মানুষের যৌনতাকে যেদিন থেকে ধর্মীয় পবিত্রতা আরোপের মাধ্যমে, কপট বিবেকীয় ঔচিত্যবোধের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করার মাধ্যমে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার প্রথাগত ধারণায় গণ্ডিবদ্ধ করার মাধ্যমে অবরুদ্ধ করা হল, ধর্মীয় উপকথা সৃষ্টি করে যৌনতাকে পাপাচার হিসেবে চিহ্নিত করা হল, সেদিন থেকেই সত্যিকার অর্থে যৌনতার ক্ষমতা মানব সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণির কুক্ষিগত করার এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নেয়া হল। ধীরে ধীরে শুরু হল সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন, যৌনতার প্রভু হয়ে উঠতে লাগলো সমাজের পুরুষ শ্রেণি, এবং নারী হয়ে উঠতে লাগলো পণ্য-কখনো সে কলা বা কখনো বা তেঁতুল, কখনো কন্যা জায়া জননী আবার কখনো নায়িকা বেশ্যা মডেল কন্যা। পুরুষকে পিতা-ভাই-পুত্র জ্ঞান করে সহানুভূতির নাকি কান্না কেঁদে বস্তুতপক্ষে তাদের দমনের প্রয়োজন হলো না, সেটা প্রয়োজন হল নারীর ক্ষেত্রে। নারীকে তথাকথিত মায়ের সম্মান দিয়ে সম্মানিত সিংহাসনে বসিয়ে তাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ শুরু হল, তাদের স্বাভাবিক মানবীয় সত্ত্বা থেকে আলাদা করে ফেলা হলো। তাদের মধ্যে সতীত্বের ধারনা সৃষ্টি করে দেয়া হল, এবং তাদের বোঝানো শুরু হল যে, তার প্রভু পুরুষটি ভিন্ন অন্য কোন পুরুষের সাথে তার যৌনাঙ্গটি ব্যবহার করা মহাবিশ্বের সর্বাধিক ঘৃণিত এবং আপত্তিকর পাপাচার, তাদের মত তথাকথিত সম্মানিতদের এই কর্মটি করা আরো অনেক বেশি আপত্তিকর। এই সম্মানিত আসন নারীর মর্যাদা একটুও বৃদ্ধ না করলেও, তাদের সামান্য ভুল ভ্রান্তি সমাজের চোখে অমার্জনীয় অপরাধ বলে গণ্য হতে লাগলো, যেহেতু সমাজ দাবী করে তারা নারীকে অনেক সম্মান দিয়েছে, তাই পান থেকে চুন খসলেই তাদের উপরে নেমে আসতে লাগলো শাস্তির খড়গ। এখনো ধর্ষিত নারীরা ন্যায় বিচার পাওয়া তো দুরের কথা, সমাজে মুখ দেখাবার ভয়ে আত্মহত্যাকে বেছে নেয়। যেন সতীত্ব ভিন্ন নারীর আর কোন সম্পদ নেই। একজন নারী যত বড় মেধাবী হোক, যত বড় তুখোড় ছাত্রী হোক, যত বড় বিজ্ঞানী বা দার্শনিক হোক বা হোক কবি ঔপন্যাসিক, তার সতীত্ব না থাকলে; অর্থাৎ, সে তার যৌনাঙ্গটিকে নিজ ইচ্ছামত ব্যবহার করলে বা অন্য কেউ জোরপূর্বকও তার যৌনাঙ্গটিকে ব্যবহার করলে সে হয়ে উঠবে সমাজের সবচাইতে ঘৃণিত মানুষ। মুক্তিযুদ্ধে বীরাঙ্গনাদের আসলে বীরাঙ্গনা খেতাব দিয়ে সমাজে চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে, সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে এই নারীরা ধর্ষিত হয়েছিল। এমনকি অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা নারীকেও, যারা অসীম সাহসের সাথে পুরুষের সমকক্ষ হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, তাদের অনেককেও বীরাঙ্গনা খেতাব দিয়ে বস্তুত পক্ষে বলে দেয়া হলো যে, ধর্ষিত হওয়া ছাড়া আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীর আর কোন অবদানই ছিল না! আমাদের মুক্তিযোদ্ধা নারীরাও হয়ে উঠলো যৌনতার প্রতীকে, আমাদের ধর্ষিতা নারীরাও হয়ে উঠতে লাগলো আরো বেশি ধর্ষিত। সমাজের হাতে, রাষ্ট্রের হাতে, এমনকি সমস্ত পুরুষের হাতে। তারা যেহেতু আগে একবার ধর্ষিত হয়েছেই, তাই তাদের আবারো ধর্ষণ করতে কারো যেন কোন বাধা নেই!
এইভাবে যৌনতার ক্ষমতার পালাবদল হতে লাগলো, একসময় মাতৃতান্ত্রিক সমাজে যেভাবে নারী ক্ষমতার উৎস হয়ে উঠেছিল নারীর অসম্ভব শক্তিশালী যৌন ক্ষমতার দ্বারা অথবা প্রজনন ক্ষমতার দ্বারা, পুরুষ সেই ক্ষমতার দায়েই সৃষ্টি করলো ধর্মীয় উপকথা, তাকে বানাতে লাগলো অভিশপ্ত-কখনও পুরুষের একাকীত্বের সঙ্গী, মহাবিশ্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্য নয়, পুরুষের জন্য একটি উপকরণ হিসেবে। আর সেই কারণেই যে নারীরা স্বাধীন ভাবে নিজের যৌনতা উপভোগ করে, নিদেনপক্ষে তার শরীর ব্যবহার করে অর্থনৈতিকভাবে পুরুষকে শোষণ করে, সেই নারী হয়ে উঠতে লাগলো ধর্মের শত্রু, সেই নারী হয়ে উঠতে লাগলো পুরুষতন্ত্রের শত্রু। এমনকি কবি সাহিত্যিক দার্শনিকরাও অবস্থান নিতে শুরু করলেন নারীর যৌনতার বিরুদ্ধে, নারীর যৌনতাকে কারারুদ্ধ করে পুরুষাঙ্গের জয়জয়কার সারা পৃথিবীতে ধ্বনিত হতে লাগলো। এমনকি আধুনিকতাবাদের মহাপুরুষরাও নারীকে যৌনযন্ত্র ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারলো না। যৌনতার একমাত্র দেবালয় পরিণত করা হল স্বামীস্ত্রীর শয়নকক্ষকে, স্বামীস্ত্রীর শয়নকক্ষ ছাড়া যৌনতার আলাপ হতে লাগলো পাপাচারের শামিল। কিন্তু পুরুষের প্রয়োজনেই টিকে রইলো বেশ্যালয়, বেশ্যালয় যেন পুরুষতন্ত্র, সমাজ, প্রথা আর ধর্মের লজ্জা হয়ে ঠিকই রয়ে গেল প্রতিটি সমাজে।
আমাদের বেশ্যালয় আমাদের সমাজের চোখে অত্যন্ত ঘৃণিত, ধর্মপুরুষেরা সারাদিন রাম আল্লা আর যীশুকে ডাকাডাকি করে মাঝরাত্রিরে ঠিকই হানা দেয়, নিদেনপক্ষে রাস্তার মোড়ে দেখা নারীকে ভেবে হস্তমৈথুন করে অথবা পত্রিকার রঙ্গিন অর্ধনগ্ন নায়িকা দেখে লালা ফেলে। লালাবিদ আল্লামারা তো প্রকাশ্যেই ঘোষনা দেন নারীকে দেখলে যেই পুরুষের লালা ঝড়ে না তারা নপুংশক! তাই বেশ্যালয় টিকে থাকে, টিকে থাকবে। বেশ্যালয় সভ্যতার একটি আদিম পেশাকে বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মাথা উঁচু করে। সমাজের সম্ভ্রান্ত পুরুষেরা বেশ্যালয়ে এসে কাতর ভঙ্গিতে নগ্ন হতে থাকে, গন্ধ শোঁকার জন্য, চুষে দেখার জন্য গাঁটের পয়সা খরচ করে, তাতে তাদের সতীত্ব বিন্দুমাত্র নষ্ট হয় না। আসলে পুরুষের সতীত্ব বলেই কিছু নেই, তাই বুঝি বেশ্যাদের সতীত্ব নিয়ে তারা সবসময়ই খুব পেরেশান থাকে। আর পেরেশান থাকে বুঝি বেশ্যাপল্লী উচ্ছেদ করতে।
কয়েকদিন আগে মাদারীপুরের একটি যৌনপল্লীতে সেদিন হামলা চালিয়েছে “এসলাহে কওম পরিষদ” নামে একটি ধর্মভিত্তিক সংগঠন! সংগঠনের ধর্মপুরুষেরা সেসময়ে যৌনপল্লীর বেশিরভাগ ঘর ভাঙচুর করে, আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, তারা এসময়ে যৌনকর্মীদের মারধোরও করে, ৩০ জনার বেশি যৌনকর্মী আহত হয়। হাইকোর্টের পরিষ্কার নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও পুলিশের উপস্থিতিতে আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে ধর্মরক্ষকেরা এই হামলা চালায়। এই ঘটনা যে এবারই প্রথম ঘটলো তা নয়, প্রায় প্রতিমাসেই আমাদের সমাজরক্ষকরা সমাজ রক্ষার নামে যৌনপল্লীতে আক্রমণ চালায়, তাদের উচ্ছেদ করে রাস্তায় নিয়ে আসে।
সাধারণত এই ধরণের ঘটনায় যা হয়ে থাকে, আমাদের রাজনৈতিক নেতা এবং বুদ্ধিবেশ্যা সুশীল সমাজ খুব করুন মুখ করে ধর্মপুরুষদের একটু বকে দেন, বলেন যে “পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে যৌনকর্মীদের উচ্ছেদ করা মোটেও উচিত হয় নি”; সেই সাথে সরকার এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো কিছু সাহায্য করে, যেই টাকা তাদের কাছে পৌছুতে পৌছুতে নানা স্তরে স্তরে ভাগ বাটোয়ারায় একবেলা ভাতের টাকাও থাকে না। তারাও শেষমেশ এই মতামত ব্যক্ত করেন যে, এই যৌনকর্মীদের পুনর্বাসন ছাড়া তাদের উচ্ছেদ করাটা একদম ঠিক হয়নি, কিন্তু করেই যখন ফেলেছে তখন তো আর কিছু করার নেই! একে তো আবার গড়ে উঠতে দেয়া যায় না। তাই পুনর্বাসনই একমাত্র পথ! যেন যৌনকর্মীদের পুনর্বাসন ভিন্ন আর কোন গতি নেই!
