[মোটামুটি খেয়ালবশেই সেলফিশ জীন বইটার অনুবাদ করার ইচ্ছা হলো। শুরু করার পরে অনেকের উৎসাহে হয়তো কাজটা শেষ করতে পারবো। মুক্ত-মনার পাঠকদের জন্যে এর প্রথম পর্বটি নিবেদন করছি। বিবর্তনের ব্যাপারে, অনুবাদের ব্যাপারে যে কোনধরণের মতামত জানালে ভীষণ খুশি হবো। রিচার্ড ডকিন্সের প্রবল যুক্তিঘেঁষা আলোচনার পদ্ধতি আমার ভীষণ প্রিয়। বিবর্তন নিয়ে অনেক কু-ধারণা, কু-মত, আমাদের মাঝে বিরাজ করে। সেটা কি অজ্ঞতাবশত নাকি ভয়বশত তা আমি জানি না। ডকিন্স অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘Public Understanding of Science’ বিভাগের একজন প্রফেসর। তাঁর এই বইটি ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিলো। ]
প্রথম অধ্যায়ঃ মানুষ কেন?
একটি গ্রহে বুদ্ধিমান জীব পূর্ণতা পায় যখন তারা নিজেদের অস্তিত্বের কারণ খুঁজে বের করতে পারে। যদি বাইরের জগত থেকে কোন অতি বুদ্ধিমান প্রাণি পৃথিবীত আসতো, তাহলে তারা প্রথম যে প্রশ্নটি করতো সেটা হলো, ‘এই প্রাণিরা কি এখনো বিবর্তন আবিষ্কার করেছে?’ পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তির প্রায় তিন হাজার মিলিয়ন বছর পর্যন্ত একজন ছাড়া এই সত্য আর কারো কাছে উন্মোচিত হয়নি। সেই একজনের নাম চার্লস ডারউইন। সত্যি বলতে কি, অনেকেই এই সত্যের খুব কাছাকাছি ধারণা করেছেন, কিন্তু ডারউইনই প্রথম আমাদের অস্তিত্বের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য এবং অকাট্য ধারণা দিতে পেরেছেন। এই অধ্যায়ের শিরোনামে যেই শিশুর মতো অবুঝ প্রশ্নটা তার খুব যুক্তিপূর্ণ উত্তর আমরা যাতে দিতে পারি সেই সুযোগ ডারউইন করে দিয়েছেন। জীবনের নানা গভীর অনুসন্ধান, যেমনঃ এই জীবনের কোন অর্থ আছে কী না? আমরা কেন এই পৃথিবীতে এসেছি? মানুষ কী? এগুলোর উত্তর জানতে আমাদের আর অলৌকিকতার কাছে আত্মসমর্পণের দরকার নেই। শেষবার এই ধরনের প্রশ্নগুলো নিয়ে কথা বলতে গিয়ে খ্যাতনামা প্রাণিবিজ্ঞানী G. G. Simpson বলেছেন,
আমি যা বলতে চাই তা হলো ১৮৫৯ সালের আগে এইসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সকল প্রচেষ্টা এখন মূল্যহীন, এবং আমরা সেগুলো পুরোপুরি উপেক্ষা করলেই ভালো থাকবো।
আজ বিবর্তনতত্ত্ব ততোটাই নিঃসংশয়, যতোটা পৃথিবীর সূর্যকেন্দ্রিক ঘূর্ণনতত্ত্ব; যদিও ডারউইনের বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের পুরো প্রভাব বিচার করা এখনো সম্ভব হয়নি। প্রাণিবিদ্যা এখনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটা গৌণ বিষয়, এমনকি যারা এটি নিয়ে পড়াশোনা করছেন তাদের অনেকেই এর প্রগাঢ় দার্শনিক গুরুত্ব না বুঝেই বিভিন্ন সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছেন। দর্শন এবং ‘মানবিক’ বিভাগের বেশিরভাগ বিষয়ই এমনভাবে পড়ানো হয় যেন ডারউইন নামে কেউ ছিলেনই না! আমার কোন সন্দেহ নেই যে এটা বদলে যাবে। যা হোক, এই বইটি ডারউইনবাদের ওকালতি করতে লেখা হয়নি। বরঞ্চ এটি বিবর্তনতত্ত্বের একটি বিশেষ দিকের প্রভাব ও ফলাফল আলোচনা করবে। স্বার্থপরতা ও পরার্থবাদের জৈবনিক উদ্দেশ্য ঘেঁটে দেখাই আমার উদ্দেশ্য।
