পূর্ব থেকে পশ্চিম
পরশপাথর
পর্বঃ ২
ইমিগ্রেশান অফিসার কোনক্রমেই আমাকে ক্লিয়ারেন্স দেবেন না। আমি বুঝতে পারলাম না, খুব সহজেই আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিচয় গোপন করতে পারতাম, এমনকি পাসপোর্টেও সেটা না রাখতে পারতাম, সে–ক্ষেত্রে তারা কি করে আমাকে আটকাতেন? বাংলাদেশ সরকারেরতো এমন কোন কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা নেই যেখান থেকে তারা আমার সব তথ্য পেয়ে যেতে পারে। কিন্তু এ–মুহূর্তে কি–হলে কি–হতে পারত, সে–সব ভাববার অবকাশ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথাকথিত ক্ষমতাধারীদের ফোন করতে পারি, তাদের কাছে এর সমাধান দুধ–ভাত; এমন কাউকে দিয়ে ফোন করাবে, হয়তো তখন ইমিগ্রেশান অফিসার নিজেই প্লেন–এ তুলে দিয়ে আসবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, যে–সময় হাতে আছে, তাতে, তুলে দেবার অনেক আগেই প্লেন আসমানে লুকোবে।
ছোটবেলায় আমার পাশের বাড়ির কাকাদের দেখতাম বিদেশ যাচ্ছে। সবাই চোখের জলে, মুখের জলে চারপাশ ভিজিয়ে, আকাশে–বাতাসে মাতম তুলে, আশপাশের পাড়া প্রতিবেশীদের জানান দিয়ে তাদের বিদায় দিত। যাবার আগে তারাও তাদের নানা ইচ্ছার কথা, অনিচ্ছার কথা, শুরুর কথা, শেষের কথা, বলা না–বলা কথা,সবকিছু নিঃশেষে উজাড় করে দিয়ে যেত। বিশেষ করে বাড়ীর বউদের বারবার করে সাবধান করে দিত, তাদের অবর্তমানে তাদেরর মা–বাবার যেন বিন্দুমাত্র অযত্ন,অবহেলাও না হয়। যদিও বাড়ীতে থাকা অবস্থায় নানাবিধ কারণে–অকারণে তারা নিজেরাই মা–বাবার যত্ন করবার দিকে খুব একটা নজর দিতে পারেনি। অন্যদিকে তাদের যাওয়া উপলক্ষ্যে বাড়ির উঠোনের লাল মুরগীটা কিংবা পুকুর থেকে তোলা বড় রুই মাছটাও নির্বিচারে প্রাণ বিসর্জন দিত। যাওয়ার পর, সারাদিন বাড়ীর সবাই মন খারাপ করে রাখতো,কেউ ইচ্ছায়, কেউ অনিচ্ছায়। সবার দেখাদেখি আমিও একটু মন খারাপ করে থাকতাম, মনখারাপ নিয়ে রাতে ঘুমোতে যেতাম। সকাল বেলা হয়তো ঘুম থেকে উঠে দেখতাম, আমার সেই কাকা রীতিমতো লুঙ্গি পরে, আয়েশী ভঙ্গিমায় সময় নিয়ে, পুকুর ধারে দাঁত ব্রাশ করে চলছে। ঘটনা হচ্ছে, বিদেশ যাবার পথে কোনো এক এয়ারপোর্ট থেকে তাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে, কাগজপত্র ঠিক নেই ব’লে। কাকা আমার ব্রাশ করতে করতে সবাইকে বুঝাতে চেষ্টা করত, কেমন করে নিজের মাথার বুদ্ধি খাটিয়ে, ইমিগ্রেশান অফিসারদের নাস্তানাবুদ করে, একদিনও জেল না খেটে সে বাড়ি ফিরে এসেছে।তার জায়গায় অন্য কেউ হ’লে, একেবারে কম হলেও দশ বছরের জেল হয়ে যেত। আমি আমার সেই কাকার কথা ভাবছিলাম, আর ভাবছিলাম, আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে ঠিক কয় বছরের জেল হ’ত বলে গল্পটা বানাবো।
