শুদ্ধস্বরের আহমেদুর রশীদ টুটুলের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমি যৌনপ্রবৃত্তি এবং জেন্ডার বিষয়ক একটি গবেষণাধর্মী বই লেখায় হাত দেই গত বছর। আমার লেখা আগেকার কিছু মালমশলা এমনিতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো, সেগুলোকে সংকলিত করে এবং আরো কিছু অধ্যায় বাড়িয়ে একটি বইয়ের আকারে রূপ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বইটির নামকরণ করা হয়েছে – “সমকামিতা : একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান“ । এধরণের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ বই লেখার প্রয়াস বাংলাভাষায় সম্ভবত এই প্রথম। নিজের বই সম্পর্কে নিজের কিছু বলা সত্যই অশোভন, তাই বইটি সম্পর্কে আমি নিজে না বলে প্রকাশক বইটির ফ্ল্যাপে যা উদ্ধৃত করেছেন তা পাঠকদের জন্য নিবেদন করছি, বাকিটুকু বিচারের ভার পাঠকদের –
‘সমকামিতা’ বইটির নামকরণের মধ্যেই রয়েছে লেখকের অনুসন্ধিৎসু মননের এবং প্রথাভাঙ্গা বিষয়বস্তুর নির্দেশ। আধুনিক জীববিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞানের সর্বাধুনিক তথ্যের ভিত্তিতে স্পর্শকাতর এ বিষয়টির উদ্ভব এবং অস্তিত্বকে বিশ্লেষণ করেছেন তিনি। বৈজ্ঞানিক আলোচনার পাশাপাশি লেখক আর্থ-সামাজিক, সমাজ-সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং মনোস্তাত্ত্বিক বিভিন্ন দিক সুচারুভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
প্রাণীজগতে সহস্রাধিক প্রজাতিতে যে সমকামিতার অস্তিত্ব রয়েছে তা এখন অনেকেই জানেন। মানব সভ্যতাও কিন্তু এই ধারার ব্যতিক্রম নয়। প্রাচীন গ্রীক ও রোমান সভ্যতা থেকে শুরু করে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় সমকামিতার অস্তিত্বের পাশাপাশি, আমাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাস থেকেও করা হয়েছে সমকামিতার উৎসের নিবিড় অনুসন্ধান। কিন্তু সমকামী মানুষদের যাত্রাপথ এবং তাদের যৌনতার স্বীকৃতির ব্যাপারটি কুসুমাস্তীর্ণ ছিলো না। ইতিহাস এবং সমাজ পরিক্রমার পটভুমিকায় সারা বিশ্ব জুড়ে সংখ্যালঘু যৌনপ্রবৃত্তির মানুষগুলোর দীর্ঘদিনের সংগ্রাম এ বইয়ে ধারাবাহিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। জীবনের যে স্বাভাবিক প্রবৃত্তিকে বিভিন্ন সামাজিক কুসংস্কার এবং অজ্ঞানতার অপশাসনে এতোদিন দীর্ণ করে রাখা হয়েছিলো, লেখকের যুক্তিনিষ্ঠ লেখনীতে বাংলায় প্রথমবারের মতো প্রশ্নবিদ্ধ করা হলো শক্তিশালী এক সামাজিক ট্যাবুকে।
বইটা বেরুচ্ছে দিন কয়েকের মধ্যেই। যারা বইটি সংগ্রহ করতে চান, তারা প্রকাশকঃ আহমেদুর রশীদ চৌধুরী, ৯১ আজিজ সুপার মার্কেট (৩য় তলা) শাহবাগ, ঢাকা। ফোন : ৯৬৬৬২৪৭, ০১৭১৬৫২৫৯৩৯ যোগাযোগ করুন। বাংলা একাডেমীর বইমেলাতেও বইটি পাওয়া যাবে।
আমি ঠিক করেছি সামনে ধারাবাহিকভাবে পাঠকদের সামনে বইটির গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো থেকে কিছু কিছু অংশ উদ্ধৃত করব। বিষয়টি নিয়ে আমি আগে কিছু পোস্ট দিয়েছিলাম। সেগুলো পাওয়া যাবে এখানে –
- সমকামিতা কি প্রকৃতিবিরুদ্ধ? ( ১ম | ২য় | ৩য় | ৪র্থ পর্ব )
- চাই নারী-পুরুষ ছাড়াও অন্যান্য লিঙ্গের সামাজিক স্বীকৃতি
- সমকামী মস্তিস্ক এবং সমকামী জিনের খোঁজে
আজকে বইটির সপ্তম অধ্যায়ের কিছু অংশ পাঠকদের জন্য দেয়া হচ্ছে।
:line:
সমকামিতা কি কোন জেনেটিক রোগ?
মানসিক অথবা জেনেটিক রোগ?
সমকামিতার ইতিহাস থেকে স্পষ্টই দেখা যায় যে, ইতিহাসের একটা বড় সময় জুড়েই সমকামীদের অবিরতভাবে যুদ্ধ করতে হয়েছে ‘সমকামিতা এক ধরণের মানসিক রোগ’ – সমাজে গেঁথে বসা এই মিথ্যা বিশ্বাসটি ভাঙতে। উগ্র ধর্মবাদীরা তো প্রথম থেকেই নানা পদের ঘোট পাকাতে সব সময়ই মুখিয়ে থাকতো, তার উপর মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে রঙ্গমঞ্চে হাজির হয়েছিলেন ‘মনোবিজ্ঞানী’ নামের বিজ্ঞানীরা। রিচার্ড ফ্রেইহার ইবিং সেই ১৮৮৬ সালে ‘সাইকোপ্যাথিয়া সেক্সুয়ালিস’ বইটির মাধ্যমে সমকামীদের গায়ে যে ‘মানসিক রোগের’ তকমা লাগিয়ে দিয়েছিলেন, তারপর থেকে প্রায় একশ বছর ধরে সকল ‘ডিগ্রীধারী’ মনোবিজ্ঞানী আর ডাক্তারেরা যৌনতার এই স্বাভাবিক প্রবৃত্তিকে ‘অস্বাভাবিক’ হিসেবে চিত্রিত করে গেছেন। শুধু তাই নয়, তারা সমকামীদের ‘রোগমুক্ত’ করতে পুরো উনিশ শতক জুড়ে নানাধরণের নিষ্ঠুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, অত্যাচার করেছেন, নির্যাতন করেছেন, এবং শেষ পর্যন্ত একটা সময় মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন যে,তারা যেমনটি আগে ভেবেছিলেন – সমকামিতা আসলে কোন রোগ নয়। আসলে স্পষ্ট করে বললে বলতে হয় – সারা দুনিয়া জুড়ে সমকামী মানবাধিকার কর্মীরাই ডাক্তার এবং মনোবিজ্ঞানীদের মনে গেঁথে যাওয়া ‘বৈজ্ঞানিক কুসংস্কার’ ভেঙ্গেছেন, তারা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন সমকামী হয়েও স্বাস্থ্যকর এবং সুখী জীবন যাপন করা যায়।
তার পরেও সমকামিতাকে এখনো অনেকেই ভুলভাবে এক ধরণের ‘রোগ’ বলে মনে করে থাকেন। তারা ভাবেন চিকিৎসার মাধ্যমে এই ধরণের রোগ আসলেই ভাল করে ফেলা সম্ভব। সত্যই কি তাই? ব্যাপারটা বুঝতে হলে আমাদের রোগ বা ‘ডিজিস’ জিনিসটা কি সেটা ভাল করে বুঝতে হবে। মেডিকেলের অভিধানে রোগের যে সংজ্ঞা দেয়া আছে তা হচ্ছে[1] –
Disease is an impairment of the normal state of the body that interrupts function, causes pain, and has identifiable characteristics.
এই সংজ্ঞানুযায়ী সমকামিতা কোনভাবেই রোগ নয়, কারণ এটি শরীরে কোন ব্যাথা বেদনা ঘটাচ্ছে না, কিংবা শরীরের কোন ‘ফাংশন’ বিনষ্ট করেছে না। তারপরও স্বাভাবিক বা ‘নরমাল’ শব্দটি নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে। কারণ কোনটা স্বাভাবিক আর কোনটা অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য তা উপরের সংজ্ঞায় স্পষ্ট করা হয়নি। একটি ব্যাপার এক্ষেত্রে পরিস্কার করে বলা দরকার যে, সমকামিতা আসলে একটি যৌন-প্রবৃত্তি। আর যৌন-প্রবৃত্তি জিনিসটা কোন রোগ নয়, যেটা চিকিৎসা করে ‘নিরাময়’ করা যেতে পারে। তারপরেও লাইসেন্সধারী ডাক্তাররা সমকামিতাকে একটা সময় ‘রোগ’ হিসেবে চিহিত করে তা ‘সারানর’ চেষ্টা করেছিলেন এবং সমকামিতা-চিকিৎসার যে সমস্ত দাওয়াই তারা বাৎলে দিয়েছিলেন তা কেবল ‘পিচাশ কাহিনী’ আর ‘হরর মুভি’ গুলোতেই দেখা যায়।তারা চিকিৎসার নামে কখনো রোগীদের ইলেক্ট্রিক শক দিতেন, কখনো মস্তিষ্কে সার্জারি করে একটা অংশকে অকেজো করে দিতেন, কখনোবা দেহে ইচ্ছেমতন হরমোন প্রবেশ করাতেন এমনকি খোঁজা পর্যন্ত করে দিতেন[2]। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতিটি ছিলো ‘অরুচি বা বমি চিকিৎসা’(Aversion therapy)। এই চিকিৎসায় সমকামী পুরুষকে চেয়ারে বসিয়ে নানা ধরণের যৌনকামনা উদ্রেককারী সমকাম-নির্ভর ছবি দেখানো হত, আবার সেই সাথে তার পুরুষাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক প্রয়োগ করে বমি করানোর চেষ্টা করা হত। জার্মানীতে আবার একটি চিকিৎসায় কবর থেকে মরা লাশ তুলে নিয়ে পুরুষাংগ ছেদন করে সমকামী রোগীর দেহের অভ্যন্তরে স্থাপন করা হত টেস্টোস্টেরন লেভেল বাড়ানোর জন্য,এবং এটি করা হত রোগীকে না জানিয়েই[3]। একবার ক্যাপ্টেন বিলি ক্লেগ হিল নামের ২৯ বছরের এক রোগীকে ১৯৬২ সালে এই বমি চিকিৎসার নামে এমন অত্যাচার করা হয় যে রোগী রীতিমত কোমাতে চলে যান এবং হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুবরণ করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার লক্ষ্য এটাকে তখন ‘স্বাভাবিক কারণে মৃত্যু’ হিসেবে উপস্থাপন করে। প্রায় ত্রিশ বছর পরে পুনঃ তদন্তে বের হয়ে আসে যে সে সময় বমি চিকিৎসায় ব্যবহৃত এপোমরফিনের প্রভাবে বিলি সে সময় অচেতন হয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন।
পিটার প্রাইস নামের এক ব্যক্তিকে সমকামিতা থেকে মুক্ত করার জন্য একটি জানালাবিহীন ছোট্ট খুপড়িতে তিনদিন ধরে আটকে রাখা হয়। তাকে বাইরে থেকে গালিগালাজ সমৃদ্ধ টেপ শোনানো হয়, আর ঘন্টায় ঘন্টায় ইঞ্জেকশন দিয়ে বমি করানো হয়। সেই বমি, প্রশ্রাব আর নিজের বিষ্ঠার মধ্যেই থাকে থাকতে বাধ্য করা হয়। তার এই অত্যাচারের কাহিনী হয়তো আজ নাৎসী বাহিনীর কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের সাথে তুলনীয় মনে হবে, কিন্তু পার্থক্য একটাই – ব্যাপারটি ঘটেছিলো ব্রিটেনের সম্ভ্রান্ত এনএইচএস হাসপাতালে[4]। এ ধরণের বহু নৈরাজ্যজনক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে সমকামিতার কৃষ্ণ ইতিহাস। সমাজের এই ধরণের ট্যাবু ভাংগতে ভাংগতেই প্রতিনিয়ত এগুতে হয়েছে সমকামীদের। শেষ পর্যন্ত ১৯৭৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বর আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন স্বীকার করে নেয় সে সমকামিতা কোন রোগ নয়, এটি যৌনতার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। এটি সমকামিতার আইনী অধিকার এবং সামাজিক স্বীকৃতি আদায়ের লড়াইয়ে এক বিরাট মাইলফলক, এক ঐতিহাসিক বিজয়। আজ ২০০৯ সালে দাঁড়িয়ে এ কথা বলা যায় সমকামিতা যে যৌনতার একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি এ ব্যাপারে প্রায় সকল চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরাই একমত পোষণ করেন (এই অধ্যায়ের প্রাসঙ্গিক বক্স দেখুন –‘ সমকামিতা কি কোন রোগ বা মনোবিকৃতি?’)। প্রসঙ্গতঃ, আমেরিকান সাইকোলজিকাল এসোসিয়েশন ১৯৯৪ সালে ‘স্টেটমেন্ট অন হোমোসেক্সুয়ালিটি’ শিরোনামে যে বিবৃতি জনসমক্ষে প্রকাশ করে, তার প্রথম দুটো অনুচ্ছেদ এখানে প্রণিধানযোগ্য[5] –
‘সমকামিতা নিয়ে গবেষণার ফলাফল খুবই পরিস্কার। সমকামিতা কোন মানসিক রোগ (mental illness) নয়, নয় কোন নৈতিকতার অধঃপতন। মোটা দাগে এটি হচ্ছে আমাদের জনপুঞ্জের সংখ্যালঘু একটা অংশের মানবিক ভালবাসা এবং যৌনতা প্রকাশের একটি স্বাভাবিক মাধ্যম। একজন গে এবং একজন লেসবিয়নের মানসিক স্বাস্থ্য বহু গবেষণায় নথিবদ্ধ করা হয়েছে। গবেষণার বিচার, দৃঢ়তা, নির্ভরযোগ্যতা, সামাজিক এবং জীবিকাগত দিক থেকে অভিযোজিত হবার ক্ষমতা – সব কিছু প্রমাণ করে যে, সমকামীরা আর দশটা বিষমকামীর মতোই স্বাভাবিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত হতে পারে।
এমনকি সমকামিতা বিষয়টি কারো পছন্দ বা চয়েসের ব্যাপারও নয়। গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে যে, সমকামী প্রবৃত্তিটি জীবনের প্রাথমিক পর্যায়েই তৈরী হয়ে যায়, এবং সম্ভবত তৈরী হয় জন্মেরও আগে। জনসংখ্যার প্রায় দশভাগ অংশ সমকামী, এবং এটি সংস্কৃতি নির্বিশেষে একই রকমই থাকে, এমনকি নৈতিকতার ভিন্নতা এবং মাপকাঠিতে বিস্তর পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও। কেউ কেউ অন্যথা ভাবলেও, নতুন নৈতিকতা আরোপ করে জনসমষ্টির সমকামী প্রবৃত্তি পরিবর্তন করা যায় না। গবেষণা থেকে আরো বেরিয়ে এসেছে যে, সমকামিতাকে ‘সংশোধন’-এর চেষ্টা আসলে সামাজিক ও মনঃস্তাত্ব্বিক কুসংস্কার ভিন্ন আর কিছু নয়’।
সমকামিতা কি কোন রোগ বা মনোবিকৃতি?
