আমার হাতে ৭১ ভয়াবহ রাতের সেই ঘটনার পরে একটা ডাইরি আসে। ক’লাইন পড়েই বুঝলাম
সবই ১৯৭১ প্রথমদিকের সেই ভয়াবহ দিন নিয়ে বড় ভাই লিখেছে।
লিখেছে এমন,
এই ঘটনাটি আমার জীবনের সাথে জড়িত। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের সেই কালো রাতে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের অনুচররা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ঝাপিয়ে পড়ে,- আমি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছি। আজ সেই ভয়ংকর দিনগুলির কথা খুব করে মনে পড়ছে : তখন আমি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র। আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা যখন আসন্নপ্রায় তখনই পূর্ব পাকিস্তানে গোলযোগ চূড়ান্তভাবে দানা বেধেছে। আমরা যখন পরীক্ষার প্রস্ত্ততি নিচ্ছি ঠিক তখনই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষীত হল। ঐ দিনটি ছিল আমার জীবনে দুঃস্বপ্নের মত, যেটা পরবর্তীতে আমার ধর্ম ও রাজনৈতিক চেতনার আমুল পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
২৫ শে মার্চের সন্ধ্যায় আমি শেরে বাংলা হলে ছিলাম। কিছুদিন আগে যখন জেনারেল ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানের সার্বভৌমত্তের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানের কথা বললেন, তখন থেকেই এখানকার অবস্থা ভালো যাচ্ছিল না। ছাত্ররা ধর্মঘট করেছিল। পরীক্ষা আসন্ন হওয়ায় আমি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। যাই হোক, পরে রাজনৈতিক গোলযোগের কারণে পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হল এবং যার ফলে বেশির ভাগ ছাত্র তাদের বাড়িতে ফিরে গেল। যেহেতু আমি প্রত্যক্ষভাবে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম, তাই হলে থেকে যাওয়ার সীদ্ধান্ত নিলাম যাতে প্রয়োজন মাত্রই সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করতে পারি। ২৫ শে মার্চের কয়েকদিন আগে থেকেই একটা গুজব রটে আসছিল যে, শেখ মুজিব ও জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না এবং, ফলত, যে কোন সময় আর্মি নামানো হতে পারে। মিডিয়া কিন্তু চতুরতার সাথে ফলাও করে প্রচার করছিল যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সুফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কিছু পেপার এটাও লিখেছিল – জেনারেল ইয়াহিয়া প্রস্তুতি নিচ্ছে পূর্ব বাংলার দায়ভার বেসামরিক সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার, যেখানে মুজিব এবং ভুট্টোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। এই ধরণের ভুয়া খবরের প্রেক্ষিতে অনেক বাঙ্গালি ভেবেছিল অবশেষে ১৫ বছর পরে তারা স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহন করতে যাচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা ঘটেনি। ২৫ শে মার্চের সেই কালো রাতে পাকিস্তানী ইসলামিক আর্মি ভয়ংকর রূপ ধারণ করে তারা তাদের ব্যারাক থেকে বের হয়ে আসে,-বাঙ্গালিদের তারা এমন শাস্তি দেবে যেন তা আজীবন মনে থাকে;- সত্যিই তাই হয়েছে।
এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা।
সে দিন একটু সকাল সকাল ঘুমাতে গিয়েছিলাম, খুব সম্ভবত তখন রাত ন’টা বাজে। সারাদিন বেশ ব্যস্ত কাটায় খুব ঘুম পাচ্ছিল। হঠাৎ করেই, রাত ১১টার দিকে, একটানা গুলির শব্দে আমার গভীর ঘুম ভেঙ্গে গেল। প্রথমে ভেবেছিলাম, এটা হয়ত বাঙ্গালীদের বিজয় উৎসব, তবে খুব শীঘ্রই আমি আমার ভুল বুঝতে পারলাম। জানালা খুললাম-বাইরে গভীর অন্ধকারে ছেয়ে ছিল। রাস্তার হালকা বাতিগুলো বন্ধ ছিল। খুব কষ্ট করে দেখলাম, রাস্তায় অসংখ্য মিলিটারিদের গাড়ি এবং রাইফেলধারী মিলেটারিরা ছুটোছুটি করছে। মাঝে মধ্যে ওদের সার্চ লাইটে ওদের অবস্থা স্পষ্ট দৃশ্যগত হচ্ছিল। অসংখ্য সৈনিক দৌড়াচ্ছিল আর এদিক-ঐদিক এলোপাথারি গুলি করছিল। দেখতে পাচ্ছিলাম, মিলিটারীদের বড় একটা অংশ আমাদের ক্যাম্পাসের সবটা ঘীরে ফেলেছে, এমনকি আমার হলের সিড়িতে মিলিটারিদের উর্দু ভাষায় কথা বলা শুনতে পাচ্ছিলাম। বুঝতে আর বাকি রইল না কি ঘটছে। ভাগ্যিস সঙ্গে সঙ্গে লাইট অফ করে ফেলেছিলাম। আমি বিছানার ওপর উঠে পড়েছিলাম। বন্দুক এবং মেশিনগানের অনর্গল গুলির শব্দে আমার কানে তালা লাগার উপক্রম। আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। রুমে একাই ছিলাম, আস্বস্ত করবার মত কেউ ছিল না সেখানে। দুর্ভোগ যেন বেড়েই চলেছে, আমি ভয়ে কেঁপে উঠলাম এবং বিছানায় পড়ে গেলাম। সহসা, একগুচ্ছ গুলি কানের কাছ দিয়ে নিকটবর্তী জানালা দিয়ে বের হয়ে গেল। ধরেই নিয়েছিলাম, আমি মরে যাচ্ছি। বেশি কিছু না ভেবেই গুলির ঝাঁক থেকে নিজেকে বাঁচাতে বিছানার তলে ঢুকে পড়লাম। বুকে ভর দিয়ে শুয়ে পড়লাম এবং মেঝে শক্ত করে ধরে রইলাম, যেন সেটাই আমার জীবন। লাগামহীনভাবে সারারাত্রি গুলিবৃষ্টি চলতে থাকল। তারপর, এক সময়, হঠাৎ করেই রাজ্যের নীরবতা নেমে আসলো। আর কোন বন্দুক বা মেশিনগানের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। মনে হল সব থেমে গেছে। আমি খুব সতর্কতার সাথে বিছানার তল থেকে বের হলাম, এবং বিছানার ওপর বসলাম। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি, তখন রাত ৩টা কিম্বা কাছাকাছি একটা সময় ছিল। হঠাৎ করেই তীব্র চিৎকারের সাথে সাথে তীব্র আলোয় ঝলসে ঊঠল চারপাশ। বাইরের দিকে না তাকিয়ে পারলাম না, ভাঙ্গা জানালার ভেতর দিয়ে দেখলাম, অনেকগুলো টাঙ্ক বস্তি তাক করে আগুন ছুড়ে মারছে। বস্তিটা ছিল আমাদের ঠিক হলের পেছনেই পরিত্যক্ত রেল লাইনের ধার জুড়ে। লক্ষ্য করালাম মানুষ-জন সব অনেকগুলো মাথা বস্তি ছেড়ে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছে। যারা আগুন থেকে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে বুলেটের আগুনে ঝলসে দেওয়া হচ্ছে তাদের বুক। চারিদিকে শ্রাবণের বৃষ্টিপাতের মত গুলি বর্ষণ করা হচ্ছিল, আমি একট্রাক সৈন্য দেখতে পেলেও প্রকৃতপক্ষে ওরা ছিল পিপড়ের ঝাঁকের মত।
এটা আমাকে টিভিতে দেখা ভিয়েতনাম যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বানানো সিনেমাগুলোর কথা মনে করিয়ে দিল। শুনতে পাচ্ছিলাম মানুষের বাঁচার আকুতি ও চিৎকার। জানালা বন্ধ করে দিলাম এই ভয়ে যে ওদের একটা গুলিই আমার জন্য যথেষ্ট। মেঝেতে বসে পড়লাম, এবং তৎক্ষনাৎ উপলব্ধি করলাম আমার পালাবার পথ চতুর্দিক থেকে বন্ধ।
খুব ধীর গতিতে এই নীরব ঘাতক রাতের অবসান ঘটিয়ে সূর্যের আগমন ঘটল। তখনো বাইরে মিলিটারীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। আসলে কি ঘটছে জানার জন্য আমি আমার রেডিওটি, যথাসম্ভব লো সাউন্ডে, চালু করলাম। ঢাকা রেডিও সম্প্রচার কেদ্রটি বন্ধ ছিল, ফলত, কলকাতার রেডিও চ্যানেল ধরালাম। ওরা পূর্ব পাকিস্তানের চলতি ঘটনা নিয়ে কোন খবর পেশ করল না, শুধু জানালো, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবের সাথে আলাপ সেরে পাকিস্থানে ফিরে গেছেন। সুতরাং করাচির চ্যানেল ধরলাম, এখন আমি যা শুনতে ব্যকুল ছিলাম তা শুনতে পেলাম। ঘোষণা দেওয়া হল, জেনারেল ইয়াহিয়া জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন দিতে যাচ্ছেন। আমি তার কথাগুলো শুনলাম। মনে হচ্ছিল আমি গভীর মাতাল কারও কথা শুনছি। তার সব কথা এই মুহূর্তে ঠিক মনে করতে পারছি না, তবে কিছু কথা আমার এখনো মনে আছে। সে বলেছিল, ‘মুজিব একজন দেশদ্রোহী, সে অবশ্যই শাস্তি ভোগ করবে।’ সে এই বলে শেষ করলো- ‘মুজিবকে ধরা ও শাস্তির জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল যে শেখ মুজিব ও ড. কামাল হুসাইনকে বিচারের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে ধরা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি ভুট্টোকে বলতে শুনলাম, ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ, পাকিস্তান রক্ষা পেয়েছে।’
তখনো ওদের গুলি করা থামেনি, আমি বাতাসে একধরণের বিশ্রি দুর্গন্ধ পাচ্ছিলাম, পরে বুঝতে পারলাম ওটা ছিল লাশ পোড়ার গন্ধ। আমি কোন দমকল বাহিনীর গাড়ির হর্ন শুনতে পেলাম না, যদিও দমকল বাহিনীর অফিসটা ছিল হলের ঠিক পাশেই। সকাল ৮টার দিকে আস্তে আস্তে গুলির শব্দ থেমে আসলো। আমি জানালা দিয়ে দেখলাম ট্যাঙ্কগুলো আমার দৃশ্য থেকে সরে যাচ্ছে। আমি পূনরায় বিছানায় ঝুঁকে পড়ে রেডিওটি চালু করলাম। আমি দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পেলাম। আমি জমে গেলাম ভয়ে। অনুভব করলাম, আমার শরীরের রক্ত চলাচল কিছুক্ষণের জন্য যেন থেমে গেছে। সবকিছু ধুসর দেখতে শুরু করলাম। নড়াচড়া করতে পারলাম না, বিছানায় সমস্ত শরীর যেন গেঁথে গেছে। কিছুক্ষণ পর আবারও শব্দ হল-খুব চাপা শব্দ। এখন আমি উপলব্ধি করলাম, আর্মি হলে এতক্ষণ দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করত। আমার মনে হল এটা অন্য কেউ, সুতরাং দরজার কাছের জানালাটির কাছে গিয়ে উঁকি মারলাম। দেখলাম মঞ্জু আমার পাশের রুমের বাসিন্দা হামাগুড়ি দিয়ে অপেক্ষা করছে। দরজারটা একটু ফাঁক করে জানতে চাইলাম কি ব্যপার।
সে ফিসফিস করে বলল তার রুমমেট আশরাফের কি যেন হয়েছে সুতরাং তার সাথে আমাকে যেতে বলল। আমি তার মত করে হামাগুড়ি দিয়ে তার পিছন পিছন চললাম,