কোন এক ব্লগে পড়েছিলাম, দেশের বাইরে যাওয়ার সময় সব ধরণের ডকুমেন্টস–এর ফটোকপি সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া ভালো। হঠাৎ মনে হলে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া ‘রিলিজ লেটার’ এর কপি আমার কাছে আছে। এটা আমি ইমিগ্রেশান বা কোথাও দরকার হতে পারে ব’লে রাখিনি, অন্যসব কাগজপত্রের সাথে এমনিতেই রেখে দিয়েছিলাম। আর পায় কে? বিতর্কের মাঠে এবার আমি ম্যারাডোনা। ইমিগ্রেশান অফিসারকে বললাম, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া ‘রিলিজ লেটার’ আমার কাছে আছে।’ উত্তর এলো, ‘সেটাতে কাজ হবে না।’ আমি বললাম, ‘কেন হবে না?’। তিনি বললেন, ‘আপনার জিও লাগবে।’ ভাবখানা এমন যে, ‘একবার বলেছি জিও লাগবে, তো ওটাই লাগবে। সেটা না হ’লে প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডারেও কাজ হবে না।’ আমার মনে হচ্ছে একটু পরে হয়ত বলবে, ‘এখন আর জিও দিলেও হবে না, যান, আপনি বাসায় গিয়ে ঘুমান।’ আমি বললাম, ‘সরকার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে পারমিশান দেয়া আছে, রিলিজ লেটার দেবার জন্য।’ বস্তুত,আমার রিলিজ লেটারে সরকারের একটা অধ্যাদেশের রেফারেন্সও দেয়া আছে। তারপর তিনি সেটা দেখতে দেখতে বললেন, ‘এটাতেতো হবেইনা, তাও আমি স্যারকে জিজ্ঞেস করে দেখি।’
যথারীতি স্যারকে ডাকা হল। ভাবলাম, দিনের পর দিন ‘স্যার’ ডাক শুনতে শুনতে সকাল গেল, বিকাল গেল; আজকে না জানি কোন মহাস্যারের পাল্লায় পড়তে যাচ্ছি। অফিসার বলেন, ‘স্যার উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কিন্তু উনার ‘জিও’ নেই।’ স্যার বলেন,‘কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক?’ অফিসার বলেন,‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’। স্যার রাগত স্বরে বলেন, ‘আরে সেটাতো বুঝলাম, ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়, কিন্তু ঢাকার কোন বিশ্ববিদ্যালয়?’ হায় কপাল! আমি কোথায় আছি? রঙ্গ ভরা এই বঙ্গদেশে কে–যে অফিসার, কে–যে তার স্যার, কি তার আচার, কিইবা ন্যাচার– তা একমাত্র ওপরওয়ালাই জানেন। আমার সেই কিংবদন্তির রিক্সাওয়ালার গল্পটা মনে প’ড়ে গেল। যাত্রি রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করে, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাবে নাকি?’ রিক্সাওয়ালা বলে, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়? এটা আবার কোন জায়গায়? ঢাকা ইনভার্সিটির কোন পাশে?’ আমি এয়ারপোর্টের মহান স্যারকে বললাম, ‘আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটি টিচার।’ কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে দেখলেন, তারপর তার অফিসারকে বললেন, ‘উনার কি অন্য যে–কোন ডকুমেন্ট আছে?’ অফিসার বলেন,‘রিলিজ লেটার আছে।’ স্যার বলেন, ‘তাড়াতাড়ি যেতে দাও।’ সব ঝামেলা এখানেই শেষ। মহামান্য অফিসার এবার আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার বাড়ী কোথায়?’ এবার আর যায় কোথায়? কয়েকশো মণ ওজনের ভাব নিয়ে, রাশভারী কণ্ঠে আমি বললাম,‘পাসপোর্টে দেখেন।’
