কয়েক বছর আগের ঘটনা।
উত্তর আমেরিকা থেকে চমৎকার একটা মাসিক পত্রিকা বের হতো। পত্রিকার নামটা ছিলো চমৎকার, খুবই কাব্যিক। কারুকার্যে, লেখার গুণগত মানে, নামীদামী সব লেখকের সমাহারে পত্রিকাটি ছিলো একেবারে প্রথম শ্রেণীর। বাংলাদেশের বাইরে থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর মধ্যে সেটি যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলো, এ বিষয়ে খুব একটা সন্দেহ নেই আমার। বাংলাদেশের বাইরেই বা বলি কেনো। এর সাথে রূপে, গুণে, মানে পাল্লা দেবার মতো পত্রিকা বাংলাদেশেও কম ছিলো।
এই পত্রিকায় আমি সবে দুই একটা লেখা লিখেছি। এর মধ্যেই সম্পাদক সাহেব আমার ফোন নাম্বার নিয়েছেন ইমেইলের মাধ্যমে। একদিন দেখি ফোনও করেছেন। বললেন যে, আমার লেখা তাঁর খুব পছন্দ হয়েছে। আমি যেনো তাঁদের পত্রিকায় নিয়মিত লিখি। পত্রিকা নিয়ে তাঁর অনেক স্বপ্নের কথাও তিনি আমাকে বললেন।
আমি সেই সময় বিজ্ঞানের উপরেই বেশি লিখতাম। অনেকেই হয়তো অবাক হবেন এটা জেনে যে, আমার প্রথম বই একেবারে বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের উপরে লেখা ছিলো। বিজ্ঞানের উপরে লেখালেখি পরে একেবারেই ছেড়ে দিয়েছি আমি। এখন আর ওর ধারে কাছেও যাই না। তো, এরকমই একটা লেখা পাঠিয়েছি আমি সেই পত্রিকাতে। সেটা গিয়ে পড়েছে বিভাগীয় সম্পাদকের হাতে। তিনি আমাকে ইমেইল করেছেন এই বলে যে, লেখাটা খুবই কাঁচা। এতে অনেক বড় বড় ত্রুটি–বিচ্যুতি আছে। সেগুলো সংশোধন করতে হবে। সংশোধন করলেই কেবলমাত্র তা ছাপা যাবে পত্রিকায়। নইলে নয়। সেই একই মেইলে তিনি লিখেছেন যে, কী কী ত্রুটি–বিচ্যুতি আছে, সেগুলো তিনি পরের মেইলেই আমাকে বিস্তারিত জানাবেন, এবং আমি সেগুলো সংশোধন করে দিলেই, তিনি তা প্রকাশের অনুমতি দেবেন।
আমি উনার পরের মেইলের অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আর কোনো মেইল আসে না আমার কাছে এ বিষয়ে। আমি নিজেও বিষয়টা ভুলে যাই। বেশ কিছুদিন পরেই হঠাৎ করে দেখি যে, সেই পত্রিকার একটা সংখ্যা আমার কাছে এসে হাজির। পত্রিকাটির এই নিয়মটা দারুণ ছিলো। লেখা ছাপা হলেই একটা হার্ড কপি তাঁরা লেখকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। বিস্ময়ের সাথে দেখি যে, সেই সংখ্যাতেই আমার সেই ত্রুটিপূর্ণ লেখাটাই ছাপা হয়েছে। সম্পূর্ণ অবিকৃতভাবে।
এর কিছুদিন পরে একই ভদ্রলোকের কাছ থেকে একটা মেইল এসেছে। আমাকে সকাতরে অনুরোধ করেছেন বিজ্ঞানের উপরে একটা লেখা পাঠানোর জন্য। কারণ হচ্ছে যে, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিষয়ে এবার তাঁরা কোনো লেখাই পান নি। আমার লেখাটা পেলেই এই সংখ্যাটা পূর্ণতা পাবে। ভদ্রলোককে আমি নিরাশ করি নি। আরেকটা বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা পাঠিয়েছিলাম উনাকে।
