সে বহুদিন আগের কথা। “জাকির নায়েক” নামে এক ইসলামী পণ্ডিতের ছাগলামি সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ একটি প্রবন্ধ রচনা করেছিলাম। পাঠকেরা সেই ছাগলামির মর্মার্থ বুঝতে পারে “জাকির নায়েক একজন রামছাগল” নামে ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলে ফেলল। যোগ দিলাম সেই গ্রুপে, পছন্দ হয়ে গেল রামছাগল পদবীটা। আমার সেই লেখার শিরোনাম ছিল “জাকির নায়েকের মিথ্যাচার: …”। এই ছাগুকে নিয়ে ভবিষ্যতে আরও লেখার ইচ্ছা আছে। তবে সেই লেখাগুলোর শিরোনামের কোলনপূর্ব অংশটা হবে “রামছাগল বেত্তান্ত”। সে পরের কথা, আপাতত টেনশনে আছি এই কারণে যে রামছাগল খানার একটা এমবিবিএস ডিগ্রি রয়েছে। মেডিকেল কলেজে কি পড়ায়, যে এমন রামছাগলের জন্ম হতে পারে? মহানবী গুগলের (দঃ) দৈব নির্দেশনায় অবশেষে উত্তর মিলেছে। সেই উত্তর খুব একটা সন্তোষজনক হতো না, যদি না সম্প্রতি ভাল ভাল কিছু খবর পেতাম। উত্তরটা হচ্ছে, চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান পড়ানো হয় না, আর যেহেতু জাকির নায়েক রামছাগল সেহেতু নিজ উদ্যোগে বিবর্তন শিক্ষা করার ক্ষমতাও তার নাই। আর ভাল খবরটা হচ্ছে সম্প্রতি চিকিৎসাবিজ্ঞানের পাঠ্যসূচিতে বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত করার কথা হচ্ছে। বর্তমানে মেডিসিন পড়াশোনার অবস্থা কেমন, এতে বিবর্তন অন্তর্ভুক্তির কারণ, ফলাফল এবং কতদূর কি অগ্রগতি হয়েছে সে নিয়েই আমার বর্তমান লেখা।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অধিকাংশ শাখার মতো চিকিৎসাবিজ্ঞান গবেষণাতেও পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেই দেশের চিকিৎসাবিজ্ঞান পাঠ্যসূচিতেই বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান বিষয়ের ওপর কোন আবশ্যিক কোর্স নেই। অথচ ভ্রূণতত্ত্ব, জৈব রসায়ন, অ্যানাটমি, ফিজিওলজি-র মতোই বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের একটি শাখা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর গুরুত্বও তাদের চেয়ে কোন অংশে কম না। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস এর জার্নাল “প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস” (PNAS) এর ২৬ জানুয়ারি ২০১০ সংখ্যায় চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্র ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। আধুনিক বিবর্তন তত্ত্ব প্রয়োগ করে কিভাবে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও গণস্বাস্থ্য বিষয়ক নানা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়া যায় সেগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা অচিরেই অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।
ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ র্যান্ডাল্ফ নেসি বললেন, “চিকিৎসা সেবা ও গবেষণা উন্নয়নের জন্য বিবর্তনকে নানাভাবে ব্যবহার করা যায়”। সাধারণভাবে আমরা জানি, বিবর্তনের মাধ্যমে কোন বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটতে অনেক অনেক প্রজন্ম লেগে যায়। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞান তো এতো দেরি সইবে না। তাহলে দেখা যাক, সময়ের এই স্বল্প পরিসরেও কিভাবে আমরা কৃত্রিম নির্বাচনের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ জীবাণুর শক্তিমত্তা বাড়িয়ে চলেছি।
বিবর্তন তত্ত্ব প্রয়োগের সবচেয়ে বড় সুফল পাওয়া যাবে ব্যাক্টেরিয়াজনিত রোগ ও ক্যান্সার চিকিৎসায়। কারণ ব্যাক্টেরিয়া ও ক্যান্সার কোষ উভয়েরই প্রজনন ক্ষমতা অত্যধিক বেশি। তার মানে স্বল্প সময়েই এদের একেকটি প্রজন্ম পার হয়ে যায় এবং এদের বিবর্তন আমরা চোখের সামনেই দেখতে পারি। একটি এন্টিবায়োটিক প্রয়োগের পর মানবদেহের যে ব্যাক্টেরিয়াগুলো দুর্বল তারা সব মারা যায়, কিন্তু এমন কিছু ব্যাক্টেরিয়া থেকেই যায় যাদের দেহে এন্টিবায়োটিকটি প্রতিরোধের ক্ষমতা ছিল। এরা কয়েক ঘণ্টা বা মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে এমন সব ব্যাক্টেরিয়ার জন্ম দেয় যাদের সবার মধ্যেই উক্ত প্রতিরোধ ক্ষমতাটি আছে। ফলে পূর্বের এন্টিবায়োটিকটি আর কাজে দেয় না। প্রয়োজন হয় আরও শক্তিশালী এন্টিবায়োটিকের। এভাবে আমরা যতোই ওষুধ প্রয়োগ করছি ব্যাক্টেরিয়ার শক্তি ততোই বেড়ে চলছে। একই কথা প্রযোজ্য ক্যান্সার কোষ এবং তা নিধনের জন্য ব্যবহৃত কেমোথেরাপির বেলায়।
