স্বাধীনতার ৪০ বছর পুর্ন হল, সবাই কে শুভেচ্ছা বিজয়ের।লাখ লাখ বছরের পুরোনো এই পৃথিবীতে ১৯৭১ এ এসে প্রথমবারের মত বাঙ্গালী জাতি পেল নিজেদের হাতে নিজেদের সমাজ শাসন করার অধিকার।মানে সরকার ও প্রশাসনে নিজেদের পুর্ন অধিকার।শুধুমাত্র গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারেই ১৯৭১ টি বছর পেরিয়ে এই অর্জন।তবে সবচেয়ে বড় কথা যে, গত ৪০ বছর আগেই আমরা এটি অর্জন করেছি এবং এখনো উজ্জল একটি ভবিষ্যৎ ই কামনা করছি।সুতরাং সুপ্রাচীন আমাদের বাংলার এই জনপদ আজ স্বাধীন যা পুর্ববর্তী সকল প্রজন্ম থেকে আমাদের প্রজন্মটিকে করেছে অভাবিত সুখী।
এই বিলম্বে হতাশ হবার মত বেশ কিছু কারন আছে যার অন্যতম হল প্রশাসন চালনায় ও সুশাসনে দক্ষতার অভাব এবং হাজার বছরের পরাধীনতার জাতিগত প্রভাব যা নানান রূপেই আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে সামনে এসে পরে।
তবে অতীত যাই ঘটে যাক তা আমাদের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি নষ্ট করতে পারবে না।৪০ বছরের আমাদের অর্জনগুলোই আমাদের আশার কথা বলে।বর্তমানে বাংলাদেশের সন্তানরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে বিশ্বের দেশে দেশে শান্তিরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে এবং বেশ সুনামের সাথেই। বাংলাদেশেরই একজন ডঃ ইউনুস পুজিবাদী অর্থনীতি ব্যাবহার করে সমাজের সবচেয়ে দরিদ্রদের জন্য ক্ষুদ্রঋন ব্যাবস্থা প্রবর্তন করেছেন।দেশের লাখ লাখ নারী আজ শিক্ষাগ্রহন ও কাজ করছে।অনেক প্রতিকুলতা স্বত্তেও দেশের গনতন্ত্র ১৯ বছর পার করেছে।বিশ্ব জুড়ে সন্ত্রাসবাদ বেড়ে যাওয়ার এই দিনেও বাংলাদেশ গোড়া থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে পেরেছে। এবং অবশেষে ৭১ এ মানবতার বিরূদ্ধে করা অপরাধের অপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে। যে যাই বলুক, বাংলাদেশের মত অবস্থানে থেকে এই সব সাফল্যকে ছোট করে দেখার কোন মানে নেই।
আমাদের উন্নতি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রজন্মের উপর এখন আর নির্ভর করেনা।নতুন প্রজন্মের উপর নির্ভর করে এখন শুধু অপেক্ষা করতে হবে।কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি কথা যে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অপেক্ষার প্রহর বিলম্ব করায় বেশ দক্ষ এবং ব্যাস্ত।নানান রকম প্রতিহিংসা ও দুর্নীতিতে নিপুন রাজনীতিকগনদের ভুমিকা নিয়ে সমাজে সবাই একমত।
প্রতিহিংসার আগুনে আমাদের অনেক জাতীয় অর্জন কলুষিত হয়েছে এবং তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত।কিছু দল এবং মানুষের ব্যাক্তিরোষে মাঝখানে ক্ষতি সহ্য করতে হয় আমাদের, সাধারন দেশবাসীর।
