(১৩)
একদিন খুব ভোরে দক্ষিণের আকাশ লাল আভায় উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। সামনের গ্রামের এক মাথা থেকে অন্য মাথা জুড়ে আগুনের শিখা। কাক ভোরেও প্রায় মাইলখানিক দূরের গ্রামের বাড়িগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। গ্রামের কারো আর বুঝতে বাকী রইল না যে,হিন্দু-অধ্যুষিত গ্রাম তেরশ্রীতে মিলিটারিরা আগুন দিয়েছে। তেরশ্রীর উত্তর দিকে পরপর দু’টি গ্রামে মুসলিম বসতি। তার উত্তর দিকের গ্রামটিই আমাদের। এরপর বেশ ক’টি গ্রামে হিন্দুদের বাস।
বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকেই তেরশ্রীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে জমিদার রায় চৌধুরীদের পৃষ্ঠপোষকতায়। পশ্চিম মানিকগঞ্জের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত এ তেরশ্রীর সাথে তাই অত্র এলাকার শিক্ষিত মানুষজনের নাড়িরটান। দেশভাগ থেকে ভাষা আন্দোলন, আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ছয় দফা, ঊনসত্তরেরগন-অভ্যুত্থান সব কিছুতেই এ এলাকার অংশগ্রহন লক্ষণীয়। এর পেছনের ইতিহাস অনেক পুরানো। তার ধারাবাহিকতায় অত্র এলাকায় গড়ে উঠেছে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বিরাট দুর্গ। এতদিন তেরশ্রীতে নৌপথে আক্রমনের সাহস পায়নি পাকিস্তানি মিলিটারি ও তাদের এ দেশীয় দালালেরা। বিশেষ করে করজোনা যুদ্ধে পাকিস্তানি মিলিটারির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি তাদের মনোবলকে ভেংগে দিয়েছিল। তাই জল নেমে যেতেই থানা সদর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরের এ তেরশ্রীতে আক্রমন।
ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়তে না পড়তেই দক্ষিণ দিকের মুসলিম গ্রাম ছাড়িয়ে এদিকে চলে আসা শ’ শ’ নারী পুরুষ আবাল বৃদ্ধবনিতার লাইন চোখে পড়ল। সবাই যে যেভাবে ছিল সেভাবেই ঘুম থেকে উঠে পালিয়ে এসেছে। পরণের কাপড়টুকু ছাড়া আর কিছুই নিয়ে আসতে পারেনি। আমাদের গ্রামের বটগাছ ছাড়িয়ে কাঁচা হালটে উঠতেই ভোরের আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সবাইকে।
তেরশ্রী সেনবাড়ি থেকেই এসেছে প্রথমে পালিয়ে আসা এ মানুষগুলো। বাবার সাথে সেন বাড়ির সম্পর্ক অনেক দিনের। বাবার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু কৃষ্ণ সেন। আমাদের পরিবারের অতি আপন জন কেষ্ট কাকা। স্থানীয় একটি ইস্কুলের শিক্ষক। জন্মের পরেই পোলিও-তে আক্রান্ত হয়ে কেষ্ট কাকার একটি পায়ে জোর নেই। তাই লাঠিতে ভর করেই হাঁটেন। প্রতিকূলতাকে জয় করার কথা উঠলেই বাবা সবসময় কেষ্ট কাকার উদাহরণ টানেন। এত দৃঢ় ও প্রত্যয়ী মনোবল খুব কম লোকেরই দেখেছি, যা আছে কেষ্ট কাকার মধ্যে। যাত্রা-থিয়েটার খেলাধূলা সব কিছুতেই নিজের উপস্থিতি জানান দিতেই ভালবাসেন কেষ্ট কাকা। তাই সব কিছুতেই কেষ্ট কাকা যেন অনিবার্য।
বাবা তেরশ্রী আক্রমনের কথা শুনে প্রথমেই ভেবেছিলেন কেষ্ট কাকা ও তাঁর পরিবারেরকথা। লাঠিতে ভর করে একজন মানুষকে ওই পালিয়ে আসা মানুষগুলোর মাঝে দেখতে পেয়ে বাবা আস্বস্থ হলেন যে কেষ্ট জীবন নিয়ে পালিয়ে আসতে পেরেছে। ভোরের আলোতে বন্ধুকে স্পষ্ট দেখতে পেয়ে বাবা এগিয়ে গিয়ে কেষ্ট কাকাকে জড়িয়ে ধরলেন। কেষ্ট কাকা, কাকিমা ও তাঁর দু’সন্তান পাশে দাঁড়িয়ে অঝরে কাঁদতে লাগলেন। বাবা বন্ধুর হাত থেকে লাঠখানি নিজের হাতে নিয়ে ডান বাহুটা বাড়িয়ে দিয়ে কেষ্ট কাকাকে ধরে নিয়ে এগুতে থাকলেন বাড়ির দিকে। তখন পুবদিকে ভোরের আলোর উজ্জ্বল উপস্থিতি,দক্ষিণে আদিগন্ত আগুনের লেলিহান আভায় রাঙা।