এছাড়া যে প্রক্রিয়ায় বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানীরা কোন প্রাণী বা উদ্ভিদের পূর্বপুরুষ খুঁজে বের করেন ঠিক সেই প্রক্রিয়াতেই বিভিন্ন সংক্রামক রোগের জন্য দায়ী জীবাণু- যেমন: ফ্লু, সার্স এবং এইচআইভি- এর পূর্বপুরুষ খুঁজে বের করা সম্ভব। এর মাধ্যমে তাদের উৎপত্তি ও বিকাশ জানা যাবে এবং তাদের প্রতিরোধ করাটাও সহজ হয়ে যাবে। বিবর্তন তত্ত্ব প্রয়োগের মাধ্যমে অনেক ধরণের মেডিকল থেরাপির উদ্ভাবন সম্ভব। অপেক্ষাকৃত স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের কারণে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে। এর ফলে সামান্য নোংরা কোন পরিবেশের প্রভাবেই আমাদের মধ্যে অ্যাজমা ও বিভিন্ন অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দেহে ইচ্ছাকৃত ভাবে বিভিন্ন পরজীবীর ডিম প্রবেশ করানো হয় যাতে সে অনুযায়ী প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হতে পারে। এই প্রক্রিয়ার সফলতার জন্যও মানুষের সাথে বিভিন্ন পরজীবীর সহ-বিবর্তন নিয়ে সূক্ষ্ণ গবেষণা প্রয়োজন।
এছাড়া আরও অসংখ্যা উপায়ে বিবর্তন চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। বন্যা আহমেদ তার “বিবর্তনের পথ ধরে” বইয়ের “চোখের সামনেই ঘটছে বিবর্তন” অধ্যায়ে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বিবর্তনের এই সীমাহীন সম্ভাবনার কথা চিন্তা করেই প্রসিডিংসের চূড়ান্ত গবেষণাপত্রের লেখক ছিলেন মোট ১৩ জন চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী। তারা বলেছেন, শুধু পাঠ্যসূচিতেই নয় বরং চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভর্তি পরীক্ষাতেও বিবর্তন অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। অর্থাৎ চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়তে হলে শিক্ষার্থীদেরকে বিবর্তনের প্রাথমিক ধারণা নিয়েই আসতে হবে, মেডিকেল কলেজে এসে তারা সে বিষয়ে আরও বিস্তারিত পড়বে। অনেকটা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হলে যেমন পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের মৌলিক ধারণা নিয়ে আসতে হয় তেমন।
অনেক বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক সায় দেয়ায় তাদের এই প্রস্তাবনা বাস্তবে রূপ লাভ করার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে। অ্যামেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অফ মেডিকেল কলেজেস এবং হাওয়ার্ড হিউজ মেডিকেল ইনস্টিটিউট “Scientific Foundations for Future Physicians” নামে একটি যৌথ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যাতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পাঠ্যসূচি এবং Medical College Admission Test (MCAT) এ বিবর্তনকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
উন্নত বিশ্বে যেখানে চিকিৎসাবিজ্ঞানও বিবর্তনের আলোয় উদ্ভাসিত হচ্ছে সেখানে বাংলাদেশে বর্তমানে স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে পর্যন্ত বিবর্তন নেই। একসময় উচ্চ মাধ্যমিক জীববিজ্ঞানে এটি পড়ানো হতো, বেশ কয়েক বছর পূর্বে ধর্মীয় গোঁড়ামির কবলে পড়ে তাও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এভাবে আমরা কেবল পিছিয়েই চলেছি, ঠিক যেমন ব্রিটিশদের রাজত্বকালে ব্যক্তিনিরপেক্ষ জ্ঞানকে ফিরিঙ্গি জ্ঞান আখ্যা দিয়ে বর্জন করার কারণে পিছিয়ে পড়েছিলাম।
তথ্যসূত্র:
– Medical students may soon be tested on evolution – Eurekalert
– (2010). “Evolution in Health and Medicine Special Feature.” Proceedings of the National Academy of Sciences 107(4).
পাঠ্যসূচিতে যে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
Randolph M. Nesse এবং তার সহবিজ্ঞানী ও চিকিৎসকরা তাদের “Making evolutionary biology a basic science for medicine” নামক গবেষণাপত্রে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পাঠ্যসূচিতে বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের কোন বিষয়গুলো পড়াতে হবে তার একটি তালিকা দিয়েছেন। সেই তালিকাটি এখানে হুবহু তুলে দিলাম:
