মে ২২
মোবাইলে ফেইসবুক এ লগ ইন করে দেখলাম , এক বন্ধুর স্ট্যাটাস, পাকিস্তান নাকি ফেইসবুক নিষিদ্ধ করেছে। সাথে সাথেই গুগল এ সার্চ করলাম এই ব্যাপারটা জানার জন্য… কারন যেটা জানা গেলো তা হলো একটা গ্রুপ ইভেন্ট – Everybody Draw Mohammad Day. এই গ্রুপ/ইভেন্ট ফেইসবুক এডমিনিষ্ট্রেশনকে ডিলিট করতে বলার পরেও ফেইসবুক তাতে কান না দেওয়ায় – যেটা সর্বোচ্চ করা সম্ভব ; গরু যেমন মেজাজ খারাপ হলে ক্ষেতের আইল ভাঙ্গার চেষ্টা করে শিং দিয়ে , অনেকটা সেরকম ভাবে ফেইসবুক নিষিদ্ধ করা হয় পাকিস্তানে। যাই হোক এটা নিয়ে আমার একটুও সমস্যা নেই… ধর্মের দোহাই দিয়ে সেই কবে থেকে কি কি হচ্ছে , আর কি কি হতে পারে সেটা পাকিস্তান এর দিকে তাকিয়ে থাকলেই বোঝা যাবে… তবুও আমাদের দেশে কিন্তু পাকিস্তান ভক্তের অভাব হয়নি কখনো আর হবেও না… ধর্মের দোহাই দিয়ে দেশ না ভাঙ্গার, মানে পাকিস্তান এক রাখার জন্য যা করার দরকার ছিল না… তাও করেছে আমাদের এই ধার্মিকরা… যাই হোক পাকিস্তানে কি হলো এইটা নিয়ে আমি এখানে লিখব ভাবি নি তবুও টেনে আনতে হলো কারন যা লিখতে চাইছি তার সাথে এর বোধয় ভালো রকমের সমন্ধ আছে
মে ২৯
ফেইবুক এ আবার লগ ইন করলাম মোবাইল থেকে , দেখি এক বন্ধুর একটা ছবি আপলোড এর সাথে কমেন্ট May be this is my last Facebook Upload. প্রথমে ভাবলাম পড়াশোনার চাপে হয়তো আর ফেইসবুক ইউস করবে না, পরে আরো স্ট্যাটাস আসতে থাকে আর জানতে পারি যে, বাংলাদেশ এ ফেইসবুক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হায় রে ! এইবারতো আর না ভেবে পারা গেল না, যদিও আমার ভাবনায় বাংলাদেশ এর কিছু আসে যায় না, তবুও ভাবলাম…
বাংলাদেশ এর ক্ষমতায় কি এখন জামায়েত ? তাহলে এইটা মানতে সমস্যা হতো না, যারা ধর্ম রক্ষার নামে ধর্ষন করতে পারে তাদের দ্বারা এইটা নস্যি
কিন্তু এই কি সেই হাসিনা পরিচালিত সরকার যারা বাংলাদেশকে ডিজিটাল বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল ? ডিজিটাল বানাতে না পারলেও মানুষের অবস্থা টাল বানিয়ে ফেলেছে এরমধ্যে আমার ধারনা … কিন্তু তবুও বিশ্বাস হচ্ছিল না প্রথমে… কারন এই নির্বাচন এর সময় আমি প্রথম ভোটার হই, সৌভাগ্যবশত বয়স যখন ১৮, তখন ই নির্বাচন এসে যায়। ভেবেছিলাম এদেরকেই ভোট দেব, কিন্তু যদিও ভোট দেওয়া হয়নি।
ভোট দিলে হয়তো এখন আরো খারাপ লাগতো । গনতন্ত্র সবসময়ই আমার কাছে একটা হাস্যকরন পদ্ধতি বলে মনে হয়, কিন্তু এমন গনতান্ত্রিক সরকারের আচরন হাসির সাথে বিরক্তিও উদ্রেক করে।
আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে, দ্রব্যমুল্যের দাম নিয়ন্ত্রন করতে এরা কতটা সফল হয়েছে ? সন্ত্রাস কতখানি নিয়ন্ত্রন করেছে ? দেশ থেকে চলে আসার পরও প্রায়ই প্রথম-আলো পরি, তাতে আমার ধারনা এই উত্তরগুলো নেতিবাচকই হবে। তাই অবাক লাগে, যা নিয়ন্ত্রন না করলে দেশের ১০০% জনগন সর্বিকভাবে সাফার করবে সেইসব জিনিস রেখে , যা নিয়ন্ত্রন না করলে দেশের মানুষের তেমন কিছুই যায় আসে না সেইটা এত দ্রুত নিয়ন্ত্রন করে ফেললো… ? এটা কি আওয়ামিলিগের(যদিও এই নাম ধরে ডাকার চেয়ে এখন এর ইংরেজি এক্রোনিমটাই বলতে ইচ্ছা করছে) পরবর্তি নির্বাচন এর জন্য কিছু ধার্মিক ভোটারদের ভোট নিশ্চিত করার কৌশল ?