কিন্তু যৌনকর্মীদের পুনর্বাসন বলতে আসলে কী বোঝায়? আমাদের ধর্মপুরুষেরা যৌনপল্লী উচ্ছেদ, তাদের মারধোর, আগুন জ্বালিয়ে দেয়া ইত্যাদি করে আসলে কী করতে চায়? বেশ্যারা কেন টিকে থাকে? মাঝরাতে তাদের দরজায় কারা কড়া নাড়ে? যৌনপল্লী উচ্ছেদে ধর্মপুরুষের পুরুষত্ব কেন সদা সর্বদা উত্তেজিত থাকে?
সত্যি কথা হচ্ছে, যৌনপল্লীতে আমাদের সৎ চরিত্র ধর্মপুরুষদের প্রবেশ করতে গ্যাঁটের টাকা খরচ করতে হয়, সেই সাথে সামাজিক মানসম্মানও থাকে না। তার চাইতে যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনই তাদের জন্য উত্তম, নানাদিক থেকেই। এতে লাভ প্রচুর! সমাজের ধর্মরক্ষকেরা এক একজন ২/৩ জন করে যৌনকর্মী পুনর্বাসনের নামে নিজের কেনা যৌনদাসী করে ঘরে তুলতে পারলে তো সোনায় সোহাগা। তাকে আর পুনর্বাসিত যৌনকর্মীটির সাথে যৌনকর্মের জন্য টাকাও দিতে হবে না, তাদের সামাজিক নাম দেয়া হবে স্ত্রী, কিন্তু তাদের বাস্তবিক অবস্থা সেই যৌনদাসীটিই থেকে যাবে! চাহিবা মাত্র যেখানে তথাকথিত স্ত্রী নামক যৌনদাসীটির কাছ থেকে যৌন আনন্দ পাওয়া যাচ্ছে, সেই সাথে যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের নামে তার সামাজিক মানমর্যাদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে কে আর পয়সা খরচ করে বেশ্যালয়ে যায়? তেঁতুল খাবার লোভে সর্বক্ষণ লালা ঝরানো ধর্মপুরুষ মাত্রই চান বিনামূল্যের যৌনদাসী, তা সেটি স্ত্রী নামেই হোক কী দাসী নামে। এই কাজের জন্য তাকে নগদ টাকা দিতে হচ্ছে, তার উপরে যৌনকর্মীটির মেজাজ মর্জির উপরেও নির্ভর করতে হচ্ছে, এই অবস্থা আমাদের প্রথা-ধর্ম-সমাজ-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য রক্ষক সাধু পুরুষেরা কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না। তাই মাদারীপুরে যৌনপল্লী উচ্ছেদ করা হয়, তাই পুলিশ-প্রশাসন-রাজনৈতিক দল থেকেও তাদের সাহায্য দেয়া হয়। আর সুশীল বুদ্ধিজীবীরা পুনর্বাসন পুনর্বাসন বলে চেঁচাতে থাকেন, তাতে যৌনকর্মীদের কী লাভ হয় জানি না, তবে সেই অঞ্চলের লম্পট পুরুষদের প্রচুর লাভ হয়-তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
অর্থাৎ যৌনকর্মীদের তথাকথিত পুনর্বাসন সত্যিকার অর্থে তাদের বিনামূল্যের যৌনদাসী বানাতে পারে, আর কিছুই না। আমাদের গৃহবধূদের প্রতিটি রাতেই স্বামীর দ্বারা ধর্ষিত হতে হয়, তারা না চাইলেও তাদের শরীরে গ্রহণ করতে হয় স্বামীর পুরুষাঙ্গকে। এখানে তার মতামত, তার ইচ্ছা অনিচ্ছা কোন গুরুত্ব বহন করে না। এমনকি আমাদের দেশে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী ধর্ষিত হচ্ছে, এই ঘটনাকে কোনদিন গুরুত্বই দেয়া হয় না, যেন স্বামী হওয়া মানেই স্ত্রীর ইচ্ছা অনিচ্ছার বালাই না থাকা, যখন খুশি তখন তাকে ধর্ষণের অধিকার অর্জন করে একজন স্বামী। বেশ্যারা স্বাধীন, অন্তত আমাদের গৃহবধূ নামক সামাজিক যৌনদাসী তারা নয় যে চাহিবা মাত্র স্বামীকে দেহ দান করিতে বাধ্য থাকিবে। অথচ দু’মুঠো ভাতের জন্য তার এই প্রতিটি রাতের ধর্ষিত হওয়া সমাজের চোখে সম্মানিত, অথচ সেই গৃহবধূটিই স্বামীর মুখে লাথি মেরে বেশ্যালয়ে চলে আসলে, নিজের উপার্জিত অর্থে-নিজের ইচ্ছামত পুরুষকে দেহদান করতে চাইলে সে হয়ে যায় চরম ঘৃণিত, সমাজের চোখে বমন উদ্গীরণের সমতুল্য সত্ত্বা। বার্টান্ড রাসেল তার Marriage and Morals বইতে বলেছেন, “Marriage is for woman the commonest mode of livelihood, and the total amount of undesired sex endured by women is probably greater in marriage than in prostitution.”
