পঞ্চাশ বছরের চেয়েও বেশি সময় ধরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পর্ক অধ্যাপক স্যামুয়েল ফিলিপ হান্টিংটনের। তিনি তাঁর Clash of Civilizations গ্রন্থে ইসলাম নিয়ে বলেছিলেন যে, “আসলে সমস্যার মূল কেন্দ্র Islamic terrorist নয়, বরং Islam religion, কারণ এর ভেতরেই সেই সমস্যার জটিলতা নিহিত” ।
বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায় ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইটির শুরুতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছিলেন। তাঁর মতে, বিশ্বাস জিনিসটি আসলে “শুভবুদ্ধি হরণকারী” এক ধরনের শক্তি, যা অনেকটা ভাইরাসের মতো কাজ করে। তবে এটি সাধারণ ভাইরাসের মতো হঠাৎ আক্রমণ করে না, বরং ধীরে ধীরে মানুষের মনের ভেতর প্রবেশ করে এবং সেখানে স্থায়ী প্রভাব সৃষ্টি করে, অনেকটা parasites এর মতো।
আমার PhD গবেষণার টপিক ছিল “Scientific Worldview and Pessimism: An Islamic Critique”—যেটি আসলে আমার Master’s thesis-এরই একটি extension। অভিজিৎ রায়ের লেখা আমি প্রথম পড়ি ২০২১ সালের দিকে। তাঁর লেখাগুলো পড়ে আমি এক সময় একটি reflection essay-ও লিখেছিলাম Muktomona ব্লগে, যেটি এখনও English blog সেকশনে আছে।
সম্প্রতি যখন আমি আমার PhD thesis defence এক পর্বে Viva board এ প্রফেসরদের মুখোমুখি হলাম তখন একটি বিষয় আমার কাছে অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে গেল যে Muslim academics নিজেরাই বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট অজ্ঞ থাকতে পছন্দ করেন অথবা ন্যায্য সমালোচনায় অনাগ্রহী। আমি অবশ্য বলছি না যে আমার examiners-দের আমার মতো understanding থাকা উচিত ছিল, কারণ তারা এই particular topic-এর expert নন। তবে যেভাবে তারা আমার কাজ রিভিউ করেছেন, সেটি দেখে পরিষ্কার বোঝা যায়—Muslim academicians দের deep reading level ড. অভিজিৎ রায় কিংবা Muktomona অনেক ব্লগারদের তুলনায় অগভীর।
আমার Supervisor ই এক পর্যায়ে আমাকে বলেছিলেন “আমি এই বিষয়ে expert নই, তুমি চাইলে অন্য supervisor খুঁজে নিতে পারো।” কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা বলছে, আসলে অন্য কোথাও সহজলভ্য তেমন কোন expertise ছিল না, যতটুকু আমার supervisor-এর মধ্যেই ছিল। Viva শেষে আমাকে এবং আমার supervisor-কে waiting room-এ রাখা হয়েছিল। সেখানে আমার অতি বিনয়ী supervisor কথার এক পর্যায়ে হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে আমাকে বোঝালেন—“তোমার জ্ঞান যদি কাঁধ পর্যন্ত থাকে এই বিষয়ে, তবে তাদের জ্ঞান হাঁটুর নিচে।” প্রায় ৩ ঘণ্টা আমি খুবই শক্তভাবে আমার arguments defend করেছি। অবশেষে আমি আমার PhD Viva পাশ করি।
এই অভিজ্ঞতা আর জন্মভূমিতে ইসলাম নিয়ে সাম্প্রতিক ইস্যুগুলো মিলে আমার মধ্যে দুটি বড় realization এনেছে:
১. Muslim academics, imams এবং সাধারণ জনগণ—এই পুরো বিষয়টির গভীরে একেবারেই যেতে চান না বিধায় সেটি যথেষ্ঠ বোঝেন না,
২. কিছু Muslim bloggers হয়তো বোঝেন কিন্তু তারাও অনেকে অভিজিৎ রায়ের চিন্তাধারাকে প্রায়ই misrepresent করেন।
আমার literature review থেকেই আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, অভিজিৎ রায়ের লেখার মধ্যে কোনো “দোষ” আমি পাইনি। কারণ এই ধরনের লেখা English সাহিত্য জগতে আগে থেকেই ব্যাপকভাবে রয়েছে। অভিজিৎ শুধু বাংলা ভাষাভাষী শিক্ষার্থীদের কাছে সহজবোধ্যভাবে এই scientific knowledge-কে উপস্থাপন করেছেন—যা আসলে প্রায় সব ধর্মের সঙ্গেই দ্বন্দ্বে পড়ে, কেবল ইসলাম নয়, হিন্দু, খ্রিস্টান—প্রভৃতি সবগুলো ধর্মই এ দ্বারা প্রভাবিত।
