সুজন সন্ধ্যায়

 

ক্যাথেরীনা রোজারিও কেয়া

 

 

গল্পটা ওদের তিনজনকে নিয়ে রনো, লতা আর উজ্জ্বল সে দিনটা ছিল কাজের দিন অফিস থেকে ফিরে সবে চায়ের কাপ হাতে উজ্জ্বল বসেছে টিভির  সামনে, অমনি ফোনটা বেজে ঠলো উজ্জ্বলের স্ত্রী মৃদুলা ফোন ধরতেই অপর  প্রান্ত  থেকে উজ্জ্বলের সাথে কথা বলতে চাইলো মেয়েলী একটা ণ্ঠ। উজ্জল ফোন ধরতেই এক রা রিনিঝিনি  কন্ঠে লতা বলল- জানো তো তোমাদের শহরে ঘুরতে আসছি, মা কে নিয়ে সময়  রে ঘোরাবে তো মশাই?  উজ্জ্বলের ভেতরে তোলপাড় চলছে ওপাশের কথার তোড়ের সাথে তাল মিলিয়ে ওর সারা শরীরে রক্তের ছোটাছুটি নিজেকে সামলাতে ফোনের রিসিভার কান থেকে খানিক দূরে  রাখলো পরক্ষণেই মনে হোল মৃদুলা ধারে কাছেই আছে, তাড়াতাড়ি রিসিভারটা কানে চেপে বললো- বেশ তো নিলাম না হয় তোমার জন্যে একদিন ছুটি আচ্ছা রে ঘোরা যাবে লতা আবেগ মিশিয়ে বললো- কাজে কামাই দিচ্ছো আমার জন্যে?  উজ্জ্বল মুখে বললো -ছুটি পাওনা ছিল, মার যাবার আগে নিয়ে নিলাম এই আর কি মনে মনে বললো – তোমার জন্যে  নয় – ছুটি নিচ্ছি আমার নিজের জন্যে

 

কত বছর হবে ? সাত বছর? সাত বছর পর লতার কন্ঠ শুনলো অপ্রত্যাশিতভাবেই দিনক্ষ জেনে নিলো ওদের আসবার উজ্জ্বল ফোন নামিয়ে ফ্রিজ খুলে এক গ্লাস জল ঢাললো, আসলে সময় নিচ্ছে, এই মুহুর্তে মৃদুলার সামনে যেতে কেমন জেনো লাগছেআচ্ছা ওর চেহারায়  কি কিছু ফুটে উঠেছে ? ঠান্ডা জলে গলা ভিজ়িয়ে খুব নির্লিপ্ত মুখ রে টিভির সামনে এসে বসলো। মৃদুলা একবার ভুরুটা  খানিক তুলে র দিকে চাইলো –অর্থাৎ জানতে চাইছে- কি ব্যাপার? উজ্জ্বল ইচ্ছে করে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে  

 

রাতে খাবার টেবিলে উজ্জ্বল খুব হালকা ভাবেই বললো- লতা ওর মাকে নিয়ে আগামী সপ্তাহে আসছে শুক্রবার আমাদের এখানে আসবে বললো মৃদুলা জানতে চাইল রাতে রাধবো না দুপুরে? দুপুরে- জবাবটা শুনেই মৃদুলা মনে মনে হাসলো এই উজ্জকেই ছুটি  নিতে বললে কেমন বিরক্ত হয়  উজ্জ্বল বেশ চড়া গলায় বলে চলেছে লতার মা তাদের কেমন আত্মীয়, কত বছর ধরে চেনে, মৃদুলা  ডালের বাটিতে চামচ  দিয়ে নেড়ে দিল, নীচ থেকে ঘন ডালটা উঠে এলো, যেমন করে উজ্জ্বলের থিতিয়ে যাওয়া স্মৃতি উঠে  আসছে ধীরে ধীরে মৃদুলা জানে উজ্জলের কাছে লতার মা মুখ্য নয় লতা যে স্মৃতিতে উজ্জ্বলকে জড়িয়ে  আছে উজ্জ্বলের আনমনা চেহারা দেখে তা বেশ বোঝাই  যাচ্ছে

 

মৃদুলা প্রতিবাদহীন  মানুষ। মেনে নিয়েছে সংসারের  অনেক কিছুই প্রতিকারহীনভাবে। নিজেকে গুটিয়ে  নিতে নিতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই ওর কিছুই প্রকাশিত হয় না , না দুঃখ  না আনন্দ না ক্ষো তবুও  না দেখা লতাকে হিংসে হচ্ছে কেনো? 

