যৌনতার প্রশ্নে কি স্বাভাবিক আর কি অস্বাভাবিক তার বিচার খুব কঠিন। যেমন বালকদের মধ্যে তাদের থেকে অনেক বেশী বয়সের মহিলাদের প্রতি যৌন আকর্ষন দেখা যায়। যা অসামাজিক মনে হলেও জৈবিক দিয়ে স্বাভাবিক।
সমকামি বিবাহ এবং সমকামীতাকে আইন সিদ্ধ করতে আগের দুই দশক ঘোরতর আন্দোলন হয়েছে। এবং এই বিতর্কে একটি ভরকেন্দ্র হচ্ছে সমকামিতা প্রকৃতিসিদ্ধ না প্রকৃতিবিরুদ্ধে? নাকি পরিবেশ জনিত শুধু একটি বিশেষ মানসিক গঠন? অর্থাৎ সমকামীদের মস্তিস্ক বা দেহের গঠন বা জেনেটিক্সে এমন কিছু আছে যার জন্যে তারা সমকামী? এটি যদি হয়ে থাকে তাহলে সমকামিতার আইগত অধিকার পাওয়া সহজ হয়। যদি না হয়, তাহলে প্রমানিত হবে, সমকামী লোকেদের স্বাভাবিক যৌন জীবনে ফেরানো সম্ভব।
এটি বিলিয়ান ডলারের প্রশ্ন। এই নিয়ে গত দুই দশকে বহু গবেষনা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। এই সাবজেক্ট নিয়ে লেখার সব থেকে বড় অসুবিধা হচ্ছে এই লাইনের অধিকাংশ গবেষনাই এক দশকের বেশী টেকে নি। পরবর্ত্তীতে দেখা গেছে সেই রেজাল্ট ভুল ছিল বা পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল গবেষনায়। সুতরাং কোথাও কোন জার্নালে পেপার ছাপিয়েছে মানেই সেটা ফ্যাক্ট এবং ট্রুথ-ধ্রুব সত্য-এমন না ভাবাই বুদ্ধিমানের কাজ। এই ব্যাপারে ২০০৮ এর কাজ ২০০৯ সালে ভুল প্রমানিত হয়েছে এমনও আছে। পদ্ধতিগত সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে বিশুদ্ধ গে বা লেসবিয়ান পাওয়া। বিশেষত নারী সমকামীদের প্রায় সবাই উভকামী বা বাই-সেক্সুয়াল[১]। তাই সাবধানে আমরা দেখব আদৌ এই ব্যাপারে আমরা নির্দিষ্ট করে কিছু জানতে পেরেছি কি না। এই ব্যাপারে জেনেটিক্স, ফর্মোন, জমজ বালক-বালিকা , হমোসেক্সুয়ালদের মাতৃকূল নিয়ে গবেষনা, মস্তিস্কের গঠন-এবং আরো অনেক কিছু নিয়েই গবেষনা হয়েছে। এই প্রবন্ধে সব কিছু লেখা সম্ভব না। আমি একটি ওভারভিউ দেবার চেষ্টা করব মাত্র।
-
ফর্মোনঃ সুইডেনে এ ব্যাপারে সব থেকে বিখ্যাত নাম ডঃইভাঙ্কা স্যাভিক। ডঃ স্যাভিকের কাজ সমকামী আন্দোলনকারীরা খুব ব্যবহার করে থাকেন। সুতরাং সত্যটা জানা উচিত। ডঃ স্যাভিক ছেলেদের ঘাম আর মেয়েদের প্রশ্বাব থেকে এক জ়াতীয় জৈব আবিস্কার করেন। হর্মোনের নির্জাস এই জৈবকে উনি ফর্মোন বলছেন। দেখা গেছে গে এবং নারীরা পুরুষ ফর্মোনে একই ভাবে আকৃষ্ট হয়। এর থেকে উনি সিদ্ধান্তে আসেন সমকামিতা ‘অর্জিত ব্যাবহার’ নয়-তার জৈবিক ভিত্তি আছে [২]।
এর পরে ডঃ ওয়ারেন থ্রম্পটন প্রশ্ন তোলেন কিভাবে এই পরীক্ষা থেকে সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব যে ফর্মন সিলেকশনের পেছনে অর্জিত জ্ঞান বা ব্যাবহারের ভিত্তি নেই? জন্মের থেকেই গে দের ওই ফর্মোনই পছন্দ ছিল? এই ব্যাপারে ডঃস্যাভিকও স্বীকার করেন-গে দের নারীরদের মতন ফর্মন প্রীতি জন্মগত না অর্জিত কিছুই বলা সম্ভব না। ফলে এতদ্বারা প্রমান হইল সমকামী ব্যাবহারের পেছনে জৈবিক ভিত্তি আছে-এমন সিদ্ধান্ত ডঃ স্যাভিকের কোন গবেষনা থেকেই আসা যায় না-এবং ডঃ স্যাভিক তা নিজে বারন করছেন! [৩] **********************
Dr. Savic:
The Associated Press story came out today about your study and I think they have reported it incorrectly.First I am wondering if you can help me understand things more clearly. I am enclosing a link to the AP report: http://www.forbes.com/entrepreneurs/feeds/ap/2006/05/08/ap2729698.htmlFirst, in the report the reporter writes: “It’s a finding that adds weight to the idea that homosexuality has a physical underpinning and is not learned behavior.”
THIS IS INCORRECT AND NOT STATED IN THE PAPER
As I understand your article in PNAS, you specifically offer learning as a hypothesis for your findings. Isn’t this true? I believe the reporter is misleading on that point.
THIS IS VERY UNFORTUNATE; AND YOU ARE ABSOLUTELY RIGHT
Second, the AP report says: “In lesbians, both male and female hormones were processed the same, in the basic odor processing circuits, Savic and her team reported.” I understand that the study did show that AND (male condition) was processed akin to other odors by lesbians. But wasn’t there also some hypothalamic processing of EST (female condition) by lesbians?
YES! AND ALSO CONJUNCTIONAL ANALYSIS SHOWED A COMMON HYPOTHALAMIC CLUSTER IN THE HYPOTHALAMUS:
It was weaker and apparently not in the anterior hypothalamus but didn’t you also find dorsomedial and paraventricular hypothalamic activation? So it would be inaccurate, would it not, to say “both male and female hormones were processed the same?”
