“সমাজতন্ত্র নির্মাণ করে, পুঁজিবাদ ধংশ করে” – উগো চাবেস ( ১৯৫৪-২০১৩)।
অবশেষে ক্যান্সারের কাছে পরাজয় মানলেন বেনেসুয়েলাবাসীর প্রিয় কম্যান্ডান্তে উগো চাবেস। সমাজের ক্যান্সার নিরাময়ের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, সফলও হয়েছিলেন কিছুটা – বলা যায়। কিন্তু শরীরের ক্যান্সারের কাছে হার মানতে হলো। বিদায় নিলেন পৃথিবী থেকে মার্চের পাঁচ তারিখে।
চোদ্দ বছর (১৯৯৯-২০১৩) ধরে তিনি ছিলেন তেলসমৃদ্ধ বেনেসুয়েলার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। গত বছরের (২০১২) শেষ দিকে চতুর্থ ও শেষবারের মতো ছয় বছরের মেয়াদে আবারো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
মাঝখানে ২০০২ সালে দু’দিনের জন্য ক্ষমতাচ্যুত ছিলেন চাবেস। সে এক নাটকীয় ঘটনা। বেনেসুয়েলাবাসীর বীরত্বের এক অমর গাথা। একটু পরেই আসছি ২০০২-এর ঘটনায়।
তার আগে জানার চেষ্টা করি কে ছিলেন এই উগো চাবেস? কেমন নেতা ছিলেন? কেমন মানুষ ছিলেন? কেমন করে বেনেসুয়েলাবাসীর প্রাণপ্রিয় নেতায় পরিণত হলেন তিনি? কেমন করে দেশবাসীর অন্তরের গভীরে জায়গা করে নিয়েছিলেন?
টেলিভিশনে-ইন্টারনেটে দেখলাম, শোকাভিভূত বেনেসুয়েলাবাসীদের মাতম। যেন কোন প্রাণপ্রিয় আত্মীয় মারা গেছেন অকালে, অপ্রত্যাশিতভাবে।
পৃথিবীর যে অঞ্চলে আমার এখন বসবাস সেই দক্ষিণ ফ্লোরিডার (মায়ামি যার অন্তর্ভূক্ত) প্রবাসী বেনেসুয়েলানদের মধ্যে দেখা গেল বিপরীত চিত্র। এদের বেশির ভাগই ধনী, উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণির। দীর্ঘদিন ধরে বেনেসুয়েলার অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক ক্ষমতা এদের হাতে ছিল কুক্ষিগত। চাবেস-এর আমলে টাকা-পয়সা নিয়ে এরা বা এদের আত্মীয়-স্বজনেরাই দক্ষিণ ফ্লোরিডায় পাড়ি দিয়েছে। চাবেস-এর গণমুখী সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের অর্থনৈতিক কার্যক্রম আর কর্মসূচী এদেরকে ফেলে দিয়েছে ঝুঁকির মুখে, অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এদের ভবিষ্যত। অবাধে লুটপাট চালাবার সুযোগটা ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে এসেছে এদের জন্য। সাধারণ জনগণকে শোষণ করার যে লাইসেন্সটা তারা উপভোগ করছিল এতদিন, চাবেস তা বাতিল করে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
প্রথমেই যে কাজটা চাবেস করেছিলেন তাতে দেশের স্বার্থাণ্বেষী মহলেরতো বটেই, আঁতে ঘা লেগেছিল খোদ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের। আর তা হলো তেল শিল্পের ওপরে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। এর আগে ‘পেট্রোলেস দ্য বেনেসুয়েলা’ নামের আধা-সরকারী সংস্থাটা ছিল দূর্নীতির আখড়া। কর্মকর্তারা নিজেদের পকেটভারী করা ছাড়াও অবাধ প্রতিযোগিতার নামে বিদেশী কর্পোরেশনগুলোর কাছে থেকে যথেচ্ছ উৎকোচ নিতে পারতেন। তাদের কখনো কেউ প্রশ্ন করে নি, করার সাহস পায় নি। কেউ বলে নি, এটা অন্যায়। রাষ্ট্রযন্ত্র ছিল তাদের রক্ষক। চাবেস এসে এই অন্যায়ের দ্বার রুদ্ধ করে দিলেন।
আর তার পরেই প্রধান যে কাজটা চাবেস করেছিলেন তা হলো ভূমি সংস্কার। সোজা কথায় ভূমি-সংস্কার হলো ভূমির পূনর্বণ্টন। গরীব কৃষকদের হাতে জমি তুলে দেয়ার কর্মসূচী নিয়েছিলেন চাবেস। বাধ্য করেছিলেন অল্পসংখ্যক ভূস্বামীদের – যাদের হাতে দেশের প্রায় সবটাই ছিল কুক্ষিগত – জমি ছেড়ে দিতে। আগে সারা দেশের প্রায় আশি শতাংশ জমির মালিক ছিল শতকরা মাত্র পাঁচজনের হাতে। আর কৃষিজমির ষাট শতাংশের মালিক ছিল শতকরা মাত্র দুইজনের কাছে [১]।
চাবেস-এর কার্যক্রমে এই শতকরা দুই থেকে পাঁচজনেরা আনন্দে ধেই ধেই করে নাচবে না, এটাতো জানা কথাই। চাবেসের মৃত্যুর পরে অবশ্য এরা মায়ামির আশেপাশে ধেই ধেই করেই নাচছেন। এরা এখন আশা করছেন, তাঁর নেয়া কার্যক্রম উলটে দেয়া হবে – এরা আবার দেশে ফিরে গিয়ে অবাধে লুটতরাজ শুরু করতে পারবেন, পারবেন গরীব জনসাধারণের রক্ত নিংড়ানো শ্রমকে নিজেদের পুঁজিতে রূপান্তরিত করতে, পারবেন শোষণের প্রক্রিয়াটাকে আবারো চালু করতে।
উগো চাবেস কি বিপ্লবী ছিলেন? কেউ বলবে না, ক্যাস্ট্রো-গুয়েভারার মতো বিপ্লবী ছিলেন তিনি। তবুও তাঁকে বিপ্লবী না বলে পারা যায় না।
মার্কিন প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন তিনি। কেন? বিপ্লবী ছিলেন বলে? কমিউনিস্ট ছিলেন কি? নাস্তিক? ধর্মবিরোধী?