পরক্ষনেই এইটা খুব স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে ভেবে, কারন আমাদের দেশের কালচারটা তো এমনই… রাজনিতির ক্ষেত্রেও যাকে পছন্দ না, যে বিরোধিতা করে কোন কিছুর তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার রীতি আমাদের বহু পুরোনো। নৈতিকতা আমাদের চরিত্রে অনেক আগে থেকেই অনুপস্থিত।… আর সেই ক্রমেই ইসলাম বিরধিতার কথা বলে যেকোন কিছু বন্ধ করা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়তো।
কিন্তু আমার প্রশ্ন , মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাসকে অটুট রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্র কবে থেকে নিয়েছে কিংবা সেই বিশ্বাস নিয়ন্ত্রন করার অধিকার কি একটা গনতান্ত্রিক সরকারের আছে ? আমার বিশ্বাস আমার নিজের, আমি আমার বিশ্বাস দুনিয়ার যেকোন ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রকাশ করতে পারি, এবং সেই জন্য যদি সমালচনা সহ্য করতে হয় তাহলেও সেটা সহ্যের দায়িত্বও আমার নিজের… এখন আমি আমার বিশ্বাস জোরে জোরে প্রকাশ করলাম, কিন্তু যখন এর সমালোচনা শুরু হলো তখন আর আমার ভালো লাগলো না … যেই সমলোচনা আমার পছন্দ হলো না সেইটা ডিলিট করার দাবি জানিয়ে গো ধরে বসে থাকলাম… এইটা কি পুরপুরি ছেলেমানুষি না ? তাহলে বাবা তোমার বিশ্বাসের কথাগুলো পকেটে পুরে রাখো না কেন বাপু ? মানুষকে ইম্প্রেস করার জন্য যদি সেগুলো ব্যবহারই করো তাহলে তো কিছু কথা শোনার ধর্য্যও থাকা উচিৎ নাহলে উচিৎ চুপ করে থাকা…
ইসলাম বিরোধিতার জন্য যদি ফেইসবুক নিষিদ্ধ করা হয়… ইসলাম বিরোধি গ্রুপ এর জন্য যদি ফেইসবুক নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে ইসলাম প্রচারের জন্যও ফেইসবুক নিষিদ্ধ করা উচিত! জলে নামবে আর কাপড় ভিজে গেলে বলবে আমি খেলবো না… এইটা তো রিতিমতো স্বেচ্ছাচারিতা।
শুনেছিলাম , সরকার নাকি ৭২ এর সংবিধানে ফেরত যেতে চায়, এমন কিছু খবর প্রথম আলোয় পরেছিলাম কিছুদিন আগে, কিন্তু এইটা আমার কাছে ৭২ এর সংবিধানে ফেরত যাওয়ার লক্ষন মনে হলো না… মনে হলো ১৪০০ বছর আগে ফিয়ে যাওয়ার জন্য নেওয়া পদক্ষেপ। আমার ধারনা আমাদের সংবিধানের সমলোচনা করলেও বোধহয় সরকার ফেইসবুক বন্ধ করবে না… আথচ ফেইসবুক কে চিঠি পাঠিয়েছে সেইসব্ লিঙ্ক বন্ধ করার জন্য…!!! রীতিমত হাস্যকর !! তাহলে কি ১৪০০ বছর আগের জিনিসগুলই রক্ষা করা আমাদের সরকারের প্রথম এবং প্রধান কাজ ?
