[ এই লেখাটি মুক্তমনায় অন্য শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল বছর দুএক আগে। মুক্তমনায় আমার পাতায় এর কোন লিঙ্ক নেই। তাই মুক্তমনা ব্লগের নতুন সদস্যদের জন্য আর আসন্ন আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনা করে মুক্তমনা ব্লগের জন্যই আবার বিশেষ করে ছাপাচ্ছি – অপার্থিব ]
আসছে ৮ই মার্চ বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হতে যাচ্ছে। এই দিবসের প্রাক্কালে আমি যে সকল ক্ষেত্র বা পেশায় পুরুষদের প্রাধাণ্য দেখা যায় বা পুরুষরাই যে কেবল এই সব পেশায় কাজ করার যোগ্যতা রাখে বলে একটা ধারণা এখনো অনেকের মধ্যে প্রচলিত আছে, সেই সব পেশায় নারীদের অগ্রযাত্রার খতিয়ান দেবার চেষ্টা করব। এইসব পেশায় সাহস ও বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন, প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী মেয়েরা এ দুটোতেই দুর্বল। ছোটবেলার এক ধাঁধার কথা মনে পড়ে। পিতৃহীন এক ছেলে দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় অস্ত্রোপচারের জন্য। শল্যচিকিৎসক অস্ত্রোপচারের জন্য এসে ছেলেটিকে দেখে আঁতকে উঠে বলেন এ যে আমারই ছেলে! পিতৃহীন ছেলে কি করে শল্যচিকিৎসকের সন্তান হতে পারে? শল্যচিকিৎসক যে মহিলা তথা মা হতে পারেন এটা হয়ত ভাবা যেতনা একসময়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে এখনও অনেকে বিশেষ করে আমাদের দেশে এই ধারণ পোষণ করেন। যেহেতু এই সব পেশায় নারীদের (অন্তত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে) অগ্রগতি পত্রিকার শিরোনাম বা নিত্যনৈমিত্তিক খবর হিসেবে প্রকাশিত হয়না তাই তাদের এই ধারণা পরিবর্তনের খুব একটা সুযোগ নেই। মেয়েদের যে পুরুষদের মত সমান সাহস ও বুদ্ধিমত্তা আছে শুধু তাই নয়, পুরুষদের মত সেটা অপকর্মে ব্যবহার করারও সমান ক্ষমতাও রাখে তারা। সেটা নিয়ে দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করব। এই পর্বে শুধু গৌরবময় দিক নিয়েই লেখা হোক।
নারীদের ক্ষমতা ও যোগ্যতার কিছু ঐতিহাসিক আলোচনা দিয়ে শুরু করা যাক। যুদ্ধ বিগ্রহ, শত্রু পক্ষ আক্রমণ ও ঘায়েল, সৈন্য, সেনাপতি, মুক্তিযোদ্ধা ইত্যাদি কথা উঠলে কিছুটা অবচেতনভাবে হলেও পুরুষদের চিত্রই মনে ভেসে উঠে। অথচ ইতিহাস তার কত উলটো সাক্ষ্যই না দেয়। অনেক বছর আগে ৬৯৫ খ্রীষ্টাব্দে উত্তর আফ্রিকার জেনাতা বার্বার (Zenata Berber) সম্প্রদায় কাহিনা নামক এক নারীর নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হয়ে উমায়া খলীফা আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ান প্রেরিত সেনাপতি হাসান ইবনে নামান এর অধীনস্ত হানাদার বাহিনীকে পর্যুদস্ত করেছিল। আগেকালের যোদ্ধা নারীদের আমাজন (Amazon) আখ্যা দেওয়া হত। বাংলায় যাদের রায়বাঘিনী বলা যায়। পূর্ব আফ্রিকার ডাহোমী (Dahomey) রাজ্য যা এখন বেনিন নামে পরিচিত সেখানে একসময় আমাজন নারীযোদ্ধারা দেশ রক্ষায় নিয়মিত কাজ করত। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথ্ম দিকে রাজা আগাদ্জা এই আমাজন নারীদের নিয়ে এক বাহিনী গড়ে তুলেন যা পরবর্তীতে রাজা গেজো আরও সুসংহত করেন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করে ও প্রশিক্ষণ দিয়ে। সাহসিকতা ও রণকৌশলের জন্য এদের সুখ্যাতি ছিল। উনবিংশ শতকের শেষদিকে রাজা বেহাঞ্জিনের হয়ে এরা হানাদার ফরাসী বাহিনীর সঙ্গে সাহসিকতার সাথে লড়েছিল। তবে উন্নততর অস্ত্র আর অধিকতর রসদের জোরে শেষে ফরাসীরা বিজয়ী হয়। পূর্ব তিব্বতের খাম্পা সম্প্রদায়ের আমাজনেরা যারা আহোসি নামে পরিচিত কমিউনিস্ট চীনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদীন ধরে মুক্তিসংগ্রামে লিপ্ত ছিল। ১৯৫০, ১৯৫৬ ও ১৯৫৯ এর চীনা আক্রমণ প্রতিহত করতে সাহসিকতার সাথে এরা লড়েছিল। ১৯৫৬ এ নারং এর প্রতিরোধ সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিল দর্জি ইউদন নামের এক সাহসী কিন্ত নম্র স্বভাবের তরুণী।
এবার আসি আমাদের উপমহাদেশের রায়বাঘিনী ও বীরাঙ্গনাদের কাহিনীতে। সর্বাগ্রে উলেখ করতে হয় ইলতুৎমিসের কন্যা সুলতানা রাজিয়ার নাম। ইলতুৎমিসের মৃত্যুর পর ১২৩৬ সালে মেয়েদের শাসনের বিরুদ্ধে আমীর ওমরাগণের প্রবল আপত্তি সত্বেও রাজিয়া দিল্লীর সিংহাসনে অধিস্টিত হন তাঁদের দ্বারাই। কারণ তাঁর ভাই রুকনুদ্দীন রাজ্যশাসনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেন সিংহাসনে আরোহণ করে, যদিও ইলতুৎমিস রাজিয়াকেই উত্তরাধিকার হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। রাজিয়া নিজে যুদ্ধক্ষেত্রে বীরত্বের সাথে সৈন্য পরিচালনা ও দক্ষতার সাথে রাজ্য শাসন করলেও রাজ্যের তুর্কী আমীররা তাঁর বিরুদ্ধে চলে যান, কারণ মেয়েদের সফল শাসন তাদের সহ্য হচ্ছিল না। সরহিন্দের রাজা আলতুনিয়া তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে আমীররা আলতুনিয়ার সাথে আঁতাত করে। বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে রাজিয়া আলতুনিয়ার হাতে বন্দী হন আর আমীররা তাঁর এক ভাই বহরম শাহ কে সিংহাসনে বসান। পরে রাজিয়া আলতুনিয়াকে বিয়ে করে রাজ্য পুনরুদ্ধারের চেস্টা করলে স্বামীসহ বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হন। এরপর উল্লেখ করতে হয় খ্রীষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর আর এক সুলতানা চাঁদ সুলতানার নাম, চান্দ বিবি নামেও যিনি পরিচিত। আহমদনগর রাজ্যের তৃতীয় সুলতান হোসেন নিজাম শাহের কন্যা । তাঁর ভ্রাতুস্পুত্র সুলতান ইব্রাহীম নিজাম শাহ পরলোক গমণ করলে তাঁর শিশুপুত্র বাহাদুরকে সুলতান ঘোষণা করে চাঁদ সুলতানা নিজে নৈপুণ্যের সাথে রাজকার্য্য পরিচালনা করতে থাকেন। ঐ সময়ে মুঘলরা আহমদনগর আক্রমণ করে দুর্গ অবরোধ করে রাখে। রাজ্যের অভ্যন্তরে ক্ষমতা লড়াইএর নানা ষড়যন্ত্র ও বাহিরের শত্রুর আক্রমণ এই সব প্রতিকুলতার মধ্যেও অসীম সাহস ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে তিনি দুর্গ রক্ষায় নেতৃত্ব দেন। আরেক ভারতীয় বীরাঙ্গণা হলেন রাণী দুর্গাবতী। তিনি ছিলেন গড় কটঙ্গী প্রদেশের (বর্তঅমান মধ্য প্রদেশে অবস্থিত) রাজা দলপতের স্ত্রী। ১৫৪৮ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর পাঁচ বছরের শিশু পুত্র বীরনারায়ণের অভিভাবিকা হয়ে ১৬ বছর সাহস, বুদ্ধিমত্তা, কূটনৈতিক দক্ষতা ও বদান্যতার সাথে রাজ্য পরিচালনা করেন। সেই সময়ে তিনি মালবের রাজ বাহাদুর ও আফগান বাহিনীকে যুদ্ধে পরাজিত করেন। বন্দুক ও তীর ধনুকের দ্বারা বাঘ শিকারেও তাঁর নেশা আর পারদর্শিতা ছিল। আকবরের আদেশে কারামানিকপুরের (বর্তমান এলাহাবাদের) রাজা আসফ খান এক বিশাল বাহিনী নিয়ে ১৫৬৪ সালে তাঁর রাজ্য আক্রমণ করলে তিনি আসফ খানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন। হাতীর পিঠে চড়ে তীরবিদ্ধ হয়েও বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে যান এবং অবশেষে পরাজয় অনিবার্য্য বুঝতে পেরে নিজ দেহ ছুরিবিদ্ধ করে আত্মহত্যা করেন। এরপর বলতে হয় ঝাঁসীর রাণী লক্ষ্মীবাইএর কথা। ১৮৫৮ সালে লর্ড ডালহৌসীর নেতৃত্বাধীন বৃটিশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এক বিদ্রোহী বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে সাহসের সাথে লড়ে প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন তিনি।
এবার আমাদের এই বাংলার বীরাঙ্গনাদের কথায় আসি। ভারতের ইতিহাসে বৃটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের কথা উঠলে সিপাহী বিপ্লবের কথাই অধিকাংশের মনে আসে। কিন্তু অনেকে জানেননা এর প্রায় একশ বছর আগে এই বাংলা ও বিহারে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ বলে বৃটিশদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে এক সশস্ত্র গেরিলা সংগ্রাম শুরু হয়েছিল বাংলার ফকির, সন্ন্যাসী, তাঁতী, কৃষক ও জেলেদের মধ্যে। এক পর্যায়ে রঙপুরে কৃষকদের এক বিদ্রোহ হয়। এই সংগ্রামের সময়ের এক কিংবদন্তীর নায়িকা ছিলেন রংপুরের দেবী চৌধুরাণী, যাঁর সত্য কাহিনীর উপর ভিত্তি করে বঙ্কিম তাঁর “দেবী চৌধুরাণী’’ উপন্যাস রচণা করেছিলেন। দেবী চৌধুরাণী ছিলেন এই সংগ্রামের এক পুরোধা ভবাণী পাঠকের সহযোগী। এরা দুজনই আবার ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের বিখ্যাত মহানায়ক মজনু শাহের সহযোগী। বৃটিশ সেনাবাহিনীর লেফটেনান্ট ব্রেনান ডায়রীতে তাঁর কাছে ১৭৮৭ এ লেখা রুংপুরের কলেক্টরের চিঠিতে দেবী চৌধুরাণীর ঐতিহাসিক সত্য লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। দেবী চৌধুরাণীকে বৃটিশেরা দস্যু রাণী হিসেবে দেখলেও আসলে দেবী চৌধুরাণী বৃটিশদের (অর্থাৎ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর নিপীড়নমূলক নীতির দরুণ গরীব জনগণের দুঃখ কস্টের প্রতিবাদেই মূলত তাঁর এই বৃটিশ বিরোধী আক্রমণ চালাতেন এটা পরিস্কার। ময়মনসিংহ ও রংপুর জেলায় ইংরেজ ও তাদের অনুগত বণিকদের পণ্যবাহী নৌকা তাঁর আক্রমণে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল। এরপর আমরা জানতে পারি বাংলার বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার সম্পর্কে। তিনি ছিলেন সূর্য্যসেনের সহযোগী। ঔপনিবেশিক বৃটিশদের বিরুদ্ধে তাঁর সন্ত্রাসী আক্রমনের কথা , বিশেষ করে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ইউরোপীয়ান ক্লাবের সন্ত্রাসী হামলার কথা সুপরিচিত। যেটা অনেকের জানা নেই সেটা হল তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানের সাথে বি.এ. পাস করে মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯৩২ সালে চট্টগ্রামের নন্দকানন স্কুলের প্রধান শিক্ষয়িত্রী নিযুক্ত হয়েছিলেন। ইউরোপীয়ান ক্লাবের হামলার সময় সায়ানাইড বিষ দ্বারা আত্মহত্যা করলে অকালে তাঁর জীবন ঝরে যায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও বীরাঙ্গনারা অংশ নিয়েছিলেন। তারামন বিবির কথা কে না জানে।
