অনেক কসরত করে শেষমেষ একটা দাঁড় করালাম,কবিতা!কাউকে শোনাবার জন্য বসে আছি।রুমমেটও নেই সামনে।আমার কাব্যসুধা পান করে করে কিছুটা ত্যক্ত বিরক্ত সে,ইদানিং দেখছি কয়েক লাইন শুনেই হাই তোলা শুরু করে।
একটু পর রিডিং পার্টনার এসে হাজির!বাহ,নতুন শিকার পেয়ে আমি বেশ পুলকিত,আনন্দে চোখ চকচক করে উঠল!বললাম-আমার নতুন কাব্যখানা তোকেই প্রথম শোনাচ্ছি!
পড়ছি আর আড়চোখে তাকাচ্ছি,নাহ,বেশ মনোযোগী শ্রোতা!শেষ হতেই বলে উঠল-“দোস্ত জটিল লিখছিস তো!”বলেই দরজার দিকে টার্ন!আমি একটু বিরক্ত।তবু মরিয়া হয়ে বললাম-কোথায় জটিল লাগসে বল না,বুঝায়ে দেই!
“আরে না,বললাম ভাল লাগসে,ব্যাপক হইসে” ফিচলে হাসি হেসে কেটে পড়ল।
আমি কবিতার লাইন গুনতে আরম্ভ করলাম,কই ব্যাপক নাতো!মাত্র দশ কি বার লাইন।
সেদিন রাস্তায় এক পুরোনো বন্ধুর সাথে হঠাৎ দেখা।দিনকাল কেমন যাচ্ছে জিজ্ঞেস করতেই বলল-‘জটিল!’
এককানে দুল আর মাথার জটা(স্পাইক!)দেখে বুঝে নিলাম অবস্থা আসলেই জটিল!এই বন্ধুটি আবার হপ্তায় হপ্তায় নতুন নতুন বান্ধবী নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।মুখে যতটা সম্ভব দুঃখী দুঃখী ভাব এনে বললাম-জটিল কেন রে,তোর নতুন বান্ধবী ঝগড়া করল নাকি আবার?
-আরে না না,আমার লেটেস্ট জিএফ(গার্লফ্রেন্ড এর সংক্ষিপ্ত রূপ)তো অসসাম!
চেহারার জেল্লা দেখে টের পেলাম তার এবারকার জিএফ আসলেই অসসাম,মাইন্ডব্লোয়িং,সুপার্ব!!
ক’দিন ধরে খেয়াল করছি ছোটবোনটা কানে হেডফোন গুঁজে দিনরাত এফ.এম রেডিও শুনে।তো কৌতুহলবশত কানে লাগালাম হেডফোন,কোন চ্যানেলে টিউন করলাম কে জানে! ক’জন মিলে নারকীয় স্বরে চেঁচামেচি করছে!কিছুক্ষণ শুনে বুঝতে পারলাম তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু মেয়েরা কেন হেন করে,ছেলেরা কেন তেন করে!একসময় আরজে(কথাবন্ধু!)কি যেন প্রশ্ন করল,তার জবাব দিল এক আমন্ত্রিত বন্ধু(লিসনার্স ফ্রেন্ড!),তরুনী,ভীষন স্মার্ট!বলল-“অবভিয়াসলি,মেয়েরা ওটা করবে না কেন!কজ্ ছেলেরা যে ব্যাড থিংস ডু করে!” হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেল!ভাবলাম বাহ!বেশিক্ষণ চালাতে পারব না সেই ভয়ে ইংরেজিটাকে এড়িয়েই চলি,কিন্তু এভাবে তো বেশ ভাব নেয়া যায়!!তারপর সেই বাংলিশ ভাষার অত্যাচার শেষ হল এভাবে-ওক্কে গাইস,আজ শেষ করছি,বা-বাই,আলভিদা,সায়োনারা…আরো কি কি যেন বলল গারলটা,আমার কাছে তো হিব্রু হিব্রুই ঠেকেছে!মনে মনে বললাম-ফোট্,যত্তসব…
বোনটা আবার জানতে চায় “কেমন লেগেছে,ঝাক্কাস না?”
খুব মায়া লাগল,বেচারী,রাতদিন কানে তার গুঁজে রেখে মাথার তারটা ছিঁড়ে গেছে।কানের পর্দাও খুঁইয়েছে বোধ হয়!গলা চড়িয়ে বললাম-“এফ এম রেডিও তো জটিল রে!তুই প্রতিদিন শুনিস নাকি?” জবাব এল-“আবার জিগস্!”
