পহেলা জুলাই, বৃহস্পতিবার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বায়োমেডিক্যাল ফিজিক্স এণ্ড টেকনোলজি বিভাগ মেডিক্যাল ফিজিক্স নিয়ে বিভাগের গবেষণা, গবেষণার অগ্রগতি ও প্রস্তুতকৃত বিভিন্ন মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি সবার সামনে তুলে ধরার জন্য একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। মেডিকেল ফিজিক্সে অধ্যাপক সিদ্দিক- ই- রব্বানীর নেতৃত্বে বাংলাদেশে গর্ব করার মতো প্রচুর কাজ হয়েছে, সেগুলো দেখে তরুন গবেষক সহ অনেকেই প্রেরণা পাবেন বলে আমি মনে করি। প্রদর্শনী চলবে সকাল দশটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত, কার্জন হলে অবস্থিত বিভাগের সামনেই। সবাই আমন্ত্রিত। বিভাগের গবেষনা কার্যক্রম নিয়ে আগ্রহীদের জন্য নীচে একটি ধারণা দেবার চেষ্টা করেছি।
________________________________________________
উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক বাংলাদেশী ছাত্ররা জ্ঞান- বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অনেক অবদান রেখে চলছেন দীর্ঘদিন ধরেই। কিন্তু তা স্বত্তেও তাদের অবদানকে মাঝে মাঝেই তীরবিদ্ধ করা হয় নানা সমালোচনায়। প্রথম সমালোচনা হয়, তাদের দেশে ফেরত আসা নিয়ে। দ্বিতীয় সমালচনা হয়, যারা দেশে ফিরে আসেন তাদের দেশে গবেষনা গ্রাফ একদম নিন্মমূখী হয়ে থাকে কেন তা নিয়ে। এইসব কারণে প্রবাসী/ দেশফেরত প্রায় সকল বাংলাদেশী বিজ্ঞানীকে আমরা সন্দেহের চোখে দেখি বা সোজা কথায় তাদের ভালো পাইনা। কিন্তু ঢালাওভাবে তাদের দোষারোপ করার আগে সমস্যার গোড়াটাও ভেবে দেখা প্রয়োজন।
একটি ভালো গবেষণার জন্য কী প্রয়োজন? প্রয়োজন ভালো অংকের অর্থ। এছাড়াও একটি নির্দিষ্ট গবেষণা চালানোর জন্য বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রপাতির প্রয়োজন, প্রয়োজন সফটওয়ারের। এই তিনটিই বাংলাদেশে সোনার হরিণ। সামান্য কিছু অর্থের যোগানের জন্য এই দেশে কয়েকবছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় ধরণা দিতে হয়, আর যন্ত্রপাতি তো বেশিরভাগ সময়ই পাওয়া যায়না। অনেক কষ্টে টাকা পয়সা জোগাড় করে বিদেশ থেকে বিপুল অর্থ দিয়ে যন্ত্রপাতি, সফটওয়্যার কিনে কাজ চালানোও কঠিন। কারণ হঠাৎ করে একটা কিছু নষ্ট হয়ে গেলে সেটা আবার পাঠাও। এইসব করে করে প্রচুর পরিমান সময় নষ্ট হয় যার কারণে দেশে বসে গবেষণা করে উন্নত বিশ্বের গবেষণার সাথে তাল মেলানো সম্ভব হয়না। তাই ক্ষেত্র বিশেষ অনেকে চেষ্টা করলেও একসময় হাল ছেড়ে দেন। আর বাকিরা বিদেশেই কাজ করতে থাকেন। কারণ সেখানে তিনি হাত বাড়ালেই সব পাচ্ছেন।