এবার ফিরে আসি বর্তমান যুগের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে। সশস্ত্রবাহিনীর সংগ্রামী খাতে মেয়েদের অংশগ্রহণ শুধু বাংলাদেশ কেন অনেক পশ্চিমা দেশেও একটা নতুন ঘটনা। বাংলাদেশে ১৯৯৪ সাল থেকে সশস্ত্রবাহিনীর সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণের দ্বার নারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এবং তারা সেই সুযোগের পুরো সুযোগ নিয়ে সাফল্যের সঙ্গে দেশ প্রতিরক্ষার কাজে নিয়োজিত আছেন তিন বাহিনীতেই। তবে বিমান বাহিনীতে বোমারু যুদ্ধবিমানের মহিলা পাইলট আছেন কিনা তা আমার জানা নেই। না থাকলে শীঘ্রই এটা ঘটবে আশা করি। ১৯৫৩ সালে মার্কিন বিমান বাহিনীর মহিলা পাইলট জ্যাকুলিন কক্রান একটি এফ-৮৬ সেবার জেটকে শব্দের চেয়ে দ্রুত গতিতে চালিয়ে প্রথম মহিলা হিসেবে এটা করার গৌরব অর্জ়ন করলেন। মার্কিন সশস্ত্রবাহিনীতে মেয়েদের সংগ্রামী ভূমিকায় অংশ নেয়া বহুদিন নিষিদ্ধ থাকার পর কংগ্রেস ১৯৯১ সালে তা নারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। তার সুযোগ নিয়ে মারথা ম্যাক্সালী যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হয়ে সাফল্যের সঙ্গে শুধু যে থান্ডারবার্ড যুদ্ধবিমানের পাইলটই হলেন তাই নয়, ১৯৯৪ সালে একটি ফাইটার স্কোয়াড্রনের প্রথম মহিলা কম্যান্ডার হবার গৌরব অর্জন করেলন। হল্যান্ডের লেফটেনান্ট মানিয়া ব্লক (Manja Block) অত্যাধুনিক এফ-১৬ জঙ্গী বিমানের প্রথম মহিলা পাইলট হন আর জ্যাকি পার্কার এফ-১৬ বিমানের প্রথম মার্কিন মহিলা পাইলট হন ১৯৯৪ তে। এরপর কৃষ্ণাংগ মহিলা ক্যাপ্টেন ক্রিস্টিনা হপার এফ-১৬ জঙ্গী বিমানের পাইলট হয়ে ইরাক যুদ্ধে মহিলা হিসেবে প্রথমবারের মত বাস্তবে বিমানআক্রমণ অভিযানে অংশ নেন। প্রায় ৮০০ ঘন্টা যুদ্ধকালীন বিমান চালনার ৫০ টি অভিযানের অভিজ্ঞাতার পর তিনি আমেরিকান বিমান বাহিনীর একজন প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োজত হয়ে এফ-১৬ বিমানের পুরুষ ও মহিলা শিক্ষানবীশ বৈমানিকদের বিমান চালনা শেখাচ্ছেন। নৌবাহিনীতেও নারীরা পিছিয়ে নেই। ক্যাথলিন ম্যাক্গ্র্যাথ প্রথম মার্কিন মহিলা যিনি ২৬২ নাবিকের একটি যুদ্ধজাহাজ (Frigate) U.S.S. Jarrett এর কম্যান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হয়ে জাহাজকে যুদ্ধ মিশনে নিয়ে যান পারস্য উপসাগরে। সাবমেরিন চালনার ক্ষেত্রে মার্কিন নৌবাহিনীতে মেয়েদের সম্পৃক্তীকরণ এখনও নিষিদ্ধ থাকায় (অতি সম্প্রতি ফেব্রুয়ারী ২০১০ এ সাবমেরিনে মেয়েদের যোগদানের অনুমতি দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে এখনো এটা সরকারীভাবে বলবৎ হয়নি) এই ক্ষেত্রে নারীরা তাদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ না পেলেও নরওয়েজীয় নৌবাহিনীতে এই নিষেধ না থাকাতে একজন মহিলা প্রমাণ করলেন যে মেয়েদেরও সাবমেরিন কম্যান্ডার হবার যোগ্যতা ও ক্ষমতা আছে। ১৯৯৫ সালে সল্ভেইগ ক্রে নরওয়েজীয় নৌবাহিনীর সাবমেরিন Kobben S318 এর কম্যান্ডার হয়ে বিশ্বের প্রথম মহিলা সাবমেরিন কম্যান্ডার হবার সম্মান অর্জন করেন। ঐ সাবমেরিনটির বাকী সব ক্রুই পুরুষ। বেসামরিক বিমান ও জাহাজ চালনায়ও মেয়েরা পিছিয়ে নেই। সুইডেনের কারিন জ্যানসন রয়্যাল ক্যারিবীয়ান কোম্পানীর ২৪০০ যাত্রীর বিশাল ভ্রমণ জাহাজ (Cruise Ship) Monarch of the Seas এর ক্যাপ্টেইন হয়ে প্রথম মহিলা ভ্রমণ জাহাজ ক্যাপ্টেন হবার গৌরব অর্জন করলেন । বেসামরিক বিমান চালনার ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহন ঐতিহাসিকভাবে মোটেই নতুন কিছু নয়। ত্রিশ দশক থেকেই নারীদের বিমান চালনার শুরু। ১৯৩২ সালে এমেলিয়া ইয়ার্হাট এককভাবে বিমান চালিয়ে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে রেকর্ড করেছিলেন। ১৯৬৪ সালে জেরাল্ডিন মক প্রথম মহিলা হিসেবে এককভাবে বিমান চালিয়ে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন। যতবারই আমি সুবিশাল বোইং ৭৪৭ বিমানে চড়ি ততবারই এক বিস্ময় ও শিহরণ অনুভব করি। ভাবতে অবাক লাগে কি ভাবে একজন এটাকে বশ করে অনায়াসে ওঠান নামান ও উড়িয়ে চালানোর কাজ করেন। এই কাজটি করতেও নারীরা পিছপা হন নি। ১৯৮৪ সালে বেভারলী বার্ন্স বোইং-৭৪৭ বিমানের প্রথম মহিলা পূর্ণ ক্যাপ্টেন হবার গৌরব অর্জন করেন। এই প্রসঙ্গে আরেকজন মহিলা ক্যাপ্টেনের কথা উল্লেখ করতে হয়। সুসান ডার্সী প্রথম মহিলা যিনি বোইং-৭৪৭ এর সর্ববৃহৎ সংস্করণ বোইং ৭৪৭-৪০০ বিমানের ক্যাপ্টেন হন ১৯৮৯ তে, আবার তিনিই প্রথম মহিলা যিনি অত্যাধুনিক কম্পিউটারায়িত বিমান বোইং-৭৭৭ এর ক্যাপ্টেন হন ১৯৯৫ তে। শুধু তাই নয় তিনি বোইং-৭৩৭, বোইং-৭৫৭, বোইং-৭৬৭, বোইং-৭৪৭ ও বোইং-৭৭৭ এর ফ্লাইট ট্রেইনার হিসেবে কাজ করেছেন আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। নীচের সাইটে ক্লিক করে পাঠকেরা বোইং-৭৭৭ এর ককপিটে বসা সুসান ডার্সীর একটা ছবি দেখতে পারেন –