এবারে ভীমড়ি খেলাম!
আমাদের নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতেও এই ডিজুস প্রজন্মের ভাল দেখা মিলবে! অবশ্য মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো সত্যিকার অর্থে তাদের মনমানসিকতা আধুনিক করতে পারেনি। সস্তা কিছু মুখরোচক শব্দ ভাষার মধ্যে আমদানি করে সাময়িক আনন্দ পাওয়া যায় কিন্তু তাতে যে মন সংস্কারমুক্ত হয় বলা যাবে না। তথাকথিত ডিজুস প্রজন্মও সামাজিক সংস্কারমুক্ত কোন প্রজন্ম নয়। বাংলিশ বলা বহুত ছেলে-মেয়ে দেখেছি, কথা বলেছি। আমাদের ইউনিভার্সি্টিতেও আছে। এরাই আবার নামাজ পড়ে, শবে বরাত পালন করে, রোযার দিনে প্রকাশ্যে পানাহার করলে তিরস্কার করে। বোরখা পরা মেয়েও দেখেছি যে চরম বাংলিশে কথা বলছে। সুতরাং এসবে কিছু যায় আসে না। বাংলিশ আপাতদৃষ্টিতে আধুনিকতার পরিচায়ক বলে মনে হতে পারে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি কোন সংস্কারমুক্ত মানসিকতার পরিচায়ক নয়।
@ আদিল মাহমুদ,
ভাই! বিদ্যাশে থাইক্যা দ্যাশের নাটক দ্যাহার টাইম পান কোথ্যাইক্যা ? ?:laugh: আমি তো দ্যাশের পেটের ভিতর থাইক্যাও নাটক দ্যাহার টাইম পাই না! টিভিই দেহিনা ৪-৫ মাস ধইরা! নাটক দ্যাহার ধৈর্য পান কোথ্যাইক্যা? 😀
@তৃতীয় নয়ন,
সহমত প্রত্যেকটা কথায়। এই ডিজুস ওয়ালারা ঝাড়ফুঁক এ পর্যন্ত বিশ্বাস করে!!আক্কেল গুড়ুম। 🙁 😐
@তৃতীয় নয়ন,
না রে ভাই, নাটক রেগুলার দেখি না, সময়ের যে খুব অভাব তা না, তবে মানসম্পন্ন জিনিস পাওয়া খুব কঠিন তাই। বেশীরভাগই কয়েকমিনিট দেখেই বাদ দিতে হয়। একসময় বাংলা দোকান থেকে ভাড়া করতে হত, এখন তাও লাগে না, অনলাইনেই বিনা মাগনা পাওয়া যায়।
বিদেশে মনে হয় যারা বাধাধরা সময়ের চাকরী করে তাদের সময়ের অত অভাব নেই, বিশেষ করে যারা আমার মত আনসোশান তাদের। জীবন অনেকটাই সহজ।
জোস হইসে !!!
জোশ বলে একটা শব্দ জানতাম -এটা বোধহয় তারই ডিজুসীয় রূপ!!