1. A review of core principles of evolutionary biology.
2. Common misunderstandings about evolution: how to recognize and avoid them.
3. Evolutionary explanations: importance, formulation, testing.
4. Cooperation, kin selection, levels of selection.
5. Evolutionary genetics, signals of selection, drift, pleiotropy, demography, etc.
6. Evolutionary considerations in epidemiology, and genomewide association studies.
7. Life history theory applied to humans.
8. Senescence and late-onset diseases.
9. Reproduction, sexual selection, and related medical problems.
10. Antibiotic resistance and virulence evolution.
11. Coevolution, arms races, and related aspects of infectious diseases.
12. The ecology and evolution of emerging diseases.
13. Somatic evolution in cancer, and immunology.
14. Diseases of modern environments and the epidemiological transition.
15. Defenses, their regulation, and their costs.
16. Tradeoffs, at levels from genes, to physiology, to behavior.
17. Development as a product of and contributor to evolutionary change.
18. Facultative adaptations (phenotype plasticity) and related diseases.
19. Human evolution and ancestral environments.
20. Genetic differences among human populations and rates of evolutionary change.
21. Heritability and an understanding of how genes interact with environments.
22. Behavioral ecology, behavior, and the origins and functions of emotions.
অনেক দেরীতে হলেও বিবর্তনীয় জীব বিজ্ঞান চিকিৎসা বিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে জানতে পেরে আমার যার পর নাই আনন্দ লাগছে। শুধু চিকিৎসা বিজ্ঞানেই কেন পড়ানো উচিৎ, পড়ানো যায় নৃবিজ্ঞানে, সমাজ বিজ্ঞানে, জীব বিজ্ঞানে। বাংলাদেশে এর জন্য ন্যুনতম সহযোগিতাও আমি কারো কাছ থেকে পাইনি। যাক সে কথা, সেগুলি অনেক আগের কথা, এই সেদিন মানে গত বৎসর চবি এর নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক সাদাফকে বন্য আহমেদের বিবর্তনের পথ ধরে বইটা তার ছাত্রদেরকে পড়ার জন্য রেফার করতে বলে তাকে পড়তে দিয়েছিলাম। সে বইটা রেফার করবে দূরের কথা নিজেও পড়ে দেখলো না। উপড়ন্ত আমাকে জ্ঞান দিলো যে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব একটি বিতর্কিত বিষয়।
“উন্নত বিশ্বে যেখানে চিকিৎসাবিজ্ঞানও বিবর্তনের আলোয় উদ্ভাসিত হচ্ছে সেখানে বাংলাদেশে বর্তমানে স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে পর্যন্ত বিবর্তন নেই। একসময় উচ্চ মাধ্যমিক জীববিজ্ঞানে এটি পড়ানো হতো, বেশ কয়েক বছর পূর্বে ধর্মীয় গোঁড়ামির কবলে পড়ে তাও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এভাবে আমরা কেবল পিছিয়েই চলেছি, ঠিক যেমন ব্রিটিশদের রাজত্বকালে ব্যক্তিনিরপেক্ষ জ্ঞানকে ফিরিঙ্গি জ্ঞান আখ্যা দিয়ে বর্জন করার কারণে পিছিয়ে পড়েছিলাম।”
আপনাদের সকলের জন্য বলছি বাংলাদেশে এই কাজটা করা কঠিন হলেও অসম্ভবতো নয়। সম্ভব, অবশ্যই সম্ভব। সকলে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ। এই কাজে মুক্তমনার কারোর যে কোন আপত্তি আছে বা থাকবে এটাও আমি মনে করি না। বর্তমান সরকারের অনেক কাজের সংগেই আমি সহমততো নইই বরং বিরোধিতাই করি। কিন্তু একটা কাজ তাদের আমার ভাল লেগেছে তা হলো শিক্ষাক্ষেত্রে নোট বই নিষিদ্ধ করন। জাফর ইকবাল, কবীর চেৌধুরী এদেরকে ধরে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বটাকে সম্ভাব্য সমস্ত জায়গায় পাঠ্যসূচিতে অর্ন্তভূক্ত করা, সম্ভব হলে বিবর্তনের পথ ধরে বইটিকেই অবশ্য পাঠ্য তালিকায় অর্ন্তভূক্ত।
তবে শুধুই আপনাদের সদয় অবগতি ও বিবেচনার জন্য বলছি, আপনাদের নিকট প্রশ্নও বলতে পারেন। আপনারা কি মনে করেন এ পড়ে সবাই বিজ্ঞানমনষ্ক হয়ে যাবে? তা না তবে প্রশ্ন করতে শিখবে, “কোরানে যে মানুষকে আশরাফুল মুখলোকাত বলেছে এটাতো তাহলে কন্ট্রাডিকটরী, কোনটা ঠিক?” অনেকে হয়তো বলবেন প্রশ্নহীণ আনুগত্যের প্রবল হাওয়ার এই যুগে এটাই বা কম কি? একবারে কম নয়, তা ঠিক (একবারে বিবর্ততনীয় নিয়মে ধীরে ধীরে)। পাথর যুগ তাম্রযুগ লৌহযুগ পেরিয়ে আমরা এখন তথ্য-প্রযুক্তির যুগে। আমাদের লক্ষ্যটা কী সেটাকি ঠিক করেছি? কেউ হয়তো বলবেন এভাবে জ্ঞানের প্রসার ঘটাতে পারলেই আমাদের সমাজ থেকে শোষণ-বঞ্চণা-নিপীড়ন –প্রতারণার অবসান ঘটাতে পারব। তা ঠিক নয়, কারণ সমাজের অর্থনৈতিক/উৎপাদন কাঠামোতে পরিবর্তন না আনতে পারলে সমাজে মানুষের মধ্যে বিরাজমান বৈষম্যের অবসান ঘটানো যাবে না। তথ্য-প্রযুক্তিসহ সকল জ্ঞান বিজ্ঞান বৈষম্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে শুধু। সে ক্ষেত্রে অলৌকিক ক্ষমতাধর সৃষ্টিকর্তা বিশ্বসীদের সংগে শুধু নাম গত আস্তিক / নাস্তিক পার্থক্য বে আর কিছুই হবে না। কারণ আমার নিজের জীবনে কিছু তিক্ত অভিজ্ঞা সঞ্চয় করেছি যা স্থানাভাবে এখানে বলা সম্ভব নয়। শীঘ্রই তা লিখে পোস্ট করব বলে আশা করছি। আমার অভিজ্ঞতাটা আপনারা যারা দেশের অবস্থা পরিবর্তনে ব্যবস্থা গ্রহন বলে ভাবছেন কাজ করছেন তাদের কাজে লাগতে পারে। ধন্যবাদ।
@আবদুল হক,
খুব ভাল লাগল, এ ব্যাপারে সংঘবদ্ধ কিছু একটা করার ব্যাপারে আপনার উৎসাহ দেখে। আমার মনে হয় এই সরকারই আমাদের সুযোগ। বিএনপি-জামাত থাকতে এটা কখনোই সম্ভব না। পাঠ্যপুস্তকে আবার বিবর্তন সংযোজন এবং সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে বিবর্তন সংযোজনের বিষয়ে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করার একটা পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে কিছু কেস স্টাডি এবং একটা ওয়ার্কিং ফোর্স তৈরি করতে পারলে আমরা অণেকদূর এগিয়ে যাব। জাফর ইকবাল স্যারের সাথে যোগাযোগ করলেও ইতিবাচক ফল পাওয়া যেতে পারে। উনারাই তো এবারের শিক্ষানীতির খসড়া তৈরি করেছেন। ডঃ অজয় রায়, ডঃ আখতারুজ্জামান দের কাছ থেকে সহযোগিতা পাব এ ব্যাপারে।
