মাথিনের জন্য শোকগাথা
টেকনাফ গেছেন আর মাথিনের কূপ দেখেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া বিরল হবে। টেকনাফ থানার ঠিক মধ্যখানে এই কূপ অবস্থিত। টেকনাফ ভ্রমণকারীদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষনীয় এই কূপ। এই কূপের গায়ে লেখা রয়েছে এক বাঙালি যুবক আর এক রাখাইন কিশোরীর বিচ্ছেদময় প্রেমের কাহিনী।
বিশের দশকের শেষভাগের ঘটনা। টেকনাফে তখন একটি মাত্র পাতকুয়ো। এই কুয়োতেই জল নিতে আসতো রাখাইন রমণীরা। তাদের সাথে আসতো রাখাইন জমিদার কন্যা চতুর্দশী মাথিন। পানি নিতে এসেই মাথিন প্রেমে পড়ে যায় সুদর্শন বাঙালি পুলিশ অফিসার ধীরাজ ভট্টাচার্যের। এই ভদ্রলোক পরে বাংলা চলচ্চিত্রে নায়কও হয়েছিলেন। মাথিন এবং ধীরাজের প্রেমের স্মৃতি বুকে নিয়ে এখনো এই কূপ টিকে রয়েছে। টিকে রয়েছে মাথিনের কূপ নামে।
ধীরাজ ভট্টাচার্য শুধু নায়কই ছিলেন না, ছিলেন সাহিত্যিকও। বেশ কিছু গ্রন্থও রচণা করে গেছেন তিনি। এর মধ্যে তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘যখন পুলিশ ছিলাম’ এবং ‘যখন নায়ক ছিলাম’ খুবই বিখ্যাত। ‘যখন পুলিশ ছিলাম’ গ্রন্থেই মাথিনের সাথে প্রেমের বিস্তারিত ঘটনাবলী বর্ণনা করা আছে।
ধীরাজ ভট্টাচার্যের পৈত্রিক বাড়ি যশোরে। বসবাস করতেন কোলকাতায়। কাজ করতেন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে। এর কাজ ছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে যারা স্বদেশী করতেন তাদেরকে নজরদারি করা। এই কাজ করতে গিয়ে মাঝে মাঝেই বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যেতেন তিনি। যাদেরকে অনুসরণ করতেন তারাই মাঝে মাঝে তাড়া করতো তাকে। একবারতো এক বিখ্যাত স্বদেশীকে অনুসরণ করে চলন্ত ট্রামে উঠতে গিয়ে পাদানি থেকে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান। জ্ঞান ফিরলে দেখেন যে সেই স্বদেশী নেতার কোলের মধ্যেই মাথা দিয়ে শুয়ে আছেন তিনি। নেতা তাকে শুশ্রুষা করে ট্যাক্সি ডেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এরকম আদর যে সবসময় পেতেন তা কিন্তু নয়। কেউ কেউ আবার মুখের উপর এসে ইংরেজদের তাবেদারি করার জন্যে দুকথা শুনিয়েও যেতো।
এর মধ্যে একদিন তাকে বদলি করে দেওয়া হয় চট্টগ্রামে। কোলকাতার তুলনায় চট্টগ্রাম তখন গাঁও গেরামের মত। ধীরাজের ভাষ্য অনুযায়ী, যে গান শুনলে কোলকাতার কেউ পাত্তাই দিত না, সেরকম গান শুনিয়েই রাতারাতি তিনি গায়ক হিসেবে সুনাম অর্জন করে ফেলেন সেখানে। গানের গলার সাথে সাথে ছিল রাজপুত্রের মত সুন্দর চেহারা। ফলে, অতি দ্রুতই তিনি নেক নজরে পড়ে যান বুড়ো পুলিশ সুপারের স্বল্পবয়েসি অসামান্যা সুন্দরী স্ত্রী মিসেস মুল্যাণ্ডের। আর মিসেসের সুনজরের জের হিসেবেই মিঃ মুলাণ্ডের কোপ নজরে পড়েন। ফলশ্রুতিতে এক ধাক্কায় তাকে বদলি করে দেওয়া হয় বাংলাদেশের শেষ সীমানা টেকনাফ থানায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা তখন এতই খারাপ যে, চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফে যেতে স্টীমারে সময় লাগতো আড়াই দিনের চেয়েও বেশি।
ধীরাজ ভট্টাচার্য তার বইতে টেকনাফকে বার বার দ্বীপ বলে উল্লেখ করেছেন। ভয়ংকর স্থান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বাবাকে লেখা চিঠিতে তিনি লেখেন,
এখানকার লোকমুখে যাহা শুনিলাম, তাহাতে বুঝিলাম টেকনাফ অতি ভয়ংকর জায়গা। এখান হইতে স্টীমারে যাইতে আড়াই দিনের বেশি লাগে। বঙ্গোপসাগরের পারে ছোট্ট একটি দ্বীপ, তাহার বাসিন্দারা সব মগ, তাহাদের ভাষা বোঝা যায় না। কলিকাতা হইতে চিঠি যাইতে চৌদ্দ পনর দিন লাগে। টেলিগ্রাম যায় সাত দিনে। বছরের সাত মাস এই দ্বীপটার সঙ্গে বাইরের জগতের কোন সংশ্রব থাকে না। শুধু শীতকালে যখন সমুদ্র একটু শান্ত থাকে, তখন চট্টগ্রাম হইতে সপ্তাহে একদিন স্টীমার যায় ও আসে। ভয়ঙ্কর সব অপরাধীদের ঐ দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়। ওখান হইতে অধিকাংশই আর ফিরিয়া আসে না।
টেকনাফকে শুধু দ্বীপ বলেই ক্ষান্ত হননি তিনি। এই দ্বীপের দৈর্ঘ প্রস্থ এবং সীমানাও উল্লেখ করেছেন পরিষ্কারভাবেই। তার ভাষাতেই,
টেকনাফ অদ্ভুত দ্বীপ। লম্বা মাইল দেড়েকের বেশি হবে না, চওড়া প্রায় একমাইল। নাফ নদীর পূবদিকে হলো আকিয়াব, আর পশ্চিমদিকে টেকনাফ। একদিকে আরাকান হিলস, অপরদিকে চিটাগাং হিলস, আর সমস্ত দ্বীপটাকে বেড়াজালে ঘিরে রয়েছে বঙ্গোপসাগর।
মাত্র আশি বছর আগে কী তবে টেকনাফ দ্বীপ ছিল? মূল ভূখন্ডের থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল? আমার জানামতে, শাহপরীর দ্বীপ একসময় টেকনাফের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। ক্রমে ক্রমে এটি টেকনাফের সঙ্গে মিশে গেছে। কিন্তু, ধীরাজ ভট্টাচার্য পরিষ্কারভাবেই টেকনাফের কথা বলছেন, শাহপরীর দ্বীপের কথা নয়। এই বিষয়টার কোন সুরাহা করতে পারিনি আমি। এছাড়া আরেকটা বিষয়ও হয়তো পাঠকেরা খেয়াল করেছেন। টেকনাফের বাসিন্দাদের মগ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। রাখাইনদেরকে মগ বলাটা রাখাইনরাই পছন্দ করে না। মগ বলে ডাকাটা তাদের কাছে মারাত্মকভাবে অবজ্ঞাসূচক। কিন্তু ধীরাজ সাহেব তার বইতে সবসময়ই তাদেরকে মগ বলে ডেকেছেন। তিনি কী বিষয়টা জানতেন না? নাকি কিছু সংখ্যক কোলকাতার বাঙালিদের মতন তিনিও উন্নাসিকতায় ভুগতেন আর তার ফলশ্রুতিতেই রাখাইনদেরকে মগ বলে ডাকতেন।