বিজ্ঞানীরা আজ মেনে নিয়েছেন যে, শুধু মানুষের মধ্যে নয় সব প্রানীর মধ্যেই সমকামিতার অস্তিত্ব আছে। কাজেই সমকামিতা প্রকৃতিজগতের একটি বাস্তবতা। আরো জানা গিয়েছে যে, সমকামিতার ব্যাপারটা কোন জেনেটিক ডিফেক্ট নয়। একটা সময় সমকামিতাকে স্রেফ মনোরোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হত। চিকিৎসকেরা বিভিন্ন থেরাপি দিয়ে তাদের চিকিৎসা করতেন। এর মধ্যে শারিরীক নির্যাতন, শক থেরাপি, বমি থেরাপি সব কিছুই ছিলো, কিছু ক্ষেত্রে জোর করে এদের আচরণ পরিবর্তন করলেও পরে দেখা গেছে অধিকাংশই আবার তারা সমকামিতায় ফিরে যায়। এ ধরনের অসংখ্য নথিবদ্ধ দলিল আছে। আসলে বহু ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে যাবার পর ডাক্তাররা এবং অন্যান্য অনেকেই আজ মেনে নিয়েছেন, সমকামিতা যৌনতার একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। সেজন্যই কিন্তু ১৯৭৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বর আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন বিজ্ঞানসম্মত আলোচনার মাধ্যমে একমত হন যে সমকামিতা কোন নোংরা ব্যাপার নয়, নয় কোন মানসিক ব্যধি। এ হল যৌনতার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। ১৯৭৫ সালে আমেরিকান সাইকোলজিকাল এসোসিয়েশন একইরকম অধ্যাদেশ প্রদান করে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন ১৯৮১ সালে সমকামিতাকে মানসিক রোগের তালিকা থেকে অব্যহতি দেয়। আমেরিকান ল ইন্সটিটিউট তাদের মডেল পেনাল কোড সংশোধন করে উল্লেখ করে –‘ কারো ব্যক্তিগত যৌন আসক্তি এবং প্রবৃত্তিকে অপরাধের তালিকা হতে বাদ দেয়া হল’। আমেরিকান বার এসোসিয়েশন ১৯৭৪ সালে এই মডেল পেনাল কোডের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে সমকামিতাকে সামাজিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করে। এর ফলে সমকামীরা পায় অপরাধবোধ থেকে মুক্তি। আমেরিকান ১৯৯৪ সালে আমেরিকান সাইকোলজিকাল এসোসিয়েশন তাদের ‘স্টেটমেন্ট অন হোমোসেক্সুয়ালিটি’ শিরোনামের একটি ঘোষণাপত্রে সমকামিতাকে একটি স্বাভাবিক যৌনপ্রবৃত্তি হিসেবে উল্লেখ করে এবং কারো যৌনপ্রবৃত্তিকে পরিবর্তন করার যে কোন প্রচেষ্টাকে অনৈতিক বলে উল্লেখ করা হয়। আমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশন ১৯৯৪ সালের একটি রিপোর্টে সমকামিতাকে স্বাভাবিক যৌনপ্রবৃত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, এবং অভিমত ব্যক্ত করে যে, সমকামীদের যৌনতার প্রবৃত্তি পরিবর্তনের চেষ্টা না করে বরং তারা যেন সমাজে ভালভাবে বেঁচে থাকতে পারে আমাদের সেই চেষ্টা করা উচিৎ। একাডেমী অব পেডিইয়াট্রিক্স এবং কাউন্সিল অব চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট হেলথ স্পষ্ট করেই বলে যে সমকামিতা কোন চয়েস বা পছন্দের ব্যাপার নয়, এবং এই প্রবৃত্তিকে পরিবর্তন করা যায় না। ১৯৯৮ সালে ম্যানহাটনে কনফারেন্সে সাইকোএনালিটিক এসোসিয়েসন তাদের পূর্ববর্তী হোমোফোবিক ব্যবহারের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে। ১৯৯৯ সালে আমেরিকান একাডেমী অব পেডিয়াট্রিক্স, আমেরিকান কাউন্সিলিং এসোসিয়েশন, আমেরিকান এসোসিয়েশন অব স্কুল এডমিনিস্ট্রেটরস, আমেরিকান ফেডারেশন অব টিচার্স, আমেরিকান সাইকোলজিকাল এসোসিয়েশন, আমেরিকান স্কুল হেলথ এসোসিয়েশন, ইন্টারফেইথ এলায়েন্স ফাউন্ডেশন, ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব স্কুল সাইকোলজিস্ট, ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব সোশাল ওয়ার্কার এবং ন্যাশনাল এডুকেশন এসোসিয়েশন একটি যৌথ বিবৃতিতে সমাকামিতাকে একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হিসেবে উল্লেখ করে তাদের উপর যে কোন ধরণের আক্রমণ, আগ্রাসন এবং বৈষম্যের নিন্দা করেন। পশ্চিমা বিশ্বে কোন আধুনিক চিকিৎসকই সমকামিতাকে এখন আর ‘রোগ’ বা বিকৃতি বলে আর চিহ্নিত করেন না।
|
মনোবিজ্ঞানীরা রণে ভঙ্গ দিলেও পরবর্তীকালে ঘোট পাকাতে আবারো এগিয়ে আসলেন আরেকদল বিজ্ঞানের তকমা লাগানো কেউকেটাদের দল – আধুনিক জেনেটিক্স-ওয়ালারা। জিনগত গবেষণার ব্যাপারগুলো রঙ্গমঞ্চে আসার পর আবার নতুন করে সমাকামিতাকে ‘জেনেটিক ডিফেক্ট’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা শুরু করেছিলেন কিছু কিছু ‘বিশেষজ্ঞ’। কিন্তু সমকামিতার প্রবণতা যে কোন জেনেটিক ডিফেক্ট নয় এটা অনেক ভাবেই প্রমাণ করা যেতে পারে। কিভাবে সেটা? প্রথমকথা, সমকামিতাকে ‘জিনগত বিকৃতি’ বলার আগে জিনের সাথে সমকামিতার সত্যই সম্পর্ক আছে কিনা – তা পরিষ্কার করতে হবে। কিন্তু ব্যাপারটা এখনো আমাদের কাছে ধোঁয়াশা। আমরা আগের অধ্যায়ে সমকামিতা নিয়ে জিনসংক্রান্ত গবেষণার কথা জেনেছি। জিনের সাথে সমকামিতার একটা যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা হলেও এটা কিন্তু আমাদের পরিস্কার করে বুঝতে হবে যে – ‘গে জিন’ বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব বিজ্ঞানীরা (এখনো) বের করতে পারেননি। ‘জিনগত’ কোন ফ্যাকটর যদি থেকেও থাকে সেটা হয়ত বেশ কয়েকটি জিনের প্রভাবের সম্মিলিত ফল হবে। আর শুধু জিনকে গোনায় ধরলেই হবে না, এর সাথে আসতে হবে পরিবেশের প্রভাব। এপিজেনিটিক্স নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, বহু জিন পরিবেশের প্রভাবে নিজেদের সক্রিয়করণ (activation) বা নিষ্ক্রিয়করণ (deactivation) ঘটায় – অনেকটা বিদ্যুতের বাতির সুইচ অন অফ-এর মতই। এই নতুন শাখাটি থেকে আমরা জানতে পারছি পরিবেশ থেকে সংকেত নিয়ে দেহ কিভাবে তার অভ্যন্তরস্থ জিনের প্রকাশভঙ্গিকে (genetic expression) বদলে ফেলে[6]। কাজেই জিন এবং পরিবেশের মিথস্ক্রিয়ার ব্যাপারটি পুরোপুরি পরিস্কার না হলে আমরা সমকামিতাকে এখনই ‘জেনেটিক’ বলে রায় দিতে পারি না, আর জেনেটিক রোগ বলা তো আরো পরের কথা।
যদি আমরা তর্কের খাতিরে ধরেও নেই জিনের সাথে সমাকামিতার সরাসরি একটা সম্পর্ক রয়েছেই, তারপরও এটাকে জনপুঞ্জের প্রকারণ বা ভ্যারিয়েশন না বলে ‘রোগ’ বলাটা বালখিল্যই হবে। আসলে আমরা যদি বিবর্তনের পটভূমিকায় চিন্তা করি, তাহলে যে কোন দেহজ বৈশিষ্ট্যই আসলে কোন না কোন ‘জেনেটিক মিউটেশন’-এর ফল। কেউ লম্বা, কেউ বেঁটে, কারো চুল কালো, কারোটা বাদামী, কারো চোখ কালো, কারোটা আবার কটা। এগুলো কোনটিকেই আমাদের সমাজে ‘জেনেটিক রোগ’ বলে চিহ্নিত করা হয় না। আমার এক বন্ধুর চোখের রঙ পুরোপুরি নীল। এবং সে এই রঙ নিয়ে যার পর নাই গর্বিত। কিন্তু যেহেতু আমার চারপাশের সবার চোখেরই রঙই আমি দেখি কালো বা বাদামী, কাজেই আমার বন্ধুর চোখকে কি আমি ‘রোগাক্রান্ত’ বলে রায় দিয়ে দিতে পারি? আমি কি তাকে গিয়ে বলতে পারি যে, যেহেতু আমার দেখা চারপাশের সবার চোখের রঙের সাথে তার রঙ মেলে না, সেহেতু তার চোখের রঙ বদল করে অন্যদের মত করে ফেলা উচিৎ? না, আমি তা মোটেই বলতে পারি না, আর বললেও বন্ধুটি সেটা মেনে নেবে কেন? কারণ, জেনেটিক মিউটেশনের ফলে সৃষ্ট চোখের এই নীল রঙ তার কোন সমস্যা করছে না। বরং তার চোখের এই নীল রঙ নিয়ে সে চলনে বলনে একেবারে কেতাদুরস্ত। তার কাছে এই মিউটেশন অপছন্দনীয় নয়, বরং দারুণ গর্বের।
সমকামিতার ব্যাপারটিকেও আমার বন্ধুর নীল চোখের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। ধরা যাক, চোখের নীল রঙের মতই সমকামিতাও কোন এক জেনেটিক মিউটেশনের ফল। কিন্তু মিউটেশন হয়েছে বলেই কি আমরা তাকে জেনেটিক রোগ বলে অভিহিত করে দেব, আর সকল সমকামীদের বলব যে সমকামিতা ছেড়ে বিষমকামিতার জগতে চলে যেতে? আমার নীল চোখা বন্ধুটি যেভাবে আপত্তি জানাতো তার চোখের রঙ পরিবর্তনের কথা বললে, বহু সমকামীই সেভাবে আপত্তি জানাবে, তাদের যৌনপ্রবৃত্তি পরিবর্তনের কথা বলতে গেলে। তাদের অনেকেই কিন্তু এই সমকামী প্রবৃত্তি নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে না, বরং তারা গর্বের সাথেই প্রতিবছর ‘গে-প্রাইড’[7] মার্চে অংশ নিচ্ছে। তারা মনে করে, তাদের এই সমকামী প্রবৃত্তি কারো কোন সমস্যা করছে না, স্বাভাবিক কোন কাজকর্মের ক্ষেত্রেও এটি বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে না। কাজেই সমকামী প্রবৃত্তি তাদের কাছে কোন রোগ নয়, বরং একটি স্বাভাবিক প্রকারণ (variation) মাত্র।
আর এ কথা তো বলাই বাহুল্য যে, প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় একটি প্রকারণ যখন ‘অনুপযুক্ত’ বা ‘ক্ষতিকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়, তখন তা আপনা আপনিই বাতিল হয়ে যায়। কারণ ক্ষতিকর মিউটেশনবাহী এ সমস্ত জীব বংশবৃদ্ধি করার আগেই মৃত্যুবরণ করে ফলে তারা উত্তরাধিকার টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু যে মিউটেশন গুলো বাড়তি উপযোগিতা দেয় (যেমন, দু পায়ের উপর ভর করে দাড়ানোর ক্ষমতা, কিংবা মস্তিস্কের বৃদ্ধি ইত্যাদি) কিংবা থাকে আপাতঃ নিরপেক্ষ (যেমন, সাদা হাড় কিংবা নীল চোখ ইত্যাদি) সেগুলো প্রকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিলুপ্ত হয় না, বরং পজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জেনেটিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে বাহিত হয়। এ কথা নিঃসন্দেহ যে সমকামিতা শুধু মানুষের মধ্যেই নয়, সমস্ত প্রাণী জগতেই প্রবলভাবেই দৃশ্যমান। সমকামিতা যদি সত্যই ‘জেনেটিক ডিফেক্ট’ হত, তা হলে প্রাকৃতিক নির্বাচনের ছাকনির মধ্য দিয়ে মিলিয়ন বছর ধরে যাবার ফলে বহু আগেই বাতিল হয়ে যাবার কথা ছিলো। প্রকৃতিতে হাজার হাজার জিনিস বিলুপ্ত হয়ে গেছে – কিন্তু সমকামী প্রবনতা হয়নি। সমকামিতা নামক প্রবনতাটি প্রানী জগতে বহাল তবিয়তেই রাজত্ব করছে অনাদিকাল থেকেই। কাজেই সমকামিতাকে প্রকারণ না বলে রোগ বলাটা যুক্তিযুক্ত নয়।
জেনেটিক রোগের বিপরীতে সমকামিতার অবস্থানের আর একটি বড় কারণ হল সংখ্যাধিক্য। আমরা আগের একটি অধ্যায়ে দেখেছি, ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী আলফ্রেড কিন্সের রপোর্ট অনুযায়ী প্রতি দশ জন ব্যক্তির একজন সমকামী । খুব রক্ষণশীল হিসাবও যদি ধরা হয় সেটা কোনভাবেই পৃথিবীর সামগ্রিক জনসংখ্যার শতকরা ৫ ভাগের কম হবে না। আর জেনেটিক ডিফেক্ট সে তুলনায় অনেকটাই দুর্লভ ঘটনা। ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা যাক। বিজ্ঞানীরা বলেন, জেনেটিক রোগের দুর্লভতার পরিমাপ (degree of rarity) নির্ধারিত হয় দুইটি বিদ্যমান প্রক্রিয়ার সাংঘর্ষিক মিথস্ক্রিয়ায়। এদের মধ্যে একটি হল পরিব্যক্তি বা মিউটেশনের মাধ্যমে সৃজন (formation by mutation) এবং অন্যটি হল প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বর্জনের হার (rate of elimination by natural selection)। এই দুইয়ের প্রতিযোগিতায় নির্ধারিত হয় দুর্লভতার স্তর যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় পরিব্যক্তি-নির্বাচন ভারসাম্য (mutation-selection equilibrium)[8]। নীচের সারণী থেকে জেনেটিক রোগ এবং প্রকারণের একটা সম্পর্ক স্থাপন করা যেতে পারে –
সারণী ৭.১ দুর্লভতা এবং রোগের প্রকোপের মধ্যকার পারষ্পরিক সম্পর্ক
জন্ম |
ডারউইনীয় ফিটনেসের হ্রাস |
জেনেটিক রোগ নাকি প্রকারণ? |
প্রতি ১০ জনে ১ |
০.০০১% |
প্রকারণ |
প্রতি ১০০ জনে ১ |
০.০১% |
|
প্রতি ১০০০ জনে ১ |
০.১% |
|
প্রতি ১০,০০০ জনে ১ |
১% |
|
প্রতি ৫০,০০০ জনে ১ |
৫% |
জেনেটিক রোগ |
প্রতি ১০০,০০০ জনে ১ |
১০% |
|
প্রতি ১,০০০,০০০ জনে ১ |
১০০% |
যদি কোন জেনেটিক বৈশিষ্ট্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়, তবে সেটি এক মিলিয়নে একটি ঘটতে দেখা যায় (সারনী ৭.১ এর সর্বশেষ সারি দ্রঃ )। দেখা গেছে, যদি ডারউইনীয় ফিটনেসের হ্রাসের হার শতকরা ১০ ভাগে নেমে আসে, তবে জেনেটিক বৈশিষ্ট্য বেড়ে প্রতি একশ হাজারে একটিতে উঠে আসে। যদি ফিটনেসের হ্রাস শতকরা পাঁচ ভাগ থাকে, তবে তবে সেই জেনেটিক বৈশিষ্ট্য ঘটবে প্রতি পঞ্চাশ হাজারে একটি। বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, প্রতি পঞ্চাশ হাজারে একটি বৈশিষ্ট্য থাকার হারকে জেনেটিক রোগাক্রান্ত হবার প্রান্তসীমা হিসেবে গন্য করা যেতে পারে[9]। অর্থাৎ, সোজা কথায় – মিউটেশনের মাধ্যমে কোন জেনেটিক বৈশিষ্ট সংঘটনের হার যদি প্রতি পঞ্চাশ হাজারে একটি বা তারো কম ঘটে, তবে সেটিকে জেনেটিক রোগ হিসেবে গন্য করা যেতে পারে, তার বেশি হলে নয়।
উদাহরণ হিসেবে এখানে হান্টিংটন ডিজিজ – নামে একটি জেনেটিক রোগের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এটি ঘটে প্রতি ১০০,০০০ জনে ৪ থেকে ৭ টি। সঙ্গত কারণেই এটি জেনেটিক রোগ হিসেবে গন্য হবে। এরকম আরো জেনেটিক ডিফেক্ট আছে যেগুলো ঘটে খুব বেশি হলে প্রতি ৫০,০০০ জনে একটি করে ঘটে। এর সাথে তুলনা করলে বোঝা যায় – জেনেটিক ডিফেক্ট ( ৫০, ০০০ এ ১ টি) এর তুলনায় সমকামিতার এই হার ২৫০০ গুন বেশি (১০০ জনে ৫ জন ধরে হিসেব করলে)। তাই বিজ্ঞানীরা আজ বলেন[10] –
সমকামিতা কোন ধরণের ‘ম্যালফাংশানিং’ নয়… এটা নিয়ে কোন সন্দেহই নেই। সমকামিতা কোন জেনেটিক বিকৃতিও নয়, নয় কোন জেনেটিক রোগ।
তারপরেও কেউ যদি জেনেটিক ডিফেক্টের কথা বলেন, তাহলে তাদের প্রানীজগতে সমকামিতার ব্যাপারটাও কিন্তু ব্যাখ্যা করতে হবে, কারণ আমরা আগের অধ্যায়গুলোতে দেখেছি প্রানীজগতেও কিন্তু সমকামী প্রবণতার হার একেবারে ফেলনা নয়। বনবো শিম্পাঞ্জিদের সমকামিতা প্রবণতা এতই বেশি যে এটা হেটারোসেক্সুয়াল রিলেশনশিপের সাথেই তুলনীয়। জাপানী ম্যাকুয়ি নামের এক ধরণের বাঁদর নিয়ে গবেষকরা গবেষনা করে সমকামিতার উল্লেখযোগ্য প্রবণতা লক্ষ্য করেছেন। এছারা হাতি, সিংহ, চিতাবাঘ, হায়না, ক্যাঙ্গারু, হরিণ, জিরাফ, পাহাড়ি ভেড়া, আমেরিকা, ইউরোপ ও আফ্রিকার মোষ, জেব্রা উল্লেখযোগ্য। পাখিদের মধ্যে পেঙ্গুইন, ধুসর পাতিহাঁস, কানাডা পাতিহাঁস, কালো রজহাঁস, বরফী পাতিহাঁস, মিউট রাজহাঁস, শকুন সহ অনেক প্রাণীর মধ্যে সমকামিতার সুস্পষ্ট উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সরীসৃপের মধ্যে সমকামিতার আলামত আছে কমন অ্যামিভা, অ্যানোল, গিরগিটি, স্কিনক, গেকো মাউরিং, কচ্ছপ, রাটেল স্নেক প্রভৃতিতে। বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত ১৫০০র বেশী প্রজাতিতে সমকামিতা এবং রূপান্তরকামিতার অস্তিত্ব সনাক্ত করেছেন, এই বইয়ের চতুর্থ পর্বে বিস্তৃতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কাজেই ধরে নেয়া হয়ত ভুল হবে না যে, প্রকৃতিতে সমকামিতার অস্তিত্ব সবসময় ছিলো, আছে, এবং থাকবে। কাজেই জেনেটিক ডিফেক্টের কথা যারা বলেন তাদের ব্যাখ্যা করতে হবে কেন এই ‘জেনেটিক ডিফেক্ট’ প্রকৃতিতে এত সফলভাবে টিকে আছে। বলা বাহুল্য, এর কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
আর ‘রোগ’ সারাতেই বা চায় কে?
