বানান নিয়ে আরো কিছু বকরবকর
বিপ্লব রহমান তাঁর আমাদের সময়ের নায়কেরা প্রবন্ধের মন্তব্যে হঠাৎ করেই আমাকে উদ্দেশ্য করে করা এক মন্তব্যে বানান নিয়ে তাঁর এক প্রিয় কবি চয়ন খায়রুল হাবিবের একটি লেখা ভাষাচিন্তাঃ পোকায় কাটা কয়েকটা দাত ফেলে দিলেই দুখিনি বর্নমালার দাত ব্যাথা সেরে যাবেঃ লিংক দেন এবং পড়তে বলেন। এই কবি তাঁর নিজস্ব রীতিতে বাংলা বানান লিখে থাকেন বলে বিপ্লব জানান।
আমি মাঝে মাঝেই বানান নিয়ে অহেতুক লোকজনকে বিরক্ত করি এবং অযাচিতভাবে বকবক করি (যদিও আমার নিজের বানানের অবস্থাই করুণ) দেখেই হয়তো বিপ্লব রহমান আমাকে এই লেখাটি পড়তে দিয়েছিলেন। লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ি আমি এবং সিদ্ধান্ত নেই যে, এর পাঠ প্রতিক্রিয়া বিপ্লব রহমানকে আমার জানানো প্রয়োজন। সেই অনুযায়ী মন্তব্যও লিখতে বসি। কিন্তু সেই মন্তব্য আকারে আকৃতিতে বেড়ে এমনই এক বেঢপ আকৃতি নিয়ে নেয় যে, মন্তব্যের স্বল্প বসন দিয়ে তাকে ঢেকে রাখা বড়ই কষ্টকর হয়ে পড়ে। ফলে, যে মন্তব্য বিপ্লব রহমানের লেখার প্রাপ্য ছিল, সেটাকে আমি কিছুটা অন্যায়ভাবেই স্বতন্ত্র একটা পোস্ট হিসেবে মুক্তমনায় দিয়ে দিতে বাধ্য হই। এটা ঠিক যে, বিপ্লব রহমানের মূল লেখাটা এই আলোচনা থেকে বঞ্চিত হবে, তবে সেই বঞ্চনাকে ঠেকানোর জন্যে এই লেখার একটা লিংক আমি সেখানে দিয়ে দেবো বলে ভেবে রেখেছি।
আপনার প্রিয় কবির বানান নিয়ে লেখাটা পড়লাম। বেশ আগ্রহোদ্দীপক এবং মজাদার লেখা তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে এই লেখায় নতুনত্ব বলে তেমন কিছুই খুঁজে পেলাম আমি। আপাত দৃষ্টিতে বেশ বৈপ্লবিক এবং বিদ্রোহব্যাঞ্জক মনে হলেও, তিনি যে সমস্ত বানান সংস্কারের কথা বলেছেন বা যেভাবে বানানকে লিখতে চাইছেন, তার অনেকগুলো নিয়ে প্রায় দুইশো আড়াইশো বছর আগে থেকেই বাংলা ভাষাতত্ত্ববিদদের মধ্যে আলোচনা সমালোচনা চলে আসছে।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে উচ্চারণ অনুযায়ী তিনি বানান লেখার বিষয়ে মতামত দিচ্ছেন যে লেখায়, সেটাতেই তিনি তার নিজের মতামতকেই মেনে চলেননি। স্ববিরোধিতা রয়ে গেছে তাঁর নিজের লেখাতেই। যেখানে তিনি দন্ত, মুর্ধা, তালব্যের উচ্চারণে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন, আবার সেখানে নিজেই ভাষা, ভাষনের, শাষনের, পাষবিকতা, সুষমা, শাষনাধিন, শেষমেষ ইত্যাদি শব্দে ষ ব্যবহার করছেন।
বাংলায় ষত্ব বিধান এসেছে সংস্কৃত থেকে। যে সমস্ত সংস্কৃত শব্দ অবিকৃত বা বিকৃত অবস্থায় বাংলায় এসেছে সেখানেই সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসারে ষ কে ব্যবহার করা হয়। খাঁটি বাংলা শব্দ এবং বিদেশি শব্দে ষ এর কোন ব্যবহারই নেই। তার স্ববিরোধিতা শুধু এখানে সীমাবদ্ধ নয়। বেশ কিছু সংস্কৃত শব্দকে তিনি শুধুমাত্র দীর্ঘ ঈ-কার আর ণ বাদ দিয়ে লিখেছেন, কিন্তু অন্তস্থ ব কে অবিকৃত রেখে দিয়েছেন। যেমন, বিশ্বাস, স্বিকৃতি, স্বত্ত্বেও, ধ্বংশের, সিধ্বান্তের , বিশ্ববিদ্যালয়, স্বার্থে। বাংলায় জিহ্বা, আহ্ববান ইত্যাদি দুই একটা জায়গা ছাড়া অন্তস্থ ব এর কোন উচ্চারণই নেই। এ ছাড়া জ এবন য এরও আলাদা উচ্চারণ বাংলাতে হয় না। কিন্তু এই কবি দেখলাম অনেক জায়গাতেই জ এর বদলে য ব্যবহার করেছেন। যেমন, য্যামন, যাওয়া, যোয়াল। এগুলোতে জ ব্যবহার করলেইতো চলতো। অহেতুক আবার য কে টেনে আনার প্রয়োজন কী ছিল বুঝতে পারি নি।
বাংলা বানানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল যে, এর উচ্চারণ হয় প্রাকৃতের মত, কিন্তু বানান লেখা হয় সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুযায়ী। ফলে, বেশিরভাগ সময়ই বানান এবং উচ্চারণের সামঞ্জস্য থাকে না। আমরা বানান লিখি একরকম, কিন্তু উচ্চারণ করি ভিন্ন রকমের। এই সমস্যা দূরীকরণের জন্য ভাষাবিদেরা চিন্তাভাবনা করে আসছেন সেই অষ্টাদশ শতক থেকেই। এ প্রসঙ্গে হুমায়ুন আজাদ লিখেছেনঃ
১৭৭৮ থেকে বাঙলা ভাষাবিদেরা অনেকটা নিরবচ্ছিন্নভাবে চিন্তা করে আসছেন বাঙলা বানান ও তার সংস্কার সম্পর্কে। এর ফলে, দু-শো চল্লিশ বছরে, অর্জিত হয়েছে বাঙলা মান বানান, যার কয়েকটি এলাকা এখনো অস্থিত-অস্থির। উল্লেখযোগ্য যে মান ভাষার মান বানান থাকা দরকার; কিন্তু ওই বানান যে বিজ্ঞানসম্মত হবেই, তার কোনো কথা নেই। পৃথিবীর কোনো ভাষায়ই বিজ্ঞানসম্মত বানান নেই; আর চরম অর্থে ‘শুদ্ধ’ বলেও কোনো বানান নেই- যে বানান গৃহীত, তাই শুদ্ধ, আর যা গৃহীত নয়। যতোই যুক্তিসংগত হোক না কেনো, তা অশুদ্ধ। হ্যালহেডের ব্যাকরণের (১৭৭৮) আগে বাঙলা বানান ছিলো উচ্চারণ-অনুসারী; কিন্তু হ্যালহেড থেকেই শুরু হয় সংস্কৃতনিষ্ঠ ব্যুৎপত্তিনির্ভর বানান। ঊনিশশতকে ব্যুৎপত্তিনির্ভর করে বাঙলা বানানের একরকম মান প্রতিষ্ঠিত হয়, যা সংস্কৃতপন্থীদের কাছে ছিল আদরণীয়, কিন্তু বাঙালপন্থীরা- যেহেতু ব্যুৎপত্তিনির্ভর বানান ও তার উচ্চারণে কয়েক শতাব্দীর ব্যবধান- ওই বানানকে স্বীকার করে নিতে পারেননি। জনসনের অভিধানের ব্যুৎপত্তিনির্ভর বানান যেমন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিলো, ঠিক তেমন উত্তেজনাই এ-বানান সৃষ্টি করে প্রকৃত বাঙলাপন্থীদের মধ্যে। ব্যুৎপত্তিনির্ভর বানান বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় যে আমরা লিখি সংস্কৃত কিন্তু উচ্চারণ করি বাঙলা;-বানানই যেনো বাঙলা ভাষাকে দাস করে রাখছে সংস্কৃতের। রবীন্দ্রনাথ (১৯৩৮) মনে করতেন যে, বানানের ছদ্মবেশ ঘুচিয়ে দিলেই দেখা যাবে বাংলায় তৎসম শব্দ নেই বললেই হয়। এখন বাঙলা বানানের যে সমস্ত এলাকায় অস্থিরতা দেখি তার মূলে বিদ্যমান ব্যুৎপত্তি ও উচ্চারণের কলহ।
বাংলা বানানের ক্ষেত্রে সংস্কৃতের অনুশাসনকে মেনে নেওয়ার ব্যাপারে ঘোর আপত্তি ছিল রবীন্দ্রনাথেরও। তিনি তাঁর বাংলা শব্দতত্ত্ব গ্রন্থে বানান সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন যেঃ
প্রাচীন বাঙালি, বানান সম্বন্ধে নির্ভীক ছিলেন, পুরানো বাংলা পুঁথি দেখিলেই তাহা বুঝা যায়। আমরা হঠাৎ ভাষার উপর পুরাতত্ত্বের শাসন চালাইবার জন্য ব্যস্ত হইয়াছি। এই শাসন ম্যালেরিয়া প্রভৃতি অন্যান্য নানা উপসর্গের মতো চিরদিনের মতো বাঙালির ছেলের আয়ুক্ষয় করিতে থাকিবে। কোনো অভ্যাসকে একবার পুরানো হইতে দিলেই তাহা স্বভাবের চেয়েও প্রবল হইয়া ওঠে। অতএব এখনো সময় থাকিতে সাবধান হওয়া উচিত। সংস্কৃত শব্দ বাংলায় অনেক আছে, এবং চিরদিন থাকিবেই—সেখানে সংস্কৃতের রূপ ও প্রকৃতি আমাদের মানিতেই হইবে—কিন্তু যেখানে বাংলা শব্দ বাংলাই সেখানেও সংস্কৃতের শাসন যদি টানিয়া আনি, তবে রাস্তায় যে পুলিস আছে ঘরের ব্যবস্থার জন্যও তাহার গুঁতা ডাকিয়া আনার মতো হয়। সংস্কৃতে কর্ণ লিখিবার বেলা মূর্ধন্য ণ ব্যবহার করিতে আমরা বাধ্য, কিন্তু কান লিখিবার বেলাও যদি সংস্কৃত অভিধানের কানমলা খাইতে হয় তবে এ পীড়ন সহিবে কেন?