কোনটাই নয়।
এসবের কোনটাই হওয়ার দরকার ছিল না তাঁর। খুব সহজেই বুঝে গিয়েছিলেন, শ্রমই পুঁজি সৃষ্টি করে – তবে যার শ্রম তার হাতে পুঁজি জমে না। জমে তাদের হাতে যারা অন্যের শ্রম চুষে খায়। এটা বোঝার জন্য মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক হওয়ার প্রয়োজন হয় নি তাঁর। দিব্য চোখেই দেখতে পাচ্ছিলেন আর নিজের অভিজ্ঞতাতেই বুঝে নিয়েছিলেন।
অনায়াসে উপলদ্ধি করতে পেরেছিলেন, ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর ওপরে আমেরিকা নামক সাম্রাজ্যবাদী দানবটার দাপট। কিন্তু উপলদ্ধি করলেই তো হবে না। রুখে দাঁড়াতে হবে। সেই কাজটিও করেছিলেন চাবেস। করার মতো বুকের পাটা ছিল তাঁর।
সাধারণ একজন সৈনিক ছিলেন তিনি। কিন্তু রক্তে ছিল বিদ্রোহের আগুণ। আর ছিল তীব্র আত্মমর্যাদাবোধ। নিজের দেশের সম্পদের ওপরে মার্কিন সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপ, অবাঞ্ছিত কর্তৃত্ব মেনে নিতে পারেন নি।
সেনাবাহিনিতে থাকার সময় দেশের দুরবস্থায় অতিষ্ঠ হ’য়ে দুর্নীতিবাজ কার্লোস পেরেজ-এর তখনকার সরকারকে উৎখাত করার প্রচেষ্টা চালান চাবেস ১৯৯২-এ, কয়েকজন সঙ্গীসাথীকে নিয়ে। সেই ক্যু প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। চাবেস-এর জেল হয় দু’বছরের জন্য। কার্লোস পেরেজ দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে পরের বছরেই প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারিত হন [২]।
জেল থেকে বেরিয়ে সমমনাদের নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করেন উগো চাবেস। ১৯৯৮-এর নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হন এবং জয়লাভ করেন।
চাবেস-এর বিপ্লব শুরু হয় ক্ষমতায় আরোহণের পর। আগেই উল্লেখ করেছি, চাবেসের সরকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তেলশিল্পের। আর শুরু করে ভূমি পূনর্বণ্টনের কাজ।
চাবেস ও তার দলের শাসনামলে অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করে বেনেসুয়েলা [৩] –
• ১৯৯৯ থেকে ২০০৯ –এ বেকারত্বের হার নেমে আসে ১৪.৫ থেকে ৭.৬–এ;
• মাথাপিছু জিডিপি (গ্রোস ডোমেস্টিক প্রডাক্ট) ১৯৯৯ –এ ছিল ৪,১০৫ ইউএস ডলার, আর ২০১১-তে ১০, ৮১০ ডলার;
• চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করতো ১৯৯৯-এ ২৩.৪ শতাংশ মানুষ, আর ২০১১-তে ৮.৫ শতাংশ; আর
• তেল রপ্তানি থেকে আয়? ১৯৯৯ –এ ছিল মাত্র ১৪.৪ বিলিয়ন ডলার, আর ২০১১-তে বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৬০ বিলিয়নে।
আর এই সাফল্য আসে সেই বছরগুলোতে যার একটা বিরাট অংশ (২০০৭-২০১০) জুড়ে সারা বিশ্ব ছিল ব্যাপক অর্থনৈতিক মন্দার কবলে।
স্বাভাবিকভাবেই স্বার্থাণ্বেষীদের আঁতে ঘা লাগলো । তাদের মুরুব্বী মার্কিন সরকার। ভালো দামে তেল পাচ্ছিল এতদিন আমেরিকা লোভাতুর এই কায়েমী স্বার্থবাদীদের হাতে রেখে। তা আর সম্ভব হচ্ছে না এই উগো ‘বদমাশ’টার জন্য। আমেরিকার নির্দেশ না মেনে চাবেস আবার কিউবাকেও তেল বিক্রি করছিল। মহা অপরাধ! একে সাইজ না করলে আর নয়।
আর তাই আমেরিকার যোগসাজসে তাঁকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল ২০০২-এ।
কি হয়েছিল ২০০২-এর এপ্রিল মাসের ১১-১২ তারিখের দুইদিন? পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনার নজির খুব কম।
সামরিক বাহিনির কয়েকজনকে হাত করে নেয় চ্যাম্বার অব কমার্সের প্রধান পেদ্রো কারমোনা। কিছু ভাড়া-করা শহুরে মানুষকে ক্ষেপিয়ে নিয়ে তারা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে গিয়ে চাবেসকে অস্ত্রের মুখে বন্দী করে। সংবিধান স্থগিত ঘোষণা করে আর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নেয়। এই ক্যু’র প্রস্তুতি শুরু হয় বেশ কয়েকমাস আগে থেকে। আর এই প্রস্তুতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল মার্কিন প্রশাসন।
