকতার অনিবার্য ফলাফল?
বাংলাদেশে দুটো জায়গায় খুব বেশি আলাপ আলোচনা হয়, মূল প্রসঙ্গ থেকে ডাল পালা গজিয়ে অন্য স্থানে যায়। একটা হলো চায়ের দোকান, আরেকটি হলো নাপিতের দোকান। হালে আরেকটি নতুন স্থানের জন্ম নিয়েছে। সেটির নাম হচ্ছে ব্লগ। না, ব্লগের উপর দোষ চাপিয়ে লাভ নেই। এটা আমাদের বাঙালীর চিরন্তন রীতি। সহজে পাল্টানো সম্ভব নয়।
হুমায়ুন আজাদ ও তার বিশ্বাস নিয়ে পোষ্ট দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, সবাই স্যারের কঠিন মনোবল, নাস্তিকতায় অটুট থাকা, বিজ্ঞানের জিনিস পত্রের উপর নির্ভর করা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করবেন। কিন্তু তা আর হলো না। বাঙালীর স্বভাবজাত চিরন্তনরীতিটাকেই আকড়ে ধরলো। হুমায়ুন আজাদের দর্শন চিন্তা বাদ দিয়ে- তসলিমাকে নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিল, শুধু একটি কথার কারণে। হুমায়ুন আজাদ তাকে বেশ্যা বলে উল্লেখ করেছেন এটা উল্লেখ করায়, আলোচনার মোড় ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হলো।
সৈকতের ব্যাপারেও তাই ঘটছে। মুক্তমনাকে চায়ের দোকান কিম্বা নাপিতের দোকান থেকে কি একটু অব্যহত দেয়া যায় কিনা তা সবাইকে একটু ভেবে দেখা দরকার।
আমাদের চারপাশেই ধর্মের বিস্তার। মুক্তমনায় যারা এসেছেন কেউ না কেউ ধর্মের বলয়ে আবদ্ধ ছিলেন, কেউ কেউ হয়তো আছেনও। মুক্তমনার সংস্পর্শে এসে নিজেকে বদলে দিয়েছেন এমন উদাহরণ সাক্ষ্য মেলা আছে।
একদিন দেখা যাবে রায়হান সাহেবই বিজ্ঞান মনস্ক হয়ে উঠছেন। সে বিষয়ে আমি আশাবাদী। সৈকত যুক্তি প্রদর্শন করে যা বলছেন- রায়হান সাহেব পড়ে পরিবর্তিতও হতে পারেন। তখন দেখা যাবে রায়হান সাহেবই মুক্তমনার এসেট হয়ে উঠছেন।
এই লেখায় মন্তব্য করব না ভেবেছিলাম। কিন্তু সবাই যেভাবে জ্ঞ্যান জাহির করা শুরু করেছে তাতে আর থাকতে না পেরে আমিও সামিল হলাম।
সবাইকেই বলছি এবার একটু খ্যামা দেন। সৈকত ভাইয়ের সাধারন একটা পোষ্ট নিয়ে সবাই যেরকম আতেলেকচুয়াল কথা বার্তা শুরু করেছে তাতে মনে হচ্ছে মুক্ত-মনায় ধর্ম নিয়ে কোন কথা বার্তা কোন সময়ই হয়নি। একই বিষয়ের উপরে হাজার হাজার পোষ্ট রয়েছে এই মুক্ত-মনাতেই। তাহলে সমস্যা কোথায়? হয়রানকে নিয়ে কথা হচ্ছে সে জন্যে? হয়রানকে নিয়ে কি কম জল ঘোলা হয়েছে?
আমি এমন লোকেরও সন্ধান পেয়েছি যারা ধর্ম নিয়ে কথা বার্তা বলতে বলতে ধর্মের প্রতি এমন বিরক্ত হয়েছে যে তারা ধর্ম নিয়ে কথা বলাকেই অপ্রয়োজনীয় মনে করে। তাহলে এখন কি আমরা ধর্মের সমলোচনা বন্ধ করে দেব? প্রশ্নই আসে না, তাই না?
সৈকত ভাই যে লেখাটা লিখেছে আমি মনে করি সে লেখারও দরকার আছে। মুক্ত-মনা ব্লগটাতো আর শুধু বিজ্ঞান লেখার জন্যেও না আবার শুধু ধর্মের সমালোচনার জন্যেও না। সব রকম লেখা নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আর যদি দরকার নাও থাকে সে কথা প্রথম দুয়েক জন বলার পরে অন্য সকলের বলাটাকে আতেল আতেল টাইপ লেগেছে। কি দরকার আগ বাড়িয়ে নিজের জ্ঞান দেখানোর। এই মুক্ত-মনাতেই সৈকত ভাইয়ের লেখার চেয়ে কয়েক কোটি গুন নিম্নমানের লেখা ছাপানো হয়েছে। কই সেই লেখাতে তো এরকম কোন জ্ঞ্যান জাহিরি দেখলাম না? কি ধরনের মন্তব্য করলে লেখক মনকষ্ট পেতে পারে তা অন্য ব্লগের বলদ্গুলারে শেখানো লাগতে পারে কিন্তু মুক্ত-মনার মত স্ট্যণ্ডার্ড কোন ব্লগের সদস্যরা এটা বুঝবে না এটা ভাবতেও খারাপ লাগে।
যাই হোক, লেবু বহুত কচলানো হইছে এইবার খ্যান্ত দেন।
@সাইফুল ইসলাম,
আসলেই ভাই সৈকত ভাইয়ের জন্য খারাপ লাগতেছে ।
এমনকি এইটাই ওনার ঐ লোকের ব্যপারে শেষ লেখা বলার পরেও এত জ্ঞান শুনতে হইলো আমাদের মুক্তমনাদের কাছ থেকে , একেবারেই অপ্র্যতাশিত !!
@অনন্ত নির্বাণ,
আমি সৈকতকে যতটুকু চিনি, মনে হয় না এত ছোট বিষয়ে মন খারাপ করার মত পাব্লিক। মুক্তমনারা আলোচনা করেছে ঠিকই, কিন্তু সেই সুভাষিত বিশেষণগুলো কোনটিই সৈকতকে নয়, রায়হানকে উদ্দেশ্য করেই বলা। আমার ব্যক্তিগতভাবে সৈকতের লেখা অসম্ভব ভালো লাগে, তা আগেও বলেছি, এখনো বলে গেলাম।
ব্লগের বৈঠকে মাঝে মধ্যে আলোচনা হবেই, ভিন্নমতও উঠে আসবে। সেটাকে সাদরেই গ্রহণ করতে হবে। আমার বরাবরই মনে হয়েছে সৈকত ব্লগের লেখা নিয়ে এই সমস্ত মন খারাপ করা জাতীয় প্যানপ্যানানির উর্ধে।
যা হোক, ব্যাপারটার ইতি ঘটুক।
বিজ্ঞানে একদম প্রাথমিক জ্ঞান পরিস্কার না থাকা লোকজনকে নিয়ে বুদ্ধিজীবিদের এই ধরনের সময়ের নিকৃষ্ট অপচয় না হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
জাকির নায়েক বা রায়হানদের দর্শন বা বিজ্ঞানে প্রাথমিক জ্ঞানটুকুও নেই। এদের নিয়ে সময় নষ্ট আমি আগে অনেক করেছি-এখন মনে হয় ভুল করেছি। কারন ওদের ওইসব বালখিল্যতা বা ছাগলামি, সময়ের গর্ভে হারিয়ে যাবে-শুধু শুধু আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করার কোন কারন নেই।
এক নাদান উপরের লিঙ্কে যেয়ে Richard Dawkinsএর নীচের উক্তি দেখে তালগোল পাকিয়ে ফেলল।
কেউ এব্যাপারে দু-একটা কথা বললে নাদানটি তালগোল মুক্ত হতে পারে।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
ইউটিউবে এই মন্তব্যের ভিডিও আছে। ডকিন্স social welfare এ বিশ্বাস করেন, এটাই শুধু বলতে চেয়েছেন, এর সাথে বিবর্তনের তত্বের কোন সম্পর্ক নেই।
@রৌরব,
বিজ্ঞানের চোখে এই মন্তব্যের গুরুত্ব কি আমি বুঝি না। যতদুর জানি এই কোট ব্যাবহৃত হয় ডারউইনের তত্ত্ব ভুল প্রমান করতে।
এই বাক্যের যথার্থতা বিচার না করেই বলা যায় যা এতে ডারউইনের থিয়োরী সত্য না মিথ্যা তার কি কোন যোগ আছে?
নিউক্লিয়ারফিজিক্সের সাহায্যে এটোম বোমা বানিয়ে সভ্যতা কইয়েক মুহুর্তে নেই করে দেওয়া যায়- এতে করে কি নিউক্লিয়ার ফিজিক্স মিথ্যা হয়ে যায়?
@আদিল মাহমুদ,
ঠিক, যোগ নেই। বিবর্তন বিরোধী গোষ্ঠীর একটা বড় অংশ যে অসৎ, সেটা তাদের এধরণের কোটেশন ব্যবহার থেকেই বোঝা যায়। তথাকথিত সামাজিক ডারউইনবাদের সাথে যে বিবর্তন তত্বের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই তা বোঝার মত বুদ্ধি আছে, তারপরও এসব অবান্তর প্রসংগ তোলেন।
@রৌরব,
আচ্ছা, তর্কের খাতিরে ধরেই নিলাম যোগ আছে। তাতে কি বিজ্ঞানের তত্ত্বের সত্য মিথ্যা যাচাই করা যায়? বিজ্ঞানের কোন তত্ত্ব কি মানব সভ্যতার বিরোধী নাকি হিতৈষী এই হিসেব করে আবির্ভূত হয়?
সে হিসেবে তো সবচেয়ে আগে ভুল বলতে হয় প্রথাগত ধর্মগুলিকে। কারন তারা তো সবাই বলে যে একদিন এই মহাবিশ্বের সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে। মানব জাতির জন্য কত বড় সর্নাশা কথা চিন্তা করা যায়!
@আদিল মাহমুদ,
আমার সন্দেহ হয়, সত্যি-মিথ্যের ব্যাপারে অনেকের আসলে আগ্রহ নেই। তাঁদের কাছে সবকিছুই সরাসরি রাজনৈতিক বা নৈতিক প্রশ্নের সাথে জড়িত। তাঁদের যাই বলুননা কেন, দ্রুত সেটাকে অত্যন্ত অগভীর নৈতিকতার সাথে গুলিয়ে ফেলবে। ডারউইনবাদ, ইন্দো-ইউরোপীয়দের ভারতে আগমন এরকম অসংখ্য বিষয়েই এই প্রবণতাটা লক্ষ্য করা যায়।
আমি অবশ্য ডকিন্সের মন্তব্যটা এমনিতেও সুপ্রযুক্ত মনে করিনা। মানে বলতে চাইছি, বৈজ্ঞানিক সত্যি-মিথ্যের কথা বাদ দিলেও হিংস্র অর্থে ডারউইনীয় শব্দের ব্যবহারে দ্বিমত পোষণ করছি।
@রৌরব,
আপনি দ্বি-মত করলেও অনেকে তাই মনে করেন। বিশেষ করে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী হারুন ইয়াহিয়ার সমর্থকেরা তাই মনে করেন।
হারুন ইয়াহিয়া নিজেই বলেছেন যে, হিটলার, ষ্ট্যালিন, মুসোলিনী, লেনিন, মার্ক্স এরা সবাই নাকি সরাসরি ডারউইনিজমের দোহাই দিয়ে গনহত্যা করেছেন। তারা নাকি তা পরিষ্কার ভাষায় বলেও গেছেন।
শুধু তাই নয়, আল কায়েদার সন্ত্রাসী হামলার দায়ও ওনার মতে ডারউইনবাদী চিন্তার। ডারউইনবাদ না এলে এসব কিছুই ঘটত না।
@আদিল মাহমুদ,
আমি জানতে চাই জেনারেল ইয়াহিয়ার গণহত্যার ব্যাপারে হারুন ইয়াহিয়া কাকে দায়ী মনে করেন!