ড. সিদ্দিক- ই- রব্বানী স্যার ১৯৭৮ সালে যুক্তরাজ্য থেকে মাইক্রো-ইলেক্ট্রনিক্সে পিএইচডি শেষ করে সব ছেড়ে ছুড়ে চলে এসেছিলেন দেশে। তাঁর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি ছিলো না। পরবর্তীতে মরহুম প্রফেসর এম. শামসুল ইসলামের হাত ধরে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। বিভাগে তখন পদার্থবিদ ড. আবদুর সাত্তার সাইদ ও অধ্যাপক ইসলামের তত্ত্বাবধানে ইলেক্ট্রিকাল স্টিমুলেশনের মাধ্যমে বোন ফ্র্যাকচার হিলিং (bone fracture healing) নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথম মেডিক্যাল ফিজিক্সের গবেষনার সূচনা হয়। তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে এই বিষয়ের উপর গবেষণার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে অধ্যাপক ইসলাম বিট্রিশ অর্থায়নে একটি দুই দেশের বিজ্ঞানীদের জন্য একত্রিত একটি গবেষণা পোগ্রামের আয়োজন করেন। নিজে নিজেই ইলেকট্রনিক্সের যন্ত্রপাতী প্রস্তুতে পারদর্শী সিদ্দিক- ই- রব্বানী এই বিষয়ের নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন। গত বত্রিশ বছরে তিনটি মৌলিক আবিষ্কার ছাড়াও অধ্যাপক রব্বানী ও তাঁর ল্যাবের ছাত্ররা তৃতীয় বিশ্বের মানুষের জন্য অসংখ্য বায়োমেডিক্যাল সরঞ্জাম প্রস্তুত করেছেন। ২০০৮ সালে পদার্থ বিজ্ঞান থেকে বের হয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন, বায়োমেডিক্যাল ফিজিক্স এণ্ড টেকনোলজি বিভাগ।
বায়োমেডিকেল ফিজিক্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগ
কিন্তু কীভাবে দেশে থেকেও বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে বলার মতো গবেষণা করেছেন অধ্যাপক রব্বানী? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভাগে কাজ শুরু করার সময় থেকেই আমি দুইটি দর্শন সবসময় মেনে চলেছি। প্রথমতো, আমি এমন কোন গবেষনায় হাত দিবোনা, যা করতে উন্নত বিশ্ব হাবুডুবু খাচ্ছে। মেডিক্যাল ফিজিক্সে দুনিয়াজুড়ে অসংখ্য জিনিস আবিষ্কৃত হয়েছে, কিন্তু তৃতীয় বিশ্ব যেখানে সারা পৃথিবীর জনসংখ্যার আশিভাগ লোকের বাস তাদের জন্য কিছুই হয়নি। সরাসরি তারা উপকৃত হবে এমন জিনিস নিয়েই কাজ করতে আমি সবসময় আগ্রহী ছিলাম। দ্বিতীয় দর্শন, আমি নিজে যেই জিনিস তৈরী করতে পারবোনা সেইটা নিয়ে কাজও করবোনা। একটি গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি যদি আমার তৈরী করার সামর্থ থাকে তাহলে সেই গবেষণার কাজ শুরু করবো। অন্য কারও জন্য বসে থাকলে আদতে কাজ হয়না। আজকে বত্রিশ বছর পার হবার পর নবনির্মিত বায়োমেডিক্যাল ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে গবেষক ছাত্র হিসেবে যোগ দিয়ে পুরো ডিপার্টমেন্ট জুড়েই স্যারের এই কথাগুলোর প্রয়োগ দেখতে পাই। একদম শূন্য থেকে কিভাবে প্রতিটা জিনিস তৈরী হয়েছে/ হচ্ছে।
নীচে বিভাগের মৌলিক কাজগুলো তুলে ধরা হলো।
ফোকাসড ইমপিড্যান্স মেজারমেন্ট (এফআইএম)
এফআইএম বিভাগের উদ্ভাবিত একটি নতুন পরিমাপ পদ্ধতি। শরীরের বেশ কিছু পরিমাপে ও রোগ নির্ণয়ে এর ব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। বিদেশীরাও বাংলাদেশের উদ্ভাবিত এ পদ্ধতি নিয়ে কাজ শুরু করেছে, পরে কিছু বর্ণনা দেয়া আছে। এর উপর আন্তর্জাতিক জার্ণালে প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, বিদেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মধ্যে ১৯৯৮ সনে স্পেনের বার্সিলোনায় একটি ও গত ২০০৯ এর জুনে ইংল্যান্ডের ম্যানচেষ্টারে আমাদের তরফ থেকে পাঁচটি প্রবন্ধ পড়া হয়েছে। এ ছাড়া এ পদ্ধতি নিয়ে গবেষণার উপর যুক্তরাজ্য থেকে একটি ও কোরিয়া থেকে একটি প্রবন্ধ ম্যানচেষ্টারের সম্মেলনে পড়া হয়েছে। ২০১০ এর এপ্রিলে আমেরিকার ফ্লোরিডার একটি সম্মেলনে বিভাগ থেকে চারটি প্রবন্ধ পড়া হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন গবেষণা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান এফআইএম পদ্ধতির প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে। তারাও এ যন্ত্রটির একটি উন্নত সংস্করণ তৈরী করে আমাদেরকে সাহায্য করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। আমাদের বর্তমান কার্যক্রম নীচে তুলে ধরা হল।
ক) আমাদের গবেষণাগারে ফুসফুসের বিভিন্ন অঞ্চলে বায়ু চলাচলের পরিমাপের জন্য এফআইএম এর প্রয়োগ করা হচ্ছে, অনেকদূর এগিয়েছে। শীঘ্রই বক্ষব্যাধির কোন হাসপাতালের সঙ্গে রোগ নির্ণয়ে এর বাস্তব প্রয়োগের চেষ্টা করা হবে।
খ) বারডেমের সঙ্গে আলোচনায় দেখা গেছে যে পেটের চর্বির পুরুত্ব নির্ণয় ডায়াবেটিস ও হার্টের অসুখ সহ বিভিন্ন অসুস্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। আমরা মনে করি এফআইএম এ কাজটি সফলতার সঙ্গে করতে পারবে এবং প্রাথমিক গবেষণা শুরু করা হয়েছে।
গ) পাকস্থলীর খাদ্য নিষ্ক্রান্ত করার বিষয়ে আমাদের প্রাথমিক পরিমাপ সফল হয়েছে। ভবিষ্যতে আইসিডিডিআরবি এর সঙ্গে গবেষণার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
ঘ) এফআইএম এর তাত্ত্বিক দিক নিয়ে গবেষণা করার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ডিষ্ট্রিবিউশন অফ এফ-লেটেন্সী (ডিএফএল)
ডিএফএল আমাদের আবিষ্কৃত একটি নতুন পদ্ধতি যার মাধ্যমে শরীরের স্নায়ু-তন্তুসমুহের কিছু অতি প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায় যা এর আগে সম্ভব ছিল না। এর উপর আন্তর্জাতিক জার্ণালে প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে এবং যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় এর উপর গবেষণা করার আগ্রহ দেখিয়েছে। এর উপর আমাদের নিম্নলিখিত গবেষণাসমুহ চলছে।
ক) সার্ভিকাল এবং লাম্বো-স্যাক্রাল স্পন্ডিলোসিস রোগ নির্ণয়ে আমাদের এ নতুন উদ্ভাবনটির বিশেষ সম্ভাবনা আছে বলে প্রাথমিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। রোগীর এমআরআই করে তার সঙ্গে আমাদের রোগ নির্ণয়কে তুলনা করে দেখার কাজ চলছে। আমাদের এ পদ্ধতিটি এ ধরণের রোগের প্রাথমিক পর্যায়েই নির্দেশ করতে পারবে বলে প্রাথমিক গবেষণায় মনে হচ্ছে।
খ) ডায়াবেটিক রোগীদের স্নায়বিক রোগের ধরণ নির্ণয় করা যায় কিনা সে বিষয়ে বারডেমের সাথে যৌথভাবে কাজ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