বাংলা বানানের ক্ষেত্রে ব্যুৎপত্তি ও উচ্চারণের কলহ দূর করার জন্যি এগিয়ে এসেছেন আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানীরা। রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে ১৯৩৫ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। বাংলা বানানকে উচ্চারণ অনুযায়ী সরল করার জন্য সুপারিশমালা পেশ করেন তারা। এর মধ্যে অন্যতম ছিল যে, বাংলায় যে সমস্ত সংস্কৃত শব্দ আছে তাদের বানান সংস্কৃততে যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে, বাংলায় এর উচ্চারণ যেমনই হোক না কেন। তাদের ভাষাতেইঃ
অসংখ্য সংস্কৃত বা তৎসম শব্দ বাংলা ভাষার অঙ্গীভূত হইয়া আছে এবং প্রয়োজনমত এইরূপ আরও শব্দ গৃহীত হইতে পারে। এই সকল শব্দের বানান সংস্কৃত ব্যাকরণ অভিধানাদির শাসনে সুনির্দিষ্ট হইয়াছে, সেজন্য তাহাতে হস্তক্ষেপ অবিধেয়।
বাংলায় যেহেতু দীর্ঘ স্বর নেই, সেই কারণে দীর্ঘ ঈ এবং দীর্ঘ ঊ বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংস্কৃত ছাড়া সকল দেশি এবং বিদেশি শব্দে দীর্ঘ ঈ কার এবং দীর্ঘ ঊ কার এর পরিবর্তে হ্রস্ব ই কার এবং হ্রস্ব উ কার ব্যবহারে সিদ্ধান্ত হয়। এক্ষেত্রে কবি চয়ন খায়রুল হাবিবের চিন্তাভাবনার সাথে তাঁদের চিন্তাভাবনার কোন পার্থক্য নেই।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বানান সংস্কারের নিয়মে বলেঃ
যদি মূল সংস্কৃত শব্দে ঈ বা ঊ থাকে তবে তদ্ভব বা তৎসদৃশ শব্দে ঈ বা ঊ অথবা বিকল্পে ই বা উ হইবে, যথা- ‘কুমীর, পাখী, বাড়ী, শীষ, ঊনিশ, চূন, পূব’ অথবা ‘কুমির, পাখি, বাড়ি, শিষ, ঊনিশ, চুন, পুব’। কিন্তু কতকগুলো শব্দে কেবল ঈ, কেবল ই অথবা কেবল উ হইবে, যথা- ‘নীলা (নীলক), হীরা (হীরক); দিয়াশলাই (দীপশলাকা), খিল (কীল), পানি (পানীয়); চুল (চূল), তাডু (তর্দূ), জুয়া (দ্যূত)।
স্ত্রীলিঙ্গ এবং জাতি, ব্যক্তি, ভাষা ও বিশেষণ বাচক শব্দের অন্তে ঈ হইবে, যথা- ‘কলুনী, বাঘিনী, কাবুলী, কেরানী, ঢাকী, ফরিয়াদী, ইংরেজী, বিলাতী, দাগী, রেশমী’। কিন্তু কতকগুলি শব্দে ই হইবে, যথা- ‘ঝি, দিদি, বিবি, কচি, মিহি, মাঝারি, চলতি’। ‘পিসী, মাসী’ স্থানে বিকল্পে ‘পিসি, মাসি’ লেখা চলিবে।
অন্যত্র মনুষ্যেতর জীব, বস্তু, গুণ, ভাব ও কর্ম বাচক শব্দের এবং দ্বিরাবৃত্ত শব্দের অন্তে কেবলই ই হইবে, যথা- ‘বেঙাচি, বেঁজি, কাঠি, সুজি, কেরামতি, চুরি, পাগলামি, বাবুগিরি, তাড়াতাড়ি, সরাসরি, সোজাসুজি’।
অন্যদিকে ই, ঈ, উ এবং ঊ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমী এগিয়ে গিয়েছে আরো একধাপ। শুধুমাত্র সংস্কৃত শব্দ ছাড়া আর সব শব্দেই ঈ এবং ঊ ব্যবহারকে বাতিল করে দিয়েছে তারা। এমনকি যে সমস্ত সংস্কৃত শব্দের বানানে ঈ বা ই কিংবা ঊ বা উ হয় সেখানে শুধুমাত্র ই বা উ ব্যবহার করতে বলেছে। বাংলা একাডেমীর প্রমিত বানানের ২.০১ নিয়মে বলা হয়েছেঃ
সকল অ-তৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশী, বিদেশী, মিশ্র শব্দে কেবল ই এবং উ এবং এদের কার চিহ্ন ি ু ব্যবহৃত হবে। এমনকি স্ত্রীবাচক ও জাতিবাচক শব্দের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। যেমন; গাড়ি, চুরি, দাড়ি, বাড়ি, ভারি, শাড়ি, তরকারি, বোমাবাজি, দাবি, হাতি, বেশি, খুশি, হিজরি, আরবি, ফারসি, ফরাসি, বাঙালি, ইংরেজি, জাপানি, জার্মানি, ইরানি, হিন্দি, সিন্ধি, ফিরিঙ্গি, সিঙ্গি, টুপি, সরকারি, মালি, পাগলামি, পাগলি, দিঘি, কেরামতি, রেশমি, পশমি, পাখি, ফরিয়াদি, আসামি, বে-আইনি, ছড়ি, কুমির, নানি, দাদি, বিবি, মামি, চাচি, মাসি, পিসি, দিদি, বুড়ি, ছুঁড়ি, নিচে, নিচু, ইমান, চুন, পুব, ভুয়া, মুলা, পুজো, উনিশ, উনচল্লিশ। (মোট ৬০টি শব্দ আছে এখানে)
অনুরূপভাবে আলি প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই-কার হবে। যেমন; খেয়ালি, বর্ণালি, মিতালি, সোনালি, হেঁয়ালি।
তবে কোনো কোনো স্ত্রীবাচক শব্দের শেষে ঈ-কার দেওয়া যেতে পারে। যেমন; রানী, পরী, গাভী।
তৎসম শব্দের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমীর প্রমিত বানানের ১.০২ নিয়মে বলা হয়েছেঃ
তবে যে সব তৎসম শব্দে ই ঈ বা উ ঊ উভয়ই শুদ্ধ সেইসব শব্দে কেবল ঈ বা উ এবং তার- কারচিহ্ন ি ু ব্যবহৃত হবে। যেমন কিংবদন্তি, খঞ্জনি, চিৎকার, ধমনি, ধূলি, পঞ্জি, পদবি, ভঙ্গি, মঞ্জরি, মসি, লহরি, সরণি, সূচিপত্র, উর্ণা, উষা।
তবে, কবি চয়ন খায়রুল হাবিব বাংলা বানান থেকে চন্দ্রবিন্দুকে একেবারেই বিদায় করে দেবার পক্ষপাতি। চন্দ্রবিন্দু বিসর্জনের তাঁর বৈপ্লবিক চিন্তাভাবনা কতখানি কার্যকর হবে সে বিষয়ে অবশ্য যথেষ্টই সন্দেহ আছে আমার। ভাষাবিদ আবুল হাসনাৎ-ও তাঁর ‘বাঙলা ভাষার সংস্কার’ গ্রন্থে চন্দ্রবিন্দু বিসর্জনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেনঃ
বহু ভাষায় সানুনাসিক স্বরধ্বনি নাই; ইংরেজী ইহাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। …… সম্ভ্রমাত্মক ঁ ব্যবহারে আর এক মুশকিল হইয়াছে। ইংরেজীতে পাপাচারী, দুর্বৃত্ত হইতে যীশুখ্রীষ্ট, সম্রাট, প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সকলের জন্য He or They কথা ব্যবহৃত হয়। আরবী-ফারসীতেও পয়গম্বর ও শয়তান উভয়ের জন্য ‘বলে, করে, যায়’ ইত্যাদি বলা হয়। অথচ তিনি, তাঁহারা, যাঁহারা, কাঁহারা ইত্যাদির প্রচলনে আমাদের অনাবশ্যক শ্রম স্বীকার করিতে হইতেছে।
এর বিরোধিতা করে ফেরদাউস খান তাঁর ‘হরফ সমস্যা’ প্রবন্ধে বলেন যে,
অন্য ভাষায় অনুনাসিক ঁ স্বর নেই, বাংলায় আছে; অন্য ভাষায় সম্ভ্রমাত্মকভাবে সর্বনামের ব্যবহারের উপায় নেই, বাংলায় আছে; ইহা অন্য ভাষার দরিদ্রতা এবং বাংলার বাহাদুরি। আমি বলবো, অন্ততঃ এই ব্যাপারে ঁ সম্বলিত বাংলা বর্ণমালা অনুরূপ স্বরবিহীন অন্য ভাষার বর্ণমালার চেয়ে উৎকৃষ্ট। ঁ –কে বাদ দিয়ে বাংলা হরফের প্রকাশ ক্ষমতা এবং ধারণ-ক্ষমতা খর্ব করা কিছুতেই ন্যায়সঙ্গত হবে না।
আনুনাসিক উচ্চারণ বাংলার এক অনন্য বৈশিষ্ট এবং অপরিহার্যও বটে। মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী তাঁর ‘বাঙলা বানান ও লিপি সংস্কার’ প্রবন্ধে লেখেনঃ
চন্দ্রবিন্দু আনুনাসিকতার প্রতীক হিসাবে বাঙলায় অপরিহার্য। বাঙলায় স্বরধ্বনির অনুনাসিকতা স্বতন্ত্র অর্থের দ্যোতনা করে, যেমন-হাস-হাঁস, বাস-বাঁশ, কাসা-কাঁসা, কাদা-কাঁদা ইত্যাদি। এই আনুনাসিকতা নাসিক্য ধ্বনির পূর্ববর্তী বা পরবর্তী স্বরধ্বনিতেও লক্ষ্য করা যায়, যেমন, কান, নাক, এদের প্রকৃত উচ্চারণ কাঁন, নাঁক; কিন্তু আনুনাসিকতা এখানে নাসিক্য ধ্বনির একটি অপরিহার্য অনুসঙ্গিক বলে একে চন্দ্রবিন্দু দিয়ে স্বতন্ত্রভাবে দেখাবার প্রয়োজন করে না, অথচ পূর্ববর্তী দৃষ্টান্তগুলিতে সে প্রয়োজন রয়েছে, নইলে অর্থের গোলমাল হয়ে যাবার সম্ভাবনা। তাই চন্দ্রবিন্দু থাকবে; কিন্তু একে স্বতন্ত্র বর্ণ মনে করার কারণ নেই। এটি স্বরধ্বনির একটি বিশেষক (modifier) যা ভাষাবিজ্ঞানী Prof. I.R Firth এর ভাষায় Prosody; পূর্বের ন্যায় এটিকে সিলেবলের আরম্ভেই হরফের উপরে লেখা হবে, যেমন, চাঁদ।
অকালপ্রয়াত স্বনামধন্য লেখক মুহম্মদ জুবায়ের সাম্প্রতিককালে চন্দবিন্দু ব্যবহারের চরম অনীহা দেখে চমৎকার একটি লেখা লিখেছিলেন ‘চন্দ্রবিন্দুরা সব গেলো কোথায়?’ নামে। সেখান থেকেই কিছুটা উদ্ধৃতি দেই।
অভাবের দেশ আমাদের। এটা নেই, ওটা নেই শুনতে শুনতে আমরা বড়ো হয়ে উঠেছি, অভ্যস্ত হতে শিখেছি। একদা সবচেয়ে বড়ো অভাব ছিলো খাদ্যের, তা এখন আর আগের মতো অতো তীব্র নয় বলে শুনতে পাই। তবু আকাল এখনো আছে, কিছু পুরনো, কিছু নতুন। মানুষের নিরাপত্তার আকাল আমাদের দেশে চিরকাল ছিলো এবং সে বিষয়ে কোনো উন্নতির আশা আজকাল কেউ করে বলে মনে হয় না। সামপ্রতিক আকাল বিদ্যুতের, পানির, জ্বালানি তেলের, সারের। খবরের কাগজ খুললে এইসব আকালের খবর প্রতিদিন পাওয়া যায়। এর সঙ্গে প্রায় নিঃশব্দে আরেকটি জিনিস ক্রমে উধাও হয়ে যাচ্ছে আমাদের বাংলা বর্ণমালার চন্দ্রবিন্দু। দেশের দৈনিক ও সাপ্তাহিক কাগজগুলির ইন্টারনেট সংস্করণে এবং মুদ্রিত পত্রিকা যা কালেভদ্রে হাতে আসে তাতে এই সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছে যে বাংলা ভাষায় চন্দ্রবিন্দুর আকাল দারুণ আকাল পড়ে গেছে। হয়তো অবিলম্বে তা দুর্ভিক্ষের চেহারা ধারণ করে বসবে।
শুধু এখানেই থেমে থাকেন নি তিনি। চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার না করার ফলে শব্দের অর্থ পালটে কী করুণ দশা হয় তারও একটি রসঘন বর্ণনাও দিয়েছেন তিনি এভাবেঃ
কিছুদিন আগে পর্যন্ত সাপ্তাহিক এবং অধুনা দৈনিক একটি কাগজ তো মনে হয় আরেক মার্গে চলে গেছে চন্দ্রবিন্দুকে পুরোপুরি পরিহার করে (‘অহো, কী দুঃসহ স্পর্ধা!‘)। এই বর্জনের পক্ষে যুক্তি কী, তা আমার জানা নেই। কিন্তু এর কতকগুলি সম্ভাব্য বিপদ আমি দেখতে পাই। যে কোনো দুঃখেই আমার পক্ষে আর ‘কাঁদা‘ সম্ভব হবে না, কেননা তা ‘কাদা‘ হয়ে যাবে। চন্দ্রবিন্দু ছাড়া ‘কাদতে‘ হবে ভাবতেই কান্না পেয়ে যাচ্ছে। ক্রন্দন অর্থে ‘কাঁদা‘ আর প্যাচপেচে ‘কাদা‘-র পার্থক্য তাহলে কীভাবে করা যাবে? ভাত ‘রাঁধা‘ হবে না আর, কারণ সেখানে ‘রাধা‘ এসে উপস্থিত হয়ে যাচ্ছে। ‘ছিরিছাঁদ‘ বলতে তা বাড়ির ‘ছাদ‘-এ উঠে যাচ্ছে। আমি আর কিছুতেই ‘বাঁধা‘ পড়তে পারবো না, কারণ তা হয়ে যাবে ‘বাধা‘। চন্দ্রবিন্দু বিহনে ‘চাঁদ‘ হয়ে থাকছে ‘চাদ‘। ‘বাঁদর‘ হবে ‘বাদর‘ (‘এ ভরা বাদরে তুমি কোথা…‘)। চন্দ্রবিন্দু বাদ দিয়ে ‘বাঁশ‘ কীভাবে লেখা যাবে, বা ‘বাঁশি‘? ‘বাশি‘-তে সুর উঠবে কি? ‘গাঁয়ে‘ আর ফেরা হবে না, হবে ‘গায়ে‘ ফেরা । ‘গোঁয়ারগোবিন্দ‘-র অবস্থা কী হবে ভাবা যায়? গোলাপের ‘কাঁটা‘ পড়বে ‘কাটা‘। আর ভূতের গল্পের কী হবে? চন্দ্রবিন্দু বাদ দিয়ে ভূতেরা কথা বলতে পারে না বলে জেনে এসেছি এতোদিন।
আগেই উল্লেখ করেছিলাম যে, কবি চয়ন খায়রুলের উচ্চারণ অনুযায়ী বানানের দাবিটা কোন বৈপ্লবিক কোন চিন্তাধারা নয় বা নতুন কোন দাবিও নয়। উচ্চারণ অনুযায়ী বানানের ধারণাটা একশ বছর বা তার চেয়েও বেশি পুরোনো। অনেক আগে থেকেই এই কর্ম অনেকেই করে আসছেন বা সেই অনুযায়ী বানান লেখারও চেষ্টা করেছেন। এখন থেকে একশ বছর আগে ললিতকুমার বন্দোপাধ্যায় ‘সাহিত্য’ পত্রিকায় ‘ব্যাকরণ-বিভীষিকা’ নামে একটি রচনা লেখেন। সেই রচনার পরিশিষ্টে তিনি ‘বাণান-সমস্যা’ নিয়ে আলোচনা করেন। উচ্চারণ অনুসারিতায় তাঁর সময়ে যে বিচিত্র সংস্কৃতদ্রোহী বানান লিখিত হচ্ছিল তার সমালোচনা করেছেন তিনি তাঁর এই প্রবন্ধে। তিনি লিখেছিলেনঃ
আজকাল এক সম্প্রদায় লেখক দেখা দিয়েছেন, তাঁহারা কথাবার্ত্তায় শব্দগুলি যে ভাবে উচ্চারিত হয়, অবিকল সেই মত বাণান গ্রন্থাদিতে চালাইতেছেন। শিশুপাঠ্য রূপকথার বহিতে এরূপ করিলে আপত্তিকর নহে, কেননা সেগুলিতে দিদিমার মুখের কথা ঠিকটি শুনিতেছে, শিশুদিগের মনে এইরূপ ভ্রান্তি জন্মিলে গল্পটা জমে ভাল। কিন্তু গভীর রচনায় পর্য্যন্ত এইরূপ বাণান দেখা যায়। ভগবানের গুণগান করিবার সময়ও কি ভক্তের মুখের ঠিক উচ্চারণটি ফনোগ্র্যাফের সাহায্যে আদায় করিয়া ছাপার কেতাবে চালাইতে হইবে? গ্যাছে, খাচ্চে, দেখছিলুম, কোর্চ্চে, যাচ্চি, হয়েছেল, গেলুম, ইত্যাদি ক্রিয়াপদ সদগ্রন্থে স্থান পাইতেছে। এখনি, কখনো, তাই তো, কোনো, কতো, মতো, কালো, প্রভৃতি বাণান করা একটা ফ্যাশান হইয়া দাঁড়াইতেছে। মতো কি কলিকাতার উচ্চারণানুগত? আমাদের অঞ্চলে উভয় আকারেরই বিকৃত উচ্চারণ হয়, সেরূপ লিখিতে গেলে ‘মোতো’ লিখিতে হয়। কিন্তু তাহাতে একটা কদর্য্য শারীরক্রিয়া সাধনের অনুমতি বলিয়া কেহ বুঝিলেই ত চমৎকার! কী, যে কি বস্তু তাহা সমজদার ভিন্ন কেহ বুঝিতে পারে না। কেহ কেহ যুক্তি দেন, বুঝিবার সুবিধার জন্য অর্থভেদে মত (মৎ উচ্চারণ) মতো, কাল (কাল্ উচ্চারণ) কালো, ইত্যাদি বাণান করা সুবিধা। কিন্তু পূর্ব্বে বলিয়াছি, এই প্রভেদজ্ঞানের জন্য বয়ঃস্থ পাঠকের সহজজ্ঞানের উপর নির্ভর করিলে চলে না কি?