http://www.boeing.com/news/releases/2000/photorelease/000927b.jpg বাঙ্গালী মেয়েরাও পিছিয়ে নেই বিমান চালনায়। বাংলাদেশ বিমানের ইয়াসমিন রহমান এশিয়ার প্রথম মহিলা DC-10 বিমানের ক্যাপ্টেইন হবার গৌরব অর্জন করেন ১৯৯১ তে। ঐ সময়ে যুক্তরাজ্যকে গণনায় আনলেও তিনিই প্রত্থম। তাঁর আরেক কৃতিত্ব হল DC-10 বিমানের ক্যাপ্টেন হয়ে ৫ বছর বিমান চালাবার পর রাজনৈতিক কারণে অবসর গ্রহনে বাধ্য হয়ে এর পর ৫ বছর স্থপতির পেশায় (স্থাপত্যবিজ্ঞানেও তাঁর ডিগ্রী আছে) নিয়োজিত থেকে আবার সাফল্যের সাথে পরীক্ষা দিয়ে সক্রিয় বিমান চালনায় প্রত্যাবর্তন করে বিমানের এয়ারবাস এর ক্যাপ্টেন হন ২০০১ সালে।
মহাকাশে নারীদের সাফল্যের কথা বলি এবার। যুক্ত্রাস্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসার সবচাইতে জটিল মহাকাশযান হল স্পেস শাট্ল (Space Shuttle). এটা চালান পৃথিবীর সবচাইতে দুরূহ কাজ বলে কথিত আছে। এখানেও মেয়েদের জয়যাত্রা থেমে নেই । আইলিন কলিনস স্পেস শাট্লের প্রথম মহিলা পূর্ণ কম্যান্ডার হিসেবে শাট্ল অভিযানের নেতৃত্ব দেন ১৯৯৯ এর কলাম্বিয়া মিশনের সময়(দেখুন http://quest.nasa.gov/space/frontiers/collins.html ) সেই সময়ে তিনি স্বামীসহ এক কন্যার মা ও ছিলেন। এর আগে তিনি মার্কিন বিমান বাহিনীর বিশাল C-141 পরিবহন বিমানের কম্যান্ডারের দায়িত্বেও ছিলেন । কিছুদিন আগে ২০০৭ এর সেপ্টেম্বরে এক ইতিহাস সৃস্টি হল যখন স্পেস শাট্ল ডিস্কভারী ও আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের মিলনের সময় উভয়েরই কম্যান্ডার ছিলেন নারী। ডিস্কভারীর নেতৃত্ত্বে ছিলেন পামেলা মেলরয় আর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের দায়িত্বে ছিলেন পেগি হুইট্সন। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের প্রয়াত কল্পনা চাওলাও মহাকাশ চারণায় যথেস্ট কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন, উপরন্ত প্রকৌশলে তাঁর পিএইচডি ডিগ্রীও ছিল। আরেকজন পিএইচডি ধারী মার্কিন নভোচারী শ্যানন লুসিড একসময় মহাকাশে দীর্ঘতম সময় কাটানোর রেকর্ড সৃস্টি করেছিলেন। আর এটা উল্লেখ না করলেই নয় যে পিএইচডি ধারী মার্কিন নভোচারী ডঃ স্যালী রাইড স্পেস শাট্লের প্রথম মহিলা সদস্য হন ১৯৮৩ এ।
আকাশ থেকে স্থলে ফিরে আসি। বিশিস্ট ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ এক সাক্ষাৎকারের সময় এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন যে ছোটবেলায় তাঁর স্বপ্ন ছিল ট্রেন চালক হবার। তাঁর সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত না হলেও সালমা খাতুনের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী ট্রেন চালক হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মহিলা ট্রেন চালক হয়েছিলেন এভেলিন নিউয়েল, ১৯৭৫ এ । বাংলাদেশে ১৯৯৮ তে পাপিয়া নামক এক সাহসী মেয়ে জীবিকার তাগিদে ঢাকার রাস্তায় রিকশা চালাতে শুরু করে আরেক ইতিহাস সৃস্টি করেছিল। সে নারী পুরুষ বিচার না করে সবাইকে বহন করত। কিস্তু দুঃখের বিষয় সেটাই বোধহয় প্রথম আর শেষ উদাহরণ। বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতা এখনএ এরকম দুঃসাহসিক কাজে মেয়েদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয় বোধ হয়। এই সামাজিক বাস্তবতার জন্য মেয়েরা বাসের কন্ডাক্টরও হয়ত হতে পারবেন না ইচ্ছা থাকা সত্বেও, যদিও ট্রাফিক ও যাত্রীসংখ্যার দিক দিয়ে ব্যাংকক আর ঢাকার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই তবু ব্যাংককে মেয়ে বাস কন্ডাক্টর এক অতি পরিচিত দৃশ্য।