যদিও সমকামী-রূপান্তরকামী-উভকামীদের আর এখন আর পশ্চিমা বিশ্বে জেনেটিক এবং মানসিক রোগাক্রান্ত হিসেবে আর গন্য করা হয় না, কিন্তু একটা সময় রোগ সারাবার নাম করে যাবতীয় কু-চিকিৎসা আর অপচিকিৎসা করে রীতিমত অত্যাচার আর নিপীড়ন করা হত। ইলেক্ট্রিক শক, মস্তিষ্কে সার্জারি, হরমোন চিকিৎসা কিংবা বমি চিকিৎসা’র নামে কিভাবে ‘মনোবিশেষজ্ঞ’রা সেসময় রোগীদের উপর ভয়াবহ সব অত্যাচারের পশরা সাজিয়ে বসেছিলেন তার কিছু উল্লেখ আমি করেছি এই অধ্যায়ের প্রথম দিকে। ইতিহাসের পাতা খুঁজলে দেখা যাবে, বিশেষজ্ঞদের এ ধরণের ‘চিকিৎসা’র শিকার শুধু সমকামীরাই হয়নি, হয়েছে অন্যান্য উপসর্গধারী রোগীরাও। কিছু উদাহরণ হাজির করা যাক।
এক সময় মৃগীরোগ বা হিস্টেরিয়ার চিকিৎসা করতে গিয়ে মেয়েদের ভগাঙ্কুর কেটে ফেলে দিতেন ডাক্তারেরা[11]। তারা ভাবতেন হিস্টেরিয়াগ্রস্ত মেয়েরা যৌনোন্মাদ। এদের ভগাঙ্গুর কেটে মেয়েদের ‘ওভারসেক্সড’ হবার হাত থেকে রক্ষা করলেই হিস্টেরিয়াও কমে যাবে। ফলে ১৮৬০ সালের দিকে হিস্টেরিয়া চিকিৎসার নামে অসংখ্য মেয়েদের ক্লায়টোরিস কেটে ফেলে যৌন-প্রতিবন্ধী বানিয়ে ছেড়ে দিতেন ‘বিশেষজ্ঞ’ চিকিৎসকেরা। আর সেই কুকর্মের সাফাই গাইতেন এভাবে[12] –
‘আমাদের ধারণা ক্লাইটোরিস কেটে ফেলা মেয়েরা থাকে অনেক সুখি। তারা ঘুমায় ভাল করে, খায় ভাল করে, আর থাকে সারাদিন হাসিখুশি। আর তাছাড়া হিস্টেরিয়া চিকিৎসা করে ভাল করার মত রোগ নয়। কাজেই রোগীকে যতদূর শান্তি দেয়া যায়, সেটাই ভাল’।
ভাবছেন শুধু মেয়েদের ভগাঙ্গুরই ডাক্তারদের জন্য সমস্যা ছিলো? না হে গর্বিত পুরুষের দল, আপনাদের কপালেও শান্তি রাখেননি স্বনামখ্যাত ডাক্তারেরা। তাদের জন্য সমস্যা করেছে পুরুষদের লিঙ্গের নীচে ঝুলে থাকা বাড়তি চামড়াটুকুও। অর্থাৎ, ছেলেদের খৎনা করা নিয়েও ঘোট পাকিয়েছে ডাক্তারেরা বিস্তর। ১৯৬০ সালের দিকে আমেরিকায় জন্ম নেয়া শতকরা ৯৫ ভাগ শিশুর ত্বকচ্ছেদ করা হত। তারপর ১৯৭০ সালের দিকে আমেরিকান একাডেমী অব পেডিয়াট্রিক্স ঘোষণা করে যে – খৎনা করায় কোন ‘চিকিৎসাগত সুবিধা’ নেই। তারাই আবার ১৯৮৯ সালে গণেশ উলটে দিয়ে বলা শুরু করলো – এতে দারুণ ‘পোটেনশিয়াল বেনেফিট’ আছে। তারপর ১৯৯৯ সালে একাডেমীর পঞ্চাশ হাজার সদস্য উপসংহারে পৌঁছন যে, এই ‘বেনেফিট’ কোন ‘বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়’[13]।
সমকামিতার ব্যাপারটি নিয়েও ঠিক একইভাবে জল ঘোলা করা হয়েছে বিস্তর। জেনেটিক্স বিজ্ঞানের রঙ্গমঞ্চে আসার পর সমকামিতা জেনেটিক রোগ কিনা সেটাও গবেষণা করে বের করতে চেয়েছিলেন গবেষকেরা। আমরা দ্বিতীয় অধ্যায়ে মারিয়ার ‘এন্ড্রোজেন ইনসেন্সিটিভিটি সিন্ড্রোম’ এর সাথে পরিচিত হয়েছিলাম – যার ফলে XY ক্রোমোজম বিশিষ্ট ‘পুরুষ’ সন্তান নারী কাঠামোর আদলে দেহ নিয়ে বেড়ে উঠে। গবেষকদল দেখতে চেয়েছেন সমকামীদের জিনের রিসেপ্টরে ‘এন্ড্রোজেন ইনসেন্সিটিভিটি সিন্ড্রোম’ এর মত কোন ‘সমস্যা’ আছে কিনা। তারা সমকামী ভাতৃযুগলের টেস্টোস্টেরন রিসেপ্টরের জিন পর্যবেক্ষণ করে তা বিশ্লেষণ করে দেখলেন। তেমন উল্লেখযোগ্য কিছুই তারা খুঁজে পেলেন না[14]। টেস্টোস্টেরন রিসেপ্টরের জিন সমকামী বিষমকামী উভয় দলেই ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে ছিলো, কোন প্যাটার্ণ ছাড়াই। ফলে সমকামিতার ব্যাপারটি যে ‘এন্ড্রোজেন ইনসেন্সিটিভিটি সিন্ড্রোম’ এর মত কোন কিছু নয়, তা পরিস্কারভাবে বোঝা গেল। এর আগে, জেনেটিক্স যখন জানা ছিলো না -কখনো বিকৃতি, কখনো মানসিক রোগ, কখনো অধঃপতন… এ ধরনের নানা স্তর পার হয়ে শেষ পর্যন্ত আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন ১৯৭৩ সালে যখন স্বীকার করে নিল যে সমকামিতা কোন রোগ নয়। হল এক নতুন যুগের সূচনা। কিন্তু তারপরেও যে সবাই এটি মেনে নিয়েছেন তা নয়। ধর্মীয় মদদপুষ্ট কিছু চিকিৎসকদের সংগঠন যেমন NARTH এক্স-গে মিনিশট্রি নামধারী কিছু ধর্মীয় সংগঠণ যেমন, ইক্সোডাস ইন্টারন্যাশনাল, এভারগ্রীন ইন্টারন্যাশনাল প্রভৃতি সংগঠন বিচ্ছিন্ন ভাবে এখনো চিকিৎসার মাধ্যমে সমকামীদের ‘রোগমুক্ত’ করতে বদ্ধ পরিকর। তারা পুরুষদের আরো পুরুষালী আর মেয়েদের আরো মেয়েলী করে গড়ে তুলার চেষ্টা করে আর পাশাপাশি অরুচি চিকিতৎসার মত অপচিকিৎসা চালাচ্ছে এখনো। পাশাপাশি আবার পরিচালনা করে ধর্মীয় প্রার্থনা সভার। এই চিকিৎসার নাম দিয়েছে ‘রিপারেটিভ থেরাপি’ (প্রচলিত ভাবে অভিহিত করা হয় ‘কনভারশন থেরাপি’ হিসেবে)। তারা মনে করে এ ধরণের চিকিৎসা করে তারা সমকামী প্রবৃত্তি থেকে মানুষকে মুক্ত করতে পারছে। কিন্তু বাস্তবতা উলটো। গবেষক এরিয়েল শিডলো এবং মাইকেল শ্রোডার ২০০২ সালের একটি গবেষণা পত্রে[15] দেখিয়েছেন, শতকরা মাত্র ৩ ভাগ ক্ষেত্রে ‘রিপারেটিভ থেরাপি’র মাধ্যমে যৌনপ্রবৃত্তি বদল করা সম্ভব হয়েছে, শতকরা ৮৮ ভাগ ক্ষেত্রে এটি পুরোপুরি ব্যর্থ, এবং বাকীরা কোন অভিমত দেননি। ক্লিনিকাল মনোবিজ্ঞানী ডগলাস হাল্ডম্যান এ ধরনের চিকিৎসাকে ‘সুডো সায়েন্স’ বলে অভিমত দিয়েছেন[16]। বলা বাহুল্য, মূল ধারার কোন চিকিৎসকেরাই এই ‘রিপারেটিভ থেরাপি’কে এখন অনুমোদন করে না।
অনেক সময় আবার শর্ষের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে ভুত। আশির দশকে আমেরিকায় একজন এস-গে মিনিস্ট্রির পরিচালনায় একটি সংগঠন তৈরি করা হয় ‘হমোসেক্সুয়ালস এনোনিমাস’ নামে। সংগঠনের উদ্দেশ্য সমকামিতার হাত থেকে জনগনকে মুক্তি দেয়া। কিন্তু সেই সঙ্ঘটনের দু জন সদস্য মিডিয়ায় অভিযোগ করেন যে, তাদের যৌনপ্রবৃত্তির পরিবর্তন তো হয়ই নি, বরং, সংগঠনের পরিচালক তাদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন । ‘এক্স গে লিবারেশন ইন জেসাস ক্রাইস্ট’ নামে আরেকটি সংগঠনের পরিচালকের বিরুদ্ধেও সেখানকার সদস্যদের উপর যৌন আগ্রাসনের অভিযোগ উঠে এবং তাকে পরিচালকের পদ থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। একই ব্যক্তি তখন ১৯৮৬ সালে আরেকটি ‘গে মিনিস্ট্রি’ তৈরী করে এবং সেখানেও তার উপদেষ্টাদের সাথে যৌন-সংসর্গের অভিযোগ উঠে। তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সেই সংগঠন থেকেও পদত্যাগ করে আরেকটি এক্স-গে মিনিস্ট্রি স্থাপন করেন ১৯৯৩ সালে এবং সেখানেও তার সহকর্মীদের সাথে সমকামী যৌন সম্পর্কের অভিযোগ উত্থাপিত হয়[17]।
আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে অবস্থা আরো ‘কেরোসিন’। সম্প্রতি সমকামিতা নিয়ে জণগনের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হবার পরিপ্রেক্ষিতে, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যা সমাধানের জন্য ‘অজ্ঞাতকূলশীল বিশিষ্ট ব্যক্তিদের’ দিয়ে কলাম লেখানো হচ্ছে, কখনো বা বিশেষজ্ঞের অভিমত দেয়ানো হচ্ছে। এই সমস্ত ‘কলামিস্ট বিশেষজ্ঞরা’সমস্যা সমাধানের নামে এমন সমস্ত দাওয়াই বাৎলে দিচ্ছেন যে, তাতে শুধু তাদের জ্ঞানের দীনতাই ফুটে উঠছে না, সেই সাথে সামগ্রিক পরিস্থিতিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হতাশাব্যঞ্জক দিকে। যেমন, কলকাতার বিখ্যাত আনন্দবাজার পত্রিকায় ২০০৩ সালের ২৯শে নভেম্বর জনৈক মৈনাক মিত্রের একটি চিঠি প্রকাশিত হয়। চিঠিতে মৈনাক বলেন[18],
‘আমি পুরুষ হয়েও আরেক পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট। শারীরিকভাবে আমরা একে অপরকে ভোগ করছি। কিন্তু একটা সময় পর ছেলেটি পালিয়ে যায়। ওর কথা মনে পড়লে খুব খারাপ লাগে…’
এর উত্তরে পত্রিকার ‘বিশেষজ্ঞ’ ঋতা ভিমানী সমস্যার সমাধান দিতে গিয়ে বলেন –
‘এই ধরণের ব্যাপারে জড়িয়ে পড়ার একটা নতুন ট্রেন্ড এসেছে। কিন্তু ব্যাপারটার মধ্যে যে অসম্পূর্ণতা আছে তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।অন্যদিকে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। ছেলেটি যে চলে গেছে জানবেন তা আশীর্বাদ হয়েছে। সাঁতার কাটুন, ফুটবল খেলুন। মেয়েদের সাথে মেলামেশা করুন। যে সব বন্ধু-বান্ধব প্রেম করছেন তাদের কাছে জানতে চান মেয়েদের মনের কথা। নারীশরীরের মধ্যে যৌনতার আঁচ নিন। পুরুষালি কাজকর্ম করুন। সমকামী গে হয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখাটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার, কিন্তু জানবেন এর মধ্যে যে নিয়মে সৃষ্টি চলেছে সেই আনন্দ নেই।’
সমকামিতাকে ‘নতুন ট্রেন্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ঋতা ভিমানী শুধু সমকামিতা বিষয়ে শুধু তার জ্ঞানের দীনতাই প্রকাশ করেননি, সেই সাথে রক্ষণশীল মহলের হাতকেও শক্তিশালী করলেন। সেই সাথে বাড়িয়ে তুললেন সমকামীদের মানসিক যন্ত্রণাকে। উত্তর চব্বিশ পরগনার সীমান্তবর্তী সাপোর্ট গ্রুপের অন্যতম সদস্য সুখদের সাধুখাঁ এ ব্যাপারে তার প্রিক্রিয়া জানিয়ে বলেন[19],
‘দশ লক্ষ মানুষ যে পত্রিকা পড়ে, সেখানে এই ধরনের লেখা যদি ছাপা হয়, তাহলে সমকামীদের অবস্থাটা কী হবে একবার ভাবুন। বাড়িকে বোঝাবো কি করে? সবাই ভেবে নেবে,আমরা ইচ্ছে করেই বুঝি এমন আচরণ করি।ছোট থেকে তো অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছুতেই নিজের প্রকৃতিকে বদলাতে পারিনি। তাহলে এবার আমরা মরি, তাই কি আপনারা চান? বিষ কিনে দিন, খেয়ে মরি। তাহলে আপনারা বাঁচবেন। পরামর্শ দেবার নামে আমাদের নিয়ে খেলা হয়তো বন্ধ হবে।’
বাংলাদেশের অনেক পত্রিকাতেই আবার একই কায়দায় উপদেশ দিয়ে ইসলামী মূল্যবোধ অনুসরণ করতে পরামর্শ দেয়া হয়, বলা হয় এতে সমকামিতার মত বিকৃতি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। পত্র-পত্রিকার পাতায় বিশেষজ্ঞ নামধারী অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মতামত কীভাবে সমস্যাকে জটিল ও ভয়াবহ করে তুলতে পারে, তার কিছু বাস্তব উদাহরণ এগুলো।