আসলে পৃথিবীর কোন ভাষারই উচ্চারণ অনুযায়ী বানান নেই। ইংরেজিতেতো এই দোষ প্রবলভাবে দৃশ্যমান। লিখে একরকম করে আর উচ্চারণ করে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে। রবীন্দ্রনাথের ভাষ্যেইঃ
ইংরেজিতে বানানে-উচ্চারণে ভাসুর-ভাদ্রবৌ সম্পর্ক, পরস্পরের মাঝখানে প্রাচীন শব্দতত্ত্বের লম্বা ঘোমটা। ইংরেজিতে লিখি ট্রেআসূরে (treasure) পড়ি ট্রেজার; লিখি ক্নৌলেডগে (knowledge) পড়ি নলেজ্; লিখি রিঘ্টেওউস (righteous) পড়ি রাইটিয়স।
ইংরেজির সংগে তুলনা করলে বাংলা অক্ষরবিন্যাসপ্রণালী বরং অনেক নির্দোষ। উচ্চারণানুযায়ী বানান লেখার পক্ষে অনেক বেশি সহায়ক। তবে, এর মূল সমস্যা অন্যত্র। কথা হচ্ছে কোথাকার বা কোন অঞ্চলের বাংলাকে আমরা আদর্শ হিসাবে ধরবো। বাংলা মুল্লুকে একেক জায়গার উচ্চারণ একেকরকম। উচ্চারণানুযায়ী বানান লেখার সুবিধা দিলে বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন জায়গায় একই শব্দ লেখা হবে অসংখ্যভাবে। ফলে, দেখা যাবে যে কেউ-ই কারো লেখার অর্থ উদ্ধার করতে পারছে না। ‘ভাল’ শব্দকেই যশোরের লোক লিখবে ভালো, ময়মনসিংহের লোক লিখবে ভালু, আর সিলেটের লোক লিখবে বালা। ইরতিশাদ ভাই আর প্রদীপ দেব যদি চাটগাঁইয়া ভাষায় প্রবন্ধ লেখে তবে কী দশা হবে আমাদের? কিংবা সৈকত চৌধুরী যদি লিখে সিলেটি ভাষায়? (উইকি ঘাটতে গিয়ে মাত্র গতকালই জানতে পারলাম যে চাটগাঁইয়া আর সিলেটি ভাষা পরস্পর সহোদরা। বাংলার সাথে এদের কোন সম্পর্কই নেই, এমনকি বাংলার কোন উপভাষাও এরা নয়। সম্পূর্ণ আলাদা ভাষা এদুটো। আগে আমি এদেরকে বাংলার আঞ্চলিক ভাষাই মনে করতাম। তার মানে দাঁড়াচ্ছে গিয়ে ইরতিশাদ ভাই, প্রদীপ দেব, সৈকত চৌধুরী এরা আসলে টেকনিক্যালি বাঙালি নন। কী সর্বনাশের কথা!!)
উচ্চারণ অনুযায়ী নিজের মত করে বানান লিখলে কি কি অসুবিধা হতে পারে সে সম্পর্কে আশা করি কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছি। শেষ করছি সেই ললিতকুমার বন্দোপাধ্যায়কে দিয়েইঃ
উচ্চারণানুযায়ী বাণানের বিরুদ্ধে প্রধান আপত্তি, ইহাতে অনেকস্থলে শব্দের ব্যুৎপত্তিজ্ঞানের বিঘ্ন ঘটিবে। একেই ত আমাদের বিকৃত উচ্চারণে শব্দের প্রকৃত স্বরূপ চিনিয়া উঠা অনেকস্থলে কঠিন, তাহার উপর বাণানে এই রকম দৌরাত্ম হইলে দুর্গতির একশেষ হইবে। যে সকল সংস্কৃত শব্দ অবিকৃত অবস্থায় বাঙ্গালায় গৃহীত হইয়াছে, সে গুলির বাণানে পরিবর্ত্তন করিতে বড় একটা কেহ সাহসী হয়েন নাই। (দুই একজন মৌলিক লেখক ‘আকাঙ্খা’ করিতেছেন)। তবে অজ্ঞতা বা অনবধানতাবশতঃ ভুলভ্রান্তি হইয়া পড়ে। কিন্তু যত গোল অপভ্রংশগুলির বেলায়। কেহ উচ্চারণ মত লেখেন, কেহ প্রাকৃতের নজীর টানিয়া আনিয়া প্রশ্নটি আরও জটিল করিয়া তুলেন, কেহ যা খুসী তাই লেখেন। অনেক স্থলে শব্দটি কোন সংস্কৃত শব্দের অপভ্রংশ তাহা লেখকদিগের জানা থাকে না বা সে দিকে খেয়াল থাকে না। অনেক স্থলে তাহা ঠাহর করাও শক্ত।
@ ফরিদ আহমেদ,
দৈনিক কালের কণ্ঠে বাংলা শেখার আসরে ‘একই ভাষার কতরূপ’ নাম দিয়ে যতীন সরকার ধারাবাহিকভাবে লিখে চলেছেন।
একটির উদ্ধৃতি হুবহু তুলে ধরছি বাকিগুলো লিংক পড়ে দেখতে পারেন:
(বি.দ্র. এভাবে অন্য পত্রিকা থেকে বিনা অনুমতিতে কোট করা ঠিক কিনা, জানি না। এ ব্যাপারে সাহায্য চাই।)
@মাহফুজ,
যতটুকু জেনেছি, কপিরাইট আইন অনুযায়ী, সংবাদপত্রে কোনো লেখা বা ছবি প্রকাশ হওয়ামাত্র তা সাধারণের সম্পত্তিতে পরিনত হয়। তাই এটি আংশিক বা হুবহু পুনঃপ্রকাশে কর্তৃপক্ষীয় অনুমোতির প্রশ্ন নেই। তবে তথ্যসূত্র উল্লেখ করলে পুনঃপ্রকাশিত লেখার গুরুত্ব বাড়ে, এটি একটি সৌজন্যতাও বটে।
ধন্যবাদ।
* অনুমোতি = অনুমতি।
@বিপ্লব রহমান,
অনেক ধন্যবাদ আইন বিষয়ক এই তথ্য দেয়ার জন্য। আমি খুব দ্বিধাগ্রস্থ ছিলাম, এখন দ্বিধা দূর হয়ে মনে শান্তি পাচ্ছি।
আসলে পুরো লেখাটাই অনেকবার পড়া দরকার। প্রশংসার দাবী যে রাখে লেখাটা বলবার অপেক্ষা রাখেনা।
@আফরোজা আলম,
পড়া এবং মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
বাংলা বানান নিয়ে বেশি কিছু বলার যোগ্যতা আমার নাই। আমার একাডেমিক পড়াশোনাও বাংলা মাধ্যমে হয় না, ইংরাজিই একমাত্র অবলম্বন। নিয়মতান্ত্রিকভাবে আমার বাংলা বানান শেখা হয় নাই। তবে শুদ্ধ বানান লেখার চেষ্টা করি। বানান ভুল করলে কেউ ধরিয়ে দিলে ঠিক করে নেওয়ার চেষ্টা করি। আজকে ফরিদ ভাই এর লেখাটা পড়লাম ভালমত। রেফারেন্সসহ ভাল একাডেমিক লেখা। লিঙ্ক থেকে চয়ন খায়রুলের লেখাটা পড়তে গিয়ে আমার মাথায় হাত! ইচ্ছে করে এমন বানান ভুলের মহড়া আগে কোথাও দেখিনি। আরবি লেখা কিভাবে যেন সব যবর-যের-পেশ ছাড়া লেখা হয়, সেই রকম লাগল। ঈ কার, চন্দ্রবিন্দু আর কি কি সবের উপর কবির ভীষণ রাগ!(চন্দ্রবিন্দু আমার খুব প্রিয় গানের দল- কবির কর্মকান্ডে তীব্র প্রতিবাদ জানাই!)। বানানের মধ্যে কায়েমি স্বার্থের ভূত-প্রেত দেখেন কবি! সবচেয়ে খারাপ লাগল- ক্লাস টুর বাচ্চাকে যেভাবে ধমক দেওয়া হয় তেমনি ফরিদ আহমেদকে জ্ঞান দেওয়ার ও ধমক দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যুক্তিতে না পেরে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেছেন। অদ্ভুত সম্বোধন করেছেন। এমনকি ফরিদ আহমেদের এ্যাডমিন পরিচয় ধরে পুরো মুক্তমনার নাম পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন। তার ‘যেমন খুশি বানান লেখো’ বা ‘ফোনেটিক বানান’ নিয়ে আমার কিছু বলার নাই তবে পুরো মুক্তমনা সাইটকে গালি দেওয়া আমার ভাল লাগে নাই। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। চয়ন খায়রুলের ‘ধুতুরা এফ এম’ থেকে নিচের বাণীটি নেওয়া-
@পথিক,
আমিও ধুতুরাFMএর বানান পদ্ধতির প্রতি তীব্র ঘৃনা প্রকাশ করছি। ধুতুরা ফুলে বিষ আছে। এই বিষ খেলে মানুষ পাগল হয়।
তিনি রবীন্দ্রনাথকে লিখেন – রবিন্দ্রনাথ। এর পর হয়তো নজরুলকে লিখবেন – নরজুল। কোনদিন বাংলাদেশের বানান লিখবেন – বাংলাদ্বেষ। কিছুই বলা যায় না। উনাকে আবিষ্কার/বাহাদুরীর নেশায় ধরেছে।
ঊ নার সাক্ষাতকার নেবে মুক্তমনা? উনি কি ধুতুরা ফুল বেষি মাত্রায় খেয়েছেন?
@নৃপেন্দ্র সরকার,
বেষ বলেছেন্তো দাদা। বিষ টাকা দিয়ে খাষা বিষ কিনে এনেছে মেষো বাষাবো বাযার থেকে। একটু বেষি বেষি না খেলে মাষির বাষার লোকেরা জে আবার নাখোষ হবে। 😛
@ফরিদ আহমেদ,
ভোল ভাণাণ দেক্ষলে য়ামি পরতে পাড়ী ণা। য়ামার ভিশণ ড়াঘ হয়।
যুকী নীএ একটো ঊকী মাড়তে ঘিয়েছিলাম ধুতুড়া ষাইঠে।
য়্যাকদ্বন্দ্ব থাখতে পাড়ি ণাঈ। যিভণে য়ার ণয়। খোভ ষিখ্যা হএছে।
@পথিক,
চখাহা ওরফে ‘ধুতুরা এফ এম’ যেটা বুঝতে পারছেন না তা হল, তার অদ্ভুত ‘বানানরিতি’ যদি বানানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে মানুষের কিংবা সাইটের নাম ধাম বিকৃত করা পর্যন্ত চলে যায়, তবে কিন্তু তারই আখেরে বিপদ। তার ‘বানানরিতি’ মেনেই কেউ যে ভবিষ্যতে চখাহাকে চশমখোর খায়রুল হাবিব ডাকবেন না তারই বা নিশ্চয়তা কী? ব্লাস্ফেমী আইনের ধ্বজাধারীদের মতো জেলখানায় বসে তখন ব্লাস্ফেমী আইনের বিপক্ষেই মত দিতে হবে… এই দিন বোধ হয় বেশি দূরে নয়। 😀
বাংলাদেশের কোন জেলার ভাষা ” খেলাম”, “গেলাম” জানালে উপকৃত হব। খেলুম, গেলুম এগুলো পশ্চিমবঙ্গীয় ভাষা , এটা সঠিক নয়, কলকাতার কিছু মানুষ এই ভাষা এখনও ব্যবহার করে, তবে তার সংখ্যা খুবই কম।
ধুতুরাFM site speed limit বলতে কিছু নেই। এখানে জনগ্রাহ্য কোন বানানের নিয়ম নেই। ইংরেজী ভাষা নিয়ে বলতে গেলে বলা যায় – cow এবং kao, knowledge এবং nolez, circle এবং carkl সবই গ্রহণ যোগ্য। ভাগ্যিস মুক্তমনা বাংলাভাষার রীতিনীতি মেনে চলে। ভুল বানান দেখলে গা জ্বালা করে। অসহ্য!!!
