প্রাচীন রোমান কবি পাবলিউস ওভিদিউস নাসো PABLIVS OVIDIVS NASO (খ্রীষ্টপূর্ব ৪৩ – ১৮ খ্রীষ্টাব্দ ) যিনি ওভিদ (OVID) নামেই সর্বাধিক পরিচিত , তিনি ছিলেন প্রথম রোম সম্রাট আউগুসতুসের GAIUS JULIUS CAESAR OCTAVINUS (খ্রীষ্টপূর্ব 63 – ১৪ খ্রীষ্টাব্দ) সমসাময়িক । সম্রাটের এক মাত্র কন্যা ইউলিয়ার (JULIA CAESARIS FILIA) সাথে প্রেমের অপরাধে , ওভিদকে ৮ খ্রীষ্টাব্দে তমিসে( আজকের রোমানিয়ার কন্সতাঞ্চা শহর) নির্বাসনে পাঠানো হয় সম্রাট আউগুসতুসের সম্পূর্ণ একক এবং বিচার বহির্ভূত এক নির্বাহী আদেশে। নির্বাসিত অবস্থায় সেখানেই ১৮ খ্রীষ্টাব্দে ওভিদের মৃত্যু হয় ।
মুক্তমনা পাঠকদের জন্য এবার আমি খ্রীষ্টপূর্ব ১৬ তে রচিত ওভিদের কালজয়ী শোকগাঁথা সংকলন আমোরেস (AMORES ) থেকে ১ম অধ্যায়ের ৯ম শোকগাঁথাটি অনুবাদ করলাম ।এখানেই ওভিদ লেখেন তার সেই বহুল আলোচিত উক্তি MILITAT OMNIS AMANS ( সব প্রেমিকই সৈনিক )।
বিশ্বের অন্যতম ইন্দো–ইউরোপীয় ভাষা বাংলার সাথে লাতিন এবং গ্রীকের রয়েছে মৌলিক সমগোত্রীয় ভাষাতাত্বিক সম্পর্ক ।মূল লাতিন থেকে অনুবাদের সময় তাই আমি পাঠকদের পরিচিত ইংরেজী উচ্চারণ বিধি পরিহার করে লাতিন ও গ্রীক উচ্চারণ বিধি মেনে চলেছি।
প্রেমিক এবং সৈনিক
পাবলিউস ওভিদিউস নাসো
আমোরেস ১ম অধ্যায়, ৯ম শোকগাঁথা
অনুবাদঃ বিজয়
সব প্রেমিকই সৈনিক, এবং তাদের ঘাঁটি অনুরাগের মাঝে
আত্তিকুস, বিশ্বাস করো , সব প্রেমিকই আসলে সৈনিক।
এখনই যুদ্ধে যাওয়ার বয়স যার , প্রেম করার বয়সই তো তার।
বৃদ্ধ সৈনিকের মূল্য নেই , যেমন মূল্য নেই বৃদ্ধ প্রেমিকের।
একজন সেনা কর্তা যে রকম তেজ তার সেনা দলের মাঝে দেখতে চায়,
একজন নারী ঠিক সেটাই খুঁজে বেড়ায় তার প্রেম সঙ্গীর মাঝে।
সৈনিক আর প্রেমিক দুজনেই সতর্ক প্রহরী। দুজনেই ঘুমায় মাটির ওপর,
এক জনের দায়িত্ব তার সেনা কর্তার দপ্তরের বাহিরে , আরেক জনের
তার প্রেমিকার বাড়ির প্রবেশ দ্বারের সামনে।
সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়া সৈনিকের কাজ । মেয়েটাকে কোথাও পাঠিয়ে দাও,
দেখবে তার শ্রান্তিহীন প্রেমিক ঠিকই তার পেছনে গিয়ে সেখানে হাজির হয়েছে।
সে মানবে না কোন দুর্গম পার্বত্য মালা আর ঝরে উত্তাল নদী,
জমে ফেঁপে ওঠা তুষারের ওপর দিয়ে সে ঠিকই তার রাস্তা বের করে নেবে ,
সে মানবে না কোন অজুহাত , যেমন ঝড়ো উত্তরা বাতাস,
কিংবা কোন শুভ নক্ষত্রের ইশারায় জোয়ারের অপেক্ষা।
কে পারে সইতে একজন সৈনিক কিংবা প্রেমিকের মত,
শীতল রাত্রি কিংবা ঘন তুষার মিশ্রিত বর্ষা ?
