‘…কীভাবে বদলে যেতে হয় !’
রণদীপম বসু
আমেরিকা জানে কীভাবে বদলে যেতে হয়।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশানের বিজয় ভাষণে বারাক ওবামার এই উক্তি যে সমকালীন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদেরকে নতুন করে ভাবনা এবং অগ্রবর্তী কোন গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করে তুলবে, তা বলতে হয়তো ভবিষ্যৎ বক্তা হতে হয় না। হয়তো বা এই উক্তিই একদিন আমেরিকার ইতিহাসের আরেকটা মাইলফলকও হয়ে উঠতে পারে। যেভাবে আব্রাহাম লিঙ্কনের অজর উক্তিটাও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে আছে।
‘Government of the people, by the people, for the people’- গেটিসবার্গ এড্রেসে আমেরিকার তৎকালীন জনপ্রিয় প্রেসিডেণ্ট আব্রাহাম লিঙ্কন তাঁর মুখ দিয়ে যে স্বপ্নধোয়া বাক্যটা ছুঁড়ে দিয়েছিলেন বিশ্বমানবতার কাছে, তখনো কি এর কোন প্রায়োগিক বাস্তবতা ছিলো ? ছিলো না। আর ছিলো না বলেই তা এতো বেশি কাঙ্ক্ষিত, প্রত্যাশিত স্বপ্নের মতো হয়ে উঠেছিলো সবার কাছে। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে রাষ্ট্রনীতির অনিবার্য এক ঝিনুক বাক্য হয়ে উঠতে পেরেছিলো তা। রাষ্ট্রপরিচালনায় লিঙ্কনের এই অজর বাক্য একটা আদর্শ সরকারের সমস্ত বৈশিষ্ট্য ধারণ করার মতো স্বপ্ন-বাতিঘরের আলো ছড়িয়ে কূলের নিশানা দেখিয়ে গেছে পথহারা রাষ্ট্রনাবিকদের। এবং এখনো দেখিয়ে যাচ্ছে। তবুও কি পাড়ে ভিড়তে পেরেছে সবাই ? না কি ভিড়তে চেয়েছে ? লিঙ্কন নিজেও প্রাণ হারিয়েছেন আততায়ীর অব্যর্থ নিশানায় তাঁর নিজ দেশেই।
তবুও আমরা যতই পরাশক্তি বলে চেচাই না কেন, জাতি হিসেবে ভাগ্যবান তারাই। যারা স্বপ্নকে ছুঁয়ে দিয়ে বাস্তবতার মোড়কে বন্দী করে আরেকটা অগ্রবর্তী স্বপ্নের কারিগর হয়ে যেতে পারে। কেননা, স্বপ্ন হলো সেই অগ্রবর্তী আকাঙ্ক্ষা, যা ছোঁয়ার দূরত্ব বাঁচিয়ে সর্বদা এগিয়ে থাকে। ছুঁয়ে দিলে সে যে আর স্বপ্ন থাকে না, হয়ে যায় বাস্তবতা। কিন্তু স্বপ্নের জায়গাটা কখনো কি ফাঁকা থাকে ? ফাঁকা থাকাটা পৃথিবী ও প্রকৃতির নিয়মসিদ্ধ নয়। আরেকটা অগ্রবর্তী স্বপ্ন তৈরি হতেই হয় তখন। ব্যক্তি হিসেবে যেমন, জাতি হিসেবেও তাই। সেজন্য চাই স্বপ্ন দেখার মতো চোখও। রাষ্ট্রের সেই চোখ হচ্ছে তার নেতৃত্ব। আর এই চোখকে দেখার জন্য প্রয়োজনীয় রসদ জুগিয়ে যায় সে দেশের ভাবুক নাগরিকবৃন্দ। আবার স্বপ্ন দেখলেই তো চলে না। তার পেছনে চেষ্টা ও চর্চার যে দীর্ঘ ঐতিহ্য গড়ে গড়ে আসতে হয় তাই যদি না থাকে, তবে এই অর্থহীন স্বপ্ন ভাবাবেগসম্পন্ন একটা অথর্ব জাতি বানানো ছাড়া আর কী করতে পারে ? দুর্ভাগ্যজনকভাবে নিজের দেশের দিকে নিজেদের দিকে তাকালে তাই কি চোখে পড়ে না ! এই লজ্জা ঢেকে রেখে আর দুর্গন্ধ না ছড়িয়ে বরং আমরা কি একবার চোখ খোলে তাকাতে পারি না তাদের দিকে ? যাদেরকে আমরা পরাশক্তি বলি, সাম্রাজ্যবাদ বলি, আরো কতকিছু বলি। অথচ এই গণতান্ত্রিক চর্চাটা যারা রপ্ত করতে পেরেছে বহুকাল ধরে তারাই যে গোটা বিশ্বকেও নেতৃত্ব দেবে এ আর আশ্চর্যের কী ! আমেরিকা যে এই বিশ্বনেতৃত্বের ধ্বজাটা আজো শক্ত হাতে ধরে রাখতে পেরেছে এবং আগামীতেও তা সামলে রাখার অঙ্গিকারে স্থিত হতে চাইছে, এর অন্তর্গত শক্তি এরা কোথায় পায় ? আমাদের ‘মুই কি হনুরে’ নেতৃবৃন্দ কি কখনো ভেবে দেখেছেন তা ?
