৬ আগস্ট,বৃহঃস্পতিবার
কাল রাতে একটুও ঘুম হয়নি।শেষ রাতে উঠে পড়লাম।জানলার পাশে বসে অনেকটা সময় কাটিয়ে দিলাম।ভোরে কিছুক্ষণ বারান্দায় পায়চারি।মাথার মধ্যে যত্তসব আকাশ পাতাল চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে!
নটা বাজতেই রওনা দিলাম আমরা।আজ একটু আগেই,প্রায় আড়াই ঘন্টার পথ…মাধবকুন্ড!
আরো একটা মেঘলা দিন আশা করছিলাম ভোর থেকে…না,বেশ রোদ ঝলমলে সকাল!ভরা শ্রাবণ মাস কিন্তু আকাশে যেন শরতের মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে,স্তরে স্তরে সাজানো মেঘ।তার ওপারে কী আছে খুঁজে ফিরলাম অনেকক্ষণ ধরে…বিষন্নতা গ্রাস করে ফেলছে আমাকে…এক মুহূর্তের জন্য মনে হল সময় যেন থমকে গেছে…আসলে হারিয়ে গিয়েছিলাম!এর মধ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় পার হয়ে গেছে!উচু ভলিউমে গান বাজছে।হঠাৎ খেয়াল করলাম গাড়িটা বড় রাস্তা ছেড়ে আঁকাবাঁকা জংলী পথ ধরে যাচ্ছে।কে যেন বলে উঠল একটু পরেই কান পাতলে ঝরণার আওয়াজ শোনা যাবে।মনের বৃষ্টি থামিয়ে দিলাম…ফিসফিসিয়ে বলি,আমি আসছি…তোমার ওই ঝরণাতলার নির্জনে!
টিকেট কেটে ইটের পথে পা বাড়ালাম আমরা,বার জন পর্যটক!গরমে প্রায় সবাই কাহিল।সামনে পর্যটন মোটেল,ঠিক হল ওখানে খানিকটা জিরিয়ে নিব।রাস্তার দুপাশে পাতাবাহারের ঝোপ,কিছু ছবি তোলা হল।দূরে প্রায় শ’ফুট নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝরণার ধারা থেকে এক খাসিয়া রমনী তার কলস ভরে নিচ্ছে।তাকেও ক্যামেরাবন্দি করে নিলাম।
ঝরণার আওয়াজ এখন অনেক স্পষ্ট!এবারে চোখ চলে গেল সিঁড়ির দিকে…একটু এগিয়ে দেখি সেই প্রতীক্ষিত জলরাশি তীরবেগে ঝরে পড়ছে পাথরের বুকে…মন্ত্রমুগ্ধের মত সিঁড়ি ভেঙ্গে পৌঁছে গেছি।
উফ…ঝরণার গান…কী তীব্র,তবু কত প্রশান্ত!তার কাছে সব বিষাদ গীতি ক্ষীণ হয়ে যায়!
বিন্দু বিন্দু জলকণা জমছে চোখে মুখে…মনের মধ্যেও,বেশ টের পাচ্ছি!কয়েকটা পাথর টপকে আমরা কজন আরেকটু ঘনিষ্ট হয়ে দাঁড়ালাম ঝরণার সাথে।শ্যাওলায় পিচ্ছিল পাথরগুলো,একটু বেখেয়াল হলেই বিপদ, নিশ্চিত স্রোতের সাথে হারিয়ে যাওয়া।ভাবছি যন্ত্রনগরীর নির্মম ভীড়ের চেয়ে এই দুরন্ত ধারায় হারিয়ে যাওয়াটা ঢের ভাল হবে!
জলটা স্বচ্ছ নয়,তবু পা ডুবিয়ে বসে থাকতে বেশ লাগছে!
সাদা ছুড়ির ফলার মত ঝরণার জল এখন অনেক বেশি বেগে আছড়ে পড়ছে।রোদের উত্তাপ আর টের পাচ্ছি না,আধভেজা হয়ে গেছি!