 

আজ বিষ্যুদবার সকাল থেকেই মেঘলা চারদিক স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে  মৃদুলা বুঝতে পারে স্বামী  তার মনে মনে ফুলের এক একটা পাপড়ি ছিড়ছে আর বলছে কাল বৃষ্টি হবে? হবে না? ও আসবে  তো? আসবে না? মৃদুলা মনে মনে হেসেছে  – কাল কাল বৈশাখী হলেও কিছুই ঠেকে থাকবে না মাথার ভেতর ও সাজিয়ে নিয়েছে কি কি রান্না হবে কোনটার পর কোনটান্ধ্যে নামতেই কাজো শুরু  করেছে, কাল সকালে বেশী কিছু করতে চায় না উজ্জলের চাপা উত্তেজনা টের  পাচ্ছে মৃদুলা  তবু যে নির্লিপ্ততার আবর মৃদুলা ধারন করে  তাতে কৌতুহল চিড় ধরাতে  পারছে না

 

রাতে খাবারের পাঠ চুকতেই  হাপ ছেড়ে বাঁচলো যেন উজ্জ্বল একটা বই নিয়ে সটান বিছানায় শুয়ে পড়ল আজ আর মৃদুলার মুখোমুখি হতে ইচ্ছে করছে না

 

ওদিকে  মৃদুলা রেঁধে চলেছে, ঘড়িকাটা রাত দশ, এগারোটা করে বারোটায় যখ  পৌঁছোলো তন চুলোটা নিবিয়ে  রান্নাঘর থেকে  বেরিয়ে  এলো

 

পরের দিন বেলা দশটা বাজতেই  নিজেকে ফিটফাট  করে নিলো উজ্জ্বল সাড়ে বারোটায় কলিং বেলের আওয়াজ পাওয়া গেলোউজ্জ্বল দরজাটা  খুলেই অস্বাভাবিক গলায় বলল  এসো এসো লতা ভেতরে এসো 

 

অতি আধুনিক কাপড়ে  বেশ দর্শনীয় লতা – অন্তত এক নজরে তাই মনে হল পরিচয়  র্বের শেষে মৃদুলা নিজেকে সরিয়ে আনল খাবার গরম করি, কেমন ? বলে পাশের ঘরে লতা আর উজ্জ্বলের কন্ঠস্বরেরচ্ছ্বাস ক্রমাগত বাড়ছেই উজ্জলের দীর্ঘাঙ্গী মেয়েদের প্রতি আকর্ষন আগেও লক্ষ্য করেছে মৃদুলাওর এলবাম জুড়ে অপরিচিত মেয়েদের ছবি মৃদুলাকে  কন্ঠিত করেনি, বিষাদক্লিষ্টও নয় ওর বিয়ে হয়েছে বছর চারেক, সম্পর্কের চড়াই উতরাই পেরিয়ে  মৃদুলার এই নির্লিপ্ততা

 

অঘটনটা টলো তখনি যখন লতা ওর খোলাচুলে আঙ্গু  চালাতে চালাতে   বলল “আচ্ছা রনো নামের কাউকে চেনো নাকি ?  জানা শোনা  আছে?” ওর সাথে বছর দেড়েক আগে ইন্টারনেট এ পরিচয় আমার। চেনো নাকি উজ্জ্বল? তোমাদের এ শহরেই থাকে উজ্জ্বল ভুরু  কুঁচকে চিনি বলেই সন্দেহের কন্ঠে জিজ্ঞেস রলো ”ওকে কি শুধুই-মেলের মাধম্যেই চেন?” এই কন্ঠে সে শুধু  মৃদুলাকেই  প্রশ্ন করে বিয়ের পর থেকে কোন অবলা কথা শোনার জন্যেই  প্রশ্ন করেছে বার বার  আসলে মৃদুলার নির্লপ্ততার কার খুজতে চায় উজ্জ্বল ওর ধারণা বিবাহ পূর্ব কোন বেদনার  স্মৃতি বোধ করি মৃদুলাকে নির্লিপ্ত করেছে বিয়টা যে  মৃদুলাও বোঝে না, তা নয়তবু মুখ ফুটে বলা হয়নি, উজ্জ্বল তোমার চরিত্রের এই দিকটার কারনেই তোমার বিয়ে সব আকর্ষণ  আমি হারিয়ে  ফেলেছি এটা মৃদুলার  অভিমান নয়, অপমানের হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার কৌশল ও মেনে নিতে পারে না ওর স্বামী এখানি পলকা চরিত্রের  হবেজীবনের কাছে তেমন কোন দাবী  ছিল না মৃদুলার জীবনের  কৃতা তাকে ব্যথিত করে

