বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রক বাংলাদেশের সিনেমাহল গুলিকে বাঁচাতে ভারতীয় সিনেমার আমদানি বৈধ করেছিলেন। এতে বাংলাদেশের সিনেমা হলগুলি বাঁচত। তার সাথে সাথে বাংলাদেশের সিনেমা শিল্প ভারতের সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরী হয়েছিল। কিন্ত সেসব আশা অঙ্কুরেই বিলুপ্তি। ঢাকার চলচ্চিত্রশিল্পী সংগঠনগুলির যৌথ আন্দোলনে শেখ হাসিনা সেই নিষেধাজ্ঞা আবার ফিরিয়ে এনেছেন। আমি মনে করি বাংলাদেশের শিল্পীরা আগেপিছু না ভেবে, ক্ষণস্থায়ী লাভের কথা ভেবে নিজেদের কবর নিজেরা খুঁড়লেন।
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্ভভৌম রাষ্ট্র-তারা তাদের জনগনের কথা শুনে আইন প্রণয়ন করবেন-সেটাই কাম্য। তাছারা এক্ষেত্রে সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলেই দিয়েছিলেন। শিল্পী সংগঠনগুলির চাপে শেখ হাসিনা পিছু হটলেন। সুতরাং আমার অভিযোগটা বাংলাদেশ সরকারের দিকে নয়। একটা গণতান্ত্রিক সরকারকে জনগণের কথা শুনতেই হয়। শেখ হাসিনা সেই অর্থে ঠিকই করেছেন-জনমতকে মর্যদা দিয়েছেন। কিন্ত আমার এই লেখার উদ্দেশ্য সেই শিল্পীদের উদ্দেশ্যে যারা না বুঝে নিজেদের ভবিষ্যতকে এবং তার সাথে সাথে বাংলা সিনেমার ভবিষ্যতকে বেশ চাপে ফেললেন।
বিবর্তনই জগতের নিয়ম। আমাদের সমাজ, শিল্প, প্রযুক্তি-মার্কেট-লোকজনের চাহিদা সব কিছু পরিবর্তনশীল। সেই পরিবর্তনের সাথে অভিযোজন না হলে মৃত্যু অনিবার্য্য। দুবছর আগে বাংলাদেশের বিখ্যাত পরিচালক তনভীর মোকাম্মেলের সাথে ইন্টারভিউ সুত্রে জেনেছিলাম বাংলাদেশের ৯০০ টা সিনেমা হলের মধ্যে ৬০০ টাই বন্ধ। কোন ভদ্রলোকে সিনেমা দেখে না। গোটা ইন্ডাস্ট্রি চলে কালোটাকায়-মাফিয়ারাজ। ভালশিল্পীরা টিভি নাটক আর সিরিয়াল করে পেট চালাচ্ছে। ভাল সিনেমা করার পরিবেশটাই নেই।
অথচ ভারতীয় সিনেমাকে আটকে কি সেটা ভাল হবে? না বাংলাদেশের সিনেমার বাজারকে ভারতে প্রসারিত করলে বাংলাদেশী সিনেমা বেঁচে যেত ? ভারতে উন্নত বাংলা সিনেমা অবাঙালীরাও দেখেন। সত্যজিত রায়ের প্রায় প্রতিটি সিনেমা আমি দেখেছি আমার জানা প্রতিটি ভারতীয় দেখেছে। শুধু তাই না। এখন বলিউডে হুর হুর করে হলিউডের টাকা ঢুকছে। বলিউডের পরিচালকরা টাকাতে না পেরে আঞ্চলিক সিনেমাতে টাকা ঢালতে আসছেন এবং এই ব্যাপারে বাংলা সিনেমা তাদের প্রথম পছন্দ। এর কারন অনেক। প্রথম কারন অবশ্যই এই যে বলিউডে প্রচুর বিখ্যাত বাঙালী নায়ক নায়িকা আছেন এবং বাংলাতে প্রচুর ভাল পরিচালক আছে। ফলে বাংলা সিনেমা ভারতীয় মার্কেটে চলবে ভাল। আছে সমৃদ্ধ সাহিত্য, সংস্কৃতি। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র ত শুধু বাঙালীর নন। ভারতে সব থেকে বেশী হিন্দি সিরিয়াল হয়েছে শরৎ সাহিত্য দিয়ে। অন্য কেও ধারে কাছেও নেই। এই দক্ষিন এশিয়াতে হিন্দির পরেই বাংলাভাষী বেশী আছে। এসব কারনেই বাংলা সিনেমা শিল্পে আস্তে আস্তে টাকা আসা শুরু হচ্ছে। এই প্রক্রিয়াতেই বাংলাদেশের সিনেমাও যুক্ত হতে পারত। হলিউড আজ বলিউডে এসে সিনেমা বানাচ্ছে কারন, ভারত হলিউডের সিনেমা এবং শিল্পকে স্বাগত করেছে। লোকে হলিউড বলিউড দুটো সিনেমাই দেখে। কারন টেস্ট আলাদা। মাংস খেলে মাছ খেতে হবে না এমন নিয়ম আছে না কি? আর বাংলা সিনেমার টেস্ট এদের থেকেও আলাদা।
সুতরাং ভারতের থেকে বিযুক্ত হয়ে বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পের কি লাভ হবে? খোদ বাংলা সিনেমাকেই, আমেরিকার ডেটাবাজার মিডিয়া ভেঞ্চার ( ডেটাবাজার গ্রুপের মিডিয়া) বিশ্বের বাজারে বিনপন করছে। নেটফ্লিক্স, ব্লকবাস্টার, আই টিউনস সহ সব আমেরিকান রিটেল চ্যানেলেই বাংলা সিনেমা এই বছর থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। ঠিক ঠাক এগোলে এই আন্তর্জাতিক বাজার বিশাল। মনে রাখবেন ঋত্বিক ঘটকের মেঘেঢাকা তারা এবং সত্যজিতের পথের পাঁচালী পৃথিবীর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০০ টি সিনেমার মধ্যে স্থান পেয়েছে এবং আজও এর অনেক ডিভিডি বিক্রি হয় গোটা বিশ্বেই। আর বলিউডের অনেক সিনেমাই আজকাল শুধু আন্তর্জাতিক মার্কেটের কথা ভেবেই তৈরী হচ্ছে-যেমন ফক্সের মাই নেম ইজ খান।
শুধু তাই না। আমার সাথে জার্মান এবং স্প্যানিশ প্রযোজকদের ও যোগাযোগ আছে। তারাও আজকাল গোটা বিশ্বের কথাই ভাবছেন। কারন জার্মান বা ইটালিয়ানরা শুধু হলিউডের সিনেমাই দেখছেন। এর সমাধান হলিউডকে জার্মানি বা ইটালিতে আটকানো না। এর বিকল্প হিসাবে জার্মান বা ইটালিয়ান পরিচালকরা গোটা বিশ্বের মার্কেটের কথা ভেবে স্ক্রিপ্ট লিখছেন। চে গুয়েভেরার মোটর সাইকেল ডাইরী স্প্যানিশের থেকে দশগুন টাকা তুলেছে ইংরেজিতে। লাভ ইন দি টাইম অব কলেরা-নোবেল জয়ী সাহিত্যিক মার্কোয়েজের এই স্প্যানিশ উপন্যাসটির ইংরেজি সিনেমাই সব থেকে বেশী লাভ করেছে!
