ওবামা-তোমাকে পারতেই হবে!

বিপ্লব পাল

 


ক্যপিটল হিলের সামনে হ্রদ ঠান্ডায় বরফ এখন
 


আজই নেমেছে লোকের ঢল-এখনো বাকি চব্বিশ ঘন্টা
 

অদূরে জমে বরফ পটোময়াক নদীর জল
 


দূরে দেখা যায় স্টেজ

আজ সকালে যখন ক্যাপিটল হিলে আমার বন্ধুর ছেলেকে ড্রপ করতে গেলাম-তখন গুঁড়ি গুঁড়ি স্নো-শুন্যের কাছে তাপমাত্রা-আগের দুদিনের তুলনায় অনেক বেশী গরম যদিও। ক্যাপিটল হিলের পাশে ইন্ডিপেন্ডেন্স এভিনিউ আর ফার্স্ট স্ট্রীট চিনতেই পারলাম না। যেখানে সাধারণত গাড়ী পার্ক করি-সর্বত্র অস্থায়ী ল্যাট্রিন। ৩০ লাখ লোক হবে নাকি! তাহলে লাখ খানেক ল্যাট্রিন লাগবেই-তাই আজ রাস্তা বন্ধ করে শুধু অস্থায়ী ল্যাট্রিন চোখে পড়ল। কোথাও পার্কিং এর জায়গা নেই। চারিদিকে লোক। ট্রাফিক লাইটে লাল হলেও ক্রসিং এ গাড়ি দাঁড়িয়ে। এমনিতেই ওটা টুরিস্ট স্পট-আজ দেখলাম লোকে কিলবিল করছে। কাল আমাদের ভাগ্যে কি আছে-ভেবে আঁতকে উঠছি। তারপরে জ়িপিএস ও বাগড়া দিচ্ছে-কারন ও যে পথে আমাকে টানে-সেবগুলো ক্লোজড। একঘন্টা ঘুরপাক খেয়ে বিরক্ত হয়ে-ম্যাপ দেখে সোজা দক্ষিন দিক দিয়ে বেড়িয়ে বিরাট ঘুরে উত্তরের পথে ফিরে এলাম।ওবামাকে নিয়ে কৃষ্ণাঙ্গদের যে আবেগ ভোটের দিন থেকেই দেখেছি-তা নিয়েই শুধু উপন্যাস লেখা যায়। অশেতাঙ্গদের উদ্দীপনাও কিছু কম ছিল না। আমার মনে আছে আমি ভোটার কেন্দ্রের কাছে ক্যামেরা নিয়ে ঘোরাফেরা করছিলাম-একটি কৃষ্ণাঙ্গ তরুণী আমায় জিজ্ঞেস করেছিল-আপনি ভোটটা দিয়েছেন কি?? ভোট আজ দিতেই হবে। কারন পালাবদলের দিন তারা সবাই মিলে চাইছে।