গ) পদ্ধতির প্রয়োজনীয় যন্ত্রের সামগ্রিক উন্নয়ন এর জন্য গবেষণা শুরু করা হয়েছে। উল্লেখ্য বর্তমানে ব্যবহৃত কমপিউটারাইজড যন্ত্রটি ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতায় অধ্যাপক রব্বানী নিজেই তৈরী করেছিলেন ও বাংলাদেশে এর সাহায্যে রোগীদের নার্ভ কনডাকশন পরিমাপের সেবার ব্যবস্থা শুরু করেছিলেন, যা তিনি এখনো চালু রেখেছেন। বাংলাদেশে নিজস্ব তৈরী কোন কম্পিউটারাইজড যন্ত্র এটিই প্রথম এবং রোগীদের নার্ভ কনডাকশন পরিমাপের সেবা দেয়াতেও দেশে এটিই ছিল প্রথম পদক্ষেপ।
সূর্যের কিরণে ও বিদ্যুতের সাহায্যে স্বল্প খরচে সহজলভ্য জিনিস দিয়ে পানি জীবানুমুক্তকরণ
সৌর বিকিরণ ব্যবহার করে নিজস্ব উদ্ভাবিত কয়েকটি প্রযুক্তিতে প্রাথমিক সফলতা আগেই এসেছে। এখন এগুলো জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য পদক্ষেপ নেয়া দরকার। পাশাপাশি প্রযুক্তি উন্নয়ন প্রচেষ্টাও চালিয়ে যেতে হবে। বৈদ্যুতিক কয়েকটি উদ্ভাবনীমূলক ধারণা প্রাথমিকভাবে আশা জাগিয়েছে। এর উপর আরও গবেষণা চালানো প্রয়োজন।
সৌর পদ্ধতিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ইব্রাহিমের প্রতিষ্ঠান সিএমইএস বরিশালে বেদেদের মধ্যে সফলভাবে চালু করতে পেরেছিল এক সময়ে, কিন্তু অনুদান শেষ হয়ে যাওয়ায় কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে নি।
বায়োমেডিক্যাল যন্ত্রপাতি
মেডিকেল ফিজিক্সে উন্নত বিশ্বে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। কিন্তু বেশিরভাগ গবেষণা হয়েছে উন্নত বিশ্বে, যন্ত্রপাতির উদ্ভাবনও সেখানেই। অত্যাধিক দাম হবার কারণে সেগুলোর বেশিরভাগই তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো যেখানে প্রায় মোট জনসংখ্যার আশিভাগের মানুষ বাস করে তাদের দোর গোরায় পৌঁছায়নি। তাই বিভাগ থেকে নানা ধরণের প্রয়োজনীয় বায়োমেডিক্যাল যন্ত্রপাতি স্বপ্ল খরচে প্রস্তুতের জন্য গবেষণা করা হয়। এর মধ্যে ইসিজি, ইএমজি মেশিন, মাসেল স্টিমুলেটর সহ অতিপ্রয়োজনীয় নানা ধরণের যন্ত্রপাতি তৈরী করা হয়েছে। একটি ইসিজি মেশিনের মূল্য এক লাখ টাকার মতো হলেও আমাদের উদ্ভাবিত ইসিজি মেশিন মাত্র দশ হাজার টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। ডায়বেটিকস রোগীরের পায়ের ওজন তারতম্য নির্নয়ের যন্ত্র পেডোগ্রাফের মূল্য পঞ্চাশ লাখ টাকা হলেও আমাদের উদ্ভাবিত একই কাজে ব্যবহারযোগ্য পেডোগ্রাফের মূল্য মাত্র ছয় লক্ষ টাকা। ইতিমধ্যে এই যন্ত্রটি পাকিস্তানের একটি হাসপাতাল ক্রয় করেছে এবং তা দিয়ে রোগীদের সেবাদানও শুরু হয়েছে।
অভিনন্দন :rose: :rose: :rose: :rose: :rose2: :rose2: :rose2:
প্রথম আলোয় দেখলাম।
রায়হান আপনাকে অভিবাদন!
দারুণ কাজ রায়হান। কিন্তু একই কথা আমারো। এক লাখের জিনিস যদি দশ হাজারে পাওয়া যায় তবে সেটি অন্তত পঞ্চাশ হাজারে বিক্রি করা দরকার। লাভ দিয়ে আরো নুতন গবেষনা করা যায়। এবং সে ক্ষেত্রে সকল সরকারি হাসপাতাল গুলোতে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে আইন করে। তাহলেই হল।
প্রথম আলোয় দেখলাম। সাব্বাস রায়হান আবীর!!
এরকম একটি গ্লরিয়াস পোস্টে বোধহয় এক শব্দবিশিষ্ট একটি মন্তব্যই সবচেয়ে যথার্থ- সাব্বাস!!!!!
