মৌলবাদকে প্রতিহত করার উদ্যোগ বিষয়ক বিপ্লব পালের লেখাটা খুবই সময়োপযোগী এবং তাৎপর্যপূর্ণ একটা লেখা। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি মুক্তমনায় এমন বাস্তবধর্মী একটা পদক্ষেপের অবতারনা করার জন্যে। তবে বিষয়টা যেহেতু খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কাজেই আমার মনে হলো উদ্যোগটার সাথে সম্পৃক্ত কিছু কিছু সুক্ষ্ণ ব্যাপারে উদ্যোগীদের দৃষ্টি আকর্ষন করা দরকার। আর সে কারনেই আজকের লেখাটার অবতারনা।
বিপ্লব পাল মৌলবাদের উত্থানকে প্রতিহত করার জন্যে বাস্তবমুখী কিছু কিছু কর্মপদ্ধতি হাতে নেয়ার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রাজনীতি করার প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রচুর কমেন্ট পড়েছে। বিপ্লব পালকে বাহবা দেয়ার পাশাপাশি অসংখ্য পাঠক বিভিন্ন কর্মকান্ডের প্রস্তাব দিয়েছেন। শিক্ষা ও বিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসারের পাশাপাশি সদস্য সংগ্রহ করা, নিজেদেরকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করা, রাজনীতিতে জড়ানো (যা eventually ক্ষমতায় যাওয়া),…… অনেক অনেক পরামর্শ এসেছে। খুবই আশার কথা।
মজার ব্যাপার হলো, এই মূল কথাটার প্রায় কাছাকাছি একটা কথাই আব্দুর রহমান আবিদ দু’দিন আগেই তার নিবন্ধ তিনটাতে (অতিরিক্ত ধর্মীয় গোঁড়ামী চরমপন্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে, মডারেট মুসলিম, ধর্মকে না বলা কতখানি বাস্তব?) লিখলো, “কেবল ইসলামী মৌলবাদ বা সন্ত্রাসের উত্থানই নয়, সমসাময়িক অন্যান্য ধর্মগুলোতেও আশংকাজনকভাবে মৌলবাদী মনোভাবের উত্থান হচ্ছে”। এবং সে এটাও দেখালো বিশ্বাসী মুসলমানদেরই একটা অংশ কিভাবে ইসলামী মৌলবাদী মনোভাবকে প্রতিহত করছে কিম্বা বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে মানুষ কিভাবে পরাজিত করেছে তথাকথিত ‘ইসলামী শাষন’এর স্বপ্নদ্রষ্টা ধর্মীয় সন্ত্রাসীদেরকে। ভারতের সেক্যুলার কংগ্রেস পার্টির একজন কল্পিত নেতার বিভিন্ন কল্পিত কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে মানুষকে ধর্মীয় সহনশীলতা শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারটাও সে খানিকটা দেখানোর চেষ্টা করলো। বিপ্লব পালকে বাহবাদানকারীই অনেক পাঠক সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন আমার ওপর- ‘ভন্ড’, ‘হিপোক্রিট’, ‘মুখোষধারী’, ইত্যাদি অসংখ্য বিশেষনে ভরা সম্বোধন করে। এর বাইরে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যগুলোর কথা নাহয় নাইবা বললাম। ভাবখানা ছিল যেন “ব্যাটা তুই প্র্যাক্টিসিং মুসলমান; তুই নিজেই তো মৌলবাদী। মৌলবাদ নিয়ে কথা বলার তুই কে”? তখন কিন্তু কেউ বলেননি (সম্ভবত আদিল, আতিক আর মিঠুন ছাড়া), “ঠিকই তো, আসলেই তো চারিদিকে আশংকাজনকভাবে মৌলবাদী মনোভাবের উত্থান হচ্ছে; তা ঠেকানোর জন্যে কি কি করা যায় চলুনতো আমরা সবাই মিলে ভাবি”। নিজেদের প্ল্যাটফর্মের নাস্তিক কেউ একজন ভাল একটা কথা বললে তিনি বাহবা পাবেন, চারিদিকে ধন্য ধন্য রব উঠবে, হাজার জন হাজার সুপরামর্শ দেবেন। তাতে নিশ্চয় কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু তেমনই একটা ভাল কথা একজন বিশ্বাসী মুসলমান বললে আপনাদের অনেকে ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে নেবেন শুধু এ জন্যে যে মানুষটার একটা ধর্মীয় পরিচয় রয়েছে- এটা আপনাদের কারো কারো কতখানি সাম্প্রদায়িক, অহংকারী মানসিকতা তা কি কখনও খেয়াল করেছেন?
মুসলমান শুধু আল্লাহ আছে কি নেই, পৃথিবীতে জ্বিন আছে কি নেই, কোর’আনে বিজ্ঞানময় আয়াত আছে কি নেই এসব নিয়ে আপনাদের সাথে তর্ক করবে। আর এসব তুচ্ছ বিষয়ে তাদেরকে অবধারিতভাবে পরাজিত করে (যেহেতু বিশ্বাস যুক্তির কাছে স্বভাবতই দূর্বল) সগর্বে বিজয়ের নিশানা ওড়াবেন। এর বাইরে যে একজন বিশ্বাসী মুসলমান সমাজের জন্যে, মানবতার জন্যে ভাল-মন্দ কিছু চিন্তা করতে পারে, ভাল কোনো পরামর্শ দিতে পারে, মৌলবাদের উত্থানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে- সেসব মুখে স্বীকার করা তো দূরে থাক, মনে আসার সম্ভাবনাকেও যারা দূর্বলতা মনে করেন, নাস্তিকদের সংগঠন বানিয়ে, রাজনীতি করে এবং ক্ষমতায় গিয়ে তারা বিশ্বমানবতার কতখানি উপকার করবেন তা নিয়ে কারো সন্দেহ হওয়া বোধহয় খুব একটা অমূলক নয়।
ওপরের কথাগুলোকে মুক্তমনার সদস্যদের প্রতি আমার জেনারালাইজ্ড্ দৃষ্টিভঙ্গী বা পর্যবেক্ষণ হিসেবে ধরে নেবেননা প্লিজ। কথাগুলো বলার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো, নিজেদেরকে মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন ও যুক্তিবাদী মনে করলেও আপনাদের অনেক সদস্যের মাঝেই যে অসহনশীল, প্রতিক্রিয়াশীল ও সুপ্রিম মনোভাবের প্রবনতা ও প্রাবল্য রয়েছে, সেটা আপনাদের উপলব্ধি করা দরকার। ধর্মীয় মৌলবাদীদের চালিকাশক্তি সাম্প্রদায়িকতা, প্রতিক্রিয়াশীলতা এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বা মতাবলম্বীদের প্রতি অবজ্ঞা, ঘৃনা ও বিদ্বেষ। মৌলবাদীদের প্রতিহতকারী যোদ্ধারা এসবের ওপরে উঠতে না পারলে বিজয় পাবেন বলে মনে হয়না। কেননা শিক্ষা ও বিজ্ঞানের প্রচার বা প্রসার যাই বলেন, এ সবকিছুরই প্রয়োগের ক্ষেত্র কিন্তু রক্তমাংসের মানুষ। এবং যাদেরকে সুশিক্ষিত, বিজ্ঞানমুখী করে তোলার প্রজেক্ট হাতে নিচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই সম্ভবত অবধারিতভাবে আস্তিক এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্মচর্চাকারী। তাদের প্রতি ভেতরে ভেতরে অবজ্ঞা, অসন্মানবোধ বা বিদ্বেষ পুষে রেখে চুড়ান্ত সফলতা বা বিজয় অর্জন করা মনে হয়না সম্ভব হবে। যে কোনো যুদ্ধে জয়ী হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত হলো, নিজেদের সীমাবদ্ধতা বা দূর্বলতাগুলোকে সনাক্ত করতে পারা।
মানবতাবাদীদের শক্তির সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে ক্ষমতাবান উৎস হলো জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের প্রতি ভালবাসা, যা ধর্মীয় মৌলবাদীদের মধ্যে অনুপস্থিত। ধর্মীয় বা আদর্শগত পার্থক্য বা পরিচয়ের ওপরে উঠে একজন মানুষকে মানুষ হিসেবে সন্মান করতে না পারলে মৌলবাদীদের সাথে মানবতাবাদীদের মৌলিক পার্থক্যটা কোথায় রইলো?
সবশেষে আবারও বলবো, শিক্ষা ও বিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসারে মুক্তমনার বাস্তবমূখী উদ্যোগের প্রতি আমারও সর্বাত্মক মোরাল সাপোর্ট রইলো। এর পাশাপাশি নিজেদের সীমাবদ্ধতাগুলো সনাক্ত করার ব্যাপারেও আপনারা সচেষ্ট হবেন আশা করি। আদর্শগত বা বিশ্বাসগত পার্থক্য থাকলেও ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রত্যেক মানবতাবাদীকে, প্রত্যেক যোদ্ধাকে আমি অন্তত সহযোদ্ধা মনে করি। (পুনশ্চঃ কেউ আবার ধরে নেবেন না, আমি ‘মানবতাবাদী’ বা ‘সহযোদ্ধা’ হিসেবে প্রকারান্তরে কারো স্বীকৃতি চাচ্ছি। আমার নিজের অবস্থান সম্পর্কে আমি যথেষ্ট সচেতন, যেখানে কারো এ্যাপ্রুভাল বা ডিস্এ্যাপ্রুভাল খুব একটা গুরুত্ব বহন করেনা)।
পাঠকদেরকে অনুরোধ রইলো মন্তব্য করার জন্যে। আমি চেষ্টা করবো আলাদা আলাদা ভাবে সবার মন্তব্যের উত্তর দেয়ার (অবশ্য কেউ বিশেষনপূর্ণ বা বিদ্বেষপূর্ণ সম্বোধন বা মন্তব্য করলে সেগুলো বাদে)। সময়াভাবে তা না পারলে অন্তত সবগুলো মন্তব্য স্ক্যান করে ক্রিটিক্যাল বিষয়গুলো (গুরুত্বপূর্ণ বলছিনা কেননা প্রত্যেক পাঠকের মন্তব্যই আসলে গুরুত্বপূর্ণ) একটা প্রত্যুত্তরের মধ্যে লিখে দেয়ার চেষ্টা করবো।
সবাই ভাল থাকুন। ধর্মীয় মৌলবাদকে নির্মূল করার মুক্তমনার উদ্যোগ সফল হোক।
জুন, ২০১০
অবশেষে ‘উদ্ধৃতি’ এবং ‘ইন্টারনেট লিংক’- দুটোই successfully মন্তব্যের মধ্যে দিতে সমর্থ হলাম। মুক্তমনা এ্যাড্মিন, বিশেষ করে অভিজিৎকে ধন্যবাদ ব্যাপারটা আমার মত দূর্বল কম্পিউটার ব্যবহারকারীর জন্যে সহজ করে দেয়ার জন্যে।
আপনার কথার উদ্ধৃতি:
আমি এভাবে বলবো কথাগুলি…
মানুষের ধর্মীয় পরিচয় থাকার প্রয়োজন নেই। ধর্মের ভিত্তিতে ‘পরিচয়’ খাড়া করার যে অপচেষ্টা বিশ্বজুড়ে চলছে, তাকে নির্মূল করে, মানবতাকে ভিত্তি করে আগামীর পৃথিবী গড়াই হওয়া উচিত আমাদের লক্ষ্য।
আপনি, জনাব আবিদ, ‘মুসলমান’ নামের পরিচয় বাদ দিয়ে মানুষ হবার চেষ্টা করুন, এখানে বাকি সবাই যেমন।
মুসলমানদের নানা পদের আকামের বিরূদ্ধাচরন করেছেন আপনি একটা মেইল গ্রুপে, বিরাট কাজ করে ফেলেছেন। সেই শিশির বিন্দু দান কারী শৈবালের মতো অহম নিয়ে এসেছেন দীঘি সম ইসলামী-অপকর্মের সাফাই গাইতে। বাহাবা আশা করছেন? আবার কিছু ক্ষোভ ঝাড়া হয়েছে কেন, তা নিয়ে অভিযোগের ঝাঁপি খুলে বসেছেন।
এই লেখক নিয়ে একটু সচেতন হবার আহ্বান জানাবো আমি। ‘মুক্ত-মনা’দের সহনশীলতার সুযোগ নিয়ে বক্তব্যহীন পোস্ট দিয়ে পাতার পর পাতা ভরানো এই লেখকের লেখার কন্টেন্ট আসলে কি, তা বিচার করে দেখতে বলবো।
মাঠে নামুন, মিছিল করুন, আপনাদের জাকির নায়েক পাঠ সংঘ ভেঙ্গে দিয়ে জাকির নায়েককে নিষিদ্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন।
এই সাইটে এসে মরাকান্না বাদ দিয়ে দয়া করে কিছু কাজের কাজ করুন। পাহাড় জমে গেছে ধর্মীয় আবর্জনার, এর গায়ে চিনির সিরা ঢাললেই গন্ধ ঢেকে যাবে না, সে চেষ্টা দয়া করে বাদ দিন।
এই মন্তব্য ‘ব্যাক্তিগত আক্রমন’ মনে হলে কিছুই করার নাই। এটাই সত্য।
@আরিফুর রহমান,
:yes:
@আরিফুর রহমান, সহমত। “ধর্মেও আছি, জিরাফেও আছি” এ ধরনের মানুষ আরও বিপদজনক।
লেখকের গত কয়েকটা লেখা পড়ে মনে হয়েছে, উনি মূলত একজন pragmatic উদারপন্থী। আমাদের উপমহাদেশে অধিকাংশ উদারপন্থীই এধরণের। অর্থাৎ, সমাজের মৌলিক কোন কাঠামো চ্যালেঞ্জ না করে status quo-র মধ্যে যতটুকু পারা যায় মৌলবাদ ইত্যাদির সাথে যুদ্ধ করা। এতে আপত্তির কিছু নেই, এবং প্রায়োগিক দিক থেকে এই দৃষ্টিকোণের সঠিকতা অন্য অনেকেই এই ফোরামেই স্বীকার করেছেন।