গবেষণাগত গুরুত্বের পাশাপাশি এই বিষয়ের মানবিক গুরুত্বও অনুমেয়। এই বিষয়টি আমাদের সামাজিক জীবনের সবগুলো দিককে স্পর্শ করে, আমাদের ভালোবাসা আর ঘৃণা, কলহ আর সহযোগিতা, দাতব্যতা আর চৌর্যতা, আমাদের লোভ এবং উদারতা। এই আলোচনার দাবি আরো কয়েকটি বই করতে পারে, Lorenz এর On Aggression, Ardrey এর The Social Contract, এবং Eibl-Eibesfeldt এর Love and Hate সেগুলোর মাঝে উল্লেখ্য। তবে বইগুলোর সমস্যা হলো এগুলোর লেখকেরা বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে ভুল বুঝেছেন। তাদের ভুল করার কারণ তারা বিবর্তনের মূল প্রক্রিয়াটিকে বুঝতে পারেননি। তারা সকলেই বিবর্তনের ব্যাপারে একটা ভ্রান্ত অনুমান করেছেন যে প্রজাতির (বা দলের) ভালো দিকগুলো, একক প্রাণির (বা তার জীনের) ভাল দিকের চাইতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। পরিহাসের বিষয় হলো Ashley Montagu লরেঞ্জের সমালোচনা করতে গিয়ে তাকে ‘উনবিংশ শতকের “Nature red in tooth and claw” চিন্তাবিদদের সরাসরি বংশধর’ হিসেবে তুলনা করেছেন। অথচ লরেঞ্জের বিবর্তন বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি আমি যতোটা বুঝতে পারি, তিনি Tennyson-এর এই বিখ্যাত পঙক্তিটির বিরোধিতায় মন্টেগুর সাথেই একমত হবেন। তাদের দুজনের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আমি বলতে চাই “Nature red in tooth and claw” পঙক্তিটি দিয়েই প্রাকৃতিক নির্বাচনের আধুনিক ধারণাটি সহজে বোঝা যায়।
আমার যুক্তিগুলো দেয়ার আগে আমি সংক্ষেপে এই যুক্তি কী ধরনের এবং কী ধরনের নয় সেটা বলতে চাই। আমাদের যদি কেউ বলে যে একজন মানুষ শিকাগোর গ্যাংস্টারদের মাঝে সারাজীবন কাটিয়েছে, তাহলে সে কেমন মানুষ ছিলো সেই ব্যাপারে আমরা কিছু কিছু অনুমান করতেই পারি। আমরা আশা করতে পারি যে তার মধ্যে শক্তিমত্তা, ক্ষিপ্র ট্রিগার আঙ্গুল আর অনুগত বন্ধুদের প্রতি বাৎসল্যের মতো গুণাবলি থাকবে। এগুলো একেবারে বাঁধাধরা নিখুঁত পর্যবেক্ষণ না, তবে যদি কোন মানুষের টিঁকে থাকা ও সাফল্যের পরিবেশ সম্বন্ধে আমাদের জানা থাকে, তাহলে তার চরিত্রের ব্যাপারে আমরা একটি মতামতে উপনীত হতে পারি। এই বইয়ের বক্তব্য হলো আমরা এবং সকল প্রাণিরা কেবলমাত্র আমাদের জীনের তৈরি এক ধরনের যন্ত্র। সফল শিকাগোর গ্যাংস্টারদের মতোই আমাদের জীনগুলো এই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভরা পৃথিবীতে টিঁকে আছে, কখনো কখনো প্রায় মিলিয়ন বছর ধরে। এই তথ্য আমাদের জীনগুলোর ব্যাপারে কিছু সিদ্ধান্তে আসার সুযোগ দেয়। আমি দাবি করি যে একটি সফল জীনের মধ্যে এই একরোখা স্বার্থপরতাই মূল চালিকাশক্তি। জীনের এই স্বার্থপর আচরণই ব্যক্তির আচরণে স্বার্থপরতার জন্ম দেয়। তবে, কিছু বিশেষক্ষেত্রে দেখা যায় যে কোন জীন তার নিজের স্বার্থপর উদ্দেশ্য ভালোভাবে আদায় করতে পারে যদি সেটা একক ব্যক্তিপর্যায়ে কিছুটা সীমিত উদারতা দেখায়। ‘বিশেষ’ এবং ‘সীমিত’ শব্দ দুইটা এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। যতোই অস্বীকার করতে চাই না কেন, পুরো প্রজাতির সার্বজনীন ভালোবাসা আর পরোপকার বিষয়গুলো কোন বিবর্তনীয় অর্থ তৈরি করে না।
এর সাথে সাথেই চলে আসে যে এই বইটিতে আমি কী বলতে চাই না তার প্রথম কথাটি। আমি বিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে কোন নৈতিকতা প্রচার করছি না। আমি বলতে চাইছি সবকিছু কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে। আমি বলছি না মানুষ হিসেবে নৈতিকভাবে কেমন আচরণ করা উচিত। আমি এটা জোর দিয়ে বলছি কারণ আমি জানি আমি এমন অনেক মানুষের কাছে ভুলভাবে পঠিত হবো, যারা একটা বিষয়ের ব্যাপারে বক্তব্য এবং বিষয়টি কেমন হওয়া উচিত তার প্রচারণা, এই দুইয়ের মাঝে পার্থক্য করতে পারেন না। আমার নিজের বিশ্বাস, কোন সমাজ যদি কেবলমাত্র জীনের একরোখা স্বার্থপরতার