রুমে গিয়ে দেখি আশরাফ মেঝেতে পড়ে আছে, চোখ খোলা কিন্তু মুখ আটকা। চারিদিকে পানি ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। আমি কারণ জানতে চাইলে মঞ্জু বলল, এটা পানি না আশরাফের প্রস্রাব। আমাকে সে বলল, আশরাফ বেশ কয়েকবার প্রস্রাব করে ফেলেছে এবং এখন আর সে কোন কথায় বলছে না। আমি আশরাফকে ডাকলাম, সে শুধু আমার দিকে তাকাল কিন্তু কোন কথা বলল না। বুঝতে পারলাম সে ভয়ে আড়ষ্ঠ হয়ে গেছে। মঞ্জুকে বললাম, আমাদের উচিৎ ওর কানে কানে বলা যে মিলিটারিরা চলে গেছে, এবং প্রায় পনের থেকে বিশ মিনিট বলার পর সে বিড় বিড় করে কি যেন বলল। কিছুক্ষণ পর সে বলল, ‘প্লিজ, প্লিজ, আমাকে একা রেখে যেও না।’
আমি আশরাফকে বললাম, যাই ঘটুক না কেন আমরা তিনজন একত্রেই থাকব। যদি মরি তো একসাথেই মরব। আমার কথায় আস্তে আস্তে আশরাফ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসল। আমরা খুব খুধার্ত ও পিপাসার্ত ছিলাম। আমরা ছাতা পড়া পাউরুটি ও পানি খেলাম। তারপর আমরা ভাগাভাগি করলাম কে কিভাবে ভয়ঙ্কও রাতটি অতিবাহিত করেছি।
দুপুরের দিকে লক্ষ্য করে দেখলাম, মিলিটারিরা আমাদের এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। আর কোন গোলাগুলির শব্দ নেই, নেই কোন যানবাহনের শব্দও। ক্যাম্পাসের চারিদিকে শুধু শ্মশানের নীরবতা। ভেবে দেখলাম, পালানোর এই উপযুক্ত সময়। রেডিও চালু করে জানতে পারলাম ঢাকায় অনির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। আমরা অত কিছু না ভেবে পালানোর সিদ্ধান্ত নিলাম,
– যা হয় হবে, যদি কারফিউ ভাঙ্গার অপরাধে রাজপথে গুলিবিদ্ধ হয় তবুও। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আজিমপুরে মনজুদের সরকারী বাসভবনে আশ্রয় নেয়ার। আশরাফ আর মঞ্জু আজিমপুরের কোয়াটারে থাকত। আমি হামাগুড়ি দিয়ে আমার রুমে গেলাম এবং নিজের জুতা আর রেডিওটা হাতে নিলাম। তারপর আমরা যতটা সম্ভব নিজেদেরকে আড়াল করে সিড়ি বেয়ে নামলাম। নিচে নেমে দেখলাম ফটকে তালা লাগান। দারোয়ান দরজায় তালা লাগিয়ে পালিয়ে গেছে। পরে বুঝতে পারলাম সে আসলে আমাদের বাঁচানোর জন্যই এটা করেছে। হতাশ হয়ে দোতলায় আমাদের রুমে ফিরে আসলাম, সিদ্ধান্ত নিলাম, একতলার বেলকনি থেকে ঝাঁপ দেয়ার। প্রথমে ভেবেছিলাম, রেডিওটা রেখে যাব, পরে ভেবে দেখলাম আশে পাশে কি হচ্ছে সেটা জানার এটাই এখন একমাত্র উপায়। আমরা তিনজন প্লান অনুযায়ী বাগানে ঝাঁপ দিলাম। ভাগ্য সুপ্রসন্ন আমাদের কারও কোন চোট লাগল না।
এরপর আমরা তিনজন তিন দিকে চলে গেলাম। আমি হাঁট’তে হাঁট’তে শহীদ মিনারে গেলাম। ওখানে শতশত লাশ পড়ে আছে। সে এক বীভৎস দৃশ্য।
এরপরে আমার মা,বাবা,ভাই বোনদের কে খুঁজে বের করার উদ্যেশ্যে হাঁটা শুরু করলাম।
অবশেষে হাট’তে হাটতে ফার্মগেইট পেরিয়ে এক জাগায় আমাদের আশ্চর্যজনক ভাবে মিলন হলো,যা ছিল এক অভূতপুর্ণ দৃশ্য। কল্পনা করিনি মা,বাবা,ভাই বোনদের কে এমন করে ফিরে পাবো।
পরবর্তিকালে বড় ভাইয়ের ডাইরির প্রতিটা লেখা আমার চোখে যেন স্বর্ণের মতন জ্বলজ্বল করত।
সময়টা তখন সম্ভবত এপ্রিল ১৯৭১ হবে। বাবা ঘরময় পায়চারি করছেন। আমরা তখনও নানার বাড়ি ছাড়িনি।নানার বাড়ি ২৭ নং ধানমন্ডি মেইন গেইটে সব সময় তালা বন্ধ রাখতেন নান। এর মাঝে একদিন বড় ভাইয়ের বন্ধু মেইন গেইটে এসে কলিং বেল টিপলো। নানী কাউকে যেতে না দিয়ে নিজেই গেলেন কলাপ্সিবল গেইটের কাছে।
বড় ভাইয়ের বন্ধুরা তখনও ছাত্র, ভাইয়ের মতই।নানী তাকে বকাঝকা শুরু করলেন,তবে সেটা তাঁর ভালোর জন্যেই। কেনো এতো সেয়ানা ছেলে দিনের বেলা বাইরে বের হয়েছে। তাঁর কাছে যে খবর পাওয়া গেল শুনে সবাই শিউরে উঠলো। ধানমন্ডি এলাকায় শেখ মুজিবর রহমানের বাড়ি এবং আশে পাশে আর্মিরা তাদের ক্যাম্প বানিয়েছে। আর ঘরে ঘরে তল্লাশি চালাচ্ছে। অতএব আমরা নিরাপদ নই মোটেই।
সে খবর শোনার পর থেকে সবার আতঙ্ক। মা বিষয়টা লক্ষ্য করছেন।আর বারে বারে রান্না ঘরে যাওয়া আসা করে নানীকে সাহায্য করছেন। সবাই আমরা যেনো এক বোবা জগতে বাস করছি। অথচ মনের কথা সবারটাই সবাই জানে।
শেষ বেলায় সিদ্ধান্ত হল,আজ রাত্রে আমরা অন্য কোথাও আশ্রয় নেবো।কিন্তু, কোথায় যাবো, কোন জায়গায়? কার বাড়ি নিরাপদ? এটা কেউ বলতে পারেনা। বিকেল নাগাদ আমরা মতিঝিল কলোনির এক বাড়িতে (বোনের শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়)আশ্রয় নিলাম। আমরা ছয় ভাই-বোন, মা-বাবা সাথে দুলাভাই।
রাত নামলো যথারীতি। নিকষ কালো অন্ধকার। কার্ফু আর ব্ল্যাক আউটের কারণে অল্প আলো আঁধারিতে নিঃশব্দে চলা ফেরা। রাত্রে কে কী খেলো ঠিক নেই। এক ঘরে গাদাগাদি করে সবাই শুয়ে পড়ল। আমরা এসেছিলাম একবস্ত্রে।
রাত গিয়ে সকাল হল।বাবার কপালে ভাঁজ। মনে হচ্ছে বাবা কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত। তিনি বলেন,–চলো আমরা ধানমন্ডি ফিরে যাই।
মা বলে – দেশটা কোন জাহান্নামে যাচ্ছে,কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।
