মহাভারত এবং রামায়ন আমি দেখেছি। কিন্তু হিন্দু ধর্মের অন্যান্য মৌলিক গ্রন্থগুলো, যথাঃ বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, মহাপুরাণ, মনুসংহিতা ইত্যাদি আমি কখনও চোখেও দেখিনি। ফলে এসব বইতে যে সব অমানবিক, বর্বর, হিংসাত্মক নিয়মাবলী লেখা আছে তা আমার একেবারে অজানা ছিল। কলেবরে ছোট, কিন্তু তথ্যবহুল আকাশ মালিকের বইটা পড়ে আমি হতবাক। মূলতঃ আমার এই লেখাটির সূত্র এটাই।

আমি কোরান ছাড়া দ্বিতীয় কোন ধর্ম গ্রন্থ পড়িনি। পড়ার আর কোন সম্ভাবনাও নাই। সব ধর্মগ্রন্থই মিথ্যা এবং কাল্পনিক কাহিনীর সমাহার। কবি নজরুলের কথাই সারবস্তু – “মানুষ এনেছে গ্রন্থ, গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোন।” ধর্ম পৃথিবীর ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই করেনি। ধর্ম কভিডের চেয়েও লক্ষ গুণ ক্ষতিকারক। কভিড শ্বাস-নালী এবং ফুসফুসের ক্ষতি করে। কিন্তু এর নিরাময় আছে, ধর্ম-বিশ্বাসের সহজ চিকিৎসা নাই। ধর্ম মানুষের মগজ এবং বুদ্ধি-সুদ্ধি ধংস করে দেয়। আক্রান্ত মানুষ ধর্মের নিষ্ঠুর, বর্বর, এবং অমানবিক কার্যাকরণ বুঝার ক্ষমতা হারায়। ধর্মের নিষ্ঠুর থাবা সারা পৃথিবীর মানুষকে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্থ করে চলেছে। পৃথিবীটা ধর্মমুক্ত করা জরুরী হয়ে পড়েছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হিন্দু ধর্ম পাঠ্য ছিল। আমার হিন্দু ধর্মের পুথিগত জ্ঞান ঐটুকুই। বাল্যকালে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে সুর করে মহাভারত পাঠ শ্রবণ থেকে নীচের লাইন দুটো এখনও মনে আছে।

মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
কাশিরাম দাসে কহে শুনে পূণ্যবান।।

১৯৬৭ সালে এস-এস-সি পরীক্ষা শেষে তিন-চার মাস অলস সময় ছিল। তখন মহাভারত পড়ার ইচ্ছা জাগ্রত হয়। প্রথমেই আদিপর্ব, যা মূলত যৌন পর্ব। অবাধ যৌনতার কথা দিয়ে মহাভারত শুরু। মুনি-ঋষি এবং দেবতা-ভগবানগন যার তার সাথে যখন-তখন সংগম লীলা করত। নিজ কন্যা বা মাতা পর্যন্ত বাদ যেতো না। “The Wall Char of World History” (ISBN: 0-7607-0970-X) বইটিতে সংক্ষিপ্তাকারে আদম থেকে সমসাময়িক পৃথিবীর মানুষের টাইম-লাইন দেওয়া আছে। এই বই অনুযায়ী আদম আর ইভের পৃথিবীতে আগমন হয় মাত্র ৬,০২৫ বছর আগে। আদম-ইভ ব্যাপারটা কল্পিত কাহিনী ছাড়া আর কিছু নয়। আনুমানিক তারই পাঁচশত বছর পরের কল্পিত কাহিনীর সমন্বয় মহাভারত। শুরুতেই আদিপর্বের যৌন অনাচার, ব্যভিচার, কদর্য, বিভৎস, জঘন্য ব্যাপার-স্যাপার পড়ে স্তব্ধ হয়ে যাই। তখনই আমার মহাভারত পাঠ বন্ধ হয়ে যায়। এটুকুই আমার মহাভারত বিদ্যা। মহাভারত পাঠের তিক্ততা থেকে কোরাণের প্রতি একটা শ্রদ্ধাবোধ জন্ম হই কমরুদ্দিন স্যারের গল্প শুনে শুনে। তিনি ক্লাশে কিছুই পড়াতেন না। প্রতিদিন বলতেন নবীজির গল্প, সাপের কামড়ের গল্প, কাঁটা বুড়ির গল্প, খেজুড় গাছের নীচে শুয়ে থাকার গল্প, মিরাজের গল্প, ৫০ ওয়াক্ত নামাজের গল্প, ইত্যাদি। প্রায় চল্লিশ বছর পরে আবার হতভম্ব হই। এবারের কারণ কোরান পাঠ। পৃথিবীর সমস্ত ধর্মের স্বরূপ বুঝতে আর বাকি থাকে না।

আমার বয়স এখন সত্তরের উপর। পৃথিবীটাকে অনেক উপভোগ করলাম। দিতে পারিনি কিছু। শুধু নিয়মিত রক্তদান করেছি আর মরণোত্তর দেহদান কর্মসূচীতে নিজেকে চুক্তিবদ্ধ করেছি। বাকি জীবনটাতে ধর্মের স্বরূপ কিছুটা উন্মোচন করতে পারলেও গর্বিত অনুভব করবো। এই সামান্য অথচ মহত কাজটা অনেকেই করতে চায় না। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মীরা খারাপ ভাববে মনে করে মুখ খুলে না। গল্প, কবিতা, গান-বাজনা করলে ফ্যানের ব্যাপার আছে। আমার সে বালাই নাই। তবে জীবনের ভয় আছে। হুরবাসে বিশ্বাসী একজন ইনবক্স করেছে – “You will pay price for this.” ফলে বাংলাদেশে যাওয়ার ইচ্ছাকে অবদমিত করেছি। যেখানে যা পারি লিখে যাই – সকল ঈশ্বরই অলীক। সর্ব ধর্ম নিপাত যাক, ধর্মমুক্ত পৃথিবী গড়ে উঠুক। এটাই আমার স্লোগান।

