৩রা ডিসেম্বর সরকারীভাবে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হবার পর ভারতীয় সেনাবাহিনী উত্তর, পূর্ব, ও পশ্চিম তিন দিক থেকেই বাংলাদেশের ভেতর প্রবেশ করা শুরু করে। পূর্ব দিকে আখাঊড়ার সীমান্তে গংগাসাগরে ছিল পাক বাহিনীর একটা শক্ত ঘাটি। এই ঘাটির পতন না ঘটাতে পারলে মিত্র বাহিনী পূর্ণ শক্তিতে পূর্ব দিক দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। তাই যুদ্ধ শুরু হবার রাতেই এই সীমান্তে দুপক্ষের বেধে যায় তুমুল লড়াই। ভারতীয় বাহিনী ৪ঠা ডিসেম্বর ভোর ৪ টায় পাক ডিফেন্সের উপর শুরু করে প্রচন্ড আক্রমন।
তবে আক্রমন ভারতীয়রা শুরু করলেও মোটেই সুবিধে করতে পারছিল না। পাক বাহিনীর ভারী মেশিনগান ও দুরপাল্লার কামানের প্রচন্ড শেলিং এ ভারতীয় পদাতিক বাহিনীর এগুনো হয়ে দাড়ালো খুবই কঠিন। তবে ধীরে ধীরে হলেও ভারতীয় বাহিনী শত্রু অবস্থানের বেশ অনেকটা কাছাকাছি এসে পড়ে। শুরু হয়ে যায় দুপক্ষের তুমুল হাতাহাতি লড়াই।
২৯ বছরের যুবক এলবার্ট এক্কা ছিলেন হামলায় অংশ নেওয়া ভারতীয় ১৪ গার্ড ব্যাটেলিয়নের একজন ল্যান্স কর্পোরাল। এলবার্টের কোম্পানী পড়ে যায় শত্রু পক্ষের একটি এলএমজি পোষ্টের লাইন অফ ফায়ারে। সুবিধেজনক একটি বাংকারে থাকা পাকিস্তানী এই এলএমজি ধারী সৈনিকদের অনবরত গুলিবর্ষনে বেশ কজন হতাহত হবার ফলে এলবার্টের কোম্পানীর এগুনো পুরোপুরিই বন্ধ হয়ে পড়ে। নিজের বাহিনীর এই বেহাল দশা দেখে নিজের নিরাপত্তার বিন্দুমাত্র পরোয়া না করে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এগিয়ে এলেন এলবার্ট। তিনি লক্ষ্য করলেন শত্রূর মেশিনগানের অবস্থাওয়ালা বাংকারটি, তারপর অনেকটা চুপিসাড়ে বুকে হেটে পৌছে যান সে বাঙ্কারের কাছে। শত্রুপক্ষকে সম্পূর্ণ হতবিহবল করে আচমকা উদ্যত বেয়োনেট হাতে লাফিয়ে পড়লেন তাদের বাংকারে। মেশিনগান চালক দুই পাক সেনা বেয়োনেটের ঘায়ে সতর্ক হবার আগেই ঘায়েল হল। ভারতীয়দের অগ্রযাত্রার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো মেশিনগানটি হল নিস্তব্ধ। তবে সাথে সাথে এক খান সেনার পালটা গুলিতে এলবার্ট নিজেও হলেন মারাত্মকভাবে আহত।
তবে মারাত্মকভাবে জখম হলেও এলবার্ট এগিয়ে চললেন তার দলের সাথে, একের পর এক শত্রুর বাঙ্কার তাদের হাতে হল পরাভূত। এভাবে সীমান্তের ভেতর ঢুকে গেলেন আরো প্রায় দেড় কিলোমিটার। আবারো এলো শত্রূর তীব্র বাধা। এবার আরো মারাত্মক। একটা দোতলা বাড়িতে অবস্থান নেওয়া পাক মিডিয়াম মেশিনগানের সহজ টার্গেটে পরিণত হল এলবার্টের বাহিনী। হতাহতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছেই। বিপদ থেকে উদ্বারে আবারো এগিয়ে এলেন এলবার্ট। মারাত্মকভাবে যখন হওয়া সত্ত্বেও প্রচন্ড গোলাগুলির মাঝে খুব সাবধানে বুকে হেটে ক্রল করে তিনি পৌছে গেলেন সেই বাড়ির কাছে। তবে বাড়িটির আগেই বাইরে এর প্রতিরক্ষায় আছে একটি বাংকার, সেটি না পেরিয়ে মেশিনগানওয়ালা বাড়িতে ঢোকা যাবে না। এলবার্ট দ্রুত একটি গ্রেনেড ছুড়ে দিলেন সেই বাংকারের মধ্যে। একজন খান সেনা নিহত হল, আরেকজন হল মারাত্মকভাবে যখম। তবে মূল সমস্যা সৃষ্টিকারী সেই মেশিনগান এখনো কাবু করা যায়নি, সেটা বিল্ডিং এর দোতলায়। এলবার্ট জখম নিয়েও টপকে পার হয়ে গেলেন বিল্ডিং এর দেওয়াল, পৌছে গেলেন দোতলায়। বেয়োনেট চার্জ করে কাবু করে ফেললেন মেশিনগান চালক পাকসেনাদের।
এর ফলে তার কোম্পানীর অগ্রযাত্রা হল সুনিশ্চিত। কিন্তু মারাত্মকভাবে আহত এলবার্ট চুড়ান্ত বিজয় দেখে যেতে পারেননি, আঘাত জনিত কারনে তার সেদিনই মৃত্যু হয়। পতন হয় গংগাসাগরের সুরক্ষিত পাক ঘাটির। এর ফলে পূর্ব সীমান্তে আখাউড়ার দ্রুত পতন হয়।
এই বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এলবার্ট এক্কাকে দেওয়া হয় মৃত্যু পরবর্তী সর্বোচ্চ পরম বীর চক্র পদক, তার নামে তার জন্মস্থান রাচীতে একটি রাস্তার নাম দেওয়া হয়। ২০০০ সালে তার সম্মানে বের করা হয় একটি ডাকটিকেট।
ইরতিশাদ,
ধণ্যবাদ আমার প্রশ্নগুলো ব্যাখ্যা করার জন্য।
পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনা টাকা আদায়ে ব্যার্থতা, আটকে পড়া বিহারীদের ফেরত নেওয়ানো এ প্রশ্নগুলি আমারো মনে হচ্ছিল যে আমি মনে হয় ভুল বুঝছি, যদিও আবার মনে হচ্ছিল যে হয়ত ভারতের এসব ব্যাপারে নেগোসিয়েশনের কোন কমিটমেন্ট ছিল যা আমার জানা নেই। এখন পরিষ্কার হয়েছে। এখানেও আসলেই ব্যার্থতা আমাদের, বাংলাদেশের। পাওনা টাকা আদায় তো বহুদুরের কথা, তাদের ফেলে যাওয়া লায়াবিলিটিই আমরা তাদের কাছে ফেরত দিতে পারিনি। তবে আমি এজন্য চোখ বুজেই বাংলাদেশ সরকারকে দায়ী করে যাব না। বাস্তবতার নিরিখে চিন্তা করে দেখব যে একটা সদ্য স্বাধীন বন্ধুবান্ধবহীন দেশ হিসেবে তাদের পাকিস্তানের সাথে কুটনৈতিক লড়াই চালানোর ক্ষমতা কতটুকু ছিল সেটা। এখানেই বাস্তবতা আর আবেগের মাঝে গোল বাধে।
আমি নিজেও কি হলে কি হতে পারত আর নাহলে কি হত এই জাতীয় হাইপোথেটিক্যাল আলোচনায় বেশী উতসাহ বোধ করি না। তবে কখনো কখনো এ আলোচনা কিছু মাত্রায় হলেও দরকার হতে পারে। এ আলোচনায় আমার উতসাহ আসার কারন ছিল আপনার সেই উক্তি যা এবারো করেছেন,
“আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দেউলিয়াত্ব আর দূর্বলতার কারণেই আমাদের যুদ্ধের দায়দায়িত্ব এবং সেই সাথে কতৃত্বও ভারত সরকার আর তার সেনাবাহিনীর হাতে গিয়ে পড়ে”
স্বভাবতই আমি ধরে নিতে পারি যে আপনি আমাদের ততকালীন সরকারের ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ট নন। মুক্তিযুদ্ধের অফিসিয়াল নেতৃত্ব তো রাজনৈতিকভাবে প্রবাসী সরকারের হাতেই ছিল। তাই এর সাথে সাথেই অবধারিতভাবে প্রশ্ন আসে যে নিশ্চয়ই আপনার মতে কোন বিকল্প উপায় আছে যা আরো ভাল হতে পারত। এটা জানার জন্যই এই হাইপোথিটিক্যাল প্রসংগ টেনেছিলাম।
ভারতের সরাসর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়াটা এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারন এর সাথেই জড়িত যুদ্বের কৃতিত্ব বা কতৃত্ব কিভাবে তাদের হাতে গেল সেই প্রশ্ন।
বাংলাদেশের গেরিলা কায়দার অপেশাদার মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে বহুগুন শক্তিশালী ভারতীয় প্রফেশনাল সেনাবাহিনী যোগ দিলে নেতৃত্ব ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতেই যাবার কথা, আমার মতে সেটাই হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর জেনারেলরা কাদের সিদ্দিকী বা মেজর জিয়াদের অধীনে নিশ্চয়ই যুদ্ধ করতে চাইতেন না। আবেগপ্রবন হয়ে দাবী করা যেতেই পারে যে না, এটা আমাদের যুদ্ধ, আমরাই মূখ্য ভারতীয়্রা শুধুই পার্শ্বচরিত্র। বাস্তবতা সেটা থেকে বহুদুরে। তাই আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা ভারতীয় নেতৃত্ব মেনে নিতে তখন সাধারনভাবে কোন সমস্যা দেখেননি। এটা সম্পূর্ণই আমার মত।
এ বিষয়ে আমি পরস্পরবিরোধী দুটি তত্ত্ব মুক্তিযোদ্ধাদের থেকেই শুনি। কারো কারো মতে ভারতের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়াই আমরা স্বাধীন হতে পারতাম, আবার অনেকের মতে সেটা অনেকটা অসম্ভবের মত চিন্তা। বস্তুত অধিকাংশ সেক্টরেই মুক্তিযোদ্ধারা তখন অপেক্ষা করছিল ভারত সরাসরি যুদ্ধে সহসা প্রবেশ করবে এই আশায়। আমি মূলত জানতে চাচ্ছিলাম আপনি কোন ধারনা ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করেন সেটা জানতে। আপনার জবাবে মনে হচ্ছে যে আপনি সেভাবে চিন্তা মনে হয় করেননি।
যদিও প্রশ্নটা থেকেই যায় যে ততকালীন সরকারের বিকল্প আর কি উপায় ছিল? আমি ব্যক্তিগতভাবে সরকারী কোন নীতির সমালোচনা করলে অবশ্যই আগে নিশ্চিত হয়ে নেই যে তার ভাল কোন বিকল্প আছে বলে। নইলে সমালোচনা কেন করব?
