জেলখানার কবি
যখন আকাশে একটি একটি করে তারা ফুটে ওঠে,
নিশ্চয়ই কেউ না কেউ কোথাও,
সেই তারাগুলোর জন্যে অপেক্ষা করে, কেউ যে চায়
আরও একটু উজ্জ্বল হয়ে ফুটুক ওই তারাগুলো,
কেউ যে বলতে চায় মণিখণ্ড, ঝিকমিক করছে-
ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কি
বাম আদর্শের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন বাংলাদেশে এমন কোন লোককে খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি তুরস্কের কবি নাজিম হিকমতের কবিতা পড়েননি বা শোনেননি। বিপ্লবী কবিতা লিখে দেশে দেশে যারা গণমানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন, নাজিম হিকমত তাদের মধ্যে অন্যতম। জেলখানার কবি তিনি। সারাটা জীবন তিনি সাধারণ মানুষের জন্য লড়েছেন, জ্বালাময়ী সব কবিতা লিখেছেন, আন্দোলন করেছেন। মানুষের অধিকার আদায় আর শ্রেণী-বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে জীবনের বেশিরভাগ সময় তাঁকে কাটাতে হয়েছে জেলে।
নাজিম হিকমত শুধু তুরস্কের কবি নন। তিনি পৃথিবীর কবি, সমস্ত শোষিত, বঞ্চিত মানুষের কবি। তার কবিতা অনূদিত হয়েছে পৃথিবীর নানান দেশে, নানান ভাষায়। বাংলা ভাষাও ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশে নাজিম হিকমতের জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয়। কবিতা ভক্তদের অসম্ভব প্রিয় তিনি। তাঁর ‘জেলখানার চিঠি’ কবিতাটিতো মনে হয় অনেক কবিতাপ্রেমীরই মুখস্ত। প্রায় সব আবৃত্তিকারই তাঁর কবিতা আবৃত্তি করার জন্য রীতিমত মুখিয়ে থাকেন।
বাংলাতে নাজিমের শ্রেষ্ঠ কিছু কবিতার অনুবাদ করেছেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। সাহিত্যের যে কোন শাখার অনুবাদই অসম্ভব রকমের দুরুহ এক কাজ। এক ভাষায় যে জিনিষ অসম্ভব আকর্ষণীয়, কুড়কুড়ে বা মুড়মুড়ে, অন্য ভাষায় রূপান্তরের পরেই তা প্রায়শই হয়ে পড়ে একেবারে ম্যাড়মেড়ে পানসে ধরনের। সাহিত্যের অন্য যে কোন শাখার চেয়ে কবিতার ক্ষেত্রে এই অবনমন হয় সবচেয়ে বেশি। অনুবাদ দিয়ে আসল কবিতার আসল রূপরস ছন্দের সামান্য একটু অংশই পাওয়া যেতে পারে মাত্র। তার বেশি আশা করাটা একেবারে বাতুলতা মাত্র। বিভিন্ন লোকজনের করা হিকমতের কবিতার ইংরেজী অনুবাদ পড়ে দেখেছি। বড়ই বিবর্ণ সেগুলো। সেই তুলনায় নাজিমের কবিতা অনুবাদের ক্ষেত্রে সুভাষ মুখোপাধ্যায় সকল আশা প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন। নিজে বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন কবি হবার কারণে তার অনুবাদ, অনুবাদের নিরস জলো জলো পর্যায় ছাড়িয়ে মৌলিক কবিতার অসামান্য শৈল্পিক স্বাদ, গন্ধ, বর্ণ নিয়ে পাঠকের সামনে উপস্থাপিত হয়েছে। এরকম উত্তুঙ্গ মানের অনুবাদ করতে শুধুমাত্র একজন শ্রেষ্ঠ কবিই পারেন আরেকজন শ্রেষ্ঠ কবির কবিতার ক্ষেত্রে। আশ্চর্য হতে হয় যখন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেন যে, ‘নাজিমের কবিতা দিয়েই শুরু হয়েছিল আমার কবিতার অনুবাদের হাতে খড়ি’।
