সাধারণত মার্চ মাস থেকে জুন-জুলাই পর্যন্ত আদিবাসী প্রবন এলাকাগুলোতে ডাইনি সন্দেহে অত্যাচারের ঘটনা দেখা যায় বেশি, ডাইনি প্রথা বিরোধীতায় যারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন তারা এমন ধারনা পোষন করে থাকেন। যেহেতু এই সময়টাতে জমিতে চাষের কাজ থাকেনা তাই জমি মালিক আদিবাসী অথবা ভাগচাষী কিংবা জনমজুর কারোরই হাতে নগদ পয়সা থাকেনা। ফলে ডাইনি রূপে সন্দেহভাজন অসহায় মানুষদের কাছ থেকে জোর করে পয়সা আদায়ের একটা লক্ষ্য থাকেই যেখান থেকে অনেকের হাঁড়িয়া খাওয়া বা অন্যান্য ফুর্তি করার পয়সা আমদানি হয়।
এমনি এমনি কোনো ডাইনি ঘোষনা হয় না, প্রতিটির প্রেক্ষাপট থাকে। বিধবা-অসহায় মহিলার সম্পত্তি গ্রাস, পারিবারিক শত্রুতা, পাড়ার পুরোন ঝামেলা এগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি কারন থাকতে পারে। যারা অত্যাচার করে তারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। গ্রামের কোনো একটা বিপদ হল, কিংবা মড়কে গবাদি পশু মারা যাচ্ছে, কিংবা অজানা কোনো একটা রোগে কারোর মৃত্যু হল তখন দু-এক জন স্বার্থান্বেষী লোক তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে এসব বিপদের জন্য কাউকে দায়ী করে তাকে ডাইনি বলে রটনা শুরু করে। শিক্ষাবঞ্চিত-কুসংস্কারযুক্ত গ্রামবাসীরা রটনাকে সত্যি বলে মনে করে। রটনা মারাত্মক অবস্থা ধারন করলে একঘরে করা হতে পারে, গ্রামছাড়া করা হতে পারে, মারাত্মক ভাবে মারধোর এমনকি হত্যা পর্যন্ত করা হয়। অনেক সময় অত্যাচারিত লোকটি “আমি ডাইন নই” বলে প্রতিবাদ করে উঠলে তাকে নিজের নির্দোষীতার প্রমান স্বরূপ গ্রামের একগাদা লোককে খরচ করে দুরের কোনো ওঝার কাছে নিয়ে যেতে হয়। সেই ওঝার মোটা দঃক্ষিনাও বহন করতে হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে ওঝা গোনাগুনির পর ঐ লোকটিকেই গ্রামের যাবতীয় সমস্যার জন্য দায়ী করে ডাইনি বলে ঘোষ না করে। এটা কিভাবে হয়?