@রৌরব,
এটা তো বাই ডিফল্ট বোঝাই যায়। আল কায়েদার সন্ত্রাসী ঘটনার দায় ডারউইন সাহেবের কাঁধে পড়লে আর ইয়াহিয়া!
@আদিল মাহমুদ,
আসলে ডকিন্সের এই উক্তিটি সেলফিশ জিন বইটার প্রথম দিকে কোথাও আছে। এই বাক্যটার আগে এবং পরে বেশ কিছু লাইন আছে । অফিস থেকে কমেন্ট করছি বিধায় হাতের সামনে বইটা নেই। থাকলে দেয়া যেত। কাজেই স্মৃতি থেকেই লিখছি। ডকিন্স সেলফিশ জিন বইয়ে দেখিয়েছেন প্রানি জগতের জিন লেভেলে এক ধরনের স্বার্থপরতা কাজ করে, আর সেই স্বার্থপরতা থেকেই জন্ম নেয় বেঁচে থাকার বা টিকে থাকার সংগ্রাম। প্রানীজগত বংশবৃদ্ধিতে সময় ব্যয় করে (অর্থাৎ নিজের জিনের প্রতিলিপি রেখে যাবার চেষ্টা করে), ভবিষ্যৎ বংশানুকে রক্ষায় সচেষ্ট হয় (সেজন্যই সন্তানকে রক্ষার জন্য বাবা মার চরম আত্মত্যাগের উদাহরন দেখা যায়), ইত্যাদি। অর্থাৎ, ডকিন্স বলতে চেয়েছেন পরার্থতা, আত্মত্যাগের মত ব্যাপারগুলো জিন লেভেলের স্বার্থপরতার বাই প্রডাক্ট হিসেবেই উদ্ভুত হয়। সেজন্যই, কোন কাক মারা গেলে অন্য কাকেরা দল বেধে কাকা করতে থাকে, এগুলো আমরা বাংলাদেশে অহরহ দেখি। হাতীরা তাদের পরিবারের অসুস্থ বা আহত সদস্যকে বাঁচানোর জন্য সবোর্চ্চ ত্যাগ স্বীকার করে, বুনো মোষেরা বাচ্চাদের চারিদিকে ঘিরে শিং উঁচিয়ে নেকড়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, নিজেদের জীবনকে বিপন্ন করে হলেও। কোন শিকারী পাখি যখন কোন ছোট পাখিকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করে, তখন অনেক সময় দেখা যায় যে গোত্রের অন্য পাখি চিৎকার করে ডেকে উঠে তাকে সতর্ক করে দেয়। এর ফলশ্রুতিতে সেই শিকারী পাখি আর তার আদি লক্ষ্যকে তাড়া না করে ওই চিৎকার করা পাখিটিকে আক্রমণ শুরু করে। এই ধরনের পরার্থতা এবং আত্মত্যাগ কিন্তু প্রকৃতিতে খুব স্বাভাবিকভাবেই দেখা যায়। কিন্তু বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা হল এই পরার্থতার উদ্ভব ঘটেছে এক স্বার্থপর কারণে – সেলফিশ জিনের ক্রিয়ার মাধ্যমে জিনপুল রক্ষার প্রচেষ্টায়। চোখ বন্ধ করে কেবল এই স্বার্থপর অংশটুকুর কথা চিন্তা করলে প্রকৃতি কিন্তু খুবই ভায়োলেন্ট। টিকে থাকার সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করার জন্য প্রকৃতিতে সব কিছুই দেখা যায় – এমনকি চরম নিষ্ঠুরতাও। কিন্তু তারপরেও কথা হচ্ছে – সম্মিলিতভাবে মানুষেরা (এবং অন্য প্রানীরাও) অনেক সময়ই এই সেলফিশন্সেস এর বিপরীতে কাজ করতে পারে (হয়ত সেলফিশনেসের ব্যাপারটা বংশানুর ধর্ম না হলে, আমাদের জন্য ব্যাপারগুলো আরো সহজ হয়ে যেত, অন্ততঃ ডকিন্স তাই মনে করেন)। এর বহু উদাহরণ আছে। ডকিন্স যেটা বলতে চেয়েছেন তা হল – সেরকম নিষ্ঠুর সমাজে হয়তো কেউই বাস করতে চাইবে না; আর বংশানুতে কিছু লেখা থাকলেই এর বাইরে কিছু করা যাবে না তা ঠিক নয়, এটাই ছিল ডকিন্সের মূল বক্তব্য।
কাজেই, ডকিন্সের বলা এই বাক্যটির আগে এবং পরের লাইনগুলোর প্রতি দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
@অভিজিৎ,
এই জ্ঞানগর্ভ ব্যাখ্যার জন্য ধন্যবাদ। এ জাতীয় ব্যাপার স্যাপার তেমন বুঝি না, তবে এটা মনে হয় বেশ ভালই বুঝলাম।
স্বার্থপরতার ব্যাপারটার সাথে কি সীমিত সম্পদ ও প্রতিযোগিতার সম্পর্ক নেই? শুধুই জীনপুল রক্ষার প্রবনতা?
@আদিল মাহমুদ,
সম্পর্ক অবশ্যই আছে। সেজন্যই ত সবকিছু জিনকেন্দ্রিক নয়। জিনকেন্দ্রিক প্রবণতাকে আমরা অতিক্রম করতে পারি, যদি চাই। যদি বংশ বৃদ্ধি আর জিনপুল রক্ষার প্রবণতাই মূখ্য হতো, তাহলে তো উন্নত বিশ্বে জনসংখ্যা এখন পড়তির দিকে হত না। এমনকি আমাদের দেশেও দম্পতিরা আর একতি বা দুটির বেশি সন্তান নেয় না। অথচ, কয়েক যুগ আগেই আমাদের দাদা দাদীদের আমলেই বার তেরটি করে সন্তানের হদিস পেতাম। আসলে বংশবৃদ্ধি আর সম্পদ বন্টনের মধ্যে সব সময়েই একটা ট্রেড অফ থাকে। সেখান থেকেই ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারিত হয়।
আর বাই দ্য ওয়ে, সেলফিশ জিনে ডকিন্সের উদ্ধৃতিটা ছিলো এরকম –
I stress this, because I know I am in danger of being misunderstood by those people, all too numerous, who cannot distinguish a statement of belief in what is the case from an advocacy of what ought to be the case. My own feeling is that a human society based simply on the gene’s law of universal ruthless selfishness would be a very nasty society in which to live. But unfortunately, however much we may deplore something, it does not stop it being true (চ্যাপ্টার – Selfish Gene, chapter 1, WHY ARE PEOPLE?, page 3).
এর মধ্যে সমস্যা কথায় আমি বুঝলাম না। বৈজ্ঞানিক গবেষণা করতে হলে তো নির্মোহ ভাবেই করতে হবে, গবেষণার ফলাফল সত্যনিষ্ঠভাবেই জানাতে হবে। প্রকৃতিতে নিষ্ঠুরতা আছে, আছে স্বার্থপরতা। মানুষের মনে আঘাত লাগবে বলেই কি ‘পলিটিকালি কারেক্ট’ভাবে বক্তব্য দিতে হবে?
@নৃপেন্দ্র সরকার,
কেন? এর ব্লগে গিয়ে মুক্ত-মনার মত একটা ব্লগের ব্লগারের তালগোল পাকাতে হবে কেন আমি বুঝি নাই।
ব্লগের মানের জন্য ক্ষতিকর এবং মোটেও রুচি নাই বিধায় কোনো উত্তর না দিয়ে আপনাকে কথাটির লিংক দিচ্ছি, নিজ দায়িত্বে বুঝে নিবেন অথবা আমার মত কোনো আবালের সাহায্য নিবেন-
httpv://www.youtube.com/watch?v=Vw8p3dScu0U&feature=player_embedded
সবগুলো পর্ব দেখে নিতে পারেন। আর দেখেন –
ওতে আপনার দেয়া কথাটি খুঁজে লেলাম না। অনেক ধন্যবাদ।
@সৈকত চৌধুরী,
নীচের উক্তিটি মূল বিষয়বস্তু থেকে আলাদা করে সুবিধামত অপব্যবহার করা হয়েছে।
ধন্যবাদ, সৈকত সাহেব।
সৈকত ভাই, আপনার লেখা নিয়ে আমার কোন আপত্তি নেই। যে কারণে বা যে উদ্দেশ্যে আপনি প্রবন্ধ লিখেছেন ঠিক একই কারণে একই উদ্দেশ্যে আমরাও অনেকেই এই মুক্তমনায় তাকে নিয়ে তার বক্তব্য রিফিউট করে প্রচুর প্রবন্ধ লিখেছি। শেষ পর্যন্ত নন্দিনীর ‘পুরুষ রচিত ধর্মে বিকলাঙ্গ নারী” শিরোনামে লেখাটির সমালোচনা করে সদালাপে একটি প্রবন্ধ লিখলো, নাম দিল- ‘তিনিও একাধিক স্বামী চান’।
লেখায় নন্দিনীর মা বাবাকে গালি দিল। একই লেখা যখন সাম হোয়্যার ইন ব্লগে দিল, শিরোনাম বদল করে, নন্দিনীর মা বাবা তুলে সে যে কথাগুলো লিখেছিল তা ডিলিট করে দিল। আমরা আর তার সাথে তর্কে লিপ্ত হইনা, তার কোন বক্তব্য রিফিউট করিনা। বুঝতেই যখন পারলো তার অপরাধ, নন্দিনীর কাছে ক্ষমা চাইল না কেন? আমি চাইনা আপনার আমার কারো মা-বাবা তুলে সে গালি দিক, আর কোন নারীকে বলুক- ‘তিনিও একাধিক স্বামী চান’। আমাদের প্রতিক্রীয়াগুলো এখানে পড়ুন, বুঝতে পারবেন আমরা কেন বলছি- কী যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে / কভু আশী বিষে দংশেনি যারে।
প্রতিক্রীয়া – নন্দিনী
– আকাশ মালিক
– অনন্ত বিজয় দাস
হয়রান (রাঃ) ওমরাপুরির সার্কাস দেকতি ওলি আপ্নাদির এট্টু কষ্টু খরি সামু আর আমু ব্লগে যাতি ওবি। পৃথিবি ঠিকই বইলেচে। উনি আমু ব্লগে একবার বহুবিবাহ জায়েজ কইরবার সবক দিতে গেচিলেন। কিন্তু কামেল পীরের মুরিদেরাই ফ্রতিবাদ শুরু কইল্লে, পীরের আসর বাংগি যায় –
দয়াল বাবা হযরত হয়রান-এর কাছে আকুল আবেদন
হয়রান (রাঃ) ওমরাপুরির লেখা লইয়া অনেক ফ্যারোডিও ওইচে । এমনকি ফ্যান ক্লাবও আচে-
বাংলার শ্রেষ্ঠ জোকার- খাজা বাবা হয়রানপুরী ফ্যান ক্লাব
আফনিরা দলি দলি যুগদান করুন।
@হয়রানি বিনোদন,
@হয়রানি বিনোদন,
:lotpot: :lotpot: :lotpot:
@লেখকঃ
১. সবকিছুরই একটা কারণ আছে
২. এই সৃষ্টিরও একটা কারণ আছে
৩. সেই কারণ হলো ঈশ্বর
এভাবে যদি কেউ ঈশ্বরকে সংজ্ঞায়িত করে তাহলে তার ভুল এক জায়গায়, তার হলো ১ নম্বরে, আপনি কি ১ নম্বরকে ঠিক মনে করেন? যদি না করেন, তাহলে বৈজ্ঞানিক গবেষণা সম্বন্ধে আপনার মত কি?
কমেন্ট টা আরেক জায়গায় করেছি, কিন্তু আপনার মতও জানার ইচ্ছা হলো
@তনুশ্রী রয়,
এটা নিয়ে আমার আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী (অঙ্কুর প্রকাশনী, ২০০৬) বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করেছি। আপনি সংগ্রহ করে দেখতে পারেন। আর খুব সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করেছি এই লেখাটিতে –
ঈশ্বরই কি সৃষ্টির আদি কারণ?