মহাভারত অনুযায়ী কর্ণ, যুধিষ্টির, ভীম,‌ অর্জুন, নকুল এবং সহদেব এই পাঁচ ভাই পঞ্চ পান্ডব নামে অভিহিত। এরা কেউ তাদের মা কুন্তীর স্বামী পান্ডুর ঔরসজাত সন্তান ছিল না। প্রচলিত বাংলায় বলা যায় এরা সবাই জারজ সন্তান ছিল। এক মুনির অভিশাপে পান্ডুকে স্ত্রী-সম্ভোগে বিরত থাকতে হয়। মুনিটি খুবই কামাসক্ত ছিলেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলা সম্ভোগ তার পোষাচ্ছিল না। তাই তিনি বনে গিয়ে হরিনের দেহ ধারণ করে হরিণীদের সাথে সেক্স করতেন। পান্ডু তা জানতেন না। একদিন সহবাসের চরম মূহুর্তে পান্ডু হরিণ দেহধারী মুনিটাকে তীর বিদ্ধ করে মেরে ফেলেন। রুষ্ট মুনিটি মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্তে নিজ দেহ ধারণ করে পান্ডুকে অভিশাপ দেন – তুই আমাকে চরম মুহুর্তে চরম আনন্দটাও নিতে দিলি না। আমি অভিশাপ দিচ্ছি – তুই যখন কুন্তীর সাথে সহবাস করবি তখনই তোর মৃত্যু হবে। সেজন্যই পান্ডু কুন্তীর সাথে সেক্স করতে পারেন নি। স্বামী পান্ডুর অনুমতি নিয়েই কুন্তী ভিন্ন পুরুষের সাথে সহবাস করে পুত্রসন্তানদের জন্ম দিয়েছিলেন। কুন্তীর প্রথম পুত্রের জন্ম কাহিনী আরও চমকপ্রদ। কুন্তীর বিবাহের আগেই কোন এক ঋষির ধর্ষণের শিকার হন। তার জন্ম কুন্তীর যোনির বদলে কান দিয়ে। তাই তার নাম কর্ণ। এখানে আমি গল্পকারের কল্পকাহিনী সৃষ্টির প্রশংসা না করে পারিনা।

তখন সবে বানান করে পড়তে শিখেছি। বাবার একখানা বই থেকে পড়তাম। একবার বিন্ধ্য মুনি সূর্যের পথ আটকে দাঁড়ালো। সূর্য সকালে উঠে দুপুর পর্যন্ত যায়। আর যেতে পারে না। ফলে বিকেল হয়না, সন্ধ্যা হয় না। রাত হয় না। দেবতারা দল বেধে অগস্ত মুনির কাছে গেল। অগস্ত মুনি বিন্ধ্য মুনির সামনে এলে বিন্ধ্য দেহ ভাজ করে গুরুজী অগস্ত মুনিকে প্রণাম করল। অগস্ত মুনি বলল – ‘আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত এভাবেই থাকবি।’ অগস্ত যাত্রা শুরু করল, ফিরল না। বিন্ধ্য অগস্ত মুনির নির্দেশে আর উঠতে পারল না। সূর্য আপদ মুক্ত হলো। আগের মত সকাল-বিকেল করতে থাকল। উঠতে না পারা বিন্ধ্য মুনি এখন বিন্ধ্য পর্বত নামে পরিচিত। অগস্ত যাত্রা শুরু করল, ফিরে এল না। এভাবেই “অগস্ত যাত্রা” বাকধারার সৃষ্টি হল। একবার অসুরদের অত্যাচারে দেবতারা অতিষ্ঠ। দেবতারা প্রতি-আক্রমণ করতে গেলেই অসুররা বারবার সমুদ্রের অথৈ জলে লুকিয়ে পড়ত। দেবতারা কিছুই করতে পারত না। তখন তারা অগস্ত মুনির কাছে ছুটে গেল। অগস্ত মুনি সমুদ্রের জলে হাটু গেড়ে বসলেন। তার পর এক চুমুকে সমুদ্রের জল পান করে শেষ করলেন। অসুরদের পালানোর পথ থাকলো না। দেবতারা অসুরদের মেরে ফেলল। অগস্ত মুনির পেটে কি এক লিটারের বেশী জল ধারণ করা সম্ভব? কী করে তিনি মহা সুমদ্রের সমস্ত জল খেয়ে ফেলবেন? ধর্ম মানুষের মগজ এতই ধোলাই করে ফেলে যে, এই সাধারণ প্রশ্নটা তাদের মাথায় খেলবে না। ধর্ম “বিশ্বাসের” বিষয়। যুক্তির বিষয় নয়। ধর্মের কাজ মগজ ধোলাই করা। কিন্তু এই কাহিনী দুটো এতই ডাহা মিথ্যা যে, এগুলো একেবারে বাদ হয়ে গেছে। কোথাও আর পাওয়া যাবে না।

কাহিনী সৃষ্টিতে মুহম্মদও পারদর্শী ছিলেন। উম্মেহানীর বাড়িতে একটা বিশ্রী ঘটনা আড়াল করতে গিয়ে তাৎক্ষনিক ভাবেই তিনি গল্প ফাদেন – বিশেষ এক চতুষ্পদ প্রাণীর পিঠে চেপে আল্লাহর সাথে দেখা করে এলেন। প্লেন যে উচ্চতায় চলাফেরা করে সেখানকার তাপমাত্র মাইনাস ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নীচে। তারপরেও এই একবিংশ শতাব্দীতেও ১০০ কোটিরও বেশী মানুষ এই আজগুবি গল্পকে সত্যের ন্যায় বিশ্বাস করে – এটাই বর্তমান পৃথিবীর সবচাইতে বড় আশ্চর্যের বিষয়। কিন্তু এখন আর এই গল্পটি গর্বভারে বলতে শোনা যায় না। থিতু হয়ে গেছে। কিন্তু জিব্রাইলের সাথে আলাপ-চারিতা জাতীয় মিথ্যাগুলো এখনও বহাল বহাল তবিয়তে আছে। ১৩৭০ কোটি বছর যাবৎ মহাবিশ্ব নিজস্ব প্রাকৃতিক নিয়ম-নীতিতে চলছে। বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদরা মানব কল্যানে যা সৃষ্টি এবং ব্যবহারযোগ্য করছেন তার কোন কিছুই মহাবিশ্বের নিয়ম-নীতির বাইরে নয়। সম্ভব নয়। কিন্তু যেসব কথাবার্তা বা দাবীনামা মহাবিশ্বের প্রাকৃতিক নিয়ম-নীতির সাথে সাংঘষিক, যে লোকই বলুক, তা ডাহা মিথ্যা, দুরভিসন্ধিমূলক, প্রতাড়নামুলক।

মানুষের মগজে একটা মিথ্যা ঢুকে গেলে তার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ করার মত বিচার-বিবেচনাবোধও আর থাকেনা। আজকাল বিজ্ঞানীরা কোটি কোটি আলোক বর্ষ দুরের তারকা পুঞ্জের আকৃতি-প্রকৃতির বিষদ ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম। ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন বছরের পর বছর পৃথিবীর চার পাশে ঘুরছে। মানুষ যাওয়া-আসা করছে। কিন্তু স্বর্গ-নরক, বেহেস্ত-দোযক, হুরশালা একবারও কারও চোখে পড়লো না। ব্যাপারটা কী?

