প্রবন্ধটি ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের মতামত কলামে গত ৩১শে ডিসেম্বর ২০০৯-এ প্রকাশিত অধ্যাপক লরেন্স ক্রাউসের প্রদত্ত মতামত A Dark Matter Breakthrough?-র ভিত্তিতে সংকলিত এবং ভাষান্তরিত।
গত ডিসেম্বরের প্রথম দিকের ঘটনা। উত্তর মিনেসোটার সুদান খনির গভীরে কাজ করছেলেন একদল গবেষক। শীতল কৃষ্ণবস্তু অনুসন্ধানী দলের সদস্যরা সতর্কতার সঙ্গে সম্ভাব্যতার আভাস দিলেন যে অতি প্রত্যাশিত বিষয়ের সন্ধান সম্ভবতঃ তাঁরা পেয়েছেন। একটি অতি প্রারম্ভিক কণার সরাসরি অস্তিত্ব প্রমাণের উদ্দ্যেশ্যে প্রয়োজনীয় পরীক্ষাটির অনুকল্পটি গ্রহীত হয়েছিলো। বিঞ্জানীকূলের ধারনা, কৃষ্ণবস্তু গঠনে এদের সরাসরি ভুমিকা আছে। ধারনা করা হয় যে, এই পদার্থ কণাগুলোরই আসলে রয়েছে প্রত্যক্ষ্য ভূমিকা আমাদের মিল্কীওয়ে গ্যালাক্সি সহ অন্যান্য গ্যালাক্সি এমনকি বিশ্ব-ভ্রম্মান্ডের সর্ব্বত্র বস্তুর ভর সৃষ্টির পেছনের রহস্য হিসেবে।
জানা যাক প্রাপ্ত ফলাফল তাহলে কি বলে! গত ১৭ই ডিসেম্বর, ২০০৯ §CDMS-বিশেষঞ্জ দলের সদস্যরা জানান, গতবছরের অক্লান্ত চেষ্টায় কৃষ্ণ-বস্তুর যথাযথ সাড়া হিসেবে অন্ততঃ দু’টি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি পাল্স তাঁরা অতি নিখূঁত ভাবে সনাক্ত করতে পেরেছেন! তাঁরা আরোও নিশ্চিত করেছেন এই বলে যে, সনাক্তকৃত পাল্স দুটি যে সম্ভাব্য কৃষ্ণ-বস্তুরই এতে কোন সন্দেহ নেই যদিও চুলচেড়া বিশ্লেষনের আগে শতকরা ২৫ভাগ সম্ভাবনা ধরে রেখেছেন এই খাতে, যেখানে খনির আভ্যন্তরিন অবহ (Background) কিংবা ডিটেক্টরের পারিপার্শিক রেডিও আ্যক্টিভিটির কারণ জনিত পাল্সও এগুলো হতে পারে। তবে এধরনের বিভ্রান্তির অবকাশ তাঁরা প্রায় নাকচ করে দিয়েছেন। অবধারিত চাঞ্চল্যকর এবং শিহরণ জাগানো সংবাদ কোন সন্দেহ নেই!
সত্তরের দশকের শুরুতে কণা পদার্থ বিঞ্জানীরা জানতে পারেন, দৃশ্যমান ভরের বাইরেও এক বিপুল পরিমান ভরের আস্তিত্ত্ব রয়েছে এই সুবিশাল ভ্রম্মান্ডে! তাঁরা এটি পর্যবেক্ষন করেছিলেন মূলতঃ গ্যালাক্সি গুলোর গতি এবং এদের ঘুর্নন প্রকৃতির বিন্যাস থেকে। তাৎক্ষনিক এক হিসেব থেকে জানা যায় এই অদৃশ্য ভরের পরিমান দৃশ্যমান ভরের অন্ততঃ দশ গুন বেশী! CDMS সংশ্লিষ্ট বিঞ্জানীদের প্রাপ্ত তথ্য সেসময় বিশ্বজুড়ে সংবাদ মাধ্যম গুলোতে রীতিমতো ঝড় তুলেছিলো। বিঞ্জান মহলে আলোচিত হচ্ছিলো যে, প্রাপ্ত তথ্য গুলো হয়তো পুরোপুরি বাস্তব নয়, তবে যদি তা সত্যিই বাস্তব হিসেবে ধরা পড়ে, তবে তা বিঞ্জানের জগতে এক বিষ্ময়কর অনুসন্ধানী চর্চা হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করবে!
