৫ আগস্ট,বুধবার

ভোরে ঘুম ভেঙ্গে দেখি ঝিরঝির বৃষ্টি।মনে পড়ল আজ জাফলং এ যাবার প্ল্যান!
ঘণ্টাখানেক বৃষ্টি দেখেই কাটিয়ে দিলাম।তারপর রেডি হতে না হতেই ডাক পড়লো…গিয়ে দেখি দারুণ ব্রেকফাস্ট!পাউরুটি টোষ্ট,মাখন,জেলী,গরম গরম পরোটা,সাথে মুরগির ঝোল!যার যা ইচ্ছে খেয়ে নিলুম!চা পানও চলল বেশ আয়েশ করে!
এর মধ্যে গাড়ি তৈরী…আজকেরটা কালো!ঘড়ির কাঁটা দশটা ছুঁই ছুঁই…যাত্রা শুরু হল।
আমাদের গাইড শান্তার বোন,সাথে তার দুজন বন্ধু।সবাই স্বভাবসুলভ বকবকানিতে মশগুল হয়ে উঠল।প্রথমে আমরা যাচ্ছি তামাবিল,সীমান্ত…ওপারে ভারত।শহর থেকে তামাবিল প্রায় ৫০কি.মি. দূরে।একটু শিহরিত হলাম,সীমান্ত দেখব প্রথম বারের মত!
আঁকাবাঁকা পথ ধরে গাড়ি ছুটছে…বান্দরবানের পাহাড়ি রাস্তাগুলোর কথা মনে পড়ে যায়,হঠাৎ উঁচু হয়ে আবার ঢালু হয়ে যাওয়া সর্পিল পথগুলো গাড়িতে পাড়ি দেয়ার মজাই আলাদা!
তামাবিলে পৌঁছে ০ কি.মি. লেখা ফলকের সামনে ফটোসেশন চললো কিছুক্ষণ।দেখলাম একটা ছোট্ট খাল,তিরতির করে স্বচ্ছ জল বয়ে যাচ্ছে…আর ভেজা পথ…ভেজা প্রকৃতি…ভাল লাগছে,ভাল লাগছে!
জাফলং যাবার পথে দেখতে পেলাম এককালের রাজকণ্যা জৈন্তেশ্বরীর স্নানঘর…দুপাশে পাকা রাস্তা,তার মাঝখানে পুরোনো ঘরটির অনেকটুকু মাটির নিচে তলিয়ে গেছে।
জাফলঙ্গে পৌঁছেই পাথরের স্তুপে প্রায় শ’খানেক ফটো তোলা হয়ে গেল!এখানে মেঘগুলো দেখে আমি স্তব্ধ!একেই কি বলে অসহ্য সুন্দর!পাহাড়ের গায়ে গায়ে তুলোর মত মেঘ জড়িয়ে,যেন ঝুল জমেছে!ইচ্ছে করছে মুঠোয় ভরে নিতে……এত কাছে,তবু দূর!
দূরে শিলং এর পাহাড়গুলো দেখছি,কান পাতলে শোনা যায় ঝরণার আওয়াজ!
হুটোপুটি করে নৌকোতে উঠে বসলাম আমরা…নদীর নাম পিয়াইন!সারি সারি নৌকো নদীতে।জল ছুঁয়ে দেখি,আহ!বেশ শীতল…ভাল লাগছে…ভাল লাগছে!
নৌকো ওপারে ভীড়লো,এবারে আমাদের বাহনের নাম ট্রাক্টর!যদিও ট্রাক্টরের সাথে এর মিল খুঁজে পাচ্ছি না….বিচিত্র এক যান!রওনা দিলাম খাসিয়া পট্টির দিকে…পাথুরে পথ,যেকোনো সময় ছিটকে পড়ে যাবার ভয়…উত্তেজনা আর আনন্দ মেশানো এক অদ্ভুত অনুভুতি নিয়ে পুরোটা পথ বেশ হইচই করে কাটালাম।এর মধ্যে পানের বরজ চোখে পড়ল।বাংলা পান আর খাসিয়া পান দুটোই নাকি চাষ করা হয়।
খাসিয়া রাজার বাড়ির সামনে নেমে পড়লাম…কয়েকটা স্ন্যাপ…তারপর সমতল চাবাগানেও আরো কিছু স্ন্যাপ।তারপর ফিরে চললাম সেই নদীর কাছে…নদীর নাম পিয়াইন!
এপারে ফিরেই টের পেলুম পেটে ছুঁচোর বুকডন!তাকিয়ে দেখি…ওরেব্বাস্!পেটের দোষ নেই।বেলা তো সাড়ে তিনটের উপরে!মেঘ আর বৃষ্টি দেখে মন এতই ভরেছিল যে ক্ষুধা তৃষ্ণা ভুলে ছিলাম!
গাড়ি এবারে গিয়ে থামল জৈন্তাপুর।শান্তার বোনের শ্বশুরালয়!উদ্দেশ্য লাঞ্চ।ওহহো,এখানেও যা আয়োজন!’কি দরকার ছিল’ এমন এক ভঙ্গি করে সবাই হামলে পড়লাম খাবার টেবিলে…এক্কেবারে ভুড়িভোজ!সবচেয়ে ভাল লাগল সাতকড়ার ডাল!
বাড়িটি ঘুরে দেখলাম।ঘোরানো বারান্দা…ছোট্ট উঠোন,তার একপাশে আরো ছোট্ট একটা বাগান।
চা চক্রের পর গাড়ি চলল শহরের দিকে।
ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম।বাহিরে তখন সন্ধ্যা আর রাতের সন্ধিক্ষণ।
কালকের গন্তব্য মাধবকুন্ড।এই প্রথম ঝরণার খুব কাছে যাচ্ছি।ভাবতেই অন্যরকম লাগছে!
মাঝরাতে বিছানায় গিয়ে ভাবলাম আজ হয়ত গাঢ় ঘুম হবে…।
কিন্তু মেঘগুলো বারবার মনে পড়ে যায়…মনে পড়ে নদীর জল..আর নদী…নদীর নাম পিয়াইন…ভাল লাগছে,ভাল লাগছে!
শেষরাত…এপাশ ওপাশ করছি…ওহ্..একটু ঘুম চাই।