এককালে বর্ণবাদের আখড়া হিসেবে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেণ্ট নির্বাচিত হবেন এমনটা কি একসময় চিন্তাও করা গেছে ! ভোটযুদ্ধে রিপাবলিকান প্রার্থী জন ম্যাককেইনকে হারানোর জন্য ডেমোক্রেটিক প্রার্থী বারাক ওবামাকে যোগ্য করে তুলতে এই বর্ণবাদী ধারণায় যে পরিবর্তনগুলো এসেছে এবং আগামীতে আরো যে সম্ভাব্য পরিবর্তন আসতে পারে তা নিয়ে হয়তো ইতোমধ্যে ভাবনাও শুরু হয়ে গেছে। এসব ভাবনা যে যার যার অবস্থান থেকেই পরিচালিত হবে এটাও স্বাভাবিক| কিন্তু আমাদের ভাবনাগুলো কি শুধুমাত্র পারস্পরিক রাষ্ট্রসম্পর্ক নিয়েই ঘুরপাক খাবে, না কি নিজেদের মানসিক মূল্যবোধ ও গণতান্ত্রিক চর্চায় আমাদের অযোগ্যতাগুলোও পুনর্বিবেচনার ব্যবচেছদ টেবিলে উঠে আসবে, এটাও কি আজ গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিৎ নয় ? তাদের সাথে কোথায় ফারাক ? আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর হীনমন্যতায় আক্রান্ত অথচ ভারসাম্যহীন অহঙ্কারী মানসিকতার সাথে উন্নত রাষ্ট্র-নেতৃত্বের মানসিক সমৃদ্ধি, গণতান্ত্রিক সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং নিঃশর্ত দেশপ্রেমের মধ্যে প্রধান ফারাকগুলো উপলব্ধি করতে কি খুব বড় পণ্ডিত হবার প্রয়োজন পড়ে ? জনগণের প্রতি তাঁদের এড্রেসগুলোকে একটু খুটিয়ে পড়লেই অনায়াসে এই পার্থক্যগুলো অনুধাবন করা যায়। সাথে সাথে আমাদের নেতা-নেত্রীদের মুখনিঃসৃত বাণীগুলোও একটু মিলিয়ে দেখলে স্পষ্ট হয়ে যায় কোথায় সেই ওবামা-ম্যাককেইনরা, আর কোথায় আবুল-বাবুল-আমরা আব্দুল্লারা ! আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদে ঘাটতি থাকতে পারে, এটা কোন লজ্জার বিষয় নয়। কিন্তু রুচিবোধের নিঃস্বতা, একে অন্যে কাদা ছোঁড়াছুড়ি আর ভিক্ষুকসুলভ মানসিকতায় যদি এখনো আমাদের নেতৃবৃন্দের লজ্জাবোধের উন্মেষ না ঘটে, এ লজ্জা আমরা রাখবো কোথায় !
গণতান্ত্রিক সহনশীলতা, প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও নির্ভেজাল দেশপ্রেম কী, এর একটি পুনঃপাঠ নেয়া কি আমাদের নেতা-নেত্রীদের জন্য জরুরি নয় ? পৃথিবীর সবচাইতে ক্ষমতাশালী প্রেসিডেণ্ট হিসেবে নির্বাচনে বিজয় লাভের পর পরই মাইগ্রেটেড কৃষ্ণাঙ্গ নেতা বারাক ওবামা তার নিজের শহর শিকাগোতে যে বিজয় ভাষণ দেন তা আমাদের নেতা-নেত্রীদের জন্য একটি অবশ্য শিক্ষনীয় পাঠ হতে পারে। বারাক ওবামা তাঁর বিশ্বনেতৃত্বসুলভ আত্মবিশ্বাসী বক্তৃতাটি শুরু করেন এভাবে- ‘আমেরিকায় যে কোনো কিছু ঘটতে পারে বলে এখনো যারা সন্দেহ পোষণ করেন, আমাদের সময়ও প্রতিষ্ঠাতাদের স্বপ্ন জাগরূক রয়েছে কি-না তা নিয়ে যারা বিস্ময় প্রকাশ করেন, যারা এখনো আমাদের গণতান্ত্রিক শক্তি নিয়ে প্রশ্ন করেন, আজকের রাতই তাদের জবাব। এই জবাবটা স্কুল থেকে চার্চে দাঁড়ানো বিপুলসংখ্যক মানুষের লম্বা লাইনে পাওয়া যায়। এসব লাইনে তিন ঘণ্টা চার ঘণ্টা ধরে যারা দাঁড়িয়েছিলেন, যাদের মধ্যে অনেকে তাদের জীবৎকালে এই প্রথম ভোট প্রদানের জন্য দাঁড়ান; কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল এই সময়টা অবশ্যই ভিন্ন রকমের হবে এবং তাদের কণ্ঠও তেমনই ভিন্নতা সৃষ্টি করবে। এই জবাবের কথাটা ছেলে-বুড়ো, ধনী-গরীব, ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান, কালো, সাদা, লাতিনো, এশিয়ান, আদিবাসী আমেরিকান, সমকামী, অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তি, অক্ষম- সবার। আমরা কখনো যে লাল রাজ্য ও নীল রাজ্যের একটি সমাহার ছিলাম না, আমরা এখন এবং ভবিষ্যতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই থাকব- এই বার্তাটি তারা সমগ্র বিশ্বের কাছে এর মাধ্যমে পাঠাল…।’