ফেইসবুক যদি এইসব গ্রুপ ডিলিট করে তবে সাথে সাথে আরো অনেক গ্রুপ ডিলিট করা উচিত যেগুলো ইসলাম প্রমোট করে… কোন কিছু লাইক করার অধিকার যদি থাকে তবে তাকে লাইক না করার অধিকার ও নায্য অধিকার… আসলে ফেইসবুক এর কিছুই ডিলিট করা উচিত না, ইসলাম প্রমোট করার গ্রুপ গুলো যেমন থাকা উচিত তেমনি এর সমালোচনাকারি গ্রুপ গুলোও থাকা উচিত কারন সমালোচনা ছাড়া আলোচনা করার আশা করা পুরোপুরি ছেলেমানুষি …
আর আমাদের এই ছাগল মার্কা নিতিনির্ধারকদের বোঝা উচিত যে, মানুষের এটা মৌলিক অধিকার, ভালো খারাপ এর মধ্য থেকে নিজের জন্য উপযুক্ত জিনিসটা খুজে নেওয়ার , একক ভাবে কিছু চাপিয়ে দেওয়া গনতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্র! ফেইসবুক এ কিছু লিখলে যদি ফেইসবুক নিষিদ্ধ করতে হয় তাহলে কি আমাদের অনান্য লেখার মাধ্যম গুলোও এই গাধা সম্প্রদায় বন্ধ করে দেবে? আমারতো মনে হয়, লেখার কাগজও একই যুক্তিতে নিষিদ্ধ করা হতে পারে… নিষিদ্ধ হতে পারে গুগল! ইসলাম এর বিরুদ্ধে কিছু লিখা যাবে না এই যুক্তিতে এরমধ্যেই অনেক বই অনেক দেশে নিষিদ্ধ হয়ে আছে, আমাদের বাংলাদেশেও এমন অনেক বই আছে। অথছ অনান্য ধর্মের বিরুদ্ধে যখন ইসলামপন্থিরা বই লেখে, টেলিভিশন এ অনুষ্ঠানও সম্প্রচার করে সেই ক্ষেত্রে কেউতো ওদের মাথার দাম নির্ধারন করে দেয় না… নিষিদ্ধ করে না ওদের বই… তাহলে এরা এত অসহনশীল কেন ? জাকির নায়েকের টিভি প্রোগ্রামগুলো কেন নিষিদ্ধ হয়না ? প্রতেকটা আনুষ্ঠানেই এই লোক অন্য ধর্মগুলোকে গালমন্দ করে চলেছে প্রতিনিয়ত।
আমি এখানে আমেরিকা আসার পর, কেউ যখন জিজ্ঞেস করে তুমি কোথা থেকে এসেছ?, যখন বলি বাংলাদেশ, তখন ওরা ধরে নেয় আমি মুসলিম , আর যখন বলি আমি মুসলিম নই, তখন বলে তোমাদের অনেক অত্যাচার করে ওখানে, না ? আমি বলি না… আমি বাংলাদেশ এ ভালোই ছিলাম, হয়তো আমেরিকা থেকেও ভালো!
এই হলো বাংলাদেশ স্বমন্ধে আমেরিকান মানুষদের ধারনা… কিন্তু যখন ফেইসবুক নিষিদ্ধ করার মধ্যমে বাংলাদেশ , পাকিস্তান এর সাথে একই পথে হাটা শুরু করলো… তখন আমাদের এই প্রগতিশীল , অসাম্প্রদায়িক , গন্তান্ত্রিক স্বিকারোক্তি ওদের কাছে অবিশ্বাস্যই লাগবে। আমরা একটা মিথ্যাবাদি ভন্ড জাতিতে পরিনত হবো… একেবারে পাকিস্তান এর মতো, কিন্তু এই জন্যতো বাংলাদেশ এর জন্ম হয় নি… এটাই আফসোস
তবে আরেকটা মজার ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলেছেন আমাদের হাসিনা শাসিত সরকার… আমার ধারনা হাসিনা আর খালেদা বোধহোয় কিছুদিনের মধ্যেই মহিলা নবী হতে চলেছেন অথবা এরই মধ্যে আমাদের অজান্তে হয়ে গেছেন… ওনাদের আপত্তিকর কার্টুন প্রকাশ করায় এক যুবক কে অলরেডি রিমান্ডে নেওয়া হয়ে গেছে… আমি বুঝি না… এরা রাজনীতি করতে এসে এমন ফকিরের মত নাদান আচরন কেন শুরু করে দেয়? সমালোচনা যে হাসিনা সহ্য করতে পারেন না, সেইটার প্রমান এরমধ্যেই তিনি দিয়েছন ওনার পৈত্রিক দলের কউন্সিল এ। তবুও আমজনতার কাছে তিনি বাংলাদেশ এর গনতন্ত্রের মানসকন্যা… আমার কাছে তো ডাইনি মনে হয় মাঝে মাঝে!