একজন কে পাঠানো হয় হানাদার সেনা দলের ওপর গোয়েন্দা গিরি করতে,
আরেক জন কড়া নজর রাখে তার প্রতিদ্বন্দ্বীর ওপর ,তার শত্রু।
এ জন অবরোধ করে সুরক্ষিত নগর , ঐ জন তার হৃদয়হীন
বন্ধুর প্রবেশপথ। একজন ভেদ করে চৌকি ,আরেক জন দুয়ার।
প্রায়ই বিজয় এসেছে ঘুমন্ত শত্রুর ওপর আক্রমণ করে ,
কৃপাণ হাতে নিরস্ত্র গৃহস্বামী মেরে।
এভাবেই মারা পড়ে রেসুস আর তার দুর্ধর্ষ থ্রাকীয় সেনা দল ।
প্রেমিকরা সুতরাং নিশ্চয়ই তাদের প্রেমিকাদের স্বামীদের ঘুমের সদ্ব্যবহার করবে
আর তাদের অস্ত্রগুলো কাজে লাগাবে যখন শত্রুরা সুখনিদ্রায় মগ্ন।
পাহারাদার আর শত্রু প্রহরীর চোখে ধুলা দেয়া
সৈনিক আর বেচারা প্রেমিকদেরই কাজ ।
যুদ্ধ দেবতা মার্স সন্দেহ জনক,প্রেম দেবী ভেনুস অনিশ্চয়তায় ভরা। পড়ে গেলে আবার উঠে বসা যায়, তোমরা যখন ঢিল খাওয়ার কথাও ভাবোনি , পিটুনিও খেতে পার।
সুতরাং , প্রেমিকদের যদি তোমরা আলসে ভেবে থাকো , ভুলে যাও সেকথা।
প্রেমের জন্য প্রয়োজন দক্ষতা আর নিপুণতা।
অপহৃত ব্রিসেইদা আগুন জ্বালিয়েছিল মহাশক্তিধর আখিলেউসের মনে।
পারলে ত্রইয়াবাসী , গুড়িয়ে দাও আর্গসী দেয়ালটা!
হেক্ত্রর যুদ্ধে যায় আন্দ্রমাখির বাহু ছেড়ে,
তার স্ত্রীই পরায় তার মাথায় শিরস্ত্রাণ।
লোকে বলে, মহাপরাক্রম আত্রেউস নাকি কাসান্দ্রা্র- মানে ওই
ত্রইয়ার মাইনাদেসের উরন্ত চুল দেখে বেহুঁশ হয়েছিলেন।
যুদ্ধ দেবতা মার্স প্রায় আটকে গিয়েছিলেন অগ্নিদেব ভুল্কানুসের বানানো শেকলে।
এর চেয়ে বড় কেলেঙ্কারির কথা স্বর্গে শোনা যায় না।
আমি নিজে ছিলাম অলস আর অকাজের ধারী ।
বিছানা আর ঘুম আমার চিত্তকে করে রেখেছিল দুর্বল।
কিন্তু এক নারীর প্রেম আমার সব আলস্য একবারে বিদায় করে দেয়।
তার আদেশেই এবং তারই জন্য আমার প্রথম অগ্রাভিযান ।
এই যে এখন আমায় দেখেছো, সেই থেকে আমি সক্রিয় ভাবেই নিশাচর যুদ্ধে নিয়োজিত ।
অলস সেজে যদি থাকতে না চাও, এখনি প্রেমে পড় !
বিজয়, আপনার অনুবাদ্গুলো খুব সাবলীল। প্রাচীন কাব্যগুলোর প্রতি আমার দূর্বলতা অনেকদিনের । কিন্তু বেশীরভাগ সময়েই অনুবাদ্গুলো এত খটমটা হয় যে পড়ার ইচ্ছেটা ধরে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আপনি সরাসরি গ্রীক বা লাতিন থেকে অনুবাদ করছেন বলেই কি এত ভালো লাগছে পড়তে? আর তাছাড়া, বাংলা ভাষায় আপনার দখল নিয়ে আর কিছু না হয় নাই ই বললাম, অনেকেই বলেছেন ইতোমধ্যেই।
আচ্ছা লাতিন এবং গ্রীকের সাথে আমাদের বাংলা ভাষার কতখানি সম্পর্ক রয়েছে? এটা নিয়ে আমি আগেও অনেকবার ভেবছি। আমার মেয়ে যখন স্প্যানিশ পড়ে তখন তাতে বেশ কিছু শব্দ দেখি যাদেরকে বাংলার খুব কাছাকাছি বলে মনে হয়। আপনি বাংলা ভাষার বিকাশের উপর একটা লেখা লিখে ফেলুন না, আমার অনেকদিনের অনেক প্রশ্ন আছে এ ব্যাপারে। সংস্কৃতের সাথে বাংলার সম্পর্কটা মোটামুটি বুঝি, কিন্তু সংস্কৃত কোথা থেকে কিভাবে এসেছিল তা সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না।
@বন্যা আহমেদ,
অনুবাদ অনেকটা রান্নার মত। সবার রান্না কি খাওয়া যায়?