বেলা আড়াইটা।ফেরার পালা।সিঁড়ি বেয়ে আবার পৌঁছে গেছি ইটের রাস্তায়…ধীরে ধীরে নির্ঝরের ধ্বনি ক্ষীণ হয়ে আসছে…কিন্তু যে সুর তুলে নিলাম মনে মনে তা তো বেজেই চলেছে অবিরাম!
গাড়ি ছুটল আবারো।আজ লাঞ্চ গাড়িতেই।বার্গার,কেক,কোল্ড ড্রিঙ্কস।এবারে একটু অন্যপথ ধরে যাচ্ছি আমরা,উদ্দেশ্য পথের সবুজে শহুরে চোখ আরেকটু জুড়িয়ে নেয়া!মনে মনে ঠিক করে ফেলেছি…আবার আসব।কালকের মেঘ আর আজকের ঝরণা আমাকে নিশ্চিত আবারো এখানে টেনে আনবে!
এর মধ্যে কালকের প্ল্যান ঠিক করা হল।শাহজালাল ভার্সিটি,সিলেট মেডিকেল, পর্যটন মো্টেল,সবচে পুরাতন চা বাগান মালনীছড়া ঘুরে দুপুরের ভোজ এক বন্ধুর আত্মীয়ের বাড়িতে।তারপর বিকেলে শাহজালাল মাজার হয়ে শহরের মণিপুরী পণ্যের দোকানগুলো চষে ফেলা!
খাওয়ার পর রাতে জম্পেশ আডডা হল।
ঘুমে চোখ ঢলে পড়ছে আজ!দস্যিপনা আর কত!তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম।
আগন্তুক এর ‘আর এমন বর্ণনা কেন যেন মেয়েরাই এখন বেশি লেখে!’ মন্তব্যটি আপত্তিকর বৈ কী! মেয়েদের জামা ও মেয়েদের জুতার ( হাই হিল যা নারীর গতিকে রুখে রাখার ষড়যন্ত্র) ছাঁচ আলাদা। মেয়েদের চুল — লম্বা রাখতেই হবে। ( যদিও নাক, কান, গলা, চোখ, দাঁত, সবই এক। এরকম ই কি মেয়েলি লেখা ??
লেখার সমালোচনা করা যেতেই পারে । তবে মুক্ত মনার মতো বিজ্ঞান মনষ্ক আধুনিক ওয়েব সাইটে এমন জ়েন্ডার অসংবেদনশীল মন্তব্য পড়তে ভাল লাগেনি ।
মেঘ বৃষ্টি পাহাড় আর ঝর্ণার কাছাকাছি কিন্তু পুরুষ লেখক বুদ্ধদেব গুহের অনেক লেখার সাথে মিল পাওয়া যায়।
দুঃখিত, আগন্তুক, আপনার লেখার counter দেয়ার জন্যে আমি মন্তব্য করিনি। শুধু জ়েন্ডার সংবেদনশীলতা আশা করছি।
@গীতা দাস,
বরং আমি বলব আপনি উলটো অর্থটাই নিয়েছেন।কন্টেক্সচুয়াল অর্থ যেটা আমি বোঝাতে চেয়েছি যে নারী-লেখকদের বিরুদ্ধে এমন যুক্তি আমি শুনতে শুনতে ক্লান্ত।তসলিমার মতো লেখকের লেখাও কি খুব বেশি ভাবালুতা আক্রান্ত নয়?আর বিবর্তনবাদী মনোবিদ্যার আলোকে কিন্তু মেয়েদের একটু বেশি আবেগী,স্নেহ-মমতাপূর্ণ হিসেবেই দেখা হয়।আর এই ‘মেয়েলি’ গুণটা কিন্তু সবারই শেখা উচিত!
আমি না হয় কান মুলছি।কিন্তু আগে তাদের পাকড়াও করুন যারা এই ব্যাকরণ বানিয়েছে!যেকোন প্রশংসা-সূচক শব্দকেই তো ‘পুরুষালি’ করে রাখা হয়েছে।আমি হার্ডকোর বিজ্ঞানের লোক,ব্যাকরণের অত মারপ্যাঁচ আমি কি জানি।কাজেই ঐ তালেবরদের দিকে চোখ রাঙান আগে!