কিন্তু সে ধরণের প্লাটফর্মের তো অভাব নেই, আরো অনেক নিশ্চয় হবে। ইন্টারনেটের দৌলতে মুক্তমনা সাইটগুলোর ভুমিকাই তো হল অন্তত ইন্টারনেট অঙ্গনে রাখ-ঢাক না করে আসল কথাটা বলতে পারা।
দেখুন, পশ্চিমা দেশগুলিতে মুক্তবুদ্ধি, গণতন্ত্র এসব যে তুলনায় অনেক শক্ত তার কারণ আগুনে পোড়া ইত্যাদি ভয় অগ্রাহ্য করে একটা সময়ে তারা গোড়া ধরে সমস্ত কিছু চ্যালেঞ্জ করেছিল, এখনও করছে। এ কাজটা কোন এক সময়ে আমাদেরও করতে হবে, “বাস্তবতার নিরিখে” যুগের পর যুগ কেবলই পিছিয়ে নিয়ে গেলে চলবে না। দুধরণের পদ্ধতি পাশাপাশিই চলতে পারে।
@রৌরব,
ধন্যবাদ।
মন্তব্যের জন্যে সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সময়াভাবে আলাদা আলাদা করে সবার মন্তব্যের উত্তর দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা বলে দুঃখিত। কিছু কিছু মন্তব্যের অংশবিশেষ নিয়ে আলোচনা করবো।
বুদ্ধিবৃত্তিক বা দার্শনিক লেখার মন্তব্যের ধরনের সাথে বাস্তব পদক্ষেপমুখী লেখার মন্তব্যের ধরনের যে পার্থক্য থাকবে, সে ব্যাপারে আমিও একমত। তবে আমার মনে হয় আমার লেখাতে দর্শনের তুলনায় বাস্তব উদাহরনের ব্যাপকতা ছিল অনেক বেশী। একটা দার্শনিক অবস্থানকে সামনে রেখে বিভিন্ন উদাহরন দিয়ে সেটার বাস্তবিকতার বা অস্তিত্বের প্রমানের একটা প্রচেষ্টা ছিল। তবে সেটা অবশ্যই আমার দৃষ্টিকোণ থেকে। দৃষ্টিভঙ্গীর ভিন্নতা সেখানে থাকতেই পারে।
নাস্তিকরা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে, এটা আমি অন্তত বিশ্বাস করিনা। আমি যদিও বিশ্বাস করি শুধুমাত্র নাস্তিকতা একজন মানুষকে নৈতিকতা শেখায়না বরং নৈতিকতা শেখার সাথে আরো অনেক উপাদান জড়িত, কিন্তু এটাও সত্যি আমেরিকার নাইন-ইলেভেন কিম্বা গুজরাটের মুসলিম নিধনের মত সন্ত্রাসী কার্যক্রমগুলো কোনো নাস্তিককে দিয়ে করানো সম্ভব নয়। বরং বাস্তবতা হলো, ধর্ম যে (অপপ্রয়োগ বা রাজনৈতিক ব্যবহারের সুবাদে) মানুষকে ভায়োলেন্ট বানাতে পারে, ইতিহাস সেটাই সাক্ষী দেয়। পৃথিবীকে আলাদিনের প্রদীপ দিয়ে ধর্মহীন করে ফেলা যেহেতু সম্ভব নয়, কাজেই সুশিক্ষা ও বিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসার করার পাশাপাশি মানুষকে ধর্মীয় সহনশীনতা শিক্ষা দেয়া দরকার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্যে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সেটাই মনে করি।
মুক্তমনাকে ‘আপনাদের প্ল্যাটফর্ম’ কিম্বা বিপ্লব পালকে ‘আপনাদের লোক’ বলে নিজেকে আলাদা করার ব্যাপারটা কিন্তু আমার নিজের কাছেও দৃষ্টিকটু। I wish I could write ‘we’ or ‘us’। আপনার বাড়ীতে হয়ত অনেক guest আসে। আপনি কাউকে না করেননা। কিন্তু তারপরও বাড়ীর host দের attitude ই কিন্তু একজন guest কে পরোক্ষভাবে বা প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দেয় তার access কতদূর। এবং সে হিসেবেই আগত মানুষটা আপনার বাড়ীতে easy বা comfortable feel করে। সরাসরি ব্যক্তিগত আক্রমনকে এড়িয়েও কিন্তু অবজ্ঞাপূর্ণ কমেন্ট লেখা যায়। একটা উদাহরন দিলেই বুঝা যাবে। সময়াভাবে সবগুলো পুরোনো মন্তব্য ঘেঁটে খুঁজে বের করা যেহেতু সম্ভব হচ্ছেনা, তবু যদ্দূর মনে আছে আমার কোনো একটা লেখার পরিপ্রেক্ষিতে করা একটা মন্তব্যের কাছাকাছি বক্তব্য ছিল- নাস্তিকতা একধরনের উচ্চপর্যায়ের বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থা এবং আস্তিকতা নিম্নপর্যায়ের বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থা। একজন ধর্মচর্চাকারী হয়ে মডারেট মানসিকতা বা মৌলবাদ নিয়ে লেখা আসলে ‘জাতে ওঠার প্রয়াস’’। আমার easy বা comfortable feel না করার কারনটা আশা করি এর থেকে কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন। একটা লেখার শিরোনাম বা প্রথমাংশ পড়েই মোটামুটি ধারনা করা যায় বিষয়বস্তুটা কোনদিকে যাচ্ছে। বিষয়বস্তুটার প্রতি আপনার অনাগ্রহ থেকে আপনি সেটা নাও পড়তে পারেন। আবার একেকটা ফোরামের trend একেকরকম। কোনো কোনো ফোরামে পাঠকদের অংশগ্রহন খুবই সক্রীয়, কোথাও আবার সেরকম নয়। আবার কোনো একটা লেখা পড়ে নিজেকে সেখানে জড়ানো আপনার পছন্দ নাও হতে পারে। আর আমার ব্যক্তিগত অভিমতে সবচেয়ে বড় ব্যাপারটা হলো, ‘expectation’। একটা ফোরামের সার্বিক অবস্থান বা লেখকদের লেখার ধরনই বলে দেয় সেখান থেকে কি আশা করা যায় বা যায়না। কাজেই মৌনতা অর্থই অবধারিতভাবে মোরাল সমর্থন, সেটা বোধহয় ধরে নেয়া ঠিক নয়। মুক্তমনার সদস্য হয়ত হাজারের ওপরে যাদের বেশীরভাগই সম্ভবত ধর্মে সংশয়বাদী বা অবিশ্বাসী। আমার লেখায় ত্রিশ, চল্লিশ বা পঞ্চাশটার ওপর হয়ত কমেন্ট পড়েনা। আমি যদি ধরে নিই, তার অর্থ বাকিরা সবাই আমার ধর্মীয় দর্শন বা অবস্থানকে সমর্থন করছেন, তাহলে সেটা সম্ভবত ভুল হবে। আর লেখায় ব্যক্তিগত-আক্রমনের বিষয়টা টেনে আনার উদ্দেশ্য কিন্তু ‘নালিশ’ নয় কিম্বা কাউকে হেয় করার জন্যেও নয়। বরং নিজেদের শোধরানোর উদ্দেশ্যে। ভুলকে ভুল হিসেবে বুঝতে পারা উদারতা; না বুঝতে পারাই সীমাবদ্ধতা। তারপরও যদি মনে হয়, ব্যক্তিগত-আক্রমনের বিষয়টা এ লেখাটায় টেনে আনা কিছুটা eye soaring লেগেছে কারো কারো চোখে, তবে সে জন্যে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। যদিও আমরা কেউই perfect নই, তবুও মানবতাবাদীদের কাছ থেকে মানুষ স্বভাবতই অধিক সহনশীলতা ও উদারতা আশা করে।
আরো দু’একটা মন্তব্যে ‘আমরা’, ‘আপনারা’ পার্থক্যের ব্যাপারটা এসেছে যা ওপরের প্যারাগ্রাফে আমি কিছুটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি। কাজেই নতুন করে আলোচনায় যাওয়ার বোধহয় প্রয়োজন নেই।
“ব্যক্তিকে তার চিন্তা থেকে আলাদা করে মূল্যায়ন করা সহজ না””। তত্ত্বগতভাবে কথাটা সঠিক এবং মজার ব্যাপার হলো, অনেকটা সেকারনেই মূলত ‘আমরা’, ‘আপনারা’ পার্থক্যটার উদ্ভব। তবে আমি অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ধর্মবিশ্বাস বা নাস্তিকতা একজন মানুষের অনেকগুলো পরিচয়ের মধ্যে একটা পরিচয় এবং ‘একমাত্র’ বা ‘চুড়ান্ত’ পরিচয় নয়। সামাজিক বা প্রাতিষ্ঠানিক সফলতা পেতে প্রয়োজন পরষ্পরের এই পার্থক্যকে উপলব্ধি ও স্বীকার করে নিয়ে সহনশীল হতে শেখা এবং চুড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যে সম্বিলিতভাবে কাজ করা। ব্যাপারটা হয়ত কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়, কেননা আশার কথা- “চিন্তা পরিবর্তনশীল’”।
সবাইকে আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্যে।
শেষ কমেন্ট পড়েছি আতিকেরটা। এই উত্তরটা লিখে মুক্তমনায় কপি-পেষ্ট করার জন্যে ঢুকে দেখি আদিলের নতুন একটা কমেন্ট পড়েছে ইতিমধ্যে। হয়ত আরো পড়বে। আশা করি আগামীকাল বাকি কমেন্টগুলোর কিছু কিছু অংশ নিয়ে আলোচনা করতে সমর্থ হবো।
সময় যদি আমাকে আরেকটু অনুগ্রহ করতো!!
সবাই ভাল থাকুন।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
‘ধর্মীয় সহনশীলতা শিক্ষা দেয়া দরকার’ বলতে কি বুঝানো হচ্ছে যে একমাত্র ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষের সহনশীলতা অর্জন করা সম্ভব অন্য কোনভাবে নয়। কিন্তু ধর্মীয় শিক্ষা যাঁরা অগ্রাহ্য করছেন অথবা বলা যায় ধর্ম যাঁরা মানছেন না তাঁদের মধ্যেও সহনশীলতার ভূড়ি ভূড়ি উদাহরন পাওয়া যাবে।
শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য যে সহনশীলতার প্রয়োজন সেটা শুধু ধর্ম শিক্ষার মাধ্যমে আসবে এমন কোন কথা নেই, সেটা অন্য কোন মানবিক বোধ সম্পন্ন আদর্শের অনুসারী হয়েও ঘটতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। আর এই বিশ্বাসই আমি মনে করি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য প্রথম শর্ত।
এখানেই দৃষ্টিভঙ্গীর পার্থক্য বলে আমার মনে হয়।
@ব্রাইট স্মাইল্,
না। ধর্মীয় সহনশীলতা শিক্ষা দেয়া আসলে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া নয়। বরং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি শ্রদ্ধা শেখানো, যা পারিবারিক, ধর্মীয়, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক, ইত্যাদি বিভিন্ন পরিবেশে শিক্ষা দেয়া যেতে পারে।
ধর্মীয় মৌলবাদকে প্রতিহত করার অনেকগুলো পদক্ষেপের মধ্যে (বিপ্লব কিছু কিছু তালিকা যেমন দিয়েছেন) এটাকেও অন্তর্ভূক্ত করলে সফলতা পাওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
এটি শুনতে খুব ভাল লাগে, এমন হলে আমি সব থেকে বেশী খুশী হতাম।
কিন্ত আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে এটা হয় না। কারনটা বলি।
সর্ব ধর্ম সত্য এবং সমান-এই কথাটা কিন্ত কোরান বলে না। যিনি বলেছিলেন, সেই “যতমত তত পথ” -এবং শুধু বলেন নি, সব ধর্মই পালন করে এই উপলদ্ধি তে এসেছিলেন -সেই শ্রী রামকৃষ্ণ ( যি্নি দুবছর পাক্কা মুসলিমদের
মতন জীবন নির্বাহ করেছেন ইসলাম শিখতে) যে নব্য উদার হিন্দু ধর্মের প্রতিষ্ঠা করেন-তার ধারক এবং বাহক হচ্ছে রামকৃষ্ণ মিশন। যেহেতু রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র ছিলাম একদা-সেহেতু এই মিশনের অসংখ্য ফলোয়ার দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এবং তারা ওপরে যতই যা বলুক না কেন, ভেতরে ভেতরে সাম্প্রদায়িকতার আগুনটা ভালোই আছে-আছে হিন্দু হিসাবে নিজেদের সামাজিক পরিচিতি জাহির করার প্রচেষ্টা। আমি আজ পর্যন্ত শুধু অসম্প্রদায়িক তাদেরই দেখেছি, যারা নাস্তিক-এবং বিজ্ঞানমুখী ও যুক্তিবাদি।
সুতরাং অভিজ্ঞতাই আমাকে শিখিয়েছে ধর্মীয় সহনশীলতার অস্তিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ। বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলিমই সহনশীল উদার মুসলিম-কিন্ত তারা কি হিন্দুদের ওপর অত্যাচার ঠেকাতে পেরেছে?