বুদ্ধিমত্তা ও মননশীল পেশায়ও নারীদের সাফল্য কোন অংশে কম নয়। প্রাচীনকালে আলেকজান্দ্রিয়ার হাইপাশিয়া নামে এক বিদূষী নারী গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানে নাম করেছিলেন (৩৫৫ খ্রীঃ এর দিকে)। তিনি আলেকজান্দ্রিয়ার নব্যপ্ল্যাটনিস্ট বিদ্যা পীঠ এ গণিত ও দর্শনের অধ্যাপনা করতেন। তিনি একাধারে বুদ্ধিমতি, বাগ্মী ও সুন্দরী হয়াতে তাঁর অনেক ছাত্র ছিল। কিন্তু সে সময়ে জ্ঞান বিজ্ঞানকে পেগানবাদ (Paganism) বা বস্তুপূজার সঙ্গে যুক্ত করা হত এবং খ্রীষ্টীয় পাদ্রী সিরিলের প্ররোচণায় এক মারমুখী জনতার হাতে তাঁর মৃত্যু হয়। বলা হয় যে মানসিক দিক দিয়ে সবচেয়ে দুরূহ কাজ হল তাত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের স্ট্রিং তত্ব (String Theory) নামক শাখাকে আয়ত্ত করা। নোবেল পদার্থবিজ্ঞানী ওয়াইনবার্গারও এই তত্ব বোঝা ও এই বিষয়ে গবেষণা করা কঠিন কাজ বলে স্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে অল্পবয়সী মহিলা গবেষক ইভা সিল্ভারস্টাইন বেশ নাম করেছেন। আরেক জন হলেন লিজা রান্ডল যিনি অনেক উঁচু স্তরের গভীর তত্ব নিয়ে গবেষণা করে সুনাম কুড়িয়েছেন, একটা তত্ব হল যে মহাকর্ষ বল এত ক্ষীণ হবার কারণ হল স্থানের (Space) এক লুক্কায়িত উচ্চতর মাত্রার (Higher Dimension of Space) অস্তিত্বের কারণে। এক বাক্যে এটা বলা হলেও ব্যাপারটা অতি সূক্ষ্ণ ও এর পেছনে অনেক জটিল গণিত জড়িত আছে। স্ট্রিং তত্বের পূর্বে উচ্চ শক্তি পদার্থবিজ্ঞান (High Energy Physics) কে সবচেয়ে জটিল বিষয় হিসেবে দেখা হত। এই ক্ষেত্রে চীনা বংশদ্ভুত মহিলা পদার্থবিজ্ঞানী C.S. Wu ১৯৫৬ সালে এক যুগান্তকারী পরীক্ষার দ্বারা সমসাময়িক নোবেল বিজয়ী চীনা পদার্থবিজ্ঞানীদ্বয় ইয়াং ও লী ‘র ক্ষীণ মিথস্ক্রিয়ায় প্রতিসাম্য ভঙ্গের (Parity Violation in Weak Interaction) তত্বকে সত্য বলে প্রমাণ করেছিলেন। কোন কোন মহিলা বিজ্ঞানী লিঙ্গবৈষম্যের প্রত্যক্ষ্য ও পরোক্ষ স্বীকার হয়েছিলেন। জীববিজ্ঞানী বারবারা ম্যাক্ক্লিন্টক চল্লিশ দশকের দিকে ট্র্যান্সপোসন (Transposon) বা লম্ফমান বংশাণু (Jumping Gene) আবিস্কার করেন। কিন্তু লিঙ্গবৈষম্যের জন্য তাঁর এই অবদান তখন উপেক্ষিত হয়। অনেক পরে ১৯৮৩ সালে তাঁর কাজ স্বীকৃতি পায় ও তিনি এর জন্য নোবেল পুরস্কার পান। তিনি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৭ এ পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন কিন্তু কোন চাকরী পান নি ঐ সময়ে। অনেক পরে তাঁর কাজ স্বীকৃতি পাওয়ার পর তিনি নামকরা গবেষণাগার কোল্ড স্প্রিং হারবার এ চাকরী পেয়েছিলেন। আর এক মহিলা বিজ্ঞানীর প্রেরণাদায়ক এক ঐতিহাসিক ঘটনার কথা উল্লেখ করা যাক। ঘটনাটি আমালী নোয়েথার (Amalie Noether) কে জড়িয়ে। পদার্থবিজ্ঞানে উৎসাহী সবাই নোয়েথার এর প্রতিজ্ঞার কথা জানেন । এই প্রতিজ্ঞা পদার্থবিজ্ঞানের এক সুগভীর তত্ব, যার সুদূরপ্রসারী দার্শনিক অর্থ আছে। গণিতজ্ঞদের কাছে তিনি তাঁর নোয়েথারীয় রিং, নোয়েথারের রূপান্তর প্রতিজ্ঞা প্রভৃতির জন্য সুপরিচিত। তিনি ১৯০৭ সালে গণিতে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন সম্মানের সঙ্গে। কিন্তু মেয়ে হয়ার জন্য তিনি জার্মানীর গটিঞ্জেন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষকের চাকরীর জন্য ও আইন্সটাইনের সাথে গবেষণা করার জন্য তাঁর আবেদন নামঞ্জুর হয়। অবশেষে বেশ কয়েক বছর পর কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সুপইচিত নাম হিল্বার্ট নিজ উদ্যোগে নোয়েথারকে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। কথিত আছে যে হিল্বার্ট মন্তব্য করেছিলেন যে আমরা ত একটা বিশ্ববিদ্যালয়, স্নানাগার নই। এখানে ভর্তির ব্যাপারে লিঙ্গ বাধা হয়ে দাঁড়াবে কেন?
নজর ফেরান যাক অন্যদিকে। চেয়ারম্যান, বস(বড়কর্তা), প্রেসিডেন্ট, প্রধান ইত্যাদি শব্দ শুনলে এখনও অনেকের মনে ব্যক্তিত্বশালী এক পুরুষের প্রতিচছবি ভেসে উঠে। ফর্ব্স্(Forbes) ম্যাগাজিন প্রত্যেক বছর বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ১০০ জন মহিলাদের এক তালিকা প্রকাশ করে। এতে নাম করা কোম্পানী, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির উচু পদে (যেমন প্রেসিডেন্ট, সি ই ও ইত্যাদি) আসীন মহিলাদের নাম উল্লেখ করা হয়। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত তালিকা থেকে সঙ্কলিত সংক্ষিপ্ত কিছু তালিকা ছাপালাম। এদের কেউ বা হয়ত এখন আর নেই সেই পদে । তবুও এক সময়ে যে ছিলেন, নারীদের যোগ্যতা প্রমাণে সেটাই যথেষ্ঠ। আর এটা এও প্রমাণ করে যে যোগ্যতা থাকলে কাঁচের ছাদ ভেদ করে উপরে ওঠা অসম্ভব নয়। উচ্চারণের সমস্যা এড়াতে তাঁদের নামগুলি ইংরেজিতেই লিখলাম।
• Anne Lauvergeon: চেয়ারম্যান, ফ্রান্সের আরিভা কোম্পানী, যা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পারমাণবিক শক্তি কোম্পানী
• Anne M. Mulcahy ; চেয়ারম্যান ও প্রধান, জিরক্স কোম্পানী।
• Patricia Russo ; প্রধান নির্বাহী, আল্কাটেল-লুসেন্ট কোম্পানী
• Indra K. Nooyi : চেয়ারম্যান ও প্রধান, পেপ্সিকো কোম্পানী
• Margaret Whitman: চেয়ারম্যান ও প্রধান, ইবে কোম্পানী
