মাথিনের জন্য শোকগাথা

 

টেকনাফ গেছেন আর মাথিনের কূপ দেখেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া বিরল হবে। টেকনাফ থানার ঠিক মধ্যখানে এই কূপ অবস্থিত। টেকনাফ ভ্রমণকারীদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষনীয় এই কূপ। এই কূপের গায়ে লেখা রয়েছে এক বাঙালি যুবক আর এক রাখাইন কিশোরীর বিচ্ছেদময় প্রেমের কাহিনী।

 

বিশের দশকের শেষভাগের ঘটনা। টেকনাফে তখন একটি মাত্র পাতকুয়ো। এই কুয়োতেই জল নিতে আসতো রাখাইন রমণীরা। তাদের সাথে আসতো রাখাইন জমিদার কন্যা চতুর্দশী মাথিন। পানি নিতে এসেই মাথিন প্রেমে পড়ে যায় সুদর্শন বাঙালি পুলিশ অফিসার ধীরাজ ভট্টাচার্যের। এই ভদ্রলোক পরে বাংলা চলচ্চিত্রে নায়কও হয়েছিলেন। মাথিন এবং ধীরাজের প্রেমের স্মৃতি বুকে নিয়ে এখনো এই কূপ টিকে রয়েছে।  টিকে রয়েছে মাথিনের কূপ নামে।

 

ধীরাজ ভট্টাচার্য শুধু নায়কই ছিলেন না, ছিলেন সাহিত্যিকও। বেশ কিছু গ্রন্থও রচণা করে গেছেন তিনি। এর মধ্যে তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ যখন পুলিশ ছিলাম এবং যখন নায়ক ছিলাম খুবই বিখ্যাত। যখন পুলিশ ছিলাম গ্রন্থেই মাথিনের সাথে প্রেমের বিস্তারিত ঘটনাবলী বর্ণনা করা আছে।

 

ধীরাজ ভট্টাচার্যের পৈত্রিক বাড়ি যশোরে। বসবাস করতেন কোলকাতায়। কাজ করতেন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে। এর কাজ ছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে যারা স্বদেশী করতেন তাদেরকে নজরদারি করা। এই কাজ করতে গিয়ে মাঝে মাঝেই বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যেতেন তিনি। যাদেরকে অনুসরণ করতেন তারাই মাঝে মাঝে তাড়া করতো তাকে। একবারতো এক বিখ্যাত স্বদেশীকে অনুসরণ করে চলন্ত ট্রামে উঠতে গিয়ে পাদানি থেকে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান। জ্ঞান ফিরলে দেখেন যে সেই স্বদেশী নেতার কোলের মধ্যেই মাথা দিয়ে শুয়ে আছেন তিনি। নেতা তাকে শুশ্রুষা করে ট্যাক্সি ডেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।  এরকম আদর যে সবসময় পেতেন তা কিন্তু নয়। কেউ কেউ আবার মুখের উপর এসে ইংরেজদের তাবেদারি করার জন্যে দুকথা শুনিয়েও যেতো।

 

 

এর মধ্যে একদিন তাকে বদলি করে দেওয়া হয় চট্টগ্রামে। কোলকাতার তুলনায় চট্টগ্রাম তখন গাঁও গেরামের মত। ধীরাজের ভাষ্য অনুযায়ী, যে গান শুনলে কোলকাতার কেউ পাত্তাই দিত না, সেরকম গান শুনিয়েই রাতারাতি তিনি গায়ক হিসেবে সুনাম অর্জন করে ফেলেন সেখানে। গানের গলার সাথে সাথে ছিল রাজপুত্রের মত সুন্দর চেহারা। ফলে, অতি দ্রুতই তিনি নেক নজরে পড়ে যান বুড়ো পুলিশ সুপারের স্বল্পবয়েসি অসামান্যা সুন্দরী স্ত্রী মিসেস মুল্যাণ্ডের। আর মিসেসের সুনজরের জের হিসেবেই মিঃ মুলাণ্ডের কোপ নজরে পড়েন। ফলশ্রুতিতে এক ধাক্কায় তাকে বদলি করে দেওয়া হয় বাংলাদেশের শেষ সীমানা টেকনাফ থানায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা তখন এতই খারাপ যে, চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফে যেতে স্টীমারে সময় লাগতো আড়াই দিনের চেয়েও বেশি।