মোক্ষম ধরেছেন! হ্যাঁ বুদ্ধদেব গুহ এমন লেখেন।আর এটা আমার মত দু-চারটে কাষ্ঠের কাছে ‘অতিভাবালুতা’ অনেকের কাছেই অতি উপাদেয়।আর ‘পৌরুষকে’ উঁচুতে তোলার কোন মূর্খোচিত প্রয়াস আমি করে থাকলে আমি শাস্তির হকদার!কিন্তু দেখুন, মেয়েদের লেখা কি আসলেও একটু বেশি ভাবালু নয়?বিষয়ের দিক থেকেও কি মূলত ‘পুরুষ পশু’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নয়?অবশ্য এ ন্যায্য প্রতিবাদ।সমাজে নারী প্রধান হয়ে গেলে পুরুষদের কি দশা হয় এটাও দেখার ইচ্ছে খুব।আমার তো মনে হয়,প্রকৃতির অন্ধ নিয়মে সন্তানের ভার নারীর উপর বর্তানোতেই নারী কর্তৃত্বের দিক থেকে পিছিয়ে গেছে।এবং পুরুষ পাশবিকভাবে সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে।
আমার মন্তব্য আপত্তিকর মনে হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়,কিন্তু গড়পরতা হিসেবে সাহিত্যে ন্যাকামির অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধেই কেন বেশি যারা মূলত রোমান্স নভেল লেখে?আর এ বস্তুটিও কি মেয়েদের কাছেই বেশি কদরের নয়?
ভালো থাকুন। 🙂
অত্যন্ত উপাদেয় ,সন্দেহ নেই।কিন্তু
এ জাতীয় ভাবালুতা কেন যেন এখন আর ভালো লাগে না।এ নিছক ছেলেবেলার ছেলেমানুষী বলে মনে হয়।আর এমন বর্ণনা কেন যেন মেয়েরাই এখন বেশি লেখে!
বড্ড ক্লিশে ধারণা।কারণ যদিও আদিকাল থেকে প্রকৃতির সান্নিধ্যে থেকে সবুজ দেখলেই মানুষের চোখ আরাম পায় এটা সত্যি,কিন্তু এটাও সত্যি যে জীবনসংগ্রামে ব্যস্ত গ্রামের মানুষ এই সবুজকে দেখে অনেক নির্মোহ দৃষ্টিতে,ভাতের আকর হিসেবে।তাই সবুজের মায়াঞ্জন শহুরে চোখের জন্যই মুলত।যদি তুমি সত্যিই সবুজ ভালোবাসো,সত্যিই মেঘলা দিনকে ভালোবাসো,কাব্যিকতার ঊর্ধেব তাহলে এসব বড়লোকি দেখানেপনা লেখার একটা দুর্বলতা বৈকি।যেকোন কৃত্রিমতাই অসহ্য।
নাগরিকতা নিয়ে এত আক্ষেপ কেন?আমরা নাগরিকতার সন্তান।গ্রাম্যজীবন নিয়ে কাব্যি করার জন্য গ্রাম্যতা টিকিয়ে রাখা মানে দেশকে পিছিয়ে রাখা।ফসলের ক্ষেত ও বন আমাদের অস্তিত্বের জন্য দরকার,কিন্তু নাগরিকতা ছাড়া উন্নয়ন হয় না।ভুলে যাচ্ছ কেন যে আমেরিকার অনেক কৃষকেরই প্লেন আছে।তাদের গ্রামগুলো কিন্তু একেকটা মফসসল শহরের মত!আমাদের যদি উন্নতি করতে হয় তবে গ্রামকে এরকম মিউজিয়াম বানিয়ে রাখলে চলবে না।ঠুলিটা নামিয়ে বাস্তবকে দেখতে চেষ্টা কর।আরো ভালো লিখবে।
@আগন্তুক,