• Clara Furse : প্রধান নির্বাহী, লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ, ইউরোপের সর্ব্বৃহৎ স্টক মার্কেট।
• Safra A. Catz : প্রেসিডেন্ট, অরাক্ল (Oracle)।
• Janet L. Robinson : প্রেসিডেন্ট, নিউ ইয়র্ক টাইম্স।
• Margaret Chan : প্রেসিডেন্ট, বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা (WHO)
• Drew Gilpin Faust : প্রেসিডেন্ট, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
• Shirley Tilghman : প্রেসিডেন্ট, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়
• Susan Hockfield : প্রেসিডেন্ট, এম.আই. টি বিশ্ববিদ্যালয়।
• Nancy Tellem : সি.বি.এস কর্পোরেশন
• Ann Moore : চেয়ারম্যান ও প্রধান, টাইম কোম্পানী
• Stephanie A. Burns : চেয়ারম্যান ও প্রধান, ডাউ-কর্নিং
• Anne Sweeney : প্রেসিডেন্ট, ডিজনী-এবিসি কোম্পানী।
• Christina Gold : প্রেসিডেন্ট ও প্রধান, ওয়েস্টার্ণ ইউনিয়ন।
• Mary G. Berner : প্রেসিডেন্ট, রীডার’স ডাইজেস্ট।
•
এবং আরও অনেকে…
আর এর সঙ্গে উল্লখ না করলেই নয় আমদেরই এই বাংলাদেশের মেয়ে ডঃ আইরীন খান, যিনি এমনেস্টি ইন্টার্ন্যাশনালের মহাসচিব, তিনিই এর প্রথম মহিলা, প্রথম এশিয়ান, প্রথম মুসলিম মহাসচিব। এটা বলাই বাহুল্য হবে যে আমার তালিকা অসম্পূর্ণ, অনেক যোগ্য নারীর নাম বাদ পড়ে গেছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন পর্বতারোহনে নারীরা (বাংলার নারীরাও পিছিয়ে নেই এখানে) সাফল্য দেখিয়েছেন। ইচ্ছা থাকলেও সব ক্ষেত্র বা সবার নাম উল্লেখ করা সম্ভব নয় । কিন্তু মূল বিষয়টি হল এই কথাটাই জোর দিয়ে বোঝান যে নারীরা সবই পারে, সুযোগকে সদ্ব্যবহার করতে তাদের বাধা না দিলে। সেই লক্ষ্যে এই অসম্পূর্ণ তালিকাই যথেষ্ঠ হবে বলে আমার বিশ্বাস।
সব দিবসই আজকাল বেশ উৎসব উৎসব ভাব নিয়ে পালন করা হয় । কিছু কিছু দিবস নিয়ে আমার একটু এলার্জি আছে । নারী দিবস নামে আরেকটা দিবস পালনে নারীদের কি উপকারটুকু হয় বিষয়টা এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি । 🙂
@অপার্থিব, অনেক ধন্যবাদ লেখাটার জন্য। প্রায়ই একটা জিনিষ দেখি, আপনি এমন সব দিনে এমন সব লেখা হাজির করেন যে তাদের আবেদনই আলাদা, আমরা অনেকে (এই ফোরামে) ওই দিনগুলার কথা অনেক সময় ভুলেও যাই।
প্রথমে নামটা দেখে আমার একটু অস্বস্তি হচ্ছিল, আজকের যুগে আমাকে কেউ মনে করিয়ে দিবে যে আমিও ছেলেদের মত সবকিছু পারি, সেটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল, ‘পুরুষ’দের একধরণের ধৃষ্টতা বলেই মনে হচ্ছিল । তারপরে ভেবে দেখলাম, নাহ আসলে হয়তো ঠিকই আছে। আমি যে প্রেক্ষাপটে বসে সেটা ভাবতে পারি, যে সুবিধাগুলো জন্মগতভাবে পেয়ে এসেছি তা সারা পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশী মেয়ে এখনো পায়না। আজকের অধিকাংশ সমাজেই হয়তো এখনও এটা মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন আছে।
@বন্যা আহমেদ,
হ্যাঁ,নামটা একটু বিতর্কিত শোনাবে এই ভয়েই করেছিলাম। তবে বুঝতে পেরেছ জেনে খুশী হলাম। আসলে আন্তরর্জাতিক নারী দিবসটাই ত একটা লিংগভিত্তিক নামকরণ। আমরা ত আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস পালন করি না। আন্তরর্জাতিক নারী দিবস নামের মধ্যেই কারণটা প্রচ্ছন্ন আছে। আশা করি এই বিশেষ দিবস পালনের প্রয়োজন আর হবে না। মানবতা দিবস নামেই সব বৈষম্য ও নির্যাতনের অবসানকে পালন করার জন্য এক দিন বেছে নেয়া হবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এবার আনুষ্ঠানিক শত বর্ষ পূর্ণ হলো। কিন্তু ধর্মীয় মৌলবাদী পুরুষতন্ত্রের নিগরে নারী ঠিকই বাঁধা পড়ে আছে। নারীরা যে পুরুষের সমকক্ষ এবং পুরুষ থেকে কোন অংশে কম নয়, তা আপনার পোস্টের অসংখ্য উদাহরণ থেকে স্পষ্ট। কিন্তু এই যোগ্যতা পুরুষতন্ত্রের কাছে কোন অর্থই বহন করেনি।
এই ধর্মতত্ত্বনির্ভর তন্ত্রটা না ভাঙা পর্যন্ত নারীমুক্তি আসলে কল্পনাই থেকে যাবে।
@রণদীপম বসু,
অসংখ্য ধন্যবাদ এই বাস্তব সত্যটা তুলে ধরার জন্য। অন্য একটি পোষ্টে বন্যা আহমেদ যে প্রসংগটি উল্লেখ করেছিলেন যে
এসব মূল সমস্যা নিয়ে একটি লেখা এই আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মুক্তমনায় আশা করছি।
নারীবাদের জনক মেরী ওলস্টোন ক্রাফট কে নারী দিবসে বড় বেশী মনে পড়ছে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস সফল হোক। :rose2: :rose2:
অপার্থিবের এই লেখাটি আগেই পড়া ছিলো, এ নিয়ে নতুন করে কিছু বল্বার নেই। বিশেষতঃ এই অংশগুলো চিন্তার খোরাক –
রিকশা চালানোরত অবস্থায় পাপিয়ার বোধ হয় একটা ছবিও দেখেছিলাম কোথাও। ছবিটা থাকলে দেওয়ার অনুরোধ করছি।