@ রায়হান আবীর,
আপনার পোষ্টকৃত মাওলানা আবুল কালামের উপর প্রতিবেদনমূলক লেখা দিয়েই আমার যাত্রা শুরু। এরপর পিছনের দিকে গিয়ে নিধর্মকথা, জাস্ট এ থিওরী পড়ি।
আমি আরো এক রায়হান-এর কিছু লেখা পড়েছি। তার নাম শরিফ এম রায়হান।
দুজনের লেখা নিয়ে আমার মাথার মধ্যে গুবলেট হয়ে যায়।
অভিনন্দন রায়হান আবীর ও তাঁর দলকে। প্রথম আলোর আজকের (২/৭/১০) প্রতিবেদনটা পড়েও বেশ ভালো লাগলো। সিদ্দিক-ই-রব্বানী স্যারের সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছে ২০০৮ সালে হো-চি-মিন সিটিতে একটা মেডিকেল ফিজিক্স সম্মেলনে। ২০০৯ সালে আবার দেখা হয়েছে চিয়াং মাই-এ। ২০১১ সালে একটা আন্তর্জাতিক কনফারেন্স বাংলাদেশে আয়োজন করার ব্যাপারে তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল ফিজিক্স এসোসিয়েশানের পক্ষ থেকে আবেদন করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়া আর জাপানও আবেদন করেছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ হেরে যায় জাপানের কাছে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ মেডিকেল ফিজিক্স এসোসিয়েশান আন্তর্জাতিক ভাবে আরো পরিচিতি লাভ করবে আশা করি।
@রায়হান, অভিনন্দন রইলো। তোমাদের বায়োমেডিকেল ফিজিক্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগের গবেষণা প্রদর্শনীর উপর করা প্রতিবেদনটা দেখলাম প্রথম আলোতে। তোমার নামও দেখলাম। কেমন হল প্রদর্শনী?
আরে তাইতো! খেয়ালই করি নাই। পেপারে তো বেশ বড় করেই লিখছে –
কংগ্রাচুলেশন! আর ছবির দন্তবিকশিত হাস্যময় ছবিটা তো তোমারই মনে হচ্ছে। 😀
@অভিজিৎ,
দেখার সৌভাগ্য আমার কপালে বুঝি জুটলো না। লিংকে ক্লিক করেও ফায়দা হলো না। বার বার একই কথা আসে- problem loading page.
এমনিতেই মুক্তমনা পেজ ভীষণ স্লো মনে হয়। এটা কীসের দোষ? কম্পিউটার, নেটওয়ার্ক নাকি মুক্তমনার?
@মাহফুজ,
প্রথম আলোর ছবি লোড না হলে পত্রিকারে ধরেন গিয়া। আমি ত ফকফকা ছবি দেখতে পাইতেছি।
সমস্যা হছে মেডিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্টের বাজার নিয়ে। এখানে সিমেন্সের মনোপলি। তাছারা ম্যানুফ্যাকচারিং এর জন্যে যে বেস লাগবে, সেগুলোও কিছু কোম্পানীর মনোপলি এখন।
ভারতে আই আই টি খরগপুরে অধ্যাপক অজয় রায়ের ল্যাবে কিছু বায়োমেডিক্যাল যন্ত্র তৈরী হয়েছিল। আমি জানি না তারা মার্কেট করতে কতটা সক্ষম হয়েছে। মার্কেটিং এর অভাবে , সরকারি সাহায্যের অভাবে বা কর্পরেটগুলির চালে এই সব উদ্যোগ বসে যায়। আমি আশা করব-এই উদ্যোগের ব্যাপক মার্কেটিং হবে।
দেশের বিজ্ঞান চর্চা মানুষের কাজ না লাগলে, তা আরো বেশী জন বিচ্ছিন্ন হবে। যা ভারতে দীর্ঘদিন থেকে দেখেছি।
@বিপ্লব দা,
ভালো কথা বললেন। আমাদের ডিপার্টমেন্ট যন্ত্র বাংলাদেশে কেউ কিনতে চায়না। নার্ভ কন্ডাকশনের একটা ইউনিট আছে খালি ট্রমা সেণ্টারে। এতো দারুন সার্ভিস দিচ্ছে যন্ত্রটা বিশ বছর ধরে তবুও অন্য কেউ কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি। বিদেশে এই বিভাগের কতোকিছু বিক্রি হয়েছে অথচ দেশে বেইল নাই। আসলে ব্যাপার হলো, একটা ইসিজি মেশিন বিদেশ থেকে কিনতে এক লাখ টাকা লাগলে দশ হাজার টাকা পকেটে ভরা যায়, কিন্তু জিনিসটার দামই যদি হয় দশ হাজার টাকা তাইলে কী আর পকেট ভরার উপায় থাকে। অনেক কারণের মধ্যে এইটাও মনে হয় একটা কারণ।
@রায়হান আবীর,
এই কোরাপশনের জন্যে তৃতীয় বিশ্বের বিজ্ঞান প্রযুক্তি খুব ভুগেছে।
আমিও নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি ভারতের মিলিটারি আর এন ডির তৈরী প্রযুক্তি মিলিটারি ব্যাবহার করছে না-কারন তাতে টাকা মারার স্কোপ নেই।
এই ব্যাপারে একটি গল্প বলি। আমা্দের ইলেকট্রনিক্স ডিপার্টমেন্টে রাড্যার তৈরী জন্যে অনেক আন্তর্জাতিক ভাবে বিখ্যাত অধ্যাপক ছিলেন। এদিকে মিলিটারি তাদেরকে গবেষনা করার পয়সা দিত-কিন্ত রাডার কিনত সেই বিদেশ থেকে। তাদের গবেষনা কোন কাজে লাগানো হত না। এর মধ্য একজন অধ্যাপক মজা করে বলেছিলেন-উনি যখন রাশিয়াতে ১৯৮০ সালে কাজ করেছেন-সেই সব প্রযুক্তি ভারতে এসেছে। কারন সেই প্রযুক্তিতে কমিশন পেয়েছে রাঘব বোয়ালরা। আর ১৯৯৯ সালের আধুনিক প্রযুক্তি মিলিটারি নেবে না-কারন উনি দেশে বসে তৈরী করেছেন!