আপনাকে আবারো ধণ্যবাদ সময় নিয়ে জবাবগুলি দেওয়ায়। এ আলোচনায় কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসলেও অনেক কিছু জানা যাচ্ছে, সেটাও বিরাট লাভ, তর্কে জেতা হারা কোন বিষয় নয়।
বিপ্লব,
আমিও ১৯৩ জন বিশেষ যুদ্ধবন্দীর ব্যাপারে ওটাই বলতে চাই। আন্তর্জাতিক আদালতের মত কাগুজে প্রতিষ্ঠানের রক্তচক্ষুতে ভয় পাওয়ার জিনিস ভারত আমার মনে হয় না। আন্তর্জাতিক আদালত শুনতে বশ গালভরা প্রতিষ্ঠান মনে হলেও কার্যত কোণ দেশকে তার সিদ্ধান্ত মানাবার মত ক্ষমতা এর নেই।
ভারত অন্তত আমাদের দেশের দিকে তাকিয়ে এই ১৯৩ জনের কিছু একটা করতেই পারত। বিশেষ করে এই পাকি বদমায়েশদের নৃশংসতা যখন তারা নিজেদের চোখে দেখেছে।
কিন্তু তারা তা না করে সিমলা চুক্তিতে এটা ব্যাবহার করে পাকিস্তানের উপর সুবিধে নিল। এটা নৈতিকভাবে ভারতের অন্যায় হয়েছে।
@আদিল মাহমুদ,
আদিল ভাই,
আমি লেখক হিসাবে ইন্দিরা গান্ধীর সমালোচনা করছি বটে-কিন্ত, ভারতের মসনদে থাকলে, আমিও নিজের দেশের স্বার্থের কথা ভেবে, সেই একই কাজ করতাম। কারন রাজনীতি সেটাই দাবী করত। কিন্ত সত্যের গভীরেও সত্য থাকে। সেটা হচ্ছে ভারতের যায়গায় যেকোন দেশ থাকলেও সেই একই সিদ্ধান্ত নিত। বাংলাদেশে এই প্রশ্নত কেও তোলে না-কোন মুসলিম দেশ কেন বাংলাদেশের গণহত্যার বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ সেদিন করে নি? আসল সমস্যা তাই জাতীয়তাবাদি চিন্তায়। রাষ্ট্র নামক ধারনার অস্তিত্বে। ভারত এখানে রাষ্ট্র নামক ধারনার প্রতিনিধি মাত্র।
@আদিল মাহমুদ, আমার মনে হয় আপনি পুরোটা পড়েননি। এই ১৯৩ জনের বিনিময়ে সিমলা চুক্তি হয়নি, হয়েছে ৯০,০০০ পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীর বিনিময়ে। দেখুন কেসটা শুরুই হয়েছে ১৯৭৩ সালে, অর্থাৎ সিমলা চুক্তি হয়ে যাওয়ার পরে। সিমলা চুক্তির ফলে পাকিস্তান তাদের ৯০,০০০ যুদ্ধবন্দীকে দেশে ফেরত পাওয়ার পরেই এই মামলা শুরু করে। চুক্তির সময়েও এদের ফেরত দেবার কোনো ইচ্ছা ভারতের ছিল না – থাকলে তখনই দেওয়া যেত।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ১৯৭১ সালে শেষ হয়নি, শেষ হয়েছে ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘে প্রবেশের মাধ্যমে। এর মধ্যের রাজনীতিও কম ছিল না। দাবার গুটি ভারতের হাতে ছিল যুদ্ধবন্দী আর পাকিস্তানের হাতে বাংলাদেশের স্বীকৃতি। ভারতের পক্ষে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন আর পাকিস্তানের পক্ষে চিন। ভারত তার দাবার গুটিগুলো নিজের বর্ম হিসাবে ব্যবহার করেছে, বাংলাদেশের জন্য ব্যবহার করেনি। আপনি বর্তমান কসোভোর অবস্থা দেখে বুঝতে পারবেন দেশ স্বাধীন করা থেকে স্বীকৃতি লাভ করা কতটা শক্ত হতে পারে।
আদালতের রায় অমান্য করার সাহস ভারতের একার ছিল না, এক্ষেত্রে ভারতের “দাদা” সোভিয়েত ইউনিয়ন কি বক্তব্য দিয়েছে সেটাই দেখার। ভারতের একার সাহসে বা ক্ষমতায় ১৯৭১ এর যুদ্ধ লড়া সম্ভব ছিল না, হলে জাতিসংঘের একাধিক সোভিয়েত ভেটোর দরকার পড়ত না।
@দিগন্ত,
আপনি যা বলেছেন তা কাগজে কলমে সত্য আমি জানি। কেস শুরু হয়েছে সিমলা চুক্তির পরে। তবে এটা হল কাগজের কথা।
অফ দ্য রেকর্ড আমাদের দিকে কেউ কেউ ধারনা করেন এই চুক্তির আগেই পাকিস্তানের সাথে ভারতের একটা সমঝোতা হয়ে যায় কাশ্মীরের ব্যাপারে পাকিস্তান একটা বড় ছাড় দেবে বলে, চুক্তিটা হয় কাগজে কলমের। তবে মানতেই হবে এটা অনেকটা শোনা কথা, শক্ত কোন ভিত্তি নেই। ১৯৩ জন যুদ্ধপরাধীদের ব্যাপারে আমাদের খেদ তো থেকেই যায়। চূড়ান্ত খেদ তো আপনি বিপ্লব দুজনেই স্বীকার করেছেন, ভারত দাবার ঘুটি নিজ স্বার্থে ব্যাবহার করেছে। আর পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার সাথে যুদ্ধপরাধীদের সম্পর্ক নেই মনে হয়। যদিও জানি যে স্বাধীনতা ঘোষনা করে দেশ স্বাধীন করা শুনতে যতটা সোজা মনে হয় মোটেও অতটা সোজা নয়। নিজেরা যত যাই যুদ্ধ করি না করি আন্তর্জাতিক অংগনে ভাল বন্ধু না পাওয়া গেলে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। দুটোরই দরকার আছে।
এই ১৯৩ জন যুদ্ধপরাধীদের ইস্যুটা এখন আবার মাঝে মাঝে নুতন করে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। যারা আমাদের দেশের যুদ্ধপরাধীদের বিচার দাবীর বিরোধীতা করে তাদের একটা যুক্তি এই ইস্যু। তাদের বক্তব্য তখন আসল যুদ্ধপরাধীদের বিচার করতে পারনি, ভারতের ভায়া পাকিস্তানে দিব্ব্যি ফেরত পাঠিয়েছিলে কেন? তাদের বিচার করতে না পেরে এত বছর পর দেশীয়দের বিচার কেন করবে?
ভারতের যুদ্ধের সময় ব্যাক সোভিয়েত ছিল এটা সবাই জানে। তবে যুদ্ধপরাধীদের ব্যাপারে সোভিয়েতের কোন ভূমিকা ছিল বলে শুনিনি।
ব্লগে অন্তত এই ব্যপারগুলো ভালো লাগে। একএকজন এক এক দিক থেকে নতুন নতুন ভাবে সব কিছুকে তুলে ধরেন।এতে আর কিছু না হোক অনেক কিছু জানা যায় আর চিন্তা করার পরিধি বাড়ে।
@আদিল মাহমুদ
আমি বলব আপনি আরো কিছু লিখুন,ব্যপারটা তাহলে আরো স্পষ্ট হবে। ব্যপারটা সত্যি যে আমাদেরকে আমাদের প্রাপ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বিপ্লব ভাই নিজেই লিখেছেন যে জেনারেল আরোরার উচিৎ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিনিধির কাছে তাদের সমর্পন করা। সেখানটায় অবশ্যই আমরা বঞ্চিত। নতুন প্রজন্মের কেউ যদি জিজ্ঞেস করে যে দলিলে বাঙ্গালী যোদ্ধাদের পক্ষের সই কই? তখন আমাদের জবাব দেয়ার কি কিছু থাকবে?
@ফরিদ মামা
তবে বিপ্লব ভাইয়ের কথা ধরে বলতে চাই যে এ যুদ্ধ যত তাড়াতাড়ি শেষ করা যেত,সেটা ভারতীয় সরকারের কাছে তত বেশি লাভ। ভারত সরকার অবশ্যই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের ঘাড় থেকে বোঝা নামাতে চাইবেই।
আর আত্মসমর্পন অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে হোসেন তওফিক ইমাম এর বই
“বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১” বই থেকে কিছু অংশ এখানে তুলে দিচ্ছি।
তাহলে হয়তো বলা যায় খন্দকার স্যার জেনারেল আরোরাকে সম্মান বা অনার করেই হয়তো স্বাক্ষর করতে দিয়েছিলেন।
@তানভী,
আপনার প্রশ্নের জবাবে জানাচ্ছি; আমি কোনদিন দাবী করিনি যে ভারতীয়রা কোনরকম অন্যায় করেনি বা যা করেছে তার সব ১০০% সঠিক। ফরিদ ভাই সই এর ব্যাপার তুলে ধরার পর আর ও বিষয়ে লিখিনি। এটা উনি ওনার প্রথম কমেন্টে ধরেননি তাই আমিও কিছু লিখিনি। আমি শুধু ওনার বলা আগের পয়েন্টগুলিতে আমার মতামত জানিয়েছি।
এটা অবশ্যই ঠিক যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কারো সই থাকা উচিত ছিল। এটা হয়তবা করা যেত। তবে তার মানেই আমাদের স্বাধীনতার লড়াই পুরোপুরি ছিনতাই হয়ে গেছে তা আমি মনে করি না। তবে আরো খারাপ কিছুও হতে পারত। বাংলাদেশের নাম বিলকুল বাদ পড়ে যেতে পারত। ঐ নাম দলিলে ঢোকাতেও ভারতকে বেশ দরাদরি করতে হয়েছে আগেই বলেছি, আপনিও নিশ্চয়ই জানেন। এ যুগে পরাজয় বরন বা আত্মসমর্পন করা মানেই প্রাচীনকালের মত পুরোপুরি দাসখত লিখে দেওয়া নয়। প্রফেশনাল আর্মি যখন প্রফেশনাল আর্মির কাছে আত্মসমর্প্ন করে তখন আত্মসমর্পনকারীরও কিছু অনুরোধ মানা হয়। এটা ভারতীয় বিপ্লব বলেছে বলে নয়।
ওভাবে চিন্তা করলে আরো অনেক কিছু চিন্তা করা যায়। সবচেয়ে ভাল হতে ইয়াহিয়া নিয়াজী বংগবন্ধুর কাছে আত্মসমর্পন করলে। পাকিস্তান যখন হেরেই গেছে তখন আর বংগবন্ধুকে ততক্ষনাত ঢাকায় উড়িয়ে আনতে ভারতীয়রা জোর করল না কেন? অন্তত কলকাতা থেকে অস্থায়ী সরকারের সদস্যদের তো আনানো যেত। কোন সন্দেহ নেই যে সম্ভাবনার বিচারে এগুলো করাই যেত এবং তাতে ভবিষ্যতে এ জাতীয় অনেক প্রশ্ন এড়ানো যেত।
তবে আমার মনে হয় ইতিহাসের এমন কোন বিষয় চিন্তা করতে গেলে সে সময়কার বাস্তবতাকে চিন্তা করতে হয়। আমরা আজ ৩৮ বছর পর যেভাবে ভাবছি সেসময়কার মানুষজন সেভাবে হয়ত ব্যাপারগুলি চিন্তা করেনি। তাই এসব প্রশ্ন সেসময় তেমনভাবে কারো মাথায় আসেনি। ভারতীয় সৈন্যরা এর পর ৩ মাস বাংলাদেশে ছিল, তাদের বাংলাদেশের মানুষ যথাযথ সম্মানই করেছে। তাদের সম্মানে গান পর্যন্ত বেধেছে (তার অধিকাংশই এখন হারিয়ে গেছে)। তখন কেউ এমন অভিযোগ করেনি যে ভারতীয়রা আমাদের স্বাধীনতার লড়াই ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। একইভাবে আজ অনেকে কূট প্রশ্ন তোলেন বংবন্ধু কেন ধরা দিতে গেলেন, কেন পালিয়ে গেলেন না? কেন আগেই স্বাধীনতা ঘোষনা করলেন না? কারন আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের বসে সময়কার বাস্তবতা বোঝা সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধের পুরো নমাস কোন মুক্তিযোদ্বার মনে এমন প্রশ্ন আসেনি। স্বাধীনতার লড়াই কি শুধু ফ্রেমে ছবি তুলে ছিনিয়ে নেওয়া যায়? ভারতীয়দের বাবার ক্ষমতা নেই স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে নেবার, তবে আমরা যদি সতর্ক না হই, তবে আমাদের নিজেদের মধ্য থেকেই অনেকে আছে এই ইতিহাস বিকৃত করার।