গোটা সিনেমা শিল্পে যখন বিশ্বায়নের পরিবেশ, তখন সেই বিশ্বায়নের সুযোগ নিয়ে নিজেদের আরো উন্নত করাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। এতে বাণিজ্যিক লাভ ও বেশী। তখন ঘরের দরজা বন্ধ করে সিনেমা শিল্পকে টিকিয়ে রাখা যাবে কি? সব থেকে বড় কথা সব ভারতীয় সিনেমার পাইরেটেড ডিভিডিই বাংলাদেশে ঢালাও বিক্রি হয়।
অথচ বাংলাদেশে প্রতিভার কোন অভাব নেই। হুমায়ুন আহমেদের গল্পের ওপর করা নাটকগুলি বেশ আন্তর্জাতিক মানের। গোটা উপমহাদেশে গড়পরতাই বাংলাদেশীরাই সব থেকে বেশী সংস্কৃতি প্রবণ এবং তারা সাংস্কৃতিক পরিবেশেই বড় হন। অথচ বাংলাদেশী প্রতিভার বিশ্বায়ন নিয়ে না ভেবে, কিভাবে ভারতীয় ছবি আটকানো যায় সেটা নিয়ে ভাবলে কার লাভ? হলিউডের ছবি মেক্সিকো আটকায় কি? মোটেও না। বরং মেক্সিকোর অনেক পরিচালকই হলিউডে সিনেমা বানাতে আসেন-স্প্যানিশ ও ইংরেজিতে একই সাথে সিনেমা হয়। যেমন এখন অনেক সিনেমাই বাংলা এবং হিন্দিতে হচ্ছে। বড় মার্কেট ছাড়া বাজেট আসবে কি করে? তনভীর মোকাম্মেলের লালন দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি-সিনেমাটা গোটা বিশ্বে বিরাট মার্কেট পেত। অথচ পশ্চিম বঙ্গের বাঙালীরাই জানেন না, লালন বলে একটি অসাধারন সিনেমার অস্তিত্ব আছে! মাটির ময়না সিনেমাটা বেশ কিছু আমেরিকান দেখে থাকলেও দেখতে পারেন-কিন্ত কোন ভারতীয় বাঙালী দেখেছে বলে আজ পর্যন্ত শুনি নি। এটা ত কাম্য না। মাটির ময়নার মতন দুর্দান্ত সিনেমার সব থেকে বড় বাজারত ভারতেই ছিল। যেকোন বলিউড হাউস ওই সিনেমাটা নিতে চাইত।
বাংলাদেশ এবং ভারতীয় বাঙালীকে একত্রিত করে বাংলা সিনেমার মার্কেট না বানালে, বাংলাদেশী পরিচালকেদের পেছনে বেশী টাকা কে লগ্নী দেবে? আর টাকা ছাড়া আজকের দিনে ভাল সিনেমা বানানো কি সম্ভব?
ভারতীয় বাংলা সিনেমার জন্যে বাংলাদেশের শিল্পীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে এটা অমূলক ধারনা। এটা কেন তারা ভাবছেন না, বাংলাদেশে অনেক বেশী বাঙালী থাকে। এবং সেই মার্কেট ধরতে কলকাতার সিনেমা শিল্পে অনেক বাংলাদেশী নায়ক নায়িকা নিতে হবে। যা কিছুদিন হল যৌথ পরিচালনার সিনেমাগুলোতে চালু ছিল।
দেশ ভাগে বাংলা সংস্কৃতির মার্কেট ভাগ হওয়ায় সমগ্র বাঙালী জাতির সর্বনাশ হয়েছে। এবং এই ভাগটা রাখলে ক্ষতি বাড়বে । কমবে না। বাংলাদেশের শিল্পীরা নিজেদের এবং বাংলা সিনেমা শিল্পের বিশাল ক্ষতি করলেন। আমি অনুরোধ করব-আপনারা আরো বিতর্কের মধ্যে দিয়ে একটা সঠিক সমাধান খুঁজুন।
সমস্ত বাংলাদেশি ভাইদের প্রতি,
যদিও আমি ভারতীয়, তবু আমার হিন্দি সিনেমার প্রতি খুব একটা ঝোঁক নেই। খুব ভালো হিন্দি সিনেমা না হলে আমি দেখিনা।
কিন্তু প্রশ্ন হ্ল আপনাদের হিন্দি ভাষার উপর এত রাগ কেন? আপনাদের ধারণা হিন্দি ভাষাটা আপনাদের দেশের সংস্কৃতি নষ্ট করছে – না আপনারা নিজেরাই করছেন ওই হিন্দি সিরিয়ালগুলো দেখে?
প্রত্যেকটা ভাষা, জাতি বা দেশের একটা নিজস্ব কালচার আছে যা স্বতন্ত্র তেমনি এই দুই দেশের কালচার দুরকম (অথচ ভারত-পাকিস্তান স্বাধীনতার আগে তো এরকম ছিল না। ছিল কি?)। সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই দীর্ঘ ৬৪ পার্থক্য বছরের হিন্দি বা ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে তৈরী হয়ে গেছে (খুব একটা হয়েছে কি?) বাংলাদেশের সংস্কৃতির।
কিন্তু তা বলে ভারতীয় কালচারকে হেয় করবেন এটা আমার কাছে ঠিক আশানরূপ প্রত্তুত্যর বলে মনে হ্ল না। আপনাদের কাছে হিন্দি সিরিয়াল ”বস্তাপচা” মনে হতেই পারে, কিন্তু ভারতীয় হিন্দিভাষীদের কাছে তো মনে হয় না? তাই এই ”মিষ্টি ভাষায় গালাগাল” গুলো না করে অন্য সংস্কৃতিকে সম্মান জানিয়ে সঠিক যুক্তি দিন।
আর আমি যতদুর জানি টিভি সিরিয়ালগুলো ভালো চললে তার টিআরপি বেড়ে যায়। বাংলাদেশে নিঃসন্দেহে ভারতীয় চ্যানেলগুলো ভালো চলছে আর আপনাদের কথায় “ব্যবসা” করছে, “টিআরপি” বাড়ছে। – আর আমার মনে হয় যারা এইগুলো দেখছেন তাদের বেশিরভাগ দর্শকই মধ্যবত্ত শ্রেণির কেন না বাংলাদেশে নিম্নবিত্তদের বিনোদনের জন্য পয়সা খরচা করে কেবিল নেওয়ার সামর্থ্য নেই বলেই আমার ধারণা। আমরা জানি যে কোনো জাতির মধ্যবিত্ত শ্রেণিই ওই জাতির মেরুদন্ড শিক্ষায় বলুন, রুচিতে বলুন সব বিষয়েই ওরা আজ এগিয়ে। তাহলে আপনারা কি বলতে চান আপনার দেশের এই শ্রেণির মাণুষ কিছুই বোঝেন না?? আমার তো মনে হয় হিন্দি সিরিয়ালগুলো বা সিনেমা ওনাদের ভালো লাগে বলেই দেখেন। না হলে ওগুলো চলছে কি করে?
আপনাদের বক্তব্য হ্ল হিন্দি সিনেমা বা সিরিয়াল অতি “কুরুচিকর”, পরিবারের সঙ্গে বসে দেখা যায় না। কিন্তু আমি একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে বাংলাদেশে নিশ্চই ইংরাজি চ্যানেল আছে সেখানে যে ধরণের দৃশ্য দেখানো হয় সেগুলো কই খুব রুচিকর?? তা হলে কি ওখানে ইংরাজি চ্যানেল চলে না? যদি না চলে আমার এই প্রশ্ন (বা যুক্তি) অবান্তর।
আর আপনারা জানেন কোনো সংস্কৃতিই কোনোদিন স্থিতু হয়না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার বিবর্তন ঘটে ও ঘটবেই। আমি আপনি কেউ চেষ্টা করলেও তাকে আটকাতে পারব না। বরং তার বিবর্তন ঘটা জরুরি ও অত্যাবশ্যক। যেমন চর্যাপদ থেকে এই আধুনিক বাংলা ভাষার উদ্ভাবন। তার ফলে এত সুন্দর একটা ভাষা আমরা আজ পেয়েছি।
পশ্চিম বাংলায় তো রমরমিয়ে হিন্দি সিরিয়াল বা সিনেমা চলে কিন্তু কই তাতে তো বাংলা ভাষাভাষি মাণুষের সংখ্যা কমেনি। বরং বেড়েছে এবং ভারতে আজ স্থান তার দ্বিতীয়, যা নজিরবিহীন। আবার বাঙলা সিনেমাও তো এখানে ভালোই চলে। এই তো কদিন আগে এখানে অটোগ্রাফ বলে সিনেমাটা মুক্তি পেল এবং সুপার হিট। তা হলে হিন্দি সিনেমা বাংলাদেশে চললে বাংলা সিনেমা মার খাবে কেন?? আসলে ভালো সিনেমা হলে লোকে দেখবে, দেখবেই! আর সেটারই বড় অভাব। আর যদি মনে করেন এতে পশ্চিম বাংলার সংস্কৃতি বিকৃত হয়েছে। তবে তা একটু হয়েছে। কিন্ত ওই যে বললাম আপনি আমি কেউই তা আটকাতে পারব না। কিন্তু চেষ্টা ত করব নিজের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার। আর তার জন্য চাই ভালো ছবি, ভালো গল্প আর আরও বাংলা ভাষা চর্চার। মনে রাখবেন ভারতীয় উপমহাদেশে যখন হিন্দি সিনেমার রমরমা তখনই কিন্তু আমাদের (মানে দুই বাংলার) প্রবাদ প্রতিম পুরুষ সত্যজিৎ রায় গোটা বিশ্বের কাছে খ্যাতির চূড়ায় উঠেছেন বাংলা ভাষার প্রথম স্বীকৃতিস্বরূপ হিসেবে। তাই আমি মনে করি না হিন্দি ছবির জন্য বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগত মার খাচ্ছে বা খাবে। বরং বাংলাদেশে হিন্দি সিনেমা চালু হলে অবশিষ্ট ৬০০ হলের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মচারীদের আর্থিক উপার্জনের দিকটাও সুনিশ্চিত হবে।
আর আমার মনে হয় আপনারা শুধু শুধু এই ব্যাপারটাকে পলিটিক্যালি নিয়ে যাচ্ছেন। ভারত বড় দেশ, একটা শক্তিধর দেশ মানেই ভারত বাংলাদেশকে ডমিনেট করে রাখতে চায় এ রকম একটা ইঙ্গিত আপনাদের মন্তব্য থেকে অনুভব করছি। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আর যদি হয় তবে এর বিরুদ্ধে আমার মতো শত সহস্র বাঙালীরা লড়াই করতে পিছপা হবে না।
@অনুপম,
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ হিন্দি সিরিয়াল পছন্দ করে। হিন্দি সিনেমাও সব দেখে। একটা অংশ যারা বাংলাকে একটু ভালোবাসে বা ভিক্টরিয়ান বাংলার যুগে আছে এটা তাদের মতামত। কোন সংস্কৃতিকেই ওভাবে আইন করে আটকানো ভুল। ব্লু ফিল্ম আইন করে আটকানো গেছে? ভারত বাংলাদেশে কোথায় তা পাওয়া যায় না?