 

ধীরাজ ভট্টাচার্য তার বইতে টেকনাফকে বার বার দ্বীপ বলে উল্লেখ করেছেন। ভয়ংকর স্থান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বাবাকে লেখা চিঠিতে তিনি লেখেন,

 

এখানকার লোকমুখে যাহা শুনিলাম, তাহাতে বুঝিলাম টেকনাফ অতি ভয়ংকর জায়গা। এখান হইতে স্টীমারে যাইতে আড়াই দিনের বেশি লাগে। বঙ্গোপসাগরের পারে ছোট্ট একটি দ্বীপ, তাহার বাসিন্দারা সব মগ, তাহাদের ভাষা বোঝা যায় না। কলিকাতা হইতে চিঠি যাইতে চৌদ্দ পনর দিন লাগে। টেলিগ্রাম যায় সাত দিনে। বছরের সাত মাস এই দ্বীপটার সঙ্গে বাইরের জগতের কোন সংশ্রব থাকে না। শুধু শীতকালে যখন সমুদ্র একটু শান্ত থাকে, তখন চট্টগ্রাম হইতে সপ্তাহে একদিন স্টীমার যায় ও আসে। ভয়ঙ্কর সব অপরাধীদের ঐ দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়। ওখান হইতে অধিকাংশই আর ফিরিয়া আসে না।

 

টেকনাফকে শুধু দ্বীপ বলেই ক্ষান্ত হননি তিনি। এই দ্বীপের দৈর্ঘ প্রস্থ এবং সীমানাও উল্লেখ করেছেন পরিষ্কারভাবেই। তার ভাষাতেই,

 

টেকনাফ অদ্ভুত দ্বীপ। লম্বা মাইল দেড়েকের বেশি হবে না, চওড়া প্রায় একমাইল। নাফ নদীর পূবদিকে হলো আকিয়াব, আর পশ্চিমদিকে টেকনাফ। একদিকে আরাকান হিলস, অপরদিকে চিটাগাং হিলস, আর সমস্ত দ্বীপটাকে বেড়াজালে ঘিরে রয়েছে বঙ্গোপসাগর।

 

মাত্র আশি বছর আগে কী তবে টেকনাফ দ্বীপ ছিল? মূল ভূখন্ডের থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল? আমার জানামতে, শাহপরীর দ্বীপ একসময় টেকনাফের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। ক্রমে ক্রমে এটি টেকনাফের সঙ্গে মিশে গেছে। কিন্তু, ধীরাজ ভট্টাচার্য পরিষ্কারভাবেই টেকনাফের কথা বলছেন, শাহপরীর দ্বীপের কথা নয়। এই বিষয়টার কোন সুরাহা করতে পারিনি আমি। এছাড়া আরেকটা বিষয়ও হয়তো পাঠকেরা খেয়াল করেছেন। টেকনাফের বাসিন্দাদের মগ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। রাখাইনদেরকে মগ বলাটা রাখাইনরাই পছন্দ করে না। মগ বলে ডাকাটা তাদের কাছে মারাত্মকভাবে অবজ্ঞাসূচক। কিন্তু ধীরাজ সাহেব তার বইতে সবসময়ই তাদেরকে মগ বলে ডেকেছেন। তিনি কী বিষয়টা জানতেন না? নাকি কিছু সংখ্যক কোলকাতার বাঙালিদের মতন তিনিও উন্নাসিকতায় ভুগতেন আর তার ফলশ্রুতিতেই রাখাইনদেরকে মগ বলে ডাকতেন।

 