অল্প কথায়; ১৬ ই ডিসেম্বরের অনুষ্ঠান আরো ভালভাবে করা যেত, করা যায়নি নানান টেকনিক্যাল ডিফিকাল্টির কারনে। এ কে খোন্দকার সাহেব যেমন বলেছেন বলে আপনি কোট করেছেন। অমন বক্তব্য আমি বাংলাদেশের দিক থেকে আরো বেশ কয়েজনের দিক থেকে পেয়েছি বলেই আমার মত দিতে পেরেছি। ভারতের দাদাগিরি কি ছিল না? অবশ্যই ছিল। ১৬ ই ডিসেম্বর শুধু না, তার আগেও নানান ফ্রন্টেই আমাদের মুক্তিযোদ্বাদের সাথে তাদের মতান্তর হয়। আরো ন্যাক্কারজনক, ভারতীয়রা নির্বিঘ্নে পাকিস্তানীদের ফেলে যাওয়া বিপুল পরিমান অস্ত্রসম্ভার সীমান্তের ওপারে নিয়ে যায়। এতে কোন বিতর্ক নেই।
আরো দেখুন বেশ কিছু টেকনিল্যাল খুটিনাটি ব্যাপার আমরা জানিই না। পাকিস্তান যে ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা ঠুকেছিল যুদ্ববন্দীদের ফেরত দিতে তাই কি দিগন্ত বলার আগে আমরা জানতাম? আইনী জটিলতার দিকটা তো দেখেছেন। তবে আরোরা চাইলেই কিন্তু মুক্তিযোদ্বাদের হাতে পাকিস্তানীদের সমর্পন করতে পারতেন না। পাকিস্তানীদের দিক থেকে গোটা আত্মসমর্পন চুক্তিতে এই একটি বিষয়কেই প্রাধাণ্য দিয়ে চাওয়া হয়, তা হল জেনেভা কনভেনশনের আওতায় তাদের নিরাপত্তা। বাংলাদেশ যেহেতু তখন জেনেভা কনভেনশনের সিগনেনোটরি ছিল না তা বাংলাদেশের হেফাজতে তাদের দেওয়া যেত না। তবে দিগন্ত আইনী জটিলতার যে বাস্তব দিকটা দেখালো তারপরেও আমি মনে করি যে অন্তত বাংলাদেশের বিশেষভাবে উল্লেখিত ১৯৩ জন বন্দী পাক অফিসারের ব্যাপারে ভারত আরো কড়া মনোভাব দেখাতেই পারত।
ফরিদ ভাই,
আপনি যেহেতু এ বিষয়ে আর কিছু বলবেন না তাই আমিও আর তটু দ্যা পয়েন্ট কিছু বলব না।
তবে শুধু এইটুকুই বলব ইতিহাস বর্ণনা করতে গেলে বাংলাদেশী আদিল বা ভারতীয় বিপ্লব কি বলেছে এভাবে চিন্তা করা ঠিক নয়। সে হিসেবে কারো বক্তব্যই ঠিক নয়, আবার কারো বক্তব্যই বেঠিক নয়। পাকিস্তানীদের বক্তব্যও আমাদের শোনা উচিত। ব্যাপারটা দাঁড়াবে মুক্তিযুদ্ধের পাকিস্তানী ভার্ষন, ভারতীয় ভার্ষন, আর বাংলাদেশী ভার্ষন। এটা কোন যুক্তির কথা নয়।
@আদিল মাহমুদ,
আপনি িঠক বোলেছেন।
আমি জানি পাকিস্তান সরকার ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করেছিল যুদ্ধাপরাধিদের ফেরত নেবার জন্য। কোর্ট ভারতকে নির্দেশ দিত সব বন্দীদের পাকিস্তানের হাতে ফিরিয়ে দিতে, কারণ বাংলাদেশ তখনও জাতিসংঘের সদস্য নয়, তাই জেনেভা কনভেনশন সহ জাতিসংঘের সনদের আওতায় আসে না। জেনোসাইডের বিচার করার অধিকার বাংলাদেশের নেই – অন্তর্বর্তী রায়ে একথা বলা ছিল। এদের অপরাধ বিচার করার অধিকার পাকিস্তান সরকারের – এই ভিত্তিতে দাবী জানিয়ে পাকিস্তান সরকার মামলা করেছিল ভারতের বিরুদ্ধে।
“That such individuals, as are in the custody of lndia and are charged with alleged acts of genocide, should not be transferred to ‘Bangla Desh’ for trial till such time as Pakistan’s claim to exclusive jurisdiction and the lack of jurisdiction of any other Government or authority in this respect has been adjudged by the Court;””
কেসটা সম্পর্কে পড়তে পারেন। আমার জানা ভুল হতেই পারে।
ভারত সরকার প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে কোর্টের রায় বিপক্ষে যাবে বুঝে সবাইকেই হস্তান্তর করে।
@দিগন্ত,
ধণ্যবাদ তথ্যটা জানাবার জন্য, এটা আমার জানা ছিল না।
@সবাইকে, (বিশেষ করে যারা এই থ্রেডে মন্তব্য লিখেছেন)
দিগন্ত, লিঙ্কটার জন্য ধন্যবাদ। আমার মতো জানতে আগ্রহী অনেকের কাজে লাগবে।
কোর্টের রায় কি বিপক্ষেই যেতো? হয়তো, কিন্তু এটাওতো অস্বীকার করা যায় না যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তখন ভারত সরকারের বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। বরং যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে দেন-দরবার করে নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থে যতটা পারা যায় পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করাই ছিল ভারত সরকারের উদ্দেশ্য। ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বাংলাদেশের স্বার্থ গৌণ ছিল। এই কারণেই পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে সম্পদের ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারে নি বাংলাদেশ। পারে নি পাকিস্তানকে বাধ্য করতে আটকে পড়া বিহারী-পাকিস্তানীদের ফিরিয়ে নিতে।
চূড়ান্ত বিচারে ব্যার্থতা বাংলাদেশেরই, এবং তার নেতৃত্বের।
এই থ্রেডে ফরিদ আহমেদের শেষ মন্তব্যটা নিয়ে কিছু কথা বলতেই হচ্ছে। ফরিদ মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গে নিজেকে আবেগপ্রবণ মনে করে, কিন্তু তার এই মন্তব্যটা আমার কাছে মনে হয়েছে বস্তুনিষ্ঠ। আমি ফরিদের বক্তব্যের সাথে পুরোপুরি একমত।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অংশগ্রহন, অবদান ও ত্যাগকে সঠিক পেক্ষাপটে দেখতে হবে। ভারত সরকার তার নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়েছিল, এ ধারনা অবাস্তব। আবার অন্যদিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয়, বিশেষ করে পশ্চিম বাংলা, আসাম আর ত্রিপুরার জনগণের অকুন্ঠ সমর্থনের প্রতি যে ভারত সরকার শ্রদ্ধা জানিয়েছিল তাকেও অস্বীকার করা যায় না। আমাকে বলতেই হচ্ছে যে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ ভারতীয় জনগণের (ইচ্ছে করেই ভারতীয় সরকার বললাম না) এই সমর্থনের কোন স্বীকৃতি দেয় নি। একটা স্তম্ভ বা মিনার বা মেমোরিয়াল অন্তত ঢাকা শহরে নির্মাণ করা যেতো ভারতীয় জনগণের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের কৃতজ্ঞতার নিদর্শণ হিসেবে। না করতে পেরে আমরা নিজেদের হীনমন্যতারই পরিচয় দিচ্ছি।
এ এক ধরনের হীনমন্যতা, আর এক হীনমন্যতার স্বীকার হয়েছিলাম আমরা যুদ্ধের সময়েই। ভারতের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দেউলিয়াত্ব আর দূর্বলতার কারণেই আমাদের যুদ্ধের দায়দায়িত্ব এবং সেই সাথে কতৃত্বও ভারত সরকার আর তার সেনাবাহিনীর হাতে গিয়ে পড়ে। এই ইতিহাসের অনেক কিছুই এখনো আমরা জানি না। যেটুকু জেনেছি তা থেকে বুঝতে পারি, আমাদের আক্ষেপ করা উচিত, অভিযোগ নয়।
তাই ফরিদের সাথে সুর মিলিয়ে আমিও বলি –
কই, এর মধ্যে আবেগ কোথায়? আক্ষেপ আছে, কিন্তু সাথে আছে ইতিহাসও। আর আছে প্রচন্ড একটা সত্যিকথা।
@ইরতিশাদ, হ্যাঁ যেতই। কারণ, বাংলাদেশ জাতিসংঘের কোনো সনদের অংশীদার ছিল না। আবার যেহেতু জাতিসংঘের নিয়মানুসারে যেখানকার মাটিতে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে সেখানকার মানুষই একমাত্র সেই গণহত্যার বিচার চালাতে পারেন – তাই ভারতের পক্ষেও আইনানুগভাবে বিচার চালানো সম্ভব ছিল না। যেহেতু তখনকার বাংলাদেশ সরকার কোনো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জনপ্রতিনিধি নয় – তাই বাংলাদেশ সরকারেরও বিচার চালানোর অধিকার ছিল না।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হবার পরে (১৯৭৫) কেসটা চালানো যেত ও ওই ১৯৩ জনকে বিচারের জন্য দাবী জানিয়ে কোর্টে কেসও আনা যেত। কেন হয় নি সেটা আমার জানা নেই।
@দিগন্ত,
ধন্যবাদ আপনাকে আইনী দিকটা বুঝিয়ে বলার জন্য।
বুঝলাম, কিন্তু মানতে কষ্ট হচ্ছে। কসাইগুলো আমাদের জবাই করলো আর আমরা ‘স্বাধীনতা আগে না স্বীকৃতি-সনদ আগে’ (ডিম আগে না মুরগী আগে 😉 ) তর্কের মারপ্যাঁচে ফেঁসে গেলাম।
এক সুহৃদ এই থ্রেডে মন্তব্যগুলো পড়ার পর আমাকে ইমেইলে এই লিঙ্কটা পাঠালেন।
পড়ে মনে হলো, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যুদ্ধটাকে ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার’ নাম দিলেও আসলে এটাকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় যুদ্ধ ছাড়া আর কিছুই মনে করে না।
@দিগন্ত,
আমার মনে হচ্ছে এই ভাবে ভারতকে দোষ দিয়ে বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে নিজেদের ব্যার্থতা ঢাকতে চাইছে। বাংলাদেশ পাকিস্তান ত দূরের কথা নিজেদের দেশের রাজাকারদের পর্যন্ত বিচার করতে পারল না-তারা বাংলাদেশে মন্ত্রী পর্যন্ত হয়ে গেল। আর ১৯৩ জন পাকিস্তানি সৈনিকের জন্যে ভারতকে দোষ দিয়ে কি লাভ? ভারত চুক্তি আর আইন মেনে, তাদের পাকিস্তানে ফেরত দিয়েছে। বাংলাদেশত গণহত্যার সাথে যুক্ত লোকেদের নিজেদের মন্ত্রী পর্যন্ত বানিয়েছে। তারা কোন মুখে এই ১৯৩ জন যুদ্ধাপরাধির হিসাব চাইছে?