@বিপ্লব পাল,
কথাটা ঠিক নয়!
বাংলাদেশের প্রায় ৭৫% লোক গ্রামে বাস করে সেখানে কেবল নাই!
আর গ্রামের লোকরা বাংলা গান, সিনেমাই দেখে ও ভালবাসে।
আর কেবল গেলেও দেখবে কিনা সন্দেহ আছে কারণ বোম্বের চটকদারী পোষাক ও গহনা কেনার মত পয়সা তাদের নেই!
দিনান্তে দু বেলা শান্তিতে খেয়ে ঘুমাতে পারলেই তারা সুখী!
আর শহরের প্রায় ১৫-২০% কেবল আছে আমার বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনদের বাড়ীতে যেয়ে কখনই দেখিনি যে তারা হিন্দি চ্যানেল দেখে।
মূলত শহুরে অর্ধশিক্ষিত স্থূল রুচীর নারীরাই হিন্দি সিরিয়াল গুলো দেখে থাকে।
কারণ তাদে র হাতে অফুরন্ত সময়!
আর এটাই বাস্তব!
ধন্যবাদ!
আগে ভারতে বাংলাদেশী টিভি চ্যানেল চালানোর ব্যবস্থা করুন। তারপর ছিঃনেমা নিয়ে পেচাল পাইরেন। যে ছিঃনেমা ভারত বানায় দেখলেই বমি আসে। বিকৃত রুচির। পরিবার নিয়ে দেখাটা লজ্জাজনক। :no:
হিন্দি সিনেমা নিয়ে এত আলোচনা বুঝি না কেন? হলে-টিভিতে হিন্দি সিনেমা চললেও আমি দেখি না। কদিন আগে “পা” বলে একটি সিনেমা বাড়িতে চলছিল আর আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। একই অবস্থা “মাই নেম ইস খান”-এর ক্ষেত্রেও।
বাঙলাদেশের চলচ্চিত্রের সাথে ভারতের চলচ্চিত্রের তুলনা করাটাই বোকামি। বাঙলাদেশে মূলধারার যেই চলচ্চিত্রগুলো হচ্ছে সেগুলো একেবারেই নিম্নমানের, আর যে কয়টা ভালো ছবি হয় (যেমন ‘মাটির ময়না’) সেগুলো ব্যবসায়িকভাবে মারাত্মক অসফল হয়। অন্যদিকে ভারতে ইদানীংকালে বেশ কিছু ভালো ছবি হচ্ছে যেগুলো হলগুলোতেও ভালো চলছে (যেমন ‘থ্রী ইডিয়টস’)। মনে হচ্ছে ভারতের চলচ্চিত্রের প্রকৃতিটা খুব দ্রুতই বদলে যাচ্ছে।
বাঙলাদেশের হলগুলোতে ভারতীয় চলচ্চিত্র ঢুকতে দিলে বাঙলাদেশের চলচ্চিত্র একেবারেই ধ্বংস হয়ে যাবে- এটা দিবালোকের মতই স্পষ্ট। কিন্তু ভারতের চলচ্চিত্র যদি ঢুকতে দেওয়া না হয় তাহলেও বাঙলাদেশের চলচ্চিত্রের মান উন্নত হবে বলে আমি মনে করি না। প্রতিযোগিতার অভাব থাকলে ভালো কিছু করার তাগিদ কেউ অনুভব করে না।
এখন মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের কেউ হলগুলোতে বাঙলা ছবি দেখতে যায় বলে আমার মনে হয় না, তারা বরং ঘরে বসে হিন্দী আর ইংরেজী ছবি দেখতেই পছন্দ করে।
ইতোপূর্বে কলকাতায় বাংলাদেশের চ্যানেল দেখানোর জন্য বহুবার দুইবাংলার শিল্পীগোষ্ঠী একত্রিত হয়েছেন। আপনার কি মনে হয় তারা না জেনেই করেছেন!!
বাংলাদেশের কয়টি চ্যানেল ওখানে দেখানো হয় দয়া করে একটু খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
আর হ্যাঁ আমি আমাদের শিল্প ও সংস্কৃতির হুমকি স্বরূপ ভারতীয় হিন্দী সিনেমাকে সাপর্ট করতে পারি না। এটা আমাদের অস্তিত্ত্বের প্রশ্ন। ভারতের সিনেমা এখানে দেখালে আমাদের দেশে এখনো যে ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রিজ বলে একটা জিনিস আছে তার বিলুপ্তি ঘটতে সময় লাগবে না। এতে করে যে কয়েকটি ভালো সিনেমা আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম তাও আর পাবো না এবং প্রচুর লোক রাতারাতি কর্মহীন হয়ে পড়বে অন্যদিকে সিনেমা হল মালিকগুলোর অবস্থা হবে আঙুল ফুঁড়ে কলাগাছ। ভারতের সাথে আমার বিরোধীতার কোন প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু বড় মাছের সামনে ছোট মাছদের একটু সাবধানে গা বাঁচিয়ে চলতে হয় বইকি। নতুবা আইডেনটিটি ক্রাইসিসে ভুগতে হবে। বিশ্বায়নে গা এলিয়ে দিলে যে প্রান্তসীমার নিচে বসবাসকারীদের গ্রাস করে ফেলবে বড় বড় দানবাকৃতির দেশগুলো।
এই সিদ্ধান্ত আমিও সমর্থন করি না। প্রধান কারন, কিছু লোকে এর বিরোধীতা করেছে স্রেফ উগ্র ভারত বিরোধীতা থেকে। যদিও বাস্তব হল আমাদের দেশে হিন্দী সিনেমা দেখেনা এমন লোক পাওয়া এখন বিরল। দেখা সবসময়ই হত, তবে এখন হিন্দী সিনেমার আরো অনেক সুদুরপ্রসারী ফল দেখা যাচ্ছে। আজকাল আমাদের দেশের বিয়ের শাদীর ভিডীও দেখলে মনে হয় যে হিন্দী সিনেমার কোন দৃশ্য দেখছি। এমনকি লাঠি নাচও বাদ যায় না।
সে আমাদের দোষ, স্বীকার করতে বাধা নেই। তবে এত ব্যাপক জনপ্রিয় যে জিনিস সে জিনিসে নিষেধাজ্ঞা ভন্ডামির মতই লাগে।
তবে একটি জিনিস আপনি ধরতে পারেননি মন হয় যে আমাদের চলচিত্রের বর্তমান হাল এতই মারাত্মক যে তা আপনাদের ছবির সাথে তূলনা করতে পারবে না। কাজেই আপনাদের ছবি দেখালে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আমাদের ছবিও ভাল হবে এই ধারনা কেউ কেউ করলেও তা বাস্তব থেকে অনেক দূরে।
আর জাতিগতভাবেই মনে হয় আমাদের ব্যাবসা, মার্কেটিং এসবে দূর্বলতা, তাই কিছু ভাল ছবি করা হলেও তা চালাতে পারি না।
আপনাদের দেশে আমাদের কোন টিভি চ্যানেল ঢুকতে দেওয়া হয় না শুনেছি। যদিও হুয়াময়ুন আহমেদের বই পশ্চীম বাংলায় খুব জনপ্রিয় জানি।