YOU ARE FULLY CORRECT
্যাইহোক ফর্মনের সাথে সমকামীদের গঠন জ়ৈবিক কি না, তা নিয়ে কোন সম্পর্ক নেই। সেই রকম কিছু গবেষকরাও দাবী করেন নি।
-
গে জীনঃ জেনেটিক্সের সাথে সমকামিতার সম্পর্ক আরেক্ট ধোয়াশাপূর্ণ বিতর্ক। এই ব্যাপারে কোন প্রমানিত বৈজ্ঞানিক সত্য নেই। সবটাই হয় ওয়ার্ক ইন প্রগ্রেস বা হাইপোথিসিস। এই ব্যাপারে মূলত দুটী ব্যাপার নিয়ে গবেষনা হয়েছে ক) আইডেন্টিক্যাল টুইন খ) সমকামী পুরুষের মাতৃকূল নিয়ে। এই ব্যাপারে গে এবং লেসবিয়ানদের আলাদা করে নিয়ে গবেষনা করা হয়। কারন এই ধরনের এম্পিরিক্যাল স্ট্যাডি করে মেয়েদের মধ্যে কিছু পাওয়া যায় নি বা গেলেও সেহেতু মেয়েদের মধ্যে বাই সেক্সুয়ালের সংখ্যা অনেক বেশী নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না। আইডেন্টিক্যাল টুইন এর ওপর গবেষনা নিয়ে কিছু আলোকপাত করা দরকার। এদের জেনেটিক গঠন একই রকম সুতরাং টুইনদের দুজনেই যদি গে হয়, তাহলে বোঝা যাবে হয় একই ধরনের জেনেটিক্স ফ্যাক্টর থেকে গে তৈরী হচ্ছে বা মাতৃজঠরে কোন পরিবর্তন থেকে এরা গে হচ্ছেন। এই ব্যাপারে সব থেকে বৃহত্তম স্যাম্পল নিয়ে কাজ হয়েছে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে-প্রায় ১৪০০০ আইডেন্টিক্যাল টুইন নিয়ে। দেখা গেছে এক ভাই গে হলে অন্যভাই এর গে হওয়ার সম্ভাবনা ৩৪%। লেসবিয়ানদের ক্ষেত্রে এটা ৩০%। অন্যান্য স্টাডিতেও এর কাছাকাছি ফল পাওয়া গেছে [৪]। ১০০% বা তার ধারে কাছেও নেই এই সংখ্যা। তবুও ৩০% সংযোগ যথেষ্ঠ বেশী এবং ডঃ বেইলীর মত বিজ্ঞানীরা মনে করেন সেহেতু আইডেন্টিক্যাল টুইনরা একই ফ্যামিলি বা সমাজ বা যৌন পরিবেশে মানুষ হয়েছে, ৩০% ক্ষেত্রে দুই ভ্রাতাই সমকামী হয়েছে। এটি প্রমান করার জন্যে ডঃ বেইলী আরেকটি পরীক্ষা করেন। তাতে দুই জমজ ভ্রাতার মধ্যে একটি সমকামী এবং অন্যজন স্বাভাবিক ছিল। দেখা গেছে একই সমাজ এবং পরিবারে থেকেও তাদের শিশু বয়েসে বেড়ে ওঠার ঘটনা দুজনে আলাদা ভাবে নিয়েছে [৫]। অর্থাৎ দেখা আচ্ছে একই পরিবেশে মানুষ, একই জেনেটিক গঠনের হলেও দুজনের সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন আলাদা হতে পারে-শুধু যদি বিশেষ কোন ঘটনা-যেমন বয়স্ক পুরুষ দ্বারা ধর্ষন ইত্যাদি তাদের জীবনে আলাদা হয়। পৃথিবীর বৃহত্তম টুইন স্টাডিগুলি সমকামিতার সাথে জীনের সম্পর্ক নস্যাত করে [৬]।
আরেকটি ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছেন ডীন হ্যামার। উনি ১৯৯৪ সালে ৭৬ টি গেএর ওপর পরীক্ষা চালিয়ে সিদ্ধান্তে এসেছিলেন গে দের মাতৃকূলে সমকামীর সংখ্যা বেশী। উনারা সেই থেকে Xq28 একটি জেনেটিক মার্কার প্রস্তবনা করেন যা গে-জ়িন নামে জনপ্রিয় হয়। পরবর্ত্তীকালে বেইলী এবং ম্যাকনাইট একই পরীক্ষা চালিয়ে হ্যামারে রেজাল্ট পান নি এবং তারা এই গেজীন তত্ত্বকে ভুল বলে প্রমান করেন [৭]। রাইস এবং এন্ডারসন সায়েন্সে প্রকাশিত একটি পত্রে ৫৭ টি গের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে Xq28 জীনতত্ত্বকে সম্পূর্ণ বাতিল প্রমান করেন [৮]। পরবর্ত্তীকালে জেনোম প্রজেক্টে দেখা গেছে সমকামীদের মাতৃকূলের সাথে সম্পর্কের জন্যে Xq28 ছারা আরো অনেক মার্কার দায়ী-যেমন 8p12, 7q36 and 10q26। কিন্ত ইনারাও বলছেন এর থেকে মোটেও বলা যায় না এই মার্কার গুলির জন্যে সমকামিতা হয়ে থাকে! কারন তাদের স্ট্যাটিস্টিক্যাল সাম্পলিং স্পেস খুব ছোট! পরবর্ত্তীকালে এই নিয়ে হিউমান জেনোম প্রজেক্টে আরো কাজ হয়েছে-কিন্ত কোন সিদ্ধান্তে আসা যায় নি। হেরিডিটিক্যাল ট্রেটের ইনহেরিটান্স নিয়ে ডঃ কলিনস (২০০৭) জেনোম প্রজেক্টের ফলাফল বিশ্লেষন করতে গিয়ে মন্তব্য করেন-মানব জাতির সব অভিব্যাক্তির মধ্যেই (রাগ, গোয়াত্তুমি, আবগ) জেনেটিক্সের জটিল ছাপ খুঁজে পাওয়া যাবে-কিন্ত তার মানে এই নয়-এইসব অভিব্যাক্তির সব কিছুই জেনেটিক্স নিয়ন্ত্রন করছে। বরং তা পরিবেশ এবং সমাজ দ্বারাই বেশী নিয়ন্ত্রিত [৯]। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে ডঃ কলিন্স হিউম্যান জেনোম প্রজেক্টের অধিকর্তা ছিলেন বহুদিন।