আগে নিজের ঘরটা পরিষ্কার করে অন্যের বারান্দায় নজর দিলেই ভাল হয়।
**********
এবার ভাল কথায় আসি। আমি কিন্ত মনে করি ভারত ইচ্ছা করলেই ১৯৩ জনকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দিতে পারত। আন্তর্জাতিক আইন দেখিয়ে ভারত শেখ সাহেবকে নিরস্ত করে। কিন্ত বাস্তব হচ্ছে সিমলা চুক্তিতে পাকিস্তানের ওপর কার্ড খেলতে ভারত পাকিস্তানের দিকে একটু সহানুভুতি দেখাচ্ছিল, যাতে পাকিস্তান কাষ্মীর এর এল ও সিকে সীমান্ত হিসাবে মেনে নেয়। চুক্তিতে পাকিস্তান সাইন করলেও বাস্তবে তারা এটা কোন দিনই মানে নি।
ভারতের সে আশাতে শেখ সাহেবকে টুপি পরিয়েছিল, তা পূর্ন হয় নি। এই জন্যে ওই ১৯৩ জনকে বাংলাদেশের হাতে তুলে না দিয়ে ভারত সেই সময় ঘোরতর অন্যায় করেছে। আন্তর্জাতিক আদালতকে ভারত বা কোন বৃহৎ শক্তি কবে মেনেছে? তাহলে ফারাক্কা হওয়ারই কথা না। বরং পরিস্কার করে বলা ভাল সিমলা চুক্তিতে নিজেদের স্বার্থের জন্যে ভারত ১৯৩ জনকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয় নি।
ভারতের সেই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ভুল ছিল বলেই মনে করি। মানবতাই ইতিহাসের শেষ গতি। আইন না।
@ইরতিশাদ,
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধণ্যবাদ। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জন্য প্রচন্ড আবেগের বিষয়, হতেই হবে, আমার মতে আমাদের জাতীয় জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন এ মুক্তিযুদ্ধ। সাম্প্রতিক ইতিহাসে আমেরিকা আর বাংলাদেশ ছাড়া মনে হয় ঘোষনা দিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করার আর কোন নজির নেই।
আপনার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সিরিজ দেখে আমার মনে হয়েছে আপনি শুধু আবেগের সাথে সাথে যুক্তি দিয়েও মুক্তিযুদ্ধকে চিন্তা করেন। সেই ভরষায় আপনার কাছে কিছু প্রশ্ন করছি, আশা করি জবাব দেবেন, দেরীতে হলেও অসুবিধে নেই।
প্রথমতঃ, আমিও মনে করি ভারত নিঃস্বার্থভাবে বাংলাদেশকে সাহায্য করেছে এটা ভাবা ভুল। আন্তর্জাতিক অংগন শিশুতোষ খেলা নয় যে এর সাথে আড়ি করলাম এর সাথে ভাব করলাম। স্বার্থ ছাড়া কেউই এক আংগুল তোলে না। ভারত তার চিরশত্রু পাকিস্তানকে ভেঙ্গে ফেলায় খুশী হবে এটা বুঝতে কোনরকম গবেষনা লাগে না। তবে এখানে আপনার কথার সাথে সামান্য দ্বি-মত করে বলতে হচ্ছে যে ভারত কিন্তু কুটনৈতিক লড়াই চালাতে বেশ ঝুকি নিয়েছিল। আমেরিকা চীন দুই পরাশক্তির সরাসরি চ্যালেনজ় তাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। রাশিয়া ছড়া কার্যত তাকে সরাসরি কেউই সমর্থন দিচ্ছিল না। রুশ সাহায্যও কিন্তু নিশ্চিত হয়েছিল সম্ভবত আগষ্ট মাসে ভারত-সোভিয়ের সামরিক চুক্তির পর। তার আগ পর্যন্ত মনে হয় ভারতকে একাই ঐ দুই বৃহত পরাশক্তির বিরুদ্ধে ঝুঝতে হয়েছে। এ বিষয়ে কি বলেন?
“ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বাংলাদেশের স্বার্থ গৌণ ছিল। এই কারণেই পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে সম্পদের ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারে নি বাংলাদেশ। পারে নি পাকিস্তানকে বাধ্য করতে আটকে পড়া বিহারী-পাকিস্তানীদের ফিরিয়ে নিতে।”
– সিমলা আলোচলনার ব্যাপারে আমি পরে কিছু লিখেছি। এ বিষয়ে আমি একমত, ভারত যুদ্ধবন্দীদের বিনিময়ে পাকিস্তানীদের থেকে কাশ্মীরে সুবিধে পেয়েছে, এটা বিপ্লবও স্বীকার করেছে।
তবে পাকিস্তানের আছে বাংলাদেশের ন্যায্য সম্পদের হিস্যা আদায় করায় ভারতের কি ভূমিকা থাকার কথা ছিল? আমি জানি যে যুদ্ধের পর পাকিস্তানের কাছে আমাদের ১৫০০ কোটি টাকার দাবী ছিল। ভারতের কি এ টাকা আদায় করে দেবার কোন কথা হয়েছিল?
আটকে পড়া বিহারীদের ফিরিয়ে নেবার ব্যাপারেও ভারতের ভূমিকা কি?
আমি জানতাম এ দুটি বিষয় বাংলাদেশ-পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় ব্যাপার। আমার চোখে এই ব্যার্থতাগুলি আমাদেরই।
” ভারতের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দেউলিয়াত্ব আর দূর্বলতার কারণেই আমাদের যুদ্ধের দায়দায়িত্ব এবং সেই সাথে কতৃত্বও ভারত সরকার আর তার সেনাবাহিনীর হাতে গিয়ে পড়ে।”
– আমার জানামতে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই আমরা ছিলাম পুরোপুরি ভারতের উপর নির্ভরশীল। ভারতীয়রা সরাসরি সীনে আসে ডিসেম্বরের ৩ তারিখে (এর আগে কিছু খন্ডযুদ্ধ ছাড়া)। ধরে নিচ্ছি যে ভারত সরাসরি সীনে না আসলেও আমরা পাকিস্তানীদের হারাতে পারতাম, হয়ত ৯ মাস নয়, আরো সময় লাগত। কিন্তু সেই কাল্পনিক সীনারিওতেও কি ভারতের অবদান অস্বীকার করা যেত? আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্রপাতি ট্রেনিং পেত কোথায়? কাজেই চূড়ান্তভাবে কৃতিত্ত্ব ভাগাভাগির প্রশ্ন আসলে কি জটিলতা এড়ানো যেত?
আপনার মতে কি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়াই গেরিলা কায়দায় আমাদের নিজেদেরই যুদ্ধ চালিয়ে নেওয়া উচিত ছিল, তাতে যদদিনই লেগে যেত লাগত? সেই হাইপোথিটিক্যাল পরিস্থিতিতে আপনার মতে কতদিন লাগতে পারত? আমি নিজে যেহেতু তখন জন্ম নেইনি সেহেতু আপনাদের কথাতেই ভরষা করতে হবে।
“আমাকে বলতেই হচ্ছে যে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ ভারতীয় জনগণের (ইচ্ছে করেই ভারতীয় সরকার বললাম না) এই সমর্থনের কোন স্বীকৃতি দেয় নি। একটা স্তম্ভ বা মিনার বা মেমোরিয়াল অন্তত ঢাকা শহরে নির্মাণ করা যেতো ভারতীয় জনগণের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের কৃতজ্ঞতার নিদর্শণ হিসেবে। না করতে পেরে আমরা নিজেদের হীনমন্যতারই পরিচয় দিচ্ছি।”
– আপনাকে অসংখ্য ধণ্যবাদ এই সরল কথাটা বলার জন্য। আপনার শেষ লাইনটার প্রায় অনুরুপ একটা লাইন আমিও বলেছিলাম দেখেই এত দীর্ঘ আলোচনার সূত্রপাত হল। অনেক কিছু জানা গেল।
@আদিল মাহমুদের উত্তরে –
এই আলোচনায় ফিরে আসার ইচ্ছে ছিল না, আপনি বিশেষ করে আমাকেই প্রশ্নগুলো করেছেন, তাই আবার আসতে হলো।
দ্বিমতটা কোথায় বুঝতে পারলাম না। আমিতো কোথায়ও বলি নি যে ভারত ঝুঁকি নেয় নি। বিষয়টা বোধ হয় ভারত ঝুঁকিটা কেন নিয়েছে তা’ নিয়ে। বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীনতা এনে দেয়ার জন্য না নিজের পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থে?