১৯০২ সালে তুরস্কের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে নাজিম হিকমতের জন্ম। অল্প বয়স থেকেই কবিতার দিকে ঝুঁকে পড়েন। মাত্র সতের বছর বয়সে তাঁর লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে মিত্রবাহিনী অধ্যুষিত তুরস্ক ছেড়ে মস্কো চলে যান তিনি। এ সময়ে রুশ কবি ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কির সাথে তার বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। হিকমত কমিউনিস্ট পার্টির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। তার কবিতা আরো জোরালো ও প্রতিবাদী হয়ে উঠে। ১৯২৪ সালে তুরস্কের স্বাধীনতার পর তিনি ফিরে আসেন। একটি বামপন্থী পত্রিকায় কাজ করার অপরাধে তিনি গ্রেপ্তার হন। কিন্তু হিকমত মস্কোয় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন এবং সেখানে কবিতা এবং নাটক লিখতে থাকেন। ১৯২৮ সালের এক সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার কারণে দেশে ফিরে আসতে সক্ষম হন। কম্যুনিষ্ট পার্টি ততদিনে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়ে গিয়েছে। সারাক্ষণই সাদা পোশাকের পুলিশের লোকজন তাকে নজরদারিতে রাখতো। পরের দশ বছরের পাঁচ বছরই তিনি নানান ধরনের বিচিত্র সব হাস্যকর অপরাধের অভিযোগে জেলখানায় কাটান। কিন্তু এই দশ বছরেই তিনি সুদীর্ঘ কবিতাসমৃদ্ধ চারটি বইসহ সর্বমোট নয়টি কবিতার বই প্রকাশ করেন। এই সমস্ত কবিতা তুরস্কের কবিতায় বিপ্লব সাধিত করে। তুরস্কের প্রধানতম কবি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যান তিনি।
১৯৩৮ সালে তুরস্কের সামরিকবাহিনীকে বিপ্লবে উস্কানী দেবার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাকে। তার অপরাধ ছিল তার দীর্ঘ কবিতাগুলো মিলিটারী ক্যাডেটরা পড়ছে এবং এতে করে তাদের মধ্যে বিপ্লবী চেতনা জন্ম নিচ্ছে। ২৮ বছরের জেল সাজা দেয়া হয় তাকে।
১৯৪৯ সালে পাবলো নেরুদা, পল রবসন এবং জ্যা পল সার্ত্রে প্যারিসে একটি আন্তর্জাতিক কমিটি গঠন করেন। উদ্দেশ্য ছিল হিকমতের মুক্তির জন্য আন্দোলন গড়ে তোলা। ১৯৫০ সালে পাবলো নেরুদার সাথে যৌথভাবে বিশ্ব শান্তি পুরস্কার জিতে নেন। এই বছরেই আঠারো দিনের আমরণ অনশনে যান তিনি। তুরস্কে গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসায় মুক্তি পান। কিন্তু তার যন্ত্রণার অবসান ঘটে না। দুই দুইবার তাকে হত্যা করার প্রচেষ্টা চালানো হয়। পঞ্চাশ বছর বয়সে রাশিয়ান সীমান্তে সামরিক দায়িত্ব পালন করানোর চেষ্টা করা হয় তাকে দিয়ে। এই সব যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাবার জন্য ছোট্ট একটা মোটর বোটে করে বসফরাস পাড়ি দিয়ে বুলগেরিয়া হয়ে রাশিয়াতে পালিয়ে যান তিনি। পরের বছরই তুরস্ক সরকার তার নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয়।১৯৬৩ সালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মস্কোয় মৃত্যুবরণ করেন এই মহান কবি।
