যখন বৃষ্টি এলো
গত কিছুদিনে গান নিয়ে এতো বেশি লোকজনকে জ্বালিয়েছি যে, ভেবেছিলাম আগামী ছয়মাস আর গান সংক্রান্ত কোন পোষ্ট দেবো না। নির্লজ্জ্বের মত সেই ভাবনাকে শিকেয় তুলে রেখে আবারো গান নিয়েই পোস্ট দিলাম। মুক্তমনায় আস্তিকতা- নাস্তিকতা নিয়ে যে উত্তপ্ত অবস্থা তৈরি হয়েছে, তাকে সুশীতল করার আর কোন উপায় পেলাম না গান বাজনা শোনানো ছাড়া। এটা দিয়ে কিছুটা হলেও যদি লোকজনের মনযোগ বিতর্ক থেকে সরিয়ে দিতে পারি তাহলেও খুব একটা মন্দ হয় না। কী বলেন আপনারা?
আসুন গান শুনি, গান নিয়ে আলাপ আলোচনা করি, জীবনকে হালকাভাবে নেই। একটাই মোটে জীবন আমাদের। বৃথা তর্কে সেটাকে অপচয় করার কোন মানে আছে নাকি?
মধ্য সত্তরে এই নামে একটা চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিল বাংলাদেশে। তুমুল আলোড়ন তুলেছিল সেই চলচ্চিত্রটি। মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ওয়াসিম এবং অলিভিয়া। পরিচালনায় অথবা প্রযোজনায় ছিলেন অলিভিয়ার স্বামী এস, এম শফি। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এই ছবিটির একটি দৃশ্যও এখন আমার মনে নেই। এমনকি ছবিটি টিভিতে দেখেছি, না হলে গিয়ে দেখেছি তাও মনে নেই আমার। এত ছোটবেলায় দেখেছি যে এর কিছুই মনে পড়ছে না।অবশ্য ছোটবেলার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে খুব একটা লাভ নেই। কারণ খুঁজে পেতে দেখলাম যে এর আগে ঘটে যাওয়া চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের সময়কার অনেক ঘটনাই মনে আছে আমার। অবশ্য ছবিটার কিছুই মনে নেই বললে আসলে ভুল হবে। আবছাভাবে মনে পড়ে যে অলিভিয়া বিস্তৃণ কোন প্রান্তরে দোপাট্টা উড়িয়ে উড়িয়ে গান গাইছে। তবে এরকম দৃশ্য সত্যি সত্যি ওই ছবিতে ছিল, নাকি আমার উর্বর মস্তিষ্ক নিজে নিজেই তার ছোট্টবেলার ভালবাসার অলিভিয়াকে তৈরি করে নিয়েছে, সেকথা হলফ করে বলতে পারবো না।
তবে আশ্চর্য্যের বিষয় হচ্ছে, চলচ্চিত্রটির কোন দৃশ্য মনে না পড়লেও এর বেতার বিজ্ঞাপনের অনেক কিছুই মনে আছে আমার। ছবিটির মূল নাম ছিল দ্য রেইন। বাংলা সিনেমার সংলাপে যেমন অভিনেতা অভিনেত্রীরা কোন ইংরেজী বাক্য বলে সাথে সাথে এর অনুবাদও করে দেয়, সেরকম বেতার বিজ্ঞাপনে দ্য রেইন বলেই এর সাথে সাথে বলা হতো যখন বৃষ্টি এলো। আমি অবশ্য এখনো জানি না যে কী কারণে এতো সুন্দর একটা বাংলা কাব্যিক নাম বাদ দিয়ে দ্য রেইন নামে ছবিটির নামকরণ করা হয়েছিল। অবশ্য যেটুকু বুঝেছিলাম ওই বেতার বিজ্ঞাপন থেকে তাতে মনে হয় বিদেশে ছবিটি চালানোর জন্য এর নামকরণ ইংরেজীতে করা হয়েছিল। এই ছবিটি নাকি একই সঙ্গে বিদেশেও মুক্তি পেয়েছিল। তখন শুনেছিলাম যে এই ছবির দুটো ভার্সন। বিদেশে চালানোর ভার্সনটিতে নাকি একটু বড়দের ঝাঁল মসলা যুক্ত ছিল। সত্যি মিথ্যা জানি না। বাংলাদেশি ভার্সনটাই আর দেখা হয়নি কখনো, বিদেশী ভার্সনতো বহু দূরের কথা।
অলিভিয়ার স্বামী এস, এম শফি খুব চটকদার ধরনের মানুষ ছিলেন। সবকিছুতেই চমক ছড়ানো ছিল তার অভ্যাস। একবার আন্তর্জাতিকভাবে মাসুদ রানা ছবি করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। সেই ছবির জন্য নিদেনপক্ষে পাঁচফুট আট-দশ ইঞ্চি উচ্চতার নায়ক খোঁজার জন্য সেকি তোড়জোড় তার। পত্রপত্রিকায় মাসুদ রানার জন্য চটকদার বিজ্ঞাপন ছাপা হত তখন। মাসুদ রানা হয়ে অলিভিয়াসহ আরো অনেকগুলো দেশের সুন্দরী নায়িকাদের বক্ষলগ্না করার উন্মুক্ত আহবান ছিল সেই বিজ্ঞাপনে। আমাদের পাড়ার দুই একজন লম্বু সুদর্শন মাস্তানও তাদের ছবি পাঠিয়ে দিয়েছিল মাসুদ রানা হবার আশায়। একটু বেশি ছোট ছিলাম বলে অলিভিয়ার সাথে অভিনয়ের এমন বিরাট সুযোগটা মিস হয়ে গিয়েছিল আমার। বড়ই আফসোস!!