আমি হাইপেশিয়াকে নিয়ে লেখায় কিছু মন্তব্য করেছিলাম। আজকের নারী দিবসে এগুলো হয়তো প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে –
সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই জ্ঞান-বিজ্ঞানে নারীরা অবদান রেখেছে বিপুল ভাবে। বিশ্বকবি রবিঠাকুর সভ্যতার বিনির্মাণে নারীর কোন অবদান খুঁজে না পেলেও আধুনিক সমাজবিজ্ঞানী, প্রত্নতাত্ত্বিক, এবং নৃতত্ত্ববিদদের মতে মানব সভ্যতার শুরুর প্রথমদিকে নারী-পুরুষের অবদান ছিলো প্রায় সমান সমান। অনুমান করা হয় আগুনের আবিস্কারক ছিলো নারী ৪। যদি তা নাও হয়, এটি নিঃসন্দেহ যে নারীরাই প্রথম আগুন ও তাপ দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে খাদ্য-সংরক্ষণ করতে শিখেছে। নৃতত্ত্ব, প্রত্নতত্ত্ব এমনকি প্রাচীনকালের পুরাণতত্ত্বগুলোও সাক্ষ্য দেয় যে, নারীরা প্রথম থেকেই খাদ্যসংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সংরক্ষণের ভূমিকায় নিয়োযিত ছিলো ১৮। কাজেই যৌক্তিকভাবেই এটি ধরে নেয়া হয় যে নারীরাই সেই ব্যবস্থাগুলোর উন্নতি সাধন করেছে। গবেষকরা এও স্বীকার করেন যে নারীরাই তৈরী করেছে হোর্টিকালচার বা উদ্যানবৃত্তির ১৯। মানব সভ্যতার উষালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত লক্ষাধিক বছর পার হয়ে গেছে, অথচ পুরো সময়কালের শতকরা নিরানব্বই ভাগ সময়ই মানুষ কাটিয়েছে সেই প্রাক-উদ্যানবৃত্তির সময়টিতে যখন পুরুষেরা শিকার এবং মৎসাহরণের সাথে যুক্ত ছিলো, আর মেয়েরা যুক্ত ছিলো গৃহস্থালীর নানা রকমের কাজ আর ফলমূল ও অন্যান্য খাবার-দাবার সংগ্রহ আর সংরক্ষণে। গবেষকরা বলছেন যে, সে সময় শিকারের মাধ্যমে পুরুষেরা যে পরিমাণ খাদ্য সংগ্রহ করতো, তাতে মাত্র ২০ থেকে ৪০ ভাগ প্রয়োজন মিট্তো, বাকী ৬০ থেকে ৮০ ভাগ প্রয়োজনই মেটাতো আসলে নারীরা ১৮। অর্থাৎ নারীরাই ছিল মুলতঃ খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার উদ্ভাবক এবং নিয়ন্ত্রক। প্রাচীন পুরাণ এবং মিথ্গুলোও এই মতকে সমর্থন করে। দেখা যায়, রুটি-রুজির সংস্থানকারী হিসেবে যাদের উপাস্য হিসেবে ভাবা হত তারা সবাই ছিলেন দেবী- অর্থাৎ নারী – আইসিস, সাইবেল, অ্যাগদিস্তিস, দিনদিমিন, ইশতার, আসতারতে, রিঅ্যা কিংবা লক্ষ্মী। প্রায় সব জাতির মধ্যেই যে আদিম রূপকথা প্রচলিত আছে তাতে দেখা যায় স্বর্গের কোন দেবী তার আদ্যাশক্তি বিতরণ করেছিলো এই মর্তের মানুষের মাঝে যার ফলে মানুষ শিখেছিল বীজ বুনতে, উদ্যান তৈরীতে আর কৃষিকাজের জন্য উপকরণ বানাতে। প্রকৃতিজগতেও ‘বৈজ্ঞানিক নারীবাদের’ সমর্থন রয়েছে। যে শিম্পাঞ্জিকুলের সাথে আমরা -গর্বিত মানুষরা- শতকরা প্রায় ৯৯ ভাগ সদৃশ জিন বিনিময় করি, তাদের সাথে তুলনা করেও দেখেছি যে, পুরুষ শিম্পাঞ্জীদের তুলনায় স্ত্রী-শিম্পাঞ্জীরা অনেক বেশী সময় ব্যয় করে ছোট ছোট হাতিয়ার আর যন্ত্রপাতি তৈরীর কাজে। সেগুলো তারা ব্যবহার করে মাটি খোঁড়া আর খাবার সংগ্রহে ৭।
সম্ভবতঃ মেসোপটেমিয়ার মুরিবেতের মেয়েরাই সর্বপ্রথম ভূমি-কর্ষণ করে বীজ বুনতে শিখেছিলো খ্রীষ্টের জন্মের ৮০০০ বছর আগে ১৮। সে সময় প্যালেস্টাইনে মেয়েরা শিখেছিলো শস্যক্ষেত্র আর সবজি বাগানের পরিচর্যা করতে, আর তুরস্কে গম থেকে রুটি বানাতে। পরবর্তীকালে মৃৎপাত্র তৈরীর রাসায়নিক প্রক্রিয়া, সুতা কাটার বিদ্যা, তাঁতের প্রযুক্তি আর শণ ও তুলার রকমারি উদ্ভিদবিদ্যা শেখানোর কৃতিত্ব শুধুমাত্র নারীদের। নারীরাই প্রথম চিকিৎসক, শিল্পী আর প্রকৌশলী ৪। কাজেই এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে নারীদের কর্মস্থল শুধু রন্ধনশালা আর শয়নকক্ষেই সীমাবদ্ধ ছিলো না, নারীরা পুরুষদের সাথে পাল্লা দিয়ে উন্নয়ন ঘটিয়েছিলো সে সময়ের জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তির।
আজ তবে নারী বিজ্ঞানী, গবেষক, গণিতবিদ আর প্রযুক্তিবিদদের এত অপ্রতুলতা কেন পুরুষদের তুলনায়? এ প্রশ্ন উঠতেই পারে। পুরুষের পাশাপাশি একদিন যে নারী পত্তন করেছিলো, বিস্তার ঘটিয়েছিলো প্রযুক্তি-নির্ভর সভ্যতার, আজ সে নারীর অধিকাংশই প্রযুক্তি আর সভ্যতা থেকে যোজন মাইল দূরে; পর্দা, প্রথা, বিশ্বাস-অপবিশ্বাস আর হাজারো পুরুষতান্ত্রিক নিয়মের ঘোরটপে বন্দি। এ তো নারী জাতির এক পরাজয়ই বটে। কখন তাহলে ঘটেছিলো নারী জাতির এই ‘ঐতিহাসিক পরাজয়’? অনেক গবেষকই আজ দায়ী করেন কৃষিব্যবস্থাকে ২০। তারা মনে করেন হোর্টিকালচার থেকে কৃষিব্যবস্থার উত্তোরণে সভ্যতা এগিয়েছে অনেক, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে দু’দুটি প্রগতিশীল মানবিক সত্ত্বাকে। কৃষিকাজের উদ্ভবের পর থেকেই নারীরা বন্দি হয়েছে গৃহে; মূলতঃ নিয়োযিত হয়েছে গৃহস্থালির পরিচর্যায় আর সন্তান লালন-পালনে, আর কৃষিব্যবস্থার ফলেই নিখুঁতভাবে তৈরী হয়েছে