জার্মান, লাতিন, গ্রীক এবং সংস্কৃতের শেকড় এক প্রাচীন ভাষায়। এর নাম ইন্দো-জার্মানিক ভাষা যা বর্তমান লিথুয়ানিয়ার পল্লী ভাষার কাছাকাছি। বাংলা ভাষার বিকাশের উপর লেখার ইচ্ছা আছে কিছু দিনের মধ্যেই।
অসাধারন!
খুবই ভাল লাগল :rose:
@পৃথিবী,
আপনার আরো ভাল লাগবে যদি এই শোকগাঁথাটি কবির মতো আপনিও মনেপ্রানে বিশ্বাস করেন। কবিরা আসলে নবী , মুনি-ঋষিদের মতই । কবিদের কাছে বাধাহীন আর অনন্ত প্রেমই প্রার্থনার মাপকাঠি।
ভাল লাগছে আপনার ব্যতিক্রমধর্মী লেখাগুলো। ইতিহাস যেমনি জানা হচ্ছে, তেমনি পাওয়া যাচ্ছে সাহিত্যরস।
আমার ধারনা ছিলো আপনি ইংরেজী থেকে অনুবাদ করছেন। কিন্তু আপনার এই লাইনটি পড়ে একটু বিভ্রান্ত-
মূল লাতিন থেকে অনুবাদের সময় তাই আমি পাঠকদের পরিচিত ইংরেজী উচ্চারণ বিধি পরিহার করে লাতিন ও গ্রীক উচ্চারণ বিধি মেনে চলেছি।
আপনি কি নিজে ল্যাতিন এবং গ্রীক জানেন? আপনার কথাতে কিন্তু তাই মনে হচ্ছে। কিভাবে এই ভাষা শিখলেন তা জানার কৌতুহল হচ্ছে।
@অভিজিৎ,
১২ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ওলন্দাজ GYMNASIUM এ পড়ার সময় লাতিন , ওলন্দাজ এবং ইংরেজি পড়তে হয়েছিলো বাধ্যতামুলক বিযয় হিসেবে। এর সাথে ফরাসী( française) এবং জার্মান নিয়েছিলাম আমি নিজে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে Linguistics পড়ার সময় শিখতে হয় পুরনো গ্রীক। এসবই অনেক আগের কথা । এরপর তো রাইন নদী দিয়ে অনেক পানি গরিয়ে গেছে ।
@বিজয়,
মানলাম। আর এত সুন্দর বাংলা?
@আকাশ মালিক,
বাংলা জন্মসুত্রে আমার মাতৃভাষা হলেও আমি নিজে আসলে ওলন্দাজ ভাষী । বাংলা আমি নিজেই শিখেছি আমার আপন শেকড় খুজে বের করতে । সরকারী কাজের প্রয়োজনে যে সময়টা দক্ষিন এশিয়ায় কাটিয়েছিলাম , সে সময়টা একাজে আমাকে ভীষনভাবে সাহায্য করেছে । আমার ‘ linguistic aptitude’ , বাংলার জন্য আমার মমতা এবং আমার অত্যন্ত জেদী স্বভাব হয়তোবা এক্ষেত্রে দায়ী।
@বিজয়,
আপনি তো দেখছি ভাই গুনী মানুষ। নিজের চেষ্টায় পরে বাংলা শিখেছেন। আর আমাদের অনেকেই বাংলা সংস্কৃতির জগতে ছোটবেলা থেকে বেড়ে উঠেও ঠিকমত মাতৃভাষাটাই রপ্ত করতে পারিনি।
আশা করি একদিন আমাদের গ্রীক এবং ল্যাটিন শেখাবেন…
@অভিজিৎ,
আপনাদের মতো গুনী আর কই হতে পারলাম ! গ্রীক এবং লাতিন কেন শিখতে চান, ভাই ? আমাদের সকলের চর্চা করা দরকার সংস্কৃত (संस्कृता वाक्) যা কিনা গ্রীক এবং লাতিনের থেকেও অধিক ধ্রুপদী । আমি জ়ানি যে, আরব সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সেবাদাসেরা কৌশলগত কারনেই বাংলাদেশে সংস্কৃত (संस्कृता वाक्) -এর সার্বজনীন চর্চা কখনও হতে দেবে না । ভাবতে ভীষন কষ্ট হয় যখন দেখি যে , বাংলাদেশী শিক্ষিত লোকেরা পানীনী কিংবা পিঙ্গালাদের কথা জানেনা ।
@বিজয়,
আপনি যে গুনী মানুষ এতে কোন সন্দেহ নাই।
এটা ঠিক যে,