তখনও পালিয়ে আসা মানুষের ঢল পিঁপড়ের মতো এদিকেই আসছে। গ্রামের সবাই যার যার পরিচিত মানুষজনকে নিজেদের বাড়িতে এনে আশ্রয় দিলেন। তেরশ্রী ও তার আশপাশের গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা মানুষের এক জন-অরণ্যে পরিণত হলো আমাদের এ ছোট্র গ্রামটি।
সেদিন তেরশ্রী ও তার আশপাশের গ্রামের হত্যাযজ্ঞের খবরে সবাই শিওরে উঠলো। কিছু রাজাকার অনেকদিন থেকেই সুযোগের সন্ধানে ছিল কখন মিলিটারি এনে তেরশ্রীর জমিদার বাড়ি, কলেজের অধ্যক্ষ- অধ্যাপকদের বাসভবন ও হিন্দু পাড়ায় আক্রমন করানো যায়। মাঠ থেকে বর্ষার জল নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই তারা এ সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে। গভীর রাতে কয়েক শ’ পাকিস্থানি মিলিটারি জেলা ও থানা সদর থেকে এসে ভিন্ন ভিন্ন দলে ভাগ হয়ে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় আক্রমন করেছে।
একটি দল জমিদার সিদ্ধেশ্বর প্রসাদ রায় চৌধুরীর বাড়ির প্রাচীরের চারদিকে অবস্থান নিয়ে ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়ার আগেই আক্রমন শুরু করে। বিশাল প্রাচীর ঘেরা বাড়িটির অসংখ্য ঘর ও কুঠুরির খোঁজ অত সহজ কাজ নয়। তাই প্রথমেই মালীও দারোয়ানদের বেঁধে ফেলে জমিদার ও তাঁর পরিবার কোনদিকে বাস করেন সে তথ্য নেয় স্থানীয় কিছু রাজাকার। তারপর দোতলার একটি ঘর থেকে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের সামনে থেকেই জমিদার সিদ্ধেশ্বর প্রসাদ রায় চৌধুরীকে নিচে নামিয়ে নিয়ে আসে পরিচিত এক রাজাকার। পাকিস্তানি মিলিটারি জমিদার সিদ্ধেশ্বর প্রসাদ রায় চৌধুরীকে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখে দক্ষিণ দিকের সিংহদরজার সামনে।
তখন চারদিকে সুনসান নীরবতা। এক বিশ্বস্ত মালী প্রতিবাদ করতেই তাকে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে মেরে ফেলা হলো।ভয়ার্ত মানুষের আহাজারিতে তখন জমিদার বাড়ির পরিবেশ ভারী। জমিদার বাড়ির দক্ষিণ দিকের চাতালের পরেই বিরাট দিঘি। দিঘির পশ্চিমাংশে তেরশ্রী বাজারের অনেকগুলো দোকানঘর। দক্ষিণ দিকে তেরশ্রী ডিগ্রী কলেজ। পাশেই কলেজের অধ্যক্ষ ও অধ্যাপকদের কোয়ার্টার। বাজারের দোকান ঘরগুলোতে তখন আগুন দেয়া হয়েছে। কলেজ ও শিক্ষকদের কোয়ার্টারের একাংশও আগুনে পুড়ে যাচ্ছে,সেটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। থেকে থেকে আগুনের স্ফুলিংগ ও গুলির শব্দ রাতের শেষ প্রহরকে অস্থির করে তুলেছে। ভোরের পাখিরা ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে আর্তচিৎকারে।