আপনি আবারও ভুল বুঝেছেন। হ’তে পারে আমার মন্তব্যটা খুব পরিষ্কার ছিল না। ভারতের কোন ভুমিকা থাকার কথা ছিল এটা আমি বলি নি। আমি বলতে চেয়েছি যে, যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে দেন-দরবারের সময় বাংলাদেশের কোন ভুমিকাই ছিল না। তাই এই দাবীগুলো ওঠানো যায় নি। আর একটা কথা বলেছিলাম, যেটা আপনি উদ্ধৃতিতে আনেন নি, “চূড়ান্ত বিচারে ব্যার্থতা বাংলাদেশেরই, এবং তার নেতৃত্বের”। আমি এ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করি নি যে, ভারতের এ টাকা আদায় করে দেবার কথা ছিল। আর এখানেই আমার মনে হয়, আপনি ভুল বুঝেছেন। আমার পয়েন্টটা ছিল পুরো বিপরীত, আমি বাংলাদেশী নেতৃত্বের ভারতের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতার সমালোচনা করছিলাম। বলেছিলাম, “আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দেউলিয়াত্ব আর দূর্বলতার কারণেই আমাদের যুদ্ধের দায়দায়িত্ব এবং সেই সাথে কতৃত্বও ভারত সরকার আর তার সেনাবাহিনীর হাতে গিয়ে পড়ে”।
বিশ্লেষণমূলক আলোচনায় ‘কি হ’লে কি হ’তে পারতো’ ধরনের বিতর্ক এড়িয়ে চলা উচিত। আমি অন্তত তাই করতে চেষ্টা করি। কারণ এই ধরনের হাইপোথেটিকাল সীনারিও নিয়ে অর্থপূর্ণ তর্ক হয় না। তর্কের কোন নিরসনও হয় না। তবে শুধু এটুকুই বলতে পারি, যুদ্ধ প্রলম্বিত হ’লে হয়তো বাংলাদেশী রাজনৈতিক নেতৃত্বেও চরিত্রগত পরিবর্তন আসতো। মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্রপাতি ট্রেনিং কোথায় পেত? আপনি নিশ্চয়ই বলতে চাচ্ছেন, ভারত যদি না দিত। এই প্রশ্নটাও হাইপোথেটিকাল, তাই উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো না। তবে কৌতুহল নিবারণের জন্য অন্যান্য দেশের গেরিলা যুদ্ধের ইতিহাস ঘেঁটে দেখতে পারেন। মুক্তমনায় চলমান “আমার চোখে একাত্তর” সিরিজের পরের কোন পর্বে এ প্রসঙ্গটা আমার আলোচনায় আনার ইচ্ছে আছে।
ভারতের অবদান অস্বীকার করার প্রশ্নটা আসছে কেন বুঝলাম না। কোন এক অজানা কারণে মনে হচ্ছে আপনি ধরেই নিয়েছেন, ভারতের অবদান অস্বীকার করতে পারলেই আমি খুশি হ’তাম। আপনার ধারণা মনে হয়, ভারতের সাথে কৃতিত্ব ভাগাভাগি করতে হচ্ছে বলে আমি খুবই মনক্ষুন্ন। মোটেই নয়। তবে কর্তৃত্বটা আমাদের হাতে থাকলে আমি গৌরাবান্বিত বোধ করতাম।
আমার মনে হয়, আপনার এই শেষ প্রশ্নের উত্তরটা আগেই দেয়া হয়ে গেছে। হাইপোথেটিকাল পরিস্থিতি নিয়ে যে কোন বিশ্লেষণও হাইপোথেটিকাল হ’তে বাধ্য। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন কিন্তু কতদিন আমাদের যুদ্ধ করতে হ’তো তা নয়, গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হ’লো যুদ্ধজয়ের পরিণতিতে আমরা জনগণের জন্য সার্বিক মুক্তি (রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক) অর্জন করতে পেরেছি কিনা। আর, পেরেছি কিনা একটা ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে।
আদিল, আপনাকে ধন্যবাদ, প্রশ্নগুলো তোলার জন্য। আপনি না তুললে এই বিষয়গুলো নিয়ে আমার বলার সুযোগ হতো না।
১৯৭১ এর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে ভালো কিছু গুছিয়ে লিখতে পারছি না। সাহায্য করুন । লেখা দিন। গুছিয়ে কিছু সার সংক্ষেপ লিখে সাহায্য করুন। ঠিক কি কি ধরনের কাজ করেছিল তার তালিকা দিন।
প্রায় সব কার্যক্রম সম্পর্কেই আমার কাছে বিবরন আছে, কিন্তু গুছিয়ে লিখতে পারছি না। তাই সংক্ষেপে কিছু লিখেদিন।
স্মৃতি থেকে লিখছি। সমর্থন করার মত কোন উতস জানা নেই…
“আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ২০০০ সৈনিক প্রান দিয়েছে।।”
হতে পারে ২০০০ সৈনিকই সঠিক। তবে স্বাধীনতার বছর খানেকের মধ্যে প্রকাশিত বাংলাদেশী কোন এক পত্রিকায় সংখ্যাটি অন্য রকম ছিল। ১০, ৭৮৭ অথবা ১০,৮৭৮।
ডিসেম্বর ৩ কি ৪, ১৯৭১ এর একটি হতাশা ব্যাঞ্জক খবর আমার ভাল মনে আছে। আমি তখন দমদম এলাকায়। প্রায় সাতশত ভারতীয় সেনার একটি দল নদীয়া সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার খানিক পরেই মারা যায়। পাক বাহিনী ট্রেঞ্চ কেটে লুকিয়েছিল। ট্রেঞ্চ যেই অতিক্রম করে তখনই পাক বাহিনী পেছন থেকে আক্রমণ করে। এই ঘটনারও কোন সত্যতা আমার কাছে নেই। আদিল মাহমুদ হয়তো একদিন বের করতে পারবেন।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
ধণ্যবাদ এই ২০০০ ভারতীয় প্রসংগটি তোলায়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনেক ব্যাপারের মত এটা নিয়েও কিছূটা ধোয়াশা আছে। আমি একটি অয়েব সাইটে এই সংখ্যা এমনকি ২০,০০০ ও দেখেছি। অফিসিয়াল ভারতীয় রিপোর্টে দেখা যায় যে ৭১ তাদের মোট নিহতের সংখ্যা ৩৮০০। এতে পূর্ব পশ্চীম রনাংগন ভাগ করা নেই। কিন্তু বেশ কিছু ভারতীয় অফিসারের ব্যাক্তিগত লেখা থেকে দেখেছি এ সংখ্যা ২০০০।
পূর্ব রনাংগনের প্ল্যানিং এর একজন নেপথ্যের গুরুত্ত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তি ছিলেম মেজর জেনারেল জ়েকব। এনাকে নিয়াজীর আত্মসমর্পনের টেবিলের পেছনে দেখা যায়, ছোট খাট একজন হাস্যমুখী অফিসার, মনে হচ্ছে যেন সুদুর দিগন্তের দিকে তাকিয়ে আছেন। ওনার লেখাতে আমি পেয়েছি এই সংখ্যা ১৫০০ এর মত।
আমার যা মনে হয় তা হল, পূর্ব ও পশ্চীম দুই রনাংগ্ন মিলিয়ে ভারতের মোট নিহত ৩৮০০, তার মধ্যে পূর্ব রনাংগনে ২০০০ এর মত।
বিপ্লব পাল হয়ত কিছুটা আলোকপাত করতে পারেন, উনিও কিছুদিন আগে এই সংখ্যা ২০০০ বলেছিলেন।
নদীয়া সীমান্তের এই ঘটনা আমার জানা নেই। তবে এরকম আরো কিছু ঘটনা আছে। আমার এক মুক্তিযোধা আত্মীয়ের কাছে শুনেছিলাম ভৈরব রেলষ্টেশনে দূঃখজনকভাবে একটা বিরাট ভারতীয় দল নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
এটি সত্য ঘটনা। তবে সংখ্যাটা ৭০০ না ২০০ হবে। আমি শুনেছিলাম মুক্তিযুদ্ধ অংশগ্রহনকারি একজন ভারতীয় সেনার মুখে। আমার বাড়ির পাশে ভাড়া ছিলেন কিছু দিন। আমার নিজের বাড়িও নদীয়াতে। ভৈরব নদী থেকে ৮ মাইল দূরে। ঘটনাটা আমি যদ্দুর শুনে ছিলাম-সেটা হচ্ছে এই রকম।
পাকিস্তানি বাহিনী কোন একটা স্কুল বাড়িতে লুকিয়ে আছে এরম একটা ফলস খবর ছড়াতে পাকিস্তানি ইন্টালিজেন্স সক্ষম হয়। মুক্তিবাহিনীর ছদ্মবেশে দুই বাঙালী যুবক শিকারপুরের ক্যাম্পে খবর দেয় যে ভৈরব পেড়িয়ে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ৫০ জন পাকিস্তানি সেনা ঘাপটি মেরে আছে। সেই মোতাবেক তাদের এম্বুশ প্ল্যান তৈরী হয়। এই দুই বাংলাদেশী যুবক, যারা আসলেই ছিল পাকিস্তানের চর, তারা পথ প্রদর্শন করতে থাকে। কারন সেটাই ছিল সর্বত্র রীতি। ভারতীয় সেনাদের একদম ট্রাপট পথে এনে ফেলে সেই দুই গুপ্ত চর। শেষ দলটি যখন নৌকায় উঠেছে-তখন চারিদিক থেকে ট্রেঞ্চ থেকে শুরু হয় ৩৬০ ডিগ্রি মেশিনগান ফায়ার। ৫ মিনিটের মধ্যে ২০০ জন সেনানী নিহত হয়। ঘটনাটি পাকিস্তান ইন্টালিজেন্সের সাফল্য, ভারতের ব্যার্থতা। তাই বহুল প্রচারিত না। তবে আমাদের শহরের সব লোক জানে।
আদিল মাহমুদ, আপনাকে বলা হয়ে ওঠেনি – এই লেখাগুলোর জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে কৃতজ্ঞ আপনার কাছে! যেসব ভারতীয় সেনা আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের সম্বন্ধে আমি বলতে গেলে কিছুই জানতাম না! সেটা প্রধাণত আমার ব্যক্তিগত অক্ষমতা, আর কিছুটা বোধহয় তাঁদের নিয়ে লেখালেখির অভাবের ওপরও বর্তায়। যদিও, যে আমরা আমাদের দেশের মুক্তিযোদ্ধাদেরই প্রাপ্য সম্মান দেই না, সেখানে ……
আরো লিখুন 🙂
@স্নিগ্ধা,
দেরীতে হলেও বলে ফেলার জন্য ধণ্যবাদ।
আমি নিজেও আসলে তেমন কিছু জানি না। সামান্য যা কিছু জানতে পারি তাই শেয়ার করি আর কি।
আমি ছোটবেলা থেকেই লক্ষ্য করি যে মুক্তিযুদ্বে ভারতের অবদান আমাদের দিকের লেখায় তেমনভাবে আসে না। অনেকে ভারতের অবদানই স্বীকার করতেও চান না, আবার কেউ কেউ অবদান স্বীকার করলেও তার মধ্যে নানান রকমের স্বার্থের বেড়াজাল দেখতে পান, মহত্ত্বের কিছু দেখেন না। এর কারন কি তা লিখতে গেলে একটা পুরো লেখাই লিখে ফেলতে হবে। তবে কারন যাই হোক, এটাই বাস্তব।
সম্মান দেখানো তো পরের ব্যাপার, আগে জানতে তো হবে। জানিই তো না। ঢাকা বিজয়ী সেনাপতি নাগরা তার ছবি দেখেছি এই ১৬ই ডিসেম্বরের লেখা লিখতে গিয়ে। অথচ তার যায়গায় আমাদের দেশী কেউ হলে মনে হয় শুধু এই কৃতিত্ত্বেই তিনি আমাদের ইতিহাসে বিশিষ্ট ভূমিকা নিতেন।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখতে গেলে এ ধরনের হীনমন্যতা কেন দেখাবো?
@আদিল মাহমুদ,
হীনমন্যাতা দেখানো ঠিক না এ ব্যাপারে আমি একমত। কিন্তু এই হীনমন্যাতার জন্য কী কারণ দায়ী সেটা কি ভেবে দেখেছেন কখনো? কখনো কী ভেবে দেখেছেন যে ভারতীয় উন্নাসিকতার কারণেই হয়তো আমাদের এই হীনমন্যতা। একজন বুক ফুলিয়ে অযথা গর্ব করবে আর তার প্রাপ্য মর্যাদা দিতে গিয়ে আমি তার হাতে আরো গর্বের অস্ত্র তুলে দেবো সেটা কি করে হয়?
ভারতীয় দৃষ্টিকোন থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে কীভাবে দেখা হয়? আমাদের প্রাপ্য মর্যাদাটুকু কী তারা দেয়। এই যে আমি, আপনি আমরা সবাই ওদের পরম বীর চক্রদের নাম জানি। তাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। ওরা কী আমাদের একজন বীরশ্রেষ্ঠর নামটুকুও জানে? ওরা কী জানে যে এই ভূখন্ডের মানুষ তাদের একটি দেশের জন্য কীভাবে জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল? কীভাবে কচি কচি ছেলেরা বুকের মধ্যে আগুন নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়েছিল? ওরা কী জানে যে মুক্তিযোদ্ধারা নয় মাস ধরে দূর্গের চারপাশের মাটি নরম করে না রাখলে তাদের পক্ষে ওই দূর্গ ধ্বংস করা সম্ভব ছিল না?
