ইসরায়েলের বর্বরতার সমাপ্তি হওয়া প্রয়োজন

অভিজি রায়

 

গাজায় যেভাবে ইসরাইলী আগ্রাসন অধিষ্ঠিত হয়ে গেল তা যে কোন সুস্থ মনের মানুষকে অসুস্থ করে তুলবে। আমার মনে হয় মুক্তমনাদের বাংলাদেশের নির্বাচন উল্লাস এবং আহাজারি শেষ হয়েছে, আবার মুখ তুলে আন্তর্জাজাতিক বিশ্বের দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন।  যখন ইসলামের নামে সন্ত্রাস এবং বোমাবাজি হয় – তখন এ নিয়ে নিরন্তর লেখালিখি হয়, কিন্তু  মুসলিম জনগোষ্ঠি কোথাও যখন নিপীড়িত কিংবা নির্যাতিত হয়,  তখন এ নিয়ে খুব বেশী লেখা বা প্রতিবাদ আমাদের কাছে আসে না – এ ব্যাপারটা খুবই হতাশাজনক।  মুক্তমনার যাত্রা শুরু হয়েছিলো মুক্তবুদ্ধির চর্চা ত্বরান্বিত করার জন্য, মানবতাবাদকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।  মানবতা যেখানে লংঘিত হয়, সেখানে সত্যিকার মুক্তমনারা চুপ করে থাকতে পারে না।

নিরন্তর বোমাবর্ষণ করে প্যালেস্টাইনের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে –  সরকারি ভবন থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি, হাসপাতাল থেকে মসজিদ, স্কুল থেকে বাজার – রেহাই পায়নি কিছুই। কয়েক হাজারের  বেশি মানুষ মারা গেছে।  নিহতদের তিন ভাগের এক ভাগ নারী ও শিশু। কারও কারও পুরো পরিবারই বিনাশ হয়ে গেছে।  অনেককেই হত্যা করা হয়েছে ঘুমের মধ্যে।  খবরে প্রকাশিত হয়েছে যে ইসরায়েল এই ‘যুদ্ধে’ বিষাক্ত এবং নিষিদ্ধ ফসফরাস গ্যাস ব্যবহার করেছে, যা আক্রান্তের অস্থি-মজ্জা একেবারে ভিতর পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেয়। এ ছাড়াও তারা ব্যবহার করেছে ‘ডেন্স ইনার্ট মেটাল এক্সপ্লোসিভ’ (DIME) যা শুধু আক্রান্তদের ছিড়ে খুড়ে বিনাশই করে না, সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে থাকা মানুষের মধ্যে ভবিষ্যতে তৈরি করে ক্যান্সারের মত দুরারোগ্য রোগের বীজ।  কেন এই যুদ্ধ শুরু হল – কার দোষ – ইস্রায়েলের দোষ নাকি হামাসের – হামাস কেন আগে রকেট মেরেছিল – ইত্যাদি বিতর্কে না গিয়েও বলা যায় যারা মারা জিয়েছে তারা রক্ত মাংসের মানুষ। তাদেরও আছে বেঁচে থাকার অধিকার – আমার আপনার মত সকলের।  কোন ভাবেই নিরপরাধ মানুষকে ঘুমের মধ্যে হত্যা করে কারো পক্ষে গণহত্যার গ্লানি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।

