ভারত এদিন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশকে।সেদিন লোকসভায় দাঁড়িয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে বিশাল বাধার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রাম এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করার পর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বক্তব্য শেষ না হতেই ভারতের সংসদ সদস্যদের হর্ষধ্বনি আর ‘জয় বাংলাদেশ’ ধ্বনিতে ফেটে পড়েন তারা। সেদিন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মিত্ররাষ্ট্র ভারতের জওয়ানদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘ভারতের সৈন্যবাহিনীর জওয়ানরা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশের মাটি থেকে হানাদার শত্রুদের নির্মূল করার জন্য আজ যুদ্ধ করে চলেছে।’ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ায় পাকিস্তান ভারতের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।ভারতে মার্কিন অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যায় । উত্তর ভিয়েতনামে যুদ্ধরত দ.চীন সাগরে অবস্থিত মার্কিন ৭ম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রার নির্দেশ দেয়া হয় । কিন্তু রনাঙ্গনে ততক্ষনে পাকিরা পলায়ন শুরু করেছে ।
মেজর জলিলের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারা তখন সাতক্ষীরা মুক্ত করে খুলনার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। তিনি লিখেছেন, “বেলা এগারোটার সময় ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’ মারফত ঘোষণা করা হলো যে ভারত বাংলাদেশকে সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। দীর্ঘ ন’মাস যাবত্ সাড়ে সাত কোটি বাঙালি অধীর আগ্রহে দিনটির জন্য প্রতীক্ষায় ছিল। সংবাদটা শুনে মন থেকে চিন্তা ও উত্তেজনা দূরীভূত হলো। হঠাত্ স্বীকৃতির এই ঘোষণা শুনে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির বিধ্বস্ত অন্তর গর্বে ফুল উঠল।’
শেরপুরের পানিহাতা, নালিতাবাড়ী, বাওরামারী আগেই মুক্ত হয়েছে ।ঝিনাইগাতীর আহম্মদ নগর পাক বাহিনীর ঘাটি আক্রমন করেন কোম্পানি কমান্ডার মোঃ রহমতুল্লাহ । তারা পৌঁছার আগেই পাকবাহিনী ঘাটি ছেড়ে চলে গেছে।ভোর বেলায় আহম্মদনগর ক্যাম্প রেড করে শেরপুর সদরে আসার পথে আল বদর কমান্ডার কামারুজ্জামান এর বাড়ী ঘেরাও করা হয় কিন্তু তাকে ধরা যায়নি ।তারা জানতে পারলেন সে আগের রাতে আহম্মদনগর ক্যাম্পের পাকবাহিনীদের সাথে জামালপুরে চলে গেছে । সকাল ৭ঘটিকায় শেরপুর শহরে পৌঁছান । কিছুক্ষনের মধ্যেই হেলিকপ্টার আসলো। পদার্পণ করলেন মিত্র বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেঃ জেঃ আরোরা। রহমতুল্লাহর বাহিনীসহ হাজার হাজার মুক্তি বাহিনী ও মুক্তি পাগল মানুষ তাকে অভ্যর্থনা জানাল। মুহুর্তেই আদেশ হলো আজ বিকাল ৫ ঘটিকায় জামালপুর আক্রমণ করতে হবে। জামালপুর এম্বোসের জন্য রহমতুল্লাহ তার বাহিনীকে নান্দিনায় ডিফেন্স দেওয়া হলো-যাতে হানাদার বাহিনী রেলওয়ে যুগে পালাতে না পারে।
পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও মুক্ত করে সেদিন বীরগঞ্জ ও খানসামার পাক অবস্থানের দিকে এগিয়ে চলছিল মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী। এই বাহিনীর অংশী ছিলেন গেরিলা কমান্ডার মাহবুব আলম, পরে যিনি লিখেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের এপিকধর্মী সত্যভাষ্য গেরিলা থেকে সম্মুখযুদ্ধে।
এদিকে, লাকসাম, আখাউড়া, চৌদ্দগ্রাম, হিলিতে মুক্তিবাহিনী দৃঢ় অবস্থান নেয়। পাকিস্তানি বাহিনী যুদ্ধে কুলিয়ে উঠতে না পেরে পিছু হটে বিকল্প অবস্থান নেয়। রাতে আখাউড়া ও সিলেটের শমসেরনগর যৌথবাহিনীর অধিকারে আসে।
পশ্চিম সেক্টরে ৪-৫ ডিসেম্বর টানা দুইদিন যৌথবাহিনীর আক্রমন প্রতিরোধ করার পর এদিন (৬ ডিসেম্বর )পাক ৯ ডিভিশন (জেনারেল আনসারি) যশো্র ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয় । যশো্র আক্রমনে মিত্রবাহিনী্র ব্রি ঘোরিয়াও আহত হন ।অবশ্য পাকিরা যশো্র ত্যাগ করলেও যৌথবাহিনী্ শহরে প্রবেশ করে ৭ তারিখে ।
এদিন যৌথবাহিনী পায়ে হেটে ঝিনাইদহ পৌছে এবং শহরটি মুক্ত করে ।
বিজয়ের মাসে ইতিহাস ভিত্তিক আপনার লেখাটির জন্য সাধুবাদ জানাই। যদিও আপনার লেখার সাথে দ্বিমত নেই, ভারতের আগে ভুটান বাংলাদেশ কে স্বিকৃতি দিয়েছিল, তৎকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও আকাশ বানীর খবরে জেনেছিলাম। যতদূর মনে পড়ে মংগোলিয়া স্বিকৃতিপ্রদান কারী দ্বিতীয় দেশ। তৎকালীন লিখিত ডকুমেণ্টের খোঁজে আছি। এসম্পর্কে আপনার কিছু জানা থাকলে আলোকপাত করবেন আশা করি। ঢাকার কাগজে ক’দিন আগে মুনতাসির মামুনের এক লেখায় দেখলাম ভারত প্রথম স্বিকৃতিদানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের কোন এক সরকারী ডকুমেন্টে বলা হচ্ছে। ভারত সরকার ও দেশবাসীর কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঋণ অপরিসীম, ও আমরা কৃতজ্ঞ চিত্তে তা স্মরণ করি। তবে ইতিহাসের প্রয়োজনে সরকারী ভাষ্যে নথিপত্র দেখে ঘটণা লেখা প্রয়োজন বলে মনে করি।
@আদিল মাহমুদ,
অপারেশন শিরোমনি ভারতসহ বিভিন্ন ডিফেন্স কলেজে পাঠ্য । আমি ভাবছি মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূ্র্ন অপারেশনগুলি নিয়ে ধারাবাহিক লিখব । শীঘ্রই শুরু করব ‘মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্স ‘ । মুক্তিযুদ্ধের উপর প্রচুর বই থাকলেও অনলাইনে তেমন রিসোর্স নেই অথ্চ এখন যুগটাই ভার্চুয়াল ।
@নুরুজ্জামান মানিক,
ধণ্যবাদ লেখাটা শেয়ার করার জন্য।
মানিক ভাই,
মেজর জেনারেল মঞ্জুরের সেই দুই হাতে দুই এসএলআর হাতে পাকিস্তানী ট্যাংক দখল করার পুরো ইতিহাস জানা আছে?
দেখছি আপনি তো আশে পাশেই ঘোরাঘুরি করছেন। ঘটনা মনে হয় খুলনা কি যশোরের।
@আদিল মাহমুদ,
দেখুনঃদুই হাতে দুই এসএলআর উঁচিয়ে ফায়ার করতে করতে এগিয়ে গেলেন বীরউত্তম এমএ মঞ্জুর