শ্রমবিভাজনের, পরবর্তীতে ব্যক্তিগত মালিকানার। আর এ ব্যবস্থার ক্রমোত্তরনেই নারী ক্রমশঃ বিচ্ছিন্ন হয় খাদ্যোৎপাদনের তথা প্রযুক্তির মূলস্রোতধারা থেকে। এঙ্গেলস তার ‘পরিবার, ব্যক্তিগত মালিকানা ও রাষ্টরের উৎপত্তি’ (১৮৮৪) নামের কালোত্তীর্ণ বইটিতে দেখিয়েছেন ব্যক্তিগত মালিকানার উদ্ভবের সাথে সাথে একসময় সম্পদ বাড়তে থাকে, আর সেই সম্পদই শেষ পর্যন্ত শত্রু হয়ে দেখা দেয় নারীর। অরণ্যপর্ব থেকে মানুষ যখন পৌঁছোয় কৃষিপর্বে, তখন সম্পদশালী হয়ে ওঠে বিভিন্ন গোত্র। একসময় ওই সম্পদ অধিকারে চলে আসে গোত্রপতিদের; তারা হয়ে ওঠে সম্পদশালী, উদ্ভাবন ঘটে ব্যক্তিগত মালিকানার। সম্পদ যত বাড়তে থাকে পরিবারে নারীদের থেকে গুরুত্ব বাড়তে থাকে পুরুষদের, পুরুষ মাতৃধারার প্রথা ভেঙে সৃষ্টি করে পিতৃতন্ত্রের প্রথা, নারী পরিনত হয় পুরুষের সম্পত্তিতে।
ইতিহাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখা গিয়েছে বিজ্ঞান, গণিতশাস্ত্র, আর চিকিৎসাবিজ্ঞানে নারীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু ইতিহাসবেত্তারাই মানব সভ্যতার ইতিহাস লিখতে গিয়ে তা বারবার এড়িয়ে গিয়েছেন। অটোমান স্ট্যানলি তার ‘মাদারস এন্ড ডটারস অব ইনভেনশন’ বইটিতে হাজারো দৃষ্টান্ত হাজির করে দেখিয়েছেন যে, পুরুষেরা যখন কোন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ঘটিয়েছে তখন তা পুংখানুপুংখভাবে লিপিবদ্ধ করে রেখেছে, কিন্তু নারীরা যখন কোন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ঘটিয়েছে তখন তা চলে গেছে বিস্মৃতির অন্তরালে। ইতিহাসবিদরা ঢালাওভাবে বলেছেন ‘কে, কখন, কিভাবে এ প্রযুক্তি আবিস্কার করেছেন তা সঠিকভাবে বলা যায় না’। বহু ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে, মেয়েরা যে সমস্ত কাজকর্মে নিয়োজিত ছিল সেগুলোর ক্ষেত্রেই অমন ঢালাও ‘স্টেরিওটাইপিং’ করা হয়েছে। স্পিনিং হুইল বা চরকা এমনি একটি উদাহরণ। সম্ভবত নারীরাই এটির উদ্ভাবন ঘটিয়েছিলো চীন দেশে, কিন্তু আজ তার কোন লিপিবদ্ধ ইতিহাস পাওয়া যায় না, অথচ সেই চরকা যখন তের শতকের পর পশ্চিমা বিশ্বে প্রবেশ করে ‘পুরুষের হাতে’ উন্নত আর বিবর্ধিত হয়, তা তখন থেকেই যেন তা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করার আগ্রহ শুরু হয়ে যায়।
তারপরও পুরুষতান্ত্রিক ইতিহাসের জাল ভেদ করে অনেক নারীই প্রতিটি যুগে আমাদের সামনে চলে এসেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন হাইপেশিয়া, মাদাম কুরী, লরা বেসি, সোফিয়া কোভালেভস্কায়া, লিস মিন্টার প্রমুখ। এ কজন ছাড়াও আরও আছেন ক্যারলিন হারসেল, মেরী অ্যানী ল্যাভরশিয়ে এবং ডি.এন.এ এর উদ্ভাবক রোজালিন ফ্র্যাঙ্কলিন। এদের সবাই গবেষণাগারে পুরুষ সহযোগীদের সাথে একনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন; অথচ ওই সহযোগীরাই তাঁদের অবদানকে অনেক সময়ই অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছেন। ফ্র্যাঙ্কলিনের কথা তো বলাই যায় – ডি.এন.এর ‘যুগল সর্পিলের’ রহস্যভেদ করার পরও প্রাপ্য কৃতিত্ব থেকে তাঁকে ইচ্ছে করেই বঞ্চিত করা হয়েছে। জোসলিন বেল পালসার আবিস্কারের পরও নোবেল পুরস্কার পাননি, পেয়েছেন তাঁর পুরুষ সহযোগী অ্যান্থনী হিউয়িশ ২১। আইনস্টাইন আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব নিয়ে লিখিত যুগান্তকারী পেপারটিতে তার স্ত্রী মিলেভা আইনস্টাইনের অনেক অবদান থাকা সত্ত্বেও তা এড়িয়ে গেছেন ২২। ভেরা রুবিন ‘ডার্ক ম্যাটার’বা গুপ্ত পদার্থ আবিস্কারের পরও স্বীকৃতি পেতে তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। উনিশ শতকে ব্রিটেন এবং আমেরিকায় এমন আইনও করা হয়েছিলো, বিবাহিত নারীরা যদি কোন ‘পেটেন্ট’ উদ্ভাবন করে থাকেন, তা স্বামীর সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হবে ৭। এ সব কিছুই পুরুষেরা ব্যবহার করেছে নারীর উদ্ভাবনী শক্তিকে অবদমিত আর ব্যহত করার কাজে। এটি নিঃসন্দেহ যে, নারীরা সভ্যতা-নির্মানের এক বড় অংশীদার হওয়া সত্ত্বেও পুরুষশাসিত সমাজের সীমাবদ্ধতায় পথ হারিয়েছে বারে বারে। কিন্তু যে নামটি সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব নিয়ে উঠে এসেছে, যার মৃত্যুর সাথে জড়িয়ে আছে আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারের ধ্বংস, আর মধ্যযুগীয় অন্ধকার যুগের সূচনা – তিনি হলেন হাইপেশিয়া।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস সফল হোক।
@অভিজিৎ,
পাপিয়ার ছবি আমার geocities website এ ছিল। কিন্তু ইয়াহু geocities বন্ধ করে দেয়াতে ওটা হারিয়ে যায় ওয়েবাকাশ থেকে। আমি ছবিটা আমার নীচের সাইটে তুলে রেখেছিঃ
http://www.angelfire.com/space2/aparthib/image/papiya.gif