এ তো গেলো আমার মতো চুনোপুঁটির ঘটনা। বড় বড় লেখকদের জীবনেও এমন ঘটনা ঘটেছে অহরহ। শুরুতে কেউ পাত্তা দেয় না, লেখা ছাপতে চায় না। লেখক সম্পাদকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে পায়ের তলার জুতো খসিয়ে ফেলেন। তবুও লেখা ছাপা হয় না। তারপর সেই লেখকই আবার যখন নামীদামি হয়ে উঠেন, তখন পাশার দান যায় উল্টে। সম্পাদকই লেখকের পিছনে ঘুরতে থাকেন। এরকমই এক ঘটনা ঘটেছিলো বুদ্ধদেব বসুর ক্ষেত্রে জীবনের শুরুতে। আসুন, সেই ঘটনাটাই পড়ি আমরা এখানে।
বাংলাদেশের আরো অসংখ্য কিশোর, বালকের মতোই বাল্যকালে সুকুমার রায়ের ‘সন্দেশ‘ পত্রিকার ভক্ত ছিলেন বুদ্ধদেব বসু। তাঁর যখন এগারো বছর বয়েস, সুকুমার রায় হুট করে মারা যান। সেটা ঊনিশশো তেইশ সাল। সুকুমার রায়ের মৃত্যুর পর সেই বছরের চৈত্র মাসের সংখ্যায় বলা হয় যে, এখন থেকে সন্দেশ আর বের হবে না। তবে, ওই একই সংখ্যাতেই নতুন একটা পত্রিকার বিজ্ঞাপণ বের হয়। এই নতুন পত্রিকার নাম মৌচাক।
মৌচাক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন সুধীরচন্দ্র সরকার। এই পত্রিকার নামকরণ করেছিলেন কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। মৌচাকের প্রথম সংখ্যার শুরুও হয়েছিলো তাঁর কবিতা দিয়ে। প্রথম দু‘লাইন ছিলো এরকম, ঝরছেরে মৌচাকের মধ্য/ গন্ধ পাওয়া যায় হাওয়ায়। এই পত্রিকাটি এতোই অসাধারণ ছিলো যে, সন্দেশের অভাব মিটিয়ে দেয় এটি।
এতে লিখতেন বিখ্যাত সব লোকজন। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়, সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়, হেমেন্দ্রকুমার রায়, সুরেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়, শিল্পী চারুচন্দ্র রায়, নরেন্দ্র দেবের মতো লোকেরা। সময়ে সময়ে অবনীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথো লিখেছেন মৌচাকে। বিখ্যাত লোকদের বাইরে কিশোর–কিশোরীদেরও নানাভাবে লেখার জন্য উৎসাহ দিতেন সুধীরচন্দ্র। এঁদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীতে বাংলা সাহিত্যে বিখ্যাত সাহিত্যিক হয়েছেন।