নাহ, বেশ্যাবৃত্তির পক্ষে বলছি না, বেশ্যাদের পক্ষে বলছি। করুনা বা দয়া বা সহানুভূতির ছদ্মবেশে গোপন ঘৃণা নয়- তাদের মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার অধিকারের পক্ষে বলছি। বেশ্যালয়ে একজন বেশ্যার বেশ্যাবৃত্তির দায় তার উপরে বর্তায় না, সে সমাজের সৃষ্টি, সমাজে নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ্যালয় সৃষ্টি করে, আর কেউ নয়। বেশ্যালয়ে আগমন একজন বেশ্যার ইচ্ছায় ঘটেছে নাকি অনিচ্ছায়, সেই আলোচনা গৌণ। এখানে একজন নারী গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সেই সমাজ-প্রথা-ধর্ম-রাষ্ট্র ব্যবস্থা। সে স্বেচ্ছায় এই পেশায় যুক্ত নাকি তাকে জোর করা হয়েছে, সেটার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা হচ্ছে, বেশ্যারা তুলনামূলকভাবে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী, তারা ভাতের জন্য পুরুষের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজের উপার্জিত পয়সায় আহার করে। আমাদের সমাজে এখনও লক্ষ লক্ষ নারীকে সামান্য ভাতের জন্য প্রতিটা দিন নির্যাতিত হতে হয়, অত্যাচার সহ্য করতে হয়। অন্তত বেশ্যারা কারো দয়ায় জীবন যাপন করছে না, এরপরেও তারাই সমাজে সবচাইতে ঘৃণিত, অসম্মানিত। সমাজের কালো অন্ধকার, পুরুষের সীমাহীন লাম্পট্য তারা নিজ শরীরে গ্রহণ করে সমাজকে সুরক্ষিত রাখে, সমাজকে পরিশুদ্ধ রাখে। এরপরেও প্রতিদিন প্রতিটা মাসে অসংখ্য বেশ্যাকে আমাদের সমাজে অপদস্থ হতে হয়, নানাভাবে ধর্ষিত হতে হয়, যেন তাদের ধর্ষণে কোন অপরাধ নেই, যেহেতু তাদের তথাকথিত সতীত্ব নেই।
যৌনপল্লী উচ্ছেদ, বেশ্যাদের সামাজিক সম্মান দেয়ার নামে বিনামূল্যের যৌনদাসীতে পরিণত করার এই সংস্কৃতি আজকের নয়, সবযুগেই পুরুষেরা নারীকে দমন করতে চেয়েছে, নিজের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে চেয়েছে। যৌনকর্মীদের ঘৃণা করে বা তাদের প্রতি লোক দেখানো দরদ দেখিয়ে আহা উহু করে কোন লাভ হবে না, বরঞ্চ তাতে তাদের ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। ধর্মপুরুষেরা যদি এতই ধর্মপ্রবণ হয়ে থাকেন, ধর্মবোধ বা মানসম্মান বোধ যদি তাদের এতটাই তীব্র হয়ে থাকে, তবে তারা যৌনপল্লীতে না গেলেই পারেন! পুরুষ মানুষ যৌনপল্লীতে না গেলে সেই যৌনপল্লী এমনিতেই উচ্ছেদ হয়ে যাবে, চাহিদা না থাকলে যৌনকর্মীরা এমনিতেই অন্য পেশা বেছে নেবে, এই সহজ সমীকরণটি কেন নির্বোধ চরিত্রবান লোকগুলোর মাথায় ঢোকে না আমি জানি না!
বেশ্যালয় কেন থাকে? বেশ্যালয় কীভাবে সৃষ্টি হয়? এমা গোল্ডম্যান তার ফেমিনিজমে বলেছেন, “Nowhere is woman treated according to the merit of her work, but rather as a sex. It is therefore almost inevitable that she should pay for her right to exist, to keep a position in whatever line, with sex favors. Thus it is merely a question of degree whether she sells herself to one man, in or out of marriage, or to many men!… The economic and social inferiority of woman is responsible for prostitution.”
তাই ধর্ম-সমাজ-প্রথা রক্ষার নামে বেশ্যালয় উচ্ছেদ চাই না, সেই সাথে পুনর্বাসনের নামে যৌনকর্মীদের বিনামূল্যের যৌনকর্মীতে পরিণত করার অশুভ চক্রান্তও ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। আমাদের শরীরে রক্ত প্রবাহের জন্য ধমনী এবং শিরা উভয়ের প্রয়োজন হয়, বিশুদ্ধ রক্ত প্রবাহ এবং খারাপ রক্ত প্রবাহ, যেকোন একটির প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হলেই সেই শরীর ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আমাদের সমাজও তেমনি। যারা জোরপূর্বক নারীদের যৌনপেশায় আসতে বাধ্য করে, তারা সকলেই সমাজের সুবিধাভোগী শ্রেণি। তাদের উচ্ছেদের আগে নির্যাতিত নারীদেরই উচ্ছেদের চেষ্টা বস্তুতপক্ষে ধর্ষিতা নারীকেই পাথর ছুড়ে হত্যা করার মত ঘৃণ্য। যেদিন আমাদের প্রতিটি যৌনপল্লী খালি হয়ে যাবে, বেশ্যাদের আর কোন চাহিদা থাকবে না, সেদিন অবশ্যই আমরা আনন্দিত হবো, সেটা হবে আমাদের মুক্ত ও আদর্শ সমাজ। কিন্তু সেটা কোনমতেই কোন চাপ বা আক্রমণ বা নির্যাতনের মাধ্যমে নয়। সেটা হতে হবে স্বাভাবিকভাবে, চাহিদা না থাকলে যোগান এমনিতেই থাকবে না। যদি উচ্ছেদ করতেই হয়, তাহলে রাজনৈতিক বেশ্যাদের উচ্ছেদ করুন, অর্থনৈতিক বেশ্যাদের উচ্ছেদ করুন, ধর্মবেশ্যাদের উচ্ছেদ করুন, বুদ্ধিবেশ্যাদের উচ্ছেদ করুন। যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ভাতের যোগার করে, তাদের যেই সমাজ ভাত দিতে পারে না, তাদের যেই রাষ্ট্র ভাত দিতে পারে না, তাদের যেই ধর্ম ভাত দিতে পারে না, তাদের ভাত কেড়ে নেয়ার অধিকারও সেই সমাজের, সেই রাষ্ট্রের, সেই ধর্মের থাকতে পারে না।
যীশু খ্রিষ্ট একজন বেশ্যাকে একবার বলেছিলেন, Her Sins are forgiven because she loved much. তার কোন পাপ নেই, তার কোন শাস্তিরও প্রয়োজন নেই। তাদের অধিকারসমূহ দেয়ার আগ পর্যন্ত, নারীর অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত যৌনপল্লীগুলো দাঁড়িয়ে থাকুক আমাদের সভ্যতার লজ্জা হয়ে। আমরা যেন যৌনপল্লীগুলোর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি, আমাদের সমাজ আসলে কেমন, আমাদের সমাজে একজন নারীর টিকে থাকা-বেঁচে থাকা কতটা কঠিন!
যৌন কর্মীরা যে পরিবেশে বাস করেন, যে মানবেতর জীবন কাটান, সেটি বোধহয় সাধারণের পক্ষে কল্পনাও করা কঠিন। ভাসমান যৌনকর্মীদের ওপর দীর্থ অনুসন্ধান একবার ধারাবাহিক প্রতিবেদন লিখেছিলাম। তখন খুব কাছ থেকে যৌন পল্লী, ভবঘুরে আশ্রয় কেন্দ্র, ভাসমান যৌনকর্মী জীবন দেখার সুযোগ হয়েছে। পর্যবেক্ষণ বলছে, যৌনকর্মী পুনর্বাসন নামক সরকারি-বেসরকারি প্রক্রিয়াটি নিছকই প্রহসন। কারণ, একজন যৌন কর্মী এক রাতে যে টাকা আয় করে সেটি তৈরি পোশাক কারখানার কয়েকদিনের বেতনের সমান। তাই শেষ পর্যন্ত সেলাই ফোঁড়াই শিখে বেশী রোজগারের আশায় আবারো তারা রাস্তায় দাঁড়ায়।
যৌনকর্মীদের জীবন নিয়ে অনেকদিন আগে মুক্তমনায় একটি ছোট্ট নোট লিখেছিলাম। সেটি পড়া যাবে এখানে [লিংক]
ভাবনাটিকে উস্কে দেওয়ার জন্য আসিফকে সাধুবাদ জানাই।
ধর্মের নামে সকল বজ্জাতি, কূপমুণ্ডুকতা নিপাত যাক।
ফুটপথের যৌনকর্মী বা যৌনপল্লী ধর্মের দোহ্ই দিয়ে হয়তো বন্ধ করা যায় বা তাদের এলাকাবাসীর সহযোগীতায় পিটিয়ে এলাকা ছাড়া করা যায়। কিন্তু বড়লোক/কোটিপতীর/শিল্পপতিদের ফ্যাশান মোদী কন্যারা/ বৌরা যাহা করে তাহা কোন ধর্মের দোহাই দিয়ে বন্ধ করা হবে। আপনি কী খোজ খবর রাখেন আপনার মেয়ে/ বৌ কোন চুলোয় যাচ্চে?