দ্য রেইন ছবিটা আসলে কী রকম ছবি ছিল? চটুল ধরনের পোশাকী ছবি? নাকি সুস্থ বিনোদনমূলক ছবি? নাকি সিরিয়াস কোন চলচ্চিত্রি? কেউ কী জানেন এই বিষয়ে কিছু? অনেক চেষ্টা করলাম ইন্টারনেটে এই চলচ্চিত্র সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের। কিছুই পেলাম না। ওয়াসিম আর অলিভিয়া এই চলচ্চিত্রে আছে বলে ধারনা করে নিচ্ছি যে চটুল ধরনের ছবি ছিল সেটা। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় হচ্ছে এই ছবিতে অসাধারণ কিছু উন্নত মানের গান আছে। একটা চটুল পোশাকী ছবিতে এত উন্নত ধরনের কাব্যময় গীতি থাকে কী করে? এত কাব্যিক নামই বা হয় কী করে সেই ছবির?
বাংলাদেশে প্রতিবছর চলচ্চিত্রের গানের ক্ষেত্রে নারী কণ্ঠে গাওয়া এবং পুরুষ কণ্ঠে গাওয়া এই দুই ক্যাটাগরিতে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালে এই দুই ক্যাটাগরিতে জিতে নেয় দ্য রেইন ছবির দু’টো গান। এর একটি ছিল রুনা লায়লার গাওয়া ‘চঞ্চলা হাওয়ারে’। আর অন্যটি ছিল মাহমুদুন্নবীর গাওয়া ‘আমিতো আজ ভুলে গেছি সবি’গানটা। সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন আনোয়ার পারভেজ।
আমার মতে রুনা লায়লার গাওয়া সেরা তিনটি বাংলা গানের এটা একটি। আমার সেরা পছন্দ হতে বাধা শুধু মাত্র ‘যখন থামবে কোলাহল’ আর ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’ গান দু’টি। এখনো নিশ্চিত নই কোনটি আমার বেশি পছন্দের গান। তবে আমার মনে হয় খুব চুলচেরা করে বিশ্লেষণ করলে বাকী দু’টোকে ফটোফিনিশিং এ পরাস্ত করে এটিই চলে আসবে এক নম্বরে। এই গানে যখন রুনা ঘুমন্ত বন্ধুকে ছায়া দেবার জন্য মেঘকে আয়রে মেঘ বলে ডাক দেয়, আমার মনে হয় যেন সত্যি সত্যি মেঘ এসে হাজির হচ্ছে সেই আকুল আবেদন শুনে। এতই জীবন্ত এই গান!