ধর্ম, বায়ু, ইন্দ্র, ইত্যাদি দেবগনের কুন্তীর সাথে সেক্সের ফসল যুধিষ্ঠির ভ্রাতাগন। ধর্ম ব্যক্তিটা কে? স্বর্গ কোথায় অবস্থিত যে সেখান থেকে স্বর্গের রাজা ইন্দ্র এসে কুন্তীর সাথে সেক্স করেছিলো? বাতাস ব্যক্তিটা কে? তিনি কুন্তীর সাথে সেক্স করলেন! কীভাবে সম্ভব? কল্পনায় সবই সম্ভব। মহাভারত ১০০% কাল্পনিক। দেব-দেবী, মুনি-ঋষি, ভগবান, মহেশ্বর, শিব, গনেশ, দূর্গা, বিষ্ণু সবই কাল্পনিক। এদের অস্তিত্ব কোনদিন ছিল না। অথচ হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। প্রচলিত আছে – ভারতের জনসংখ্যা যখন মাত্র ৩৩ লক্ষ, তখন দেবতার সংখ্যা ছিল ৩৩ কোটি। এরা বিশ্বাস করে শিবের পুরুষাঙ্গ সর্বদা উত্থিত থাকত এবং সর্বক্ষন বীর্য স্খলন হত। সেই বীর্য বাতাস বা বৃষ্টির জলের সাথে লক্ষ যোজন দূরে চলে যেতো। মহিলারা শিবের বীর্যের সংস্পর্শে এসেই গর্ভবতী হত। মহাভারত বিরাট এক কল্পকাহিনীর আধার। হাতীর মাথাওয়ালা গনেশ নামে এক দেবতা, কান দিয়ে গর্ভপাতে কর্ণের জন্ম, চার হাত, দশ হাতওয়ালা দেবতা, ইত্যাদি সবই কল্পনায় সম্ভব। আশ্চর্য কল্পনা শক্তি ছিল মহাভারত লিখিয়েদের এবং মুহম্মদের। চরম সত্য হলো – দেবতা, ভগবান আল্লাহদের কোন অস্তিত্ব নাই। সব ধর্মের মূল ব্যাপারটি হলো “বিশ্বাস”। ধর্ম থেকে বিশ্বাস বাদ দিতে পারলে কিছুই আর অবশিষ্ট থাকে না। মাওলানা কাজী ইব্রাহিম মুহম্মদের ব্যাপারটি ভাল বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনিও দাবী করেছিলেন – তিনি করুণা ভাইরাসের সাথে কথা বলেন, করুণাকে বাংলাদেশে আসতে নিষেধ করেছেন, পৃথিবীর ভিতরেও যে পৃথিবী আছে এক মাত্র তিনিই তা জানেন। এসব বলতে গিয়েই তিনি ধরা খেয়েছেন। কাজী ইব্রাহিম বুঝতে পারেন নি, একবিংশ শতাব্দীতে এসব দাবী করে টেকা যায় না। টিকতে গেলে বিশাল সেনাবাহিনী থাকতে হবে। প্রতিপক্ষকে গলা কেটে সমূলে বিনাশ করতে হবে। ১৪০০ বছর আগে এসব বললে তিনিই শেষ নবী হতে পারতেন। পৃথিবীর ভিতরে পৃথিবী আছে এটা একবার মগজে ঢুকিয়ে দিতে পারেলে, একবিংশ শতাব্দীর কোটি কোটি মানুষও তা বিশ্বাস করত।

মহাভারত হিন্দুদের প্রধান ধর্ম গ্রন্থ। বিশেষ অনুষ্ঠানে মহাভারত পাঠ হয়। কিন্তু আদি পর্ব কখনও পড়া হয় না। এই পর্বটা সবার সামনে পড়াও যায় না। পরবর্তীতে মহাভারতের আদি পর্বটা বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্তাকারে নতুন একটি সংস্করণ তৈরী করা হয়। যা বর্তমানে গীতা নামে পরিচিত। আজকাল মহাভারতের চেয়ে গীতাই বেশী জনপ্রিয়।

মানুষ শক্তিতে ভয় পায়, সমীহ করে। তাই হিন্দু দেব-দেবীদেরকে অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত দেখানো হয়। এদের যুদ্ধংদেহী চিত্র সতত দৃষ্ট। কালির তো ভয়াল মূর্তি – গলার মুন্ডু মালা, মুখ থেকে মানুষের রক্ত চুইয়ে পড়ছে। শত্রু বিনাশে তীর-ধনুক, গদা, চক্র, বল্লম, ইত্যাদি অস্ত্র ব্যবহার করে দেবতারা। বোধকরি হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস, ধর্মীয় পুস্তকে বর্নিত অসভ্য, বর্বর, নির্দয়, অসহিষ্ণু এবং নিষ্ঠুর নিয়মাবলী এসব অস্ত্র-শস্ত্র দ্বারাই অনুপ্রানিত। বেদ, পুরান, উপনিষদ, মনু-সংহিতা, ইত্যাদিতে ভালো ভালো কথা লেখা আছে ইত্যাদিই শুনে এসেছি ছোটবেলা থেকে। কিন্তু হায়! আকাশ মালিক এ কী শুনালেন! “হিন্দুধর্মের ইতিবৃত্ত” না পড়লে আমি এর কিছুই জানতাম না। কিছু উদ্দৃতিঃ (পৃ.১)

“হে ঈশ্বর, যারা দোষারোপ করে বেদ ও ঈশ্বরের / তাদের উপর তোমার অভিশাপ বর্ষণ করো।” (ঋগবেদ
২,২৩,৫)

“যে লোক ঈশ্বরের আরাধনা করেনা এবং যার মনে ঈশ্বরের প্রতি অনুরাগ নেই, তাকে পা দিয়ে মাড়িয়ে হত্যা করতে
হবে।” (ঋগবেদ ১,৮৪,৮)

“গবাদিপশুগুলো কী করছে নাস্তিকদের এলাকায়, যাদের বৈদিক রীতিতে বিশ্বাস নেই, যারা সোমার সাথে দুধ মিলিয়ে
উৎসর্গ করেনা, এবং গরুর ঘি প্রদান করে যজ্ঞও করেনা? ছিনিয়ে আনো তাদের ধন সম্পদ আমাদের কাছে।”।
(ঋগবেদ ৩,৫৩,১৪)

“যে ব্যক্তি ব্রাহ্মণের ক্ষতি করে, ব্রাহ্মণের গরু নিজের কাজে লাগায় তাকে ধ্বংস করে দাও।” (অথর্ববেদ,১২,৫,৫২)

“তাদেরকে হত্যা করো যারা বেদ ও উপাসনার বিপরীত।” (অথর্ববেদ,২০,৯৩,১) এবং যজুর্বেদ ৭/৪৪ “তাদের যুদ্ধের
মাধ্যমে বশ্যতা মানাতে হবে।”

“সেনাপতি, হিংস্র ও নির্দয়তার সাথে শত্রুদের পরিবারের সদস্যদের সাথেও যুদ্ধ করবে।” (যজুর্বেদ ১৭/৩৯)