মৌচাক বের হবার পর থেকেই এর ভক্ত হয়ে যান বুদ্ধদেব বসু। এর নিয়মিত গ্রাহক ছিলেন তিনি। সেই সময়ে বুদ্ধদেব বসু থাকতেন নোয়াখালীতে। ছড়া, কবিতা, গল্প ইত্যাদি লিখে এলাকায় ক্ষুদে সাহিত্যিক হিসাবে বেশ নাম ডাক কামিয়েছেন। তো তাঁর শখ হলো মৌচাকে লেখার। এর পিছনে অবশ্য মোহনলাল–শোভনলাল নামে দুই বালকের ভূমিকা ছিলো। এরা দুজনেই মৌচাকে গল্প লিখতো। বুদ্ধদেব বসু কোথা থেকে যেনো জেনেছেন যে, এরা দুজনে তাঁর সমবয়েসী। এদের লেখা যদি মৌচাকে আসতে পারে, তবে তাঁর লেখা কেনো নয়? তিনি শুরু করলেন মৌচাকে লেখা পাঠানো। লেখা ছাপা হয় না, তিনিও হাল ছাড়েন না। একের পর এক লেখা পাঠাতে থাকেন মৌচাকে। শেষে যখন কোনো লেখাই ছাপা হয় না, তখন তাঁর বদ্ধমুল ধারনা জন্মায় যে, সম্পাদক নিশ্চয় পক্ষপাতদুষ্ট একজন মানুষ। শুধুমাত্র তাঁর পরিচিত এবং খাতিরের লোকজনের লেখাই ছাপান। এই ধারনা মনে বদ্ধমূল হবার পরেই বিশাল এক চিঠি তিনি লেখেন সম্পাদক মশাইকে। এ সম্পর্কে বুদ্ধদেব বসু তাঁর ‘আমার ছেলেবেলা‘ বইতে লিখেছেন,
“মৌচাকে লেখা ছাপাবার অদম্য ইচ্ছে আমাকে পেয়ে বসলো। আমি ছুঁড়ছি তীরের পর তীর – অনবরত – কিন্তু সবগুলোই সম্পাদকের দপ্তরে ঠোক্কর খেয়ে অবিলম্বে আমারই গায়ে এসে বিঁধছে। অবশেষে একদিন লম্বা একখানা চিঠি লিখে পাঠালাম সম্পাদকমশাইকে – তিনি ‘পক্ষপাতদোষে দুষ্ট‘, ‘দলের লোকের বাইরে‘ লেখা নেন না, এমনি নানারকম অভিযোগ ক‘রে, যা চিরকাল দুর্বলের মুখে শোনা গিয়েছে। বলতে দোষ নেই, চিঠিখানা আমি ঠিক নিজের বুদ্ধিতে লিখিনি, লিখেছিলাম আমার বিষয়ে স্নেহান্ধ দাদামশাইয়ের নির্দেশমতো, যদিও – সন্দেহ নেই – আমারই বিক্ষোভ দেখে তিনি মাত্রাজ্ঞান হারিয়েছিলেন।“
এই চিঠিটা মোটামুটি বেশ কড়া চিঠিই ছিলো। বুদ্ধদেব বসুর নিজের ভাষাতেই, ‘সে–চিঠি যেমন মূঢ়, তেমনি দুর্বিনীত; যেমন উদ্ধত তেমনি কর্কশ।‘ স্বাভাবিকভাবেই সুধীরচন্দ্র খুব ভালোভাবে এই চিঠিকে নেন নি। চিঠিটা ছাপা হয় না মৌচাকে। কিন্তু পরের সংখ্যাতেই পত্রলেখককে একেবারে ধুয়ে দেন সুধীরচন্দ্র। মৌচাক অবশ্য একটা কাজ করেছিলো। এই পত্রের লেখক কে, সেটা ফাঁস করে নি। (সম্পাদকের এই চিঠিটা দেখার র্সৌভাগ্য আমার হয় নি। মৌচাকের এই সংখ্যাটা দুষ্প্রাপ্য।)
একটা বিষয় বুদ্ধদেব বসু জানতেন না। শুধু তিনি নন, মৌচাকে তাঁর মতো অসংখ্য কিশোর লেখা পাঠাতো। উপযুক্ত নয় বলে, সেগুলোকে ছাপতেন না সুধীরচন্দ্র। মৌচাকের অষ্টম বর্ষের প্রথম সংখ্যায় (এই সংখ্যাতেই ছাপা হয়েছিলো নজরুলের সেই বিখ্যাত কবিতা ‘দেখব এবার জগৎটাকে‘) সম্পাদকের চিঠিতে তিনি লিখেছেন,
“আমাদের সবচেয়ে বেশী দুঃখ এই যে তোমাদের কাছ থেকে আমরা ভাল লেখা মোটেই পাই না। রোজই অনেক লেখা আমাদের হাতে এসে পৌঁছয় বটে কিন্তু সেগুলো ছাপাবার উপযুক্ত নয়। তোমাদের লেখা ছাপাতে পারলে আমাদের খুব আনন্দ হয়। মৌচাকের এই একটা প্রধান উদ্দেশ্য। আশা করি, এই নূতন বৎসরে তোমরা ভাল ভাল লেখা পাঠিয়ে মৌচাক পরিপূর্ণ করে তুলবে।“