বাংলা ভাষা নিয়ে আমার কোন চর্চা নেই। কোন দিন হবেও না। আমি অকর্মন্য মানুষ, খাই-দাই ঘুমাই। কিছুতেই আমার কিছু যায়-আসে না। আমার মধ্যে রক্ষণশীলতার একটা ভাব প্রচ্ছন্ন ভাবে বিরাজমান। পরিবর্তনের আভাষ দেখলে সংকোচিত হই।
এমন অনেক জিনিষ আছে যার পরিবর্তন করে কৃতিত্ব আছে, লাভ তেমন নেই। ভাষা নিয়েও মনে হয় তাই। কিছু কিছু শব্দের বানান পরিবর্তন করে কী লাভ! উচ্চারণের সাথে বানানের মিল নেই। কাজেই ঢেলে নতুন করে লিখ। শ্রাবনীর নাম পাল্টিয়ে রাখ – চ্রাবনি। চোখে জল নিয়ে না কেঁদে, কাদা ছোড়াছুড়ি আর কি।
ইংরেজী ভাষায় উচ্চারণের সাথে বানানের অমিল আরও বেশী। কিন্তু এরা তো Cow বানান kau লিখে ভাষার উতকর্ষ সাধনে ব্যস্ত নয়। ছোট বেলায় আমরা বানান করে লেখাপড়া শিখি। বড় হয়ে বানান করে পড়ি না। কেননা প্রতিটা শব্দ আমাদের মস্তিষ্কে এক একটি ছবি হিসেবে জমা (store/save) থাকে। পড়ার সময় প্রতিটি শব্দ মস্তিষ্কে জমা শব্দের সাথে দ্রুত মিলিয়ে নেই। ফলে আমরা দ্রুত পড়তে পারি। শিশুরা শিশুপাঠে এক বার Cow এর উচ্চারণ “কাও” জেনে নেয়। তারপর চলে মগজের সাথে যোগাযোগ। বানানের সাথে উচ্চারণের গোলযোগ খতম। কাজেই আমাদের বাংলা যে বানান চলতি আছে অহেতুক গোলযোগের আগে এইটাই Standard হিসেবে গ্রহণ করা ভাল। উচ্চারণের সাথে মিল ঘটানোর জন্য শ্রাবনীকে চটকিয়ে চ্রাবনি বানানোতে আছে অহেতুক ঝামেলা, মহাজ্ঞানী কৃতিত্ব নেই।
এরশাদ সাহেব রেড ক্রস পাল্টিয়ে রেড ক্রিসেন্ট করেছেন। তাতে পরিষেবা বৃদ্ধি পায়নি। তাঁর কথায় বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইসলাম কি এই দেশে উনার শাসনের আগে ছিল না? কেউ সস্তা কৃতিত্ব চায়, কেউ রাজনৈতিক ফায়দা লুটে। তিনি আবার Dacca বানান Dhaka বানালেন। এই বানান পরিবর্তনে কি ঢাকার বিদ্যুত, জল বা যানজট সমস্যার কি কোন সমাধান হয়েছে? বিশ্বব্যাপী কী ঝামেলা গেল তা সবারই মনে আছে। এখন অবশ্য Dhaka বানানই মগজএ বসে গেছে। আশা করি আর কেউ এসে বলবেন না – চলো Daccaতেই চলে যাই।
হয়তো এক শ বছর পরে কোন গবেষক Dacca এবং Dhaka নিয়ে ফ্যাসাদে পড়বেন। Dacca নগরী পাবেন তো Dhaka খুজে পাবেন না। Dhaka পাবেন তো Dacca পাবেন না। ভাববেন প্রমত্তা বুড়ী গংগার ভাংগনের কারণে একটি শহর নদী গহবরে তলিয়ে গেছে। তারও হাজার বছর পরে প্রত্নতত্ত্ববিদরা নদী খূড়ে শহরের ভগ্নাশেষ আবিষ্কা্রের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
ওরে বাব্বা। এই লেখায় মন্তব্য করতেই ভয় লাগছে। :-/
ফরিদ ভাই কে স্যালুট এই ধরণের গবেষণা লদ্ধ লেখার জন্যে। :guru:
@ আকাশ মালিক।
ঐ ধরনের কথা কিন্তু আমিও বলেছি, আমার কথা ছিল এরূপ:
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,
আমি কি ভুলিতে পারি।
মোদের গর্ব মোদের আশা, অ-মরি বাংলা ভাষা।
প্রবন্ধ এবং মন্তব্যগুলো পড়ে গান দুটির কথা ভীষণভাবেই মনে পড়ছে।
উইকিতে এই নিয়ে বিতর্ক আছে। Etnnologue নামের একটি খ্রিস্টান মিশনারি সংস্থার বানানো তালিকায় এই দুই এলাকার ভাষাকে আলাদা ভাষার কোড দেয়া হয়েছে। এইভাবে তারা পুরো দুনিয়াতে হাজার হাজার ভাষা বানিয়ে রেখেছে।
ভাষাবিদেরা সবাই এই এথনোলোগের তালিকাকে মানেন না। ফলে চট্টগ্রাম বা সিলেটের ভাষাকে আলাদা ভাষা ধরাটা সব ক্ষেত্রে হয় না।
তাহলে কোন ক্ষেত্রে ধরা হয়? মূলত আঞ্চলিকতার সুবিধা টানার জন্য করা হয়। লন্ডনবাসী সিলেটি বংশোদ্ভুত অনেকের মতে তারা সিলেটি, তারা বাঙালি নয়, আর বাঙালিদের ভাষাও তারা বলে না। সিলেটি ভাষাকে আলাদা ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে উইকিতে তাদের তৎপরতা রয়েছে।
যে যুক্তিতে এথনোলোগ সিলেটিকে আলাদা ভাষা ধরে, সেই একই ভাবে কিন্তু নোয়াখালীর ভাষা, কিংবা রংপুরের ভাষাকেও আলাদা ভাষা ধরে ফেলা যায়। কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর বা গভীর দক্ষিণের ভাষাকেও। কাজেই এথনোলোগের এই ভাষাতালিকার উপরে আমার খুব আস্থা নেই।
(প্রশ্ন জাগতে পারে, মিশনারিরা ভাষা নিয়ে কী করে। আসলে সব ভাষায় বাইবেলের সংস্করণ বানাবার প্রয়াস থেকেই এই তালিকার উদ্ভব।)
@Ragib Hasan,
আমি ওয়াকিতে সিলেটি ভাষাকে আলাদা ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠার দাবি দেখে অবাক হলাম। তাহলে পুরুল্লে, কামতাপুরী-এগুলো সব বাংলা থেকে আলাদা ভাষা বলে দাবী করবে।
সব থেকে হাঁসির দাবি প্রবাসী বাংলাদেশীদের ৯৫% সিলেটি!
টিভির প্রচলনের ফলে আমেরিকাতে ডায়ালেক্ট গত ৫০ বছরে মারা গেছে বা যাচ্ছে। বাংলাদেশে টিভি ব্যাপক ভাবে ঢুকেছে গত ২০ বছর। আরো ৩০ বছর বাদে এসব সিলেটি ভাষা আর থাকবে না।
@Ragib Hasan,
আপনাকে অনেকদিন পর মুক্তমনায় দেখে ভালো লাগল। আমার মত নবীন প্রোগ্রামারদের কাছে আপনি একজন অনুপ্রেরণা,একজন আদর্শ(মন থেকে বললাম কথাগুলো)
চয়ন হাবিব এবং ফরিদ আহমেদের লেখা দুটো পড়লাম। প্রতিক্রিয়া নিম্নরূপ।
চয়ন হাবিবের লেখার আলোচনা দুভাবে করা যায়। এক হচ্ছে আক্ষরিক ভাবে তাঁর কথাগুলো ধরে আলোচনা, আর দুই হল লেখার মূল ভাব নিয়ে চিন্তাভাবনা করা।
আক্ষরিক ভাবে ধরলে চয়ন হাবিবের লেখাটা প্রায় হাস্যকর, এটা স্বীকার করতেই হয়। ফরিদ আহমেদ বেশ সফল ভাবেই এ ব্যাপারটা তুলে ধরেছেন, কিছু যোগ করি। প্রথমত, তোতা পাখির মত যেভাবে বানান প্রসংগে বার বার “কায়েমী স্বার্থের” কথা টেনে এনেছেন, সেটা পড়ে সন্দেহ জন্মাতে পারে শ্রমজিবিদের সুশিক্ষা লাভের পক্ষে প্রধান অন্তরায় আমাদের মান ভাষার বানান রীতি। হা হা হা। সংগত ক্রোধের গোয়ার্তুমি পূর্ণ প্রকাশ। চন্দ্রবিন্দু কথা আর তুললাম না, কিন্তু “য্যামন” বানানটি রীতিমত বেখাপ্পা মনে হয়েছে (এটা ফরিদ আহমেদও উল্লেখ করেছেন)। “য-এ-য ফলা” মার্কা বানান শিশুদের শেখাতে গেলে দন্ত/দঁাত/দাত-কপাটি ছাড়া আর কিছু কায়েম করা যাবে বলে তো মনে হয় না।
কিন্তু মোটের উপর বানানকে সহজ বা উচ্চারণমূলক করবার যে দাবী, সেটার ব্যাপারে ফরিদ আহমেদের উদ্ধৃতিগুলো কতখানি আলোকপাত করতে পেরেছে, এ ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত নই। প্রথমত, চয়ন হাবিবের মৌলিকতার অভাবের ব্যাপারটা অপ্রাসংগিক মনে হয়েছে। লক্ষ্য অর্জিত না হলে পুরোনো দাবী আবার তুলতে হবে, এটাই স্বাভাবিক। আর “সংস্কৃতের রূপ ও প্রকৃতি আমাদের মানিতেই হইবে” কেন, ঠিক বোধগম্য হল না। উচ্চারণ মূলক বানান ব্যবহার করলে নানান ধরণের বিপত্তি হতে পারে, এতদ্বিষয়ক উদাহরণগুলোও কেমন দুর্বল মনে হল। ভাষা একটা সুবিশাল কাঠামো, পরিবর্তন আনলে ভাল মন্দ দুরকম প্রভাবই দেখা দেবে। কাজেই পরিবর্তনের পক্ষে বা বিপক্ষে যুক্তি পরিমানবোধক হওয়া উচিল, ২টি-১০টি উদাহরণ খুব একটা কাজের নয়। একেবারে মাপ-জোখ করা পরিসংখ্যান না হলেও গুটিকয় উদাহরণের চেয়ে জোরালো প্রমাণ দরকার।
নাহ ফরিদ ভাই হবে না, আপনার লেখা পড়ে আবারো বুঝলাম এই জন্মে আর বানান ফানান ঠিক করা সম্ভব না …… ‘লেখালিখি’ ছেড়ে শুধু ‘পড়াপড়ি’ করাই বেটার অপশান।
@বন্যা আহমেদ,
বানানের ভয়ে লেখালেখি ছাড়বা এইডা কি কও? তাইলেতো রবি বুড়ার লেখা ছাইড়া দেয়া উচিত ছিল বহু আগেই। এই বুড়ায় যে কত্তো কত্তো বানান ভুল করছে তার কোন ইয়ত্তা নাই। মাঝে মাঝে এক্সপেরিমেন্ট চালাইতে গিয়া নতুন নতুন শব্দেরও আমদানি করতো বুড়ায়। এইসব উলটাপালটা কামের লাইগা ভাষাবিদগো ঝাঁড়িটাড়ি খাইয়া তাঁর ছাইড়া দে মা কাইন্দা বাঁচি দশাও হইছে বেশ কয়বার।
বুড়ায় যেদিন টের পাইছে যে হে বিখ্যাত লোক হইয়া গ্যাছে সেইদিনই থেইকাই বানান ঠিক করার লাইগা উইঠা পইড়া লাগছে। মরার পরে তারে যাতে বানান ভুলের দায়ে কেউ দায়ী করবার না পারে। সুনীতি, প্রশান্তরে চুপিচুপি কয় যে বানানের নিয়মটা একটু ঠিক কইরা দাওতো হে বাপু তোমরা। মান সম্মান যে আর থাকে না। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়রে ডাইক্যা কয় যে এইভাবে উলটা পালটা বানান থাকলে চলবো ক্যামনে। আপনেরা সব শিক্ষিত্ লোকজন থাকতে এইসব অরাজকতা মাইন্যা নেওন যায় না। এর একটা বিহিত আপনাগো করন লাগবোই।
রবি বুড়োর সব লেখার বানান ভুল ঠিক করছে কিন্তু বিশ্বভারতীর নামে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় আর প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশেরা।
বানান নিয়ে এমন জ্ঞানগর্ভ অথচ উপভোগ্য আলোচনা আগে কখনো পড়ি নি। নাহ, ফরিদকে আর বানান-পুলিশ বলা যাবে না, এখন থেকে বানান-বিশারদ বলাটাই বোধহয় সঙ্গত হবে।
লেখাটা অনেক বিচিত্র ভাবনার জন্ম দিল মনে। বানান বানানোর ব্যাপার নয়, নতুন বানানের প্রচলন জোর করে করা যায় না। সময়ের সাথে অনেক বানান গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে, অনেক বানান পায় নি। ‘ধর্ম্ম’ এই কিছুদিন আগেও লেখা হতো, এখন সবাই ‘ধর্ম’ লেখেন। ঋতুর ঋ-কে কিছুতেই হটানো যায় নি। কিন্তু লি নামে ৯ এর মতো একটা অক্ষর ছিল, ব্যাঙাচির লেজের মতো খসে পড়েছে। আবার ‘দ্যাখো’ অনেকেই চালাতে চেষ্টা করেছেন, আমার মনে হয় ‘দেখো’ ই টিকে গেছে।
উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের সাথে মিলে উইকি ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, মুক্তমনার সিলেটি-চাটগাঁইয়ারা এক হও! (এখানে উত্তোলিত মুঠোবদ্ধ হাতের ইমো হবে।)
সিরিয়াসলি, লেখাটা মুক্তমনায় একটা ক্লাসিক সংযোজন, তাই ফরিদকে অনুরোধ জানাবো লেখায় ব্যবহৃত সব তথ্যসূত্র (রেফারেন্স), গ্রন্থের নাম, লেখার শিরোনাম, প্রকাশের সময় এবং প্রকাশকের নামের তালিকা লেখাটার সাথে জুড়ে দিতে।
@ইরতিশাদ ভাই, ফরিদ ভাই আঁরারে অবাঙালি বানাইবার চেষ্টা গরেরদে কিল্লায় (ফরিদ ভাই আমাদের অবাঙালি বানাবার চেষ্টা করছেন কেন)? আঁরা তাঁর কন্ পাক্কা ধানত্ মই দিয়িলাম দে?
@ফরিদ ভাই, চমৎকার বিশ্লেষণী লেখা। অভিনন্দন।
@প্রদীপ দেব,
খালি ফরিদ ভাইরে দোষ দিলে চলবে নাকি? শুনলেন না রাগীব বললো যে উইকিতে মিশনারিদের চক্রান্তে চাটগাঁইয়া ভাষাকে আলাদা ভাষা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করার জন্য যেখানে বিরাট আকারের রুই কাতলা আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীরাই রয়েছে, আমার মত চুঁনোপুটি সেখানে কী করবে? 🙂
আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ের ঘটনা। চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি। বহদ্দার হাট থেকে বাসে উঠলাম। আমার সামনে গ্রাম্য পোশাক পরা দুই লোক ঝগড়ার ভঙ্গিতে হাত পা ছুঁড়ে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে আনুনাসিক ভাষায় কথা বলে যাচ্ছে। ঢাকায় জন্ম এবং বড় হওয়া আঠারো বছরের বাঙাল আমি হাজারো চেষ্টা করেও বহদ্দার হাট থেকে রাঙ্গুনিয়া পর্যন্ত পুরো রাস্তায় তাঁদের কথাবার্তার এক বিন্দুও বুঝলাম না। 🙁
আচ্ছা, চাটগাঁইয়া ভাষা যদি বাংলা ভাষাই হবে, তবে আপনি কেন একে আবার বাংলায় অনুবাদ করে দেন? 😉 রাগীব নিজেও চাটগাঁইয়া কি না সেই সন্দেহইতো জাগছে এখন আমার মনে। 😀
আরেকটা কথা। মুহম্মদমদ জুবায়ের যেমন বলেছেন যে চন্দ্রবিন্দু বাদ গেলে ভুতেরা কীভাবে কথা বলবে? সেই একই কথা আমিও বলছি, চন্দ্রবিন্দু বাদ গেলে আপনারা চাটগাঁইয়ারাই বা কথা বলবেন কীভাবে? চন্দ্রবিন্দু বাদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে চাটগাঁইয়া এবং ভুতেদের একসাথে আন্দোলনে নামার সময় হয়ে উঠেছে বলেই মনে হচ্ছে। 😛
@ফরিদ আহমেদ,
চন্দ্রবিন্দু বাদ দিলে কথা বলা শুধু চাটগামি কেন, বাঙালিদের পক্ষেও কি ঝামেলা বেধে যাবে না?
আর, এক লাইনে ভূত এবং চট্টগ্রামবাসীদের টেনে এনে সূক্ষ্ম অপমান করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে তেব্র পেরতিবাদ আর দিক্কার জানাই গেলাম গৈ। :guli: :guli: :guli:
@প্রদীপ দেব,
হিথারে ভুতত ধইজ্জে ফানলার!
@ইরতিশাদ,
চন্দ্রবিন্দুরা সব গেলো কোথায়? :-/
@ফরিদ আহমেদ,
চন্দ্রবিন্দুগুলো ভূতেরা হাইজ্যাক করে নিয়েছে মনে হয়।
আচ্ছা, আরেকটা কথা – ললিতকুমার বন্দোপাধ্যায় ‘বানান’ বানান করেছেন ‘বাণান’, কারণটা কী?