আর ছিল বেনেসুয়েলার মিডিয়া। চাবেসের প্রাণান্ত চেষ্টা সত্বেও মিডিয়ার (প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক দুটোই) মালিকানা আর কর্তৃত্ব ছিল স্বার্থান্বেষী মহলের হাতে। সাতচল্লিশ ঘণ্টার এই নাটকের মঞ্চায়নে এই মিডিয়ার ভূমিকা ছিল কুশীলবের। ক্যু’র সময়ে যারা চাবেসের পক্ষে ছিলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের কথা প্রকাশ করতে দেয়া হয় নি।
ক্যু’র উদ্যোক্তাদের প্ররোচনায় ভাড়াটে পেশাদার স্নাইপার দিয়ে হত্যা করা হয় ঊনিশজন নিরীহ পথচারীকে। পরে প্রচারণা চালানো হয় চাবেস-এর পুলিশ এদেরকে হত্যা করেছে বলে। ক্যু’র পক্ষে গণজোয়ার (মোমেন্টাম) সৃষ্টির প্রয়াসে এই জঘন্য হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছিল বলে অনেকেই মনে করেন [৪] ।
মিথ্যা রটনা প্রচার করে দেয়া হয়েছিল যে, চাবেস পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ থেকে অবরুদ্ধ চাবেস ল্যাটিন আমেরিকার কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধানকে টেলিফোন করতে সক্ষম হন। এদের মধ্যে একজন ছিলেন কিউবার রাষ্ট্রপ্রধান। চাবেসের সাথে কথা হ্য় ফিদেল ক্যাস্ত্রোর। ক্যাস্ত্রো চাবেসকে বলেন কিছুতেই পদত্যাগে রাজি না হতে। আর বলেছিলেন, চিলির সালবাদর আইয়েন্দের মতো আত্মহত্যা করার কথা যেন মনেও না আনেন [৫] ।
মিরাফ্লোরেস প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদ থেকে বন্দী চাবেসকে নিয়ে যাওয়া হয় একটা নৌঘাঁটিতে। তাঁকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা ছিল বলে জানা যায়। কিন্তু এর মধ্যেই বেনেসুয়েলার সাধারণ জনগণ জেনে গেছেন তাঁদের আইনসম্মত প্রেসিডেন্টকে বন্দী করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তিনি পদত্যাগ করেন নি। দলে দলে মানুষ আসতে থাকলো মিরাফ্লোরেস-এর দিকে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল রাজধানী কারাকাস-এর আশেপাশের গ্রাম থেকে আসা মানুষ। এরা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রাসাদটাকে ঘিরে ফেললো আর অনতিবিলম্বে চাবেস-এর মুক্তি দাবী করলো। সেনাবাহিনির চাবেস-অনুগত অংশের একজন কমান্ডার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলদারীদের নির্দেশ দিলেন চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে জীবিত চাবেসকে নিয়ে আসার জন্য [৬] ।
চাবেসকে নিয়ে আসা হয় এবং ক্ষমতা আবার হস্তান্তরিত হয় চাবেস-এর কাছে। সাতচল্লিশ ঘণ্টার এই শ্বাসরুদ্ধকর নাটকীয় ঘটনা নিয়ে তৈরি হয় দারুণ একটা ডকুমেন্টারি, দ্য রেভুল্যুশন উইল নট বি টেলিভাইজড (The Revolution will not be televised)।
পঁচাত্তর মিনিটের এই ডকুমেন্টারিতে সাধারণ জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণে কিভাবে একটা ক্যু-প্রচেষ্টা নস্যাত হলো আর উগো চাবেস ফিরে পেলেন তাঁর ক্ষমতা মাত্র সাতচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে তা খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পাঠক, যদি আগেই না দেখে থাকেন – সময়, আগ্রহ আর প্রযুক্তি থাকলে ইউটিউব থেকে দেখতে পারেন [৭]।
এখন দেখা যাক, বিশ্ব গণতন্ত্র আর মুক্তবাজার অর্থনীতির চ্যাম্পিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেমন ‘গৌরবজনক’ ভূমিকা ছিল এই ক্যু’র পেছনে। চাবেস অভিযোগ করলেন মার্কিন (বুশ) প্রশাসন এই ক্যুর পরিকল্পনা সম্পর্কে শুধু যে জানতো তাই নয়, তারাই মদদ যুগিয়েছে ক্যু’র হোতাদের।