টেকনাফ থানার ভেতরেই কোয়ার্টারে থাকার ব্যবস্থা হয় ধীরাজ বাবুর। কাজকর্ম বলতে কিছুই ছিল না তার। গণ্ডগ্রামে কাজই বা কী থাকবে? ফলে, তার একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়ায় থানার সীমানার মধ্যে অবস্থিত একমাত্র কুয়ো থেকে জল তুলতে আসা রঙ-বেরঙের পোষাক পরিহিতা রাখাইন রমনীদের রূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা। বারান্দায় একটা চেয়ারে বসে সকাল সন্ধ্যা দুই বেলা পুরনো একটা খবরের কাগজের আড়ালে মুখ লুকিয়ে প্রতিদিন মেয়েদের দেখতেন তিনি। এরকমই লুকিয়ে মেয়েদের দেখতে গিয়েই একদিন হঠাৎ করেই তার নজরে আসে চতুর্দশী এক অপূর্ব সুন্দরী কন্যার। স্থানীয় রাখাইন জমিদার ওয়াং থিনের একমাত্র আদুরে দুলালী সে। অবশ্য, রূপবতী এই কন্যার রূপ বর্ণনা করতে গিয়েও পূর্বসংস্কারের উর্ধ্বে উঠতে পারেননি তিনি। তুলনায় এনেছেন বাঙালি নারীদের সৌন্দর্য।
আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় এরকম রূপযৌবনে লাবণ্যময়ী মেয়ে আর দেখেছি বলে মনে পড়ে না। নাক চোখ মুখ সুন্দরী বাঙালী মেয়েদের মতই নিখুঁত, তার উপর ঐ নয়নমনোহর খোঁপা। মনে হলো, সমুদ্র থেকে কোনো জলপরী উঠে এসেছে টেকনাফের পাতকুয়ো থেকে জল নিতে।
চোখে চোখে কথা হয়ে যায় দুজনের। নীরব ভাষায় দুজন নরনারী ভালবাসার বন্ধনে জড়িয়ে যায়। রোজ সকালে আলো-অন্ধকারের মধ্যে মাথিন আসে, যতোক্ষণ থাকা সম্ভব পরস্পরের দিকে চেয়ে থাকে তারা। বিকেলেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। সবাই চলে গেলে মাথিন আসে। রাতের আঁধার যখন গাঢ় হয় তখন আস্তে আস্তে সে চলে যায়। আশচর্যের বিষয় হচ্ছে যে, তাদের পুরো প্রেমের সম্পর্কটার সময়েই কেউ কারো সাথে কথা বলেনি। ধীরাজের ভাষায়,
নীরব চোখের ভাষায় যেখানে কাজ চলে সরব মুখের ভাষা সেখানে অবান্তর ও অবাঞ্ছিত মনে হয়।
হরকি নামের রাখাইন ভাষা জানা এক বাঙালি কনস্টেবলের মাধ্যমে মাথিনের সঙ্গে যোগাযোগ চলতে থাকে ধীরাজের। ধীরাজের প্রেমে আত্মহারা মাথিন বাঙালি বধু হবার আশায় লুঙ্গি ছেড়ে শাড়ী পরার স্বপ্ন দেখতে থাকে। হরকিকে বলে তাকে শাড়ী কিনে দিতে। সেই শাড়ী পরে বাসর রাতে ধীরাজের সামনে গিয়ে তাকে চমকে দেবার পরিকল্পনাও করে সে। শুধু তাই নয়। রাখাইন মেয়েরা সাধারণত বিয়ের সময়ে যৌতুক দাবি করে। ধীরাজের জন্য যৌতুক দাবি না করারও ইচ্ছা পোষণ করে সে। রাখাইন সমাজে কোন মেয়ে যদি বিয়ের সময়ে যৌতুক দাবি না করে তবে সেটা পুরুষের জন্য বিরাট সম্মানের ও গৌরবের বিষয়।
এর মধ্যে অবশ্য টেকনাফের সবাই জেনে গিয়েছিল তাদের প্রেমের কথা। হিংসাকাতর এক সহকর্মী এই প্রেমের খবর জানিয়ে দেয় জমিদার ওয়াং থিনকে। সেই সাথে ধীরাজের চরিত্র নিয়ে কিছু সংশয়কথা। এসমস্ত নেতিবাচক কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে পড়েন জমিদার ওয়াং থিন। কিন্তু হরকি তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করে। বলে যে বাবুর কোন কুমতলব নেই। মাথিনকে প্রথামত বিয়ে করে বউ করতে চান তিনি।
ধীরাজ মাথিনকে নিয়ে ঘটনা শুধু টেকনাফ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকেনি। বাতাসে ভেসে তা চলে যায় কোলকাতাতেও। একদিন বাবার কাছ থেকে চিঠি পান ধীরাজ। সেই চিঠির অংশবিশেষ এরকম।
পিতা-মাতার উপর অভিমানে অপরিণত বুদ্ধি সন্তান অনেক সময় অগ্র পশ্চাৎ বিবেচনা না করিয়া এমন কিছু করিয়া বসে যাহার ফলে, শুধু তাহার একার নহে, পিতা-মাতার ভবিষ্যৎ জীবনও বিষময় হইয়া উঠে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আছে এমন হীন কাজ তুমি কখনই করিবে না যাহাতে আমাদের উঁচু মাথা সকলের সামনে নিচু হইতে পারে। সম্প্রতি টেকনাফ হইতে বেনামী তোমার এক শুভাকাঙ্খীর পত্রে জানিলাম – তুমি নাকি একটি মগের মেয়েকে বিবাহ করিবার জন্য বিশেষ ব্যস্ত হইয়া পড়িয়াছ। সরকারী কার্যে অবহেলা করিয়া দিবারাত্র মেয়েটির পিছনে পাগলের মত ঘুড়িয়া বেড়াইতেছ – এমন কথাও পত্রে আছে। আমি বিশ্বাস করি নাই কিন্তু তোমার গর্ভধারিণীর একান্ত আগ্রহাতিশয্যে বাধ্য হইয়া লিখিলাম।
আর একটি বিশেষ কথা এই সঙ্গে তোমাকে জানাইয়া রাখা বিশেষ প্রয়োজন। আমার বাল্যবন্ধু ও সহপাঠী – চট্টোপাধ্যায়কে তুমি ভাল রকমই জান। বহুদিন পূর্বে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই- পুত্র-কন্যার বিবাহ দিয়া পরস্পরে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হইব। সম্প্রতি তাঁহার জ্যেষ্ঠা কন্যা বিবাহের উপযুক্ত হওয়ায় তিনি আমাকে পূর্বের প্রতিশ্রুতি স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন। কন্যাটিকে আমরা দেখিয়া আসিয়াছি – অতি সুলক্ষণা সুন্দরী ও গৃহ-কর্ম-নিপুণা। তোমার অপছন্দ হইবে না। আমি পাকা কথা পর্যন্ত দিয়া আসিয়াছি ও জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি দিন স্থির করিয়াছি। তুমি পত্র পাঠমাত্র এক মাসের ছুটি লইয়া কলিকাতায় চলিয়া আসিবে – ছুটি না পাওয়া গেলে চাকুরিতে ইস্তফা দিয়া চলিয়া আসিতেও দ্বিধা করিবে না।
বাবার এই এক চিঠি পেয়েই ধীরাজের এত সাধের প্রেম ছুটে যায়। চিঠি পাবার দিনেই থানায় এসে হাজির হন জমিদার ওয়াং থিন। বিয়ের কথা পাকাপাকি করার জন্যে। যেখানে ধীরাজের বাবার চিঠি পূর্বসংস্কারে ভর্তি, মাথিনকে মগের মেয়ে বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছেন, সেখানে ওয়াং থিনের ভাষা অনেক বেশি উদার, অনেক বেশি মানবিক। তিনি ধীরাজকে বলেন, ‘আমার ঐ একটি মেয়ে। যদি বুঝেন সমাজ আপনাকে লিবে না, এইখানে থাকিয়ে যান। আমার জমি-জমা যা আছে আপনারই হোবে। আর যদি বুঝেন, ওকে লিয়ে গেলে গোলমাল হোবে না, – লিয়ে যাবেন। আমার কোষ্টো হবে – হোক – ও তো সুক পাবে।‘
ওয়াং থিনের সামনে নীরব থাকে ধীরাজ। ওয়াং থিন চলে যেতেই উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়ে দেয় যে সে এই বিয়ে করছে না। তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওয়াং থিনের রুদ্ররোষ থেকে বাঁচার জন্যে পালিয়ে যাবার পরামর্শ দেয় ধীরাজকে। ধীরাজের সৌভাগ্য। ওইদিনই একটা স্টীমার চট্টগ্রামের দিকে রওনা হবার কথা। ওটাতে করে ছুটির অছিলায় চিরতরে টেকনাফ ছাড়েন ধীরাজ।