তেরশ্রী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আতোয়ার রহমান প্রগতিশীল ও সংস্কৃতিমনা মানুষ। তাই এলাকার বাম আন্দোলনের সব কিছুতেই তাঁর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা। কলেজের শিক্ষক ও ছাত্রদেরও সক্রিয় অংশগ্রহন শেখ মুজিবের ডাকে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে। ঢাকা থেকে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ৬ দফা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই তার ঢেউ এসে পড়ে তেরশ্রীতেও। সকাল বিকেল তেরশ্রী হাইস্কুল-কলেজ ও বাজারে ৬ দফারপক্ষে মিছিল। ৬৯ এর গনঅভ্যুত্থানেও তার ব্যতিক্রম নেই। ৭ মার্চে রেসকোর্স মাঠে শেখ মুজিবের “ যার যা আছে তাই নিয়েই প্রস্তুত থাকবা। এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” ঘোষণার সাথে সাথেই প্রত্যন্ত তেরশ্রীতেও যেন প্রস্তুতির ছোঁয়া। আর এ সব কিছুর পেছনের মানুষদের অন্যতম অধ্যক্ষ আতোয়ার রহমান ও আরও বামঘেঁষা কিছু মানুষ।
স্থানীয়রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি বাহিনীর কাছেও সে খবর আছে। তাই তেরশ্রী আক্রমনের প্রথম প্রহরেই তেরশ্রী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষের বাসভবনে এ আক্রমন। জমিদারের মতো অধ্যক্ষ আতোয়ার রহমানকেও মিলিটারি হাত-পা বেঁধে তাদের কাছে নিয়ে এসেছে। তারপর অধ্যক্ষের বাসভবনসহ বাজারে আগুন লাগিয়েছে।
রাজাকারও পাকিস্তানি মিলিটারির তৃতীয় দলটি বাজারের পশ্চিম দিকে হিন্দু পাড়ায় আগুন দিয়েছে। কয়েক কিলোমিটার জুড়ে আগুনের লেলিহানশিখা, আগুনের স্ফুলিংগের সাথে ভয়ার্ত মানুষের আর্তচিৎকার, থেমে থেমে গুলির শব্দ নভেম্বর মাসের এ রাতটি যেন অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে এলাকাবাসীর কাছে।
ভোর হওয়ার আগেই পাকিস্তানি মিলিটারি চলে যাবে। ততক্ষণে জমিদার সিদ্ধ্বেশ্বরপ্রসাদ রায়চৌধুরীকে জমিদার বাড়ির ফটকের সামনে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। ধবধবে ফর্সা ছয় ফুট উচ্চতার এ দীর্ঘদেহী মানুষটি হয়ত এই প্রথম কারো কাছে এমন নতজানু হয়ে বসে আছেন।
নভেম্বর মাসের শেষদিকের এ রাতটি বেশ কুয়াশা আর হাওয়া দিচ্ছে। রাত্রির পোশাকেই ধরে আনাহয়েছে জমিদার বাবুকে। তাই বাইরের হাওয়ায় আর মৃত্যু ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছেন এ দাপুটে মানুষটি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে এ প্রত্যন্ত অঞ্চলে পড়ে রয়েছেন শুধু মানুষের কথা ভেবেই। জমিদারের খাজনা প্রথাও আর অবশিষ্ট নেই। তাই একমাত্র আয়ের উৎস বিপুল সম্পত্তি, যা পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া। সে সম্পত্তির সিংহভাগই ইস্কুল কলেজ হাট বাজার দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জন্য দান করে দিয়েছেন। বাকী আছে কয়েক হাজার বিঘা জুড়ে অবস্থিত বিশাল জমিদার বাড়ি ও তার আশপাশের বাগান-পুকুর। সিলেটের চাবাগান থেকে যা আয় আসে, সেটা দিয়েই জমিদার বাড়ির খরচ চলে; চলে এলাকার গরীব মানুষের সাহায্য সহযোগীতাও। তেরশ্রী হাইস্কুল ও কলেজের গরীব ও ভাল ছাত্রদের শুধু বিনে বেতনে পড়াশুনা নয়, বিনে খরচে থাকা-খাওয়ারও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন জমিদার সিদ্ধ্বেশ্বরপ্রসাদ রায় চৌধুরী।