|
একমাত্র গীতা দত্তকে বাদ দিলে (গীতা দত্ত ফরিদপুরের মেয়ে) রুনার মত এরকম অসাধারণ কণ্ঠশৈলী নিয়ে বাংলাদেশে আর কোন শিল্পী মনে হয় না জন্মেছে। অদ্ভুত একধরনের মাদকতা আছে তার কণ্ঠে। অথচ তার কণ্ঠের এই মাদকতাকে চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং সঙ্গীত পরিচালকেরা চটুল গানের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করেছেন বেশি। ফলে রুনা লায়লা যত না সংখ্যক ভাল গান গেয়েছেন, তারচেয়ে দশগুণ বেশি সংখ্যক গেয়েছেন চাকভুম চাকভুম চাঁদনী রাতে, রূপে আমার আগুন জ্বলে বা ও পানিরে পানি তোর মতলব জানি ধরনের আজে বাজে গান।
শৈশব এবং কৈশোরে বাবা মায়ের সাথে করাচীতে থাকতেন রুনা লায়লা। মাত্র বারো বছর বয়সে উর্দু চলচ্চিত্রে প্লে ব্যাক করে চলচ্চিত্রের গানে পদার্পন করেন। এর আগে আরো পিচ্চি বয়সেই স্টেজ মাতিয়ে ফেলেছেন তিনি। বড় বোন দীনা লায়লা তখন গানের শিল্পী হিসাবে বেশ নাম ডাক করে ফেলেছেন। এক অনুষ্ঠানে তার অসুস্থতার কারণে পিচ্চি রুনাকেই দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় গান গাইবার জন্য। তারপর থেকেই বিশ্বকে জয় করে নেন তিনি। অমিত সম্ভাবনাময় শিল্পী দীনা লায়লা অকালে ক্যান্সারে মারা যান। আপনারা জানেন কিনা জানিনা না। মিরপুরে দীনা লায়লার নামে একটি সঙ্গীত একাডেমি আছে।
স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে ফিরে আসেন রুনা। পাকিস্তানে এবং বোম্বেতে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ থাকার পরেও বাংলাদেশকেই বেছে নেন তিনি। ফিরে আসার আগে এবং পরেও পাকিস্তানে প্রচুর গান গেয়েছেন তিনি। ইউটিউবে রুনা লায়লা নাম দিয়ে সার্চ দিলে অবাক হয়ে যাবেন। রুনার যতগুলো না বাংলা গান আসবে তার প্রায় দশগুণ বেশি আসবে উর্দু গান ।
শৈশব এবং কৈশোর পাকিস্তানে কাটানোর কারণে বাংলা লিখতে এবং পড়তে পারেন না তিনি। যে কোন গান গাইবার আগে সেটাকে রোমান হরফে লিখে দিতে হয়। আর তা দেখে পড়েই গান গান তিনি। একবার কবি শামসুর রাহমানের লেখা একটি দেশাত্মবোধক গানের রিহার্সালের সময় কবি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। যখন দেখলেন যে সঙ্গীত পরিচালক তার গানকে রোমান হরফে লিখে দিচ্ছে তখন হতাশায় একেবারে মুষড়ে পড়লেন তিনি। সঙ্গীত পরিচালককে একপাশে ডেকে নিয়ে বললেন যে, এ কাকে ধরে নিয়ে এলেন গাইবার জন্য। এতো বাংলাই পড়তে পারে না। গাইবে কী করে। সঙ্গীতকার আশ্বস্ত করে বললো যে ভাবনেন না কিছু। আগে গানটা করুক, পরে দেখুন কেমন লাগে। কবি অবশ্য গান শোনার আর সাহস পাননি। ভাঙ্গা মন নিয়ে বাড়ীতে চলে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য রুনার কণ্ঠে গান শুনে চমকে গিয়েছিলেন তিনি।
গান যে শুধু শোনার জিনিষ নয় দেখারও তার সার্থক প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন তিনি। স্টেজ শোতে রুনা লায়লা অনন্য। তার ধারে কাছে যাবার মত আর কেউই নেই। অপূর্ব কণ্ঠশৈলী ছাড়াও তার দারুণ সৌন্দর্য, চমৎকার ফ্যাশন সচেতনতা, ছন্দময় সাবলীল নাচ এবং দর্শকদের সাথে যোগাযোগের অসাধারণ ক্ষমতার কারণে স্টেজে উঠলেই মাতিয়ে দিতে পারেন তিনি।