অর্থাৎ ব্যাপারটা দাঁড়াল এই-আমাদের রাগ ভালোবাসার জন্যেও নিশ্চয় জীনেরাই দ্বায়ী। কিন্ত সেটাই সব না। পরিবেশ এবং সমাজই শেষ নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়ায়। আরো ভাল ভাবে বললে-এই সমকামিতা ব্যাপারটা হয়ত সবার মধ্যেই সুপ্ত ভাবে আছে-বিশেষ কিছু সামাজিক পরিবেশ বা ঘটনা, তা ট্রিগার করতে পারে। আবার রাগ বা আবেগের মতনই এ চিরস্থায়ী নয়। চিকিৎসা করলে সেরে যাবে।
এছারাও আরো কিছু দাবী ঊঠেছে মস্তিস্কের গঠন এবং সমকামিতা নিয়ে। তৃতীয় ইন্টারস্টিয়াল নিউক্লিয়াস-এন্টারিয়াল হাইপোথ্যালামাস (INAH3) এর গঠনে মেয়ে এবং গেদের কিছু সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায় (সিমন ল্যাভে,১৯৯১) [৮]। কিন্তু বাইনের (২০০১) কাজ থেকে জানা যায় গেদের INAH3 ছোট হলেও নিউরনের সংখ্যা স্বাভাবিক পুরুষদের সমান যা নারীর ক্ষেত্রে কিছু কম থাকে [৮]। তাছাড়া সিমন ল্যাভের পরীক্ষায় স্যাম্পল সাইজ ছিল ৩৭-তার মধ্যে তিনজন গের INAH3 স্বাভাবিক পুরুষদের মতনই ছিল। আবার তিনজন স্বাভাবিক পুরুষের INAH3 মেয়েদের মতন ছোট ছিল। সুতরাং INAH3 স্টাডি থেকেও নিশ্চিত ভাবে কিছুই বলা যায় না। সব থেকে বড় কথা IANH3 মানুষের ব্যাবহারের ফলেও বদলায়।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে এখনো পর্যন্ত যতটুকু আবিস্কার হয়েছে, তার ভিত্তিতে বলা যায় সমকামীদের পেছনে জীন বা পরিবেশের চেয়েও, অর্জিত গুনাবলীর ভূমিকা বেশী। সমকামীদের এক্সক্লুসিভ জিন বলে কিছু নেই-সেটা জেনোম প্রজেক্ট থেকেই প্রমানিত। সুতরাং চিকিৎসার মাধ্যমে সমকামীদের স্বাভবিক যৌনজীবনের ফেরানো সম্ভব-এটির দিকেই বিজ্ঞানের পাল্লা আপাতত ভারী।
[১] Murray, B. (2000). Sexual identity is far from fixed in women who aren’t exclusively heterosexual. Monitor on Psychology, 32(3), pp. 64-67.
[২] http://www.nytimes.com/2005/05/10/science/10smell.html?_r=1&incamp=article_popular
[৩]http://www.narth.com/docs/smell.html
[৪]Bailey, JM; Dunne,MP; Martin,NG (2000): Genetic and Environmental influences on sexual orientation and its correlates in an Australian twin sample. J. Pers. Social Psychology 78, 524-536
[৫]Bailey, NM; Pillard,RC (1995): Genetics of human sexual orientation. Ann. Rev. Sex Research 6, 126-150.
[৬] Hershberger, SL (1997): A twin registry study of male and female sexual orientation. J. of Sex Research 34, 212-222.
[৭] Wilson, G.D., & Rahman, Q. (2005). Born Gay: The Biology of Sex Orientation. London: Peter Owen Publishers
[৮] Rice, Anderson, Risch and Ebers (1999) Male Homosexuality: Absence of Linkage to Microsatellite Markers at Xq28. Science 23(5414): pp. 665-667. Retrieved 2007-01-18
http://mypage.iu.edu/~bmustans/Mustanski_etal_2005.pdf
[৯] http://www.lifesitenews.com/ldn/2007/mar/07032003.html
[…] এবং ক্ষেত্রবিশেষে দুর্বলতা তুলে ধরে (সমকামিতার কি কোন জৈবিক ভিত্তি আছে?) । ফ্রয়েড যে কথাটা অনেক আগেই বলেছিলেন […]
আমার বক্তব্যটি একটি ভিডিও করে পাঠালাম
http://www.youtube.com/watch?v=Ta4XiHwtgj4
বিপ্লব পাল কে ধন্যবাদ এরকম একটা প্রাঞ্জল বিতর্ক উপস্থাপ্নের জন্য। সমকামিতা চিকিতসার মাধ্যমে ভাল হয় কিনা, এটাই মূল প্রশ্ন। এব্যাপারে জানার জন্য আমাদেরকে আবশ্যই ইতিমধ্যে হয়ে যাওয়া গবেষনার ফলাফল গুলো সাহায্য করতে পারে। কিন্তু গবেষনা পদ্ধতির প্রশ্নে বিতর্কটার সুরাহা হওয়া দরকার সবার আগে।
>>
সমকামিতা কোন রোগ না। কোন বাবার সাথে তার কন্যার যৌন সম্পর্ক থাকলে সেটাও রোগ না। এমন কি পিডো ফিলিয়া বা বালক বালিকার প্রতি যৌন আকর্ষন ও রোগ না। এ পি এ বা আমেরিকান সাইকোলজিস্ট এসোসিয়েশন সব কিছুই রোগ বলে মনে করে না।
প্রশ্নটা রোগের না। প্রশ্নটা হচ্ছে কোন সমকামী যেন না ভাবেন, তারা সমাকামী হয়েই জন্মেছেন। ইচ্ছা করলেই তারা হেটারোজীবনে ফিরতে পারে।
অভিজিত,
আপনার আগেকার সেই লেখা আর বিপ্লবের এই লেখায় কিছুটা মত পার্থক্য ছিল। চিকিতসায় ভাল কিনা তার চেয়েও মনে হয় বড় প্রশ্ন হতে পারে সমকামিরা স্বেচ্ছায় চিকিতসায় রাজী হবে কিনা। তাদের কাছে তো তাদের উপায়টাই স্বাভাবিক, যদি না তাদের কাছে মনে হয় এটা অস্বাভাবিক। আমাকে কেউ চিকিতসা করে সমকামি বানাতে গেলে আমি কি আর মেনে নেব?