সূত্রের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে তবে সেই সমাজ বসবাসের জন্যে খুবই অনুপযুক্ত, নোংরা। দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে আমরা যতোই সেটাতে বিশ্বাস করি না কেন, জীনের এই বৈশিষ্ট্য অস্বীকারের উপায় নেই। এই বইয়ের বক্তব্য আকর্ষণীয় হওয়ার কথা, তবে আপনি যদি এখান থেকে কোন নৈতিকতা বের করতে চান তবে সতর্ক হোন। আগেই সতর্ক করে দিচ্ছি, আপনি যদি এমন একটা সমাজ গড়ে তুলতে চান যেখানে প্রত্যেকে নিঃস্বার্থভাবে এবং উদারতার সাথে সকলের ভালোর জন্যে কাজ করে, ধরে নিতে পারেন আমাদের পশুবৃত্তি আপনাকে তেমন সাহায্য করবে না। আসুন, আমরা উদারতা ও নিঃস্বার্থতা শেখানোর চেষ্টা করি, যেহেতু আমরা জাত-স্বার্থপর। আগেই বুঝে নেয়া দরকার যে আমাদের স্বার্থপর জীন কী করতে যাচ্ছে, যাতে করে সেই নকশা ভেস্তে দেয়ার একটা সুযোগ আমরা পাবো, যা কোন প্রজাতির প্রাণি করার সাহস করেনি।
শিক্ষার এই বক্তব্যের পাশাপাশি এটা বলে রাখি, যে জীনগতভাবেই আমরা সব বংশগত বৈশিষ্ট্য পেয়ে থাকি এবং তা অপরিবর্তনীয়- এমন যুক্তি একটা খুব সাধারণ ফ্যালাসি। আমাদের জীন আমাদের স্বার্থপরতা শেখায়, তবে সেই শিক্ষা সারাজীবন মানতে আমরা কেউ বাধ্য নই। এমন হতে পারে যে এখন উদারতা শেখা যতোটা কঠিন, সেটা একটু সহজ হতো যদি জীনগতভাবেই তা শেখানো হতো। প্রাণিদের মাঝে একমাত্র মানুষই তার সংস্কৃতি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়, কিছু কিছু শিখে, কিছু কিছু দেখে। অনেকে হয়তো বলবেন, সংস্কৃতি এতোটাই জরুরি যে জীন স্বার্থপর হোক আর না হোক, তাতে কিছু যায় আসে না, মনুষ্যপ্রকৃতি বুঝতে জীনের গুরুত্ব মোটামুটি অপ্রাসঙ্গিক। আবার অন্যেরা এর সাথে দ্বিমত করবেন। আসলে মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ নির্ভর করে “প্রকৃতি বনাম শিক্ষা” বিতর্কে আপনি কোন পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন সেটার ওপরে। এই বইটি কী ধরনের নয় সেটার দ্বিতীয় পয়েন্টটা এরই সাথে চলে আসেঃ এই বইটি প্রকৃতি/শিক্ষা বিতর্কের যে কোন একটা পক্ষের সাফাই গাইবে না। স্বাভাবিকভাবেই এই বিষয়টায় আমার একটা মতামত আছে, তবে সেটা আমি এখানে প্রকাশ করতে চাই না, তবে শেষ অধ্যায়ে সংস্কৃতির ব্যাপারে আমার দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যাবে। যদি জীনগত বৈশিষ্ট্য আমাদের আচরণে কোনই প্রভাব না ফেলে, যদি আমরা বাকি সব প্রজাতির প্রাণিদের থেকে এতোটাই আলাদা হয়ে থাকি, তবে সেই ব্যতিক্রম আমরা কেন হয়ে উঠলাম সেই গবেষণাও খুব আকর্ষণীয় হবে। আর যদি আমরা প্রাণিজগত থেকে যতোটা আলাদা ভাবি ততোটা আলাদা না হয়ে থাকি, তাহলে এই নিয়মের অধ্যয়ন খুবই জরুরি।
এই বইটি কী ধরনের নয় তার তৃতীয়টি হলো এটি মানুষ বা অন্য কোন প্রজাতির আচরণের বিস্তারিত বিবরণ নয়। কেবল প্রাসঙ্গিক উদাহরণ হিসেবেই আমি কিছু কিছু তথ্য নিবেদন করবো। আমি কখনই বলবো নাঃ “আপনি যদি বেবুনের আচরণ পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে দেখবেন যে তারা স্বার্থপর; সুতরাং মানুষের আচরণও স্বার্থপর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে”। আমার ‘শিকাগোর গ্যাংস্টার’ নিয়ে উদাহরণের পেছনে যুক্তিটা এর থেকে আলাদা। সেটা এরকম- মানুষ এবং বেবুন প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা বিবর্তিত হয়েছে। যদি আপনি প্রাকৃতিক নির্বাচনের পদ্ধতির দিকে তাকান, তাহলে মনে হবে যে এর দ্বারা বিবর্তির যেকোন প্রজাতিই স্বার্থপর হবার কথা। সুতরাং যে কোন প্রজাতির, তা সে মানুষ বা বেবুন বা অন্য কোন প্রজাতির বৈশিষ্ট্য খুঁজতে গেলে আমরা ধরে নিতে পারি যে তা স্বার্থপর হবে। যদি আমরা সত্যিই খুঁজে পাই যে অনুমানটা ভুল, যদি সত্যিই মানুষের আচরণ পুরোপুরি উদার, তাহলে আমরা বিভ্রান্তিকর কিছু একটা পাবো, এমন কিছু যার ব্যাখ্যা আমাদের বের করতে হবে।