ধীরাজের টেকনাফ ত্যাগকে সহজে নিতে পারেনি মাথিন। টেকনাফে চাউর হয়ে গিয়েছিল যে, ছুটি নয়, মাথিনকে বিয়ে করার ভয়েই পালিয়েছে ধীরাজ। শোকে, দুঃখে, অপমানে অন্নজল ত্যাগ করে শয্যা নেয় মাথিন। তার বাবা ওয়াং থিনসহ সারা টেকনাফবাসী শত চেষ্টা করেও আর জল গ্রহণ করাতে পারেনি। অনশনে, প্রতিবাদে, প্রেমের অহংকারে মৃত্যু ঘটে মাথিনের। কন্যার শোকে পাগল ওয়াং থিন হরকিকে পিটিয়ে আধমরা করে দেয়।
ভাগ্যের এমনই ফের, বাবার পছন্দের যে মেয়েকে বিয়ে করার জন্য ধীরাজ চলে গিয়েছিল কোলকাতায়, সেই মেয়ের বাবা একজন কনস্টেবলের সাথে মেয়েকে বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। একেই বলে বোধহয় প্রকৃতির প্রতিশোধ।
ধীরাজ-মাথিনের প্রসঙ্গ এলে সবাই এর রোমান্টিক কিংবা করুণ পরিণতির দিকটাকেই উজ্জ্বল করে তুলে ধরতে চেষ্টা করেন। কিন্তু এটা মোটেও প্রেমের গল্প নয় বা করুণ পরিণতির গল্পও নয়। আমার কাছে এটা বিশ্বাসঘাতকতার গল্প। প্রতারণা এবং প্রবঞ্চনার গল্প। যে যুক্তিতে ধীরাজ মাথিনকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল তা কোনভাবেই ধোপে টেকে না। আমার ধারণা যে, একটা পর্যায় পর্যন্ত হৃদয় দিয়ে চালিত হলেও বাবার চিঠির পরেই বাস্তবতার বোধোদয় ঘটে ধীরাজের। একটা মগের (তার ভাষায়, দেখুন একবারও ধীরাজ কিন্তু এদেরকে রাখাইন বলেনি, মগই বলেছে বার বার) মেয়েকে ঘরে তুলে নিলে পরিবারতো মানবেই না, কোলকাতার শিক্ষিত সমাজও মেনে নেবে না। এই আশংকাতেই আসলে পালিয়েছিল সে। বেচারি মাথিন। সমাজ সংসারের এই জটিলতা তার পক্ষে বুঝে উঠা সম্ভব হয়নি। একটা বিশ্বাসঘাতক, কাপুরুষ, প্রতিষ্ঠানপন্থি, সংস্কারাচ্ছন্ন, পলায়নপর মানুষের জন্য অমূল্য জীবনটাকে বিসর্জন দিয়ে দিয়েছিল সে।
ধীরাজ-মাথিনের গল্পকথা তাই ভালবাসার নয়, বরং কষ্টের এবং শোকের। তবে এ অনুভূতি আবার দুজনের জন্যে নয়, শুধুই বোকাসোকা এই জেদি মেয়েটার জন্যে।
মাথিনের জন্যেই শুধু এই শোকগাথা, মাথিনের জন্যেই সবটুকু ভালবাসা।
এই বইটি আমি অনেক আগে পড়েছিলাম এবং সংগ্রহেও রেখেছিলাম। সে প্রায় ২৫ বছর আগের কথা। কিন্তু কোন এক বন্ধু তার সাহিত্যের ভান্ডার পুরা করার জন্যে সেই যে নিয়েছে আর দেয়ার নামটি করে নাই। এই বইটির pdf ফাইল এর লিংক কি দেয়া যাবে ? সাথে যদি “যখন নায়ক ছিলাম” পাই তাহলে তো আরও ভালো।
ফরিদ ভাই, চমৎকার লেখাটির জন্য অভিনন্দন আপনাকে। ধীরাজ ভট্টাচার্যের “যখন পুলিশ ছিলাম পড়েছিলাম” ক্লাস টেনে পড়ার সময়। বিস্তারিত বিবরণ মনে নেই এখন। তবে বইটিকে আমি উপন্যাস বলেই মনে করি। শ্রীকান্ত যেমন পুরোপুরি শরৎ-জীবনী নয়, সেরকমই এটা।
মগ আর রাখাইনের মধ্যে আসলে তখন সেভাবে পার্থক্য করা যেতো না। সামগ্রিক অর্থে বৃহত্তর চট্টগ্রামের বেশির ভাগ উপজাতীয়কে বাঙালিরা ‘মগ’ বলে থাকে। কলেজে পড়ার সময় ম্রা ছা থোয়ে নামে আমার এক রাখাইন রুমমেট ছিল। তাকেও আমরা মগ ভাবতাম। কাপ্তাইয়ের ওদিকে চাকমা, মারমা সব উপজাতিকে এখনো একত্রে মগ বলেই জানে চট্টগ্রামের বাঙালিরা। তাদের পাড়ার নামও ‘মগ পাড়া’। যতদূর জানি ‘মগ’ শব্দটি কিন্তু তুচ্ছার্থে ব্যবহার করা হয় না সেখানে।
এবার একটু বানান প্রসঙ্গ। “মাথিনের জন্য শোকগাঁথা” – আপিনি কি ইচ্ছে করেই “গাঁথা” লিখেছেন, মানে চন্দ্রবিন্দু দিয়েছেন? যার অর্থ দাঁড়ালো আপনি মাথিনের জন্য শোকগুলোকে গেঁথে ফেললেন। যেরকম মালা গাঁথে লোকজন। নাকি শোকগাথা রচনা করেছেন? মানে চন্দ্রবিন্দু ছাড়া হলে যেটা হয় তার অর্থ – কবিতা, শ্লোক, গান, গীতিকবিতা, পালাগান ইত্যাদি। “একাত্তরের গাথা” নামে একটা চমৎকার মঞ্চনাটক আছে – কামাল উদ্দিন নীলুর পরিচালনায়। আমার মনে হয় “মাথিনের জন্য শোকগাথা” হলে লেখাটির ভাবের সাথে যথাযথ হয়।
@প্রদীপ দেব,
ইচ্ছে করে গাঁথা লিখিনি, না জানার কারণেই হয়েছে এটা।
শিরোনামেই ভুল। মহা কেলেংকারি ব্যাপার স্যাপার দেখছি।
চন্দ্রবিন্দুর ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রায়ই গোলমাল করে ফেলি আমি। এ বিষয়ে আমার ভ্রান্তিগুলো প্রবল। কেন প্রবল সেটা জানি না। এই বর্ণটিকে অনাবশ্যক বলে মনে হয় হয় বলেই হয়তো এটা ঘটে। প্রায়শই দেখা যায় যেখানে প্রয়োজন সেখানে চন্দ্রবিন্দু দেই না আমি, আবার যেখানে অপ্রয়োজন সেখানে দিয়ে বসে থাকি। উচ্চারণের ক্ষেত্রেতো কথাই নেই। ওই নাসিকা ধ্বণিটা আমার আসেই না। এজন্য একজন বিশুদ্ধবাদীর কাছে বেশ বকাঝকাও খাই আমি।
এই বকাঝকা করা বিশুদ্ধবাদী একজনই হচ্ছেন আমার চন্দ্রবিন্দু পরামর্শক। আমার লেখার সব চন্দ্রবিন্দু ঠিকঠাক করে দেন তিনি কোনরকম বিরক্ত না হয়েই। এই লেখার ক্ষেত্রে সেটা হয়নি তাকে সাময়িকভাবে না পাবার কারণে।
অসংখ্য ধন্যবাদ বানান ভুলটিকে চিহ্নিত করে দেবার জন্য।
@ফরিদ আহমেদ,
মডারেটর ব্যাটা কই গেল? লেখকের লেখার শিরোনামেই বানান ভুল ছিলো, উপযুক্ত প্যাঁদানি আশা করেছিলাম। 🙂
বানান নিয়ে মুক্তমনায় স্বজন-প্রীতির অবসান চাই। 😀
(আর কানে কানে বলি, আমারও গাথা আর গাঁথা প্রায়ই মিলায় যায়, কি যে করি)
@অভিজিৎ,
হেঁ হেঁ হেঁ – তা যা বলেচেন দাদা!! প্যাঁদানি জিনিষটা বড্ড ভালো 😀 আর, স্বজনপ্রীতির কথা কী আর বলবো – দেখে দেখে খালি দীর্ঘশ্বাস ফেলি আর কি ……… 🙁
এহ হে! ভুল জায়গায় বোল্ড করা হয়ে গেসে, এডিটও তো দেখি করা যায় না! আসলে হবে –
“হেঁ হেঁ হেঁ – তা যা বলেচেন দাদা!! প্যাঁদানি জিনিষটা বড্ড ভালো 😀 আর, স্বজনপ্রীতির কথা কী আর বলবো – দেখে দেখে খালি দীর্ঘশ্বাস ফেলি আর কি ……… 🙁 “
@স্নিগ্ধা,
এত ভুল ধরতে গেলে এমনিতেই ভুল হয়ে যায়। আর তোমার চোখের অবস্থা তো বরাবরই খারাপ ছিলো। কি আর করবা। এই দেখো -এত কষ্ট করে প্যাঁদানিতে চন্দ্রবিন্দু দিলাম, তারপরেও লোকজনে বোল্ড করে মজা নেয় 😀 । আর কী আর কি এর পার্থক্য তো আমিই ফরিদ ভাইরে কইছিলাম। তাও পোলাপাইনের মনে নাই, কী বলতে কি বলে ফেলে!। ক্যামনে কী?