@ইরতিশাদ,
ললিতকুমার কিছুটা প্রাচীনপন্থী এবং প্রাচীনতাপ্রেমী। তিনি অর্ধ-তৎসম শব্দগুলোর মূল উৎস খুঁজতে চান এবং তাদের সাথে কোনরকমের যোগসূত্র রাখতে বেশ আগ্রহী। এই মানসিকতা পণ্ডিতদের ভেতর বেশ ভালোই ছিলো। হুমায়ুন আজাদ তাঁদের ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন, “এঁদের হাতে প্রতিটি শব্দই হয়ে উঠেছিলো এক একটি ক্ষুদ্র ওডিবিএল“। টিকা: ODBL = Origin and Development of Bengali Language: সুনীতি কুমার চাটুজ্জে।
সংস্কৃত শব্দ ‘বর্ণনা’ থেকে ‘বানান’ এসেছে বলে তিনি এর বানান করেন ‘বাণান’। এব্যাপারে স্মরণ করা যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বানান সংস্কারবিরোধীদের একজন দেবপ্রসাদ ঘোষকে যিনি ‘পান’ বানান লিখতেন ‘পাণ (সংস্কৃত ‘পর্ণ’) ‘, ‘সোনা’ বানান ছিল তার হাতে ‘সোণা (‘স্বর্ণ’)’ ইত্যাদি। এছাড়াও, আরো অনেক গোড়ামিই ছিলো তাঁর। কিন্তু, তিনি মৃত্যুর আগেই (১৯৮৫ সালে) “তিনি তাঁর ক্রুসেডের নিষ্ফলতা লক্ষ্য করে গেছেন” (বানান সংস্কার: সমস্যা ও সম্ভাবনা=পবিত্র সরকার)।
ভাষা-মৌলবাদী হয়ে লাভ নেই বস। 😀
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
প্রাচীন বানানকে অন্ধের মত অনুসরণ করাটাটা যেমন এক ধরনের গোড়ামি, তেমনি বিপ্লবাত্মক সংস্কারের মাধ্যমে বানানকে হুট করে পরিবর্তনের ইচ্ছাটাও এক ধরনের মূর্খতা। বানানের ক্রমবিকাশকে সময়ের হাতে ছেড়ে দেওয়াটাই সবচেয়ে উত্তম পন্থা। হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, বানান যেমন বেশি গোড়ামি সহ্য করে না, তেমনি অসহ্য তার অতিবৈজ্ঞানিকতাঃ এ- দুয়ের মধ্যস্থলে অবস্থান করে মান ও গৃহীত বানান।
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
সংস্কৃত হয়ে প্রাকৃত পেরিয়ে বাংলায় বানান বানানের ক্রমবিকাশ খুব সম্ভবত এরকমভাবেঃ
বর্ণন>বণ্ণণ>বাণণ>বাণান>বানান
একটা :rose2: ভুল জায়গায় পড়ে গেছে উপরের মন্তব্যে।
দারূণ গবেষণা লব্ধ লেখা। মুক্তমনাতে এত সব গুণীজন রয়েছেন যে এদের লেখা পড়ে পড়েই আনন্দে :rose2: সময় কেটে যায়। এখানে নিজের কিছু লেখা তো নয়ই বরং মন্তব্য করার সাহসই হয়ে যায় দুঃসাহস।
ফরিদ, বরাবরই অসাধারণ লেখেন। প্রতিটি লেখা প্রচুর পড়াশুনা সমৃদ্ধ। এই সাইটের দুই কর্ণধারই শক্তিমান। এখানে সদস্যপদ লাভ করতে পেরে ধন্য বোধ করি। :rose2: :rose2: :rose2:
@নৃপেন দা,
পড়ালেখা আপনারও কারো চেয়ে কম না। লেখালেখিটা একটু কম করেন এটাই যা সমস্যা।
ভাষা পুলিসদের কাছে আমার একটা বিনীত আর্জি আছে। যে কোন একটা অভিধান অনুযায়ী সঠিক হলে আমাদেরকে যেন মুক্তিদেয়া হয়। অভিধানে অভিধানে ডিসুম-ডিসুম দেখার ইচ্ছা যাদের আছে; ঠিক আছে, কিন্তু যাদের নেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি সদয় বিবেচনায় আনা হোক।
বড় কষ্টে একটা অভিধান অনুসরন করা চলে কিন্তু কোন অভিধান বেশী ঠিক এটা বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের আলোচনা, এখানে আমার মত সাধারনদের ছাড় দেয়া উচিৎ।
@আতিক রাঢ়ী,
ছোটখাটো কিছু সীমাবদ্ধতা বাদ দিলে বানানের ক্ষেত্রে সমস্ত অভিধানের মধ্যে আমার কাছে বাংলা একাডেমীর বাংলা বানান-অভিধান সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য। দেশেইতো থাকেন, একটা কিনে নিতে পারেন। দাম মাত্র তিনশো টাকা।
যেহেতু ‘বাংলা বানান’ একটি গুরুক্তপূর্ণ বিষয় এবং কবি চয়ন, অত্যন্ত স্বজ্ঞানে ও স্বীয়-দৃঢ় যুক্তিতে বাংলা বানানের একটি ভিন্নতা অনুসরন ও প্রচার করেন এবং তার লিখিত বয়ান পেশ করেছেন, তা হলে এটা আশা করা যায় যে অচিরেই চয়ন, ফরিদ আহমেদ’র প্রতিক্রিয়ায় তার জবানী দেবেন।
(লেখাটা অতি উপাদেয় ও শিক্ষনীয় হবে বলেই মালুম হ্য়, দেখা যাক।
চয়ন, আপেক্ষাই রইলাম।।।।।।)
ফরিদ আহমেদ’কে ধন্যবাদ, এমন একটি প্রয়োজনীয় রচনার প্রাঞ্জল উপস্থাপনার জন্যে। যা বিষয়কে সহজবোধ্য করেছে যদিও বিষয়টি জটিল।।।
@প্রাকৃতজন,
চয়ন খায়রুল হাবিব ভাষাচিন্তাঃ পোকায় কাটা কয়েকটা দাত ফেলে দিলেই দুখিনি বর্নমালার দাত ব্যাথা সেরে যাবেঃ — এই লেখাটির মন্তব্যের ঘরে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
আপনাকে ধন্যবাদ। :yes:
চয়নের সাথে বেশ আগে একটা আলোচনামত হয়েছিল, আমাদের এমন আলোচনা আরো অনেক বিষয়েই হয়েছে বটে, তবে এই লেখা দুটিতে; হরে দরে যা থেকে চয়ন কোথা থেকে এসব চিন্তা করছে, তার একটা হদিশ ওখানে মিল্লেও, মিলতে পারে! তাই দু’টো সুত্র দেয়া হলো, উতসাহী পাঠকের জন্যে।।।।
এটিচ্যুড ব্র্যান্ডিং…মাঠে পাতা চাদরই আমাদের চাদোয়া
ফেব্রুয়ারির টেনশান ২/৩/৪/৫/৬ঃ ছন্দের ছিরি, বিচ্ছিরি
একটি সুত্র বাদ পড়েছিলো;
ফেব্রুয়ারির টেনশান ২/৩/৪/৫/৬ঃ ছন্দের ছিরি, বিচ্ছিরি
@ ফরিদ আহমেদ,
আপনার এই লেখায় বিপ্লব পালের মন্তব্যে, লগ ইন না করেই মন্তব্য করেছিলাম। সেটা কি ফিরে পাওয়া সম্ভব?
ফরিদ আহমেদ,
বাংলা বানানরীতি নিয়ে আপনার গুরুত্বপূর্ণ লেখাটি জন্য সবিশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ। এই লেখা থেকে নিঃসন্দেহে অনেক কিছু জানার আছে, এই সুযোগে পুরনো জ্ঞানটুকু ঝালাই করে নেওয়ারও হলো। :yes:
বহু গবেষণার ফল বাংলা প্রমিত বানান রীতিটিই আমার কাছে সবচেয়ে আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত ও গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি বাংলা একাডেমীর বানান রীতি পছন্দ করি। এটিকেই আমার সহজ, আধুনিক ও সাবলীল বলে মনে হয়।
এতো কিছুর পরেও কবি চয়ন খায়রুল হাবিবকে অস্বীকার করি কী ভাবে? লেখক তার নিজের মতো করে লিখবেন– এই স্বাধীনতাটুকু মেনে নিলে চয়ন তার নিজস্ব বানানরীতিসহ তার লেখায় ডানা মেলা ঈগলের মতো মুক্ত ও তুখোড় শিকারী। কবির এ দিকটি ভেবে দেখার বিনীত অনুরোধ করি।
জয় হোক! :rose:
সাবাস ফরিদ ভাই। :yes: আপনার পরের বইটার শিরোনাম আমি দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছি — “বাংলাভাষার শুদ্ধ বানানরীতি : একটি আন্তর্জালিক গবেষণা” 😀
আচ্ছা আমার একটা প্রশ্ন ছিলো। আপনি আগে লিখেছিলেন ‘কাহিনী’ বানানটি বহুল প্রচলিত হলেও বাংলা একাডেমী বানান রীতি অনুযায়ী শুদ্ধরূপ হচ্ছে কাহিনি (যদিও অনেক অভিধানেই ‘কাহিনী’ বানান এখনো দেখা যায়)। প্রাণী বানানটির শুদ্ধরূপটি কি হবে? প্রাণী বানানে ঈ দিয়ে লেখা হলেও (সব অভিধানেই দেখেছি) প্রাণিজগত, প্রানিকূল … এগুলোতে ই দিয়ে লেখা হয়। আপনি কাহিনিকারের উদাহরণ দিয়েছিলেন মনে আছে। প্রাণিজগতের মত কাহিনিকার ই দিয়ে লেখা হলেও মূল শব্দটি অনেক সময়ই ঈ দেখি। এই ব্যাপারে বানারীতি থেকে একটু সবক দেন।
@অভিজিৎ,
ভালো জায়গাতেই আঘাত করেছেন।
সংস্কৃত ‘প্রাণী’ শব্দটি মূলে ‘-ইন’ ভাগান্ত শব্দ ‘প্রাণিন’। এই ‘-ইন’ প্রত্যয়ান্ত শব্দের গ্যাঞ্জাম বাংলায় বেশ ভালোই আছে এখনো। সংস্কৃত ব্যাকরণের রীতি মানতে গেলে (রীতিটা এখানে আর আলোচনা না-ই করি) প্রাণিবিদ্যা হয়, আর বাংলায় যদি মূল শব্দটা ‘-ইন’ ভাগান্ত না ধরি, অর্থাৎ ধরি যে মূল শব্দটা হচ্ছে ‘প্রাণী’, তাহলে দীর্ঘ ঈ-কার দিয়েই কাজ চালানো যাবে।
এই সমস্যাটা নিয়ে অন্য আরো অনেক কিছুর মতোই বাংলা একাডেমীর কোন বক্তব্য নেই। রবীন্দ্রনাথের ছিলো। তিনি বলেছিলেন, “সংস্কৃত ইন্ প্রত্যয় বাংলায় ই প্রত্যয় হইয়াছে।”
পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি গৃহীত বাংলা বানান বিধি এর একটা জোড়াতালি-মার্কা সমাধান বের করেছে। সেটা এখানে দিলাম:
দেখতেই পাচ্ছেন, পরিপূর্ণ সমাধান এটা নয়।
আমিও আপাতত হতাশ।
লিখুন যা খুশি। :cigarette:
অনেকদিন বাদে মুক্তমনাতে কোন প্রবন্ধ প্রথম থেকে শেষ লাইন পর্যন্ত পড়লাম। ফরিদের উচতি একটা ধারাবাহিক বার করা-বাংলা বানানের ওপর। চর্চা মানুষকে নির্ভুল করে-বাংলা ব্যাকারণ আমরা একদমই দেখি না বলে এই হাল। আমি হরিচরনের অভিধান আনিয়েছিলাম বাংলা শব্দ আর ব্যাকারণ শেখার জন্যে-সময়ে কুলায় নি।
বানান নির্ভুল থাকার দরকার কি না, তা বিতর্কিত। ইংরাজিতেও এখন আর্বান ডিকশনারী বলে একটা ব্যাপার আছে-যেখানে উচ্চারন অনুযায়ী লোকে বানান লেখে। লিখিত ভাষা আজ থেকে ১০০০ বছর বাদে থাকবে কি না-কে জানে?
বিবর্তনের নিয়ম মানলে থাকার কথা না।
@বিপ্লব পাল,
ডেড ল্যাঙ্গুয়েজ বলে একটা কথা আছে। দুনিয়া থেকে অনেক ভাষারই বিলুপ্তি ঘটেছে। তাছাড়া ভাষারও অনেক পরিবর্তন হয়। ড. আহমদ শরিফ পুথি নিয়ে কাজ করেছেন। সেই পুথিগুলি তো বাঙলাতেই। কেউ কি সহজে বুঝতে পারবে। আর এই পরিবর্তন ঘটেছে মাত্র ১০০ বছরের মধ্যে। সুতরাং বিবর্তন নিয়ম আমরা কেউ মানি বা না মানি বিবর্তন তার নিজের নিয়মেই চলবে। কথ্য লেখ্য সব ধরনের ভাষারই বিলুপ্তি ঘটবে।
@বিপ্লব পাল,
উঁহু, আমি নই। এটার জন্য সেরা লোক হচ্ছেন ব্লাডি সিভিলিয়ান।
@ফরিদ আহমেদ,
সত্যি কথা বলি। নিতান্তই বিব্রত ও লজ্জিত বোধ করছি, আসলেই। মিন্নত করি এহেন অতিবাদী শংসাসূচক বাক্যবন্ধ আমার ক্ষেত্রে আর প্রয়োগ না করার জন্যে, আই মিন ইট। আমি জানি আমি কী।
কিছু মনে করবেন না আশা করি।
@ফরিদ ভাই,
চমৎকার একটা লেখা। কিন্তু আমি মাঝে মাঝেই ধন্ধে পড়ে যাই। বিভিন্ন বিখ্যাত কবিরা কিন্তু উচ্চারন অনুযায়ী বানান লেখেন বা লিখেছেন। এই ব্যপারে আপনার মতামত চাচ্ছি।
@সাইফুল ইসলাম,
বিখ্যাত হলে সাত খুন মাফ। তারা যা লিখবেন সেটাই সঠিক। 🙂
বাংলা একাডেমী বা কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বানান নিয়মে কবিতা সম্পর্কে বিশেষ করে আলাদা কোন নিয়ম নেই। ফলে, ধরেই নেওয়া যেতে পারে যে, অন্যান্য ক্ষেত্রে বানানের যে প্রতিষ্ঠিত নিয়মগুলো আছে এবং যে সংস্কারগুলো নেওয়া হচ্ছে তাকেই অনুসরণ করতে হবে কবিতাকেও।
তবে প্রশান্ত মহলানবিশের একটি লেখা থেকে কবিতার জন্য উচ্চারণানুযায়ী বানানের প্রস্তাব দেওয়া হয়। রবীন্দ্রনাথের গ্রন্থস্বত্ব যখন বিশ্বভারতীর হাতে আসে, তখন বাংলা বানান, বিশেষ করে চলতি ভাষার বানান সম্বন্ধে একটি সাধারণ রীতি অবলম্বন করার কথা হয়। রবীন্দ্ররচনাবলীর বানানে সাম্য প্রতিষ্ঠাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এর সহযোগিতায় প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ চলতি ভাষার একটি বানান বিধি তৈরি করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বাংলা বানান-সংস্কার সমিতি’র প্রণীত ‘বাংলা বানানের নিয়ম’ ছিল মূলত প্রশান্ত মহলানবিশের প্রণিত বিধিরই পরিণতিরূপে।
এই বিধিতে কবিতার ভাষা কি রকম হবে তার একটি প্রস্তাবনা আছে। সেই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছেঃ
(প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশঃ চ’লতি ভাষার বানান। প্রবাসী (১৩৩২)
আর আমার হিংসা হয়!