(চলবে)
*******
– অনীক আন্দালিব
সেলফিশ জিন তত্বে বহু ভুল আছে. বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা এই ভুল খুঁজে পেয়েছেন. এদের মধ্যে একজন হলেন ডাক্তার বার য়াম . তার বক্তব্য দেওয়া হলো.:
আরো বিরোধ:
কিছুদিন আগে বইটা পড়তে শুরু করেছিলাম, প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে, এবং অবধারিতভাবে ইংরেজি ভার্সনটিই! কিন্তু এক পৃষ্ঠা পড়তে গিয়ে দশবার ডিকশনারির পাতা উল্টানোর জ্বালায় বেশিদূর এগুতে পারিনি! এটার বাংলা অনুবাদ হচ্ছে দেখে যে কী খুশি লাগছে বোঝাতে পারব না! মনে হচ্ছে আরো কিছুদিন আগে কেন হল না! অধীর আগ্রহে সম্পূর্ণ অনুবাদের অপেক্ষা করছি। লেখককে অনেক ধন্যবাদ উদ্যোগটি নেয়ার জন্য। অনেক অনেক শুভকামনা।
অনুবাদক কে আমার পক্ষ থেকে অনেক অভিনন্দন। আমরা মুক্তমনা সদস্যরা যতবার ই আলোচনায় বসেছি ততবার ই সেলফিশ জিন অনুবাদের আলাপ্টা উঠেছে। শিক্ষানবিস বোধহয় কয়েকপাতা করেছিলেন। আসলে এই অনুবাদটা যে কত জরুরি কাজ ছিল সেটা আপনার অনুবাদটা পড়ে আবার মনে পড়ে গেল। গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ অনুবাদের দায়িত্বে আমিও আছি। পরিভাষা নিয়ে আপনার মত আমিও বিরাট ঝামেলায় ছিলাম। এখন বেশ কয়েকটা ভাল অভিধান আর শব্দকোষ সংগ্রহ করেছি। এছাড়া বিবর্তন বিষয়ে পরিভাষাসমূহের একটা তালিকাও করেছি। আপনার প্রয়োজন হলে আনন্দের সাথেই শেয়ার করব। ডকিন্সকে যেমন ডারউইন মৌলবাদী বলেন কেউ কেউ তেমনি আমাকেও ডকিন্স মৌলবাদী বললে ভুল বলা হবে না। গড ডিল্যুশন পড়ার অভিজ্ঞতাটা জীবনে ভুলব না। আপনি ডকিন্সের বই অনুবাদ করছেন দেখে খুব ভাল লাগল। মেমেটিক্স নিয়ে আরো কয়েকটা ভাল ইবুক আছে। প্রয়োজনে মেইলে শেয়ার করব আনন্দের সাথেই। আমার মেইল [email protected]
অন্য ব্লগে ছাপানো পোস্ট মুক্তমনায় ছাপানো, অথবা মুক্তমনায় ছাপানো পোস্ট অন্যত্র ছাপানোকে আমরা নিরুৎসাহিত করি। যেহেতু এই লেখাটি অন্য একটি ব্লগেও প্রকাশিত হচ্ছে, সেক্ষেত্রে ব্লগ কর্তৃপক্ষ চাইলে পোস্টটি ব্লগ থেকে মুছে দিতে পারেন কিংবা প্রথম পাতা থেকে লেখকের নিজস্ব পাতায় সরিয়ে দিতে পারেন। (মুক্তমনা নীতিমালা ২.১৬ দ্রঃ)। তবে বিষয়বস্তুর গুরুত্ব বিবেচনায় এবং নতুন সদস্যের লেখা হিসেবে আমরা এই লেখাটিকে ব্যতিক্রম হিসেবে রাখছি। তবে, লেখকের কাছে অনুরোধ করা হচ্ছে যে, অন্য পর্বগুলো যেন আগে মুক্তমনায় দেওয়া হয়, কিংবা অন্ততঃ একই সাথে দেওয়া হয়। অন্য ব্লগে প্রকাশের কয়েকদিন পরে মুক্তমনায় লেখা দিলে সেটা মুক্তমনার জন্য আলাদাভাবে কোন আকর্ষণ সৃষ্টি করে না।
মুক্তমনায় লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
@মুক্তমনা এডমিন, ধন্যবাদ আপনাকে। নীতিমালার ব্যাপারে ঠিকমত জানা ছিলো না।
অনুবাদের ব্যাপারে একটা পয়েন্ট চোখে পড়লোঃ ৬.৪
এই বইয়ের অনুবাদ এবং তার বেশিরভাগ জরুরি অংশই আমি মুক্তমনায় লিখবো বলে ঠিক করেছি। (বইটির প্রতি সুবিচারের উদ্দেশ্যেই আমার মনে হয়েছে এই অনুবাদটি মুক্তমনার সকলের সহযোগিতা পেলে সঠিকভাবে করা সম্ভব)। এক্ষেত্রে অনুমতি বা কপিরাইটের কোন সমস্যা হতে পারে কি?