তবে পার্থক্য যাই থাক, এ জাতীয় লেখা আমাদের দেশের মুলধারা সংবাদপত্রে ও মিডিয়ায় আসা খুব দরকার। নাহলে সমকামিদের প্রতি মানুষের ঘৃনা কোনদিন যাবে না। বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাধার সাহস কার আছে সেটা হল কথা।
বিপ্লব পাল কে ধন্যবাদ এরকম একটা প্রাঞ্জল বিতর্ক উপস্থাপ্নের জন্য। সমকামিতা চিকিতসার মাধ্যমে ভাল হয় কিনা, এটাই মূল প্রশ্ন। এব্যাপারে জানার জন্য আমাদেরকে আবশ্যই ইতিমধ্যে হয়ে যাওয়া গবেষনার ফলাফল গুলো সাহায্য করতে পারে। কিন্তু গবেষনা পদ্ধতির প্রশ্নে বিতর্কটার সুরাহা হওয়া দরকার সবার আগে।
তানা হলে আবার গোরা থেকে শুরু করতে হবে। প্রথমে আমাদেরকে মোটামুটি একমত হতে হবে যে, কোন গবেষনা পদ্ধতি বেশি নির্ভুল বলে স্বিকৃ্ত। আশাকরি আলোচনাটা আপনারা চালিয়ে যাবেন। এটা একটা আনুরোধ।
অভিজিত,
ধৈর্য্য ধরায় কাজ হচ্ছে দেখলাম। ধণ্যবাদ।
অনেক আগে আভিজিতের এ বিষয়ে একটি লেখা পড়ে সমকামীতা সম্পর্কে আমার ধারনা বদলে গেছিল। বিশেষ করে আআর জানা ছিল না যে এ ব্যাপারটা শুধু মানুষ না, অন্য প্রানীদের মঝেও দেখা যায়।
বিপ্লব যা বললেন তাতে মনে হচ্ছে যে এটা আসলে জেনেটিক ডিফেক্ট নাকি পরিবেশের প্রভাব তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে কারন যাই থাক, চিকিতসার মাধ্যমে যে এদের স্বাভাবিক যৌন জীবনে ফেরানো যায় এটাই বেশী গুরুত্ত্বপূর্ণ যা সবার বুঝতে হবে। কথা থাকে এ চিকিতসায় কতজন সমকামী স্বেচ্ছায় রাজী হবে? তাদের কাছে তো তাদেরটাই স্বাভাবিক মনে হয় নিশ্চয়ই।
সমকামীতা ছাড়া আরো অনেক ধরনের অস্বাভাবিক (যা বেশীরভাগ মানুষ করে না) যৌন তৃপ্তির ব্যাপার আছে, সেগুলো নিয়ে কি এত গবেষনা হয়েছে বা হচ্ছে? যেমনঃ কিছু পুরুষ আছে যারা মহিলাদের থেকে মার খেয়ে এক অদ্ভূত আনন্দ পায় যা তাদের সেক্স ড্রাইভ বাড়ায়। পাশ্চাত্যের প্রায় সব দেশেই এ ব্যাপারে প্রফেশনাল মহিলা আছে যারা রীতিমত আইন সিদ্ধ উপায় ব্যাবসা চালায়। সে শ্রেনীর পুরুষরা সেসব মহিলা মা মিষ্ট্রেসদের কাছে গিয়ে গাটের পয়সা খরচ করে চাবুকের বাড়ি বা লাথি খায়। এ ব্যপারটাকে Femdom বলা হয়। এসব নিয়ে কি গবেষনা হচ্ছে, নাকি এটা সমকামীতা জাতীয় মত কিছু নয়? আমরা সাধারনভাবে কিন্তু এ সব বাপারকেই “বিকৃতি” বলি।
@আদিল মাহমুদ,
আপনি বলেছেন –
‘চিকিতসার মাধ্যমে যে এদের স্বাভাবিক যৌন জীবনে ফেরানো যায়’ – আমার মনে হয়না এটা আজকের দিনের ডাক্তাররা ঠিক এভাবে মনে করেন। আসলে আপনি যদি আজকের চিকতসার কথা বলেন – সমকামিতাকে এখন কোন ‘রোগ’ বলে চিহ্নিত করা হয় না। কাজেই ‘রোগ সাড়াবার’ প্রশ্ন খুব একটা আসে না। আমি কিন্তু বিপ্লবের সাথে আলোচনায় দেখিয়েছি (উপরে দেখুন) শুধু মানুষের মধ্যে নয় সব প্রানীর মধ্যেই সমকামিতার অস্তিত্ব আছে। কাজেই সমকামিতা একটি বাস্তবতা। আরো জানা গিয়েছে যে, সমকামিতার ব্যাপারটা কোন জেনেটিক ডিফেক্ট নয়। একটা সময় ভাবা হত এটা এক ধরোনের বিকৃতি। চিকিৎসকেরা একসময় বিভিন্ন থেরাপি দিয়ে তাদের চিকিৎসা করতেন। সেই বিকৃতি সাড়াতে কিন্তু পরে দেখা গেছে অধিকাংশই ‘রোগি’ই আবার তারা সমকামিতায় ফিরে যায়। এ ধরনের অনেক ডকুমেন্টেড কেস আছে। ইন্টারনেটে সার্চ করলেই পাওয়া যাবে। আসলে বহু ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে যাবার পর ডাক্তাররা এবং অন্যান্য অনেকেই আজ মেনে নিয়েছেন, সমকামিতা যৌনতার একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। সেজন্যই কিন্তু ১৯৭৩ সালের ১৫ ই ডিসেম্বর American Psychiatric Association বিজ্ঞান্সম্মত আলোচনার মাধ্যমে একমত হন যে সমকামিতা কোন নোংরা ব্যাপার নয়, নয় কোন মানসিক ব্যধি। এ হল যৌনতার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। ১৯৭৫ সালে American Psychological Association একইরকম অধ্যাদেশ দিয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালেও একই কথা বলেছেন মনোরোগি বিশেষজ্ঞরা। আসলে পশ্চিমা বিশে সকল আধুনিক চিকিৎসকই আজ এ বিষয়ে একমত।
মানব জীবনে যৌনতার ক্যানভাস সুবিস্তৃত। জীববিজ্ঞানী অধ্যাপক কিন্সে বহু আগেই সেটা দেখিয়ে গেছেন। আমার সমকামিতা বিষয়ক প্রবন্ধেও আমি যৌনতার ক্যানভাস নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছিলাম।
