শিশু অধিকার বাস্তবায়ন ও শিশু নির্যাতন দায়ী কে?

 

সালমা ইয়াসমিন

 

বাংলাদেশ সরকার ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে অনুস্বার করেছে শিশুদের অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ পর্যন্ত তিন তিনটি জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে, সেই কর্ম পরিকল্পনার কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় পর্যায়ে মনিটচরিং সেল, টাস্ক ফোর্সও গঠন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা, দাতাগোষ্ঠী, দেশীয় উন্নয়ন সংস্থা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে এই কমিটি ও টাস্ক ফোর্সগুলি গঠিত হয়প্রতি তিনবছর অন্তর অন্তর সরকারকে জাতিসংঘের কাছে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে হয় জবাবদিহিতার  জন্য কিন্তু তা স্বত্বেও প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় রিপোর্ট হচ্ছে নতুন নতুন আঙ্গিকে নতুন নতুন শিশু নির্যাতনের ঘটনাদেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত গত তিনমাসের (জানুয়ারী-মার্চ,০৯) মধ্যে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, দূর্ঘটনায় মৃত্যু, এসিড দগ্ধ, আগুনে পুড়ে মৃত্যু এ জাতীয় লোমহর্ষক নানা ধরণের শিশু নির্যাতনের ঘটনা আমাদেরকে করছে আতংকিত ও বিব্রতআমরা তাহলে কোনদিকে এগুচ্ছি? আদৌ কি এগুচ্ছি না পিছাচ্ছি ? শিশু অধিকার কি শুধু জাতিসংঘ শিশু সনদের ৫৪ টি ধারার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না কি তা এক তিল পরিমান হলেও  আমাদের মনের মধ্যে রেখাপাত করছে, আমাদেরকে করছে দায়িত্ববান, খুলে দিচ্ছে আমাদের চোখ- কান, দায়িত্বহীনতার গ্লানি আমাদেরকে তাড়া করছে, এ জিজ্ঞাস্য আমার নিজের কাছে, সব সচেতন, বিবেকবান মানুষের কাছে এবং গোটা জাতির কাছে প্রকাশিত ঘটনার অন্তরালে থাকে আরো অনেক ঘটনা যার কোনো তথ্যও পাওয়া যায় নাঘটনার বিবরণীতে যে পরিসংখ্যান আছে তা হল সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ১২৪ জন, আহত ৬৮ জন শিশু, শিশু হত্যা ৪৬ জন, অস্বাভাবিক মৃত্যু ৬৪ হয়েছে জন শিশুর, নিখোঁজ রয়েছে ১২৯ জন শিশু, ২২ জন শিশু পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করেছে,  ১৩ জন শিশু আগুনে পুড়ে মারা গেছে, আত্মহত্যা করেছে ১১ জন শিশু, ধর্ষণ এর শিকার হয়েছে ৭ জন শিশু, বিভিন্নভাবে আহত হয়েছে ১১৪ জন শিশু ধর্ষণ পূর্বক হত্যা ২ জন শিশু, ঠান্ডা জনিত কারণে মৃত্যু বরণ করেছে ১২ জন, অপরাধে জড়িত হয়েছে ১১ জন শিশু অপহরণ করা হয়েছে ৯ জন শিশুকে এ ছাড়াও বোমা বিস্ফোরণে আহত, নিহত, ও আগুনে পূড়ে আহত হয়েছে আরো বেশ কিছূ সংখ্যক শিশুএই সংখ্যা থেকে সহজেই চোখে পড়ে সড়ক দূর্ঘটনা, নিখোঁজ হওয়া, আগুনে পোড়া, বিভিন্ন ভাবে আহত হওয়া ও ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনাগুলোই বেশী ঘটেছে (জানুয়ারী-মার্চ০৯) এ তিন মাসেযেসব শিশু সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছে কিম্বা আহত হয়েছে তাদের এই মৃত্যু প্রতিহত করা যেত শুধুমাত্র সচেতনতা ও নিরাপদ গাড়ী চালনার মাধ্যমেআবার যারা নিখোঁজ রয়েছে তাদের নিখোঁজ হবার পেছনে কারণগুলো কি? তারা কি স্বেচ্ছায় বাড়ী থেকে বেরিয়ে গেছে, কোনো অসাধু চক্রের হাতে পড়ে বিক্রি বা পাচার হয়েছে, কোনো অসামাজিক পেশায় জোর করে জড়িত হচ্ছে অথবা কোনো ধরণের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তার হদীস কেউ জানেনাপাচারকারীরা ধরা পড়লেই কেবলমাত্র পাচারের ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশ পায় তার আগে জানা যায়না শিশুরা পাচার হয়েছে কিনাতেমনি শিশুদের আত্মহত্যার সংখ্যাও একেবারে নগন্য নয়, আত্মহত্যার এই ঘটনার জন্য পরিবার, সমাজ তথা রাষট্রকেই দায়ভার নিতে হবেএকজন শিশু পৃথিবীতে আসে তার দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে বাঁচতে চায় সে, সুন্দর এই  পৃথিবী  ছেড়ে শিশুদের চলে যাবার দায় আমরা কেউই এড়াতে পারিনাধর্ষণ একটি জঘন্য অপরাধ, এর জন্য আইনে রয়েছে শাস্তির বিধানকিন্তু আইনের সঠিক প্রয়োগ নেইধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষণকারী বুক ফুলিয়ে সমাজে ঘুরে বেড়ায় আর মেয়েটির জীবন পরিগণিত হয় চির অন্ধকারের  আড়ালে, সমাজে সে অচ্ছ্যুত হিসেবে একাকী যন্ত্রনাদগ্ধ জীবন যাপন করেআজো বাংলাদেশের সমাজের অনেক অঞ্চলে ধর্ষণের জন্য  মেয়েটিকে র্দোরা মারা হয়; যেখানে সকল স্ব্যা প্রমানে জোরপূর্বক বলে সাবস্ত্য হয়, সেখানেও এই একই বিচারএবং এই অমানবিক বিচারের প্রতিবাদে আত্মাহুতি দিতে হয় অনেক কোমলমতী মেয়ে-শিশুকেওআমরা সাধুবাদ জানাই পত্রিকার রিপোর্টারদেরকে, আজকাল পত্রিকায় অন্তত: ইনভিজিবল করে ছাপানো হয় ধর্ষিতার ছবি; কথিত আছে ধর্ষণের কেস র্কোটে উঠলে যতদিন পর্যন্ত এ বিষয়ে আদালত বসবে ততদিন-ততবার ধর্ষিতা হতে হয় অভিযোগকারিনীকে, তাই ওসব ঘটনা দু:স্বপ্নের মতো ভুলে যাওয়াই ভালোভুলে যাওয়া কি আসলেই সম্ভব ? এই ঘটনা যে কোনো মেয়ের জীবনে অস্বাভাবিক একটি অধ্যায়ের সূচনা  করেআর তা যদি ঘটে একজন শিশুর জীবনে তা আরো বেশী ঘৃণিত, নিন্দনীয় ও অমানবিককারণ শিশুরা ফুলের মতো পবিত্র, শিশুর জন্মের  জন্য আমাদের যেমন দায় আছে তেমনি শিশুর জীবনের নিরাপত্তা, তার সঠিকভাবে বেড়ে ওঠা, তার লালন-পালন ও সবরকম দেখ-ভাল করার দায়িত্ব পরিবারের, সমাজের সকল প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষেরএকজন প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষ হিসেবে এ লজ্জা আমাকে লজ্জিত করে, ভাবায়… . … একজন শিশুর মা হিসেবেশিশু অধিকার লংঘন কমাতে হলে আগে প্রয়োজন সর্বস্তরের জনসাধারণের সচেতনতা, সঠিক আইনের প্রয়োগ এবং সময়ানুযায়ী পদপে গ্রহণ

(সালমা ইয়াসমিন, এনজিওকর্মী, ঢাকা, বাংলাদেশ)