এর বাইরেও বহু ‘বিশেষজ্ঞের’ অবিশেষজ্ঞীয় মতামত আছে। ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে সিডনী স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত ‘Why Gay Men Flee Bangladesh’ নামের প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডঃ শফিউল আজমের বরাত দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতিবছর শতকরা ৩.৫ ভাগ হারে সমকামিতা প্রকোপ বাড়ছে, আর এর পেছনে দায়ী করা হয় আর্সেনিকের কন্টামিনেশনকে। আরেকজন ‘বিশেষজ্ঞ’ সমকামিতার পেছনে দায়ী করেন হিন্দি ছবির প্রসারকে। বলা বাহুল্য পৃথিবীর আর কোন গবেষণাতেই আর্সেনিক কিংবা হিন্দি ছবিকে সমকামিতার পেছনে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। সমকামিতা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কেবল আর্সেনিক এবং বলিউড ছবিকে দায়ী করে অধ্যাপক আজমের যে রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছিলো, সেই গবেষণার সাথে এই গ্রন্থের লেখক দ্বিমত পোষণ করে। তপন রবি নামে এক ভদ্রলোক এককসময় মুক্তমনায় এ ব্যাপারে ২০০৬ সালে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আমাদের একটা প্রতিক্রিয়া আমাদের ফোরামে প্রকাশিত হয়েছিলো।
সমকামিতা কোন রোগ নয়, বরং এটিকে রোগ হিসেবে চিহ্নিত করে একে সারাবার চেষ্টার ‘অভিপ্রায়’টিকেই বরং রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় আজ । গবেষক এরিক মার্কোস তার ‘ইস ইট এ চয়েস’ বইয়ে যে মন্তব্য করেছেন[20] তার সাথে হয়তো অনেকেই আজ একমত পোষণ করবেন –
যে সমস্ত থেরাপিস্টরা সমকামীদের যৌনপ্রবৃত্তি পরিবর্তন করতে চান, তাদের ধরে জেলে ভরা উচিৎ। মনোবিজ্ঞানীদের যেটা করা উচিৎ তা হল – রোগী যে প্রবৃত্তিরই হোক না কেন, তার অস্বস্তি দূর করে সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে মনোবল বাড়িয়ে তোলা।
:line:
[1] See for example Medical dictionaries available on MedLine; http://www.nlm.nih.gov/medlineplus/mplusdictionary.html
[2] Eric Marcus, Is It a Choice? Answers to the Most Frequently Asked Questions About Gay & Lesbian People, HarperOne; 3 Revised edition, 2005
[3] Brian Wheeler, When gays were ‘cured’, BBC News Online Magazine; http://news.bbc.co.uk/2/hi/uk_news/magazine/3258041.stm
[4] Peter Tatchell, Aversion Therapy Exposed, Guardian 13 September 1997
[5] A statement from The American Psychological Association, July 1994
[6] বইয়ের পরিশিষ্টে মানব প্রকৃতি এবং প্রবৃত্তিগুলো কি জন্মগত নাকি আচরণগত? দ্রষ্টব্য।
[7] LGBT pride or gay pride is the concept that lesbian, gay, bisexual, and transgender (LGBT) people should be proud of their sexual orientation and gender identity. The modern “pride” movement began after the “Stonewall riots” in 1969.
[8] James F. Crow and Motoo Kimura, Introduction to Population Genetics Theory, Harper & Row Publishers, June 1, 1970
[9] Joan Roughgarden, Evolution’s Rainbow: Diversity, Gender, and Sexuality in Nature and People, University of California Press, May 17, 2004
[10] Joan Roughgarden, পূর্বোক্ত।
[11] Theatres of Madness, Deviant Bodies, edited by J.Terry and J. Urla, Bloomington, Indiana University Press
[12] Rachel P. Maines, The Technology of Orgasm: “Hysteria,” the Vibrator, and Women’s Sexual Satisfaction, The Johns Hopkins University Press, 2001
[13] Deborah Stead, Circumcision’s Pain and Benefits Re-Examined, New York Times, March 2, 1999
[14] J P Macke, N Hu, S Hu, M Bailey, V L King, T Brown, D Hamer, and J Nathans, Sequence variation in the androgen receptor gene is not a common determinant of male sexual orientation, Am J Hum Genet. 1993 October; 53(4): 844-652.
[15] Shidlo, Ariel; Schroeder, Michael, “Changing Sexual Orientation: A Consumers’ Report”, Professional Psychology: Research and Practice 33 (3), 2002
[16] “The Pseudo-science of Sexual Orientation Conversion Therapy”. ANGLES, the policy journal of the Institute for Gay and Lesbian Strategic Studies (IGLSS), www.iglss.org. 1999.
[17] Francis Mark Mondimore, A Natural History of Homosexuality, The Johns Hopkins University Press; 1 edition, 1996
[18] আনন্দবাজার ২৯/১১/০৩
[19] অজয় মজুমদার ও নিলয় বসু, সমপ্রেম, দীপ প্রকাশন, কলকাতা, ২০০৫।
[20] Eric Marcus, Is It a Choice? Answers to the Most Frequently Asked Questions About Gay & Lesbian People, HarperOne; 3 Revised edition, 2005
:line:
“সমকামিতা : একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান” (প্রকাশিতব্য ২০০৯, শুদ্ধস্বর) থেকে উদ্ধৃত।
আমার সমকামিতার উপর বইটির ভুমিকা এবং স্যাম্পল কিছু চ্যাপ্টার রাখা আছে এখানে –
“সমকামিতা : একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান“
আগ্রহী পাঠকেরা দেখতে পারেন।
@ফুয়াদ
যদিও প্রশ্নটি আমাকে করেন নাই, আপনার অবগতির জন্যে কিছু তথ্য দিলাম, আশা করি আমার এ অনধিকার চর্চা ক্ষমা সুন্দর দৃস্টিতে দেখবেন।
Quran 68:1 Nun. By the Pen and the (Record) which (men) write
Tafsir of Ibn Abbas:
On the authority of Ibn ‘Abbas that he said regarding the interpretation of Allah’s saying (Nun): ‘(Nun) He says: Allah swears by the Nun, which is the whale that carries the earths on its back while in Water, and beneath which is the Bull and under the Bull is the Rock and under the Rock is the Dust and none knows what is under the Dust save Allah. The name of the whale is Liwash, and it is said its name is Lutiaya’; the name of the bull is Bahamut, and some say its name is Talhut or Liyona. The whale is in a sea called ‘Adwad, and it is like a small bull in a huge sea. The sea is in a hollowed rock whereby there is 4,000 cracks, and from each crack water springs out to the earth. It is also said that Nun is one of the names of the Lord; it stands for the letter Nun in Allah’s name al-Rahman (the Beneficent); and it is also said that a Nun is an inkwell. (By the pen) Allah swore by the pen. This pen is made of light and its height is equal to the distance between Heaven and earth. It is with this pen that the Wise Remembrance, i.e. the Guarded Tablet, was written. It is also said that the pen is one of the angels by whom Allah has sworn, (and that which they write (therewith)) and Allah also swore by what the angels write down of the works of the children of Adam – Tanwîr al-Miqbâs min Tafsîr Ibn ‘Abbâs
* Ibn Kathir on this verse:
It was said that “Nun” refers to a great whale that rides on the currents of the waters of the great ocean and on its back it carries the seven Earths, as was stated by Imam Abu Jafar Ibn Jarir. Narrated by Ibn Bashar, narrated by Yahya, narrated by Sufyan Al-Thuri, narrated by Sulayman Al-Amash, narrated by Abu Thubian, narrated by Ibn Abbas who related, “The first thing that Allah created was the pen and He said to it ‘Write’. The pen asked, ‘What shall I write?’ Allah said, ‘Write (the) fate (of everything).’ So the pen wrote everything that shall be from that moment until judgment day.
Then Allah created the “Nun” and He caused steam to rise out of which the heavens were created and the Earth was then laid flat on the Nun’s back. Then the Nun became nervous and (as a result) the earth began to sway, but (Allah) fastened (the earth) with mountains lest the earth should move …
It was narrated by Ibn Jarir, narrated by Ibn Hamid, narrated by Ata’a, narrated by Abu Al-Dahee, narrated by Ibn Abbas who stated, “The first thing my Lord created, may He be Exalted and Glorified, was the pen and He said to it, ‘Write.’ So the pen wrote all that will be until judgment day. Then Allah created the Nun (the whale) above the waters and he pressed the Earth into its back.
http://altafsir.com/Tafasir.asp?tMadhNo …
http://quran.al-islam.com/Tafseer/DispTafsser.asp?l=arb&taf=KORTOBY&nType=1&nSora=68&nAya=1
http://www.danielpipes.org/comments/156668
http://indonesia.faithfreedom.org/forum/68-1-t32717/
http://altafsir.com/Tafasir.asp?tMadhNo=0&tTafsirNo=73&tSoraNo=68&tAyahNo=1&tDisplay=yes&UserProfile=0
@আকাশ মালিক,
এ ব্যাপারটি আমি জানি। এর ব্যাক্ষাও কিছু জানা আছে। এটা দরকার নেই। আমি অভিজিত দা, যা লিখেছেন তার দলিল চাইতেছি। যাতে সহজে মারিফত দেখতে পারি আল তাফসির ডট কমে।
আশা রাখি তিনি দিবেন।
@ফুয়াদ,
একটা দুইটা নয় বেশ কয়েকটা তাফসির এখানে আছে। আসলেই আমার উচিৎ ছিল আতিক রাঢ়ীকে দেখানো যে, এই যদি হয় গরুর শিং বা মাছের পিটের উপর পৃথিবী সৃস্টির ইসলামী কাহিনী যা নবী মুহাম্মদের সময়ে বা এর পরে লেখা, তাহলে এটাকে প্রাচীন ইসলামী সাহিত্য বলা যাবেনা কেন?