আমারতো মনে হয় ভারতীয় সিনেমা আমদানী করার আত্মঘাতী যে সিদ্ধান্ত অর্বাচীন বাণিজ্যমন্ত্রী নিয়েছিলেন সেটিকে রদ করে শেখ হাসিনা সঠিক কাজটিই করেছেন। বাণিজ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে ৬০০ সিনেমা হল হয়তো বাঁচতো, ফুলে ফেঁপে উঠতো কিছু লোভী ব্যবসায়ী, কিন্তু গোটা সিনেমা শিল্পই অক্কা পেতো অচিরেই। সেই সাথে কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে যেত এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার মানুষের।
এই চুক্তির ফলে বলিউডের জমকালো হিন্দি ছবির সাথে অসম প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দেয়া হতো বাংলাদেশের হতদরিদ্র সিনেমাকে। অসম প্রতিযোগিতায় মান বাড়ে না, বরং দুর্বলটি সবলের আগ্রাসনে বিলুপ্ত হয়ে যায়। কাজেই, যারা ভাবছেন যে, বাংলাদেশে ভারতীয় সিনেমাকে চালাতে দিলে বাংলা সিনেমার মান উন্নত হতো তারা বোকার স্বর্গেই বসবাস করছেন। এমনিতেই হিন্দির আগ্রাসনে বাংলার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, হিন্দি ছবির বাজার উন্মুক্ত করে দিলেতো আর কিছুই বাকী থাকবে না।
বাংলা সিনেমার উন্নয়নে দুই বাংলার কোন চুক্তি হলে আমার কোন আপত্তি নেই। স্বাগতই জানাবো তাকে আমি। কিন্তু, ভারতের সাথে চুক্তিতে আমার আপত্তি ষোল আনা নয়, বরং আঠারো আনা। কারণ, সেক্ষেত্রে হিন্দি ছবিকে ঠেকানোর কোন উপায়ই থাকবে না। এর সাথে আমাদের শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই জড়িত নয়, যেচে এনে বাংলাদেশের সংস্কৃতির উপর উত্তর ভারতীয় সংস্কৃতিকে চেপে বসার সুযোগ করে দেয়া হবে এতে করে। এক দেশ হিসাবে পশ্চিম বাংলার সেটাতে আপত্তি নাও থাকতে পারে, কিন্তু স্বতন্ত্র দেশ হিসাবে বাংলাদেশের মানুষের আপত্তি থাকাটাই স্বাভাবিক।
@ফরিদ আহমেদ,
এটা এগ চিকেন সমস্যা। সিনেমা হলগুলো বন্ধ থাকলে বাংলা সিনেমাইবা চলবে কি করে???
আমাদের এদিকে নিয়ম হচ্ছে হলগুলিতে নূন্যতম ২০ সপ্তাহ বাংলা সিনেমা দেখাতে হয়। আপনারা ৩০ ই করে দিন। হলগুলো না বাঁচলে শিল্পটাই ত বাঁচবে না। হিন্দি সিনেমা এক সময় পশ্চিম বঙ্গের সব হলে সব সপ্তাহ চলত। আইন করে অর্ধেক করা হয়েছে। এখন কিছু হলে শুধু বাংলা সিনেমাই চলে।
সেটার জন্যেও লিখছি না। এই ভাবে কৃত্রিম অক্সিজেন দিয়ে কিছু বাঁচে না। এখানকার সদস্যরা অনেক কিছুই লিখতে পারে-কিন্ত যদি কেও বাংলা সিনেমা শিল্পে লগ্নী করতে চাইত-তাহলে বাংলাদেশ যদি ভারতের মার্কেট কিছুটা ধরতে পারত সেই সিচুয়েশনটাই সবার জন্যে কাম্য হত।
পুঁজির চাপে যখন হলিউড বলিউড মিশে গেছে-তখন এই ভাবে ঘরের কোনে লুকিয়ে কোন শিল্পই বাংলাদেশে হবে না-আর সেটাতে বাংলাদেশের প্রতিভার বিকাশও ঘটবে না। আমি চাইব বাংলাদেশের পরিচালক নায়করা বলিউডএ কাজ করে আসুক-এখন যেমন শারুক বা ঐশ্বরিয়া হলিউড ফ্লিম ও সাইন করছেন। এই উত্তোরনটা কি মিলন বিনা সম্ভব? না এই ভাবে আলাদা থাকলেই শিল্প হবে?
@বিপ্লব পাল,
তোমার সদিচ্ছাটা ধরতে পারছি। বাংলাদেশের বাংলা সিনেমাকে বাঁচানোর চেষ্টা হিসেবে তুমি ভারতের বাজার ধরার চেষ্টা করতে বলছো। আমি তোমার সাথে একমত। কিন্তু কথা হচ্ছে যে, যে সিনেমা তার নিজের দেশেরই বাজার ধরতে পারে না ঠিকমত, সেই সিনেমা কী করে বলিউডের বিশাল বাজেটের চলচ্চিত্রের সাথে পাল্লা দিয়ে সর্বভারতীয় বাজার ধরবে?
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একমাত্র যে বাজারটি ধরার ক্ষমতা আছে সেটি হচ্ছে পশ্চিম বঙ্গ বা ত্রিপুরা। সেকেন্ড টায়ার টিমকে সেকেন্ড টায়ার টিমের সাথেই না হয় খেলতে দেই আগে। চলো বাংলাদেশ আর পশ্চিম বঙ্গের বাজার উন্মুক্ত করে দেই দুই বাংলার জন্য। কোলকাতা আর ঢাকার চলচ্চিত্রের বাজার এক ধাক্কাতেই দ্বিগুন হয়ে যাবে। দুই বাংলার চলচ্চিত্রই এতে করে বেঁচে যাবে। ভাবের ঘরে আর বেঁচে থাকতে হবে না আমাদের। আমাদের ফেরদৌস, রিয়াজদের বলিউডে যাবার দরকার নেই এখনি। কোলকাতায় কাজ করতে পারলেই চলবে। তোমার কী মনে হয় পশ্চিম বঙ্গ রাজি হবে এতে? আমার যদ্দুর মনে পড়ে বাংলাদেশের সাথে যৌথ প্রযোজনার ছবিই যাতে না করা হয় সে জন্য কোলকাতার শিল্পীরা একবার মিছিল, মিটিং, বন্ধ্ করে ফেলেছিল। নিজের স্বার্থটা দেখো সবাই ঠিকমতই বোঝে।
বলিউডের সিনেমা না এলে বাংলাদেশের ছয়শো সিনেমা হল হয়তো মারা যাবে, টিকে থাকবে তিনশো। কিন্তু এলে কী হবে সেটা বুঝতে পারছো কী? নয়শো সিনেমা হল বাঁচবে ঠিকই, কিন্তু মারা যাবে পুরো বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প। হিন্দি ছবি দেখে দেখেই কাটবে আমাদের উত্তরপুরুষদের দিন। বিশ্বাস না হলে এই লিংকটা দেখতে পারো। সচলায়তনেও এই বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। সেখানে দিগন্ত এই লিংকটা দিয়েছে। আমি বাংলদেশের চলচ্চিত্রের ভবিষ্যত নিয়ে যে ভবিষ্যতবাণী করেছি তার সাথে দেখো কী অবিকলভাবে মিলে যায় পাকিস্তানের চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা। সিনেমা হলগুলোকে বাঁচাতে গিয়ে পুরো সিনেমা শিল্পই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে সেখানে। বাংলাদেশে এটা নিশ্চয় হতে দিতে পারি না আমরা, কী বলো, পারি কী?