অবৈধভাবে ক্ষমতাদখলকারী পেদ্রো কারমোনা ক্যু’র আগে বেশ কয়েকবার হোয়াইট হাউজে গিয়েছিলেন, পাওয়া গেছে এই তথ্য।
ভূতপূর্ব মার্কিন প্রেসিডেন্ট কার্টার এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ওয়াশিংটন এই ক্যু সম্পর্কে অবহিত ছিল এবং খুব সম্ভবত জড়িতও ছিল [৮]।
বুশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা পরে স্বীকার করে, তারা ক্যু’র পরিকল্পনাকারীদের সাথে মিলিত হয়েছিল এগারই এপ্রিলের (২০০২) কয়েক সপ্তাহ আগে। তবে সাথে সাথে এও বলে যে, তাদেরকে কোন রকম উৎসাহ দেয়া হয় নি, বরং সাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখলের কথা বলা হয়েছিল। “কিন্তু আমরা তাদেরকে নিরুৎসাহিতও করি নি, বলেছি এই চাবেস লোকটাকে আমরা পছন্দ করি না” [৯], [১০], [১১]।
পরে সিনেটের চাপের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্সপেক্টর জেনারেল এই ব্যাপারে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বাধ্য হন। এই রিপোর্টের ফলাফল যেমন হওয়ার কথা ছিল তাই হলো। যথারীতি মার্কিন কর্তৃপক্ষ দ্বারা কোন বেআইনি বা গর্হিত কাজের কোন নিদর্শন পাওয়া যায় নি এই ক্যু সংক্রান্ত ঘটনায়। কিন্তু এই রিপোর্টেরই উপসংহারে আবার বলা হয়েছে, “স্পষ্টতই, এই ক্যু’র সাথে জড়িত ব্যাক্তিবর্গ এবং সংগঠনগুলোকে (মার্কিন) ন্যাশনাল এন্ডাওমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি, ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স, এবং অন্যান্য মার্কিন সহায়তাদানকারী সংস্থা ট্রেনিং এবং অন্যান্য সাংগঠনিক সহায়তা দিয়েছিল” [১২]।
বাহ, কি সুন্দর কথা!
ক্যু’র হোতাদের সাহায্য দেয়া হয়েছে তো কি হয়েছে? কোন অন্যায় কাজতো করা হয় নি!
আবার ক্যু ব্যর্থ হবার পর নির্লজ্জ মার্কিন সরকার অন্যান্য আমেরিকান (অর্গানাইজেশন্স অব আমেরিকান স্টেটস) দেশের সাথে ক্যু প্রচেষ্টার নিন্দা জানায় এপ্রিলের ১৪ তারিখে। কপটতা আর ভন্ডামির একটা অতিউজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বটে!
তবে জেনে আশ্বস্ত হই যে, মার্কিন সরকার আর প্রশাসনের মতো মার্কিন জনগণ নির্লজ্জ নয়, মানবতাবোধ আর সত্যের প্রতি শ্রদ্ধা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাধারন মানুষের মধ্যে আছে [১৩]।
আর তাই কংগ্রেস সদস্য হোজে সেরানো (ডেমোক্রেটিক পার্টি, নিউইয়র্ক) চাবেসের মৃত্যুতে বলেন, “উগো চাবেস ছিলেন এমন একজন নেতা, যিনি দরিদ্র মানুষের প্রয়োজনটা বুঝতে পারতেন। ক্ষমতাহীনদের ক্ষমতায়নে তিনি আত্মনিয়োগ করেছিলেন। আর.আই.পি (রেস্ট ইন পিস) মি. প্রেসিডেন্ট”।
প্রেসিডেন্ট কার্টার বললেন, “ল্যাটিন আমেরিকার সরকারগুলোর মধ্যে সাহসিকতার সাথে স্বায়ত্বশাসন আর স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলার জন্য তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন”।
যোসেফ কেনেডি (প্রাক্তন কংগ্রেস সদস্য, রবার্ট কেনেডির সন্তান, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘সিটিজেন্স এনার্জি’ নামে একটা সংস্থার প্রধান। এই সংস্থাকে কিছুদিন আগে বেনেসুয়েলার রাষ্ট্রায়ত্ব তেল কোম্পানি শীতার্ত মানুষদের ব্যবহারের জন্য ২০০ মিলিয়ন গ্যালন হিটিং অয়েল অনুদান হিসেবে দিয়েছেন) বলেছেন, “প্রায় দুই মিলিয়ন আমেরিকান বিনামূল্যে এই সাহায্যটা পেয়েছেন, প্রেসিডেন্ট চাবেস-এর নেতৃত্ব আর বদান্যতার কারণে। তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য, বেনেসুয়েলার জনগণের জন্য আর তাঁর অনুগ্রহে যারা উষ্ণতা পেয়েছেন, আমি তাদের সবার জন্য প্রার্থনা করছি”।
