লিখেছেন: তরফদার
আফগানিস্তান নামটা কত না কথা আমাদের মনে জাগায়। রবীন্দ্রনাথের কাবুলীওয়ালা, মুজতবা আলীর দেশে বিদেশে। সেই আফগানিস্তানে তালিবান আবার ক্ষমতায় এলো। বাংলাদেশের অনেক মানুষই যেন উল্লসিত তালিবানের এই আগমনে। ক্ষমতায় আসার আগে তালিবান ক্রমাগতই হত্যা করে চলেছিল সাংবাদিক, বিচারক, ছাত্রদের – তাদের রোষ বিশেষ করে রক্ষিত ছিল নারী পেশেজীবীদের জন্য। আর জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য – যেমন শিয়া সংখ্যালঘুদের জন্য।
অন্যদিকে মার্কিন সৈন্য অপসারণে যারা খুশী তারা “সাম্রাজ্যবাদের” পতনে উল্লসিত। এটা হয় নিতান্তই সরলতা নয় ইচ্ছাকৃতভাবে ইতিহাসকে অন্যভাবে বর্ণনা। অনেকেই আফগান সরকারের দুর্নীতি ইত্যাদি নিয়ে কথা বলেছেন এবং কেমনভাবে এই সরকার টিঁকত না তাই নিয়ে রাজনৈতিক/অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ করেছেন, কিন্তু সেখানে গত ২০ বছরে যে আফগানিস্তানে যে নারী প্রগতি হয়েছিল তা এড়িয়ে গেছেন, কারণ তাঁরাও মনে মনে এই মার্কিন পরাজয়ে উল্লসিত হয়েছেন। এই উল্লসিত বিশ্লেষকেরা হয়তো আবার দু ভাগে বিভক্ত। এক শ্রেণী আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে তালিবান ক্ষমতায় যেন আসে সেই আশা করবে, কিন্তু নিজ দেশে নয়; অন্য শ্রেণী হয়তো নিজ দেশেও তালিবানকে ক্ষমতায় আনতে অপারগ হবে না।
আফগানিস্তানের ইতিহাসের এই সন্ধিক্ষণে যখন হাজার হাজার আফগান কাবুল বিমানবন্দর দিয়ে বের হবার চেষ্টা করছেন তখন ২০১৫/১৬ সনে বাংলাদেশ থেকে মুক্তচিন্তার মানুষদের বের হবার চেষ্টার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বাংলাদেশের সেই অবস্থাটাকে হাজার গুণভাবে বর্ধিত করুন – তাই হল আজ আফগানিস্তানের অবস্থা। কাবুল বিমানবন্দরের এই উদ্ধার পর্ব শেষ হবার পরে কী হবে কেউ বলতে পারে না। তালিবানেরা বলেছে তারা এবার নমনীয় হবে। কিন্তু গত ২০ বছর তালিবানেরা আল কায়েদা এবং আইসিসের নিষ্ঠুর পদ্ধতি থেকে শিখেছে এবং আফগানিস্তানে বর্তমানে এই দুই গোষ্ঠীর মানুষেরা ঘাপটি মেরে বসে আছে। আগস্টের প্রথমে তালিবানরা কবি ও ইতিহাসবিদ মোহাম্মদ ওমর শিরজাদকে টর্চার করে হত্যা করে। মাত্র কয়েক মাস আগে ৮০ জন কিশোরী ছাত্রীকে এরা বোমা মেরে হত্যা করে। আগামীতে যে হাজার হাজার আফগান নাগরিকেরা, যারা পশ্চিমের সাথে কাজ করেছে, তারা আদৌ রেহাই পাবে কিনা সন্দেহ। কল্পনা করুন এরকম একটা অবস্থা-তালিবান বাংলাদেশে ক্ষমতায় এসে বলছে, যে বাংলাদেশীরা বিদেশি দূতাবাসে কাজ করেছে, যাদের এনজিও বাইরে থেকে পয়সা পেয়েছে, যারা বিদেশে যাওয়া আসা করে, যারা নারীদের নিয়ে কাজ করে তাদের সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে এবং তাদের অনেককে কারাগারে ঢোকানো হবে, অনেককে হত্যা করা হবে। আর নারীদের ব্যাপারে আরো কী কী বিশেষ ব্যবস্থা সেটা তো বলছিই না।
বামপন্থী যারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে লাফাচ্ছেন তারা হয়তো জানেন না কোনটা আসল বিপদ–কোনটাতে তাদের জীবন বাঁচবে সেটা তারা জানেন না। তারা ইরান ইসলামী বিপ্লবের সময় তুদেহ্ কমিউনিস্ট পার্টির কথা ভুলে যান। তুদেহ্ পার্টি ইসলামী বিপ্লবকে সমর্থন দিয়েছিল, কিন্তু বিপ্লবের পরে পার্টির কর্মীদের ধরে ধরে হত্যা করা হয়। তবে এই বামপন্থীদের মধ্যে একটি দল হল লুকানো তালেবান, তাদের জন্য শরিয়া আইনও চলবে, কিন্তু অন্য সরল বামেরা এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে এবং ধর্মীয় চরমপন্থার বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান নেয় না – ইতিহাস বলে তারাই চরমপন্থার প্রথম শিকার হয়।
অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশেরা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের ভাল চাইবে এটা জানা কথা। তার বিরুদ্ধে কাজ করতে হলে পদ্ধতি আছে, সেটি আপনার হয়ে তালিবানেরা করবে না। আপনার হয়ে সে কিছুই করবে না, বরং আপনাকে হত্যা করবে। আর আপনি যদি সংখ্যালঘু হন তো এসব কোনো যুক্তিই খাটবে না। আফগানিস্তানের এই দুর্যোগে আমাদের মুখ বন্ধ দেখে দুঃখই হচ্ছে।
ভবিষ্যত অনিশ্চিত। হয়তো তালেবান ভালো করতেও পারে। কিন্তু বর্তমানে তালেবানের সুর বদলেছে। তো লাভ নেই। আর Afghanistan এখন আগের মত নাও থাকতে পারে। হয়তো চায়নার মত ওয়ান পার্টি স্টেট হিসেবে টিকে থাকবে আর উন্নতি করতে পারে। তালেবান হয়তো CPC কেও অনুসরণ করতে পারে।
খুব ভালো লেখা, অনেক কিছু বুঝলাম। একটাই কথা বলব অন্ধকার যত গভীর ভোর তত কাছে। তালিবান রাও দখলে রাখতে পারবে না। আর রইল বাম পন্থী দের কথা , সে তো মার্ক্স এঙ্গেলস , লেনিন এর মৃত্যুর পরেই অর্ধেক শেষ। বর্তমান বাম পন্থী বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশীয় বাম পন্থী রা স্রেফ হয় সুবিধাবাধি অথবা একেবারেই নিরবোধ। এখন এই মুহূর্তে ফ্যাসিবাদ (এখানে তালিবান সহ ধর্মীয় মৌলবাদ) এর বিরুদ্ধে ২য় বিস্বজুদ্ধের এক ইতালীয় গান মনে পড়ে যাচ্ছে ব্যাস এটাই দিলামঃ-
উনা মাতিনা , মি সান আলজাতো
ও বেলা চাও বেলা চাও বেলা চাও চাও চাও
উনা মাতিনা , মি সান আলজাতো
এ ও ত্রোভাতো লিনভাজোর।
—- লাল সেলাম
ভালো লিখেছেন।