শেখ হাসিনা সরকারের জন্য সতর্ক সংকেত
আবুল হোসেন খোকন
এই সরকার খারাপ এটা বলার সময় আসেনি। আসতে আরও অনেক দেরী। কারণ একটি বিদ্ধস্ত রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি-অনিয়ম-নৈতিকতাহীনতার দোর্দণ্ড প্রতাপ ও এর মহোৎসবপূর্ণ প্রেক্ষাপটে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু এজন্য যতোটুকু নিয়ন্ত্রণী অবস্থান দরকারÑ তার কোনকিছুই এখনও হাতে আসেনি। বলা যায় এ সরকারের ক্ষমতা এখনও কব্জায় আসেনি। সেই অবস্থায় সরকারকে খারাপ বলার সময় এটা নয়। তবে সরকারের পদক্ষেপ বা লক্ষণ বোঝা এবং দেখার সময় কিন্তু এখনই। কথায় আছে প্রথম রাতেই বিড়াল মারতে হয়। এখানে কি হচ্ছে, কতোটুকু হচ্ছে, ফল কোনদিকে যাচ্ছেÑ এসব দেখা এবং দেখানোর বিষয় জরুরি। এদিক থেকে বলতে হয় ভাল’র চেয়ে খারাপের পাল্লাই ভারি হচ্ছে কেবল।
যে উপজেলা নির্বাচনটি হয়ে গেল, অর্থাৎ যেভাবে হয়ে গেল তা মোটেই প্রত্যাশিত ছিল না। জানা কথা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেভাবে আওয়ামী লীগ এবং মহাজোট বিজয়ী হয়েছে ঠিক সেভাবেই উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হবে। এখানে কোন প্রতিপক্ষ পাত্তা পাবে না এটা জানাই ছিল। কিন্তু সেই জানাটার কি সুষ্ঠু বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে? ঘটেনি। ঘটলে দল নিয়ন্ত্রণে থাকতো, প্রার্থীরা নিয়ন্ত্রণে থাকতো, আর ভোটের সময় আওয়ামী লীগের নামে এতোসব অঘটন-অপ্রত্যাশিত ব্যাপার ঘটতো না। হাঙ্গামা, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, জোর করে সিল মারা, প্রশাসনকে ব্যবহার করা, জবরদস্তি, প্রতিপক্ষকে বিতাড়ন ইত্যাদি ঘটা উচিত ছিল না। এগুলো যা কিছু ঘটেছে সব আওয়ামী লীগ বা নতুন সরকারের ব্যানারকে ব্যবহার করে ঘটানো হয়েছে। এতে শুরুতেই এই সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে, সরকার সমালোচিত হয়েছে। বলা যায় যে ভাবেই হো সরকার স্যাবোটাজের শিকার হয়েছে। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের ব্যানারে। চর দখলের মতো হল দখল, অর্থ-কামানোর উৎস দখল করার ঘটনা ঘটেছে। মানুষ কিন্তু এমনটি আশা করেননি। হ্যাঁ, বিগত সময়ে ঠিক এই কায়দায়ই দখলবাজী হয়েছে, ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করা হয়েছে এটা একশ’ ভাগ ঠিক। কিন্তু একই কাজ ছাত্রলীগকেও করতে হবে, বা ক্ষমতাসীন শক্তির সহায়তায় এটা হতে হবে তা তো ঠিক নয়। তাহলে আর আগের দখলবাজদের দোষ দিয়ে লাভ কি? কি লাভ আদর্শের দোহাই দিয়ে? অর্থাৎ এটা করার মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে নতুন সরকার এবং আওয়ামী লীগকে স্যাবোটাজ করা হয়েছে। শুধু আওয়ামী লীগ নয় পুরো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তিকে এবং ভোটদানকারী জনগণকে স্যাবেটাজ করা হয়েছে। এখানে নতুন সরকার বা আওয়ামী লীগ আত্মরক্ষা করতে পারেনি।
আমি আমার অনেক কলামেই আওয়ামী লীগের ব্যাপারে উল্লেখ করেছি যে, আওয়ামী লীগ থেকে এখনও খন্দকার মোশতাকরা দূর হয়নি। খন্দকার মোশতাক স্যাবোটাজ করে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যাই করেনি, মুক্তিযুদ্ধের সরকারেক ক্ষমতাচ্যুতই করেনি প্রতিপক্ষকে সদর্পে ক্ষমতায় বসানোর ব্যবস্থা করেছে। এই ব্যবস্থা ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে এ যাবৎ পর্যন্ত চলেছে। চলেছে বলেই বাংলাদেশ আদর্শগতভাবে সামনের দিকে এগুনোর বদলে পিছনের দিকে গেছে, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল পথের যাওয়ার বদলে উল্টো পথে হেঁটেছে। এই খন্দকার মোশতাকরা আছে বলেই আওয়ামী লীগ দীর্ঘকাল ক্ষমতার বাইরে থেকেছে, নানাভাবে নির্মূলনের শিকার হয়েছে এবং সর্বশেষ কথিত এক-এগারোর পর ভয়ঙ্কর অন্তর্ঘাতের শিকার হয়েছে, বঙ্গবন্ধু কন্যাকে পর্যন্ত রাজনীতি থেকে মাইনাস করার প্রক্রিয়া দোর্দণ্ড প্রতাপে এগিয়েছে। কিন্তু বিবেকবান মানুষ তাদের সাধ্যদিয়ে এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন বলেই সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আজ ক্ষমতায় বসে এই বিষয়গুলো ভুলে গেলে সবচেয়ে বড় ভুল করা হবে। কারণ খন্দকার মোশতাকরা বসে নেই।