সত্যি কথা বলি, তার (তাঁর) নিরবতা দেখেই সন্দেহ হয়েছিল, এ ব্যাপারে শীঘ্রই একটা লেখা আসছে। আগেও বলেছি আজও বলি, এখানেই ‘মুক্তমনা’ অন্যান্য বাংলা ব্লগ থেকে আলাদা। মুক্তমনা তার লেখক পাঠককে ভাষার প্রতি সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করে, জাগতিক অন্যান্য বিষয়াদির সাথে এখানে বাংলা ভাষা নিয়েও শিক্ষণীয় আলোচনা হয়। আর এ থেকে লেখক পাঠক সকলেই উপকৃত হন। একদিন লিখেছিলাম ‘মুক্তমনা’ একটি শিক্ষণীয় প্রতিষ্ঠান, এ নিয়ে আমার নিন্দুকেরা অন্য একটি ব্লগে নিন্দা তিরষ্কার করেছেন। এই প্রবন্ধ থেকে অনেক অজানা বিষয় জানা হল, ফরিদ ভাইকে অশেষ ধন্যবাদ। :yes:
জ্বী না স্যার, আমরা বালা বলিনা ভালা বলি। বালা যে নারীর গায়ের অলংকার আমরা তা বুঝি।
রাখে আল্লাহ মারে কে? এখানেই বুঝা যায় মরার পরে আমি কোথায় যাব, হাসরের মাঠে আমার বিচারই হবেনা!
@আকাশ মালিক,
বিশ্বকাপে মরলে কি হবে, আসল জায়গায় তো পার পেয়ে যাচ্ছেন, সঙ্গে আমারে নিতে ভুল কইরেন না। আইয়ো কিন্তু অনার লগে যাইয়ুম।
@আকাশ মালিক,
হাশরের মাঠ থাকলে তো! আর, ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ ফুটবল জয়ের আশা যারা দেখে, তাদের জন্যে এমনিতেই আলাদা দোজখ।
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
নিশ্চয়ই যারা হাশরের ময়দানকে অস্বীকার করেছে তারা কেয়ামতকেও অস্বীকার করেছে; এদের জন্য কোনোই পুরষ্কার নাই। এরা জান্নাতের হুর পাবে না, সুরা পাবে না। ইহা বড়ই আফসোসের ব্যাপার।
@মাহফুজ,
শুনলাম কে যেন বলেছেন বেশ্যার পুংলিংগ নাকি গিলেমান। ঐ কোরানে যে হুর-গিলেমান বলা হয়েছে সেই গিলেমান! খাইছে, ছিঃ ছিঃ ছিঃ। পুরুষ বেশ্যা দিয়ে বেহেস্তিরা কী করবে? এই শব্দটা কোরানে থাকুক বাংলায় না আসলেই ভাল।
@ব্লাডি সিভিলিয়ান
এই কানা কী আর দোজখ বানাবে? ইংল্যান্ডের গোল ডিসএলাউড করার আগে মনে করতাম আল্লাহর এক চোখ কানা, এখন দেখি তার দু চোখই কানা।
লালনের ভাষায় বলি- এ তো দেখি কানার হাট-বাজার।
@আকাশ মালিক,
দাদারে, কথাটা তো আমিই কইছিলাম। ছি ছি কইরেন না। এই জগতে যেমন সমকামিতা রয়েছে, ঐ জগতেও থাকবো। এই জগতে যা হারাম ঐ জগতে তা হালাল। আমার তো মনে বাংলায় নিয়ে আসলেই ভালো তাতে বেহেস্তের আসল চেহারাটা মানুষে জানতে পারবে।
অবজেকশন ইয়োর অনার। আল্লাহর দুটা চোখ না। ৯০০০০০০০০০০ টু দা পাওয়ার….।
@আকাশ মালিক,
প্রাকৃতজন আমরা। জিভের আড়ষ্ঠতায় উচ্চারণের বিপুল বিভ্রাট ঘটিয়ে কুলীন ভাষা সংস্কৃতের জাত মেরে দিয়েছি শতশত বছর ধরে। আমাদের কর্ণকুহরেও যে সেরকম কোন আড়ষ্ঠতা নেই বা কোন সীমাবদ্ধতা নেই এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। আপনারা হয়তো ‘ভালা’-ই বলেন। কিন্তু আপনাদের কণ্ঠ নিঃসৃত হয়ে দীর্ঘ পথ পরিভ্রমণ করে আমাদের আড়ষ্ঠ কর্ণে সেটা প্রবেশের পরে ‘বালা’ই শ্রুত হয়। এ দোষ আপনাদের সিলটিদের নয়, নিতান্তই প্রাকৃতজনদের ব্যর্থতা বলেই বিবেচনায় নিচ্ছি।
@আকাশ মালিক,
আমার আবার ইতিহাসই আলাদা। আমরা একটা আলাদা রাজ্যের অধীন ছিলাম যা ১৮৩৫ সালের ১৬ ই মার্চ বৃটিশ রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত হয়। বাংলার ইতিহাসের নামে ছোটবেলা থেকে যা পড়ে আসছি তা যে আমাদের বেলায় প্রযোজ্য নয় তা কিভাবে বুঝাই? :-X (ঘটনাটা পরে একসময় বিস্তারিত বলব)
সিলেটি ভাষার আবার আলাদা হরফ “সিলেটি নাগরি” রয়েছে।
তবে যতই ভিন্নতা থাকুক হাশর আমাদের একসাথে হবে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন :lotpot: ।
পরিশেষে ফরিদ ভাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ এমন একটা মূল্যবান প্রবন্ধ আমাদের উপহার দেয়ার জন্য।
@সৈকত চৌধুরী,
সিলেটি ভাষা নিয়ে একটা লেখা নামিয়ে ফেলতে পারেন আপনি। ইরতিশাদ ভাই, প্রদীপ দেব বা ব্লাডি সিভিলিয়ান যদি চাটগাঁইয়া ভাষার উপরে একটা লেখা দেয় তাহলেতো আর কথাই নেই। সেই সাথে মোকছেদ আলীর ঝোলা থেকে উত্তরবঙ্গীয় কোন ভাষা নিয়ে একটা কিছু বের হয় তাহলেতো একেবারে সোনায় সোহাগা।
আমার খুব ভাল লাগল ভাই ফরিদের লেখাটি।
আমার মনে হয় বাংলা বানানের ব্যাপারে আমাদের একই বানান ব্যবহার করা উচিত। (এখানে কোন ত হবে?)
অঞ্ছল বা লেখকের ব্যক্তিগত ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর বানানের ব্যাপারে democratic হওয়া মানা যায় না। এমনিতেই বাংগালী জাতির মধ্যে নানা রকমের ‘রিলিজিওনের’ ভেদা ভেদের জন্যে এত বিপদ। তার পর এখনও যে বস্তুটি আমাদের মোটা মুটি বেঁধে রেখেছে তা হল এই ভাষা। সেই ভাষাতেও যদি আসে বানানের ভেদা ভেদ (চন্দ্র বিন্দু হবে কিনা জানি না) তা হলে সব শেষ। বলা যায় না একদিন হয়ত শুনব হিন্দু বাংগালী ও মুসলমান বাংগালী একই সব্দর বানান লিখছে আলাদা আলাদা। এমনটি ভাবতে কেমন লাগবে যে যার ইচ্ছে মত বাংলা বানান ব্যবহার করছে। রবীন্দ্রনাথ পাখী কে পাখি লিখেছিলেন বলে আমরাও পাখী বানানে ছাড় দেব না।
ভাষার বন্ধন হোক রিলিজিওনের বন্ধন হতে প্রগাড়।
@সেন্টু টীকাদার,
:yes: ধন্যবাদ আপনাকে সাথে থাকার জন্য।
বানানের উপর পুরো একটা রিসার্চ পেপার। মুক্তমনার উচিত ফরিদ ভাইকে পুরস্কৃত করা। :rose2:
@মাহফুজ,
চরমভাবে সহমত। 😀
@ফরিদ আহমেদ,
পুরষ্কার আরো আছে। এই ফুটফুটে বালক বেহেস্তে সুরাপাত্র হাতে নিয়ে আপনার সেবায় নিয়োজিত থাকবে। তার একটু প্রমাণ এই লেখার ২৭ নং এ পাবেন।
@ফরিদ আহমেদ,
আরেকটি বিষয়- এই লেখাটি কি স্রেফ ব্লগাড্ডা! নিশ্চয়ই না। তাই ক্যাটাগরী ঠিক করুন।
@মাহফুজ,
এই লেখাটা শুধু ব্লগাড্ডা নয়, সেটা আমি জানি। কিন্তু মুক্তমনায় আর যে সব ক্যাটাগরি আছে সেগুলোর কোনটাতেই এটাকে ফেলতে পারি নি আমি। আপনি যদি এর ক্যাটাগরিকরণে সাহায্য করেন তবে কৃতজ্ঞ থাকবো। কোন ক্যাটাগরিতে এটা পড়বে বলে আপনার মনে হয়?
@ফরিদ আহমেদ,
হায়! হায়! এখন তো আমি নিজেই নিজের জালে আটকে গেলাম দেখছি। যদি এই পরামর্শ না দিতাম তাহলেই বুঝি ভালো ছিল। বাচালের উপযুক্ত শাস্তি।
অনেক চিন্তা ভাবনা করে আপাতত বিতর্ক, যুক্তিবাদ, শিক্ষা, সাহিত্য সমালোচনা দেয়া যেতে পারে। (এবার কিন্তু কারণ, ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে বিপদে ফেলবেন না, মিনতি করি)
তবে সবচেয়ে ভালো হয় একটা ক্যাটারগরী সৃষ্টি করা। আর সেটা হচ্ছে- ভাষা বিজ্ঞান। যতদিন সৃষ্টি করা না হবে ততদিন উপরোক্ত ক্যাটাগরীর মধ্যে রাখা যেতে পারে।
@মাহফুজ,
এই লেখাটা চখাহার সাথে কোন বিতর্ক করার ইচ্ছে থেকে লিখি নি আমি। মূলত পাঠ প্রতিক্রিয়া ছিল বলতে পারেন। সে কারণে বিতর্ক ক্যাটাগরিতে এটাকে ফেলি নি আমি। সামান্য যেটুকু বিতর্ক শুরু হয়েছে সেটা আমার লেখা পোস্ট করার পরেই ঘটেছে।
যুক্তিবাদ, শিক্ষা বা সাহিত্য সমালোচনা ক্যাটাগরিতে এই লেখা পড়ে কি না সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে আমার মনে।
ভাষাতত্ত্ব বা ভাষাবিজ্ঞানই সঠিক ক্যাটাগরি হবে বলে আমারও ধারণা। দুঃখজনক হচ্ছে এই ধরনের কোন ক্যাটাগরি মুক্তমনায় নেই।
@ফরিদ আহমেদ,
পোষ্টের আগের হোক আর পরেই হোক, বিতর্ক তো হয়েছে। পোষ্টের পরে হয়েছে বলে যে রাখা যাবে না এমন তো নয়। তাছাড়া বানান নিয়ে সব সময় কিছু না কিছু বিতর্ক চলেই। সে কারণেই বিতর্ক ক্যাটাগরীতে রাখা যেতে পারে।
যুক্তিবাদ: অনেকে ব্যকরণের নানা সূত্র উপস্থাপন করে যুক্তি দেখিয়েছে, অতএব এটা কে যুক্তিবাদে ফেলানো যেতে পারে।
শিক্ষা: এটা অবশ্যই শিক্ষা। কারণ, আমরা এই বকরবকর থেকে কত বানান শিখলাম। ব্যাকরণ শিখলাম। এমন কি ধতুরা থেকে চখাহার বানানরীতিও শিখলাম।
সাহিত্য সমালোচনা: বানানরীতি শেখাটাও একটা সাহিত্য। এখানে সেগুলো নিয়ে কতজন সমালোচনা করেছে হিসেব করে দেখেন। অতএব এটা সাহিত্য সমালোচনাতে ফেলানো যায়।
ভাষা ছাড়া আমরা চলতে পারি না। যেহেতু ভাষা নিয়ে আমাদের চর্চা চলছে। ভবিষ্যতেও চলবে। সেজন্য এই ভাষাবিজ্ঞান ক্যাটাগরী থাকা আবশ্যিক মনে করি। নতুন ক্যাটাগরী সৃষ্টি করা উচিত। ভাষাবিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন আজাদ-এর বই পড়লেই বুঝা যায় ভাষা চর্চা করাটা একটা বিজ্ঞান।
আমার আরেকটি ধারণা জন্মেছে যে, এটাকে বিবর্তনের মধ্যেও রাখা যায়।
আপনি কি ২৭ নং মন্তব্যটি দেখেছেন? না দেখে থাকলে, অনুরোধ করছি দেখার জন্য।
@মাহফুজ,
দেখেছি।
ফরিদ,
অত্যন্ত উপকারী, সময়োপযোগী লেখা। তাত্ত্বিক দিক নিয়ে মন্তব্য করতে সময় নিবে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার বলছি, এত বৈচিত্র্যধর্মী পথে পদচারণা কীভাবে সম্ভব। আবারও প্রবাসে থেকে। রেফারেন্সই বা কীভাবে যোগাড় হয়! আমি অভিভূত তোমার জ্ঞানের ক্ষেত্র দেখে।
চলমান থাকুক তোমার জ্ঞান চর্চা।
@গীতা দাস,
পক্ষপাতপূর্ণ মন্তব্য, তবুও ভাল লাগে এই স্নেহমাখা পক্ষপাতটুকু। 🙂
@গীতা দাস,
রেফারেন্স কি ভাবে যোগাড় হয়? আপনি ই না একদিন তথ্য দিলেন যে ফরিদ আহমেদের স্ত্রী বাক্স ভরে শুধু বই আর বই এনেছেন এবার দেশ থেকে? রাজ্য চালায় রাজা, রাজারে চালান রানী।
তবে আদতেই তিনি জ্ঞানী নিঃসন্দেহে। লেখাও দুর্দান্ত। ওনার হাত থেকে ঘাটতি সহ কোন লেখা বেরুতে পারে এ যেনো আর বিঃশ্বাস ই হয় না।
প্রশ্ন ছিলো ফরিদ আহমেদের কাছে আচ্ছা ধরুন আমার মত যারা বাড়ী , বাঙ্গালী লিখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে তাদের পরিবর্তন টা কতখানি জরূরী?