যদি প্রচার করা হয় তাহলে খুশি।
আমাদের সমাজে তথাকথিত প্রগতিশীল এবং মুক্ত মনার অধিকারীদের আশংকা জনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা গভীর উদ্ধেগের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে এ সকল মুক্ত মনারা তাদের অসাধারন তথ্যপুর্ণ শাণিত (ফাঁকা) যুক্তি দিয়ে আমাদের সমাজকে বিষময় করে তুলছে। আসিফ মহিউদ্দিন ভাইকে বলতে চাই, ভাই আপনার বিশ্বাস আপনি আপনার ঘরে লালন করেন………….আপনার এইসব খোড়া যুক্তি দিয়ে সমাজটাকে আর নিচে নামানোর চেষ্টা করবেন না……………..।
@মরু ভাষ্কর,
বড় হুজুর ইসলামি পর্ণবিদ্যার মাধ্যমে উপরে উঠার উপায় বাতলে দিচ্ছেন ।
হালাল বেশ্যা দেখবেন? এখানে আছে-
কোরানিক প্রমাণ? এখানে আছে-
যদি উচ্ছেদ করতেই হয়, তাহলে রাজনৈতিক বেশ্যাদের উচ্ছেদ করুন, অর্থনৈতিক বেশ্যাদের উচ্ছেদ করুন, ধর্মবেশ্যাদের উচ্ছেদ করুন, বুদ্ধিবেশ্যাদের উচ্ছেদ করুন। যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ভাতের যোগার করে, তাদের যেই সমাজ ভাত দিতে পারে না, তাদের যেই রাষ্ট্র ভাত দিতে পারে না, তাদের যেই ধর্ম ভাত দিতে পারে না, তাদের ভাত কেড়ে নেয়ার অধিকারও সেই সমাজের, সেই রাষ্ট্রের, সেই ধর্মের থাকতে পারে না।
Superb..Just Superb
মতামতটি ভাল লাগল। আর মন্তব্যে কয়েকজনের বিতর্কিত কথাবার্তা দেখেও হজম করে নিচ্ছি সময়ের অভাবে। কিন্তু একটা প্রাসঙ্গিক কবিতার লাইন না লিখে পারছি না—
ভাবনা কি তোর সেবী
নাভির গুড়ে চেক আছে
ভাঙ্গিয়ে ভাঙ্গিয়ে খাবি।
আজ আমদের চোখ বেশ্যা দের দিকে , কিন্তু আমরা ফিরে দেখতে চাই না তাদের ইতিহাস । আমার ধারনা প্রতিটি বেশ্যা গড়ে তোলার পিছনে আমাদের সমাজের ই আবদান বেশি ।
বেশ্যা শব্দ টি একটি নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ । কিন্তু কেন ? অবশ্যই এর পুং লিঙ্গ থাকা উচিৎ । একটি মেয়ে যখন একাধিক পুরুষের সাথে যৌন মিলন করে তখন তাকে বলা হয় বেশ্যা, কিন্তু একটা পুরুষ যখন একাধিক মেয়ের সাথে যৌনমিলন করে তখন সেটা কে কি বলা হয় ???
হায়রে পুরুষ শাসিত সমাজ !!!
আহা, আমি বুঝি না, যাহারা পারিবারিক সম্পর্ককে বেশ্যাবৃত্তির সাথে তুলনা করে নারীসমাজের অধিকার রক্ষার অতিন্দ্র (অতন্দ্র নহে , কেননা তাহারা জাগনপূর্বক তন্দ্রাচ্ছন্ন )প্রহরী রূপে নিজেদের ফুটিয়ে তুলছেন তারা কেবল এই পারিবারিক সম্পর্কটা বাদে সব ধরনের বেশ্যাবৃত্তি সমর্থন করছেন কেন ??
@সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত,
কারন উনারা জানেন যে এই পারিবারিক সমপর্ক আসলেই বেশ্যা বৃত্তি নয়।ভাবুন ভাল করে ভেবে দেখুন। :-s
পুঁজিবাদের মসজিদ খ্যাত ব্যাংক বা সমগোত্রীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ অন্যকারও অযাচিত অর্থলগ্নী সহ্য করতে পারে না তেমনি সামাজিক বেশ্যাবৃত্তির ব্র্যান্ড এম্বাসেডররা অন্য কারও এমন প্রাতিষ্ঠানিক যৌনাচারের বিপণন সহ্য করতে পারে না…
সামাজিক-পারিবারিক সকল প্রকার বেশ্যাবৃত্তির প্যাটেন্ট একমাত্র ধর্মকূলেরই আছে… আসলেই তাই!
যেহেতু আপনি ইতিমধ্যে বলেছেন যে এইটা আলোচ্য বিষয়বস্তুর উপর কোন পূর্ণাঙ্গ লিখা নয় তাই এমন চমৎকার পোস্টটির অন্যকোন দুর্বলতা নিয়ে কোন কথা নয় অনবদ্য লিখেছেন আসিফ ভাই! (Y)
ধন্যবাদ মহিউদ্দিন সাহেবকে।
তা কি করে সম্ভব! ঢাকাতে অনেক ভাসমান যৌনকর্মী দেখা যায় এমনকি দিনের বেলাতেও বোরখা পড়ে এদের নানা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেয়া যায়। সন্ধ্যার পর পবিত্র (?) সংসদের দক্ষিণ পাশে গেলে দেখা যায় ভাসমান যৌনকর্মীরা সেজেগুজে দাঁড়িয়ে থাকে এবং কেউ কেউ রিক্সা এমনকি গাড়ি করে এসে তাদের পছন্দমত একজনকে তুলে নিয়ে যায়। আমার প্রশ্ন, যৌনকর্মীদের কি দোষ! তারা তো খদ্দেরের জন্য অপেক্ষা করবেই। দেখতে হবে খদ্দের কারা? কেন তারা ওদের কাছে যায়? কারা এদের এসব করতে সহায়তা করে মোটা অংকের টাকা কামাই করছে? একদিন দেখলাম এক যুবক মনে হলো কলেজে পড়ে এক যৌনকর্মীকে রিক্সা করে নিয়ে গেলো। সেদিন ভাবছিলাম, এ ছেলেটি মেয়েটিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? এ ছেলেটির যদি পরিবার থাকে তবে ঘরে নেয়া সম্ভব নয়, যদি হোস্টেলে থাকে তবে সেখানেও নয়, তবে সে এই সন্ধ্যেবেলা একে কোথায় নিয়ে ব্যবহার করবে? মাত্র কয়েদিন বাদেই এসব প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে পড়লো। আমার পরিচিত এক আবাসিক হোটেল কর্মকর্তার মুখে যা শুনলাম আমি তো তাজ্জব! তিনি বলছিলেন, তাদের হোটেলের একটি ছোট রুমের ভাড়া ৩,৫০০/- টাকা। প্রতিদিন সারা দিনরাত সেখানে বহু লোক আসে দুই তিন ঘণ্টা পরে চলে যায়। জিজ্ঞেস করলাম দুই-তিন ঘণ্টার জন্যও ৩,৫০০০/- টাকা দিতে হয়? বললেন হ্যাঁ। জিজ্ঞেস করলাম, কারা আসে। উত্তরে বললেন, সমাজের সব শ্রেণীর মানুষই আসে যেমন- বড় বড় ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, বিখ্যাত বিখ্যাত লোকজন। তাদের সাথে থাকে সাধারণ ঘরের মেয়েরাসহ কলেজ-ইউনিভার্সিটি পড়া মেয়েরা। যাহোক, আফিস মহিউদ্দিনের সাথে সুর মিলিয়ে বলতে হয়- যেদিন সমাজ এবং ধর্ম যৌনকর্মীদের নয়, যারা তাদের ব্যবহার করে অর্থাৎ রাজনৈতিক বেশ্যা, অর্থনৈতিক বেশ্যাদের উচ্ছেদ করতে পারবে কেবল সেদিনই যৌনকর্মীরাও অন্য পেশা গ্রহণে বাধ্য হবে।
আমার যতোদূর মনে পড়ে (এ মুহূর্তে বাইবেল হাতের কাছে নেই), জনগণ যখন একজন বেশ্যাকে পাথর ছুড়ে মারার জন্য যীশুখ্রিস্টের অনমুতি চেয়েছিলো, তখন যীশু তাদের বলেছিলো, তোমাদের মধ্যে যে পাপ করেনি সে আগে পাথর ছুঁড়-ক। একথা বলে যীশু মাথা নিচু করে বসেছিলো। কিছুক্ষণ পর মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলেন, ও মহিলাটি ছাড়া কোন লোক সেখানে নেই। যীশু তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমাকে কেউ পাথর মারেনি। মহিলাটি উত্তর দিলেন, না প্রভু। যীশু তাকে বললেন, যাও আর পাপ করো না। যদিও এটি গল্প, তথাপিও এ থেকে আমরা শিখতে পারি যে, মূলত আমরা কেউই নির্দোষ নই। কোন না কোন পাপ বা অন্যায় আমরা করেছি অতএব এরূপ বিচার আমাদের করা সাজে না। ভালো থাকুন আরো সুন্দর সুন্দর লেখা উপহার দিন এটাই কামনা।
@কামালউদ্দিন আহমেদ,
হ্যাঁ কাহিনী এটাই। পুরাটাই সঠিক আছে!