আসলে গ্রামসভাতে যেদিন ঠিক হয় কোন ওঝা বা গুনীনের কাছে যাওয়া হবে সেদিনই গ্রামের মাতব্বরদের কোনো লোক সেই ওঝা বা গুনীনের কাছে আগাম গিয়ে ডাইনির নাম,ধাম,চেহারার বিবরণ দিয়ে আসে, সাথে কিছু ঘুষ। ফলে গ্রামসুদ্ধু লোক ওঝার কাছে গেলে সেখান থেকে জলপড়া, তেলপড়া, সিঁদুরদাগের এবং বিভিন্ন রকম হিং টিং ছটের মাধ্যমে ডাইনি ঘোষনা করা কঠিন কাজ নয়। কোনো কারনবশত দুপক্ষের কেউ ওঝার বক্ত্যবে সন্তুষ্ট হতে না পারলে যাওয়া হয় জানগুরুর কাছে। আমাদের জেলা কোর্ট, হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট আর কি।
পশ্চিমবঙ্গের তিন আদিবাসী প্রধান জেলা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রতি বছর প্রচুর ডাইনি অপবাদে অত্যাচারের ঘটনা ঘটে। তবে এ বছরে বাঁকুড়া জেলায় যে নৃশংসতম ঘটনাটি ঘটেছে সেটি রাইপুরের। গত ১৪ এপ্রিল রাতে রাইপুর ব্লকের সোনাগাড়া গ্রামপঞ্চায়েতের লোহামেড়্যা গ্রামের ষাটোর্ধ মহিলা কিরণবালা সর্দারকে ডাইনি অপবাদে মুখে অ্যাসিড দিল প্রতিবেশী জানগুরু মানিক যুগী। অপবাদ আজকের নয়, গত কুড়ি বছর ধরেই ওই পরিবারের কাউকে না কাউকে ডাইনি বলা হয়েছে। কখনো কিরণবালার শ্বাশুড়িকে কখনো বা স্বামীকে। তার স্বামী নিজের ওপরে চাপানো দোষ থেকে মুক্তি পেতে বহু বার গ্রামের সকলকে নিয়ে গেছে বড় বড় জানগুরুর কাছে। আদিবাসী সমাজের জঘন্য নিয়ম অনুযায়ী গ্রামসুদ্ধু লোকের যাওয়া আসা- খাওয়া দাওয়ার খরচ সব বহন করেছে, তবু দোষ থেকে আমৃত্যু মুক্তি পায়নি। তারা মারা যাওয়ার পর থেকে কিরনবালা কে টার্গেট করা হয়েছে। কিছুদিন আগে গ্রামেরই এক কিশোরী পুঁটি সর্দার অজানা রোগে মারা গেলে সকলে বলতে থাকে কিরনবালাই পুঁটিকে খেয়েছে। অত্যাচার আরও বাড়ে। এদিকে কিরণবালা কে ঠেকা দেবার কেউ নেই। দুই মেয়ে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ীতে। এক ছেলে, সে মানসিক ভাবে জড়বুদ্ধিসম্পন্ন। বৌমা মেয়ে মানুষ, একা করবে কি। নাতি পুতিও হয়নি। ফলে সোমত্ত বৌমা কে নিয়ে কিরনবালার কোনো রকমে বেঁচে থাকে।
মানিক যুগী সেদিন এসে বলেছিল সে জলপড়া দিয়ে কিরণবালার ডাইনি ছাড়িয়ে দেবে। জলপড়াতে মানসিক রোগগ্রস্ত ছেলে সুস্থ হয়ে যাবে এমনকি নিঃসন্তান বৌমার বাচ্চাও হবে বলে দাবি করেছিল মানিক। অমাবস্যার গভীর রাতে মাত্র একজন সঙ্গীকে নিয়ে গোপনে এসেছিল মানিক। দীর্ঘ বছর ধরে অত্যাচারিত পরিবার ভেবেছিল হয়তো বা মানিকই ঠিক। কিন্তু এসব প্রতারকদের মনের আসল খবর কে বা রাখে। জলপড়ার নাম করে সে বৃ্দ্ধা কিরনবালার মুখে ঢেলে দেয় তীব্র অ্যাসিড। অ্যাসিডে মুখ, গলা, বুক, পিঠ, হাত ভয়ঙ্কর ভাবে পুড়ে যায়। আশঙ্কাজনক ভাবে বৃদ্ধাকে রাইপুর গ্রামীন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