আমি দুটি quotation দিয়ে বোঝাতে চাই যে ইসলাম নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা অভিজিৎ বা বাংলাদেশের ব্লগারদের কোন “দোষ” নয় বরং এটি একটি worldwide phenomenon, যা scientific enlightenment-এর স্বাভাবিক ফলাফল।
Simon Cottee (2015, p.9) in the book The Apostates: When Muslims Leave Islam states:
“It does not address empirical questions like ‘how many ex-Muslims are there in the UK or Canada?’, ‘What is the median age at which ex Muslims apostatize?’, ‘Are Shia Muslims more or less likely to apostatize from Islam than Sunni Muslims?’, ‘Are women more or less likely to apostatize than men?’, ‘Do ex-Muslims share certain characterological traits and drives?’ It does not address these issues because empirically, right now, they are intractable. Apostasy from Islam is a potent stigma. Few people are willing to discuss it openly and honestly. Conducting large social surveys on apostasy would thus be deeply problematic from a practical point of view.”
(এটি কোনো প্রমাণভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর দেয় না, যে—‘যুক্তরাজ্য বা কানাডায় কতজন প্রাক্তন মুসলিম আছেন?’, ‘কোন গড় বয়সে মুসলিমরা ধর্মত্যাগ করে?’, ‘শিয়া মুসলিমরা কি সুন্নি মুসলিমদের তুলনায় ইসলাম থেকে ধর্মত্যাগে বেশি নাকি কম প্রবণ?’, ‘নারীরা কি পুরুষদের তুলনায় ধর্মত্যাগ প্রবণতা বেশি নাকি কম?’, ‘প্রাক্তন মুসলিমদের কি কিছু নির্দিষ্ট চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য বা মানসিক প্রবণতা রয়েছে?’—এই ধরনের প্রশ্ন। বইটি এসব প্রশ্নের উত্তর দেয় না, কারণ প্রমাণভিত্তিকভাবে বর্তমানে এগুলো প্রায় অমীমাংসিত। ইসলাম থেকে ধর্মত্যাগ একটি শক্তিশালী কলঙ্ক। খুব কম মানুষই এটি নিয়ে খোলাখুলি ও সৎভাবে আলোচনা করতে ইচ্ছুক। ধর্মত্যাগ নিয়ে বড় সামাজিক জরিপ করা তাই বাস্তবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত সমস্যাজনক।)
Haimila (2023, p.10) states in her recent PhD Thesis:
“Scholars of nonreligion have noted that belief in science may function as a worldview, or a worldview belief, for individuals who do not believe in God (Coleman et al., 2019; Farias, 2013)… However, considering the widespread nature of science-based education and other authority of scientific institutions around the world (Qadir & Syväterä, 2021; Wellcome, 2018), it seems likely that also religious individuals rely on science in their beliefs and worldviews… much of prior work in the study of religion has approached ‘belief in science’ as belief in the epistemological superiority of science that has been expected to exclude religious and other supernatural belief. Studies that have shed preliminary light on the importance of science for other worldview functions, such as a sense of meaning, have generally focused on non-theistic and/or nonreligious individuals, leaving open the question of whether finding science important for one’s answers to the ‘big questions’ extends to religious believers or not.”