@আকাশ মালিক,
সেটা আমি এখন ভাবতেছি না। আমি যে ব্যক্ষা খুজতেছি, তা পাওয়া সহজ করে দিতে পারেন অভিজিত দা, তিনি তার উল্লেখিত হাদিসের সত্যিকার রেফারেন্স দিয়ে। আমি অপেক্ষা করতেছি। আমি উনার উল্লেখিত হাদিসের দলিল চাইতেছি।
আকাশ মালিক সাহেব, আপনি তো আরবি পারেন, তাহলে আপনি নিজেই হাদিসের মারিফত গুলি আল-হাদিস ডট কমে দেখে নিতে পারেন। http://hadith.al-islam.com/
আমি ঐখানে অনেক ইন্টারস্টিং ব্যাক্ষা পেয়েছি, যা অবাক করার মত।
@ফুয়াদ,
আমি সাধারণতঃ কোরান হাদিস নিয়ে তর্ক করিনা। এগুলো নিয়ে গবেষণা এবং খোঁজখবরও বাদ দিয়েছি। একটা সময় আমার বাংলা আর ইংরেজী সহী বুখারী ছিলো, হাদিসটা ওখানে পেয়েছিলাম। বইগুলো আমার কাছে নেই। আমেরিকা আসার সময় ফেলে আসতে হয়েছে – কেননা এত বই নিয়ে আসতে পারিনি। কাজেই সঠিক হাদিস নম্বর এই মুহূর্তে দিয়ে পারবো না। মুক্তমনায় অনেকেই কোরান হাদিস নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা করেন, তারা আপনাকে সঠিক রেফারেন্সটা দিতে পারেবন। যখন হাদিসগুলো পড়েছিলাম – তখন দেখেছিলাম অনেক হাদিসেই তিমি মাছ (whale) এবং গরুর শিং এর উপর (horn of a cow/bull) পৃথিবী থাকার কথা খুব স্পষ্ট বলা হয়েছে। একটু সার্চ করলেই তা পেয়ে যাবেন। আমি সেগুলো ডিটেল উল্লেখ করে আর বিতর্ক বাড়াচ্ছি না। আর প্রাচীন যে বইটা থেকে আমি আমার ‘ইসলামী সাহিত্যে’র উল্লেখ করেছি সেই ছবিটা আমাই রেখেছি এখানে, আর হিন্দু সাহিত্যেরটা এখানে। কোন ধর্মকে আক্রমণ করার জন্য এগুলো উল্লেখ করিনি, করেছিলাম ‘পৃথিবী কিভাবে শূন্যে ঝুলে থাকে’ এই সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে ধারাবাহিকভাবে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসার যে বিবর্তন হয়েছে সেটা স্পষ্ট করতেই।
আপনাকে ধন্যবাদ।
@আকাশ মালিক,
হে রাম, তুমি নেন্টুপুটু ! :lotpot:
সবচেয়ে লেটেস্ট ধর্মেরই এই অবস্থা ? :-/ জগতের যাবতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের গোডাওনের মধ্যে গরু এসেগেল, আচানক ব্যাপার তো। 😀
অভিজিৎ দা আপনার ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ বইটা পড়ছি। শুরু থেকে আঠার মত লেগে আছি। এত সহজ ভাষায় জটিল ব্যাপার গুলো ব্যাখ্যা করেছেন, এক কথায় অসাধারন। আমাদের মত বাংগালদের জন্য আপনারাই ভরসা। ডিকসনারি বগলদাবা করে কাহাতক ইংরেজিতে এইসব জটিল জিনিষ পড়া যায়। ধৈর্য্য থাকেনা।
একটা ব্যাপার, ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ বইটার ৭.১ নং চিত্রের বর্ননায় আপনি বলেছেন, প্রাচীন ইসলামী সাহিত্যে মনে করা হতো গরুর সিং এর উপরে পৃথিবী স্থাপিত। আমার মনে হয় আপনি বলতে চেয়েছেন প্রাচীন আরব সাহিত্যে। ‘ইসলাম’ তো নবী মোহাম্মদের দেয়া নাম। ইসলামী সাহিত্য তো মোহাম্মদ পরবর্তি সাহিত্য হবার কথা।
আমার কাছে বিষয় টা গুরুত্ত্বপূর্ন মনে হয়। কারন ইসলামপন্থীরা এটাকে ইচ্ছাকৃ্ত অপপ্রচার বলতেই পারে। তাতে করে বইয়ের আসল উদ্দেশ্য আড়ালে গিয়ে উটকো সোরগোল তৈ্রি হতে পারে। এব্যাপারে আপনার মতামত জানতে চাই।
@আতিক রাঢ়ী,
এই গরুর শিং এর ব্যাপারতা খুব সম্ভবত কোন হাদীসে আছে, এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না।
এসব ব্যাপার আসলেই খুব কেয়ারফুলি লেখা উচিত। ধর্মের সাথে জড়িত যে কোন সমালোচনাকেই অত্যন্ত কঠোরভাবে দেখা হয়। অনেক সময়ই কান্ডজ্ঞান হারিয়ে যায়।
““স্বামীর পায়ের নীচে স্ত্রীর বেহেস্ত” এই হাদীস মুক্তমনাদের বানানো হাদীস বলে কাল অভিযোগ দেখলাম। আমি জানি না কবে কোন মুক্তমনা সদস্য এই উক্তিকে হাদীস বলে চালিয়েছেন। মুক্তমনার কোন লেখায় এ পর্যন্ত আমি মনে হয় না রেফারেন্স ছাড়া কোন হাদীস দেখেছি বলে।
@আদিল মাহমুদ,
হ্যা একটা হাদিস আছে বোধ হয়।
Hazrat Abdullah Muslem asked Muhammad(PBUH): “Ya Rasul Allah! Please tell us, on what does this vast earth stand?” Muhammad(PBUH) replied: “Allah has placed this seven-layered, huge earth on the horn of a cow. This cow has four thousand such horns, and the distance from one horn to another is a journey of five hundred years. This gigantic cow is standing on the back of a giant fish…. আরো কি কি যেন।
তবে হাদিস নিয়ে আমার আগ্রহ নেই। ওই ধরণের হাদিস আমি আমার বইয়ে উল্লেখও করি নাই। আমি কেবল দেখিয়েছি যে, নিউটনের অভিকর্ষ বল দিয়ে গ্রহের গতি প্রকৃতি ব্যাখ্যা করার আগে প্রচীন মানুষেরা বহু ভাবে রহস্যের সমাধান করতে চেষ্টা করেছিলেন। এই পৃথিবীটা কিভাবে শূন্যে ঝুলে থাকে তা একসময় মানুষের জানা ছিল না, রহস্য সমাধান করতে গিয়ে আমরা ধরিত্রী মাতাকে বসিয়েছি কখনও অদৃশ্য গরুর শিং এর উপর অথবা দৈত্যাকার কোন কচ্ছপের পিঠে কিংবা মহাসর্প বাসুকীর ফণার উপর। আর্য মুনি ঋষিরা পৃথিবীকে কিভাবে কচ্ছপ এবং বাসুকীর উপরে কল্পণা করেছিলেন তার একটি দুর্লভ ছবি আমার বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করেছি। তেমনি আরব এবং পারস্যদেশের চিন্তাবিদরা তাদের ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী কিভাবে পৃথিবীকে গরুর শিং এর উপর কল্পণা করেছিলেন- তেমনি একটি ছবি আমি সেদেশের প্রাচীন সাহিত্যকীর্তি থেকে উদ্ধৃত করেছি। আমি আতিক রাঢ়ীর সাজেশন অনুযায়ী প্রাচীন আরব সাহিত্য বলিনি, কারণ আমার যতদূর মনে পড়ছে, ছবিটা পার্শী একটা বই থেকে নেয়া ছিলো (বাসায় গিয়ে সোর্স দেখতে হবে)। আর সেই বর্ণনা যখন হাদিসের আয়াত দিয়ে দিদ্ধ, প্রাচীন ইসলামী সাহিত্য বলাতে আমি খুব একটা দোষের কিছু পাইনি। যেমন, বাসুকী এবং কচ্ছপের উপর ছবিটার উৎস হিসেবে হিন্দু সাহিত্যীবং ধর্মগ্রন্থের উল্লেখ করেছি। যদিও যে কেউ বলতে পারেন যে, প্রাচীন আর্য সাহিত্য বলাটাই বরং অধিকতর সঠিক হত।
যা হোক, বইটা ভাল লাগছে জেনে ভালা লাগলো আতিক রাঢ়ী!
@অভিজিৎ,
অভিজিৎ দা, আপনার ব্যাবহৃত সোর্স যদি পার্শী হয় তবে সেটা Zoroastrian সাহিত্য হওয়াটা আরো বেশী যুক্তিযুক্ত ছিলো। তবে সোর্স যদি হাদিস হয়ে থাকে তবে সেটা ইসলামী সাহিত্য বলা যেতেই পারে।
@অভিজিৎ,
কিছু মনে করবেন না, উপরের হাদিসের রেফারেন্স কি ? দয়াকরে একটু বলবেন।
আরে, মিন মিন তো অন্য জিনিষ! ‘বিন বিন’ মানে হচ্ছে মশার মতো কানের কাছে এসে ঘ্যানঘ্যান করে যন্ত্রণা দেয়া 😀
অভি – অনেক, অনেক অভিনন্দন রইলো! খুব ভালো, খুব দরকারি একটা কাজ হলো, আসলেই 🙂
(তবে, তুমি যে কিছুদিন পর পর রাফিদার কাছে বিন বিন করে আমার নামে নালিশ করো, সেটারও পাইপয়সা্র হিসাব আমি রাখতেসি!)
@স্নিগ্ধা,
বিন বিন কি কথা? আমি তো জানতাম “মিন মিন”। ব্লগের পাল্লায় পড়ে কত যে নতুন নতুন শব্দ শিখতে হবে! পোলাপাইন এখন ভালরে লেখে “ভালু”, কেন কে লেখে “কেনু”, মিন মিনকে লেখে বিন বিন … ঘোর কলিকাল!
@অভিজিৎ ভাই,আমিও প্রথম প্রথম আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম।ছাগু,জা-ঝা এসব শব্দ তো কস্মিন কালেও শুনি নাই।ব্লগারিদমের সাথে তাল মিলিয়ে না চলতে পারলে তো সমূহ বিপদ।তাই বাধ্য হয়ে… তবু ভাল মুক্তমনায় এসব শব্দের ব্যবহার নাই বললেই চলে।
সমকামিতার বিতর্ক আমি যুক্তিবাদী দৃষ্টিতে দেখতে চেষ্টা করছি। সমকামিতার বিতর্কের তিনটা দিক আছে। (১) সমকামিতার ব্যাপারে বিজ্ঞানলব্ধ তথ্য ও উপাত্ত, (২) সমকামিতার ব্যাপারে ব্যক্তিগত মূল্য বিচার (৩) সমকামীদের প্রতি সমাজ বা ব্যক্তির নেতিবাচক আচরণ । মূল্যবিচার আর আচরণ এক নয়। আচরণ এক সক্রিয় ব্যাপার যার দ্বারা কেউ শারীরিকভাবে (tangibly’র বাংলা করতে পারলাম মা) প্রভাবিত হতে পারে। সমকামিতার ব্যাপারে কারও উদ্ধৃত তথ্য উপাত্ত সত্য না মিথ্যা সেটা নিয়ে বিতর্ক উঠলে উপযুক্ত রেফেরেন্স দিয়ে তা নিষ্পত্তি করা কঠিন নয় এবং বিতর্কের অবসানও অচিরেই ঘটা সম্ভব। সমকামিতার ব্যাপারে ব্যক্তিগত মূল্য বিচার নিয়ে তর্ক উঠলে তা সহজে মেটান যায়না। কারণ মূল্য বিচারএর বাক্যগুলি বচন বাক্য নয়। সমকামিতা স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক , ভাল বা মন্দ এই উক্তিগুলোর স্বকীয় বা বস্তুগত কোন সত্যতা বা মিথ্যাত্ব নেই। এগুলি সবই অবচনবাক্য। বিজ্ঞানের নিয়মগুলি মূল্য বিচারের ব্যাপারে নির্বিকার, নির্বিচার। মানুষ বিজ্ঞান বা যুক্তি দিয়ে মূল্য বিচারের সত্যতা মিথ্যাত্ব যাচাই করতে পারেনা। মূল্যবিচার বা মূল্যবোধ মানুষের দ্বারা বিজ্ঞানের মাধ্যমে করা যায়না। বরং তা বিবর্তনের দ্বারা মানুষের মাধ্যমে আসে এক প্রবৃত্তি হিসেবে । যাঁরা বিবর্তন বোঝেন তাঁরা জানেন যে মানুষ বিবর্তনের উৎপাদ্য। কাজেই কি ভাল কি মন্দ এটা বিচার করবে বিবর্তন, গড় ভাবে সামাজিক মূল্যবোধ হিসেবে। সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তনও হয় বিবর্তনেরই জন্যই। এখন আসি শেষ দিকটা নিয়ে। অধিকাংশ মানুষই বিবর্তনের তাগিদেই সার্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাগুলি গ্রহণ করেছে (Universal Human Rights Declaration). এই ঘোষণাগুলির আলোকে শুধু মাত্র সমকামী হওয়ার কারণেই কারও উপর অত্যাচার, অবিচার বা বৈষম্যমূলক আচরণ করা হলে অর্থাৎ এক কথায় তার সার্বজনীন মানবাধিকার খর্ব করা হলে তা অন্যায় হবে এবং অধিকাংশ সমাজেই এর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থার বিধান আছে বা থাকা উচিৎ সেই ঘোষণাগুলির যথাযথ সম্মান করার জন্য। উপরেল্লিখিত (২) এবং (৩) এর মধ্য কোন আবশ্যিক সম্পর্ক নেই বা থাকতে হবে এটা যুক্তিতে বলে না। সমকামিতার ব্যাপারে কারও মূল্যবিচার যদি হয়ে থাকে যে এটা অস্বাভাবিক বা অহিতকর তার মানে এই নয় যে সে (৩) কে সমর্থন করছে বা নিজে (৩) এ লিপ্ত হবে। আমি বলছি আবশ্যিক (necessary) সম্পর্ক নেই। কোন কোন ক্ষেত্রে (২) এর নেতিবাচক মূল্যবোধের সাথে একই সঙ্গে (৩) ও সত্য হতে পারে। কিন্ত প্রত্যেক ক্ষেত্রেই যে হবে এটা বলাটা একটা হেতুদোষ হবে (Fallacy of hasty Generalization)। এখানে ভল্টেয়ার এর সেই বিখ্যাত উক্তি মনে করা যেতে পারে “আমি তোমার সঙ্গে একমত নাও হতে পারি, কিন্তু তোমার অধিকার রক্ষায় আমি জান দিতেও প্রস্তুত“ । সমকামিতা অস্বাভাবিক বা অহিতকর মনে করেও সমকামিদের উপর অন্যায় বা বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন এরকম উদাহরণ বিরল নয়। কাজেই কেউ যদি বলেন যে “সমকামিতাকে সমর্থন না করার অর্থ কিন্ত এটা না যে সমকামীর বিরূদ্ধে বর্বর আচরন কে সমর্থন জানানো”, তাহলে তাঁর কথা ফেস ভ্যালুতেই নিতে হবে কারণ এটা তাঁর মনের কথা হতেও ত পারে, অন্যের মনের ভেতরের কথা নিশ্চিতভাবে জানার কথা না কারও। কাজেই এটা মিথ্যা হিসেবে নাকচ করে দেয়া ঠিক হবে না, যেমনটি আমি দেখেছি এই ব্লগে। করাটা যুক্তির পরিপন্থী হবে।
আমি আগেই বলেছি যে সমকামিতা সমকামিতা স্বাভাবিক না অস্বভাবিক সেটা ব্যক্তিগত মূল্যবোধের ব্যাপার, কারণ স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক বিচারের কোন সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত বস্তুনির্ভর মানদন্ড নেই। যে যার রুচি অনুযায়ী বিচারের মান্দন্ড খাড়া করতে পারেন, যদি মূল্যবিচার করতেই হয়। তবে একটা কথা সত্য যে সমাজের সবাই যদি একসাথে সমকয়ামী হয়ে যায় তাহলে সেই সমাজ বিলুপ্ত হতে বাধ্য। কিন্তু উল্টটা সত্য নয়। এখানেই সমকামিতা যে অস্বাভাবিক এটা বলার যুক্তি খুঁজে পান অনেকে। আবার অনেকে অস্বাভাবিক এটা বলার যুক্তি খুঁজে পান সমকমীদের চেয়ে বিপরীতগামিদের সংখ্যা বেশি হবার কারণে। এর বিপরীতে সমকামী স্বাভাবিক বলার সমর্থকেরা যুক্তি দেন সমকামিতার উদাহরণ ত অহরহ দেখা যায় প্রকৃতিতে বা প্রাণিজগতে এই বলে। অবশ্য প্রাণিজগতেও সমকামীদের সংখ্যা বিপরীতগামিদের চেয়ে বেশি নয়। আর একটা কথা বলা দরকার যে প্রকৃতিতে দেখা যায় বলেই সেটা স্বাভাবিক এটা বলা প্রাকৃতিক হেতুদোষের এক উদাহরণ (Naturalistic Fallacy) । ব্যক্তিগত মূল্যবিচার হিসেবে সেটা ঠিক আছে কিন্তু যুক্তি হিসেবে নয়। আর তাছাড়া প্রকৃতিতে দেখা যায় কাজেই স্বাভাবিক বললে এ জগতের সবই স্বাভাবিক বলতে হয়। সবই ত প্রকৃতির সৃষ্টি, মানুষ পর্যন্ত। স্বাভাবিক কথাটার কোন প্রয়োজন সেক্ষেত্রে নেই। যাহোক কোন দলের যুক্তি বেশি জোরাল সেটা মূল্যবিচারের ব্যাপার, বিজ্ঞানের নয়। অধিকাংশ মানুষ কোন মূল্যবিচার বেছে নেবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করে বিজ্ঞান বা বিবর্তন । সমকামিতা জীন না পরিবেশ দ্বারা নির্ধারিত, বা কতটা জীন দ্বারা এবং কতটা পরিবেশ দ্বারা এ নিয়েও জোর বিতর্ক হচ্ছে। একটা কথা অনেকে হয়ত উপলব্ধি করেন না যে পরিবেশকে জীন থকে বিচ্ছিন্ন কোন গুণক নয়। পরিবেশের প্রভাব মানে হল অন্য জীনের প্রভাব। মানুষে নিজের বংশাণুর (এক বা একাধিক) সঙ্গে যখন অন্যান্য লোকের বংশাণুর সঙ্গে পারস্পরিক ক্রিয়ার কারণে নিজের কতিপয় জীনের পরিস্ফুটনের মাধ্যমে (gene expression) এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে সেটাকেই পরিবেশের প্রভাব বলি আমরা। পরিবেশ জীনপুলের জীনগুলির মধ্যকার মিথষ্ক্রিয়ারই অন্য নাম। কাজেই জীনের ভূমিকা বা পরিবেশের ভূমিকা দিয়ে যদি কেউ সমকামিতার অনিবার্য্যতার ব্যখ্যা দেন সেটা ভুল হবে। তবে হ্যা, যদি পরিবেশের ভূমিকা থেকেই থাকে তাহলে সেই পরিবেশ থেকে কাউকে বিচ্ছিন্ন করে রাখলে সমকামিতার সম্ভাবনাও কমে যায়। কিন্তু শুধু নিজের জীনের কারণে সমকামিতার উদ্ভব হলে বাস্তবিকই সেটা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, চাইলেও। যেমন কেউ চাইলেই তার হাতের ছয় আঙ্গুল হওয়াটা ঠেকাতে পারে না যদি তার জীনে সেটা লেখা থাকে। কিন্তু সমককামিতার বেলায় ছয় আঙ্গুল বা বাঁহাতে হবার মত অত সুস্পষ্ট কোন জীনের প্রমাণ পাওয়া যায় নি। পরিবেশের প্রভাব থাকার সম্ভাবনা বেশ জোরাল। এটা পরিস্কার জেনে রাখা প্রয়োজন যে সমকামিতার কারণ জীন না পরিবেশ এই প্রশ্নের চুড়ান্ত উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। কাজেই এর কোনটাই ধরে নিয়ে সেটার উপর ভিত্তি করে কোন মত দেয়া যুক্তিসংগত হবে না।