প্রায় সমসাময়িক কালেই অপর একদল তত্ত্বীয় পদার্থবিদদের হিসেবে এবং সংশ্লিষ্ট সিমুলেশনে স্পষ্টই প্রতিভাত হয় যে, জ্যোতির্পদার্থ বিঞ্জানীদের গ্যালাক্সি গুলোর নিজস্ব মহাকর্ষীয় বলের উৎস সংক্রান্ত তত্ত্বের ভিত্তি যেনো সুসম এবং সবল! তখনকার সেই তত্ত্বীয় হিসেবের নীরিখে আরো অনুমান করা হয় যে, কিছু নতুন ধরনের পদার্থকণার অস্তিত্ত্ব সম্ভবতঃ রয়েছে যারা অপরাপর পদার্থকণার মতো পরষ্পরের প্রতি সংবেদনশীল নয় কিংবা ক্রীয়াশীল নয়। আর এই বিশেষ পদার্থ কণা গুলোই গ্যালাক্সিগুলোর বিশেষ আকৃতিগত বৈশিষ্ঠ্যের জন্যে দায়ী। ওদিকে একেবারেই ভিন্ন একটি ক্ষেত্র, প্রাথমিক কণা পদার্থবিদ্যার সাম্প্রতিক গবেষনায় যে ফলাফল পাওয়া গেছে, দেখা গেছে, আ্যরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির অরিজিন ইন্সস্টিটিউটের ডাইরেকটর, বিক্ষ্যাত তত্ত্বীয় জ্যোতির্পদার্থবিদ লরেন্স ক্রাউস এর মতে সেটা তাঁদের অনুধাবনীয় অদৃশ্য বস্তু কিংবা ডার্ক ম্যাটার এর অন্তর্নিহিত প্রাথমিক কণার সম্ববতঃ ধারক! কারন, ফলাফল এবং আচড়নগত দিক দিয়ে এদের সাদৃশ্য উভয় মহলকেই আজ অস্থির এবং প্রাঞ্জল করে তুলেছে। আর এই প্রান-চাঞ্চল্যতার প্রধানতম কারন হলো সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ লার্জ হেড্রন কলাইডার এর সাম্প্রতিক ফলাফল। বিগত দু’মাস ধরে সেখানে চলছে ব্যাপক অনুসন্ধান এবং কর্মযঞ্জ! নিশ্চিত কোন ফলাফল প্রকাশিত নাহলেও বিঞ্জানীদের ধারনা, তাঁরা সহস্রাব্দের এক অবিস্মরণীয় বিস্ময়ের খুব কাছাকাছি-ই পৌঁছেছেন। আর জ্যোতির্পদার্থবিদ্যার গবেষক বৃন্দ উন্মুখ হয়ে রয়েছেন তাঁদের কৃষ্ণবস্তুর জ্যোতির্ময়তার সন্দর্শনে! তাঁদের ধারনা, এখানেই সরাসরি কৃষ্ণবস্তুর সন্ধান তাঁরা পাবেন।
তত্ত্বীয় পদার্থ বিঞ্জানীরা বহু আগেই অনুধাবন করেছিলেনন যে, আদিতে মহাবিস্ফোরণকালীন সময়ে সৃষ্টি হয় বিপুল পরিমান আদি কণা, সেই আদিকণা গুলোই যেমন বস্তু সৃষ্টির অন্যতম উৎস, তেমনি একই রহস্য সম্ভবতঃ রয়েছে এই কৃষ্ণবস্তু সৃষ্টির পেছনেও। মজার ব্যপার হলো এই নতুন কণা গুলোর