আর সেই রডিন এর সাইবার ক্রাইম এর বর্ননাটাও রীতিমত হাস্যকর, ফেইসবুক এ একাধিক নামে , একাধিক ই মেইল এর মাধ্যমে একাধিক একাউন্ট থাকা , পর্নো সিডি রাখা (আমার ধারনা , মানুষের যাতে এই ছেলের প্রতি কোন সহানুভুতি না থাকে তাই এই ব্যাপারটা ফোকাস করা হয়েছে) আর কোন এক গায়েবি ক্ষমতার বলে র্যাব এর লোকেরা এটার ব্যাপারেও নিশ্চিত যে সে হ্যাকিং জানে যদিও হ্যাকিং করেছে কিনা এই বিষয়ে কিছুই বলেনি … এই যদি হয় সাইবার ক্রাইম এর নমুনা, তাহলে আর কিছু বলার থাকে না… সরাসরি বললেই পারে, অথবা এই আইন করলেই পারে যে সরকার প্রধান এর বিরুদ্ধে কোন আপত্তিকর কিছু বলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ!
আর কতো ডিজিটাল ম্যাজিক অপেক্ষ্যা করছে বাংলাদেশ এর মানুষের জন্য একমাত্র হাসিনা মালুম… অনেকেই বলবে আমি শুধু হাসিনাকেই কেন দোষারোপ করছি ? এটা হাসিনার সিদ্ধান্ত নাও হতে পারে !! তার একমাত্র কারন সরকারপ্রধান হিসবে এর দায় তাকেই নিতে হবে , আর এর জন্য যদি তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করতে চান, তাহলে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে সবার কাছে তার সরকারের এই নির্বোধ কাজের জন্য!
সম্ভবত আহমদ ছফার কথা- অনেকটা এরকম–
নির্বাচনে যখন আওয়ামিলীগ জিতে, তখন সে কেবল একাই জিতে। কিন্তু আওয়ামিলীগ যখন হারে, তখন গোটা জাতি হেরে যায়।
আওয়ামিলীগ হয়তো এটা মনে রাখে না বা ভুলে যায় যে, আমরা আমাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করি আওয়ামিলীগকে জেতাতে নয়, জাতি যাতে হেরে না যায়।
জাতি হিসেবে আমাদের বিরাট দুর্ভাগ্য যে, আমাদের কোন কার্যকর বিকল্প নেই। কেন নেই, সেটাই প্রশ্ন।
@ আতিক
:hahahee: :hahahee:
আম্রিকানরা ‘কাভার আপ’ বিষয়ে দারুন পারদর্শী। তাদের বুলশিট অন্ততঃ সুখশ্রাব্য, মানে শোনার পরে যদিও বুঝি গোবর-গন্ধী, তবুও ফরাসী সুগন্ধ ভাব করে শুনে যাই…
বাংলাস্তান সর্কারের বুলশিট দক্ষতা কিন্ডারগার্টেন পর্যায়ের। একেবারেই কিন্ডার… !!