বিঃ দ্রঃ পশ্চিম বাংলা বা বঙ্গের বর্তমান সরকারী নাম বাংলা। সেটা আমি জানি। তারপরেও আমার লেখায় আমি বাংলাকে বারবার পশ্চিম বাংলা বা পশ্চিম বঙ্গ বলে উল্লেখ করেছি। অনেকদিনের অভ্যাসের বশে যে হয়েছে সেটাও নয়। বাংলাদেশ আর বাংলা লিখে ঠিক কেমন যেন দুটোকে আলাদা করতে সমস্যা হয় আমার। আশা করি ভারতীয় বাঙালিরা এটাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
@ফরিদ আহমেদ,
বাংলাদেশের ফিল্ম ব্যান ছিল বলে জানা নেই। আর যৌথ প্রজযনার ছবি এখন কমে যাচ্ছে কারন বাংলা সিনেমাগুলো -যেগুলো ভাল বেশী বাজেটের তা সবই বাংলা আর হিন্দি মার্কেটের দিকে তাকিয়ে করা হচ্ছে। গত দু সপ্তাহে সব থেকে ভাল চলেছে ভারতীয় বাজারে জাপানিজ ওয়াইফ। অপর্না সেনের। ফলে সবার লক্ষ্য এখন বলিউডের সাথে মিশে কাজ করা। এতে একেকটা বাংলা ছবির বাজেট এখন ৪-৫ কোটি টাকা পাচ্ছে। যা আগে ভাবা যেত না। বাংলাদেশও সেরকম করতেই পারত। সেটা না করলে, খরচ উঠবে না।
আর বাজারের প্রসঙ্গেও তোমার চিন্তাটা ভুল। যদি ভারতীয় বাজার ধরতে হয়, তাহলে আরো বেশী করে মাটির ময়না বা লালন তৈরী হবে। লালন বা মাটির ময়না ভারতের বাজার খুব ভাল করে ধরতে সক্ষম। এটাই বাজারের ক্ষমতা।
@বিপ্লব পাল,
আমি অর্থনীতির ছাত্র নই, কাজেই বাজার সম্পর্কে আমার ধারণা খুব ভাল না হওয়াটাই স্বাভাবিক। তারপরেও আমি আমার স্বল্প জ্ঞান দিয়ে আমার যুক্তিতেই অটল থাকছি। ভারতীয় বাজার ধরার জন্যে আমাদের মাটির ময়না বা লালন বানিয়ে খুব একটা লাভ হবে না। চিত্তের লাভ হয়তো কিছুটা হবে, তবে বিত্তের লাভ যে হবে না সেটা পরিষ্কার। এর থেকে অনেক ভাল মানের ছবি ভারতে গাদা গাদা হচ্ছে। বলিউডের ছবি যে পর্যায়ে চলে গিয়েছে এখন তাতে সর্বভারতীয় বাজারও আমাদের কাছে স্বপ্নবিলাসই হয়ে থাকবে বহুদিন। আমাদের পক্ষে একমাত্র ধরা সম্ভব এখন পশ্চিম বঙ্গের বাজার। আমি মনে করি সেই বাজারই ঢাকাই ছবির জন্য যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি আপাতত প্রয়োজন নেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের।
ভাল ছবি বানানোর দিক দিয়ে কোলকাতা এগিয়ে আছে ঢাকার চেয়ে অনেকগুণ। কোলকাতায় এই মুহুর্তে কমপক্ষে আধা ডজন পরিচালক আছেন যারা নিয়মিতভাবেই আন্তর্জাতিকমানের ছবি তৈরি করছেন। এর বিপরীতে আমাদের আছে সবেধন নীলমণি এক তারেক মাসুদ। প্রচুর প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও মোরশেদুল ইসলাম বা তানভীর মোকাম্মেলকে আমি গোনায় ধরছি না এখানে। কারণ, এই দুজনের সীমাবদ্ধতা ইতোমধ্যেই দেখে ফেলেছি আমরা। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিকমানের ছবি বানানোর অমিত সম্ভাবনা যদি কারো থেকে থাকে তবে সেটা একমাত্র তারেক মাসুদেরই আছে। কাজেই, এদিক দিয়ে খুব একটা সুবিধা আমরা করতে পারবো না আপাতত।
কোলকাতার থেকে ঢাকাই ছবি এগিয়ে আছে যে জায়গায়, সেটা হচ্ছে বাণিজ্যিক ছবিতে। শুধু এগিয়ে আছে বললে ভুল হবে, এই জায়গা ঢাকার কাছে কোলকাতা দুগ্ধপোষ্য শিশুমাত্র । আপাত দৃষ্টিতে ঢাকার চলচ্চিত্র শিল্পকে যতটা দুর্বল মনে করা হচ্ছে ততটা দুর্বল সে নয়। বলিউডের ধারে কাছেও ঢাকা যেতে পারবে না সেটা সত্যি,। কিন্তু বলিউডের পরেই খুব সম্ভবত উপমহাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী চলচ্চিত্র শিল্প হচ্ছে ঢাকা।
দুই বাংলাতেই আগে চলচ্চিত্র তৈরি করা হতো মধ্যবিত্ত দর্শকদের টার্গেট করে। আশির দশক থেকে সেই অবস্থান থেকে সরে গেছে চলচ্চিত্র। এখন্ এটা হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রমজীবি মানুষের বিনোদনের একমাত্র অবলম্বন। দরিদ্র অশিক্ষিত শ্রেণীর বিনোদনের যে অপ্রতুলতা সেটাকে ভরাট করার জন্যেই এগিয়ে এসেছে চলচ্চিত্র। ফলে, তৈরি হচ্ছে মোটা দাগের ছবি, মারদাঙ্গা, নাচ-গানের ছবি। এতে আমি দোষের কিছু দেখি না। দরিদ্র, অশিক্ষিত মানুষেরা সারাদিন খাটাখাটুনির পরে মাটির ময়না বা মন্দ মেয়ের উপখ্যান দেখতে বসবেনে এটা আশা করাটাই অশোভন। মধ্যবিত্ত নয়, এই শ্রমজীবি মানুষেরাই এখন ঢাকার এবং কোলকাতার ছবির প্রাণ। কাজেই, চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে হলে এই ধরনের ছবিই বানাতে হবে। এতে নাক সিঁটকালে চলবে না।
আগেই বলেছি যে, এই ধরনের চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে ঢাকা এগিয়ে আছে কোলকাতার থেকে। কোলকাতার ন্যাকান্যাকা ছবির তুলনায় ঢাকার ছবি অনেক বেশি পুরুষালী, অনেক বেশি বৈচিত্র্যময় এবং আকর্ষণীয়। এর প্রমাণ পাওয়া যায় প্রায়শই ঢাকার চলচ্চিত্রের রিমেক কোলকাতায় তৈরি হওয়ায় এবং এই রিমেকগুলো সুপারহিট হওয়ার মধ্য দিয়ে। মায়ের আশীর্বাদ বা বেদের মেয়ে জোছনা হচ্ছে এর জ্বলন্ত উদাহরণ।
স্বপন সাহা নামের ঢাকার একজন পরিচালক কলকাতায় স্থায়ী নিবাস গেড়েছেন। তিনি যে কটা রিমেক করেছেন তার সবগুলোই পশ্চিম বাংলায় সুপারহিট হয়েছে। ঢাকার ছবির উন্নত বিনোদনই এর পিছনে একমাত্র কারণ নয়। আরো একটা কারণও রয়েছে। পশ্চিম বাংলার সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর দরিদ্র শ্রমজীবি মানুষের একটা বিরাট অংশই বাঙাল, পূর্ব বাংলা থেকে গিয়ে ঘাটি গেড়েছেন পশ্চিম বাংলায়। কোলকাতার পুতুপুতু ছবির তুলনায় ঢাকার প্রাণময় ছবিগুলোতেই তারা অনেক বেশি প্রাণের টান উপভোগ করেন। আমার ধারণা দুই বাংলার চলচ্চিত্রের বাজার উন্মুক্ত করে দিলে খুব অল্পদিনেই ঢাকা টলিয়ে দিতে পারবে টালিগঞ্জকে। স্বপন সাহাদের মত পরিচালকদের যৌথ প্রযোজনার নামে ঢাকার শিল্পীদের কোলকাতায় আগমণকে খুব ভালভাবে নেয়নি কোলকাতার শিল্পীরা। শংকিতবোধ করেছে। প্রসেনজিতের বা রঞ্জিত মল্লিকের নের্তৃতে একবার তারা আন্দোলনও করেছে এর বিরুদ্ধে। আমার ধারণা দুই বাংলার বাজার দুই দেশের চলচ্চিত্রের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে চাইলে মূল বাধাটা আসবে তাই পশ্চিম থেকেই।
আমার এত কথা বলার উদ্দেশ্যটা আশা করি বুঝতে পেরেছো। যে কারণে পশ্চিম বঙ্গ তার নিজস্ব অস্তিত্বের স্বার্থে চাইবে না বাংলাদেশের ছবির জন্য বাজার উন্মুক্ত করে দিতে, ঠিক সেই একই কারণেই বাংলাদেশও চাইবে না তার বাজার হিন্দি ছবির জন্য উন্মুক্ত করে দিতে।
আর একটা কথা, আমি হয়তো বাজার প্রসঙ্গ ভাল বুঝি না। কিন্তু, সমাজ বা সংস্কৃতিকে মনে হয় না তোমার চেয়ে খুব একটা কম বুঝি। ছয়শো সিনেমা হল বাঁচানোর চেয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে বাঁচানোটা আমার কাছে অনেক বেশি মূল্যবান, অনেক বেশি জরুরী। তুমি বলবা যে, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে হিন্দির আগ্রাসনতো বাংলাদেশে হচ্ছেই। হ্যাঁ হচ্ছে। আমার সাধ্য থাকলে আমি ঠিকই ওটা বন্ধ করে দিতাম।
বালু ভর্তি একটা বস্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে হিন্দি সংস্কৃতির বেনোজলের একটা ফোঁটাও যদি আমি আটকাতে পারতাম, বিশ্বাস করো সেটাও আমি করতাম।
অনেক কিছুইতো তোমার জানা নেই হে বৎস। কাজেই বৃথা তর্কে ক্ষান্ত দাও এবার। 😀
@ফরিদ আহমেদ,
:yes: :yes:
আমি পারলে :guli: :guli: দিতাম।
তবে নিজের পরিবারে দুই প্রকার চ্যানেল দেখা আইন করে নিষিদ্ধ করে দিয়েছি বহু আগেই। হিন্দি ফিল্ম ও ধর্মীয় চ্যানেল। হিন্দি সংস্কৃতি আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্যে বিরাট অভিশাপ। কুফলটা ইতিমধ্যেই অনেকে হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছেন।
@আকাশ মালিক,
সাধারণ অর্থে, হিন্দি ফিল্ম কি কোন ফিল্ম catagoryতে পড়ে?
কিছু ভাল ছবি অবশ্য আছে।
ভাল দিক (ভাল দিক?) কিন্তু একটা আছে। কোন কিছু হাতে না থাকলে শুধু নিজেরা দেখুন। শুরু থেকে দেখার দরকার নেই। যে কোন জায়গা থেকেই দেখতে পারেন। ছবির নামের দরকার নেই – সবই একই মাল – কুছ কুছ হোতা হ্যায়।
আর ভারতীয় বাংলা ছবি? ঋতুপর্ণ ঘোষ বাদে কেউ ভাল ছবি বানায় কিনা আমার জানা নেই। ঋতুপর্ণ ভাল ডিরেক্টর।
@আকাশ মালিক,
কাজটা কি ঠিক হল? মাথা ব্যাথা সারাতে মাথা কেটে ফেলার নীতি হচ্ছে নাতো? ভাল হিন্দী ছবি কি নেই? বা, খারাপ ইংরেজী ছবিও নেই?
তবে পয়েন্ট হতে পারে যে ইংলিশ ছবি চ্যানেল গুলির মত হিন্দী চ্যানেল বা ছবিগুলিও parental guidance রেটিং দিতে পারে।
@আদিল মাহমুদ,
হিন্দি ফিল্ম না দেখাতে, মাথা কাটা যাওয়ার তো কিছু দেখিনা আদিল ভাই। এযুগের হিন্দি ফিল্মগুলো এতোই অশ্লীল যে, মা বাবা, ছেলে মেয়ে সন্তানাদি নিয়ে দেখা অসম্ভব। দেশ থেকে যতোটা বিয়ের সিডি ডিভিডি ক্যাসেট আসে সবটাতেই হিন্দি গান, আমার অসহ্য লাগে। ইংল্যান্ডের নতুন প্রজন্ম শুদ্ধভাষায় বাংলা বলা তো দূরের কথা, নিজের মায়ের আঞ্চলিক ভাষায়ও পুরোপুরি কথা বলতে পারেনা, কথায় কথায় হিন্দি ফিল্মের ডায়োলগ মারে। তাও গালি ভরা ডায়োলগ। এদেশে রাত নয়টা পর্যন্ত কোন অশ্লীল প্রোগ্রাম দেখাতে পারবেনা। এটুকু সময়ই তো কিশোরদের জন্যে যথেষ্ট। এতো ডকুমেন্টারি, ডিসকভারি, ধারাবাহিক ইংরেজি বাংলা নাটক ছবি থাকতে, আমার নতুন প্রজন্ম অশ্লীল হিন্দি ছবি দেখতে যাবে কেন?
@আকাশ মালিক,
কোন নির্দিষ্ট ভাষার সংস্কৃতিকে একেবারেই তালাচাবি মেরে বিদায় করে দেওয়া কেন যেন মেনে নিতে পারি না। সাম্প্রতিক হিন্দী ছবি দেখি না বেশ ক’বছর হল। তবে পুরনো কিছু ছবি নিজের কালেকশনেই আছে। আর যত গান শুনি তার একটা বড় অংশ পুরনো হিন্দী গানের। সেসব গান আমার কাছে নিজের আপন মানুষের মতই প্রিয়।
হিন্দী ছবির প্রকোপ আমিও টের পেয়েছি। দেশের বিয়ে শাদীর ভিডিও এই ভয়ে দেখা বহুদিন বাদ দিয়েছি, দেখলে মনে হয় মিনি হিন্দী ছবি দেখছি। একবার কাগজে পড়েছিলাম একুশে ফেব্রুয়ারীর এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হিন্দী গান পরিবেশনের প্রতিবাদে এক মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্থা হতে হয়েছে। তবে এগুলির দোষ হিন্দীর নয়, দোষ আমাদের নিজেদের। জারি হিসেবে নিজেদের নিয়ে আমার ধারনা খুব একটা উচ্চমানের কোনদিন নয়। বিরক্তি হিন্দীর উপর লাগে না, লাগে নিজেদের উপর।
হিন্দী ছবি দেশে জনপ্রিয় হবেই, কারন উপমহাদেশীয় হিসেবে সাধারন মানুষ ইংরেজী থেকেও হিন্দীর সাথে নিজেদের মিল পায় বেশী। আমার মনে হয় না যে এ যুগেরও সব হিন্দী সিনেমাই অশ্লীল বলে। তবে অধিকাংশ সিনেমাই এতই চটকদার যে মনে হয় মানুষকে ভোগবাদী হবার উন্মাদনা যোগায়।
তবে ফরিদ ভাই এর আশংকা ১৬ আনাই সঠিক। আমাদের দেশে সিনেমা হলে হিন্দী ছবি চালানো মানেই আক্ষরিক অর্থে চলচিত্র শিপ্লের মৃত্যু পরোয়ানায় সই করায়। কিছু সিনেমা হল বাঁচানোর থেকে পুরো চলচিত্র শিল্প বাঁচানো অনেক দরকারী। চলচিত্র শিল্পের মান উন্নয়ন করা গেলে সিনেমা হল আপনিই বেঁচে উঠবে।
@আদিল মাহমুদ,
আগ্রাসনকে ঠেকাতে গেলে এগ্রেসিভ হতে হবে। একসময় উর্দু ভাষা বাংলা ভাষাকে জবর দখল করতে চেয়েছিল, আর এখন শুরু হয়েছে হিন্দি ভাষার অত্যাচার।
পানি জীবন রক্ষা করে, আবার পানিতে ডুবে মানুষের মরনও হয়। অন্য সংস্কৃতির ব্যাপারে উদারমনা হতে যেয়ে যখন অপ-সংস্কৃতি একটি জাতিকে গ্রাস করতে উদ্যত হয় তখন তাকে যে কোন প্রকারে ঠেকানোই বুদ্বিমানের কাজ বলে আমি মনে করি।
@আকাশ মালিক,
সহমত।
@ফরিদ আহমেদ,
বাংলাদেশের নাটকের বেলায়, “দুগ্ধপোষ্য শিশুমাত্র” কথাটি দারুণ যায়, গুরু!