যাউক্কগা, এখন ভাগি। সামনে ঘোর কলিকাল আসতেছে সেইটা বুঝতেছি…।
@অভিজিৎ,
ছি ছি ছি!!! আমি ভালো করে দেখসি, প্যাদানিতে চন্দ্রবিন্দু ছিলো নাআআআআ, তুমি পরে এডিট করসো!!! ‘কী’ আর ‘কি’র পার্থক্য তুমি যে ফরিদ ভাইকে বলসিলা সেটা আমার খুব মনে ছিলো, আর সেজন্যই তো এই ভুলটা একদম …… 😀
@স্নিগ্ধা,
গেছেটাও টেসে গেছে গেসের গুঁতোয়। 😀
@ফরিদ আহমেদ,
আরে না! আমি তো ‘গেসে’ বলি …
[আর, ইয়ে, আপনার কি এক্ষেত্রে বেশি কথা বলাটা উচিত হচ্ছে? 😀 ]
@স্নিগ্ধা,
আরে, আমিওতো গাঁথাই বলি। প্রদীপ দেব খামোখাই মাস্টোরি করে। মাস্টার মানুষের যে স্বভাব আরকি। খালি ভুল ধরে লোকজনের। 🙂
@ফরিদ ভাই, আঁই আবার কী গইর্লাম (আমি আবার কী করলাম)? অঁনে ফাকি দিত্ ন’জানন্দে হিয়ান আঁর দোষ নে (আপনি যে ফাঁকি দিতে জানেন না তা কি আমার দোষ)?
@প্রদীপ দেব,
আঁই আবার কী গইরলাম মানে! আপনিইতো সবকিছু গড়বড় করেছেন। ভুলটাকে ভুলে গেলেইতো পারতেন। দেখিয়ে দেওয়ায় এখুন দেখুন কী দশা। লোকজনতো সব লম্বা লেজ নিয়ে লাফাচ্ছে আর দাঁত দেখাচ্ছে। :-X
@স্নিগ্ধা,
ঠিক। কেউ প্যাঁদানি কে প্যাদানি বলে, কেউ গাথা কে গাঁথা, কেউ বা আবার গেছে কে গেসে। আসলে ভুল নিয়ে স্নিগ্ধা ইদানিং অতিরিক্ত ‘গেস্’ করার চেষ্টা করছে তো – তাই ছ আর স টেসে যাচ্ছে বারবার।
ফরিদ আহমেদকে ধন্যবাদ এমন একটা ইন্টারেস্টিং লেখা উপহার দেবার জন্য। তিনি উল্লেখ করেছেন (এবং অনেক পাঠক/পাঠিকা তার ওপর মন্তব্য করেছেন) –
আমি এই সাইটে দুটো মানচিত্র দিয়েছি, একটা বর্তমান গুগল আর্থ থেকে সেখানে একটা অনুভূমিক রেখা ২ মাইল স্কেল নির্ধারণ করছে। দ্বিতীয় মানচিত্রটি ১৯৪০ দশকের শেষে মার্কিন সেনাবাহিনী কৃত, তাতে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে বর্তমান টেকনাফ শহর বলতে আমরা যা বোঝাই সেটা সমুদ্রের মধ্যে নয়। শাহপরীকে একটা “চ্যানেল” আলাদা করেছে, সেটাকেও দ্বীপ বলা সেই সময় সঙ্গত হবে না।
নাফ নদীর পলিবহন ক্ষমতা বাংলার বড় বড় নদীর থেকে কম, কাজেই মূল ভুখণ্ডের সাথে পলি দিয়ে সেতু তৈরি করা তার জন্য অনেক সময়ের ব্যাপার। অন্যদিকে এই সময় ধরে বাংলাদেশের পূর্বদিকে বঙ্গোপসাগরের ব্যাপক উত্থান/পতন হয়েছে বলে বোঝা যাচ্ছে না (অন্ততঃ মহেশখালী ও সেন্ট মার্টিন্সের উপকূল রেখা দেখে যা মনে হয়)।
বন্যা আহমেদ লিখেছেনঃ
আর আদিল মাহমুদ লিখেছেন
হাবাই হবে! 🙂 তবে পুলিশের লোক হয়ে চারপাশের ভৌগলিক অবস্থা সম্পর্কে এমন মূর্খতা বোঝা কঠিন!
(আমরা কি কিছু “মিস” করছি?)
@দীপেন ভট্টাচার্য,
চমৎকার তথ্যপূর্ণ আলোচনার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
শাহপরীর দ্বীপ মূল টেকনাফ থেকে ওই ছোট্ট চ্যানেল দিয়ে বিচ্ছিন্ন ছিল বলেই হয়তো একে দ্বীপ হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো। এই দ্বীপ নিয়ে আমার দেশ পত্রিকার এই সংবাদে লেখা হয়েছে,
কি যে মিস করছি সেটাইতো বুঝতে পারছি না। ওখানে বসবাস করে আসার পরেও একজন উচ্চশিক্ষিত লোক তার বইতে একটা দেশের গুরুত্বপূর্ন মূল ভূখন্ডকে দ্বীপ হিসাবে চালিয়ে দিয়েছেন এটা ভাবতেই অবাক লেগেছে আমার। তিনি যে শুধু তার বইতে তথ্য গোপন করেছেন তাই নয়, রঙচঙ মাখিয়ে তথ্যকে বিকৃতও করেছেন। আরো আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে এটি গ্রন্থ আকারে বের হবার আগেই দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়েছে। দেশ পত্রিকার সম্পাদক সাহেবরাই বা এটাকে সংশোধন করে দেননি কেন? নাকি লোকজনের কোন ভৌগলিক জ্ঞানই তখন ছিল না। ধীরাজ ভট্টাচার্য বলেছেন যে, পত্রিকায় ছাপা হবার পরে অসংখ্য লোক তাকে পত্র লিখেছে। সেই অসংখ্য লোকের মধ্যে কেউ একজনও কি তাকে সঠিক তথ্যটা জানাতে পারেনি? বইটা বাজারে আছে পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে। যেহেতু জনপ্রিয় বই, কাজেই অসংখ্য সংস্করণ বেরিয়েছে এর। গত পঞ্চাশ বছরে কত লক্ষ লক্ষ লোক পড়েছে এই বই। তাদের কারো চোখেই কেন পড়লো না এত বড় একটা ভুল তথ্যের? নাকি পড়েছিল? আমরা হয়তো জানি না।
ধীরাজ বাবু তার বইয়ে এক দুই জায়গায় নয়, অসংখ্য জায়গায় টেকনাফকে দ্বীপ বলেছেন। কাজেই মুদ্রণ প্রমাদ হিসেবেও একে চালিয়ে দেয়া যাচ্ছে না। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম যে, কোন এক অদ্ভুত উপায়ে তার ধারণা জন্মেছিল যে এটা একটা দ্বীপ। তাতে করে শুধু তার বর্ণনাতেই দ্বীপের প্রসঙ্গ আসার কথা। কিন্তু বইতে দেখা যায় অন্যদের বর্ণনাতেও টেকনাফ দ্বীপ হিসেবে এসেছে। আমি এই বই থেকে দুটো উদ্ধৃতি তুলে ধরছি। তার দুই সহকর্মীর। প্রথমজন চট্টগ্রামের আর দ্বিতীয়জন টেকনাফের।
এতগুলো লোক এক সাথে ভুল করে কী করে? তাহলে কী ধীরাজ বাবু খুব সচেতনভাবেই টেকনাফকে দ্বীপ হিসেবে চালাতে চেয়েছিলেন তার এই আত্মজীবনীতে? দ্বীপ বললে ঘটনাপ্রবাহ রোমাঞ্চকর শোনাবে, ফলে পাঠক আকৃষ্ট হবে সেটাই কী তার মূল উদ্দেশ্য ছিল। উদ্দেশ্যটা যদিও নোংরা, তবে একথা স্বীকার করতেই হবে যে তিনি পাঠককে বোকা বানিয়ে যেতে পেরেছেন দীর্ঘকাল ধরে।
তিনি তার বইয়ের ভূমিকায় লিখেছিলেন,
ভদ্রলোক যে অজান্তে একটু আধটু কল্পনার রঙ ঢেলেছেন তা নয়, জেনে বুঝেই পুরো রঙের ডিব্বা ঢেলে দিয়েছেন তিনি এই বইয়ের পাতায় পাতায় সে ব্যাপারে কোন সন্দেহই নেই। যিনি একটি দেশের অনাদিকালের মূল ভূখন্ডকে চোখ কান বন্ধ করে দিব্যি দ্বীপ বলে চালিয়ে দিতে পারেন, তিনি যে কী পরিমান মনের মাধুরী মিশিয়ে ঘটনাগুলোকে বর্ণনা করেছেন তা একমাত্র তিনিই জানেন।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনার উত্তরের জন্য ধন্যবাদ। সত্যি এর মাথা-মুণ্ডু বোঝা গেল না। টেকনাফের সঙ্গে যোগাযোগ ১৯৬০এর দশকের আগে খুবই ক্ষীণ ছিল, তাই তাকে দুর্গম অবোধ্য দ্বীপ দাবি করলে সামগ্রিকভাবে তার কাহিনীর রোমাঞ্চ বর্ধন হবে বলে হয়ত ধীরাজ ভটচায মনে করেছিলেন। তার উচিত ছিল সঠিক তথ্য লিপিবদ্ধ করা, বরঞ্চ সৃষ্টি করেছেন বিভ্রান্তির। তাতে আমাদের সময় নষ্ট হল মাত্র। পুরাতন লেখা/মানচিত্র থেকে প্রাচীন উপকূল নির্ধারণ করার আশায় গুড়ে বালি। (ঐতিহাসিক তথ্য যথার্থভাবে লিখে যাবার প্রবণতা কি বাঙ্গালীর কখনই ছিল না?)