যুদ্ধ হল যৌথ বাহিনীর নামে। কোথায় হলো? বাংলাদেশে। আত্মসমর্পণ কোথায় হল? ঢাকায়। তাহলে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পক্ষের লোকজন কোথায়? আত্ম-সমর্পণের কোন ছবিতেইতো বাংলাদেশ পক্ষের কাউকে দেখি না আমি। মাথা উঁচু করা গর্বিত ভারতীয় জেনারেল আর লজ্জ্বায় অধোবদন পাকিস্তানী জেনারেল দিয়ে ভর্তি ফটোফ্রেম। বাংলাদেশের জায়গা সেখানে নেই। বাংলাদেশকে ঠেলে ফ্রেমের বাইরে ফেললো কারা? বলবেন যে, তখনো বাংলাদেশের লোকজন কলকাতায় পড়ে ছিল, তাই না? কোলকাতা থেকে ঢাকা আসতে কয়দিন লাগে? আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান একদিন পরে করলে কী ক্ষতি হতো? এতো তাড়াহুড়োর কী ছিল? বাংলাদেশকে তার ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অংশের গর্ব থেকে কারা বঞ্চিত করেছিল? এখন থেকে পঞ্চাশ বছর পরে কোন ইতিহাসবিদ যখন ১৬ ডিসেম্বরের ইতিহাস লিখবেন ওইসব ছবি দেখে তিনি কী কোন বাঙালির ভূমিকা খুঁজে পাবেন? পাবেন না। সোজা কথা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ১৯৭১ সালের ষোলই ডিসেম্বর ছিনতাই করে নিয়ে গেছে ভারতীয়রা। স্বাধীন হয়েছি আমরা ঠিকই, রক্ত দিয়েছি, যুদ্ধ করেছি, কিন্তু একাত্তরের যুদ্ধ বাইরের দুনিয়ার কাছে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধই হয়ে গেছে। আর এই প্রচারে পাকিস্তানের চেয়ে ভারতের অবদানই বেশি।
নব্বই হাজার যুদ্ধবন্দী আত্ম-সমর্পণ করল যৌথ বাহিনীর হাতে আর তাদেরকে ট্রেড করলো ভারতীয়রা। এটা কেমন সৌজন্যতা? এমনকি বাংলাদেশ পক্ষ থেকে ২০০ জন সামরিক লোককে যুদ্ধাপরাধী বলে লিস্ট দেয়া হয়েছিল। ভারতীয়রা তাদেরকেও দায়মুক্তি দিয়ে ছেড়ে দিয়েছিল।
অভিযোগনামা আরো বড় করা যায়, করলাম না। ভারতীয় বীরদের শ্রদ্ধা জানাতে আমার কোন আপত্তি নেই। যে নির্মোহতা দিয়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয়দের অবদানকে স্বীকার করছি, সেই একই নির্মোহতা দিয়ে আমাদের যুদ্ধে আমাদেরকে বঞ্চিত করার ক্ষেত্রে তাদের সীমাহীন সংকীর্ণতাকেও চিহ্নিত করা উচিত। নাহলে ইতিহাস একপেশেই হবে, নিরপেক্ষ হবে না।
এই লেখাটি যে দিকে যাচ্ছিল সেখানে আমার মন্তব্যটি হয়তো বেশ বেসুরো মনে হবে। সেজন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আমি। আমি আমার দৃষ্টিকোণটুকু বললাম। আপনারাও আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি বলে যেতে পারেন।
বীরের কোন দেশ নেই, জাতি নেই। যে কোন বীরই আমার কাছে পরম পূজোনীয়। তাই, পরম বীর চক্র এলবার্ট এক্কার প্রতি রইলো আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি।
@ফরিদ আহমেদ,
‘৭১ এর যুদ্ধকে বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার নামেই ভারতে পরিচিত।
এটাত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল। যেখানে ভারতের স্বার্থ অবশ্যই ছিল। কিন্ত নিজেদের যুদ্ধত ছিল না। সুতরাং ভারতের মিলিটারীর ইতিহাসে, শুধু যুদ্ধ নিয়েই আলোচনাটা বেশী হয়।
না জানে না। কারন কোন আবেগ না। একটা প্রাক্টিক্যাল ফ্যাক্ট। স্কুলে ভারতের যে ইতিহাস পড়ানো হয়, তা ১৯৪৭ সালেই শেষ। তাছারা বাকি থাকল, মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা উপন্যাস বা ভাল সিনেমা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম বা আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর শয়ে শয়ে সিনেমা বই আছে। বাংলাদেশে সেখানে হাতে গোনা কাজ হয়েছে মাত্র। নিজেদের দোষটাও একটু দেখুন ফরিদ ভাই। যুদ্ধটা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। ভারতের লোকে সেখানে একটা কারনেই উৎসাহ থাকতে পারে-সেটা হচ্ছে শিল্প। ভাল উপন্যাস বা সিনেমা। ‘মা’ উপন্যাস সামান্য হলেও এপার বাংলায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এগুলো সবে শুরু হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশই নিজেদের ইতিহাসকে লাশকাটা ঘরে ফেলে রেখেছিল এতদিন-সেখানে প্রতিবেশী সেই ইতিহাস জানবে, এটাকি বাস্তব সম্মত চিন্তা?
ইতিহাস আরেকটু ভাল করে পড়ার দরকার ছিল ফরিদ ভাই। আপনার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যেতেন। আমি যেটুকু জানি সেটুকু বলব।
(১) জেনারেল নিয়াজির পরিস্কার শর্ত ছিল তিনি বাংলাদেশের কারুর সাথে বা কাছে আত্মসমর্পন করবেন না। ভারতীয় ইন্টালিজেন্স সূত্রে আমি জানি, পাকিস্থানের আর্মির পক্ষ থেকেই অনুরোধ টা করা হয়েছিল । কারনটাও স্বাভাবিক। ভারত যেহেতু শক্তিশালী দেশ সেহেতু ভারতের কাছে আত্মসমর্পনের ছবি লজ্জাজনক নাও হতে পারে। কিন্ত মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্ম সমর্পনের ব্যাপারটা পাকিস্তানিরা ভিষন ভাবেই মেনে নিতে পারে নি।
(২) এখন প্রশ্ন উঠছে কেন এই দাবী ওঠার সময় ভারতীয়রা বিরোধিতা করে নি? এটার জন্যে মিলিটারি সাইকোলজি বুঝতে হবে। মিলিটারিতে একটা মিলিটারি যখন অন্য মিলিটারির কাছে আত্মসমর্পন করে, তখন অন্য মিলিটারি যদি পেশাদার হয়, তাহলে তারা আত্ম সমর্পনকারী মিলিটারির অনুরোধ যতটা সম্ভব রাখার চেষ্টা করে। এটাই নিয়ম। তাও আমি মনে করি জেনারেল আরোরা এই অনুরোধটা প্রত্যাখ্যান করলেই পারতেন।
এটাও ঠিক হল না। জেনারেল নিয়াজির যে শর্তে আত্ম সমর্পন করেছিলেন, সেটা হচ্ছে পাকিস্থানি সেনাদের সব দ্বায়িত্ব ভারতীয়দের নিতে হবে। তাদের বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না। সুতরাং চুক্তি মেনে ভারতকে এটা করতেই হত।
প্রশ্ন উঠছে তাহলে ভারতীয়রা আত্মসমর্পনের এই শর্ত কেন মানল? আইনত, নিয়াজি সহ পাকিস্তানের আত্ম সমর্পন করা উচিত ছিল মুক্তিবাহিনীর হাতে। সেখানে চুক্তি পত্রে জেনারেল নিয়াজি লিটার্যালি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে বাঁচতে চাইলেন। জেনারেল অরোরা কেন এই শর্ত মানলেন?
এখানে পরিস্কার ভাবে দুটো যুক্তি উঠে আসে
(১) পশ্চিম ফ্রন্টে চিন এবং আমেরিকা এগিয়ে আসছিল, তাই ভারত আর বেশীদিন যুদ্ধ চাইছিল না। প্রতিদিনের যুদ্ধে ২০০ কোটি টাকার খরচও সেকালের হাড় পিংলে ভারতীয় অর্থনীতির ওপর বেশ চাপের।
(২) ৯ ই ডিসেম্বর থেকেই পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পনের চেষ্টা চালানো হয়। প্রথম থেকেই তাদের একটাই দাবি ছিল। যেন মুক্তি যোদ্ধাদের হাতে তাদের বন্দী না হতে হয়। কারন সেটা মানেই মৃত্যু। আর সেই জন্যেই সেটা যদি হয়, তাহলে তারা আত্মসমর্পন না করে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।
সুতরাং মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আত্মসমর্পনের শর্ত চাপাতে গেলে যুদ্ধ আরো বেশ কিছুদিন চলত-পাকিস্তানিরা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে যুদ্ধ করত। কারন তারা জানত মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন আর মৃত্যু একই কথা। জনগণ তাদের ছিঁড়ে খাবে।
নিরেপেক্ষ ইতিহাস বলে কিছু হয় না। আমি ভারতীয় হিসাবে ভারতের দিক দিয়েই ব্যাপারটাকে ব্যাখ্যা করলাম। তবুও ভারতের ত্রুটিত ছিলই।
@ফরিদ আহমেদ,
ভারত আমাদের কৃতিত্ব ছিনতাই করে নিয়ে গেছে এই অভিযোগ পুরো সঠিক বলে আমি মনে করি না। আর ছিনতাই যদি বলে থাকেন তবে তাদের পাশাপাশি আমাদেরো কৃতিত্ত্ব অবশ্যই আছে। এ বিষয়ে পরে বলছি।
আমাদের স্বাধীনতার দলিলে নিয়াজী আত্মসমর্পন করেছে ভারত-বাংলাদেশের মিলিত বাহিনীর কাছে। শুধু ভারতের কাছে কিন্তু নয়। এই বাংলাদেশ শব্দটা ঢুকাতে বাধ্য করেছিলেন কিন্তু ভারতীয়রাই। নিয়াজী রাও ফরমান আলীরা এই চুক্তির ড্রাফট দেখে প্রথমেই অংশে আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতীয়তাই তাদের সে আবদার মানেনি। নয়ত দলিলে শুধু ভারত বসিয়ে রাখলে আমাদের কিছু করার ছিল? অন্তত দলিলে তারা আমাদের নাম জোর ঢুকিয়ে কৃতিত্ব অবশ্যই আমাদের দিয়েছে। আরো মনে রাখতে হবে যে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত খুব সম্ভবত ভারত/ভূটান বাদে আমাদের আর কোন দেশ স্বীকৃতিই দেয়নি। নিয়াজী মরে গেলেও ভারত বাদে শুধু বাংলাদেশের কাছে কোনদিন আত্মসমর্পন করত না। নিয়াজীকে নিরাপত্তার জন্যই তেজগাও এয়ারপোর্ট থেকে ভারতীয়রাই ঘিরে নিয়ে এসেছিল রেসকোর্সের ময়দানে। নিয়াজীর ষ্টাফ কারে করেই তার সাথে আরোরা এবং তার স্ত্রী আসেন। নিয়াজীসহ পাক অফিসাররা তাদের আশে পাশে নিঃসন্দেহে ইউনিফর্ম পরা ভারতীয় সৈনিকদের বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধাদের থেকে স্বস্থিদায়ক মনে করেছিল। কাজেই তার আশে পাশে বাংলাদেশের তেমন কাউকে দেখা যায়নি এ অভিযোগ সত্য হলেও কারন মনে হয় না সত্য বলে। আর নিয়াজী অরোরার পেছনে এ কে খোন্দকারের ছবিও কিন্তু দেখা যায়। সেসময় মনে হয় না কেউ এসব হিসেব করেছিল বলে, টেবিলের আশে পাশে ভারতীয় বাংলাদেশীর ইমব্যালেন্স যে পরে অনেক প্রশ্ন সৃষ্টি করতে পারে তা মনে হয় কোন পক্ষই তেমন করে ভাবেনি।
