তোমাদের মার্চ করে হেঁটে যাওয়া দেখলে
প্রাচীনকালের ঐতিহাসিক অন্ধকারের কথা মনে হয়
যখন,
রাজার প্রহরীরা উত্তপ্ত পৌরুষ জাগিয়ে
নিতান্ত অবহেলায় পথ মাড়িয়ে
হেঁটে যেত পথের ধুলো উড়িয়ে, মনে হত যেন
ধন্য করে গেল ধরণীতলকে।
তোমাদের সুশৃংখল কুচকাওয়াজ দেখলে
অত্যন্ত নীতিবান ডাকাত দলের কথা মনে হয়
যাদের,
প্রচন্ড আদর এবং ভালোবাসার আতিশজ্যে
ধুসর মাটি হত রক্তাক্ত প্রান্তর
যাদের অসহনীয়, অসহ্য ভালোবাসা বিস্মৃত হওয়ার আগেই
কেটে গেছে হাজারো যুগ, ক্লান্তিময় সহস্র বছর।
তোমাদের অবয়ব দেখলেই অজানা ভয়ে কেঁপে উঠি
আমি তো ছাই হতভাগা বালক
সুর্যদেবও তোমাদের পৌরুষকে শ্রদ্ধা করে
তাকেও হারিয়ে যেতে হয়
মুখ লুকাতে হয় অভ্র-সমুদ্রে।
হিরোশিমার কথা নিশ্চই ভুলে যাও নি?
অথবা নাগাসাকি
নিদেনপক্ষে ভিয়েতনাম, বর্তমান ফিলিস্তিন, গাজা কিংবা লেবানন
যে পৌরুষ, যে ভালোবাসার নিশান উড়িয়ে এখনও শিশুরা
হ্যাঁ, নিষ্পাপ শিশুরা জন্মায় অসম্পুর্ন হয়ে,
কি তীব্র ভালোই না তোমরা বেসেছিলে( এখনও বাসছ )
ভাবলে কেঁপে উঠতে হয়।
কিন্তু একবার, অন্তত একবারও কি ভেবেছ তোমাদের সৃষ্টির কথা, তোমাদের
অস্তিত্বের পেছনকার কারনের কথা?
অবিশ্বাস করতে পারবে, যখন জানবে তোমাদের তীব্র কলঙ্কময় প্রসবের কথা
যখন জানবে,
ঐতিহাসিক রাজার প্রগৈতিহাসিক রক্ষী বাহিনীর সাথে
তোমাদের সাদৃশ্য শতকরা একশত ভাগ?
যখন শুনবে,
নিরাপদে শোষন চালানোর সবচাইতে মসৃন মাধ্যম তোমরা?
কিংবা,
সংখ্যা লঘুদের দলিত মথিত করার নির্মম বুলড্রোজার তোমরা?
অথবা,
সীমান্ত রক্ষার নামে নিরশ্র মানুষের আইনী হত্যাকারী তোমরা?
নিদেনপক্ষে,
জাতীয়তাবাদের নামে সাম্রাজ্যবাদ রক্ষার মেধাবী সৈনিক তোমরা?
মাহেন্দ্রক্ষন বলে কোন কিছুতে বিশ্বাস করিনি কখনোই
এখনও করছি না, কিন্তু
দাবী করছি এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তোমাকে
হ্যাঁ, তোমাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে
তুমি শোষক নাকি শোষিতের।।
কবিতাটা ভালই লাগলো। রুদ্রের ‘সশস্ত্রবাহিনীর প্রতি’ কবিতাটার সাথে ভাবে বেশ মিল রয়েছে। রুদ্রের মত এই কবিতাটাও মনে হচ্ছে সশস্ত্রবাহিনীকে মাথায় রেখেই লেখা হয়েছে।
রুদ্র-র কবিতাটার কয়েকটা লাইন এখানে তুলে দিলাম।
দাঁড়াও, নিজেকে প্রশ্ন করো – কোন পক্ষে যাবে তুমি?