@অপার্থিব, সহমত।আর উক্তিটি সম্ভবত ভলতেয়ারের নয় Evelyn Beatrice Hall এর। তিনি ভলতেয়ারের জীবনীকার ছিলেন।এটা তিনি ভলতেয়ারের সমগ্র জীবনদর্শন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন।আপনার লেখা বরাবরই খুব ভাল লাগে আপনার বইটার নামও প্রাপ্তিস্থান জানতে চাচ্ছি।যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে আপনার কাছ থেকে একটা পূর্ণাংগ বই আশা করি।
@পথিক,
ঠিক । I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it. উক্তিটি ভলতেয়ারের নয়, যদিও অনেকে ভুলভাবে একে ভলতেয়ারের উক্তি মনে করেন। উক্তিটি Evelyn Beatrice Hall এর। এখানে তথ্য আছে।
@অভিজিৎ ভাই,আমার পোস্টটায় সৈয়দ হক নিয়ে ওঠা বিতর্ক সম্পর্কে আপনার একটা নিরপেক্ষ মূল্যায়ন আশা করছি।
@পথিক,
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। আর চমৎকার ভুল ধরেছেন। আমি ও অনেকেই উক্তিটি ভল্টেয়ারের বলে জানতাম। উক্তিটি Evelyn Beatrice Hall তাঁর The Friends of Voltaire (1906) বইতে লিখেছিলেন। আমার কোন বই ত বের হয়নি। “যুক্তিবিদ্যা পরিচিতির” কথা যদি মীন করে থাকেন সেটার লিঙ্ক আমার ইশ্বরের সংজ্ঞার বিশ্লষণ লেখায় দেয়া আছে।
অভিনন্দন অভি ! :rose2:
অভিজিৎ দার নতুন বই বের হচ্ছে জেনে আত্যন্ত আনন্দিত হলাম। মনে পড়ছে তাঁর ‘আলো হাতে চলিয়াছে আধারের যাত্রী’ বইটি বের হয়েছে শুনে কিভাবে ভোরে ঘুম থেকে উটেই লাইব্রেরীতে ছুটে গিয়েছিলাম।
প্রচ্ছদটা খুব ভালো লেগেছে, ওটা বইয়ের সাথে খাঁপ খেয়েছে।
বাঙ্গালীর কুসংস্কারমুক্ত করার পথিকৃত” অভিজিত”।
আমার মানসিক জগত পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশী প্রভাব বিস্তারকারী ব্যাক্তি অভিজিতদা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
বইটি যদিও পড়া দেরী হবে কিন্ত মুক্তমনায় লেখা সবগুলো পর্বই পড়েছি।কিন্ত একটি প্রশ্ন মনে আসছে,কিন্ত পূর্বের পর্বগুলোতে এ বিষয়ে লেখা আছে কিনা মনে পড়ছেনা। যদি জেনেটিক ভ্যারিয়েশনের কারনে সমকামিতা না হয়ে এনভাইরনমেন্টাল ফ্যাক্টরের কারনে হয়ে থাকে তবে পরবর্তি জনুতে এর প্রভাব না পরার কথা।আর জেনেটিক কারনে সিংগেল জিন বা গ্রুপ জিনের কারনে হলেও প্রচ্ছন্ন বা প্রকট আকারে পরবর্তি জনুতে তা থাকার কথা। সমকামিদের বেলায় পরবর্তি জনুর ফলাফলটা কি?
@হেলাল,
সাধারণত প্রকাশ্য সমকামী দের পরবর্তী biological generation থাকে না। আর অপ্রকাশ্য সমকামীদের বেলায় পরবর্তী biological generation থাকলেও আমার মনে হয়না এ ব্যাপারে research করার মত adequate data মিলবে।
@FZ,
“কম্পিউটার বিজ্ঞানের পুরোধা, ব্রিটিশ গণিতবিদ অ্যালান টুরিং ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ২০০০ সালের মধ্যে এমন কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি হবে যা পর্দার আড়ালে থেকে আলাপচারিতার মাধ্যমে অন্তত ত্রিশ শতাংশ মানব বিচারককে এই বলে ধোঁকা দিতে সক্ষম হবে যে সে আসলে রোবট নয়, মানুষ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিমাপক এই পরীক্ষাটিকে টুরিং টেস্ট বলে।”
এই কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও গনিতবিদের ব্যাপারে আপনার কি মতামত ??
Turing’s homosexuality resulted in a criminal prosecution in 1952—homosexual acts were illegal in the United Kingdom at that time—and he accepted treatment with female hormones, chemical castration, as an alternative to prison. He died in 1954, several weeks before his 42nd birthday, from an apparently self-administered cyanide poisoning, although his mother (and some others) considered his death to be accidental. On 10 September 2009, following an Internet campaign, British Prime Minister Gordon Brown made an official public apology on behalf of the British government for the way in which Turing was treated after the war 😛
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
টুরিং যে সমকামী ছিলেন, তা আমার জানা ছিল না। তার ব্যক্তিগত জীবনের দোষ বা গুণ এর সাথে তার বৈজ্ঞানিক জীবনের সাফল্যকে আমি মিলিয়ে দেখার পক্ষপাতী নই।
@FZ,
হুমম… মনে হচ্ছে আপনার অনেক কিছুই জানা নেই। না জানা দোষের কিছু নয়, কিন্তু না জেনে সংখ্যালঘিষ্ট একটা জনগোষ্ঠিকে পশুবৃত্তি, ক্যানাবলিজম, হত্যা ইত্যাদির সাথে তুলনা করতে আপনার বাধে না। বড় বিস্ময় লাগে!
আর টুরিং এর “ব্যক্তিগত দোষ গুন” বলছেন? জেনে রাখুন, অ্যালেন টুরিন (Alan Turing) ছিলেন আঠারো শতকের বিখ্যাত গণিতবিদ এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানী। তার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ‘টুরিন টেস্টের’ জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন, তাকে সমকামীতার জন্য দোষী প্রমাণ করে সায়ানাইড খাইয়ে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেয়া হয়। তখন তার বয়স ছিলো মাত্র চল্লিশ। টুরিং বা এরকম সমকামীদের ব্যক্তিগত জীবনের দোষ বা গুণ এর পাশাপাশি যারা সমকামী বলেই তাকে নিগৃহিত করেছিলো, তাদের ব্যক্তিগত জীবনের দোষ বা গুণটা নিয়ে ভাবলে বরং সমাজ এগুবে, তাই না?। আপনি চোখ বন্ধ করে প্রলয় ঠেকাতে চাইলেও রাষ্ট্রিয়ভাবে যে টুরিং এর প্রতি সে সময় যে অন্যায় করা হয়েছিলো সেজন্য যে ব্রিটেন ক্ষমা চাইছে, সেটা দেখেছেন ? না দেখলে বিবিসি থেকে দেখুন –
PM apology after Turing petition
না, অজ্ঞতা কোন অপরাধ নয়, কিন্তু অজ্ঞতার কাঁধে চেপে প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠা তো অপরাধ। আপনার কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ প্রতিক্রিয়াশীল হবেন না। নিপীড়িতদের পাশে না দাঁড়াতে পারেন, তাদের চলার পথকে বাধাগ্রস্ত করে ফেলবেন না দয়া করে। আপনার কাছে এইটুকুই আমার কামনা।
@FZ,
টুরিং কে জানতেন না ভালো কথা এবার জেনে নেন।সাথে আরো জেনে নেন অস্কার ওয়াইল্ড,রাজা এডোয়াড চতুর্থ,লিওনারদো ডি ভিঞ্ছি,মাইকেল এঞ্জেলো,এল্টন জন,জর্জ মাইকেল,স্যার ম্যাক ইওন সহ আরো জগৎ বিখ্যাত জ্ঞানী,বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের কথা।অন্য দিকে তো লোক মুখে প্রচলিত আছে জগৎ বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিসও নাকি সমকামী ছিলেন। স্কান্ডেভিনিয়ান দেশ গুলোতে শুধু সমকামীদের সামাজিক রাজনৈতিক অধিকার না এমন কি পার্টনারশীপের আইন সংশোধন করে একেবারে বিষমকারীদের মতো বিবাহ নামক শব্দটি সমকামীদের কপালে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে,সাথে বাচ্চা দত্তক নেওয়া এবং ইনসেমিনেশন সহ সব জটিল বিষয় গুলোও।আর ঐ দিকে দঃআফ্রিকা সহ আফ্রিকার অনেক দেশ,ব্রাজিল,আরজেন্টিনা এবং মেক্সিকোতে সমকামীদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও আইন গত অধিকার সরকার গুলো তাদের দিতে বাধ্য হয়েছে।শুধু সময়ের ব্যাপার দেখবেন একদিন ঘুম থেকে সকালে উঠে নাস্তার টেবিলে পত্রিকার পাতায় উপরের ঐ আইন গুলি আপনার ঘরের পাশের দেশ ইন্ডিয়াতে হয়ে গেছে।তখন কি বলবেন বা করবেন ?
@হেলাল,
হেলাল, এটার এক কথায় জবাব দেয়া মুশকিল! আমি এর আগের পর্বে বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করেছি।
আসলে ডারউইনীয় বিবর্তনের দিক থেকে চিন্তা করলে সমকামিতার ব্যাপারটি জীববিজ্ঞানীদের জন্য সব সময়ই একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। কারণ ‘ওটা বায়োলজিকাল ডেড এন্ড’ – অন্ততঃ এভাবেই ভাবা হত কিছুদিন আগেও। বিবর্তনের কথা ভাবলে প্রথমেই প্রজননের মাধ্যমে বংশ বিস্তারের কথাটিই মাথায় সবার আগে চলে আসে। সে দিক দিয়ে চিন্তা করলে সমকামিতার লক্ষ্য যে বংশবিস্তার নয় – তা যে কেউ বুঝবে। তাহলে জৈববৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে সমকামিতার উদ্দেশ্য কি? আগে এমনকি জীববিজ্ঞানীদের মধ্যেও সমকামিতাকে ঢালাওভাবে ‘অস্বাভাবিকতা’ কিংবা ‘ব্যতিক্রম’ ভেবে নেওয়াটাই ছিলো ট্রেন্ড, তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই ধ্যান ধারনা অনেকটা বদলেছে।
কয়েকটি পয়েন্ট উল্লেখ করি –
* যদিও সমকামিতাকে জেনেটিক ভাবার বেশ কিছু কারণ আছে, তারপরেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হয়তো নন-জেনেটিক ( Haynes, Kendler এবং Kirk এর গবেষনা আছে এ নিয়ে)। নন জেনেটিক হলে এর উপর ন্যাচারাল সিলেকশনের কোন প্রভাব নেই। কাজেই বিবর্তন এ ব্যাপারে ‘নিরপেক্ষ’।
* FZ যেরকম ভেবেছেন প্রকাশ্য সমকামীদের কোন জেনারেশন থাকে না, কেবল অপ্রকাশ্যদেরই থাকে, ব্যাপারটা অত সরল নয়। আমি আমার বইয়ে দেখিয়েছি যে, যৌনপ্রবৃত্তি কেবল সমকামী আর বিষমকামী এই দুই গোত্রে বিভক্ত নয়। সাদা-কালো এরকম চরম সীমার মাঝে সবসময়ই কিছু ধুসর এলাকা থাকে। আর সেই ধুসর এলাকায় নির্বিঘ্নে বাস করে সমকামিতা, উভকামিতা, উভকামের সমকামিতা, রূপান্তরকামিতার মত যৌনপ্রবৃত্তিগুলো। অর্থাৎ যৌনপ্রবৃত্তি অনেকটা কন্টিনামের মতো। যৌনতার সম্পুর্ণ ক্যানভাসকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে পরিমাপ করার জন্য কিন্সে বহু আগে তার বিখ্যাত ‘কিন্সে স্কেল’ উদ্ভাবন করেছিলেন, সেখানেও আমরা পরিপুর্ণভাবে বিষমকামী, মূখ্যত বিষমকামী, কদাচিৎ সমকামী, মূখ্যত বিষমকামী, কিন্তু প্রায়শই সমকামী, মূখ্যত সমকামী, কিন্তু প্রায়শই বিষমকামী, মূখ্যত সমকামী, কদাচিৎ বিষমকামী সহ অনেক শ্রেনীর প্রবৃত্তির সন্ধান পাই। কাজেই কন্টিনামে যাদের হাল্কা সমকামিতা আছে, কিন্তু বিষকামী হিসেবে জীবন যাপন করেছেন, কিংবা প্রকৃত উভকামী – তাদের সন্তান সন্ততি হচ্ছে, তারা সমকামিতার জিন হয়ত নিজের অজান্তেই ভবিষ্যত প্রজন্মে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এমনকি এক্ট্রিম সমকামীদেরও ‘ক্লোসেটেড গে’ হয়ে থাকার কারণে সন্তান হতে পারে।
* সমকামিতার জিন (যদি থেকে থাকে) যোগাযোগ ও সামাজিকতার উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে উপযোগী ক্ষেত্র তৈরি করে তা বনোবো শিম্পাঞ্জীদের ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে। মানুষের ক্ষেত্রেও এটি সত্য হতেই পারে। এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী জোয়ান রাফগার্ডেনের ভাল কিছু গবেষনা আছে।
* এমনো হতে পারে যে, সমকামিতার জিন হয়তো বিবর্তনের বাই প্রডাক্ট। ইতালীর একটি সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে যে জেনেটিক প্রকরণটি পুরুষদের মধ্যে সমকামিতা ছড়াচ্ছে সেটাই মেয়েদের ক্ষেত্রে আবার উর্বরাশক্তি বাড়াচ্ছে। সেজন্যই বিজ্ঞানীরা বলছেন –
“We have finally solved the paradox … the same factor that influence sexual orientation in males promotes higher fecundity in females”
অন্যভাবে বললে, The answer is remarkably simple : the same gene that causes men to like men, also causes women to like men, and as a result to have more children’
এ ছাড়াও বেশ কিছু বিশ্লেষণ আমি আগের পর্বে এবং আরো ভাল ভাবে বইয়ে উল্লেখ করেছি। দেখে নিতে পারেন।
প্রক্রিতিতে সমকামিতার উদাহরন পেলেই ত আর তা jayej হয় না। Cannibalism প্রক্রিতিতে বিরল নয়। কিন্তু তা বলে কেউ ত আর Cannibalism কে সমর্থন করবেন না, তাই না ? সামাজিক norms এর গুরুত্ত কে পুরপুরি অবজ্ঞা করলে এক সময় আমরা পশুতে রুপান্তরিত হতে পারি। এরকম বহু উদাহরন দেয়া যায়। হত্যা, অজাচার, selfishness, এই সবই পাশবিক প্রব্রিত্তি। হয়ত এই সব এর পিছনেও
genetic ব্যাখ্যা মিলবে। এখন আমরা যদি এ গুলো কেও সমাজে অনগীভুত করে নেই, তাহলে কি প্রগতি আসবে ?