এলাকাবাসীরকাছে তাই সিদ্ধ্বেশ্বরপ্রসাদ রায় চৌধুরী যেন সাক্ষাত দেবতা। সেই অজাতশত্রু মানুষটি একবারের জন্যেও ভাবতে পারেননি যে, তাঁর বাড়িতে মিলিটারি আসবে। তাঁকে স্ত্রী পুত্রকন্যার সামনে অপদস্থ করে এমনভাবে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রাত্রিতে খোলা আকাশের নিচেবসিয়ে রাখা হবে। শীতে কাঁপছিলেন জমিদার সিদ্ধ্বেশ্বরপ্রসাদ রায় চৌধুরী। এক রাজাকার দয়া করে বাড়ির ভিতর থেকে একটি কম্বল এনে তাঁর গায়ে জড়িয়ে দিয়েছে। চোখ খোলা অবস্থায় দু’হাটু ভেঙ্গে পড়ে আছেন তিনি। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেখছেন তাঁর বাড়ির ভিতর থেকেমূল্যবান সামগ্রীগুলো স্থানীয় রাজাকারেরা নিয়ে যাচ্ছে; মন্দিরের ভিতর থেকেসোনা-দানাসহ বিগ্রহের গায়ে যা পড়ানো ছিল সব কিছুই খুলে খুলে নিচ্ছে। আগুনের আলোতে তেমন কাউকে স্পষ্ট চেনা না গেলেও এরা যে স্থানীয় রাজাকারবাহিনী সেটা তিনি বুঝলেন। জটলা পাকিয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে পাকিস্তানী মিলিটারি। কমান্ডার গোছের একজন হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে পুরো অপারেশনটার নেতৃত্ব দিচ্ছে।
কতক্ষণএভাবে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকতে হয় ভাবতে ভাবতেই সেই পাকিস্তানী কমান্ডার কয়েকজন রাজাকার ও সিপাহি নিয়ে জমিদার সিদ্ধ্বেশ্বরপ্রসাদ রায় চৌধুরীর দিকেই এগিয়ে এলো। একটু দূরে দাঁড়িয়ে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে বোঝালো এক রাজাকারকে। তারপর সে রাজাকার দৌঁড়ে জমিদার বাড়ির ভিতর গেল। বেশ কিছু পরে আবার ফিরে এলো। হাতে টিনের একটিপাত্র। পাত্রটি নিয়ে পাকিস্তানী মিলিটারিদের কাছে এগিয়ে গেল। কিছু একটি নির্দেশনা পেয়ে জমিদার বাবুর কাছে এগিয়ে এলো আবার। জমিদার বাবুকে যেদিকে মুখ করে বসানো হয়েছিলে তার উল্টো দিকে থেকে তরল জাতীয় কিছু জমিদারের গায়ের কম্বলে ঢেলে দিল। দাহ্য পদার্থের ঝাঁঝালো গন্ধে গা গুলিয়ে উঠলো তার। জমিদার সিদ্দ্বেশ্বরপ্রসাদ রায় চৌধুরী বুঝে গেলেন, বাড়ির ভেতর থেকে কেরোসিনের টিন এনে তাঁর সারা গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে দেয়া হয়েছে।
তখনওগুলির শব্দ। আগুনের তীব্রতা কমে এসেছে। যুদ্ধ পরবর্তী এক ভয়ঙ্কর নিস্তব্ধতা চারিদিকে। অধ্যক্ষ আতোয়ার রহমানকে হাত-পা বাঁধা অবস্থাতেই অধ্যক্ষের বাসভবনের পাশেগুলি করে মারা হয়েছে। বাজারের দোকান ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় মারা গেছে কয়েকজন। জমিদারবাড়ির মালীকে গুলী করে মারা হয়েছে পালানোর সময়। হিন্দু পাড়ায় ২০-২৫ জন মারা গেছে গুলীতে ও আগুনে পুড়ে। পাশের মুসলমান পাড়া থেকে কয়েকজন সেন পাড়ায় আগুন লেগেছে ভেবে এগিয়ে এলে তাঁরাও মিলিটারির গুলীতে মারা পড়েছে। বেঁচে থাকা মানুষগুলো পালিয়েছে আশপাশের জংগলে। কেউ কেউ রাত্রের অন্ধকারে যে দিকে পারে পালিয়ে বেঁচেছে।
অপারেশন প্রায় শেষ। পুব দিকে সূর্যের আলো উঁকি দিচ্ছে। মিলিটারি এখনই চলে যাবে। ভিন্ন ভিন্নদলে ছড়িয়ে পড়া রাজাকার ও পাকিস্তানি মিলিটারিরা সবাই জমিদার বাড়িতে এসে জড়ো হয়েছে। জমিদার সিদ্দ্বেশ্বরপ্রসাদ রায় চৌধুরী তখনও গায়ে কম্বল জড়িয়ে হাত-পা বাধা অবস্থায় বসে আছেন। কম্বল কেরোসিনে ভেজা। ছিটিয়ে দেয়া কেরোসিন তেলে জমিদারের মাথার চুল ও মুখমন্ডলও ভিজে গেছে। অপারেশন শেষে সবাইকে একত্রে পেয়ে সেই মিলিটারি কমান্ডার প্রস্তুতি নিচ্ছে চলে যেতে।