ব্যাসিক্যালি ব্যাপারটা যা বুঝেছি–
জীনের নানান মার্কারের সাথে হমোদের একটা সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে-এরকম অনেক মার্কার আছে -ধর ২০ টা এমন মার্কার পাওয়া গেল-যাদের কোরিলেশন এই রকম
এবার আমাদের সবার মধ্যেই ওগুলো কমবেশী আছে। মানে প্রত্যেকেই সমকামী হতেই পারে। পুরুষের প্রতি পুরুষের আকর্ষন নেই, নারীর
প্রতি নারীর আকর্ষন নেই এমনত না-কম বেশী সবার মধ্যেই আছে। এখন সামাজিক চাপে, একটা অপরাধ বোধ থেকে সেই আকর্ষনটা সবাই চেপে রাখে।
যারা রাখে না, বা রাখতে পারে না। তারাই হমো হয়। সব থেকে বড় কথা মেয়েদের মধ্যে যারা লেসবিয়ান কেও এক্কলুসিভলি লেসবিয়ান হয় না। সবাই বাই সেক্সুয়াল। অর্থাৎ দুই ধরনের সেক্স ই তাদের ভাল লাগে। রোমান সমাজেও মিলিটারীদের এক বৃহৎ অংশ বাইরের পোষ্টিং এর সময় সবাই গে হয়ে যেত-আবার ঘরে ফিরে বৌ নিয়ে সংসার করত।
আরো একটা উদাহরন দিই। অধিকাংশ বাবাই নিজের মেয়েদের প্রতি তীব্র ভাবে যৌন আকর্ষনে ভোগে-ম্যামালসদের মধ্যে এটা প্রমানিত সত্য-মানুষের মধ্যে এটা থাকবে না এমন হয় না। কিন্ত যেহেতু কন্যার সাথে সেক্স মানব সমাজে ঘৃণিত, সেই সমাজের চাপেই, বাপেদের আকর্ষনে যৌনতা আর থাকে না। যেসব বাবা
এই সামাজিক চাপটা নেই না-তাদের অনেকেই নিজের মেয়েকে মলেস্টেশন করে-খবরে ত এরকম ঘটনা প্রচুর আসে।
পাঞ্জাবীদের মধ্যে শুনেছি এটা খুব বেশী হয়। বেশ কিছু আদিবাসি গোষ্টির মধ্যে এটা আবার কাস্টম মেয়েদের হেটারোসেক্সুয়াল এক্সপেরিয়েন্স বাবার সাথে হাত ধরেই শুরু হয়।
তাহলে যেটা দেখা যাচ্ছে-সেটা হচ্ছে জেনেটিক্সই সব কিছু নিয়ন্ত্রন করে না। সামাজিক গঠন, সামাজিক চাপেও আমরা, যা আমাদের স্বাভাবিক যৌনতা, সেটা করি না।
আমি প্রথমেই বিপ্লবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি স্পর্শকাতর এ বিষয়টি একটি গঠনমূলক আলোচনার জন্য। প্রান্তিক বিষয়গুলো নিয়ে যত বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলোচনা হবে, ততই তা আমাদের মানসিক প্রজ্ঞার বিবর্ধনে সহায়তা করবে, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। বিপ্লবের লেখাটি নিঃসন্দেহে সে দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ লেখা। তবে বিপ্লব যে দিক থেকে ব্যাপারটি দেখেছেন, এবং যে উপসংহারে পৌঁছিয়েছেন, আমার উপসংহার একটু ভিন্ন।
প্রথম কথা হচ্ছে, সমকামিতার ব্যাপারটি জৈবিক হোক, অজৈবিক হোক, এটা কিন্তু বাস্তবতা। শুধু মানুষের ক্ষেত্রে নয়, পুরো প্রানীজগতের ক্ষেত্রেই। এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করার চেষ্টা বোকামি। এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হল, সমকামিতাকে ব্যাখ্যা করার সঠিক বৈজ্ঞানিক মডেল আমাদের হাতে আছে কিনা, নাকি কেবল ‘সমাকামিতা অস্বাভাবিক’ বা ‘জেনেটিক ডিফেক্ট’ ইত্যাদি বলেই ছেড়ে দেব? এ প্রসঙ্গে জীববিজ্ঞানী অধ্যাপক জোয়ান রাফগার্ডেনের উক্তিটি খুবই প্রাসঙ্গিক –
My discipline teaches that homosexuality is some sort of anomaly. But if the purpose of sexual contact is just reproduction, then why do all these gay people exist? A lot of biologists assume that they are somehow defective, that some development error or environment influence has misdirected their sexual orientation If so, gay and lesbian people are mistake that should have been corrected a long time ago (thru Natural selection), but this hasn’t happened. That’s when I had my epiphany. When a scientific theory says something wrong with so many people, perhaps the theory is wrong, not the people.