ভাই কিছু মনে করবেন না, ভ্রমন কাহিনীমূলক লেখা বিজ্ঞান বা যুক্তিবিষয়ক লেখা না যে তাতে যুক্তিবিদ্যা ফলো করতে হবে, একেসাহিত্য জাতীয় লেখা বলা যায়। তাই এসব লেখায় মনে হয় লেখক/লেখিকার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে নিজস্ব শব্দচয়ন…ঊপমা দেওয়ার। কি বলেন? সে হিসেবে সাহিত্য মানেই তো কৃত্রিমতা।
প্রকৃতির মাঝে চলে গেলে নাগরিকতা নিয়ে আক্ষেপ আমারো হয়, তখন খালি যখনই মনে হয় যে আবারো সেই শহরে ফিরে যেতে হবে তখনই মনটা বিষিয়ে উঠে। মনে হয় আহারে বাকি জীবনটা যদি এভাবেই এখানে কাটানো যেত। এমন ভাবনাতেই বা অন্যায় কি বলুন? তবুও জীবিকার তাগিদে সেই নগরে ফিরতে হয়, কিন্তু আক্ষেপ তো থেকেই যায়। প্রকাশ করতে সমস্যা কি? বিদেশের শহরগুলি অনেক প্রাকৃতিক প্রাচূর্য্যময়, তারপরেও এমন ভাব মনে আসে। আমাদের দেশে তো ঢাকা জাতীয় শহরে যারা থাকে তাদের সিলেট বা রাঙ্গামাটির সৌন্দর্যের কাছা গেলে নগর সভ্যতাকে গালাগাল দেওয়াই স্বাভাবিক। গ্রাম উন্নয়ন করতে হবে খুব সত্য কথা, তাই বলে গ্রাম বা প্রকৃতির মাঝে সৌন্দর্য খুজে পেলে বা নাগরিকতার দূর্বলতা প্রকাশ পেলে তা প্রকাশ করা তো কিছু অন্যায় নয়।
@আদিল মাহমুদ,
আমি নিজের অভিমত মাত্র ব্যক্ত করেছি।হ্যাঁ লেখিকার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে।কিন্তু এটাও ঠিক যে ব্যপারগুলো ক্লিশে।আর রবীন্দ্রনাথের মত যুগন্ধর সাহিত্যিকও কখনো কখনো গতানুগতিকতার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে বৈকি।না,আমি বস্তুবাদী দৃষ্টিতে দেখি বলেই যে সবাইকেই দেখতে হবে এমন নিয়ম নেই। 🙂
দেখুন ঢাকার আর কি দোষ!বইয়ে পড়েছি একসময় ঢাকা কতটা সুন্দর ছিল।আমি নিজে আরণ্যক জীবনে রীতিমত আসক্ত কিন্তু আমি নিষ্ঠুর নাগরিকতারই সন্তান।পাহাড় কাটা বা বনের নগরায়ণ আমার কাছে হত্যার তূল্য,যদি না তা একান্ত বাধ্য হয়ে করা হয়।আমি বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে মানুষের যে দুর্দশা দেখেছি তার কোন তুলনা চলে না।যদিও নিবেদিতা লেখেনি,তবুও প্রসঙ্গক্রমে আনছি এসব কথা,না গ্রাম্য জীবনে ফিরে যাওয়াটা প্রগতিবিরুদ্ধ আর গ্রাম্য জীবন নিয়ে ভাবপ্রবণতা এক ধরনের বিলাসিতা ও অসহায় মানুষদের প্রতি করুণা।আমরা শহরের সব আরাম-আয়েস ভোগ করে গ্রামের মানুষগুলোর মাথায় হাত বুলিয়ে বলি,’আহারে!তোরা কত সরল…’ -বিশ্বাস করুন এই কাব্যিকতা দুঃসহ।আমি আপাদমস্তক নাগরিকতার সন্তান,আমার বাবা ছিলেন গ্রামের ছেলে।গ্রামের লোকেরা সরল এ কথার কোন প্রমাণ আমি কখনোই পাইনি।সৌহার্দ্য আছে ঠিকই কিন্তু অলস পরচর্চাও কিন্তু অনেক বেশি।