সবাই নিরাপদে ফিরে এসেছে কিনা সেটা আবারও নিশ্চিত হয়ে নিল শেষ মুহুর্তে। তারপর পাকিস্তানী মিলিটারির একজনকে ডেকে নিয়ে নির্দেশনা দিল। কমান্ডারের নির্দেশনা পেয়ে পকেটে থেকে কিছু একটা বের করে ছুঁড়ে দিলহাত-পা বাধা জমিদার সিদ্দ্বেশ্বরপ্রসাদ রায় চৌধুরীর দিকে। মুহুর্তেই আগুনের কুন্ডুলিতে পরিণত হলেন জমিদার সিদ্দ্বেশ্বরপ্রসাদ রায় চৌধুরী। যে মাটিকে ভালবেসে তিনি কলকাতা ছেড়ে এসেছিলেন, সেই মাটির উপরেই আগুনের লেলিহান শিখায় জ্বলে পুড়ে ছটপট করে করে অবশেষে ছাই হয়ে মাটির সাথেই এক সময় মিশে গেলেন তিনি।
(১৪)
নভেম্বরমাসের ২৩ তারিখের এত বড় হতাহতের খবরে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ভয়ানক উত্তেজনা কাজকরছে। মাত্র মাস দুই আগে করজোনা যুদ্ধে পাকিস্তানি মিলিটারির যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল,তার প্রতিশোধই নিল দেশীয় রাজাকারদের সহায়তায় তারা। তেরশ্রীর হত্যাযজ্ঞে সবাই হতচকিত। পুরো মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা আবার প্রতিশোধ নেওয়ার অপেক্ষায় বসে আছে। যে করেই হোক ঘিওর থানা আক্রমন করে তেরশ্রী হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিতেই হবে।
দেখতে দেখতে ডিসেম্বর মাস চলে এলো। ভারত-পাকিস্তানের বিরোধও প্রকাশ্য আকার ধারণ করেছে।যে কোন সময়ে দুই দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। জেলা ও থানা সদরে থাকা পাকিস্তানি মিলিটারিদের অপারেশনও প্রায় স্তিমিত হয়ে এসেছে। টাংগাইল থেকে কাদেরিয়া বাহিনীর সাফল্যের খবর শোনা যাচ্ছে।
একদিন খবর এলো একদল পাকিস্তানি মিলিটারি টাংগাইল থেকে নাগরপুর-দৌলতপুর হয়ে ঘিওরের দিকেআসবে। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ইউনিটের কাছে সে খবর ছড়িয়ে যেতেই সবাই আক্রমনের জন্যপ্রস্তুতি নিল। দৌলতপুর থেকে ঘিওরের আসার একটি মাত্রই কাঁচা সড়ক। ঘোড়ার গাড়িই চলাচলের একমাত্র বাহন। মাঝখানের কালীগংগা নদী। নদী পারাপারের একমাত্র মাধ্যম খেয়া নৌকা। চলাচলের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে আগে থেকেই এখানে দেশীয় রাজাকার-আলবদর বাহিনীকে প্রস্তত রেখেছে মিলিটারিরা। তাই এ জায়গাটি আক্রমনের তালিকা থেকে বাদ দিতেই হয়েছে।
ঘিওরে বাজারে ঢোকার আগেই একটি বিশাল গ্রাম কুস্তা। প্রায় চার-পাঁচ কিলোমিটারের এগ্রামটি মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এখানেই সন্ধার একটু আগে মিলিটারিদের বিশাল একটি বহরের উপর আক্রমন করা হলো। প্রায় কয়েক ঘন্টার যুদ্ধে পাকিস্তানি মিলিটারির পাঁচজন মারা গেল। আহত কয়েকজনকে রেখেই মিলিটারিরা পালিয়ে গেল ঘিওর থানা সদরের দিকে। সে রাত্রেই মহুকুমা সদর থেকে আরো বিশাল একটি বহর এসে থানা সদর থেকে সমস্ত মিলিটারিদের সরিয়ে নিল। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেই ঘিওর এলাকাটি মুক্ত এলাকায় পরিণত হলো।
তখনও ইন্দিরা গান্ধী পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধ ঘোষনা করেননি। তার মাত্র দুদিনপরেই ভারতীয় বাহিনী প্রকাশ্যে মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য স্থল ও বিমানবাহিনী নামিয়ে দিল। মাত্র নয় দিনের যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী পরাজয় বরণ করলো স্বাধীনতাকামী মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর কাছে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে।
