যুদ্ধাপরাধী এবং আমাদের অগ্রজগণ

 

পরশপাথর

 

 

বিচার চাই। বিচারের পর বিচার চাই। নিজের ছাড়া আর সকলের বিচার চাই।দ্ধাপরাধীদের বিচারতো চাই-ই চাই। কেউ ন আমাদের মুখস্ত করিয়ে দিয়েছে, একদা দেশের বিরূদ্ধে রা অবস্থান নিয়েছিলো, তাদের বিচার চাওয়াটাই প্রকৃত দেশপ্রেমিকের কাজ। তাই দেশ প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে আজ আমরা তাদের বিচার চাই। দ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়াটাই দেশকে ভালবাসার একমাত্র উপায়।

 

মুক্তিদ্ধারা ভিক্ষা করে মরুক, না খেয়ে মরুক, রোগে-শোকে মরুক, ভাবে খুশি মরুক; তাতে কি আসে য়? তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া তো দেশপ্রেম নয়। কারণ তাতে করে আর ই হোক গলাবাজী করা য়না। দেশপ্রেমতো গলাবাজী করে অন্যদের বিচার দাবি করার মধ্যেই বিরাজমান।

 

বছরের পর বছর রা দেশের টাকা লুটপাট করে খায়, তারা বিচার চায়। রা রিলিফের গম চুরি করে খায়, গরীবের টিন বিক্রি করে খায়, পতিতার দেহ বিক্রির পয়সায় ভাগ বসিয়ে খায়, তারাও বিচার চায়। নয় বছরের বালিকাকে রা গণধর্ষণ করে গলা টিপে হত্যা করে তারাও বিচার চায়। একাত্তরের দ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। ভাবখানা এমন একাত্তরের অপরাধীই একমাত্র অপরাধী, একাত্তরের অপরাধই একমাত্র অপরাধ, অন্য সবসময় তা দুর্ঘটনামাত্র।

 

পত্রিকার পাতায় শব্দ বিক্রেতারা দোহাই দেন; তরুণ প্রজন্মের দোহাই। এ অপরাধের বিচার না হলে তরুণ প্রজন্মের কাছে কি জবাব দেবেন, সে দোহাই দেন। তাদের জেনে রাখা ভাল, এদেশে কোন তরুণ প্রজন্ম নেই। কোন প্রজন্ম দি থেকে থাকে, তার নাম হবে করুণ প্রজন্ম। এদের বেড়ে উঠার ইতিহাস জানলে সমসাময়িক ে-কোন জাতির ে-কোন প্রজমন্মেরই করুণা জন্মাবে। এই সেই প্রজন্ম, রা জন্ম থেকে দেখে এসেছে হানাহানি, হাহাকার, রেষারেষি; দেখে এসেছে উৎপীড়ীতের ক্রন্দন রোল, সকরুণ আর্তনাদ। এই সেই প্রজন্ম, রা দেখে এসেছে, কি স্বাধীনতার স্বপক্ষের কি বিপক্ষের, সব দলই রাজাকারদের সাথে নিয়ে জোট করেছে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে। এই সেই প্রজন্ম, রা দেখেছে, সেই সমস্ত নোংরা রাজনীতিবিদদের, রা নিজেদের প্রয়োজনে রাজাকারদের হাতে তুলে দিয়েছে দেশের দায়িত্ব, বানিয়েছে দেশের মন্ত্রী। এই সেই প্রজন্ম, রা রাজাকারদের গাড়ীতেই পতপত করে উড়তে দেখেছে দেশের পতাকা। অতএব, নতুন প্রজন্ম, নবীন প্রজন্ম, তরুণ প্রজন্মের দোহাই আর দিবেন না। তারা আপনাদের নোংরা স্বভাবের সাথে পরিচিত হয়ে গেছে। নতুন প্রজন্মকে তাদের মত করে থাকতে দেন।

 

তারপরও তরুণ প্রজন্মের কথা দি বলতেই হয়, মনে রাখবেন তারা শুধু দ্ধাপরাধিদের বিচার-ই চায়না, রা গত ৩৮ বছর বিচার করেনি তাদেরও বিচার চায়। শুধু অন্ধকার অতীতের দিকে নয়, তারা তাকাতে চায় আলোকিত ভবিষ্যতের দিকেও। বছরের পর বছর ধরে এই অপরাধী,অপরাধী,দ্ধাপরাধী শুনতে শুনতে তারা বিতৃষ্ণ হয়ে উঠেছে। রা দ্ধ করেছে, দ্ধের বিভীষিকা দেখেছে, তাদের অভিজ্ঞতার সাথে, অনুভূতির সাথে দ্ধ পরবর্তী নতুন প্রজন্মের অনুভূতির বিস্তির ফারাক থাকবে, কোনদিনও দুটো এক হবেনা। অতএব, আপনাদের বিচার আপনারা করেন। ৭৩,৭৪,৭৫ ত খুশি আদেশ-অধ্যাদেশ বের করে আনেন। ত খুশি ফাঁসি দেন। দয়া করে শুধু নতুন প্রজন্মকে এর থেকে দূরে রাখেন।

 

এ-দেশের মুক্তিদ্ধাদের প্রতি নতুন প্রজন্মের সশ্রদ্ধ ভালবাসা আছে, দেশবিরোধীদের প্রতি আছে ঘৃণাও। কিন্তু জলের মত পরিষ্কার একটা অপরাধের বিচার ৩৮ বছর করতে পারেন নি, এখন আর বলতে আসবেন না, এই অপরাধের বিচার না করলে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে মুখ দেখাবো কি করে। ৩৮ বছর ভাবে মুখ দেখিয়েছেন ঠিক সেভাবে দেখাবেন। আপনাদের মুখ দেখানোর আছেই বা কি? যে-দেশের মানুষ, যে-দেশের অগ্রজরা রাজাকারদের মন্ত্রী বানিয়ে সংসদে বসায়, সে-দেশের প্রতিটি মানুষেরইতো সারাজীবন বোরখা পরে মুখ ঢেকে রাখা উচিৎ, ন সারা জীবনে কেউ কারো মুখ দেখতে না হয়।

 

তরুণ প্রজন্মের কথা দি বলতেই হয়, তাহলে মনে রাখবেন, তারা শুধু দ্ধাপরাধিদের বিচার চায়না, তারা আরো কিছু চায়। পত্রিকার প্রথম পাতায় একাত্তরে ধর্ষণের বিচার চাইবেন, দ্বিতীয় পাতা ভরে চৌদ্দজন মিলে হিন্দু বাড়ির মেয়েকে ধর্ষণ করে রাখবেন, নতুন প্রজন্ম সেটা চায়না। নতুন প্রজন্ম অতীত,বর্তমান,ভবিষ্যত সব অন্যায়ের অবসান চায়, হরতাল মুক্ত দেশ চায়, সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গণ চায়, ঘুষমুক্ত প্রশাসন চায়,কথা বলবার অধিকার চায়, চিন্তা করবার স্বাধীনতা চায়। পারবেন দিতে? না পারলে, অনুগ্রহ করে আপনাদের চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে নতুনদের টেনে আনবেন না। নতুনরা ঠিকই তাদের পথ বের করে নেবে। আর কিছু পারুক না পারুক, অন্তত রাজাকার ধরে মন্ত্রী বানাবে না।

 

মার্চ ২৭, ২০০৯

[email protected]