 

খাবার গরম করে টেবিলে  সাজিয়ে ফেলেছে মৃদুলা উজ্জ্বল ব্যস্ত হয়ে পড়লো লতার খাবার তদারকিতে মৃদুলা  লক্ষ্য করছে মাঝে মাঝেই ওরা  গলা নামিয়ে কি যেন বলছে আর চাপা হাসিতে  মুখ ভরিয়ে রেখেছে  আর মাঝে মাঝে হিংসে চোরা দৃষ্টি দিচ্ছে লতা মৃদুলার দিকে, হয়ত ওর ভরা সংসার লতার কষ্ট বাড়াচ্ছে

 

খাওয়ার পর্ব সারতেই ফোন বেজে উঠলো, উজ্জ্বল ফোনটা বাড়িয়ে দিলো  লতার দিকে, বোধ হয় কলার আই ডি  তে নাম দেখেই লতার কন্ঠ আনন্দে টইটুম্বর “ কি হে কেমন শাস্তি দিলাম দেখ ত? তোমার বাড়ীর কাছাকাছি এসে গেছি এখন তো এসে দেখা করতেই  হবে আমার সঙ্গে- কি বল? ক্রমাগত কথা বলছে লতা মৃদুলা চট  করে উজ্জ্বলের মুখের পর  চোখ বুলিয়ে নিল – উজ্জ্বলের চেহারায় হিংসে ছায়া ফেলছে, সাথে বিরক্তিও ফোন নামিয়ে  লতা বলল- উফ! বাব্বা – বলে কি এখনি আসছি ভাবলাম  তোমাদের বাসা আমি কি করে আসতে বলি? তোমাদের  অনুমতি চাইতো? কোন কথাই শুনলো না  বললো কি নাকি দূ সম্পর্কের আত্মীয় তোমাদের?  ললো ঘন্টা দেড়েকের মধ্যেই  আসবে রনো,  শুনছো  উজ্জ্বল? উজ্জ্বল চোখ ফিরিয়ে  নিয়ে বলল শুনেছি  সাথে সাথে অস্পষ্ট কন্ঠ স্বরে  – রনো গত মাসে বিয়ে করেছে জানোতো  লতা?  চ্ছে  করে আঘাত করার জন্যে বলা কথাটা আর কেউ না বুঝুক মৃদুলা বুঝলো ঠিকই। লতা যেন আচমকা বোবা হয়ে গেল সামলে  নিয়ে কেটে কেটে ললো, বাহ! জানি নাতো? নতুন খবর বটেমৃদুলা সরে এসেছে ও ঘর থেকে, মেয়েটার  মুখের দিকে তাকিয়ে মায়াই হচ্ছে এখন।

 

মৃদুলার বেশ মনে আছে এই রনোকে কয়েক মাস আগে এ বাসায়  আসতে  বলেছিল  দূর সম্পর্কের আত্মীয়  আর এই  বিদেশে দূরের সম্পর্কের আপন ভেবে। নির্দিষ্ট দিনে রনো আসেনি, পরের দিন মৃদুলা কল করায় বলেছিল  – “এই রে এক্কেবারে ভুলে গিয়েছি।” সেই রনোই লতার ফোন পেয়ে ছুটে আসছে ব্যাপারটা মন্দ লাগছে না  মৃদুলার

 

 