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশে ফিরে এলেন শেখ মুজিব। বিভিন্ন এলাকায় তখন রাজাকার-আলবদরদের চিহ্রিত করে করে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। কাউকে কান কেটে দিয়ে, কাউকে মেরে ফেলে, আবার কেউ কেউ ক্ষমা চেয়ে প্রাণে বাঁচতে মরিয়া।যাদের কোনদিন সস্মুখ যুদ্ধে দেখা যায়নি,স্বাধীন দেশে তারা কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধা সেজে বিভিন্ন রকম অপকর্ম করতে শুরু করেদিল। তখন প্রায় সবার হাতেই যুদ্ধের সময়ের সহজলভ্য অস্ত্রশস্ত্র। প্রশাসন তখন নেই বললেই চলে। বিভিন্ন স্থানে ডাকাতির ঘটনা শোনা যেতে লাগলো। যে টাংগাইল জেলা থেকে একসময় কাদেরিয়া বাহিনীর যুদ্ধ-গৌরবের গাঁথার সংবাদ আসতো; সেখানেই শোনা যেতে লাগলো নানারকম অপরাধের ঘটনা।
বাবাও তার বন্ধুরা এলাকাকে নিরাপদ রাখতে সচেষ্ট হলেন। যারা রাজাকার আলবদর বাহিনীকে সহায়তা করেছিল, তাদেরকে যেন কেউ থানায় সোপর্দ না করে নিজেরা প্রতিশোধ না নেয় সে ব্যাপারে কড়া নির্দেশনা দেয়া হলো মুক্তিযোদ্ধাদের।
যুদ্ধের সময়ে জন্ম আমার ছোট বোনটিও তখন ছয় মাসের। বাবা ফিরে এলেন বাড়িতে। মা অস্থির হয়েগেলেন কলকাতায় থাকা তার আত্মীয়স্বজনের খোঁজে। খবর এসেছে ভারতে মামা বাড়িতে সবাই জেনে গেছে বাবাকে মিলিটারিরা মেরে ফেলে গ্রামের বটগাছে ঝুঁলিয়ে রেখেছে। মৃত্যুর খবর নাকি বাতাসে ছড়ায়। সে বাতাসের খবর যে ভুল সেটা প্রমান করতে অবশেষে বাবা ফেব্রুয়ারি মাসেই কলকাতা রওনা হয়ে গেলেন। প্রথমে তার ছোটবেলার বন্ধু অমলের কাছে বারাসাতে। সেখানে কিছুদিন থেকে নদীয়া জেলার চন্দননগরের তারকনগরে আমার দাদুর বাড়িতে।
(১৫)
রাণাঘাট থেকে গেদের ট্রেনে বাগুলি স্টেশনে নেমে বাবার মনে হলো যেন পূনর্জন্ম পেয়েছেন। ফরিদপুরের শরণার্থীদের যে দলটি সদ্য স্বাধীন “জয় বাংলায়”ফিরে যাচ্ছিলেন তাঁরা সাহস করেএগিয়ে না এলে বাবাকে নক্সাল ভেবে এতক্ষণ কলকাতার জেলে পাঠিয়ে দিত ভারতের প্যারামিলিটারি বাহিনী। বারাসাতের অমল কাকুর কথারই সত্যতা টের পেলেন বাবা; কিভাবে হাজার হাজার অল্প বয়েসী ইস্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেগুলোকে জেলখানায় ভরে রেখেছে ইন্দিরা গান্ধীরজাতীয় কংগ্রেসের রাজ্য সরকার। মাত্র কিছুদিন হলো সিদ্ধ্বার্থশঙ্কর রায়কে মুখ্যমন্ত্রীত্বে বসিয়েছেন ইন্দিরা গান্ধী। বাংলা কংগ্রেস ও ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া কিছু বামপন্থী দলের যে কোয়ালিশন, যার নেতৃত্বে ছিলেন অজয় মুখার্জী, তাদের দ্বারাই সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত হয়েছেন কানু সান্যাল- চারু মজুমদারের নক্সাল সমর্থকেরা।