আপনার দেয়া “আমার দেশে”র প্রতিবেদনটি মনোযোগ সহকারে পড়লাম। এই পুরো অঞ্চলে জেটিগুলির দুর্দশা সত্যি দুঃখজনক, স্থানীয় টাউট/রাজনৈতিক/ব্যবসায়ী শ্রেণী বড় মূল্যে জাহাজ-ঘাটা কিনে নিয়ে ইচ্ছে মত টোল বসায়, কিন্তু সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোন ব্যবস্থা নেয় না।
ফরিদের লেখার হাত অসাধারণ। চোখে জল আসে মাথিনের জন্য। পেলে ওকে একটু আদর করে দিয়ে আসতাম।
ধীরাজবাবু একটা স্টুপিডের কাজ করেছেন। পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেছেন সারাজীবন ধরে, ব্যাচারা!
আজ থেকে আশি বছর মানে ১৯৩০ সাল সময়ে। এই লেখাটি আজ থেকে দশ বছর পরে কেউ পড়ে তা হলে তার হিসেবে সময়কাল হবে ১৯৪০ সময়ের ঘটনা। ফরিদ, ‘আজ থেকে আশি বছর আগে’ না লিখে ‘১৯৩০ দশকের ‘ নির্দেশনা থাকলে কেমন হয়?
এটি আমার ব্যক্তিগত ‘সাজেস্যন’ – আমার আবার ভাবতে ভাবতে অতীতে চলে যাওয়ার প্রবনতা আছে কিনা তাই।
ওয়াং থিন কেমন জমিদার ছিলেন যে তাঁর নিজের কূয়ো ছিল না? জমিদার কন্যা বারোয়ারী কূয়ো থেকে জল নিয়ে আসবে – এ কেমন কথা!
আজকাল তো অনেক মেয়ে ট্যাপ থেকে জল নিয়েও খায় না। তখন হয়তো গ্রামের মোড়লদেরকেই জমিদার বলা হত। এসব ভাবতে ভাল লাগে।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
আপনার পরামর্শটা ভাল লাগলো। বদলে দিলাম ছত্রটা।
টেকনাফে তখন ওই একটিমাত্রই পাতকুয়ো ছিল। ওয়াং থিনের বাড়িতে পাঁচ ছ’টি চাকারানী থাকার পরেও মাথিনই জল নিতে আসতো। এটা ছিল তার শখ। ওয়াং থিন মেয়েঅন্তপ্রাণ ছিলেন। কাজেই মেয়ের শখে বাধা দেননি কখনো।
ধীরাজের কাপুরুষতা নিয়ে বেশি অবাক হলাম না, হতভম্ব হলাম চৌদ্দ বছরের এক মেয়ের জেদ দেখে!!! প্রেম, দুঃখ, অপমানবোধ এসব যাইই হোক, সত্যি সত্যি ওরকম করে অনশনে প্রাণত্যাগ করতে গেলে যে জেদ দরকার সেটার কথা ভেবেই আমার মাথা ঘুরাচ্ছে!
আর, এইসব ফালতু প্রেম ট্রেম দুনিয়ে থেকে উঠায় দিলেই সবদিক থেকে শান্তি!
@স্নিগ্ধা,
প্রেমে বিশাল ধরা খাইয়া অশান্তিতে আছেন বইলা মনে হচ্ছে!!! 😉
@মিঠুন,
কী আর বলবো …… ধরা খাওয়ার চোটে জীবনে একটা প্রেমও কিনা হলো না! আমার জানামতে এরকম ফেইলিওর রেট অতি দুর্লভ 🙁
@মিঠুন, ইসস, আপনি স্নিগ্ধার কথায় কান দিয়ে বিপদে পইড়েন না 🙂 । স্নিগ্ধার মত প্রেম করার সৌভাগ্য কিন্তু পৃথিবীতে খুব কম মানুষেরই হয়।
@স্নিগ্ধা,
মাথিনের জেদ দেখে আমিও অবাক হয়েছি। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আমাদের দেশে কিশোরীদের আত্মহত্যা খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু মাথিনের ক্ষেত্রে যেটা ঘটেছে সেটা খুবই অস্বাভাবিক। আবেগের বশে হুট করে গলায় দড়ি দিয়ে দেয়া, বা বিষ খাওয়া বা গলায় কলসী বেঁধে জলে ডুবে যাওয়াটা এক কথা আর তীব্র জেদে অন্নজল ত্যাগ করে তিলে তিলে নিজেকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে নেওয়াটা অসম্ভব কঠিন কাজই বটে।
@ফরিদ আহমেদ,
মাথিনের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। :rose:
বিচ্ছেদ ছাড়া কোন প্রেমের গল্প প্রচার পায় না । ধরুন সেক্সপিয়ারের হ্যমলেট বা আমাদের শরতচন্দ্রের দেবদাসের কথা। উক্ত দুই নাটক বা উপন্যাসের নায়ক নায়িকা দ্বয় যদি বিয়ে শাদি করে ঘর সংসার করত, বালবাচ্চা জন্ম দিত, সেই কেচ্ছা কেউ পড়ত ? ধীরাজকে বিশ্বাসঘাতক, বেইমান ইত্যাদি যা কিছু গালি দেয়া যেতে পারে, কিন্তু আসল প্রাপ্তিটা কি ? প্রাপ্তিটা হলো- একটা নিখাদ প্রেমের গল্প পেয়েছি তার সেই বিশ্বাসঘাতকতার দ্বারা। এটাই আমাদের জীবন, সমাজ, সংস্কার। মানব সমাজের শেষ দিন পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে, আর এ ধরনের কিচ্ছা জন্মাতেই থাকবে যা মানুষের মুখে মুখে ফিরবে যুগের পড় যুগ। আর এই নিয়েই মানুষ বেচে থাকবে যুগ যুগ ধরে।
প্রিন্স চার্লস, তার বোন, মা মানে রাজকুমার, রাজকুমারী রানীদের এই ছিরি দেখার পর কেম্নে যে এখনও এই তুলনাটা দেওয়া হয় বুঝি না…..
আপনি সব কিছু এত জটিলভাবে বিশ্লেষণ করতে যান কেনো বুঝি না। এর একটা খুব সোজা ব্যখ্যা আছে, এই ধীরাজ ব্যাটা ( মানে আপনার ধীরাজ ‘সাহেব’) একজন বড় দরের হাবা ছিল…
আচ্ছা, মাথিনের বয়স তো মাত্র ১৪ ছিলো… ধীরাজ তো শুধু হাবাই না পেডোফাইলও ছিল, মানে এক কথায় প্রকাশ করলে ‘পেডোফাইলাবা’ জাতীয় কিছু একটা হইতে পারে :-Y
ফরিদ ভাই, আপনি এই ধীরাজ হাবা রাখিয়ানদের কেন মগ বললো তা নিয়ে কেন এতো বেদিশা হয়ে যাচ্ছেন বুঝলাম না কিন্তু 🙂 । আপনার কি মনে হয় তার ‘মগ’ আর ‘রাখাইন’ এর মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা ছিল?