@শিক্ষানবিস, জ়াফর ইকবাল স্যারের কথা না বলাই ভাল।অন্য দুজনের( ডঃ অজয় রায়, ডঃ আখতারুজ্জামান)এর বেলায় আমরা শতভাগ সাহায্য পাব।এই সরকার কতটা সাহায্য করবে সেটা নিয়েও আমি সন্দিহান।তবে চেষ্টা করা যেতেই পারে।
জাফর ইকবালের সাথে কথা বললে লাভের পরিমাণ যে অনেক কম হবে সেটা ঠিক। কিন্তু শিক্ষানীতি প্রণয়নের দায়িত্ব তো জাফর ইকবাল, কবীর চৌধুরী দের হাতেই ছিল। আমার মনে হয় নক করে দেখা যায়। সেটা অবশ্য পরে, আগে আখতারুজ্জামান স্যারের সাথে কথা বলে দেখতে হবে।
বাচ্চা ছেলেমেয়েদের খালি জায়গামত হালকা টোকা দিতে পারলেই চলে। সামান্য ইকটু খোঁচা দিতে পারলে বাকি যা কাজ সব তারা নিজে থেকেই কৌতুহলের বশে করে নেবে।
সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দেশে প্রশ্ন করে উত্তর খুঁজে পাবার জায়গা নাই। প্রশ্ন করলে উলটা দাবড়ানী খাইতে হয়। বিবর্তন শিক্ষা ব্যবস্থায় ঢুকালে সেই একই অবস্থা হবে, কারন বেশির ভাগ শিক্ষক পুরাতন ধ্যানধারনা নিয়ে আছেন,নাইলে বিবর্তন সম্পর্কে গো মূর্খ।
আর প্রাইমারীর শেষ (ক্লাস ৪/৫) অথবা হাই স্কুলের শুরুর দিক থেকে যদি চিন্তা গুলো মাথায় না ঢুকানো যায়, তবে পরের দিকে যতই কিছু করা হোক লাভ হবে সামান্যই।
@তানভী, সত্যিই আমাদের বিবর্তন শিক্ষার পক্ষে আন্দোলন শুরু করা উচিত। প্রাইমরিতেই যখন একটা শিশু ইসলাম শিক্ষায় আদম হাওয়ার কাহিনী পড়ে তখনই নষ্টের শুরুটা হয়। বিবর্তনের বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিটা প্রাইমারি থেকেই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আর বেসিক পড়াশোনা শুরু হতে পারে ক্লাস সিক্স থেকে। এই সরকারের আমলেই এটা করার সুযোগ সবচেয়ে বেশি।
অনবদ্য একটা লেখা।
আমাদের মেডিকেল কলেজগুলোতে যে জাবর কাটা বিদ্যে দেয়া হয় তার জন্য কষ্ট করে কলেজ যাবার কোন দরকার দেখি না। পাওয়ার পয়েন্টের স্লাইড দেখে দেখে পড়ে যাওয়া কোন বক্তৃতার জাতে পড়ে না। পুঁথিগত ও ব্যবহারিক শিক্ষার মধ্যে কোন রকম সমন্বয় নেই। ক্লিনিক্যাল জ্ঞান চুড়ান্তভাবে অবহেলিত। ডাক্তারগুলো সব কুসংস্কারের ডিপো। নিজেরাই দোয়া পড়তে বলে দেয়। এসব বদলাবেও না। এ নিয়ে বেশি মাতামাতি করেও কোন লাভ নেই। আমি কোর্স কো-অর্ডিনেশনের কথা বলেছিলাম। অধ্যাপক মশাই ফটিকের মত ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। বাংলাদেশের অবস্থা এত বেশি খারাপ যে, এখানে যেকোন সংস্কার কার্যত প্রায় অসম্ভব। তারপরও চেষ্টা চালাতে হবে।
শিক্ষানবিসকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও অসংখ্যা ধন্যবাদ। আমাদেরই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, মরার আগে যেন দেখে যেতে পারি এদেশের স্কুল পাঠ্যক্রমে শুধু না মেডিকেল পড়াশোনায়ও বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান যুক্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসা দরকার, পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে “বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান” নামে আলাদা গ্র্যাজুয়েট স্কুল দরকার।
@আগন্তুক,
তুরস্কের অবস্থা আমার জানামতে আরও খারাপ ছিল। কামাল আতাতু্র্ক একাই পুরো দেশটাকে পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন, মুসলিম দেশে দাড়ি রাখা ও হিজাব করা নিষেধ করে দিয়েছিলেন। সেটার তুলনায় বাংলাদেশে বিবর্তনবিদ্যা পড়ানো তো কিছুই না। আমি ছয় বছর ইংরেজী মাধ্যমে ব্রিটিশ কারিকুলাম পড়েছিলাম, আমাদের অল্প-বিস্তর বিবর্তনবাদ পড়ানো হত। আমার মনে হয় পাঠ্যসূচিতে বিবর্তনবাদ অন্তর্ভুক্ত করলে দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তি ব্যতিত কেউই খুব একটা আপত্তি করবে না। দেশে যেহেতু যুদ্ধাপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, তাই এ ব্যাপারে আশাবাদী হওয়াটা হয়ত খুব একটা অযৌক্তিক হবে না 🙂
সমকালে লেখা ছাপানোর ব্যবস্থাটা দারুণ।এই অধম কি এই প্রকল্পের আওতায় আসিতে পারে?লেনস্কি পরীক্ষাটা সবাই মিলে আরো এনরিচ ও কাটছাট করে কয়েক পর্বে ছাপানো যাইতে পারে।কারণ বিবর্তনবিরোধিদের প্রিয় যুক্তি টা হল বিবর্তন তো চোখে দেখা যায় না।আহা এ যুক্তিটা যদি তাহারা ঈশ্বর বিশ্বাসের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতেন! 🙁
আরেকটা লেখা লিখতেছি কেন ফুল কোর্স ঔষধ শেষ দরকার এ সম্পর্কে।অইটারেও প্রজেক্টে ঢুকানো যাইতে পারে।
আমি নিশ্চিত যে,কয়েকদিনের মধ্যেই নয়া দিগন্ত বা সংগ্রামের ইসলামী বিজ্ঞান পাতায় হয়রান সাহেবের লিখিত এই সব লেখার রিবিউটাল বের হবে।আর পিস টিভি,ইসলামিক টিভি,দিগন্ত টিভি সে গুলোতে হারুন ইয়াহিয়ার ডাব করা ডকুমেন্টারি তো থাকছেই।নবুয়্যতের সিলসিলা অব্যাহত থাকলে এই যুগে সূরা লাহাবের জায়গায় সূরা ডারুইন নাযিল হইত। 🙂
@পথিক,
অবশ্যই আপনি এই প্রজেক্টের আওতায় আসতে পারেন। আগামী ডারউইন দিবসকে টার্গেট করে আমরা এগুচ্ছি। লেনস্কি পরীক্ষাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওটা সমকালের জন্য রাখা যায়। তবে কাট ছাট করতে হবে। শিক্ষানবিসের ঈশ্বর বলেছেন – পাঁচশ থেকে আটশ শব্দের বেশি হওয়া চলবে না 🙂 আপনি এর মধ্যে আরো কিছু লিখতে পারেন। সবচেয়ে ভাল হয় প্রান্তিক কিছু গবেষণার খবর অনুবাদ করে ফেললে। আপনি ডিস্কোভার ম্যাগাজিন, সায়েন্স ডেইলি, কিংবা সায়েন্টিফিক আমেরিকান দেখে টপিক ঠিক করে নিন।
আপনি ছাড়াও ব্লগের অন্য যে কোন উৎসাহী লেখক এই প্রজেক্টে স্বাগতম!