গুনাগুনও অদ্ভুত ভাবে সমর্থন করে কৃষ্ণবস্তুর প্রাপ্ত উপাত্যগত ধর্ম এবং প্রত্যাশিত গুনাগুন সমূহকে। বিশ্ব জগত যে ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে বলে ধারনা করা হয় সেই ক্ষেত্রটি প্রকৃতপক্ষে তৈরী হয়েছে এই আদিমতম প্রাথমিক কণার সমন্বয়ে। এই কণা গুলোর বিশেষত্ব হলো এরা সাধারন বস্তু জগতের পদার্থকণার দ্বারা সংবেদনশীল নয়। অধুনা এই ক্ষেত্রটিকেই বলাহচ্ছে হিগস্ ফিল্ড, এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত তত্ত্বীয় কণা পদার্থবিদ অধ্যাপক পিটার হিগ্স এর নামানুসারে। আর এই ক্ষেত্রস্থিত কণাগুলো কোন রকম বাধা ব্যাতিরেকেই বস্তু জগতের সমুদয় পদার্থ কণার ভেতর দিয়ে অনায়াসে অতিক্রম করার ক্ষমতা রাখে। যেহেতু সাধারন বস্তু কণার সাথে এর সংবেদনশীলতা নেই কাজেই কোন রকম বিপত্তি না ঘটিয়েই এরা আমাদের ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরভাগ অতিক্রম করতে সক্ষম। অর্থাৎ মানুষ, পশু-পাখী, বস্তু-সামগ্রী সহ আমাদের পৃথিবী, গ্রহ-নক্ষত্র সমেত এই বিশ্বব্রষ্মান্ড আসলে রয়েছে হিগ্স ফিল্ডের ভেতরে ডুবে।
তত্ত্বীয় পদার্থ বিঞ্জানীরা যাঁরা অনুধাবন করেছিলেন এবং গানিতিক ব্যাখ্যায় প্রস্তাব করেছিলেন এই ধরনের প্রাথমিক কণার অস্তিত্ত্বের, হয়তো খুব দূরে নয় যে তাঁদের চিন্তা প্রসূত কণা গুলোই আজ আমাদের নাগালের মধ্যে ধরা দিতে চলেছে একাধিক মিনি বিগব্যাং এক্সপেরিমেন্টের মধ্যদিয়ে। আর সেই মিনি বিগব্যং এক্সপেরিমেন্টের মধ্যেই আমরা খুঁজে পাব বহুল প্রত্যাশিত কৃষ্ণবস্তু! সবচেয়ে মজার ব্যপার হলো যে প্রাপ্ত কণাগুলোর আহরিত ধর্ম যদি হয় অনুরূপ যা কিনা কৃষ্ণবস্তুর গুনাগুন ব্যাখ্যায় পারদর্শী তাহলেতো কথাই নেই, দুয়ে দুয়ে হয়ে যাবে চার! অর্থাৎ বিশ্ব সৃষ্টির অপার রহস্যের প্রশান্ত পাড়ের বালুকা বেলায় খনিকের জন্যে আমরা গিয়ে বসতে পারবো, অবগাহনও করবে কেউ কেউ! শুণ্য সময়ের ঐ-পাড়ে রিভার্স ইউনিভার্সের ধারনাগত জট গুলো খুলতে থাকবে ধীরে ধীরে। হয়তো জীবন-মৃত্যুর সীমারেখাটিও যাবে ঘুঁচে। সে এক অপাড় রহস্য!