উল্লেখ্য, হ্যারিকেন কাট্রিনার পরেও চাবেস সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন মার্কিন জনগণের জন্য। এক মিলিয়ন ব্যারেল গ্যাসোলিন, পাঁচ মিলিয়ন ডলার আর দুইশত কর্মী দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি লুইজিয়ানার জন্য [১৪]।
ক্যান্সারের কাছে হার মেনে মাত্র আটান্ন বছর বয়সে পৃথিবীকে বিদায় জানালেন বর্ণাঢ্য রাজনীতিক, অকুতোভয় রাষ্ট্রনায়ক, বেনেসুয়েলার উগো চাবেস। কূটনৈতিক শিষ্টাচারের ধার ধারতেন না তিনি। জাতিসঙ্ঘের অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট বুশকে শয়তান (‘ডেভিল’) অভিহিত করে বিশ্বজুড়ে সংবাদ-শিরোনামে এসেছিলেন তিনি। মুখের ওপরে স্পেনের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘ডিক্টেটর’। মার্কিন পররাষ্ট্র সেক্রেটারি কন্ডোলিজা রাইস-কে বলতেন, ‘এই ছোট্ট মেয়ে, আমার সাথে ঝামেলা বাধিও না’।
তাঁর জীবনের বিশেষ বিশেষ মুহুর্ত নিয়ে বিবিসি-র ভিডিও প্রতিবেদনটা বেশ তথ্যবহুল -আগ্রহীরা দেখতে পারেন [১৫]।
চলে গেলেন উগো চাবেস। জাগিয়ে গেলেন ল্যাটিন আমেরিকার নির্যাতিত জনগণের মনে স্বাধিকারের দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা। জ্বালিয়ে গেলেন তাদের বুকে আত্মবিশ্বাসের আগুন। এই আকাঙ্খা জেগে থাকলে আর এই আগুন জ্বলতে থাকলে উগো চাবেসও বেঁচে থাকবেন, যুগ যুগ ধরে।
তথ্যসূত্রঃ
[১] Delong-Coha, S., “Venezuela’s Agrarian Land Reform: More like Lincoln than Lenin,” February 25, 2005. http://venezuelanalysis.com/analysis/963.
[২] Biography of Hugo Chavez. http://www.biography.com/people/hugo-ch%C3%A1vez-193225.
[৩] How did Venezuela change under Hugo Chavez?
http://www.guardian.co.uk/news/datablog/2012/oct/04/venezuela-hugo-chavez-election-data#zoomed-picture.
[নোটঃ অর্থনৈতিক চালচিত্রের এই তথ্যে দেখা যাচ্ছে, শুধু ইনফ্ল্যাশন বা মূদ্রাস্ফীতিটাকে আয়ত্বে আনতে পারেন নি চাবেস। আমি অর্থনীতির ছাত্র নই, তবু সাধারণ বুদ্ধিতে যেটুকু বুঝি, জনগণের ব্যাপক অংশের হাতে সম্পদের পরিমাণ বেড়ে গেলে প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইনফ্ল্যাশনের হার একটু বেশি হতে বাধ্য।]
[৪] Jones, Bart (2008), Hugo! The Hugo Chávez Story: From Mud Hut to Perpetual Revolution, London: The Bodley Head. pp327-8
[৫] Jones, Bart (2008), Hugo! The Hugo Chávez Story: From Mud Hut to Perpetual Revolution, London: The Bodley Head. pp345.
[৬] Nikolas Kozloff (2007), Hugo Chávez: oil, politics and the challenge to the United States, Palgrave Macmillan. P30.
[৭] The Revolution will not be Televised, http://www.youtube.com/watch?v=Id–ZFtjR5c
[৮] “US Likely Behind Chavez Coup,” 21 September 2009, AlJazeera.
http://www.aljazeera.com/news/americas/2009/09/200992116049879437.html
[৯] Marquis, C., “Bush Officials Met With Venezuelans Who Ousted Leader”, The New York Times, April 16, 2002. http://www.nytimes.com/2002/04/16/world/bush-officials-met-with-venezuelans-who-ousted-leader.html
[১০] Vulliamy, E. “Venezuela Coup Linked to Bush Team,” April 21, 2002, The Guardian, http://www.guardian.co.uk/world/2002/apr/21/usa.venezuela
[১১] “Venezuelan Coup Plotters Believed US Had A Role,” April 21, 2002. http://rense.com/general24/ushad.htm
[১২] “A Review of U.S. Policy Toward Venezuela November 2001 – April 2002,” Report Number 02-OIG-003, July 2002, UNCLASSIFIED, United States Department of State and the Broadcasting Board of Governors, Office of Inspector General.