=))
শিক্ষানবিসের ঈশ্বরকে নব্যুয়াতের ধারা আবার আরম্ভ করার দাবী জানাই 😀
সহমত….
@পথিক, আবার জিগায়! আমরা হারিকেন জ্বালাইয়া লেখক খুঁজি আর আপনি জিগান লিখতে পারবেন কিনা। লিখে ফেলেন, লিখে আমাদের ধন্য করেন( মীন করেই বলছি, ফাজলামী না), পারলে আপনার মত আরও কিছু লেখক জোগাড় করেন। আর এটা কোন প্রজেক্ট না, খুবই ইনফরমালি করা একটা ব্যাপার। ফেব্রুয়ারীর দ্বিতীয় সপ্তাহের ( ডারউইন দিবসের সপ্তাহ) কালস্রোতে বিবর্তন নিয়ে কিছু লেখা পাঠানো হবে, এই যা। ঘটনাচক্রে কালস্রোতের সাম্পাদক বিবর্তনের পক্ষের লোক, যেটা বাংলাদেশে সচরাচর ঘটতে দেখা যায় না।
@বন্যা আহমেদ, ধন্যবাদ।আপনি লেনস্কি পরীক্ষার লেখাটারে কাট-ছাট করে মানুষ করে সমকালে নামায়ে দিলে খুব ভাল হয়।এখন ym এ আছি।
@পথিক, হা হা হা হা। আমি যে এতদিন পরে কাজে বইসা এতগুলা মন্তব্য করতে পারসি এই তো বেশী। ভালো বলসেন, আমার আশায় থাকলে আর লেখাটা দিনের আলো দেখবে না। দেখেন না তিন মাস থেকে তিন বছর লাগে আমার একটা লেখা নামাইতে 🙂 । । আপনি এবং রায়হান যদি কাটছাটা করে লেখাগুলো আমাকে পাঠান তাহলে হয়তো একটা চান্স আছে।
আর আমি একটা ফালতু হাই ডাটা সিকিউরিটির জায়গায় কাজ করি, কোন পারসোনাল ইমেইল বা চ্যাটে ঢুকঅতে পারি না এখান থেকে। তাই আমার দিনের বেলায় কারও সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না।
@বন্যা আহমেদ, ঠিক আছে,আপনি পুরাটা পড়ে একটা মন্তব্য করেন।কি বাদ দেওয়া যায়,কি যোগ দেওয়া যায় তা বলে দেন।কত শব্দসীমা সেটা বলেন তাহলেই হবে?বাকিটা তো দর্জির কাজ-সেটা পথিক দর্জি আর রায়হান দর্জি মিলে সেরে নিব।
@পথিক, ৫০০ শব্দ।
আপনে কিন্তু জাকির নায়েকরে নিয়া আর্টিকেল লিখে সেলিব্রেটি হয়া গেছেন, বিভিন্ন ব্লগে আপনার লেখার লিংক দেওয়া হচ্ছে। আমি তো ভেবেছিলাম লেখাটা ইংরেজিতে অনুবাদ করে ফেইথ-ফ্রীডমে পাঠাবো। আপনার প্রবন্ধ পইড়াই প্রথম বিবর্তনবাদ সম্পর্কে জানার আগ্রহ জাগে। বাংলাদেশে বিবর্তনশিক্ষাকে কিভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে সেটা নিয়ে একটা ডিটেইল্ড আর্টিকেল লিখেন, মুক্তমনায় একটা ইংরেজি আর্টিকেল আছে তবে পাঠ্যপুস্তক থেকে কিভাবে বিবর্তনবাদ সড়ানো হয়েছে তা বর্ণনা করা হয়নি(ছাত্রশিবির মনে হয় চবিতে আন্দোলন করছিল), তাছাড়া অধিকাংশ পাবলিকই ইংরেজি বুঝে না।
কয়েকদিন আগে জীববিজ্ঞানের অবজেকটিভ সল্ভ করছিলাম, খুব সম্ভবত যশোর বোর্ডের একটা প্রশ্ন ছিল- “What is the fundamental branch of Biology?” এবং সঠিক উত্তর দেওয়া ছিল Evolution. উত্তর দাগানোর সময় কি যে ভাল লাগছিল 😀
পড়ে নিশ্চয়ই বুচ্ছেন যে, আমার লেখাটাই একটা ইংরেজি লেখার ভাবানুবাদ ও পরিবর্ধন-পরিমার্জন ছিল?