@আব্দুর রহমান আবিদ,
বিপ্লবের কথা কিন্তু অস্বীকার করা যায় না। রামকৃষ্ম কি বলে গেছেন তাতে তেমন আস্থা আমিও রাখি না। আজকাল ধর্মওয়ালা লোকজন সবাই বেশ উদারতার ভান ধরেন। কারন নাহলে মনে হয় নিজ ধর্মের অনুসারী প্রগতিশীল মানসিকতারর লোকজনেরাই ধর্মে সম্পর্কে সন্দিহান হবেন এই আশংকা থেকে।
সব প্রথাগত ধর্মেরই বাজে দিকের মূল উতস হল সুপিরিয়রিটি বোধ। যেমন ধরেন ইসলাম ধর্ম আর কোন ধর্মকে স্বীকৃতি দেয় না, নিজেদেরই শ্রেষ্ঠ বলে নিজেই সার্টিফাই করে। বিধর্মীদের ঘৃণা করার কত শিক্ষা আমরা বাল্যকাল থেকে পেয়ে আসি তা নিশ্চয়ই বলতে হবে না। ধর্ম নিজেদের শ্রেষ্ঠ দাবী করার জোর শিক্ষা দিলে একই সংগে অন্যদের সম্পর্কে প্রকৃত শ্রদ্বাবোধ কিভাবে আসতে পারে?
কোরান কোনরকম পূর্ব প্রভাবিত না হয়ে খোলা মনে পাঠ করলে অমুসলিমদের প্রতি মনে শ্রদ্ধাভাব হওয়ার সম্ভাবনা বেশী, নাকি উল্টাটা হওয়ারই সম্ভাবনা বেশী?
@আদিল মাহমুদ,
অনেকগুলো সত্যি কথা বলেছো আদিল। তত্ত্বগতভাবে ধর্মীয় সহনশীলতা শিক্ষা দেয়ার বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। আমি কিন্তু এটাকেই মৌলবাদ প্রতিরোধে চুড়ান্ত সমাধান বলিনি। বিভিন্ন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি এটাকে অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে বলেছি। আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে বলে মনে হয়েছে। সেটা বাস্তবে আশানুরূপ নাও হতে পারে।
ধরো বাংলাদেশ সরকার বাইতুল মোকাররমের জাতীয় খতিবের শুক্রবারের জুম’আর নামাজের খুতবায় নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠিত করলো এবং সেখানে আহমেদিয়াদের প্রতি অসনশীলতামূলক আচরন না দেখানোর একটা অংশ থাকলো। তোমার কি মনে হয়না সেটা কিছুটা হলেও একটা পজিটিভ প্রভাব ফেলবে দেশের সাধারন সুন্নী মুসলমানদের মনে আহমেদিয়াদের ব্যাপারে? আর এটা যদি বিটিভি-তে খতীব সাহেব বক্তৃতার মধ্যে বলেন?
নীচে বিপ্লবের একটা মন্তব্যের প্রত্যুত্তরে আমার পুরোনো একটা লেখার লিংক দিয়েছি। লেখার শেষভাবে এ বিষয়ে কিছুটা বলার চেষ্টা করেছি। তবে আবারও বলছি, ধর্মীয় সহনশীলতা শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত এবং আমি কিন্তু এটাকে কোনো চূড়ান্ত পদক্ষেপ বলছিনা; বরং শিক্ষা ও বিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসারের পাশাপাশি এটাকে একটা সহায়ক পদক্ষেপ বলছি।
আমি সমাজবিজ্ঞানে কোনো চিন্তাবিদ নই। হয়ত ওপরের জিনিষটার বাস্তব প্রয়োগ সম্ভব না। তবে আমি আমার নিজের ছেলেমেয়েদেরকে অন্তত আমার মত করে মানুষকে ভালবাসতে শেখানোর চেষ্টা করি। আমার ধারনা সম্ভবত অনেকেই করেন।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
আপনি যেভাবে ধর্মীয় সহনশীলতা প্রচারের কথা বলছেন তাতে একেবারেই কিছু কাজ হবে না তেমন বলছি না, কিছু তো হবেই। তবে আমি যা বলতে চেয়েছি তা হল যে প্রথাগত ধর্ম একদিকে জোরে শোরে আমল করতে থাকলে আর অন্যদিকে সব ধর্মই সমান, ধর্মের চোখে কাউকে হেয় করা যায় না এমন ধরনের কথাবার্তা বলাটা হবে সুষ্পষ্ট স্ববিরোধীতা। অন্য ধর্মের কথা জানি না, তবে কেউ যদি কোরান বুঝে পড়ে তাহলে তার কাছে অন্য ধর্মের লোকদের প্রতি কোনরকম শ্রদ্ধা জন্ম হবার কারন নেই। ঈমাম সাহেব খতিব সাহেবদের দিয়ে কালে ভদ্রে হয়ত দুয়েকটা ভাল ভাল কথা বলানো যাবে তবে সেগুলি হবে অনেকটাই লোক দেখানো। একজন এসব কথা শুনবে আবার কোরান খুলে পড়বে সেখানে অবিশ্বাসী/বিধর্মীদের আল্লাহ কি তীব্রভাবে ঘৃণা করার আয়াত লিখে রেখেছেন, যাকে বর্নবাদী বিদ্বেষ ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। সে ঈমাম খতিবদের ওসব হাততালি পাওয়া লেকচারে বেশী আমল দেবে নাকি কোরানের আয়াতে বেশী আয়াত দেবে? শুধু ঈসরাইলের অমানবিক আচরন বা আমেরিকার আফগান/ইরাক দখলই নয়, মুসলমানরা যে জন্মগতভাবেই বলতে গেলে বিধর্মীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করে সেটা তো গোপন কিছু না। তার ভিত্তী তো কোরান হাদীসেই আছে। সেগুলি এড়াবেন কি করে?
একজন খৃষ্টানকে আমি ভালমানুষী দেখাতে বললাম যে তোমার সাথে আমার কোন বিবাদ নেই, যার যার ধর্ম তার তার কাছে, ব্যাক্তিগত ব্যাপার। তবে বাবা, আমার ঐশী গ্রন্থ কোরান যার প্রতিটা অক্ষর পালন করা আমার জন্য ফরয বলে যে তুমি যত ভাল মানুষই হও না কেন তুমি কোনদিন আমার বন্ধু হতে পার না। ষ্পষ্ট আয়াত আছে। এরপর সে আমাকে রেসিষ্ট বললে বা আমার আপাত ভালমানুষীকে ভন্ডামী বললে আমার কি বলার থাকতে পারে? আমি যাকে আদর্শ মহাপুরুষ মানি, তিনি প্রতিজ্ঞা করে গেছেন কাফেররা যে পর্যন্ত না আল্লাহকে মেনে তার ইবাদত না করে সে পর্যন্ত তাদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার। আমি তো তারই উম্মত, তার সব কাজ আমল করা আমার জন্যও ফরয। আমার এই সুন্নাহ পালনের প্রতিজ্ঞা শুনে কোন বিধর্মীর ঘাড়ে দুটা মাথা আমার ধারে কাছে আসার? তাদের সাথে আমার কোন সমস্যা নেই বলাটা একটা বড় ধরনের ভন্ডামী হবে না? আমার পক্ষে একই সাথে কোরান হাদীস মেনে ভিন্ন ধর্মালম্বীদের কি করে শ্রদ্বা সম্ভব?
আমার পক্ষে কোন বিধর্মীর সাথে আমার কোন সমস্যা নেই, শ্রদ্ধা করি এসব কথা বলার আগে স্বীকার করে নিতে হবে যে কোরান হাদীসের বেশ কিছু আয়াত এই যুগে অচল। নইলে সমস্যার মূল থেকেই যাবে।
ভারত বাংলাদেশে অমন আপাত নিরীহ চেহারা হিন্দু মুসলমান সবাই ধরে রাখে, দরকার মত মনের আসল ভাব ঠিকই প্রকাশ হয়ে পড়ে।
কোরান হাদীসের সব বানী সব যুগের সব দেশের জন্য অবশ্য পালনীয় এই হাস্যকর ধারনা থেকে বের না হতে পারলে চূড়ান্তভাবে তেমন লাভ কিছু হবে না। এর জন্য প্রথম দরকার রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে ধর্মের আছর পুরো দূর করা। মোল্লা আলেম স্বামীজি এনাদের মাথায় তুলে না নেচে তাদের বর্জন করাই উপায়। ধর্মকে মানুষ অত গুরুত্বপূর্ণ মনে করলে তো নিজ গরজেই গবেষনা করে শেখার কথা, গ্রাম্য বা আধা শিক্ষিত মোল্লা আলেমের কাছে উচ্চ শিক্ষিত লোকের কেন দৌড়াদৌড়ি করতে হয়? যার ধর্ম পালন করার সে তার মত ব্যাক্তিগতভাবে পালন করবে। যেখানেই সমষ্টিগত কোন ব্যাপার আসবে সেখান থেকেই ধর্মের ছাপ দূর করতে হবে।
@আদিল মাহমুদ,
আদিল, আমার ব্যক্তিগত অভিমতে নাস্তিকতা অনেকটা ‘ব্ল্যাক এ্যান্ড হোয়াইট’ এরিয়ার মত যেখান থেকে সাদাকে সাদা, কালো কে কালো বলা তুলনামূলকভাবে সহজ। এ বাদে বাকি সবই ‘গ্রে-এরিয়া’ যা সুবিশাল এবং যেখানে একেক আস্তিক একেকরকমঃ সেই ‘০’ (শূণ্য) থেকে ১০০-এর মধ্যে।
আমি কিন্তু নাস্তিক না। কাজেই সমাজ পরিবর্তনের পদক্ষেপগুলোতে আমাকে অধিক সতর্ক হতে হয়, সুবিশাল আস্তিক অডিয়েন্স-এর ধর্মানুভূতির প্রতি খেয়াল রাখতে হয় (কেননা সমাজ পরিবর্তন তাদেরকে বাইরে রেখে মনে হয়না সম্ভব), বক্তব্যে ‘পলিটিকাল কারেক্টনেস’ থাকতে হয়। রৌরব যেমনটা বলেছেন, “সমাজের মৌলিক কোন কাঠামো চ্যালেঞ্জ না করে status quo-র মধ্যে যতটুকু পারা যায় মৌলবাদ ইত্যাদির সাথে যুদ্ধ করা”।
একজন নাস্তিকের কাছে এটাকে হয়ত দূর্বলতা বা স্ববিরোধীতা বলে মনে হতে পারে। কিন্তু আমি যে একজন আস্তিক, সেটা মাথায় রাখলে আমার মনে হয়, তোমার বুঝতে সুবিধা হবে কেন তোমার সব প্রশ্নের সরাসরি ‘হ্যাঁ’ কিম্বা ‘না’ ধরনের উত্তর দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
তবে আমিও যে “রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে ধর্মের আছর দূর করার পক্ষে”, আশা করি আমার লেখাগুলোতে তার প্রতিফলন আছে। ভাল থেকো।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
দূঃখিত আপনাকে কিছু বিব্রতকর প্রশ্ন করে বিপদে ফেলতে। প্রশ্নগুলির উত্তর কি তাতে আমার নিজের মনে কোন সংশয় নেই। আপনি সরাসরি হ্যা কিংবা না উত্তর দেবেন সেটাও আশা করিনি। প্রথাগত ধর্মে পূর্ণ বিশ্বাসী হবার এটাই সমস্যা। গ্রে এরিয়া যাকে বললেন আমার কাছে সেটাকে এখন মনে হয় হয় ষ্পষ্ট স্ববিরোধীতা, বা নিজেকে স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করা।
আমিও কিন্তু নাস্তিক নই, প্রথাগত ধর্মে কোনভাবেই পূর্ন বিশ্বাসী না হলেও আমি আস্তিক। তবে গডের অস্তিত্ব ছাড়া ধর্মের নামে যা কিছু বলা হয় সেগুলি অন্ধভাবে মেনে নিতে আমার কড়া আপত্তি আছে, সে বাইবেলে লেখা থাকুক আর কোরান হাদীস যেখানেই লেখা থাকুক না কেন।
নিজে কোরান ১০ ভাগও কোনদিন নিজ ভাষায় না পড়ে সেই কোরানকে শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ, কেয়ামত পর্যন্ত সকল জাতির জন্য একমাত্র পূর্নাংগ জীবন ব্যাবস্থা যা অবশ্যই পালনীয় এই জাতীয় কথাবার্তা এখন শুধু অর্থহীনই নয় রীতিমত হাস্যকরও ঠেকে। এই অন্ধবিশ্বাসে কোন কৃতিত্ব আছে বলে মনে করেন?