ভিতরে ঢুকতে না ঢুকতেই মনটা ভালো হয়ে গেল। ‘বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমার দেশও এগিয়ে যাচ্ছে।’ তিন–তিনটা কম্পিউটার এক লাইনে, ইন্টারনেট ব্যবহার করবার জন্য। যাক কিছুটা হলেও এয়ারপোর্টটা সার্ভিস দিতে শিখছে। আধুনিক বিশ্বের যে–কোন এয়ারপোর্টেই ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সুযোগ থাকা উচিৎ, এখানেও আছে। খুশি মনে এগিয়ে গেলাম। প্রথমেই দিলাম, ‘গুগল ডট কম।’ অবিশ্বাস্য স্পীড–এ রেসপন্স আসলো, ‘সার্ভার নট ফাউন্ড।’ নিজের মনে নিজেই হেসে ফেললাম। আগের বাক্যটি খানিকটা পরিবর্তন করে নিয়ে বললাম, ‘বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশ এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সেটাই বা কম কি?’ তবে কেমন জানি আঙ্গুর ফল টক টাইপ ব্যাপার হয়ে গেলো।আবার এ–ও মনে হলো, আরে আঙ্গুর ফলতো টক–ই।
বোর্ডিংয়ের সময় হয়ে এলো। এয়ারপোর্ট–এর অন্য আর চার–পাঁচটা বিমানের থেকে কাতার এয়ারওয়েজের বিমানটাকে বেশ রূপসী আর হৃষ্টপুষ্টই মনে হলো। ছোটবেলায় এক হুজুরের ওয়াজ শুনতে গিয়েছিলাম; বেহেস্তের হুরী’রা কেমন সেটা বুঝাতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, বেহেস্তের হুরী’রা বিমানবালাদের থেকেও সুন্দরী। এইতো আর মাত্র কয়টা মিনিট! তারপর বেহেস্তের কাছাকাছি পৌঁছে যাবো। বিপুল উৎসাহ,উদ্দীপনা ও ভাব–গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বিমানে প্রবেশ করলাম। হায় খোদা! এ কি? এর তুলনায় ঢাকা–চট্টগ্রাম রুটের ‘সোহাগ পরিবহণ’ কিংবা ‘গ্রীনলাইন’তো ময়ূরপঙ্খী।জানালার সাইডে কোন রকমে দু’জনের বসার ব্যবস্থা; মাঝখানেতো তিনজন করে। তবে বলে রাখা ভালো, আমি ইকনোমী ক্লাসের যাত্রী, আমারো মনে রাখা উচিৎ ছিলো যে, বিমানের মধ্যেতো আর ফুটবল খেলার ব্যবস্থা থাকবে না। অন্যদিকে হুরীদের দেখতে গিয়ে, সত্যি কথা বলতে কি– নিজের উপর রাগ–ই হলো।কোনভাবেই ‘কতটুকু সুন্দরী’এই মানদণ্ডে কাউকে বিচার করা যায় না। এখানে কেউ সুন্দরী প্রতিযোগিতায় আসেনি, এসেছে যার যার কর্মক্ষেত্রে।সত্যি কথা বলতে গিয়ে একটু মনে হয় মিথ্যাই বলে ফেললাম,নিজের উপর রাগ আসলে হয়নি, সব রাগ গিয়ে পড়েছে ওই হুজুরের উপর।