খবর পাওয়া মাত্রই যুক্তিবাদী সমিতির পক্ষ থেকে আমরা সেখানে যাই। সে কী বীভৎস দৃশ্য। শরীরের ওপরের অংশটা পুড়ে গেছে। মাংস দেখা যাচ্ছে। দেখলে শিউরে উঠতে হয়। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক, পুলিশ, বিডিও এবং এলাকার লোকেদের সাথে কথা বলি। ডাইনি সংক্রান্ত সমস্যার মোকাবিলায় ওই এলাকায় কুসংস্কার দূরীকরনের লক্ষ্যে যুক্তিবাদী সমিতির পক্ষ থেকে একটি কর্মসূচী নেওয়া হয়।আমরা আমাদের কুসংস্কার বিরোধী স্ট্রীট কর্ণার শুরু করি।
২৮ এপ্রিল রাইপুরের বিডিওকে একটি চিঠি দিলাম যাতে আমাদের দাবি ছিল – ঘটনায় দোষী জানগুরু মানিক যুগীর বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং কেসটিকে সাধারন মারধোরের ঘটনা বলে অযথা লঘু করে না দেখে যা সত্য সেই ডাইনি সংক্রান্ত কেস দিয়ে তদন্ত হোক। এর সাথে আমাদের একটি অন্যতম দাবি ছিল যে, কিরনবালার চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব প্রশাসনকেই নিতে হবে। এই চিঠির কপি দেওয়া হয় এস ডি ও, জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে।
আমাদের এরকম দাবির কারন বিগত দিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা। বছর খানেকের কয়েকটি উদাহরণ দিই। তালডাংরার নতুনগড়ার মৃত্যুঞ্জয় সোরেনকে ডাইনি অপবাদে মেরেধোরে গ্রামছাড়া করেছিল প্রতিবেশীরা, আমরা গ্রামবাসীদের কুসংস্কার দূর করে তাকে পুর্ণমর্যাদা সহ ফিরিয়ে গ্রামে এনেছিলাম। পুরুলিয়ার কাশীপুরের ফুফুন্দি গ্রামের বিমলা সর্দারকে মেরে মাথার খুলি ফাটিয়ে দিয়েছিল। সেখানেও আমরা মীমাংসা করে এসেছি। ডাইনি অপবাদে বর্ধমানের মেমারীতে তিনটি পরিবার এক বছর এলাকা ছাড়া, বাঁকুড়ার সাবড়াকোন অঞ্চলের হাউসিবাদে কাটু হেমব্রমের পরিবার দীর্ঘ দশ মাস গ্রামছাড়া, পুরুলিয়ার বেগুনকোদরের পটমাডিতে কলাবতি মাঝি কে কুপিয়ে খুন, কয়েকদিন আগে বাঁকুড়া সদর থানার অন্তর্গত বাসুলিতোড় গ্রামে ডাইনি সন্দেহে মেরে নদীর চরে পুঁতে দেওয়া – প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখেছি প্রশাসনের গা ছাড়া ভাব। কোথাও যদি বা অনেক চেষ্টা করে একটা কেস খাড়া হল তো সেখানে জানগুরুর বিরুদ্ধে আদিবাসী সেন্টিমেন্টের কথা ভেবে কোনো কেস দেওয়া হয়না। কোথাও ভাবে ওসব ছোট জাতের নিজস্ব সমস্যা, ওগুলোতে মাথা ঘামিয়ে সময় নষ্ট না করা ভালো। কেননা হাজার বোঝালেও ওদের মাথায় কিস্যু ঢোকেনা।
