২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০৪ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান লেখক হুমায়ুন আজাদের উপর মৌলবাদ ঝাপিয়ে পড়েছিলো ধারলো অস্ত্র নিয়ে। রক্তাক্ত করেছিলো এই সাহসী মানুষটিকে। পরবর্তীতে জার্মানিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন, যদিও তাঁর পরিবারের সদস্য ও অসংখ্য ভক্ত অনুরাগীরা এখনো মনে করেন যে ওই মৌলবাদী অপশক্তিই তাঁকে জার্মানিতে সুকৌশলে হত্যা করে। ড. আজাদের হত্যা প্রচেষ্টা মামলার চার্জশিট দেয়া হবে আগামী ৪ মার্চ। এ বিষয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রচারিত হয় ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ একুশে টেলিভিশনে। দিপু সিকদারের এই প্রতিবেদনটি মুক্তমনার সদস্যদের জন্যে ইউটিউব থেকে এখানে তুলে দেয়া হলো।
httpv://www.youtube.com/watch?v=XcsbXTQIYw0
হুমায়ুন আজাদের দেশত্যাগের কয়েকদিন আগে বলে তাঁর পুত্রকে অপহরণ করা হয়েছিল এবং তাঁকে হুমায়ুন আজাদের বৃত্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল(হুমায়ুন আজাদের বৃত্তি নিয়ে বিদেশে যাওয়ার খবর খুব সম্ভবত তখনও পরিবারের বাইরে প্রকাশ করা হয়নি)। এটা খুবই রহস্যজনক।
আমার জানা ছিল না যে এই মামলার চার্জশীট এখনো ঝুলন্ত। পত্রিকায় পড়েছিলাম যে মুফতি হান্নান স্বীকার করেছিল।
হুমায়ুন আজাদকে জার্মানীতেও মৌলবাদী চক্রই কোনভাবে হত্যা করেছে এ ধারনার কি কোন সূত্র বা পরোক্ষ প্রমান আছে, নাকি শুধুই শোকাত পরিবারের আবেগপ্রবন সন্দেহ?
@হাসানআল আব্দুল্লাহ,
কথাটা ‘চার্সশিট’ না বলে ‘চার্জশিট’ বলা উচিত না?
@বন্যা আহমেদ,
আপনি ঠিকই বলেছেন, “চার্জশিট”ই হওয়া উচিত। ধন্যবাদ।
@আদিল মাহমুদ,
এখানে দেখুন। ডেইলি স্টার -Mon. June 05, 2006 ঃ
A Jama’atul Mujahideen Bangladesh (JMB) commander yesterday confessed to not only attacking noted writer Hymayun Azad, but also killing a writer of Tangail in 2000 at the directives of JMB chief Abdur Rahman for making “indecent remarks” about Allah and the prophet in their books.
তবে জার্মানীতেও মৌলবাদী চক্রই কোনভাবে হত্যা করেছে – এটার বোধ হয় কোন সঠিক সূত্র নেই, অন্ততঃ আমার জানা নেই। যদিও ঠিক একই সময় মৌলানা নিজামী এয়ার্পোর্টে যাওয়া, তার আঘাত নিয়ে বহুল প্রতাশিত বইয়ে হাত দেয়ার সময়েই মৃত্যু হওয়া, তার মৃত্যু সংবাদ পেতে তিন্দিন দেরী হওয়া সহ অনেক ঘটনাই রহস্যাবৃত। আমি হুমায়ুন আজাদ মারা যাওয়ার পরে তাৎক্ষণিকভাবে একটি লেখা লিখেছিলাম- এ লাশ আমরা রাখব কোথায়, তেমন যোগ্য সমাধি কই? সেখানে অনেক প্রচ্ছন্ন সংশয়ের কথাই জানিয়েছিলাম, কিন্তু পরে স্বীকার করেছিলাম – হয়তো সবগুলোই কেবল জমে থাকা অস্বস্তি, হয়তো আবেগপ্রবন সন্দেহই।
@অভিজিৎ,
হ্যা, আমিও সেটাই জানতাম, হরকতুল জিহাদ জড়িত ছিল সেটা পড়েছিলাম তবে মামলা আদালতে উঠেছিল কিনা তা জানতাম না।
হুমাহুন আজাদ মারা যাবার পর আমারো তাতক্ষনিকভাবে তেমন সন্দেহ হয়েছিল, তবে তার স্বপক্ষে তেমন কোন তথ্য পাইনি। তবে নি:সনেহে সেই মৃত্যু আপাত দৃষ্টিতে হত্যা না হলেও সেটা তো মূল হত্যা চেষ্টারই বিলম্বিত ফলাফল তাতে তো কোন সন্দেহ নেই।