সমাকামিতাকে একসময় ‘জেনেটিক ডিফেক্ট’ হিসবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সমামিতার প্রবনতা কোন জেনেটিক ডিফেক্ট নয় এটা অনেক আগেই প্রমাণিত হয়ে গেছে। কিভাবে? কারণটা সংখ্যাধিক্য। ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী আলফ্রেড কিন্সের রপোর্ট অনুযায়ী প্রতি দশ জন ব্যক্তির একজন সমকামী । কিন্সের গবেষণা ছিল সেই চল্লিশের দশকে। সাম্প্রতিক কালে (১৯৯০) ম্যাকহৃটার এবং স্টেফানি স্যান্ডার্স এবং জুন ম্যাকহোভারের গবেষনা থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে শতকরা প্রায় চোদ্দ ভাগের মত সমকামি রয়েছে। ১৯৯৩ সালে ‘জেনাস রিপোর্ট অন সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার’ থেকে জানা যায়, পুরুষদের মধ্যে প্রায় শতকরা নয় ভাগ এবং মহিলাদের মধ্যে শতকরা ৪ ভাগ সমকামি রয়েছে । কাজেই সংখ্যা হিসেবে সমকামিদের সংখ্যাটা কিন্তু এ পৃথিবীতে কম নয়। সায়েন্টিফিক আমেরিকান মাইণ্ড-এর ২০০৬ এর একটি ইস্যুতে সমকামীদের সংখ্যা সমগ্র জনসংখ্যার ৩ থেকে ৭ ভাগ উল্লেখ করা হয়েছে। খুব ‘কন্সারভেটিভ’ এস্টিমেটও যদি ধরা হয় সেটা কোভাবেই পৃথিবীর সামগ্রিক জনসংখ্যার ৫ ভাগের কম হবে না। আর জেনেটিক ডিফেক্ট সে তুলনায় ‘রেয়ার ইভেন্ট’। ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা যাক। যেমন হান্টিংটন ডিজিজ – একটি জেনেটিক ডিফেক্ট হিসেবে গন্য করা হয়। কারণ এটি ঘটে প্রতি ১০০,০০০ জনে ৪ থীক ৭ টি। এরকম আরো জেনেটিক ডিফেক্ট আছে যেগুলো ঘটে খুব বেশি হলেও ৫০,০০০ জনে একটি করে ঘটে। এর সাথে তুলনা করলে বোঝা যায় – জেনেটিক ডিফেক্ট ( ৫০, ০০০ এ ১ টি) এর তুলনায় সমকামিতার এই হার ২৫০০ গুন বেশি (১০০ জনে ৫ জন ধরে হিসেব করলে)। তাই বিজ্ঞানীরা আজ বলেন – Homosexuality is not a malfunctioning … There is no question about it – homosexuality is neither a genetic defect nor a genetic disease।
প্রানীজগতেও কিন্তু সমকামিদের সংখ্যা নেহাৎ মন্দ নয়। বনবো শিম্পাঞ্জিদের সমকামিতা প্রবণতা এতই বেশি যে এটা হেটারোসেক্সুয়াল রিলেশনশিপের সাথেই তুলনীয়। japanese macaque নিয়ে গবেষনা করে পল ভেসি এবং লিন্ডা উলফি প্রমুখ গবেষকরা গবেষনা করে সমকামিতার প্রবণতা লক্ষ্য করেছেন। প্রাইমেট ছাড়াও সমকামি আচরণ লক্ষ্য করা গেছে বিভিন্ন স্তন্যপায়ী জীবের ক্ষেত্রেও। এদের মধ্যে হাতি, সিংহ, চিতাবাঘ, হায়না, ক্যাঙ্গারু, হরিণ, জিরাফ, পাহাড়ি ভেড়া, আমেরিকা, ইউরোপ ও আফ্রিকার মোষ, জেব্রা উল্লেখযোগ্য। পাখিদের মধ্যে পেঙ্গুইন, ধুসর পাতিহাঁস, কানাডা পাতিহাঁস, কালো রজহাঁস, বরফী পাতিহাঁস, মিউট রাজহাঁস, শকুন সহ অনেক প্রাণীর মধ্যে সমকামিতার সুস্পষ্ট উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সরীসৃপের মধ্যে সমকামিতার আলামত আছে কমন অ্যামিভা, অ্যানোল, গিরগিটি, স্কিনক, গেকো মাউরিং, কচ্ছপ, রাটেল স্নেক প্রভৃতিতে। সমকামিতার অস্তিত্ব আছে বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙ, স্যালাম্যান্ডারের মত উভচর এবং বিভিন্ন মাছেও। গবেষকরা অনেকদিন ধরেই এ নিয়ে গবেষণা করছেন। প্রসঙ্গতঃ লু হুজি, কর্ণেল লক, জিউনার, জুরের, হাবাক, উইলিয়ামস, শের জং, জেন গুডোয়ল প্রমুখ বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমলব্ধ গবেষনার কথা উল্লেখ করা যায়। এদের গবেষণার মধ্য দিয়ে উঠে আসতে থাকে প্রানীজগতের নানা অজানা তথ্য। আবার অন্যদিকে অ্যালেন, প্রেনটিস, অ্যালেন লিস, জেমসন, মারফি প্রমুখ বিজ্ঞানীরা প্রানীজগতের যৌনতা বিষয়ে ব্যাপক গবেষনা চালিয়েছেন। তাদের গবেষনায় প্রানীজগতে সমকামিতার সুস্পষ্ট নিদর্শন ধরা পরে। সে নিদর্শনগুলোর নমুনা জানতে চাইলে পাঠকেরা জীববিজ্ঞানী ব্রুস ব্যাগমিলের লেখা ‘বায়োলজিকাল এক্সুবারেন্স : এনিমেল হোমোসেক্সুয়ালিটি এন্ড ন্যাচারাল ডাইভার্সিটি’ বইটি পড়ে দেখতে পারেন। বইটিতে ব্রুস ব্যাগমিল প্রকৃতিতে ৫০০টির মত প্রজাতিতে প্রজাতিতে সমকামিতা এবং রূপান্তরকামিতার অস্তিত্ব সনাক্ত করেছেন। কাজেই প্রকৃতিতে সমকামিতার অস্তিত্ব সবসময় ছিলো, আছে, এবং থাকবে।
আরেকটি জিনিস মনে রাখতে হবে – সমকামিতা যদি ‘জেনেটিক ডিফেক্ট’ হয়ে থাকে তা হলে ন্যাচারলা সিলেকশনের ছাকনির মধ্য দিয়ে মিলিয়ন বছর ধরে যাবার ফলে বহু আগেই বাতিল হয়ে যাবার কথা ছিলো। চিন্তা করে দেখুন – প্রকৃতিতে হাজার হাজার জিনিস বিলুপ্ত হয়ে গেছে – সমকামীপ্রবনতা হয়নি। সমকামিতা নামক প্রবনতাটি প্রানি জগতে বহাল তবিয়তেই রাজত্ব করছ, তা সে যত ক্ষুদ্র স্কেলেই হোক না কেনে। কিন্তু কেন?