এখানেও শুরু থেকেই আমরা দেখেছি ঢিলেঢালা ভাব। লোহামেড়্যা গ্রামটির পরিচয় শুনবেন? বামফ্রন্ট সরকারে দীর্ঘদিনের অনগ্রসর কল্যান দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী উপেন কিস্কুর গ্রাম। তিনি এখনো ঐ এলাকার বিধায়ক। তবুও এই ঘটনা। আমরা বেশ অবাক হয়েছিলাম এটা দেখে যে, এতবড় ঘটনা অথচ গ্রামপ্রধান বিডিও কে কিছুই জানাননি। বেশ কয়েকদিন বাদে বিডিও আমাদের মুখ থেকেই প্রথম সব কিছু শুনলেন। থানার কেসে ডাইনির কোনও উল্লেখ নেই। কোনো এক অজানা কারণবশত সেখানে সাধারন অ্যাসিড ছোঁড়ার কেস দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন হয়ত দেখাতে চাইছে পশ্চিমবঙ্গে ডাইনির ঘটনা ঘটেনা। শাক দিয়ে মাছ ঢাকা কি যায়? সব একদিন না একদিন ফাঁস হবেই।
ভোট বাক্সের কথা ভাবা রাজনৈতিক নেতাদের অঙ্গুলিহেলনে চলা প্রশাসন এরকম ভাবে কি আদৌ আদিবাসী সমাজের উন্নতি করতে পারছে? রাজনৈতিক দলগুলোর গনসংগঠন গুলোও তাদের দাদাদের গলায় গলা মেলায়। কুসংস্কার জনিত অপরাধ স্বীকার না করে সাধারণ অপরাধের তকমা দিলে সত্যিই কি কুসংস্কার কমে যাবে? নাকি জনসচেতনতার পাশাপাশি অপরাধ গুলির মুল উস্কানিদাতা যারা মোটা টাকা খেয়ে জলপড়া-তেলপড়ার মাধ্যমে ডাইনি ঘোষনা করে সেই জানগুরু-ওঝাদের দু এক জনকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে ডাইনি প্রথা কমবে। যেখানে আমাদের দেশে জানগুরুদের বিরুদ্ধে আইন আছে। গাঁয়ের যে সব মাতব্বরেরা অসহায় মানুষদের ডাইনি অথবা ডাইন বলে তাদের জমি-জমা, ঘর-দোর কেড়ে নেয়, জরিমানার মোটা টাকা ভোগ করে, সেই মাতব্বরদের পথে ঘাটে বুক ফুলিয়ে ঘুরতে দিলে এই অমানবিক প্রথা দূর হবে নাকি এদের শাস্তি দেওয়াটা একান্ত প্রয়োজন? প্রশ্ন করছেন কুসংস্কারের বেড়াজাল ডিঙিয়ে উঠে আসা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর একটা অংশ। তারা বুঝেছেন যে, সতীদাহ থেকে নরবলি কোনো নৃশংস প্রথাই শুধুমাত্র জনসচেতনতায় সমাজ থেকে দূর হত না। এর পাশাপাশি প্রশাসনকে কড়া আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হয়েছে।। কিন্তু প্রশাসনের হর্তা কর্তারা এটা বুঝছেন কই? এবং তাদের পিছনে লুকিয়ে থাকা সব খেলার মূল নায়কেরা? আদিবাসী কুসংস্কার গুলিকে তোল্লাই দিয়ে সাময়িক ভাবে ভোট ভাঁড়ার ভর্তি করা যায় বটে কিন্তু চিরকাল যায় না। যেদিন তারা বুঝতে পারে যে, তাদেরকে বোকা বানিয়ে এতটা কাল রাখা হয়েছিল, সেদিন তারা সমস্ত ক্ষোভ উগরে দিতে বাধ্য, সেই উদ্গীরণ ভোট বাক্সেও হতে পারে আবার………….