ধর্মকে রাষ্ট্রযন্ত্র বা সিষ্টেম থেকে পুরো আলাদা করা হল অতি আবশ্যিক ধাপ। তবে মৌলিক কাঠামো অক্ষুন্ন রেখে বেশীদুর এগোন যাবে না, সমস্যার মূল সেই অন্ধবিশ্বাস রইয়েই যাবে। আপনি নিঃসন্দেহে আপনার সন্তানদের ধর্ম জাতি নির্বিশেষে সব মানুষকে সমানভাবে ভালবাসার শিক্ষা দেন তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই। পশ্চীমের খোলা হাওয়ায় কাজটা আরো অনেক সহজ হয়েছে। বাংলাদেশে আপনি পারিবারিকভাবে শিক্ষা দিলেও হয়ত তাতে খুব একটা লাভ হত না। ধর্মের বিষবাষ্প কিছু না কিছু শিশু মনে ঢুকে পড়তই পরিবেশের কারনে। যে হুজুর হয়ত বাসায় এসে তাদের আরবী পড়া শেখান তিনিই শিক্ষার অংশ হিসেবে অনেক কিছু মাথায় ঢুকিয়ে যাবেন।
কথা সেটা নয়। আপনার সন্তানেরা আপনার উদার শিক্ষার মাঝে বড় হচ্ছে, এখন যদি তারা একটু কৌতূহলী হয়ে কোরান হাদীস বুঝে বুঝে পড়তে চায় তাহলে কি তারা একটা বিরাট দ্বন্দ্বের মাঝে পড়ে যাবে না? কোরান হাদীসের অসংখ্য আয়াত দিয়ে দেখানো যায় যে আপনি যে উদার নৈতিক শিক্ষা দিচ্ছেন তাদের ধর্মীয় দর্শন ঠিক তার উলটা শিক্ষা দেয়।
এই দ্বন্দ্ব দূর না করে আসলেই কোন সমাধান হবে?
@আদিল মাহমুদ,
আদিল, আমি আতিকের একটা প্রশ্নের জবাবে বলেছিলাম, ধর্মবিশ্বাস বা নাস্তিকতা একজন মানুষের অনেকগুলো পরিচয়ের মধ্যে একটা এবং এটা ‘একমাত্র’ বা ‘চুড়ান্ত’ পরিচয় নয়। আমি মনে করি, সমাজের একেকটা সমস্যা একেকরকম এবং একই চিকিৎসা সব ধরনের সমস্যার জন্যে প্রযোজ্য নয়। কোনো কোনো সমস্যাকে সমাধান করতে হয় root বা bottom থেকে top-এ। আবার কোনো কোনো সমস্যাকে সমাধান করতে হয় top থেকে bottom-এ কিম্বা এ দুটোর combination-এ, সমস্যার ধরন বুঝে। চার্চের শাষনকে eliminate করার জন্যে কিন্তু বাইবেলের কোনো ভার্সে পরিবর্তন আনা লাগেনি। সহিংস ভার্সগুলো বাইবেলে আজও রয়ে গেছে। চার্চের শাষনের অনুপস্থিতি এবং পাশাপাশি শিক্ষা, বিজ্ঞান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারনে পশ্চিমাবিশ্বের খ্রীষ্টানরা আজ উদারপন্থী। হ্যাঁ, মৌলবাদ সেখানেও আছে কিন্তু ইসলামী দেশগুলোর তুলনায় তা অনেক কম এবং সহিংস নয় (আরও থাকতো না যদিনা আমেরিকা ধর্মকে রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে ব্যবহার না করতো)। এছাড়া আমি আমার মুক্তমনায় লিখিত গত তিনটে আর্টিকেলে দেখিয়েছি ধর্ম একজন শিক্ষিত, পেশাজীবী মানুষের জীবনে ছোটখাট পারাবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় কিছু আচার-আচরন ছাড়া জীবন-যাপনের প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় কিম্বা তার সমাধানে আসলেই তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হয়না। (কোর’আনের অসংখ্য জায়গাতে আল্লাহ রিজিকের মালিক লেখা থাকলেও এবং ইসলামের নবী এব্যাপারে হাজারও হাদিস দিয়ে থাকলেও আমি চাকরি থেকে ‘লে-অফ’ হলে কিন্তু হাদিস-কোর’আনের কোনোটারই ধার ধারবো না। বরং আমি পাগলের মত চাকরির জন্যে আমেরিকার এমাথা থেকে ওমাথা দৌড়তে থাকবো। এটাই বাস্তবতা। এখন যদি আমি বলি, চাকরি যেহেতু আমাকেই খুঁজতে হয়, আমার ‘রিজিক’ আমাকেই যেহেতু জোগাড় করতে হয়, কাজেই কোর’আন বা হাদিস থেকে এসব কথাবার্তা তুলে দেয়া হোক, তবে তাতে হয়ত যুক্তি আছে কিন্তু অনেকেই এমন আছেন যারা হয়ত কোর’আন-হাদিসে রিজিকের কথা থাকা বা না থাকা নিয়ে সামান্যও মাথা ঘামান না। আর নিজে নিজে চাকরি জোগাড় করার পর ধর্মপ্রাণ কেউ যদি আপন মনে বলেন ‘আল্লাহই রিজিকের মালিক’, তাতেই বা এমন ক্ষতি কি? এটা একটা উপমা দিলাম শুধু)।
রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধর্মের প্রভাবমুক্ত করা সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে আবশ্যিক ধাপ। এটা top থেকে bottom-এ যাওয়া। আর বিপ্লব তার লেখাটাতে শিক্ষা ও বিজ্ঞানের যে প্রচার ও প্রসারের কথা বলেছেন, সেটা bottom থেকে top-এ যাওয়া। এ দুটোর combination-এ ধর্মীয় মৌলবাদকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিহত বা দমিত করা সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস। এর পাশাপাশি পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় পরিবেশে একটা সহায়ক পদক্ষেপ হিসেবে ধর্মীয় সহনশীলতা শিক্ষা দিলে (যা আমি আমার লেখায় বা পূর্বোক্ত মন্তব্যগুলোতে লিখেছি) সফলতা আরও বেশী পাওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস। আমার আব্বা ছিলেন আমার চেয়েও অনেক বেশী ধর্মপরায়ন। আমাদের বাড়ীর দু’পাশে ছিল দুই হিন্দু ঘর। একজন ঠাকুর এবং একজন কামার। তাদের সাথে আমাদের পারিবারিক ঘনিষ্টতা ছিল প্রতিবেশীর চেয়েও অনেক অনেক কাছের। তাদেরকে আপন ভাবতে পারার পেছনে কিম্বা তাদের ছেলেমেয়েদের সাথে আমাদের প্রগাঢ় বন্ধুত্ব হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল আমার আব্বা-মায়ের আমাদেরকে দেয়া পারিবারিক শিক্ষা। আমি নিশ্চিত সেই একই শিক্ষা ওদের বাবা-মা’রাও ওদেরকে দিয়েছিলেন, যারা নিজেরাও ছিলেন ধর্মপরায়ন।
তাছাড়া আমি নিজেই কি সবচেয়ে বড় প্রমান নই যে কোর’আনের সহিংস ভার্সগুলো বা সেধরনের হাদিসগুলো আমার ভিন্নধর্মাবলম্বীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহনশীল হতে সামান্যও বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে সমর্থ হয়নি? (অবশ্য আমাকে যদি ‘ভন্ড’ না ভাবা হয়। তুমি যে অন্তত আমাকে তা ভাবো না, সেটা অবশ্য আমি জানি)। এবং আমি কিন্তু একা নই। আমার ‘মডারেট মুসলিম’ লেখাটায় আমার মত সহনশীল ও উদারপন্থী অসংখ্য মুসলমানের অস্তিত্ব (‘অরকা’ সদস্যদের মাঝে) আমি দেখিয়েছি। আমার বা তাদের সন্তানরাও যে এর ব্যতিক্রম হবে না, তা গ্যারান্টি দিতে না পারলেও কিন্তু সহজেই আশা করা যায়।
সবশেষে তোমাকে আমার অনেক আগের লেখা নীচের নিবন্ধটা পড়তে বলবো। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী দু’জন ধর্মপ্রাণ মানুষ ধর্মের ওপরে উঠে কিভাবে একজন আরেকজনের প্রতি সহমর্মিতা ও ভালবাসা দেখাতে পারে এটা তার জ্বলন্ত প্রমান। এমন অসংখ্য ঘটনা আমাদের সবার অগোচরে প্রতিদিন ঘটছে যা প্রমান করে মানুষের অবস্থান ধর্মের অনেক ওপরে।
ধার্মিকের ভাষা
বিশ্বকাপ ফুটবল (এদেশে আবার ‘সকার’ বলে একে) শুরু হয়ে গেছে। আমি আবার খুব ফুটবলের পাগল। সামনে উইকএন্ড। সমানে খেলা দেখার ইচ্ছে আছে। তোমার পরবর্তী মন্তব্যের উত্তর দিতে দেরী হলে কিছু মনে করোনা যেন। ভাল থেকো।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
আবিদ ভাই, আপনাকে খুলেই বলি,আমাদের সমস্যা একজন মুসলমানকে নিয়ে, সমস্যা একজন খৃষ্টাঙ্কে নিয়ে বা হিন্দুকে নিয়ে, কিন্তু একজন আস্তিককে নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা নেই। যেমন সমস্যা নেই লালন ফকির, রবীন্দ্রনাথ বা কবির কে নিয়ে।তাঁরা যখন মানবতার জয়গান গান তখন কোন সন্দেহের অবকাস থাকে না। কিন্তু একজন মুসলমানট,খৃষ্টান বা হিন্দু নীজেকে পরস্পর থেকে শ্রেয় মনে করে। এটাই ফ্যাসিজন, তাই প্রত্যেকটি স্বঘোষীত ধার্মিকই এক এক জন ফ্যাসিবাদী। সে কারনেই তাদের মুখে যখন মানবতার গান শোনা যায় তখন সন্দেহ জাগাটাই সংগত।
যদি বলেন উত্তরাধীকার সূত্রেই আমরা ধর্ম পেয়েছি তাই ঘোষনার কিছু নেই, তাহলে আমরা বলবো, মানবতার জয়গান গাওয়ারন জন্যই আমরা উত্তরাধীকার সম্পত্তি ত্যাগ করেছি। হয়েছি মুক্ত। এখন আমরা জানি আপনি কি ভাবেন, কারন কিছুকাল আগে আমরাও আপনার মত ভাবতাম। কিন্তু আপনি জানেন না আমরা কি ভাবি। কারন আপনার সেই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই। ফলে আপনি এই দুই অভিজ্ঞতার তুলনা করতে পারেন না । যেটা আমরা পারি।
কনফুসিয়াস বহু আগেই বলে গেছেন – এক পক্ষ থেকে শুনলে তুমি অন্ধকারে থেকে যাবে, দুই পক্ষ থেকে শুনলে তুমি হবে আলোকিত। আমরা দুই পক্ষকেই উপলব্ধি করেছি। আমাদের কাছে আপনার দেখা হচ্ছে, খাঁচায় বসে বাকি দুনিয়া দেখা, আর আমরা এখন মুক্ত অবস্থায় খাঁচাগুলো আর তার বাসিন্দাদের দেখি। এটা আপনাকে সত্যিই বোঝান যাবে না। এটা উপলব্ধির ব্যাপার। দোজখের ভয়ে আচ্ছন্ন মানসপটে এই উপলব্ধি সম্ভব না। বেহেস্ত হারাবার ভয় নিয়েও প্রশ্নের আরো আরো গভীরে যাওয়া সম্ভব না।