“শত্রুদের পরিবারকে হত্যা কর তাদের জমি ধ্বংস কর।” (যজুর্বেদ ১৭/৩৮)

“হাতি, ঘোড়া, অর্থ, শষ্য, গবাদিপশু ও নারী তার দখলে যে যুদ্ধের মাধ্যমে তা জয় করে।” (মনু,৭,৯৬)

যুদ্ধ এবং নরহত্যার কথা কোরাণেও আছে। মনে হয় কোরান বেদ, উপনিষদ এবং মনু দ্বারা প্রভাবিত।

ভারতে ব্রাহ্মণ এবং রাজা একে অপরের পরিপূরক হিসেব কাজ করত – উদ্দেশ্য আমাজনতাকে ভেড়ার পালের মত পূষে রাখা, সহজে খাজনা আদায় করা, জীবনটাকে আরাম-আয়েশে ভোগ করা। ব্রাহ্মণরা রাজাদের স্তুতি গাইত – রাজারা স্বয়ং সুর্যের বংশধর। কাজেই রাজারাও দেবতাদের মত পূজ্য। রাজারাও ব্রাহ্মণদের প্রশস্তি গাইত। ব্রাহ্মণরা জ্ঞানী-গুনী, ত্রিলোকদর্শী, দেবতাদের সমতুল্য। আমি নিজে শুনেছি – আগে ব্রাহ্মণদের মুখ থেকে আগুন বেরতো। অস্পৃশ্য এবং ঘৃন্য প্রজাদেরকে এসব শিখানো হত। কিন্তু তাদের উৎপাদিত ফসল বা খাজনার টাকায় কোন অস্পৃষ্যতা ছিল না। প্রজাদের মগজে ঢুকানো থাকত ফসলের ভাগীদার রাজা, জমিদার, ব্রাহ্মণগন। রাজা, জমিদার, এবং ব্রাহ্মণদেরকে রাজকর দেওয়া এবং স্তুতি করা প্রজাদের বেঁচে থাকার পূর্ব শর্ত ছিল। শ্রেণী বিভাজনের মাধ্যমে রাজা এবং ব্রাহ্মণ শ্রেণীরা মানুষে মানুষে যে ভেদাভেদ, ঘৃণার সৃষ্টি করেছে, পৃথিবীর কোন মানব জাতি তা করেনি।
ভারত এবং বাংলাদেশে ব্রাহ্মণরা এখনও তাদের সৃষ্ট অস্পৃষ্যদেরে ঘৃণার চোখে দেখে। রাষ্ট্রীয় আইন ব্রাহ্মণদের পক্ষে আর নাই। কিন্তু মনুর নির্দেশ ব্রাহ্মণরা এখনও আকড়ে ধরে আছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে এখনও ব্রাহ্মণদের প্রাধান্য লক্ষ্যনীয়। এরা অব্রাহ্মণদের স্পর্শ করা খাবার খাবে না। তাদের খাওয়ার জন্য আলাদা স্থান দিতে হবে। তাদের আহারের পরে অন্যেরা খেতে পারবে। শূদ্র জনজাতির প্রতি ব্রাহ্মণ মনুর নির্দয়তা নিষ্ঠুরতার নমূণা নীচে দেওয়া হলো। এসব পুরাণ, উপনিষদ, বেদ এবং মনু সংহিতা থেকেই নিয়েছেন আকাশ মালিক। পৃঃ৪৭।
(ক) শূদ্রদের নিজস্ব কোনো সম্পত্তি রাখার অধিকার নেই।
(খ) দাস ও শূদ্রের ধন ব্রাহ্মণ অবাধে নিজের কাজে প্রয়োগ করবেন।
(গ) শূদ্র অর্থ সঞ্চয় করতে পারবে না। কারণ তাঁর সম্পদ থাকলে সে গর্বভরে ব্রাহ্মণের উপর অত্যাচার করতে পারে।
(ঘ) প্রভু কর্তৃক পরিত্যক্ত বস্ত্র, ছত্র, পাদুকা ও তোষক প্রভৃতি শূদ্র ব্যবহার করবে।
(ঙ) প্রভুর উচ্ছিষ্ট শূদ্রের ভক্ষ্য।
(চ) দাস বৃত্তি থেকে শূদ্রের কোনো মুক্তি নেই।
(ছ) যজ্ঞের কোনো দ্রব্য শূদ্র পাবে না।
(জ) ব্রাহ্মণের নিন্দা করলে শূদ্রের জিহ্বাছেদন বিধেয়।
(ঝ) ব্রাহ্মণ শূদ্রের নিন্দা করলে যৎসামান্য জরিমানা দেয়।
(ঞ) ব্রাহ্মণ কর্তৃক শূদ্রহত্যা সামান্য পাপ।
(ট) শূদ্র কর্তৃক ব্রাহ্মণ হত্যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
(ঠ) শূদ্র সত্য কথা বলছে কি না তাঁর প্রমাণ হিসাবে তাকে দিব্যের আশ্রয় নিতে হবে। এতে তাকে জলন্ত অঙ্গারের
উপর দিয়ে হাঁটতে হয় অথবা জলে ডুবিয়ে রাখা হয়। অদগ্ধ অবস্থায় অথবা জলমগ্ন না-হয়ে ফিরলে তাঁর কথা
সত্য বলে বিবেচিত হবে।
(ড) ব্রাহ্মণকে প্রহার করলে শূদ্রের হাত কেটে ফেলা বিধেয়।
(ঢ) ব্রাহ্মণের সঙ্গে একাসনে বসলে তাঁর কটিদেশে তপ্তলৌহ দ্বারা চিহ্ন একে তাকে নির্বাসিত করা হবে অথবা তাঁর
নিতম্ব এমনভাবে ছেদন করা হবে যাতে তাঁর মৃত্যু হয়।
(ণ) ব্রাহ্মণের ন্যায় উপবীত বা অন্যান্য চিহ্ন ধারণ করলে শূদ্রের মৃত্যুদণ্ড বিধেয়।
(ত) যে পথ দিয়ে উচ্চ বর্ণের লোকেরা যাতায়াত করেন, সেই পথে শূদ্রের মৃতদেহও বহন করা যাবে না।
(থ) ব্রাহ্মণের গায়ে থুথু দিলে শূদ্রের ওষ্ঠছেদন হবে।
(দ) ব্রাহ্মণের প্রতি মূত্র নিক্ষেপ করলে শূদ্রের যৌনাঙ্গ ছেদন করা হবে এবং অধোবায়ু ত্যাগ করলে গুহ্যদেশ ছেদন
করা হবে।
(ধ) শূদ্র যদি হিংসার বশবর্তী হয়ে ব্রাহ্মণের চুল, চিবুক, পা, দাড়ি, ঘাড় এবং অণ্ডকোষে হাত দেয় তাহলে নির্বিচারে
তাঁর দুটি হাতই কেটে দেওয়া হবে।
(ন) সবর্ণা স্ত্রী বিবাহ না করে শূদ্রা নারীকে প্রথমে বিবাহ করে নিজ শয্যায় গ্রহণ করলে ব্রাহ্মণ অধোগতি প্রাপ্ত হন;
আবার সেই স্ত্রীতে সন্তানোৎপাদন করলে তিনি ব্রাহ্মণত্ব থেকে ভ্রষ্ট হয়ে পড়েন।
(প) কোনও দ্বিজাতি-নারী (অর্থাৎ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য নারী) স্বামীর দ্বারা রক্ষিত হোক বা না-ই হোক, কোনও
শূদ্র যদি তার সাথে মৈথুন ক্রিয়ার দ্বারা উপগত হয়, তাহলে অরক্ষিতা নারীর সাথে সঙ্গমের শাস্তিস্বরূপ তার
সর্বস্ব হরণ এবং লিঙ্গচ্ছেদনরূপ দণ্ড হবে, আর যদি স্বামীর দ্বারা রক্ষিতা নারীর সাথে সম্ভোগ করে তাহলে ওই
শূদ্রের সর্বস্বহরণ এবং মরণদণ্ড হবে।

হিন্দু ধর্মে দেবতার সাথে দেবী আছে, যেমন, দূর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী। আমার ধারণা ছিল হিন্দু ধর্ম্ববেত্তারা মহিলাদেরকেও সমমর্যাদা দিয়েছেন। কিন্তু সেটা শুধুই দেব-দেবীদের ক্ষেত্রে। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে মহিলাদের অবস্থান খুবই নীচুতে। পুরাণ, উপনিষদ, মনুসংহিতাতে এসব লেখা থাকতে পারে তা ধারণার বাইরে ছিল।

আকাশ মালিকের “হিন্দু ধর্মের ইতিবৃত্ত”, পৃঃ৪৭
মনুর বিধান অনুযায়ী;
(ক) স্ত্রীলোক পতিসেবা করবে। তাঁর স্বাধীন কোনো সত্তা নেই।
(খ) নারীকে কুমারী অবস্থায় পিতা, যৌবনে স্বামী, ও বার্ধক্যে পুত্র রক্ষা করবে।
(গ) স্ত্রীলোকের পৃথক কোনো যজ্ঞ, ব্রত বা উপবাস বিধান নেই।
(ঘ) স্ত্রীলোকের সাক্ষী হওয়ার বা স্বাধীনভাবে ঋণ করার অধিকার নেই।
(ঙ) স্ত্রী, অপরাধ করলে সূক্ষ্ম দড়ির দ্বারা কিংবা বেতের দ্বারা শাসনের জন্য প্রহার করবে।
(চ) রজ্জু প্রভৃতির দ্বারা প্রহার যদি করতে হয়, তাহলে শরীরের পশ্চাদ্ভাগে প্রহার কর্তব্য; কখনো উত্তমাঙ্গে বা মাথায়
যেন প্রহার করা না হয়।
(ছ) টাকাকড়ি ঠিকমতো হিসাব করে জমা রাখা এবং খরচ করা, গৃহ ও গৃহস্থালী শুদ্ধ রাখা, ধর্ম-কর্ম সমূহের
আয়োজন করা, অন্নপাক করা এবং শয্যাসনাদির তত্ত্বাবধান করা- এই সব কাজে স্ত্রীলোকদের নিযুক্ত করে
অন্যমনস্ক রাখবে।
(জ) স্ত্রীলোকগণকে প্রথমে যে বাগদান করা হয়, তার দ্বারাই স্ত্রীলোকের উপর পতির স্বামিত্ব জন্মায়; অতএব বাগদান
থেকে আরম্ভ করেই স্ত্রীলোকদের স্বামীর সেবা করা কর্তব্য।
(ঝ) বিবাহ-যোগ্য সময়ে অর্থাৎ ঋতুদর্শনের আগে পিতা যদি কন্যাকে পাত্রস্থ না করেন, তাহলে তিনি লোকমধ্যে
নিন্দনীয় হন; স্বামী যদি ঋতুকালে পত্নীর সাথে সঙ্গম না করেন, তবে তিনি লোকসমাজে নিন্দার ভাজন হন।
(ঞ) উৎকৃষ্ট অভিরূপ এবং সজাতীয় বর পাওয়া গেলে কন্যা বিবাহের বয়স প্রাপ্ত না হলেও তাকে যথাবিধি সম্প্রদান
করবে।
(ট) ত্রিশ বৎসর বয়সের পুরুষ বারো বৎসর বয়সের মনোমত কন্যাকে বিবাহ করবে, অথবা, চব্বিশ বছর বয়সের
পুরুষ আট বছরের কন্যাকে বিবাহ করবে। এর দ্বারা বিবাহযোগ্য কাল প্রদর্শিত হলো মাত্র। তিনগুণের বেশি বয়সের
পুরুষ একগুণ বয়স্কা কন্যাকে বিবাহ করবে, এর কমবেশি বয়সে বিবাহ করলে ধর্ম নষ্ট হয়।
(ঠ) বরের নিকট থেকে পণ নেওয়ার সময়ে একটি কন্যাকে দেখিয়ে বিবাহের সময়ে যদি বরকে অন্য একটি মেয়ে
দেওয়া হয়, তা হলে সেই বরটি ঐ একই শুল্কে দুইটি কন্যাকেই পাবে।
(ড) যার উদ্দেশ্যে কন্যা বাগদত্তা হবে, তার মৃত্যুর পরও বিচক্ষণ ব্যক্তি নিজের ঐ বাগদত্তা কন্যাকে আবার অন্য
পুরুষকে সমর্পণ করবে না।

আকাশ মালিকের “হিন্দু ধর্মের ইতিবৃত্ত”, পৃ ৭৪
“ফরাসী গণিতবিদ-দার্শনিক Pascal যথার্থই বলেছিলেন ‘Men never do evil so completely and cheerfully
as when they do it from religious conviction’ আর একদিন ভারতবর্ষে বাংলার রেনেসাঁসের অন্যতম
প্রাণপুরুষ বলে পরিচিত হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও (১৮০৯-১৮৩১) ও তাঁর অনুসারীরা সোচ্চারে ঘোষণা
দিয়েছিলেন, ‘If there is anything that we hate from the bottom of our heart, it is Hinduism’.”

হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও এবং তার অনুসারীরা অপ্রিয় সত্য কথাটি বলে ফেলেছেন। পৃথিবীতে কোথাও, এমনকি আমাজন জঙ্গলেও তথাকথিত কোন অসভ্য সমাজ নেই যারা জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে। কিন্তু সভ্য সমাজের দাবিদার ভারতের হিন্দুগন তা করত। খোল-করতাল বাজিয়ে, আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে অত্যন্ত গর্বভরেই তা করত। সদ্য বিধবাকে স্বামীর সাথে পুড়িয়ে মারার ধর্ম স্বীকৃত প্রথা হিন্দুদের ছিল। সতীদাহ, বর্ণভেদের বর্বরতা, নৃশংসতা আর কোন ধর্মে নেই। বেদ, পুরান, উপনিষধই এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের দলিল। রাজা রামমোহন অক্লান্ত পরিশ্রম করে সতীদাহ প্রথা নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ভারতে বৃটিশ রাজত্বে লর্ড বেন্টিংক রাজা রামমোহন রায়কে এই মহৎ কাজে পূর্ণ সহায়তা করেছিলেন। বৃটিশ রাজত্ব হিন্দুদের জন্য আশীর্বাদ ছিল। বৃটিশরাই ভারতে আধুনিক শিক্ষা-ব্যবস্থা ও রেল যোগাযোগের মাধ্যমে উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা চালু করে।

পৃথিবীর সব ধর্মই ঘৃনার্হ। প্রযুক্তির এই যুগে সব ধর্মই জঞ্জাল বৈ ত কিছু না। সব ধর্মই নিপাত যাবে। তার পরেও সব ধর্ম বিশ্বাসীরা নিজের ধর্মকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রানান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ধর্মের ভিতরে বিজ্ঞান খুজে পাচ্ছে। গায়ের জোড়ে আর কতদিন চলবে?

আকাশ মালিকের “হিন্দু ধর্মের ইতিবৃত্ত” বইটি হিন্দুরা সাদরে গ্রহন করবে না। স্বভাবতই বলবে – হিন্দুরা এখন আর বেদ, পুরাণ, উপনিষদ, মনু-সংহিতা মেনে চলে না। কাজেই মৃত জিনিষ নিয়ে নাড়াচাড়া করে কী লাভ!। অন্য কারণ হতে পারে বেদ-পুরানে লিখিত অমানবিক এবং কুৎসিত বিষয়াগুলো জানাজানি হলে হিন্দু ধর্ম সমন্ধে খারাপ ধারণা হবে। আকাশ মালিকের কী দরকার ছিল হিন্দু ধর্মের মৌলিক বইগুলো থেকে কুৎসিৎ নীতিমালা উন্মুক্ত করা!

ঠিক একই ভাবে, কোরাণের অনেক আয়াত নিয়ে ইসলামিস্টরা আলাপ করতে চায় না। তারা চায়না অমুসলিমরা তা জেনে ফেলুক। অন্য ধর্মের লোকদেরকে কনভার্ট করার জন্য তারা অনেক বই হাতে ধরিয়ে দিবে। কিন্ত কখনও কোরাণ দেবে না। আমি নিজে একজন উদাহরণ। ৯/১১ এর মাত্র দেড় সপ্তাহ পরে ডঃ শফিক রহমান মিশু এসেছিলেন অনেক গুলো বই হাতে নিয়ে আমাকে ধর্মান্তরিত করতে। আমি বললাম – “তোমার হাতে অনেক বই, কিন্তু তোমাদের মূল কিতাব, “কোরাণ” আনো নাই কেন?” মুহুর্তে মিশুর মুখটা ফ্যাকাসে হয় গেলো। আমি গো-মাংস খাই শুনেই ভেবেছিলো, আমি মুসলমান হয়েই আছি। মিশুর ডাকের অপেক্ষায় বসে আছি মাত্র। কোরাণ পড়া না থাকলে সেদিন আমি ধরা খেয়ে গিয়েছিলাম। এক্ষনে আমার নতুন পরিচয় হতো আমি একজন খাটি মুসলমান। কিন্তু কোরাণ পাঠ আমাকে দৃঢ় করেছে। আমি আর সংশয়বাদী নই। আমি মহাবিশ্বের বিশালতা অনুভব করি। মহাবিশ্ব তার নিজের প্রাকৃতিক নিয়মে চলে। পৃথিবী মহাবিশ্বের অতি ক্ষুদ্র একটা কণা মাত্র। সৌরজগৎ সহ আমাদের পৃথিবীটা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও মহাবিশ্ব টের পাবে না। ভগবান বা আল্লাহ কোথাকার কী! পৃথিবীর জড় এবং প্রাণীজগৎ মহাবিশ্বের নিয়মেই চলতে বাধ্য। প্রাণীরাও জড় পদার্থের একটি পর্যায় মাত্র। মৃত্যুতে আবার জড় পদার্থে রুপান্তর। মহাবিশ্বের নিজেরও শক্তি নাই মৃত ব্যক্তিকে প্রাণ দান করে। তবে অস্তিত্বহীন ঈশ্বররা তা করতে পারে এরকম বিশ্বাস বা দাবি মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। আমি দৃঢ়ভাবে বুঝে গেছি ভুত, ভগবান এবং আল্লাহর কোন অস্তিত্ব নাই। আমার “উন্নত শির, নাহি ভয়।” মৃত্যুতেই আমার সব শেষ। আবার জড় পদার্থে রূপান্তর। মহা প্রকৃতিও আমাকে জীবন্ত করতে পারবে না।

এটা ঠিক যে হিন্দু ধর্মের অনেক বিবর্তন হয়েছে এবং হচ্ছে। বেদ, পুরাণ, উপনিষদ আর ইত্যাদি আবর্জনা হয়ে গেছে। মুক্তমনার লেখক/ব্লগার কেশব কুমার অধিকারীর নীচের মন্তব্যটা উল্লেখযোগ্য।

Keshab Kumar Adhikary
Nripendra N Sarker বাংলায় তথা ভারতে ব্রহ্মন্যবাদের উত্থানের সময় এগুলো ছিলো এবং যতদূর জানি মনুসংহীতা
বলে খ্যাত গ্রন্থাদি এবং তদীয় আইন তখন নতুন করেও সম্পাদিত, সংযোজিত এবং বিবর্জিত হয়েছিলো। বিশেষ করে
আঠরোশো শতকের শেষে দিকে এসে যখন সনাতন আইন সংশোধিত হয় তখন এসব অমানবিক অনেক আইনই
ইংরেজ রাজ কর্তৃক বিবর্জিত হয়। আপনি যে সব বললেন আকাশ মালিক ভাই এর লেখা থেকে সেসব এখন প্রচলিত
সমাজে তেমন ভাবে নেই। অসবর্ণে বিয়ে এখন গোটা সমাজেই যথেষ্ট প্রচলিত। এ বৃত্ত ভেঙ্গে এরা বেরিয়ে আসছে
বলেই আমি ধারনা করি। কিন্তু হিন্দু সমাজের অতীত যে ক্লেদাক্ত ছিলো এতে কোন সন্দেহ নেই। এখনো তার কিছু
কিছু রেশ সমাজে রয়ে গেছে, তবে আইনের চোখে বর্তমানে তা বেআইনী কর্মকান্ডের মধ্যেই পরে। তদুপরি আমি
নিজেও দেখছি ইদানীং হিন্দু পারিবারিক আইন সংশোধন কল্পে নেয়া উদ্যোগ গুলোর যথেষ্ট বিরোধিতা আছে সমাজের
একটি বিশেষ শ্রেণীর হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে, আছে নারীর প্রতি ও সমাজের অক্ষম অংশের প্রতি নিদারুণ বৈষম্য।
এর উৎস আধুনিক শিক্ষার অভাব, শঙ্কা, পারষ্পরিক অনাস্থা, সেই সাথে সমাজে ছড়িয়ে পড়া অব্যাহত ঘৃনা ও
বিদ্বেষ মিশ্রিত তথ্য ও তার সামাজিক উপযোগ। এসব থেকে সমাজের শিক্ষিত ও বোদ্ধা শ্রেণীকে যেমন বের হয়ে
আসতে হবে, তেমনি শুরু করতে হবে কালজয়ী আধুনিক আবহে সাংস্কৃতিক বিপ্লব। আর শেষ কথা হলো, মানুষের
বোধদয় হোক এটাই আসলে কাম্য, আর সেই জন্যেই দরকার অধুনিক মনস্ক শিক্ষার প্রসার ও পসার।