আপনার লেখা পড়লাম, আর প্রচুর হাসলাম।
মুক্তমনাতে লেখকের প্রথম ও প্রাণবন্ত লেখার জন্য অনেক শুভেচ্ছা। :rose2:
হুমায়ুন আজাদ প্রায়ই বলতেন , আমরা এখন মেধাশূন্যতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।
হুমায়ুন আজাদের প্রতি শ্রদ্ধাবসত সরকার মাঝে মাঝে এসব করে। 😀
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরন : ধর্ম দেশ, সমাজের ও ফেইসবুক জন্য ক্ষতিকর
😛 দুঃখিত আপনার প্রবন্ধের শিরনাম নিয়ে প্যারডি করার জন্যে।
:clap2:
@আশিকুর রহমান,
জ্বী, শুধু সরকারের নয়, আমাদের তথাকথিত সুশীল সমাজেরও। শিক্ষিত ভদ্রলোকদের সমর্থনেই সরকার জাতিকে ১৪০০ বছর পেছনে নিয়ে যেতে চায়। কিছুটা দায়ভার আমাদেরও। আমরা সাধারণ মানুষকে বুঝাতে পারছিনা যে, পৃথিবীতে তাদের সুখে শান্তিতে বেঁচে থাকার জন্যে ধর্ম বা মুহাম্মদের কোন প্রয়োজন নেই।
@আকাশ মালিক,
আপনারা রাগ করলেও এ ব্যাপারে কিন্তু কোন গোপনীয়তা নেই। সরকার জনগণের কাছে এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ 🙂 । জনগণ জেনে শুনেই ভোট দিয়েছে।
এই সরকারের নির্বাচনী মেনিফেষ্টোতে আছে যে কোরান সুন্নাহ বিরোধী কিছু সরকার করবে না।
১৪০০ বছর আগের ইসলামী নিয়ম কানুনের বিরোধীতা করা মানেই তো কোরান সুন্নাহর সরাসরি বিরোধীতা।
@আদিল মাহমুদ,
সবটাই ঠিক আছে তবে একটা যায়গায় একটু কনফিউজড আছি। জনগণ কি আওয়ামী লীগকে শর্ত দিয়েছিল যে, আমাদের ভোট পেতে হলে তোমরা প্রতিশ্রুতি দাও, ক্ষমতায় গেলে কোরান সুন্নাহ বিরোধী কিছু করবেনা?
পত্রিকায় দেখলাম মোল্লারা বলছে, সরকার নাকি কিছুদিন আগেও ঘোষণা দিয়েছিল যে তারাও আখেরী নবীর খাঁটি উম্মত। কী এমন অসুবিধায় পড়েছিল আওয়ামী লীগ, যে তাদেরকে পরিষ্কার করে বলতে হলো, তারাও আখেরী নবীর খাঁটি উম্মত?
জনগণ ধর্মের তাবেদারী করার জন্যে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয় নাই, দিয়েছিল-
শিক্ষা , খাদ্য, বস্ত্র, ঔষধ, বিদ্যুত ও প্রাণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। অধক্ষ, অশিক্ষিত রাজনীতিবিদরা জনগণের মৌ্লিক চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হওয়ায় মানুষকে মাঝে মাঝে ধর্মের আফিম খাওয়ায়ে বেহুশ করে রাখে।
@আকাশ মালিক,
“
– বাংলাদেশের বাস্তবতা অস্বীকার করা কি যুক্তিবাদীদের উচিত হবে? জনগণ কি কখনো মুখে কোন দলের কাছে সরাসরি বলে যে তোমরা নির্বাচনী মেনিফেষ্টোতে এই এই ইস্যূ লেখ, তাহলেই কেবল তোমাদের ভোট দেব? এটা রাজনৈতিক দলগুলি পাবলিক সেন্টিমেন্ট বুঝে নিজেরাই ঠিক করে। এই পাবলিক সেন্টিমেন্ট ঠিক্মত না বুঝতে পারলে তাদেরই ক্ষতি। কারন তাহলে তারা ভোট পাবে না। যতই খারাপ লাগুক, আমাদের দেশের বাস্তবতায় রাজনীতিতে ধর্ম একটা খুবই বড় ব্যাপার। এর উত্থান কিভাবে হল তা এখানে বিবেচ্য নয়, তবে বাস্তবতা সেটাই। কোন দল যদি আমাদের দেশের নির্বাচনী মেনিফেষ্টোতে ধর্মহীন কথাবার্তা লেখে তবে তাদের ভবিষ্যত খুব সুবিধের নয়। কারন মানুষ চায় যে দলকে সে ভোট দেবে সে দল যেন তার নিজের ধর্ম (ইসলাম) কে প্রাধান্য দেয়। কাজেই আওয়ামী লীগ আদর্শগত ভাবে সেক্যূলার দল হলেও এখানে পরাজয় বরণ করতে বাধ্য। নাহলে ভোটই তো অনেক কমে যাবে।
তারা যদি নির্বাচনের আগে বলত যে কোরান হাদীসে কি লেখা আছে তা আমরা কেয়ার করি না, আমরা দেশ চালাবো কোন ধর্মের প্রভাব ছাড়াই। তাহলে তারা কয়টা আসন পেত বলে মনে করেন?