ইতিহাসের কী চরম লীলাখেলা। পঞ্চাশ বছর আগে যাকে বিশ্বাসঘাতক বলে রায় দিয়ে নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নিয়েছিল তুরস্ক সরকার তাকেই আবার সসম্মানে মরণোত্তর নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। ২০০০ সালে পাঁচ লাখ তুর্কী নাগরিক সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল নাজিম হিকমতের নাগরিকত্ব পুনর্বহালের জন্য এবং তার দেহাবশেষ মস্কো থেকে তুরস্কে ফিরিয়ে আনার জন্য। আর সে আবেদনে সাড়া দেয়া ছাড়া তুরস্ক সরকারের কিছু করারও ছিল না। নাজিম হিকমতের তুরস্ককে কোন প্রয়োজন নেই, কিন্তু তুরস্কের নাজিম হিকমতকে যে বড়ই প্রয়োজন।
নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেবার প্রতিক্রিয়া হিসাবে তুরস্কের ডেপুটি মিনিস্টার কেমিল সিচেক বার্তা সংস্থা এপিকে জানান যে, নাজিম হিকমতের বিষয়ে সরকারের মনোভাব পরিবর্তনের এটাই সময়। যে অপরাধের জন্য সরকার তার নাগরিকত্ব সেই সময়ে বাতিল করেছিল, সেই অপরাধ এখনকার যুগে আর কোন ধরনের অপরাধের পর্যায়েই পড়ে না।
নাজিম হিকমত শিল্পকে জীবন থেকে আলাদা করেননি। জীবন আর শিল্পের মাঝে কোন ফারাকও করেননি তিনি। বরং যে শিল্প জীবনকে প্রতিনিধিত্ব করে, জীবনকে প্রতিফলিত করে সেই শিল্পই আসল শিল্প বলে মনে করেছেন তিনি। ফলে তার কবিতায় মানুষের জীবন উঠে এসেছে শৈল্পিকসমৃদ্ধতায়। নাজিমের নিজের ভাষাতেই,
সেই শিল্পই খাঁটি শিল্প, যার দর্পণে জীবন প্রতিফলিত। তার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে যা কিছু সংঘাত, সংগ্রাম, প্রেরণা, জয়, পরাজয় আর জীবনের ভালবাসা। খুঁজে পাওয়া যাবে একটি মানুষের সব কটি দিক। সেই হচ্ছে খাঁটি শিল্প, যা জীবন সম্পর্কে মানুষকে মিথ্যা ধারণা দেয় না।
পাঠকদের জন্য নাজিম হিকমতের কবিতা আমি জেলে যাবার পর এর আবৃত্তি তুলে দিচ্ছি। আবৃত্তিটি করেছেন শিমুল মুস্তাফা। এই সুযোগে নিজেকেও একটু কেউকেটা লোক বানিয়ে নেই। নিজেতো আর জীবনে কিছু হলাম না। অন্যের নাম বেঁচে যদি কিছু পাওয়া যায় তাতেই বা মন্দ কী। সিদ্ধেশ্বরী স্কুলে শিমুল আমার সহপাঠী ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও আমরা একসাথে পড়াশোনা করেছি। তবে দুইজন দুই বিভাগে।
|
আমি জেলে যাবার পর
জেলে এলাম সেই কবে
তার পর গুণে গুণে দশ-বার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করেছে পৃথিবী।
পৃথিবীকে যদি বলো, বলবে –
‘কিছুই নয়,
অণুমাত্র কাল।’
আমি বলব –
‘না , আমার জীবনের দশটা বছর।’
যে বছর জেলে এলাম
একটা পেন্সিল ছিল
লিখে লিখে ক্ষইয়ে ফেলতে এক হাপ্তাও লাগেনি।
পেন্সিলকে জিজ্ঞেস করলে বলবে :
‘একটা গোটা জীবন।’
আমি বলব :
‘এমন আর কী, মোটে তো একটি সপ্তাহ।’
যখন জেলে এলাম
খুনের আসামী ওসমান
কিছুকাল যেতেই ছাড়া পেল
তারপর চোরাই চালানের দায়ে
ঘুরে এসে ছ-মাস কয়েদ খাটল
আবার খালাস হল।
কাল তার চিঠি পেলাম বিয়ে হয়েছে তার
এই বসন্তেই ছেলের মুখ দেখবে।