যাঁর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে বিজয়ী হয়েছেন, সেই জন ম্যাককেইন, (আমাদের দেশিয় ভাষায় যাকে বিরোধীদল বলি) তাঁকেও ওবামা এই নির্বাচনী অভিযানের সঙ্গী হিসেবে মর্যাদা দিয়ে যে কৃতজ্ঞতাপূর্ণ প্রশস্তি গেয়েছেন, তা কি আমরা আমাদের নেতা-নেত্রীদের কাছে স্বপ্নেও ভাবতে পারি কখনো ! কিন্তু কেন তা ভাবি না ? ওবামা তাঁর ভাষণে বলেন- ‘আমি এইমাত্র সিনেটর ম্যাককেইনের কাছ থেকে সৌজন্যমূলক কথা শুনলাম। এই প্রচারণায় তিনি দীর্ঘ ও কঠিন লড়াই করেছেন; তবে তিনি এর চেয়েও দীর্ঘ ও কঠিন লড়াই তার ভালোবাসার এই দেশের জন্য ইতিপূর্বে করেছেন। তিনি আমেরিকার জন্য যে দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন, তা আমরা অনেকে ধারণাও করতে পারি না এবং আমরা আজকে এই যে ভালো আছি, তা তার মতো অকুতোভয় ও আত্মচিন্তাহীন মানুষের জন্য। তাদের সব অর্জনের জন্য আমি ম্যাককেইন ও গভর্নর পলিনকে অভিনন্দন জানাই। সামনের মাসগুলোতে জাতির প্রত্যাশাকে নবায়িত করার প্রচেষ্টায় আমি তাদের সঙ্গে একত্রে কাজ করার জন্য আগ্রহভরে তাকিয়ে আছি…।’
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণই যে সবকিছু এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে যে ‘মুই কি হনুরে’ জাতীয় ব্যক্তি-অহঙ্কার কখনোই চর্চার বিষয় হয় না, তা তাঁর হীনমন্যতাহীন সত্যভাষণে তিনি ভুলে যান নি। তিনি উল্লেখ করেন, ‘সর্বোপরি এই বিজয় প্রকৃতপক্ষে জনগণেরই। আমি কখনোই এই পদের জন্য সর্বোত্তম পছন্দনীয় ব্যক্তি ছিলাম না। আমরা যখন শুরু করি তখন না ছিল বেশি অর্থ, না ছিল তেমন সমর্থন। আমাদের প্রচারণাটা ওয়াশিংটন হলঘরে শুরু হয়নি- এটা শুরু হয়েছিল ডেচ মোইনসের আঙিনায়, কনকর্ডের বাসগৃহ ও চার্লেসটনের সামনের আঙিনায়। এটা তৈরি হয়েছিল কর্মজীবী মানুষের ৫, ১০, ২০ ডলার দানের অর্থে। এর শক্তি সঞ্চয় হয়েছিল তরুণ-তরুণীদের শক্তি থেকে, যারা তাদের প্রজন্মের অনীহাকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছিল। এরাই সামান্য বেতনে, সামান্য ঘুমিয়ে চাকরির জন্য তাদের পরিবার-পরিজন ছেড়ে এসেছিল। এই তরুণরা হাড়-হিমকরা ঠাণ্ডা ও তীব্র গরমকে উপেক্ষা করে আগন্তুকের মতো মানুষের দরজায় কড়া নেড়েছেন। আরো লাখ লাখ আমেরিকান স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন ও সংগঠিত করেছেন। তারা সবাই মিলে প্রমাণ করেছেন যে, দুই শতাব্দীর বেশি সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও বিশ্ব থেকে জনগণ কর্তৃক, জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্য সরকার লোপ পায়নি। এটাই আমাদের বিজয়।…’
জাতীয় পুননির্মাণ প্রশ্নে ভিন্নমতের প্রতিও তাঁর সততার অঙ্গীকার ঝরে পড়ে এভাবে- ‘সামনের পথ বেশ দীর্ঘ। আমাদের এগিয়ে যাওয়া হবে কঠিন। আমরা এজন্য এক বছর বা এক মেয়াদ সময় পাব না; তবে আমরা এ কাজে সফল হবো এ ব্যাপারে আজ রাতের আগে আমি এতটা আশাবাদী ছিলাম না। আমি আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা তা অর্জন করতে সক্ষম হবো। সেখানে বাধাবিপত্তি আসতে পারে ও ভুল শুরু হতে পারে। অনেকে থাকতে পারেন যারা প্রেসিডেণ্ট হিসেবে আমি যেসব সিদ্ধান্ত বা নীতি গ্রহণ করব তার প্রত্যেকটির সঙ্গে একমত হবেন না এবং আমরা জানি যে, সরকার সব সমস্যার সমাধান করতে পারে না। তবে আমরা যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করব সেসব ব্যাপারে আপনাদের কাছে আমি সৎ থাকব। আমি আপনাদের কথা শুনব, বিশেষ করে মতদ্বৈধতার সময়। সর্বোপরি আমি আপনাদের জাতি পুনর্নির্মাণের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাই।’