এই যে সব নিদর্শন আর উত্তেজনাকর তথ্য, উদ্বেলিত উচ্ছ্বাসে নিভৃতচারী বিঞ্জানী আর সংশ্লিষ্ট কলা কৌশলীরা আজ নেমেছেন দুঃসাহসীক জটীল সব কর্মযঞ্জে। তাঁদের উদ্ভাবিত কৌশলে প্রকৃতির রহস্য মোচনের সাথে সাথে আমাদের কাছে স্পষ্টতর হয়ে উঠবে সেই সত্য যে বিগব্যাঙ পরবর্তী মুহূর্তগুলো আসলে ঠিক কি ছিলো; বস্তুর ভৌত গুনাবলীর বিকাশ ঘটলো ঠিক কোন পর্যায়ে, বস্তু এবং শক্তির যথাযথ সম্পর্কটি এবং তাবৎ মৌলিক শক্তি গুলোর সাথে এর আদীমতম কণাসমূহের মিথষ্কৃয়াটি ঠিক কিভাবে ঘটেছিলো। আর এই অনুসন্ধানী কার্যক্রমের প্রয়াসেই গভীর ভূতলে গড়ে তোলা হয়েছিলো কণানির্নায়ক বা পার্টিক্যাল ডিটেক্টর। বিভিন্ন ধরনের কসমিক প্রক্ষেপনের প্রভাব যাতে অনায়াসে অতিক্রম করে যেতে পারে কিংবা ধুলোমুক্ত পরিবেশে যেকানে কোন ধরনের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির উপস্থিতি যাতে প্রতিরোধ যোগ্যবলে বিবেচিত হয় অর্থাৎ অভীষ্ট কণার অস্তিত্ত্ব যাতে নির্নীত হয় সন্দেহাতীত ভাবে।
সুতরাং এমনি এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে যখন বিশ্বের তাবৎ পদার্থবিদেরা শুনলেন, যে অনুসন্ধানী এক দল বিশেষঞ্জের নির্নায়ক যন্ত্রের কল-কব্জায় কিছু একটার ধরা পড়ার সাড়া মিলেছে; তখন স্বাভাবিক নিয়মেই আমরা এবং গোটা অনুসন্ধানী মহল নড়ে চড়ে বসেছি। নেহাতই কিছু এক যুগান্তকারী তথ্যের, সৃষ্টির অন্বেষায়। উপলব্ধীকে নাড়া দেবার মতো তথ্য এবং প্রমানসিদ্ধ তত্ত্বের প্রতীক্ষায় বিগত অর্ধশতাব্দীর অপেক্ষা আমাদের! আর যদি ব্যর্থতা এসে জেঁকে বসেই তবে বুঝতে হবে এই অদৃশ্যমান জগতের যতটা আমরা জেনেছি তা প্রহসন, আবার আমাদের শুরু করতে হবে প্রথম থেকেই।
বিনিদ্র রজনী একাকী যুগ যুগ পাড় করেছেন যে চিন্তাক্লিষ্ট তত্ত্ববিদেরা, ভাবতেই অবাক লাগে, এই বিশ্বজগৎ নিয়ত অতিক্রম করে চলেছে মুহূর্তের পর মুহূর্ত গুলো তাঁদেরই প্রস্তাবিত একখন্ড কাগজে উৎকীর্ন গানিতিক নিয়মের অধীনে থেকে! বিষয়টি আরো স্পষ্ট প্রতিভাত হয় যখন তাঁরা রহস্যের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে আধুনীক বিঞ্জানের বিভিন্ন শাখায় নিরন্তর স্থানান্তরিত হতে থাকেন যুক্তি আর তথ্যের ভারাক্রান্ত ঝাঁপিতে।
কিন্তু হায়! আজকে যে হৈ চৈ, যে উৎফুল্লতা, হয়তো তা বেশ আগাম, হয়তো অর্থহীন, তবুও তা একেবারেই মূল্যহীন কিংবা মোটেও অবিবেচনা প্রসূত নয়। মাসাধিক কাল আগে মিনেসোটায় প্রাপ্ত পাল্স গুলো যদি আবারো ধরা দেয় সুইজারল্যান্ডের লার্জ হেড্রন কলাইডারের সাম্প্রতিক সময়ে স্থাপিত শক্তিশালী ডিটেক্টরে, তাহলে নিঃসন্দেহে ধরে নেওয়া যাবে যে মানব জাতি তার সূক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তার পরিপূর্ণ বিকাশের এক যুগসন্ধিক্ষনে উপনীত। এবং এই প্রত্যক্ষ ভাবে প্রাপ্ত উপাত্য এটিই প্রমান করবে যে, মানবজাতির উপলব্ধি ও বুদ্ধিমত্তাগত বুৎপত্তি প্রশ্নাতীত। বৈঞ্জানিক উৎকর্ষতা আর যুক্তির চুলচেড়া বিশ্লেষনের সাথে প্রকৌশল গত উন্নয়নের পরমপরাকাষ্ঠা। এসবই আজ বিঞ্জানকে এনে দাঁড় করিয়েছে তাবৎ বিশ্বের সমগ্র মানবজাতির চেতনাগত উৎকর্ষতার ঐক্যের প্রতীক হিসেবে। বিশ্বের বিঞ্জানীবৃন্দের এই যে সৃষ্টিশীল য্শ যা আজ লুকিয়ে থাকা রহস্যগুলোকে ক্রমেই উন্মোচিত করে চলেছে, বিষ্ময়াভিভূত মানবজাতির মাত্র গত শতকেও তা কোন ভাবেই কল্পনা করা সম্ভবতঃ দুঃসাধ্য ছিলো।