আপনি যদি নীজের অবস্থান প্রত্যাদেশ বিরোধী আস্তিকের স্তরে নিয়ে আসতে পারেন, তখন আপনার মুসলমান পরিচয় ছাপিয়ে মানূষ পরিচয় বড় হয়ে উঠবে। তার আগে আপনি প্রথমে মুসলমান পরে মানূষ। আর একজন মুসলমান, একজন খৃষ্টান বা হিন্দুর মতই ফ্যাসিস্ট। কোন ফ্যাসিজমই মানবতার পক্ষে কাজ করতে পারে না। ফলে অবিশ্বাস মুক্ত হওয়া আসলেই কঠিন।
আশাকরি আমার কথা গুলো আপনি যুক্তিবোধের আলোকেই গ্রহন করবেন, ব্যাক্তিগত ভাবে নয়। এখানে আমরা উভয়ে কিছু চিন্তার প্রতিনিধীত্ত্বই করছি কেবল।
@আতিক রাঢ়ী,
:yes: :yes:
অসাধারন বলেছেন।
@আতিক রাঢ়ী,
আতিক, দর্শন নিয়ে যুক্তিপূর্ণ আলোচনাকে ব্যক্তিগতভাবে নেব কেন? এবং এটা সত্যিই বলেছেন, আমরা আসলে চিন্তার প্রতিনিধীত্ত্বই করছি কেবল।
আমার মনে হয় আপনিও স্বীকার করবেন যে, লালন ফকির বা রবীন্দ্রনাথের মত ধর্মীয় দর্শনের আস্তিকের সংখ্যা সমুদ্রে একফোঁটা পানির মত। বাকি সবই প্রথাগত ধর্মানুসারী হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদী, খ্রীষ্টান বা মুসলমান। এবং আপনার বক্তব্য অনুযায়ী তাদেরকে নিয়ে আপনাদের (সরলীকরনের জন্যে নাস্তিক ধরে নিই) সমস্যা। আমার ব্যক্তিগত অভিমতে এই অবস্থানের দুটো সীমাবদ্ধতা আছে। এক, দর্শনগত সীমাবদ্ধতা এবং দুই, সমাধানভিত্তিক সীমাবদ্ধতা। নীচে ব্যাখ্যা করছি।
দর্শনগত সীমাবদ্ধতাঃ আপনি আস্তিকতার সীমানা অতিক্রম করে তারপর যেহেতু নাস্তিকতায় পৌঁছেছেন এবং যে কারনে প্রথাগত ধর্মে বিশ্বাসী আস্তিকদেরকে আপনার কাছে সীমিত দৃষ্টিভঙ্গীর খাঁচাবন্দী মানুষ বলে মনে হচ্ছে, এটা প্রথাগত আস্তিকদের প্রতি আপনার একধরনের করুণাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গী যা অবজ্ঞাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গীতে রূপান্তরিত হতে খুব বেশী দেরী হয়না। এবং এই মানসিকতারই চুড়ান্ত ধাপ হলো প্রথাগত আস্তিকদের তুলনায় নিজেদেরকে উচ্চতর বুদ্ধিবৃত্তিক বা সুপিরিয়র মনে করা।
যাকে নিজের চেয়ে ইনফিরিয়র মনে হয়, তার কোনো কথা বা বক্তব্যের প্রতি কিন্তু খুব সহজেই এই মনোভাব চলে আসে, “Why should I even bother to what you have to say! You are a dirt anyway.” এখন আপনি যদি স্বভাবগতভাবে নম্র ও ভদ্র হয়ে থাকেন এবং মধ্যপন্থী মানসিকতার মানুষ হয়ে থাকেন, তাহলে এই মনোভাব হয়ত শুধু আপনার মনের মধ্যেই থাকবে; আপনার লেখায় বা কথায় তা বের হয়ে আসবে না। আর যদি আপনি তেমনটা না হন, তাহলে আপনার লেখায় বা কথায় তা অহরহ প্রকাশ পাবে। মুক্তমনার অনেক লেখায় এবং আমার লেখার মন্তব্যগুলোতে আপনি এই মনোভাবের প্রকটতা লক্ষ্য করেছেন আশা করি।
তাছাড়া যাদেরকে খাঁচাবন্দী, সীমিত দৃষ্টিভঙ্গীর মানুষ মনে করবেন নাস্তিকতার উচ্চতর অবস্থানে বসে, তাদের নিজেদের ভেতর কোনো বিভাজন (মডারেট বা মৌলবাদী) কিন্তু তত্ত্বগতভাবে আসলেই চোখে পড়ার কথা নয়। তাদের কাউকে সহযোদ্ধা ভাবা তো দূরে থাক, যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়াও কিন্তু কঠিন। মুক্তমনার অনেক লেখায় এবং আমার লেখার মন্তব্যগুলোতে আপনি এই মনোভাবটার প্রকটতাও লক্ষ্য করেছেন আশা করি।
সমাধানভিত্তিক সীমাবদ্ধতাঃ আপনি যাকে সমস্যা মনে করেন, তার কোনো না কোনো সমাধান নিয়েও ভাবেন। আমি যেহেতু নাস্তিক নই, কাজেই আপনাদের এই সমস্যার সমাধান নিয়ে চিন্তা করা স্বভাবতই আমার সাধ্যের অতীত। তবে সমস্যাটা যে অনেক বড় সেটা অন্তত আন্দাজ করতে পারি। পৃথিবীর আশি কোটি হিন্দুর হৃদয় থেকে ভগবান বিশ্বাস ও বেদ-গীতা বিশ্বাস দূর করা, একশ কোটি খ্রীষ্টানের হৃদয় থেকে ঈশ্বর বিশ্বাস ও বাইবেল বিশ্বাস দূর করা, একশ কোটি মুসলমানের হৃদয় থেকে আল্লাহ বিশ্বাস ও কোর’আন বিশ্বাস দূর করা এবং একই ভাবে কোটি কোটি বৌদ্ধ বা ইহুদী ধর্মাবলম্বীদের হৃদয় থেকে প্রথাগত ধর্মবিশ্বাস ও স্ব স্ব শ্রষ্টার অস্তিত্ব দূর করা কিন্তু সহজ কথা নয়। enemy line এত সুবিশাল set করলে সেটা যদিও নিশ্চিতভাবে একটা যুদ্ধ, কিন্তু সে যুদ্ধে বিজয় পাওয়া নিয়ে আপনারা হয়ত opimistic, কিন্তু আমার খাঁচাবন্দী সীমিত জ্ঞানে স্বভাবতই আমি opimistic নই।
পক্ষান্তরে, আমার যুদ্ধ হয়ত শুধু জামাতে ইসলামী ও জেএমবি’র বিরুদ্ধে। আমার enemy line অনেক ছোট। বাংলাদেশের সংবিধান আমার পক্ষে; দেশের প্রচলিত আইন-কানুন ও পুলিশবাহিনী আমার পক্ষে যা দিয়ে জেএমবি কে আমি ইতিমধ্যেই পরাজিত করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রও প্রায় তৈরী করে এনেছি বাংলাদেশে। এর পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তন এনে আমি মাদ্রাসা ছাত্রদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে সুশিক্ষিত করে সমাজের প্রগতশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ হাতে নিচ্ছি। হ্যাঁ, মৌলবাদকে হয়ত root থেকে আমি নির্মূল করতে পারবো না। কিন্তু হাত-পা ভেঙ্গে এতখানি অথর্ব বানিয়ে ফেলতে পারবো যে, অন্তত শত বছরে আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
আতিক, কথাগুলো কিন্তু ব্যক্তি আপনাকে বলছিনা আমি। আশা করি আপনিও তা বুঝেছেন। আমার লেখাগুলোয় পজিটিভ মন্তব্য করা সীমিত কয়েকজন মানুষের মধ্যে আপনি একজন। আমি মূলত আপনার দর্শনটার সীমাবদ্ধতার ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলাম আমার দৃষ্টিভঙ্গী থেকে।
সবশেষে আবারও বলবো, আপনার বিশ্লেষনাত্মক যুক্তি আমি বেশ পছন্দ করি যা আমার কোনো কোনো প্রতিমন্তব্যে আমি বলেছিও। আশা করি আমার এ মন্তব্যটার একটা বাক্যকেও আপনি ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না, প্লিজ। ভাল থাকুন।
@আতিক রাঢ়ী,
আতিক, আগের মন্তব্যটা আসলে বেশ তাড়াহুড়ো করে লেখা। রেকর্ড করা একটা ফুটবল খেলা দেখার জন্যে আরেক বাসায় যাওয়া লাগবে একটু পরেই। আমি কিন্তু বলছিনা যে সব নাস্তিকের মধ্যেই সুপিরিয়র মনোভাবের সৃষ্টি হবে। এটা একটা সম্ভাবনা এবং ভাল রকম একটা সম্ভাবনা সেটাই বলতে চেয়েছি। খুবই বিনয়ী এবং নিজেকে আর দশজন সাধারন মানুষের মতই ভাবেন এমন নাস্তিকও নিশ্চয় আছেন। সম্ভবত আপনিও তাই। কাজেই আমার মন্তব্যকে নাস্তিকদের প্রতি জেনারালাইজ্ড্ মন্তব্য হিসেবে ধরে নেবেন না প্লিজ।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
২০,০০০ বছর আগে মনুষ্য সমাজে ধর্ম ছিল না, আপনার শিশুটির ও কোন ধর্ম ছিল না, তাই ভবিষ্যতেও কোন ধর্ম থাকবে না। কারন ধর্মটা বিবর্তনের ফলে উঠে আসা একটা সামাজিক প্রোডাক্ট-যার প্রয়োজন ছিল। আজ তা নেই। তাই আস্তে আস্তে উঠে যাবে। চীনে ধর্ম প্রায় বিলুপ্ত-রাশিয়াতেও তাই। সুইডেনে বোধ হয় ৮০% নাস্তিক।
@বিপ্লব পাল,
আজ থেকে ৫,০০০ বা ১০,০০০ বছর পর পৃথিবীতে ধর্ম থাকবে কি থাকবে না, তা নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে উদ্বিগ্ন নয়। কিন্তু আমার আর আমার সন্তানের জীবদ্দশায় পৃথিবী যেহেতু ধর্মহীন নয় এবং ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থানে ও ধর্মীয় সন্ত্রাসের কারনে আমাদের শান্তিপূর্ণ জীবন-যাপন যেহেতু ক্রমশঃ বিঘ্নিত হওয়ার সম্মুখীন, কাজেই তা প্রতিরোধে আমার সামর্থ্যে যতটুকু করা সম্ভব, আমি তা করার চেষ্টা করবো।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
মিঃ আবিদ
আপনাকে সমস্যাগুলো নিয়ে আরো গভীরে ভাবতে হবে। শুধু ধর্মের কারনে কেও সন্ত্রাসী হয় না। এর পেছনে থাকে অনেক রাজনীতি অর্থনীতি
শ্রেণীদ্বন্দ। আমার ঠাকুরদার বাড়ি মুর্শিদাবাদের গ্রামে-যেখানে মাত্র তিন ঘর বাদে সবাই ছিল মুসলমান। উনি ওখানে কিছু জায়গা জমি পুকুরের মালিক ছিলেন। আমাদের পুকুরের মাছ, আর কাঁঠাল গাছ প্রায় চুরি হত। পুকুরে বিষ দেওয়ার ঘটনাও দেখেছি। অনুমান করতে অসুবিধা হয় না বাংলাদেশের হিন্দুরা গ্রামে কিভাবে থাকেন।
এটাকে ওখানে আমাদের আত্মীয়রা বলে মোল্লাদের উৎপাত-মুসলামদের হিন্দু বিদ্বেষ। আসলেই কি তাই? আশেপাশের লোকেরা ছিল গরীব- বুভুক্ষ লোকেরা
কেড়ে খাবেই-ধর্মীয় পরিচয় এখানে ইন্ধন মাত্র। যা ছিল শ্রেনী দ্বন্দ ভারতের ইতিহাসে তাই হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার রূপ নিয়েছিল। আজকের পাল্যু-জিউ
সমস্যাও অর্থনৈতিক-তাতে ইন্ধন যোগাচ্ছে আসলেই কিছু যুদ্ধবাজ ব্যাবসায়ী।
ধর্মের রোল কি তাহলে? ধর্মের পরিচয় ব্যাবহার করা সহজ। আমাদের আদি বাড়িতে মুসলমানদের উৎপাতের পেছনেও ছিল কিছু সম্পন্ন মুসলমানদের ইন্ধন যাতে তারা সস্তাতে সম্পত্তি কিনতে পারে। বাংলাদেশে এই ঘটনা সর্বত্র ঘটেছে?