আর এর পেছনের বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করেছিলাম একটি লেখায় – স্ফীতি তত্ত্ব ও মহাবিশ্বের উদ্ভব। লেখাটি বছর কয়েক আগে সায়েন্স ওয়ার্ল্ডে প্রকাশিত হয়েছিল একটু সংক্ষিপ্ত আকারে।
@অভিজিৎ,
আপনার লেখাটা পড়লাম
বিজ্ঞানের সাথে ঈশ্বরের দ্বন্দ্ব কোথায় জানি না, প্রচলিত ধর্মগুলিতে যে ঈশ্বর তার সাথে দ্বন্দ্ব থাকতে পারে।
কার্যকারণ সুত্রকে মেনে নিয়েই বিজ্ঞান চলে, বিজ্ঞানের তো কখনো Ad infinitum সমস্যায় পড়তে হয় না। তাহলে এই ঈশ্বরেরও ঈশ্বর খোঁজার অসীমতট চেষ্টা কতটা যুক্তিযুক্ত।
আমার মনে হয়, নাস্তিকেরা শুধুই নাস্তিক, ঠিক যেভাবে আস্তিকেরা আস্তিক, অজ্ঞেয়বাদীরাও কাজের না, সংশয়বাদীরা তার চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য।
ধন্যবাদ।
নাস্তিক্যবাদ কোন দর্শন না, এটা শুধু একটা নেতি।
@তনুশ্রী রয়,
এটা নির্ভর করে আপনি নাস্তিকতাকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করেন তার উপর। ‘নেতি’ দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও নাস্তিকতার ব্যপ্তি এখন শুধু নেতিতে সীমাবদ্ধ নেই। বিশেষতঃ নিউ এথিজম মুভমেন্ট নেতির চেয়ে সায়েন্টিফিক এঙ্কোয়েরির উপরেই অধিকতর গুরুত্ব দেয় । আপনি অধ্যাপক ভিক্টর স্টেঙ্গরের এই বইটি পড়ে দেখতে পারেন – The New Atheism : Taking a Stand for Science and Reason। বইটিতে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকেই মহাবিশ্বের উৎস খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে, দেয়া আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে মহাবিশ্বের অস্তিত্বের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। আসলে এক হিসেবে দেখলে নাস্তিকেরাও এক ধরণের সংশয়বাদীই। অপার্থিব সত্ত্বায় সংশয় না করে তো আর কেউ নাস্তিক হতে পারে না।
যা হোক ভাল লাগল আপনার সাথে আলোচনা করে।
অফ টপিক, মডারেটরের পক্ষ থেকে বোধ হয় আপনাকে ইউজার আইডি পাসোয়ার্ড পাঠানো হয়েছে। লগ ইন করে মন্তব্য করলে আপনার মন্তব্য সরাসরি প্রকাশিত হয়ে যাবে। দেখুন আপনি ইমেইল পেয়েছেন কিনা।
@তনুশ্রী রয়,
প্রচলিত ধর্মের ভিতরের ঈশ্বর আর বাহিরের ঈশ্বরের মধ্যে তুলনামুলক পার্থক্যটা কী আর সংশয়বাদী বলতে কী বুঝায় তা একটু ব্যাখ্যা করবেন প্লীজ।
@তনুশ্রী রয়,
লেখাটার নিচের অংশটা পড়েন –
অনেক ধন্যবাদ।
আমার মনে হয় আমরা যারা নিজেদেরকে মুক্তমনা মনে করি তারা চাই আমাদের মত লোক বেশি বেশি তৈরী হোক। তো বিষয়টাকে সেখান থেকে দেখলেই আর কোন সমস্যা থাকে না। যে সব পোষ্ট মুক্ত চিন্তার পক্ষে সহায়ক সেগুলিকে উৎসাহীত করতে হবে। বিজ্ঞান বা ধর্ম বিষয়ক লেখা, কোনটা বেশি উপযোগী এভাবে দেখলে আসলে এক ধরনের অঘোষিত গ্রেডিং করা হয়ে যায়। কেউ নিশ্চই নিজেকে বি গ্রেডে দেখতে চাইবেনা।
আর এখানে রায়হান সাহেব অনেকের পূর্ব পরিচিত হওয়াতে বোধ হয় বিষয়তা অন্য দিকে চলে গেছে। তা না হলে সৈ্কত ভাইয়ের এই লেখা অনেক নতুন পাঠকের জন্য সহায়ক হবার কথা। জাফর ইকবাল স্যার বাচ্চাদের জন্য লিখেন, কিন্তু এর সামগ্রিক ফলাফল বা সামাজিক প্রভাব অনেক ব্যাপক। আমার মনে হয় নতুন দের জন্য লেখাটা অনেক গুরুত্ত্বপূর্ন। সৈ্কত ভাই কে তার প্রচষ্টার জন্য আমার পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানাই।
ব্লগ এবং ইন্টারনেটের এই যুগে যে কেউ যে কোন কিছু নিয়েই লিখতে পারেন, এটা নিয়ে বলার কিছু নেই। কিন্তু সেই লেখা এবং আলোচনাগগুলো একটা ব্লগের মান কোথায় টেনে নিয়ে যেতে পারে সেটাই বোধ হয় এখানে বিবেচ্য বিষয়। যে কোন ব্লগেরই একটা ডিরেকশান থাকে, লেখক, পাঠক, মডারেটররা মিলেই সেটার অলিখিতভাবে ঠিক করে থাকেন। এই ধরণের লেখার উত্তর প্রত্যুত্তর কোথায় যেতে পারে সেটা যারা ব্লগে ব্লগে এসব পড়েন তাদেরকে আর নতুন করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। মুক্তমনা যদি এরকম সাইটের সাথে পাল্টাপাল্টি বিতর্ক করে আয়ু ক্ষয় করতে চায় তাহলে হয়তো আমাদের মত কিছু ব্লগার মনঃক্ষুণ্ণ হবেন, এই আর কি, তাতে খুব বেশী কোন ক্ষতি যে হয়ে যাবে তা অবশ্য হলফ করে বলা যায় না। আমার কাছে ধর্ম নিয়ে বিশ্লেষণাত্মক লেখা বা কন্সট্রাক্টিভ সমালোচনা এক জিনিস বলে মনে হয় আর এই ধরণের ফালতু ব্লগীয় পপ লেখার রিবিউটালাকে আরেক জিনিস বলেই মনে হয়। অনেক কিছুই বলা যায় এ নিয়ে কিন্তু অযথা সময় নষ্ট বলে আর বলছি না, মুক্তমনার অনেক পাঠকই যে লেখাটায় আপত্তি জানিয়েছেন তার জন্য শুধু ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
হ্যা, মুক্তমনায় কেউ বিজ্ঞান শিখতে আসে না, ঠিকই তো, নিউটনের সূত্র জানার জন্য মুক্তমনায় কারও আসার দরকার নেই। কিন্তু আমার ধারণা এখানকার অনেক পাঠকই নিছক মুখস্থ করা বিজ্ঞান আর বিজ্ঞানের দর্শনের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন। আমাদের দেশের টেক্সট বইগুলোতে বিজ্ঞান এমনভাবেই পড়ানো হয় যা থেকে কোনরকম কোন বিজ্ঞানমনষ্কতা তৈরির অবকাশ থাকে না। পাঠকেরা যখন বলেন ভেন্টরের প্রাণের আবিষ্কারের খবর পাওয়ার পরপরই মুক্তমনায় এ নিয়ে লেখা খোঁজেন বা এখানে প্রায়শঃই বিজ্ঞানের বিভিন্ন লেখা নিয়ে যেরকম বিস্তারিত আলোচনা বা কাটাছেঁড়া হয় (যা বাংলা ব্লগগুলোতে বিরলই বলতে হবে) তা থেকেও কিন্তু মনে হয় না এখানে যে কেউ জ্ঞান-বিজ্ঞান বা দর্শনের লেখা পড়তে আগ্রহী নন। পৃথিবীর মানুষ যদি সারাক্ষণ এইসব ক্রিয়েশানিষ্টদের কুযুক্তি নিয়ে আলোচনা করার জন্য বসে থাকতো তাহলে সভ্যতা মনে হয় আর আগাতো না, জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন, শিক্ষা, সংষ্কৃতি, যুক্তি সব আটকে বসে থাকতো হাজার বছর আগের লেভেলে। আর আমরা যদি মনে করি বাংলায় হয় শুধু সাহিত্য লেখা হবে আর না হলে ধর্মের পক্ষে বিপক্ষে ক্যাচাল হবে, বাকি সভ্যতা, ইতিহাস, সংষ্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার দায়িত্ব অন্য ভাষাভাষীদের, তাহলে অবশ্য আর কিছু বলার থাকে না।
@বন্যা আহমেদ,
আপু , একটা লেখার জন্য ব্লগের মান আকাশ ছোবে না আবার পাতালেও নিয়ে যাবে না। বরং এই যে ওপরের কমেন্টগুলো যেগুলোকে ঝগড়া আর অতি-সমালোচনা ছারা আর কিছুই বলা যায় না… সেগুলো দেখে হয়তো মানুষ এই মুক্ত-মনাদের ওপর হাসতে পারে। আমাদের কাছে কি বিকল্প কোন পথ খোলা নেই ?
আর এখানে পাল্টাপাল্টি কোন ব্লগের সাথে দ্বন্দ হিসেবে দেখছেন কেন ? এখানে কিছু যুক্তির বিরুদ্ধে কিছু লেখা হয়েছে… মনে হয় না কোন ব্লগের বিরুদ্ধে লেখাটা। আমি জানি না রায়হান সাহেবের ব্যাকগ্রাউন্ডটা আসলে কিরকম। কিন্তু এটাওতো সত্যি যে এই কথা গুলো শুধু রায়হান সাহেব ই বলেন না। আরো অনেক অনেক মানুষ আছে, যারা ছোট ছোট পিচ্চিদেরকে এইসব বলে কনভিন্স করে , আর দিনে দিনে সেগুলো অভ্যাসে পরিনত হয়। চাইলেও ছাড়তে পারে না। তাই যদি সমালোচনা করতেই হয় সেটা ব্যক্তিকেন্দ্রিক না হয়ে যুক্তিকেন্দ্রিক হওয়া উচিৎ। সবাই বোধয় এই লেখাটার সমালোচনা করছে কারন এর সাথে রায়হান নামের একজনের কানেকশন আছে বলে। এটা আসলেই দুক্ষজনক।
আর এখানে মনক্ষুন্ন হওয়ার মত তেমন কিছুও নেই। সব লেখাই যে আমাদের মনপূত হবে তা তো নয়। এখানে অনেকে এও বলতে পারে মুক্ত-মনায় এমন কিছু লেখা পোষ্ট করা হয় যেগুলো এতই দুর্বোধ্য যে পড়ার পর টাইম নষ্ট হয়েছে বলে মনে হয়। কিন্তু তাই বলে সেইসব লেখার গুরুত্ত্ব কমে গেল ? মুক্তমনার আয়ু ক্ষয়ে গেল ? অবশ্যই না। বরং যেটা হয়েছে তা হল আমার ব্যক্তিগতভাবে সেটা ভালো লাগে নি। এর থেকে কিছু কম বেশি না, মুক্তমনা মুক্তমনাই আছে।
আমাদের উচিৎ হয়তো এইসব জিনিস ওপেন রাখা, যে যার মত করে ভাবুক , যে যার মত করে গ্রহন করুক … এই স্বাধীনতাটুকু থাকা উচিৎ। রায়হানকে অনেকেই নাও চিনতে পারে, কিন্তু এইসব ফালতু জিনিস অনেকেই শুনে থাকতে পারে… তাই সেইসব মানুষের অন্তত এই জিনিসগুলো জানা দরকার।আর সেই প্রয়োজনেই এই লেখাটা অপ্রয়োজনীয় মনে করছি না।
যদিও আমি নিজের কথা বললে বলবো যে এই লেখার মধ্যে যা আছে সেটা আমার জন্য অনেক পুরনো জিনিস। কিন্তু এই মুক্ত-মনায় শুধু তো আমি একলাই আসি না… এখানে এমন আরো অনেকেই আসে যারা এই জিনিসগুলোর সাথে হয়তো পরিচিত না। তাদের জন্যে হয়তো এই লেখাটা কিছুটা হলেও কাজে আসবে।
রায়হানকে আপনারা চেনেন বলে এই লেখাটার যে সমালোচনা করলেন সেটা আমার কাছে কিছুটা স্বার্থপরের মতো লাগলো। যেমনটা স্বার্থপর বলতেন আমায় আমার এক স্যার, কারন স্যার এমন সব জিনিস ক্লাসে পড়াতেন যা আমি জানি, তাই স্যারকে বলতাম নতুন কিছু পড়ানোর জন্য কিন্তু স্যার সবসময় আমার মনে করিয়ে দিতেন যে , ক্লাসটা শুধু তোমায় নিয়ে নয়… আরো অনেক কে নিয়ে।
@অনন্ত নির্বাণ,
সুন্দর বলেছেন।
@অনন্ত নির্বাণ, একটা উদাহরণ দেই। বাংলা কমিউনিটি ব্লগগুলোতে অনেক প্রজাতির ইসলামিস্ট দেখা যায়। কেউ কেউ সরাসরি গণতন্ত্রকে খেলাফত দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে চায়, কেউ কেউ স্বঘোষিত জামায়াত সমর্থক আর বাকিরা হল গিয়ে “মডারেট” মুসলমান। এখন কেউ যদি খেলাফতের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটার পর একটা লেখা ছাড়তে থাকে বা সবকিছুতে ইহুদি-নাছারাদের ষড়যন্ত্র খুজতে থাকে, আপনি কি তাদের দাবিকে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন অনুভব করবেন? সব ব্লগেই আপনি কিছু ব্লগার পাবেন যারা আমেরিকায় কোথাও কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে একে আল্লাহর গযব আখ্যা দিয়ে রীতিমত একটা পুস্তিকা লিখে ফেলেন। কেউ কেউ বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে আল্লাহর ক্ষমতা খুজে পান, কেউ কেউ জায়গায়-অজায়গায় অলৌকিকভাবে আল্লাহর নাম খচিত দেখে উৎফুল্ল হন। আপনার কি মনে হয় আমাদের এসব ব্যক্তিদের দাবির প্রতিউত্তর দেওয়ার পেছনে মূল্যবান সময় ব্যয় করা উচিত?