মোটা দাগে হিন্দুরা বেদ, পুরাণ, উপনিষদ, মনু-সংহিতার তোয়াক্কা করে না বটে, কিন্তু হিন্দুরা ক্ষয়িষ্ণু ব্রাহ্মণদের অনুশাসন এখনও মেনে চলে। পরিবারে কেউ মারা গেলে পরজীবি ব্রাহ্মণরা হৃষ্ট চিত্তে এগিয়ে আসে। মৃতের স্বর্গ লাভের জন্য শ্রাদ্ধাদি করে দেয়। ভাল দান-দক্ষিণা হস্তগত হয়। অস্তিত্বহীন ভগবান কি ব্রাহ্মণদেরকে আদম ব্যবসার লাইসেন্স দিয়েছে?
বেদ, পুরান, কোরান, উপনিষদ, বাইবেল, মনু সংহিতা ইত্যাদি পৃথিবীর কোন হিত সাধন করেনি। বরং মানব সভ্যতাকে স্থবির করতে, মানুষে মানুষে হানাহানি, খুনাখুনির সবটাই করেছে। এখনও করছে। বেদ, পুরাণ ছাড়া চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, ইউরোপ, আমেরিকা, কঙ্গো, ফিজি, ইত্যাদি দেশ কি উচ্ছন্নে গেছে? পৃথিবীর সব ধর্মীয় পুস্তক আবর্জনা/গার্বেজ (Garbage) ছাড়া আর কিছু নয়। গার্বেজ হলেও ভাল ছিল। মানুষের ক্ষতি করত না। সব ধর্ম পুস্তক সের দরে বিক্রী করে দিলে এগুলো ঠোংগা হিসেবে কাজে লাগবে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী কভিডের ভয়ে সারা পৃথিবী ভীত-সন্ত্রস্ত। যেকোন মুহুর্তে অন্যদের মত আমিও কভিডে আক্রান্ত হতে পারতাম। এতে অলীক ভগবানাল্লাহদের কোন হাত নাই। আমি ভগবানাল্লাহকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলাম – তোদের ক্ষমতা থাকলে আমাকে কভিড ভাইরাস দে। এই চ্যালেঞ্জ করতে আমার কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল না। কারণ আমি কোন রকম ভুতের অস্তিত্বে বিশ্বাস করিনা। ভগবানাল্লাহ ভুত ছাড়া আর কিছু না। বিশ্বাস করলে আছে। না করলে নাই।

মহাসমুদ্রগুলোর বিশালতার কাছে এক বিন্দু জলকনা অতি তুচ্ছ। তবু তো এককণা এককণা জল মিলিয়েই সমুদ্রের সমস্ত জল। কিন্তু খালি চোখে দেখা আকাশের কোটি কোটি তারার সমগ্র পরিমাণ এত ক্ষুদ্র যে সেই ক্ষুদ্র অংশের সাথে আমাদের পৃথিবীটা হিসেবের মধ্যেও পড়ে না। এটা থাকলেই কি আর না থাকলেই কী? এই এত বড় মহাবিশ্বে ভগবান বা আল্লাহ কোথায়? এরা কখনও নাই। স্বর্গ বা নরকের অস্তিত্বও নাই। কিন্তু আছে শুধু “বিশ্বাসে”। ধর্ম থেকে বিশ্বাস বাদ দিলে আর কিচ্ছু অবশিষ্ট থাকে না। আমাদের দায়িত্ব এই সত্যের সন্ধানটাই মানুষকে দেওয়া। আরজ আলী মাতুব্বরের প্রথম বইটার নাম, “সত্যের সন্ধানে“ স্মর্তব্য।

ভগবান বা আল্লাহ ভুতের অস্তিত্বের মতই অলীক। অথচ এসব অলীকদের নিয়ে মানুষে মানুষে চলছে ঘৃনা, হানাহানি, খুনাখুনি। ১৯৪৭ ভারত ভাগ হলো। মানুষ মানুষকে খুন করলো। খুনাখুনি এখনও চলছে। হিন্দু ধর্মের সংস্কার হয়েছে, হচ্ছে। কিন্তু মুসলিম বিদ্বেষ কি কমেছে? কমেনি। বরং প্রতিদিন বাড়ছে। ধর্ম সংস্কার হচ্ছে। কিন্তু হিন্দু হিন্দুই থাকছে। ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণই থাকছে।

আর মুসলমানদের ধর্মের কি সংস্কার হচ্ছে? একেবারেনা। কোরানের সংস্কার হতে পারে না। আলীক আল্লাহ কোরান এডিট করতে পারবে না। ইরাকের আইসিসরা চেয়েছিল ১৪০০ বছর আগেকার মুহম্মদের ন্যায় খিলাফত রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। তাই ভিন্ন মতাবলম্বীদের গলা কাটতে শুরু করেছিল। এসব হচ্ছিল কোরানিক নির্দেশ মেনেই। মন্ত্র একটাই – ইহকাল শুধু পরকালের বেহেস্ত লাভের জন্য, আল্লাহর গুনগান করার জন্য। পরকালের বেহেস্তই আসল। আফগানিস্তানে বেদুইন ধর্মের পূণরুথান হচ্ছে। বাংলাদেশেও হচ্ছে। ধর্ম মানুষের মগজ দখল করে নিয়েছে। রাষ্ট্রেরও খতনা হয়েছে। রাষ্ট্র ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছে। ধর্মই চালাচ্ছে বাংলাদেশ। ওয়াজী হুজুররা প্রতিদিন নতুন নতুন কাহিনি নিয়ে উপস্থিত। এখন মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রধান মন্ত্রীরাও সমাবেশে ওয়াজ করে। ধর্মের বাণী দিয়ে ভাষণ শুরু, ধর্মের বাণী দিয়েই শেষ। বিজ্ঞান পুস্তকেও কোরাণের বাণী ঢোকানো হচ্ছে। এখন কোমলমতী ছাত্র-ছাত্রদের অংকে ভীতি থাকার কথা নয়। অংক, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, সব কিছুতেই কোরান এসে জুড়ে বসছে।