আপনি চন্দ্র বিন্দু তে বিশেষ মনোযোগ দেন । আমি “স্ম ” থাকলে চন্দ্র বিন্দু না থাকলেও আনুনাসিক উচ্চারণে আনন্দ বোধ করি। স্মৃতি , স্মরন শব্দে আনুনাসিক উচ্চারনে আমার অতীত উদবেল হয় হয়ত খানিক টা বেশী ই।
এটিও কি পরিবর্তনের দাবী রাখে আধুনিক ধারা হিসেবে?
“শ” কে “হ” বলা বা “র” কে “ড়” বলায় বিড়ম্বনা বাড়তে পারে। চর্বিত চর্বন উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- কাউকে শতায়ু হও না বলে হতায়ু হও বললে কেমন দাঁড়ায়? অথবা নববধুর মাথায় হাত রেখে বলা হোল “হত পুত্রের মা হও” শত পুত্রের নয়।
“তারি লাগি কাদিঁ নিশিদিন না বলে বলা হোল “তাড়ি লাগি কাদিঁ নিশিদিন”।সঙ্গে সঙ্গে প্রেমিক হয়ে গেলেন মদ্যপ।
জনান্তিকে বলে রাখি আমি যে স্কুল কলেজে পড়েছি তাদের নিন্দে করবার সময় বলা হয় আমরা সবাই “র” কে ক্রমাগত “ড়” বলে থাকি।
মাইকেল মধুসুদন দত্ত ও কিন্তু বাংলা ভাষায় নতুন শব্দ জুড়েছিলেন সে বিষয়ে জানতে আগ্রহ হচ্ছে।
@কেয়া রোজারিও,
একমত এবং ফরিদ বিনয়ের সাথে যতই বলুক আমাদের মন্তব্য পক্ষপাতদোষে দুষ্ট, কিন্তু আমি তো জানি আমি নিজের সাথে প্রতারণা করে কোন মন্তব্য করিনি।
দেশ থেকে বই নিলেও কত আর নেয়া যায়! এবং বইয়ের তালিকা পছন্দও তো একটা বিষয়। দেশে থেকেই তো টাল সামলাতে পারি না। কাজেই ফরিদ যে ব্যাতিক্রম তাতে আর সন্দেহ কি।
আর আপনার শূন্যতা কিন্তু মুক্ত-মনায় অনুভব করছি। আশা করি শূন্যতা ভরিয়ে দেবেন।
@কেয়া রোজারিও,
আপনি যে আমার মত এক অধমের এই অতি নগন্য লেখাটি পড়েছেন এবং সহৃদয় কিছু মন্তব্য করছেন তাতেই অপার আনন্দিত আমি। ধন্যবাদ দিয়ে খাটো করতে চাই না আপনাকে। অনেকগুলো প্রশ্ন করেছেন আমাকে। সদুত্তর হয়তো দিতে পারবো না, আসলে সে যোগ্যতাই নেই। তারপরে চেষ্টা করবো যথাসাধ্য। ভুলভ্রান্তি কিছু হলে নিজগুণে মার্জনা করে দেবেন বলেই আশা রাখছি।
বউ কখনোই বইবাহক হয় না। বই আর বউ এই দুইয়ের মধ্যে সুসমন্বয় আদতেই সম্ভব নয়। বই থাকলে বউ থাকে না, আর বউ এলে বই যায় বনবাসে। আমারও এখন তাই বেলা যায় বইবিহীন বিরসে।
না, জরুরি কিছু নয়। শুদ্ধ বানান বলে আসলে কিছু নেই। যা কিছু যে সময়ে গৃহীত সেটাই সে সময়কার শুদ্ধ বানান। বিদ্যাপতি লিখেছে কহানী। কহানীই প্রচলিত ছিল তখন, কাজেই কহানীই সেই সময়কার জন্য শুদ্ধ বানান। তারপর দীর্ঘকাল ধরে সবাই কাহিনী বানানটাই জেনেছে। হুট করে বাংলা একাডেমী এসে জানাচ্ছে যে, তারা সব দেশি শব্দ হ্রস্ব-ই কার দিয়ে লিখতে চায়। এর পিছনে অবশ্য তাদের যুক্তিও আছে। সেই সূত্রে কাহিনী বানান এখন ভুল বলা হচ্ছে। কেউ যদি বাংলা একাডেমীকে উপেক্ষা করে আগের বানানই লিখে যেতে চায়, তাকে ভুল বলা হবে কোন ভিত্তিতে?
বাংলা বানান সংস্কারের জন্য, বানানরীতি প্রণয়নের জন্য বিশ্বভারতী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, East Bengal language committee, বাংলা একাডেমী, বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি সহ নানান সংস্থাই বিভিন্ন সময়ে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু এরা কেউ-ই বাংলা ভাষার অথরিটি নয়। কাজেই কোন নিয়মই এরা জোর করে মানুষের উপর খাটানোর অধিকার রাখে না। মানুষকেই সচেতন হয়ে এই নিয়মগুলোকে মেনে চলতে হবে। একই ভাষায় একই শব্দের একাধিক বানান চালু থাকবে সেটা নিশ্চয়ই কারো কাম্য নয়।
আমার কাছে উপরের যতগুলো সংস্থা বানান সংস্কার করেছে তাদের মধ্যে বাংলা একডেমীর প্রস্তাবনাকেই সবচেয়ে বেশি সহজ, আধুনিক এবং যৌক্তিক বলে মনে হয়েছে। মূলত বাংলা একাডেমী আগের করা সমস্ত বানান সংস্কারকে সমন্বয় করেছে দারুণ সুন্দরভাবে। ফলে আমি বাংলা একাডেমীর বানানরীতিকে অনুসরণের পক্ষপাতি। আপনি যদি সেটা করতে না চান সেটা আপনার স্বাধীনতা। বাড়িকে যদি আপনি বাড়ী লিখতে চান তাতে কেউ আপনার মাথায় বাড়ি দেবে না এটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। বাঙালি লিখতে গিয়ে বাঙ্গালী লিখলেও আপনার বাঙালিত্ব কমবে না কণা পরিমাণ।
আমি চন্দ্রবিন্দুতে মোটেও মনোযোগ দেই না। নরম পলিমাটির ক্ষেত থেকে উঠে আসা কাদা মাখানো নিতান্তই এক প্রাকৃতজন আমি। জিহ্বার আড়ষ্ঠতায় শুদ্ধ করে কথাই বলতে জানি না। চন্দ্রবিন্দুর যে আনুনাসিক উচ্চারণ হয় সেটা আমি করতে পারি না। অবশ্য আমি একাই যে এই দোষে দুষ্ট তা নয়। আমার মত অধিকাংশ বাঙালই চন্দ্রবিন্দুর উচ্চারণ করতে জানে না বা করে না। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ অর্ধেক জীবনে বলেছেন যে, পূর্ববঙ্গের লোকদের কেন যেন চন্দ্রবিন্দুর প্রতি বড়ই অভক্তি। পশ্চিমবঙ্গে আবার বেশি বেশি চন্দ্রবিন্দু। ওরা চাঁদ ও ফাঁদকে বলে চাদ ও ফাদ, এদিকে এরা হাসি ও হাসপাতালের বদলে হাঁসি ও হাঁসপাতাল।
আমিও ওই চাদ, ফাদ বলা লোকদেরই দলে।
আপনি নিজে বিশিষ্ট আবৃত্তিকার, উচ্চারণে সুদক্ষ ব্যক্তি। শব্দের শুরুতে স্ম থাকলে যে সেটার উচ্চারণ আনুনাসিক হয় তা আপনার অজানা থাকার কথা নয়। উচ্চারণের এই পাঠ আবৃত্তি কর্মশালার প্রাথমিক পর্যায়েই দিয়ে দেওয়া হয়। বাংলা বর্ণমালার কোন বর্গের উচ্চারণ কোথা থেকে হয় এবং কীভাবে হয় সেটাতো শুরুর দিকেই শেখানো হয়, তাই না? কোনটা মুর্ধা দিয়ে উচ্চারিত হয়, কোনটা জিহবা বা দন্ত দিয়ে, কোনটা নাসিক্য বর্ণ, কোনটা ওষ্ঠ্যবর্ণ, কোনগুলো তালব্য ধ্বনি, কোনটা শিশ-ধ্বনি, কোনটা কম্পনজাত ধ্বনি, কোনটা পার্শ্বিক ধ্বনি, কোনটা তাড়ন-জাত ধ্বনি সেতো আপনার খুব ভাল করেই জানা আছে। প বর্গের বর্ণগুলোর (প, ফ, ব, ভ, ম) মধ্যে ম হচ্ছে নাসিক্য ধ্বনি। সে কারণেই হয়তো স্ম দিয়ে শুরু সব শব্দেরই সঠিক উচ্চারণ আনুনাসিক। স্ম দিয়ে শুরু কয়েকটা শব্দের উচ্চারণ নীচে দিয়ে দেখাচ্ছি আমি।
স্মরণ – শঁরোন্
স্মরণীয় – শঁরোনিয়ো
স্মৃতিচারণা – সৃঁতিচারোনা
স্মৃতিভ্রংশ – সৃঁতিভ্রোংশো
(সূত্রঃ বাংলা একাডেমী বাংলা বানান-অভিধান)
কাজেই স্ম দিয়ে শুরু হওয়া শব্দে চন্দ্রবিন্দু না থাকলেও যে আপনি আনুনাসিক উচ্চারণ করে আনন্দ পান তা কিন্তু নয়। এগুলোর উচ্চারণে সত্যি সত্যিই চন্দ্রবিন্দু আছে।
আমার ধারণা এ বিষয়ে খুব ভাল বলতে পারবেন ব্লাডি সিভিলিয়ান। আমার যে পড়াশোনার দৌঁড় তাতে কিছু বলতে যাওয়াটা দুঃসাহস। তবুও সামান্য কয়েকটা কথা যোগ করে যাচ্ছি এখানে।
মধুসুদনের আগে বাংলা কবিতা পড়ে ছিল মধ্যযুগে। তখন রাজত্ব চালাচ্ছিল সব পদ্যকারেরা। তিনিই একক প্রচেষ্টায় বিশাল এক ধাক্কায় বাংলা কবিতাকে মধ্যযুগীয় পদ্যের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে এনে ফেলে দেন আধুনিকতার আঙ্গিনায়। এরকম দ্রোহী পুরুষ, এরকম অবিশ্বাস্য প্রতিভাবান কবি বাংলা সাহিত্যে আর জন্মায়নি। হয়তো আর জন্মাবেও না কোনদিন। প্রতিভায় রবীন্দ্রনাথও তাঁর সমকক্ষ ছিলেন না। এই বিপুল পরাক্রম দেখানোর জন্য অবশ্য বাইরে থেকে তাকে ঋণ করতে হয়েছে প্রচুর। সারা বিশ্বের রত্নভাণ্ডার খুলে খুলে দেখেছেন তিনি, লুট করেছেন লাজলজ্জাহীন লুটেরার মত। যা কিছুকেই মনে হয়েছে মূল্যবান সেটাকেই তিনি নিয়ে এসে জমা করেছেন বাংলার ভাঁড়ার ঘরে। সমৃদ্ধ করেছেন বাংলাকে অবিশ্বাস্য পরিমাণে, আবদ্ধ করেছেন অপরিমেয় ঋণে।
বাকি বিশ্বই শুধু নয়, বাংলার নিজস্ব ভাণ্ডারের দীর্ঘ দিনের অব্যবহৃত রত্নভাণ্ডারকেও আবিষ্কার করেছেন তিনি। চুপিসারে এগুলো পড়ে ছিল অনাদর এবং অবহেলায় ঘরের কোণে। গায়ে মেখে ছিল অযত্নের কাদামাটি। কারো চোখেই সেগুলো পড়েনি কখনো আগে। পরম যত্নে তিনি সেগুলোকে তুলে নিয়েছেন, পরিস্রুত করেছেন আপন প্রতিভার দাবানলে পুড়িয়ে পুড়িয়ে।
মেঘনাদবধকাব্য যখন তিনি লেখেন তখন বাংলা ছিল একটি অবিকশিত ও অশক্তিশালী ভাষা। এটি ছিল একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর আঞ্চলিক ভাষা, যোগাযোগের অপরিস্রুত মাধ্যম। সমাজের চাষাভূষা মানুষের অবহেলিত ভাষা তখন সেটি। সমাজের উঁচুমহলে এর কোন ঠাই ছিল না। মানরূপতো দূরের কথা এর নামকরনই তখনো করা হয়নি ঠিকমত।
এরকম একটি অবিকশিত এবং হতদরিদ্র ভাষায় মেঘনাদবধকাব্য লেখা দুঃসাধ্যেরই নামান্তর। এর বাস্তবায়ন এক অসম্ভব কল্পনার নাম। কিন্তু সেই অসাধ্য সাধন তিনি করেছিলেন, পরিণত করেছিলেন সেই অসম্ভব কল্পনাকে হাতের মুঠোর বাস্তবতায়।
এর জন্য তাঁকে সৃষ্টি করতে হয়েছিল নিজস্ব ভাষা ও ছন্দ। মন্থন করতে হয়েছিল সমুদ্র। সাগরতলে লুকায়িত বাংলার রত্নভাণ্ডার থেকে রত্ন আহরণের জন্য দক্ষ ডুবুরির মত ডুব দিয়েছেন তিনি। ছেঁকে ছেঁকে তুলে এনেছেন সব মণি-মাণিক্য। ভয়ডরহীন ডাকুর মত হানা দিয়েছেন সমৃদ্ধশালী প্রতিবেশী সংস্কৃতের রত্নভাণ্ডারে। তারপর সেই লুণ্ঠিত রত্নরাজিকে মিশিয়েছেন চলিতের সাথে সুদক্ষ কারিগরের সুনিপুণ কৌশলে। তারপরও যখন প্রয়োজন মেটেনি, নিজেই তৈরি করে নিয়েছেন নতুন নতুন সব প্রয়োজনীয় শব্দ। এর জন্য তৈরি করেছেন নবশব্দরূপতত্ব।
বর্তমান সময়ে এসে চিন্তা করলে মধুসুদনের কাব্যে ব্যবহৃত শব্দসমূহ অনেক দূরুহ, জটিল এবং অবোধ্য। অভিধানের পাতায় পাতায় শুয়ে থাকা বিপুল ওজনাকৃতির অব্যবহৃত শব্দ ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু এগুলোর সুদক্ষ এবং সুনিপুণ ব্যবহার করেই একদিন তিনি বাংলার মত অবহেলিত অনুজ্জ্বল ভাষাকে দীপ্তিময় করেছিলেন, গ্রাম্য পোশাক পালটিয়ে এর গায়ে জড়িয়ে দিয়েছিলেন আধুনিকতার বসন।
একজন মধুসুদন শুধু মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্য এবং আধুনিক বাংলা সাহি্ত্যের সেতুবন্ধনই করেন নি, তিনি নিজেও ছিলেন আপাদমস্তক আধুনিক। বরং বলা চলে এখনকার অনেক আধুনিক কবির চেয়েও তিনি ছিলেন অনেক বেশি আধুনিক, অনেক বেশি প্রতিভাবান, অনেক বেশি ঝড়ো হাওয়া, সুবিশাল এক মহীরুহ।