আমি জেলে আসবার সময়
যে সন্তানেরা জননীর গর্ভে ছিল
আজ তারা দশ বছরের বালক।
সেদিনকার রোগা ল্যাংপেঙে ঘোড়ার বাচ্চাগুলো
এখন রীতিমত নিতম্বিনী।
কিন্তু জলপাইয়ের জঙ্গল আজও সেই জঙ্গল
আজও তারা তেমনি শিশু।
আমি জেলে যাবার পর
দূরবর্তী আমার শহরে জেগেছে নতুন নতুন পার্ক
আর আমার বাড়ির লোকে
এখন উঠে গেছে অচেনা রাস্তায়
সে বাড়ি আমি চোখেও দেখিনি।
যে বছর আমি জেলে এসেছিলাম
রুটি ছিল তুলোর মত সাদা
তারপর মাথাপিছু বরাদ্দের যুগ
এখানে এই জেলখানায়
লোকগুলো মুঠিভর রুটির জন্যে হন্যে হল
আজ আবার অবাধে কিনতে পারো।
কিন্তু কালো বিস্বাদ সেই রুটি।
যে বছর আমি জেলে এলাম
দ্বিতীয় যুদ্ধের সবে শুরু
দাচাউ-এর শ্মশানচুল্লী তখনও জ্বলেনি
তখনও পারমাণবিক বোমা পড়েনি হিরোশিমায়।
টুঁটি-টিপে-ধরা শিশুর রক্তের মত সময় বয়ে গেল
তারপর সমাপ্ত সেই অধ্যায়।
আজ মার্কিন ডলারে শোনো তৃতীয় মহাযুদ্ধের বোল।
কিন্তু আমি জেলে যাবার পর
আগের চেয়ে ঢের উজ্জ্বল হয়েছে দিন।
আর অন্ধকারের কিনার থেকে
ফুটপাথে ভারী ভারী হাতের ভর দিয়ে
অর্ধেক উঠে দাঁড়িয়েছে মানুষ।
আমি জেলে যাবার পর
সূর্যকে গুণে গুণে দশ-বার প্রদক্ষিণ করেছে পৃথিবী
আর আমি বারংবার সেই একই কথা বলছি
জেলখানায় কাটানো দশটা বছরে
যা লিখেছি
সব তাদেরই জন্যে
যারা মাটির পিঁপড়ের মত
সমুদ্রের মাছের মত
আকাশের পাখির মত
অগণন,
যারা ভীরু, যারা বীর
যারা নিরক্ষর,
যারা শিক্ষিত
যারা শিশুর মত সরল
যারা ধবংস করে
যারা সৃষ্টি করে
কেবল তাদেরই জীবনকথা মুখর আমার গানে।
আর যা কিছু
–ধরো, আমার জেলের দশটা বছর-
ওসব তো কথার কথা ।
ফরিদ ভাই, যাক আপনি তাহলে বেঁচে আছেন। আপনি তাড়াতাড়ি আবার লেখা শুরু করেন এরকম আকর্ষনীয় সব বিষয় নিয়ে, অনেক অনেক বেশী করে। আপনি না থাকলে মুক্তমনা আমাদের মত বোরিং লোকদের সমাবেশে অত্যন্ত নাজেহাল অবস্থায় পড়ে যায়। দেখেন ইতোমধ্যেই বিবর্তনের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ আন্দোলন শুরু হইসে। আসলেই আর কত, এক জিনিষ নিয়ে মাতামাতি। সমস্যাটা হইলো আমি তো আপনার মত এত হাজারটা বিষয় নিয়া লিখতে পারি না। লেখাটা কত ভালো হইসে সেটা আর বললাম না, আপনার লেখা আমার সবসময়ই ভালো লাগে।
@বন্যা আহমেদ,
লিখতেতো সমস্যা নেই বন্যা। সমস্যা হচ্ছে সময়ের। অন্ন জোগাড়ের কোন চিন্তা না থাকলে সারাদিন বসে বসে না হয় এই কাজই করা যেত। দীর্ঘদিন পর এই প্রথম আমি মুক্তমনায় কারো লেখাই পড়ার সময় করে উঠতে পারছি না। প্রতিদিন একবার করে শুধু শুধু ঢুকি। শিরোনাম আর লেখকদের নামগুলো দেখেই চটজলদি বিদায় নেই।
তোমার কাছ থেকে যে মিলিওন ডলার পুরস্কার জিতেছিলাম, ওটা হাতে এলেই সব কাজবাজ ছেড়ে দিয়ে পুরোদস্তর লেখালেখির জগতে ফিরে আসবো। ভদ্রলোকের জবান।
@ফরিদ ভাই,
হ, ঠিকই কইছেন গুরু! আমার অবস্থাও আপনার মত। সুকান্তের কবিতাটা একটু ঘুরিয়ে বললে কেমন হয়_
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়,
পুর্নিমা চাদ যেন ঝলসানো ডলার…