নানান রকমের প্রতিহিংসামুলক কাজের মধ্যে একটি আমার খুব বেশি করে চোখে পরে তা হল জাতীয় স্থাপনাগুলোর দলীয় নেতাদের নাম করনের প্রবনতা।এটি আমাদের ইতিহাস ও জাতীয় ঐক্যের প্রধান শত্রু।বিভক্তি সৃষ্ঠির সুক্ষ মাধ্যম। স্বীকার করতেই হবে যে আমাদের দেশে অবিতর্কিত কোন জাতীয় নেতা পাইনি। বেশ বড় দাগেই নেতা নেতৃত্বের সমালোচনা রয়েছে।এটি দুর্ভাগ্যজনক হলেও প্রমান করে যে আমরা মুক্তচিন্তার জাতি।সরকারে যখন যেই দল ক্ষমতায় থাকে তারা অবিবেচকের মত নতুন স্থাপনার দলীয় নামকরন করে এবং তার চেয়ে লজ্জার হল অন্যদল ক্ষমতায় এসে সেই নাম পরিবর্তন করে ফেলে!!! এই নামকরন ইস্যুই বলে আমাদের জাতীয় ভারসাম্যতার অভাব রয়েছে।
সরকারী দল যদি চায় তাদের নেতৃত্বের নামের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাহলে তারা দলীয় টাকায় কিছু নির্মান করুক, শিশু-কিশোর-তরুনদের জন্য দল থেকে নতুন উন্নয়ন স্কীম চালু করুক বা নেতাদের স্বরনে দুস্থদের জন্য তহবিল গঠন করুক,এতে মানুষের ভাল হবে এবং দলেরও সুনাম হবে কিন্তু দেশের সবার ট্যাক্স এর টাকায় নির্মিত কোন কিছুতে দলীয় নামকরন খুবই বিশ্রী সংস্কৃতি এবং এটা দুর্নাম কামায়।
ঢাকা স্টেডিয়াম, ঢাকা বিমানবন্দর,চট্রগ্রাম স্টেডিয়াম,চট্রগ্রাম বিমানবন্দর,যমুনা সেতু নামগুলো তো যথার্থ ছিল, নয় কি? কিন্তু এসব নিয়ে হয়েছে জঘন্য খেলা এমনকি হতে যাওয়া পদ্মা সেতু নিয়েও শুরু হয়েছে খেলা।গনতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা’র মাতা’র নামে নাকি তার নাম করনের দাবী উঠছে মন্ত্রসভায় যা নিশ্চিতভাবেই ১৬ কোটি মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে না।দোহারে একটি বিমানবন্দর করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার এবং সবার আগে তার নামকরন হয়ে গেছে।
আপাতদৃষ্টিতে নামকরনের এই মোহকে খুব একটা বড় করে না দেখা গেলেও এটির কিন্তু গভীর প্রভাব রয়েছে সমাজে।যেহেতু আমাদের সব নেতাকেই বিতর্কিত করা হয়ে গেছে তাই সরকার যদি দলীয় নেতৃত্বের নামে জাতীয় স্থাপনাগুলোর নামকরন না করে জায়গা বা অবিতর্কিত ব্যাক্তিত্ব যেমন, বীর শ্রেষ্ঠ বা কবি-সাহিত্যিকদের নামে করে তাও হয়।
সবচেয়ে ভাল হয় যদি যে জায়গার স্থাপনা সেই জায়গার নামে নামকরন করে তাহলে স্থাপনাগুলো জাতিগত বিভক্তির রাজনৈতিক খেলার বাইরে থাকবে এবং তা হবে দলীয় নেতাদের জন্য মরনোত্তর অপমান থেকে মুক্তি কারন একটি অবিবেচনা প্রসুত নামকরনের মাধ্যমে জনগনের রোষের শিকার হয় যার নামে করা হয়েছে সেই ব্যাক্তি।এবং এইসব আচরনের দ্বারাই অতীতের ভূত বর্তমানে ঘুরে বেড়ায়।আর নতুন প্রজন্মের মাঝে বিভক্তি তৈরী করে।