এখন পরিস্থিতির আরো উন্নতি হচ্ছে। আওয়ামী সমর্থক এক শ্রেনীর আলেমা ওলামা দল সংগঠিত হচ্ছে। এনারা নাকি আজকাল বংগবন্ধুকে রসূল বলে প্রকাশ্যে দাবী করছেন।
আজ যদি দেশে চালের দাম ৫০% বেড়ে যায় তাহলেও জনগণ সেভাবে ফুসে উঠবে না। কিন্তু সরকার যদি শুধু ঘোষনা দেয় যে আমরা কোরান সূন্নাহ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কোনভাবেই আনব না তাহলে দেশে তান্ডব হয়ে যাবে। এই সত্য কিভাবে এড়াবেন?
যে দেশের জনগণ যেমন সরকার হয় তেমন। সোজা কথা। শুধু সরকারকে একতরফা গালি দিলে হবে?
@আদিল মাহমুদ,
কথাটা অপ্রাসঙ্গীক। কোরান হাদীসে কি লেখা আছে তা আমরা কেয়ার করি না আওয়ামী লীগ কেন এ কথা বলবে?
জনগণের সেন্টিমেন্ট নিজের থেকে আবিষ্কার করে, চিনতে চিনতে আওয়ামী লীগ এখন নিজেই ধর্মপক্ষপাতি (মৌলবাদী) একটি রাজনৈতিক দল। এর সাথে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের যতটুকু তফাৎ, জামাতের সাথে ততটুকু মিল।
আগামী নির্বাচনে পাবলিক সেন্টিমেন্ট বুঝে আওয়ামী লীগ যদি প্রতিশ্রুতি দেয়, ক্ষমতায় গেলে তারা যে ‘খাঁটি মুসলমান’ এর প্রমাণ স্বরুপ, পল্টন ময়দানে লুঙ্গী খোলে তাদের মুসলমানী দেখাবে, আমি তাতে মোটেই অবাক হবোনা।
@আকাশ মালিক, :hahahee:
কথা পুরোপুরি সত্য। অবাক হবার কিছুই থাকবে না। অবস্থা তেমনই হতে চলেছে মনে হয়।
যস্মীন দেশে যদাচার…খুলে নদী পার…
নদী পার হওয়া দিয়ে কথা, যে যেভাবেই হোক। নগরে আগুন লাগলে যেমন দেবালয় রক্ষা পায় না তেমনি আজকের বাংলাদেশে ক্ষমতায় যেতে চাইলে যেকোন দলেরই ধর্ম এড়ানোর কোন উপায় নেই। ধর্ম নিয়ে হাঁকডাক না করলে সেটাই একটা বড় মাইনাস পয়েন্ট। যিনি যত জোরে চেঁচাতে পারেন তিনিই বড় সুবিধে পাবেন।
– কেন বলবে তো অনেক পরের কথা। আসল কথা হল এই কথা বলার মত হিম্মত কি আওয়ামী লীগের আছে? ক্ষমতার স্বার্থে তাদের উল্টোটাই বলতে হবে। সেটাই আমি বলতে চেয়েছি। তবে এর জন্য দলগুলিকে এক তরফা গালি দেবার চাইতে আম জনতা বলতে যাদের বুঝি তাদেরই দোষ দেব বেশী।
এদেশের জনগণ যদি বুঝত যে সংবিধান কাটাছেঁড়া করে বিসমিল্লাহ ঢোকানো আসলে আল্লাহকে খুশী করা নয়, ক্ষমতার ভীত শক্ত করা তাহলে তো আজ আর হয়ত এর জল গড়াতো না। গনগণ তো এসবে আরো খুশী হয়।
@আদিল মাহমুদ,
ভাইডি, জনগন বুঝেগো ভাইডি, সবই বুঝে। কিন্তু কথা বলতে পারে না প্রকাশ্যে। আজকে আমি প্রকাশ্যে বলতে পারিনা আমি কোন ধর্মে বিশ্বাস করি না, এমন কি আমি কেয়ার ও করি না যদিও কি পুজা, কি ঈদ কি বড়দিন, আমি আনন্দ করায় কোন সমস্যা দেখিনা। সমস্যা দেখে তারা যাদের কাছে ধর্মীয় পরিচয় লাগবেই।
আমি হিন্দু, খৃষ্টান, মুসলিম হলেও চলে। কিন্তু নাস্তিক??? আমিতো আগেই
বাতিল, কথা বলব কিভাবে?