পাকিস্তানীরা নীতিগতভাবেই মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে কোথাও সরাসরি আত্মসমর্পন করেনি। তারা ঢাকাসহ সব যায়গাতেই আত্মসমর্পন করেছে ভারতীয় বাহিনীর কাছে। দেশের কোন যায়গাতেই তারা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পন করেনি। এই নীতি তাদের দৃষ্টিকোন থেকে যুক্তিযুক্তই ছিল। ভারতীয়দের কাছে আত্মসমপর্ন করলে জেনেভা কনভেনশনের সুবিধে পাওয়া যাবে, অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের (আন্তর্জাতিক অংগনে যারা তখনো কোন স্বীকৃত দেশের প্রতিনিধিই না) কাছে আত্মসমর্পন করলে প্রতিশোধের আশংকা ছিল পূর্নমাত্রায়। এর ইন্টারপ্রেশন এখন কেউ যদি করেন যে ভারতীয়রা ইচ্ছকৃতভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সরিয়ে রেখেছিল তা করতেই পারেন, তবে সেটা বাস্তবভিত্তিক হবে না, হবে আবেগপ্রসূত। পরাজিত পাক সেনাপতিদের আশে পাশে কেন শুধুই ভারতীয়দের দেখা যায় তার সরল ব্যাখ্যা এটাই।
১৬ই ডিসেম্বর ছিনতাই পর্বের আরেকটি মোক্ষম প্রমান হিসেবে ওসানীর অনুপস্থিতির কথা বলা হয় এবং এর মাঝে ভারতীয় ষড়যন্ত্র পাওয়া যায়। এই অভিযোগ আসলে সত্য নয়। নুরুজ্জামান মানিক এ বিষয়ে লিখেছেন। দোষ দিতে গেলে ভারতীয়দের না দুষিয়ে দোষ দিতে হবে আমাদের নিজেদের। ওসমানীর ইগো সমস্যা ছিল বলেই উনি যাননি। অন্য সেক্টর কমান্ডাররা ছিলেন সবাই ঢাকার বাইরে ছিলেন, রনাংগনে। এ কে খোন্দকারকে কলকাতা থেকে উড়িয়ে নিয়ে এসেছিল ভারতীয় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারই, বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে। তাকে ভারতীয়রা সেধে উড়িয়ে না আনলে আমাদের কি করার ছিল আমি জানি না। তবে ঢাকার বাইরে বা কলকাতায় থাকার চেয়েও বড় কারন ওটাই, পাকিস্তানীরা বাংলাদশের কারো সাথে সরাসরি আত্মসমর্পনের কোন আলোচনাতেই যেত না। পাকিস্তানীরা আত্মসমর্পন করেছিল বলেই তাদেরকে সব ধরনের শর্তে রাজী করানো যেত এমন নয়। হাইপোথিটিক্যাল হলেও আমি বলতে পারি যে আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে মুজিব নগর সরকারের তাজউদ্দিন, সৈয়দ নজরুলরা হাজির হলে তারা তাতেও রাজী হত না।
আসলে এসব প্রশ্ন মনে হয় না সেই সময়ে কারো মনে তেমন ভাবে এসেছিল বলে।
আর যুদ্ধ আরো একদিন চললে কি এমন ক্ষতি হত বলাটাও মনে হয় যুক্তির চেয়ে বেশী আবেগের। সরাসরি বলা চলে, যুদ্ধ একদিন চলা মানেও আরো বেশ কিছু প্রাণক্ষয়। এমনকি ১৬ই ডিসেম্বরের পরেও অনেক যায়গায় খন্ড খন্ড যুদ্ধ চলেছে। তবে আরো ভয়ের ব্যাপার ছিল, আন্তর্জাতিক অংগনে আমেরিকা-চীনের যুদ্ধবিরতীর জোর প্রচেষ্টা। একদিন সময়েও কিছু একটা হয়ে যেতে পারত, যুদ্ধবিরতী কোনমতে পাশ হবার মানেই ছিল তীরে এসে তরী ডোবা। আমি যা জেনেছি তাতে মনে হয়েছে যে একদিন আনুষ্ঠানিকতার স্বার্থে একদিন আত্মসমর্পন পেছানো অনেক রিস্কী হত।
হ্যা, ১৯৩ জন পাক যুদ্ধাপরাধী অফিসারের ব্যাপারে আমি পুরোপুরি একমত। ওখানে ভারত তার নিজের স্বার্থে পাকিস্তানের সাথে কোন একটা গোপন সমঝোতায় সম্ভবত গিয়েছিল। ভারতীয়রা স্বর্গ থেকে নেমে আসা দেবদূত তেমন দাবী আমি করছি না। আরো অভিযোগ অতি অবশ্যই করা যায় যে পাকিস্তানীদের ফেলে যাওয়া বিপুল পরিমান সমরাস্ত্র ভারতে পাচার করে নিয়ে যাওয়া।
কে কাকে বঞ্চিত করেছে বা বেশী কম করেছে সে প্রশ্নে আমি যাব না। তবে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ত্ব ভারতের থেকে অনেক বেশী আমাদের জন্য। তাই এর ইতিহাস সঠিকভাবে, নিরপেক্ষ ও নির্মোহভাবে লেখার দায়িত্বও আমাদেরই বেশী, ভারতীয়দের নয়। ভারতীয়রা আমাদের বীর শ্রেষ্ঠদের নাম না জানলে আমি খুব একটা অবাক হব না। একইভাবে অবাক হব না আমেরিকার লোকজন যদি ৯০ সালের গালফ ওয়ারে সাদ্দাম বাহিনীর সাথে যুদ্ধে নিহত কূয়েতী বীরদের নাম না জানে। কিন্তু কুয়েতীদের অবশ্যই আমেরিকানদের স্মরন করা উচিত। উদাহরনটা মনে হয় জুতসই হল না, আমেরিকার স্বার্থ জাতীয় বেশ কিছু কথা আসবে, তবে মূল কথা একই।
আর আমি এখানে বলার আগে, বাংলাদশের অন্য লোকজনের কথা বাদ দেন, মুক্তমনার কয়জন সদস্যই বা ভারতীয় পরম বীর চক্রধারীদের নাম জানতেন বলে মনে করেন? কাজেই আমরা তাদের বীরদের কথা জানি তারা জানে না এই অভিযোগ কি পুরোপুরি খাটে?
ভারতীয়রা অন্যায় করে থাকলে আমরা সেটাও লিখব, কিন্তু অন্যায় করেছে বলে তাদের যা অবদান না নিশ্চয়ই অস্বীকার করব না। ভারত সাধারনভাবে ৭১ ইস্যু নিয়ে খুব মাতামাতি করে বলে আমার মনে হয় না। বাংলার বাইরের অধিকাংশ ভারতীয়কে আমি দেখেছি ৭১ সম্পর্কে খুব বেশী কিছু জানে না বলে। মাদ্রাজের এক ছেলে একবার আমি বাংলাদেশের বলে জিজ্ঞাসা করেছিল ৭১ পর্যন্ত তো তোমরা ভারতের অংশ ছিলে, তারপর স্বাধীন হলে? আমি সাধারনভাবে তাদের মেন্টালিটি দেখেছি অনেকটা পাষ্ট ইজ পাষ্ট। ও নিয়ে এখন এত মাতামাতি করার কি আছে? আমার অফিসের কলিগদের দেখেছি অরোরার নাম জানে না। গত বছর একজনকে খবর দিয়েছিলাম মানেকশ মারা গেছেন, সে অবাক হয়ে বলল সে আবার কে?
তবে ভারতীয়দের অবদান আমাদের দিক থেকে কেন তেমন করে লেখা হয় না তার কারন আমার মতে আপনি যেগুলি বললেন সেগুলি প্রধান নয়। আমার মতে কারন আরেকটু ভিন্ন। আপনার বলা কারনগুলি অনেকটা কেকের ওপর আইসিং।
@ফরিদ আহমেদ,
সবচেয়ে বড় কথা বিপ্লব ভাই বলে দিয়েছেন যে ইতিহাস কখনো নিরপেক্ষ নয়। ইতিহাস সবসময় বিজয়ীদেরই ইতিহাস যেখানে বিজিতদের মুন্ডুপাত করা হয়। নিজামীকে যদি ইতিহাস লিখতে দেয়া হয় তবে সে নিজেকে মাসুম বাচ্চা হিসাবেই তুলে ধরবে, যা হচ্ছে উইকিতে। তাহলে আপনি ভারতের দোষ কিভাবে দেন? আমাদের ইতিহাসকে আমাদেরই দাড়া করাতে হবে। আমাদের তরুন প্রজন্মই নিজেদের ইতিহাস ভালো মত জানে না। ভারতীয়রা তো তাদের কৃতিত্ব নেবেই।
আদিল ভাই যেটা বলেছেন সেটা একবার চিন্তা করেন। এইতো দুদিন আগ পর্যন্ত আমিও ঐসব বীর ভারতীয় সেনাদের নামটা পর্যন্ত জানতাম না। আমি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের উপর বেশ কিছু বইই পড়েছি,তেমন কোথাও ঐসব বীর দের বীরত্ব বা নাম পাই নি। যা জানলাম সব আদিল ভাইয়ের লেখা থেকে। তাহলে আপনি দোষটা কাদের দেবেন?
নিজের ঘাড়ের দোষ অন্যদের দিয়ে লাভ কি?
@আদিল,
আমি মন্তব্য করার আগেই ধারনা করে রেখেছিলাম যে বিপ্লব আমার মন্তব্যের পালটা একটা কিছু লিখবে। কারণ মুক্তমনায় সেই একমাত্র ভোকাল ভারতীয়। কাজেই তেমন একটা বিস্মিত হইনি। কারণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সাথে না মেলার সম্ভাবনাই বেশি। কাজেই ওর বিষয়ে আমার তেমন কোন মাথাব্যথা নেই। ও নিজেও স্বীকার করেছে যে নিরপেক্ষ ইতিহাস বলে কিছু নেই। ও ভারতীয় হিসাবে ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই ব্যাখ্যা করেছে। কিন্তু আমি দারুণভাবে অবাক হয়েছি এটা দেখে যে, আদিল ভারতীয় না হবার পরেও তার দৃষ্টিভঙ্গি বিপ্লবের প্রায়ই কাছাকাছি।
কী কারণে যেন আদিলের বদ্ধমূল ধারনা যে ভারত না থাকলে একাত্তরে আমাদের কিছুই হত না। ভারত দয়া দাক্ষিণ্য করে যা আমাদের দিয়েছে তাতেই আমাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত। হ্যাঁ আমিও মানি। ভারতীয় সহযোগিতা না পেলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আরো প্রলম্বিত হতো, আরো রক্তক্ষয় হতো, আরো প্রাণক্ষয় হতো। কিন্তু এর মানে এই না যে আমাদের স্বাধীনতা ভারতের দয়া দাক্ষিণ্যে এসেছে। কিন্তু আদিলের ধারনা মনে হয় কিছুটা ভিন্ন। আত্ম সমর্পণের দলিলে বাংলাদেশ নামটা ভারতীয়রা ঢুকিয়ে আমাদের কৃতিত্বের ভাগ দিয়েছে তাতেই আদিল খুশি। বাংলাদেশ নাম না দিলেও বা আমরা কী করতাম। ভাবটা এরকম যে ভারতীয় কোন সাফল্যগাথায় আমাদেরকে দয়া করে ঠাঁই দেয়া হয়েছে। এ আর খোন্দকারকে হেলিকপ্টারে করে দয়া করে কোলকাতা থেকে উড়িয়ে এনেছে তাতেও আদিল খুশি। না আনলেই বা আমরা কী করতাম।
কিন্তু আদিল যেটা ভুলে যাচ্ছে সেটা হচ্ছে ত্রিদেশীয় এই যুদ্ধের মূল চরিত্র কিন্তু ছিল বাংলাদেশ। ভারত ছিল পার্শ্ব চরিত্র। বাংলাদেশ যখন যুদ্ধে যায় তখন ভারতের কথা ভেবে যুদ্ধে যায়নি। প্রায় নয় মাস তারা নিজেরাই যুদ্ধ করেছে। ভারত না এলে যদি আরো নয় বছর লাগতো তাহলে হয়তো তারা আরো নয় বছরই যুদ্ধে লিপ্ত থাকতো। অথচ শেষ বিচারে কী হলো। পার্শ্ব চরিত্র দখল করে নিল মঞ্চ, মূল চরিত্রকে পাশে ঠেলে দিয়ে।
পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্ম সমর্পণ করতে চাইবে সেতো জানা কথাই। কিন্তু চাইলেই তা দিতে হবে নাকি? তাহলে যৌথ বাহিনী করার মানে কী ছিল। শুধু ভারতীয় বাহিনী একা যুদ্ধে এলেইতো পারতো? বলতে পারতো তোমাদেরতো কোন স্বীকৃতিই নাই। তোমরা দূরে থাকো। মুক্তিবাহিনীর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ছিল না। ভাল কথা, মুক্তিবাহিনী কি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির আশায় বসে থেকে যুদ্ধ করেছে? নাকি বাংলাদেশ সরকার বসে থেকেছে যে আগে স্বীকৃতি পাই তারপরে যুদ্ধে যাবো?