@বন্যা আহমেদ,
এই ধীরাজ ব্যাটা কিন্তু নেহায়েত অর্ডিনারি ঠোলা ছিল না। রীতিমত সংস্কৃতিবান লোক ছিল। সে পুলিশের নানান অনুষ্ঠানে গান বাজনা করত। কাজেই তার থেকে প্রত্যাশা একটু বেশীই ছিল। তার টেকনাফের পোষ্টিং ছিল একটা পানিশমেন্ট পোষ্টিং। গান বাজনা করে সুখ্যাতি হওয়ায় চিটাগাং এর পুলিশের ব্রিটিশ এসপি তাকে সহ্য করতে না পেরে তার ভাষায় এই শাস্তিমূলক পোষ্টিং দিয়েছিল।
সে আমলে শুধু ষ্টীমারে করেই টেকনাফ যাওয়া আসা করা যেত বলে মনে হয় সে ধরে নিয়েছিল যে ওটা দ্বীপ 🙂 ।
@বন্যা আহমেদ,
আরে তাইতো! এইটাত খেয়াল করি নাই আগে। এইগুলার যেই চেহারা তাতেতো এই উপমা বন্ধ করন দরকার অচিরেই। এখন থেইকা সুদর্শন কোন পুরুষ দেখলে লিখতে হইবো ফরিদের মত রূপবান। আর ভুড়িওয়ালা নাদুসনুদুস কাউরে দেখলে অভির মত সুন্দর স্বাস্থ্যবান 🙂
মুক্তমনীয় মনোবিবর্তনের অনেক উঁচু স্তরে চলে আসছি আমি। ব্যখ্যা বিশ্লেষনও তাই জটিল ধরনের হইতাছে।
তোমার ঘটনাটা কী? তুমি কি হাবা সার্টিফিকেট দেবার স্কুল খুইলা বসছো নাকি? যারে তারে যখন তখন এই সার্টিফিকেট বিলাইতাছো যে। এই না কয়দিন আগে স্বঘোষিত এক মহাজ্ঞানীরে হাবা সার্টিফিকেট দিয়া তারে হাবা হনুমান বানাইয়া দিলা।
হ, বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে অই লোকের সার্টিফিকেট নাম মোহাম্মদ পেডোফাইলাবা। মনে মনে মোহাম্মদের অনুসারী ছিল ব্যাটা। মুক্তমনায় আইসা চুপি চুপি আকাশ মালিকের আর্টিকেল পইড়া গেছে।
বেদিশা কি আর সাধে হইগো ভইন। ওই ব্যাটার সুন্দরী আর অসুন্দরী মাইয়ার পার্থক্য করার ক্ষমতাটাতো ঠিকই ছিল। মগ আর রাখাইনের পার্থক্যটা জানবো না ক্যান শুনি?
@এই ধীরাজ মীরাজদের কাপুরুষতা নিয়ে আর কথা বলে লাভ কি, আপনার সাহসের নমুনা দেখেই তো আমি এখন হা হয়ে যাচ্ছি। বানান নিয়ে বকাবকি করতে ইচ্ছা হইলো তো দিলেন বন্যার নামে চালাইয়া, নিজে গলা ফাটাইয়া হনুমান নিয়া চিল্লাচিল্লি করলেন আর সেটাও এখন আমার দোষ। ধীরাজরে ব্লগে এক্সপোজ করার আগে নিজেরে দেখেন একবার 🙂 ।
@বন্যা দি,
ইয়ে…বিষয়ডা একটু খোলসা কৈরা কন তো প্লিইইইইইজ। :-X
‘যখন পুলিশ ছিলাম’ বইটি অনেক ছোটবেলায় পড়েছিলাম । কিন্তু এত কিছু মনে ছিল না ! এতদিন ভাবতাম সত্যি সত্যি করুণ রসের প্রেম কাহিনী । আপনার লেখা পড়ে বিষয়টা ক্লিয়ার হল । এ তো দেখছি রীতিমত প্রতারণা !
লেখাটা খুব ভালো লাগল । :rose2:
ছোটবেলায় বইপত্রের পোকা ছিলাম। আমাদের বাসায় চারটি কাঠের আলমারি ভর্তি ছিলো বই আর বই। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, যখন পুলিশ ছিলাম কিংবা যখন নায়ক ছিলাম বইগুলো পড়া হয়ে উঠেনি। এখন কিছুটা আফসোসই হচ্ছে।
ফরিদভাইকে ধন্যবাদ মাথিনের জন্য শোকগাঁথা লিখবার জন্য।
@অভিজিৎ,
যাক দুইটা বই তাইলে পড়ো নাই তুমি। আমিতো ভাবছিলাম দুইন্যার ব্যাবাক বই-ই পইড়া ফালাইছো।
@ফরিদ আহমেদ, :laugh: :laugh: :laugh:
মাথিনের জন্য কষ্টে বুকটা হাহাকার করছে। :brokenheart:
ধীরাজকে এইমুহুর্তে সামনে পেলে …..
@মিঠুন,
মরে গিয়ে বেঁচেছে ধীরাজ বাবু। 🙂
যতবারই বৃহত্তর কক্সবাজারের রাখাইন অধ্যুষিত অঞ্চলে গিয়েছি, এমন কি টেকনাফেও, ততদিনই উপলব্ধী করেছি, এই কথিত অসম জাতিগত প্রেম, যা আসলে বিশ্বাসঘাতকতাই। আমার রাখাইন বন্ধু-বান্ধবরাও কখনো মাথিন-ধীরাজ প্রেম বা মাথিনের কূপ নিয়ে কখনোই উচ্ছাস প্রকাশ তো দূরের কথা, কোনো আগ্রহই প্রকাশ করেনি।
বরং টেকনাফের নাফ নদীটিই আমাকে বরাবরই আকর্ষণ করেছে। এই নদীর পাড় থেকেই পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির প্রধান সিরজ সিকদার গ্রেফতার হয়েছিলেন। …
রাখাইনদের ধীরাজ ভট্টাচার্য ‘মগ’ বলে অভিহিত করার কারণ সম্ভবত এই যে, কয়েক দশক আগেও তাদের সর্বত্রই তুচ্ছ করে এই অভিধায় চিহ্নিত করা হতো। এমনকি ভাষা ও সংস্কৃতিগত মিল থাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের মারমাদেরও কিছুদিন আগেও বলা হতো ‘মগ’।
খাগড়াছড়ির পানখাইয়া পাড়ায় একজন শহীদ আদিবাসী নেতার নামে সড়কও আছে। তার নাম চাপাই মগ। অর্থাৎ কয়েক দশক আগেও রাখাইন ও মারমারা নিজেরাও অজ্ঞতাবশত: নিজেদের ‘মগ’ নামেও পরিচিতি করাতেন।
এই কিছুদিন আগেও যেমনটি দেখেছি, ময়মনসিংহের গারো পাহাড়ে বা সিলেটের খাসিয়া পাহাড়ে। সেখানে সাধারণ গারো বা মান্দি এবং খাসি ও মনিপুরিরা নিজেদের পরিচিতি দিতেন ‘উপজাতীয়’ হিসেবে, মোটেই আদিবাসী হিসেবে নয়।
এখন জন সচেতনতা ও আত্ন-সন্মানবোধ বাড়ায় পরিস্থিতি পাল্টেছে।
রাখাইনদের ওপর লেখা আমার একটি পুরনো লেখা ‘রাখাইনরা কেনো দেশ ছেড়ে যান?’ দেখতে পারেন। সেখানের ১৬ নম্বর মন্তব্যটিও আগ্রহীদের পাঠের জন্য বিনীত অনুরোধ জানাই।
মুক্তমনায় ‘প্রিয় লেখা’ অপশনের সুযোগ থাকলে নিঃসন্দেহে এই লেখাটি আমার ব্যক্তিগত প্রিয় লেখার তালিকায় যুক্ত হতো। :yes:
@বিপ্লব রহমান,
দারুণ কিছু তথ্য দিলেন। অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার লেখাটাও পড়লাম। এক কথায় অসাধারণ। ডলির ভাষ্যের সাথেও সম্পূর্ণ একমত আমি।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনার নিবিড় পাঠের জন্য কৃতজ্ঞতা। :rose:
@ফরিদ আহমেদ,
পুনশ্চ:
বাংলাপিডিয়ার মূর্খতা দেখে আরেকবার বিস্ময়ে হতভম্ব হলাম।
অনুগ্রহ করে এই লিংকটা দেখুন, তারা কি নির্লিপ্তভাবেই না রাখাইন ও মারমাদের ‘মগ’ বলে চালিয়ে দিচ্ছে! শুধু তাই নয়, তারা ‘উপজাতীয়’ (ট্রাইবেল) হিসেবে ‘মগ’দের একটি পরিসংখ্যানও জুড়ে দিয়েছে!!