ডারউইনীয় বিবর্তনের দিক থেকে চিন্তা করলে সমকামিতার ব্যাপারটি বায়োলজিস্টদের জন্য সব সময়ই একটা ধাঁধার মত। কারণ ওটা বায়োলজিকাল ডেড এন্ড – অন্ততঃ তাই ভাবা হত কিছুদিন আগেও। তবে সাম্প্রতিক সমইয়ে এই ধ্যান ধারনা কিছুটা বদলেছে। এটা ঠিক ডীন হ্যামার ‘গে জিন’ বলে কিছু খুঁজে পাননি। কিন্তু জেনেটিক কিছু কম্বিনেশন বা রিকম্বিনেশন সমকামিতার প্রবনতাকে ত্বরান্বিত করতে পারে – এ ব্যাপারটি কিন্তু ফেলে দেবার মত নয়। আসলে জেনেটিক গবেষনা থেকে জানা যায় – একটি জিন কখনো একটি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে না। আসলে ‘গে জিন’ সংক্রান্ত ভুল অনুমান তৈরি হয়েছে মিডিয়ার কল্যানে। মিডিয়ায় প্রায়ই ফলাও করে ছাপা হয় – এলকোহলের জিন পাওয়া গেছে, ধুমপানের জিন পাওয়া গেছে, ইন্টেলিজেন্সের, এগ্রেশনের জিন পাওয়া গেছে এইত্যাদি। আসলে এটি ভুল। এলকোহলের জিন বলে আসলে কিছু নেই। যা থাকতে পারে তা হল – জেনেটিক কিছু কম্বিনেশনে মদাসক্তি এক্টিভেট করতে পারে কারো কারো মধ্যে। জিন কাজ করে পরিবেশ থেকে সগন্যাল নিয়ে সুইচ অন অফ এর মাধ্যমে। এখন কোন সিগনাল থেকে কোন জিনিসটা অন হয়ে যাবে তা আগে ভাগেই বলে দেয়া সম্ভব নয়, অনেক ক্ষেত্রেই। সেজন্যই ম্যাট রিডলী এজাইল জিন বইয়ে পরিস্কার করে বলেন – একটি বিশেষ জিন কখনোই একটি বিশেষ ব্যবহার তৈরি করে না’। কিছু জিন খুব কম বয়সেই ডেভেলপড হয়ে যায়। পরিণত বয়সে এর পরিবর্তন হয় সামান্যই। সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন হয়ত এমনি একটি ব্যাপার, যা খুব ছোট বয়সেই মানস্পটে স্থাইয়ী আসন গেড়ে ফেলে।
যা হোক, সমকামিতাকে যদি বাস্তবতা হিসেবে মেনে নেয়া হয়, তবে আমাদের বের করতে হবে – ডারউইনীয় দৃষ্টিকোন থেকে এর উপযোগিতা কি। ব্যাপারটা কঠিন। বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। কিছু ক্লু পাওয়া গেছে। প্রানি জগতে ‘স্টেরাইল এন্ট’ একটি উদাহরণ। এরা পিঁপ্রের বংশবৃদ্ধিতে কোন ভুমিকা রাখে না। কিন্তু নিজেদের গোত্রকে বহিঃসত্রুর হাত থেকে রক্ষা করে। মানুষের জন্যও কি এটা খাটে? এমন কি হতে পারে যে, সমকামি পুরুষেরা হান্টার গ্যাদারার সোসাইটিতে বাচ্চা লালন পালনে কোন বিশেষ ভুমিকা রেখেছিলো? হয়ত যখন শক্তিশালী পুরুষ শিকারে যেত, হয়ত কোন ‘গে আঙ্কেল’ রক্ষা করার দায়িত্ব নিত ছোট ছোট ছেলেপিলেদের। আর পুরুষটিও শিকারে বের হয়ে পরকীয়ার ভয়ে আক্রান্ত থাকতো না ! এটা কিন্তু ঠিক সমীক্ষায় দেখা গেছে পশ্চিমে মেয়েরা অফিসে সমকামী পুরুষদের সাথে কাজ করতে অনেক নিরাপত্তা অনুভব করে। কারণ কিন্তু অবোধ্য নয়। এডয়ার্ড ও উইলসন ‘কিন সিলেকশন’-এর মাধ্যমে হোমোসেক্সুয়ালিটিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিলেন সেই ১৯৭৮ সালেই।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হতে পারে। হোমসেক্সুয়ালিটি হয়ত বিবর্তনপ্রক্রিয়ার উপজাত, বা সাইড ইফেক্ট। বিবর্তনের অনেক কিছু আছে – কোন বাড়তি উপযোগিতা তৈরি করে না। কিন্তু এগুলো উৎপন্ন হয়েছে বিবর্তনের সাইড এফেক্ট হিসবে। যেমন আমাদের গায়ের হাড় সাদা রঙ। এই সাদা রঙ বিবর্তনে কোন বাড়তি উপযোগিতা দেয় না। এই সাদা রঙ তৈরি হয়েছে হাড়ে ক্যালশিয়াম থাকার ফলে। তেমনি কারো কারো চোখের নিল রঙও হয়ত আমাদের কোন বাড়তি উপযোগিতা দেয়া না – এটা প্রকৃতিতে আছে বিবর্তনের সাইড ইফেক্ট হিসবে। সমাকামিতাও কি সেরকম কিছু হতে পারে?
কিন্তু ইতালীর একটি সমীক্ষায় (২০০৪) দেখা গেছে, যে পরিবারে সমকামী পুরুষ আছে সে সমস্ত পরিবারে মেয়েদের উর্বরতা (fertility) বিষমকামী পরিবারের চেয়ে বেশি থাকে । আন্দ্রিয়া ক্যাম্পেরিও-সিয়ানির ওই গবেষণা থেকে জানা যায়, বিষমকামী পরিবারে যেখানে গড় সন্তান সন্ততির সংখ্যা ২.৩ সেখানে গে সন্তানবিশিষ্ট পরিবারে সন্তানের সংখ্যা ২.৭ । তার মানে যে জেনেটিক ইনফ্লুয়েন্স মেয়েদের উর্বরা শক্তি বাড়ায় – সেই একই জিন আবার ছেলেদের মধ্যে ছ্ড়ায় – বিবর্তনের ‘বাই প্রোডাক্ট’ হিসেবে। সেজন্যই ডঃ ক্যাম্পেরিও ক্যানি বলেন – “We have finally solved the paradox … the same factor that influence sexual orientation in males promotes higher fecundity in females’ .
এই ফ্যাক্টরটিকেই হয়ত ডীন হ্যামার ‘জিন’ বলে এক্চালিয়েছেন। কিন্তু তার বক্তব্য প্রায় একই – ‘The answer is remarkably simple : the same gene that causes men to like men, also causes women to like men, and as a result to have more children.
আরেকটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হতে পারে সামাজিক নির্বাচন। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় ইকোলজিস্ট জোয়ান রাফগার্ডেন রোথসব্ররগ তার “Evolution’s Rainbow: Diversity, Gender and Sexuality in Nature and People.” বইয়ে । তিনি বলেন, যৌনতার উদ্দেশ্য সনাতনভাবে যে কেবল ‘জিন সঞ্চালন করে বংশ টিকিয়ে রাখা’ বলে ভাবা হয়, তা ঠিক নয়। যৌনতার উদ্দেশ্য হতে পারে যোগাযোগ এবং সামাজিকিকরন। তিনি বলেন :
‘যদি আপনি সেক্স বা যৌনতাকে যোগাযোগের একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে দেখেন, তাহলে আপানার কাছে অনেক কিছুই পরিস্কার হয়ে যাবে, যেমন সমকামিতার মত ব্যাপার স্যাপারগুলো – যা জীব বিজ্ঞানীদের বছরের পর বছর ধরে বিভ্রান্ত করে রেখেছিল। বনোবো শিম্পাঞ্জীদের মধ্যে সমকামী সংশ্রব বিষমকামীদের মতই দেদারসে ঘটতে দেখা যায়। আর বনোবোরা কিন্তু প্রকটভাবেই যৌনাভিলাসী। তাদের কাছে যৌনসংযোগের (Genital contact) ব্যাপারটা আমাদের ‘হ্যালো’ বলার মতই সাধারণ। এভাবেই তারা পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করে থাকে। এটি শুধু দলগতভাবে তাদের নিরাপত্তাই দেয় না, সেই সাথে বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য আহরণ এবং সন্তানদের লালন পালনও সহজ করে তুলে’।
শুধু বনোবো শিম্পাঞ্জীদের কথাই বা বলি কেন, বাংলাদেশেই আমরা যেভাবে বড় হয়েছি সেখানে ছেলেদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব হলে একজন আরেকজনকে স্পর্শ করে, হাতে হাত ধরে কিংবা ঘারে হাত দিয়ে ঘোরাঘুরি করে। ঝগড়া-ঝাটি হলে বুকে জড়িয়ে ধরে আস্থা পুনর্প্রতিষ্ঠিত করে। মেয়েরাও তাই। এই আচরণ একটু প্যাসিভ তবে এ ধরনের প্রেরণা কিন্তু মনের ভেতর থেকেই আসে। বলা বাহুল্য, এই প্রেরণার মধ্যে কোন জিন সঞ্চালনজনিত কোন উদ্দেশ্য নেই, পুরোটাই যোগাযোগ এবং সামাজিকীকরনের প্রকাশ। আসলে পরীক্ষায় দেখা গেছে যে সমকামিতার প্রভাব বনবো সমাজে এগ্রেসিভনেস কমাতে সাহায্য করেছে – constant (homo)sexual interaction may be designed to soothe anxieties and reduce tension between two males.
যে যাই হোক, সমকামিতাকে ব্যাখ্যা করার সঠিক মডেল জীববিজ্ঞানীদের থাকুক আর নাই থাকুক – সমকামিতা যে একটা বাস্তবতা তা কিন্তু প্রায় সবাই মেনে নিয়েছেন। একটা সময় সমকামিতাকে স্রেফ মনোরোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হত। চিকিৎসকেরা বিভিন্ন থেরাপি দিয়ে তাদের চিকিৎসা করতেন। এর মধ্যে নির্যাতন, শক থেরাপি, বমি থেরাপি সব কিছুই ছিলো, কিছু ক্ষেত্রে জোর করে এদের আচরণ পরিবর্তন করলেও পরে দেখা গেছে অধিকাংশই আবার তারা সমকামিতায় ফিরে যায়। এ ধরনের অসংখ্য ডকুমেন্টেড কেস আছে। এ প্রসঙ্গে একটা কথা জানিয়ে রাখি, ১৯৭৩ সালের ১৫ ই ডিসেম্বর American Psychiatric Association (বহু চিকিৎসক এবং মনোবিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সংগঠন) বিজ্ঞান্সম্মত আলোচনার মাধ্যমে একমত হন যে সমকামিতা কোন নোংরা ব্যাপার নয়, নয় কোন মানসিক ব্যধি। এ হল যৌনতার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। ১৯৭৫ সালে American Psychological Association একইরকম অধ্যাদেশ দিয়েছিলেন। সকল আধুনিক চিকিৎসকই আজ এ বিষয়ে একমত। ১৯৯৮ সালে সাইকোএনালিটিক এসোসিয়েসন তাদের পূর্ববর্তী হোমোফোবিক ব্যবহারের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে ম্যানহাটনে কনফারেন্স করে। কাজেই, ‘চিকিৎসার মাধ্যমে সমকামীদের স্বাভবিক যৌনজীবনের ফেরানো সম্ভব’ -এটি আধুনিক চিকিৎসকেরা আর ওভাবে সত্য বলে মনে করেন না। তারা বরং পরিস্কার করেই বলবেন – ‘let’s be clear – you cannot cure homosexuality because there is no ‘disease’ to cure’। তবে এ নিয়ে আরো গবেষনা প্রয়োজন।
সমকামিতা নিয়ে সনাতন মূল্যবোধ গুলো ধীরে ধীরে পালটে যাচ্ছে। এমনকি ভারতেও জুলাই ২ তারিখে সমকামিতা অপরাধ নয় বলে রায় দিয়েছে নয়াদিল্লির হাইকোর্ট। ১৪৮ বছরের পুরোনো ঔপনিবেশিক আইনে সমকামিতাকে ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ যৌনতা’ হিসেবে গণ্য করে নিষিদ্ধ করার আইনটি এ রায়ের মধ্য দিয়ে উল্টে গেল। আগে ভারতে সমকামিতার সাজা ছিলো ১০ বছরের জেল। আমি শুনেছি আদালতে যখন সমকামিতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধর্মীয় ব্যাখ্যা, সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যা হাজির করা হচ্ছিলো, তখন আদালত পরিস্কার করেই বলেছিলো – আমার কাছে বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল নিয়ে আসুন, ধর্মীয় নয়। আর এতে করেই কিন্তু আসল রহস্য ফাঁস হয়ে গেল। কেবল ধর্মীয় আইনের উপর ভিত্তি করে অধিকার তো আর আটকে রাখা যায় না। রায় গেল সমকামীদের পক্ষে। সাড়া বিশ্বের ট্রেন্ডই এখন মূলতঃ এই দিকে।
আমার ইচ্ছে আছে এ নিয়ে ভবিষ্যতে একটি বই লেখার। দেখি কি হয়।
অভিজিত,
লেখার ফন্ট কি বড় করা যায় না? খুবই ছোট ফন্ট সাইজ।
@আদিল মাহমুদ,
লেখার ফন্ট একটু বড় করা হয়েছে। সাইটের আপডেটের কাজ চলছে। আজকের মধ্যে মন্তব্য সহ অন্যান্য সেকশনগুলো ঠিক করে দেয়া হবে। ধৈর্য ধরে সঙ্গে থাকুন।
একটা বিষয় কিন্তু স্পষ্ট হল না। সমকামিতা কি জন্মগত নাকি পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্য?
বিপ্লব,
অনেকদিন পর লেখা পেলাম। ধণ্যবাদ, পরে সময় করে পুরো পড়ে জানাবো, ব্যাস্ততার মাঝে আপনার নাম দেখেই একটু পড়লাম, মনে হচ্ছে আরেকটি জমাটি লেখা হবে।