আমার ভাবনা যে, আন্তর্জাতিকভাবে এরকম একটা অস্বীকৃত বাহিনীর সাথে ভারতীয় বাহিনী যৌথ বাহিনী করলো কীভাবে? যেদিন যৌথ বাহিনী করা হয়েছে সেদিনইতো ভারতের কাছে মুক্তিবাহিনী বৈধ হয়ে যাবার কথা। একটা অস্বীকৃত অবৈধ বাহিনীর সাথে নিশ্চয়ই একটা দেশ যৌথবাহিনী গঠন করেনি? কীভাবেই বা ধারনা করা হচ্ছে যে মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলে তারা জেনেভা কনভেনশনকে মানতো না। এরকম একটা বিশৃখল বাহিনীর সাথে রীতিমত চুক্তিপত্রে সই করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধে যাবে ভারতীয় বাহিনী এটা আমাকে বিশ্বাস করতে বলেন? ভারত যেদিন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে সেদিনই ভারতের কাছে বাংলাদেশ সরকার বৈধতা পেয়ে গেছে। যার জের দেখি আত্মস্মর্পণের দলিলে। পাকিস্তান বাহিনী পর্যন্ত মেনে নিয়েছিল বাংলাদেশের অস্তিত্ব।
এখন আসি মূল বিষয়ে। কেন তাহলে আত্মসমর্পণের দলিলে বাংলাদেশের উপস্থিতি নেই? নামের কথা বলছি না আমি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কেন কারো স্বাক্ষর রাখা হলো না সেখানে? বাংলাদেশের কেউ সই করলে কী পাকিস্তানীরা আত্মসমর্পণ করতো না? পাকিস্তানীদের সেই বার্গেইনিং ক্ষমতা কি আসলেই ছিল? আর থাকলেই বা কী? ভারত কী স্পষ্ট করে বলে দিতে পারতো না যে, দেখো বাপু আমি ওর সঙ্গে যুদ্ধে এসেছি, আমার বন্ধু সে। এখন তোমার বাড়ী থেকে ওকে চলে যাবার কথা বলা মানে আমাকেও বলা। ভারত কী সেটা বলেছে? বলেনি। বরং ভাব করেছে যে মুক্তিবাহিনী মানে গুন্ডা পান্ডা কিছু। মুক্তিবাহিনীর ভয় দেখিয়ে ব্লাকমেইল করে পাকিস্তান বাহিনীকে তার কাছে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছে। আর মুক্তিবাহিনীকেই সরিয়ে রেখেছে দৃশ্যপট থেকে। বলবেন যে যৌথবাহিনীর প্রধান হিসাবে জেনারেল অরোরা সই করে দিয়েছেন দুই পক্ষের হয়েই। আমি এতে একমত না। একটা দেশ নয়মাস ধরে গর্ভযাতনা সহ্য করছে, তিরিশ লাখ লোক প্রাণ দিয়ে ফেলেছে, আর আত্মসমর্পণের দলিলে তাদের কারো উপস্থিতি নেই এটা মেনে নেয়া যায় না কিছুতেই। যাকে নিয়ে এতো কিছু তাকে সরিয়ে রাখা হলো আসল সময়ে তাতে কোন দোষ নেই, আর কৃতিত্ব ছিনতাইয়ের কথা বললেই দোষ? একে খোন্দকারকে ডেকে এনে শুধু গ্রুপ ফটোতে দাঁড় করিয়ে দিলেই হলো? উনার ভূমিকাটা কী ছিল? সটান দাঁডিয়ে থেকে ছবি তোলা? উনার একটা সই নিলেও না হয় বোঝা যেত যে আমরা আছি দৃশ্যপটে। আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ আর আমাদের উপস্থিতিই নেই আত্মসমর্পণের দলিলে? এটা কি অন্যায় নয়?
আসুন এবার দেখি পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণে ভারতীয় বাহিনীর কতখানি ভূমিকা ছিল আর মুক্তিযোদ্ধাদের কতখানি ভূমিকা ছিল। আমরা বিনয়ী হয়ে, অন্যের অবদানকে বেশি বেশি স্বীকার করতে গিয়ে আমাদের নিজেদের বীরদেরকে কীভাবে অপমান করি তার একটা নজীর দেখি।
পনের ডিসেম্বর জেনারেল জ্যাকব নিয়াজীকে আত্মসমর্পণে রাজী করানোর জন্য যখন যাচ্ছিলেন তখনো ঢাকার আশে পাশে পাকিস্তান বাহিনী আর মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ চলছে। পাকিস্তানী একজন ব্রিগেডিয়ার এয়ারফিল্ডে তাকে স্বাগত জানান। নিয়াজীর কাছে জেনারেল জ্যাকবকে নিয়ে যাবার জন্য এসেছিলেন তিনি। যাবার পথে একদল মুক্তিযোদ্ধা তাদেরকে থামায়। নিয়াজীর কাছে যেতে বাধা দেয়। বলে যে, আমরা নিয়াজীর হেডকোয়ার্টার আক্রমণ করতে যাচ্ছি। জেনারেল জ্যাকব তাদেরকে বলেন, নিয়াজী আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে। আমাকে যেতে দাও। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা কিছুতেই তাকে যেতে দিতে রাজী হয় না। দীর্ঘ তর্ক বিতর্কের পর তিনি বলেন যে, দেখো তোমাদের সরকার আগামিকাল আসছে, আর নিয়াজী সারেন্ডার করতে চাচ্ছে। প্লিজ আমাকে যেতে দাও। অবশেষে মুক্তিযোদ্ধারা তাকে যেতে দেয়। তিনি গিয়ে নিয়াজীকে আত্মসমর্পণের দলিলের খসড়া পড়ে শোনান। কিন্তু নিয়াজী আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন জেনারেল জ্যাকব যেটা ভাবেন তা হচ্ছে, ঢাকায় তখন ভারতীয় সৈন্যের সংখ্যা মাত্র তিনহাজার। এর বিপরীতে পাকিস্তানী সৈন্যের সংখ্যা তিরিশ হাজার। এ দিয়ে কমপক্ষে আরো তিন সপ্তাহ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে পাকিস্তানীরা।
তখনই তিনি মুক্তিযোদ্ধা ট্রামকার্ড ব্যবহার করেন। নিয়াজীকে বলেন যে, দেখো তুমি যদি সারেন্ডার করো তবে আমি তোমার, তোমার পরিবারের, সংখ্যালঘুসহ সবার নিরাপত্তা দিতে নিশ্চিত করবো। তোমাকে সাথে মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করা হবে। আর যদি না করো আমি কোন দায়িত্ব নিতে পারবো না তোমার বা তোমার পরিবারের। যে সহিঙ্গসতা আমরা আটকে রেখেছিলাম সেটা শুরু করার আদেশ দেয়া ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় থাকবে না। আমি তোমাকে ভাবার জন্য তিরিশ মিনিট সময় দিচ্ছি।
হামিদুর রহমান কমিশন যখন নিয়াজীকে জিজ্ঞেস করেছিল যে কেন আপনি আত্মসমর্পণ করেছিলেন, তখন নিয়াজী বলেছিল যে, ‘জেনারেল জ্যাকব আমাকে ব্লাকমেইল করেছিল। আমাকে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দেবার হুমকি দিয়েছিল। তাহলে ওরা আমাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মেরে ফেলতো।‘
হায়রে অভাগা দেশ! হায়রে অভাগা দেশের অভাগা মুক্তিযোদ্ধারা!! সবাই তোমাদের ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলে দিয়ে গেছে আস্তাকুঁড়ে। যাদের ভয়ে নিয়াজী প্যান্ট খারাপ করে দৌঁড়ে গিয়ে ভারতীয়দের কোলে উঠলো। তাদেরকেই এখন আমরা আন্তর্জাতিকভাবে অস্বীকৃত বাহিনী বলে অপমান করি। এখন শুনতে হয় আত্মসমর্পণের দলিলে বাংলাদেশের নামটা ভারত রেখে আমাদেরকে কৃতার্থ করেছে।
এ বিষয়ে এটাই আমার চুড়ান্ত মন্তব্য। আদিল বা বিপ্লব এর পরে যাই লিখুক না কেন আমি আর কোন মন্তব্য করবো না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আমার কাছে অনেক বড় আবেগের বিষয়। এতে কে কী মনে করলো তাতে কিছু এসে যায় না আমার। অনেক কষ্টে আবেগ দমন করে এই মন্তব্যটা লিখেছি। এই বিষয় নিয়ে আবেগ দমন করে শুধু যুক্তিতর্ক দিয়ে লেখা আসলেই খুব কষ্টকর বিষয়।
আদিল মাহমুদ,
অরুন ক্ষেত্রপাল এর পর এলবার্ট এক্কা, পরম বীর চক্র।
আপনার কাছে বাকী দুইজন সম্বন্ধে জানাবার দাবি করছি।আশা করি রাখবেন।
@গীতা দাস,
বিস্তারিত তথ্য পেলে অবশ্যই জানাবো।
বাকী দুজনার একজন মেজর হুশিয়ার সিং, অরুন ক্ষেত্রপালের পরে দিন ১৭ই ডিসেম্বর বীরত্বের জন্য একই সেক্টরে পদক পান। ইনি ৯৮ সালে স্বাভাবিক মৃত্যুবরবন করেন।
আরেকজন ফাইটার পাইলট নির্মল জিত সিং শেখন কাশ্মীরের শ্রীনগরে ১৪ই ডিসেম্বরে শহীদ হন।
“ভারতীয়দের অবদান সম্পর্কে বাংলা উইকিতে মনে হয় না বেশি কিছু আছে।”
আমি আসলে এ কারনেই বেছে বেছে ভারতীয়দের কথা কিছু লেখার চেষ্টা করছি। শুধু উইকি নয়, সমগ্র মুক্তিযুদ্ব বিষয়ক লেখালেখিতেই ভারতীয়দের কথা আমরা তেমনভাবে আনতে চাই না।
আপনার অনুবাদ দারুন। ইংরেজিটার পূর্ন অনুবাদ করে(শিরোনামগুলো সহ) আপনি বাংলা উইকিতে যোগ করে দিতে পারেন। সাথে ঐ রেফারেন্সগুলাও
অনুবাদ করে লাগিয়ে দিন।
আগের লেখা যেগুলো উইকি থেকে লিখেছেন,সেগুলোর পূর্ন বঙ্গানুবাদ ও যুক্ত করে দিন।
ভারতীয়দের অবদান সম্পর্কে বাংলা উইকিতে মনে হয় না বেশি কিছু আছে।