বাংলাদেশের আদিবাসী সর্ম্পকে আমাদের জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়ার এই উগ্র জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গীর খানিকটা আমার লেখা ‘রিপোর্টারের ডায়েরি: পাহাড়ের পথে পথে’ বইয়ের ‘আদিবাসী সম্পর্কে ভুলে ভরা বাংলাপিডিয়া’ অধ্যায়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। মুক্তমনা ডটকম-এ ই-বুক হিসেবে এটি পড়া যাবে।
অনেক ধন্যবাদ। :yes:
@বিপ্লব রহমান,
এই জানুয়ারীতে মহেশখালির আদিনাথ মন্দিরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে রাখাইন মেয়েদের কাছে থেকে চাদর কিনছিলাম। তাদের দ্বিধাহীন, স্পষ্ট, হাসিমুখের ব্যবহারে ক্ষণিক কালের জন্য হলেও ভেবেছিলাম বাংলাদেশে নেই। ভাল থাকবেন।
@দীপেন ভট্টাচার্য,
রাখাইরা মাতৃতান্ত্রিক সমাজ। সে কারণে রাখাইন মেয়েরা ব্যবসা বা চাকরি — সব কিছুতে অন্য মেয়েদের চেয়ে এগিয়ে। আর তুলনামূলকভাবে তাদের জড়তাও কম। তবে রাখাইন সমাজের অন্তর্হিত ভাব-দর্শন অনেকদিন ধরে নিবিড়ভাবে না মিশলে সত্যিই বোঝা খুব মুশকিল।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। :yes:
@বিপ্লব রহমান,
আমাদের সব প্রধান আদিবাসী সম্প্রদায়ই তো মনে হয় মাতৃতান্ত্রিক, তাই না? শুনেছি মহিলারাই নাকি সব কাজকর্ম করে আর পুরুশেড়া পড়ে পড়ে ঘুমায় আর নেশা ভাং করে।
আমাদের সমাজও এমন হলে মন্দ হত না 😀 ।
@আদিল মাহমুদ,
উঁহু…একেবারেই তা নয়। আদিবাসী সর্ম্পকে যত ধরণের ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, এটি তার অন্যতম। এই ভ্রান্ত ধারনাটি সামগ্রিক অর্থে আদিবাসী সর্ম্পকে নেতিবাচক চিন্তাকে উস্কে দেয়; তাই প্রবনতাটি মারাত্নক বৈকি। 🙁
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংখ্যক আদিবাসীদের মধ্যে চাকমা, গারো, সাঁওতাল, রাখাইন, মারমা, মনিপুরী প্রভৃতির মধ্যে গারো বা মান্দি, রাখাইন ও মারমারা মাতৃতান্ত্রিক। এর মানে এই নয় যে, পুরুষেরা অলস বা মাদকাসক্ত।
মাতৃতন্ত্র প্রধান আদিবাসী সমাজে মেয়েরাই সাধারণত উত্তোরাধীকার সূত্রে জমি-জমা ও সম্পত্তির মালিক হয়; এ কারণে পরিবারে তারা বেশ খানিকটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সাধারণ অর্থে, জুম চাষ, শিকার বা শুটকির ব্যবসা — উৎপাদনের দিক থেকে আদিবাসী জীবন ব্যবস্থা সমতলের চেয়ে অনেক কষ্টকর। …চাষবাস, সন্তান পালন, রান্না-বান্নাসহ যাবতীয় সাংসারিক কাজে আদিবাসী নারী-পুরুষ সমানভাবে অংশ নেয়।
বিনয় করে বলি, পরিবারে যদি যৌথায়নের কোনো উদাহরণ দেখতে চান, যেকোনো গ্রামীণ আদিবাসী জনপদে কোনো পরিবারে টানা পাঁচ-সাত দিন কাটান। নারী-পুরুষ সর্ম্পকের ধারণাটি হয়তো নতুন করে ভাবতে হবে। 🙂
অনেক ধন্যবাদ।
@বিপ্লব রহমান, ঠিকই বলেছেন, রাজশাহীর একটা অঞ্চলের সাওতালদের সাথে আমার খুব ঘনিষ্টভাবে মেশার সুযোগ হয়েছিল আমার প্রায় বছরখানেক ধরে। অদের মেয়েরা মাঠে কাজ করে ঠিকই কিন্তু ওদের সমাজ মোটেও মাতৃতান্ত্রিক নয়। আচ্ছা, মাতৃতান্ত্রিক সমাজগুলোতে মেয়েদের উপর নির্যাতনের হার কি রকম, নাকি তেমনভাবে নেই? আপনি বলেছেন, গারো বা মান্দি, রাখাইন ও মারমারা মাতৃতান্ত্রিক। এই মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কি শুধু পাহাড়ে বসবাসকারী কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? এটার ঐতিহাসিক ভিত্তি সম্পর্কে কি আপনার কোন ধারণা আছে? যেমন ধরুন, এরা কেন মাতৃতান্ত্রিক হলো, এরা আসলে কোথা থেকে এসেছিল, সেখানকার সমাজব্যবস্থা মাতৃতান্ত্রিক কিনা, ইত্যাদি ……।
@বিপ্লব রহমান,
হুমমমম…জানার আছে অনেক কিছু!
আমি নিশ্চিত না, ‘ইয়া’ প্রত্যয় কিছুটা তুচ্ছার্থে প্রয়োগ হয় কি-না। তবে ব্যাকরণ অনুযায়ী না হলেও, কিছুটা সেরকম অর্থই বহন করে থাকে। আমার কাছে মনে হয়েছে, ‘কোলকাতার বাঙালিদের’ বললেই যথেষ্ট হতো।
@মইনুল রাজু,
তুচ্ছার্থে হয় কি না সে ব্যাপারে আমিও নিশ্চিত না। আমরা যেরকম ঢাকাইয়া বলি সেরকমই মজা করে কোলকাতাইয়া বলেছিলাম। অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না।
ইয়া প্রত্যয় নিয়ে আমাদের ঢাকাইয়া লোকজনের অবশ্য তেমন কোন সমস্যা নেই, তবে নোয়াখালীর লোকজনের থাকিলেও থাকিতে পারে। 😀
@ফরিদ আহমেদ,
অনুমতি দেন’তো আমি নোয়াখালীর একটা ফোরামে এই মন্তব্য পাঠিয়ে দেই। তারপর দেখি সামলান। 😀
পুরোলেখার সাথে এই ‘কোলকাতাইয়া’ শব্দটা বেমানান মনে হয়েছে। যেহেতু বাক্যটার অর্থের মাধ্যমেই একটা বিশেষ এলাকা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা যাচ্ছে, সেহেতু শব্দটাকে রেহাই দিলেও দিতে পারতেন।
‘রাখাইন জমিদার’ কথাটাকি ধীরাজ বাবু বলেছেন? যদি বলে থাকেন, তাহলে কিন্তু মগ বলার সাথে সাথে কোথাও কোথাও রাখাইনও তিনি বলেছেন। অর্থাৎ আপনার অভিযোগ থেকে খানিকটা হলেও তিনি মুক্তি পেতে পারেন। আর যদি না-বলে থাকেন, তাহলে আপনাকেও ‘মগদের জমিদার’ই বলতে হবে, যেহেতু লেখাটা কিছুটা রিভিউ টাইপের।
কোনো দ্বিমত নেই। নিঃসন্দেহে। ধীরাজ বাবু অনেক কিছুই লিখে গেছেন, কিন্তু এটা বুঝতেও কষ্ট হয় না যে, অনেক কিছুই তিনি আবার গোপন করে গেছেন। তবে উনি লিখে গেছেন বলেই, যত চালাকি করেই লিখেন না কেন, সচেতন পাঠক ঠিকই উনার ভণ্ডামিটা ধরতে পারছেন। তবে এরকম বহু ধীরাজ বাবু আছেন, যারা লিখে যান না; কিন্তু বহু মাথিনের সৃষ্টি এবং অবশেষে ধ্বংস করে যান। তাদের জন্য শুধুই ধিক্কার।
@মইনুল রাজু,
নেতিবাচকভাবে আসলে করা হয়নি। সেরকম যদি হয়ে থাকে তবে দুঃখিত। শব্দটা পালটে দিলাম, বাক্যাংশটাও কিছুটা।
আসলে একজনের তীব্র তাগাদায় গভীর রাতে দুই চোখে রাজ্যের ঘুম নিয়ে লিখেছি লেখাটা আমি। এখন দেখলাম অনেক কিছুই ভুল রয়ে গেছে সেখানে। মাথিন লিখতে গিয়ে দুই একবার মাহিন পর্যন্ত লিখে ফেলেছি আমি। 😛 ইরতিশাদ ভাইয়ের মেয়ের নাম মাহীন, ওটাই হয়তো অবচেতনে চলে এসেছে কাছাকাছি উচ্চারণের নাম হবার কারণে।
রাত নিশীথে তাগাদা যিনি দিয়েছিলেন তাকে এই সুযোগে গভীর ধন্যবাদ এবং আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যাই।
না, গোটা বইতে কোথাও রাখাইন শব্দটা নেই। ওই লাইনটা আমার, আমিই মগ জমিদারের বদলে রাখাইন জমিদার লিখেছি। ধীরাজ বাবু মগ জমিদার বললে আমাকেও কেন বলতে হবে সেটা বুঝলাম না। এটা বইয়ের রিভিউ নয়। আমি মাথিনকে নিয়ে লিখেছি। তবে ভিত্তিটা ওই বইটা সেটাও সত্যি। কথা হচ্ছে এটা রিভিউ হলেও বা আমাকে কেন মগ জমিদার বলতে হবে? উদ্ধৃতির মধ্যে যেগুলো সেগুলোকে কিন্তু আমি পরিবর্তন করিনি। কিন্তু, আমার কথায় আমি অন্তত ওই তুচ্ছার্থক, অসম্মানমূলক শব্দ ব্যবহার করবো না কিছুতেই।
@ফরিদ আহমেদ,
গভীর রাতে তাগাদাটা কি কিসের জন্য ছিলো? লেখাটা লিখবার জন্য, না-কি লেখা বন্ধ করবার জন্য? 😛
@মইনুল রাজু,
মাস্টোর ছাবে এইগুলান খিতা কয়?