কলিং বেল বাজতেই উজ্জ্বল উঠে দরজাটা  খুললো  রনো ঘরে ঢুকতেই উজ্জ্বঝুঁকে পড়ে কার্পেট থেকে অদৃশ্য কোন ময়লা তোলার চেষ্টা  করতে লাগল  মুখে মেকি একটা  হাসি ঝুলিয়ে উজ্জ্বল বলল আরে এসো এসো  যাক লতার জন্যে লেও এলে এ বাসায়  তা  বিবাহিত জীবন কেমন লাগছে? “ শেষের প্রশ্নটা লতাকে শুনিয়ে করা  রনো প্রশ্নটা করার সাথে সাথে  জবাব দিল, ও তো দেশে, আমি  তো এখনো ব্যাচে,  উত্তরটাও  লতাকে শোনাবার জন্যেই

 

লতা মেতে উঠলো রনোর সাথে কথায় আর উজ্জ্বল বিমর্ষ হয়ে টেলিভিশনের রিমোট  টেপাটেপিতে ব্যস্ত হয়ে থাকল  মৃদুলা ওদের  চায়ের ব্যবস্থা করতে করতে শুনলো,  উজ্জ্বল লছে  সূর্য ডুবতে প্রায় ঘন্টা দেড়েক বাকি আছে লতা, চলো বীচে  বেড়িয়ে আসি লতা নেচে উঠলো রনো সঙ্গ ছাড়তে চাইলো না বললো, হ্যা চল না উজ্জ্বলের চোখে আবার বিরক্তি, ভেবেছিল রনো বলবে না,  সম্ভব  না

 

জ্জ্বমৃদুলার দিকে চাইলো।র্থাৎ তৈরী হয়ে নাও এর বেশি কিছু বলার প্রয়োজন সে মনে করে না উজ্জ্বল ধরেই নিয়েছে মৃদুলা যাবেই মৃদুলা  তৈরী  হয়ে এলো। লতার মা এতক্ষণে লম্বা ঘুম দিয়ে  উঠেছেন হাত মুখে জল দিয়ে এসে দাড়ালেন বসার ঘরেজ্জ্বলের হাসি হাসি চেহারা আবার ফিরে এসেছে গাড়ির কাছে এসে উজ্জ্বল ললো রনো তুমি তোমার গাড়ীতে  করে এসো। লতা তুমি তো তোমারটা চালাচ্ছো। আমি আর নিলাম না বরং তোমার পাশে বসে ডিরেকশন দেই কি বল? রনো কিছু ললো না উজ্জ্বল যেন ক্রন্দরত বাচ্চার হাতে  দ্বৃত্ত ভাঙ্গা ললিপপের কাঠি গুজে দিতে দিতে বলল “ মৃদুলা  তোমার সাথে যাক রনো একা একা ড্রাইভ করতে খারাপ লাগবে না? লতার মাকে বললো” আপনিও যান না ওদের সঙ্গে, গল্প করতে করতে পৌঁছে যাবেন মৃদুলা মনে মনে হাসলো- কমাস আগে রনোকে যখন ওর বাসায় আসতে বলেছিল উজ্জ্বল ব্যাপারটা সহজ ভাবে নেয় নি কেন নেমন্তন্ন? কে কল করে ছিল? মৃদুলা না রনো? প্রায়ই  কথা হয়?  কত ক্ষণ কথা হয়েছিলো– ক প্রশ্ন উজ্জ্বলের আর আ সে কি ভীষণ উদার

 

মৃদুলার সব মিলিয়ে খারাপ লাগছে না, শুধু দুঃখ লাগছে লতার মায়ের জন্যে বেচারী কেমন যেন না বোঝার  ভান করে জুবুথুবু হয়ে বসে আছেন ওরা অল্প সময়েই পৌঁছে গেল গন্তব্যে

 

মৃদুলা বললো, আমি গাড়ীতে বসে থাকি তোমরা ঘুরে এসো লতার মাও একই কথা বললেন রনো বিড়বিড়  করে কি যেন বলে নেমে গেল  উজ্জ্বল কথাটা  শুনলো কিন্তু উত্তর দেবার প্রয়োজন মনে করলো না  ওরা  তিনজন বালির পর দিয়ে হেটে  যাচ্ছে। মরা রোদ্দুরে ওদের  ছায়া লম্বা থেকে আরো লম্বা হচ্ছে হাটতে হাটতে মিলিয়ে গেল ওরা  মৃদুলা আচ করেছে ওদের  দুজনেরই লতার ব্যপারে আকর্ষণ ছিল লতারও তাই, কিন্তু কারোই মুখ ফুটে বলা হয়নি আর না বলা এই সময়টাতে রনো আর  উজ্জ্বল গুছিয়ে নিয়েছে জীবন হঠা করে বুনো হাওয়ার মতো লতার উপস্থিতি ওদের নস্টালজিক করছে লতার মা এর কাছে শোনা, ক্লান্ত লতাও শেকড়  গাড়ার কথা ভাবছে তাই এ শহরে আসা পুরনো সম্পর্ক ঝাঁলিয়ে নিতে আসা, কিন্তু ওতো জানতো না যে  জল গড়িয়ে গেছে অনেক দূরে