পশ্চিম বঙ্গের সেই সোনাঝড়া দিনগুলো আর নেই। কিন্তু গলাবাজি ঠিকই আছে। শিলিগুড়িতে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলাম, সাহায্য চাইলে একদাদা জ্ঞান দিলেন, “আপনি জানেন, আমেরিকার চেয়ে ভারতের অবস্থা অনেক ভাল?” আমি সাহস নিয়ে বললাম, “এই ধারণাটুকু নিয়ে শান্তিতে থাকুন, দাদা।”
ভারতকে আরো মুক্তমনা হতে হবে। ওরা যদি ক্ষতির কথা ভেবে বাংলা চ্যানেল অনুমতি না দেয়, তাহলে আমরা কেন দেব । কলকাতা খুব বড় বড় করে বলে দুই বাংলার শিল্প সংস্কৃতি নাকি তাদের প্রাণ। এপার বাংলাকে তারা নাকি খুব অনুভব করে। যত সব ভন্ডের দল। নিজেদের টিভি অপারেটররা লোকসানের সম্মুখিন হবে ভেবে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল গুলোর কিছুতেই অনুমতি দিলো না।
বাংলাদেশে সিনেমা চললে মুনাফা তো তারাই পাবে। ইতোমধ্যে, ভারতের ফাল্টু-বস্তাপচা টিভি সিরিয়ালগুলো এদেশের পরিবেশ নষ্ট করে দিয়েছে।
আর সিনেমার মানের কথা যদি বলতে হয়
এদেশে এখনো অনেক ভালো ছবি তৈরী হচ্ছে। ভারতের ৯০/ঃ হিন্দি সিনেমা ফাল্টু মানের। ৩০% হলিউডের নকল আর বাংলা সিনেমার মান তো ক্রমেই নিচে নামছে।
@মোজাফফর,
এই অভিযোগ অন্য একজন লেখক ও করেছেন। প্রমাণ দিচ্ছেন না ত। আমি নিজে এ টি এন বাংলা কিন্ত কোলকাতাতে দেখেছি। হয়ত সব কেবল দেখায় না-কিছু কিছু কেবল দেখায়। কিন্ত কোন সরকারি নিষেধাজ্ঞা নেই। আপনারা আবেগ ছেড়ে যুক্তিনিষ্ঠ কথাবার্ত্তা বললে ভাল হয়।
@বিপ্লব পাল,
বাংলাদেশে যেমন যে কোন কেবল কোম্পানির সংযোগ নিলেই তার সংগে কমপক্ষে ৪/৫ টি হিন্দি চ্যানেল বাধ্যতামুলকভাবে যুক্ত হবে।
আপনার কথায় ধারনা করতে পারি আপনি যেহেতু এ টি এন দেখেছেন, ভারতে বাংলাদেশের কোন চ্যানেল দেখতে হলে কোন বিশেষ বা নির্দিস্ট চ্যানেল কোম্পানির সংযোগ নিতে হবে অথবা আপনি যদি কোন পার্টিকুলার বাংলাদেশের চ্যানেল দেখতে চান তাহলে সেটার ব্যবস্থা সেই কোম্পানি করে দিতে পারেন।
কিন্তু ভারতে সাধারন জনগনের জন্য যেসব কেবল কোম্পানি সেখানে বাধ্যতামুলকভাবে বাংলাদেশের চ্যানেল নেওয়ার কোন অবকাশ ভারতে আছে কি? আপনি ভালো বলতে পারবেন।
@বিপ্লব পাল,
এখানে কোথায় কে অযৌক্তিক কথা বলছে আমি বুঝতে পারছি না। সোজা কথা বলা হচ্ছে। যেখানে বাংলাদেশের কোন চ্যানেল আপনাদের মহান ভারতে ঢুকতে পারছে না সেখানে বাংলাদেশিরা যদি কোন কঠোর সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে কি সেটা খুব বেশি অযৌক্তিক হবে?
আপনি বার বারই এটিএন বাংলার কথা বলছেন, যেমন আমাদের দেশে একটাই মাত্র চ্যানেল রয়েছে।
আপনি দেখছেন শুধুমাত্র এটিএন বাংলা। আর আমি আমাদের দেশের টিভি খুললেই দেখি সব আপনাদের বস্তা পচা চ্যানেল।
আপনি কয়টা ভাল চলচ্চিত্রের কথা উল্লেখ করতে পেরেছেন? হাতে গোনা দুচারটা। ঐ রকম দুচারটে ভাল বাংলা ছবি আমাদের এখানেও হয়। তাহলে আমাদের আর আপনাদের ভারতীয় চলচ্চিত্রে পার্থক্য থাকল কোথায়?
বলিউডে কয়টা ছবি মৌলিক কাহিনী বলতে পারেন? সব গুলা চোরামির নিকৃষ্ট উদাহরন। এখন এত সব ফালতু বৈশিষ্ট মন্ডিত কিছু যদি বাংলাদেশ সরকার আমাদের দেশে ঢুকতে দিতে না চায় আমি সেখানে কোন দোষ দেখি না।
আপনাদের দেশটা পশ্চিমা সংস্কৃতির আগ্রাসনে যেভাবে নিজেদের সংস্কৃতিটাকে লাটে উঠিয়েছে সেটা যদি আমাদের দেশের সরকার করতে না চায় তাহলেই দোষ?
আর একটা কথা, আমি জানি না আপনি আমাদের চলচ্চিত্রের নায়ক রাজ বলা হয় যাকে সেই রাজ্জাকের নাম ইচ্ছা করে নাকি ভুল করে বিকৃত করে উচ্চারন করেছেন। যদি অনিচ্ছাকৃত ভুল হয় তাহলে আলাদা কথা কিন্তু যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে করে থাকেন তাহলে আপনার এই অসভ্যতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা দাবি করছি। আমাদের দেশের ভাল মন্দ আমাদের ভাবতে দিন। পারলে গঠন মুলক সমালোচনা করবেন নইলে নয়। আপনাদের হাতে গোনা গুটি কয়েক চ্যানেল বাদে প্রত্যেকটি চ্যানেলে যে অসভ্যতা দেখান হয় তার কথা আপনাকে কে কবে বলতে গেছে?
