মাহবুব ভাই, ভার্সিটির অন্যতম সিনিয়র একজন মানুষ। কোন সালে ভর্তি হয়েছিলেন সেটা তার মনে নেই। লোকমুখে শুনেছি অনেক ভাল ছাত্র ছিলেন। তবে মেহনতি মানুষের পাল্লায় পড়ে দ্বীনের মেহনতে সময় লাগিয়ে দুনিয়ার জীবনকে তেমন একটা সময় দিতে পারেননি। কবে পাস করবেন জিজ্ঞাসা করলে বলেন, রাখ মিয়া পাস। তুমি তো সময় লাগাওনা। আখেরাতে বুঝবা কি করলা। কিছুদিনের এই দুনিয়ায় পিঠে বোঝা নিয়া কোনরকমে পার কইরা মহান আল্লাহ তায়ালার রহমতের দৃষ্টিতে থাকতে পারলেই ইহজীবন সার্থক। এ কথা বলার পর তিনি কিছু একটা ভেবে পুলকিত হন। আমিও হেসে বলি, ৭০ সংখ্যাটার মাহাত্যই আলাদা তাই না মাহবুব ভাই?

হঠাৎ-ই উনার এর সাথে দেখা। হাপাতে হাপাতে এসে আমাকে বললেন, আনাস, তোমার বাসায় যাব। খুব জরুরি কাজ আছে। এখানে দুটা বিষয় উল্লেখ্য। একঃ মাহবুব ভাই সারাক্ষন দৌড়ের উপর থাকেন। কারন বান্দা আল্লহর দিকে আস্তে হাটলে তিনি জোড়ে হাটেন। আর জোড়ে হাটলে আল্লাহ দৌড়ে আসেন। তবে বান্দা যদি দৌড়ের উপর থাকে তাহলে আল্লাহ কি করেন সেটার উত্তর তিনি অবশ্য দিতে পারেন নাই। তাও তিনি দৌড়ের উপর থাকেন। আর দুইঃ ইয়ো যুগে তিনি আমার কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার সরবরাহ কারী। কিছুদিন পর পর পিসি আপগ্রেড করায় তার পুরাতন হয়ে যাওয়া প্রায় নতুন যন্ত্রাংশগুল আমার পিসিতে লাগিয়ে দিয়ে বলতেন পরে টাকা দিও। ওনার এ ঋন কোনদিন শোধ করতে পারব না।

যাই হোক। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনার চল্লিশদিন শেষ? উনি বললেন, না; উনচল্লিশ দিন হয়েছে। ভীষণ গুরুত্বপুর্ণ কাজ়ে একদিন আগেই এসে পড়েছেন। জানালেন যে ফায়দা বৈঠকে কিছুদিন আগে চিকিৎসা শাস্রের গুরুত্বপুর্ণ কিছু বিষয় জেনেছেন। সেগুল নিয়ে গবেষনা পত্র লিখবেন। বাসায় পৌছতে সন্ধ্যা হয়ে এল। এসে উনাকে পিসি ছেড়ে দিয়ে নিজের কাজটাজ সেরে উনার পাশে বসতেই উইন্ডোগুল মিনিমাইজ করে দিলেন। বললেন ওই দিকে যাও। আমি বললাম দেখিনা কি লেখেন। উনি চেয়ার থেকে উঠে আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলেন। নিজের বাড়িতে ঘরহীন হয়ে ভাবলাম কি করা যায়। সোফায় বসে ভাবতে ভাবতে ঘুম এসে গেল। সকালে উঠে দেখি মাহবুব ভাই নাই। পিসি ছেড়ে দেখি মাহবুব ভাই তার গবেষনা পত্র রেখে গেছেন। তার সেই অমুল্য মাস্টার পিসটি কপিরাইটের আগেই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।

বিশ্বনবীর চিকিৎসা শাস্র

মুখবন্ধঃ আমাদের দয়াল নবী ছিলেন সকল যুগের স্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী। জগতের সকল জ্ঞান আল্লাহ তাকে দিয়েছিলেন। চিকিৎসা শাস্রও এর বাইরে নয়। এ শাস্রে বিপ্লব তার হাত দিয়ে ঘটে। আজকে আমরা তার বিখ্যাত সব চিকিৎসা পরামর্শ সম্পর্কে জানব তাঁর হৃদয় গলানো সব হাদিস থেকে।

মধুঃ নবীজি মধু ভীষন পছন্দ করতেন। যে কোন রোগের চিকিৎসায় তিনি মধু খেতে পরামর্শ দিতেন। যেমনঃ

আবু সাঈদ বলেনঃ এক লোক এসে রাসুলের কাছে বললেন যে আমার ভাই এর পেট খারাপ (লুস মোশন) হয়েছে। রাসুল বললেন, তাকে মধু খাওয়াও। লোকটি পুনরায় এসে জানালেন মধু খাওয়ানোর পর তার অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। রাসুল বললেন, আল্লাহ সত্য বলেছেন, আর তোমার ভাই এর পেট মিথ্যা বলেছে।

ভলিউম ৭ বই ৭১ হাদিস নং ৬১৮

মন্তব্যঃ রাসুল এক মুঠো গুর আর লবনের ঘুটা জানতেন না। তাই সকল মুসলমানের কোন প্রকার ওরস্যালাইন না খেয়ে মধু খাওয়া উচিত।

কালিজিরাঃ সকল রোগের মহৌষোধ কালিজিরা। হাদিস থেকে আমরা পাইঃ

আবু হোরায়রা হতে বর্ণিতঃ রাসুল (সাঃ) বলেছেন, মৃত্যু ব্যাতীত সকল রোগের প্রতিশেধোক কালিজিরায় রয়েছে।