সীমান্ত রক্ষার নামে তৈরি করা হয়েছে তোমাকে
সার্বভৌমত্বের নামে অস্ত্র দেয়া হয়েছে তোমাকে
শৃঙ্খলা রক্ষার নামে তৈরি করা হয়েছে তোমাকে
আইন রক্ষার নামে অস্ত্র দেয়া হয়েছে তোমাকে।
সীমান্ত রক্ষাও নয়, সার্বভৌমত্বও নয়, শুধুমাত্র পুঁজি
শুধুমাত্র পুঁজিবাদ রক্ষাই এখন তোমাদের মৌল কাজ।
তোমরা এখন বিত্তের পাহারাদার, বিত্তবানের প্রহরী,
বিত্তমান তোমাকে ব্যবহার করেছে তার বিত্তের স্বপক্ষে।
বিত্তের বিরুদ্ধে তাই যখন শ্লোগান ওঠে শহরে ও গ্রামে
যখন মিছিল নামে রাজপথে মানুষের দাবির মিছিল
যখন মিছিল নামে রাজপথে মানুষের ক্ষুধার মিছিল
তখন তোমার হাতে গর্জে ওঠে তীক্ষ্ণ রাইফেল,
তুমি ব্যবহৃত হও, নিরুপায় ব্যবহৃত হও।
তোমার হাতের ভেতরে তখন শোষকের হাত
তোমার আঙুল, সে তখন খুনী জান্তার আঙুল
তোমার সুশিক্ষিত পা, সে তখন স্বৈরাচারের পা
তোমার চোখ তখন এক ঘাতকের চোখ
তোমার জিভ তখন এক ঘৃণ্য দুর্বৃত্তের জিভ।
দাঁড়াও, নিজেকে প্রশ্ন করো – কোন পক্ষে যাবে তুমি?
@ফরিদ আহমেদ,
রুদ্রের কবিতাটিও পড়লাম। এই রুদ্র কোন্ রুদ্র, রুদ্র মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ নাকি?
আর একটা প্রশ্ন করি- শোষক কোন্ লিঙ্গ?
@মাহফুজ,
আর কোন কোন রুদ্রকে চেনেন আপনি যারা কবিতা লেখে? 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
মনে হয় জবাব পেয়ে গেছি। এ সেই রুদ্র, যিনি লিখেছিলেন- ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি দিও।
@মাহফুজ,
শোষক নিত্য পুংলিঙ্গ। কারণ, পুরুষেরা সবসময় শোষণ করে আর নারীরা সবসময় শোষিত হয়। এমনকি রানি, রাজকন্যারাও শোষিতেরই দলে। 😀
@ফরিদ আহমেদ,
তাহলে এবার বলুন, শোষকের নিত্য স্ত্রী লিঙ্গ কী হবে? :-/
স্ত্রী কর্তৃক স্বামী নির্যাতিত হলে সেই স্ত্রীকে কী বলবো? :-X
@মাহফুজ,
নিত্য পুং বা স্ত্রীবাচক শব্দ মানেই হচ্ছে ওই শব্দের আর লিঙ্গান্তর হবে না। কাজেই, আপনার প্রথম প্রশ্নটি invalid ab initio.
স্ত্রী কর্তৃক স্বামী নির্যাতিত হলে সেই স্বামীর অবশ্যই নির্যাতনের শিকার বা ‘নির্যাতিত’, কিন্তু ‘শোষিত’ নন। শব্দদুটোর অর্থের এবং প্রয়োগের বেশ পার্থক্য আছে। আর শাব্দিকভাবে, সেই স্ত্রী তো ‘খাণ্ডারনি’ বা ‘জাঁদরেল’ হিসেবেই পরিচিত। তবে, পুরুষতান্ত্রিকতার প্রভাবেই বোধহয় লাজুক পুরুষেরা ওই রমণীর বিশেষ নাম নিতে বা দিতে চান নি। যাহোক, আমার ভুলও হতে পারে।
ধন্যবাদ।
@ফরিদ আহমেদ,
কালকে বাসে করে বাসায় ফেরার সময় হঠাৎ করে কবিতাটার কথা মাথায় এল। এমন হতে পারে রুদ্রের অসাধারন ঐ কবিতাটা আমাকে অবচেতন ভাবে সাহায্য করেছে। জানি না আসল ঘটনা কি। 🙂
@ সাইফুল ইসলাম
আমি শোষিতের পক্ষে।
চমৎকার শব্দ চয়ন ও মনোমুগ্ধকর ভাব-অবয়ব।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
অনেক ধন্যবাদ মামুন ভাই উৎসাহের জন্য।
ভালো থাকবেন।
@ সাইফুল ইসলাম,
খুব ভালো লেগেছে। স্বরবে আবৃতি করলাম একাকী। মনে হচ্ছে র্যাব সদস্যদের উদ্দেশ্যে লেখা।
@মাহফুজ,
হবে একটা কিছু। 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
আপনার ভাবনায় কী ছিল, সেটা কি জানানো সম্ভব?
@মাহফুজ,
মনে হয় জেনে গেছেন এখন তাই না? 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
আপনার কবিতা দারুণ লাগলো। আরো লিখুন।