প্রকৃতির কোন এক বিচিত্র খেয়ালে আমরা আমাদের সর্বকালের সেরা তিন নারী কণ্ঠকে পেয়ে গিয়েছি একই সময়ে। এই সেরা তিন কণ্ঠের অন্য দুজন হচ্ছেন সাবিনা ইয়াসমিন আর শাহনাজ রহমতুল্লাহ। সাবিনা যে পরিমাণ জনপ্রিয় গান গেয়েছেন, তা আর মনে হয় না অন্য কেউ গাইতে পারবে। অন্যদিকে শাহনাজ গুণে এবং মানে যে পরিমাণ দেশাত্মবোধক গান গেয়েছেন তা রীতিমত বিস্ময়কর। দেশের গান যে কণ্ঠ দিয়ে নয় হৃদয় দিয়ে গাইতে হয় সেটার যথার্থ প্রমাণ দেখিয়ে দিয়ে গেছেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। আমার এক পাকিস্তানী বন্ধুর কাছে শুনেছি যে, এখনো নাকি পাকিস্তানে রুনা লায়লা এবং শাহনাজ রহমতুল্লাহর ( ওরা অবশ্য শাহনাজ বেগম নামে চেনে) জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী।
বাংলাদেশে রোমান্টিক গানের অপ্রতিদ্বন্দ্বী শিল্পী মাহমুদুন্নবী। এরকম রোমান্টিক গানের গলা নিয়ে তার আগেও যেমন কেউ বাংলাদেশে জন্মায়নি, পরেও না। পশ্চিম বাংলায় হেমন্ত যেমন, বাংলাদেশে মাহমুদুন্নবী তেমনই। আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন, গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে, তুমি যে আমার কবিতা, ওগো মোর মধুমিতার মত অসংখ্য রোমান্টিক গান গেয়েছেন এই শিল্পী। ষাট এবং সত্তর দশকে যে কোন রোমান্টিক গান হলেই সঙ্গীত পরিচালকদের প্রথম পছন্দ ছিল মাহমুদুন্নবী।
আজকের জনপ্রিয় শিল্পী সামিনা চৌধুরী এবং ফাহমিদা নবীর বাবা ছিলেন তিনি। তার দ্বিতীয় বিয়ের প্রতিবাদে নবী পদবী ত্যাগ করেছিল দু’বোনই। ইদানিং অবশ্য ফাহমিদাকে দেখছি নবী পদবী আবার ব্যবহার করতে।
রুনা লায়লার ক্ষেত্রে চঞ্চলা হাওয়ারে যেমন ফটো ফিনিশিং এ প্রথম হয়েছিল, মাহমুদুন্নবীর ক্ষেত্রে সেরকম নয়। আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন, গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে বা তুমি যে আমার কবিতার মত অসাধারণ গানগুলোকেও অনেকখানি পিছনে ফেলে দিয়ে আমার কাছে মাহমুদুন্নবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় গান হচ্ছে আমিতো আজ ভুলে গেছি সবি।
|
আপনাদের জন্য এটা একটা বোনাস বলতে পারেন। রুনা লায়লা তার তেরো বা চৌদ্দ বছর বয়সে পাকিস্তান টেলিভিশনে সরাসরি গান গাইছেন। রুনার কিশোরী বয়সের এই ভিডিওটা যতবারই দেখি ততবারই গর্বে বুকটা দশ হাত উঁচু হয়ে যায় আমার। এই না হলে কী আর রুনা লায়লা। গানটার কিছুই বুঝি না আমি। তাতেও কিছু এসে যায় না। গাইছে যে আমাদেরই রুনা। আমি নিশ্চিত। আপনাদেরও গর্বে বুক ফুলে উঠবে এটা দেখার পরে।
httpv://www.youtube.com/watch?v=lJq1K-N5AEw
আশ্চর্য্যের বিষয় হচ্ছে এই ছবিতে অসাধারণ কিছু উন্নত মানের গান আছে। একটা চটুল পোশাকী ছবিতে এত উন্নত ধরনের কাব্যময় গীতি থাকে কী করে? এত কাব্যিক নামই বা হয় কী করে সেই ছবির?————————–একেবারে যথার্থ বলেছেন। আজও আমার মনে পড়ে সেই গান টি ‘ আয়রে………মেঘ আয়রে…।’
@শেখ মনিরুল হক,
হ্যাঁ, মনে পড়বার মতই গান ওটা।
httpv://www.youtube.com/watch?v=AlWAY4c4xhc
ছবিটা আমিও দেখেছিলাম।
আমি তখন ক্লাস সেভেন এ পড়ি।
যতদুর মনেপড়ে, ছবিটাকে একেবারে চটুল বলা যাবে না।
বাণিজ্যিক কারণে যতটুকু দরকার ততোটুকুই চটুলতা প্রয়োগ করা হয়েছে।
ঐ সময়ের জন্য সেটুকুই অনেক সাহসী কাজ।
অলিভিয়া ছাড়া মনেহয়না অন্য কোন নায়িকা পারফর্ম করতে রাজী হতো।
শুনেছি ছবিটা ৪ টি ভাষায় (বাংলা, উর্দু, আরবী ও ইংরেজী) রিলিজ করা হয়েছিলো।
প্রেমের গল্প।