httpv://www.aljazeera.com/programmes/101east/2013/01/2013121101834161718.html
মর্মস্পর্শী্ এ ঘটনাটি আমাদের প্রতিদিনকার চালচাত্রেরই এক চিত্র। আদিবাসীদের এ সমস্যা ডাইনীঘটিত হলেও আমাদের সমাজে এ রকম অসংখ্যা ঘটনা আছে। কতগুলো প্রকাশ পায় তার ভিতরে বলুন, আর প্রকাশ পেলেও অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি সত্য বিকৃত হতে। যেসব ব্যপারগুলো নিয়ে মিডিয়া ঘাটাঘাটি করে, সেগুলোর কোন রেজাল্ট হলেও অধিকাংশক্ষেত্রে পরে দোষীরা ঠিকই পার পেয়ে যায়। সমস্যাটা আমাদের আইন, আদালত আর সচেতনতার। বিপ্লব ভাই ও তার সংগঠনের সমৃদ্ধি ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
‘হুজুগে বাঙ্গালী’ বলে একটা কথা আছে, ‘হুজুগ’টা এখন ওদের পক্ষে, আপনারা সঠিক পথে আগান, জনসচেতনা সৃষ্টি করেন, ‘হুজুগ’ আপনাদের দিকে আসতে বাধ্য। একবার যদি এই ‘হুজুগ’ বা সচেতনতাটা সৃষ্টি করতে পারেন….আমার বিশ্বাস, এসব বর্বরতা আর এ বর্বররা চিরবিদায় নিবে আমাদের সমাজ থেকে। আপনাদের জন্য শুভ কামনা রইল।
দুটি আশাব্যঞ্জক খবর আছে।
প্রথমত অ্যাসিড কেসটির ক্ষেত্রে জানগুরু মানিক যুগী কদিন আগে গ্রেপ্তার হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে শেষ কবে জানগুরু গ্রেপ্তার হয়েছে মনে পড়ছে না।
দ্বিতীয়ত কাটু হেমব্রমের কেসটিতে জানগুরু নেপাল বাউরি যে কিনা আবার বন দপ্তরের কর্মচারী, প্রশাসনিক দপ্তর গুলিতে বারা বারে হত্যে দিয়ে তাকে চাকরী থেকে বহিস্কার করানো গেছে। বাম জমানার বাম কর্মচারীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অফিস কর্তৃপক্ষ কি করে যে এই সিদ্ধান্ত নিল সত্যি বিস্ময়ের। এই দুটি ঘটনা স্থানীয় জানগুরুদের সকলের পিলে চমকে গেছে, ফলে তাদের মধ্যে এখন বেশ কয়েকজন নতুন কেস হাতে নিচ্ছেনা, বলছে এখন অবস্থা ভাল নয়, পরে আসুন। আমাদের দেখতে হবে তারা যেন বরাবরের জন্য এসব বুজরুকি বন্ধ করে। জনগনকে পাশে পাওয়া যাচ্ছে এটাই ভাল খবর। কদিন আগে ঐ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রামের লোকেরা মিলে আদিবাসীদের একটি ধর্মীয় সংগঠনকে চ্যালেঞ্জ করে। ঐ সংগঠনটি আদতে ওড়িশা রাজ্যের, পশ্চিমবঙ্গে সবে মাত্র প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে। সংগঠনটির সদস্যরা ডাইনি ধরা, ভুত ঝাড়া, ঘর বাঁধা ইত্যাদি গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে করছিল এবং কুসংস্কার ছড়াচ্ছিল। আমরা গ্রামবাসীদের বলে দিয়েছি, আপনারা লড়ে যান। আমরা পাশে আছি। গ্রামবাসীরাই আরো চার পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েকশো গ্রামে চ্যালেঞ্জের খবরটি লিফ্লেট, হাতে লেখা পোষ্টার, মাইকিং এর মাধ্যমে প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছে। ওদের হার টিকে প্রচার করতে পারলে কুসংস্কারে ডুবে থাকা আদিবাসী গ্রামগুলির অনেকেই বুঝবে জানগুরু ওঝা রা যা যা দাবি করে সবটাই ভড়কি। আর শেষ পর্যন্ত যদি না আসে তাহলে তো কুসংস্কার মুক্ত আদিবাসীরাই জিতল।আমাদেরও দীর্ঘদিনের প্রয়াস কিছুটা এগোলো। আমরা চাই বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া নয়, ওরা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই ফেস করুক।