–হমম্ তাই… বাবা বলেন, –ভেবেছিলাম দেশ ভাগ হলে আমরা একটু শান্তিতে বসবাস করবো সেই উপায় ও থাকলোনা। হিন্দুরা আর কি করেছে? তার চাইতে বাঙ্গালিদের অবস্থা কী ভেবে পাইনা।
বাবার জীবনে এমন কোন উচ্চাকাংখা ছিলোনা।সরকারি চাকরি নিয়েই এই দেশে আগমন(তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান)। আর স্বাভাবিক প্রমোশন চাকরি ক্ষেত্রে। ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা শিখিয়ে উচ্চতর শিক্ষা দেওয়া।
–চলো ফিরে যাই ধানমন্ডি।এখানে এমন অনিশ্চয়তায় ক’দিন থাকা যায়? তার চাইতে ওখানে গিয়ে ধীরে সুস্থে পুরান ঢাকায় ভাড়া বাড়ি খুঁজতে হবে।
আমি চপ্পল খুঁজতে লাগলাম।এই’যে ভয়ঙ্কর অবস্থা দেশে চলছে,আমার কোনো বোধ বুদ্ধি নেই যেনো। পড়াশোনার জন্য বকুনি,তাগাদা নেই। ঘুরি-ফিরি খাই দাই। যেনো মহানন্দে দিন কাটছে আমার। আবার মাঝে মধ্যে ভয়ভয় যে করেনা তা নয়। ক’দিন আগেই মিছিল চলতো স্কুলে যাবার সময় দেখতাম,
–“জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো,ইয়াহিয়ার চামড়া তুলে নেবো আমরা”
তখন এক ধরণের কৌতুক অনুভব করতাম। আর এখন এই যে আতংকময় অবস্থানে আমরা আছি, এখনো চাপা উত্তেজনা অনুভব করি।
ধানমন্ডির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম আমরা রিকশায় করে।আমি আর আমার মেজো বোন এক রিকশায়। এমন করে আলাদা ভাবে উঠলাম।গন্তব্য একই স্থান। রিকশাওয়ালা জিজ্ঞেস করে,
–আফা দ্যাশ কী সাদিন হইবো? এই যে হুনতাসি।
–তুমি চুপচাপ চলো বেশী বক-বক করোনা। রিকশাওয়ালা হতাশ হয়ে প্রানপনে রিকশা ঠেলতে লাগল।
নানীর বাড়ি পৌছালাম।তিনি দীর্ঘ সময় অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন। নানীকে চেষ্টা করেও আমাদের সাথে নেয়া যায়নি। তাঁর চোখ ভিজে গেল।তাড়াতাড়ি ভেতরে সেঁধিয়ে গেলাম আমরা। নানি মেইন গেইটে তালা দিয়ে দেন।চাবি সব সময় তার আঁচলে বাঁধা থাকে। কেউ যেন তার অগোচরে বাইরে না যায় বা ভেতরে না আসে।
–তোমরা চলে এলে ভালো করেছ। ভাবলাম কতদিন না জানি থাকবে।
বাবা বলেন—আপনি গেলেন না এদিকে আমরাও নানান চিন্তা, কি ভেবে বাবা চুপ করে গেলেন।
–না বাবা আমি বুড়ো মানুষ।আমাকে নিয়ে টানাটানি করোনা।মিলিটারি এসে আমাকে মারে তো মারুক।
নানি সবাইকে দোয়া পড়তে বলে রান্না ঘরে চলে যান।আমি বসে বসে ‘লাই ইলাহা ইন্না আন্তা” মুখস্ত করতে লাগলাম।
ধুত ছাই… মুখস্ত হয়না।
প্রত্যেক ঘরে ঘরে দোয়াটা লিখে কাগজে আঠা দিয়ে সেঁটে দেয়া হল।
[ ২ পর্ব]
বেশ কিছুদিন পর আমরা একটা ভাড়া বাড়িতে গিয়ে উঠলাম।নানীর বাড়িতে রাত হলেই ভারীভারী মিলিটারির গাড়ি চলাচল করতো। আমরা চুপিচুপি জানালার ফাঁক দিয়ে দেখতাম। ভয়ানক সব চেহারা।
ইয়া বড়বড় মোচওয়ালা মিলিটারি,আবছা অন্ধকারে ঠিক মত বুঝা যায়না। কেবল উঁচিয়ে রাখা চকচকে অস্ত্রগুলো দেখা যায়। বাবা অসহ্য হয়ে আর ভয় পেয়ে এই ভাড়া বাড়িতে আমাদের সবাইকে নিয়ে এলেন। জায়গাটা ছিল আজিমপুরের শেখ সাহেব বাজারের গলিতে।
বেশ সরু গলির মধ্যে টিনশেডের বাড়ি। এখানে বলে রাখা ভাল,আমরা ভাড়া বাসায় উঠার আগে বাবা আর মেঝ ভাই মহাখালি গিয়েছিলেন দিনের বেলা।খাট,সোফা ইত্যাদি আনতে এবং ঐ দিনই ধরা পড়লেন মিলিটারিদের হাতে। আর সব চাইতে আশ্চর্যের ব্যাপার তাদের হাত থেকে ছাড়া পেলেন অক্ষত অবস্থায়।
অবিশ্বাস্য কাণ্ড! মেঝ ভাইকে একটা পরিচয় পত্র বানিয়ে দেয়া হয়েছিল ড্রাইভিং এ শিক্ষাণবিশ হিসাবে। জানিনা সেই কার্ডের ঠাই ঠিকানা কোথাকার ছিল।
লালবাগের বাড়ি এসে মন খারাপ হয়ে গেল। একটা টিনশেডের বাড়ি।অনেকটা এল প্যাটার্নের মত। গরমে প্রাণ হাঁস-ফাঁস করে। বড় ভাইয়ের পরীক্ষা চলছিল তা না থাকায় সারাদিন বাড়িতেই থাকে। আমরা ভাই,বোন মাঝে মাঝেই আড্ডা দিতাম।
এমন করেই চলছিল আমাদের দিন-রাত্রি।দিনে গরম রাতে মশা।চারদিক পিন-পিন করে মশা। হাত পাখা চালাতে পারিনা।রোজ দিনে রাতে তিনবার পানি আসে কলে। তখন হুড়াহুড়ি পড়ে যায়। মেঝ ভাই বিকেলে গোসল করে।।কারণে অকারণে মেজাজ খারাপ থাকে। খিট খিট করে।আমার ভীষণ হাসি পায়। মনে মনে বলি ‘ইয়াহিয়ার মত মুখ” করে আছে। মায়ের সাথে ঝগড়া করে অহেতুক। এমন চিৎকার দেয় ভয়ে বুক কাঁপে। সবার ধারণা হয়ে গেল আসলে বেচারা ভয় পেয়েছে। ভয় পেলে সাধারণতঃ মানুষের কিছু বহিঃপ্রপকাশ থাকে।তার মধ্যে একটা হচ্ছে অকারণে ঝগড়াঝাটি করা।
দিনে গরম,রাতে মশার কামড়ে যখন আমরা অস্থির,তখন বড় ভাই কোথা থেকে সিলিং ফ্যান আনল। নিজ হাতেই ফিট করল। বিকেলে দেখি এই নিয়ে বাবার মেজাজ সপ্তমে চড়ে গেল।
সব দোষ গিয়ে মায়ের ওপর পড়ল। বাবার এমন উগ্র রাগ কখনো দেখিনি আগে। ভাইকে বলে,
–এখন কি ফ্যানের হাওয়া খাবার সময়? তোমাদের আক্কেল নেই? ধুম করে মা,বোনের জন্য ফ্যান কিনে আনলে?