হুম। মুক্তমনায় চুপচাপ ঢুকে পড়ে চলে যাই। কারণ, সময় আপাতত বৃহন্নলা করে রেখেছে। কিন্তু, বিপ্লব রহমানের লিঙ্ক দেখে যা কিছু কাষ্ঠহাস্যময় বিদ্রূপ জেগেছিলো, আপনি সেগুলো এ্যাকাডেমিশিয়ানের ধারালো তথ্য এবং নির্মোহ যুক্তির ফলায় উড়িয়েই দিলেন।
মনে হয় না, চয়ন হাবিব বা অন্য কেউ আপনার এই লেখার যোগ্য প্রত্যুত্তর দিয়ে আপনার পরিশ্রমের যথাযোগ্য সম্মান জানাবেন।
আমার শ্রদ্ধাটা নিন। তবে, লেখাটা আরো উপকরণঋদ্ধ হতে পারতো বলে মনে হলো। এ-আমার একান্তই ব্যক্তিগত মতামত। একটা পুরনো লেখা দিয়ে যাই। শেষ অংশটা, মৃত্যুর আগে, আর শেষ করা আদৌ হবে কি-না জানি না।
প্রসঙ্গত, আমিও কিন্তু চট্টলাবাসী। সুতরাং, আপনার ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রে আমারও বোধহয় স্থান নদারৎ।
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
আপনার লেখা পড়ার পরে এখন আমারটা কোথায় লুকোবো সেটাই ভাবছি। এরকম করে লিখতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করতাম।
রাগীব এ যাত্রা বাঁচিয়ে দিয়েছেন আপনাকেসহ বাকি সব চট্টলা এবং শ্রীহট্টবাসীদের। নইলে… 🙂
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
চয়ন খায়রুল হাবিব ভাষাচিন্তাঃ পোকায় কাটা কয়েকটা দাত ফেলে দিলেই দুখিনি বর্নমালার দাত ব্যাথা সেরে যাবেঃ তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
অনেক ধন্যবাদ। :rose:
@বিপ্লব রহমান,
আবহাওয়া দপ্তর থেকে জানিয়েছে- মুক্তমনায় মেঘ জমা হয়েছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝোড়ো হাওয়া বইবে। সদস্যদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
দাদা, এ কি কাম করলেন? এর কথা ওর কাছে, ওর কথা এর কাছে লাগিয়ে তো ঝামেলা বাদাচ্ছেন। এইজন্যই তো সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলি।
নববর্ষে লাইজু নাহার আপনাকে মানবতাবাদী খেতাব দিয়েছিল। দেইখেন খেতাব যেন ঝ’ড়ে না পড়ে। ঝড় উঠলে ঠেকায়েন। গতবার আফরোজা আলমের সাথে ফরিদ ভাইয়ের কি ঝগড়াটাই না হলো… বাপরে বাপ! শেষে আফরোজার মেয়ে এলে এডমিন মন্তব্য স্টপ করে দেন। আপনাকেও কিন্তু সেই দায়িত্ব নিতে হবে। 😥
@মাহফুজ,
কস্কী মমিন? 😛
@বিপ্লব রহমান,
চয়ন সাহেবের ‘ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া’ পড়ে আমি সত্যই হতাশ। তার প্রতিক্রিয়ায় সারবত্তা বলে কিছু আমি খুঁজে পেলাম না। আমি ভেবেছিলাম যিনি ভাষা নিয়ে এমন বিদ্রোহসুলভ লেখা লিখছেন, তিনি বলিষ্ঠভাবে রেফারেন্স দিয়ে যুক্তি খন্ডনে মনোনিবেশ করবেন। তার ছিটেফোটাও আমি সেখানে দেখলাম না। ফরিদ তার লেখায় একাডেমিকভাবেই চয়নের যুক্তির অন্তঃসারশূন্যতা তুলে ধরেছেন, এবং যাদের উদ্ধৃতি ব্যবিহার করেছেন তারা চয়ন সাহেবের মত ‘চ্যালেঞ্জ জানানো’ বিশাল কোন কবি হয়ত নন, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ, হুমায়ুন আজাদ, ফেরদাউস খান , মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, ললিতকুমার বন্দোপাধ্যায়ের মত পন্ডিতদের বিশ্লেষণকে যখন চয়ন সাহেব এক ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিতে সচেষ্ট হন, আর তার পেছনে সেই চিরন্তন ‘শ্রেনি পরম্পরাগত স্বার্থরক্ষা’র ষড়যন্ত্র খোঁজেন, তখন বুঝতে পারি ভদ্রলোকের লেখায় মেধার মান কতটুকু।
তিনি ফরিদ সাহেবের যুক্তি খন্ডন না করে নরক গুলজার শুরু করেছেন ফরিদ আহমেদ কতগুলো উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন তা নিয়ে। বড়ই হাস্যকর। এমনকি ফরিদ আহমদের নামটিও ইচ্ছে করে বিকৃত করে লিখেছেন –
বোঝা যায় তার উষ্মার পরিমাণ। ফরিদ আহমেদ কে শেখ ফরিদ নামে বিশেষিত করার মধ্যে নিজের আত্মম্ভরি মানসিকতার প্রকাশ ঘটলেও, আমার কাছে তা নিতান্তই বালকসুলভ ঈর্ষার প্রতিফলন।
তার বালকসুলভ উদ্ধৃতি আরো আছে। তিনি ধরেই নিয়েছেন, বিপ্লব রহমান চয়নকে তার ‘প্রিয় কবি’ বলায় নাকি ফরিদ আহমেদের উষ্মা। অথচ, আমি তো উষ্মা এবং ক্রোধের প্রকাশ দেখছি চয়ন সাহেবেরই লেখার ছত্রে ছত্রে। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে একাডেমিকভাবে আলোচনা করার ন্যুনতম রীতিটিও তিনি রপ্ত করতে পারেন নি। কেউ সমালোচনা করলেই তার নাম বিকৃত করা, পরম্পরাগত স্বার্থরক্ষা’র ষড়যন্ত্র খুঁজে পাওয়া, অপ্রাসঙ্গিকভাবে ‘প্রিয় কবি’ নিয়ে এসে গীবৎ গাওয়ার অনুমান সব কিছুই প্রমাণ করে চয়ন সাহেব বানান কিংবা ভাষারীতি নিয়ে আলোচনা করার মত সম্ভবতঃ যোগ্য কেউ নন। তিনি যত বেশি চীৎকার করেছেন তত বেশি তার কলসির ফাঁকা আওয়াজ গগনবিদারী শব্দে বেড়িয়ে আসছে।
চন্দ্রবিন্দু বাদ দিয়ে তিনি কি করে ‘কাঁদা’ আর প্যাচপেচে ‘কাদা‘-র পার্থক্য করবেন কিংবা ভাত ‘রাঁধা‘ আর কৃষ্ণের ‘রাধা’র পার্থক্য কিভাবে করবেন কিংবা ‘বাঁধা‘ আর ‘বাধা’ ‘ আর ‘কাঁটা‘ কিংবা ‘কাটা’ র মধ্যেই বা পার্থক্য কিভাবে হবে তা তিনি মন্তব্যে পরিস্কার করতে পারেননি। তিনি দন্ত, মুর্ধা, তালব্যের উচ্চারণে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন অথচ তিনি নিজের নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ট্র্যাডিশনাল রীতিতেই ‘ভাষা, ভাষণ, শাষন, পাষবিকতা, সুষমা’ লিখছেন। চন্দ্রবিন্দু নিয়ে তিনি কেবল এক লাইনে তার দায়বদ্ধতা সেরেছেন এই বলে –
ফরিদ সাহেবকে বোঝানো সত্যই উনার কাজ নয়, কিন্তু আমার মনে হয় পাঠকেরা যা বোঝার বুঝে নিয়েছে। 🙂
তিনি দেখলাম এও বলেছেন –
ভালই আবদার। আমার চয়ন সাহেবের লেখা আর মন্তব্যের মান দেখে মনে হয়েছে, উনাকে আসলে অতিরিক্ত বেশি পাত্তা দেয়া হয়ে গিয়েছে। এই জনান্তিক ব্লগে তার মত মেধাবী কবির সাক্ষাৎকার নেয়ার মত যোগ্যতা এবং স্পর্ধা বোধ হয় আমাদের কারোরই নেই, কি বলেন? 😛
@অভিজিৎ,
অতুলনীয় জবাব।
এমন পোলাইটলি জবাব আমাদের প্রত্যেকেরই চর্চ্চা করা উচিত।
@অভিজিৎ,
মহান কবিবর তাঁর মন্তব্যে লিখেছেন,
‘ঢাউশ’ বই কোনটা বাহে? ফরিদ ভাই কি ভাষাতত্ত্ব নিয়ে বই লিখেছেন নাকি????
পৈত্রিক পুণ্যবলে বা অন্য যেকোন কারণেই হোক, ‘নিকাশ’ হয়ে যাওয়ার হাত থেকে যে ফরিদ আহমেদ বেঁচেছেন, তার জন্যে চখাহা-কে তাঁর সকৃতজ্ঞ, বিনম্র শ্রদ্ধা ও সতমিজ সেলাম জ্ঞাপন করে উচিত বলে মনে করি। ফরিদ ভাইয়ের নতুন উপাধি (উদ্ধৃতিবাজ) পাওয়া গেলো, আগামী নববর্ষে কাজে লাগবে।
মনে হলো, পুরো লেখাটা এর ওপরেই দাঁড়ানো। এই নার্সিসিস্টিক ধূম্রজালসৃজক মহান কবিবরকে অতীব সম্মানের সাথে একটি ‘মৌলিক’ গবেষণার উদ্ভাবনকর্তা হিসেবে ঘোষণার জন্যে মুক্তমনা মডারেটরের প্রতি উদাত্ত এবং কঠিন আহ্বান জানাই। কৃত্রিম প্রাণ সৃষ্টির লিঙ্কটির নিচে চখাহা-র লিঙ্কটি ঝুলানোর তেব্র পেরতিবাদ..থুক্কু…দাবি জানায়ে গেইলাম।
অপ্রা: @ বিপ্লব রহমান: আপনি কি ভেবে এই কবির অভিনব তত্ত্বটির প্রশংসা করলেন এবং তাঁর লিঙ্ক আলোচনাযোগ্য মনে করে এখানে আনলেন, তার একটি বিনীত ব্যাখ্যা চাইছিলাম। যদি তাঁর লেখাটি আপনার যুক্তিগ্রাহ্য বা প্রামাণিক মনে হয়, তাহলে আপনিই বা তাঁর বানানরীতি অনুসরণ করছেন না কেন? :-/ :-/ :-/
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
উদ্ধৃতি এবং আপনার নিজের মন্তব্য সবই নীল রংয়ের হওয়ায় কোনটা কি বুঝতে একটু কষ্ট হল।
@রৌরব,
মডারেটরের পক্ষ থেকে ঠিক করে দেয়া হল।
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
দ্র. এই লেখার ১০ নং মন্তব্য। ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
এটাই আসল ব্যাপার। সিলেটি ভাষায় কিছু কথা বলার ইচ্ছে ছিল, মুরুব্বিদের উপস্থিতি দেখে তাদের প্রতি সম্মানার্থে আর বললাম না। চয়ন সাহেবের ব্যাঙ্গার্থক অর্থে উল্লেখিত পার্সীয়ান কবি শেখ ফরিদের ভাষায় বলি-
তকব্বুর আজাজিলরা খারে করদ /
ব-জিন্দানে লা’নত গিরিফতার করদ।
ডঃ আহমদ শরিফের ভাষায় বলি- বিদ্যা অর্জন করে বিদ্যান হওয়া যায়, কবিতা লিখে কবি হওয়া যায় কিন্তু মানুষ হওয়া যায়না।
আর আজ ছোট বেলার সেই কথা মনে পড়ে, মন চায় আরেকবার ভাব সম্প্রসারণ করি এই কথার- দূর্জন বিদ্যান হইলেও পরিতাজ্য।
@আকাশ মালিক,
নাদান-লোগ কে লিয়ে অনুবাদ?
শেখ ফরিদ ফারসী কবি? প্রেমেন মিত্তিরের গপ্পে পড়েছিলাম উনি আরব।
@অভিজিৎ,
কবি শুধু একারণেই আমার উস্মা এটা ধরে নেননি তাঁর ধারণা হয়েছে যে আমি আমার শুদ্ধ বানানে কিছু ব্যর্থ কবিতা লিখে লুকিয়ে রেখেছি। অথচ তিনি অনেক সফল কবিতার জনক। কাজেই, ঈর্ষাজনিত কারণেই আমার এই উস্মা।
চখাহা-র উদ্দেশ্যে আমি শুধু ছোট্ট একটা তথ্য দিয়ে যাই এখানে। রোম্যান্টিকতায় বাঙালির অবস্থান সেরাদের কাতারে। বাঙালির ছেলে তরুণ বয়সে অন্তত একটা হলেও কবিতা লিখেনি একটা এমন অ-রোম্যান্টিক ঘটনা দুর্লভ। অ-রোম্যান্টিক এই প্রজাতির বাঙালি তরুণ আমাদের সমাজে বিরল। সেই বিরলতম বাঙালিদের অন্যতম প্রতিভূ হচ্ছি আমি। আমার এই জীবনে একটা সম্পূর্ণ কবিতাতো দূরের কথা একটা লাইনও আমি লিখি নি কখনো। সেই প্রথম তারুণ্যের ভয়াবহ আবেগঘন সময়েও সফল অথবা ব্যর্থ কোন ধরনের কবিতাই আসে নি আমার হৃদয়ে অথবা মস্তিষ্কে। কবিতাকে আমি সবসময় প্রবল প্রতাপশালী প্রতিভাবানদের একচ্ছত্র অধিকারের জায়গা ভেবে নিয়েছি। সে কারণেই কাব্য প্রতিভাহীন এই আমি সযত্নে সরে থেকেছি তার থেকে দূরে। নিজের এই কাব্য প্রতিভা একেবারেই না থাকার কারণেই কি না জানি না, কবিদের প্রতি সবসময়ই আমি বিনয়মিশ্রিত শ্রদ্ধাই প্রদর্শন করে এসেছি। ঈর্ষা বা অসূয়ার কোন স্থানই সেখানে ছিল না কোনদিন, এখনও নেই।
একই লেখা পর পর দুবার পোষ্ট হয়েছে।