কাজেই গ্রামের প্রতি ভাবপ্রবণতা আর কল্পনাবিলাস বজায় রেখে গ্রামের উন্নয়ন হবে না।আর নগরায়ণ মানেই কিন্তু তথাকথিত গ্রামের মৃত্যু!আর হ্যাঁ নগরের প্রাকৃতিক ভারসাম্যের দিকে লক্ষ্য রেখে কিছু অসুস্থ লোভি মানুষকে পাগলা-গারদে পাঠাতে পারলে ভালো হয়।এদের কত প্রয়োজন? 🙂
@আগন্তুক,
গ্রাম্য লোকজনের সরলতা বিষয়ে আমি আপনার সাথে পুরো একমত। গ্রামে আমিও কোনদিন থাকিনি, তবে আমার গ্রামের লোকদের সরলতা সম্পর্কে প্রচলিত ধারনার উল্টোটাই সবসময় মনে হয়েছে। আমরা মনে হ্য় শহুরে লোকজন বেশীরভাগ সুযোগ সুবিধা ভোগ করি বলেই গ্রামের লোকদের সান্ত্বনা হিসেবে ওরকম গতবাধা কথাবার্তা বলতে পছন্দ করি।
তবে পথের সবুজে চোখ জুড়িয়ে নেওয়া বা যন্ত্রনগরীর নির্মম ভীড়ে কে না বিরক্ত হয়? এর সাথে এই গ্রাম্য সরলতা তত্ত্বের বড় কোন সম্পর্ক আছে বলে আমার মনে হয়নি। গ্রামের দূর্দশা ভয়াবহ, কিন্তু সৌন্দর্যও তো অবশ্যই আছে যা ঢাকার মত কংক্রিটের শহরে উপভোগ করা যায় না। নিবেদিতাও গ্রামের কথা বলেছে বলে আমার চোখে পড়ছে না। সবুযে চোখ জুড়িয়ে নিতে চাওয়ার মাঝে অতি ভাবপ্রবণতা প্রকাশ পেয়েছে বলে মন হয় না।
ঢাকা শহর সত্য কথা বলতে কোনদিনই অন্তত চট্টগ্রামের মতও সবুজে ছাওয়া ছায়া ঘেরা ছিল না, অন্তত আমি যতদিন দেখেছি। ঢাকার স্মৃতি আমার মোটামূটি ৭৭ থেকে মনে আছে। তখন বেশ কিছু পার্ক বা অন্তত বড় বড় মাঠ, ডোবা নালা ছিল। লক্ষনীয় পার্থক্য ছিল তখন প্রায় সব বড় রাস্তার মাঝখানে চওড়া ডিভাইডার ছিল বড় বড় গাছওয়ালা। এগুলি এখন সব গায়েব হয়ে গেছে ঢাকাগামী মানুষের তীব্র ভীড়ে। অতি অবশ্যই ট্রাফিক, বায়ুদুষন এগুলি তীব্র মাত্রায় বেড়েছে।
@আদিল মাহমুদ,
সহমত পোষন করতে পারলাম না।। সুকান্তের কথা মনে পড়ে। চাঁদ যেন এক খন্ড রুটি। জীবনানন্দ দাস, রবীব্দ্রনাথ, জসীমুদ্দীন, না কোথাও কৃত্রিমতা পাইনা, সবই যেন মৌলিক, বাস্তব, সবই সত্য ও জীবন্ত।
একটা ঘটনার কথা বলি- ছোটবেলার কথা। গ্রামের হাইস্কুলের বাৎসরিক উৎসব হবে, সারা গ্রামের মানুষ উপস্থিত থাকবেন। তর্ক-প্রতিযোগিতার বিষয় বস্তু- গ্রামীন জীবন বনাম শহুরে জীবন। শ্রী পরেশ চন্দ্র দেব প্রধান শিক্ষক, কার ভাগ্যে কি পড়বে আগে থেকে বলে দিতে রাজী নয়। আগের রাতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি, পরেশ স্যারের মাথায় যেন আল্লাহর রহমত নাজিল হয়, আমার ভাগ্যে যেন গ্রাম পড়ে। আমি প্রমান করে দেবো, সাঁতার না জানা বাবুদের জীবন যে ষোল আনাই মিছে। নাম ধরে আংগুলে গুনে গুনে দেখিয়ে দেবো রাস্ট্রের উচ্চপর্যায়ে, শিক্ষাংগনে, প্রশাসনে বড়বড় নামীদামী মানুষের শেকড় যে গ্রামেই প্রোথিত। কেমন করে পল্লীগ্রামের ছেলে-মেয়েরা কলেজ ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে তাদের মেধা ও দক্ষতার বলে শহুরে ছাত্রদের টেক্কা মেরে ক্লাসে প্রথম স্থান দখল করে নেয়। আমি বলবো- আমাদের রবিশষ্য, ধানক্ষেত না থাকলে তোমরা শহুরে ঘুঘু পাখীরা উপোস মরবে। আমাদের খাল বিলের মাছ খেযে তোমাদের জীবন চলে। নগর সভ্যতায় গ্রামের কি অবদান সে ইতিহাসও এক স্যারের কাছ থেকে জেনে নিয়েছি। সুতরাং প্রচুর আত্মবিশ্বাস নিয়ে বসে আছি, আজ শহরবাসীকে তুলোধুনো করে ছাড়বো, তুমুল হাততালি পড়বে আমার পক্ষে। কিন্তু হায়, বিধি বাম। আল্লাহ জীবনে কোনদিনই আমার প্রার্থনা মঞ্জুর করেন নাই, আজও এর ব্যতিক্রম হলোনা। হেড স্যার পরেশ বাবু ঘোষনা দিলেন আমাকে বলতে হবে নগর জীবনের পক্ষে। কি আর করা, পরাজয় জিনিষটাকে আমি ছোটবেলা থেকেই ঘৃনা করি। কলেজ জীবনে দুই বৎসর শহরে থাকতে হয়েছে। সেই সল্প অভিজ্ঞতা সম্বল করে আল্লাহর সাহায্যের আশা না করেই মঞ্চে গিয়ে দাঁড়ালাম। বললাম- পাড়াগাঁয়ের বাবুই পাখীরা, শীল্পের বড়াই করোনা, আমরা তোমাদের কাছে না আসলেও চলবে কিন্তু আমাদের কাছে তোমাদের আসতেই হবে। তোমরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করবে, মারামারি করবে আর আমাদের আদালতে তোমাদের বিচার করবো আমরা। গ্রামের লাউ-কুমড়ার কবিরাজ যখন তোমাদেরকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় তখন শহরের ডাক্তার ছাড়া তোমাদের আর বাঁচার উপায় থাকেনা। তোমরা কুয়োর বেঙ, আমরা প্রশান্ত মহাসাগরের তিমি মাছ। আমাদের সাথে তোমাদের তুলনাই হয়না।
এ তো ছিল ছোটবেলার কথা। কিন্তু আজও নিজেকে গ্রামের ছেলে বলতে গর্ব বোধ করি। তুলনামুলক ভাবে গ্রামকেই ভালবাসি। হুমায়ুন আহমেদের বইয়ের চেয়ে শামসুল হকের বই ভাল লাগে। হুমায়ুন আহমেদের গল্পে গ্রামের নারীরা সবাই পা ছুয়ে সালাম করে, গ্রামের বুড়ো মানুষ শহরে কোন আত্মীয়কে দেখতে আসলে মাথায় করে এক কাঁদি কলা, না হয় দুটো মুরগী কিংবা ডিম নিয়ে আসে। এরকম লেখার উপাদান যোগাড় করার জন্যে পল্লী দর্শন, পল্লী ভ্রমন আমার কাছে মনে