নায়ক বড়লোকের সন্তান আর নায়িকা পাহাড়ী এলাকার সাধারন মেয়ে।
বৃষ্টি কারনে সৃষ্ঠ পাহাড়ী ঢলে নায়ক-নায়িকা অল্পের জন্য হাত ধরতে না পেরে ভেসে যাওয়া এবং উভয়ের মৃত্যু ।
মাহমুদুন্নবীর গাওয়া গানটা অনেকের মতো আমারও ভীষণ প্রিয়।
গানটা সুবীর নন্দী নতুন করে গেয়েছেন।
আমার স্মৃতি থেকে ছবিটা পুরোপুরি নেই হয়ে গিয়েছে। ফলে, কী ধরনে ছবি ছিল সেটা তার ধারণা করতে পারি নি লেখাটি লেখার সময়ে। অলিভিয়া আর ওয়াসিমের কারণে মনে হচ্ছিল যে চটুল হবার সম্ভাবনাই বেশি। বেশ পরে বিস্ময়ের সাথে জানতে পারলাম যে, শুধু গান দুটোই নয়, ছবিটিও সাতাত্তর সালের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত। জাতীয় পুরস্কার যেহেতু পেয়েছে, কাজেই চটুল হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
ধন্যবাদ আপনাকে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য।
ফরিদ ভাই
কিছুদিন পর পর গানের ব্লগ দিয়ে মন ঠান্ডা করার কাজটুকু ভালই করেন।
একটি অফটপিক মন্তব্য করি। যুক্তির সংখ্যা প্রকাশের ব্লগে আমার দ্বিতীয় মন্তব্যটি একটু দেখবেন। অগ্রিম ধন্যবাদ।
@স্বাধীন,
গানের লেখা দেই ঠিকই, কিন্তু বেশ ভয়ে ভয়ে থাকি। কোনদিন না আবার মুক্তমনার মডারেটররা পলকা ধরনের লেখার অপরাধে আমাকে তিরষ্কার কিংবা বহিষ্কার করে। 😉
প্রথম স্বাধীন যে আপনি না সেটা এখন বুঝলাম। আসলে লগ ইন না করে যারা মন্তব্য পাঠান তারা যে কোন নামেই সেটা করতে পারেন। আমাদের কিছু করার থাকে না। আমরা যেটা করতে পারি তা হচ্ছে, মন্তব্যটা মডারেশন পার হতে না দেয়া। কিংবা দিলেও সাথে সাথে ব্যাখ্যা দেয়া যে, এই ব্যক্তি মুক্তমনার সুপরিচিত অমুক ব্যক্তি নন, যদিও তাদের নাম সমরূপ।
তারপরও এই ক্ষেত্রে আপনার যদি কোন সাজেশন থাকে দিতে পারেন। ওইখানে ওই স্বাধীনের নিরীহ ধরনের মন্তব্যে হয়তো তেমন কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু একই নামে দুইজন ব্যক্তি মন্তব্য করতে থাকলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টির সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
@ফরিদ আহমেদ,
ধন্যবাদ জবাবের জন্য।
এর একটি সমাধান হতে পারে নিকওয়ালারা লগ-ইন না করে কোন মন্তব্য করতে পারবেন না। যদি মন্তব্য করেন তবে সেটি অটোমেটিক প্রকাশ হবে না। আমি জানি না এটা কোডিং করা সম্ভব কিনা যে অতিথি মন্তব্যে অতিথি যে নিক নিয়েছেন সে নিকে কোন সদস্য আছে কিনা সেটা চেক করা। যদি থাকে তবে সে মন্তব্য সেখানেই আটকে দেওয়া হল।
এতে সমস্যা হল যে যারা সদস্য তাঁদের অবশ্যই লগ-ইন করে মন্তব্য করতে হবে 🙁 । আর যাদেরকে লগ-ইন তথ্য দেওয়া হয়েছে তাঁরা কেন লগ-ইন না করে মন্তব্য করে মডারেটরদের কষ্ট দিবেন 🙂 । এভাবে দু’ট কাজ হবে। একঃ সদস্যদের লগ-ইন করে মন্তব্য করা নিশ্চিত করা হবে, দুইঃ সদস্যদের নিকে কোন অতিথি (সেটা যদি নিকধারী ব্যক্তিও হয়) মন্তব্য করতে পারবেন না।
বাংলা ছায়াছবি আর ছায়াছবির গান নিয়ে আলোচনা হচ্ছে দেখে একটা স্বীকারোক্তি করতে ইচ্ছে হল। কোন একটা কারণে ছোটবেলায় বাংলা ছায়াছবিকে হাসাহাসির বিষয় বা খ্যাত আয়ুর্বেদীয় হিসেবে দেখতাম। আমার বোনের বান্ধবী শর্বরীকে দেখে বাসায় এসে তার খালাকে বলাতে তার খালা বলেছিলো ‘যা অজু করে আয়।’ এটা ছিলো আমাদের হাসাহাসির আলোচনা। এখন মনে হয় ‘কি ঔদ্ধত্য ছিলো তখনকার ভাবনায়?’