মুক্তমনার যে সমস্ত সদস্যরা এক সময় দাড়িয়েছিলো ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে, যুদ্ধাংদেহী বুশ-ম্যাকেইনকে পরাস্ত করে ওবামার বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলো আমেরিকার সাম্প্রতিক নির্বাচনে, তখন অনেকের মত আমিও উল্লসিত হয়েছিলাম। উল্লসিত হয়েছিলেন মুক্তমনার মানবতাবাদী সদস্যরা  সকলেই।  লেখা আর জয়ন্তী উসবে ভরে গিয়েছিলো আমাদের মুক্তমনা সাইটের পাতা। এখন কিন্তু সেই আমাদেরই দায়িত্ব ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন ইস্যুতে ওবামার নির্লিপ্ততার প্রতিবাদ করার। নৈরাজ্যজনকভাবে বরাবরের মতোই আমেরিকা  সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী শক্তিকে সমর্থন দেয়ার পথ বেছে নিয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম বারাক ওবামা, একজন নীপিড়িত কালো মানুষের প্রতিনিধি হয়ে  বোধহয় জর্জ বুশের হায়েনার আক্রোশ ত্যাগ করবেন। কিন্তু এত বড় একটা ঘটনায় তাঁর এহেন নির্লিপ্ততা  হতাশাজনক। মুম্বাই আক্রমণের নিন্দা করতে তাঁর এক মুহূর্তও দেরি হয় না, কিন্তু গাজায় রক্ত গঙ্গা বয়ে যাবার পরও তিনি মুখে কুলুপ এঁটে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।   আমি ওবামার এই নির্লিপ্ততা আর ভন্ডামীর প্রতিবাদ করি। আমি এর আগে ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম, লিখেছিলাম  ‘মার্কিন সভ্যতার বিভস ছবি’।  আমি ইসলামের এবং অন্যান্য ধর্মের দার্শনিক ভিত্তির বিরুদ্ধে লিখলেও মুক্তমনাকে সাথে নিয়ে বারেবারেই দাঁড়িয়েছি প্যালেস্টাইনের অধিকার রক্ষায়, কিংবা কাশ্মিরী স্বাধীনতাকামী মুসলিমদের পাশে কিংবা যেখানেই মুসলিমরা অত্যাচারিত হয়েছেন সেখানে।  ডঃ জাফর উল্লাহ সহ অনেকেই মুক্তমনায় কাশ্মিরীদের অধিকার নিয়ে লিখেছেন।  অনৈতিক ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে এক সময় সিরিজ লিখেছেন ডঃ অজয় রায় (, , ),  জাহেদ, ফরিদ সহ মুক্তমনার অনেকেই। কেরী-বুশের বিগত নির্বাচনে জর্জ বুশকে সমর্থন করার ব্যাপারে  ফেইথ-ফ্রিডমের আলী সিনার কুযুক্তি গুলোকে খন্ডন করেছিলেন বন্যা, মুসলিমবিরোধী ‘ভিন্নমতী’ কুদ্দুস খানের মার্কিন সাম্রাজ্যবাদপ্রীতির মুখোশ উন্মোচন করেছিলেন অনন্ত বিজয় তার দুই পর্বের মাস্টার পিসে (, );  ডঃ বিপ্লব পাল ৯/১১ এর পর সারা আমেরিকায় মুসলিম জনগোষ্ঠির উপর সরকারের বর্ণবাদী আচরণের প্রতিবাদ করেছিলেন।    এধরণের লেখার উদাহরণ মুক্তমনা সাইটে ছড়িয়ে আছে বহু। মুক্তমনায় ইসলামের সমালোচনা হয় বলে, এমন ভাবার কোন কারণ নেই যে, মুক্তমনার সবাইকে মুসলিম জনগণের বিপক্ষে যেতে হবে সবসময়, কিংবা নির্লিপ্ত থাকতে হবে তাদের উপর হিংস্র আগ্রাসনের সময়ও।  দর্শনগত বিতর্কের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে মুক্তমনারা ইসলাম কিংবা ধর্মবিরোধী হতে পারে, কিন্তু ‘মুসলিমবিরোধী’ কখনোই নয়।  আমি কিন্তু আমার অনেক প্রবন্ধেই বলেছি – একজন সত্যিকার মুক্তমনার চোখে ‘ইসলাম’ আর ‘মুসলিম’ শব্দ দুটি এক নয়। ইসলাম হচ্ছে আর ক’টি সাধারণ বিশ্বাসের মত একটি বিশ্বাসমাত্র যা কখনই সমালোচনার উর্দ্ধে নয়।  কিন্তু ‘মুসলিম’ তো কোন বিশ্বাস নয়, মুসলিমরা হল রক্ত-মাংসের মানুষ – যাদের রয়েছে আশা, আকাঙ্খা, ভালবাসা আর সুন্দরভাবে বেঁচে থাকবার অধিকার। তাই ইসলামের কট্টর সমালোচক হয়েও বহু মুক্তমনাই গুজরাত-কাশ্মীর-প্যালেস্টাইন ইস্যুতে নির্যাতিত মুসলিমদের পাশে এসে দাড়াতে কোন অনীহা বোধ করেন না।  এই ‘মানবতাবাদী’ প্রেরণাটুকু আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকুক সবসময়। আজ আরেকটিবার সম্মিলিতভাবে ইসরায়েলের এই ধরণের বর্বরতার বিরুদ্ধে আমাদের আওয়াজ তোলা প্রয়োজন; প্রয়োজন তুলে ধরা এই সত্যটি –  মুক্তমনারা শুধু ধর্মের সমালোচক নয়, সেই সাথে মানবতার রক্ষকও।