ওবামা এখন পারসোনালিটি কাল্ট। স্ট্যালিন, হিটলারের মতন। সর্বত্র “বাচ্চাদের জন্যে ছবিতে ওবামা” বিক্রী হচ্ছে। আমার স্ত্রী থেকে কলীগ-সবাই মেসমেরাইজড। হিপনোটাইজ়ড। পারফেক্ট কথা বলেন। আমি অবশ্য চালুনি-খুঁত ধরাই আমার স্বভাব। ২+২=৪ অনেক ক্ষেত্রেই হয় নি বলে-আমি সংশয়বাদি। তবে আমেরিকাতে একটা পরিবর্তন আসবে-সদার্থক রাজনৈতিক পরিবর্তন আমরা দেখবো। ইনসুরান্সের জোঁকেরা আমাদের রক্ত চুষে খাবে না। এটুকু আশা করাই যায়। এইত সেদিন দুটো দাঁতের রুট ক্যানেল প্লাস ক্যাপিং করাতে হল। যেটা দাঁত বাঁচাতে নুন্যতম দরকার। আমার দাঁত প্রতি খরচ পড়ল চার হাজার ডলার। চার হাজ়ার ডলার খরচ করে যদি দাঁতের বেসিক ট্রিটমেন্ট করতে হয়-যা আমাদের ভারতে লাগে মোটে পাঁচশো ডলারের কাছাকাছি-তাহলে সাধারন মানুষ কোথায় যাবে? আমেরিকাতে যেদিকে তাকাই-সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রির ডাকাতগুলো বসে আছে। ইন্সুয়ারান্স গুলো সবথেকে বড় ডাকাত। এরপর, ক্রেডিট কার্ড থেকে ক্রেডিট এজেন্সির চোরগুলোত আছেই। আপনি কোন ক্রেডিট ডীফল্ট না করলেও ভুয়ো সংস্থা আপনার বিরুদ্ধে ক্রডিট রিপোর্ট ধ্বংস করবে-যাতে টাইম টু টাইম আপনাকে ক্রডিট রিপোর্ট ৪০ ডলার দিয়ে চেক করতে হয়। কারা এসব করে? এর পেছনে কর্পরেট আমেরিকার হাত নেই? এটর্নী জেনারেলদের কাছে এসব ব্যাপারে চিঠি পাঠালে-উত্তর আসে-আমরা দেখছি। সব চোরের দল মিলে লুটেপুটে খাচ্ছে মধ্যবিত্তের পকেট। আপনারাই দেখলেন কিভাবে তেলের দাম ১৫০ ডলার ব্যারেল উঠে গেল! কেন? ফিউচার ট্রেডিং! নিউয়ার্কের স্টক এক্সচেঞ্জ পন্যের দাম এখন নিয়ন্ত্রন করে। সেইসব পন্য যা ছাড়া মানুষ বাঁচে না। তবুও আমেরিকাতে কোন আন্দোলন নেই। আন্দোলন কিভাবে করতে হয় সেটাই এরা ভুলে গিয়েছিল। ওবামা কিছুটা হলেও এই ক্ষোভটাকে পরিবর্তনের আন্দোলনের রূপান্তরিত করেছেন।

আমিও সত্যিই জানি না কি ভাবে এই পরিবর্তন হবে। যারা এই সব ফটকাবাজি করে-তাদের অনেকেই ওবামা ক্যাম্পেইনে টাকা ঢেলেছেন। এইসব ফাটকাবাজদের কয়েকজনকে আমি ব্যাক্তিগত ভাবেই চিনি-এরা ভারতীয় এবং প্রাইভেট জেটেই চলাফেরা করেন। এবং এদের কোম্পানীতে “ক্লিনটন” নাম কনসাল্টিং এডভাইজার হিসাবেই দেখি। বলতে লজ্জা হয়-এরা সবাই আমার স্কুলের (আই আই টি) প্রাত্তন এবং নিজেদের নামে বিরাট বিরাট টাকায় জাতীয় ইন্সটিউট খুলেছেন ভারতে এবং এখানে। চুরির টাকায়, ডাকাতির টাকায় বিরাট বিরাট নাম এরা! এখানে হাজারটা ক্লাশ একশন ল্য স্যুট করেও এদের টিকি ছোঁয়া যায় না! কারন এরা ” ক্যাপিটল হিলের বিশেষ অতিথি”।

ওবামা কি পারবেন এই নেক্সাস ভাঙতে? মন মানতে চাই না। হৃদয় চাইছে। একদিনের জন্যেও অন্তত একটা সলিড পলিটিশিয়ান দেখি-যিনি কিছুটা হলেও আমাদের ছেলে মেয়েদের জন্যে মোমবাতি জ্বালিয়ে রেখে যেতে পারবেন। আমরা ত মধ্যবিত্ত-গলতেই থাকি-তবুও আলোটাই জ্বলে থাকুক আজ।

 


. বিপ্লব পাল, আমেরিকাতে বসবাসরত পদার্থবিদ, গবেষক এবং লেখক। বর্তমানে www.fosaac.tv সম্পাদনার সাথে জড়িত।