টেকনাফ থানার ভেতরেই কোয়ার্টারে থাকার ব্যবস্থা হয় ধীরাজ বাবুর। কাজকর্ম বলতে কিছুই ছিল না তার। গণ্ডগ্রামে কাজই বা কী থাকবে? ফলে, তার একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়ায় থানার সীমানার মধ্যে অবস্থিত একমাত্র কুয়ো থেকে জল তুলতে আসা রঙ-বেরঙের পোষাক পরিহিতা রাখাইন রমনীদের রূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা। বারান্দায় একটা চেয়ারে বসে সকাল সন্ধ্যা দুই বেলা পুরনো একটা খবরের কাগজের আড়ালে মুখ লুকিয়ে প্রতিদিন মেয়েদের দেখতেন তিনি। এরকমই লুকিয়ে মেয়েদের দেখতে গিয়েই একদিন হঠাৎ করেই তার নজরে আসে চতুর্দশী এক অপূর্ব সুন্দরী কন্যার। স্থানীয় রাখাইন জমিদার ওয়াং থিনের একমাত্র আদুরে দুলালী সে। অবশ্য, রূপবতী এই কন্যার রূপ বর্ণনা করতে গিয়েও পূর্বসংস্কারের উর্ধ্বে উঠতে পারেননি তিনি। তুলনায় এনেছেন বাঙালি নারীদের সৌন্দর্য।

 

আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় এরকম রূপযৌবনে লাবণ্যময়ী মেয়ে আর দেখেছি বলে মনে পড়ে না। নাক চোখ মুখ সুন্দরী বাঙালী মেয়েদের মতই নিখুঁত, তার উপর ঐ নয়নমনোহর খোঁপা। মনে হলো, সমুদ্র থেকে কোনো জলপরী উঠে এসেছে টেকনাফের পাতকুয়ো থেকে জল নিতে।

 

চোখে চোখে কথা হয়ে যায় দুজনের। নীরব ভাষায় দুজন নরনারী ভালবাসার বন্ধনে জড়িয়ে যায়। রোজ সকালে আলো-অন্ধকারের মধ্যে মাথিন আসে, যতোক্ষণ থাকা সম্ভব পরস্পরের দিকে চেয়ে থাকে তারা। বিকেলেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। সবাই চলে গেলে মাথিন আসে। রাতের আঁধার যখন গাঢ় হয় তখন আস্তে আস্তে সে চলে যায়। আশচর্যের বিষয় হচ্ছে যে, তাদের পুরো প্রেমের সম্পর্কটার সময়েই কেউ কারো সাথে কথা বলেনি। ধীরাজের ভাষায়,

 

নীরব চোখের ভাষায় যেখানে কাজ চলে সরব মুখের ভাষা সেখানে অবান্তর ও অবাঞ্ছিত মনে হয়।

 

হরকি নামের রাখাইন ভাষা জানা এক বাঙালি কনস্টেবলের মাধ্যমে মাথিনের সঙ্গে যোগাযোগ চলতে থাকে ধীরাজের। ধীরাজের প্রেমে আত্মহারা মাথিন বাঙালি বধু হবার আশায় লুঙ্গি ছেড়ে শাড়ী পরার স্বপ্ন দেখতে থাকে। হরকিকে বলে তাকে শাড়ী কিনে দিতে। সেই শাড়ী পরে বাসর রাতে ধীরাজের সামনে গিয়ে তাকে চমকে দেবার পরিকল্পনাও করে সে। শুধু তাই নয়। রাখাইন মেয়েরা সাধারণত বিয়ের সময়ে যৌতুক দাবি করে। ধীরাজের জন্য যৌতুক দাবি না করারও ইচ্ছা পোষণ করে সে। রাখাইন সমাজে কোন মেয়ে যদি বিয়ের সময়ে যৌতুক দাবি না করে তবে সেটা পুরুষের জন্য বিরাট সম্মানের ও গৌরবের বিষয়।

 

এর মধ্যে অবশ্য টেকনাফের সবাই জেনে গিয়েছিল তাদের প্রেমের কথা। হিংসাকাতর এক সহকর্মী এই প্রেমের খবর জানিয়ে দেয় জমিদার ওয়াং থিনকে। সেই সাথে ধীরাজের চরিত্র নিয়ে কিছু সংশয়কথা। এসমস্ত নেতিবাচক কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে পড়েন জমিদার ওয়াং থিন। কিন্তু হরকি তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করে। বলে যে বাবুর কোন কুমতলব নেই। মাথিনকে প্রথামত বিয়ে করে বউ করতে চান তিনি।