পাঠ্যপুস্তক থেকে বিবর্তন বাদ দেয়া নিয়ে একটা কেস স্টাডি হওয়া প্রয়োজন। আমার বিশ্বাস এক্ষেত্রে অভিজিৎদার বাবা অজয় রায় কিছু তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারবেন। একটু ফ্রি হলেই আমি এ নিয়ে কাজ শুরু করব।
@শিক্ষানবিস, আরেকজন তথ্য দিতে পারবেন। ডঃ আখতারুজ্জামান, উনি আমার বই এর মুখবন্ধতেও এ বিষয়টা উল্লেখ করেছিলেন। উনি নিজেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নিয়ে সংগ্রাম করেছেন বহুদিন। তুমি চাইলে ওনার সাথেও দেখা করতে পারো।
@বন্যা আহমেদ, হ্যা ডঃ আখতারুজ্জামান এর সাথেও দেখা করতে হবে…
জাকির নায়েক সম্বলিত প্রথম প্যারা সহ সম্পূর্ণ লেখাটাকে কাটাকাটি ব্যতিত সমকালে ছাপানোর আকুল আবেদন জানাই। 😀
সমকালে ছাপানোর জন্য তো ১ ও ৫ নম্বর প্যারা বাদ দেয়া হইতেছে, শেষের তালিকাটাও থাকবে না। নাইলে ৫০০ শব্দের মধ্যে থাকে না। অবশ্য বন্যা আপাই এইখানে ঈশ্বর। ঈশ্বর চাহেন তো সব হবে…. (কুন ফায়াকুন) 😀
@শিক্ষানবিস, গালিগালাজ করতেসো কেন ভাই? এই ফোরমে ঈশ্বরের যে অবস্থা………আমি এটাকে ব্যাক্তিগত আক্রমণ হিসেবেই নিচ্ছি।
লেখা কাটাকাটি বাদ দেন, তাইলে আর ব্যক্তিগত আক্রমণ করমু না… 😀
শিক্ষানবীশ,
একটা জিনিষ খেয়াল করসো কিনা জানি না, এই মেডিকেল বা ইঞ্জিনীয়ারিং এর ছেলেমেয়েরা অনেক বেশী মোল্লা হয়। আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, এরা শুধু ব্যবহারিক বিজ্ঞান পড়ে, তার ফলে বিজ্ঞান আসলে বোঝে না। দেশের একটা মেডিকেল কলেজের কথা শুনেছি, আ্যনাটমি পড়িয়ে তারপর এই বলে শেষ করে যে, এত জটিল গঠন আসলে ‘আল্লাহরই সৃষ্টি’। তাহলেই বোঝ।
যাই হোক অনেক ধন্যবাদ এটা অনুবাদ করার জন্য। এভ্যু ডেভুর বিজ্ঞানী শন ক্যারল এক সাক্ষাতকারে (যুক্তিতে যেটা ছাপানো হয়েছে যেটা) ভালো কথা বলেছিল। আমরা ফরেন্সিক বিজ্ঞানে সবসময় ডি এন এ ব্যবহার করছি, একে ব্যবহার করে মানুষকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা ফাঁসি দিচ্ছি, অথচ ডিএনএ যে বিবর্তনের উপর দাঁড়িয়ে আছে তা মেনে নিতে আমরা রাজী না। কি অদ্ভুত একটা ব্যাপার!
এই লেখাটা অনুবাদ করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং ওষুধ তৈরির পিছনের যে বিজ্ঞান সেখানে বিবর্তন একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, অথচ ডিসিপ্লিনগুলোতে বিবর্তন পড়ানোর জন্য কোন সাবজেক্ট নেই। এইচআইভি ভাইরাদের কথাই ধর, যে ওষুধই প্রয়োগ করা হোক না কেন, এদের এত তাড়াতাড়ি বংশবৃদ্ধি এবং মিউটেশন ঘটে যে, তাকে প্রতিরোধ করে ফেলে, ফলে কোন ওষুধই এর উপর কাজ করে না। বিভিন্ন ওষুধের কম্বিনেশন করেও এদেরকে ঠেকানো যাচ্ছে না। এখন যে এই ওষুধ বানাবে বা যে ডাক্তার এর চিকিৎসা করবে সে যদি এর পিছনের বিজ্ঞানটা না বোঝে তাহলে কি করে হবে! বিবর্তনবিদ্যাকে এখানে নিয়ে আসা ছাড়া আসলেই আর কোন গতিও নেই।
@বন্যা আহমেদ,
আমার পর্যবেক্ষণও অনুরূপ ।
মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং দুই সেক্টরের ছাত্ররাই গোঁড়া হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে বিজ্ঞানের ছাত্রদের চেয়ে কলা অনুষদের ছাত্ররা অনেক বেশি বিজ্ঞানমনস্ক।
তবে ইঞ্জিনিয়ারিং এর তুলনায় মেডিকেল বেশি গোঁড়া। কারণ মনে হয়, ইঞ্জিনিয়াররা মানুষের তৈরি জিনিস নিয়ে নাড়াচড়া করে, ঈশ্বরের মহিমা খুঁজে বের করা তাদের জন্য একটু কষ্টকর। অন্যদিকে মেডিকেলের ছাত্ররা সরাসরি ঈশ্বরের জিনিস নিয়া নাড়াচাড়া করে, পড়ে আর খালি বলে আল্লাহু আকবার। 😀
আমাদের ভার্সিটিতে (IUT) পড়াশোনার যে কি অবস্থা ছিল তাই নিয়া একটা পোস্ট দিতে বড় ইচ্ছা করতেছে। জমা রইল। বলে রাখি, আমাদের ইসলাম শিক্ষা নিয়ে টোটাল প্রায় ৯ ক্রেডিট কোর্স করতে হইছে।
@শিক্ষানবিস,
মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়া ছাত্রদের একেবারে বেশীর ভাগই মনে করে তারা হলো সমাজের সব চাইতে জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান লোকজন।পাশ করলেই সবচাইতে ভালো চাকুরী পাওয়া,ভালো চাকুরী পাওয়া মানে সমাজের এলিট ক্লাসে উঠে আসা এবং বিয়ে-সাদী করে সমাজিক ভিত্তি তৈরী করে সমাজকে প্রত্যক্ষ্য ও পরোক্ষভাবে শোষন করা ছাড়া তারা আর অন্য কিছু ভাবতে পারে বলে মনে হয় না।মানসিকভাবে এই দৈন্যটি আছে বলে সুখ-আরাম-আয়েশী জীবনের কথা বাদ দিয়ে মুক্তচিন্তা,মুক্তবুদ্ধি,মানবতাবাদ ,যুক্তিবাদ সর্বোপরি বিজ্ঞান ও দর্শনের বিষয়ে চিন্তা করা তো তাদের কাছে সবচাইতে বালখিল্য বা জটিল বিষয় বলে মনে হয়।আর এ রকম আরাম-আয়েশী নিরাপত্তামুলক জীবন আছে বলেই ইহকালের সব সুখ গিলে খাওয়ার পর আরো আরো সুখের স্বপ্নে পাগল হয়ে পরকালের অনন্তকালের মহাসুখের জন্য যা যা করার দরকার তারা বা তাদের ঐ শ্রেনীটি অলৌ্কিক ও পারলৌকিক এবং ধ র্ম-ক র্ম সহ সমাজের আর ৮/১০ জন লোক থেকে বেশী-ই করে বেড়ায়।সেখানে আজকের সভ্যতার সব চাইতে যে অগ্রসর বিষয় “বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান” যাকে ছাড়া জীবন-জগতের কোনো শাখাই সামনে উত্তরনের পথ খোলা নেই সেখানে আমাদের তথাকথিত এই এলিট শ্রেনীটি মন-মানসকিতায় বাস করে একেবারে এখনো অন্ধকার মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারনায়। ধিক———-