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে একাই দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ী হযেছে। এই ভূমিধ্বস বিজয়ের মধ্যদিয়ে দলটি ক্ষমতায় বসেছে। এতেকরে যে শত্র“রা পরাজয় মেনে নিয়ে চুপ হয়ে গেছে এমন ভাবা হবে বোকার স্বর্গে বাস করা। বরং শত্র“রা এখন খুব ঠাণ্ডা মাথায় সুপরিকল্পিভাবে কাজ করবে যা ভাবাও যায় না। আর এ ক্ষেত্রে যদি দলের ভেতরই খন্দকার মোশতাকরা থাকে এবং দেশময় সংগঠনের ভেতর থেকে এতোসব ঘটনা ঘটতে থাকে, বিশেষ করে যুৎসইসব ইস্যু তুলে দেওয়া হতে থাকে তাহলে তো পোয়াবারো। তাহলে আওয়ামী লীগ বা বর্তমান সরকারকে ব্যর্থতার মুখে পড়ে যেতে বেশী সময় লাগবে না। অতএব ‘…….হইতে সাবধান’।
আসলে প্রতিপক্ষের জন্য ইস্যু হচ্ছে এমন বিষয়গুলোর ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেওয়াটাই ছিল সকলের প্রত্যাশা। ছাত্রলীগের নামে যারা ইস্যু তৈরি করছে তাদের শুরুতেই পাকড়াও করে জেলে ঢোকানো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সন্ত্রাসকরীদের তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করা, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনরক্ষাকারীদের নির্দ্বিধায় নামিয়ে দেওয়া, হাট-ঘাট-বাজার-ফুটপাত দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অ্যাকশনে নামা, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় এমপি-মন্ত্রী-নেতাদের কোন রকম ভূমিকা না রাখার ব্যবস্থা নেওয়া, নির্বাচনে দলের নাম-পরিচয়-ব্যানার ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ রাখা এবং আইনরক্ষাকারী মহলকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পুরো সুযোগ দেওয়াই ছিল উচিত কাজ। তাহলে এতো দ্রুতই সমালোচনার মুখোমুখী পড়তে হতো না এবং দলের ভেতরের স্যাবোটজকারীরাও এতো সাহস পেতো না।
নতুন সরকার এটা বুঝতে পারছে কিনা জানি না যে, খুব সুক্ষèভাবে সর্বক্ষেত্রে স্যাবোটাজমূলক কাজ চলছে। তারই অংশ হিসেবে প্রথমেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার ইন্ধন এসেছে, তারপর এসেছে বিভিন্ন অর্থসংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোতে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় ইন্ধন, এসেছে উপজেলা নির্বাচনেও আত্মঘাতি প্রতিযোগিতার মনস্তত্ব। ফলে যে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ে বেশী চিন্তিত ছিলেন সেই মানুষ এখন সন্ত্রাস নিয়ে বেশী চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। আরো কতগুলো বিষয় লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে। যেমন হঠাৎ করেই রাজধানীতে যানজট ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এটা চলছে এই সরকার ক্ষমতায় বসার পর থেকেই। যা আগে এতো ভয়াবহভাবে ছিল না। এর পেছনে পরিবহন সেক্টরের সংশ্লিষ্টরা এবং প্রশাসনের ভূমিকা আছে সেটা বোঝাই যায়। দেশে হঠাৎ করেই ইন্টারনেট বিপর্যয় ঘটেছে। এটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত এবং অবিশ্বাস্য। এর পেছনেও কিছু আছে তা স্পষ্ট। দেশে হঠাৎই দেখা দিয়েছে অপরাধমূলক তৎপরতার দোর্দণ্ড প্রতাপ। আইরক্ষাকারী মহলগুলো এখানে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। কথা