দুটি আশাব্যঞ্জক খবর আছে।
কিছুদিন আগে “ডাইনি সন্দেহে অ্যাসিড দিল জানগুরু” শিরোনামে আমি মুক্তমনায় একটি ব্লগ লিখেছিলাম। তার জের এখনও শেষ হয়নি। লড়াই চলছে।
প্রথমত অ্যাসিড কেসটির ক্ষেত্রে জানগুরু মানিক যুগী কদিন আগে গ্রেপ্তার হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে শেষ কবে জানগুরু গ্রেপ্তার হয়েছে মনে পড়ছে না।
দ্বিতীয়ত কাটু হেমব্রমের কেসটিতে জানগুরু নেপাল বাউরি যে কিনা আবার বন দপ্তরের কর্মচারী, প্রশাসনিক দপ্তর গুলিতে বারা বারে হত্যে দিয়ে তাকে চাকরী থেকে বহিস্কার করানো গেছে। বাম জমানার বাম কর্মচারীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অফিস কর্তৃপক্ষ কি করে যে এই সিদ্ধান্ত নিল সত্যি বিস্ময়ের।
এই দুটি ঘটনা স্থানীয় জানগুরুদের সকলের পিলে চমকে গেছে, ফলে তাদের মধ্যে এখন বেশ কয়েকজন নতুন কেস হাতে নিচ্ছেনা, বলছে এখন অবস্থা ভাল নয়, পরে আসুন। আমাদের দেখতে হবে তারা যেন বরাবরের জন্য এসব বুজরুকি বন্ধ করে। জনগনকে পাশে পাওয়া যাচ্ছে এটাই ভাল খবর। কদিন আগে ঐ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রামের লোকেরা মিলে আদিবাসীদের একটি ধর্মীয় সংগঠনকে চ্যালেঞ্জ করে। ঐ সংগঠনটি আদতে ওড়িশা রাজ্যের, পশ্চিমবঙ্গে সবে মাত্র প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে। সংগঠনটির সদস্যরা ডাইনি ধরা, ভুত ঝাড়া, ঘর বাঁধা ইত্যাদি গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে করছিল এবং কুসংস্কার ছড়াচ্ছিল। আমরা গ্রামবাসীদের বলে দিয়েছি, আপনারা লড়ে যান। আমরা পাশে আছি। গ্রামবাসীরাই আরো চার পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েকশো গ্রামে চ্যালেঞ্জের খবরটি লিফ্লেট, হাতে লেখা পোষ্টার, মাইকিং এর মাধ্যমে প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছে। ওদের হার টিকে প্রচার করতে পারলে কুসংস্কারে ডুবে থাকা আদিবাসী গ্রামগুলির অনেকেই বুঝবে জানগুরু ওঝা রা যা যা দাবি করে সবটাই ভড়কি। আর শেষ পর্যন্ত যদি না আসে তাহলে তো কুসংস্কার মুক্ত আদিবাসীরাই জিতল।আমাদেরও দীর্ঘদিনের প্রয়াস কিছুটা এগোলো। আমরা চাই বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া নয়, ওরা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই ফেস করুক।
সামনের পঁচিশ জুন পাঁচমুড়া ফুটবল গ্রাউন্ড ময়দানে চ্যালেঞ্জের সময় এবং স্থান নির্বাচিত হয়েছে। ‘পাঁচমুড়া’ মানে জানেন তো? ভারত সরকার অনেক সময় লোগো হিসেবে এক জোড়া মাটির ঘোড়ার ছবি ব্যবহার করে। দেখে ছেন নিশ্চয়? সেই মাটির ঘোড়ার পেটেণ্ট এই পাঁচমুড়া গ্রামেররই।
জঙ্গল এবং আদিবাসী গ্রাম ঘেরা পাঁচমুড়া গ্রামের বিখ্যাত বিখ্যাত রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত মৃৎশিল্পীদের বর্তমান হাল নিয়ে আবার একটা ব্লগ লেখা যায়। পরে হবে।
খুব ভাল কাজ। আপনাকে অনেক অনেক ধন্নবাদ।
এই ধরনের সমাজ সংষ্কারমুলক চ্যালেঞ্জিং কাজ হাতে নেওয়ার জন্য আপনারা প্রশংসার দাবী রাখেন।
আমি মনে করি বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে এই ধরনের প্রচার দরকার। একটু সাহায্য সহযোগিতা পেলে গ্রামবাসীরা নিজেরাই পারে সমাজের কুসংস্কার ঠেকাতে। কারন গ্রামবাসীরা অশিক্ষিত হলেও এটুকু বুঝতে পারে যে “ডাইনি ধরা, ভুত ঝাড়া, ঘর বাঁধা ইত্যাদি” সবই কুসংস্কার এবং তাদের নিজেদের এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থেই এসবের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। দরকার শুধু তাদের মনে উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি করা।
যুক্তিবাদী সমিতির কাজ সবসময়েই প্রশংসার যোগ্য। শুভেচ্ছা রইলো।
‘ডাইনি অপবাদে মুখে অ্যাসিড দিল জানগুরু’- লেখার মন্তব্যর মধ্যে থেকে তুলে এনে ‘লড়াই চলছে, পাশে পেয়েছি অনেককে’ শিরোনামে পোষ্ট করায় খুব ভালো করেছেন। এতে ঘটনার আপডেট অনেকেই জানতে পারবে।
ধন্যবাদ বিপ্লব দাসকে।