সামনের পঁচিশ জুন পাঁচমুড়া ফুটবল গ্রাউন্ড ময়দানে চ্যালেঞ্জের সময় এবং স্থান নির্বাচিত হয়েছে। ‘পাঁচমুড়া’ মানে জানেন তো? ভারত সরকার অনেক সময় লোগো হিসেবে এক জোড়া মাটির ঘোড়ার ছবি ব্যবহার করে। দেখে ছেন নিশ্চয়? সেই মাটির ঘোড়ার পেটেণ্ট এই পাঁচমুড়া গ্রামেররই।
জঙ্গল এবং আদিবাসী গ্রাম ঘেরা পাঁচমুড়া গ্রামের বিখ্যাত বিখ্যাত রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত মৃৎশিল্পীদের বর্তমান হাল নিয়ে আবার একটা ব্লগ লেখা যায়। পরে হবে।
আজ আবার রাইপুর থানায় গিয়েছিলাম। শুনলাম এখনো জানগুরু মানিক যুগী কে গ্রেপ্তার করেনি। কেন করেনি জিজ্ঞেস করাতে বলছে, ওকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা বললাম আমাদের কাছে নিশ্চিত খবর আছে সে প্রতি রাতেই ঘরে ফেরে। এমনকি দু চারবার দিনেও এসেছে। পুলিশ বলছে আমরা ওসব জঙ্গল এলাকায় রাতে রেইড করতে যেতে পারবোনা।
আচ্ছা মুশকিল হল তো, তাহলে ওকে তো কোনোদিনই ধরতে পারবেনা। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ কেও এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া আছে। তারাও নিশ্চুপ।
খেতে না পাওয়া, অনুন্নয়নের শিকার যেসব আদিবাসীরা জোতদারদের বিরুদ্ধে, উন্নয়নের দাবিতে, জল-জঙ্গল- জমি রক্ষার লড়াইয়ে সামিল হয়েছে দিনে রাতে তাদেরকে ধরা হচ্ছে, গুলি করে গুম করা হচ্ছে, মিথ্যে মামলায় কিংবা বিনা বিচারে বছরের পর বছর জেলে বন্দী করে রাখা হচ্ছে। আর যেসব আদিবাসী সত্যিই অপরাধী, যাদের জন্য আজ আদিবাসীরা কুসংস্কারেরে মায়াজালে আবদ্ধ। তারা কোন যাদু বলে ছাড় পেয়ে যায়? লজ্জা।
গত কদিন আগে পুরুলিয়ার মানবাজার থানা এলাকায় আবার ডাইনি সন্দেহে হত্যা হয়েছে। অশিক্ষিত দরিদ্র গ্রামবাসীরা অনেক কষ্ট করে একটা অভিযোগপত্র বানিয়ে অভিযোগ জানাতে গেলে
থানা তার রিসিভ কপি দিতে চায়নি। আমাদের পুরুলিয়া শাখা ব্যাপারটিতে হস্তক্ষেপ করার পর পুলিশের টনক নড়ে। এভাবে কত সম্ভব?
আদিবাসীরা অশিক্ষা- কুসংস্কারে ডুবা থাকুক কোনোদিনই যেন মর্যাদার দাবিতে মাথা তুলতে না চায় এটাই প্রশাসনের দস্তুর।মাথা তুললেই থেঁতলে দেওয়া হবে।
দীর্ঘশ্বাস! 🙁
আরো কত সহস্র বছর লাগবে এই সব বন্ধ হতে? মাঝে মাঝে বড়ই হতাশা ভর করে। আপনাদের এই চেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই।
বিপ্লব
কেমনআছেন? প্রবীর দা কেমন আছেন? সংগঠনের আর সকলকেই আমার শুবেচ্ছা দেবেন্। ভালো থাকবেন।
@আব্দুল হক,
প্রবীর দা ভালো আছেন। ৬৬ বছর বয়সের তরতাজা যুবক। আমাদের চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করেন।
সে ক্ষোভ কি আমরা দেখছি না ছত্রিশগড় সহ ভারতের অন্যান্য প্রদেশে? অরুন্ধুতী রায় তো আদিবাসীদের এ শোষণের বিরুদ্ধেই লড়ছেন এখন।
@গীতা দাস,
হ্যাঁ আপনি ঠিক বলেছেন। উনি আদিবাসীদের জল জঙ্গলের আধিকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনা কে আন্তর্জাতিক ভাবে হাইলাইট করছেন খুব।
আমাদের দেশেও এসিড মারার ঘটনা ঘটে তবে এভাবে ডাইনী ব্যাবসার নামে এসিড মারার চল মনে হয় নেই।
প্রশাসনের চোখ কান বুজে চলার নীতি বজায় থাকলে তো কোনদিনই এসব বন্ধ হবে না। সবার কালচারকেই শ্রদ্ধা করতে হয় তার মানেই অমানবিক কার্যকলাপ প্রশ্রয় দেওয়া নয়।
@আদিল মাহমুদ,
চল নেই সে হয়তো ঠিক,কিন্তু অনেক ঘটনাই ইনানিং পত্রপত্রিকায় চোখে পড়ছে।যেমন পীর,ফকির,ভন্ড পীর এবং তাদের অত্যাচার।এই সবই বা বন্ধ হচ্ছে কোথায়? বিশাল,বিশাল মানূষের আটরশী যাতায়াত কি প্রমান করেনা,যে আমরাও একই ব্যধিতে ভুগছি?