আমাদের বাসায় একটা সাদা কালো রাশিয়ান ইলেক্ট্রনিক্স টেলিভিশন কেনা হয়েছিল ১৯৭২ এ। আমার ওই কোলে পিঠে থাকার বয়সের কিছু মনে থাকার কথা নয়। তবু মনে পড়ে ওখানে বাংলা ছবি দেখানো হতো এবং ঘন ঘন বিরতি হতো। বিরতিতে প্রিন্স সাইকেল আর মাস্কো সুজ এর বিজ্ঞাপণ দেখানো হত।
আমাদের বাসায় একজন শিক্ষিতা পরিচারিকা ছিলেন। তার একটাই আবদার ছিলো, রোববারে ছয় ইঞ্চি হিলের জুতো পড়ে এবং সিনথেটিক একখানা শাড়ী পড়ে তিনি শ্যুটিং দেখতে যেতেন। ওটাই তার অবসর আনন্দ ছিলো। তার কাছেই জেনেছি আমাদের বাসার পেছনের রাস্তায় ফরিদ ভাইয়ের ‘না পাওয়া বেদনা’, যার নামটা লিখতেই তিনি আন্দোলিত হয়ে উঠছেন বার বার বিগত কটি লেখাতেই, সেই অলিভিয়া থাকতেন। মাঝে মাঝে ব্যায়ামরত তাকে দেখতে বারান্দায় ছুটে যেতেন সেই পরিচারিকা। তার মুখেই শুনতাম কতবার আজ গাছে জল দিয়েছেন অলিভিয়া, বেঁটে মত কে যেন আজ তার বাসায় এসেছিল ইত্যাদি ইত্যাদি।
আশ্চর্য্য হচ্ছে রাস্তার অন্য ধারে হ্যাপী আখন্দ আর লাকী আখন্দ থাকতেন। তাদের খোঁজ রাখতাম, অলিভিয়ার নয়। আমাদের সেই গুণবতী পরিচারিকা পরবর্তীতে নিজ নাম ‘শাহ নূর’ নামেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন, শুনেছিলাম।
যাহোক, আমার সারা জীবনে একখানা বাংলা ছবিই দেখেছি হলে গিয়ে। তা’ হলো ‘সীমানা পেরিয়ে’। সেও স্কুল এ পড়ার সময়।
এই যে বাংলা ছায়াছবি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, এখন মনে হয় হয়ত অনেক ভালো কিছু অবহেলা করে হারিয়েছি। ইন্টারনেটে পুরোন ছবি গুলো দেখার কোন উপায় কারো জানা আছে কি?
গানগুলো ভালো লাগলো!
ধন্যবাদ ফরিদ ভাই।
@লাইজু নাহার,
ধন্যবাদ আপনাকে। নিজের পছন্দের সাথে অন্যের পছন্দ মিলে গেলে অপার আনন্দে আকণ্ঠ ভরে যায় আমার।
আরে, ওই সিনেমাটা আমিও দেখসিলাম – কী জানি একটা বিয়োগান্তক কাহিনী ছিলো এইটুকুই খালি মনে আছে!
অনেকদিন পরে গানগুলা শুনে ভাল্লাগ্লো – আদিল মাহিমুদ আর ফরিদ ভাই মনে হয় মানুষ বেশি খারাপ না! 😀
@স্নিগ্ধা,
দুনিয়ায় ভালমানুষের যায়গা নাই, তাই ফোরামেই ঘোরাঘুরি করে বেড়াতে হয়।
আপনার উদার সার্টিফিকেটের জন্য ধন্যবাদ।
@স্নিগ্ধা,
ভাল কথা শুনতেই বড়ই ভাল লাগে। 😀
@স্নিগ্ধা,
ইয়ে মানে, আমিও খুব খেটে খুটে গান নিয়ে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম, গণসঙ্গীতের ওপর। আমি কি একটা আর্ধেক বা পৌণে সার্টিফিকেট পেতে পারি? নাকি ওটা জেনডার স্পেসিফিক সার্টিফিকেট? বড় আশায় রইলাম।
@কেয়া,
হে হে – আপনার ভালোত্ব নিয়ে তো আমি কখনও সন্দেহই করিনি, নতুন করে আর কী বলবো! সার্টিফিকেট তো দিচ্ছি একমাত্র তাদেরই, যাদের …… 😀
আর, আপনার সেই পোস্টে যে আমি ‘চমৎকার’ বলে মন্তব্য করলাম, সেটা কি কিছুই নয়? (দীর্ঘশ্বাস …)
হায় নারী! তুশ্চু সার্টিফিকেটটাই খালি দেখলো! (দীর্ঘতর শ্বাস …)
@স্নিগ্ধা,
বাচাঁলেন, আপনি যে null hypothesis করে তাদের মনোনয়ন দিয়েছেন সেটা জেনে আশ্বস্ত হলাম।
বারে, নারী বলে কটাক্ষ করলেন! ? মাথার ঘোমটা , হাতের বেড়ী ফেলে যে সার্টিফিকেটের পেছনে ছুটছি তার জন্যে বাহবা দেবেন না একটুও?