@আদিল মাহমুদ,
আমি মনে করি কোন পপুলার দলের আদর্শগত কারনের জন্য ভোট কমেনা। বলা যায় সেই আদর্শের জন্যই দলটি জনপ্রিয় হয়। আসলে যখন সরকার অন্য কোন কারনে দুর্বল হয় (যেমন সীমাহীন দুর্নীতি) তখনই তাকে ধর্মের আশ্রয় নিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার প্রচেষ্টা চালাতে হয়।
@ব্রাইট স্মাইল্,
আপনি যা বললেন সেটা থিয়োরীটিক্যালী ঠিক আছে।
তবে প্র্যাকটিকেলি উল্টাটাও হতে পারে, যা আমাদের দেশের বাস্তবতা।
আপনার কি মনে হয়, ৯৬ সালে হাসিনার হিজাব তসবীহ জপা ছবির কারনে আওয়ামী লীগের ভোট কমেছিল নাকি বেড়েছিল? তাকে সেই ভড়ংটা ধরতে হইয়েছিলই বা কেন? আদর্শের জন্য ভোট বাড়লে তো তার উলটা আওয়ামী লীগের মূলমন্ত্র সেক্যুলার চেহারা আরো বেশী করে ধরার কথা। তিনি উলটা দিকে দৌড় দেওয়া শুরু করলেন কেন?
আদর্শগত কারনে ভোট বাড়ে এই বক্তব্য ঠিক আছে। মুশকিল হল আদর্শের সংজ্ঞাই যখন বদলে যায় তখন কি করবেন? ৭০ সালে এদেশের লোকের আদর্শ ছিল ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ঘৃণা করা। আজকে হয়েছে উলটা, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিই আজকে অচল। আজকের আদর্শই হল গায়ে ধর্মীয় লেবাস চড়ানো। কাজেই আদর্শগত কারনেই আজকের দলগুলির ধর্মীয় রাজনীতির দিকে ঝুকে পড়া।
এ পদ্ধতিতে সবাই খুশী, জনগণও খুশী। তারা সেক্যুলার রাষ্ট্রপ্রধান দেখার চেয়ে টুপই/হিজাব পরিহিত রাষ্ট্রপ্রধান দেখতে চায় বেশী। মন্ত্রী নেতারা সেক্যুলার টাইপ কথা বলার চেয়ে তারা শুনতে চায় নেতারা কথায় কথায় আল্লাহ খোদার নাম জপে। নেতা মন্ত্রীরাও এতে খুশী। জনগণকে অন্তত একবাহবে তো খুশী করা যাচ্ছে।
@আদিল মাহমুদ,
আমি মনে করি আওয়ামী লীগ আদর্শের গায়ে ধর্মীয় লেবাস চড়াচ্ছে জনগনকে খুশী করার জন্য না যতটা ততটা ধর্মীয় লেবাস পড়ে খুব সহজে নিজেদের দুর্বলতাগুলো ঢাকা যাচ্ছে এবং জনগনের দৃষ্টি অন্য দিকে ফিরানোও এটা একটা কায়দা।
@আদিল মাহমুদ,
এই পাবলিক সেন্টিমেন্ট এর ডেফিনিশন যদি একটু দেখেন তাহলে এইটা খুবই স্পষ্ট যে তা সমাজে যারা শিক্ষিত শ্রেনী তাদের কর্মকান্ডের উপর প্রচন্ডরকম ভাবে নির্ভরশীল।
:-Y :-Y
@আকাশ মালিক,
কিছুটা কেন? আমিতো দেখি পুরো দায়িত্বই আমাদের যারা শুধুমাত্র ক্রযক্ষমতা আছে বলে অন্তত ঠিক-বেঠিক কিছুটা হলেও বিবেচনা করতে পারি।
শুধু ত ফেসবুক নয়, চ্যানেল ওয়ান, আমার দেশ সবই তো হাসিনা সরকারের আমলে ব্যান হয়ে যাচ্ছে। হাত জোর করে ঝুঁকে ঝুঁকে ক্ষমা চাইতে শুরু করলে তো কুজা হয়ে যাবেন তিনি। 🙂
মুক্তমনায় স্বাগতম!
@অভিজিৎ,
অনেক ধ্যনবাদ আপনাকে এত সহজে আমায় লেখার সুজোগ করে দেওয়ার জন্যে… 🙂
হাত জোর করে না ঝুকে ক্ষমা চাইলেও চলবে… শুধু কানে ধরে বলতে হবে ভুল হয়ে গেছে , এমন কাজ আর কখনো করবো না !