জাতিগত একত্ব প্রশ্নে দেশের প্রতি আত্মনিয়োগে ওবামার স্পষ্ট ঘোষণা- ‘.. কেবল এই বিজয় অর্জনেই আমাদের পরিবর্তনের প্রত্যাশা পূরণ হবে না, আসলে এই পরিবর্তনের প্রত্যাশার লক্ষ্য অর্জনের জন্যই আমাদের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন। কিন্তু বিষয়গুলো যেখানে রয়েছে আমরা সেখানে ফিরে গেলে পরিবর্তনের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। আর আপনাদের ছাড়া এটা অর্জিতও হবে না। আমাদের এজন্য নতুন দেশপ্রেমিকতায় উজ্জীবিত হতে হবে। চাকরি ও দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আমরা কঠোর পরিশ্রম করব এবং আমরা শুধু নিজের কথাই ভাবব না, একে অপরের কথাও ভাববো। এই অর্থনৈতিক সংকট থেকে আমাদের বড় শিক্ষা হলো অর্থনীতির প্রধান ক্ষেত্র সংকটে থাকলে আমরা জায়মান ওয়াল স্ট্রিট পাব না। আমরা ওপরে উঠি আর নিচে নামি সেই এক জাতি ও এক মানুষ হিসেবেই তা থাকব। দীর্ঘদিন যাবৎ যে দলীয় অন্ধ আনুগত্য, ক্ষুদ্র স্বার্থপরতা ও অপরিপক্কতা আমাদের রাজনীতিকে কলুষিত করে আসছে আমাদের অবশ্যই তা রোধ করতে হবে। আমাদের এটা স্মরণে রাখতে হবে যে, এই রাজ্য থেকেই প্রথমে রিপাবলিকান পার্টির ব্যানার নিয়ে হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করেছিল। দলটি গঠিত হয়েছিল আত্মনির্ভরশীলতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও জাতীয় ঐক্যের মূল্যবোধের ভিত্তিতে। এসব মূল্যবোধকে আমরা সবাই শেয়ার করি। ডেমোক্রেটিক পার্টি আজ রাতে যে বিরাট বিজয় অর্জন করেছে তাকে আমরা আমাদের অগ্রগতির প্রতি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বিভেদ অপনোদনের কাজে লাগাব। লিঙ্কন বলেছিলেন, ‘আমরা শত্রু নই, বন্ধু; যদিও অনুভূতির ওপর চাপ রয়েছে, তবে এটা আমাদের ভালোবাসার বন্ধনকে ছিন্ন করতে পারবে না।’ আমি যাদের সমর্থন এখনো পাইনি তাদের কাছে আমার বক্তব্য হলো, আমি হয়তো আপনাদের ভোট পাইনি, তবে আমি আপনাদের কথা শুনতে পাই, আমি আপনাদের সাহায্য চাই এবং আমি আপনাদেরও প্রেসিডেণ্ট হবো।’
দেশাত্মবোধে উৎসর্গিত ও জাতিগত একাত্মতাবোধের এমন প্রাঞ্জল সত্যকথন আর এই উন্নত মূল্যবোধ যে নেতা অন্তরে ধারণ করতে পারেন, তিনিই তো পারেন দেশ ও জাতিকে তাঁর যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে উৎকর্ষতার পর্যায়ে নিয়ে যেতে। আমাদের নেতা-নেত্রীদের জন্য এই মূল্যবোধ অর্জনের চর্চা করা যে কতো বেশি প্রয়োজন, অভাগা বাঙালী ছাড়া কে আর ভালো বুঝবে ! আমাদের এই নেতৃরা কি এরপরও বুঝবে না যে পর্যায়ক্রমে ব্যক্তি দল দেশ নয়, বরং সবার আগে দেশ ও জাতি, তারপরে দল ! ব্যক্তিস্বার্থ এখানে একেবারেই অন্যায্য ও মানসিক নিঃস্বতা ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশ ও জাতি এগিয়ে গেলে কান টানলে মাথার মতো ব্যক্তির উন্নয়ন তো এমনিতেই আসে। ছোট্ট এই গরীব দেশে ত্রানের টিন মেরে দেয়া বা বিশাল অংকের ঘুষের বিনিময়ে খুনি অপরাধীকে পার পাইয়ে দেয়া কিংবা রাষ্ট্রীয় সম্পদের নির্বিচার লুটপাট যে নির্লজ্জ পশুবৃত্তির চাইতেও জঘন্য পর্যায়ের কাজ, দুর্ভাগ্যবশত এই কথাও যখন একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের জাতীয় ও রাষ্ট্রিয় নেতৃত্বকে বানান করে বলে দিতে হয়, নিজের প্রতি ঘেন্না না এসে কি পারে ! আর এরাই বারাক ওবামার কাব্যময় ভাষণ থেকে উপযোগী শিক্ষা নেবেন এতোটা আশাই বা আমরা করি কী করে !