@FZ,
কেউ বলছে না যে, প্রকৃতিতে সমকামিতা আছে বলেই তা জায়েজ। এটা এপিল টু নেচার ফ্যালাসি।
যেটা বলা হচ্ছে তা হল – সমকামিতা একটি স্বাভাবিক যৌনপ্রবৃত্তি, বিপরীত রতির মত এটাও মানুষের মধ্যে জৈবিকভাবেই অঙ্কুরিত হয়। অন্য প্রাণিতে বায়োলজিকালি যেটা ঘটছে, মানুষের মধ্যেও সেটা একইভাবে ঘটে চলেছে, জৈবিক নিয়মেই। এই টুকুই বলতে চেয়েছি। আর সমকামীরা তো আপনার কোন ক্ষতি করছেন না। তারা যদি বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কোন আকর্ষণ অনুভব না করেন, তাতে কি আপনার কোন সমস্যা হয়েছে? তারা তো কাউকে হত্যাও করছে না, আপনাদের মেরে কেটে মাংসও ভক্ষণ করছে না। তাই পশুবৃত্তি, ক্যানিবলিজম, হত্যা ইত্যাদির সাথে তাদেরকে তুলনা করা বালখিল্যই। বরং আমি তো বলব – তারা সমকামী বলেই তাদের উপর যে হারে নির্যাতন নিপিড়ন করা হয়েছে সেটাই বরং পাশবিক। দেখুন – সামাজিক নর্মের দোহাই দিয়ে একসময় সতীদাহ, দাসপ্রথা, জাতিভেদেরও সাফাই গাওয়া হত, বিরোধিতা করা হয় মেয়েদের বাইরে চাকরী করারও। সমাজ বদলাচ্ছে, আর আপনি জগদ্দল পাথরের মতো সামাজিক norms আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকলে আর সেটাকেই “প্রগতি” ভাবলে কি চলবে?
দেখুন স্রেফ সমপ্রেমের ঘারে দোষ দিয়ে ইরানে কিভাবে দুই কিশোরকে ফাঁসিকাষ্টে ঝোলানো হচ্ছে।
[img]http://sherryx.files.wordpress.com/2009/02/iran2-715450-hanging.jpg[/img]
কিংবা ইরাকে সমকামীদের এভাবে রাস্তায় পিটিয়ে মারা হচ্ছে –
[img]http://renovomedia.com/wp-content/uploads/2009/08/suspected-homosexuals-killed-in-iraq.jpg[/img]
আমি নিশ্চিত – এগুলো আপনার কাছে পাশবিক বলে মনে হয় না। আসলে পাশবিকতা আর প্রগতির সংজ্ঞাই বোধ হয় আপনাদের কাছে ভিন্ন।
@অভিজিৎ,
অভিজিৎ দা, ছবি সহকারে এ সমস্ত পাশবিক ঘটনার উদাহরণও কি আছে আপনার বইয়ে?
হায়রে মানুষ, হায়রে ধর্ম। আর কতকাল দেখতে হবে ধর্মের নামে মানুষের রক্তের হুলিখেলা?
@আকাশ মালিক,
FZ এটা কি নাম ভাই , বোধগম্য নয় ??
আর এই ধরনের মননের মানুষেরে চোথে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও কাজের কাজ হয় না যতক্ষন পর্যন্ত না তারা নিজেদের বিবেককে প্রশ্ন না করেন ??? এরা সব কালেই ছিল ,আছে এবং থাকবে।এরা জ্ঞান-পাপী, এরা আরিষ্টটলের উত্তরসুরী——————এদের মাথার মধ্যে টেস্টসটেরন ও আদ্রেনালিন এর প্রভাব খুব বেশী বলে হয়ত কখনো প্রকৃতির দোহাই,কখনো বা ধর্মের দোহাই অথবা কখনো বা প্রগতির দোহাই দিয়ে আমাদের মতো সাধারন মানুষকে হাজার হাজার বছর ধরে শুধু সামাজিক,রাজনৈতিক ও রাষ্টীয় কাঠামোর পিছনে থেকে পিষে মারা,হত্যা করা এবং সমাজকে অন্ধকার কৃষ্ন-গহব্ব্ রে রাখাই তাদের একমাত্র জীবনের ধ্যান-ধারনা ছিল এবং আছে।তারা অনেক বেশী অত্যাচার করেছে এই পৃ্থিবীর মানুষের প্রতি , আর নয়—– এবার আমাদের পালা। জয় হউক মানবতাবাদের।
@অভিজিৎ,
ভাই, সমকামিতাকে সমর্থন না করার অর্থ কিন্ত এটা না যে সমকামীর বিরূদ্ধে বর্বর আচরন কে সমর্থন জানানো। মূলত আমার উদ্দেশ্য ছিল এটা বুঝানো যে সমাজের কিছু না কিছু নিয়ম থাকবেই। প্রত্যেকেই যেমন সতন্ত্র, তেমনি আবার সমাজেরই অংশ। সমাজের সকল নিয়মই যে সঠিক, সে কথা কেউই বলবে না, আবার সব নিয়মই তেমন অযৌক্তিক নয়।
@FZ,
মিথ্যে কথা। আপনি এই কথা কোন দিনই বলতেন না, এই ঘঠনা কোনদিনই বিশ্বাস করতেন না, যদি না অভিজিৎ দা ছবি সহকারে তা চোখের সামনে নিয়ে আসতেন। ধর্মের নামে প্রত্যেকটা বর্বর আচরণের প্রতি আপনাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ততক্ষণ পর্যন্ত থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত না অধার্মীকেরা কেউ তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। আপনাদের নীরব সমর্থনেই জগত জুড়ে এই নিষ্ঠুর বর্বরতা চলছে। জীবনে কয়টা বাক্য লিখেছেন নিরপরাধ নারী পুরুষ শিশুদের উপর ইসলামী অত্যাচারের বিরুদ্ধে? চোখ থেকে বিশ্বাসের পর্দা সরিয়ে একবার পৃথিবীর দিকে তাকান, দেখতে পাবেন চতুর্দিকে ধর্মের জঘন্য কুৎসিত রূপ।
@অভিজিৎ,
ছবিগুলো দেখে খুব কষ্ট পেলাম। বিপুল ভবে অনুভব করছি সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা। অভিজিৎদাকে আন্তরিক অভিনন্দন এমন একটা স্পর্ষকাতর বিষয়ের উপরে কাজ করার জন্য।
@FZ,
আপনি বা অনেকেই একটা বড় ভুল করেন। সেটা হচ্ছে সমকামিতার বৈজ্ঞানিক দিক ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলেই আপনারা ধরে নেন যে লেখক সমকামিতা প্রমোট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এটা খুবই ভুল ধারনা। সমকামিতা আপনার বা আর কারো ভাল নাই লাগতে পারে (আমার নিজেরও লাগে না কারন আমি ঐ গোত্রের নই); তাই বলে এর পেছনের বৈজ্ঞানিক কারন কি, সাম্প্রতিক গবেষনা কি বলে এগুলি জানাতে চাওয়া মানে কি সমকামিতার পক্ষে প্রচারনা?
“দূ:খজনকভাবে” আধুনিক চিকিতসা বিজ্ঞান সমকামিতাকে কোনরকম বিকৃতি বা মানসিক রোগ এ ধরনের সনাতন ভ্রান্ত ধারনা থেকে মুক্তি দিয়েছে। লেখক তো আর চিকিতসা বিজ্ঞানের ফলাফল বিকৃত করে প্রচার করতে পারেন না যে সমকামিতা আসলেই বিকৃতি, সমকামিরা সব যৌন বিকার সম্পন্ন মানুষ। লেখক যদি তার গবেষনায় পান যে সমকামিতা আসলেই যৌণ বিকৃতি তবে তিনি সেটাই জানাবেন। লেখক হিসেবে এইটুকূ সততা তার থেকে আমরা আশা করতে পারি। আপনি যদি তার দেওয়া বৈজ্ঞানিক তথ্যে কোন ভুল পান তবে রেফারেন্সহ আমাদের জানান।
আমরা অবশ্যই খোলামনে আলোচনা করব।
সমাজের কিছু কিছু নিয়ম থাকবেই, আবার বেশ কিছু পাল্টেও যাবে। যুগে যুগে অনেক উদ্ভট বর্বর সামাজিক রীতি থেকেই আমরা মুক্তি পেয়েছি। আবার এখনো অনেক কালাকালুন থেকে আমরা মুক্তি পাইনি। মাত্র ৫০ বছর আগেও আমাদের দেশে ছেলে মেয়ে এক সাথে বিদ্যালয়ে যাওয়াকে আমাদের দেশে ধরা হত সমাজ ধ্বংসের বীজ হিসেবে। আমরা যদি সেই ধারনা মাথায় নিয়ে বসে থাকতাম তবে কি কেমন হত? এককালে মানসিক রোগীদের রোগের মাত্রা খুব বেড়ে গেলে তাদের পিটিয়ে মারা হত। সেকালে সেটাই ছিল সমাজের চোখে মংগলজনক। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে মাত্র কিছুদিন আগেও গ্রামের পাগলদের ধরে দূরে কোথাও ছেড়ে দিয়ে আসা হত।
সমকামিরা নিজেদের মধ্যে তাদের স্বাভাবিক যৌন জীবন যাপন করলে আপনার আমার সমস্যা কোথায়? বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত হয়েছে যে এটাই তাদের স্বাভাবিক তাড়না, এর থেকে তাদের চিকিতসা করে স্থায়ীভাবে ষ্ট্রেট বানানো যায় না।
অনেকের ধারনা সমকামিতা বৈধতা দিলে সমাজ উচ্ছনে যাবে। সব মানুষে নাকি সমকামি হয়ে যাবে, জন্মহার কমে মানব জাতিই নাকি উজ়াড় হয়ে যাবে। এসবই ভ্রান্ত ধারনা, এসব তত্ত্ব এতই হাস্যক্র যে আলোচনারও মানে হয় না।
আশা করি বুঝতে পারবেন।
@আকাশ মালিক,
আপনি ধরেই নিচ্ছেন আমি একজন মোল্লা কিসিমের লোক যে কিনা ধর্ম’র নামে চলে আসা বর্বরতা কে চোখ বুঝে সমর্থণ করে। সুতরাং এ প্রসংগে আমার কোন মন্তব্যই আপনার মনঃপুত হবে না। তারপরও একটাই কথা বলতে চাই, (নিতান্তই ব্যক্তিগত মতামত), সামাজিক রীতি এবং ব্যক্তি সাধীনতার মধ্যে কোন না কোন point of equilibrium এ আমাদের আসতে হবে। Traditional ধর্ম সমাজকেই সর্বশক্তিমান মানে, আর ধর্ম বিরোধীরা ব্যক্তির নিজস্ব বিবেকের উপর ন্যায় অন্যায় বিচারের দায়ভার ছেড়ে দেয়। এই ২ extreme এর মাঝের continuum এ ২য় extreme এর কাছাকাছিই হয়ত কোথাও optimal একটা অবস্থান আছে, আমার একান্ত বিশ্বাস।
@FZ,
আপনার প্রথম মন্তব্যে (অভিজিত দা’র ছবি সংযোগ করা, তার মন্তব্যের আগে) আপনি যা বলেছিলেন তা আরেকবার দেখুন-
এই জায়েজ শব্দটা কি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বলেন নি?
এই বক্তব্যের মাধ্যমে সমকামীদের অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয়েছে, অথবা বলতে পারি তাদেরকে সমাজচ্যুত রাখার দাবী করা হচ্ছে। এখানে সামাজিক normsটাই বা কি? আর আমাদেরকে পশুতে রুপান্তরিত হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্যে সমকামীদের কি করা উচিৎ?
আপনার কথা বুঝতে আমি যদি ভুল করে থাকি তাহলে আমি দুঃখিত।
মানুষ ইচ্ছে করে পঙ্গু, হিজড়া, সমকামী হয়না। আমি মনে করি মানুষ হিসেবে আপনার আমার যতটুকু সামাজি্ক, নাগরিক, মানবিক অধিকার আছে, তাদেরও ঠিক ততটুকু আছে।
মারাত্বক একটা ভুল উক্তি করেছেন। এ ব্যাপারটা আজ না হয় থাক, অন্য কোথাও হয়তো কোনদিন আলোচনার সুযোগ আসতে পারে।
বইটা নিঃসন্দেহে আমাদের অন্ধকার জন-মানসকে আলোকিত করতে সহায়তা করবে। এবারের বইমেলায় এই বইটার প্রভাব ও গুরুত্ব নিয়েও খুবই উচ্চ ধারণা পোষণ করছি।
অভিনন্দন অভিজিৎ দা।
@রণদীপম বসু,
ধন্যবাদ রণদীপমদা। আপনার হিজড়াদের নিয়ে চমৎকার লেখাটা আমার বইয়ের একটা অংশ সাজাতে দারুণ সাহায্য করেছে। আপনার লেখাটার কথা উল্লেখ করেছি বইয়ে।
আচ্ছা বইমেলাতে মুক্তমনার বইগুলো কি কোন বিশেষ স্টলে পাওয়া যায়?
@পৃথিবী,
একদিন নিশ্চয় আসবে যখন মুক্তমনার বইগুলো নিয়ে আমরা একটা আলাদা স্টল দিতে পারব। তবে সেই পর্যায়ে পৌঁছনোর আগ পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন বইগুলো অবসর (প্রতীক), অংকুর, চারদিক এবং শুদ্ধস্বরে দেখতে পারেন।
আর আজিজ সুপার মার্কেটের তক্ষশিলায় আমাদের বেশ কিছু বই পাওয়া যায়।
অভিজিৎ ভাই হলেন বাংলার ডকিন্স।রিচার্ড ডকিন্সের উপর একটা বই আছে যেমন how a scientist changed the way we think” তেমনি আমারো ইচ্ছা করে অভিজিৎ ভাই ও তার মুক্তমনার জন্য কত জনের চিন্তাধারার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে তাদের কথা নিয়ে একটা বই বের করতে।আমার কথাই বলি,আমার মনের অজস্র প্রশ্নের উত্তর যখন খুঁজে পাচ্ছিলাম না,কাউকে জিজ্ঞাসা করতেও পারছিলাম না, তখন মুক্তমনার মাধ্যমেই উত্তরগুলো খুঁজে পাই।এই সুযোগে আরেকবার কৃতজ্ঞতা জানাই অভিজিৎ ভাইকে,যিনি আমার দেখবার চোখ আর বুঝবার মন তৈরি করে দিয়েছেন।
@পথিক,
:yes: :yes: :yes:
অভিজিত মানেই মাইলফলক,
অভিজিত মানেই নতু্নত্ব———
অভিজিত মানেই প্রানের বিকাশ,সমাজের বিকাশ,সভ্যতার বিকাশ এবং সর্বোপরি এপার ও ওপার বাংলাসহ সারা পৃথিবীর বাংলাভাষী মানুষের মন ও মননের বিকাশের একটি জোতির্ময় নাম।
অভিজিত মানেই একটি ব্জ্রবেগে গতিময় সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নাম।
অভিজিত মানেই শেষতঃ বিজ্ঞান,ধর্ম ও দর্শন আন্দোলনের একটি ইস্পাত-কঠিন বলিষ্ট নাম।
বইটির পূর্ন সফলতা কামনা করছি, সাথে বইয়ের প্রকাশক আমেদুর রশীদকে প্রানঢালা অভিনন্দন এমন একটি স্পর্শাকাতর বই এই পঁচা ও নষ্ট মননের সমাজে ও বাজারে প্রকাশ করার জন্য।
ধন্যবাদ অভিজিত।
@মাহবুব সাঈদ মামুন, সহমত।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
ধন্যবাদ মামুন ভাই। তবে আমার নামের আগে পিছে এত ভাল ভাল বিশেষণ দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। 🙂
আপনাদের সবার অবদান ছাড়া এই বই লেখা হয়ে উঠতো না বলাই বাহুল্য। বিশেষতঃ কেস স্টাডি তৈরিতে আপনার অবদান আমি বইয়ের ভুমিকাতেও আলাদাভাবে উল্লেখ করেছি।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
আচ্ছা দেখুন তো, সমকামীরা কাউকে গালি দিচ্ছেনা, কারো ক্ষতি অনিষ্ঠ করছেনা, তারা দেশদ্রোহীও নয়, তারা আমাদের সমাজেরই অংশ, সর্বোপরি সম্পূর্ণ প্রক্রীয়াটায় তাদের কোন হাত নেই। বক্তা নিজে কি কোনদিনই বুঝবেন না যে, বায়োলজিকেল এই ঘঠনাটা তার উপরও ঘটতে পারতো, তখন কি হতো?