এর পরে বেশ কিছুদিন চলে গেছে। বালক বুদ্ধদেব বসু এখন তরুণ। কলেজে পড়েন। খান দুয়েক বই বের হয়েছে তাঁর। মাসিকপত্রের সম্পাদনা করেন। সাহিত্যজগতে কিছুটা হলেও নামডাক হয়েছে, পরিচিতি বেড়েছে। মৌচাকের প্রতি বাল্যকালের সেই প্রেম আর নেই। এ’সময় ছুটিতে কোলকাতায় এসেছেন তিনি। তাঁর বন্ধু অচিন্ত্যকুমার বললেন যে, মৌচাকের সম্পাদক সুধীরচন্দ্র সরকার তাঁর সঙ্গে আলাপ করতে চান। তারপরে কী ঘটেছিলো সেটা বুদ্ধদেব বসুর নিজের লেখাতেই শুনবো আমরা।
মৌচাকের পঁচিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে বের হয়েছিলো জয়ন্তী–মৌচাক। এই সংখ্যায় লিখিতভাবে শুভ কামনা জানিয়েছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র রায়, জহরলাল নেহেরু, বিজয়লক্ষ্ণী পণ্ডিত, সুনীতিকুমার চট্টোপাধায়, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সি ভি রমণ, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়, অন্নদাশঙ্কর রায় প্রমুখ। এবং সেই সাথে অতি অবশ্যই বুদ্ধদেব বসু। বুদ্ধব্দেব বসু সেই শুভকামনার লেখায় লিখেছেন,
‘”একবার গ্রীষ্মের ছুটিতে কোলকাতায় এসেছি। বন্ধু অচিন্ত্যকুমার বললেন, ‘সুধীরবাবু তোমার সঙ্গে আলাপ করতে চান, চলো তোমাকে নিয়ে যাই।‘ একদিন দুপুর বেলা ১৫ নং কলেজ স্কোয়ারের খসখস এর পর্দ্দা ঢাকা ঘরে অচিন্ত্যকুমারের সঙ্গে প্রবেশ করলুম। সুধীরবাবু আমার কাছে মৌচাকের জন্য লেখা চাইলেন। আমি বললুম, ‘ছোটদের জন্য তো কখনো লিখিনি।‘ সুধীরবাবু বললেন, ‘লিখুন না।‘ মনে মনে ভাবলুম, দেখি না চেষ্টা করে, হয়তো পারবো। ঢাকা ফিরে গিয়েই একটি কবিতা লিখে পাঠালুম, পরের সংখ্যার প্রথমেই সেটি ছাপা হলো। মৌচাকে সেই আমার প্রথম লেখা, তারপর গদ্য–পদ্য অজস্র লেখা মৌচাকে লিখেছি তা সকলেই জানেন।‘”
এই হলো ঘটনা। একদিন মাথা কুটেও যে ঘরের দরজা খুলাতে পারেন নি তিনি একসময়, মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে, সেই বাড়িতেই ডেকে নিয়ে ভোজ খাওয়ানো হয়েছে তাঁকে।
এর পর থেকেই সুধীরচন্দ্রনাথের সাথে প্রীতির সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বুদ্ধদেব বসু। তাঁদের এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক সুধীরচন্দ্রনাথের মৃত্যু পর্যন্ত বহাল ছিলো।
(F) (F) (F) (F) (F)
হ্যামারহেড থেকে এক্কেবারে চুনোপুঁটি! বেশ্শি বেশ্শি।
এই রকম লেখা পেলে নীড়পাতা রঙ ঝলমল করে (D)
@কাজী রহমান,
বেশি বেশি হয়ে গেলো। 🙂
ভাল লাগল।
@গীতা দাস,
ধন্যবাদ দিদি।
বুদ্ধদেব বসুর কথা গুলো আগে পড়েছি। আমার মনে হয় প্রতিটা লেখকই কোন না কোন ভাবে পত্রকার সম্পাদকের কাছে নিগ্রিহীত হয়েছে। এই যুগে ব্লগ,ফেসবুক থাকায় মনের কথা বলায় পত্রিকা নির্ভরতা অনেক কমেছে।