বিশ্ববাসীর প্রতি ইঙ্গিত করে ওবামা যখন বলেন- ‘আজকে আমাদের সীমানার বাইরে যারা এই অনুষ্ঠান দেখছেন, পার্লামেণ্ট থেকে রাজপ্রাসাদ ও বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যারা রেডিওতে তা শুনছেন, তাদের সবার প্রতি আমাদের বক্তব্য, আমাদের কাহিনীগুলো অনন্যসাধারণ; তবে আমাদের ভাগ্য অংশীদারিত্বের এবং আমেরিকার নতুন নেতৃত্বে এক নতুন উষার উন্মেষ ঘটতে যাচ্ছে। যারা এই দুনিয়াকে বিদীর্ণ করতে চাইবে আমরা তাদের পরাস্ত করবই। শান্তি ও নিরাপত্তাপ্রত্যাশীদের প্রতি আমাদের সমর্থন থাকবে। যারা সন্দেহ পোষণ করেন যে, আমেরিকার বাতিঘর এখনো তেমন উজ্জ্বল আলো দিতে সক্ষম কি-না, তাদের প্রতি আমাদের বক্তব্য, আজ আমরা আবার প্রমাণ করেছি যে, আমাদের জাতির শক্তিটা অস্ত্রশস্ত্র বা সম্পদের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে না; এটা আমাদের আদর্শ, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সুযোগ ও প্রত্যাশার ওপর নির্ভরশীল। আমেরিকা পরিবর্তিত হতে পারে- এটাই তার অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য। আমাদের জাতি নিজেকে উৎকৃষ্ট করে তুলতে পারে।…’ এমন বক্তব্যে কেবল জন্মান্ধ ব্যক্তিই হয়তো নিজের দিকে তাকানোর কথা ভুলে যেতে পারে। আমাদের বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হবে যে আমাদের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় নেতৃবৃন্দ এখনই এতোটা জন্মান্ধতায় পর্যবসিত হয়ে আছেন !
কেবল দায়িত্বজ্ঞানহারা দায়বদ্ধতাহীন নেতৃ না হলে ওবামার ভাষণের সমাপ্তি অংশটুকু বুকের ভেতরে দোলা না দিয়ে পারেই না। তিনি এই বলে তাঁর ভাষণের সমাপ্তি টানেন- ‘আমরা অনেক দূর এসেছি। আমরা অনেক কিছু দেখেছি। কিন্তু এখনো অনেক কিছু করার রয়েছে। সুতরাং আসুন এই রাতে প্রত্যেকে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি, আমাদের ছেলেমেয়েরা আগামী শতাব্দী দেখার জন্য বেঁচে থাকবে কি-না,… তারা কী পরিবর্তন দেখবে ? আমরা কী অগ্রগতি সাধন করব ? এই আহ্বানে সাড়া দেওয়ার সুযোগ আমাদের সামনে। এটা আমাদেরই মুহূর্ত। এই সময় হলো- আমাদের জনগণকে কাজে প্রত্যাবর্তন করানো ও আমাদের সন্তানদের জন্য সুযোগের দ্বার উন্মুক্ত করা, সমৃদ্ধি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা ও শান্তির বিষয়গুলোকে সংবর্ধিত করা, মার্কিন স্বপ্নের পুনরুজ্জীবন এবং মৌলিক এই সত্যকে পুনর্ব্যক্ত করা- অনেকের মাঝেও আমরা এক। আর এই একত্ব আমাদের নিঃশ্বাস ও প্রত্যাশায়। যখন নৈরাশ্য ও সন্দেহবাদীরা বলে যে আমরা পারি না- তাদের আমরা জনগণের মতোই দৃপ্ত কণ্ঠে কলব : হ্যাঁ, আমরাও পারি।’
জাতির প্রতি দায়বদ্ধতা, একাত্মবোধ ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পূর্ণ চর্চার মাধ্যমে যখন সে দেশের নাগরিকরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো মাইগ্রেটেড একটা রাষ্ট্রকে উন্নতির চরম শিখরে আরোহন করায়, পাশাপাশি নিজেদের দিকে তাকালে কী দেখি আমরা ? সংকীর্ণ স্বার্থপরতা, জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা ও দায়িত্বহীনতার চরম পরাকাষ্ঠা। কেউ যদি ভুল ম্যাসেজ নিয়ে ভাবেন যে সাম্রাজ্যবাদী একটা পরাশক্তির প্রতি এতোটা অনুরাগ দেখানো উচিৎ হচ্ছে না, তাঁদের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলি, আমার উদ্দেশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুনগান করা নয়। বরং তারা তাদের যে মূল্যবোধ ও নিজেদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা ও একাত্মবোধ অনুশীলনের মাধ্যমে এই শক্তিমত্তা অর্জন করেছে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোই উদ্দেশ্য। আর এটা তো নিশ্চয়ই কেউ অস্বীকার করবে না যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের প্রতি যতই সাম্রাজ্যবাদী হোক, নিজের দেশের প্রতি দেশপ্রেমে তাদের কোন ঘাটতি নেই। এবং নিজের দেশ ও জাতির স্বার্থেই এরা অন্য দেশের প্রতি সাম্রাজ্যবাদী হয়ে উঠতেও দ্বিধাবোধ করে না। আমাদের জন্য তা অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও নিজের দেশ ও জাতির প্রতি তাদের বিশ্বস্ততায় কোন সন্দেহ নেই। যদি আয়নায় নিজের চেহারা দেখি, দেশপ্রেমের পরীক্ষায় কতোটা উন্নীত হবো সেটা কি কখনো ভেবে দেখি আমরা ?