মুক্তমনা যখন ইয়াহু গ্রুপে সীমাবদ্ধ ছিল, তখন থেকেই অনেকে রায়হান সাহেবের লেখার সাথে পরিচিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে অন্য একটা ব্লগে রায়হান সাহেবের লেখা প্রথম দেখি। নাস্তিক কেন, সাধারণ ধার্মিক ও রায়হান সাহেবের ভেতরেও বাদানুবাদ দেখে আমার মনে হয়েছে তার সাথে কথা বলা আর পাথরের সাথে কথা বলা একই কথা। ওই একই ব্লগে এর আগে তিনি বহুবিবাহ যায়েজ করতে গিয়ে আস্তিক-নাস্তিক সবার কাছেই গাল খেয়েছেন(এবং এরপর থেকে ওখানে ওনার অংশগ্রহণ প্রায় বিলীন হয়ে গিয়েছে)। রায়হান সাহেবের লেখার সাথে শুধু মুক্তমনার গুটিকয়েক পুরনো ব্লগার না, বাংলা ব্লগোস্ফিয়ারের অনেক সক্রিয় ব্লগারই পরিচিত। আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে চাচ্ছি।
নাস্তিকতা প্রচার করা যাবে না, নাস্তিকতা নিয়ে আলোচনা করা যাবে, এমন দাবি মুক্তমনায় কেউ কখনওই করবে না। ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে কোন দাবি রিফিউট করতে চাইলে পাবলিক ফিগারদের উপরই মনোনিবেশ করুন, অথবা এমন কোন ব্যক্তিকে বেছে নিন যার সাথে বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা চালানো সম্ভব। আজকে আপনি রায়হান সাহেবের দাবি রিফিউট করছেন, কালকেই দেখবেন রায়হান সাহেব যথারীতি আপনার পোষ্টের একটি বাক্যও না পড়ে আপনাকে “বদ্ধমনা”, “ভন্ড” বলে গালাগাল করে আরেকটি পোষ্ট দিবে। গালি খেতে কারওরই ভাল লাগে না, দেখা যাবে আপনিও উত্তেজিত হয়ে একটা পালটা পোষ্ট দিলেন। এভাবে করে আর যাই হোক, সুস্থ আলোচনা সম্ভব না।
সবশেষে বলব এখানে “মুক্তমনা এডমিন” নিকে কেউ কোন মন্তব্য করেননি, তাই এখানে সব নেতিবাচক মন্তব্যই পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত মতামত। রায়হান সাহেবকে হাইলাইট করার কারণে আমরা শুধু আমাদের বিতৃষ্ণা প্রকাশ করছি, আমরা বলছি না যে এরকম পোষ্ট ভবিষ্যতে প্রকাশ করা যাবে না।
@পৃথিবী,
আমি করবো না। কারন আমার কাছে এগুলোর হয়তো প্রয়োজন নেই, কিন্তু কারো কারো জন্য হয়তো দরকার আছে, সেইটা ইগনোর করতে মানা করছি শুধুমাত্র।আমার নিজের লেভেল দিয়ে সবাইকে মাপতে আমার অনেক আপত্তি আছে।
আমি মনেকরি আহংটা শুধু মাত্র আস্তুকদের’ই সমস্যা না, নাস্তিকদের ক্ষেত্রে আরো বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছা, সাথে দাড়াচ্ছে স্বার্থপর চিন্তা। আগেই বলেছি আপনি অথবা আপনার লেভেলের সবার জন্যই কি মুক্তমনা ? আর আপনি কাজ করবেন স্বাধীন ভাবে , কে কি ভাবলো সেটা কি খুব’ই জরুরি ? ঐ লোক কে জবাব দিলে সে আরো বেড়ে যাবে নাকি জবাব না দিলে দমে যাবে এই প্রশ্নটার কি আসলেই কোন সত্যিকার উত্তর আছে ? আপনি আমি কখনেই বলতে পারি না , কি করলে কি হবে। কিন্তু এটা অবশ্যই মানতে হবে , জবাব না দিলে ওনার সেইসব আবোল-তাবোল অনেকের মনেই স্বতঃসিদ্ধ বলে গন্য হবে।আর এই যে পাল্টাপাল্টি লেখা এইটা তো কখনেই ঐ লোকের বিরুদ্ধে না , তার বলা কিছু কথার বিরুদ্ধে যেগুলো অন্য কেউ ও বলতে পারতো এটা বুঝতে পারছে না কেন সবাই ?
আর সবাইতো এখনো নাস্তিক হয়ে যায় নি … কেউ কেউতো এই পথে হাটা শুরু করতেও পারে… আর তাদের জন্য আমরা সিনিয়র নাস্তিক(অন্য অর্থে নিয়েন না , প্লিজ) বলে এইসব লেখাকে অনুৎসাহিত করে ঠীক করছি ? মনে হয়না রায়হান সাহেবকে হাইলাট করা হয়েছে এখানে, বরং আপনাদের চোখে হাইলাইটেড লাগছে কারন আপনারা ওনাকে চেনেন। আর প্রত্যেকটা লেখার দায় সেই লেখকের , আশা করি লেখক নিজেও সেইটা জানেন। গালি গালাজ খেতে কারো ভালো লাগে না , কিন্তু এর ভয়ে বসে থেকেও কোন লাভ নেই। একজনের কথার বিরুদ্ধে কিছু বলবো না কারন সে গালিগালাজ করবে এই ভয়ে; এই ব্যপারটা আমার কাছে কেমন জানি অদ্ভুত লাগে।
এইরকম পোষ্ট ভবিষতে পোষ্ট করা যাবে না এইটা সরাসরি বলা না হলেও মুক্তমনার দোহাই দিয়ে অনেক কথাই বলা হয়েছে, যার সম্মিলিত অর্থ হয়তো এটার সমতুল্য হতেও পারে। নিজেকে এই লেখাটার লেখক হিসেবে চিন্তা করেন এবং সমালোচনা গুলা পড়েন , হয়তো আপনিও আমার মতই মনে করতে পারেন।
আরো মজার ব্যপার অভিজিৎ দা এখানে প্রথম কমেন্টে একটা ট্রেন্ড চালু করলেন আর আপনারা সবাই সেইটা ফলো করলেন… এতগুলা কমেন্ট আসলো সেই রায়হানের নামের লোকটার জন্য… এতগুলো সময় অপচয় হলো ঐ লোকের নামের জন্য সেটা জেনেশুনেই করলেন আপনারা। যদি ঐ লোকের কথা বার্তা নিয়ে লেখা সময় অপচয় হয় তাহলে সেই লেখার কমেন্ট করাও সময় অপচয় কেন হবে না ?… ভেবে দেখেবেন কি একটু ? এতগুলো কমেন্ট কি কাজে আসবে ?? আসল কথায় তো কেউ গেলো না। নিজেরা যা মানা করছেন করতে সেটাই করে গেলেন। রায়হান এখন হয়তো আসলেই গর্ব বোধ করবে।
@অনন্ত নির্বাণ,
সবার আগে কোন বক্তব্য দিলে যদি সেটা “ট্রেন্ড” হয়ে যায়, তাহলে তো বলা যায় স্বাধীনভাবে চিন্তা করা সম্ভব না, আমরা সবাই কারও না কারও “ট্রেন্ড” অনুসরণ করছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে কারও ট্রেন্ড অনুসরণ করছি না, মুক্তমনা যাতে সদালাপের নাস্তিক সংস্করণ না হয় সেই আকাঙ্খা থেকেই আমার ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করেছি।
যাই হোক, আর কথা বাড়াতে চাচ্ছি না।
মুক্তমনায় অনেকের সাথে মতের মিল হলোনা দেখে দুঃখিত! এমনি অভিদার সাথেও না 🙁
এই যে, রায়হান সাহেবের লেখাটা, বাংলাদেশের প্রায় ৯০% মানুষ এইটাকে অপ্ত বাক্য হিসেবে মনে করে। এইটা যে মিথ্যা কথা, বা কথাগুলোর যুক্তি যে ফ্যালাসিময় এইটা তাদের মাথাতেও আসেনা। কিন্তু এই লেখাগুলোর রিবাটাল অনেকের চোখ খুলে দেয়, তারা বুঝতে শিখে যে, এই কথাগুলোর বিপরীত মতও আছে। আর তাতে করেই তো কতজন আলোকিত হয়। অন্তঃত আমি হয়েছি।
মূল বিজ্ঞান নিয়ে লেখালিখিই সব সমস্যার সমাধান করবে? তাই বুঝি। কই নবম শ্রেনীর রসায়ন বইতে তো স্পষ্ট করে লেখা আছে (এমনি কি আমার বোর্ড পরীক্ষাতে প্রশ্নও এসেছিলো) যে প্রানশক্তি মতবাদ কি সঠিক? না সঠিক না।
কই এই স্পষ্ট বৈজ্ঞানিক ঘোষণা পড়ে কয়টা নবম শ্রেনীর ছাত্র/ছাত্রী বুঝতে পেরেছে যে, আত্মা বলে কিছু নেই? আমরা যা কিছু দেখি সব পদার্থের ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়া। অশরীরি বা অলৌকিক অপদার্থ বলে কিছু নেই সেটা কজন বুঝতে পারে? বিজ্ঞানে আত্মা বা অশরীরী প্রাণশক্তির কোন মূল্য নেই? কতোজন পেরেছে?