অতি নিশ্চিত এক অধরা ফলাফল যদি কোন ভাবে আজও অধরাই থেকে যায়, অর্থাৎ উক্ত ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিও আ্যক্টিভিটির পাল্স গুলো যদি ভৌতিক কিংবা যথার্থ উৎস বিহীন হিসেবে পরিত্যাক্তও হয় তবুও পদার্থবিদদের ধারনা, এটি প্রকৃতপক্ষে পরিত্যাক্ত উপাত্যের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হবার সম্ভাবনা নেই! যা হবে তা হলো, এই ঘটনাটি মানবজাতিকে ঠেলে দেবে আরোও চৌকষ এবং সৃষ্টিশীল বুদ্ধিমত্তার শক্তিশালী ক্ষেত্রে! প্রকৃতির সাথে যুঝে যাওয়া এর অপার রহস্যভেদের আবহমানকালের অভিযাত্রী মানব জাতির নিরন্তর অগ্রযাত্রার প্রতীক রূপে।
§দ্রষ্টব্য: CDMS: Cold dark matter search.
আসলেই খুব ভাল পোস্ট ডঃ অধিকারী।মূল লেখাটি পড়া ছিল ।আপনি তা আরো সহজবোধ্য করে তুললেন। আমার একটা প্রশ্ন। এই কৃষ্ণবস্তু প্রমান করার শর্ত গুলোর বিষয়ে সবাই কি একমত? মোটাদাগে বললে, এই পরীক্ষায়, ঠিক কতগুলি WIMPs পাওয়া গেলে তাকে Background Noise থেকে আলাদা করা যাবে? [বোকা বোকা প্রশ্ন 😀 ]
অভিজিৎ-দার মত আমিও আপনার এ ধরণের লেখার প্রত্যাশায় রইলাম।
@রুদ্র ফীরাখ,
প্রথমেই ধন্যবাদ আপনার বিষয়টির প্রতি আগ্রহের কারণে। একটি সহজ প্রশ্ন তবে উত্তরটা জটীল, কারন যা খুঁজছি তার কিছুই জানা নেই! পুরোটাই আছে একখন্ড কাগজে কতকগুলো গানিতিক সমীকরনে। আর এই সমীকরন গুলো যেহেতু পদার্থবিদ্যার সম্পর্কিত অন্যান্য নীতিগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কাজেই সমীকরনের যথার্থতায় আপাততঃ কোন বিতর্ক নেই। তবে একে এভাবে পাওয়া যাবে কিনা সেটা নিশ্চিত নই, দেখা যাক। আসলে আপনার মতো আমি নিজেও আগ্রহী। যাই হোক, চেষ্টা করি আপনার প্রশ্নের জবাব দিতে।
আসলে বিগব্যাং অব্যবহিতকালে সৃষ্টি হয় অসংখ্য ধরনের প্রাথমিক কণা। এর মধ্যে আছে বিশেষ এক প্রাথমিক কণা, মূলতঃ শক্তি কণা, একধরনের বোসন। খুব দ্রুত শক্তি হাড়িয়ে একধরনের ক্লাষ্টারে(?) রূপ নেয়। তৈরী করে এক ক্ষেত্র, যাকে বলা হয় হিগ্স ফিল্ড (আমার আগের একটি লেখায় একটু বলার চেষ্টা করেছিলাম)। এই হিগস ফিল্ডের মধ্যে যে সব প্রাথমিক কণা কোন রকম প্রতিক্রিয়া/প্রতিবন্ধকতা ব্যতিরেকে চলতে পারে এদের শক্তি থাকে অটুট। আর যারা বাধা প্রাপ্ত হয় তাদের গতি শক্তি কমে গিয়ে আরোপিত হয় ভর। অর্থাৎ শক্তি কণাটি ম্যটেরিয়ালাইজড হয়। এবার বিগব্যাংকালীন যেসব কণা সৃষ্টি হয়েছিলো, এরা এই ফিল্ডের প্রতিক্রিয়ায় স্ব স্ব গুনের অধিকারী হয়, যেমন ইলেকট্রন তেমন কোন বাধা পায়না বলে শক্তি কণা হিসেবেই বহাল রয়েছে, মেউওন কণা সামান্য বাধা গ্রস্থ হয় বলে খানিকটা ভরগ্রস্থ হয়, ডব্লিউ কণা বেশ বাধাগ্রস্থতার কারনে বস্তুধর্মী, আর আছে কোয়ার্ক, এরা এতোটাই বাধা পায় যে পুরোটাই বস্তু জগতের অন্তর্ভূক্ত!