আমি আশ্চর্য যে এই বহুল-ব্যবহৃত শব্দটি একবারও আনোনি বলে! :laugh:
@আগন্তুক,
স্যরি ম্যান! নেক্সট টাইম এমন ভুল ডু করব না! :laugh:
@আগন্তুক,
এটা মনে হয় নুতন কোন শব্দ বা রূপ নয়, ওটা আমাদের মাঝে চলে আসছে সেই ৯/১০ পড়া সময় থেকে। তবে জোস না জোশ সেটা ডিপেন্ড করে বক্তার উপর। আমার অবজার্ভেশনে যাদের মাঝে পুরানো ঢাকা বা উত্তর বংগীয় একটু প্রভাব আছে তিনি বলবেন জোস, আর বাকীরা জোশ।
@আগন্তুক/নিবেদিতা,
ডি জুস বিষয়ে অনেকটা আমার মনের কথা বলার জন্য ধণ্যবাদ। কাছাকাছি প্রজন্মের কারো সক্রিয় সহায়তা ছাড়া সাহস করে সত্য কথা বলতে পারছিলাম না।
আমার কাছে পুরো ব্যাপারটাকেই অতিমাত্রায় কৃত্রিম আর আল্ট্রা স্মার্ট সাজার হাস্যকর চেষ্টা মনে হয়। কোন যুক্তিসংগত কারন ছাড়াই কেন যেন মনে হয় যে মোবাইল ফোন কোঃ গুলি এই অদ্ভুত কালচার উতপাদনে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।
দেশের নাটক দেখলে এখন মনে হয় মোবাইল ফোন হল জীবনে বেচে থাকার একমাত্র না হলেও একটা বড় উপাদান। নাটকের মনে হয় অর্ধেক সময় জুড়ে থাকে বিবিধ মোবাইল সংলাপ।
কোন ভাষাই খারাপ না, সময়ের সাথে কিছু নুতন পরিভাষাও তৈরী হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে কৃত্রিমতা ব্যাপারটা বেশ দৃষ্টিকটু লাগে।
অনেকদিন দেশের বাইরে তাই দেশের চলতি ভাষার সাম্প্রতিক ধারা সম্পর্কে অনেকটাই আউট অফ টাচ, যা ভরষা দেশের নাটকগুলি। মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী সাহেবের দলবল মনে হয় মোটামুটি যত্নের সাথে এ কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের নাটকের মজাই এখানে, মাঝে মাঝে মনেই হয় না নাটক বলে।
তবে নিবেদিতা যেসব ভাষার কারুকার্য দেখালেন সেগুলি আমাদের আমলের আগে থেকেও আছে। এখন নাকি ডিজুস প্রজন্ম নামে নুতন এক প্রজন্ম এসেছে তাদের হাবভাব পরিভাষা নাকি অনেকটা ভিন্ন।
@আদিল মাহমুদ,
এই ডিজুস প্রজন্ম আর তাদের চলনবলন কিন্তু গবেষণার বিষয় হিসেবে দারুন হতে পারে!
@নিবেদিতা,
যা শুনি, বিশেষ করে দেশের মোবাইল ফোনের এডগুলিতে কিছুটা দেখি তাতে তাই মনে হয়।
তবে কে জানে য়ামরা মনে হয় তাদের চোখে বুইড়া, তাই এদের হাভভাবে কেমন যেন একটা কৃত্রিম কৃত্রিম ভাব লাগে। খুব দৃষ্টিকটু লাগে কথায় কথায় হাই বাই এসব শুনতে। জেনারেশন গ্যাপ মনে হয় একেই বলে।
যা মনে হয় তাতে আপনি হয়ত এই প্রজন্মেই পড়েন, হয়ত মনে মনে হাসি দিবেন বুইড়া ব্যাটা বলে কি বলে!
@আদিল মাহমুদ,
আমার মনে হয় না এখানে জেনারেশন গ্যাপ বলে কিছু আছে।আমি যতদূর দেখেছি তাতে ডিজুস কেতা পুরোপুরিই কৃত্রিম।এতে কোনরকম প্রগতিশীলতা বা বদলে দেয়ার অঙ্গীকার মোটেই নেই।হিপ্পিদের যেমন একটা বৈপ্লবিক ব্যাপার ছিল এখানে তার কিছুই দেখার সৌভাগ্য হয়নি।এই হালফ্যাশনে অভ্যস্তদের মধ্যে যাদেরকে নিয়ে বসবাস তাদের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা মোবাইল ফোনের ছবি-গান আদানপ্রদানের বাইরে (বলছি না এটা খারাপ!) তেমন চোখে পড়েনি।তবে আমার দেখা আর কতটুকুই বা?তবে আমাদের বন্ধুদের মধ্যে খুব কম অংশই এই কেতার বাইরে পরে।তাই অভিজ্ঞতাটা নেহাৎ ফেলনাও নয়!
ব্যাপারটা যে কৃত্রিম তার একটা উদাহরণ দিই…আমার এক বন্ধু সব সময় ফ্যাশন নিয়ে ব্যস্ত এবং ‘জটিল,আবার জিগায়,কঠিন’ -এ জাতীয় শব্দের প্রয়োগ করে।বন্ধুটির বাড়ি টাঙ্গাইল এবং তার কথায় সে টান খুব স্পষ্ট ,যেটা স্বাভাবিক এবং লজ্জার কিছু নয়।সে দীর্ঘদিন ঢাকায় ছিল এবং কুট্টিদের সাথে আরো ঘনিষ্ঠ হবার জন্যই ‘আবার জিগায়’ বলা শুরু করে!এটা নিশ্চয়ই স্বাভাবিক নয়।আমি তো এলাকার বন্ধুদের সাথে কথা কওয়ার সময় সচেতন থাকি যেন মুখ থেকে তথাকথিত ‘শুদ্ধ’ ‘ভাষা’ বের না হয়ে যায়!