পারতো যদি তাদের কানের কাছে কেউ এসে বলতো, সেই দিন হুজুরের কাছে আত্মা সম্পর্কে যে কথাগুলো শুনলা সেটা আসলেই নিছক গাল গল্প। তখন সে জানতে চাইতো ক্যানো? উত্তরে প্রানশক্তি মতবাদটা বললেই, সেটার অসাড়তা ব্যাখ্যা করলেই কিন্তু ছেলেটা শিক্ষার আসল আলোটা লাভ করতো। অন্তত আমার তাই মনে হয়।
হারিকেন জ্বালাবার জন্য ম্যাচের কাঠি জ্বলানোর আগে সলতেটা একটু বাইরে বের করে নেওয়াটা প্রয়োজন। তা না হলে কাঠির পর কাঠি খরচ হবে হারিকেন জ্বলবেনা।
সৈকত ভাইকে তাই এই লেখার জন্য কৃতজ্ঞতা।
উলটা পালটার কথার জন্য সব্বার কাছে ছরি!
@রায়হান আবীর,
আর কেউ না থাক আমি আপনার সাথে একমত। বিজ্ঞান জানার জন্য হাজার হাজার সাইট আছে। এছাড়া স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এসব তো আছেই। আমার মনে হয় না কেউ বিজ্ঞান জানার জন্য মুক্তমনা সাইটে আসে। যাহোক, এতকিছুর পরও দেশের মেধাবী অনেক তরুন জামাত শিবির বা তাবলিগে নাম লেখায়। এটা বিজ্ঞানে তাদের জ্ঞান কম বলে করে তা আমার মনে হয় না।
যে কোন বিশ্ব বিদ্যালয়ে যান, পদার্থ বিদ্যা বিভাগের কমপক্ষে কয়েকজন ডক্টরেট ডিগ্রী ধারী শিক্ষক পাবেন যারা হয় জামাতী নয় ত তাবলিগি। আর বলা বাহুল্য ,তারা অতি স্ফীতি তত্ত্ব , বিগ ব্যাঙ, কোয়ান্টাম মেকানিক্স আপনার আমার চাইতে বেশী জানে বলেই আমার বিশ্বাস। তারপরও কেন তারা এধরনের মৌলবাদীতে পরিনত হচ্ছে? আমার ধারনা কোরান হাদিস আর মোহাম্মদ সম্পর্কিত মিথ তারা তাদের মাথা থেকে কোনদিন সরাতে পারেনি ও বর্তমানে তথাকথিত ইসলামী পন্ডিতদের কোরানে বিজ্ঞানের অপ তথ্য ও তত্ত্ব আবিস্কার তাদেরকের বিমোহিত করে। সুতরাং যে বিজ্ঞানের ওপর লিখতে চায় সে লিখুক , কিন্তু আমার মনে হয় সমাজ থেকে ধর্মীয় কুপমন্ডুকতা ও মৌলবাদীতা দুর করতে গেলে ধর্ম সর্ম্পকিত লেখা নিয়মিত প্রকাশিত থাকা উচিত। বিজ্ঞানের চাইতে এসব প্রবন্ধ মানুষ পড়ে বেশী প্রতিক্রিয়াও বেশী দেখায় বলে আমার ধারনা ।
@রায়হান আবীর,
তোমার মত তুমি প্রকাশ করেছ এ নিয়ে ‘সরি’র তো কিছু নেই। তোমার মত সার্বিকভাবে ঠিক আছে, শুধু বিজ্ঞান দিয়ে হয়তো আলো জ্বলবে না, কিন্তু রায়হানকে নিয়ে পড়ে থাকলে আলো জ্বালানো তো দূরের কথা – তোমার হারিকেনটাও উধাও হয়ে যাবে। কাজের কাজ কিছুই হবে না। আসলে যারা সতর্ক বাণী উচ্চারণ করছেন, তারা উনার সম্বন্ধে পোড় খাওয়া লোকজন। তারা রায়হানকে এই ব্লগ তৈরির আগে থেকেই চেনেন। যদি যুক্তির বিপরিতে যুক্তি দিয়েই কথা হতো, তাহলে আপত্তি কিছু ছিলো না। কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই তা না থেকে ব্যক্তি আক্রমণে চলে যায়। একটা উদাহরণ দেই।
নন্দিনী হোসেন নামে আমাদের ব্লগের একজন সদস্য একবার একটা লেখা লিখেছিলেন – ‘পুরুষ রচিত ধর্মে বিকলাংগ নারী’’ । রায়হান সাহেব তার প্রত্যুত্তরে লিখে বসলেন–‘নন্দিনীও একাধিক স্বামী চান’ শিরোনামে একটা লেখা। শুধু তাই নয়, উদ্ভট রিসার্চ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন, নন্দিনীর বাবা মা দুই ধর্মের, তাদের মধ্যে পারিবারিক সমস্যা ছিলো – তাই নন্দিনী এগুলো লিখছে! এখন এই লোকের সাথে আপনি কি তর্ক করবেন, বলুন? উনি যখন লেখার কিছু খুঁজে পান না তখন আবার ব্যক্তি নিয়ে পড়ে যান। ইদানিং আবার আদিল মাহমুদকে নিয়ে পড়েছেন দেখলাম। আদিল মাহমুদ কত বড় ভন্ড সেটা প্রমাণের জন্য আবার দেশি পোলা না কার যেন উদ্ধৃতি ব্যবহার করছেন। সত্যিই কি চরম বিনোদন!
এখন মুক্তমনাকেও যদি তমার সেরকম ‘প্যারাসাইট’ বানানোর ইচ্ছা থাকে, তবে উনার জবাব নিয়ে পড়ে থাকতে পারো দিনের পরে দিন। ভাল লেখা টেখা বাদ দিয়ে কেবল রায়হান কোথায় কি লিখলো তাই নিয়ে চিন্তা করতে হবে। তোমার বই চাঙ্গে উঠবে, এটা বলতে পারি 🙂
@অভিজিৎ,
আপনার বক্তব্যকে আমি সমর্থন করি। রায়হান জাতীয় অপদার্থদের নিয়ে মাতামাতি করে তাদেরকে কোন বিশেষ ফিগার বানানোর দরকার নেই। ধর্মের ওপর মৌলিক গবেষণা বা বিশ্লেষণ মূলক লেখা হলে তাতেই মানুষ বেশী সচেতন হয় বলে আমার মনে হয়। কারন প্রত্যেকেরই তো একটা নিজস্ব বিচার বুদ্ধি আছে।
@অভিজিৎ দা,
ভুল বুঝলেন। রায়হান কে নিয়ে পড়ে থাকার কথা কিন্তু আমি বলিনাই। আমি বলেছি সামগ্রিক ভাবে রায়হান সাহেব যেই আইডিয়াগুলো প্রচার করেন, সেগুলোর রিবাটাল আবশ্যক। হয়তো বলতে পারেন, ইতিমধ্যেই প্রায় সবই আছে। কিন্তু ডারউইন বিবর্তন নিয়ে বই লেখার পর কি এই বিষয় নিয়ে লেখা থেকে গেছে? এই উদাহরণ আপনারাই আমাকে একদিন দিয়েছিলেন… লেখা হয়েছে, আরও লেখা হোক। একটা সবার চোখে পড়নাই, আরেকটা পড়বে।
নন্দিনীর লেখার বিপরীতে রায়হান সাহেবের লেখা, আর রায়হান সাহেবের লেখার বিপরীতে সৈকতদার এই লেখা- তুলনাটা কি ঠিক হলো?
সেইরকম ইচ্ছা আমার নেই। মুক্তমনার স্বকীয়তা কি এতোটাই দূর্বল যে, রায়হান সাহেবের লেখার রিবাটাল আসলে এটা একেবারে ধ্বংস হয়ে যাব?
সারাদিন ঐসব নিয়ে পড়ে থাকার কথাও আমি বলিনাই, আবার একেবারে বন্ধ করে দেওয়ার কথাও বলিনাই। ভারসাম্য তো থাকতেই পারে তাইনা? সৈকতদার এই লেখাটা কি মুক্তমনাকে প্যারাসাইট বানিয়ে ফেললো?
বই! সেখানেও তো এইসব “রায়হানদের” যুক্তি নিয়েই কথা হচ্ছে? সেটা যদি অনুৎসাহিত না হয়, এই লেখা লিখা কেন অনুৎসাহিত হবে?
@রায়হান আবীর,
এ নিয়ে আর কথা বাড়ানোর ইচ্ছে নেই। আমি আমার ব্যক্তিগত মতামত হিসেবেই কথাগুলো বলেছি। তবে রামগড়ুড়ের ছানাের প্রতি অযাচিত আক্রমণ দেখে খারাপ লেগেছে। ও মডারেটর হলেই বা সমস্যা কি? কাউকে না কাউকে তো দায়িত্ব নিতেই হবে। য়ার রামগড়ুড়ের ছানা তো মডারেটর হিসেবে তো মন্তব্য দেয় নি, একজন ব্লগ সদস্য হিসেবেই দিয়েছে।
আমি আসলে কোন তুলনা করছি না, আর সৈকতের লেখাকেও খাটো করছি না (বরং সৈকতের লেখা বরবরই গুণে মানে অতুলনীয়, এবং সৈকত আমার খুব পছন্দের একজন লেখক), কিন্তু আমি যে কথাটা বোঝাতে চাইছিলাম সেটা আল্লাচালাইনা এক কথাতেই নীচে বলে দিয়েছেন – ভদ্রলোককে জাতে না তুলে তার বক্তব্যের বিরুদ্ধেও হয়তো বলা যেত। যা হোক এ ব্যাপারে লেখকদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কোন জোর জবরদস্তি নেই। তুমি ভারসাম্যের যে কথাটা বলেছ, সেটার প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন রইলো।
@অভিজিৎ,
এই ক্যাচাল সম্পর্কে আগেও শুনেছিলাম, এ প্রসঙ্গে উনাকে অন্যত্র চ্যালেঞ্জ করলে তিনি একে সরাসরি অস্বীকার করেন। উনার মূল লেখাটার লিংক কি দেওয়া যাবে?
@পৃথিবী,
মুক্তমনা, সাতরং, ভিন্নমত ও সদালাপ ঘাটাঘাটি করে সবকিছু হয়তো বের করতে পারবো, কিন্তু সে সময় বা মানসিকতা মোটেই নেই।
আপনার জন্যে সেই দুটো লেখা-
‘পুরুষ রচিত ধর্মে বিকলাংগ নারী’’
নন্দিনী হোসেনের নারী বিষয়ক একটি লেখার জবাব
@অভিজিৎ, রায়হান ভাইকে কিছু যদি বলতেই হয় তবে একটা সম্মুখ ডিবেটের আয়োজন করলেই তো হয় দাদা এত কথা বলার কি দরকার। আমাদের রায়হান ভাই তো এটার জন্য ১০০% রাজি তো আপনি কি রাজি উনার সাথে বিতর্ক করার জন্য কোন নিরপেক্ষ ভেন্যুতে? তাহলেই সব ফয়সালা হয়ে যায় কি না? :)) :)) :))
@ইমরান হাসান,
আপনার এখানে এসে রায়হান সাহেবের পক্ষে ওকালতি করার প্রয়োজনটা পড়ল কেন? উনার কথা কি উনি নিজে বলতে পারেন না? শোনেন দুদিন আগে ব্লগে এসেছেন তো পুরোন ইতিহাস কিছুই জানেন না আপনি। রায়হানের সাথে বহু ডিবেটই হয়েছে অতীতে। মুক্তমনার আর্কাইভ খুঁজলেই আপনি পাবেন। আপনে নতুন তো জানেন না বোধ হয় উনি এক সময় মুক্তমনাতেও লিখতেন। শুধু আমার সাথে না অনেকের সাথেই তার বিতর্ক হয়েছিলো। বিপ্লব পাল আট পর্বের ( ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮) একটা সিরিজও লিখেছিলেন রায়হান সাহেবের র্যাণ্ডম পাগলামো নিয়ে। তাতে কি হয়েছে – কোন চাঁদ বদন উল্টাইছে?
