৬ আগস্ট,বৃহঃস্পতিবার

কাল রাতে একটুও ঘুম হয়নি।শেষ রাতে উঠে পড়লাম।জানলার পাশে বসে অনেকটা সময় কাটিয়ে দিলাম।ভোরে কিছুক্ষণ বারান্দায় পায়চারি।মাথার মধ্যে যত্তসব আকাশ পাতাল চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে!
নটা বাজতেই রওনা দিলাম আমরা।আজ একটু আগেই,প্রায় আড়াই ঘন্টার পথ…মাধবকুন্ড!
আরো একটা মেঘলা দিন আশা করছিলাম ভোর থেকে…না,বেশ রোদ ঝলমলে সকাল!ভরা শ্রাবণ মাস কিন্তু আকাশে যেন শরতের মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে,স্তরে স্তরে সাজানো মেঘ।তার ওপারে কী আছে খুঁজে ফিরলাম অনেকক্ষণ ধরে…বিষন্নতা গ্রাস করে ফেলছে আমাকে…এক মুহূর্তের জন্য মনে হল সময় যেন থমকে গেছে…আসলে হারিয়ে গিয়েছিলাম!এর মধ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় পার হয়ে গেছে!উচু ভলিউমে গান বাজছে।হঠাৎ খেয়াল করলাম গাড়িটা বড় রাস্তা ছেড়ে আঁকাবাঁকা জংলী পথ ধরে যাচ্ছে।কে যেন বলে উঠল একটু পরেই কান পাতলে ঝরণার আওয়াজ শোনা যাবে।মনের বৃষ্টি থামিয়ে দিলাম…ফিসফিসিয়ে বলি,আমি আসছি…তোমার ওই ঝরণাতলার নির্জনে!

টিকেট কেটে ইটের পথে পা বাড়ালাম আমরা,বার জন পর্যটক!গরমে প্রায় সবাই কাহিল।সামনে পর্যটন মোটেল,ঠিক হল ওখানে খানিকটা জিরিয়ে নিব।রাস্তার দুপাশে পাতাবাহারের ঝোপ,কিছু ছবি তোলা হল।দূরে প্রায় শ’ফুট নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝরণার ধারা থেকে এক খাসিয়া রমনী তার কলস ভরে নিচ্ছে।তাকেও ক্যামেরাবন্দি করে নিলাম।
ঝরণার আওয়াজ এখন অনেক স্পষ্ট!এবারে চোখ চলে গেল সিঁড়ির দিকে…একটু এগিয়ে দেখি সেই প্রতীক্ষিত জলরাশি তীরবেগে ঝরে পড়ছে পাথরের বুকে…মন্ত্রমুগ্ধের মত সিঁড়ি ভেঙ্গে পৌঁছে গেছি।
উফ…ঝরণার গান…কী তীব্র,তবু কত প্রশান্ত!তার কাছে সব বিষাদ গীতি ক্ষীণ হয়ে যায়!
বিন্দু বিন্দু জলকণা জমছে চোখে মুখে…মনের মধ্যেও,বেশ টের পাচ্ছি!কয়েকটা পাথর টপকে আমরা কজন আরেকটু ঘনিষ্ট হয়ে দাঁড়ালাম ঝরণার সাথে।শ্যাওলায় পিচ্ছিল পাথরগুলো,একটু বেখেয়াল হলেই বিপদ, নিশ্চিত স্রোতের সাথে হারিয়ে যাওয়া।ভাবছি যন্ত্রনগরীর নির্মম ভীড়ের চেয়ে এই দুরন্ত ধারায় হারিয়ে যাওয়াটা ঢের ভাল হবে!
জলটা স্বচ্ছ নয়,তবু পা ডুবিয়ে বসে থাকতে বেশ লাগছে!
সাদা ছুড়ির ফলার মত ঝরণার জল এখন অনেক বেশি বেগে আছড়ে পড়ছে।রোদের উত্তাপ আর টের পাচ্ছি না,আধভেজা হয়ে গেছি!
বেলা আড়াইটা।ফেরার পালা।সিঁড়ি বেয়ে আবার পৌঁছে গেছি ইটের রাস্তায়…ধীরে ধীরে নির্ঝরের ধ্বনি ক্ষীণ হয়ে আসছে…কিন্তু যে সুর তুলে নিলাম মনে মনে তা তো বেজেই চলেছে অবিরাম!
গাড়ি ছুটল আবারো।আজ লাঞ্চ গাড়িতেই।বার্গার,কেক,কোল্ড ড্রিঙ্কস।এবারে একটু অন্যপথ ধরে যাচ্ছি আমরা,উদ্দেশ্য পথের সবুজে শহুরে চোখ আরেকটু জুড়িয়ে নেয়া!মনে মনে ঠিক করে ফেলেছি…আবার আসব।কালকের মেঘ আর আজকের ঝরণা আমাকে নিশ্চিত আবারো এখানে টেনে আনবে!
এর মধ্যে কালকের প্ল্যান ঠিক করা হল।শাহজালাল ভার্সিটি,সিলেট মেডিকেল, পর্যটন মো্টেল,সবচে পুরাতন চা বাগান মালনীছড়া ঘুরে দুপুরের ভোজ এক বন্ধুর আত্মীয়ের বাড়িতে।তারপর বিকেলে শাহজালাল মাজার হয়ে শহরের মণিপুরী পণ্যের দোকানগুলো চষে ফেলা!

খাওয়ার পর রাতে জম্পেশ আডডা হল।
ঘুমে চোখ ঢলে পড়ছে আজ!দস্যিপনা আর কত!তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম।