ভারতীয় উপমহাদেশে যেমন বৈদিক ধর্মগ্রন্থগুলো সংস্কৃত ভাষায় থাকায় খুব অল্প কিছু মানুষই তা পড়তে পারত — তেমনি অবস্থা ছিল বিশ্ব জুড়ে সবখানেই।
প্রোটেস্টান্ট ধারার ধর্মটির জন্ম হয় ১৬ শতকে এক ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক ঠান্ডা লড়াই থেকে। মার্টিন লুথার নামের একজন ব্যক্তি জার্মানিতে বাস করতেন। তিনি বাইবেলকে ল্যাটিন থেকে স্থানীয় ভাষায়, অর্থাৎ জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে দেন। এর আগে কিন্তু খুব কম মানুষই বাইবেল পড়তে পারত, কারণ তা খুব কম মানুষের জানা বা চর্চিত ল্যাটিন ভাষায় লেখা ছিল।
ভাবছেন এটা তো শুধু বাইবেলের অনুবাদ, এতে আবার কী অসুবিধে? এটার কী বা এমন গুরুত্ব? এখানেই গোলমাল। স্থানিক ও শয্যা বুঝে ফেলার অস্ত্র এই অনুবাদটাই আসলে আজকের বিশ্বের অনেক বিভ্রান্তির মূল কারণ।
যে ধর্মগ্রন্থটি কেউ যখন তাঁর মাতৃভাষায় পড়তে পারছেন, সেটিকে সে তাঁর জীবনের সবচেয়ে পবিত্র মনে করতেন। ধরুন আপনি একজন খ্রিস্টান, এবং আপনি ওল্ড টেস্টামেন্ট মাতৃভাষায় পড়ছেন, লুতের কাহিনী পড়লেন, তখন দেখলেন যে নবী লুত তার কন্যার সঙ্গে সহবাস করেছেন (See Book of Genesis, chapter 19, verses 30–36)। প্রবল বিভ্রান্তি ঘটবে।
আপনি যদি একটু চৌকশ পাঠক ও সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তির মানুষ হন, তাহলে আপনার চোখে পড়বে যে Jacob/ইয়াকুব (ইউসুফের পিতা) তার এক ছেলেকে বলছেন,
“রুবেন, তুমি আমার জ্যেষ্ঠ পুত্র,
আমার শক্তির প্রতীক, আমার বলের প্রথম চিহ্ন,
গৌরবে শ্রেষ্ঠ, শক্তিতে অতুল।
কিন্তু জলের মতো অস্থির তুমি, আর কখনো শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করবে না,
কারণ তুমি উঠেছিলে তোমার পিতার শয্যায়,
আমার খাটে উঠে তা অপবিত্র করেছিলে।“
(Genesis 49:3-4)
“যখন ইস্রায়েল (ইয়াকুব) সেই অঞ্চলে বসবাস করছিলেন, তখন রুবেন গিয়ে তার পিতার উপপত্নী বিলহারের সঙ্গে শয়ন করল, এবং ইস্রায়েল তা জানতে পারলেন।“
(Genesis 35:22)
এমন করেই আপনি Joseph (ইউসুফ) র জন্ম নিয়েই মহা বিভ্রান্তিতে পড়ে যাবেন।
এখানে মূল বক্তব্য হলো — সেই সময় থেকে বাইবেলের অনুবাদ গির্জার কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করে। সেখান থেকেই মূলত ইউরোপের খ্রিস্টান সমাজের মধ্যে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। এরপর মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে কোপারনিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বদৃষ্টিও ছিল, যা এসেছিল বিজ্ঞানীদের পক্ষ থেকে।
এখন চলুন একটু মুসলিম বুদ্ধিবৃত্তিক সংকটের দিকে যাই। আমি একবার কুয়ালালামপুরে একটি বই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। লেখক মালয়েশিয়ার সবচেয়ে স্বীকৃত প্রবীণ মুসলিম পণ্ডিতদের একজন। তাঁর ছেলে ও সেখানে উপস্থিত ছিল প্রশ্নোত্তর পর্বের জন্য। অনুষ্ঠানটি ছিল অত্যন্ত বিলাসবহুল, এবং সম্ভবত হাজারেরও বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল। আমি তখন তাঁর ছেলেকে একটি প্রশ্ন করেছিলাম — “ন্যাশনাল মিউজিয়াম বা সায়েন্স মিউজিয়ামগুলোতে তো হোমো ইরেকটাস, হোমো সেপিয়েন্স-এর মাথার খুলির রেপ্লিকা সাজানো আছে। বলুন তো আমরা কি হোমো ইরেকটাস না হোমো সেপিয়েন্স থেকে এসেছি? এই ব্যাপারে আপনাদের ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি কী”?
( একদিন একজন মালয় অনার্সের ছাত্র আমাকে হঠাৎ ঠিক এই প্রশ্ন করেছিল, ‘মারুফ, আমরা কি হোমো ইরেকটাস না হোমো সেপিয়েন্স থেকে এসেছি? এই ব্যাপারে আপনাদের ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি কী’”? )
সে (ছেলেটি) তখন বলল — “আমরা মানব বিবর্তনে বিশ্বাস করি না”। তারপর কিছু জটিল ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করে ও দার্শনিকভাবে ব্যাপারটার ইতি ঘটাবার চেষ্টা করল। ছেলেটির পরিবার কিন্তু মালয়েশিয়ার খুবই অভিজাত শ্রেণির পরিবার — একরকম প্রায় চার্চের কর্তৃত্বের মতোই।
যখন প্রবীণ সেই পণ্ডিত মঞ্চে এলেন, বক্তৃতার এক পর্যায়ে তিনি ‘বাস্তবতা’ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফ্যানের উদাহরণ টানলেন। আপনারা যারা সুফিবাদ, বিশেষ করে ইবন আরাবির দার্শনিক চিন্তা নিয়ে পরিচিত, তারা জানেন — তিনি কিন্তু বাস্তবতাকে চলমান চিত্র (motion picture) বা গতি-নির্ভর রূপে ব্যাখ্যা করেন। আরাবির মতে, সর্বজনীন সকল বস্তুই একটি একক “বাস্তবতার” প্রকাশ।
এই স্কলার ইসলামকে রক্ষা করতে সুফি সাহিত্য ব্যবহার করছেন। উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীর কবি ও দার্শনিক মুহাম্মদ ইকবালও কিন্তু একই কাজটাই করেছেন, তবে তিনি বিবর্তনবাদকে সমর্থনের পক্ষে কিছু উদ্ধৃতি দিয়েছেন তাঁর বই The Reconstruction of Religious Thought in Islam-এ।
এখন আপনারা যদি ঐতিহাসিকভাবে সুফি সাহিত্যের উৎস খুঁজতে চান, তাহলে দেখবেন — ইখওয়ান আল-সফা (Ikhwan al-Safa, বা Brethren of Purity — ১০ম শতকের এক রহস্যময় বৌদ্ধিক গোষ্ঠী) যে চিন্তাগুলো দিয়েছে, তা এসেছে গ্রিক দর্শন থেকে। ইবন আরাবি সেই চিন্তাগুলোকেই ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার করে মিশিয়ে একধরনের সাহিত্য তৈরি করেছেন।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, ইবন আরাবির চিন্তার সঙ্গে তাওবাদের (Taoism) বাস্তবতার ধারণার অনেক মিল আছে। আপনারা চাইলে তোশিহিকো ইজুতসুর লেখা বই “Sufism and Taoism: A Comparative Study of Key Philosophical Concepts” পড়ে দেখতে পারেন।
এখন মালয়েশিয়ান যিনি স্কলার, তিনি যেভাবে ইসলামী সুফিবাদ থেকে রক্ষণাত্মক অবস্থান নিয়েছেন, সেটি মূলগতভাবেই ত্রুটিপূর্ণ — এবং আপনি সহজেই তা ধরতে পারবেন।
এবার গ্রিক দর্শনের সমস্যাগুলো নিয়ে কিছু বলা যাক। ইউরোপে বিজ্ঞান ও ধর্মের দ্বন্দ্ব শুরু হওয়ার পর থেকেই কিন্তু অ্যারিস্টটলীয় যুক্তিবাদের পতন ঘটতে শুরু করেছিল। টমাস অ্যাকুইনাস খ্রিস্টধর্মকে অ্যারিস্টটলীয় যুক্তির মাধ্যমে রক্ষা করার যে পদ্ধতি নিয়েছিলেন, সেটা ধীরে ধীরে হারিয়ে গিয়েছিল।
মুসলিম জগতে বিষয়টা একটু আলাদা। ইমাম ইবন তাইমিয়া গ্রিক দর্শন ও যুক্তিবাদের উপর সমালোচনা করেছিলেন। ধরুন আপনি একটি যুক্তি তৈরি করছেন — আপনাকে অবশ্যই সংজ্ঞার উপর নির্ভর করতে হবে যদি আপনি সেই যুক্তিতে বিজয়ী হতে চান। কিন্তু আপনার প্রতিপক্ষ যদি একই শব্দকে অন্যভাবে সংজ্ঞায়িত করে, তাহলে সেখানেই সমস্যা তৈরি হয়। ইমাম তাইমিয়া এই জিনিসটিই গ্রিক দর্শনের বিশ্বাসযোগ্যতা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সমালোচনা করেছেন।
তাহলে ব্যপারটা এমন দাঁড়ালো যে — সুফিবাদের মাধ্যমে ধর্মকে রক্ষা করা মৌলিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ, আর গ্রিক বা অ্যারিস্টটলীয় দর্শনের মাধ্যমেও ধর্মকে রক্ষা করা মৌলিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ।
এখন যেটা থাকে, তা হলো রূপক অর্থ বা allegorical meaning। অর্থাৎ, যখন ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর আক্ষরিক অর্থ ভুল বা অবাস্তব মনে হয়, তখনই রূপক অর্থের দ্বারস্থ হওয়া হয় — ঠিক সংজ্ঞা নিয়ে দ্বন্দ্বের মতোই।
এখন ভাবুন — এই ধর্মগ্রন্থগুলো তো ইতিমধ্যেই হাজার বছরের পুরনো। আপনি যদি এগুলোর সাহিত্য বিশ্লেষণ করেন, দেখবেন — প্রতিটি শতাব্দীতেই এই পাঠ্যগুলোর অর্থ নতুন চিন্তার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে বদলানো হয়েছে।
এখন আপনি যদি ২১ শতাব্দীর মানুষ হন, এবং আপনি যখন তাফসির ইবন কাসির পড়বেন, তখন দেখবেন এর অনেক ব্যাখ্যা আজকের দিনের বিজ্ঞানের বা বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এই পয়েন্টেই তারা বলে — মানুষের বুদ্ধি সীমিত, আর সেই কারণেই পূর্ববর্তী ব্যাখ্যাগুলো ছিল সেই সময়ের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু এখন নতুন ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে হবে। এইভাবেই গোলকধাঁধার মতো ধর্মের চাকা ঘুরছে — ঠিক সেই চিচিমপুরের উদ্দেশ্যের মতো, যেটা আমরা ছোটবেলায় বিটিভিতে দেখতাম।
এখন শেষ যে পয়েন্টটা থাকে আপনার হাতে, সেটা হলো — blind faith, অর্থাৎ অন্ধ আনুগত্য। তার মানে দাঁড়াল, আপনি ধর্মে শান্তিতে থাকতে পারবেন, তবে সেটা কোনো প্রকার সত্য ছাড়াই।
মানে, আপনি হোটেলে গিয়ে রিসেপশনিস্টকে বললেন — “এটা আমার স্ত্রী”, কিন্তু আপনি জানেন, সে আসলে আপনার স্ত্রী নয় — বরং সে আপনার প্রেমিকা।
সিদ্ধান্তটা আপনাকেই নিতে হবে।
জটিল ভাষাতাত্ত্বিক নাটক, বিদেশি শব্দভাণ্ডার আর বিলাসবহুল সম্মেলনকক্ষে বিশিষ্ট ধর্মীয় বুদ্ধিজীবী বক্তাগণ নিজেদেরকে মহান কর্তৃত্ব হিসেবে উপস্থাপন করে, ঠিক যেমন মধ্যযুগীয় ইউরোপের খ্রিস্টান চার্চ করতো। কিন্তু আপনি যদি সত্য ও বিজ্ঞানের ভিত্তিতে গঠিত জ্ঞানের প্রকৃত অনুসন্ধানী হন, তাহলে আপনি সহজেই তাদের এই অভিজাত বিভ্রমের আসল চেহারা বুঝতে পারবেন—যা সাধারণ মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য সাজানো, কিন্তু বাস্তবে তা সম্পূর্ণ অর্থহীন ও ভিত্তিহীন। আর এই বিভ্রমের সঙ্গে জড়িত আছে এক ধরনের অন্ধ অনুগত্য, যেখানে ধর্মীয় পণ্ডিতদের কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে নেওয়া হয়, তেমন কোন বিচার-বুদ্ধি বা সমালোচনামূলক চিন্তার অবকাশ না দিয়ে। এই প্রক্রিয়াটি আজও আমাদের দেশে, বাংলাদেশে অব্যাহত আছে এবং সমাজে একই ধরনের বিভ্রান্তি ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম হিসেবে কার্যকর রয়েছে।
এখন মূল সমস্যা হলো বিজ্ঞান বোঝাতেই যখন দুষ্কর হয়ে যায়, তখনই এইসব এলিট ধর্মীয় বুদ্ধিজীবীরা সুযোগ পেয়ে যায় বুদ্ধিবৃত্তিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য। বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝার জন্য এখানে একটি রেফারেন্স না দিলেই নয়:
মালয়েশিয়ায় একটি নীতিমালা ছিল যেখানে জাতীয় স্কুলগুলোতে বিজ্ঞান ও গণিত ইংরেজিতে পড়ানো বাধ্যতামূলক করা হয়। এই ধারণা ছিল, ছাত্ররা কেবল তখনই সফল হবে যখন তারা ইংরেজি ভাষায় বৈজ্ঞানিক জ্ঞান লাভ করবে। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে এই নীতিমালা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়, কারণ দেখা যায়, বেশিরভাগ ছাত্র, বিশেষ করে মালয় সম্প্রদায়, কেবল ইংরেজিতেই দুর্বল নয়, বরং বিজ্ঞান ও গণিতেও দুর্বল। ফলে এই নীতিমালা বাতিল করা হয়।
পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে, কারণ কিছু মুসলিম গোষ্ঠী ধর্মকে রাজনৈতিক অস্ত্রে রূপান্তরিত করেছে এবং আধুনিকতা ও ইসলামের মধ্যকার সম্পর্ককে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। ইসলামী শিক্ষাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং এই গোষ্ঠীগুলি নিজেদের প্রয়োজনে তা ব্যাখ্যা করে নিয়েছে, যদিও এই অনুশীলনসমূহ বিকৃত ও বিভ্রান্তিকর। এই গোষ্ঠীগুলোকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়েছে — যেমন মৌলবাদী, রক্ষণশীল, মৌলিকতাবাদী, উগ্রবাদী, উদারপন্থী ও সন্ত্রাসী। এরা ইসলামি আইন, নীতি ও মূল্যবোধ নিয়ে বিতর্ক করছে, যেগুলো আধুনিকতার ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বিবেচিত। (Zaharani and Akhmetova, 2021,p.221)
মুসলিম দেশগুলোর অনেকেই আজ এমন এক সংকটময় অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে ধর্মীয় বর্ণনাগুলো সমাজে প্রভাব বিস্তার করে আছে, আর বিজ্ঞান ও যুক্তিভিত্তিক চিন্তাভাবনা পিছিয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ধর্মীয় নেতারা ও রাজনৈতিক নেতারা সাধারণ জনগণের বিশ্বাসকে পুঁজি করে তা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। ফলস্বরূপ, জনগণের চিন্তাজগত এক ধরনের মোহাচ্ছন্নতায় আবদ্ধ হয়ে পড়েছে, যেখানে সত্য বা বিজ্ঞানের পক্ষে কথা বলাই যেন অপরাধ।
For further readings:
Al-Attas, S. M. N. (2023). Islam: The covenants fulfilled. Ta’dib International.(এই বইটির উদ্বোধনী মেলায় গিয়ে আমি মানব বিবর্তন (evolution of human) সম্পর্কে প্রশ্নটি উত্থাপন করেছিলাম।)
Rayan, S. (2011). Ibn Taymiyya’s criticism of the syllogism. islm, 86(1), 93–121. https://doi.org/10.1515/islam.2011.016
Rayan, S. (2012). Criticism of Ibn Taymiyyah on the Aristotelian logical proposition. Islamic Studies, 51(1), 69–87. http://www.jstor.org/stable/23643925
Zaharani, Nor Farhain& Akhmetova, Elmira (2021) . Islam, Modernity and the Concept of Progress Islam. Journal of Islam in Asia, December Issue, Vol. 18, No. 3. 202
Leave A Comment