এরপরেও যদি কেউ বলেন, এমন সুন্দর সুন্দর কথা সবাই বলতে পারে, ক্ষমতায় আরোহন করে আমাদের নেতা-নেত্রীরাও জনগণকে নসিহত করতে এরকম সুন্দর কথা বলেন, সেখানে আমি কোন প্রত্যুত্তর না দিয়ে বরং তাদের পরাজিত অবস্থান থেকে ছুঁড়ে দেয়া বক্তব্যগুলো স্মরণ করার কথা বলবো। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক সহনশীল সংস্কৃতির শালীন সমৃদ্ধি কাকে বলে তা আরেকটু চেখে দেখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বারাক ওবামার কাছে পরাজিত প্রার্থী রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী জন ম্যাককেইনের ভাষণটিকে অবশ্যই পড়ে দেখতে বলি। পরাজয় নিশ্চিত হওয়া মাত্রই তিনি ওবামার বিজয় মেনে নিয়ে এবং তাকে অভিনন্দন জানিয়ে ও দেশ পরিচালনায় সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে নিজের শহর আরিজোনার রাজধানী ফিনিক্সে তার সমর্থক, প্রচারণা কর্মী ও মিডিয়ার সামনে যে অভূতপূর্ব ভাষণ দিলেন তাতে একজন বাংলাদেশী হিসেবে অভিভূত না হয়ে কি পারা যায় ! তাঁদের দেশপ্রেমকে নতজানু হয়ে শ্রদ্ধা জানাতে একটুও বাধে না তখন !
‘ধন্যবাদ বন্ধুরা। অ্যারিজোনার এই সুন্দর সন্ধ্যায় এখানে একত্রিত হওয়ায় আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।
বন্ধুরা, আমরা একটা পথ পরিক্রমন শেষ করেছি। আমেরিকার জনগণ তাদের বক্তব্য স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণ আগে আমি সেনেটর বাবাক ওবামাকে টেলিফোন করে বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছি। অভিনন্দন জানিয়েছি দেশের পরবর্তী প্রেসিডেণ্ট নির্বাচিত হওয়ায় যে দেশকে আমরা দুজনেই ভালোবাসি। এ ধরনের দীর্ঘ ও কঠিন প্রতিযোগিতায় সাফল্যের পেছনে তার সামর্থ ও প্রত্যয়কে আমি শ্রদ্ধা করি। তিনি লক্ষ লক্ষ আমেরিকানের মাঝে আশা জাগিয়েছেন। আমেরিকার জনগণের- যাদের এই ভুল বিশ্বাস ছিল আমেরিকার প্রেসিডেণ্ট নির্বাচনে তাদের প্রভাব সামান্য, তাদের মধ্যে জেগে ওঠার স্পৃহা জাগাতে সমর্থ হয়েছেন ওবামা। তার এই অর্জনকে আমি দারুণভাবে প্রশংসা করি।
এটা একটা ঐতিহাসিক নির্বাচন। আমি সশ্রদ্ধ চিত্তে স্বীকার করছি যে এই নির্বাচন আজ রাতে কালো আমেরিকানদের জন্য গৌরব ও ভিন্নরকম গুরুত্ব বয়ে এনেছে। আমি সর্বদা বিশ্বাস করি আমেরিকায় তাদের জন্য সুযোগ অপেক্ষা করছে যারা পরিশ্রম ও আগ্রহের সাথে সে সুযোগকে কাজে লাগাতে চায়। সেনেটর ওবামাও এ কথা বিশ্বাস করেন। আমরা দুজনেই স্বীকার করি আমেরিকা ইতিহাসের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এসেছে। অতীতের কিছু অবিচার- যা অনেক নাগরিককে তাদের পরিপূর্ণ অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে- আমাদের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। সেই স্মৃতি আজও আমাদের আহত করে।
এই একশ’ বছর আগেও প্রেসিডেণ্ট রুজভেণ্ট বুকার টি ওয়াশিংটনকে হোয়াইট হাউজে নিমন্ত্রণ করায় বিভিন্ন গোষ্ঠি সমালোচনা করেছে। আজ আমেরিকা সে সময়ের নির্মম, ভয়ঙ্কর (নোংরা) গোঁড়ামি থেকে অনেক দূরে। একজন কালো আমেরিকানের প্রেসিডেণ্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়া একথাই প্রমাণ করে। বিশ্বের এই মহান আমেরিকান জাতির একজন নাগরিক হিসেবে আজ কারোরই গর্বিত না হওয়ার কোন কারণ নেই। সেনেটর বারাক ওবামা দেশের জন্য এবং তার নিজের জন্য অনেক বড় সাফল্য অর্জন করেছেন। এজন্য আমি তাঁর প্রশংসা করি। আজ তার নানী বেঁচে থেকে তার এই সাফল্য দেখতে পারলেন না বলে আমি তার প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই। যদিও আমি বিশ্বাস করি তিনি অন্তিম শয়ানে থেকেও ওবামাকে একজন ভালোমানুষ হিসেবে গড়ার সাফল্যে গর্ববোধ করছেন।