@কামালউদ্দিন আহমেদ এবং @অর্ফিউস ,
King James Bible:
Wherefore I say unto thee, Her sins, which are many, are forgiven; for she loved much: but to whom little is forgiven, the same loveth little.
English Standard Version
Therefore I tell you, her sins, which are many, are forgiven—for she loved much. But he who is forgiven little, loves little.”
> http://biblehub.com/luke/7-47.htm
@আসিফ মহিউদ্দীন, দেখেন আমি আপনাকে উপরে একটা প্রশ্ন করেছি।আগে ওটার উত্তর দিন।
আবার করছি প্রশ্নটা।
এই হাজার বছরের দেনা পাওনা পরিশোধ করতে হলে কি করতে হবে বলে মনে করে আধুনিক নারীবাদ , অথবা আপনি নিজে কি ভাবেন?
আর বাইবেলের যে অংশ quote করেছেন সেটা আমার পড়া আছে বাংলা অনুবাদ।কিং জেমস ভার্সন আর আর আধুনিক দুটাই আমার আছে। আপনিই এর আগের আর পরের অংশটুকু পড়ে দেখুন, কামালউদ্দিনের কাহিনী ঠিক আছে।
@লেখক
আমার জানামতে ধর্ম তো ঠিকমতই কাজ চালাচ্ছিল। 🙁
কিন্তু ধর্মের ব্যপারে অধর্মের সুবিধাবাদী হস্তক্ষেপেই না ঘটল যা বিপত্তি । :-s
(I) আমার মনে হয় , সেই অধর্মীয় সুবিধাবাদী গোষ্ঠীগুলোর একটা হেস্তনেস্ত করা দরকার। 😀
আহা , ভিন্নমাত্রিক অসাধারন লেখা সাধারন পেটে সইবে না যে। বদহজম হয়ে যেতে পারে।
যৌনতাকে কে বা কারা নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিল, তা আমি (জেনেও) জানি না। কিন্তু আমি অবশ্যই জানি যে, কেউ বা কারা অবাধ যৌনতাকে নিয়ন্ত্রণের গণ্ডির মধ্যে আনতে চেয়েছিল। এটা ঠিক যে আমাদের (কেবল ধার্মিকই নয়, সমাজের মানুষদের) অবহেলা আর অসচেতনতার কারনেই (কারো কারো লালাময় জৌলুসের কথা না-ই বা বললাম ) এই সব বেশ্যাপল্লীর উদ্ভব, কিন্তু আপনি যাই বলুন,
এহেন মানবাধিকার পেয়েও বেশ্যাপল্লীর নারীরা নিজেদের খুব একটা আশীর্বাদপুষ্ট বলে তো বোধ হয় মনে করে না ।
আর সমাজের আর নানান প্রকট সমস্যা দেখেও একজন কলম-সৈনিকের পক্ষে চোখে ঠুলি বেঁধে কেবল এহেন বিকৃত মানবধর্ম চর্চায় নিমগ্ন থাকা সত্যিই ………… (কি বলা যায় বুঝলাম না) দাবীদার ।
পুরুষ নারীবাদী হয় না। দিন শেষে পুরুষ পুরুষ ই। বেশ্যাবৃত্তি নারী যখন জীবিকার জন্য বাধ্য হয়ে করে তখন তা অবশ্যই আলোচনার বিসয়,আবার পুরুষ ও বাধ্য হয়ে চুরি,ছিন্তাই করে,পেটের দায়ে করলে আলোচনা করা যায়। সব পুরুষ কিন্তু পেটের দায়ে চুরি করে না আবার সব নারী পেটের দায়ে বেশ্যা হয় না। অনেক নারী বিলাসবহুল জীবনের জন্যেও বেশ্যা হয় আবার অনেক পুরুষ বিলাস বহুল জীবনের জন্য চুরি,ডাকাতি করে। যেসব নারী বাঁচার জন্য বেশ্যা হয় তাদের নিয়ে আলোচনা হলে ঠিক আছে, যেসব পুরুষ বাঁচার জন্য চুরি করে তাদের নিয়েও আলোচনা করলে ঠিক আছে। আর নারী পতিতালয়ে যায় কিনা যায় না এটি আলোচনায় আনা যায় কি?। নারী আর পুরুষের যৌন তা বা যৌন চাহিদা দুই মেরুর। পুরুষ স্খলন করতে পারলেই খুশী। নারী কি তাই?। তা না। নারী মানসিক ভাবে পুরুষের মত নয়। নারী শৈল্পিক যখন সে নারী, পন্য যখন সে বেশ্যা!!
@সপ্তক,
তা কেন হতে যাবে? এইভাবে কথাবার্তা বলা মানে হল, নারী আর পুরুষকে পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়া। নারী বইতে হুমায়ুন আযাদ কার জানি নাম বলেছিলেন সঠিক মনে করতে পারছি না;ভদ্রলোক পরে মেরী ওলস্টোনক্রাফট কে বিয়েও করেছিলেন।
তবে লেখকের নারীবাদটা ফেমডম ফেটিশের সমতুল্য। মনে হয় না এভাবে কিছু হবে,শুধু তুমুল ঝড় তোলা ছাড়া।আর নারীবাদ কথাটির অতি প্রয়োগের আমি ঘোর বিরোধী। মানবতা বাদ টাই আসল। আমরা যদি সঠিক ভাবে মানবাধিকারের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারি, যেখানে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকবে না, সেটাকেই আমি প্রকৃত নারীবাদ বলে মনে করি। নারীবাদ নারীবাদ করে চিল্লিয়ে মুখে ফেনা তোলার চাইতে মানবাধিকারের কথা বলাটাই সবথেকে ভাল এবং যেহেতু এটা লিঙ্গ নিরপেক্ষ তাই কারো মনঃপীড়ার কারন হবার সম্ভাবনা কম। ( অবশ্য তেতুল হুজুরদের কথা আলাদা, মানে সব ধর্মবিদদের কথাই বলছি তবে তেঁতুল তত্বের তুলনা নেই) ।
আপনাকে মুক্তমনায় দেখে ভালো লাগছে। অনেক আগে কোথাও যেন পড়েছিলাম, আগেকারদিনে কোনো কোনো দেশে সমাজে নারী বেশ্যালয়ের সাথে সাথে পুরুষও বেশ্যালয়ও ছিল। কারণ তখনকার উচ্চবিত্ত পুরুষদের সকলেরই অনেকগুলি বউ ও রক্ষিতা থাকতো। তারপরেও তাদের বেশ্যালয়ে গতায়ত তো ছিলই। তাদের বউদের সাথে হয়ত তাদের জীবনে হাতে গণা কয়েকবার দেখা হতো। সম্ভ্রান্ত ধনী পরিবারের নারীদের শারীরিক চাহিদা তাই তাদের নিজেদের শরীরেই জ্বলতো। এ জন্য নারী বেশ্যালয়ের মতন তখন গড়ে উঠেছিল পুরুষ বেশ্যালয়। এবং ধনী পরিবারের মানসিক ও শারীরিক আগুনে জ্বলতে থাকা নারীদের অনেকেই রাতের আঁধারে ছদ্মবেশে কিছুটা স্বস্তি পাবার আশায় চলে যেত পুরুষ বেশ্যালয়ে। বর্তমানেও পুরুষের চাহিদার উপরেই টিঁকে আছে নারী বেশ্যালয়গুলি। অনেক পুরুষ ত এখনও আছে যারা নিজের বৌ ফেলে প্রতি রাতে নিত্য নতুন অভিসারে যায়। আর বছরের পর বছর জ্বলতে থাকে তাদের বৌরা। তবে পুরুষের জন্য নারী বেশ্যালয়ের পাশাপাশি নারীর জন্য পুরুষ বেশালয় কেন নেই?
@তামান্না ঝুমু, খাইছে ………
আপনি এখানে লোকদেরকে আহ্বান করে দেখতে পারেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে করতে পারেন কিনা।
@তামান্না ঝুমু,
খারাপ কাজের( বর্তমান সমাজের ভাষায়) জবাব আরেকটা খারাপ কাজ দিয়ে।এর থেকে বর্তমানে যে পুরুষকে বহুগামিতা পরিত্যাগ করতে উৎসাহিত এবং ক্ষেত্র বিশেষে বাধ্য করা হচ্ছে এটাই কি ভাল না?