http://oig.state.gov/documents/organization/13682.pdf
[১৪] “Venezuela and Cuba offered US aid during Hurricane Katrina,” http://usahitman.com/vacoadhk/
[১৫] “Hugo Chavez: Memorable Moments,” BBC News, March 6, 2013. http://www.bbc.co.uk/news/world-latin-america-20712033
টেলিভিশনে-ইন্টারনেটে দেখলাম, শোকাভিভূত বেনেসুয়েলাবাসীদের মাতম। যেন কোন প্রাণপ্রিয় আত্মীয় মারা গেছেন অকালে, অপ্রত্যাশিতভাবে।
বিগত শতাব্দির পঞ্চাশ ও ষাট দশকের উঠতি বাংগালি মধ্যবিত্তের দল আওয়ামী লীগ ও তার নেতা বঙ্গবন্ধু বাংগালি জাতীকে পাকিস্তানী শোসন মুক্ত করে রাষ্ট্র থেকে ধর্ম পৃথক করতঃ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্য নিয়ে সংগ্রাম করে ছিলেন ।অতএব আওয়ামী লীগ হলো জাতীয়তাবাদি দল এবং বঙ্গবন্ধু ছিলেন জাতীয়তাবাদি নেতা । তাই দেখা যাচ্ছে উক্ত দলটির এবং তার নেতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল শাসক শ্রেনীর পরিবর্তন, অর্থনৈতিক কাঠামোর সংষ্কার নয় ।ততকালীন বাঙ্গালিরা এই দলটি এবং তার নেতাকে সমর্থন দিয়ে ছিল।
বিপরীতে ভেনজুয়েলা ছিল স্বশাসিত একটি দেশ ।শ্যাভেজকে বিদেশিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়নি ।জেল ফেরত শ্যাভেজ সম-মনাদেরকে নিয়ে দল গঠন করে দেশীয় শাসকদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক উপায় সংগ্রাম করেন।শ্যাভেজ গঠিত দলটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
ছিল রাজনৈতিক সংষ্কার ও অর্থনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তন ।ফলে শ্যাভেজ জনতার সমর্থন পান ।
বাঙ্গলাদেশ পাকিস্তান মুক্ত হলে পাকিস্তানীরা নিজ শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক এবং বীমা কোম্পানী ছেডে পালিয়ে চলে যান ।পরিত্যাক্ত এই প্রতিষ্ঠানগুলির সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠানগুলি জাতিয়করণ করেন ।কিন্তু বাংগালি মধ্যবিত্তরা লুটপাট আরম্ভ করে । তাদের লুটপাট বন্ধ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রশাসনিক সং ষ্কারের ঘোষণা দেন। ফলে নিজ দলের একাংশের বিরাগভাজন হন । দলের এই আংশটি আন্তর্জাতিক ও দেশীয় দক্ষিনন্থিদের সহয়তায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতঃ ক্ষমতা দখল করে ।পরবর্তিকালে আওয়ামী লীগের এই আংশটিকে হটিয়ে দেশীয় দক্ষিনপন্থিরা নিজেরাই ক্ষমতা দখল করে । এবং দেশ পাকিস্তানী চিন্তা ধারায় চলে যায় ।
বঙ্গবন্ধুর দল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো পরিবর্তনের জন্য উপযুক্ত ছিল না । বিপরীতে সম-মনাদের নিয়ে গঠিত শ্যাভেজের দল উক্ত কাজের জন্য ছিল নিবেদিত প্রান ।
লেখাটার জন্য ইরতিশাদ ভাইকে ধন্যবাদ। গতকয়েকদিন বাড়িতে না থাকার ফলে মন্তব্য করা হয় নি। পড়েছি প্রথম দিনেই।
আম্রিকান সরকারের কাছে ল্যাটিন আমেরিকার কয়েকটা দেশের রাষ্ট্রেনেতারা একনায়ক। কারন কী?
কারন তারা আম্রিকার ইশারায় হুটপুট করে দেশের সম্পদ বিদেশীদের কাছে তুলে দেয় না।
কারন তারা নিজের দেশে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বিদেশী দালালদের মেরুদন্ড খাড়া করে দাঁড়াতে দেয় না।
তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেয়, কারো চোখ রাঙানিকে পরোয়া করে না।
কিন্তু দুনিয়ার প্রায় সমস্ত একনায়ক জেনারেলদের ক্ষমতায় বসিয়েছে মানবতা, গণতন্ত্রের কিংবদন্তির বাঁশিওয়ালা আম্রিকা। সমস্ত একনায়কদের বছরের পর বছর ক্ষমতায় রেখে ঐ সমস্ত দেশের অর্থনীতি ধ্বংশ করেছে আম্রিকা। সৌদী আরবের রাজতন্ত্র রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী আম্রিকা। স্বার্থে আঘাত দেয়ার জন্য বহু রাষ্ট্রপ্রধান হত্যা করেছে আম্রিকা। ফিদেল কাস্ত্রোর উপরে ৬’শ বারের উপরে হত্যাপ্রচেষ্টা করেছে আম্রিকা।
এই সমস্ত জায়গায় আম্রিকার একনায়কানুভুতিতে কোন আঘাত লাগে না। এই সমস্ত কাজ করতে আম্রিকার গনতন্ত্রানুভুতিতে কোন আঁচড় পড়ে না। তাদের সমস্ত সমস্যা শুধু ঐ ল্যাটিন আমেরিকার কয়েকটা দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে। দুনিয়া বড়ই ওদ্ভুদ!
Chavez: Another CIA assassination victim? নামে কেভিন বেরেটের এই লেখাটা সবাই পড়ে দেখতে পারেন।
আর ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বলে উড়িয়ে দেয়ার আগে জ্ঞ্যানীগুনি জনতা জন পার্কিন্স-এর Confessions of an Economic Hit Man বইটা পড়ে দেখবেন পিলিজ!