তো অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়ে মনটা ভাল হয়ে গেল। থ্যাংকু… 🙂
@সুমন,
আরেহ! সুমন যে! তোমাকে অনেকদিন পর মুক্তমনায় দেখে আমারওতো মনটা ফুরফুরে হয়ে গেলো।
তো, কেমন কাটছে দেশের নতুন জীবন? তোমার অবস্থা আমার মত হয় কীভাবে? দেশেতো শুনি সবাই রাজা-বাদশাহদের মত জীবন যাপন করে। যত কাঙ্গালীপনাতো সব আমাদের মত দেশছাড়া হতভাগ্য মানুষদের জন্য বরাদ্দ।
স্প্যানিশ কবি লোরকা সম্পর্কে এমন একটা লেখা আশা করতে পারি নাকি ফরিদ ভাই? ওনার জীবনী নিয়েও কিঞ্চিত কৌতূহল আছে। অনেক বছর আগের একবার রহস্য পত্রিকায় ওনাকে নিয়ে কিছুটা পড়েছিলাম।
নাজিম হিকমত লিখেছেন —-
ঠিক তেমনি উল্টোভাবে ফরিদ বলে ‘
আর আমরা পাঠকরা বলি– নিজে তো আর নিজের সীমাবদ্দ্ধতার জন্যে বিশ্ব সাহিত্য ভান্ডারের খবর রাখতে পারি না । ফরিদরা আছে বলে তৃষ্ণা মেটে।
ধন্যবাদ ফরিদকে বরাবরের মতো চমৎকার আরেকটি সংযোজনার জন্যে।
@গীতাদি,
আমি মোটেও সাহিত্যবোদ্ধা নই। নিজের দেশেরই সাহিত্যের খবর রাখি না, বিশ্ব সাহিত্যতো বহু দূরের কথা।
নাজিম হিকমত আমার অসম্ভব প্রিয় একজন কবি। প্রিয় হবার কারণ শুধুমাত্র কবিতার সুউচ্চ শিল্পমানের কারণেই নয়। তার সংগ্রামী অকুতোভয় জীবন এবং বাম আদর্শের প্রতি তার সুগভীর ভালবাসাও বিপুল প্রভাব বিস্তার করেছে আমার উপর। মানুষের অধিকারের কথা বলার কারণে রাষ্ট্রযন্ত্র যেরকম কঠিন নির্যাতন তার উপর করেছে তার তুল্য মেলা ভার।
ছেলেবেলার পর থেকেই সজ্ঞানে কবিতা আর পড়া হয়নি। কেন যেন তেমন কিছু বুঝি না তাই তেমন টানে না।
তবে ভদ্রলোকের সংগ্রামমুখর জীবনের কাহিনী শুনলে শ্রদ্ধা করতেই হয়। এমন মানুষ যুগে যুগে না জন্মালে সভ্যতা টিকিয়ে রাখাই দুষ্কর হয়ে দাড়াতো।
মিলিটারী ক্যাডেটদের তার কবিতা উজ্জীবিত করতে শুনে কেন যেন কর্ণেল তাহেরের কথা মনে এলো। তিনিও কি এনার ভক্ত ছিলেন নাকি কে যানে।
তবে জন্মসূত্রে নাগরিক কারো নাগরিকত্ব কিভাবে বাতিল করা যায় তা বুঝি না।
নাজিম হিকমত, পাবলো নেরুদা, সুকান্ত ভট্টাচার্য এঁদের কবিতা দেশে দেশে বিপ্লবীদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে বেঁচে থাকবে চিরকাল। আসলেই এঁরা পৃথিবীর কবি, সমস্ত শোষিত, বঞ্চিত মানুষের কবি।
ফরিদকে ধন্যবাদ নাজিম হিকমতের এই কবিতাটার জন্য।
@ইরতিশাদ ভাই,
আপনাকেও ধন্যবাদ। মজার বিষয় হচ্ছে, আমার কাছে মানুষের জন্য কবিতা নামে এক মলাটে চারজন কবির চারটে কবিতার বই আছে। এই কবিরা হচ্ছেন, নাজিম হিকমত, পাবলো নেরুদা, সুকান্ত ভট্টাচার্য এবং ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কি।
আপনি তো একেবারে অমাবশ্যার চাঁদ হয়ে গেছেন। লেখা টেখা খুবই কম। মন্তব্য তো আরো কম। তাড়াতাড়ি আমাবশ্যা খেদান।
নাজিম হিকমত নিয়ে লেখাটা ভাল লাগলো। এবার দেশে গিয়ে শিমূল মুস্তফার অনেকগুলা সিডি কিনলাম। এই কবিতাটাও আছে। তবে সবচেয়ে ভাল লেগেছে “তোমাকে চাই” এর সিডির কবিতগুলাই।
@অভিজিৎ,
তো শিমূল মুস্তফার কিছু কবিতা আমাদের জন্যে ছাড়েন না দাদা প্লীজ। দেশে যাওয়া যে আর কবে হবে আল্লাহই জানে।