@ডাইনোসর,
পত্রিকা মানেই সম্পাদকের কাছে লেখক জিম্মি। বিশেষ করে শুরুর দিকে তো বটেই। খুব জনপ্রিয় হয়ে গেলেই শুধুমাত্র এই শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়।
কাহিনীর শেষে একটু প্রতিশোধ আশা করছিলাম, বেশ মজার হতো যদি বুদ্ধদেব বসু পুরোনো প্রত্যাখ্যাত একটি লেখা পাঠিয়ে দিতেন আর সুধীরচন্দ্রনাথ সেটাই ছাপাতেন। 🙂
@শারমিন শবনম,
প্রতিশোধ হলে হয়তো ভালোই হতো। একটু স্পাইসি হতো। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে যে, পুরো ঘটনায় বুদ্ধদেব বসুর নিজেরই ধারণা হচ্ছে যে, ভুলটা তাঁর ছিলো, সুধীরচন্দ্র সরকারের নয়। তাঁর লেখা মৌচাকে ছাপার উপযুক্ত ছিলো না বলেই ছাপা হয় নি। এখানে সম্পাদকের কোনো পক্ষপাত ছিলো না, ছিলো না কোনো বৈরিতা। জয়ন্তী-মৌচাকে বুদ্ধদেব বসু অকপটে নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন। বড় মন না হলে বড় মানুষ হওয়া যায় না, সেটারই প্রমাণ হচ্ছে এই স্বীকা্রোক্তি। বুদ্ধদেব বসু সেখানে লিখেছেনঃ
@ফরিদ আহমেদ,
ধন্যবাদ আমার ভুলটি ভাঙ্গানোর জন্য। 🙂
ভাল লাগলো। প্রথমে সম্পাদকের পিছে পিছে ঘোরা আর কিছুদিন পর সম্পাদকেরই লেখকের পিছে পিছে ঘোরা মনে হয় বেশিভাগ বড় লেখকের ক্ষেত্রেই ঘটে।
আরো নিয়মিত লেখা চাই আপনার কাছ থেকে।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
হ্যাঁ, রবীন্দ্রনাথকে পর্যন্ত পরিবার থেকে প্রকাশিত পত্রিকার উপরেই ভরসা করতে হয়েছে শুরুর দিকে। এর বাইরে সহজে পাত্তা পান নি।
ধন্যবাদ তানভীর। আমি যে ধরণের লেখা ইদানিং লিখি, সেগুলো মনে হয় না মুক্তমনার পাঠকদের রুচি এবং আগ্রহের সাথে মেলে। এ কারণে মুক্তমনায় লেখা দেবার বিষয়ে আমার নিজেরও আগ্রহ গেছে অনেকখানি কমে। এর মাঝে আপনারা দুই-চারজন আছেন ব্যতিক্রম। আপনাদের জন্যেই এখনো এখানকার সাথে সম্পর্কসূত্রটা ছিন্ন হয়ে যায় নি পুরোপুরি।
@ফরিদ আহমেদ,
সত্যি বলতে, ব্যাপারটা আমিও খেয়াল করেছি। এই মহাবিশ্ব কত বিষ্ময়কর জিনিসে ভর্তি। কিন্তু মুক্তমনায় কেন যেন নেগেটিভ কিছু ব্যাপার নিয়ে বেশি বেশি লেখা আসছে বেশ কিছুদিন। এই ‘নেগেটিভ’ ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনাও জরুরী কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, যে অর্থহীন জীবনে বিষ্ময়বোধটা টিকে থাকাটাই বেঁচে থাকা। সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাচ্ছে বলে রব তুলে আসলে লাভ হয় না। যদি না প্রাণের মাঝে বাজে,