এক সময় মুক্তমনায় ইস্রায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে আমরা ইংরেজীতে একটা পিটিশন করেছিলাম। এ পিটিশনের মূল বক্তব্য এখনো প্রাসঙ্গিক। আমি  এই পোস্টে এটি একটু রদ বদল করে আবারো দিচ্ছি।

জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের মানবতা জাগ্রত হোক।


 

An Appeal from Mukto-mona:

Stop Brutal Extermination of Palestinians 

The recent actions of the government of Israel have gone far, far beyond the boundaries of acceptable conduct from any government.  The Israeli government has supposedly lurched into action because of  radical Hamas group’s rocket attacks.  However, the distinction that must be made here is that an elected government that allegedly operates following democratic norms and conditions, should not respond by indiscriminate attacks upon a civilian population to “capture” militants.  The Israeli government has proclaimed that their all out offensive on the Palestinians is a success as they have already captured “terrorist” leaders and active militants.  However, the question that needs to be asked is whether the price that innocent have to pay for this “success” of Israel is either worth it or acceptable.

Whether one supports the cause of the Palestinians or not is no longer an issue.  These aspects of the situation have been neutralized by the Israeli government.  What is today’s issue is the all out offensive being carried out by the state of  Israel against ALL Palestinians.  What is at stake today is not a few settlements, not strips of occupied lands, nor is it quibbles about whether it was the Palestinians or the Israelis that are more to blame.  What is at stake today is clearly and simply the very survival of a whole people.

What the Israeli government is doing can be termed no less than an act of ethnic cleansing.  The government of Israel ’s actions are accomplishing the aim of creating a truly Jewish state, where religious pluralism will not, cannot and must not exist.

Notwithstanding the moral ambiguities present in the Palestinian suicide bombings or rocket attack, the dubious and immoral quality of   Israeli Government’s actions remains open to question. A dubiousness that is strongly reflected in the small but significant dissension that has arisen in recent times even among the Israeli Jewish community as to this attempt at systematic extermination of the Palestinian population.

With all due respect to the sufferings that the Jewish community have endured, Israeli Government seems to be a bigger problem than the problem it attempts to mitigate. Israel is using white phosphorous gas, an illegal chemical weapon that burns to the bone. Dr. Mads Gilbert, a member of a Norwegian triage medical team working in Gaza, has documented Israel’s use of Dense Inert Metal Explosive (DIME), which cuts its victims to pieces and reportedly causes cancer in survivors. Gilbert, who has worked in several conflict zones, said the situation in Gaza is the worst he has ever seen. Two United Nations schools have been hit by airstrikes, killing at least 30 people. The New York Times reported on Monday that Gazan hospitals are full of civilians, not Hamas fighters. Many supporters of Israel partly side with it because radical groups in the Middle East are determined to wipe it off the face of the Earth. But they must understand that would mean a repeat of the Nazi-type genocide against Jews, and that is unacceptable. Israel’s right to exist is based on a powerful moral imperative that derives, in large part, from the Holocaust. If it loses that through its severity against the Palestinians, it loses the argument about its existence.

Therefore, we, people of diverse cultures, countries and creeds, have come together for the common good to demand that the rights of human beings be upheld against the rights of any particular state, race or religion, and that the wholesale slaughter of Palestinians be stopped immediately. We demand that Israeli government be made to account for his war crimes – both present and past.

Avijit Roy

 

 ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন ইস্যুতে মুক্তমনায় প্রকাশিত আরো কিছু প্রাসঙ্গিক প্রবন্ধ :