@অভিজিৎ,
পূর্ণিমার চাঁদতো আর হওয়া হবে না এ জীবনে, তাই অমাবস্যার চাঁদই হয়েছি।
এ্যলেক্সিস নিউন্দাই এর “নৈশব্দ্য” পড়েছেন কেউ? ওটা আরেক কাঁপানো কবিতা, সমকালের/প্রথম আলোর সাহিত্য পাতায় পড়েছিলাম। পড়েই এত ভালো লেগে গিয়েছিলো যে ঐ একটা মাত্র কবিতাই আমি পেপার থেকে কেটে রেখে দিয়েছিলাম। পেপারে কবিতা খুব কমই পড়ি(আসলে কবিতাই খুব কম পড়ি) কিন্তু ওই কবিতাটা কেন জানি চোখে লেগে গেছে।
ঐ কবির জীবন বা কিছু নিয়েই কিছু জানিনা, আর তার অন্য কোন কবিতাও পড়ি নাই বলে কবিতাটা নিয়ে পোস্ট দেবার সাহস পাচ্ছি না। আর আমার সুন্দর করে গুছিয়ে লেখার হাতও ভাল না।
ফরিদ মামা যদি এই “নৈশব্দ্য” কবিতাটা পড়ে থাকেন,আর কবির সম্পর্কে কিছু জেনে থাকেন, তবে আমার আবদার রইলো, এই কবি আর কবিতাটা নিয়ে একটা পোস্ট দিন। :rose2:
আনেক কবিতাই আমি বুঝি না। তাই কবিতার অলোচনায় চুপ করে থাকি।
নীজেকে বেজায় মুক্কু-সুক্কু লাগে, বাংলা লেখা আর আমি বুঝতেছি না, কি লজ্জা!
কিন্তু নাজিম হেকমতের কবিতা বুঝতে কষ্ট হয়না কেন? বলেন তো ফরিদ ভাই।
@আতিক রাঢ়ী,
ভাই বিপ্লবের ভাষা যে সবার জন্যই সমান। মানুষের অধিকারটা যে মানুষ ঠিকই চিনে নেয়। এজন্যই বিপ্লবের স্লোগানগুলোও একএকটা কবিতা হয়ে যায়।
তোমার আমার ঠিকানা,
পদ্মা, মেঘনা, যমুনা। অথবা
দুনিয়ার মজদুর এক হও! বা বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ স্লোগান
জয় বাংলা!!!
এগুলো কি বুঝতে কষ্ট হয়? এগুলোও তো কবিতা !! :rose2:
@তানভী,
:yes: :rose2:
@আতিক রাঢ়ী,
নাজিম হিকমত মনে হয় উত্তরাধুনিক কবিতার সাথে পরিচিত ছিলেন না। থাকলে তার কবিতাও উত্তরাধুনিক দুর্বোধ্যতায় রূপ নিতো।
বাংলা কোন লেখা না বুঝতে পারলে আমারও একই সমস্যা হয়। ইংরেজী বুঝিনা তাতে কোন দুঃখ নেই আমার। সারা জনমেও এ ভাষা শেখা হবে না আমার। কিন্তু বাংলায় লেখা কোন কিছু বুঝতে পারছি সেটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারি না আমি। রীতিমত আপসেট হয়ে যাই, বিচলিত হয়ে পড়ি, ভয়াবহ অপমানিত বোধ করি। সে কারণেই উত্তরাধুনিক কবিতা থেকে সযত্নে শত হস্তে দূরে থাকি আমি।
@ফরিদ আহমেদ,
বলেন কি, আপনারও এই অবস্থা! তাহলে ওগুলো লেখা হয় কাদের জন্য ?
কে বা কারা ওগুলো বোঝে? যদি জানা থাকে দু-এক জনের ঠিকানা দিলে
একটু উপকার হতো। প্রাইভেট পড়তাম। এই লজ্জা, ঢাকতেই হবে। 😕
@আতিক রাঢ়ী, উত্তরাধুনিক শব্দটিও অামার নিকট কম দুর্বোধ্য নয়। পুঁজিবাদীরা যেমন বলেনা ওরা বৈষম্যবাদী, বলে গণতান্ত্রিক। তেমনি এরাও বলেনা ওরা ঐদলেরই। তবে ওদের লেখার ধরন দেখলেই বুঝা যায়। তবে প্রধান বৈশিষ্ট হলো এরা অথর্নৈতিক কারণে শ্রেনী বৈষম্যেেক স্বীকার করে না। বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে এরা মানুষের কল্যানে নয় মুনাফার বৃদ্ধিতে ব্যবহার করতে বেশী অাগ্রহী। এই দুর্বোধ্যদের স্পষ্ট করনের উপড় লেখা ফরিদ অাহমেদ ও অাপনাদের নিকট থেকে অাশা করছি