তোমার বিজ্ঞানের উপর লেখা সব সময়ই আমাদের চোখ কান খোলার জন্য মাইলফলক জোতির্ময় আলোকবর্তিকা।ভালো থেকো।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
সহমত। ডাক্তারির ছাত্র হলেও এই নগ্ন সত্য আমাকে মানতেই হচ্ছে।
@শিক্ষানবিস,
UN:F [1.4.6_730]
কি পড়াবে তাহলে? পড়বা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ইসলামী শিক্ষার কোর্স করবা না তো কি করবা! মাত্র ৯ ক্রেডিট, ধর্ম শিক্ষা ছাড়া আর যে অন্য কিছু পড়াইসে তোমাদের এই তো বেশী।
@বন্যা আহমেদ,
মুহাম্মদের হিসাবের নয় ক্রেডিটে, ডিজিটাল সিগনাল প্রসেসিং আর টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর তিন তিন ছয় ক্রেডিট পড়েনাই। এই দুই কোর্সে স্যার আমাদের ঈশ্বরের সাথে কীভাবে সঠিকভাবে কমিউনিকেশন স্থাপন করা যায়, তা শিখাইছিলেন। বলেন, আলহামদুলিল্লাহ 😀
হুম, তা তো ভুলেই গেছিলাম। এই দুই সাবজেক্ট পড়াইছে এক জন। তিনি আবার আদর্শগত দিক থেকে পুরোপুরিই জামাতপন্থী ছিলেন। প্রতিটি ক্লাসেরই এক পর্যায়ে তিনি ধর্মীয় আলোচনা শুরু করতেন এবং আমাদের শিবির কর্তা তার সাথে জ্ঞানগর্ব আলোচনায় মেতে উঠতো। স্যার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ না এমন সকল দেশের কাজকর্মে ইসলামের বিরুদ্ধে তীব্র ষড়যন্ত্রের বীজ খুঁজে পেতেন।
@শিক্ষানবিস,
তাড়াতাড়ি পোষ্ট করেন। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাছি। আমি আবার বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার নামে সার্টিফাইড চাকুরী বিদ্যা নিয়ে কাজ করার খুব তাগিদ বোধ করি। এই চাকুরী লাভের মোহাবিষ্ট শিক্ষাযন্ত্রের মধ্যে আমি আর থাকতে চাই না। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ারও কোন ইচ্ছা নেই। এটা শুধু নিজেদের ভবিষ্যৎ ভোগ বিলাস নিশ্চিত করার একটি পদ্ধতি মাত্র।
ভোগ বিলাস নিপাত যাক, লেখা নিয়ে আমি আসতেছি অচিরেই।
খুবই জ্ঞানের কথা।
চিকিতসাবিজ্ঞান, অনুজীব বিজ্ঞান ছাড়া আর কোথায় কোথায় বিবর্তনবাদের সরাসরি প্রয়োগ দেখা যায়?
এক হাজার অক্সফোর্ড হার্ভার্ড এর বৈজ্ঞানিক লেখার থেকে একটি প্রত্যক্ষ প্রয়োগ অন্ধবিশ্বাসীদের অনেক দ্রুত সত্য জানতে সাহায্য করবে।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার আমার চোদ্দগুষ্ঠির জীবনের ইতিহাসে।আয়নায় তাকালে, চিড়িয়াখানায় গেলে……
আদিল, মাফ করে দিয়েন, আপনার এই সিরিয়াস মন্তব্যে ফাজলামো করার লোভটা সামালাতে পারলাম না 🙂 । এই আমার এক দোষ, আশা করি একদিন ভালু হয়ে যাবো!!!
@আদিল মাহমুদ,
হে হে… আয়না আর চিরিয়াখানা ছাড়াও আরো হাজারো জায়গায় বিবর্তনের ব্যবহার হচ্ছে। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিয়ে তো গোটা একটা ইবুকই আমি লিখে ফেললাম। এছাড়া আছে জিনোম ইভলুশন, মলিকিউলার এবং সেলুলার ইভলুশন, বিবর্তনীয় চিকিৎসাবিদ্যা, ডারউইনীয় গ্যাস্ট্রোনমি, এমনকি সোশিওবায়োলজি, কালচারাল ইভলুশন (মীম তত্ত্ব) – সামাজিক বিজ্ঞানগুলোতেও ডারউইনবাদের প্রয়োগ ঘটছে। দর্শনে আছে ইভলুশনারী এপিস্টমলজি, লিঙ্গুইস্টিকে আছে ম্যানুস্ট্রিপ্ট ইভলুশন – কোথায় যে এখন বিবর্তনবাদের প্রয়োগ নেই – তাই এখন খুঁজে দেখতে হবে!
@অভিজিৎ ভাই কয়েকদিন আগে লিটারারি ডারউইনিজমের উপর মানবমন পত্রিকায় একটা লেখা দেখলাম।যোগাযোগ উপন্যাসের ডারউইনীয় ব্যাখ্যা পড়ে বেশ মজা লাগল।
এই পোস্ট দিয়ে আমার বিশাল লাভ হল। ডারউইনিয়ান গ্যাস্ট্রোনমি এবং এর পরে এখন লিটারারি ডারউইনিজম নামক দুইটা চমৎকার এবং মজাদার বিষয়ের নাম জানলাম।
ডারউইন সমাজের প্রতিটি সূক্ষ্ণ বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করেছে। এমনকি সিনেমাতেও ডারউইনের প্রভাব লক্ষ্যণীয়। কানাডার সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্র পরিচালক ডেভিড ক্রোনেনবার্গ এর বিশেষত্ব হচ্ছে বডি হরর এবং মানুষের ভায়োলেন্স। তার “আ হিস্টরি অফ ভায়োলেন্স” সিনেমার ভিত্তিই হচ্ছে সারভাইভাল ফর দ্য ফিটেস্ট। সেরা ক্রিটিক রজার ইবার্ট বলেছেন, সিনেমাটাকে তিনভাবে ব্যাখ্যা করা যায়:
1) to a suspect with a long history of violence;
2) to the historical use of violence as a means of settling disputes,
3) to the innate violence of Darwinian evolution, in which better-adapted organisms replace those less able to cope.