 

ধীরাজ মাথিনকে নিয়ে ঘটনা শুধু টেকনাফ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকেনি। বাতাসে ভেসে তা চলে যায় কোলকাতাতেও। একদিন বাবার কাছ থেকে চিঠি পান ধীরাজ। সেই চিঠির অংশবিশেষ এরকম।

 

পিতা-মাতার উপর অভিমানে অপরিণত বুদ্ধি সন্তান অনেক সময় অগ্র পশ্চাৎ বিবেচনা না করিয়া এমন কিছু করিয়া বসে যাহার ফলে, শুধু তাহার একার নহে, পিতা-মাতার ভবিষ্যৎ জীবনও বিষময় হইয়া উঠে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আছে এমন হীন কাজ তুমি কখনই করিবে না যাহাতে আমাদের উঁচু মাথা সকলের সামনে নিচু হইতে পারে। সম্প্রতি টেকনাফ হইতে বেনামী তোমার এক শুভাকাঙ্খীর পত্রে জানিলাম তুমি নাকি একটি মগের মেয়েকে বিবাহ করিবার জন্য বিশেষ ব্যস্ত হইয়া পড়িয়াছ। সরকারী কার্যে অবহেলা করিয়া দিবারাত্র মেয়েটির পিছনে পাগলের মত ঘুড়িয়া বেড়াইতেছ এমন কথাও পত্রে আছে। আমি বিশ্বাস করি নাই কিন্তু তোমার গর্ভধারিণীর একান্ত আগ্রহাতিশয্যে বাধ্য হইয়া লিখিলাম।

 

আর একটি বিশেষ কথা এই সঙ্গে তোমাকে জানাইয়া রাখা বিশেষ প্রয়োজন। আমার বাল্যবন্ধু ও সহপাঠী চট্টোপাধ্যায়কে তুমি ভাল রকমই জান। বহুদিন পূর্বে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই- পুত্র-কন্যার বিবাহ দিয়া পরস্পরে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হইব। সম্প্রতি তাঁহার জ্যেষ্ঠা কন্যা বিবাহের উপযুক্ত হওয়ায় তিনি আমাকে পূর্বের প্রতিশ্রুতি স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন। কন্যাটিকে আমরা দেখিয়া আসিয়াছি অতি সুলক্ষণা সুন্দরী ও গৃহ-কর্ম-নিপুণা। তোমার অপছন্দ হইবে না। আমি পাকা কথা পর্যন্ত দিয়া আসিয়াছি ও জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি দিন স্থির করিয়াছি। তুমি পত্র পাঠমাত্র এক মাসের ছুটি লইয়া কলিকাতায় চলিয়া আসিবে ছুটি না পাওয়া গেলে চাকুরিতে ইস্তফা দিয়া চলিয়া আসিতেও দ্বিধা করিবে না।

 

বাবার এই এক চিঠি পেয়েই ধীরাজের এত সাধের প্রেম ছুটে যায়। চিঠি পাবার দিনেই থানায় এসে হাজির হন জমিদার ওয়াং থিন। বিয়ের কথা পাকাপাকি করার জন্যে। যেখানে ধীরাজের বাবার চিঠি পূর্বসংস্কারে ভর্তি, মাথিনকে মগের মেয়ে বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছেন, সেখানে ওয়াং থিনের ভাষা অনেক বেশি উদার, অনেক বেশি মানবিক। তিনি ধীরাজকে বলেন, আমার ঐ একটি মেয়ে। যদি বুঝেন সমাজ আপনাকে লিবে না, এইখানে থাকিয়ে যান। আমার জমি-জমা যা আছে আপনারই হোবে। আর যদি বুঝেন, ওকে লিয়ে গেলে গোলমাল হোবে না, – লিয়ে যাবেন। আমার কোষ্টো হবে হোক ও তো সুক পাবে।