শুধু তো মুক্তমনাতেই নয়, আরো হাজারটা ব্লগে রায়হান সাহেব সমানে বিনোদোন যুগিয়েছেন, উনার নামে ফেসবুক ফ্যান ক্লাবও আছে শুনেছি। উনার মতো বুজুর্গ ব্যক্তি নিজে কিছু বলতে পারেন না, ‘নিরপেক্ষ ভেন্যু’র আর্জি জানাতে ইমরান হাসানের মত মুরীদের দরকার পরে, এটা বড়ই তামাসার ব্যাপার।
শোনেন ভাই, আপনি নিজেরে যত চালাক ভাবেন, অত চালাক কিন্তু আপনে না। সমানে ফেসবুকে আমাদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিতেছেন, বলে চলেছেন যে এখানকার নাস্তিকেরা নাকি না জাইনা লিখে ইত্যাদি, প্রলাপ সাইটে গিয়া আমাদের বিরুদ্ধে উস্কানি দেন, কারো কারো সাথে বিতর্কে নিজেরেই নিজে বিজয়ী ঘোষণা করে পুরস্কৃত করেন, এগুলা সবই জানি ভাইজান। ময়ূরপুচ্ছ পেছনে ধারণ করলে কি হবে, আপনার কর্কষ কণ্ঠ আপনি অতি সাধনা করেও লুকাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। আপনে ডালে ডালে চলে ভাবছেন বিরাট বিজয় অর্জন করেছেন, অন্য কেউ পাতায় পাতায়ও চলে কিন্তু।
@রায়হান আবীর,
:yes: আপনার সাথে একমত পোষণ করছি। এদেরকে চোখে আংগুল তুলে দেখিয়ে না দিলে এরা চোখ খুলতে চায় না।
@নিটোল,
:yes:
@রায়হান আবীর, একটা ব্যাপারে সম্পুর্ণই একমত যে, বর্তমান সময়ে বিজ্ঞান আসল ইস্যু নয়, আসল ইস্যু ইসলাম। প্রচুর বিজ্ঞান জানা বাংলাদেশের থেকে এই মূহুর্তে আমাদের অনেক অ-নে-ক বেশী প্রয়োজন একটা ইসলামমুক্ত বাংলাদেশ। কিন্তু সময় নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে হরেক রকমের পাগল ছাগলদের বক্তব্যের রিবাটাল লেখাই কি ইসলামমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার একমাত্র পথ? বিশেষ করে এমন একজনের বক্তব্যের রিবাটাল লেখা, রিবাটালের চেয়ে এই মূহুর্তে যার কিনা বেশী প্রয়োজন একটি ইমিডিয়েট ডায়াগনসিস? হয়রানর গুনমুগ্ধ শ্রোতাদের বিশাল দঙ্গলতো দেখলাম না এখনও। বরং দেখছি তার একটা লেখা দুই তিনজন পরে দুই তিনটা মন্তব্য রেখে যায়। এবং যারা রেখে যায় তারা বাংলাদেশের ৯০% সাধারণ মানষ নয়, বরং গুনে ও মানে তারা বরং হয়রানের চেয়েও বড় অথবা অন্তত হয়রানেরই সমান ইডিয়ট।
হয়রান কেনো ভুল বলছে এটা মানুষকে বুঝিয়ে তাদের ইসলামমুক্তি ঘটানো সম্ভব নয়। কেনন ইসলামতো আগে থেকেই লজ্জাহীনতা ও নির্লজ্জতার ধর্ম। জনসমাগমে লাঞ্ছিত করে বামগালে চটাস করে একটা চড় কষিয়ে দিলেও বিন্দুমাত্র অপমানিত বোধ না করে বিজয়ীর গর্বিত হাসি হাসতে জানে ইসলাম। মাঠে চৌদ্দদিনের মরে পচে যাওয়া শূয়োরের গলিত মৃতদেহকে সুখাদ্য জ্ঞান করে মুখে ললসার জল আনতে জানে ইসলাম। Islam does’t deal in logic. হয়রানের বক্তব্যের অসারতা ইসলামের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না বরং হয়রান সতেজ হয়ে উঠবে এটা ভেবে যে তার বক্তব্যও সাম্প্রতীক সময়ে রিফিউট হতে পারার যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছে। নতুন প্রাণশক্তিতে উজ্জীবিত সেই হয়রান আরও বেশী ‘হলদে-সবুজ ওরাং-ওটাং’ মার্কা বাণী নিসৃত করে চলবে। হয়রানের মন্ত্রশিষ্য ৯০% সাধারণ মানুষের ক্ষতি তাতে আরও বেশীই হবে।
@আল্লাচালাইনা,
হয়রান না, সামগ্রিক ভাবে একটু বিবেচনা করুন। আমি সামগ্রিকভাবে কথাটা বলেছি। আমি হয়রান মিয়াকে চিনছি বেশিদিন হয়নাই। আমি আমার মন্তব্যটা সামগ্রিকভাবে করেছি।
শিক্ষানবিসের জাকির নায়েক নিয়ে লেখাটা কতোজনকে আলোকিত করেছে আমি নিজেই দেখেছি। এরা জাকির নায়েকের কথাকে পরম সত্য মানতো, এখন নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে। এই ধরণের লেখার দরকার নেই বলুন?
এইটাই একমাত্র পথ না, কিন্তু এই পথের প্রয়োজনীয়তা আছে।
@রায়হান আবীর, সামগ্রীকভাব হলে ঠিক আছে। আসলে এই ফোরামে যেই লেখাগুলো আসছে তার প্রায় অনেকগুলোই সামগ্রীকভাবে এই শর্ত পূরণ করে চলছে, তারা ইসলামের বিরুদ্ধে বলছে। কিন্তু, ইসলামের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে হয়রানের মতো একটা নিতম্বের ফোঁড়াকে যদি একটুকুও জাতে তুলে দেওয়া হয়- সেটা হবে বিশাল ভুল। আমার মনে হয় লেখক সৈকত চৌধুরী যদি আগে থেকে ভিজ্যুয়ালাইজ করতেন এই লেখা প্রকাশ পরবর্তী মূহুর্তগুলোকে হয়রানের চোখ দিয়ে যে, “আমি হয়রান, আমিই এক ও অদ্বিতীয়, আজকাল আমাকে নিয়ে মুক্তমনায় সমালোচনামূলক লেখা আসে, এবং সেই লেখাগুলো সিরিয়াস, পুরো লেখায় লেখক একবারও এমনকি মুচকী হাসিটি পর্যন্তও দেননি।”- তিনি বোধহয় লেখার শিরোনাম ও কন্টেন্টে একটু পরিবর্তন আনতেন। আর প্রসঙ্গত জাকির নায়েক হয়রানের চেয়ে অনেক বড় ভাঁড়, হাজার হাজার লোক তাকে দেখে, তার নাম নিয়ে তার বক্তব্যের রিবাটাল লেখা যায়। কিন্তু, হয়রানতো পাঁচটা মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য পর্যাপ্ত ইম্প্রেসিভ নয়। হয়রানকে এই মূল্য দেওয়া কেনো? হয়রানকে জাতে না তুলে তার বক্তব্যের বিরুদ্ধে কি বলা যেত না?
@আল্লাচালাইনা, ভাই আপনি হাত ধুয়ে ইসলামের পিছনে কেন লাগলেন? আমাদের বাংলাদেশে তো ৮০০ বছর ধরে ইসলাম আছে এছাড়াও কত বছর আধুনিকতা এর পরেও আমরা তো আর মৌলবাদীতে পরিপূর্ণ দেশ পাইনি ।আর আপনার মত উগ্র নাস্তিকেরা কত ভালো করতে পারেন দেশের সেটা পলপট মাও এরপরে স্তালিন,মারশাল টিটো, এছাড়া উগ্র বস্তুবাদী গ্যালটন আর ইউজেনিক্স পন্থি মার্ক্স বাবা দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। আমাদের দেশের ৮৯% মানুষের বিশ্বাস যদি আপনি ভেবে থাকেন এক আধটা সাইট দিয়ে ভেঙ্গে দিবেন তাহলে আপনি ভুল করছেন, আপনার আর আপনাদের মত মানুষ(!) দের মন্তব্য আর বক্তব্য সাধারণ মানুষের শুধু হৃদয় রক্তাক্ত করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি এর জন্য একটা লিংক দিলাম(জানি হয়ত আমার মন্তব্য ৯৯% ক্ষেত্রে প্রকাশিতই হবে না) আপনাকে একটা অনুরোধ পারলে অভিজিৎ দাদা এর মত বিজ্ঞান নিয়ে লেখেন নাতো এরকম ছড়ি ঘুরানোর চেষ্টা করলে উল্টা পাব্লিক আপনার মাথাতেই ছড়ি ভাংবে।আপনাদের নাস্তিকতাবাদী লেখা কোথাও সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না আর পাচ্ছেও খুব কম আচ্ছা এরপরে আমার লিঙ্কটা দেখেন বিদায় http://muktoblog.net/details.php?un=fariarishta&pid=4631 😀
@আল্লাচালাইনা/রায়হান আবীর ,
প্রাসংগিক হিসেবে রায়হান সাহেবের লেখার সমালোচনা করা যায়। তিনি অনেকের নামে ব্যাক্তিগত বিদ্বেষ ঢালেন সবই সত্য।
তাই বলে তার নাম বিকৃত করে হয়রান হয়রান ডাকা সমর্থন করা যায় না। এসব নামে তাকে ডাকলে তাকেই সাহায্য করা হয়। এতে ওনার খুবই সুবিধে হবে। আর তার দায় নিতে হবে মুক্তমনার সমস্ত সদস্যদের।
@রায়হান আবীর,
সর্বনাশ, এ কী বললেন ভাইয়া? যদি বলতেন ৯০% মানুষ তাকে গদার উপর রাখে মেনে নিতাম। অন্যান্য ব্লগে তাকে যে হারে লা’নত দেয়া হয়, ইবলিস শয়তান সারা জীবনেও ততটুকু লা’নত অর্জন করতে পারে নাই। আমি চাই না এই মানুষটার নাম মুখে নিতে। পাপের ভয়ে পাপ হবে পাপ। আপনারা হয়তো একে ভাল ভাবে চেনেন না। মুক্তমনায় তার আগের সবগুলো লেখা একবার পড়ুন। আমাদের ফোরামের এমন কোন পুরাতন লেখক নেই যাকে সে অভদ্রভাবে অপমান করে নাই। এমন কোন লেখক নেই যারা তার প্রতিউত্তরে পুরো প্রবন্ধ লেখেন নাই। অভিজিৎ দা উল্লেখ করেছেন নন্দিনীর কথা। নন্দিনীকে অপমানের প্রতিবাদে আমি পূর্ণ একটি লেখাই লিখেছিলাম, মুক্তমনার আর্কাইভে হয়তো এখনও আছে। মুক্তমনার উল্লেখিত লেখকদের মধ্যে অভিজিৎ দা, আবুল কাশেম, আসগর সাহেব, কামরান মির্জা, বিপ্লব দা, নন্দিনী হোসেন ও আমাকে নিয়ে অত্যন্ত জঘন্য ভাষায় সে সমালোচনা করেছে। তার অযুক্তি কুযুক্তি, অপবিজ্ঞানের জবাবে বিপ্লব দা অনেক লেখা লিখেছেন, হয়তো ভিন্নমত এর আর্কাইভে খোঁজ করলে এখনও পাবেন। সদালাপের পুরনো সাইট থাকলে আপনারা দেখতে পারতেন সে কতবড় অভদ্র অপদার্থ ছেলে।
আমাদের সকল লেখক পাঠকবৃন্দের প্রতি সবিনয় নিবেদন, এই চ্যাপ্টারের এখানেই সমাপ্তি টানুন। নন্দিনীর মত লেখিকার মনে অন্যায় ভাবে সে যে আঘাত দিয়েছিল এ জন্যে তার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ ছিল। পুরনো ক্ষত মনে করিয়ে না দেয়াই উত্তম।
সদালাপে নিয়মিত মুক্তমনার লেখার সমালোচনা করে লেখা ছাপা হয়, আমাদেরও কি সেই পথ অনুসরণ করা দরকার আছে? এসব লিখে সময় নষ্ট না করে বিজ্ঞান নিয়ে লিখুন,দর্শন-যুক্তি-সংস্কৃতি এসব নিয়ে লিখলে ভালো হয়।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
খুবই ভাল কথা।
আমি মনে করি কারো কোন লেখার ব্যাপারে পূর্নাংগ লেখা দিয়ে আলোচনা সমালোচনা করতে হলে প্রথমে আলোচ্য লেখা যেই সাইটে বের হয়েছে সেখানেই পাঠানো উচিত। তারা না ছাপালে তারপর অন্য সাইটে সেটা উল্লেখ করে বের করা যেতে পারে। এতে ফেয়ারনেস থাকবে। আলোচ্য রায়হান সাহেব মুক্তমনায় তার বক্তব্য দেবেন না নিশ্চয়ই এটা জানা কথা। তাই এটা একসময় হবে একটা শিশুতোষ খেলায়।
আমি জানি এমন নিয়ম কোন সাইটে নেই,কেউ পালন করতে বাধ্য নন; তবে পালন করলে মনে হয় ভালই হয়।
অন্যরা সবসময় তাই করে বলে নিজেদের করতে হবে এমন কথা নেই। সময়ের দাম আছে, লেখারও আছে কতকিছু।
@আদিল মাহমুদ,
এটি পোস্ট করে এমনিতেই যখন আমার ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি অবস্থা তখন আপনি আবার শুনালেন এ কোন বাণী!!