@অনন্ত নির্বাণ, নাহ ভাই ।উনি ক্ষমা চাইবেন নাহ।উনি হটাৎ বলবেন ” থুক্ক ” ভুল হইয়ে গেছে ।
লেখা ভাল হয়েছে।মুক্তমনায় স্বাগতম! :yes:
@অভিজিৎ ও অনন্ত নির্বাণ,
ভালই বলেছেন। 😀
গণতন্ত্রের অন্যতম পূর্বশর্ত হল মত প্রকাশের স্বাধীনতা। আমি অনেক সময় চিন্তা করি যে গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী আমাদের দুই মহান নেত্রী এবং তাদের অনুগত শিষ্যরা কি সেটা বোঝেননা নাকি তারা গণতন্ত্রে আদৌ বিশ্বাস করেননা। তাহলে তাদের গণতন্ত্রপ্রীতি একটা ভড়ং মাত্র। রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেও বিপক্ষের মতামতকে বলপ্রয়োগে দমিয়ে রাখার চেষ্টাটা ইউটিউব ইন্টার্নেটের এই একবিংশ শতাব্দীতে একেবারেই অকার্যকর।
এটা বলে শুধু শুধু ফকিরদের লজ্জা দিচ্ছেন কেন?
ফেইসবুক বন্ধ করে বর্তমান বাংলাদেশ সরকার দেশের নাগরিকদের একটা অত্যন্ত মূল্যবান গণতন্ত্রিক অধিকার লঙঘন করেছেন। আর ফেইসবুকে
তাদের অপছন্দনীয় কার্টুন আঁকার দায়ে এক তরুনকে গ্রেফতার করে শুধু তার
মতপ্রকাশের গণতন্ত্রিক অধিকার নয়, মৌলিক মানবাধিকারও লঙঘন করেছেন। এটা আরও একমাত্রা বেশী অধিকার লঙঘন।
আমরা প্রথম লঙঘনটার প্রতিবাদ করেছি। চলুন, এখন দ্বিতীয়টারও প্রতিবাদ করি। মডারেটরদের অনুরোধ করব মুক্তমনার ব্যানারে ফেইসবুক ব্যান তুলে দেওয়ার দাবীর সাথে এই তরুনের গ্রেফতারের প্রতিবাদ যোগ করে দিন।
@মোঃ হারুন উজ জামান,
:yes: :yes: :yes:
নিন্দা জানাচ্ছি এই গ্রেফতারের এবং তার মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।
এই ফকিরদের আমরাই আসনে বসিয়েছি, তাই লজ্জা দিতেই(নিতেই) হবে।
@অভিজিৎ,
আমার দেশ একটা চরম মৌলবাদী পত্রিকা, এর পাশে তো নয়া দিগন্ত-সংগ্রামকে সুশীল মনে হয়। একজন ব্লগারের উদ্ধৃতি দিচ্ছি,
এমনিতেই বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে কম টানা-হেচড়া হচ্ছে না, তার উপর দিগন্ত মিডিয়া আর মাহমুদুর রহমান সংঘবদ্ধভাবে অপপ্রচার চালিয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। হাসিনার সমালোচনা মতস্বাধীনতার গন্ডিতে পড়ে, কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধীদের পদলেহন হল সর্বনিকৃষ্ট অপরাধ।
@পৃথিবী,
আমার দেশ খুবই নিম্ন মানের পত্রিকা তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তাই বলে সরকার এভাবে গায়ের জোরে বন্ধ করে দেবে না মানা যায় না। এরপর একই পথ ধরে বিএনপি এসে প্রথম আলো বন্ধ করে দেবে না তার গ্যারান্টি কি?
মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করলে প্রেস এক্টে মামলা করা যায়। আইনী উপায় আছে।
প্রথম আলোতেই পড়লাম আমাদের দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে জেনারেল মঈনের কায়দায় তারই মালিক পক্ষকে দিয়ে চাপের মুখে মামলা করানো হয়েছে। এগুলি কোন ভাল নজির? এই মাহমুদুর রহমান কোন সাধু চরিত্র না। তাই বলে তাকে এভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে হবে? বলাই বাহুল্য এই মিথ্যা মামলা আদালতে টিকবে না। তখন ইনি আদালতের সার্টিফাইড ভাল মানুষ হিসেবে বেরিয়ে আসবেন, যেমন্তা বেরিয়ে এসেছেন কেয়ার টেকার আমলে গ্রেফতার হওয়া প্রায় সব চোর নেতা।