@আদিল মাহমুদ,
ডাইনি বলে অ্যাসিড মারার চল এখানেও নেই। এখানে কুপিয়ে খুন করে দেয়, যেমন টা গত মঙ্গলবার বাঁকুড়া সদর থানার একটি গ্রামে ঘটেছে।
যাদের খুন করার সাহস বা সুযোগ থাকেনা তারা অন্যান্য ভাবে অত্যাচার করে। অ্যাসিড দেবার কারন হচ্ছে কিরন বালা কে সারাজীবনের জন্য অন্ধ করে দেওয়া। ওর বৌমা র ওপর মানিক যুগী এবং আরও কয়েকজনের নজর ছিল।পথের শ্বাশুড়ী কে না সরালে বৌমার দিকে এগোনো যাচ্ছিল না বলেই এই কান্ড। অন্যান্য ডাইনি কেসের মতই এটির পেছনেও বিশেষ স্বার্থ ছিল। আর অন্যান্য গ্রামবাসীদের বোঝানোর জন্য হাতিয়ার কুসংস্কার। কাউকে ডাইনি বললে সবাই সেই রটনাতে কান দেয়। কেননা প্রায় সবাই ডাইনি আছে বলে বিশ্বাস করে।
এই ধরনের ঘটনা এড়নোর লক্ষ্যে আমাদের কি কিছুই করার নেই? আমরা কি পারিনা এইসব আদিবাসী গ্রামে সচেতনতামূলক কোনো কর্মসূচি হাতে নিতে?
সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমার আবেদন রইল এই বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করার।
প্রশাসন কখনই কড়া আইন প্রয়োগ করতে পারবেনা যতক্ষন তারা করাপ্টেড রাজনৈতিক নেতাদের আঙ্গুলিহেলনে চলতে থাকবে।
বিপ্লব দাস, কিছু কিছু পোস্ট থাকে যেখানে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গেলে কিছু বলা যায় না, যা কিছুই বলতে যাই না কেন, নিজের কাছেই খেলো শোনায়। আমার কয়েকটা সমবেদনার উচ্চারণ কী কাজে আসবে কিরণবালাদের!
তার চাইতে আপনারা যারা আসলে কাজ কিছু করছেন তাদেরই বরং সাধুবাদ জানাচ্ছি। আপাততঃ সেটাই আমার জন্য সহজতর ……
আপনাদের সংগঠনের নাম কী? আপনারা কি প্রধানত আদিবাসীদের মধ্যেই বা তাঁদের সমস্যা নিয়েই কাজ করেন?
@স্নিগ্ধা,
স্নিগ্ধা, বিপ্লব দাস অনেক দিন ধরেই মুক্তমনায় লিখছেন ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে।
@অভিজিৎ,
থ্যাঙ্কস, অভি – খেয়াল করি নাই।