অভিজিৎ রায় স্মরণে
গণতন্ত্র-আলাপ পর্ব-১১
চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
২৬ ফেব্রুয়ারি, বুধবার, রাত ৯ টা (বাংলাদেশ সময়)
আলোচকঃ আহমেদুর চৌধুরী টুটুল, প্রকাশক শুদ্ধস্বর; জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং পারভেজ আলম, লেখক ও গবেষক। সঞ্চালকঃ রাহাত মুস্তাফিজ, সদস্য, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক।

আয়োজনেঃ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক
ফ্যাসিবাদী হাসিনার শাসনামলে ২০১৫ সালে মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের ওপর নেমে এসেছিলো ভয়াবহ ও নৃশংস আক্রমণ। ২৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে অমর একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও লেখক অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যার মাধ্যমে এর শুরু। এরপরে একে একে হত্যা করা হয় ব্লগার ও লেখক ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয়, নীলাদ্রি নীল, প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে। পরের বছরও হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত থাকে, আমরা হারাই ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদকে, সমকামী অ্যাক্টিভিস্ট জুলহাস মান্নান ও মাহবুব তনয়কে। ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, সমকামী অ্যাক্টিভিস্টদের হত্যাযোগ্য বানানোর পেছনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায় রয়েছে, সরাসরি দায় রয়েছে আইন শৃংখলা ও গোয়েন্দা বাহিনীর। সেই ধারাবাহিক হত্যাকান্ডগুলোর বিচারকার্যের কী অবস্থা? অভিজিৎ রায় হত্যাকান্ডের বিচারের রায় এসেছে, কিন্তু তদন্তকাজ থেকে শুরু করে পুরো বিচার প্রক্রিয়া নিয়েই সন্দেহ ও প্রশ্ন রয়েছে। অন্যতম ভিক্টিম বন্যা আহমেদ অভিযোগ করেছিলেন, তদন্তের কোনও পর্যায়ে তার সাথে যোগাযোগ করা হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিক্টিম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ব্যাতিরেকে অভিজিৎ হত্যার তদন্ত ও বিচার সম্পন্ন হয় কী করে? ফয়সাল আরেফীন দীপন বা অনন্ত বিজয় দাশের বিচারের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। একই পলাতক অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যকে সমস্ত জঙ্গী আক্রমণের মূল আসামী হিসেবে দেখিয়ে, যে মামলাগুলো পরিচালনা করা হয়েছে ও যে বিচারকাজ চালানো হয়েছে, তার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে; সেগুলো সাজানো বিচার কি না, এমন প্রশ্নও উঠেছে। একের পর এক ঘটনা ঘটানোর পরেও তাকে আটক করতে না পারা কি গোয়েন্দা বাহিনী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিছক ব্যর্থতা, নাকি এখানে অন্য কিছু রয়েছে? ২০১৫-২০১৬ সালের সিরিজ হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইণ্ড কারা? মামলা ও বিচারের ধোঁয়াশে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনও শক্তিধর এজেন্সিকে বাঁচানো হয়েছিলো কি?

সন্দেহ ও অবিশ্বাসের এই জট আজও খোলা সম্ভব হয়নি। যেসব মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে, রায় কার্যকর করা হয়নি। এর মাঝে আবার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জঙ্গী আসামীদের জেল থেকে পালানোর মত ঘটনাও রয়েছে। কিছু মামলা এখনো বিচারাধীন। এ বছর অভিজিৎ রায়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে মেনে নিয়ে আমরাও ভুলতে বসেছি অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় দাশ, ওয়াশিকুর বাবু, নীলয় নীল, আরেফীন দীপন, নাজিমুদ্দিন সামাদ, জুলহাস মান্নান, মাহবুব তনয়কে। কিন্তু প্রকাশক আহমেদুর টুটুল কি ভুলতে পেরেছেন? আততায়ীর আঘাতের স্মৃতিচিহ্ন ধারণ করে তার পক্ষে কি ভুলে যাওয়া সম্ভব? দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া প্রবাসের ঘটনাবহুল জীবনে তিনি কি ভুলতে পারবেন ২০১৫ কে?