শেষ বিচারে অসুন্দরকে বিতর্ক দিয়ে ঠেকানো যায় না। ঠেকানো যায় সুন্দর দিয়ে। আমি ব্লগে কোনো বিতর্কেহেরে কাউকে পরিবর্তিত হতে দেখিনি। বরং যাদেরকে মুক্তমনা হয়ে উঠতে দেখেছি তারা এই বিষ্ময়বোধের সংস্পর্শে এসেই মুক্তমনা হয়ে উঠেছেন। আমাদেরকে আমাদের প্রায়োরিটি ভুললে চলবে না। আপনি আরো নিয়মিত লিখবেন আশা করি (কোন মুখে বলি, 🙁 নিজেই লিখছি খুব কম) । তাহলে দেখবেন তেমন পাঠকও তৈরি হবে। আর আমরা তো আছিই। (F)
@ফরিদ আহমেদ,
রুচিবোধ এবং আগ্রহের সাথে অবশ্যই মেলে।আপনি লেখেন না বলেই, এরকম ভূল ধারণা তৈরি হয়েছে।ভাললাগা অনেক সময় কেবল মনের মধ্যেই থেকে যায়।
এত সহজেই গলে যাওয়াটা মানতে পারছি না।কিছু পেব্যাকের দরকার ছিল।আশা করি, আপনি নিশ্চয় ঐ প্রকাশকের সাথে প্রীতির সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন নি।
@প্রাক্তন আঁধার,
ভুল ধারণা হবার কথা না। মুক্তমনার নাড়িনক্ষত্র সব আমি জানি। কিছুদিন আগে চা বাগানের ইতিহাসের উপরে একটা লেখা দিয়েছিলাম মুক্তমনায়। ওটার হিট কাউন্টারের যে সংখ্যাটা ছিলো, সেটির এমনই করুণ দশা ছিলো যে, লেখাটাকে প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে নেই আমি। চা বাগানের ইতিহাসের বদলে আমি যদি মুহাম্মদকে একটু চোখা ধরণের গালি দিতাম আর সে কীভাবে আয়েশাকে জোর করে বিছানায় নিয়ে কী কী করেছে, এ নিয়ে আট-দশ লাইনের একটা লেখা লিখতাম, হিট কাউন্টারে কয়েক হাজার হিট হয়ে যেতো নিমেষেই।
এর উত্তর শারমিন শবনমকে দিয়েছি। একই উত্তর আপনার জন্যও প্রযোজ্য।
আমি উনার সাথে প্রীতির সম্পর্কে জড়াই নি, আবার দুর্ব্যবহারও করি নি। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
নির্মম সত্যি কথা। কিন্তু আপনার থেকে বেশি নিশ্চয়ই কেও জানে না যে একসময় ধর্ম ছাড়াও মুক্তমনায় বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য সহ আরো কত ধরণের লেখায় দারুণ সব আলোচনা হত। আপনি সহ আরো হাতেগোণা কয়েকজন এখনো চমৎকার সব লেখা দিয়ে যাচ্ছেন বলেই মুক্তমনা বেচে আছে, তাই হতাশ হয়ে লেখা ছাড়া চলবে না। অহেতুক অতিপ্রশংসা আপনি পছন্দ করেননা জানি, আপনার লেখা পছন্দ করি দেখেই বলছি । (F)
@রামগড়ুড়ের ছানা,
সেই দিন আবার ফিরে আসবে নিশ্চয় একদিন। শুধু ধর্মের আলোচনা-সমালোচনা করে কোনো ব্লগ বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। টিকলেও তা হবে রুগ্ন এবং ভঙ্গুর। সবুজ এবং সতেজতার জন্য গাছকে যেমন ছড়িয়ে দিতে হয় তার ডালপালা চারপাশে, ব্লগের সুস্বাস্থের জন্যও তেমনি বৈচিত্রময় লেখা দিয়ে ভরে ফেলতে হবে এর নীড়পাতা নিত্যদিন।
আহা থেমে গেল কেন লেখাটা হঠাৎ? খুব ভালো লাগছিলো।
আপনার লেখাগুলো আরো বড় আকারে চাই।