@সাইফুল ইসলাম,
যেখানে বাংলাদেশের কোন চ্যানেল আপনাদের মহান ভারতে ঢুকতে
>>
ভারতীয় সরকারের সেরকম কোন সার্কুলার বা আইন আপনি দেখাতে পারবেন কি? না দেখাতে পারলে এটা শ্রেফ রটনা হচ্ছে। হতেই পারে চলেনা বলে এ টিন বাংলা ছাড়া অন্য কোন চ্যানেল চলে না। কিন্ত সেটা ত আইন করে আটকানো হয় নি। আপনি ত বিষয়টার ভেতরে না ঢুকে আবেগের বশে বলেই চলেছেন।
>> আমি বহুদিন ভারতের বাইরে। দেশে গেলে দেখেছি এ টিন বাংলা আমার বাড়ির চ্যানেলে আছে। বাকী কি আছে আমি জানি না। তবে এটাতে সন্দেহ নেই আইন করে কিছুই আটকানো হয় নি। হয়ত মার্কেট নেই বলে চলে না। সেদুটোকে এক করে দিলে কি করে হবে।
>>
আমি আরো একশোটা ভাল ছবি উল্লেখ করতে পারতাম। আপনার শেষের কথাটি খুব অপরিণত।
বলিউডে কয়টা ছবি মৌলিক কাহিনী বলতে পারেন? সব গুলা চোরামির নিকৃষ্ট উদাহরন। এখন এত সব ফালতু বৈশিষ্ট মন্ডিত কিছু যদি বাংলাদেশ সরকার আমাদের দেশে ঢুকতে দিতে না চায় আমি সেখানে কোন দোষ দেখি না।
>>
মৌলিক ছবি ব্যাপারটা কি? গুরুদেবের চিত্রাঙ্গদাও ফরাসী নাটকের অণুপ্রেরণাতে তৈরী। মোদ্দা কথা, ওরা ভাল কিছু করতে পেরেছে কি না। কিছু পরিচালক নকল করে-কিন্ত আমীর খান বা রাম গোপাল ভার্মারা করে না। আপনার এই বক্তব্যও নেহাতই আবেগতাড়িত। তথ্যভিত্তিক না।
সংস্কৃতি স্থবির না। তা নদীর মতন প্রবাহমান। বলিউড নিজের নাচাগানা দিয়েই বিশ্ব জয় করেছে। চীনে এবং জাপানে বলিউড হলিউডের চেয়ে বেশী জনপ্রিয়। এবং তা আমাদের সংস্কৃতি দিয়েই সম্ভব হয়েছে। আর প্রশ্নটা আমি সরকারকে করি নি। আমার লেখা না পড়ে, আপনি অহেতুক বকে চলেছেন। ভাল করে আগে পড়েনিন।
রাজ্জাককে রজ্জাক লিখেছিলাম। আরবী নাম। আরবী নিখুঁত ভাবে জানাটা আপনাদের কাছে গর্বের-আমার কাছে নাও হতে পারে-কারন সেটা আমদের মূল না। তবে ভুলটা নেহাতই অনিচ্ছিকৃত।
আমার আলোচনার মধ্যে ধ্বংশাত্বক কি দেখলেন? আমি ত বিশ্বায়নের সপক্ষে বলছি! আর সভ্যতার ঠিকেদারিই বা আপনাকে কে নিতে বলল? আমাদের কাছে সভ্যতা অন্যদের কাছে তা অসভ্যতা হতেই পারে। আপনার কাছে তা অসভ্য লাগছে-তাতে আমার আপত্তি নেই। কিন্ত নিজের সাংস্কৃতিক পছন্দকে জোর করে চাপানো যায় না। সেগুলো মোল্লাগিরি-যা ভারতের শিবসেনা বা আপনাদের জামাত করে থাকে।
বাংলাদেশে যদি ভারতীয় সিনেমা চলে তবে ভারতেও বাংলাদেশের সিনেমা চালাবার ব্যবস্থা থাকতে হবে, তা হলে বাংলাদেশের সিনেমা শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হবেনা বলে আমি মনে করি।
@ব্রাইট স্মাইল্,
সেটাত আছেই। ভারতে কোন আন্তর্জাতিক সিনেমা নিশিদ্ধ না।
@বিপ্লব পাল,
তাহলে বাংলাদেশে যদি ভারতীয় সিনেমা চলে তা হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের… বাংলায় সত্যজিত রায়ের সিনেমাগুলোর মতো, হিন্দিতে থ্রি ইডিয়ট, ব্ল্যাক ইত্যাদির মতো। মান নির্ধারন না করে ভারতীয় সিনেমা বাংলাদেশে চলতে দিলে বাংলাদেশের আজেবাজে সিনেমাগুলোর সাথে ভারতের কিছু বস্তাপচা ছবি যোগ হয়ে বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পের আরো বারোটা বাজবে।
@ব্রাইট স্মাইল্,
ভাল সিনেমা না হলে হলগুলোই নেবে না। তবে বাংলাদেশের রজ্জাক মার্কা সিনেমাগুলো ভারতের গ্রামের দিকে ভিডিও হলে চলে।
@বিপ্লব পাল,
ওটা রাজ্জাক হবে!
আর আমাদের নাম গুলোতো বাংলায়, এগুলোত এতভূল হয় কেন ওপারের বাঙালিদের।
গত টার্মের সময় প্রধানমন্ত্রিকে মূখ্যমন্ত্রি বলা হয়েছিল কলকাতায়।
@লাইজু নাহার,
“আর আমাদের নাম গুলোতো বাংলায়, এগুলোত এতভূল হয় কেন ওপারের বাঙালিদের।
গত টার্মের সময় প্রধানমন্ত্রিকে মূখ্যমন্ত্রি বলা হয়েছিল কলকাতায়। “
আপনার কথার রেশ টেনে বলছি ,ভারতীয়দের একটা বিশেষ দোষ বলবো না গুন বলবো জানিনা,
এনাদের মাঝে নিজেদের ভুল স্বীকার করার প্রবণতা কম। বাংলাদেশীরা যেমন অম্লাণ বদনে নিজের ভুলগুলো স্বীকার করে নেন ।এনারা বোধকরি তাতে লজ্জ্বা পান ।
@আফরোজা আলম,
আপনার কথার সুত্র ধরেই বলছি, ভারত একটি বিশাল দেশ, তাই এদের একটু এটিচিউড প্রবলেম আছে, অর্থাত সুপেরিওরিটি কমপ্লেক্স বিশেষ করে বাংলাদেশিদের সামনে। কাজেই দুই অসম দেশের প্রতিযোগিতামুলক ব্যাপার সবসময় সুখপ্রদ নাও হতে পারে।
আপনার যুক্তি অকাট্য। কিন্ত দাদা, ভারতের সমস্ত টেলিভিশন চ্যানেলই বাংলাদেশে চলে কিন্ত বাংলাদেশী কোন চ্যানেল আপনারা না দেখানোর কারণটা বলবেন?
@হেলাল, এটিএন বাংলা ভালোই চলত ত দেখেছি। এখন কি অবস্থা জানি না।
@বিপ্লব পাল,
আপনার জবাবটা হয়েছে অনেকটা হোক না হোক কিছু একটা বলেছি তো, এরকম।
ভারতের বস্তা পচা চ্যানেল গুলো যেভাবে আমাদের দেশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে কবে না জানি দেশ ছাড়তে হয়।
তবে বিপ্লবদা, আমি যেকোন ধরনের নিষিদ্ধ করনের বিরুদ্ধে।( কিছু ব্যাপার ছাড়া)।
বাংলাদেশের সিনেমা প্রডিউসাররা হাম্বা হাম্বা রব ডাকা ছাড়া আর কিছু জানে বলেই তো মনে হয় না। আমি সিনেমা খুব কম দেখি, তারপরেও জোড় দিয়েই বলতে পারি বাংলাদেশের আর ভারতের সিনেমার মধ্যে কোন মৌলিক পার্থক্য নেই। ঐ সেই একই কাহিনী, একই ঢঙ্গের গান। একই তো।
@সাইফুল ইসলাম,
হিন্দি সিনেমার মান আস্তে আস্তে উন্নত হয়েছে। থ্রি ইডিয়ট, ব্ল্যাক এগুলোত দারুন সিনেমা। ৯০% সিনেমা অখাদ্য নিশ্চয়।সেটা হলিউডের জন্যেও সত্য।
ভাল সিনেমা খুব কম তৈরী হয়। মাটির ময়নার মতন সিনেমা দশকে একটাই তৈরী হবে।
@বিপ্লব পাল,
আমার জানামতে কোন বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল ভারতে প্রবেশ করতে পারছেনা।
অথচ বাংলাদেশের হাউস ওয়াইফরা হিন্দি সিরিয়ালগুলোত রীতিমত আসক্ত।
বাচ্চারা ইতিমধ্যে হিন্দিতে বাতচিত করা শুরু করে দিয়েছে!
এজন্য কি ভাষা শহীদেরা বুকের রক্তে রাজপথ ভিজিয়েছে!
আমরা পশ্চিমবঙ্গের সব বাঙালি লেখকদের বই বাংলাদেশে পাই।
আমাদের বই ওপারে যেতে পারেনা।
পণ্য আটকিয়ে দেয়া হয়!
তা সবকিছু সমতার ভিত্তিতেই হওয়া উচিত।
ধন্যবাদ!
@লাইজু নাহার,
আমরা পশ্চিমবঙ্গের সব বাঙালি লেখকদের বই বাংলাদেশে পাই।
আমাদের বই ওপারে যেতে পারেনা।
>> আপনার সপক্ষে কোন তথ্য আছে? আমি যদ্দুর জানি কোন বাধা নিষেধ নাই। অনেক বাংলাদেশী বই পাওয়া যায়। কিন্ত দাম বেশী একটা ফ্যাক্টর।
পণ্য আটকিয়ে দেয়া হয়!
>> তথ্য???
তা সবকিছু সমতার ভিত্তিতেই হওয়া উচিত।
>>
সেত অবশ্যই-কিন্ত সেটা ত আবেগে হবে না।