উত্তরে বড় ভাই কি বলেছিল মনে নেই। কেবল দেখেছি যন্ত্রপাতি দিয়ে ফ্যান নামিয়ে দিল। বাবার ঝগড়ায় বিকেলে মা’কে রেখে এল সেজ খালার বাড়ি সেই কমলাপুর।
বাবা যেনো হঠাৎ কেমন হয়ে গেলেন।পরের দিন সাত সকালে সেজ খালার বাড়ি থেকে মা’কে নিয়ে এলেন।
[ ৩ পর্ব]
বড় ভাই ঠান্ডা প্রকৃতির মানুষ। মেজাজ খারাপ হলে আরো ঠান্ডা হয়ে যায়। আরো ছোট বেলা আমার তখন। বাড়িতে পড়তে বসলে বাবা ঘরময় পায়চারি করতেন।তার হুকুম ছিল জোরে জোরে পড়তে হবে।যেনো পাশের ঘর থেকেও শোনা যায়। নিয়ম ছিল আগে ইংরেজি গ্রামার পড়তে হবে।স্কুলের পড়া ছাড়াও বাবা আলাদা করে ট্রান্সলেশন,গ্রামার, আর অংক করতে দিতেন।দুপুরে আমাদের বাড়িতে ঘুমানোর উপায় ছিলনা। মা দুপুরে কোন উপন্যাস বা তখনকার দিনে “বেগম” পত্রিকা জনপ্রিয় ছিল,তাই পড়তেন।
সন্ধ্যা বেলা বাবার সুবিধামত তাঁর হোমওয়ার্ক দিতে হতো।স্কুলের পড়া ফাঁকি দিলেও বাবার পড়া কখোনোই না। একদিন পড়ছি ঢুলেঢুলে ইংরেজি। বাবা কখন পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন খেয়াল করিনি। হয়তো ভুল উচ্চারণ হচ্ছিল আমার। বাবা বললেন,
–আবার পড়তো? আমি চুপ।
— আবার পড়।
মুখে তালা আমার। মনে হচ্ছিল ঘাড় বেয়ে কী যেনো পিলপিল করে নামছে।ভয়ে বুক ধড়ফড় করছিল। এরপরে মনে নেই। জ্ঞান ফিরলে দেখি বড় ভাই দুধের গ্লাস মুখের কাছে ধরেছে। কম্বল দিয়ে সারা শরীর ঢাকা।বাড়িতে হৈচৈ।
–ওকে আর কারো পড়া দেখতে হবেনা।তাতে যাই হয় হোক। কার উদ্দেশ্যে বলল জানিনা। আরো বলল “ এমন ভয় পেলে তো হার্টফেইল করবে। এমন পড়া দেখার মানে হয়না।“ এর আগেও বাবার হাতে মার খেয়েছি।এমন জোরে চুল টেনে ধরতেন যে ক’গাছি চুল আর ফিতে তাঁর হাতে চলে আসতো।কিন্তু তখন এমন হয়নি।
এহেন কড়া শাসনে বড়ো হওয়া আমরা পরিবারের ভাই,বোন। এখন বুঝি ,বাবার এই শাসন না থাকলে বাবার সরকারি চাকরির বেতনে ছয় ভাই বোন কে মানুষ করা কোনোদিন সম্ভব হতোনা। বড় ভাই ক্লাস এইট থেকে বৃত্তি পেতে পেতে ইংজিনিয়ারিং পর্যন্ত স্কলারশীপ পেয়েই গেছে। আর স্কলারশিপ নিয়েই শেষ পর্যন্ত বিদেশে যাওয়া।সে কথা পরে আসবে।
মা’কে নিয়ে বাবা এলে পরিবেশ আবার স্বাভাবিক।সবার গাল-গল্পে ভয়ে কোনরকমে দিন পার করে চলেছি।
মা বলে দোয়া পড়ো। আমি দোয়া মনে করতে পারিনা।মাঝে মাঝে ভাইয়ের ঘরে উঁকি দেই, দেখি বই পড়ছে নয়তো শুয়ে আছে।
বাইরে কারফিউ।রেডিওতে বেশির ভাগই হামদ-নাত হয়। মনে হয় দেশবাসীর জানাজা হচ্ছে। প্রায়ই ঘোষণা দেয়,
জরুরী নির্দেশ- কাউকে রাস্তায় দেখা মাত্র গুলি করা হবে।বোনকে জিজ্ঞেস করি “যুদ্ধ কবে শেষ হবে?”
বলে –জানিনা। মা’কে জিজ্ঞেস করি বলে –“বিরক্ত করোনা তো? ইয়া নফসি অবস্থা চলছে আর আজগুবি কথা।“
বড় ভাইয়ের কাছে জানলাম ইকবাল হলের সব ছাত্রকে মেরে ফেলা হয়েছে।ওখানে ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু জাফর ভাই থাকতেন।তার ৬/৭ টা ভাই ছিল।কোন বোন ছিলনা। তার ২/৩ বছর আগে আমাকে ঘটা করে বোন পাতিয়েছিলেন।নতুন কাপড়-চোপড় আর খেলনা দিয়ে। খবরটা শুনে খুব কেঁদেছিলাম সে দিন। জাফর ভাইকে আর কোনদিন দেখবোনা।
অল্পক্ষণের জন্য কারফিউ বিরতি হয়।তখন মানুষজনের তাড়াহুড়া বেড়ে যায়। কেউ বাজারে ছোটে।ঠেলা গাড়িতে জিনিস পত্র নিয়ে বাড়ি বদল করে। একজনের কাছে শোনা গেল বিহারীরা খুব আনন্দ উৎসব করছে। এই দুঃসময়ে আনন্দ করার কারণ খুঁজে পায়না কেউ।
বেশীর ভাগ সময় দরজা জানালা বন্ধ থাকে।এইটাই স্বাভাবিক।কারো বাড়ির সদর দরজা খোলা দেখা যায়না।
[৪-পর্ব]
একদিন ভোর বেলা এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটল। সদর দরজায় প্রচন্ড জোরে কড়া নাড়ছে কারা যেন।
কে দৌড়ে দরজা খুলে দিলো। দেখলাম ক’জন মানুষ হুড়মুড়িয়ে বাড়িতে ঢুকে গেল। বড়ভাই তাড়াতাড়ি সদর দরজা বন্ধ করে দিল। গুনেগুনে দেখলাম ছয়জন মানুষ। একজন মহিলা আর একজন আমার মেজ বোনের বয়সি,ছোট মেয়েটা আমার বয়সি হবে।আর তিন ছেলে। ছেলেদের বয়স আমি আন্দাজ করতে জানিনা(তখনকার সময়ে)।
ওরা সপরিবারে এসেছেন রাজশাহী থেকে।বড় ভাইয়ের বন্ধু আশফাক ভাই(ছদ্ম নাম) এবং তাঁর পরিবার।
মা হাঁসি মুখে এগিয়ে এলেন আর ঘরে বসালেন। তাড়াতাড়ি নাশতার ব্যবস্থা হল। সবার চেহারাই বিধ্বস্ত। এক কাপড়ে এসেছেন তাঁরা সবাই।
রাতের বেলা শুনলাম আশফাক ভাইয়ের মায়ের চাপা কান্না। তখনো জানতাম না যে তার এক ছেলে মুক্তিযুদ্ধে চলে গিয়েছে। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতেন তাঁর তিন ছেলে।