কি সর্বনাশ আপনি পুরুষের বহুগামিতার বিরুদ্ধে কিছু লিখুন। বহুগামিতার চেয়েও বড় হল পরকিয়া যেটা আসলে বিশ্বাস ঘাতকতা। এইসব থামানোর ব্যাপারে কিছু বলুন। তা না করে পুরুষ বেশ্যালয়ে যায় তাই মেয়েদেরও একই রাস্তা দেখাতে চাচ্ছেন?
এ যে দেখি পুরুষের বেশ্যা গমনকে প্রাকারান্তরে উৎসাহিত করা!!
@তামান্না ঝুমু,
আপনি জেনে খুশি হবেন – প্রতিটা “বেশ্যালয়ে” (কিংবা ভদ্রভাষায় বললে গণিকালয়) হিজড়া দেহব্যবসায়ীর পাশাপাশি পুরুষ দেহব্যবসায়ী থাকে – তাদের খদ্দের পুরুষ কিংবা মহিলা। তাছাড়া ভার্সিটি পড়ুয়া, পণ্য মডেল কিংবা ক্যাবারে ড্যান্সার কিছু কিছু “স্মার্ট” “শিক্ষিত” কলগার্লের মত “কলবয়ও” আছে – কেননা সমাজে “সুগার ড্যাডির” মত “সুগার মামা” এরও অভাব নাই। খোঁজ নিলেই পেয়ে যাবেন।
@আসিফ মহিউদ্দীন,
প্রাপ্ত তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে মাতৃতান্ত্রিক সমাজের যে অনুকল্পের কথা কেউ কেউ বলেন, সেটার অস্তিত্ব কখনই ছিলনা বলে বর্তমান কালের নৃতত্ত্ববিদেরা এবং সমাজ গবেষকরা মতামত দিয়েছেন এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় বিষয়টা এভাবে বলা হয়েছে ,
“The view of matriarchy as constituting a stage of cultural development now is generally discredited. Furthermore, the consensus among modern anthropologists and sociologists is that a strictly matriarchal society never existed.” ‘Matriarchy’, Encyclopædia Britannica, 2007.
এছাড়া সিনথিয়া এলারের লেখা এই বইটা দেখতে পারেন The Myth of Matriarchal Prehistory : Why an Invented Past Won’t Give Women a Future
@সংশপ্তক,
ভাই,যদি সেটা থেকেও থাকতো তাহলেই বা কি?
হাজার বছরের হিসেব নিকেশের কথা যে বলেছেন আসিফ মহিউদ্দিন সেভাবে হিসেব নিকেশ করতে গেলে কিন্তু অনেক কিছুই হিসেব নিকেশ করা যায়।ইসরায়েল নামক রাষ্ট্রটিকে আহমাদিনেজাদের কায়দায় সমূলে উৎপাটন নীতিও নেয়া যেতে পারে।
অথবা প্রাগৈতিহাসিক প্রমিজড ল্যান্ডের যে মানচিত্র বাইবেলে আছে সেইভাবে হিসাব করে সেইসব এলাকার জনবসতি উচ্ছেদ করে পুরাটাই ইসরায়েল বানানো যেতে পারে।
যেহেতু লেখক হাজার বছরের দেনা পাওনা শোধের ব্যাপারটায় খুব বেশি গুরত্ব দিয়ে ফেলেছেন (দেখি আমার করা প্রশ্নতার তিনি কি উত্তর দেন) সেখানে, এই ফিলিস্তিনি আর ইজরায়েলীদের হাজার বছরের দেনা পাওনা শোধ করতে অনেক কিছুই করার পরিকল্পনা করা যেতে পারে। তারো আগ থেকে কল্পনা করতে গেলে হোমো স্যাপিয়েন্সদের আফ্রিকায় ফেরত পাঠানো যেতে পারে সদলবলে……….
@অর্ফিউস, আগে ভাবিনি তো !!!!
@সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত,
কি ভাবেন নি??
@অর্ফিউস, হে হে হে, হাজার বছর ধরে দুনিয়ার নানা প্রান্তে যেসব হিসাব আজো বাকি রয়ে যাচ্ছে তাও যে সমাধান করা দরকার তা আগে মাথায় আসে নাই……………… :))
সমাজ দেবব্যবসায়ীদের ব্যবহার করে, কিন্তু স্বীকৃতি দেয় না!
১৯৯৯ সালে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করার সময় খুব কাছ থেকে ভাসমান পতিতাদের মানবেতর জীবন দেখেছি। সে সব মর্ম বেদনা আসলে ভাষায় প্রকাশের নয়। তবু চেষ্টা করেছি, টুকরো কথায় ওই স্মৃতিটুকু ধরে রাখতে। নোটটি পড়া যাবে এখানে।
ধন্যবাদ আসিফ, সমাজের সবচেয়ে উপেক্ষিত মানুষদের নিয়ে লেখার জন্য। আরো লিখুন। (Y)
@বিপ্লব রহমান, যারা এই উপেক্ষিতদের উপেক্ষিতই রাখতে চায়, তাদের নিয়েও কিছু বলা দরকার…………………
এইটা কেমন অনুবাদ করলেন? ইচ্ছে করেই করলেন নাকি? খুব জানতে ইচ্ছা করছে।
ইসস বিয়ে প্রথাকে আপনি এতটাই ঘৃণা করেন?কেন আপনার কি মনে হয় না যে অনেক বিবাহিত লোকও বেশ্যালয়ে যায়? একটু বেশি আবেগ প্রবন হয়ে পড়লেন না আসিফ?
এটা কি ফেমডম ফেটিশ?নারী পুরুষের সমানাধিকারের কথাই তো নারীবাদ বলে থাকে। সেই সমানাধিকারের ক্ষেত্রে নারী কেন ক্ষমতার উৎস হয়ে উঠবে? নারী আর পুরুষের তো সমানাধিকার থাকার কথা।
উফফ আবারো আবেগের বিচ্ছুরন। আপনি কি চোখে দেখেন না যে এমনকি নিম্নবিত্ত নারীরাও বিভিন্ন পেশা ( যেমন বি টি সি বা ঢাকা টোবাকোতে কাজ করে, বা গার্মেন্টস শ্রমিক হিসাবে) বেছে নিয়ে জীবনযাপন করছেন?
আপনি কি তথাকথিত বেশ্যাদের জীবন কে এদের থেকে বেশি সম্মানিত বলবেন?আর আপনি কি মনে করেন যে সমাজের কালো অন্ধকার আর পুরুষের সীমাহীন লাম্পট্য নিজ শরীরে গ্রহন করে তথাকথিত বেশ্যারা সমাজকে পরিশুদ্ধ রাখে? মানে আপনিও এই তথাকথিত পরিশুদ্ধ সমাজ ব্যাবস্থায় বিশ্বাসী?
আচ্ছা বলতে পারেন যে তাদেরকে কে এই সমাজ পরিশুদ্ধ(!) কারিণীর দায়িত্ব দিয়েছে? একশ্রেনীর লম্পট পুরুষই কি নয়? এখানে সেই পরিশুদ্ধি করঙ্কে স্বীকৃতি দিয়ে কি নিজেই পুরুষতন্ত্রের জয়গান গাইলেন না?যে পুরুষতন্ত্র একজন ধর্ষিতা নারীকে বেশ্যা অপবাদ দিয়ে সেটাকে প্রমান করে ফেলে ধর্ষককে বাঁচাতে গিয়ে, আর, ধর্ষিতা নারীটি তথাকথিত সমাজের লাঞ্ছনার ভয়ে আত্মহত্যা করে?
এদের নিয়ে কিছু লেখেন না কেন?নাকি এই ধর্ষিতা নারীকেও সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে বেশ্যাবৃত্তি গ্রহন করে প্রমান করা দরকার যে দেখ “আমি বেশ্যা ছিলাম না তবু তোরা ধর্ষক কে বাঁচাতে গিয়ে আমাকে সেই অপবাদ দিলি, কাজেই আমি নিজেই বেশ্যা বৃত্তি নামক স্বাধীন (!?) পেশটা গ্রহন করে তোদের সোজা করলাম? এইবার আমাকে যা ইচ্ছা বল?”