গুজরাটে দাঙ্গা কেন বেধেছিল জানেন কি? আমেদাবাদ শহরের অনেক প্রাইম স্পটে মুসলিম বস্তি আছে। তাদের মেরে ধরে সরানোর পরিকল্পনা করে রিয়াল এস্টেট টাইকুনরা-ওখানে আগুন ধরালে ওরা জলের দরে মুসলিমদের কাছ থেকে ঐ সম্পত্তি কিনে নিত।
প্রতিটা দাঙ্গা এবং সন্ত্রাসের পেছনে খুঁজতে থাকলে দেখবেন ধর্ম হচ্ছে সামনের খোলস। কিন্ত এটাকে কাজে লাগানো যায় সাংঘাতিক ভাবে।
তাই আপনার কথার মধ্যে গভীরতর চিন্তা কিছু পেলাম না। ওপর ওপর দু লাইন লিখে লেখক হওয়া যায়, সমাধান আসে না।
@বিপ্লব পাল,
বিপ্লব, এই কথাগুলোই কিন্তু আমি বহুদিন ধরে বলে আসছি। ভিন্নমত, সদালাপে এসব নিয়ে অনেক লিখেছি। বরং এই কথাটাই ইসলামের বিরুদ্ধাচারী অনেক লেখক মানেননা। আপনি এটা বিশ্বাস করেন দেখে ভাল লাগলো। দ্রুত ইন্টারনেট ঘেঁটে পুরোনো একটা লেখার লিংক পেলাম। নীচে লিংকটা দিচ্ছি। নিবন্ধটা বছর চার/পাঁচেক আগে লিখেছিলাম। জানিনা আপনি এই নিবন্ধটা আগে কখনও পড়েছেন কিনা। বাংলাদেশে জংগীবাদের উত্থানের কারনের ওপর লেখা। অবশ্যই আমার নিজস্ব দৃষ্টিভংগী। সবকিছুর সাথে আপনি একমত নাও হতে পারেন। সেটাই স্বাভাবিক। তবে ধর্মীয় সন্ত্রাসের কারন প্রসঙ্গে আপনার মৌলিক অবস্থানের সাথে আমার মৌলিক অবস্থানের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যে কিছুটা হলেও সামঞ্জস্যতা আছে, তা আশা করি আপনার চোখে পড়বে।
বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের উত্থানঃ সমস্যার শেকড় কতদূর?
দু’লাইনের মন্তব্যে মৌলবাদ বা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমি শুধু আমার নিজস্ব অবস্থানটা বলেছিলাম। মৌলবাদ বা সন্ত্রাসের কারন নিয়ে কিন্তু আমি আমার মন্তব্যে কিছুই লিখিনি। কাজেই সেখানে গভীরতার প্রশ্ন তুলে আমার লেখক হওয়ার প্রসঙ্গ টানাটা কিন্তু সুবিচার নয়।
আসুন সবাই মিলে আবিদ সাহেবের উপরে লিঙ্কিত প্রবন্ধখানার ক’টা লাইন চাখি। এই পরিচ্ছেদ উদ্ধৃতকরনের মধ্য দিয়ে আমি উনাকে ব্যাক্তি আক্রমন (!) করতেও পারি:
আবিদ সাহেব তার পাঁচবছর পুরোনো আর্টিকেলে ফ্রেঞ্চ ‘সিভিল আনরেস্ট’ এর রেফারেন্স দিয়ে দেখাতে চেয়েছেন সেখানে জেনোফোবিয়া, বর্নবাদের শিকার হওয়া ফ্রেঞ্চ-বর্ন দ্বীতিয় প্রজন্মের ‘মুসলিম’রা চাকরি পাচ্ছিলো না। এর সাথে বাংলাদেশের তুলনা করেছেন এবং জঙ্গীবাদের উত্থানের পেছনে ঠিক একই রকম বর্নবাদের ছায়া দেখতে পেয়েছেন।
এবার আসুন, তুলনায় সরলীকরন ও অসত্যের দিক গুলি একটু দেখি।
যেখানে ফ্রান্সে শিক্ষায় সকলেই সমান অধিকার পায় এবং একই ধাঁচের যোগ্যতা নিয়ে চাকরির বাজারে প্রবেশ করে, সেখানে বাংলাদেশে মাদ্রাসাফেরৎদের চাকরি না পাবার পেছনে ঠিক একই কারন কাজ করে না। বাংলাদেশে মাদ্রাসা গুলিতে ঠিক কি এলেম ঢোকানো হয়, সেটা নিশ্চয়ই আমি বানান করে বলে দিতে হবে না। এই ধরনের জঙ্গীবাদের বীজতলা তার মতে প্রায় নয় হাজারের মতো ছিলো ২০০৫ এ। এখন হয়তো অবস্থা আরো খারাপ।
ঠিক এ ধরনের পরিস্থিতিতে, তিনি, মানে আমাদের আবিদ সাহেব, উদ্ধৃত পরিচ্ছেদ সম্বলিত লেখা লিখেছেন।
আজকে ২০১০ এ এসে তার বক্তব্যের কি কোনো পরিবর্তন হয়েছে?
এখন কি তিনি যুগোপযোগী ও প্রকৃত শিক্ষার কথা বলছেন, নাকি ছৌদি ভিত্তিক কল্পিত চরিত্রের বাণীমালা সম্বলিত মগজ-ধোলাই চালিয়ে যেতে বলছেন শিশুদের ওপর?
@আরিফুর রহমান, একমত।
আসলেই আবিদ ভাই এর “ধর্মকে না বলা কতখানি বাস্তব” লেখাটার সাথে বিপ্লবের লেখার মনে হয় খুব বেশী মিল নেই। অন্তত আমার মনে হয় না আছে বলে। প্রতিটা লেখারই একটা মূল টোন থাকে। সে হিসেবে আবিদ ভাই এর লেখা ছিল আমার মতে ফ্যাসীজম যে শুধু একটি ধর্ম বা ধর্মে বিশ্বাসীদেরই একচেটিয়া হাতিয়ার নয় এই ধারনা ভংগ করা। আর বিপ্লবের লেখা ছিল সাধারনভাবেই সব ধর্মীয় ফ্যানাটিসিজম থেকে নিয়মবদ্ধভাবে মুক্তির উপায় খোঁজা। অর্থাৎ, একটা ছিল সমস্যার ভয়াবহতার দিকে ইংগিত করা, আরেকটি ছিল তার সমাধানের পথ তালাশ করা। দুই লেখার মিল যেমন নেই তার কমেন্টের ধরনও আমার মতে ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক।
যদিও আবিদ ভাই তার গত লেখায় মন্তব্যের জবাবে নীরব থাকায় লেখাটির মূল উদ্দেশ্য নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের উদ্রেক করেছিল। আমি দ্বন্দে পড়ে গেছিলাম।
আমার কাছে মনে হয়েছিল যে আমরা কেউ কেউ আবিদ ভাই এর লেখার তথ্য যুক্তি প্রমান এসব বাদ দিয়ে তার ব্যাক্তিগত জীবন চর্চার কারনে আগেই প্রভাবিত হয়ে গেছি, এবং তার আলোকেই কমেন্ট করেছি। সংগত কারনেই মনে হয় ওনার কিছুটা ক্ষোভের প্রকাশ এই লেখায় ঘটেছে।
আবিদ ভাই এই লেখায় একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এনেছেন। তাহল যে এই পৃথিবী আস্তিক নাস্তিক সহ বিশ্বাসী অবিশ্বাসীদের সহাবস্থানের যায়গা। ভাল লাগুক খারাপ লাগুক সব পক্ষেরই অপরপক্ষের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, আবেগপ্রবন না হয়ে যুক্তির মোকাবেলায় যুক্তিকেই প্রাধান্য দিতে হবে। এখনো জগতে ধার্মিক মানূষের সংখ্যাই বেশী। তারাই এখনো মেইন ষ্ট্রীম। তাদের সংস্কারের দরকার এটা তাদের বোঝাতে হলে তাদের প্রতি প্রথমেই সাধারনভাবে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, এর জন্য দরকার ব্যাক্তি ধার্মিকদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা। জগতে ফুয়াদ ভাই এর মত ধার্মিক যেমন আছেন আবিদ ভাই এর মত ধার্মিকও আছেন। সবাইকে এক পাল্লায় মাপলে চলবে না। ধর্মে বিশ্বাসী মাত্রেই যুক্তিহীন বিশ্বাসে বিশ্বাসী হতে পারেন, তবে ধর্মে বিশ্বাসী মানেই ফ্যানাটিক বা ভন্ড এমন ধারনা ত্যাগ করতে না পারলে খুব মুশকিল।
আবিদ ভাই এর পুরনো অনেক লেখাও আমি পড়েছি। উনি ব্যাক্তিগতভাবে যাই বিশ্বাস বা পালন করে থাকুন না কেন তার লেখায় কোনদিন আমি কোন ভিন্ন মতের বা নাস্তিকদের প্রতি সামান্যতম ঘৃণার প্রকাশ কোনদিন দেখিনি। একজন আস্তিকের কাছ থেকে এমন সহনশীলতা যে কতটা বিরল ব্যাপার তা মনে হয় কাউকে বলার দরকার নেই। ফুয়াদ ভাই এর লেখা চোখের সামনেই আছে একটি উদাহরন হিসেবে, এবং তিনি ব্যাতিক্রম এমন মনে করার কোন কারন নেই। আবিদ ভাইই বরং ব্যাতিক্রম।
সমাজ বদলের স্বপ্ন আসলেই দেখে থাকলে আবিদ ভাইদের সাহায্য ছাড়া কোনভাবেই করা যাবে না। কাজেই তাদের আস্থা খুবই দরকার। আলোচনায় তাদের বেশী অংশগ্রহন খুবই কাম্য।
@আদিল মাহমুদ,
ধন্যবাদ, আদিল।
ব্যাক্তিগত আক্রমন হয়েছে এটা কিন্তু কেউ অস্বীকার করেনি। এটাকে অনুৎসাহীতও করা হয়েছে। এই প্রসংগ আবার টেনে না আনলেই মনেহয় ভাল হতো। আমরা যতই বলি- পাপকে ঘৃ্না কর পাপীকে নয়, কিন্তু অনুশীলনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কঠিন। ব্যাক্তিকে তার চিন্তা থেকে আলাদা করে মূল্যায়ন করা সহজ না। সেটা বাস্তবসম্মত কিনা সে ব্যাপারেও আমার সন্দেহ আছে।
কারন ব্যাক্তিতো মূলত কতগুলি চিন্তারই সমাহার। তবে আমাদের আশাবাদী হবার একটাই কারন আছে, তাহলো চিন্তা পরিবর্তনশীল।
Since I’m away from home, I’ve got no choice but to comment in English(I’m not comfortable with the site’s Bangla keyboard layout).
Your post about religious zeal is different from Biplab Pal’s post about starting a rationalist movement. Your post, as I’ve understood, seemed to deal with the notion of “Moderate Muslim” while Biplab Pal’s post deals with encouraging scientific skepticism that would hopefully lead to a moderate worldview. It had nothing to do with having a “moderate” view of any religious scripture. Your post is based on a false premise.
While it’s true that some of our members sometimes go overboard in posts about religion, it should also be noted that we try our best to maintain an amicable atmosphere. Please don’t demarcate “us” from “you”. The very fact that you are even bothering to write here alludes that you’re one with us, if not in our religious views, then in our enthusiasm for free inquiry.
I personally objected to the term “moderate Muslim” because I believe this “moderate” stance is nothing but a highly potential field for harvesting fundamentalist views. I don’t care what your religion has to say regarding the metaphysical world, but I take serious issue with your religion’s claims that the female body is a “fitna”, that music and dancing is “sin”, that erecting sculptures is akin to idol worship. I have every right to criticise these views. Your freedom of religion doesn’t override my freedom to opine on your views. That is exactly what I did in your post about “excessive” religious zeal. If you take that as a personal insult rather than a criticism of a social ideology(and depending on what extent you accept the Sharia, a military ideology), then it’s very sad indeed.