এ নির্বাচনে আবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় এসেছে জাতীয় কংগ্রেস। যদিও জাতীয় কংগ্রেসের রাজ্য ক্ষমতায় আসার আগেই দমন-পীড়নের মাধ্যমে নক্সাল আন্দোলনকে কোন ঠাঁসাকরে ফেলা হয়েছে। হাজার হাজার তরুণ-যুবককে নক্সালদের সাথে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে যোগসাজসের অভিযোগে জেলে ভরে রাখা হয়েছে। অনেক মেধাবী তরুণ-যুবা নক্সালবাড়ির অনুপ্রেরণায় সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন। পংগুত্ব বরণ করেছেন অনেকেই। জেলে থাকা বন্দীদের প্রায় আশি ভাগের বয়সই বিশের নিচে।
এ সম্ভাবনাময় শক্তিকে দুর্বল করে দিতে নেতৃত্বশূন্য করার পরিকল্পনা করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।আর সে ছকেই তিনি বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় নামিয়েছিলেন সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীকে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সহায়তা দানেরজন্য অনেক আগে থেকেই পূর্বাঞ্চলে নামানো হয়েছিল এ বাহিনী। এখন এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন ইন্দিরা গান্ধী।
নক্সালবাড়িতে শুরু হওয়া আন্দোলন তখন অনেকটাই স্তিমিত। গ্রেফতারের ভয়ে অনেকেই পালিয়ে বাড়াচ্ছেন। অনেক কমরেডকেই রাজ্য সরকারের কোয়ালিশনের শরিক বামপন্থীদের মাধ্যমে বিভিন্ন মতবাদে ভাগ করে আন্দোলনকে বিভক্ত করেদেয়া হয়েছে। বাম-আদর্শ ও তাকে বাস্তবায়ণের স্তরেও তাত্ত্বিক বিতর্ক সৃষ্টিরমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন মত তৈরী করা হয়েছে। শ্রেণী শত্রু নির্মূল ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারেও সমাজতান্ত্রিক মতবাদের পরিবর্তে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা পাবার বিষয়টিকে সফলভাবেই গুরুত্বপূর্ণ করে দেখানো হয়েছে।
নক্সালবাড়িতে শুরু হওয়া জোতদারবিরোধী ভূমি-উদ্ধারের আন্দোলন সারাভারতে নক্সালবাড়ি আন্দোলন নামেযে সাড়া জাগিয়েছিল, এ চার পাঁচ বছরেই তা স্তিমিতপ্রায়। নেতাদের অনেকেই আত্মগোপনে।অনেক পুলিশ-মিলিটারি-প্যারামিলিটারির এনকাউন্টারে নিহত। চারু মজুমদারকে গ্রেফতারের জন্য হন্যি হয়ে খুঁজছে ভারত সরকার।
এরকম এক সময়ে বাবা তারকনগরে গিয়ে পৌঁছুলেন। বাবাকে পেয়ে দাদু বাড়ির সবাই মহাখুশী। যে মানুষটিকে মৃত ভেবে গয়াতে গিয়ে পিন্ডি দান করা হয়েছিল, তাকে দেখতে পেয়ে সবাই আনন্দে আত্মহারা। পথের সকল ক্লান্তি ভুলে বাবাও অনেকদিন পর হাফ ছাড়লেন যেন।
তারকনগর সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত থেকে মাত্র মাইল দুয়েক দূরের বর্ধিষ্ণু একটি গ্রাম। প্রাইমারি ইস্কুল- হাইস্কুল- গ্রাম্য একটিপোস্ট অফিস আর একটি ছোট্ট বাজার- এ নিয়েই কয়েক শ’ বসতির এ গ্রামটি। গ্রামবাসীদের অধিকাংশই দেশভাগের পরে চলে আসা পূর্ব-বাংলার বাংগালী, যাদের অধিকাংশই মুসলমানদের সাথে জমি-জায়গা বদল করেই এসেছেন। অনেক মুসলমান রয়েও গেছেন। আছেন অনেক পুরানো বসতি,অনেক হিন্দু পরিবারও। ট্রেনে কলকাতা থেকে মাত্র ঘন্টা তিনেক সময়ের মধ্যেই যাতায়াত করা যায়; তাই অনেক বনেদি হিন্দুদের বাড়ি ঘরও আছে তারকনগরে।
“সীমান্তের কাছাকাছি ব’লে মাঝে মধ্যে উটকো ঝুট ঝামেলাও হয় এখানে। তাছাড়া নক্সাল সমর্থক ও বিরোধী দু’টি গোষ্ঠীও আছে এখানে। তাই তুমি একটু সাবধানে চলাফেরা করো” – বাবাকে দাদু স্নান সেরে খাওয়ার সময় বললেন।
বাবা একটু আশ্চর্য হয়ে বললেন, নক্সালবাড়ির ধাক্কা এতদূরে এখানেও এসে লেগেছে?
