সঞ্চারিণীর কবিতাগুচ্ছ
সঞ্চারিণী
১)
মধ্যচাপ
ব্যথা পাচ্ছি,
গরম নিঃশ্বাসে ফুসছে আগ্নেয় সন্ধি
কন্ঠহার চুঁয়ে ছুটছে দ্রুত পা’য়-ঘাম তরুণী
অরণ্যের কাছে এসে থমকে দাঁড়ায় প্রশ্বাস
উট্কো গন্ধ- শুকনো পচা মাছ!
নাক খাড়া করে টেনে নেয় তার নেশা লাগা ভেজা ঘ্রাণ
ব্যথাটা আরো একটু বেড়ে যায়।
ধারে কাছে খামচে ধরার মত মাটি নেই
নেই গাছের ঝুলন্ত কোন ডাল
স্পর্শের বাইরে কোথাও অচেনা দেয়াল।
শুন্য দেয়ালের ইট শক্ত করে ধরে থেকে
টেনে নিতে থাকি সেই দেয়ালের দিকে নিজেকে
দেয়ালটা কাঁপতে থাকে, সেই সাথে সংকুচিত হতে থাকে-
নরম শিলা-ত্বক।
সংকোচন ক্রমসংকোচনে শীতল হতে থাকে-
লাভা স্রোত।
ঘণীভূত লাভা মাটি রুদ্ধ করে দেয়-
আগ্নেয় জ্বালা মুখ,
সংকোচনেই সংযম বাড়ে।
২)
চূড় পাহাড়ে
কবূতরের সফেদ ডানায়, নীল অপরাজিতার লাল
পাইন বন ছুঁয়ে, দিয়ে যাও মুছে কষ্ট
মেঘ বক তুমি যাবে কি ওড়ে- বৈকালিক ভ্রমনে?
গেলে যেও তবে দূরের ধূসর পাহাড়ের চূড়ে
একদিন এসে বসেছিলো সেথা, আমার প্রিয়-র ক্লান্তি
সন্ধ্যা নিভু-নিভু, রাত্রী তখন ঘনায়ে
জল-নিমগ্ন কন্ঠ বলেছিলো ফিস্-ফি্স কথা
‘ আমি বড় কঠিন মানুষ, পাহাড়ের মত শক্ত
তুমি কি তবুও; আমার অনুরক্ত?’
৩)
নারীরা কখনো ছলনা জানে না
সরল নদীর গতি তার
এ কূল থেকে ও কূল মিশে থেকে
পৃথিবীকে করে নেয় আপন হতে আপনার
জলো নারী ছলনা জানে না।
যদি উত্তাপ দাও, তবে সে টগবগে যৌবনা
পুড়িয়ে দিলে- ছাই; ভস্ম
যদি তপ্ত জল আরও উত্তাপে ভাঙ্গো
তবে সে ধূম্র; বাষ্প
তুমি ভালবাসা দিলে, সে প্রেমিকা
তুমি সরে গেলে, সে বিরহিনী
তুমি প্রতারক হলে, সে প্রবঞ্চক
নারীকে মনে হবে- ছলনাময়ী।
৪)
পরিলেখ
চিত্রকরের চুলের ঝাপ উড়িয়ে, বাতাস দুলে –
ওঠা এক নারী এসে দাঁড়ায় সমূখে।
ঝর্ণা কলমটিকে শিল্পীর দিকে বাড়িয়ে; তৃষিত আব্দারে-
মেলে দিয়ে ডান হাতের করপূট,
‘একটা ছবি এঁকে দাও না!’
একবার চোখ তুলে দেখে নেয়- রমণীয় পুঁইয়ের ডাঁটা,
মদির চোখ বেয়ে নেমে আসা কান্তি, রেশমী চুলের –
মেঘ ঢাকা আধ্ পূর্ণিমা।
শিল্পীর হাত এখন মুখর শ্লোগানে।
ঝর্ণার নাকছাবি ছুঁড়ে ক্ষিপ্র আঁচড়ে এঁকে যাচ্ছে কার-
অর্ধ-নগ্না নিটোল মাতৃকা।
থর-থর চিত্রপট, অধর তরণী কেঁপে ওঠে অস্ফুট,
‘ইস্—আস্তে!’ ব্যথায় কাতর জরায়ু শিরা
‘কি হলো, কোনো সমস্যা?’ মগ্ন চৈতন্যে বেজে ওঠে শিস যুবকের
যুবতীর হাত তখনো এলানো
ডান করপৃষ্ঠ চিত্রকরের বা’ করতলে শুয়ে বেতস লতা!
আঁচলে ঢেকে নিয়ে শেষ বিকেলীয় চুম্
নকশী পাড়ের দোল হেঁটে চলে,
‘আজ তবে আসি,
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো বলে!’
‘এসো,
প্রতিদিন এসো, এসো প্রতিক্ষণ
সান্ধ্য তারা হয়ে ফু্টে থেকো তুমি;
এসো রাত্রী ভেদ করা আলো,
এসো বার-বার, অনেকবার
আবার তুমি এসো—’
কবিতার লাইনে নীতিবাক্যটি বড়ই মধুর লাগলো।