তাদের দেখে মায়া লাগল সবার। চাচী(আশফাক ভাইয়ের মা) এমন ভাবে থাকতেন যেনো বিরাট অপরাধ করেছেন এসে। অথচ তখন তো সব বাঙ্গালি এক।কারো কোনো নিদিঁষ্ট ঠিকানা নেই।
আর একটা পরিবারের আগমনে আমাদের তেমন কোনো অসুবিধা হলোনা। তবুও আশফাক ভাইয়ের আম্মা কুন্ঠিত থাকতেন।
বর্ষা শুরু হল। বৃষ্টির মাঝে গাছের পাতা নড়ে।তা থেকে পানি ঝরে টুপ-টাপ,টুপ-টাপ। টিন শেডের বাড়িতে বৃষ্টির অবিরল ধারা বেশ ভালো লাগে।অথচ ক’দিনেই বৃষ্টি উধাও।সবাই ভেবেছিল বর্ষা নেমেই গেল।
একদিন বিকেলে দেখলাম বাসায় অনেক রঙের চেক কাটা কাপড়।দেশি তাঁতের কাপড়। বোনের কাছে জানলাম আশফাক ভাই এনেছেন কাপড় বানাতে।চাচী জামা বানাতে শুরু করলেন।কাপড়গুলো কেটে আমাদের হাতে চালানো মেশিনে তার ছেলে-মেয়ের সবার জন্য জামা বানাতে লাগলেন।
ঐ সময় বলতে গেলে সমস্ত বাঙ্গালিরা পাকিস্তানি কাপড় বর্জন করা শুরু করেছিল। মাস খানেকের মত থেকে আশফাক ভাইরা অন্যত্র বাসা নিয়ে চলে গেলেন।
এই বাড়িতেও সমস্যা দেখা দিল। অল্প দূরে বড় রাস্তা থাকায় এ দিক দিয়েও মিলিটারির গাড়ি যাতায়াত শুরু করল। আমার এক চাচা আর একটা বাড়ির খোঁজ দিলেন খুব তাড়াহুড়ার মাঝে আমরা সেই বাড়িতে গিয়ে উঠলাম।
এমন গলিতে এতো চমৎকার বাড়ি দেখে আমরা সবাই খুব অবাক হলাম।এক বিঘার মতো হবে বাড়ির জায়গাটা।তার মাঝে সুন্দর ছিমছাম একতালা বাড়ি।বিশাল উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা।চার দিকে নারকেল গাছ,কুল গাছ। গেইটের পাশেই একটা কাঁঠালিচাঁপা ফুলের গাছ।বর্ষায় নিশ্চয়ই ফুল ফুটে চারদিক মৌ-মৌ গন্ধে ভরপুর হবে।
[৫পর্ব]
এতো বড় বাড়িতে এসে হকচকিয়ে গেলাম।সামনে প্রকান্ড বারান্দা,পেছনেও বিশাল বারান্দা।উঠোন পেরিয়ে রান্নাঘর। বাথরুম,রান্নাঘর কোনোটাই লাগোয়া নয়।বাথরুমে কল আছে তার পরেও কলপাড় আছে।আছে একটা বিশাল চৌবাচ্চা।ব্যবহার না করায় তার মধ্যে দুনিয়ার ইট,পাটকেল,আবর্জনা।
বড় আপা বলল “এতো বড় বড় জানালা অনেক পর্দা লাগবে”।
পর্দা টানানো হল। বাড়িতে আমরা থাকি ঠিকই কিন্তু কারো মুখে হাসি নেই।বাড়ির বাইরে গেলেই মিলিটারির হাতে ধরা পড়তে হবে এসব চিন্তা-সব মিলিয়ে ,দুলাভাই অফিস যাওয়া বন্ধ করে দিল। এর মাঝে শুনলাম(পরে প্রশ্ন করে জেনেছি তখনকার সময় অনেক কিছুই বুঝতাম না) দুলাভাই একদিন অফিস গিয়েছিল,তখন কারা যেনো আঙ্গুলের ইশারা করে দুলাভাইকে দেখিয়ে দিচ্ছিল।
সিগারেট কেনার বাহানা করে দুলাভাই সেই যে অফিস ছাড়লেন আর গেলেন না।
লাললাগ থেকে নবাবগঞ্জ বাজারে যেতেন দুলাভাই আর বাবা।ঝাঁকা ভরে বাজার আনতেন। তখন ঘরেঘরে ফ্রিজ ছিলনা কারো।
যে চাচা আমাদের এই বাড়িটার সন্ধান দিয়েছিলেন,তিনি প্রায় আসা যাওয়া করতে লাগলেন। বাঙ্গালিদের উদ্দেশ্যে বকাবকি করতেন,
–বাবা এ হলো পাকিস্তানি আর্মি,এতো সোজা? আর ক’জনা মিলে মুক্তিযুদ্ধ করলেই হল? তাও আবার মালাউনদের সাহায্য নিয়ে ঠুসঠাস করলে হল?
সবাই চুপ করে থাকত। নিজেরা খুব অসহায় বোধ করত। চাচা হাঁক পাড়তেন,
–ভাবী কই?চা দেন খেয়ে যাই।
আবার শুরু হত বকবক।
–হুম বাবা তোমাদের(বাঙ্গালিদের) মর্চে ধরা কবেকার চোর তাড়ানো বন্দুক।আর ওরা কতো আধুনিক।দেখতে হবেনা? ওরা সাচ্চা মুসলমান।
চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলতেন,
–ভাবী চিন্তা করবেন না।আপনার এই দেওর থাকতে কোনো সমস্যা হবেনা।
অবশ্য পাকিস্তানিদের সমর্থন করা ছাড়া ঐ চাচা কোনোদিন কারো ক্ষতি করেননি। ক’দিন পরে আমার বড় চাচার মেয়ে এলো। জন্মদিনের দাওয়াত দিতে(আসলে কোন উপলক্ষ মনে নেই)। সবাই অবাক হলেও মুখে কিছুই বলেনি।
যাবার সময় বলে- এতো ভেবে কী হবে?সবই আল্লাহর ইচ্ছা।যে যেমন করেছে তাই পাচ্ছে।
সব কিছু বুদ্ধি বিবেচনা আল্লার হাতে ছেড়ে দেয়া কিছু মানুষের অভ্যাস।তাতে তাদের সমস্যা থাকেনা। সেও তাই আল্লার হাতে ছেড়ে চলে গেল।
এ সময় অনেক বাঙ্গালিদের দেখেছি ভোজন বিলাস,হৈ-চৈ আনন্দ ফূর্তি করতে।যুদ্ধ-পরবর্তী কালে তারাই আবার মুক্তিযুদ্ধের খাতায় নাম লিখিয়েছে।তাদের নাম জানালে কেবল ঘৃ্ণার উদ্রেক হবে আর কিছুনা।
রাজাকার,আলবদর মিছিল করছে তাতে বহু মানুষকে জোর করে ধরে নিয়েছে সাথে। তাদেরকেও বলতে হয়েছে,
“ পাকিস্তান জিন্দাবাদ” ।
[চলবে] ী
সুপ্রিয় পাঠক,
“ফানুস ২ খন্ড” বেশ কিছু নতুন বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। আপনাদের আগ্রহ থাকলে কষ্ট করে পড়ে নিতে পারেন। ধন্যবাদ।
@ ঋণগ্রস্ত
৭১ যেই যেই দিনগুলোর বর্ণনা দেওয়া আছে তা সবটকু সত্য। বরং অনেক কিছু বাদ পড়তে পারে