‘শুদ্ধ’ ভাষা বলে কিছু নেই।আঞ্চলিক উচ্চারণকে অত দোষের ধরার কারণ দেখি না।আর শুদ্ধ ভাষা না বলে বলা উচিত ‘চলতি’ বা ‘প্রমিত’ ভাষা।কোলকাতার অনেক লোকই আমাদের ‘করতাসি’,’যাইতাসি’ নিয়ে প্রশ্ন তোলে।তাদের অনেকেরই তিনটা ‘স’ সঠিকভাবে উচ্চারণের ক্ষমতা রাখেন না।
ভাষাবিদ আমি নই।ডিজুস কেতাকে আমি প্রমিত বাংলার ওপর হুমকিও মনে করি না।অনেকে নাটকে চলতি ভাষার ব্যবহারকে কৃত্রিম মনে করে।আসলে নাটকে-সিনেমায় যেকোন ভাষাই কৃত্রিম হতে পারে চরিত্রের মুখে না মানালে।ভাষার দুটো রূপ বলেই জানতাম।প্রমিত ও আঞ্চলিক।এই তৃতীয় ডিজুস বাবাজি কোত্থেকে এল তা কোন ভাষাবিদই বলতে পারবেন। :-))
@আদিল মাহমুদ,
এই প্রজন্মের হলেও এইসব কিম্ভূত বুলি আওড়াতে পারি না,বিরক্তিকর বলে মনে হয়।
কি জানি চুল পাকার আগে হয়ত মনটাই পেকে গেছে!(তাই বলে ইচড়ে পাকা ভাববেন না যেন 🙂 )
@নিবেদিতা,
আপনেগো কথাবার্তা “তুরুগ” হইতাসে, যারে সহজ বাংলায় কয় জমান্টিশ। চালায়া যান, কিসু কিসু অতি সিক্ষিত ক্ষেতের কাসে কেমন কেমন লাগবোই, কিসু টাফাল্লিং ক্যাচাল এর কথাবার্তা কইতে পারে, ওই নিয়া পেরেশান হয়েন না। কোনরকম হাংকি পাংকি চলব না।
@আদিল মাহমুদ,
ভাইজান চলতি ভাষা বলতে কিন্তু আসলে চলিত বা প্রমিত ভাষাকেই বোঝায়।কাজেই বাজার-চলতি লিখতে পারেন। :laugh:
সেই রকম, কট্ঠিন…….। বেদম মজা পাইলাম। লেখাটা সুকঠিন হইছে। চালিয়ে যান। থামবেন না।
@আতিক রাঢ়ী,
ধন্যবাদ ,ফাট্টাফাটি মন্তব্যের জন্য 😀
@নিবেদিতা, ব্যাপক মজা পাইলাম।
“এককানে দুল আর মাথার জটা(স্পাইক!)”- দিলেন তো আমাগো মার্কেটটা ডাউন কইরা।
বলল-”অবভিয়াসলি,মেয়েরা ওটা করবে না কেন!কজ্ ছেলেরা যে ব্যাড থিংস ডু করে!”- এসব কথা শুনলে ব্যাপক বিরক্ত হই।ইচ্ছে করে কইস্যা ভাতের ফেন খাওয়াই।তাও যদি ভুল-ভাল বাংলা বলে।
জবাব এল-”আবার জিগস্!”- বিরক্ত হতে হতে এখন নিজেই বলা আরম্ভ করেছি।
@রনি,
মার্কেট জমাবার নতুন ফন্দি ধরতে পারেন! 😉
যাক মজা পাইসেন তাইলে!শুনে জোস লাগতেসে! 🙂
@নিবেদিতা,
ফাটাফাটি -টা অবশ্য কোলকাতায় বেশি চলে,সেই সাথে ‘বিন্দাস।’ঝাক্কাসও বেশ পপুলার।বাংলাদেশে আন্ডারোয়ার্ল্ডের প্রকোপ ভারতের চেয়ে কম।তাই এখানে টাপোরি বুলির জায়গায়, ডিজুস ডায়ালগ। 😉