যথাসময়ে বিমান চলতে শুরু করলো। তার আগে জরুরী নির্দেশনা দেয়া হল। এবার আমাদের পাইলট নিজের পরিচয় এবং যাত্রার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিলেন। তার বলা ইংলিশের মাঝ থেকে শুধু কি একটা যেন নাম্বার আর টাইমটা উদ্ধার করতে পারলাম। আর কিছুই বুঝলাম না। আমি নিজে যে বুঝতে পারলাম না, আমার নিজের ব্যর্থতা, সেদিকে আমার খেয়াল নেই; অথচ আমার ধারণা হয়েছে, এই পাইলট ব্যাটা শুদ্ধ করে ইংলিশটাও বলতে পারে না, আঞ্চলিক কোন এক ইংলিশ বলে ব’সে আছে। নিজেকে সাপোর্ট দিতে গিয়ে আবার নিজেই যুক্তি দেখালাম, ‘বারাক ওবামা’র ইংলিশতো আমি ঠিকই বুঝতে পারি। অতএব, আমার না, নিশ্চিত করে পাইলটের ব্যর্থতা। তবে ইংলিশ শুদ্ধ বলুক আর অশুদ্ধ বলুক, নিপুণ দক্ষতায়, ক্ষণিকের মাঝে আমাদের নিয়ে সে উঠে গেল আকাশের রাজ্যে ।
এবার শুধু ছেড়ে যাবার পালা, দূরে যাবার পালা। উপর থেকে উপরে যাচ্ছে বিমান, যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে সব। সব, সব, সব কিছু। আমার অস্তিত্ব, আমার শৈশব, আমার কৈশোর, আমার শিকড়। তৃতীয় বিশ্বের একটা দেশ, গরীব একটা দেশে জন্মগ্রহণ– এ–যে পাপ; মস্ত বড় পাপ। সে–পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে আমরা চলে যাই, দূরে চলে যাই, সবকিছু ছেড়ে যাই, সবকিছু ছিঁড়ে যাই। দূরত্বের নীতি মেনে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে নীচের সব। সামনে শুধু আকাশ, আকাশের ওপর আকাশ, অনন্ত অশেষ; পিছনে আমার, ভালোবাসার, অনেক আদরের বাংলাদেশ।
আমি জানি, নীচ থেকে উড়ে যাওয়া সবগুলো বিমানের দিকে তাকিয়ে আছে আমার ‘মা’। কাঁদছে। আমি জানালা দিয়ে দেখতে চেষ্টা করি, খুঁজতে চেষ্টা করি। খুঁজে পাই না।…(চলবে)
পরশপাথর
সেপ্টেম্বার ১৩,২০০৯
পরশপাথরের মুখে ঠাড়া পরুক। আমাদের ইমিগ্রেশন অফিসারদের নিয়ে এসব ব্যাংগাত্বক কথা কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না। তাদের সার্ভিস বিশ্বমানের। ইমিগ্রেশনের সার্ভিস ধবংসে বহির্বিশ্বের ষড়যন্ত্র কিছুতেই সফল হতে দেয়া যাবে না।
বিঃ দ্রঃ লেখা ভাল হইছে
@রনি,
ঠিক আছে, এই বিশ্বমানের সার্ভিস নিয়ে যদি আপনি খুশী থাকেন। তাহলে আমার আর কিছুই বলার নেই।
যাই হোক, ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
~পরশ
Jehetu lekhata cholbe ar ami porer Part(s) porar ichchha rakhi sehetu no comments… keep going… ar ha Part1 er sheshe Part2 er link thakle valo hoto… next sequel golar jonno o anurup chinta kora jete pare. Thanks…
পরশ পাথর – যার লেখার বড় অনুরাগী আমি সবসময়ই। ফরিদের সাথে মুক্তমনায় খুনসুটি পড়ে একসময় সত্যই আমি ভেবে নিয়েছিলাম তিনি আসলেই এক ঘাটের মরা বৃদ্ধ! পরে বুঝলাম ইনি তা নন!
যা হোক পশ্চিমে স্বাগতম। সামনের দিনগুলো ভাল কাটুক!