(অধর্ম সম্পর্কিত গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন যে বিজ্ঞানে বিশ্বাস ঈশ্বরে অবিশ্বাসীদের জন্য একটি বিশ্বদৃষ্টি বা বিশ্বাস হিসেবে কাজ করতে পারে। তবে সারা বিশ্বে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্বের বিস্তৃত প্রভাব বিবেচনা করলে দেখা যায় যে ধর্মীয় ব্যক্তিরাও তাঁদের বিশ্বাস ও বিশ্বদৃষ্টিতে বিজ্ঞানের উপর নির্ভর করেন। ধর্ম অধ্যয়নের পূর্ববর্তী বহু গবেষণায় ‘বিজ্ঞানে বিশ্বাস’-কে এমন একটি বিশ্বাস হিসেবে দেখা হয়েছে যেখানে বিজ্ঞানকে জ্ঞানতাত্ত্বিকভাবে শ্রেষ্ঠ মনে করা হয়েছে, এবং আশা করা হয়েছে যে এটি ধর্মীয় ও অতিপ্রাকৃত বিশ্বাসকে বাদ দেবে। এমন কিছু গবেষণা রয়েছে যা বিজ্ঞানের গুরুত্বকে অন্যান্য বিশ্বদৃষ্টি কার্যকারিতার সাথে যুক্ত করেছে, যেমন জীবনের অর্থ বা তাৎপর্যের অনুভূতি। তবে এই গবেষণাগুলো সাধারণত অধর্মবাদী বা অ-ধর্মীয় ব্যক্তিদের উপর কেন্দ্রীভূত ছিল, ফলে প্রশ্নটি খোলা থেকে গেছে যে জীবনের বড় প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে বিজ্ঞানের গুরুত্ব ধর্মীয় বিশ্বাসীদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য কি না।)
দু’টি উদ্ধৃতিই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে — মুসলিম হোক বা অন্য ধর্মাবলম্বী, তারা মেনে নিক বা না-ই নিক, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃত্ব যত বিস্তৃত হবে, ততই মানুষের মানসিক কাঠামোয় scientific worldview ঢুকে যাবে। একবার যখন সমাজে এই দৃষ্টিভঙ্গি শিকড় গাড়বে, তখন Max Weber’র “religious disenchantment” বা ধর্মীয় মোহভঙ্গের ভবিষ্যদ্বাণী ধীরে ধীরে বাস্তব হতে থাকবে। এর ফলশ্রুতিতে ধর্মীয় ব্যাখ্যা ও বিশ্বাসসমূহ প্রজন্মান্তরে ক্ষয়ে গিয়ে, শেষ পর্যন্ত ধর্মই বিলীন হওয়ার দিকে যাবে।
সবশেষে বলা যায়, আজকের দিনে আমরা স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি যে, science-based education যত ছড়িয়ে পড়ছে, মানুষের মধ্যে scientific worldview ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। তাই অভিজিৎ রায়কে হিন্দু নাস্তিক তকমা দেওয়া হোক বা আসিফ মোহিউদ্দিনকে blasphamy র অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা—এসব আসলে আবেগের খেলা, যুক্তি ও জ্ঞানের ছাঁকুনিতে যেগুলো সহজেই ধরা পড়ে যায়। তরুণ প্রজন্মের হাতে এখন তথ্য, গবেষণা আর যুক্তির শক্তি আছে; তাই আগামী দিনে এই sophistry টিকবে না। Max Weber যেভাবে disenchantment এর কথা বলেছিলেন, সমাজ আসলেই সেই পথে এগোচ্ছে—বৈজ্ঞানিক আলোকায়ন সেই প্রক্রিয়াকে সারা বিশ্বে আরও ত্বরান্বিত করছে—ধর্মীয় আবেগের প্রভাব ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে, আর জায়গা নিচ্ছে যুক্তি, মানবিকতা ও মুক্তচিন্তার আলো।গণহারে ব্লগার হত্যা ছিল অবিচার এবং বাংলাদেশে তরুণদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আক্রমণ। আমার যতদূর মনে পড়ে, বিবর্তন নিয়ে লেখক বন্যা আহমেদ তার এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছিলেন—যাদের হত্যা করা হয়েছিল, তাদের অনেকেই পুরোদস্তুর নাস্তিক ছিলেন না, তারা শুধু স্বাধীনভাবে লিখতেন।
Dr. Md Maruf Hasan
Department of Usul al-Din and Comparative Religion and Philosophy,
AbdulHamid AbuSulayman Kulliyyah of IRKHS,
International Islamic University Malaysia

Photo: With all three examiners (external and internal) and faculty representatives after my PhD Viva at the International Islamic University Malaysia. I am at the corner with my supervisor, Professor Dr. Muhammad Mumtaz Ali (from Hyderabad, India).
Leave A Comment