এখন যেসব কণা (WIMPs) বিনা বাধায় বস্তুজগতের সাথে মিশে আছে এদের মাঝে আমাদের খুঁজতে হবে অভীষ্ট কণাটিকে। এটি যেহেতু হিগ্স ফিল্ডের গঠনগত একক কণা তাই ওকে খুঁজতে আমাদের ভূগর্ভে যাত্রা! কারন ওখানে অন্যান্য আংশিক ভরগ্রস্থ কণা গুলোর তুলনামুলক প্রাপ্তি-সম্ভাবনা কম। খনির গভীরে একমাত্র কিছু ভারী পদার্থজাত নিঃসরন এবং সামান্য কসমিক নিঃসরনের প্রভাব থাকতে পারে, থাকতে পারে প্রায় ভরহীন অন্যাণ্য কিছু কণাও। সেই জন্যে ডিটেক্টরে ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে নয়েজ (অপ্রয়োজনীয় কণা বা WIMPs) প্রশমিত করার ব্যাবস্থাও রয়েছে। তবে অতি সূক্ষ্ম তারতম্যকে যাতে ধরতে পারে, তার জন্যে এর স্পর্শকাতরতাকে বাড়িয়ে রাখা হয়েছে একটি সুবিধাজনক পর্যায়ে। কাজেই আমরা আশা করতে পারি একটি ফলাফল, যা আমাদের মস্তিষ্কের সূক্ষ্মতার পরিচায়ক হবে!
@কেশব অধিকারী,
ধন্যবাদ , আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দেয়ার জন্য।
চমৎকার একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন। আমি বেশ কিছুকাল আগে হিস্টরি চ্যানেলের একটা প্রামাণ্য চিত্রে সুডান পাতাল গবেষণাগার দেখেছিলাম। সেখানে একেবারে নিচে নেমে গুপ্ত পদার্থ খোঁজার খুটিনাটি দেখানো হয়েছিল। খুব মজা পেয়েছিলাম ব্যাপারটাতে: যেহেতু গুপ্ত পদার্থ প্রতি সেকেন্ডে আমাদের শরীর এমনকি এই তাবৎ পৃথিবীর মধ্য দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিক্রম করে চলেছে সেহেতু যেকোন স্থান থেকেই এদের সনাক্ত করতে পারার কথা; তাহলে অবশ্যই এমন এক স্থানে যেতে হবে যেখানে পৃথিবীর আর কোন সংকেতই পৌঁছাতে পারে না, থাকে কেবল গুপ্ত পদার্থ- এটুকু বলার পর সুডান এর ভেতরে নিয়ে গিয়েছিল প্রামাণ্য চিত্র নির্মাতারা। গুপ্ত পদার্থ আমাদের জানা কোন সিস্টেমের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে না। কিন্তু শূন্য ডিগ্রি কেলভিনের সামান্য উপরে খুবই সূক্ষ্ণ এবং সুসজ্জিত কেলাসের মধ্য দিয়ে যদি গুপ্ত পদার্থ যায় তাহলে সামান্য হল্ও তাপমাত্রার হেরফের বা অন্যান্য ব্যত্যয় ঘটার কথা। সুডান এর এমন একটি কেলাস এবং কেলাসটা যে টিউবের ভেতর থাকে সেটাও দেখানো হয়েছিল প্রামাণ্য চিত্রটাতে। চমৎকার বিষয়।