রাতের অন্ধকারে ইকবালদের দিয়ে মসজিদে ঢিল ছুড়ে বা মন্দিরে কোরাণ রেখে হিন্দুদের আক্রমনের প্রেক্ষিত সৃষ্টি করে বেদুইন ধর্মে বিশ্বাসীরা দেশ জুড়ে জুলুম অত্যাচার চালালো। হাসিনা সরকার এসব নিয়ে কোন কথা বলে না। মন্ত্রীরা এসবকে “গুজব” নাম দিয়ে উড়িয়ে দেয়। ইকবালদেরকে ধরে। মিডিয়াতে বলে – ওর মস্তিস্ক বিকৃত ছিল। কানের কাছে ফিস ফিস করে বলে , “ছোয়াবের কাজ করেছিস। ৭২ জন হুর পরী নিশ্চিত হয়ে গেল তোর জন্য।”

বাংলাদেশে বাঙ্গালী সংস্কৃতি সংকীর্ণ হয়ে আসছে। বেদুইন সংস্কৃতির শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিদিন। মুখে অনবরত আলহামদুল্লিল্লাহ, সোবান্নাল্লাহ, মাগরিব, এশা ইত্যাদি। মেয়েরা হিজাব-বোরখায় আচ্ছন্ন। অমুসলিমদেরকে হিজাব পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। আরবের খেজুড় ছাড়া শাদী-বিবাহ হয়না। কলেজের ছাত্ররা মাথায় বেদুইন পাগড়ি এবং পড়নে লম্বা-জুব্বা পোষাকের মহড়া দেয়। ২০১৫ সালে শহীদ মিনারে এক বাচ্চা মেয়ে দেখলাম বেদুইন পাগড়ী পড়ে ছোটাছুটি করছে। বাংলদেশটা আর জন্মভুমি বাংলাদেশ মনে হয়না। মনে হয় বেদুইন দেশে চলে এসেছে।

আকাশ মালিকের “হিন্ধ ধর্মের ইতিকথাঃ পৃঃ ৫১
“ঠিক এ ভাবে একদিন মুসলিম খলিফারা পারস্য আক্রমন করে তাদের সহস্র বছরের কৃষ্টি সংস্কৃতি ধংস করেছিলেন।
সেদিন মরুদস্যুদের হাতে ছিল কোরান আর সিন্ধুসভ্যতা ধংসকালে আর্যদের হাতে ছিল বেদ। অনার্যদের শাসন-শোষণ
করার জন্যে ভারতীয়দের পদানত করে রাখার লক্ষ্যে বহিরাগত লুটেরা ডাকাত আর্যদের একখানি ধর্মগ্রন্থের প্রয়োজন
ছিল। সেই ধর্মগ্রন্থটির নাম ‘বেদ’। কালের পরিবর্তনে যুগের প্রয়োজনে ‘বেদ’এর রূপের আকারের অনেক পরিবর্তন
পরিমার্জন পরিবর্ধন, সংযোজন হয়েছে। প্রকৃতির কার্য-কারণ নির্ধারণে ব্যর্থ কিছু অসহায় অশিক্ষিত মানুষের কল্পনা
থেকে সৃষ্ট এই গ্রন্থখানি এক সময় ধুরন্দর রাজনীতিবিদ আর শাসকদের প্রজা নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত
হয়। আধুনিক যুগে এসে কী ভাবে সে গ্রন্থখানি বিজ্ঞানময় কিতাব হয়ে গেলো আমরা এবার সেই প্রশ্নের উত্তর সন্ধান
করবো।“

মাত্র কিছুদিন আগেও মানুষের “বিশ্বাস” ছিল পৃথিবীতে ভুত-পেত্নী আছে। এখন স্তিমিত হচ্ছে। এখনও মানুষের “বিশ্বাসে” ধর্মের ঈশ্বরগন আছে। তবে বেশীদিন থাকবে না। নাস্তিক্যবাদের প্রসার বাড়ছে। ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে। নাস্তিক্যবাদের সক্রিয় সংগঠন নাই। এরা রাস্তায় নেমে নাস্তিক্যবাদ ব্যাপ্তির জন্য খাটাখাটি করেনা। মাইক নিয়ে রাস্তায় নামে না। ভাংচুর করেনা, মানুষ খুন করে অন্যের উপর নাস্তিক্যবাদ চাপিয়ে দেয় না। এরা প্রযুক্তির কথা বলে। যুক্তির কথা বলে। মহাবিশ্বের বিশালতার কথা বলে। এরা প্রশ্ন করতে শিখছে, প্রশ্ন করতে উদ্বোদ্য করছে। মহাবিশ্বের গতি-প্রকৃতির সাথে ঈশ্বরের বৈপরিত্ব বুঝতে হবে। ঈশ্বরের অস্তিত্ব ফাঁস হয়ে পড়ছে। ধর্ম বিলোপ হতে বেশী দেরী নাই। ধর্ম মানুষে মানুষে ঘৃনা, ভেদাভেদ, হানাহানি সৃষ্টি করে। এর অবসান বেশী দূরে নয়। পুরান-ফুরান-কুরান যাদুঘরেও স্থান পাবে না। পুরানো পত্রিকা সাথে বিক্রি হয়ে যাবে। ট্রেনে মুড়ি মুরকির ঠোংগা হওয়াই এদের পরিনতি।

শেষের কথাঃ
১। ইনবক্সে ডেথ-থ্রেট না দিয়ে আলোচনায় এসো। দেখাও কোন কথাটি ভুল বলি। আমি জবাব দেবো। গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে না দিয়ে স্বীয় বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে ভেবে দেখো, তুমি যা করছো তা কেনো করছো। নিজেকে মানুষের পর্যায়ে উন্নীত করো। যুক্তিহীনরাই ডেথ-থ্রেট দিয়ে থাকে। যুগে যুগে এরাই মানুষ খুন করে সত্যকে ঠেকিয়ে রেখেছে। কোন নাস্তিক কাউকে এরকম থ্রেট দেয় না।

২। আকাশ মালিকের “হিন্দু ধর্মের ইতিবৃত্ত” বইটি গায়ে গতরে ছোট। কিন্তু তথ্যসমৃদ্ধে ছোট নয় বৃহৎ।

আকাশ মালিকের বই, “হিন্দু ধর্মের ইতিবৃত্ত”