আমাদের কি ভুলে যাওয়া ঠিক হবে যে ৫৭ ধারা দিয়ে আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল? অতঃপর নতুন বোতলে পুরনো মদের মত ওই ধারাটি ভিন্ন ফর্মে আজও টিকে আছে। তথাকথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নাম দিয়ে – তালিকা বানিয়ে ফ্যাসিবাদী হাসিনা যেভাবে ব্লগারদের গ্রেফতার করে মিডিয়ায় ছবি প্রকশ করে জীবন সংশয় করে তুলেছিলো, ধারাবাহিকভাবে ধর্মীয় অনুভূতি ও চেতনানুভূতিতে আঘাতের দায়ে একেক পর ব্লগার, লেখক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, কার্টুনিস্টকে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে, ফ্যাসিবাদের পতনের পরে কি তা থেমেছে? এখনো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের কথা বলে কবিকে, প্রকাশককে, সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, রিমাণ্ডে নিয়ে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। মহান একুশে বইমেলায় আক্রমণ কি থেমেছে? হাসিনা আমলে রোদেলা, শ্রাবণকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, এবারে একদিন আগে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানি দিয়ে, বলে কয়ে- পুলিশের সামনে আরেক প্রকাশনার ওপর হামলা চালাতে দেয়া হয়েছে। কেবল লেখার কারণে, চিন্তার কারণে, ভিন্ন ধরণের মত ধারণ ও প্রকাশের কারণে তাদেরকে হত্যাযোগ্য করা হয়েছিল, করা হচ্ছে। তৎকালীন ফ্যাসিবাদী সরকার সেই জঙ্গী ঘাতকদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বাদ দিয়ে নিহত লেখক-ব্লগারদের লেখালেখিকে খতিয়ে দেখার কথা বলেছিলো, আজকেও যাদের ওপর হামলা চলছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে – তাদের লেখার মান ও উসকানির মাত্রা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সমাজে ভিন্নমত – পথ – বিশ্বাস, তথা ভিন্নচিন্তার বিরুদ্ধে কাঠামোগত প্রোপাগাণ্ডা চালিয়ে তাদের ওপর জুলুম-অত্যাচার জায়েজ করে দেওয়া হয়েছিলো, এখনও হচ্ছে।

কিন্তু আমরা বলতে চাই, সংখ্যাগরিষ্ঠের অন্যায় ও স্বেছাচারী দাবীর মুখে রাষ্ট্র কোনও প্রান্তিক গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, কিংবা ভিন্ন চিন্তার কোন মানুষকে দমন করতে পারে না। রাষ্ট্র যদি প্রকৃত অর্থেই ‘বহুত্ববাদ’ ও ‘গণতন্ত্রকে’ ধারণ করে অগ্রসর হতে চায়; সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারকে মূলমন্ত্র করে সর্বজনের রাষ্ট্র হতে চায়, তাহলে তাকে চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।

আগামী ২৬ তারিখ বুধবার, বাংলাদেশ সময় রাত ৯ টায় “অভিজিৎ স্মরণেঃ চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা” শিরোনামে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নেটওয়ার্কের একাদশ গণতন্ত্র-আলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আলোচনা করবেন শুদ্ধস্বর প্রকাশক আহমেদুর চৌধুরী টুটুল, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এবং লেখক ও গবেষক পারভেজ আলম। সঞ্চালনা করবেন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নেটওয়ার্কের সদস্য রাহাত মুস্তাফিজ। উক্ত আলোচনায় আপনাদের আমন্ত্রণ জানাই।

লাইভ দেখার লিংক নিচেঃ

ইউটিউবঃ https://www.youtube.com/live/WgVY_le4LoY?si=xNnRq9iz4SHStdOE
ইভেন্ট লিংকঃ https://fb.me/e/2XvblTb6I