 

ওয়াং থিনের সামনে নীরব থাকে ধীরাজ। ওয়াং থিন চলে যেতেই উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়ে দেয় যে সে এই বিয়ে করছে না। তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওয়াং থিনের রুদ্ররোষ থেকে বাঁচার জন্যে পালিয়ে যাবার পরামর্শ দেয় ধীরাজকে। ধীরাজের সৌভাগ্য। ওইদিনই একটা স্টীমার চট্টগ্রামের দিকে রওনা হবার কথা। ওটাতে করে ছুটির অছিলায় চিরতরে টেকনাফ ছাড়েন ধীরাজ।

 

ধীরাজের টেকনাফ ত্যাগকে সহজে নিতে পারেনি মাথিন। টেকনাফে চাউর হয়ে গিয়েছিল যে, ছুটি নয়, মাথিনকে বিয়ে করার ভয়েই পালিয়েছে ধীরাজ। শোকে, দুঃখে, অপমানে অন্নজল ত্যাগ করে শয্যা নেয় মাথিন। তার বাবা ওয়াং থিনসহ সারা টেকনাফবাসী শত চেষ্টা করেও আর জল গ্রহণ করাতে পারেনি। অনশনে, প্রতিবাদে, প্রেমের অহংকারে  মৃত্যু ঘটে মাথিনের। কন্যার শোকে পাগল ওয়াং থিন হরকিকে পিটিয়ে আধমরা করে দেয়।

 

ভাগ্যের এমনই ফের, বাবার পছন্দের যে মেয়েকে বিয়ে করার জন্য ধীরাজ চলে গিয়েছিল কোলকাতায়, সেই মেয়ের বাবা একজন কনস্টেবলের সাথে মেয়েকে বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। একেই বলে বোধহয় প্রকৃতির প্রতিশোধ।

 

ধীরাজ-মাথিনের প্রসঙ্গ এলে সবাই এর রোমান্টিক কিংবা করুণ পরিণতির দিকটাকেই উজ্জ্বল করে তুলে ধরতে চেষ্টা করেন। কিন্তু এটা মোটেও প্রেমের গল্প নয় বা করুণ পরিণতির গল্পও নয়। আমার কাছে এটা বিশ্বাসঘাতকতার গল্প। প্রতারণা এবং প্রবঞ্চনার গল্প। যে যুক্তিতে ধীরাজ মাথিনকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল তা কোনভাবেই ধোপে টেকে না। আমার ধারণা যে,  একটা পর্যায় পর্যন্ত হৃদয় দিয়ে চালিত হলেও বাবার চিঠির পরেই বাস্তবতার বোধোদয় ঘটে ধীরাজের। একটা মগের (তার ভাষায়, দেখুন একবারও ধীরাজ কিন্তু এদেরকে রাখাইন বলেনি, মগই বলেছে বার বার) মেয়েকে ঘরে তুলে নিলে পরিবারতো মানবেই না, কোলকাতার শিক্ষিত সমাজও মেনে নেবে না। এই আশংকাতেই আসলে পালিয়েছিল সে। বেচারি মাথিন। সমাজ সংসারের এই জটিলতা তার পক্ষে বুঝে উঠা সম্ভব হয়নি। একটা বিশ্বাসঘাতক, কাপুরুষ, প্রতিষ্ঠানপন্থি, সংস্কারাচ্ছন্ন, পলায়নপর মানুষের জন্য অমূল্য জীবনটাকে বিসর্জন দিয়ে দিয়েছিল সে।

 

ধীরাজ-মাথিনের গল্পকথা তাই ভালবাসার নয়, বরং কষ্টের এবং শোকের। তবে এ অনুভূতি আবার দুজনের জন্যে নয়, শুধুই বোকাসোকা এই জেদি মেয়েটার জন্যে।

 

মাথিনের জন্যেই শুধু এই শোকগাথা, মাথিনের জন্যেই সবটুকু ভালবাসা।

 

মাথিনের কূপ -১

 

 

মাথিনের কূপ -২