ভলিউম ৭ বই ৭১ হাদিস নং ৫৯২

মন্তব্যঃ এখানে সেখানে প্রতিশেধক না খুজে কালিজিরার গবেষনায় মনযোগ দেয়া উচিত। আর তাছারা কালিজিরা যে কোন মুদি দোকানে পাওয়া যায়। সরকারের উচিৎ সকল ওষুধ কোম্পানি বন্ধ করে কালিজিরার উৎপাদন বাড়ানো।

খেজুরঃ আরব দেশের খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু একটি ফল। ইহার মধ্যে ঔষধী গুনও ব্যপক। যেমনঃ

সাউদ হতে বর্ণিতঃ রাসুল বলেছেন, কেউ যদি প্রত্যেকদিন সকালে নরম শুকনো খেজুর খায়। তাহলে সে ব্যক্তি ঐদিন যে কোন বিষক্রিয়া ও যাদু থেকে মুক্ত থাকবে।

ভলিউম ৭ বই ৭১ হাদিস নং ৬৬৩

মন্তব্যঃ মাদানী খেজুর আমদানি বাড়াতে হবে। সকল নাগরিকের উপর সাতসকালে খেজুর খাওয়া বাধ্যতামুলক করতে হবে। এতেকরে বিষ খেয়ে কেউ আত্মহত্যা করতে পারবে না। আর উপরি পাওনা হিসেবে জাদু থেকে সুরক্ষাতো আছেই। যা তাবিজ কবজের ব্যবসা কমাতে সহায়ক হতে পারে।

মাথার উকুন প্রতিরোধঃ আমরা সরাসরি হাদিসটি জানি।

কাব বিন আজরাহ বলেন। হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় রাসুল আমার কাছে আসেন। তখন আমি রান্নার জন্য আগুন জালাচ্ছিলাম এবং উকুন আমার মাথা থেকে পড়ছিল। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার উকুন কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে। আমি বললাম হ্যা। তিনি বললেন মাথা ন্যাড়া করে ফেল। তিনদিন রোযা রাখ। ছয়জন গরীবকে খাওয়ায় ও একটা ভেড়া কুরবানি কর।

ভলিউম ৭ বই ৭১ হাদিস নং ৬০৪

মন্তব্যঃ রাসুলের যুগে ইংলিশ উকুন নাশক বা ক্লিয়ার ছিল না। এসব কোম্পানি মুলত ভাওতাবাজী ছাড়া কিছুই না। রাসুলের এ পদ্ধতি অনুসরন করলে নাপিতদের কাজ বারবে। গরীবের উপকার হবে এবং পশু বিক্রিও বারবে। যা আমাদের মত দেশের ব্যপক উন্নয়ন ঘটাবে। আর তাছারা উকুন বাছতে আমরা পরস্ত্রীর কাছে গমন করতে পারি। তবে কু-মতলব থেকে দূরে থাকতে হবে। ভলিউম ৪ বই ৫২ হাদিস নং ৪৭

দুধ ও পেশাবঃ দুধের ব্যপক গুনাবলীর কথা আমরা জানি। কিন্তু উটের পেশাবের ঔষধী গুন কি আমরা জানতাম? সেটা আমাদের পেয়ারা নবী-ই জানিয়েছেন। এ বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদিসটি পড়িঃ

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত কিছু লোকের মদীনার আবহাওয়া প্রতিকুল মনে হচ্ছিল। রাসুল তাদেরকে উটের রাখালের সাথে বাস করতে এবং উটের দুধ ও পেশাব খেতে। তারা রাখালের সাথে থাকতে লাগল এবং কিছুদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠল। এরপর তারা রাখালকে মেরে তার উট নিয়ে পালাতে লাগল। খবর পেয়ে রাসুল তাদেরকে ধরে আনতে বললেন। তাদেরকে রাসুলের সামনে উপস্থাপন করার পর তিনি তাদের হাত পা কেটে এবং চোখে সুচ ফুটিয়ে হত্যা করার আদেশ দিলেন। এটা কিসাসের বিধানের আগের ঘটনা।

ভলিউম ৭ বই ৭১ হাদিস নং ৫৯০

মন্তব্যঃ অনেক ঔষধ আমাদের কাছে তিক্ত মনে হয়। তাই পেশাবও অনুরুপ হতে পারে। তবে এর পর্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হিসেবে চুরি, খুন ইত্যাদি ঘটানোর সম্ভবনা আছে। শুধুমাত্র রেজিস্টার্ড হুজুরের পরামর্শে সেব্য।

চলবে…

ভাইজান এখানেই উনার কাজ বাকী রেখে গিয়েছেন। নবিজী জ্বরকে মনে করতেন জাহান্নামের আগুনের তাপ। মুখের দাগকে মনে করতেন শয়তানের দৃষ্টি। জাদুতে আক্রান্ত হয়ে কয়েক মাস পরে থেকেছেন এবং এর প্রতিশেধক ও দিয়েছেন। তিনি ঝারফুকে প্রাপ্ত সম্পদের ভাগ নিতেন। তার লিখিত কুরানের আলোকে চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রবন্ধ ছাপা হবে জেনে আমি খুবই আশাবাদী যে মাহবুব ভাই এর প্রবন্ধও একদিন প্রকাশিত হবে। ভাবছি তাকে পটিয়ে আমার নাম টাও ঢুকিয়ে দিব। এখন মাহবুব ভাই তাড়াতাড়ি ফিরলেই হয়।

* বি.দ্রঃ সবগুলো হাদিস সহি বুখারি থেকে নেয়া।