 

ঝুপঝুপ করে সন্ধ্যে নেমে আসছে চারদিকে সন্ধ্যেরএই সময়টাতে কোন কার ছাড়াই মৃদুলার মনটা খারাপ থাকে কোথাও কোন কিছু ফেলে আসার মতো একটা চাপা কষ্ট ওকে ভোগায় ভেবে দেখেছে ওর কোন কষ্টই নেই যা ওকে আক্রান্ত কতে পারে- তবু বিষন্ন লাগেও এই কষ্টটা  নাম  দিয়েছে সন্ধ্যা রোগ এ সময়ে কথা বলতে ইচ্ছে করে না মন বিবাগী হয়  মৃদুলা  কথা না বলে গাড়ী থেকে নেমে এলো। এলোমেলো পায়ে এগিয়ে গেল সমুদ্রের  দিকে না কোথাও ওদের  তিনজনকে দেখা যাচ্ছে না গাড়ীর থেকে নামার সময়ে মৃদুলা দেখেছে লতার মা আবার ঘুমোচ্ছেন সমুদ্র পাড়ের নোনা হাওয়ায় মাদকতা আছে, নেশায় মাতা মদির হাওয়া মৃদুলা  ভাবলো তিনি না মাত্র একটা ঘুম দিয়ে এসেছেন? হঠা করে এই মাতৃসুলভ মহিলাকে খুব আপন নে হচ্ছে ওর  আজকে  তিনিই ওর সাথে কথা বলেছেন, খেয়েছে  কিনা জানতে চেয়েছেন, রান্না ভাল হয়েছে বলেছেন বলেছেন পরনের শাড়ীটা সুন্দর দীর্ঘশ্বাস চেপে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তিনি মৃদুলার সংসার দেখেছেন ভেবেছেন এমন একটা সংসার তার মেয়ের হতে পারতো। মৃদুলা ভাবছে লতার অনুপস্থিতি অথবা দুজন যুবকের সঙ্গে সময় কাটানো এনাকে  ণ্ঠিত করছে না কেন?  ভাবলো সব এড়াতে চাইছেন বুঝি তিনি জ পলায়তি স্ব জিবুতি- যে পালায় সে বাঁচে কজন পারে পালাতে?

 

বেশ খানিক ক্ষণ পর মরা ছায়ায় পাশাপাশি হেটে ওরা তিন জন গাড়ীর কাছে ফিরে এসেছে, ওদের শরীরের ছায়া ওদের দীর্ঘশ্বাসের চেয়েও দীর্ঘ মনে হয় চোখে কাতরতা

 

রনো গাড়ীর দরজা খুলেই ড্রাইভিং সীটে  বসতে বসতে বলল “আসি” ততক্ষণে লতার মা চলে এসে বসেছেন মেয়ের গাড়ীতে লতা ঝুঁকে পরে গলা নামিয়ে কিছু বলতেই রনো হাসতে হাসতে গাড়ীতে  স্টার্ট দিয়ে চলে গেল

 

জ্জ্বল আবার পথ দেখাতে লতার পাশে এসে বসলো পথে পাথর জমা স্তব্ধতাকে সাথী করে লতার গাড়ী উজ্জ্বলের বাসার সামনে এসে দাড়ালো লতা সরাসরি উজ্জ্বলের দিকে তাকিয়ে শুধু বা দিকে মাথাটা  হেলালো। যার অর্থ অনেক কিছুই হতে পারে- হতে পারে যাই? শে? আবার দেখা হবে তো? অন্ধকারেও ওর চোখ  জ্বজ্বল করছে ওর চোখে  জল নয় তো?