@সৈকত চৌধুরী,
এমন কোন বাধ্যবাধকতা না থাকলেও আমি সেটা ফেয়ার বলে মনে করি। ওনারা সদালাপে যা ইচ্ছে বলে বেড়ান, ব্যাক্তিগত আক্রমন করেন অনেক; কারন জানেন যে আমরা সদালাপে গিয়ে সেসবের প্রতিবাদ করব না। যার যেমন রুচি।
আমরাও একই পথ ধরলে কেমন করে হবে?
@রামগড়ুড়ের ছানা,
কথা ঠিক। ওসব নিয়ে লেখার রুচি আমার কোনো কালেই ছিল না। হঠাৎ মাথাটা বিগড়ে বসল। আমি কিন্তু যুক্তির নামে বলা তার শিশু সুলভ কথা গুলো বিশ্লেষণ করেছি। ব্যক্তিগত ভাবে তাকে আক্রমণ করা বা কুৎসা রটানোর ( যেটি তুমার উল্লেখিত সাইটে প্রতিনিয়ত করা হয়) কোনো অভিপ্রায় ছিল না এমন কি এখানে ব্যক্তি রায়হান ও আমার জন্য কোনো ব্যাপার না।
তোমার পরামর্শ স্মরণ থাকবে। অনেক ধন্যবাদ।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
ধার্মিকরা ধর্ম প্রচার করেন, সুতরাং আমরা কখনও নাস্তিকতা প্রচার করবো না- এইটাই কি তুমি মানো? কি জানি আমার তো মনে হয় আমি যে জিনিসটার সন্ধান পেয়েছি যা বুঝতে পেরেছি সেটা এটলিস্ট সবার সাথে শেয়ার করতে চাই।
সদালাপে মুক্তমনার লেখার রিবাটাল ছাপা হয়, তাই মুক্তমনার উচিত হবেনা তাদের লেখার রিবাটাল লেখা? কেন, লিখলে কি সমস্যা?
আর তোমার শেষ লাইন পড়ে ক্যান জানি মাথায় আসলো, তুমি এখন মুক্তমনার মডু!
@রায়হান আবীর,
কথাটা শুনে সত্যি খুব কষ্ট পেলাম। প্রথমত আমি মডু নই,আমি শুধুই টেকনিক্যাল কাজ করি, নতুন প্লাগইন ইন্সটল,এডিট,পেজ লোডের সমস্যা,অপটিমাইজেসন এসবই আমার চিন্তা (তাও কাজের চাপে ঠিকমত কিছু করতে পারিনা) অভিদা আমাকে এ কাজই দিয়েছেন, সার্ভারে পূর্ণ একসেস থাকলেও তার বেশী ক্ষমতা আমার নেই। আপনারা মুক্তমনার পুরোনো ও সিনিয়র সদস্য, এ পোস্টের লেখক সৈকত ভাই আমাকে প্রথম মুক্তমনায় এনেছেন। আমি কখনোই নিজেকে আপনাদের উপরের কেও মনে করিনা।
আমি কমেন্টটি করেছি আর দশজন পাঠকের মতই। নাস্তিকতা প্রচারে আমার সমস্যা নেই কিন্তু এস এম রায়হান কে নিয়ে মাথা ঘামানোটা আমার সময় নষ্ট মনে হয়েছে। সেটা বলার অধিকার কি আমার নেই? নাকি সব লেখারই প্রশংসা করতে হবে?
@রামগড়ুড়ের ছানা,
মনোকষ্ট পেয়ো না হে বালক। অন্তত আমি তো জানি যে আমি তোমার উপরে, কারন আমি তোমার চাচা লাগি। আমি তোমার সাথে আছি।
তবে নাস্তিকতা নামক কোন ধর্ম যেহেতু নাই তাই নাস্তিকতা নামক কিছুতে প্রচারের কি আছে বুঝি না। প্রথাগত ধর্মের অসার দিকগুলি তুলে ধরে যেতে পারে, এটাকে নাস্তিকতার প্রচার বলা মনে হয় ঠিক হবে না। ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমান নিয়েও যুক্তিপূর্ন জোর বিতর্ক খুবই উপভোগ্য, তাকেও আমি নাস্তিকতার প্রচার মনে করি না। যুক্তির সাথে যুক্তির লড়াই হবে। মতবাদ প্রতিষ্ঠা করা বড় কথা না।
@আদিল মাহমুদ,
শাফায়াত তো কয়েকদিন আগেই উবুন্টু নিয়ে লিখেছিলো। এই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারেরে একধরণের প্রচারণাও সেটা। এবং ওর চমৎকার প্রচারণায় মুগ্ধ হয়ে আমি এখন ফুল টাইম উবুন্টু ইউজার।
এখন কথা হলো, উবুন্টু তো কোন ধর্ম নয়। তাও তো এটাকে প্রচার করা হয়।
নাস্তিকতার প্রচার আর ধর্মের প্রচার এক জিনিস না। সেটা আপনিও ভালো মতো বুঝেন। নাস্তিকতার প্রচার হল, ধর্মীয় কুসংস্কারের কথা সবাইকে জানান দেওয়া। এখানে কারও উপর মতামত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছেনা। খালি বিপরীত যুক্তিটা যত জনকে সম্ভব জানানো হচ্ছে। এইটা তো প্রচারণাই, তাই না?
তো এই প্রচারণায় সমস্যা কোথায়?
@রায়হান আবীর,
ধর্মের অসার দিকের সমালোচনা আর নাস্তিকতা প্রচার অর্থগত দিকে কিছুটা এক হলেও পুরোপুরি এক নয় মোটেই।
নাস্তিকতাকেও একটি ধর্মবিশ্বাস বলে এখনো বেশীরভাগ ধার্মিক লোক ভুল করেন। নাস্তিকতার প্রচার শব্দটা তাদের ভুল বিশ্বাসকেই আরো দৃঢ় করবে। যে বিশ্বাসের কোন অস্তিত্বই নেই তার আবার প্রচারনা কি?
তার চাইতে প্রথাগ্ত ধর্মের সমালোচনা বা বিরোধীতা এ জাতীয় শব্দ ব্যাবহার অনেক যুক্তিসংগত।
@রায়হান আবীর,
বেশ বলেছেন। 😀
যারা ধর্মকে বিজ্ঞান দিয়ে প্রতিষ্টিত করতে চায়, আর যারা নাস্তিক কিংবা নাস্তিকের কাছাকাছি এসে আস্তিকে ফিরে গিয়ে ধর্মের সাফাই গাইতে, ধর্ম নিয়ে লেখালেখি করতে ব্লগে আসে, তারা বুঝতে পারেনা তারা যে পাবনা যাওয়ার পথে, পথ ভুলে ঢাকায় ঢুকে গেছে। তারা আরো মনে করে ঢাকা শহর অর্থ মগবাজার।
@আকাশ মালিক,
:lotpot: :lotpot: :lotpot: :lotpot: :lotpot:
@সৈকত
আপনার মেধার প্রশংসা করছি।রায়হান সাহেবের লেখার কিছুই আমি শত চেষ্টা করেও বুঝিনা।পড়তে গেলে মনে হয় লিমেরিক পড়ছি।আপনি তার লেখা বুঝে আবার সেটার সমালোচনা লিখেছেন, সতি্য প্রশংসনীয়। :clap2:
@আভিজিৎ
:yes: :yes: :yes:
@আল্লাচালাইনা
কই আমিতো কোন আনন্দ পাইনা। আমি ওনার লেখা প্রথম পড়ি সামু তে, সেই তখন থেকেই দেখছি, ওনার লেখা পড়তে গেলেই আমার বুকে ব্যাথ্যা উঠে যায়।( কথাটা কিন্তু সতি্য।)
@পৃথিবী
ভিডিওটি আমি দেখেছি।আমি যতটুকু দেখেছি, তাতে ডকিংস হারুনের ৪ টি ভুল তুলে ধরেন। এরপর প্রশ্নোত্তর সেশন হয়। “এটলাস অব ক্রিয়েশন” এ খুব সম্ভবত এক মিলিয়ন ফসিল দিয়ে দেখানো হয় যে, ফসিলের প্রানিগুলোর আজো কোনো পরির্বতন হয়নি। ডকিংস সামান্য কয়টার ভ্রান্তি প্রমান করেছেন। বাকিগুলো আসল না নকল এ বিষয়ে কি নেটে কোনো লেখা আছে।
@মিথুন, সবগুলো ভ্রান্তি বের করে দেখানো হয়েছে কিনা জানি না, বইটা এত বড় যে কেউ সবগুলো ভ্রান্তি বের করে দেখানোর ঝামেলায় যাবে বলে মনে হয় না।
ইয়াহিয়া কোন বিজ্ঞানী না। তার উপর তিনি যেসব ভুল করেছেন, তাতে তার দাবির গ্রহণযোগ্যতা একেবারেই বিলীন হয়ে যায়, সংগত কারণেই কেউ লাইন বা লাইন চেক করে ভুল বের করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করবে না। এরকম ভুল করার পরও যদি কেউ ইয়াহিয়াকে পাত্তা দেয়, তাহলে তাকে আর কোনভাবেই বোঝানো যাবে না।
@মিথুন,
যদি ধর্মবিশ্বাসীদের জিজ্ঞেস করা হয় তারা কেন ধর্মে বিশ্বাস করে তবে আমি শিওর শতকরা ৯৯ জনই রায়হানের মত করে বলবে। আর সমাজটা যেহেতু ধর্মবিশ্বাসীদের দ্বারাই চলছে তাই এদের কথাবার্তা অনেক সময় ধৈর্য ধরে বুঝতে হয়।
মুক্ত-মনায় কাউকে নিয়ে পোস্ট দেয়ায় যদি কেউ জাতে উঠেছেন বলে মনে করেন তাবে ভাল মুশকিলই বঠে। একটা পুরনো কৌতুক মনে পড়ে গেল-
হাবলু আজ বেজায় খুশি, তার বিদ্যালয়ে আজ যে পরিদর্শক এসেছিলেন উনি নাকি শুধু ওর সাথে কথা বলেছেন আর কারো সাথে নয়। যাই হোক, সবাই যখন ওকে চেপে ধরল ওকে পরিদর্শক কি বলেছেন তা শুনানোর জন্য, ও সানন্দে বলল, “পরিদর্শক আমাকে বলেছেন , ‘ইডিয়ট’।” 🙂
অভিজিতদার সাথে একমত। এদেরকে নিয়ে যত লিখবেন, ততই এদের গুরুত্ব বাড়বে। সৃষ্টিবাদীদের সাথে বিতর্ক করা নিয়ে ডকিন্সকে একবার স্টিফেন গুল্ড লিখেছিলেন যে এদের সাথে তাঁরা তর্ক করলে সৃষ্টিবাদীদের সিভি যত উজ্জ্বল হবে, তাঁদের সিভি ততই মলিন হবে।