সুডান এর সাম্প্রতিক খবরটা একেবারেই জানতাম না। আপনার লেখা থেকেই জানলাম: দুইটা ব্যত্যয় পাওয়া গেছে সুডান এ। তার মানে অবশ্যই মজাদার কিছু অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। আর এর সাথে হেড্রন কলাইডার এর সাযুজ্যের কথা জেনে আরও আগ্রহী হয়ে উঠলাম। অপেক্ষায় থাকলাম। আশাকরি আপডেটগুলো আপনার ব্লগের মারফতেই জানতে পারবো আবার।
ডার্ক ম্যাটার এর বাংলা হিসেবে অভিজিৎদার দেখাদেখি আমিও গুপ্ত পদার্থ ব্যভহার শুরু করেছিলাম। কারণ কৃষ্ণ বস্তু বলতে মূলত black body বোঝায় যার সাথে ডার্ক ম্যাটারের কোন সম্পর্ক নেই। কৃষ্ণ না বলে গুপ্ত বললে বাংলায় অনেক কম দ্ব্যর্থবোধক হয় বলে আমার ধারণা। শুরু করবেন নাকি গুপ্ত পদার্থ ব্যবহার? আমি ডার্ক এনার্জিকেও এখন গুপ্ত শক্তি ডাকি।
@শিক্ষানবিস,
ডকুমেন্টারিটা কোথায় পেতে পারি জানালে খুব ভাল হয়
@জনাব শিক্ষানবিস,
অলোচনার জন্যে ধন্যবাদ। মনে হচ্ছে আপনার কথায় যুক্তি আছে। এটি ঠিক যে ডার্ক পার্টিক্যলের বাংলা যদি কৃষ্ণবস্তু হয় তবে ব্ল্যাকবডির সঙ্গে তা সাংঘর্ষিক হয় বটে, সেক্ষেত্রে গুপ্তবস্তু পরিভাষাটিতো যথার্থ বলেই মনে হচ্ছে। কারণ ডার্কম্যাটার বলতে অনেকটা সেই রকমই ধারনা হয় যেনো বস্তুটি লুকিয়ে থাকা ধাঁধার মতোই, যেনোবা হিডেন পার্টিক্যাল। যথার্থ বলেই মনে হচ্ছে, আগামীতে গুপ্তবস্তুই পরিভাষা হিসেবে রাখবো। ধন্যবাদ আপনাকে। ডঃ অভিজিৎ-এর আবিষ্কার বলে ওনাকে একটা বড় ধন্যবাদ দিতে চেয়েছিলাম, আচ্ছা, নীচে ধন্যবাদের ছবি নেই কেনো! এখনো আবিষ্কার হয়নি বোধ হয়! ঠিক আছে পরিবর্তে দুজনকেই দুটো ফুলেল শুভেচ্ছা :rose2: :rose2:
ভালো থাকুন।
ডঃ অভিজিৎ রায়,
হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। আগে তো ঞ-গ করে অভ্যেস ছিলো, এখন অভ্রতে লিখতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছি। যদিও অভ্রর বানানের একটা ফর্দ প্রিন্ট করে নিয়েছি তবুও সময় যখন খুব কম থাকে তখন আর ধৈর্য্য ধরে চেক করার অবকাশ পাইনে। আমি সত্যিই দুঃখিত বানান গুলো ভুল হবার কারনে। তবে যে কেউই যদি মাঝে মাঝে এগুলোর দিকে একটু নজর দেন তো আমার ভালো হবে, একবারে হবেনা, তবে হবে আশা করি। আর মনে করার কথা বলছেন? আমি উল্টে আপনার কাছে ঋণী এই জন্যে যে ঞ আর গ এর বৃথা ঐক্য প্রচেষ্টার চাইতে গ-এ গ-এর ঠোকা ঠুকিতেই কাজ হয়ে যাবার সহজ পথটি বাৎলে দেবার জন্যে। জনাব ফরিদও এব্যাপারে দারুন নিষ্ঠাবান এবং সহযোগী। সম্ভব হলে আরোও বেশী বেশী করে খুঁচিয়ে বের করুন, কারণ নির্ভুলতা, পরিচ্ছন্নতা এবং দৃঢ়তা আমার পছন্দ। ভালো থাকুন।