 

জ্জ্বল আর দাড়ালো না দরজা খুলে ঘরে ঢুকেই সরাসরি বাথরুমে চলে গেল

 

রাস্তার আলোগুলো খুব মরা লাগছে আজ রনোর খুব ব জ্বর থেকে উঠলে যেমন অবসাদ লাগে তেমন লাগছে ঘরে এসেই ঠান্ডা  জলে স্নান করল ও দেশে এখন কটা বাজে? স্ত্রী দেশে এখন কি করছে? কাঁপা কাঁপা হাতে টেলিফোনটা কাছে টেনে নিল বড্ড প্রয়জন ওর এখন লতাকে ভোলা, বড্ড  প্রয়োজন ওর এখন দেশে কথা বলা

 

হাতে মুখে জলের ঝাঁপটা  দিয়ে উজ্জ্বল বেরিয়ে এসেছে বাথরুম থেকে এসে দেখল সদর দরজাটা হা করে খোলা এক রাশ  বিরক্তি দলা পাকিয়ে উঠলো মৃদুলা আটকাতে ভুলে গেছে চার দিকে চেয়ে  দেখল কোথাও দেখা যাচ্ছে না মৃদুলাকে না শোবার ঘরে, না রান্না ঘর, না বসবার ঘরে

 

গেল কোথায় মেয়েটা? এমনি ঘোরের মধ্যে ছিল যে স্মৃতির পথে পেছনে হেটে  গিয়ে কিছুতেই মনে করতে পারছে না উজ্জ্বল যে মৃদুলা  গাড়ীতে ছিল কি না ওতো পেছনের  সীটে  তাকায়নি আচ্ছা মৃদুলা কি তার সাথে গাড়ী থেকে নেমেছিল? পেছনে পেছনে ঘরে ঢুকেছিল? নাকি লতার গাড়ীতেই ওঠে নি? এমন তো হবার কথা নয়, বিনা বাক্যে সে সবইতো করতে থাকে নাকি ও রনোর গাড়ীতেই রয়ে গেছে? পেছনের সীটে ঘুমিয়ে পড়েছিল? এখন চায়ের পেয়ালা হাতে রনোর সামনে বসে আছে?  রনোকে কল করতে গিয়ে ভাবলো – কি ভাবে রনো ? দায়িত্বহীন? লতা কেন খেয়াল করল নাবেচারী নিজেইতো ঘোরে ছিল কি করবে উজ্জ্বল এখন? লতাকে কল করলে লতা ভাববে অমনযোগী স্বামী, নাকি হিংসেয় জ্বলবে যে, ভুলো মন স্বামী বউকে মরিয়া হয়ে খুঁজছে?

 

হঠাজোরে একটা ধাক্কা মেরে কথাটা  মনে হল উজ্জলের – ওদের  অনুপস্থিতে মৃদুলা নেমে পড়েছিল রনোর গাড়ী থেকে ওদের অবজ্ঞার কারণে  লতার গাড়ীতে উঠেছে  কি না সেটা ওরা  তিনজন কেউই খেয়াল করেনি, কিন্তু লতার  মাতো দেখেছেন মৃদুলা  পাশে নেই, না এ গাড়ীতে, না ও গাড়ীতে কোন  প্রশ্ন করেনি কেন? কিছুই মিলছে না ওরা  পাঁচজন সুজন ছিল সন্ধ্যায়, দিও প্রত্যেকে প্রত্যেককে হিংসের চোখে দেখেছে,  কিন্তু এতটা কি সম্ভব?

 

 

অবসাদ উজ্জ্বলের সারা মন ছেয়ে দিয়েছে এত কিছুর পরও উজ্জ্বলের মন কোথায় যেন হারাচ্ছে। মনে হচ্ছে লতা বসে আছে ওর পাশে গাড়ীতে লতার চুল উড়ে এসেছেজ্জ্বলের চোখে মুখে ঠুকরে খাচ্ছে লতার ভুরু আর ঠোটের কোনা বিভিন্ন ভঙ্গিতে স্মৃতি রচনা করেই চলেছে  আচ্ছা লতা কি শীঘ্রি বিয়ে করবে? কাকে করবে?  অজানা এই মানুটাকে ভীষণ হিংসে হচ্ছে উজ্জ্বলের