এই বিজয়ের মাসে আসুন আমরা জাতীয় স্বার্থকে দলীয় মোড়কে আবদ্ধ করার এই হাস্যকর ও বিভক্তিমুলক “নামকরন” এর রাজনীতিকে ধিক্কার জানাই, আমাদের বাংলাদেশের নির্মীত এবং ভবিষ্যতের স্থাপনাগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতীয় ঐক্য নষ্ট করতে এগুলোকে ব্যাবহার না করি।মৃত নেতাদের নামে তরুন প্রজন্মের মাঝে বিভক্তি সৃষ্ঠি না করি।এবং সার্বিক ভাবে অসংলগ্ন নামকরন করে সেই সব মৃত ব্যাক্তিত্ব প্রতি অশ্রদ্ধা না জানাই।এই দলীয় নামকরনের ব্যাপারটি দেশের রাজনৈতিক চরিত্রের কোন বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয় সামগ্রীকভাবে দেশের দলগুলো যে জনগনের মতামতের মুল্যায়ন করে না এটি তারই বহিপ্রকাশ।
সবশেষে সবাইকে ধন্যবাদ এবং বিজয়ের শুভেচ্ছা।
দলীয় নামকরণও তবু মেনে নেওয়া যেত এই ভেবে যে পাঁচ বছর পরেতো এটার পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু ইদানিং পীর দরবেশদের নামে (ভণ্ড আর বললাম না আগে কারণ পীর, দরবেশ সবসময় ভণ্ডই হয়) যে সব স্থাপনার নামকরণ শুরু হয়েছে সেগুলোতেতো বিপদ আরো বেশি। এগুলোকেতো আর কোনোভাবেই পরিবর্তন করা যাবে না ধর্মীয় অনুভূতিতে কাতুকুতুর ভয়ে। আমাদের লোকজনের ধর্মীয় অনুভূতি যে নাজুক, তাতে এরা চিরকাল অক্ষয়, অমলিনই থেকে যাবে বাংলার মাটিতে।
@ফরিদ আহমেদ,ধন্যবাদ।খুবই গুরুত্বপুর্ন সমস্যা এই পীর-দরবেশদের নামে নামকরন। সরকার যদি বলে যে সাধারন জনগনের কথা চিন্তা করে এমন নাম তাহলে বলতে হয় অন্য ধর্মের অবতারদের নাম কেন নয়!!! তখন আবার সাম্প্রদায়িকতা উসকানো হবে। তাছাড়া, পীর-দরবেশরা তো দেশের প্রত্যক্ষ উন্নয়নে অবদান রাখে নাই সুতরাং রাষ্ট্র কেন তাদের নামে নামকরন করবে।তাই জাতীয় স্থাপনাগুলো এলাকার নামে নামকরনের দাবি জানাই শুধুমাত্র আমাদের দেশী বিভেদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হতে।
মুক্তমনায় স্বাগতম। আর ব্যতিক্রমী লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ, ধন্যবাদ আপনাকে। এবং এই মন্তব্যের মাঝে আপনার সাথে প্রথম আলাপে শুভেচ্ছা জানাই “মুক্তমনা”র মত একটি মানসম্পন্ন সামাজিক ব্লগ সাইট পরিকল্পনার জন্য।
এরকম ব্যতিক্রমী লেখা মুক্তমনা পাঠকদের সুরুচি নষ্ট করবে না আশাকরি।
ভাল থাকুন।
অসামাজিক,
হ্যাঁ, ধিক্কার জানাচ্ছি। সময়োপযোগী বিষয়ের উপস্থাপনার জন্য ধন্যবাদ। তবে, বানানের প্রতি যত্নবান হওয়া অতীব জরুরী।
@গীতা দাস,ধন্যবাদ আপনাকেও মন্তব্যের জন্য। নামকরনের রাজনীতি’র প্রতি আপনার ধিক্কার জানানো আমার আশাবাদ বৃদ্ধি করলো।
দৃষ্টিকটু ভুল বানানগুলোর জন্য ক্ষমা করবেন।বানানের প্রতি আরো যত্নবান হওয়ার চেষ্টা করবো।