শুনুন মাহবুব সাহেব, মাতা প্রকৃতির দিব্যি, আমি নিজের চোখে মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে সমকামীতায়, জীনায় ( অবৈধ নারী সঙ্গম), হস্তমৈথুনে লিপ্ত হতে দেখেছি, যারা এখন বড়বড় হুজুর নামে পরিচিত। ওয়াজ মাহফিলে আজ তারা সমকামীতার বিরুদ্ধে চিৎকার দেন।
আশা করি অভিজিত দা’ তার বইয়ে ‘ধর্মের দৃষ্টিতে সমকামীতা’ এ বিষয়েও আলোকপাত করেছেন। নিঃসন্দেহে বইটি সমকামীতা নিয়ে, জগদ্দল প্রথাগত বিশ্বাসের বাইরে এসে, সকল স্তরের মানুষের ভিন্নভাবে চিন্তার দুয়ার খুলে দেবে।
@আকাশ মালিক,
মাতা প্রকৃতির দিব্যি, আমি নিজের চোখে মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে সমকামীতায়, জীনায় ( অবৈধ নারী সঙ্গম), হস্তমৈথুনে লিপ্ত হতে দেখেছি, যারা এখন বড়বড় হুজুর নামে পরিচিত। ওয়াজ মাহফিলে আজ তারা সমকামীতার বিরুদ্ধে চিৎকার দেন। :lotpot:
এখানেই তো সমস্যা, আমাদের আতেল বুদ্ধিজীবিরা এসব দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছেন। ধর্মীয় নেতাদের কথা আর কি বলবো,আপনার মতো আমারো ঐ রকম অনেক দেখার অভিজ্ঞতা আছে।
ভালো থাকুন।
হার্ভার্ডের মনোবিজ্ঞানী রবা্র্ট এপস্তিনের “Do gays have a choice?” নামক একটা প্রবন্ধ পড়েছিলাম যা সায়েন্টিফিক আমেরিকান মাইন্ডের ফেব্রুয়ারী-মার্চ ২০০৬ ইস্যুতে ছাপা হয়েছিল। রবা্র্ট এল স্পিৎজার সম্পর্কে প্রবন্ধটি থেকে একটা উদ্ধৃতি দিচ্ছি:-
প্রবন্ধটিতে লেখক একজন পুরুষের কথা উল্লেখ করেন যিনি পূ্র্বে সমকামী সম্পর্ক গড়ার পরও পরে এক নারীকে বিয়ে করে সুখে জীবনযাপন করছেন(তার প্রেমিক বিষমকামী হয়ে যাওয়ায় তিনি অনুপ্রাণিত হন)। আবার বাস্তবতা অনেক নারী-পুরুষের কথা বলে যারা তীব্র অনিচ্ছার সাথে ক্লোজেটে দিন কাটাচ্ছেন। একারণে লেখক প্রস্তাব করেন যে যৌন প্রবৃত্তি আসলে “প্রকৃতি-সংস্কৃতি” এর মত সাদা-কালোর বিষয় না, এটি বরং একটা continuum এর মত- কনটিনামের দুই মেরুর মানুষ এক্সক্লুসিভলি সমকামী/বিষমকামী এবং দুই মেরুর মাঝখানের বাসিন্দাদের যৌন প্রবৃত্তি অনেকটাই নমনীয়(অবশ্য তারা কোন দিকে উন্মুখ সেটা কনটিনামে তাদের অবস্থানের উপর নি্র্ভর করে)। প্রবন্ধের শেষের বাক্যটি খুব মজার, এবং শক্তিশালী-
বইয়ের প্রচ্ছদ খুবই সুন্দর হয়েছে, ধ্রুব এষের কাজ অনন্য।
@পৃথিবী,
হ্যা, সায়েন্টিফিক আমেরিকানের এই প্রবন্ধটার উপরও বড় আলোচনা আছে আমার বইয়ে। আমিও আমার বইয়ে দেখিয়েছি যৌনপ্রবৃত্তি একটা continuum এর মত।
আর হ্যা, বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন সব্যসাচী হাজরা।
বইটা অবশ্যই সংগ্রহ করবো। আমি নিজেও এই ট্যাবু আক্রান্ত ছিলাম- কিন্তু এটা যে প্রাকৃতিক একটা ব্যাপার, জোর করে বন্ধ করা যায়না, সেটা বুঝেছিলাম সচলে আপনার লেখা পড়ে।
বই পড়ে বাংলাদেশের আরও অনেকের এই ভুল ধারণা ভাংগুক এই কামনা করছি। অভিনন্দন, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর জন্য।
অভিজিতকে আন্তরিক অভিনন্দন সমকাকীতার উপর বই প্রকাশে। এই বইটা বাংলার বই-এর ইতিহাসে একটা মাইলফলক হবে।
`আবুল কাশেম
@আবুল কাশেম,
ধন্যবাদ কাশেম ভাই। বইয়ে “ধর্মে সমকামিতা” নামে একটি অধ্যায় আছে। আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে অধ্যায়টি। বিচ্ছিন্নভাবে আপনার সাথে আলোচনা বেশ কাজে এসেছে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
বেশ তথ্যবহুল লেখা।
যারা সমকামি তারা ইচ্ছকৃতভাবে সমকামি হয় না, এটা তাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। সে হিসেবে তো তাদের জীনের মধ্যে এর কোন না কোন সূত্র অবশ্যই থাকার কথা? তাহলে এখনো গে-জীনের খোজ কেন পাওয়া যায়নি? মনে হচ্ছে এ ব্যাপারটি এখনো বিজ্ঞানীরা বের করতে পারেননি। মানে ওন জীনগুলি একক মা মিলিতভাবে এই প্রবণতার জন্য দায়ী।
এই সিরিজে বৈজ্ঞানিক দিকের সাথে ছোট একটি চাপ্টার মনে হয় যোগ করা যায় যাতে সমকামিতা আইনী বা সামাজিক দৃষ্টিতে অতীত ও বর্তমানে কোন দেশে কিভাবে দেখা হয় সেটার আলোচনা থাকে। তাতে কিছুটা বোঝা যেতে পারে সমকামিতা সম্পর্কে সনাতন দৃষ্টিভংগী কিভাবে পাল্টাচ্ছে। কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাবে।
@আদিল মাহমুদ,
আসলে যে কোন কম্পলেক্স বিহেভিয়ার কেবল একটিমাত্র জিনের উপর নির্ভরশীল নয়। জিনের প্রভাব যদি থেকে থাকে তবে এটি একাধিক জিনের কম্বিনেশনের ফল হবে। তাই একক জিন কিংবা গে জিন খোঁজার চেষ্টাটাই হয়তো একটি ভুল। সে হিসেবে ‘গে জিন’ না পাওয়া গেলেও সমকামিতাকে ত্বরান্বিত করে – এ ধরনের মার্কার যে পাওয়া গেছে তা আমি দেখিয়েছিলাম সিরিজের আগের পর্বে – সমকামী মস্তিস্ক এবং সমকামী জিনের খোঁজে।
অবশ্যই। বইয়ে এর জন্য আলাদা চ্যাপ্টার অন্তর্ভুক্ত করেছি। কাজেই, সামনে যে এ নিয়ে লেখা আসছে, নিশ্চিন্তে থাকুন 🙂
@অভিজিৎ,
সবচেয়ে ভাল হত আমাদের মত দেশেও যে কত সমকামি আছে সেটা চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারলে। বিশেষ করে সেলিব্রিটী সমদের ইন্টারভ্যু করতে পারলে। কিন্তু সংগত কারনেই আমাদের দেশে সেটা মনে হয় সম্ভব নয়। শখ করে কে প্রকাশ্যে এই সিল লাগিয়ে জীবনের ঝুকি নিতে চাইবে বা সমাজচ্যূত হতে চাইবে।
ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে আমাদের দেশের অধিকাংশ লোকের ধারনা যে সমকামিতা শুধুমাত্র পাশ্চাত্য দেশেই পাওয়া যায়। আমাদের দেশে এর সংখ্যা অতি নগণ্য। এই অতি নগন্য ধারনাটা সমকামিতা যে একটা মানসিক অসূস্থতা বা যৌণ বিকৃতি এই ধারনা তাদের আরো পাকাপোক্ত করে তুলতে সহায়তা করে।
যদি দেখানো যেত যে নিজেদেরই চেনা অনেক লোক যাদের সাথে অন্য দশটা মানুষের আর কোনই তফাত নেই তারাও সমকামি তবে হয়ত এদের প্রতি মানুষের ভিত্তীহীন ঘৃনার পরিমান কমত।
@আদিল মাহমুদ,
তিষ্ট বন্ধু, তিষ্ট। সমকামিতা আমাদের সমাজে এমনিতেই স্পর্শকাতর বিষয়। অচ্ছুত। আর বাংলাতে সমকামিতার উপর কোন বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা নির্ভর কিছু আগে বেরও হয় নি। তাই এখনই আশে পাশের কিংবা কাছের লোকজন নিয়ে টানাটানি শুরু করলে হিতে বিপরীতই হবে। তবে আমার বইয়ে বেশ কিছু জায়গায় আমার কাছের বন্ধু বান্ধবের উদাহরণ দিয়েছি, যদিও আসল নাম ধাম উল্লেখ করা হয়নি, বুঝতেই পারছেন। আর সেলিব্রেটি? অন্ততঃ গোটা দশেক সেলিব্রিটির কথা জানি যারা ক্লোজেজেটেড গে হয়ে ‘বিবাহিত’ জীবন যাপ্নে বাধ্য হচ্ছেন। তবে সঙ্গত কারণেই আমি তাদের নাম উল্লেখ করিনি (নামগুলো শুনলে আমি নিশ্চিত আপনি অবাক হয়ে মাথার চুল ছিড়বেন) । তবে তাদেরকে নিয়ে টানাটানি করার এটা উপযুক্ত সময় নয়। আগে এই ব্যাপারে একটা সহিষ্ণুতা তৈরি হোক… তারপর এমনিতেই তারা নিজেদের কথা নিজেরা বলবে।
আমার বইটা লেখা হচ্ছে মূলতঃ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ইস্যুগুলো ট্যাকেল করে। এটা প্রাথমিক ধাপ।
আমার বইয়ে মূলতঃ
আগের লেখাগুলো তো পড়াই ছিল। এটা পড়ে আবারও বুঝলাম, বইটা কতোটা তথ্যসমৃদ্ধ ও যুক্তিনির্ভর হয়েছে। এইবার বোধহয় বাংলাদেশেও জনসমক্ষে উঠে আসবে সমকামিতা নামটি। এই ট্যাবু এখনও এতো ভয়ানক যে, মানুষ নাম নিতে পর্যন্ত অস্বস্তি বোধ করে বা ভয় পায়। এর আশু প্রতিকার প্রয়োজন। সমকামিতার পাশাপাশি আধুনিক জেন্ডার কনসেপ্ট নিয়েও বইয়ে কিছু আলোচনা আছে শুনেছি। সব মিলিয়ে খুব কনক্রিট হয়েছে, বুঝতেই পারছি। প্রকাশিত হওয়া মাত্রই সংগ্রহ করব।
বাংলাদেশে সমকামিতা নিয়ে কিছু ফিল্ড স্টাডি হওয়া উচিত। মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী বা জীববিজ্ঞানী সবার পক্ষ থেকেই গবেষণা হতে পারে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোই যদি পিছিয়ে থাকে তাহলে দেশের সাধারণ মানুষ এগোবে কি করে!
মানবাধিকারের জয় হোক…
[প্রচ্ছদটা খুবই ভাল হয়েছে।]
@শিক্ষানবিস,
অনেক ধন্যবাদ জবাব দেয়ার জন্য এবং বইটি সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করার জন্য।
অবশ্যই বাংলাদেশে সমকামিতা নিয়ে কিছু ফিল্ড স্টাডি হওয়া উচিত। আমি আমার বইয়ে কিছু উল্লেখ করেছি। এবার বাংলাদেশ গিয়ে ভাল কিছু উপাত্ত সংগ্রহ করেছি বিভিন্ন সোর্স থেকে, আর আমার এই বইয়ের শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকেও অজস্র তথ্য পেয়েছি।
ভবিষ্যতে সেগুলো নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে।
অভিজিৎ,
তোমাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাচ্ছি এই গুরুত্বপূর্ণ বইটার প্রকাশ উপলক্ষে। আশা করি এই বইটা পড়ে সমকামিতা সম্পর্কে আমাদের অনেকের মনে যে ভুল ধারনা রয়েছে তার অবসান ঘটবে, বাঙ্গালী সমকামিরা আত্নমর্যাদাবোধ নিয়ে বাঁচার অনুপ্রেরণা পাবে, আর সবাই জানতে পারবে সমকামিতার বৈজ্ঞানিক ও সমাজ-মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ।
প্রকাশক শুদ্ধস্বরের আহমেদুর রশীদ টুটুলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই বইটা প্রকাশ করে তিনি যে সাহসিকতার স্বাক্ষর রেখেছেন সে জন্য।
প্রচ্ছদটা খুবই সুন্দর এবং আকর্ষনীয় হয়েছে।
@ইরতিশাদ,
ধন্যবাদ ইরতিশাদ ভাই। আপনার সংশোধনী এবং মূল্যবান সাজেশনগুলো আমার খুবই উপকারে এসেছে। অনেক ধন্যবাদ সময় নিয়ে পাঠানো চ্যাপ্টারগুলো দেখে দেবার জন্য।
প্রচ্ছদটা কিন্তু আমারো খুব ভাল লেগেছে। শুনেছি প্রচ্ছদটি বইয়ের জন্য করেছেন ধ্রুব এষ। তাকেও এই পোস্টের মাধ্যমে অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
@ইরতিশাদ ভাই,
একটা বড় ভুল হয়েছে। আহমেদুর রশীদ টুটুল মেইল করে জানিয়েছেন – বইটির প্রচ্ছদ আসলে করেছেন সব্যসাচী হাজরা।
আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি, এবং সব্যসাচী হাজরাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
আমার প্রকাশিতব্য “সমকামিতা : একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান” বইটির পেছনে যারা প্রত্যক্ষ ভাবে সাহায্য করেছেন – ইরতিশাদ ভাই (ইরতিশাদ আহমাদ), মীজান ভাই (মীজান রহমান), মামুন ভাই (মাহবুব সাঈদ), স্নিগ্ধা, বন্যা সহ অনেকেই – সবাইকে এই পোস্টের মাধ্যমে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ধন্যবাদ আদিল মাহমুদ, বিপ্লব সহ অন্যান্যদেরও যারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে মাঝে মধ্যেই বিতর্ককে প্রাণবন্ত করে তুলেছিলেন।