আবিদ সাহেবের লেখার মূল সুর হল “আমি” এবং “আমি”। আমি যখন …তখন কেন ”আমাকে”…, আমার বেলায় কেন… ইত্যাদি। তাঁর সেই সূক্ষ্ণ বিষয় গুলি যার কথা বললেন সেটাই এটা। এর জন্য মূল লেখার কি প্রয়োজন ছিল। বিপ্লব পালের লেখার কমেন্টে লিখলেই তো হত। ঘটা করে মূল লেখা দিয়ে দৃষ্টি আর সহানূভূতি আকর্ষনের চেষ্টা না করলেও হত। তাঁর লেখার সময় সবাই তাঁর উপর ঝাপিয়ে পড়ল আর বিপ্লব পালের লেখায় সবাই সাধুবাদ দিল এই ফরিয়াদ করাই তাঁর মূল বক্তব্য। এর দ্বারা তিনি মুক্তমনার অন্য সদস্যের প্রতি ব্যক্তি আক্রমন না করেলেও সমষ্টিগত ভাবে মুক্তমনার অন্য সদস্যদের বিচার বুদ্ধিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। সহানুভুতির যোগ্য হলে সদস্যরা স্বতঃস্ফুর্ত ভাবেই তা দিতেন, এত ঘটা করে লিখ আদায় করা যায় না। তাঁর বক্তব্য আর বিপ্লব পালের বক্তব্য কার্বব কপি নয়। দুটোতে মধ্যে গুণগত অ মানগত পার্থক্য আছে বলেই প্রতিক্রিয়া অ মন্তব্যও ভিন্ন। মুক্তমনার সদস্যদের বিচারবুদ্ধি কে প্রশ্ন না করে আত্মসমীক্ষণ করাই তাঁর জন্য বেশী ভাল হত। তাঁর অন্য পয়েন্ট খুবই সরল। ধর্মে বিশ্বাসী হলেও ধর্মীয় মৌলবাদ বিরোধী হয়া যায়। এটা চর্বিত চোষ্য। এটা নিয়ে নতুন করে কি বলার আছে। তিনি যেভাবে মুক্তমনার অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে তার প্রতি ঝাঁপিয়ে পড়ার অভিযোগ করেছেন তা অতিরঞ্জিত, নিজেকে ভিক্টিম বানানোর চেষ্টা। যেভাবে তিনি অন্যদের বক্তব্যকে চিত্রিত করেছেন সেটাও ভুল। কার লেখায় বিশ্বাসীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশিত হয়নি যেটা তিনি বলেছেন।
@আবিদ
আপনাকে গতবারও ভেবেছিলাম কিছু প্রশ্ন করি, করিনি এই ভেবে যে আপনি হয়তো নিজেই বুঝবেন। কিন্তু এবারের লেখাটা দেখে মনে হচ্ছে, আপনি হয়তো নিজেই নিজের টোন বুঝতে পারছেন না। আপনি আগের লেখায় এবং এই লেখায়ও বিভিন্ন মন্তব্যে ‘’আপনাদের নিজেদের লোক’’, ‘’নিজেদের প্ল্যাটফর্ম’ বলে নিজেকে আলাদা করেছেন। তাহলে প্রশ্ন চলে আসে, আপনি নিজেকে যদি এতই বাইরের মানুষ মনে করেন তাহলে এখানে লিখছেন কেন? মুক্তমনায় আমার অভিজ্ঞতা কিন্তু অন্য কথা বলে, আমি দেখেছি ভবঘুরে/আল্লাচালাইনার লেখায় ফরিদ আহমেদ, বন্যা আহমেদ, অভিজিত রায়, স্নিগ্ধা, সৈকত চৌধুরী, মিঠুন, পৃথিবী, রামগড়ুড়ের ছানাসহ বহু মুক্তমনা সদস্য প্রকাশ্যে ব্যক্তিগত আক্রমণের বিরোধিতা করেছেন, মডারেটররা বিভিন্নভাবে আপনার লেখায় আপনাকে ডিফেন্ড করেছেন, আগুন্তুক নামে এক ব্যক্তি নাস্তিক ছাড়া আর কেউ মুক্তমনায় লিখতে পারবে না বলে দাবী করায় সবাই তার প্রতিবাদ করেছেন। আমার তো মনে হয় আপনাকে যারা ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছিল তারা মুক্তমনার সদস্যদের খুব ছোট একটা অংশ, এবং মুক্তমনার সদস্যরা এর প্রতিবাদও করেছিল। বরং পৃথিবী যখন সমালোচনা এবং বিদ্বেষ এর মধ্যে পার্থক্য করা উচিত বলে লেখাটা লিখেছিল তখন মুক্তমনার সদস্যরাই তাকে সমর্থন দিয়েছিল। এখানে আমি যতটুকু সহনশীলতা দেখি আপনি যে ধার্মিক সাইটে লেখেন বা লিখতেন সেখানে কিন্তু এর কিছুই দেখিনি কখনই। সেখানে যখন অপবিজ্ঞান ছড়ানো হয় তখন কিন্তু আপনি কিছু বলেন না, মুক্তমনাদের জঘন্যভাবে আক্রমণ করা হয় সেখানে তো আপনি, ‘আমি’ আর ‘আপনারা’ বলে নিজেকে আলাদা করেন না। গতবার আপনি বিভিন্ন মন্তব্যে সবাই কেন আপনাকে ডিফেন্ড করতে এগিয়ে আসছে না বলার পরিপ্রেক্ষিতে অভিজিত রায় আপনাকে বেশ পরিষ্কার করেই এই উত্তরগুলো দিয়েছিল। একদিকে বলেছেন, মুক্তমনার প্রতি ‘জেনারালাইজ্ড্ দৃষ্টিভঙ্গী’ হিসেবে নেবেন না অথচ ‘’আপনারা’’ ‘’আপনারা’’ করে মুক্তমনার সব সদস্যদের কথা বলে যাচ্ছেন। আপনার গত কয়েকটি লেখাতেই কেবল মুক্তমনাদের প্রতি অভিযোগের সুর। স্বীকার করি যে, আপনার লেখাকে ঘিরে দু চারজনের কাছ থেকে ব্যক্তিগত আক্রমণ হয়েছিল, কিন্তু মডারেটরদের পক্ষ থেকে তো তাদের সতর্কও করা হয়েছিল। এরকম পরিবেশ কি আপনি ধার্মিকদের ব্লগে পাবেন? সেখানে কোন নাস্তিক না লিখলেও সারা দিন তারা আমাদের নিয়েই নিয়ে পড়ে থাকে। উপরে ফুয়াদ সাহের বক্তব্য দেখুন। সমাজ নাস্তিক হয়ে গেলে কি রকম হিংস্র হয়ে যাবে এই নিয়ে আকাশ কুসুম ভেবে চলেছেন। অথচ ধার্মিকদের হিংস্রতা কোন আকাশ কুসুম কল্পনা নয়। হিংস্রতার নমুনা আমরা বাস্তব সমাজেই দেখতে পাই। হুমায়ুন আজাদের মত মুক্তবুদ্ধির মানুষেরা এর ভুক্তভোগী। ভুক্তভোগী থিও ভ্যান গগ, ভুক্ত ভোগী সালমান রুশদি, ভুক্তভোগী এরকম অনেকেই। সামান্য কার্টুন আঁকলেই জ্বালাও পোড়াও শুরু হয়ে যায় সারা পৃথিবী জুড়ে, ফেসবুক বন্ধ হয়ে যায় নবীকে নিয়ে সামান্য রসিকতাতেই। যাকে পছন্দ হয় না তাকেই মৃত্যু পরোয়ানা পাঠায় জিহাদী জোশে। হিংস্র আসলে কারা? ধার্মিকেরা হিংস্রতা মাঠে ময়দানে আর বাস্তবে করে দেখায়, আর নাস্তিকেরা শুধু জবাব দেয় লেখায়। তারপরেও নাস্তিকেরাই নাকি হিংস্র।
যা হোক, আপনাকে বলবো আপনি যদি মুক্তমনাদের বেশীর ভাগ সদস্যদের মানসিকতা না বুঝতে পারেন তাহলে এই ব্লগে নিজেকে ‘আপনজন’ বলে ভাবতে সক্ষম হবেন না। মুক্তমনার বেশিরভাগ সদস্যই ধর্মে বিশ্বাস করেন না। তারপরেও আপনার মত ধার্মিক একজন মানুষকে ক্ষেত্র বিশেষে সমর্থন না করলেও আপনার মতামত প্রকাশের অধিকারকে ডিফেন্ড করে যান, তখন আপনার কাছ থেকে আমরা আরেকটু ভিন্ন টোন আশা করি। মুক্তমনায় যদি লেখা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে আশা করবো ভবিষ্যতে আপনি আমাদের সহনশীলতাকে আরেকটু বেশী সম্মান দেখাতে সক্ষম হবেন।
আব্দুর রাহমান আবিদ ভাই,
কথা হচ্ছে নাস্তিকরা, যাই ভাবুন না কেন, নাস্তিকতার ও বিবর্তন আছে। আল্লাহ পাক নাই নাই, চিন্তা করতে করতে এক সময় তারা মহা ভয়ংকর হয়ে উঠবে, এটি তারা স্বীকার করুক আর নাই করুক। আল্লাহ নাই নাই, করতে করতে একদল বাহির হবে যে, নৈতিকতা আবার কি? এ সব আবাল ধার্মিক দের সৃষ্টি। বর্তমানে এদের সংখ্যা যদি বিবেচনায় না আনেন, তাহলে বড়ই ভুল করবেন। এরা সংখ্যায় অনেক কম। তাই, যুক্তিক ভাব ভংগি ধরে রাখা এদের জন্য সহজ। এরপর আছে, ধার্মিকদের বিশাল চাপ। এই চাপের সাথে তাদের প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা করতে হয়। এই প্রতিযোগিতার চাপে পরেই, নিজেদের ভাল মানুষ হিসাবে তাদের দেখাতে হয়।
কিন্তু যখন ধর্ম বিলুপ্ত হওয়ার দিকে যাবে, তারা পেয়ে যাবে বিশাল ক্ষেত্র। আর কাকে কেয়ার করার। একজন আরেক জনকে মানবে না। আপনি কি খোলা চোখে মনে করেন তাদের বিবেকবান রা, অবিবেচক দের ধরে রাখতে পারবে ? তাদের সিস্টেমই এমন যে ধরে রাখতে চায় না। এতে এদের বিবেকবানদের পরা জয় খুব দ্রুত হবে। অতি দ্রুত, আর হিংস্ররা আরো হিংস্র হয়ে উঠবে। তাই, কেউ যদি খোলা মনে দেখে তাহলে দেখবে নাস্তিকবাদী সমজের পরিনতি ভয়ানক, এবং অকল্পনীয়। সুইডেনের উদাহারন টেনে লাভ নেই। পুরো পৃথিবীকেই হিসাবে নিতে হবে, কারন নাস্তিকতার প্রতিযোগি ধর্ম এখন টিকে আছে, তাই নাস্তিকদের ভাল মানষী দেখানোর প্রয়োজনীয়তাও আছে।
@ফুয়াদ,
নাস্তিকদের ব্যাপারে আপনার চরম ঘৃণা এবং সেই সাথে বিকৃত এবং বিভ্রান্ত ধারণাটা আরেকবার প্রকাশিত হলো।
আইন কানুন এখনও ‘টিকে আছে’ বলেই হয়তো আপনি মাঝে মাঝে নাস্তিকদের প্রতি সামান্য কিছু ‘ভালমানুষি’ দেখান। না থাকলে সেটারও মনে হয় ‘প্রয়োজনিয়তা’ হত না। কী বলেন, তাই না?
@ফুয়াদ,
ফুয়াদ ভাই এর আশঙ্কাকে একদম যুক্তিহীন বলে ভাবা ঠিক হবে না। তাছারা প্রায় সব গোঁড়া ধার্মিকই এমনটা ভাবেন। সেই জন্যেই নাস্তিক প্রধান জার্মানীতে স্কুলে ধর্ম শিক্ষা দেওয়া হয় । কারন জার্মানীতে সরকারি ভাবে মনে করা হয় মানবিকতার বিকাশে ধর্ম শিক্ষার প্রয়োজন আছে।
এছারা নাস্তিকরা যেহেতু মনে করে আমাদের জন্মটা এক্সিডেন্ট, তাই জীবনের “পরম” কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে না-সেহেতু, নাস্তিক নৈতিকতার উৎস নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক।
কিন্ত ফুযাদ ভাই এর জানা উচিত আমি বিজ্ঞানমুখী চেতনার প্রসারের কথা বলছি এবং সেখানে মানুষের নৈতিকতার ভিত্তি নিয়ে অনেক গবেষনালদ্ধ রেজাল্ট আছে। ধর্ম ত আকাশ থেকে আসে নি-এসেছে নৃতাত্ত্বিক একটা প্রয়োজন থেকে-অর্থাৎ মানুষের জটিল সমাজের প্রয়োজন থেকেই ধর্মীয় নৈতিকতা মানুষ নিজেই তৈরী করেছে যাতে রাষ্ট্র স্থিতিশীল হয়-সমাজের রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেস ঠিক থাকে ( অর্থাৎ যথেষ্ট সংখ্যায় সন্তানের জন্ম হয় এবং উপযুক্ত নাগরিক হিসাবে তাদের প্রতিপালন করা হয়)।
কিন্ত প্রযুক্তির কারনে রাষ্ট্র এবং সমাজ দ্রুত বদলাচ্ছে। ধর্ম কিন্ত এত তাড়াতারি নিজেকে বদলাতে পারছে না-ফলে অতীতের ধর্মীয় নৈতিকতাগুলি বর্তমানে সমাজের ক্ষতি করছে। অথচ আমরা যদি বিজ্ঞানমুখী চিন্তা করতাম নৈতিকতা নিয়ে, তাহলে সময়োপযোগী আরো উন্নততর নৈতিকতা নিয়ে আমাদের সমাজ চলতে পারত।
আমি ঠিক এইসব কারণে নাস্তিকতা নিয়ে ভাবি না-কারন আসলেই নাস্তিকতা কোন ধর্ম না দর্শন না আমার কাছে। আমার বক্তব্য এবং দর্শন বিজ্ঞানমুখী চেতনা নিয়ে যেখানে নৈতিকতা একটি নৃতাত্ত্বিক এবং সামাজিক গবেষনার বিষয় এবং তা থেকে ধর্মীয় নৈতিকতার থেকে অনেক উন্নততর নৈতিকতার জন্ম সম্ভব।
আমাদের উপমহাদেশের ধর্মান্ধদের দেখে কি মনে হয়, এই ধরনের ধর্মীয় নৈতিকতা কোন আধুনিক রাষ্ট্রে চলতে পারে?