“A German embassy official told the family that the professor had died, possibly of a heart attack, sometime between Tuesday evening and Wednesday morning. …But the professor’s daughter, Mouli Azad, said her father had had a full check-up before his departure. ‘So the theory that he died of a heart attack is not believable to us, there must be something behind it,’ she said. …Professor Arefin Siddiqui said, ‘We want a full report on how he died and in which circumstances. He had received a threat on his life before his departure, so everyone here is skeptical.’ …Two month ago, a death threat against the professor and two colleagues was faxed to the press…” [BBC News/হুমায়ুন আজাদ: রক্তাক্ত কবির মুখ, হাসানআল আব্দুল্লাহ, সাহিত্য বিকাশ, ঢাকা, ২০০৭]
জার্মান পেন-এর কেরিন হারজলিখ আমাকে এক চিঠির জবাবে জানান, “The final report of the causes of death will not be available to anyone…” ধারণা করা হচ্ছিলো যে ড. আজাদ অতিরিক্ত এ্যালকোহল সেবনে মারা গেছেন। সেটিও উড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী, লতিফা কোহিনূর। “২০০৬ সালে … জানালেন যে অনেক পীড়াপীড়ির পরে বাংলাদেশে অবস্থিত জার্মান দূতাবাস তাঁদের কাছে যে রিপোর্ট পাঠায় তাতে মৃত্যুর পরে হুমায়ুন আজাদের রক্তে এ্যালকোহলের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।” [ঐ]
…মৌলি আজাদ, অধ্যাপক আরিফেন সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের মনে ড. আজাদের অমন ভাবে জার্মানিতে যাওয়ার সাথে সাথে মৃত্যুবরণ করার প্রশ্নে যে সংশয় তৈরী হয়েছিলো তার বিপক্ষে ইতিবাচাক উত্তর পাওয়া যায়নি। এবং অনেক পরে মার্কিন এক টিভি চ্যানেলে জার্মানিতে এই ধরণের মৃত্যুর পোস্টমর্টেম রিপোর্টের প্রতি ৩টির মধ্যে যে দু’টিই ভুল তা দেখে আমি আঁৎকে উঠেছিলাম। অতএব যারা মনে করেন যে ড. আজাদকে মৌলবাদীরা সুকৌশলে হত্যা করেছিলো আমি নিজেও তাদের একজন। আমার উল্লিখিত বইয়ের আরো কিছু তথ্য এই বক্তব্যকে স্পষ্ট করবে বলেই ধারনা করি।
যুগ যুগ ধ রে সব সমাজে দেখা গেছে যে মাত্র গুটিকয় সাহিত্যিক,দার্শনিক ও বিজ্ঞানিরা তাদের সমাজকে সকল নিকষ অন্ধকারের বিরু্দ্ধে লড়াই করে সামনে নিয়ে গেছেন তেমনই একজন আমাদের প্রথিতযসা জ্ঞানের অধিকারী হুমায়ন আজাদ।কি দূভার্গ্য আমাদের এই বাংগালি জাতির,এমন দূ্র্লভ মানুষটিকে আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি চির-অন্ধকারের প্রতিভু নর-পিশাচ,বর্বর মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারনা বহনকারী জামাতে-ই ইসলাম ও ক্ষমতার অন্যপিঠ আরেক জালিম,ফ্যাসিষ্ট বি,এন,পি সরকার তথা তাজা রক্ত পিপাসু হায়েনাদের ঘৃন্য মৃত্যুর ছোবল থেকে।এই জালিমরা যেমন ৭১ সালে পূর্ব পরিকল্পতিভাবে আমাদের দেশ কে মেধাশুন্য করেছিল তারাই আবার তার-ই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ বছরে দেশের অনেক প্রগতিশীল লোকদের হত্যা করেছে,কিন্তু এমন এক টাও নজির নাই কোন লেখক,সাংবাদিকরা ঐ মধ্যযুগীয় বর্বরদের হত্যা করেছে।আশা করছি আদালত হুমায়ন আজাদের মামলার চার্জসিট গ্রহন করার পর অতি দ্রুত খুনীদের খুঁজে বের করে বিচারকের রায় অনুযায়ী তাদের ফাঁসিকাস্টে সোপর্দ করবে।
কবি হাসানআল আব্দুল্লাহকে কোটি কোটি আন্তরিক ধন্যবাদ আমাদের প্রানের কবি,সাহিত্যক,দার্শনিক ও সম্পূর্ন বিজ্ঞানমনস্ক হুমায়ন আজাদ এর উপর ২১শে টিভির ভিডিও ক্লিপটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
ভালো থাকবেন।