@অভিজিৎ,
অনেক ধন্যবাদ।
লিঙ্কটা দিয়ে আপনি আমার প্রথম যৌবনের দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিলেন। ফরিদ ভাই তখন ছিলো টগবগে এক যুবক। আজ জীবনের অন্তিমলগ্নে এসে উনারও নিশ্চয় যৌবনের সে-সমস্ত সোনালী দিনগুলোর কথা মনে পড়ে।
ভালো থাকুন।
সুন্দর বলেছেন। তা একমাত্র ওপরওয়ালাই জানেন? এবার আপনি নিচওয়ালাকে জানিয়ে দেন।
পড়ে ভালো লাগল, ধন্যবাদ।
@সৈকত চৌধুরী,
ধন্যবাদ।
নীচওয়ালাদের সব জানিয়ে দেব, তার আগে আমি নীচে একটু নামি। আমিতো মাত্র আকাশে উঠলাম।
ভালো থাকুন।
দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশের এই বহিঃগমন ইমিগ্রেশনের হয়রানির ইতিহাস খুবই প্রতিষ্ঠিত একটি শিল্প যা বহু বছর ধরেই চলে আসছে। মনে করার কোন কারন নেই যে এটি অতি সাম্প্রতিক কিছু।
আমি প্রায় বছর বিশেক আগের একটা ঘটনাও জানি, আমার বোনের পাসপোর্ট জাল বলে মিছে সন্দেহ এবং ১০০ ডলার দাবী…।
তবে আমার মনে প্রশ্ন আসে যে কারো জিও লাগে…কারো সরকারী ছাড়পত্র লাগে…কারো শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের চিঠি লাগে…। এই জাতীয় ব্যাপারগুলি আগে থেকে কেন জানানো হয় না? বোধকরি তাতে শেষ মুহুর্তে মানুষকে অযথা হয়্ররানি করে দুটো পয়সা কামানোতে অসুবিধা হবে। এয়ারলাইনগুলি যেমন বিদেশের ভিসা না দেখে টিকেট ইস্যু করে না তেমনি তো একইভাবে জানাতে পারে যে এই ভিসায় যেতে হলে বা এই পাসপোর্টে যেতে হলে তোমার এই এই কাগজগুলি লাগবে।
@আদিল মাহমুদ,
বিশ বছর আগে ১০০ ডলার… এখন না জানি সে-দাবী কততে গিয়ে দাঁড়িয়েছে?
আসলে আগ থেকে যদি জানিয়েও দেয় যে এটা -সেটা লাগবে। তাহলেও কোন কাজ হবে না। ঘুষ খাওয়াই যদি উদ্দেশ্য হয়, অন্য আরেকটা অজুহাত খুঁজে পেতে তাদের দশ মিনিটও লাগবে না।
ভালো থাকুন।
@পরশ,
কথা সত্য। নিত্য নুত্ন কায়দা ঠিকই বের হয়ে যাবে।
কিছুদিন আগে পড়েছিলাম জিয়ায় একটা চক্র কিভাবে বিদেশ থেকে আসা প্রবাসী বাংলাদেশীদের লাশ খালাসের রমরমা ব্যাবসা সবার নাকের ডগায় চালাচ্ছে তার রোমহর্ষক বিবরন।
ওই কাহিনীর কাছে আপনার আমার ইমিগ্রেশন ভোগান্তি তো নস্যি। তৃতীয় নয়নের সাথে একমত না হয়ে উপায় থাকে না।
মনটাই খারাপ করে দিলেন।
@আতিক রাঢ়ী,
ধন্যবাদ, মন খারাপ করার জন্য 🙂 🙂 ।
খুবই উপভোগ্য একটি লেখা। ক্রমশই যেন উত্তেজনার মধ্যে প্রবেশ করছি। কৌতুহ্ল বেড়ে যাচ্ছে পরবর্তীতে কি হয় দেখার জন্য।
তবে একটি কথা ঠিকই বলেছন। তৃতীয় বিশ্বে জন্ম নেয়া পাপ। সেই পাপ এর প্রায়শ্চিত্ত সারা জীবন ধরে করতে হয়। আর প্রথম বিশ্বে গেলে সেই প্রায়শ্চিত্ত আরো জোরালোভাবে করতে হয়। পাপী হিসেবে নিজের চেহারা তখন বিমূর্ত হয়ে উঠে!