বদ্ধঘরে অাটকে থাকা মানুষদের নিকট কাঙ্খিত কিন্তু অধরা সুবাতাসের মতো, অামাদের নুন অানতে পানতা ফুরানো অনিশ্চিত ভবিষ্যতের অন্ধকার জীবনে অনেক দূরের এক টুকেরা অালোর মতনই এ খবর।
ভাবি তারা কোথায় কী নিয়ে কাজ করে অার অামরা কোথায় পড়ে অাছি? ভাগ্যতো মানিনা যে ভাগ্যের উপড় দোষ চাপিয়ে নিস্তার পাবো।
এখবরটি পরিবেশনের জন্য ড অধিকারীকে ধন্যবাদ
@আব্দুল হক,
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনার সুন্দর উপলব্ধি এবং মন্তব্যের জন্যে। আমিও এরকম ভাবি আর হতাশ হই। তবে বিশ্বাস করি যে, একদিন এ অন্ধকার ঠেলে আমরা বের হবোই। ভালো থাকুন।
ভাল পোস্ট ডঃ অধিকারী। যদিও ডার্ক ম্যাটারের প্রমাণগুলো এখনো আমাদের অধরাই। আর এই কথাগুলো –
কেন যেন সেই পাপিষ্ট ‘ইথারের’ কথা মনে পড়িয়ে দেয়। আশা করি ডার্ক ম্যাটার ইথারে রূপ নেবে না। 🙂
আরেকটা বিষয় না বলে পারছি না। আপনার এই সুন্দর লেখাটিতে কিছু বানানবিভ্রাট (হয়তো সফট ওয়্যার বিভ্রাট বলাই ভালো) চোখের জন্য পীড়াদায়ক ঠেকছে!
যেমন, বিশেষঞ্জ, বিঞ্জানী, কর্মযঞ্জ – এগুলো হবে বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী, কর্মযজ্ঞ…
আসলে এটা জ+ঞ নয়; এটা – গ+ গ। অর্থাৎ, অভ্রতে লিখলে বিজ্ঞানী লিখতে গেলে লিখতে হবে – bigganI
আশা করি বানানের বিষয়ে মন্তব্য করায় কিছু মনে করলেন না। আপনার এ ধরণের সুন্দর লেখার প্রত্যাশায় থাকি সব সময়ই।
ডঃ অভিজিৎ রায়,
একটি কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, তাই আবার বলা। আমারো তাই ধারনা যে ইথারে রূপ নেবে না। কারন এই দুয়ের আবির্ভবের হেতু কিন্তু ভিন্ন। দুয়ের চরিত্রগত ভিন্নতাও রয়েছে। তবে সবই নির্ভর করছে পরীক্ষালব্ধ ফলাফলের ওপরে। যেমন, ডার্কম্যাটারের জন্ম কিন্তু হিগ্স কণা থেকে ক্রমান্বয়ে কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে। যখন হিগ্স ফিল্ডের জন্ম হলো তখন এটি আবার আধুনীক স্ট্রিং তত্ত্বকে সমর্থন যোগায়। অথচ ইথার তত্ত্ব এর ধারে কাছেও নেই। তবে ঐ যে বল্লেন, এগুলো এখনো অধরা। এইটেই সত্যি যে এখনো অধরা। তবে গানিতিক হিসাব এবং প্রাপ্ত তথ্য এই তত্ত্বীয় উপলব্ধি কে সমর্থন করে অতি জোড়ালো ভাবে। দেখা যাক শেষ প্রাপ্তিটা কি হয়!