@আন্দালিব, ছোট্ট দুএকটা বিষয়ে আমার মতামত জানাচ্ছি, ব্যক্তিগত মতামত হিসেবেই এগুলো উল্লেখ করছি আশা করি কিছু মনে করবেন না।
আপনি ঠিকই বলেছেন, ডকিন্সের লেখা যতখানি পড়তে ভালো লাগে ততখানিই জটিল। যৌগিক শব্দগুলো আমরা ইংলিশের চেয়ে একটু অন্যভাবে ব্যবহার করি। এ ব্যাপারটা অনুবাদের ক্ষেত্রে প্রায়ই বেশ ঝামেলা করে। একটা উদাহরণ দেই,
এধরণের লাইনগুলোর কি একটু অন্যভাবে বললে ভালো লাগবে? যেমন ধরেন এখানে যদি বলেন যে,
আমি ‘বিবর্তনের পথ ধরে’ বইটা লেখার সময় পরিভাষা নিয়ে খুবই ঝামেলায় পড়েছি। আমার প্রায়ই মনে হয় যে বাংলায় যেহেতু তেমন বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয় না এবং যতুটুকুও বা হয় তার রিসার্চ পেপারগুলো বাংলা ভাষায় বের হয় না, তাই আমাদের বিজ্ঞান সংক্রান্ত পরিভাষাগুলোও ডেভেলপ করে না। আখতারুজ্জামানের বিবর্তনবিদ্যা বইটা পড়তে একটু খটমটে হলেও পরিভাষার ক্ষেত্রে খুবই সহযোগীতা করেছে আমাকে।
বেশ কয়েকটা বানান ভুল আছে, ঠিক করে দিবেন নাকি? ‘প্রানি’ বানানটা ‘প্রাণী’ হবে, এরকম মনে হয় আরও কয়েকটা বানান (ই কার এবং ঈ কার সংক্রান্ত) ভুল আছে।
আর কপিরাইট এর ব্যাপারে, আমার মনে হয় বেশ কয়েকটা অধ্যায় পর্যন্ত সমস্যা হবে না। কিন্তু আপনি যদি কাজটা এগিয়ে নিতে পারেন এবং আসলেই বইটা প্রকাশ করার কথা চিন্তা করেন তাহলে এক সময় সেলফিশ জিনের প্রকাশকের সাথে যোগাযোগ করে তাদের মতামত জানতে চাওয়াটাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম…
প্রথমেই অনেক অনেক ধন্যবাদ আন্দালিব ভাই। কাজটা চালিয়ে যান। এভাবে একে একে আধুনিক বিজ্ঞান জগতটাকে যদি বাংলায় তুলে ধরা যায় সঠিকভাবে তাহলে অন্ধকার দূর হতে নিশ্চয়ই সময় লাগবে না। ডকিন্সের এই অনুবাদের পাশাপাশি গড ডিল্যুশন এর অনুবাদ গুরুত্বপূর্ণ যেটা শুনেছি অলরেডি হচ্ছে। গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ তো হচ্ছেই। আর কিছু মৌলিক বইও লেখা হচ্ছে। ব্লগ জগতকে কেন্দ্র করে খুব এফিশিয়েন্ট একটা বিজ্ঞান লেখক কম্যুনিটি গড়ে উঠতে পারে এভাবেই।
@শিক্ষানবিস, হ্যাঁ তোমাকেও তো অনেক অনেক ধন্যবাদ হে! না ঠেলা খেলে আমিও এভাবে শুরু করতাম না, শুরু করার সাহসও করতাম না। আশা করি শেষ করে নিজেকে খুশি করতে পারবো (আসলে সব কাজই তো নিজেকে খুশি করতেই করা!)।
তোমার সাহায্য মনে হচ্ছে মাঝে মাঝেই লাগবে। খোঁচালে বিরক্ত হইও না। বিজ্ঞানের প্রসারের কথা চিন্তা করে হলেও সাথে থেকো। (হা হা)
আমারও মনে হয় যতই কূপমণ্ডুকের সংখ্যা বাড়ছে, সেই হারে বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। যোগাযোগ থাকলে একটা সময়ে খুব জরুরি একটা সংঘও গড়ে উঠবে বলে আমার ধারণা।
আন্দালিব;
আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি এই একটি দ্ুরূহপূর্ণ কাজে হাত দেবার জন্য। অনুবাদ করা খুবই শক্ত কাজ। কারন ঘুধুমাত্র উভয় ভাষাতেই দারুন পারদর্শীতাই ন্য়, বিষয়টির উপরও প্রগাঢ় জ্ঞান থাকতে হবে।
কয়েক বছর আগে আমি ডকিন্সের ‘গড ডিলুসন’ বইটি পড়েছিলান। এই বইটার এতই প্রশংসা শুনেছি যে আমি নিরবিচ্ছিন্নতার সাথে বইটা শেষ করি। সত্যি বলতে কি আমি বোধ করি ৫০ ভাগই বুঝিনি অথবা কনফিউসড। যাই হোক এই ধরণের বই প্রাঞ্জল বাংলায় অনুবাদ করা সত্যিই অত্যান্ত কষ্টকর।
তাই বলছি আপনি যে কাজে হাত দিয়েছেন, খুব কমই বাংলা ভাষার লেখকরা তা করতে সাহস করবে।
দুইদিন আগে ডকিন্সের দ্যা গ্রেতেস্ট শো অন আর্থ বইটা কিনেছি। আমি যেই সম্বুক গতিতে পড়ি তাতে মনে হচ্ছে বইটি শেশ করতে প্রায় চার পাঁচ মাস লেগে যাবে। আপনি এই বইটার বাংলা অনুবাদের কথা চিন্তা করবেন কি?
@আবুল কাশেম,
গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ পড়া হয় নি, বইটাও আমার কাছে নেই। তবে রায়হান আবীরের কাছে শুনেছি এই বইয়ের অনুবাদ বেশ কয়েকজন মিলে শুরু করতে যাচ্ছেন (বা শুরু করেছেন)। আমি রিচার্ড ডকিন্সের কেবল ‘সেলফিশ জিন’ বইটাই পড়েছি, তাও অসমাপ্ত, এখনও পড়ছি।
আপনার কথা পড়ে আবার একটু ভয় ভয় লাগছে। যে সাহস দেখালাম, তা নির্বোধের সাহস নয় তো!