@তৃতীয় নয়ন,
তৃতীয় বিশ্বে জন্ম নেয়াটা পাপ। তবে আমাদের দেশের অন্য অনেক কিছু আছে যেগুলো হয়ত পূণ্য। দু’একটা পাপ না হয় থাকল 🙂 🙂 ।
ভালো থাকুন।
পরশ পাথর,
এতো নস্যি! আমার বেলায় কি হয়েছিলো শুনুন। একবার ভারতের মধ্যপ্রদেশ গিয়েছিলাম একটা কেমিক্যাল কনফারেন্সে। সেই ভারতের ভিসা দেখে ইমিগ্রেশন অফিসার আমাকে জেরার পর জেরা করে চললেন। আমি বলি কনফারেন্স তো উনি বলেন ক’দিন ছিলেন? আমি বলি ৩দিন তো উনি বলেন এখানে তো ৭দিনের ভিসা রয়েছে! আমি বলি যে আমার ফিরে আসার দিনটি দেখুন, উনি বলেন যে নাহ্, এখানে গন্ডোগোল আছে, স্যারকে জিঞ্জেস করতে হবে। এর পর আমাকে পাক্কা ৩০ মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখলো ওখানে! এলেন ছোট স্যার, মাঝারী স্যার, বড় স্যার; মাঝারী স্যার এসে আমাকে তবুও একবার বলে গেলেন যে ঐখানে (যেখানে ৩টি কম্পিউটার রাখা তার বামে যাত্রীদের বসার জায়গায়) আমি যেনো একটু বসি। অমি অনেক কষ্টে মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে তাকে আস্বস্ত করলাম যে আমি ঠিক আছি। ভেতরে ভেতরে আমার অরিজিনাল আগুন তো প্রায় গলা, নাক, কান আর মস্তিস্কের কয়েক ন্যানো মিটারের মধ্যে এসে গিয়েছিলো। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলাম যে আমার পাসপোর্টটি কি করে সাড়া জিয়া এয়ারপোর্ট-এ ঘুড়ে বেড়াচ্ছে! তারপরে যে ওটা কোথায় গেলো! মিনিট দুয়েকের মধ্যেই আর একজন স্যার এলেন! এসেই কাউন্টারের অফিসারকে ধাতানি! অ্যাই ওনাকে দাঁড় করিয়ে রাখছো কেনো, ছেড়ে দাও। বলেই এমন ভাব করে আমার দিকে হাত নাড়ালো যেনো আমার নেংটোকালের বন্ধু! এদিকে অফিসার আমাকে বললেন, আপনি একটু দাঁড়ান, আপনার পাসপোর্টটা এখনো আসে নাই। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম, যদিও অঘ্নুৎপাত হচ্ছিলো হৃৎপিন্ডের কাছেধারে কোথাও। তবুও ব্যাপক ক্ষয়খতি এড়াতে আমি পেশী শক্তকরে অপেক্ষা করলাম। এবার এলেন একজন কর্তাগোছের স্যার, হাতে আমার পাসপোর্ট (পরে বুঝেছি)! আমি দূর থেকে ভাবছিলাম, এযে কি মাজেজা নিয়ে আসে কে জানে! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এখনো মিনিট চল্লেশেক সময় আছে। যাই হোক সেই বড় কর্তা এসে বললেন, কিছু মনে করবেন না, আপনার ভারতীয় ভিসা দেখে আপনাকে অযথাই কষ্ট দিয়েছে! ঠিক এই সময় আমার এক পুরনো সহকর্মী সামনে এসে দাঁড়ালো, সেও এখন একজন ইমিগ্রেশনের কর্তা! আমি তাকে দেখে ঠিক বিরক্ত হবো না খুশি হবো বুঝতে পারছিলাম না, কিছু বলার আগেই তিনি আমাকে বললেন, ‘নেক্সট টাইম তৈরী হয়েই আপনার ওখানে যাবো। তবে এখন ভালো ভাবে যান স্যার!
মাঝে মাঝে আমি ভাবি এটি কি আমাদের এয়ারপোর্ট? আর এরা কি আমাদের ইমিগ্রেশন অফিসার? নাকি অন্য এরা নষ্ট কোন দেশের!
@Keshab Adhikary,
আপনারটা কিছুইনা… 🙂 :-)। তার উপর আপনার সৌভাগ্যবান পাসপোর্ট সারা এয়ারপোর্ট ঘুরে বেড়ানোর সুযোগও পেলো। আমার হতভাগা পাসপোর্টটার সেই সুযোগটাও হ’লো না।
ভালো থাকবেন।