ক্রোনেনবার্গ নিজে বলেছেন তিনি বিবর্তনবাদী ব্যাখ্যার পক্ষে। তার নিজের ভাষায়, “I am a complete Darwinian,” এই সিনেমার ডারউইনীয় ব্যাখ্যা নিয়ে একটা লেখা জমা হয়ে থাকল।
আসলে এই লেখা বড় করার কোন সুযোগ ছিল না। বন্যা আপার বিবর্তনের পথ ধরে বইয়ের “চোখের সামনেই ঘটছে বিবর্তন” অধ্যায়টা পড়ে দেখেন, অনেক কিছু দেয়া আছে। মনে হয় বিবর্তন বিষয়ক শতকরা ৯০ ভাগ প্রশ্নের বন্যা আপা বাংলায় লিপিবদ্ধ করে ফেলেছেন। গ্রেট জব… 🙂
বিবর্তনীয় চিকিৎসাবিদ্যা (evolutionary medicine) বা ডারউইনীয় চিকিৎসাবিদ্যা (Darwinian medicine) ক্রমশঃ চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটা প্রধান শাখা হয়ে উঠছে। প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি না মিললেও চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিবর্তন পাঠের প্রয়োজনীয়তা তারা উপলব্ধি করতে পেরেছেন বহু আগেই। আমেরিকার কোষ জীববিদ Carlo Maley তার গবেষনায় দেখিয়েছেন কিভাবে স্থান এবং সম্পদ নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে দেহে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্যান্সার সেলের বিবর্তন ঘটে। শুধু তাই নয়, ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলো ঔষধের প্রতিক্রিয়া থেকে কিভাবে রেজিস্টেন্ট হয়ে উঠছে সেটাও স্পষ্ট হয়ে উঠে এ ধরনের গবেষণায়। আবার বিবর্তন চিকিৎসাবিজ্ঞান থেকেই ডারউইনীয় নির্বাচন স্ট্রেটেজী থেকে কিভাবে সমাধান পাওয়া যায়, সেটাও বলে দিয়েছেন জীববিজ্ঞানী গ্রেগ উইন্টার।
বন্যা তার ‘বিবর্তনের পথ ধরে’ বইয়ে সিকেল সেল এনিমিয়ার উল্লেখ করেছিলো – কিভাবে আফ্রিকার ম্যালেরিয়াপ্রবণ জায়গা গুলোতে এ ধরনের একটি রোগ খুঁটি গেড়ে বসেছে। এনেমিয়ায় আক্রান্ত কোষগুলো যেখানে মাত্র ৩০ দিন বেঁচে থাকতে পারে, সেগুলো কেন সুস্থ কোষের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকবে? কারণ, সিকেল সেল এনিমিয়ার রোগীরা সুস্থ কোষের চেয়ে একটু বেশি ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে সক্ষম। আফ্রিকার যে অঞ্চলগুলোতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি, সেগুলো যায়গাতেই সিকেল সেল এনিমিয়ার রোগি অনেক বেশি পাওয়া যাচ্ছে। বিবর্তনী চিকিৎসাবিজ্ঞান না বুঝলে এ ব্যাপারটা কখনোই বোঝা যেত না।
এ ছাড়া আছে হাইজিন হাইপোথিসিস – যেটা দাবী করছে – পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি অতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে গিয়ে (মানে সাবান জাতীয় অতিরিক্ত কেমিকেল ব্যবহার করে) আমরা ধীরে ধীরে ইমিউনিটিকে কমিয়ে ফেলেছি – ফলে আধুনিক বিশ্বে লোকজন ভাইরাস- ব্যাক্টেরিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।
বিবর্তনীয় চিকিৎসা বিজ্ঞান বিজ্ঞানের নতুন একটি শাখা। এর সব কিছু এখনো পরীক্ষিত নয়। কিন্তু যতই সময় এগুবে এই শাখাটি বলিষ্ট থেকে বলিষ্টতর হয়ে উঠবে বলাই বাহুল্য।
বিবর্তনীয় চিকিৎসাবিদ্যার পাশাপাশি আছে ডারউইনীয় গ্যাস্ট্রোনমি। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে বাংলাদেশ ভারত প্রভৃতি গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলোতে রান্না বান্নায় অনাদিকাল থেকেই প্রচুর মশলা ব্যবহার করা হয়। শীতপ্রধান দেশগুলোতে রান্না বান্নায় মশলার ব্যবহার কম। কেউ কি কখনো ভেবে দেখেছে কেন? কারণ, হল- গরম দেশে ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে খাদ্য সহজেই পঁচে যায়। মানুষ তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। আসলে খাবারে আমাদের মশলাগুলো আমাদের দেহকে পঁচা খোঁজা খাবারের বিষ্ক্রিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। যারা বাংলাদেশ থেকে সাত সাগর পাড়ি দিয়ে পশিমে এসেছেন – তারা প্রথমে এসেই একতা হোচট খান – এদের রান্নার প্রায় অর্ধেকটাই কাঁচা। শাক, মাছ, স্টেক – খুব একটা না ভেজে বা সিদ্ধ করেই তারা খান। আর আমাদের দেশে সব কিছুকেই আমরা ঝোলে সিদ্ধ করে ফেলি। আসলে রোগ প্রতিরোধ করতেই এই কৌশলের আশ্র্য় নেয়া।
শিক্ষানবিসকে ধন্যবাদ এমন চমৎকার বিষয়টি নিয়ে লিখবার জন্য।
ডারউইনিয়ান গ্যাস্ট্রোনমি বিষয়টা নিয়ে একেবারেই জানতাম না। খুবই মজার বিষয়। আগে তো আমি মনে করতাম আমরা হুদাই মশলা খাই। যাক, এখন বিবর্তনীয় যুক্তি পাওয়া গেল। 🙂
বিবর্তনীয় চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে বিশাল দৈর্ঘ্যের গবেষণামূলক লেখা প্রয়োজন, বাংলাতেই। মুক্তমনাতেই সেটা হবে আশাকরি।
‘ষড়যন্ত্র” তাহলে আরো ছড়াচ্ছে 🙂 ।