আমাদের দু’জনের মতদ্বৈধতা ও বিতর্কের মাঝে ওবামার যুক্তি শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তবুও অনেক মতপার্থক্য এখনও আছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। এখন আমাদের খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। এই সময়ে দেশকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে ও সমস্যা মোকাবেলা করতে ওবামাকে আমার যথাসাধ্য সহযোগিতা দানের অঙ্গিকার করছি। আমি সকল আমেরিকান এবং আমার সমর্থকদের বলবো বারাক ওবামাকে অভিনন্দন জানাতে তারা যেন আমার সাথে সামিল হন। চলুন সবাই মিলে আমরা আমাদের নতুন প্রেসিডেণ্টকে আশির্বাদ জানাই এবং দেশের জন্য, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটা শক্ত ভিত গড়তে তাকে সাহায্য করি যাতে আমরা মতভিন্নতা দূর করে দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের নিরাপত্তার জন্র এক হয়ে কাজ করতে পারি।
মতপার্থক্য যাই থাক আমরা সবাই আমেরিকার নাগরিক।… এটা স্বাভাবিক যে আজ রাতে আমি কিছুটা আশাহত। কিন্তু কাল থেকে সব ভুলে আমাদের দেশের জন্য এক হতে হবে।……..
…………. আজ রাতে অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে আমি আমার দেশের জন্য অনেক ভালোবাসা বোধ করছি। ভালোবাসা প্রকাশ করছি আমেরিকার সকল জনগণের জন্য। তারা আমাকে সমর্থন করুন অথবা সেনেটর ওবামাকে সমর্থন করুন।
আমি আমার প্রেসিডেণ্ট ও সাবেক প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য সফলতা প্রার্থনা করছি।……’
এই বাংলাদেশে আমাদেরও এরকম সেই প্রত্যাশিত দিনটি কবে আসবে যেদিন জাতীয় কোন নির্বাচনের পরপরই মুগ্ধচিত্তে বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীর এমন জনভাষণ শুনে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও দেশের প্রতি মমতার উত্থিত আবেগে চোখ ফেটে দু’ফোঁটা জল বেরিয়ে আসবে ! আমাদের সেদিন কি আদৌ আসবে কখনো ???
কৃতজ্ঞতা:
০১) আমেরিকা জানে কীভাবে বদলে যেতে হয়- বারাক ওবামা/দৈনিক সমকাল (০৬/১১/২০০৮)
০২) পরিবর্তনঃ পরাজিত সৈনিকের মহান বক্তৃতা/জিজ্ঞাসু (ব্লগার)/সচলায়তন ডট কম
আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে লোকের আগ্রহের শেষ নেই। কোথায় কখন ডেমোক্রাট প্রার্থী রিপাব্লিকান প্রতিদ্বন্ধীর বিরুদ্ধে কি বলছেন, আমরা সবই খেয়াল রাখি। ব্যস, এত টুকুই। নির্বাচনোত্তর সৌহার্দ্য, ঐক্য ও দেশপ্রেমের যে কালচার, সেটি আমরা আমেরিকা থেকে শিখি না। আমাদের আগ্রহে ভাঁটা পড়ে।
I do agree with Mrs Nandini. Sometimes I felt helpless when I think about the mentality of our leaders. Anyway public accepting those rubbish, they proved it at recent city corporation election. Thats why madam reign as a queen. Hay selucas!!! But still I dream, some day, some way we shall overcome as we did at 1971….
Actually in Bangladesh, religion is a big barrier for growth. This particular religion is an obstacle for the overall development of any islamic country. Hope people realize it. I am affraid of thinking of real development of islamic countries. I talked with caucasian Professors and Ph.D. degree holders from USA and Europe, also people from middle east, and Ph.D. degree holders from Israel. On one thing, everyone agreed that majority people of islamic countries belong to a pattern. I asked muslim Ph.D. degree holders about the writings of “QURAN”. Then these muslims said that real islam is “GOOD”. But no one knows what is real islam. When I asked more, then these muslims said they are not allowed to discuss on islam. When muslims discuss religion, they dont follow any logic. They are blind followers. And they have a false ego. Divine God does not have any special preference for any particular religion. Peace be upon all the people all over the world. Thanks.