@স্নিগ্ধা,
এভাবে পৃষ্ঠদেশে ছুরিকাঘাত না করলেও পারতেন।
তাই বলি, অকারনে এভাবে হঠাত ভাল মানুষের সার্টিফিকেট দিতে গেলেন কেন।
এখন রহস্য দূর হল।
তবে আমরা এতে দমে যাব না, ততোধিক জোরে পুরনো দিনের গান নিয়ে গবেষনা ও স্মৃতিচারণা করে যাব।
@স্নিগ্ধা,
ও!! (দীর্ঘতম শ্বাস, স্বপ্ন ভঙ্গের)। খামোখাই খুশিতে বাকবাকুম হয়ে বত্রিশ পাটি দাঁত দেখালাম। 🙁
যখন বৃষ্টি এলোর এই গানটা আমার অন্যতম প্রিয় একটা গান। এই সিনেমাটা তখন প্রচন্ড হীট করেছিল মনে আছে, বাড়ির বড়দের জিজ্ঞাসা করলে হয়ত কিছু বলতে পারবে কারন আমি তখন নিতান্তই দুগ্ধপোষ্য শিশু। তবে অনেক শুনেছি মনে আছে। একই সিনেমার মনে হয় আর একটি গান আছে সেটাও অনেক হীট ছিল।
“চোখে যদি চোখ পড়ে যায় লজ্জা কেন পাই বল, বাবু
তোমাকে আমি কিছু বলতে চাই, বলব কেমন করে ভাবছি তাই”
১০০ ভাগ নিশ্চিত নই একই সিনেমার কিনা, তবে রূনা লায়লারই গাওয়া।
তবে মনে আছে বড়দের এই সিনেমার ইংরেজী নাম নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে। “যখন বৃষ্টি এলো” যদি দি রেইন হয়; তবে “যখন বাবা এলো” হবে দি ফাদার।
রুনা আসলেই মনে হয় এখনো পাকিস্তানে বাংলাদেশের থেকে বেশী জনপ্রিয়। তার একটি জনপ্রিয় উর্দু না সিন্ধী গান আছে, “ধমাধম মাস কেলেন্ডার…লাল মেরী পাথো”। এই গানের কিছুই আমি বুঝি না, পাকিস্তান আমল থেকেই আমাদের বাসায় সেই রেকর্ড আছে, আজো আমি শুনি।
রুনা আসলেই কেন যেন শস্তা গান বেশী গেয়েছেন, বাড়ির মানুষ কয় আমায় জীনে ধরেছে এটাও ওনার অন্যতম জনপ্রিয় গান। তবে সেই হিসেবে সাবিনা মনে হয় আরো বেশী গেয়েছেন। তবে রূনা বাংলা লিখতে পড়তে জানেন না এটা জানতাম না।
@আদিল মাহমুদ,
অপেক্ষায় ছিলাম যে দেখি কেউ চোখে যদি চোখ পড়ে যায় গানটার কথা মনে করতে পারে কিনা। বেশিক্ষণ লাগলো না। আপনি শুরুতেই বলে দিলেন। এই নিন গান্টা তুলে দিলাম এখানে।
@ফরিদ আহমেদ,
ইংরেজীতে কি একটা কথা আছে না, ওয়াইজ মেন থিং এলাইক না কি যেন।
এই e-snip ওয়ালারা এত গান পায় কেমনে? আর এদের কোয়ালিটি ও অনেক ভাল।
সার্ভারের কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে মুক্তমনা ডাউন ছিল চব্বিশ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে। তবে গতকাল কোন একটা সময়ে কিছুক্ষণের জন্য মনে হয় ফিরে এসেছিল। অনিচ্ছাকৃত এই অসুবিধার কারণে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