হয় শহুরে মানুষের নগ্ন বিলাসীতা। আমরা কাঁদামাটির মানুষ, প্রকৃতির সাথে মিশে থাকতে ভালবাসি, প্রকৃতির মতোই আমাদের সুন্দর মন। মেঘ-বৃষ্টি, পাহাড় আর ঝর্ণার মতো যে মানুষের জীবন, প্রকৃতি যার ভাষায় কথা কয়, যেখানে দোয়েলের গান আর রাখলিয়ার বাঁশি একই সুরে বাজে, সে যায়গার ভ্রমন কাহিনীতে যদি বাঁশির সুর শোনা যায় আর রাখালের সাথে দেখা হয়না, তাহলে কাহিনীটি কাল্পনিক ও অপূর্ণই থেকে যাবে। আমি মনে করি সাহিত্য, প্রকৃতি ও মানুষের, কল্পনা ও বাস্তবের মিলন মেলা। লেখকের কলম সেই সত্যের সন্ধান খোঁজে পাবে আমরা তা’ই আশা করি।
@Akash Malik,
আপনার শেষ কথা; “আমি মনে করি সাহিত্য, প্রকৃতি ও মানুষের, কল্পনা ও বাস্তবের মিলন মেলা” এতে আমার কোনই অমত নেই; যদিও সাহিত্য যে সবসময় বাস্তব ভিত্তীক হতে হবে তারও কোন বাধাধরা নিয়ম নেই। রামায়ন মহাভারত এগুলিতো মনে হয় বেশ উচ্চশেনীর সাহিত্য বলেই ধরা হয়।
আপনার বেকায়দায় পড়ার গল্প বেশ ইন্টারেষ্টিং; আপনাদের প্রধান শিক্ষক পরেশ চন্দ্র দেব সে আমলে যে করতে পেরেছিলেন তা ছিল আমাদের সনাতান মুখস্তবিদ্যা ভিত্তিক শিক্ষা ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে অনেকটা বিপ্লব।
সাহিত্য মানেই ১০০% কৃত্রিমতা অবশ্যই নয়। তবে কঠিন বস্ত্ববাদী দৃষ্টিতে দেখলে কৃত্রিমতা অবশ্যই পাওয়া যাবে। যেমন, আপনি সূকান্তের চাদের উপমায় কোনরকম কৃত্রিমতা পান না, অনেকেই কিন্তু পান। এখন কি প্রশ্ন করা উচিত আপনি ঠিক না অন্যরা? এ প্রশ্ন আসলে অর্থহীন। আর্ট, কালচার, লিটারেচার এসব জিনিসের শক্তি বা দূর্বলতা দুটোই হলে এখানেই, এসব জিনিস একএকজনের কাছে এক এক রকম লাগবে। প্রশ্ন তুলতে পারেন যে জনপ্রিয়তার মাত্রা দিয়ে তূলনা করা যেতে পারে। এ যুক্তিও খুব দুর্বল। আপনার কাছে বাংলাদেশের অতি জনপ্রিয় হুয়ামূন আহমেদ থেকে অন্য কাউকে ভাল লাগে। অস্কার বা অন্য পুরষ্কার বিজয়ী বেশ কিছু ছবি বেশীরভাগ মানুষের ভাল লাগবে না। অন্যদিকে নীলক্ষেতে পাওয়া রসময় গুপ্ত জাতীয় লেখকদের যৌন বিষয়ক চটি বই বিপুলভাবে জনপ্রিয়।
@আদিল মাহমুদ,
স্যরি কলেজ জীবনে নয়, এখানে হবে স্কুল জীবনে কোন একটি পারিবারিক কারণে দুই বৎসর শহরে থাকতে হয়েছে।
@আগন্তুক,
আর যাই হোক অনুভূতিটি কৃত্তিম ছিল না।
ভবিষ্যতে খেয়াল রাখব। 🙂
মনে হচ্ছে আমি আপনার সাথে বেড়িয়ে আসছি। সত্যিই সিলেটের প্রাকৃতিক দৃশ্য খুবই মনোরম। ধন্যবাদ নিবেদিতা।
@সৈকত চৌধুরী,
🙂