@আন্দালিব,
অনুগ্রহপূর্বক ভূল বুঝবেন না। আমি বলতে চাইলাম যে রিচার্ড ডকিন্সের মত উঁচদরের লেখা যাঁরা অনুবাদ করেন তাঁরাও উঁচুদরের অনুবাদক।
@ আন্দালিব, ধন্যবাদ আপনাকে এই কাজটাতে হাত দেওয়ার জন্য। বেশ কয়েক বছর আগে সেলফিশ জিন পড়েছিলাম, আপনার অনুবাদ পড়ে আবার সেটা বাংলায় ঝালিয়ে নেওয়া যাবে। আপনার অনুবাদের ভাষা খুবই ঝরঝরে, এক টানে পড়ে গেলাম।
এটা কি, “এই অধ্যায়ের শিরোনামে যেই শিশুর মতো অবুঝ প্রশ্নটা করা হয়েছে তার খুব যুক্তিপূর্ণ উত্তর দেওয়ার সুযোগ ডারউইন আমাদের করে দিয়েছেন।” বললে কি ভালো শোনাতো? ইংরেজী থেকে অনুবাদের সমইয় প্রায়ই, ‘যাতে’, ‘যা কিনা’ চলে আসে, আমার কাছে মনে হয় বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এগুলো পরিহার করলে লেখা আরও সুখপাঠ্য হয়। তবে এটা একান্তই আমার ব্যাক্তিগত মতামত, আপনাকে শুনতেই হবে এমন কোন কথা নেই।
অফ টপিক আরেকটা কথা, মুক্তমনায় তো বিবর্তনের উপর অনেক বাংলা প্রবন্ধ আছে, এগুলোর একটা আর্কাইভ তৈরি করা যায় না? মুক্তমনা ডট কম থেকে বিজ্ঞান ট্যাব এ ক্লিক করলে পুরোনো বিজ্ঞানের পেজ এ চলে যায়, ওইটা মনে হয় আর আপডেট করা হয় না।
@রাহাত খান, আপনার সাজেশন আসলেই ভালো লাগলো। রিচার্ড ডকিন্সের লেখায় বাক্য মাঝে মাঝেই যৌগিক বা জটিল শ্রেণীতে পড়ে যায়। তখন সেটার অনুবাদের ভাষায় বাংলাটাও যৌগিক হয়ে পড়ে। এরকম সাজেশনগুলো আমাকে অনেক সাহায্য করছে।
ভালো লাগল আপনার লেখাটি দেখে,ডকিন্সের বইগুলো অনুবাদ করা আসলেই একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
(আপনার নাম আর ছবি দেখে মনে হচ্ছে আমি আপনাকে চিনি!!)।
মুক্তমনায় স্বাগতম।
@রামগড়ুড়ের ছানা, অনেক ধন্যবাদ। কাজটা শুরু করলাম, দেখা যাক কতোদিনে শেষ করি।
চিনতেও পারেন। হয়তো সামনে আরো পরিচয় বিশদ হবে, আপনি চেনাপরিচয়ের জায়গা বা অনুমানগুলো বললে শিওর করতে পারতাম, বইলেন।
@আন্দালিব,
আপনি বুয়েটে পড়তেন? ইইই?
@রামগড়ুড়ের ছানা, হ্যাঁ, দুটাতেই ফুলমার্কস পেলেন। আপনার পরিচয়টাও জানাতে পারেন কি? 🙂
আন্দালিব, মুক্তমনায় স্বাগতম। এই বইটির অনুবাদ শুরু করছো তাই ধন্যবাদ। আসলেই এই বইটির অনুবাদ দরকার ছিল। শিক্ষানবিস বলেছিল শুরু করবে, কিন্তু সে বোধ হয় সময় পায় না, নানান কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ার জন্য। স্বাগতম আবারো।
@স্বাধীন ভাই, শিক্ষানবিস আমাকেও বলেছিলো। তবে ও এখনও বেশি কাজ করেনি। আমার লেখাটা পড়ার পরে বলেওছিলো যে করা হবে না হয়তো ওর।
স্বাগতমের জন্যে ধন্যবাদ, ভাই। ভালো লাগছে।
মুক্তমনায় সুস্বাগতম আন্দালিব।
খুব ভাল লাগছে দেখে যে, আপনি সেলফিশ জিন-এর অনুবাদ শুরু করেছেন। বইটা বিবর্তনের আধুনিক ধারণাকে বোঝার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি ডকিন্সের বইগুলোর একটা ছোট রিভিউ করেছিলাম, সেটা দেখা যাবে এখান থেকে। ডকিন্সের দশ দশট বই পার করে এসেও আমার ধারণা গুণে মানে সেলফিশ জিনের সমকক্ষ আর কোন বইই নয়। ১৯৭৬ সালে লেখা এই একটি বই জীববিজ্ঞানীদের সনাতন চিন্তা ভাবনা একেবারে আমূল পালটে দিয়েছিলো। যে বিষয়গুলো আগে বিজ্ঞানীরা পরিস্কার করে ব্যাখ্যা করতে পারতেন না, সেগুলো আরো বলিষ্ঠভাবে জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে ব্যখ্যা করতে পারলেন তারা। তবে তার চেয়েও বড় যে ব্যাপারটি ঘটল, সেটা হল মানবসমাজের বিভিন্ন সামাজিক প্যাটার্ন ব্যখ্যা করার নতুন এক দুয়ার খুলে গেল জীববিজ্ঞানীদের জন্য। সেজন্যই ‘Richard Dawkins: How a Scientist Changed the Way We Think: Reflections by Scientists, Writers, and Philosophers’ নামের একটি বইয়ে তার সমসাময়িক বিজ্ঞানী এবং দার্শনিকেরা বলেছেন, ডারউইনের ‘অরিজিন অব স্পিশিজ’ –এর পর কোন জীববিজ্ঞানীর লেখা বই যদি মানসপট এবং দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে, তো সেটি ডকিন্সের ‘সেলফিশ জিন’। এ বইটার বাংলায় অনুবাদ প্রকাশ হওয়া খুবই প্রয়োজন।