আমার এই লেখাটি যখন পোস্ট করছিলাম ঠিক তখনই মুক্তমনা হাওয়া হয়ে যায়। (কেউ আবার ভেবে বসেন না যেন যে আমিই স্যাবোটাজ করেছি। 😛 )। ফলে পোস্টটি আধা খেঁচড়া অবস্থায় ছিল। মন্তব্য করার সুযোগ বন্ধ ছিল, অসম্পূর্ণ ছিল এবং ঠিকমত ফরম্যাটেড ছিল না।
দ্য রেইন ছবিটি সম্পর্কে জানতে আমি আগ্রহী। যারা এই ছবিটি দেখেছেন এবং স্মৃতিতে আছে তারা এখানে ছবিটি সম্পর্কে আলোচনা করলে খুশি হবো। কারো কাছে যদি ছবিটার কোন সিডি থাকে আর যদি আমাকে পাঠান তাহলেতো কোন কথাই নেই।
@ফরিদ আহমেদ,
আমি যেখানে আছি, সেখানে আজ বৃষ্টি পড়ছে। মজাই লাগলো তাই এই পোস্টটা পড়তে। আর মনে পড়ে গেল আমরা বন্ধুরা মিলে বলাকায় হৈহৈ করতে করতে এই ছবি দেখেছিলাম আমাদের ড়্যাগ ডে উপলক্ষে। আরো মনে পড়ে গেল ‘উন্মাদ’ পত্রিকায় এই ছবির ওপরে বিশেষ প্রতিবেদন বেরিয়েছিল – ‘যখন বুদ্ধি এলো, দি ব্রেইন’ নামে। অলিভিয়ার নাম ছিল বলিভিয়া, ওয়াসিমের কি নাম ছিল মনে নেই। আর… ‘পানিরে পানি, তুই দুষ্টু জানি’ গানটার কথা খুব মনে আছে। 😀
মুক্তমনায় কাল প্রায় সারাদিন ঢুকতে পারিনি। মনমেজাজ খিঁচড়ে ছিল, মনে হচ্ছিল যেন না খেয়ে ঘুমোতে গেলাম। মুক্তমনা জীবনের এমন অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে কেমন করে ভাবতেও অবাক লাগে। মুক্তমনা বেঁচে থাকুক যুগ যুগ ধরে। :yes:
@ইরতিশাদ,
আমি একদম নিশ্চিত না, তবে মনে একটা ধারনা আছে যে উন্মাদ প্রথম বের হয় ৭৮ সালে, সারেং বউ সিনেমাকে প্যারোডি করে, “ষাড়ের বউ”। নিশ্চিত করবেন?
@আদিল মাহমুদ,
হ্যাঁ, সারেং বউ-এর প্যারোডি ছিল ষাঁড়ের বউ। ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’ হয়েছিল ‘জিলাপী এখন ড্রেনে’, আর ‘সীমানা পেরিয়ে’-কে করা হয়েছিল ‘গরু হারিয়ে’। খুব মজা লাগতো ‘উন্মাদ’ পড়তে। তবে প্রথম সংখ্যা কবে বেরিয়েছিল মনে নেই।
হুমায়ুন আহমেদ আর জাফর ইকবালদের আরেক ভাই ‘উন্মাদে’র সম্পাদক আহসান হাবীবও কোন অংশে ভাইদের চেয়ে কম ছিলেন না!
@ইরতিশাদ,
আমার মনে হচ্ছিলো মনের দুঃখে বনে যাই।
@ফরিদ আহমেদ,
মুক্তমনা তো সবসময় ডাউনই থাকে। এর একেকটি পেজ ‘আপ’ করতে গেলে নূন্যতম আধাঘণ্টা সময় দরকার হয়। আচ্ছা এমনটি কেন হয়?
@সৈকত চৌধুরী,
বাংলাদেশের ইন্টারনেট স্পিডই খুব সম্ভবত এর জন্য দায়ী। এখানে এই সমস্যা হয় না।
@ফরিদ আহমেদ,
না, ফরিদ ভাই, শুধু মুক্তমনার ক্ষেত্রে এ ঘটনাটি ঘটে। কিছু যদি করতে পারতেন। সকল সাইটে একনিমিষে ঢুকে মুক্তমনায় এসে যখন এ সমস্যা দাড়ায় তখন মাথার সব চুল ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে হয়। :-X :-X :-X