দাদু বললেন, শুধু নক্সালবাড়ির ধাক্কা বলো। তোমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়েও কি কম ঝামেলা পড়তে হয়েছে এখানে। এসেছো তো, থাকো ক’টা দিন তবেই বুঝবে।
পাশে থেকে দিদিমা বলে উঠলেন, এত দূর থেকে ছেলেটা এসেছে; মেয়ে-নাতিনাতিনীদের কথা জিজ্ঞাসা না করে দিচ্ছো ছেলেটাকে ঘাবড়ে। এর পরে শুরু করবে তোমাদের হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির দলাদলি উৎপাত সমিতি আর দমন সমিতির কথা।
দাদুবাড়ির বারান্দার উঠোনে বসে কাঠের পিঁড়িতে বসে ভাত মাখতে মাখতে বাবা বললেন, নাম দু’টো বেশ তো; উৎপাত সমিতি- দমন সমিতি। কেউ উৎপাত করলে কাউকে না কাউকে তো দমন করতেই হবে তাই না?
দাদুর কথাটি তেমন পছন্দ হলো বলে মনে হলো না। তিনি বললেন, ব্যাপারটি আবার উল্টোটিও তো হতে পারে। কাউকে যদি তুমি সারাক্ষণ দমন করতেই থাকো- তবে দমনের প্রতিবাদ তো একদিন তাকে করতেই হবে। কারও কারও কাছে যদিও বা তা উৎপাত বলে মনে হতে পারে।
হাইস্কুলের অভিজ্ঞ শিক্ষক দাদু বেশ বিরক্তি নিয়েই কথাটা বলে খাওয়া শেষ করে বৈঠকখানায় গিয়ে বসলেন। দিদিমা বাবাকে চোখ টিপে ইশারা করলেন। বাবার বুঝতে বাকী রইল না যে, দাদু এই উৎপাত আর দমন সমিতির ক্যাচালে জড়িয়ে পড়েছেন।
(চলবে)
( পথ আটকে ছিল এ অসমাপ্ত লেখাটি। আমার এ উপন্যাসটি এক সময় সমাপ্ত হবে;যদিও মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের কাহিনী সমাপ্ত হ’বার নয়, সমাপ্ত হবে না দেশভাগ ও নানা বিভাজনে বাস্তুচ্যুত মানুষের দুঃখ গাঁথাও)
স্বাধীনতার পর সাধারন ক্ষমা ঘোষণা করাটা বোধহয় ভুল হয়েছিল। তারজন্য রাজাকারেরা পার পেয়ে গেছে, এখন তারা বি.ন.পি. বা জামায়েত দলের কর্মী। এরাই দেশটাকে ছারখার করে দিল। এখনো সময় আছে ,এইগুলিকে শাস্তি দিয়ে দেশকে ভালো করার। বর্তমান সরকার কিছু ক্রতে পারবে কি?
অসাধারন ! পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ।
‘চন্দ্রমুখী জানালা’ পর্ব ছয় পড়লাম ৷ভালো লাগলো ৷
যাকেই ক্ষমা করা যাক রাজাকারদের কখনো নয়
জানি না বংগবন্ধু কেনো সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন? এই সাধারণ ক্ষমা যদিও গুরুতর অনেকগুলো অপরাধের জন্য প্রযোজ্য ছিল না; তবু এই সাধারণ ক্ষমার সুযোগে অনেক রাজাকারই পার পেয়ে গেছেন, অনেক প্রভাবশালী রাজাকার ততকালীন ক্ষমতাসীনদের সাথে সখ্যতা ও আত্মীয়তার কারণে মাফ পেয়ে যান; এদের অন্যতম সাকা,ফকা ও তাদের গোষ্ঠী। ১৯৭৫ এর পরে তো রাজাকার ও নব্যরাজাকারেরাই ক্ষমতায় ছিল। ৭২ থেকে ৭৫ এ যে বিচার হয়নি, এখন সে ক্ষতে একটু হলেও প্রলেপ দেয়া হচ্ছে; আশার কথা সেটাই। আগামীকাল ২৯ জুলাই বাংলাদেশের আরেক কুখ্যাত রাজাকার সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হবে।” যাকেই ক্ষমা করা যাক রাজাকারদের কখনোই নয়”।
রায় ঘোষিত হয়েছে, বাস্তবায়নের অপেক্ষা এখন। বঙ্গবন্ধুর হয়তো অসংখ্য প্রশাসনিক ত্রূটি ছিলো, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে টেনে দাঁড় করাতে গিয়ে, প্রাণ দিয়ে তিনি সেই ভুলের মাশুল দিলেন।