স্মরণ শক্তি তীব্র না থাকায়। আর বেশ ছোট ছিলাম। মা,বোনের সাহায্য লেগেছে কিছু ক্ষেত্রে,
যেমন সময়,মাস, এসব আমার কিছু মনে নেই। বাদবাকী অনেক কিছু মনে পড়ে,আবার ভুলেও গিয়েছি। আর “ফানুস”১ খন্ড যদি পড়ে থাকেন ওখানেও পাবেন কিছু ৭১ বর্ণনা। ওগুলো নিজে দেখা। বাদ বাকী একজন লেখক নিজে কোনোদিন বলবে না এই ঘটনা তার নিজের না অন্য কারো। বর্ণনা উত্তমপুরূষ বলেই ভাবা হয় লেখকের নিজ ঘটনা।
আপনাকে ধন্যবাদ।
জীবন্ত বর্ননা।
এটা কি আপনার জীবনের ঘটনা নাকি গল্প? অসাধারন বর্নানায় জীবন্ত মনে হচ্ছে।
বন্যা আপুর প্রশ্নের উত্তরগুলো দিয়েছি। দেখে নেবেন প্লিজ।
আমি বরাবরের মত এই লেখা ফলো করে যাচ্ছি। এতে এমন সব সাধারন ঘটনার বর্ণনা আছে যা এককথায় অসাধারন। মনকে ছুঁয়ে যায়।
@আতিক রাঢ়ী,
“আমি বরাবরের মত এই লেখা ফলো করে যাচ্ছি। এতে এমন সব সাধারন ঘটনার বর্ণনা আছে যা এককথায় অসাধারন। মনকে ছুঁয়ে যায়।
এ আমার সৌভাগ্য। এই ঘটনা গুলো আমার,আপনার,আমাদের সকলের। সবার ভালো লাগলেই আমার লেখা স্বার্থক।
অসাধারণ বর্ণনা। পড়তে পড়তে ৭১ এ চলে গিয়েছিলাম।
@নিদ্রালু,
আপনার মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।
আপনাকে অভিনন্দন এই লেখাটার জন্য। ৭১-এর অভিজ্ঞতা এক এক জনের এক এক রকমের হলেও আমার বিশ্বাস যাদের ঐ সময়ে জ্ঞান ছিল তাদের আপনার লেখা একটা সমমনা অনুভূতির বলয়ে নিয়ে আসবে। আমার একটা বন্ধু-অভিযোগ – আপনি এপ্রিল মাস দিয়ে শুরু করেছেন, কিন্তু পরে বলেছেন এরপরে আমরা ঐ বাড়িতে উঠলাম, ইত্যাদি। যদিও এটা ডকুমেন্টারী নয়, কিন্তু মাসগুলো বলে দিলে আমাদের ধারণা থাকবে ঘটনা কত দ্রুত পাল্টাচ্ছে। একটা জায়গায় বর্ষার কথা বলাতে মনে হল আমার ৭১’এর বর্ষার অভিজ্ঞতা – নদীতে উত্তর থেকে নতুন জল আসা, উঁচু থেকে নদীর ঘূর্ণিতে ঝাঁপ দেয়া, সন্ধ্যায় রেডিওর চারদিকে সবাই গোল হয়ে বসে চরমপত্র শোনা, মিলিটারি আসছে শুনে পাটখেতে লুকান, ডাকাতের হাতে পড়া, ইত্যাদি।
@দীপেন ভট্টাচার্য,
“একটা বন্ধু-অভিযোগ – আপনি এপ্রিল মাস দিয়ে শুরু করেছেন, কিন্তু পরে বলেছেন এরপরে আমরা ঐ বাড়িতে উঠলাম, ইত্যাদি। যদিও এটা ডকুমেন্টারী নয়, কিন্তু মাসগুলো বলে দিলে আমাদের ধারণা থাকবে ঘটনা কত দ্রুত পাল্টাচ্ছে। একটা জায়গায় বর্ষার কথা বলাতে মনে হল আমার ৭১’এর বর্ষার অভিজ্ঞতা – নদীতে উত্তর থেকে নতুন জল আসা, উঁচু থেকে নদীর ঘূর্ণিতে ঝাঁপ দেয়া, সন্ধ্যায় রেডিওর চারদিকে সবাই গোল হয়ে বসে চরমপত্র শোনা, মিলিটারি আসছে শুনে পাটখেতে লুকান, ডাকাতের হাতে পড়া, ইত্যাদি। “
আপনার বন্ধুর জবাব আছে আমার কাছে,আমি শুরু করেছিলাম কিন্তু মার্চ দিয়ে দেখুন “ফানুস” প্রথব পর্ব,এবং তাকেও বলুন পড়তে কী ভয়াবহ ভাবে আমরা মহাখালি বাসা থেকে খালি পায়ে বাড়ি ছেড়েছিলাম।”অবরুদ্ধ ঢাকা”আরো কয় জাগায় লেখা আছে।এর পরে আমার কাছে পাঠকবৃন্দ অনূরোধ করেন আমি যেনো ৭১ দিনলিপি নিয়ে কিছু লিখি।তাই আমার দ্বিতীয় খন্ড লেখা শুরু,এবং সবার অনুরোধ”ফানুস”১ খন্ডে উপন্নাস লেখার সুযোগ আছে।অতঃপরে লেখা শুরু। আপনি অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুকে বলবেন কী যে “ফানুস’ ১খন্ড যে জায়গায় ৭১ দিনলিপি আছে পারলে ঐটুকু পড়তে।
আসলেই খুব দারুণ বর্ণনা।
ধন্যবাদ এ ধরনের লেখা মুক্তমনায় প্রকাশের জন্য।
@অভিজিৎ,
আপনাকে ধন্যবাদ।সময় করে পড়লেন। ৭১দিন লিপি সেই সময়কার সাধারণ মানুষ যারা রাজনীতি বলতে কী বোঝায় জানেনা, এই সব নিরীহ লোকজন কেমন অবস্থায় দিন যাপন করেছে সেইটা লেখায় আমার চেষ্টা।যা কিছু নিজে দেখেছি,আমার ছোটো বেলাকার স্মরণশক্তি অনেক তীব্র,বাদ বাকী বোন,মা কে জিজ্ঞেস করতে হচ্ছে কেবল সময়টা,অনেক সময় মাসটা,এইগুলো বুঝার বয়স তখন ছিলোনা।
আফরোজার লিখা পড়ে মনে হল আমার জন্য নতুন জন্ম হয়েছে।
১৯৭১-এর যে বর্ণনা আফরোজা দিয়েছে তা ঐ সময়ের প্রায় প্রত্যেক পরিবারের কাহিনী—সেই সব বিভীষিকাপূর্ণ ভয়ংকর দিনগূলোর স্মৃতি যেন আজও বাংলাদেশের মানুষকে তাড়িত করে।
আফরোজার কলমে সেই দিনগুলি অতি নিপুনতার সাথে তুলে ধরা হয়েছে।
সেইসব দিনগুলি কখনই মরবেনা।
@আবুল কাশেম,