আপনি যদি আবেগটাকে আরেকটু নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারতেন তবে এটা হয়ে উঠতো চমৎকার একটা লেখা। কিন্তু আবেগের মাত্রাতিরিক্ত স্ফুরণই লেখাটার আবেদন অনেক কমিয়ে দিয়ে, এটার মানকে নানা রকম প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে।পুরা লেখাটাকেই তো আর quote করা সম্ভব না, না হলে আরো এমন ভুরি ভুরি অতি আবেগ দ্বারা চালিত কথাবার্তা দেখানো যায়, যা কিনা লেখাটিকে মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে।
সারা প্রবন্ধের এই কটা লাইনই আমার কাছে সবচেয়ে যুক্তি সঙ্গত মনে হয়েছে।আর পরের কয়েকটি কথাও। এজন্য শুভেচ্ছা আপনাকে জনাব আসিফ।
তবে সত্যি আরেকটু নিয়ন্ত্রিত আবেগ নিয়ে লিখতে পারলে, এটা একটা অন্যতম সেরা প্রবন্ধ হতে পারত এই মুক্ত মনাতে। ধন্যবাদ।
@অর্ফিউস,
এইখানে প্রখ্যাত দুটি ধর্মের দুইজন নবীর দুটো বক্তব্য তুলনামূলকভাবে প্রথমে লিখেছিলাম, কিন্তু আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা চলছে দেখে কিছুটা খণ্ডিতভাবে উপস্থাপন করতে হয়েছে। বুঝেনই তো! :-X
হ্যাঁ অনেক বিবাহিত লোক বেশ্যালয় যায়, কিন্তু কোন বিবাহিত নারী বেশ্যালয়ে যায় বলে খুব একটা দেখিনি। বিবাহ প্রথাটি সর্বদাই পুরুষের স্বার্থ সংরক্ষণে বদ্ধ পরিকর, তাই এমন প্রথাকে সমর্থণ দিতে পারি না।
আমার মনে হয় রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে ক্ষমতার নানাভাবে পালাবদল হয়, হয়েছে। প্রজনন ক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং যৌনক্ষমতার কারণে নারীর ক্ষমতাশালী হওয়াটা স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু সভ্যতার কোন একটি পর্যায়ে গর্ভধারণ করার কারণেই নারীকে সেই ক্ষমতার জায়গা থেকে সরে যেতে হয়েছে। রাহুল সংকৃতায়ন এই বিষয়ে বেশ করা করেছেন, যদিও তার সাথে অনেক জায়গাতে দ্বিমত পোষণের সুযোগ রয়েছে। তবে বিষয় হচ্ছে, কী হওয়া উচিত অনুচিত তা একটি আলোচনা, আর ইতিহাসে কী হয়েছে তা আরেকটি আলোচনা।
আর সমান অধিকার ইত্যাদি গালভর্তি বুলি ছাড়া আর কিছুই নয়, যেখানে প্রতিদিন নারী ধর্ষিত হয়, সেখানে সমান অধিকারের কথা হাস্যকর শোনায়। আধুনিক নারীবাদ সমান অধিকারের চাইতেও বাড়তি কিছু বলে। তারা ঐতিহাসিকভাবেই প্রমাণ করেছেন, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা প্রথা রাষ্ট্র ধর্ম সাহিত্য এমনকি ইতিহাস, দর্শন ও বিজ্ঞানও অনেক ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র পুরুষের ক্ষমতায়নের পরিকল্পনায় তৈরি। এমন অবস্থায় হাজার বছরের দেনা পাওনা শোধ না করে শুধু সমান অধিকারের কথা বললে তা হবে আরেকটি নির্যাতনের শামিল।
দেখুন, বেশ্যাদের আমি যেভাবে দেখি, তা হচ্ছে প্রয়োজনীয় বাস্তবতা। যদিও আমি চাই পৃথিবীতে একজনকেও যেন জোরপুর্বক বেশ্যাবৃত্তিতে বাধ্য না করা হয়, কিন্তু বেশ্যালয় ইতিহাসের প্রতিটি প্রাচীন সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইউরোপে বেশ্যালয়ে পুরুষ বেশ্যা পাওয়া যায়, এমনকি সমকামীদের জন্যেও আলাদা ব্যবস্থা থাকে। সেখানে আপনি বেশ্যাদের অন্য কোন পেশা বেছে নেয়ার নসিহত কেন দেবেন? আর এই নসিহতের ভেতরে আপনার যেই ধারণাটি লুকিয়ে আছে, তা হচ্ছে বেশ্যাবৃত্তির প্রতি ঘৃণা। আর এই পরোক্ষ ঘৃণা নিয়ে আপনি শুধু তাদের উচ্ছেদই করতে পারবেন, তাদের অধিকারের পক্ষে দাড়াতে পারবেন না।
এই লেখাটায় আমি কয়েকটা দিক আলোচনার জন্য উন্মুক্ত করেছি, এটাকে কোন পুর্নাঙ্গ লেখা ভাবলে ভুল হবে, বরঞ্চ কিছু আলোচনার সুত্রপাত বলতে পারেন। একটি আলোচনা হচ্ছে নারীবাদীদের চোখে বেশ্যাবৃত্তি, আরেকটি হচ্ছে মার্ক্সবাদীদের চোখে বেশ্যাবৃত্তি, আরেকটি হচ্ছে ধর্ম ও প্রথাবাদীদের চোখে বেশ্যাবৃত্তি। সেই সাথে আমি তিনটা দৃষ্টিভঙ্গিকেই কৌশলে খারিজ করেছি। বাদবাকী চিন্তা পাঠক করবেন, তাদের হাতে সবকিছু।
@আসিফ মহিউদ্দীন,
একটি মাত্র প্রশ্ন করতে চাই আসিফ আর তা হল এই হাজার বছরের দেনা পাওনা পরিশোধ করতে হলে কি করতে হবে বলে মনে করে আধুনিক নারীবাদ , অথবা আপনি নিযে?এটা একটু ব্যখ্যা করলে সত্যি উপকৃত হতাম। আসলেই জিনিসটি ভালমত জানিনা ( আধুনিক নারীবাদের কন্সেপ্ট) অথবা বুঝিনি। ধন্যবাদ।
আসিফ ভাই,
এই বক্তব্যটা অদ্ভুত রকমের রোমান্টিক হয়ে গেল না কি! যৌনকর্মীদের মধ্যে যারা ‘পতিতাপল্লীতে’ বাস করেন, তাঁরা কোনো দিক দিয়েই স্বাধীন নয়| এদের এক অংশকে বিক্রি করে দিয়েছে তাদের বাবা-মা অথবা আত্মীয়পরিজন| হয় অর্থলোভে, নয়তো নিজেদের গ্রাসাচ্ছাদন সুনিশ্চিত করতে| যে দালালরা এদের কিনে নিয়ে যায়, তারা এদের ক্রীতদাস বা গরু ছাগলের থেকে কোনো উচ্চতর জীব বলে মনে করেনা| যদিবা পুলিশ বা অন্য কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাউকে ‘উদ্ধার’ করলো, তো এদের নেওয়ার কেউ নেই| থানা থেকে শেল্টার হোম, মোটামুটি অসংখ্য মানুষের কামনার বস্তু হতে হতে, তারা যদিবা বাড়ি ফেরে, কিছুদিন পরে সেইখান থেকে অর্ধচন্দ্র দিয়ে বিদায় করা হয়| অর্ধেকের বেশি আবার ফিরে আসে ঠিক সেইখানে , যেইখান থেকে তারা পালিয়েছিল বা ‘উদ্ধৃত’ হয়েছিল|
একে কোন স্বাধীনতা বলবেন আপনি? যদি পেশা এবং জীবনযাত্রার উপর ন্যুনতম অধিকার না থাকে, তবে সেইটা কেমন স্বাধীনতা?