বন্যা উপরে যে কথাগুলো বলেছে সেগুলো খুবই প্রয়োজনীয়। আমার মনে হয় সর্বশেষ সংস্করণটা অনুবাদ করলেই ভালো হবে। আর ডকিন্স অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর চার্লস সিম্নোয়ি চেয়ার ইন দি পাবলিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং অফ সায়েন্স-এর অধিষ্ঠিত পদ থেকে ২০০৮ সালে অবসর নিয়েছেন । কাজেই লেখক পরিচিতিটা আপডেট করে নিলে ভালো।
আমি একটা ব্যাপার যোগ করি। gene এর বাংলা প্রতিশব্দ আমি যতদূর জানি – হ্রস্ব-ইকার যোগে – জিন (জীন নয়) – এভাবে লেখা হয়। আমি ম. আখতারুজ্জামানের বিবর্তনবিদ্যা আর বিজ্ঞান পরিভাষাকোষে এভাবেই দেখেছি। এর কারণ বোধ হয় এই যে বিদেশী শব্দের বাংলা করলে ব্যাকরণরীতি অনুযায়ী ই-কার হয়। ইংরেজী শব্দের বাংলাকরণে দীর্ঘ-ই (ঈ) বা দীর্ঘ-উ (ঊ) বর্জনীয়। ব্যাকরনের এই নিয়মটা আমাকে ব্লাডি সিভিলিয়ান অন্য একটি শিখিয়েছিলেন। আপনি ম. আখতারুজ্জামানের বইটা সহায়ক হিসেবে রাখতে পারেন পরিভাষাগুলোর জন্য। আমার কাছে কিন্তু দারুণ কাজের মনে হয়।
সব মিলিয়ে ভাল একটা কাজে হাত দেয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। এই বইয়ের অনুবাদ প্রকাশের জন্য ভাল প্রকাশকের অন্ততঃ অভাব হবে না এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
@অভিজিৎ, অনেক ধন্যবাদ। অনুবাদের সময়ে প্রচুর নির্ঘন্ট, তথ্য ঘাঁটতে হচ্ছে। নিজের পড়াশোনার ক্ষেত্র পুরোপুরি এইদিকে নয় উচ্চ মাধ্যমিকের পর থেকেই, যার কারণে মনে হচ্ছে একটা বড়ো গর্ত লাফিয়ে পার হচ্ছি। তবে পড়তে কখনই খারাপ লাগে না। আর যেখানে আটকে যাবো, আশা করি আপনিসহ মুক্তমনার অনেকের সাহায্যই পাবো।
উপরে বলেছি, আমার কাছে নতুন সংস্করণটাই আছে। এই বই প্রকাশতক তিনি অক্সফোর্ডে ছিলেন এমনই লেখা, পরের তথ্য জানা ছিলো না। মূল ডকুমেন্টে আমি আপডেট করে নিচ্ছি।
বানানের ব্যাপারটাও ঠিক করে নিলাম। ভুলগুলো সব ফুল হয়ে উঠুক। এই পরিভাষাকোষ কি শাহবাগ বা নিউমার্কেটে পাওয়া যাবে? তাহলে আমি কিনে নিবো। জানাবেন। কারণ অনেক শব্দেরই সঠিক শব্দার্থ না হলে অনুবাদে বিভ্রান্তি আসতে পারে। এখনও তেমন পরিস্থিতি হয়নি, তবে সতর্ক থাকা ভালো।
আবারো অনেক ধন্যবাদ!
@আন্দালিব,
আমি অনেকদিন ধরে দেশের বাইরে। বিজ্ঞানের কোন পরিভাষাকোষ আসলেই মার্কেটে পাওয়া যায় কিনা এ নিয়ে সঠিক ধারণা আমার নেই। বাংলা একাডেমির একটা বিজ্ঞান পরিভাষাকোষ বহুদিন আগে বের হয়েছিলো। আমি নিশ্চিত ওটা আর পাওয়া যায় না। বাংলা একাডেমির কোন বইয়ের সংস্করণ শেষ হলে আর পাওয়া যায় না – এটা আমার বহু দিনের অভিজ্ঞতা।
আমি বছর পাঁচেক আগে শাহবাগের আজিজে হঠাৎ করেই একটা পরিভাষাকোষ পেয়ে গিয়েছিলাম; নাম – সংসদ বিজ্ঞান পরিভাষা। সাহিত্য সংসদ থেকে প্রকাশিত। আর সংকলন করেছেন গোলোকেন্দু ঘোষ। আমার আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী – বইটা লেখার সময় ভাল কাজে দিয়েছিলো। বইটা যোগাড় করে নিতে পারলে ভাল হবে।
তবে একেবারে কিছুই না পাওয়া গেলে – ড. ম. আখতারুজ্জামান -এর লেখা বিবর্তনবিদ্যা, খুঁজে দেখতে পারেন। বইটার প্রথম সংস্করণ বাংলা একাডেমী থেকে আর পরের সংস্করণগুলো হাসান বুক হাউস থেকে বেরিয়েছে। বইটার শেষে অনেকে বৈজ্ঞানিক শব্দের ভাল পরিভাষা দেয়া আছে। মিউটেশনের বাংলা যে পরিব্যক্তি আর ভ্যারিয়েশনের বাংলা যে প্রকারণ – এগুলো আমার আখতারুজ্জামানের বইটা থেকেই শেখা।
@অভিজিৎ, আচ্ছা আমি নিউমার্কেট বা শাহবাগ ঘেঁটে খুঁজে নিবো। বইগুলোর আসলেই দরকার, যতোই সেলফিশ জিনের ভেতরে যাচ্ছি ততোই এই প্রয়োজন বেড়ে যাচ্ছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!