বাংলাদেশের জনমানুষের মন মানসিকতার পরিবর্তন হতে আরও কয়েকযুগের ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক পরিবেশের প্রয়োজন – এখনো বাংলাদেশের গণমাধ্যম গুলোতে বিশেষ করে টিভি চ্যানেল্গুলোতে যেহারে ইসলাম ধর্মের মাহাত্য প্রচার করা হয়,বিসমিল্লাহ ছাড়া মানুষ কাজ শুরু করে না,সেখানে একজন হিন্দু বা চাকমা তথা ধর্মীয় সংখ্যালগুকে মানুষ ভোট দিয়ে ক্ষমতার শীর্ষে বসাবে, এটা শুধু স্বপ্নেই সম্ভব । তাছাড়া প্রত্যেক হিন্দুকে যেখানে সন্দেহ-ই করা হয় ভারতীয় চর হিসেবে, সেখানে কোন হিন্দু নির্বাচিত হলে সম্পুর্ণ দেশটাকেই তো ভারতকে উপহার হিসেবে দিয়ে দেবে ঃ-)! বাংলাদেশের মানুষ এতো বোকা না, তাই তো আমাদের ম্যাডামের এখনও এত রমরমা ভাব !!!
গণতান্ত্রিক মূল্যবোথই বোধ করি একটি জাতির সবচাইতে বড় শক্তি ও সম্পদ।
বাংলাদেশের সংবিধানে কিন্ত কোথাও বাধা নেই যে একজন ধর্মীয় সংখ্যালঘু ক্ষমতার শীর্ষে যেতে পারবে না। আসল সমস্যা হচ্ছে মানসিকতার। মানসিকভাবে আমরা প্রস্তুত কিনা একজন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, চাকমা, গারো বা সাওতালকে ক্ষমতার শীর্ষে দেখতে? দু;খজনক সত্যি হচ্ছে আমরা সে ব্যাপারে মোটেও প্রস্তুত না।
আমাদের দেশের সংখ্যাগুরুরা সংখ্যালঘুর দেশপ্রেম নিয়ে অনাকাঙ্খিতভাবে সন্দিহান। একজন মুসলমান বাংলাদেশি যখন ভাগ্যান্বষনে দেশত্যাগ করে তখন সেটা হয় দেশের অর্থনীতির জন্য অবদান। আর যখন একজন সংখ্যালঘু ঠিক একই কারণে দেশত্যাগ করে তখন সেটা হয়ে যায় দেশের প্রতি বেঈমানী।
পাকিস্তানীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অত্যাচারে অতীষ্ট একজন বাঙালি তরুন যখন একাত্তরে হাতে তুলে নেয় অস্ত্র, তাকে আমরা বরণ করে নেই বীর দেশপ্রেমিক হিসাবে। আর স্বাধীন দেশে, সংখ্যাগুরুর তুমুল অত্যাচারে জাতিগত অস্তিত বিলুপ্ত হওয়ার সংকটের মুখোমুখি হয়ে, অসম যুদ্ধে যখন একজন চাকমা তরুন বাধ্য হয়ে হাতে তুলে নেয় হাতিয়ার, তাকে আমরা সামরিক হেলিকপ্টার থেকে লাথি দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেই পাহাড়ী খাদের অতল অন্ধকারে।
আমার ধারনা বাংলাদেশেও হিন্দু প্রধানমন্ত্রী সম্ভব। ভারতে সংখ্যালঘু প্রধানমন্ত্রী বহুদিন থেকেই। আসলে
[১]গণতন্ত্রের বয়স দরকার।
[২] সংবিধানের পরিবর্ত্তন দরকার। আমেরিকাতে যে কেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য নামতে পারে-প্রাইমারীতে জেতার পর তার মমিনেশন দেয় পার্টি। এটা ভারত এবং বাংলাদেশেও হওয়া দরকার। তাহলেই আরো পরিবরত্তন আসবে।
এর পরেও বলার আছে। ওবামা কিন্তু খ্রীষ্ঠাম। ধর্মীয় সংখ্যালঘু নন। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা এখনো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন কি না সন্দেহ আছে। লুজিয়ানার গভর্নর ববি জিন্দাল হিন্দুত্ব ছেড়ে, রাজনীতি করার জন্যে ক্যাথোলিক ধর্ম নিয়েছেন। তাতেই তার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়েছে।
আমেরিকার এই নির্বাচন থেকে আমাদের অনেক কিছু শিখার আছে। আমরা কথায় কথায় আমেরিকারে গাল দেই, কিন্তু আমেরিকা শেষ পর্যন্ত একজন কালো বর্ণের মানুষকে প্রেসিডেন্ট হিসবে নির্বাচিত করল। একজন ব্লগার কোথায় যেন মন্তব্য করেছেন- ‘বাংলাদেশ কি কখনো একজন হিন্দু কিংবা একজন চাকমাকে কখনো রাষ্ট্রিয় ক্ষমতার শীর্ষে বসাতে পারবে’?
ভেবে দেখার মত প্রশ্ন!