@সাইফুল ইসলাম,
অনেক ধন্যবাদ।
আপনার আফ্রিকার স্টাইলে আম্রিকা বানানে বড়ই আমোদিত হলাম।
লিঙ্কগুলোর জন্য ধন্যবাদ। সময় করে পড়বো।
@সাইফুল ইসলাম,
ওহ – এই ‘কনফেশন অব ইকোনমিক হিটম্যান’ বইটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বই। আসলেই পড়ে দেখতে পারেন সবাই।
সাম্রাজ্যবাদী শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের দালালদের আর্থ-সামাজিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবং গনতন্ত্রের নামে মুনাফালোভীদের একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে উগো চাবেস যে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনার জন্ম দিয়েছে তার মৃত্যু নেইl
@রসি মজুমদার,
(Y)
ইরতিশাদ ভাই, চাবেসকে নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটির জন্য ধন্যবাদ। মার্কিন মিডিয়ায় তো চাবেসকে ‘ডিক্টেটর’, ‘কাল্টের প্রধান’ সহ বহু অভিধায় বিশেষিত করেছে। আমি বুঝিনা, চাবেসের নানা পাগলামি থাকলেও উনি ‘ডিক্টেটর’ হবেন কেন? জনগণের ভোটেই তিনি জয়লাভ করেছেন – বিপুল ভোটে। মার্কিনদের চোখে ডিক্টেটরের সংজ্ঞা যে কি এরাই ভাল জানে।
লেখাটির জন্য আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
@অভিজিৎ,
বাংলাদেশে জিয়াও হ্যাঁ-না নির্বাচনে বিপুল ভোট পেয়েছিলেন। বেলা রুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো বারবার বিপুল ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়ে চলেছেন। ভোট পেয়ে ক্ষমতায় গেলেই কি ডিক্টেটর হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়?
চাবেসের আমেরিকা বিরোধীতা শো অফ, সস্তা উপায়ে জনপ্রিয়তা কামানো নাকি আন্তরিক, কে জানে! আমেরিকাকে ঘোর শত্রু মনে করা চাবেস কেন ভেনিজুয়েলায় উৎপাদিত তেলের অর্ধেক আমেরিকার কাছে বিক্রি করত, বোঝা দুষ্কর। আবার তাঁর নিজের মেয়ে এক বার এক গোছা আমেরিকান ডলার হাতে ধরে ছবি তুলে ইন্টারনেটে দিয়েছিলো, সে কথাও অনেকেরই মনে থাকার কথা।
@অভিজিৎ,
চাবেসকে শুধু ডিক্টেটর আর কাল্ট প্রধান নয়, আক্ষরিক অর্থেই পাগল প্রমাণ করার জন্য মার্কিন মিডিয়া একবার পাগল হয়ে গিয়েছিল। নিউজউইক-এর এই আর্টিকলটাতে (Is Hugu Chavez Insane?)দেখতেপার।
চাবেস বা রাষ্ট্রনীতি নিয়ে কিছু বলব না, তবে আমার চোখে পরেছে এই লেখাটির পেছনে লেখকের পরিশ্রম ও বিশাল তথ্য সম্ভার।
অনেক ধন্যবাদ।
@সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড,
সদয় মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
(Y) (F)
@মহন,
আপনাকেও (F)
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চরিত্রে চবেসের ছায়া রয়েছে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।লেখাটি পড়তে পড়তে বাংলাদেশে একজন হুগো চাবেসের স্বপ্ন দেখছি।
ধন্যবাদ ইরতিশাদ ভাইকে হুগো চাবেসকে বিস্তারিতভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য।
@গীতা দাস,
বাংলাদেশে একজন চাবেসের খুবই প্রয়োজন। আমিও আশায় বুক বেঁধেছি।
জনাব ইরতিশাদ,
এক অনবদ্য চমৎকার তথ্যবহুল লেখা। সংবাদ পত্রে পড়েছি কিন্তু এতো কিছু জানা ছিলোনা। কি বর্নাঢ্য এক জীবন ভাবাই যায়না!
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।
অনেকেই বাঁকা ভাবে নিলেও আমার কেনো যেনো মনে হয় স্বাধীনতা উত্তর কালে আমাদের বঙ্গবন্ধুও উৎপাদনকে রাষ্ট্রায়াত্তকরনের দিকেই ঝুঁকেছিলেন তার বাকশাল পরিকল্পনার মধ্যদিয়ে। সেটি ন্যস্যাৎ হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু প্রাণ হাড়ান। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে কিন্তু পৌঁছুতে পারিনি আজও। এ নিয়ে বিতর্কে না গিয়েও বলা যায়, বিকল্প থেকে বাড়তি কি এজাতি কিছু পেলো? বরং পরাজিত শক্তিই আমাদের কাঁধের উপড়ে ভর করেছে। ধারাবাহিক ইতিহাসের দিকে চোখ রাখলেও এমন কাউকেই চোখে পরেনা যে, বঙ্গবন্ধু উত্তর দেশকে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। বরং আমার কাছে মনে হয় দেশ নেতৃত্ত্বহীন এবং লক্ষ্যহীনও বটে। আজকে শাহবাগে তরুণ প্রজন্ম যে অভিব্যাক্তি নিয়ে এসেছে তা তো ক্ষমতাসীনদের কাছেই প্রত্যাশা করার কথা, অথচ বাস্তবে উল্টোটাই দেখতে পাই। গত ৪২টা বছরে আমাদের স্পিরিট কতোটা স্লথ হয়েছে সেইটেই স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। প্রগতির চাকা উল্টো দিকে ঘুড়ে না জানি। কিন্তু মাঝে মাঝে হড়কে যায়। আজকের প্রজন্ম সেই হড়কে যাওয়া চাকাটাকে প্রাণপনে আঁকড়ে ধরতে চাইছে, এখন দরকার একজন ‘উগো চ্যাভেজ’।
@কেশব অধিকারী,
পড়ার জন্য এবং মন্তব্যের জন্য অনেক ধনবাদ।
অনবদ্য একটা লেখা। বেশ ভালমতোই তুলে আনা হয়েছে আমাদের সময়ের এই আইকনকে।
সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সব সময় জনগণের মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে না, চাবেস তা পেরেছিলেন।
স্তম্ভিত হলাম তথ্যটা পড়ে। এ যুগেও এমন হয়? তাহলে দুনিয়া এগিয়েছে কই?