আপনাকে কী বলবো,এই লেখা লেখার সময় আমাকে ভাবতে হচ্ছে,কতোবার স্মরণ শক্তিকে কাজে লাগাতে হছে বুঝাতে পারবোনা। সেই সব দিন সেই সব রাত্রি, সব সব একএক করে যেনো আমার কাছে ছায়াছবির মত ধরা পড়ছে।শুনেছিলাম ছোট বেলাকার স্মরণ শক্তি প্রবল হয়,লিখতে গিয়ে আমি নিজে তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। আমার ভাই,বোন যারা তাদের ও এতো মনে নাই,আমার এতো সুক্ষ অতি সুক্ষ বিষয় গুলো যেভাবে মনে পড়চ্ছে লিখতে গিয়ে। আপনার সময় ব্যয় করে পড়বার জন্য ধন্যবাদ।আসলে কী আমার মনে হয় সবারই পড়া দরকার।কেবল রণাঙ্গনে কী হয়েছিল তা অনেকেই লিখেছেন কিন্তু এক একটা সাধারণ পরিবার যারা কিছুই বুঝতোনা জানতো না,তাদের ঐ সব দিন গুলো কেমন করে কেটেছে তা জানা দরকার। লিখতে গিয়ে কতোবার চোখের জল মুছতে হয়েছে। আজ সবাই বড় হয়ে গিয়েছে,কে কোথায়,এইটা অমোঘ নিয়তি,কিন্তু তখন কার দিন গুলো মনে পড়লে চোখের জল থামাতে পারিনা।
ভাল লাগল, সাথে কিছু খেদও থাকল।
৭১ পর্বটা আরো বিস্তারিত হলে সে খেদটুকূ থাকত না। রাজনীতিমুক্ত ৭১ এর নিছক পারিবারিক দৈনন্দিন জীবন কাহিনী খুব বেশী পাওয়া যায় না।
@আদিল মাহমুদ,
আপনি বলেছেন
“ভাল লাগল, সাথে কিছু খেদও থাকল।
৭১ পর্বটা আরো বিস্তারিত হলে সে খেদটুকূ থাকত না। রাজনীতিমুক্ত ৭১ এর নিছক পারিবারিক দৈনন্দিন জীবন কাহিনী খুব বেশী পাওয়া যায় না। “
মটেই খেদ রাখবেন না,পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকুন। আগামী সপ্তাহ এই দিনে দেবো দৈনন্দিন কথা,ঘটনা আরো নানা কিছু, এমন আপনি যে বলেছেন আমার উপকার হয়েছে।সত্যি আমি এখন
বুঝতে পারছি পাঠক কী চাইছেন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
@আফরোজা আলম,
আমারই ভুল, বুঝতে পারিনি যে ৭১ পর্ব চালিয়ে যাবেন।
তবে ভুলে মনে হয় সবারই উপকার হয়েছে।
সব পাঠকের কথা জানি না, তবে ৭১ এর লেখা বলতেই যুদ্ধ বা রাজনীতি; এর বাইরে সাদামাটা জীবনের সত্য গল্প তো বেশী পাওয়া যায় না। তাই আমার কাছে এর আকর্ষন আলাদা।
অপেক্ষায় থাকলাম।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার কথা,
“সব পাঠকের কথা জানি না, তবে ৭১ এর লেখা বলতেই যুদ্ধ বা রাজনীতি; এর বাইরে সাদামাটা জীবনের সত্য গল্প তো বেশী পাওয়া যায় না। তাই আমার কাছে এর আকর্ষন আলাদা।”
ঠিক বলেছেন।আসলে কী আমার মনে হয় সবারই পড়া দরকার।কেবল রণাঙ্গনে কী হয়েছিল তা অনেকেই লিখেছেন কিন্তু এক একটা সাধারণ পরিবার যারা কিছুই বুঝতোনা জানতো না,তাদের ঐ সব দিন গুলো কেমন করে কেটেছে তা জানা দরকার। লিখতে গিয়ে কতোবার চোখের জল মুছতে হয়েছে। আজ সবাই বড় হয়ে গিয়েছে,কে কোথায়,এইটা অমোঘ নিয়তি,কিন্তু তখন কার দিন গুলো মনে পড়লে চোখের জল থামাতে পারিনা।
সাথে থাকার জন্যে ধন্যবাদ।
@আফরোজা আলম,
সত্যিই আমাদের যাদের সেসব দিন দেখার সৌভাগ্য বা দূর্ভাগ্য হয়নি আমরা হয়ত আজকে ইতিহাস বই পরে ইতিহাস জানতে পারি, কিন্তু মানবিক দিকটুকু খুব কমই ধরতে পারি। আর এই মানবিক দিকটুকু ভালভাবে হৃদয়ংগম করা না গেলে ইতিহাসও ঠিকমত ধরা যায় না।
আপনার এই লেখা কিছুটা এনি ফ্র্যাংকের ডায়েরীর কথা মনে করিয়ে দেয়।
খুবই উৎকন্ঠা নিয়ে পুরো পর্ব শেষ করলাম। পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল আমি যেন একাত্তরের ওই দিন গুলোতে আপনাদের সাথেই ছিলাম আর সারাক্ষন ভয়ে ভয়ে ছিলাম, এই বুঝি কখন কি হয়ে যায়।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। :rose2:
@মিঠুন,
আপনাকে ধন্যবাদ,এমন পাঠকের মন্তব্য পেলে আমার পরবর্তি লেখাগুলো সাজাতে সাহায্য হবে।কারো মনে কোনো প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় জিজ্ঞেস করতে পারেন ঐ সময়কার পটভূমিতে,যথাযথ উত্তর দিতে চেষ্টা করব। পরবর্তি লেখা আগামী সপ্তাহে এই দিনে।
সু-প্রিয় পাঠকদের অনূরোধে আমি “ফানুস”দ্বিতীয় খন্ড শুরু করি। যেখানে ৭১ কিছু দিনলিপি বর্ণনা করা আছে।সেই সময়কার ঢাকাতে যারা ছিলেন,কেমন অবস্থানে কিছু চিত্র তুলে ধরেছি।সব কথা সব ঘটনা মনে নেই,যতোটুকু মনে আছে,বাকীটা মা,বোনের সাহায্য নিয়েছি। অনেক কিছু বাদ পড়তে পারে,যা আমরা নিজে দেখিনি তা অনেকটাই বাদ পড়ে গিয়েছে। পাঠক বলবেন ভালোমন্দ ভুলত্রুটি,
পাঠকের মতামতই আমার শিরোধার্য। ভুল থাকলে অনুগ্রহ করে বলবেন আমি তা পবর্তিতে শুধরিয়ে নেবো।
@আফরোজা আলম,
এ ধরনের লেখা ভাল লাগে!
একাত্তরে বেশীর ভাগ বাঙালিরই এমন রুদ্ধশ্বাস সময় কেটেছে।
আমাদের ঘটে যাওয়া দিনলিপি এমনই ছিল, পথ চলতে সবাইকে আপন করে
নিয়েছিলাম আমরা!
সেই আমরা কত বদলে গেছি!
সবকিছু মিলে ছিল এক অবাক করা আনন্দ,বেদনার মূহুর্ত!
হয়ত ছোট ছিলাম বলে পরিস্থিতির বিপদ উপলব্ধি করতে পারতামনা!
এজন্য বড়দের কাছ থেকে ধমকও জুটত!
আফরোজা আমার e-mail- [email protected]
আশা করি আপনার e-mail পাব.
@লাইজু নাহার,
আপনার সুন্দর মন্তব্য ভালো লাগলো। আমাকে মেইল দিলে আমার প্রফাইল দেখুন অনুগ্রহ করে।খুশী হবো।