ডকিন্স হারুন ইয়াহিয়ার “এটলাস অব ক্রিয়েশন” নিয়ে লন্ডনের এক্স-মুসলমানদের একটা সভায় বক্তৃতা করেছিলেন। পুরো বক্তৃতাটাই ছিল হারুন ইয়াহিয়ার ভুল নিয়ে। হারুন ইয়াহিয়া sea snakeকে বান মাছ বানিয়ে “প্রমাণ” করতে চেয়েছিলেন যে প্রকৃতিতে কোন প্রজাতি বিবর্তিত হচ্ছে(ইউটিউবে ডকিন্স এবং এটলাস অব ক্রিয়েশন সার্চ করে দেখতে পারেন, চার খন্ডের একটা ভিডিও পাবেন) না। হারুন ইয়াহিয়ার ভুল তথ্যগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি ডকিন্স এটলাস অব ক্রিয়েশনের মত একটি বই ইয়াহিয়া কিভাবে প্রকাশ করে বিশ্বের সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বিনামূল্যে বিলিয়েছিলেন, সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। হারুন ইয়াহিয়া ঘোষণা করেছিলেন যে বিবর্তনবাদীরা একটা ইন্টারমিডিয়েট ফসিল দেখাতে পারলে তিনি ৪.৪ ট্রিলিয়ন পাউন্ড পুরস্কার দিবেন, যা কিনা তুরস্কের গ্রস ন্যাশনাল প্রোডাক্ট থেকে ছত্রিশ গুণ বেশি, এটা নিয়েও ডকিন্স হালকা ঠাট্টা-তামাশা করেছিলেন। ঠিক কোন প্রসঙ্গে তা মনে নেই, তবে সদালাপে রায়হান সাহেবদের সাথে এক বিতর্কে এই ভিডিওর কথা আনলে উনারা একত্রে দাবি করলেন যে ডকিন্স নাকি বেহায়ার মত ইয়াহিয়াকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। আমি তো থ! পুরো ভিডিওর লিংক আমি দু’বার পোষ্ট করলাম, তবুও জিহাদীরা একই কথা বারবার বলছে। রায়হান সাহেব দাবি করলেন উনি নাকি ওই ভিডিও এর আগেও অনেকবার দেখেছিলেন। কোন সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ ভিডিওটা দেখলেই ঘটনাটার তাৎপর্য বুঝতে পারবে।
মুক্তমনায় জাফর ইকবাল এবং আইডি নিয়ে একবার একটা বিতর্ক হয়েছিল। জিহাদীরা এতে ব্যাপক খুশি। যেই জিহাদীরা ফেসবুকে জাফর ইকবালের নামে একটার পর একটা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, সেই জিহাদীরাই মুক্তমনার উক্ত পোষ্টের মন্তব্য বিশেষকে প্রসঙ্গের বাইরে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন সাইটে পোষ্ট করে আমাদের গালাগালি করছে। অবস্থা দেখুন:-
http://sorowar1976.amarblog.com//posts/104146/
http://khelarkhobor.com/index.php?option=com_content&view=article&id=2975:2010-04-18-07-24-03&catid=42:rokstories&Itemid=152
পোষ্টটার নাম দিয়ে গুগলে সার্চ দিলে আরও অনেক ওয়েবসাইট পাবেন।
এরকম পরগাছাদের নিয়ে কথা বললে ওদেরকে উঠিয়ে দিয়ে আমরা নিজেরাই নিচে নেমে যাব। তাই অন্য ব্লগের কাজকারবার নিয়ে যত কম কথা বলা যায়, ততই ভাল। বহু বিবাহ নিয়ে ফতোয়াবাজি করে রায়হান সাহেব ইতিমধ্যেই আমারব্লগে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন, তাই উনাদের নিয়ে খুব একটা দুঃচিন্তা করার দরকার নাই।
@পৃথিবী,
যদিও এদের নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই তারপরো আবার একেবারে ছেড়ে দেয়ার মধ্যে কিন্তু সমস্যা আছে। আমরা যেসব মোল্লা-মুনসিদের দ্বারা প্রতিনিয়ত নিয়ন্ত্রিত হচ্ছি সেসব মোল্লারা কি এদের থেকে বেশি ঘিলু ধারণ করে? মাঝে মাঝে একটু ধৈর্য ধারণ করে এসবের জবাব দেয়া উচিত বলেই আমি মনে করি। এতে সাধারণ মানুষেরা যারা ঐসব আবালদের কথায় নাচতে থাকে তারা হয়তবা কিছুটা হলেও চিন্তা করার সুযোগ পাবে।
আমরা মুক্ত-মনায় এসে অনেকে মনে করি ধর্ম-টর্ম এসব আর তেমন একটা ব্যাপার না তারা কিন্তু সত্যি সত্যিই ভুল করছি।
@সৈকত চৌধুরী,
অবশ্যই সমস্যা আছে। একমত।
একমত।
রায়হান সাহেবের লেখাটি পড়ে আমার প্রথমেই এডওয়ার্ড কারেন্টের কথা মনে পড়ল। উনার লেখাকে প্যারোডি ছাড়া অন্য কিছু ভাবার কারণ দেখছি না।
আমার দৃঢ় ঈশ্বর বিশ্বাসের পেছনে এর দুয়েকটি যুক্তি বাল্যকাল থেকেই খুব পছন্দের। তথ্যগুলি ঠিক না বেঠিক তার সঠিক প্রমান করার কোন উপায় না থাকলেও ঈশ্বর বিশ্বাসের পক্ষে যে ওসব যুক্তি যথেষ্ট নয় তা অনেকদিন আগেই বুঝেছি।
আমার মনে সবসময় আসত যে নবী মোহাম্মদের মত একজন সত মানুষ,যিনি নাকি বর্বর কোরাঈশদের কাছেই আল আমিন নামে পরিচিত ছিলেন তিনি কেন আল্লাহ খোদা নিয়ে কাহিনী ফেঁদে বসবেন? তাও আবার স্রোতের বিপরীতে? অতীতের সব নবী নিয়েও একই ধারনাই মনে খেলত। তিনি বেশ কটি বিবাহ করলেও (যা সে যুগের রীতিতে অন্যায় কিছু নয়) প্রাচীনকালের রাজা বাদশাহদের মত ব্যাপক ভোগবিলাসে গা ভাসিয়েছেন এমন তো মনে হয় না। কাজেই মিথ্যা বলার পেছনে ওনার কোন মোটিভ নেই।
– যদিও যুক্তির জগতে এই যুক্তি তেমন শক্ত নয়। যিনি কোনদিন মিথ্যা বলেননি বা চরম সত তিনিও এ ধরনের দাবী করতে পারেন। তার মানেই যে তাকে মিথ্যা বলতেই হবে এমন নয়। তিনি হয়ত মনে করেন যে আসলেই তিনি গায়েবী নির্দেশ পাচ্ছেন। যাকে আধুনিক যুগে হ্যালুসিনেশন বলে। এই যুগেও এমন গডের গায়েবী বানী শোনার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তাদের কেউ নবী বলে ধরে নেয় না। তাদের মানসিক রোগী হিসেবে চিকিতসা করা হয়। আমি বলছিনা যে মোহাম্মদ বা সব নবীর ক্ষেত্রে অবশ্যই তাই হয়েছিল। একটি শুধু যৌক্তিক সম্ভাবনা বলছি। এদের কেউ কেউ আসলেই মানসিক রোগ বশতঃ এমন দাবী করে, আর কেউ কেউ বড় ধরনের প্রতারক।
বার্ডেন অফ প্রুফ নিয়ে অনেক অনেক লেখা হয়েছে। ফালতু সময় নষ্ট। যদিও আমার ব্যাক্তিগত ইশ্বর বিশ্বাসের পেছনে ক্রিয়েটর লাগবে এই যুক্তি একটি কারন। যদিও একে আমি যুক্তি বলব না, ব্যাক্তিগত বিশ্বাসই বলব। কারন সেই ক্রিয়েটর কি করে ক্রিয়েট হলেন তার কোন ব্যাখ্যা আমি দিতে পারব না। নানান হাবিজাবি কথা শুরু করতে হবে।
সৈকত,
রায়হানকে (আমাদের রায়হান আবীর নন) নিয়ে মুক্তমনায় আলোচনা সময়ের অপচয় বলেই মনে করি। ভদ্রলোক সবকিছুকেই নিজের বিশ্বাসের ফ্রেম থেকেই চিন্তা করেন। উনি হুমায়ুন আজাদ পড়েননি তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই। উনি রিচার্ড ডকিন্সও পড়েননি। উনি আসলে কোন বইই পড়েন না, উনার মূল রিসোর্স ইন্টারনেটের বিভিন্ন বিশ্বাসনির্ভর আর্টিকেল, আর ইদানিং বোধ ইউটিউব। উনি যখন মুক্তমনায় ইয়াহুগ্রুপ-এ লিখতেন (শেষদিকে উনার যখন ‘ট্রাঞ্জিশন’ চলছিলো) আমি মহাবিশ্বের স্ফীতি তত্ত্ব নিয়ে এলেন গুথ, আলেকজান্দার ভিলেঙ্কিন, আদ্রে লিন্ডের সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল জানাতে গিয়েছিলাম, তাকে বলেছিলাম নিদেন পক্ষে গুথের ‘ইনফ্লেশনারি ইউনিভার্স’ বইটা পড়ে দেখতে,অথচ তিনি সেটা না করে সেই বস্তাপঁচা ‘ন্যাচারাল মহাবিশ্ব যেহেতু আছে সেহেতু তার একজন সৃষ্টিকর্তা থাকতেই হবে’ – সেই লজিকেই ঘুরপাক খাচ্ছেন। ন্যাচারাল মহাবিশ্বের জন্য ঈশ্বর লাগলে, সেই ন্যাচারাল ঈশ্বরের জন্য কেন আরেকজন ঈশ্বর লাগবে না, তা শুধু উনিই জানেন। আর বিবর্তন বিষয়ে তার বিরোধিতাও উল্লেখ করার মতোই। বিবর্তন নিয়ে গন্ডা গন্ডা সিরিজ লেখেন, অথচ বিবর্তন বিষয়ে একটা অথেন্টিক বই কিংবা পাঠ্যপুস্তক পড়ে দেখতে চান না, মজার না?
আমি ইদানিং ‘প্যারাসাইটের’ লেখকদের নিয়ে ভাবনা ছেড়ে দিয়েছি। ওদের নিয়ে না ভেবে বিজ্ঞানের প্রান্তিক বিষয়ের উপর ভাল কিছু লেখা লিখি আসুন। এতেই বরং সবার উপকার হবে।
@অভিজিৎ,
:yes:
@অভিজিৎ, সম্পুর্ণই সহমত। রায়হান আগে মুক্তমনায় লিখতো, লিখতে লিখতে হয়রান হয়ে যায় বিধায় এখন আর লেখে না। এখন লেখে ‘রম্যালাপ’ ব্লগে। কোনঠাঁসা হতে হতে যে ‘রম্যালাপ’ এ গিয়ে ঠেকেছে তাকে আবার মুক্তমনায় তুলে আনা কেনো? তবে অস্বীকার করার উপায় নেই, ছোকড়া আনন্দ দিতে জানে।
@অভিজিৎ,
আমার বিভিন্ন ব্লগে ঘোরাঘুরি করার আভ্যাস বা বদ-অভ্যাস আছে। উনার কীর্তি-কলাপ লক্ষ্য করে ভাবলাম একটা জবাব দেয়া উচিত। তা ছাড়া সমস্যার বিষয় হল এদের সৃষ্টিবাদি আবর্জনা গুলো কিন্তু অনেকে গোগ্রাসে গিলছে।
:yes: এটাই আশা করি উনাকে নিয়ে আমার শেষ লেখা হবে। ধন্যবাদ।
অনেক বার পাঠানোর পর সম্পূর্ণটা আসল। এখন আবার একটু এডিট করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সাহস হচ্ছে না।