@ফরিদ আহমেদ,
😀
দ্যাখেন না, মাস্টোর ছাবদের জন্য সরকার, হাইকোর্ট – সবাই উঠে পড়ে লাগছে। কী সব নির্যাতন বিরোধী আইন করবে। আইন করে আমাকে ঠেকাতে পারবে, বলেনতো?
আগেতো সারাদিন ইউটিউবে বাংলা সিনেমার গান দেখে কাটাতেন। এখন সে কাজের কাজ বাদ দিয়ে শোকগাঁথা লিখতে শুরু করেছেন। বাস্তবের, কল্পনার দুনিয়ার সব মেয়ের জন্য আপনার এত শোক লাগে কেন? আজিজ ভাই, ধীরাজ আঙ্কেল সবার পিছনে লাগছেন আপনি। এ-দিকে বাংলা সিনেমা যে বলিউডকে টপকে গেলো সে খবর রাখেন? আপনার জন্য লিঙ্ক দিলাম। শোকগাঁথা আর না গেঁথে গান দেখেন।
httpv://www.youtube.com/watch?v=cPw2sIkL5Dc
@মইনুল রাজু,
দারুন!
বাংলাদেশে জেমসবন্ড হচ্ছে!
পরিচালককে অভিনন্দন!
এটা কি ইউটিউব থেকে?
কি ভাবে পাব?
মাথিনের কূপের ছবি কেউ পোষ্ট করতে পারেন?
@আদিল মাহমুদ,
আমি মনে হয় দিতে পারব।আমি অনেকবার টেকনাফ গিয়েছি। কূপের ছবি ও আছে। খুঁজে বের করে দিবো। কিন্তু কোথায়?এই লেখায় ?
ধীরাজ ভট্টাচার্যের ‘আমি যখন পুলিশ ছিলাম “পড়েছি। কেনো?কুপেও তো লেখা আছে দেয়া আছে এপিটাফ। ভালো লাগল লেখাটা। মাথিনের জন্য দুঃখ করে লাভ নেই। আসল প্রেমের সমাপ্তি
এমনটিই হয়ে থাকে।
@আফরোজা আলম,
ধন্যবাদ, ভাল হয় যদি এ লেখারই কমেন্ট এ পোষ্ট করতে পারেন। আমি টেকনাফে বড় হবার পর একবারই গেছি, সেবার আর এই কূয়ার সন্ধান করা হয়নি।
@আদিল মাহমুদ,
কুয়ার সন্ধান করা কোন ব্যপার না।টেকনাফ থানাতেই আছে। এমন কি ধীরাজ যেখানে বসে মাথিনের
সাথে দৃষ্টি বিনিময় হোত ঐ ঘরটাও সেই রকমই আছে।
@আদিল মাহমুদ,
আমি ছবি দেবার মূহুর্তে দেখলাম যে ছবি দেয়া হয়ে গিয়েছে। তাই আপাততঃ আর আমার দেবার দরকার দেখছিনা।
@আফরোজা আলম,
মাথিনেরটা আসল প্রেম ছিল বটে, তবে ধীরাজেরটা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে আমার।
@ফরিদ আহমেদ,
”
ধীরাজ বই লিখে পয়সা কামায় করলেন, এইটাই বা কম কী।এমন কী যখন তিনি জানতে পারেন মাথিন
মারা যাচ্ছে তখন তিনি নায়কের সাজ সজ্জা করছিলেন মেকাপ রুমে(আমি যাখন নায়ক ছিলাম দ্রস্টব্য) ।অবশ্য তিনি দুঃখ পাননি তা বলা
যায়না।তবে ভদ্রলোক কাপুরুষ ছিলেন নিঃশন্দেহে।
@আফরোজা আলম,
“… আসল প্রেমের সমাপ্তি এমনটিই হয়ে থাকে। … ” – কথাটি একটু গদবাঁধা হয়ে গেল না? দুইদিক থেকে অথবা একদিক থেকে প্রেম নকল হলে সমাপ্তি এমনটিই হয়।
@আদিল মাহমুদ,
নেটে দুটো ছবি পেলাম। মূল লেখায় সংযুক্ত করে দিয়েছি। এখানে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কীভাবে দিতে হয় জানি না বলে দেওয়া হলো না। মুক্তমনার মডারেটরগুলো সব অকর্মণ্য। একটা ছবি কীভাবে পোষ্ট করবো, সেটার গাইডলাইন পর্যন্ত কোথাও দেয়নি।
@ফরিদ আহমেদ,
ছবির জন্য ধণ্যবাদ।
– আমার জীবনের সেরা কৌতূকের একটি হতে পারে 🙂 । আপনি কি এই টীম থেকে নিঃশব্দে পদত্যাগ করেছেন?
তবে একই সমস্যায় আমিও ভুগেছি। কমেন্টে কিভাবে ছবি যোগ করতে হয় তা নানান রকমের ফেস এক্সপ্রেশনের নীচে লেখা আছে। “কমেন্টে ছবি পেস্ট করার জন্য এখানে ক্লিক করুন।”
কিন্তু এতে ছবির ওয়েব লিংক দেওয়া যায় মনে হয়, নিজের মেশিন থেকে ব্রাইউজ করে মনে হয় দেওয়া যায় না।
“যখন পুলিশ ছিলাম” প্রথম পড়েছিলাম ক্লাস সেভেনে থাকতে। ক’বছর আগে আবার পড়লাম। আমার দুই বারই ইচ্ছে করেছিল মোটা লাঠি হাতে এই ধীরাজ নামের পাজীর খোঁজে বেরিয়ে যাই। ব্যাটার ভাগ্য ভাল বহুদিন আগেই আশা করি ধরাধম ত্যাগ করেছে।
বই এর প্রথম পর্যায়ে তার স্বদেশীদের উপর টিকটিকি গিরি করা অংশেও বেশ আত্মসম্মানহীন ইংরেজের দালাল টাইপের চেহারা ভাসে। যদিও তার দরিদ্র পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডের কারনে কিছুটা ছাড় দেওয়া যায়।
ব্যাটাকে প্রান খুলে গালিগালাজ করলেও বইটা লিখেছিল জম্পেশ বলতেই হবে। আমার কাছে প্রেমের উপন্যাস হিসেবে এই বইটাকে “ন হন্যতে” এর চাইতে কিছু কম মনে হয়নি।
যখন নায়ক ছিলাম পড়ার সুযোগ এখনো পাইনি।
@আদিল মাহমুদ,
হেট মংগার। 😀
@ফরিদ আহমেদ,
হতে পারে, ব্যাটার নামে বিজাতীয় গন্ধ তো আছেই, ধরে ফেলেছেন দেখি 🙂 ।
তবে অনুভূতি সত্য। আরো কত কি যে চেপে গেছে কেই বা বলতে পারে? যা লিখেছে তাতেই ইচ্ছা করে দেই দুঘা লাগিয়ে।
যখন নায়ক ছিলাম এও কি এমন কিছু আছে নাকি? তাহলে যোগাড়ের চেষ্টা করব।
@আদিল ভাই, যখন নায়ক ছিলাম-এ ভারতীয় বাংলা ছবির প্রাথমিক যুগের অনেক মজার মজার ঘটনা আছে। পড়লে মজা পাবেন।
@প্রদীপ দেব,
ইন্টারেষ্টীং মনে হচ্ছে, যোগাড় করব।
ধন্যবাদ।
এই কাহিনী খুব সম্ভবত বহু আগে প্রথম আলোর “ছুটির দিন” সাপ্লিমেন্টে পড়েছিলাম।
এই অংশটা বুঝলাম না। তাদের দু’জনের বাবারা না প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন? তবে কি মেয়ের বাবা ধীরাজের চাকুরী সম্পর্কে অবগত ছিলেন না?
@পৃথিবী,
এই বিষয়গুলোতে সন্দেহের যথেষ্টই অবকাশ রয়েছে। চিঠির বিষয়টাই যে সত্যি সেটাই বা কে জানে। দীর্ঘদিন পরে জীবনী লিখতে গিয়ে নিজেকে নিষ্কলুষ প্রমাণ করার জন্যেই হয়তো তিনি চিঠিটা তৈরি করেছিলেন তিনি। যে অজুহাতে বিয়ের সিদ্ধান্ত বাতিল করে মাথিনকে কিছু না বলেই তিনি কোলকাতায় চলে গেলেন তা সত্যিই ধোপে টেকে না।
ধীরাজ ভট্টাচার্যকে এই ব্লগে পেলে মন্দ হতো না। সব প্রশ্নগুলো তাকে করা যেতো। সব অসঙ্গতিগুলোকেও বুঝে নেওয়া যেতো।