হলো, এসব যে এমনি এমনি হয়েছে, বা হচ্ছেÑ তা বিশ্বাস করলে বড় ভুল করা হবে। কারণ এগুলো সবই সুপরিকল্পিত। প্রশাসনসহ দায়িত্বশীল মহলের সর্বত্রই একচেটিয়াভাবে অবস্থান করছে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোটের লোকজন। এদের মাধ্যমে একেবারে ঠাণ্ডা মাথায় নানা ক্ষেত্রে সরকারকে সমালোচিত ও বিপর্যস্ত করার প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। সরকারকে এটা অত্যন্ত জরুরিভাবে বুঝতে হবে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমার আশঙ্কা, এরপর হঠাৎ করেই হয়তো ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয় শুরু হয়ে যাবে। শুরু হয়ে যেতে পারে জঙ্গি মৌলবাদী হামলা বা নাশকতামূলক তৎপরতা। মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বিশেষ সন্ত্রাসীরা। কারণ এরা শুরতেই এমন অবস্থা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে যাতে করে এই সরকার তার নির্বাচনী অঙ্গীকার নিয়ে ভাবারই সুযোগ না পায়। সুযোগ না পায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করতে এবং ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যেতে। মনে রাখতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের পর যেমন মরিয়া হয়ে অন্তর্ঘাত চালানো হয়েছিল, এখন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারের সবকিছু ব্যর্থ করে দিতে তারচেয়েও বড় অন্তর্ঘাত বা স্যাবোটাজ করা হবে। এটা ভেতরে-বাইরে এবং দেশের বাইরে থেকেও করা হবে এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। অতএব সতর্ক হবার সময় হারানো যাবে না। অসময়ে কোন চেষ্টাই কিন্তু সফল হবে না।
সবশেষে যেটা কথা সেটা হলো, আগেই বলেছি সরকারকে খারাপ বলার সময় এখনও আসেনি। কিন্তু লক্ষণ কিÑ সবকিছু কোন পথে যাচ্ছে, তা বলার সময় এখনই। তাই সরকারের ক্ষমতার প্রশ্নে সমস্যার জায়গাগুলোয় সমাধান প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গেই কঠিন এবং কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। জনগণের প্রত্যাশিত নয়Ñ এমন সব অবস্থানগুলো জনগণের অনুকূলে আনতে হবে। জনস্বার্থের কাজগুলোতে সফল হতে পারলেই বাকিসব কাজে সফল হওয়া যাবে। আর এইসঙ্গে স্যাবোটাজ থেকে এখনই সাবধান হতে হবে, অ্যাকশন নিতে হবে দ্রুত এবং তাৎক্ষণিক।
[২৩ জানুয়ারি ২০০৯, ঢাকা, বাংলাদেশ]
আবুল হোসেন খোকন : সাংবাদিক, লেখক ও কলামিস্ট।
সব কিছুর মাঝে ষড়যন্ত্র খোজা আমাদের জন্মগত স্বভাব। অন্য দলে অন্যায় অনাচার করলে তা হয় অত্যাচার, দূর্ণিতী, আর নিজের দলে করলে তা হয় “ষড়যন্ত্র”, অপপ্রচার। এ মানসিকতার জন্যই আমাদের শাসক দলগুলি আরো বেপরোয়া হতে সাহস পায়।
সরকারি দলের এম, পি সাহেবগন তাদের নির্বাচনী এলাকার কাজের ১০% খাবেন। ছাত্ররা লাঠিয়ালের ভুমিকায় আবতির্ন হবে। তাদের ঘরানার বুদ্ধিগিবীদের মত তারাযে বেকুব না এটা বোঝানোর জন্য তারা নিজ নিজ এলাকায় আকাতরে মাদ্রাসার আনুমোদন দেবেন। এসব কালচারতো ভাই রাতারাতি বদলে যাবেনা। কিন্তু খোকন সাহেবের মত সরকারও যদি সব কিছুতে স্যাবোটজ খুঁজতে শুরু করে তাহলে আর দেখতে হবেনা।
আমাদের প্রচলিত রাজনিতীতে দর্শনগত সিমাহীন দৈন্য, রাজনৈ্তিক সংস্কৃতিতে বেহায়াবৃত্তি দূর করার জন্য আরো গঠনমুলক সমালোচনার প্রয়জন।
তাই !!! ৩০ বছর দলের সকল ক্ষমতা রাজা আর রাজকন্যার হাতে থাকলেও সকল দায় এখন খন্দকার মোশতাকদের।
সরকার স্যাবোটাজের শিকার??? স্যাবোটাজ শব্দটা এতো পরিচিত পরিচিত লাগতেছে কেন???
আমাদের কোন প্রধানমন্ত্রী জানি নিজের ও দলীয় লোকদের অপকর্ম ঢাকার জন্য ৫ বছর এই শব্দটাই তোতা পাখির মত বইলা গেছে??? সুক্ষ কারচুপি–> স্যাবোটাজ–> স্থুল কারচুপি–> স্যাবোটাজ–>
আজব!