@ আন্দালিব, স্বাগতম মুক্তমনায়। আপনার বোধ হয় ধারণা নেই আপনি কি গুরুত্বপূর্ন একটা কাজে হাত দিয়েছেন, আসলেই যদি আপনি বইটার পুরো অনুবাদ করতে পারেন তাহলে বাংলায় বহুদিনের একটা গ্যাপ পূরণ হবে। রিচার্ড ডকিন্সের কোন বইএর বাংলা অনুবাদ হয়নি এখনও। এখন পর্যন্ত অন্ততপক্ষে ৩ জন প্রকাশক আমার কাছে অনুরোধ করেছেন বইটার অনুবাদঙ্করে বা করিয়ে দেওয়ার জন্য।
আপনার অনুবাদের ভাষা অত্যন্ত সাবলীল, পড়তে ভালো লাগলো। তবে বিস্তারিত মন্তব্য করার আগে একটা বিষয় জানা দরকার।
১) আপনি কোন সংস্করণটা অনুবাদ করছেন? ১৯৭৬, ১৯৮৯ নাকি ২০০৬ সালের সংস্করণ? ১৯৮৯ এর টায় ডকিন্স দু’টো নতুন অধ্যায় যোগ করেছিলেন। ২০০৬ সালেরটায় নতুন একটা ভূমিকা দিয়েছেন। এই দু’টো সংস্করণে তিনি বেশ কিছু নতুন তথ্য দিয়েছেন এবং সমালোচনার উত্তর দিয়েছেন।
ওহ আরেকটা কথা…
যতদুর মনে পড়ে ডকিন্স তার এই চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিলেন ‘গ্রেটেষ্ট শো অন আর্থ’ বইটা লেখার সময়।
@বন্যা আহমেদ,
আপনি সঠিক। তিনি এখন বেকার 🙂
আর আন্দা ভাই, সিসিবি তে তো মন্তব্য দিলামই। চলতেই থাকুক।
@বন্যা আহমেদ, আমার আসলেও ধারণা ছিলো না। বেডসাইডে এই বইটা পড়ে থাকে, অবসরে একটু একটু করে পড়ি। হঠাৎ ভূত চাপলো মাথায়, এখন দেখি পুরো সিন্দাবাদী-ভূত!
আমার কাছে যে সংস্করণ সেটা ২০০৬ এরই। শুরুতে একটা ৩০ বছর উপলক্ষ্যে লেখা ভূমিকাটিও আছে, শেষের নির্ঘন্টটাও পরিবর্ধিত। সুতরাং সবচেয়ে নতুনটাতেও কাজ করতে পারছি।
আমারও মনে হচ্ছে চাকরি বাকরি ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে লিখতে হবে। 🙂
@রায়হান আবীর, তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ। রাস্তা দেখিয়ে দিলে, এখন হাঁটা শুরু করি।
@ অনীক আন্দলিব।
অনুবাদের আপনার সাফল্য কামনা করি। বইটি অনুবাদ করে আপনি আমাদের কি যে উপকার করছেন তা বোঝাতে পারব না। নিশ্চয়ই উৎসাহ দেবার লোকের অভাব হবে না। আপনি এগিয়ে যান আপনার আপন গতিতে। কেউ যদি উৎসাহ নাও জোগায় তবুও আপনাকে এগিয়ে যেতেই হবে। আপনি যেমন নিজের উদ্যোগে অনুবাদের কাজে হাত দিয়েছেন, তখন তো নিজের ভেতরের উৎসাহটাই এগিয়ে নিয়ে গেছে আপনাকে। আশা করি সেই উৎসাহেই বাকী কাজ শেষ করতে পারবেন।
@মাহফুজ, সত্যি বলতে কি, একধরনের ঋণাত্মক মোটিভেশন কাজ করেছে শুরুতে। চারপাশে এতো এতো ভ্রান্তি আর বিবর্তন নিয়ে ক্লিশে চিন্তাভাবনা, কূপমণ্ডুকতা দেখি, নিজের তাগিদেই পড়ার চেষ্টা করলাম। খুঁজতে খুঁজতে এই বইটা পেলাম। এখন মনে হচ্ছে এরকম বইয়ের অনুবাদ বাংলায় থাকা অসম্ভব জরুরি। আর এখন সেই ঋণাত্মকতা কেটে সমমনাদের ধনাত্মক মোটিভেশন পাচ্ছি, আপনাদের উৎসাহ খুব ভালো লাগছে।
অনেক বিনিদ্র রাতের সহায় হলেন। ধন্যবাদ!
শুনে খুবই খুশি হলাম। আসলেই বইটির অনুবাদ প্রয়োজন।
@সৈকত চৌধুরী, প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল ছিলাম না। এখন এক দুই পর্ব লেখার পরে প্রতিক্রিয়ায় বিস্ময়ের সাথে সাথে প্রবল উৎসাহও পেয়েছি! ধন্যবাদ আপনাকে।