@বিপ্লব পাল,
আমি বরাবরই আপনার যৌক্তিক লেখার ভক্ত। আমিও ধর্মের নৃতাত্ত্বিক প্রয়োজন এবং এর প্রভাবকে মুল্যায়ন করি এবং নষ্ট ধর্ম অনুরাগীদের ঘৃনা করি।
আপনি বলেছিলেন যে,
এই যে নৈতিকতার কথা আপনি বললেন, সকলের গ্রহনযোগ্য করার জন্য এর প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়ার পরে এই নতুন ধারাটিই কি আরেকটি “ধর্মের” রুপ ধারন করবে না?? প্রচলিত ধর্মগুলো এভাবেই সৃষ্ঠ নয় কি??
“সবাই কে নিয়ে সমাজ গড়বো, সবাই কে সব ধরনের বই পড়তে বলবো”
@Oni,
না করবে না। কারন সমাজ বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল, আর তার ওপর নির্ভর করে গড়া আইন গুলোও হবে সমাজ এবং সভ্যতার সাথে পরিবর্তনশীল।
আইনের ভিত্তি ঈশ্বর না হয়ে বিজ্ঞান হলে, এটাই লাভ যে, উৎস স্থল জানা থাকলে, সেটা বদলাবে মানুষের প্রয়োজনে।
@ফুয়াদ,
ধন্যবাদ ফুয়াদ সাহেব । নাস্তিকদের প্রতি আপনার তীব্র বিদ্বেষ, অসহনশীল মনোভাব প্রকাশ করার জন্য।
আপনার কথায় মনে হল নাস্তিকরা এমন এক জাতি, যারা আস্তিকদের তুলনায় সংখ্যায় অনেক কম হওয়ায়, নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে ভাল মানুষটি সেজে বসে আছে সুযোগের অপেক্ষায় আর যেই না মাত্র্র আস্তিকদের সংখ্যা কমে যাবে, সেইমাত্র নাস্তিকরা হিংস্র হয়ে যাবে। চমত্কার। আপনার পাশের বাড়ির হিন্দু বা নাস্তিক কেউ যদি আপনাকে বাসায় দাওয়াত করে আদর যত্ন করে, তখন বোধ হয় আপনি এই ভাবেন যে ও আজ আমাকে আদর করছে কারন ও আজ সংখ্যালঘু…ও যদি পরে কখনও সংখ্যাগুরু হয়ে যায় ঠিকই আমাকে ঠেংগাবে। মানুষের ভাবনার অলিগলি যে কত বিচিত্র হতে পারে তা আপনাকে দেখলে বোঝা যায়।
আপনাকে আর নতুন করে আমার কিছু বলার নাই। শুধু এটুকু বলব যে, মানুষের ভাল হয়ে ওঠা আর খারাপ হয়ে ওঠা ঈশ্বরের উপর নির্ভর করেনা। আপনি নাস্তিকদের ক্ষেত্রে যে অনুমান করেছেন, সেটা তো আস্তিকদের ক্ষেত্রেও সত্যি। তাই না? দেখুন আস্তিকরা সংখ্যাগরিস্ঠ হয়ে আফগানিস্তান এ কি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। সৌদিআরবে গিয়ে দেখুন তো অমুসলিমদের সেখানে কি অবস্থা? এই বাংলাদেশে দেখুন নাস্তিক মনোভাব বয়ে বেড়ানোর জন্য আপনারা আস্তিকরা হুমায়ুন আজাদের কি হাল করেছেন, তসলিমা নাসরিনদের দেশছাড়া হতে বাধ্য করেছেন। আপনারা সংখ্যাগরিস্ঠ হয়ে যে সকল কর্মকান্ড করছেন এগুলো কি হিংস্র নয়? এগুলো কি হিংসাত্মক নয়? আজ আপনারা আপনাদের সংখ্যাগরিস্ঠতা হারানোর ভয়ে আছেন। আর ভাবছেন যা যা অপকর্ম করেছেন এতদিন নাস্তিকরা ক্ষমতাশালী হয়ে এবার সব ফিরিয়ে দিবে। চমত্কার আপনার মানসিকতা। ঠিক বাংলাদেশের রাজনীতির মত। আজ বি, এন. পি এর হাতে ক্ষমতা নাই তাই চুপ করে বসে ভাল মানুষটি সেজে বসে থাক। আবার তো একসময় ক্ষমতা আসবেই হাতে, তখন না হয় আওয়ামীলীগের থেকে সুদে আসলে সব উসুল করা যাবে…কি বলেন?
আপনাকে নতুন করে বোঝানোর ক্ষমতা নাই আমার। শুধু বলব মানুষ হয়ে এধরনের প্রতিশোধমূলক মনোভাব পরিহার করুন।
নৈতিকতা যদি ঈশ্বর থেকেই আসত তবে আস্তিকরা কেন খারাপ কাজ করে? মানুষকে আস্তিক নাস্তিক শ্র্রেনীবিভাগ না করে ভাবুন যে এই মানুষ বিবর্তনের পরক্রিমায় পৃথিবীর শ্রেস্ঠ প্রানী আজ। যতই দিন যাবে বেচে থাকার স্বার্থে পারস্পরিক প্রতিযোগিতার ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে মানুষ ততই নৈতিক উত্কর্ষতার সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকবে। হিংসা, হিংস্রতা মানুষের মাঝে আছেই। তবে আমরা আশা করতে পারি সময়ের সাথে সাথে মানুষ এসব কাটিয়ে উঠতে পারবে, আরো ম্যচিউর হবে। আপনার মন্তব্যে এধরনের আশাবাদ তো নেই ই, বরং তা আরও আঘাত পাল্টা আঘাতের হিংসাত্মক মনোবাসনা ফুটিয়ে তুলেছে।
ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন।
ব্যক্তিগত আক্রমণ অবশ্যই অপরাধ এবং কোনক্রমেই গ্রহনযোগ্য নয়। দুজন লেখকের মত-পথ-দর্শনের ভিন্নতার কারনে পাঠকের প্রতিক্রিয়াও ভিন্ন হবে এটাইতো স্বাভাবিক।
আমি আলাদা আলাদা ভাবে কিছু মন্তব্য করব, খুব লম্বা একটি পোস্ট না লিখে।
বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় ব্যক্তিগত আক্রমণ গর্হিত। এ ব্যাপারে আর কিছু বলবার নেই।
তবে আপনার লেখাগুলিকে প্রচুর মন্তব্য পড়েছে যেগুলি ব্যক্তি-আক্রমণ মূলক নয়। আপনি লিখেছেন যে আপনি জেনারালাইজ করছেন না, তারপরও এটা মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন বোধ করছি।
বিপ্লব পাল এবং আপনার লেখায় ভিন্ন ধরণের মন্তব্য আসার কারণ? বিপ্লব পাল এবং আল্লাচালাইনার পোস্টে ভিন্ন ধরণের মন্তব্য আসার যে কারণ, সেই একই কারণ। সেটা হল এই — বিপ্লব পালের ওই বিশেষ লেখাটি খুবই সুনির্দিষ্ট call of action। আপনার বা আল্লাচালাইনার লেখায় (বা এই ব্লগের অন্য অনেক লেখায়) সে ধাঁচটা পুরোপুরি অনপুস্থিত না থাকলেও সেগুলি মূলত বুদ্ধিবৃত্তিক বা দার্শনিক লেখা হিসেবে প্রতিভাত হয়। পাঠকের মন্তব্য গুলিও অনুরূপ।
কথাগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ১০০% সত্যি!
এ ব্যাপারে তসলিমা নাসরিন,দাউদ হায়দার জীবন্ত উদাহরন!
বাংলাদেশের মানুষ সহজ,সরল আবার কোন কোন ক্ষেত্রে ভীষণ একরোখা!
ধন্যবাদ!
আবিদ ভাই এর কথাটা আমি বুঝতে পারছি।
বিজ্ঞান চেতনার উন্মেষে প্রতিটা প্রগতিশীল মানুষেরই আমাদের সাহায্য চাই। আস্তিক নাস্তিক সেখানে সকলেই স্বাগতম। আজকে যদি আমি দাবী করে বসি সকলকে নাস্তিক হতে হবে, কারন আমি মনে করি তাহাই ইহজগতের জন্যে উত্তম বা ঠিক সেই কারনে আমি জোর করে নাস্তি্কতার ্প্রচার করি, সেটাও মৌলবাদের রূপ নেবে। এবং তার সাথে ইসলাম বা হিন্দুত্ববাদের কোন পার্থক্য থাকবে না।
মানবিকতাবাদ এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক চিন্তার উন্মেষের কোন বিকল্প নেই। ঈশ্বর আছেন কি নেই তার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। আমি ঈশ্বরে না বিশ্বাস করে খুশী-কেও যদি বিশ্বাস করে খুশী হয়, আমাকে সেটা মানতে হবে-আমি তখনই সেটা মানব না যখন সে জোর করে সেটাকে সমাজ এবং রাষ্ট্রএ ঢোকানোর চেষ্টা করছে। ঈশ্বর আছেন কি নেই, সেটাকে দূরে রেখেই বিজ্ঞান চেতনা নিয়ে কাজ করা যায়। তবে যারা ঈশ্বর আছেন বলে বিবর্তন বিরোধিতা করবেন, তখন বিরোধ সামনে আসবেই। কিন্ত মনে রাখবেন, ধার্মিক মানে বিবর্তন বিরোধি তাও না। ডারুইনের তত্ত্ব নিয়ে বিবেকানন্দের উক্তি ছিল-ঈশ্বর সৃষ্টি করেন, তা খুব নিম্ন মানের ধর্ম তত্ত্ব -কারন তা বিজ্ঞান এবং যুক্তিতে টেকে না। এটা উনি বলেছেন ১৮৯২ সালে। সুতরাং সব ধার্মিক মানেই বিজ্ঞানের সাথে সংঘাত, সেটা আমি মানি না। তবে তাত্বিক দিক দিয়ে ধর্ম এবং বিজ্ঞান এক হতে পারে না। কিন্ত তাতে একজন ধার্মিকের বিজ্ঞান চেতনায় বিশ্বাসী হওয়া আটকায় না যদি তার ধর্ম বলতে সে মানবিকতাকে বেছে নেয়। ্নিজের ধর্মের প্রতি ক্রিটিকাল দৃষ্টিভংগী বজায় রাখে।
আমার বিশ্বাস মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান চেতনা এলে তারা নিজেরাই নিজের ধর্ম বা রাজনীতির ভুল বুঝতে পারবে। কারন বিজ্ঞান চেতনা মানে কিছু জ্ঞান বা তথ্য জানা না। বিজ্ঞান চেতনার মূলে আছে ক্রিটিকাল বা যাচাই করার দৃষ্টি ভংগী। এই করতে গিয়ে আমি এবং মুক্তমনার অনেকেই ডান বাম সকল গোষ্টির নিন্দা কুড়িয়েছি এবং চক্ষূশুল। কিন্ত জীবন ত একটাই? সেখানে মিথ্যেকে আঁকড়ে ধরে বাঁচবোই বা কেন?
সোজা কথা; আমরা যদি যুক্তির আলোয় আলোচনা করতে চাই তবে কার ব্যাক্তিগত বিশ্বাস কি, কে কার মত দাড়ি রাখে, জামা পরে এসব জিনিস নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন দরকার নেই।
কথায় কতটা যুক্তি আছে সেটাই হোক মূখ্য; ব্যাক্তিগত বিশ্বাস, পছন্দ অপন্দ হোক গৌণ।
মন্তব্যের option খোলা রাখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।