কেউ কোনদিন শুনেছে, সোনাগাছি বা কালিঘাটে কোনো যৌনকর্মী তার খদ্দের বাছাই করার বা না বলার অধিকার পায়? আজও, এত প্রচার, সংগঠন ও আন্দোলনের পরেও, কনডম ব্যবহার করানোর স্বাধীনতাও সকল যৌনকর্মীর নেই|
@অনামী,
লেখকের অতি আবেগদোষে লেখাটার আমেজ অনেকটাই নষ্ট হয়েছে।যদিও এই অ্যাক্টিভিস্ট লেখককে আমি অসম্ভব শ্রদ্ধা করি তাঁর সৎসাহসের জন্য( যে সৎ সাহস আমার সহ আরো অনেকের মাঝে অনুপস্থিত), যে সাহসের জন্য তাঁকে দুর্ভাগ্যজনক ভাগে কারাবরণও করতে হয়েছিল।
এমন একজনের কাছথেকে আমি পুরাপুরি আবেগহীন না হলেও, অন্তত নিয়ন্ত্রিত আবেগ আশা করেছিলাম, যেটা করতে লেখক দুর্ভাগ্য জনক ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন সম্পুর্নরুপে।
@অনামী, আমার ধারণা, তারা “অন্তত” আমাদের গৃহবধু নামক যৌনদাসীদের থেকে অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করেন। বাঙলাদেশ সহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে নারীর অবস্থা আপনার জানা আছে। নারীর অবস্থান পরিবর্তনের জন্য সবচাইতে জরুরী হচ্ছে অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্ত করা। আর আমাদের সমাজে গৃহবধুদের কোন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই, বিপুল শ্রমঘণ্টা তারা ব্যয় করেন যেই শ্রমঘণ্টায় রাষ্ট্রের অর্থনীতি বিন্দুমাত্র লাভবান হয় না। তারপরেও যৌনকর্মীদের অন্তত তাদেরকে কেউ চাহিবা মাত্র ভোগ করার রাষ্ট্রীয় এবং আইনগত অধিকার সংরক্ষণ করে না। এখানে আমি শুধু বাঙলাদেশের কথা বলিনি, ইউরোপ আমেরিকার অধিকাংশ যৌনকর্মী অনেক বেশি স্বাধীন। তাদের সরকারী লাইসেন্স দেয়া হয়, সরকার থেকে নানা ধরণের সুযোগ সুবিধাও তারা ভোগ করেন। আমাদের দেশে তাদের সরকারী ভাবে আবাসন, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদির সুব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার মনে তাদের পেশা সম্পর্কে ঘৃণা কাজ করবে, এবং আপনি কোন না কোন ভাবে তাদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা করতে থাকবেন, তখন তাদের জন্য এই সকল সেবা আপনার কাছে গৌণ হয়ে দাঁড়াবে।
আরেকটু পরিষ্কারভাবে বললে, তাদের সম্পর্কে আহারে উহুরে ধরণের হা পিত্যেস এবং সস্তা করুণা, সহানুভূতি আমার কাছে লালাবাদী আল্লামাদের লালার চাইতে খুব উন্নত কিছু মনে হয় না। কারণ এই সকল আহারে উহুরের মধ্যে লুকিয়ে থাকে তাদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা, যা থাকলে কিছুতেই তাদের অধিকারের পক্ষে থাকা সম্ভব নয়, তাদের উচ্ছেদই শুধু সম্ভব।
আসলে সমস্যা হচ্ছে তাদের সম্পর্কে আমাদের ধারণা। আপনি বলেছেন তাদের “উদ্ধার” করার কথা! কিন্তু “উদ্ধার করে” তাদের আসলে কী করছেন? ফিরিয়ে নিয়ে আসছেন সেই সমাজে যেই সমাজে তাকে বিনামূল্যে একই কাজ করতে হবে সারাজীবন। আর সামাজিক সম্মানের কথা? নারীকে তথাকথিত কিছু গালভর্তি নাম দিয়ে হাজার বছর ধরে নির্যাতন করা হচ্ছে, সেখানে তারা ফিরে এসে কী এমন সম্মান লাভ করবে আমি জানি না।
আমি তাদের অবস্থার কথা জানি, অন্তত তৃতীয়বিশ্বে তাদের সমস্যাসমূহের সম্পর্কে আমার ধারণা রয়েছে। কিন্তু সেই সমস্যা সমাধানের পথ তাদের “উদ্ধারের” নামে উচ্ছেদ নয়, বরঞ্চ তাদের সম্পর্কে সহজ স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গি বলেই আমার মনে হয়।
আসিফ মহিউদ্দীন, একেবারে সময়মতো একটি সুচিন্তিত বিষয় উপস্থাপন করেছেন।
এটিই আসল কথা। যেদিন এটুকু আমরা বুঝবো সেদিন আপনা থেকেই সব স্বভাবিক মনে হবে। ঐসব ধর্মবাজ, নীতিবাজ, কূপমন্ডুক সুশীলদের হাত থেকে এসমাজ মুক্ত থাকুক এ কামনাই পরিশেষে আপনার সাথে আমারো রইলো।
এ ধরণের ঘটনা প্রায় সবারই চোখ এড়িয়ে যায় কিংবা পিছলে যায়। মাদারিপুরের টাও গেছিলো বোধহয়……
একটা উক্তি এখন মনে পরছে 😕
সত্যিকারের বাপের বেটা হলে সরকার এবং সচেতন জনগণ প্রতি শুক্রুবার এবং বৃহস্পতিবার রেইড দিক – ঢাকা র্যাডিসন, ঢাকা রিজেন্সি কিংবা ঢাকা ওয়েস্টিনে – কক্সবাজারের গুলার নাম বইলেতো শেষ করা যাবেনা।
@সংবাদিকা,
এইগুলাতে তো সরকার এবং সচেতন জনতা হাত দিবে না। এইগুলা অনেক অভিজাত না? এদের পিছনে অনেক দাদা পর দাদার ব্যাকআপ আছে বলেই জানি।
এইসব রথী মহারথীদের ঘাঁটায় এমন সাধ্য কার আছে? কাজেই উচ্ছেদ কারীরা তো নিরুপায় বেশ্যাদেরকেই উচ্ছেদ করবে যারা কিনা দুমুঠো ভাতের আশায় দালালদের খপ্পরে পড়ে নিজেদের দেহ বিক্রি করে থাকে, আর আপনি যেসবের কথা বললেন সেখানে তো থাকে অভিজাত বেশ্যারা।
অভিজাতদেরকে আমাদের দেশের সরকার বলেন বা তেতুল হুজুর বলেন সবাই সমীহ করে চলেন। এদের কোন পাপ হয় না পাপ হয় কেবল ভাসমান অসহায়দের।
তা আপনি এমন আকারে ইঙ্গিতে কথা না বলে সরাসরিও তো হিট করতে পারতেন যেমনটা আমি করলাম। এতো বেশি ডিপ্লোম্যাটিক হয়ে যান কেন ভাই মাঝে মাঝে? 🙂
(Y)
আসিফ মহিউদ্দিন, প্রিয় ব্লগার, আপনার লেখা দেখে ফের আশা জাগলো- বাঘেই খাক আর শাপেই কাটুক, নবকুমাররা একা একা কাঠ আনতে বনে যাবেই…। শশ
শত রক্তচক্ষু, শত বুড়ো তেঁতুলের লালা ঝরানি স্বত্ত্বেও লেখনি থামে না, থামবে না।
পৃথিবীতে নারীকে পুরুষতন্ত্রের ভোগ্য পণ্য বানাবার, নানা কলা-কৌশলের বিস্তার চলছে চলবে। নারীকে স্বাধীনতা নয়, নারীর যৌন স্বাধীনতা নয়, নারীরে স্রেফ বেশ্যা বানাবার, ফূর্তির আনুসঙ্গ বানাবার নানা আয়োজন চলে গোটা পৃথিবী জুড়ে। বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতা, ফ্যাশান মডেল ইত্যাদি নারীকে লোভনীয় খাদ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠার জোর চেষ্টা। নারী সেচ্ছায় এই জগতে আসে প্রচারণায় প্রতারিত হয়ে। সে নিজেও জানে না কোথায় তার মানুষ হিসেবে অসম্মানটা ঘটে যাচ্ছে। একদল নারীকে অন্তপুরে আটকে রেখে, আগাপাসতলা কাপড়ে মুরে রেখে যৌনদাসী বানানোর চেষ্টা, অন্যদিকে একদলের নারীকে মুক্ত বিহঙ্গ বানানোর অজুহাতে তাকে মানুষ হিসেবে নয় “সুন্দরী” “সেক্সী” হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা। ধর্মপুরুষরা এই দ্বিতীয় দলকে যারা সত্যিকারের মুক্তমনা, প্রগতিশীল, সাম্যবাদী তাদের বর্হিপ্রকাশ বলে প্রচার করে। আসলে এই দুই দলই নারীকে ভোগ করতে চায় পশুর মত। নারীর শরীর বেচবে, কেউ কুলবধু হয়ে ঘরে থেকে, কেউ মডেল, বিশ্বসুন্দরী ইত্যাদি নাম ধারণ করে। আর টিপিক্যাল বেশ্যালয়গুলো তো সভ্যতা তিলক হয়ে ফুটে আছেই।
ধন্যবাদ আসিফ মহিউদ্দিন, সুন্দর এই লেখাটির জন্য।
ভিন্নমাত্রিক এবং অসাধারন লেখাটার জন্য লেখককে ধন্যবাদ আর অভিনন্দন!
(Y)