মিলিটারি তাও সিঙ্গল পয়েন্ট সেল। কর্মাশিয়াল কিছু হলে আরো মুশকিল।
@রায়হান আবীর,
কংগ্রাচুলেশন! :rose2: :rose2: :rose2: :rose2: :rose2:
@রায়হান আবীর,
আমার মনেহয় মার্কেটিং এর জন্যে পেজেন্টেশনটা একটা বড় ব্যাপার। যে যন্ত্র তৈরী করতে ১০০০০ টাকা খরচ হয়েছে সেটাকে ভালভাবে মোড়কজাত করতে হবে। ভিতরে সব একই থাকবে কিন্তু বাইরে ফিনিসং, কভার একেবারে ফাট্টা ফাট্টি করে বানাতে হবে। তারপরে ওটাকে কমপক্ষে ৫০০০০ টাকায় বেচতে হবে। কারণ যন্ত্র বানাতে হয়ত ১০০০০ টাকা খরচ হয়েছে কিন্তু আপনাদের মেধা এবং সময়ের দাম?
এক রায়হান আবির যদি গভেষণা করে কোটিপতি হয় তাহলে অনেক রায়হান আবিরই আসবে এই লাইনে। কী বলেন? আমরা হয়ত অনেকেই বিজ্ঞান বুঝি কিন্তু সাথে সাথে ব্যাবসাটাও বোঝার দরকার আছে। নাহলে রায়হান আবিরকে হয়ত শুধুই প্রথম-আলোর ওই পেপার কাটিংটা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
আমার কথা হল যে মেশিনটা কিনতে এক লাখ টাকা লাগে বাইরে থেকে সেটা কেন আমাকে মাত্র ১০০০০ টাকা বিক্রি করতে হবে?
মন্তব্য…আপানাদের ইসিজি মেসিন টা আমি কিন্তে চাই
দারুন লাগলো রায়হান। এটা আমাদের সব গ্রুপে ব্লাস্ট করে দাও।
পাটের জেনোমে আবিষ্কারের গবেষণায় প্রায় ৫ কোটি টাকা লেগেছিল।
@মাহফুজ,
আমার ধারণা ৫ কোটি টাকায় এধরণের একটা প্রজেক্ট করা মানে অনেক সস্তায় করা গেছে। আমাদের দেশের বাজেট যেখানে লক্ষ কোটি টাকা সেখানে এই টাকা মনেহয় কিছুইনা।
আসল ব্যাপারটা সদিচ্ছা। সদিচ্ছা থাকলে টাকা-পয়সা তেমন ব্যাপার না। আর নিজেদের সামর্থে আস্থা থাকাটাও জরুরী।
খুবই আশাজাগানিয়া ব্যাপার। আপনাদের চেষ্টা চলতে থাক। শুভকামনা। :yes:
বাহ! এ ধরণের খবর পড়লে সত্যিই খুব ভালো লাগে। মনে হয় সব ছেড়ে ছুড়ে দেশে ফিরে যাই। স্বপ্ন দেখি এভাবেই ধাপে ধাপে আমরা টেকনোলজিতে সয়ংসম্পূর্ণ হয়ে যাব। শুভেচ্ছা তোমাদের টিম কে।
btw: মডেলটা যে তুমি সেটা বোঝা যাচ্ছে! 😛