আচ্ছা, চাবেস কোন উত্তরাধিকার রেখে যাননি? রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের কথা বলছি, পারিবারিক না। দুনিয়ার অনেক আদর্শ শাসকের গড়ে দেয়া সমাজব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে উত্তরাধিকার-জনিত সমস্যার কারণে।
আমিও মনে করি, ধর্মবিরোধী, কম্যুনিস্ট না হয়েও আদর্শ শাসক হওয়া সম্ভব।
বঙ্গবন্ধুরও বুকের পাটা ছিল, তবে উনি যে জায়গায় মার খেয়েছেন, তা হল,
পঁচাত্তর মিনিটের এই ডকুমেন্টারিতে সাধারণ জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণে কিভাবে একটা ক্যু-প্রচেষ্টা নস্যাৎ হলো এমন কিছু উনার ক্ষেত্রে ঘটেনি। সবচেয়ে বড় কথা, জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণে ক্যু নস্যাতের ঘটনা আমার কাছে ইউনিক মনে হচ্ছে, এবং এর তাৎপর্য সুদূরপ্রসারীও বটে। এই লেখার সবচেয়ে আকর্ষণীয় তথ্য আমার কাছে এটাই। জনগণের শক্তির এমন বাঙময় প্রকাশ এর আগে দেখেছে কি পৃথিবী? আমার মতে, যুগে যুগে মানুষকে পথ দেখাতে পারে এই ঘটনা।
আপনার প্রদত্ত সাফল্যের পরিসংখ্যানগুলো সত্যি অবিশ্বাস্য। এই পরিসংখ্যানগুলোও প্রচলিত চিন্তা-ভাবনাকে, যেমনঃসমাজতন্ত্র দারিদ্র্য ডেকে আনে- তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় যে।
চাবেসের আর একটি অনুকরণীয় কাজ। ঘোর পুঁজিবাদ-বিরোধীরা অনেক সময় আমেরিকানদেরই ঘৃণা করতে শুরু করে দেন। ক্লিনটন যখন বাংলাদেশে এলেন, তখন তাকে কালো পতাকা দেখানোর জন্যে অস্থির হয়ে গেলেন বাম দলগুলো। সে সময়, আমেরিকা বাংলাদেশে বোমা ফেলছিল না, বা বাংলাদেশের তেল সম্পদ হাতিয়ে নিচ্ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা, আমেরিকান জনগণের প্রতিনিধি হিসেবেই তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। তবু চিরাচরিত বিদ্বেষ থেকে তারা কালো পতাকা প্রদর্শন করবেনই। পুঁজিবাদকে ঘৃণা করেও যে একটা দেশকে বা একটি জাতিকে ভালবাসা যায়, চাবেস তার প্রমাণ। ভালবাসা দিয়েই জয় করতে হয় এবং পুঁজিবাদকেও। চাবেস হয়ত তাই করতে চেয়েছেন।
এমনিতে আমি চাবেস সম্পর্কে ভাসাভাসা জানতাম। কিন্তু আপনার এই লেখা চাবেসের প্রতি আমার শ্রদ্ধা অন্য স্তরে উন্নীত করেছে। আপনার লেখা পড়ে চাবেস সম্পর্কে মূল্যায়ন: চাবেস শুধু শ্রদ্ধা-যোগ্য নন, ভীষণভাবে অনুকরণ-যোগ্য, চাবেস এমন কিছু করে দেখেছেন, যা সমাজতন্ত্র-কামী অনেক মানুষই মিথ বলে ভাবত এতকাল, বাস্তবেও যে করে দেখান সম্ভব, সে ভাবনা তাদের মাথাতেই আসেনি।
@কাজি মামুন,
বিশ্লেষণাত্মক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
সিংহ হুগোর সেই উচ্চারন তার মুক্ত চিন্তা চেতনার ভিত্তিতেই ছিল নির্মিত। অনেকটা “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে’ ধরনের ব্যপার।
তার চেতনায় ছিল সালফার বিদ্বেষ,
ভাবনায় ছিল মুক্তির উন্মেষ।
জলন্ত বীর প্রতীক।
হুগো চাবেস।
(F)
@কাজী রহমান,
ধন্যবাদ, প্রেরণাদায়ক প্রথম মন্তব্যটার জন্য।